🚩🚩🚩🙇🙇🙇 রাধে রাধে 🙇🙇🙇🚩🚩🚩

শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 🙏 শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/04/ramananda3.html

 ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
          ꧁ শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
    🏠Home Page🏠⬇️⬇️🙏⬇️⬇️📚PDF গ্রন্থ📚
꧁ MrinmoyNandy.blogspot.com 👉 সূচীপত্র ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
 ꧁ টিকা বা অন্যান্য ধর্মীয় লিখনী 🙏 সূচীপত্র ꧂
         ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
     এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
 ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
            ꧁ শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 প্রথম ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
            ꧁ শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
 ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
      ꧁ ২১. শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(২১)শ্রীরামানন্দ রায় "কাষ্ঠ পুত্তলিকা"*
*তত্ত্ব-কথন-মধুর বা কান্তাভাব।*
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
*🍀এখানে দার্শনিক তত্ত্বের সূক্ষ্ম কথা নাই,কেবল আছে,সরল প্রাণের সরল প্রেমের সরল কথা।ল্রীরাধার প্রেমই জীবের সাধ‍্যতত্ত্বের অবধি। শ্রীমতীর প্রেম--প্রেম-তত্ত্বের সর্ব উচ্চতম আদর্শ।মহাপ্রভু স্বয়ং সেই প্রেমের স্বাদ আস্বাদন করেছেন, তিনি নিজেই তা জগতে প্রকটন করেছেন। ভক্ত শ্রেষ্ঠ উদ্ধব বলেন ঃ--*
*আসামহো চরণরেণুজুষামহং স‍্যাং বৃন্দাবনে কিমপি গুল্মলতৌ ধীনাম্*।
*যা দুস্তজং স্বজনমার্য‍্যপথঞ্চ হিত্বা ভেজু মুকুন্দপদবীং শ্রুতভির্বিমৃগ‍্যাম্"।।*
                   *(শ্রীভাগবত=১০|৪৭|৬১)*
*🌺অর্থ‍্যাৎ অহো!আমি যেন ব্রজসুন্দরীদের পদরেণুসেবী বৃন্দাবনের গুল্মলতা বা ঔষধির মধ্যে কোন কিছু  হয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারি।যেহেতু এই ব্রজললনাগণ দুস্তজ স্বজন ও আর্য‍্যপথ (ঋষিপথ)পরিত‍্যাগ করে শ্রুতিগণের অন্বেষনীয় মুকুন্দপদটি ভজনা করেছেন।*
*☘কান্তাভাবে শ্রীকৃষ্ণের ভজনই সাধ‍্যতত্ত্বের অবধি (সীমা),রায় রামানন্দের মুখে এই কথা শুনে মহাপ্রভু তুষ্ট হয়ে বললেন,তা বটে,সাধ‍্যের সীমা এই পর্য‍্যন্তই বটে,তাতে আর কোন সন্দেহ নেই, ইহা আমার স্বীকার্য‍্য। যদি এর পরে আরও কিছু বলবার থাকে তবে কিছু বলো।রামানন্দ বিস্মিত হলেন। তিনি সাধ‍্যসাধন তত্ত্বের চরমসীমা বলেও,মহাপ্রভুর তৃষ্ণা নিবারণ করতে পারলেন না।তিনি কোথা হতে আরম্ভ করে কোথায় এসেছেন!এর পরেও ভজনের আদর্শ আর কি হতে পারে? মানুষ,সাধনের উচ্চতম সোপানে (সিঁড়িতে) আরোহণ করলে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করে।ব্রহ্মজ্ঞান-লাভান্তর চিত্ত ভগবদ্ উন্মুখ হলে উহারই প্রথম বিকাশ,=শান্তভক্তি।ক্রমে যতই আরো গভীরে প্রবেশ করতে থাকে ততই দাস‍্য,সখ‍্য,বাৎসল‍্য ভাবে চিত্তবৃত্তি পরিপুষ্ট হয়ে তদভাবে সাধক ভগবানের ভজন করে থাকেন।উচ্চতম সাধনার ভজনের এই উচ্চতম ভাবগুলি ক্রমে বিকশিত হয়। এক এক শ্রেণীর ভক্ত এক একপ্রকার ভাব নিয়ে ভজন করে থাকেন।এটিই সকল ভাবই ব্রজেন্দনন্দন শ্রীকৃষ্ণ প্রাপ্তির উপায়। কিন্তু অনন্তকোটি জন্মের ভজন-ফলে এবং কৃপাময় ভগবানের দয়ায়,যে ভক্তের হৃদয়ে কান্তাভাবের উদয় হয়,তাঁরই ভজন পদ্ধতি চরমসীমা পেয়ে থাকেন।তাই মহাপ্রভু বলেছেন,সাধ‍্যের সীমা এই-ই বটে, কিন্তু এর পরে যদি আরও কিছু থাকে,তবে তাহাও বলো।এবারে রামরায় মহাশয় অনেক ভেবে চিন্তা করে শ্রীরাধার প্রেমের কথা উত্থাপন করলেন।তিনি বললেন, শ্রীরাধার প্রেমই সাধ‍্য-শিরোমণি।এই বলেই পদ্মপুরাণের একটি শ্লোক পাঠ করলেন।যথা ঃ--*
*"যথা রাধা প্রিয়া বিষ্ণোস্তস‍্যাঃ কুন্ডং প্রিয়ং তথা।*
*সর্বগোপীযু সৈবৈকা বিষ্ণোরত‍্যন্ত বল্লভা"।।*
*🌹শ্রীমতী যেমন শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়া, তাঁর কুন্ডও শ্রীকৃষ্ণের সেইরকম প্রিয়।সব গোপীর মধ্যে শ্রীমতী রাধিকায় শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়তমা। শ্রীভাগবতে শ্রীরাধার নাম স্পষ্টতঃ উল্লেখ না থাকলেও একটি শ্লোকে তা স্পষ্টরূপে অভিব‍্যক্ত হয়েছে। তদযথা---*
*"অনয়া রাধিতো নূনং ভগবান্ হরিরীশ্বরঃ।*
*যন্নো বিহায় গোবিন্দঃ প্রীতো যামনয়দ্রহঃ"।।*
                 *(শ্রীভাগবত=১০|৩০|২৮)*
*🌻অর্থ‍্যাৎ "ভগবান ঈশ্বর হরি এই গোপীর সমীপে (কাছে) সম্পূর্ণ ভাবে বশীভূত।যেহেতু গোবিন্দ আমাদেরকে পরিত‍্যাগ করে অতীব প্রফুল্লচিত্তে ইঁহাকে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে বিহার করেছেন।*
*🌹মহাপ্রভু এই কথায় পরম আহ্লাদিত হয়ে বললেন, তোমার মুখে রসের কথা শুনে আমার বোধ হচ্ছে যেন অমৃতের নদী প্রবাহিত হয়ে ছুটছি। আমার কিছুতেই তৃপ্তি হচ্ছে না। কিন্তু এখানে একটা কথা জাজ্ঞাস‍্য। তুমি বলছ শ্রীরাধাই সকল গোপী অপেক্ষা শ্রীকৃষ্ণের প্রাণবল্লভা। কিন্তু তাঁর পরিচয় কি? শার-রাস-সময়ে শঠশিরোমণি অন‍্যান‍্য গোপীদেরকে পরিত‍্যাগ করে শ্রীমতীকে ইঙ্গিতে নির্জনে নিয়ে গেলেন।সে তো চোরের কর্ম।নিজের ধন নিজে ভোগ করবেন, তা চুরি করা কেন?তাহলে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে গোপীদের অগোচরে নয়নভঙ্গীতে শ্রীমতীকে সঙ্কেত জানিয়ে তাঁকে গুপ্তস্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন।তাহলেই "অন‍্যাপেক্ষার" কথা উঠছে। কিন্তু অন‍্যাপেক্ষায়পেমের গাঢ়তার স্ফুর্তি হয় না।*
*চুরি করি রাধা নিল গোপীগণ ডরে।*
*অন‍্যাপেক্ষা হইলে প্রেমের গাঢ়তা না স্ফুরে।।*
*রাধা লাগি গোপী যদি সাক্ষাৎ করে ত‍্যাগ।*
*তবে জানি রাধায় কৃষ্ণের গাঢ় অনুরাগ।।*
*⭐যে প্রেম সর্বত্র ধাবিত,তা তরল।গোপীগণকে শ্রীকৃষ্ণ ভয় করলেন কেন? কেননা, রাধার প্রতি অধিকতর প্রেম দেখালে তাঁরা মান করবেন।তাহলে এ প্রম গাঢ় হল না।যেহেতু, এতে অন‍্যাপেক্ষা বিদ‍্যমান।নিরপেক্ষ না হলে,লোকাপেক্ষা ত‍্যাগ না করলে, অনুরাগ গাঢ় বলে মনে করা যেতে পারে না।যদি গোপীদের সমক্ষে শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমতীর প্রতি অধিকতর প্রেমবশ‍্যতা দৈখাতে পারতেন,তবে বুঝা যেত যে শ্রীমতীতে তাঁর অনুরাগ দৃঢ়। কিন্তু তাঁর লোকাপেক্ষা রয়েছে। গোপীদেরকে সাক্ষাৎ সম্বন্ধে পরিত‍্যাগ করে শ্রীরাধার প্রতি অধিকতর প্রীতি প্রদর্শন করা হয়নি। সুতরাং শ্রীমতীর প্রতি যে তাঁর গাঢ় অনুরাগ,তার পরিচয় কি? রামরায় বললেন,প্রভু!আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে এ অধম সম্পূর্ণই অযোগ্য।তবে আপনি কৃপা করে যা বলাচ্ছেন তাই আমি বলছি, ত্রিজগতে রাধাপ্রেমের কোন উপমা নাই।শ্রীরাধার প্রেমমাধুরী বৈকুন্ঠের অনুপম অমৃত।*
                *ক্রমাগত*
 ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
      ꧁ ২২. শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(২২)শ্রীরামানন্দ রায়,কাষ্ঠ পুত্তলিকা*
*তত্ত্ব-কথন,মধুর বা কান্তাভাব*
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
*🍀শ্রীরাধার প্রেমমাধুরী বৈকুন্ঠের অনুপম অমৃত।এই বলে রামরায় যেন কি বলবেন বলে বলতে চেষ্টা করলেন, কিন্তু সহসা(হঠাৎ)তাঁর মুখে কোন কথায় ব‍্যক্ত (প্রকাশ) হল না। শ্রীমন্মহাপ্রভু, শ্রীমতীর প্রতি শ্রীকৃষ্ণের গাঢ়-অনুরাগ সম্বন্ধীয় তত্ত্বসমূহ বিশদ করার জন্য যে বিতর্ক উপস্থিত করেন,তার উত্তরে রামরায় বলেন প্রভু!ত্রিজগতে রাধাপ্রেমের উপমা নাই, রসিকেন্দ্র চূড়ামণি শ্রীজয়দেব গোস্বামী বলেন ঃ--*
*"কংসারিরপি সংসারবাসনাবন্ধশৃঙ্খলাং,*
*রাধামাধায় হৃদয়ে তত‍্যাজ ব্রজসুন্দরীঃ।*
*ইতস্ততস্তামনুসৃত‍্য রাধিকা মনঙ্গবাণব্রণখিন্নমানসঃ।*
*কৃতানুতাপঃ স কলিন্দনন্দিনীতটান্ত কুঞ্জে বিবসাদ মাধবঃ "।।*
*🌻এই দুটি শ্লোক বলে রামানন্দ রায় বললেন প্রভো!এই শ্লোকের অর্থ বিচার করলেই শ্রীরাধার প্রেমমহিমা জানা যেতে পারে।এই দুই শ্লোকের বিচারে প্রকৃতই অমৃতের খনি লাভ করা যায়।*
*🌻রসরাজের সঙ্গে রসিক ভক্তের সম্মিলন।সেই নির্জন মিলনে প্রেমতত্ত্বের আলাপ।শ্রীমন্মহাপ্রভু শ্রোত্রা,রামরায় মহোদয় বক্তা।বিষয়াধিকার ভগবদ্ বিমুখ জনগণের পক্ষে সেই তত্ত্বকথার নাম করাও অনধিকার চর্চা। কিন্তু অবিবেকী ব‍্যক্তির লজ্জা কোথায়?ভক্ত পাঠক,ধৃষ্টতা ক্ষমা করবেন,আমরা এই শ্লোক দুটির বঙ্গানুবাদ করতে চেষ্টা করছি মাত্র।কিন্তু তার আগে একটি কথা বলা আবশ‍্যক। বৈষ্ণব পাঠক-মাত্রেরই জানা আছে, শরৎকালে ও বসন্তকালে রাস উৎসব হয়ে থাকে।শারদীয় রাসের পরেই প্রবাস-যাত্রা।শ্রীকৃষ্ণ, প্রবাসে গমন করে নানাজায়গায় নানাপ্রকার লীলাবিলাস করলেন। কিন্তু শ্রীমতী রাধারাণীর মতো প্রেমবতী আর কোথাও দেখতে পেলেন না।অবশেষে বৃন্দাবনে ফিরে এলেন। (অপ্রকট লীলার শ্রীকৃষ্ণ নিত‍্য বৃন্দাবনস্থ) আবার রাসবিলাসে ইচ্ছা হল।বসন্তরাস আরম্ভ হল।শতকোটি গোপী রাসমন্ডলে দেখা দিলেন,শ্রীকৃষ্ণ সকলের সঙ্গেই এক দেহে সমভাবে রমণ করতে লাগলেন। তিনি সকলের সঙ্গে সমভাবে রাসবিলাস করছেন দেখেপ্রগাঢ় প্রেমময়ী শ্রীমতীর মান উপস্থিত হল। তিনি দেখলেন,প্রত‍্যেক গোপীর স্কন্ধেই (কাঁধেই)শ্রীকৃষ্ণ বাহু অর্পণ করে রাসরসে প্রমত্ত হয়েছেন।যত গোপী তত কৃষ্ণ। সর্বত্রই সমান ভাব, সকলের প্রতি সমান আদর।এদের মধ্যে তিনিও একজন। সুতরাং তাঁর কাছেও এক কৃষ্ণ রয়েছেন।প্রেমের সর্বত্র সমতা দেখে প্রেমময়ী মানিনীর দুর্জয় মান উপস্থিত হল।তিনি রাসমঞ্চ ছেড়ে চলে গেলেন।রাসেশ্বরী রাসমন্ডলীর বাহির হওয়া মাত্রই শ্রীকৃষ্ণ তাঁর বিরহে আকুল হলেন।রাস ভঙ্গ হল।কংসারি শ্রীকৃষ্ণ পরমাশ্রয়া শ্রীমতীর মধুর রূপ হৃদয়ে ধারণ করে অন‍্যান‍্য গোপীগণকে ত‍্যাগ করে বাহির হলেন।*
*🍀এখানে একটা কথা যে,এই মাধুর্য‍্য-লীলায় "কংসারি" শব্দের ব‍্যবহার করা হল কেন?অপিচ (কিন্তু) "কংসারিরপি" বলতে যে "অপি" শব্দ আছে তারই বা কি প্রয়োজন? রোগ,শোক,দুঃখ ও ভবভয়,=কং শব্দের এই কয়েকটি প্রতিশব্দ দেখা যায়।যিনি রোগ শোক দুঃখ ভবভয়ের শত্রু, তিনিই কংসারি।শ্রীকৃষ্ণের নামেই রোগ শোক দুঃখ ভবভয়াদি দূরীভূত হয়।এহেন শ্রীকৃষ্ণও শ্রীমতীর বিরহ-শোকে আকুল হলেন।শ্রীকৃষ্ণ যেমন রাধিকার ইষ্ট,শ্রীরাধাও তেমনি শ্রীকৃষ্ণের ইষ্টা।ইষ্ট বস্তুতে অনুরাগ স্বাভাবিক।শ্রীকৃষ্ণ গোপীদের সঙ্গে রাসরসে নিমগ্ন ছিলেন, কিন্তু যেই তাঁর রাস-বিলাস-বাসনার শৃঙ্খল স্বরূপিনী শ্রীমতী মানের প্রভাবে রাসমন্ডলী হতে বাহির হলেন,শ্রীকৃষ্ণ ক্ষণমাত্রও শ্রীমতীর বিরহ সইতে না পেরে তাঁর রূপরাশি সম‍্যকরূপে সম্পূর্ণভাবে) হৃদয়ে ধরে রাসমন্ডলী ছেড়ে শ্রীমতীর সন্ধান করতে লাগলেন।ইতঃস্তত (এদিক ওদিক) তাঁর অনুসন্ধান(খোঁজ) করলেন, কিন্তু কোথাও তাঁকে পেলেন না,অনঙ্গবাণে তাঁর মন খিন্ন হয়ে পড়ল,অবশেষে শ‍্যামসুন্দর শ্রীযমুনার শ‍্যামল দূর্বাদল পরিশোভিত তীরপ্রান্তে বসে,বিষাদ (দুঃখ) করতে লাগলেন।*
*🌺এতে দেখা যাচ্ছে যাঁকে ছাড়া শতকোটি গোপীও শ্রীকৃষ্ণের মনোরথ পরিপূরণে সমর্থ নহেন, তিনি শতকোটি গোপী ত‍্যাগ করে যে শ্রীমতীর জন্য অধীর হলেন,রাসের রস-আস্বাদ ত‍্যাগ করে অনঙ্গবাণে পরিখিন্ন হলেন,সেই প্রেমময়ী শ্রীমতীই শ্রীকৃষ্ণের সর্বাপেক্ষা প্রিয়তম বস্তু। এই বলে শ্রীরামরায় বললেন, প্রভু!এই জন‍্যই বলেছি ত্রিজগতে রাধাপ্রেমের উপমা নাই।*
*🌹মহাপ্রভু পরম তুষ্ট হয়ে বললেন, এইসব নিগূঢ় তত্ত্বকথা শ্রবণ করবার জন‍্যই আমি তোমার কাছে এসেছি। সাধ‍্য-সাধনতত্ত্ব এখন বেশ বুঝতে পারলাম। কিন্তু এখনও আমার অনেক জানবার আছে।*
*☘শ্রীরামরায় আগে দেখালেন কান্তাভাবে কৃষ্ণভজন প্রেমভজনের উচ্চতম সিঁড়ি।মহাপ্রভু তা মেনেও নিলেন।তার পরে রামরায় বললেন, গোপীপ্রেম অত‍্যাদ্ভুত। শ্রীকৃষ্ণ গোপীপ্রেমের ধার শোধ করতে না পেরে তাঁদের কাছে ঋণী হলেন। ফলে উদ্ধব নারদাদি একান্ত ভক্তগণও গোপীপ্রেমের অনুসারী।গোপীপ্রেম প্রেমভজনের সীমা ; কেন না,এঁরা আর্য‍্যপথ ও স্বজনাদি ত‍্যাগ করে পরম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণকে পরকীয়াভাবে ভজন করেছেন অথচ তাঁদের প্রেম কামগন্ধলেশ-বিবর্জিত। সুতরাং গোপীপ্রেম সাধ‍্যের সীমা।*
💧💧💧💧💧💧💧💧💧💧💧💧💧
 ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
      ꧁ ২৩. শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(২৩)শ্রীরামানন্দ রায় কাষ্ঠ পুত্তলিকা*
*তত্ত্ব-কথন, মধুর বা কান্তাভাব*
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
*🌹রামরায়ের এই উক্তিতেও মহাপ্রভুর জিজ্ঞাসার নিবৃত্তি(ক্ষান্ত) হল না।তিনি সাধ‍্যসাধন তত্ত্ব সম্বন্ধে পুনরপি প্রশ্ন করলেন। রামরায় তখন শ্রীরাধা প্রেমের কথা তুললেন।মহাপ্রভু তাতে বিতর্ক উঠিয়ে বললেন, "রাসমন্ডলী হতে শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমতীকে গোপীগণের ভয়ে ইঙ্গিত করে নিয়ে গেলেন কেন?অবশ‍্যই শ্রীকৃষ্ণ গোপীদের ভয়ে ভীত হয়েছিলেন।তাহলে এ প্রেম নিরপেক্ষ নহে, এ প্রেম অন‍্যাপেক্ষ। কেননা, শ্রীকৃষ্ণ অন‍্যান‍্য গোপীদের মনের দিকে না তাকিয়ে পারেন না। অন‍্যাপেক্ষা প্রেমের বা "ভাগের প্রেমের" দৃঢ়তা কোথায়?*
*🍀তার উত্তরে রামরায় বললেন, "রাধাপ্রেমের উৎকর্ষ আছে।গোপীগণ শ্রীকৃষ্ণকে পেয়ে আর কোন দিকে তাকালেন না,অমনি আনন্দে বিভোর হলেন। কিন্তু শ্রীমতী যখন দেখলেন প্রত‍্যেক গোপীর পার্শে এক এক কৃষ্ণ, ঠিক সেইরকম সাধারণ ভাবে তাঁর পার্শেও এক কৃষ্ণ রয়েছেন।এতে শ্রীমতীর মান হল, তিনি রাসমঞ্চ ছেড়ে চলে গেলেন।মহাভাবময়ী শ্রীমতীর বিরহে তৎক্ষণাৎ রাসেরচাঁদের হাট ভেঙ্গে গেল।শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমতী-বিরহে যমুনাকুলে বসে কাঁদতে লাগলেন।এখন বিচার করুন। গোপীপ্রেমের ধার শ্রীকৃষ্ণ শোধ করতে অসমর্থ হয়ে তাঁদের নিকট ঋণী হলেন, কিন্তু এক শ্রীমতী ব‍্যতীত শতকোটি গোপীও তাঁর রাসবিলাসের বাসনা-নির্বাপণে সমর্থ হলেন না।প্রভু!এই জন‍্যই বলেছি,রাধাপ্রেম জগতে প্রকৃতই অতুলনীয়।" মহাপ্রভুর শ্রীমুখকমল উৎফুল্ল(আনন্দে বিহ্বল) হয়ে উঠিল।তিনি প্রীত হয়ে বললেন, এইসব রসতত্ত্ব জানবার জন‍্যই তো তোমার কাছে এসেছিলাম।এখন এসব কথা ভাল ভাবেই বুঝতে পারলাম।সাধ‍্যসাধন নির্ণয়তত্ত্ব বুঝতে পেরেছি। কিন্তু আমার আরও জিজ্ঞাসা আছে। কৃষ্ণের স্বরূপ, শ্রীরাধার স্বরূপ, রসতত্ত্ব,প্রেমতত্ত্ব আমাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।তুমি কৃপা করে না বললে আর কোথাও এইসব জানবার উপায় নাই। তুমি ভিন্ন আর কেউ এইসব তত্ত্ব নিরূপণে সমর্থ নহে।দয়া করে বলো।*
*🌷মহাপ্রভুর কন্ঠস্বর স্বভাবতঃই অতি মধুর, তাতে আবার বিনয়মাখা।সে বিনয়মাখা মধুর কথা শুনলেই লোক চরম মুগ্ধ হত। তার উপরে যখন তিনি করুণস্বরে দীনভাবে কোন কথা বলতেন, শ্রোতৃবর্গ(শ্রবণকারী) তাতে প্রকৃতই মন্ত্রমুগ্ধবৎ হয়ে পড়তেন।শ্রীরামানন্দ রায় গৌরহরির কথা শুনে একেবারেই বিহ্বল হয়ে পড়লেন, তিনি ভূলোকে আছেন, কি দ‍্যুলোকে(স্বর্গলোকে) আছেন,তিনি বিদ‍্যানগরে আছেন, কি গোলোকে আছেন,ক্ষণকাল তিনি বুঝে উঠতে পারলেন না। কিছুক্ষণ পরে একান্ত অবশের মতো রামরায় বললেন, প্রভো!আমাকে এইসব কথা কেন জিজ্ঞাসা করছ?আমি মূঢ় এই সম্বন্ধে কি জানি? এই যে এতক্ষণ তোমার কাছে কি বলেছি, তা কি আমি বলেছি?তুমি হৃদয়ে প্রবেশ করে যা বলে দিচ্ছেলে, আমি তোমার কাছে তাইই বলছিলাম।লোকে যেমন শুক পাখিকে কৃষ্ণনামাবলী শিখিয়ে আবার তার মুখেই নাম শ্রবণ করে আহ্লাদিত হয়,তুমিও সেইরকম হৃদয়ে প্রবেশ করে আমার দ্বারা তত্ত্বকথা বলছ।আবার নিজে সেইকথা শুনে আহ্লাদিত হচ্ছ। তুমি যে সাক্ষাৎ ঈশ্বর, আমি তা বুঝতে পেরেছি। তোমার নাট কে বুঝবে?*
*তোমার শিক্ষায়পড়ি যেন শুকের পাঠ।*
*সাক্ষাৎ ঈশ্বর তুমি কে বুঝে তোমার নাট।।*
*হৃদয়ে প্রেরণ করাও,জিহ্বায় কহাও বাণী।*
*কি কহিয়ে ভালমন্দ কিছুই না জানি।।*
*🌻যেমন শিষ‍্য তেমনই প্রভু!মহাপ্রভু বললেন "সে কি কথা! আমি মায়াবাদী সন্ন‍্যাসী, ভক্তিতত্ত্বের কি জানি? মায়াবাদে আমার মন মলিন হয়ে গিয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে সার্বভৌম ভট্টাচার্যের কৃপা হল, তিনি দয়া করে তাঁর কৃপাসঙ্গলাভে আমায় অধিকার দিলেন।তাঁর সঙ্গ পেয়ে আমার চিত্ত নির্মল হয়ে উঠিল। "নির্মল চিত্ত না হলে তো আর শ্রীকৃষ্ণ-কথায় রুচি হয় না।তাঁর সঙ্গগুণে কৃষ্ণকথা শুনতে আমার বড় সাধ হল। তাই তাঁর নিকট কৃষ্ণ-ভক্তি-তত্ত্ব শুনতে চাইলাম।তিনি বললেন এসব কথা আমার কিছুমাত্র জানা নাই,কেবল এক রামানন্দ রায় জানেন। কিন্তু তিনি তো এখানে নাই। আমি সার্বভৌম মহাশয়ের কাছে তোমার মহিমা শুনেই তোমার কাছে শিক্ষা লাভ করতে এসেছি, আর তুমি কিনা আমাকে সন্ন‍্যাসী মনে করে আমার স্তুতি করছ!সন্ন‍্যাসী সর্ববর্ণের গুরু।লোকে সন্ন‍্যাসী দেখলে গুরু বলে তাঁর চরণধূলি গ্রহণ করে, তাঁকে ঈশ্বর বলে মানে।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏
 ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
      ꧁ ২৪. শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(২৪)শ্রীরামানন্দ রায় কাষ্ঠ পুত্তলিকা*
*তত্ত্ব-কথন,রামরায় বক্তা,প্রভু শ্রোতা*
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
*তাঁকে ঈশ্বর বলে মানে। কিন্তু সে স্বতন্ত্র কথা।কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তাই প্রকৃত গুরু-----------*
*কিবা বিপ্র কিবা ন‍্যাসী শূদ্র কেনে নয়।*
*যেই কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা সেই গুরু হয়*।।
*সন্ন‍্যাসী বলিয়া মোরে না কর বঞ্চন।*
*কৃষ্ণ-রাধা-তত্ত্ব কহি পূর্ণ কর মন*।।
*🌻মহাপ্রভু ও ভক্তের মধ্যে তত্ত্ব কথার আলাপ হচ্ছে।এই আলাপের মধ্যে তত্ত্ব-কথার সঙ্গে সঙ্গে ঐ যে বিনয়ের অলৌকিক অমৃতধারা প্রবাহিত হচ্ছে,ঐটি মন্দাকিনীর সুশীতল পবিত্রতম ধারা হতেও অধিকতর সুশীতল ও পবিত্রতর। রামরায় মহাপ্রভুকে ঈশ্বর বললেন।কিন্তু গৌরভগবান্ ভক্তের স্তুতিবাক‍্য এত সহজে গ্রহণ করলেন না।তাঁর প্রকাশ, ক্রমবিকাশের ভাবপূর্ণ। রামরায় তাঁকে ঈশ্বর বললেও তিনি এত তাড়াতাড়ি সে স্তুতিবাদ স্বীকার করলেন না। তিনি বললেন "একি কথা"=*
*তোমার ঠাঁই আইলাম তোমার মহিমা শুনিয়া।*
*তুমি মোরে স্তুতি কর সন্ন‍্যাসী জানিয়া।।*
*🌹সংসারে বর্ণাশ্রম ধর্মানুসারে বিষয়ীদের নিকট সন্ন‍্যাসী নারায়ণবৎ মাননীয়। কিন্তু দেখ,রামরায়,আমি তা ভাল বুঝি না। আমি মায়াবাদ সন্ন‍্যাসী। লীলাময় ভগবানের মধুর নিত‍্যলীলা আমি কিছুই জানি না। মায়াবাদীর মনে সে সব তত্ত্বের স্ফুর্তি হয় না।তবে সার্বভৌমের কৃপাসঙ্গে এটুকু বুঝেছি যে কৃষ্ণভক্তিই জগতে সার। আমি সন্ন‍্যাসী, সর্ববর্ণের গুরু ; তাই বলে তুমি আমাকে শিক্ষা দিবে না,আর আমি তোমার কৃপাশিক্ষায় বঞ্চিত হব এ হতে পারে না।ব্রাহ্মণহন,সন্ন‍্যাসী হন অথবা শূদ্রই হন, যিনি কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা তিনিই গুরু। সুতরাং সন্ন‍্যাসী বলে তুমি আমায় বঞ্চনা করিও না। মহাপ্রভু এস্থলে অনেক রকম শিক্ষা প্রদান করলেন।তাঁর প্রত‍্যেক বাক‍্যই বহু অর্থপূর্ণ। আমাদের বোধহয় তিনি এস্থলে এই কথায় অনেক তত্ত্ব জ্ঞাপন করেছেন।*
*১)সন্ন‍্যাসীরা জ্ঞানমার্গাবলম্বী, কিন্তু মায়াবদীর ব্রহ্মজ্ঞান হতে যে ভগবদ্ভক্তি অনেক বড়, তিনি বিনীতভাবে সেই কথা বলে দিলেন*।
*২)"গুরু কে" এ প্রশ্নেরও এস্থলে মীমাংসা হয়েছে।ব্রাহ্মণ হন,সন্ন‍্যাসী হন, আর শূদ্রই হন, যিনি কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা তিনিই গুরু।* 
*৩)কৃষ্ণতত্ত্বাভিজ্ঞত্ব যে কত উচ্চাধিকার,এতে তাও অভিব‍্যক্ত হয়েছে। মহাপ্রভু লোকাপেক্ষা ত‍্যাগ করেননি। তথাপি শূদ্র যদি কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা হন,তাঁকেও গুরু বলে গ্রহণ করতে বিধি দিয়ে গিয়েছেন। শূদ্র শিক্ষাগুরু হতে পারেন, কিন্তু দীক্ষাগুরু হতে পারেন না,এই কথা বলে,বর্ণাশ্রমপ্রাধান‍্য-পরিকীর্তনের প্রয়োজন নাই।কেননা মহাপ্রভু কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা শূদ্রের কথায় বলেছেন। বলা বাহুল‍্য শূদ্রকুলে জন্মগ্রহণ করেও যিনি কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা, তাঁর জন্ম নিবন্ধন বর্ণাশ্রমধর্ম খন্ডিত হয়ে যায়। মহাসাগরে মিশে গেলে নদীর যেমন নামরূপ থাকে না, কৃষ্ণ-প্রেমসাগরে প্রবেশ করলে মহৎ ক্ষুদ্র ব্রাহ্মণ শূদ্র বর্ণবিচার মাত্রও থাকতে পারে না। নিরূপাধি কৃষ্ণপ্রেমে স্ত্রীপুরুষ,মহৎক্ষুদ্র,(ছোট-বড়) ব্রাহ্মণ শূদ্র প্রভৃতি অনন্ত ভেদবুদ্ধি একেবারেই নিরস্ত হয়ে যায়।মহাপ্রভু এস্থলে ব্রাহ্মণ বা শূদ্রের নিকট মন্ত্র নিতে বলেননি, "কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তাকেই " গুরু বলে স্বীকার করতে বলেছেন।বলা বাহুল‍্য সেইরকম নিরূপাধি প্রেমসাগরে যদি কেউ মজ্জিত হয়ে থাকেন,নিরূপাধি কৃষ্ণপ্রেমে ডুবে যদি কেউ সাংসারিক সর্বোপাধি বিনির্মুক্ত হয়ে থাকেন,তবে সেইরকম তথাগতকে উপাধিযুক্ত করে অভিহিত করাও অপরাধজনক। এখানে মহাপ্রভু কৃষ্ণতত্ত্বাভিজ্ঞতারই উৎকর্ষ কীর্তন করে মায়াবাদময় সন্ন‍্যাসধর্মের খর্বতা প্রদর্শন করলেন।শ্রীচরিতামৃতে অপর স্থলেও লিখিত আছে=*
*মায়াবাদীর সন্ন‍্যাসীদের করিতে গর্বনাশ।*
*নীচ শূদ্র দ্বারায় কৈল ধর্মের প্রকাশ।।*
*৪)এও হতে পারে যে মহাপ্রভুর সঙ্গে রামরায়ের যখন এইসব আলাপ আরম্ভ হয়, তখন রামরায় গৌরহরিকে মায়াবাদী সন্ন‍্যাসী বলেই মনে করেছিলেন, সুতরাং প্রেমতত্ত্বের নিগূঢ় কথা হঠাৎ তাঁর কাছে প্রকাশ করতে সঙ্কোচ হচ্ছিল।তাই মহাপ্রভু তাঁর মনের ভাব বুঝেই বললেন, আমাকে মায়াবাদী সন্ন‍্যাসী মনে করে কৃষ্ণভক্তিতত্ত্ব শিক্ষায় বঞ্চিত করিও না।আমি মায়াবাদী সন্ন‍্যাসী হলেও সার্বভৌমের সঙ্গলাভে আমার মন নির্মল হয়েছে। ফলে প্রথমত শ্রীগৌরাঙ্গ দর্শনে রাম রায়ের মনে বিতর্ক উপস্থিত হয়েছিল। উপসংহারে তিনি নিজেও এই কথা প্রকাশ করে বলেছিলেন,যথা শ্রীচরিতামৃতে--*
*এক সংশয় মোর আছয়ে হৃদয়ে।*
*কৃপাকরি কহে মোর তাহার নিশ্চয়ে।।*
*পহিলে দেখিনু তোমা সন্ন‍্যাসী স্বরূপ।*
*এবে তোমা দেখি মুঞি শ‍্যাম গোপরূপ।।*
*🍀ফলে অতি তাড়াতাড়িই রামরায়ের এই সংশয় তিরোহিত হয়েছিল।যাইহোক গৌরহরি রামরায়ের বিনয়ে বাধা দিয়ে বললেন, আমাকে কৃষ্ণতত্ত্ব রাধাতত্ত্ব প্রভৃতি দয়া করে বলতে হবে। রামরায় বিবশভাবে বলতে প্রবৃত্ত হলেন।*
🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌
 ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
      ꧁ ২৫. শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(২৫)শ্রীরামানন্দ রায় কাষ্ঠ পুত্তলিকা*
*🌹🌹শ্রীকৃষ্ণ---তত্ত্ব🌹🌹*
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
*🌷শ্রীমন্মহাপ্রভু রামরায়কে বললেন তুমি শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব ও রাধাতত্ত্ব শোনাও। তাই রামরায় মহাপ্রভুকে শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব শোনানোর পূর্বে আস্বাদন করুন।*
*🌺শ্রীমহাপ্রভু রামরায়ের নিকট সাধ‍্যতত্ত্ব-নির্ণয় শ্রবণ করলেন। অতঃপর শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব ও শ্রীরাধাতত্ত্ব প্রকাশ করার জন্য প্রশ্ন করায় রামরায় অতীব বিনয় ও ভক্তি সহকারে বললেন----*
*------------আমি নট,তুমি সূত্রধার।*
*যেমতে নাচাহ,তৈছে চাহি নাচিবার।।*
*মোর জিহ্বা বীণাযন্ত্র,তুমি বীণাধারী।*
*তোমার মনে যেই উঠে,তাহাই উচ্চরি।।*
*🌻অধুনা মেজমারিজমের বা মোহিনীবিদ‍্যার আলোচনা হচ্ছে, কিন্তু শ্রীনবদ্বীপ-লীলায় সাক্ষাৎ মহাপ্রভু ভক্তগণকে নিয়ে যে মোহিনীবিদ‍্যার প্রভাব প্রদর্শিত করেছেন, জগতের ইতিহাসে সেরকম ব‍্যাপার আর দেখতে পাওয়া যায় না,এটি শ্রীকৃষ্ণের মায়াশক্তি।পরম ভক্তগণ জেনে শুনেও অনেক সময়ে এই কৃষ্ণমায়ায় বিহ্বল হতেন।মহাপ্রভু বললেন--*
*সন্ন‍্যাসী বলিয়া মোরে না কর বঞ্চন।*
*রাধাকৃষ্ণ তত্ত্ব কহি পূর্ণ কর মন।।*
*🌼রামরায় বুঝতে পারছেন যে,তাঁর কাছে শিক্ষার্থিভাবে উপস্থিত হয়েছেন,তিনি অনন্তকোটি ব্রহ্মান্ডের মহাশিক্ষক, মহাগুরু সাক্ষাৎ শ্রীভগবান। কিন্তু তথাপি শ্রীকৃষ্ণমায়ার এমনই প্রভাব, যে রামরায় অগত‍্যা ব্রহ্মাকে যেন বেদ বুঝাতে রত হলেন।রায় মহাশয় বলতে লাগলেন------*
*ঈশ্বর পরম কৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান।*
*সর্ব-অবতারী সর্ব-কারণ প্রধান।।*
*অনন্ত বৈকুন্ঠ আর অনন্ত অবতার।*
*অনন্ত ব্রহ্মান্ড ইহ সভার আধার*।।
*সচ্চিদানন্দদেহ ব্রজেন্দ্রনন্দন।*
*সর্বৈশ্বর্য‍্য সর্বশক্তি সর্বমাধুর্য‍্যপূর্ণ।।*
*🍀এই সংক্ষিপ্ত উক্তিতে লঘু ভাগবতামৃতের ও ষট্ সন্দর্ভের সমস্ত তত্ত্বের সার নিহিত রয়েছে।ক্রমশ এইসব তত্ত্ব বিবৃত করা হবে*
*🌺কৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান।বেদান্তিগণের ব্রহ্ম,যোগীগণের পরমাত্মা ও ভক্তগণের ভগবান একই বস্তু। বেদান্তশাস্ত্রে যিনি পরব্রহ্ম বলে অভিহিত, তিনি শ্রীকৃষ্ণেরই অব‍্যক্ত গুণাবস্থা।*
*🌷কৃষ্ণ শব্দের নানাপ্রকার ব‍্যুৎপত্তি দেখা যায়। ঃ----*
*১)কর্ষতি সর্বান্ স্বকুক্ষৌ প্রলয়কালে যঃ সঃ কৃষ্ণঃ।*
*২)কর্ষতি আত্মসাৎ করোতি আনন্দত্বেন পরিণময়তীতি মনো ভক্তানামিতি যাবৎ যঃ সঃ কৃষ্ণঃ।*
*🍀"কর্ষণাৎ কৃষ্ণঃ।যিনি আকর্ষণ করছেন তিনি কৃষ্ণ। ভক্তগণের চিত্ত আনন্দত্ব দ্বারা পরিণমিত করে আত্মসাৎ করেন।*
*🌷মহাভারতে যানসন্ধিপর্বও কৃষ্ণ শব্দের একটি নিরুক্তি(নিশ্চয়োক্তি) দেখতে পাওয়া যায়,যথা=*
*কৃষির্ভূবাচকঃ শব্দো ণশ্চ নির্বৃতিবাচকঃ।*
*কৃষ্ণস্তদ্ভাবযোগাচ্চ কৃষ্ণো ভবতি সাত্বতঃ।।*
*🌹সূক্ষ্মদর্শী ঋষিকল্প শ্রীধরস্বামী এতদবলম্বনে লিখেছেন=*
*কৃষির্ভূবাচকঃ শব্দো ণশ্চ নির্বৃতিবাচকঃ।*
*তয়োরৈক‍্যাৎ পরং ব্রহ্ম কৃষ্ণ ইত‍্যভিধীয়তে।।*
*🍁শ্রীমদ্ভাগবতে লিখিত হয়েছে =*
*গূঢ়ং পরং ব্রহ্মমনুষ‍্যলিঙ্গম্।*
                     *(ভাগবত=৭|১০|৪৮)*
*🍀কোটি কোটি ব্রহ্মবিদ‍্যাপরায়ণ সংসারত‍্যাগী যোগী ও ঋষি শ্রীকৃষ্ণকে পরব্রহ্ম জেনে ইঁহার উপাসনা করে নির্বৃতি(সুখ-শান্তি) লাভ করেছেন।*
*💧শ্রীকৃষ্ণ,=সর্বাবতারের বীজ,যথা=*
*এতন্নানাবতারাণাং নিধানং বীজমব‍্যয়ম্,*
*যস‍্যাংশাংশেন সৃজ‍্যন্তে দেবতির্য‍্যঙ্ নরাদয়ঃ।*
            *(ভাগবতে=১|৩|৫)*
*🌹শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভে শ্রীজীব গোস্বামীপাদ এই শ্লোক উদ্ধৃত করে লিখেছেন ' নিধান শব্দের ভাবার্থ এই যে সূর্য‍্য যেমন তাঁর নিজ রশ্মিসমূহের আশ্রয়,শ্রীকৃষ্ণও সততই তাঁর অসংখ্য অবতারের আশ্রয়-স্বরূপ।অসংখ‍্য অবতার তাঁহা হতে প্রসূত হলেও তিনি অব‍্যয় অর্থ‍্যাৎ ব‍্যয়-রহিত= সুতরাং নিত‍্য পূর্ণতম।শ্লোকোক্ত "বীজ" অর্থ "উদ্গম স্থান"(মুক্ত স্থান)। অসংখ্য অবতার এই শ্রীকৃষ্ণ হতেই উদ্গত হন।ইনি যে কেবল অবতার সমূহেরই বীজ তা নয়,এই অনন্ত কোটি ব্রহ্মান্ডও ইহা হতেই উদ্ভূত(উৎপন্ন) হয়েছে।*
*যস‍্যাংশাংশাংশভাগেন বিশ্বোৎপত্তিলয়োদয়াঃ।*
*ভবন্তি কিল বিশ্বাত্মং স্তং ত্বাদ‍্যাহং গতিং গতা।।*
    *(শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ ধৃত ভাগবত বচন= ১০|৮৫|৩১)*
*🍁অর্থ‍্যাৎ হে আদ‍্য!আদ‍্যঅর্থ প্রথম, তোমার অংশ-- পুরুষ,পুরুষের অংশ মায়া, মায়ার অংশ গুণসমূহ,ওদের অংশভাব পরমাণুলেশে বিশ্বোৎপত্তি প্রভৃতি হয়ে থাকে। এমন যে তুমি আজ সেই তুমিই আমার গতি।*
*কৃষ্ণ এক সর্বাশ্রয় কৃষ্ণ সর্বধাম।*
*কৃষ্ণের শরীরে সর্ববিশেষ বিশ্রাম*।।
*⭐জড়জগতের সীমাবদ্ধ জ্ঞানে এই বস্তুর ধারনা অসম্ভব। ব্রহ্ম সংহিতা বলেন=*
           *ক্রমাগত*
*ভুল ভ্রান্তি ও বানান মার্জনীয়*
 ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
      ꧁ ২৬. শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(২৬)শ্রীরামানন্দ রায় কাষ্ঠ পুত্তলিকা*
*🍀🍀শ্রীকৃষ্ণ---তত্ত্ব বর্ণন🍀🍀*
""""""""""""""""""""""""""""""'"''"""""""""""""""""
*"যস‍্য প্রভা প্রভাবতো জগদন্ডকোটি- কোটিম্বশেষবসুধাদিবিভূতিভিন্নম্।*
*তদ্ ব্রহ্মনিষ্কলমনন্তমশেষভূতং গোবিন্দমাদি পুরুষং তমহংভজামি"।।*
              *(ব্রহ্ম-সংহিতা=৫|৪০)*
*🌻মায়াবাদের ব্রহ্ম যত বড় তত্ত্বই হন, কিন্তু তিনি শ্রীকৃষ্ণ-তত্ত্বের অঙ্গকান্তি মাত্র, ইহাই ব্রহ্মসংহিতার সিদ্ধান্ত।*
*শ্রীগোবিন্দ অনাদি ও সচ্চিদানন্দবিগ্রহ ।ব্রহ্মসংহিতায় লিখিত আছে =*
*"ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ।*
*অনাদিরাদি র্গোবিন্দঃ সর্বকারণ-কারণম্।।*
                    *(ব্রহ্মসংহিতা=৫|১)*
*শ্রীসনাতন শিক্ষাতেও এই শ্লোকটি উদ্ধৃতকরার পূর্বে শ্রীকবিরাজ লিখেছেন=*
*কৃষ্ণের স্বরূপ বিচার শুন সনাতন*।
*অদ্বয়জ্ঞানতত্ত্ব ব্রজে ব্রজেন্দনন্দন।।*
*সর্বাদি সর্বাংশী কিশোর-শেখর।*
*চিদানন্দদেহ, সর্বাশ্রয় সর্বেশ্বর।।*
*☘এখানে যেমন শ্রীরামানন্দ রায়ের হৃদয়ে শক্তি সঞ্চার করে মহাপ্রভু তাঁর মুখে তত্ত্বকথা শুনছেন, সেইরকম শ্রীসনাতনের হৃদয়ে প্রশ্ন করার শক্তিসঞ্চার করে তাঁর নিকটেও ঐ তত্ত্ব প্রকাশ করেছেন। যথা শ্রীচরিতামৃতে=*
*পূর্বে যৈছে রায় পাশ প্রভু প্রশ্ন কৈল।*
*তার শক্ত‍্যে রামানন্দ তাঁরে উত্তর দিল।।*
*ইহ প্রভুর শক্ত‍্যে প্রশ্ন করে সনাতন।*
*আপনে মহাপ্রভু করেন তত্ত্ব-নিরূপণ।।*
*🍁লীলারহস‍্যের মর্মপরিগ্রহ করা জীববুদ্ধির অতীত।যাইহোক, শ্রীকৃষ্ণ তত্ত্বনিরূপণে ব্রহ্মসংহিতার এই শ্লোক প্রকৃতই এক প্রধানতম সূত্র।*
*শ্রীকৃষ্ণই সর্বাবতারের বীজ, এইজন‍্যই তিনি অবতারী। যথা=*
*"অবতারাবলীবীজমতারী নিগদ‍্যতে।*
                     *(ভক্তিরসামৃতসিন্ধুতে)*
*শ্রীভাগবত বলেন=*
*এতেচাংশকলাঃ পুংসঃ কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ম্।*
*🍀শ্রীভাগবতের প্রথম স্কন্ধের ৩ অধ‍্যায়ে-অবতার-নিরূপণ প্রসঙ্গে উক্ত শ্লোকপাদ লিখিত আছে।ইহার মর্মার্থ এই যে আগেই যে সব অবতারের বর্ণনা করা হয়েছে, সেইসব অবতারের মধ্যে কেউ বা আদ‍্যপুরুষের অংশ,কেউ বা তাঁর কলা, কিন্তু শ্রীকৃষ্ণই স্বয়ং ভগবান্।মৎস‍্য,কূর্ম ও বরাহ প্রভৃতি অবতারই পুরুষের অংশাবতার। শ্রীলঘুভাগবতামৃতে এইসব অবতার, লীলাবতারের মধ্যে পরিগণিত হয়েছেন।কুমার নারদাদি কলা বা অংশাবতার। শ্রীভাগবতামৃত বলেন=*
*জ্ঞানশক্ত‍্যাদি কলয়া যত্রাবিষ্টো জনার্দনঃ।*
*ত আবেশা নিগদ‍্যন্তে জীবা এব মহত্তমঃ।।*
*⭐পদ্মপুরাণে যথা=*
*অবিষ্টোহভূৎ কুমারেষু নারদেচ হরির্বিভুঃ।*
*🌻অল্পশক্তি ও মহাশক্তিভেদে আবেশ দুই প্রকার।মহাশক্ত‍্যাবেশ "অবতার" এবং অল্পশক্ত‍্যাবেশ "বিভূতি" নামে কথিত হয়।কোন অবতার আদ‍্যপুরুষের অংশ, কোন অবতার বা তাঁর কলা।অবতারাদি সম্বন্ধে এইরকম বহুল বিচার লঘুভাগবতামৃতে দেখতে পাওয়া যায়। 🌹(১)স্বয়ংরূপ,২)তদেকাত্মরূপ (বিলাস ও স্বাংশ)৩) আবেশ,৪)প্রকাশ,৫)পুরুষাবতার ৬)গুণাবতার ৭) লীলাবতার ৮)মন্বন্তরাবতার ৯) যুগাবতার ১০)আবেশাবতার ১১)প্রাভব ১২)বৈভব ১৩)পরাবস্থ প্রভৃতি বিচারের দ্রষ্টব‍্য। এছাড়াও শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব সম্বন্ধে প্রচুর বিচার এই গ্রন্থে এবং ষট্ সন্দর্ভে আলোচিত হয়েছে।) কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান্। "ভগবান্ কাকে বলে, শাস্ত্রে তার বিচার আছে।শ্রীভাগবতের সিদ্ধান্ত এই যে =*
*বদন্তি তত্তত্ত্ববিদ স্তত্ত্বং যজজ্ঞানমদ্বয়ম্।*
*ব্রহ্মেতি পরমাত্মেতি ভগবান্ ইতি শব্দত‍্যে।।*
*🍀অর্থ‍্যাৎ তত্ত্ববিদ্ পন্ডিতগণ যে অদ্বয়জ্ঞানকে তত্ত্ব বলেন সেই তত্ত্বকে কেউ ব্রহ্ম,কেউ পরমাত্মা,কেউ বা ভগবান বলে নির্দেশ করেন। অর্থ‍্যাৎ উপনিষদবেত্তাদের মতে এই তত্ত্ব ব্রহ্ম, হৈরণ‍্যগর্ভদের মতে পরমাত্মা এবং সাত্বতদের(ভক্তদের) মতে ইনি ভগবলে অভিহিত হয়ে থাকেন।*
*🌻শ্রীচরিতামৃতে লিখিত আছে =*
*ব্রহ্ম আত্মা ভগবান অনুবাদ তিন*।
*অঙ্গপ্রভা,অংশ,স্বরূপ,তিন বিধেয় চিহ্ন।।*
*অনুবাদ কহি পাছে বিধেয়-স্থাপন*।
*সেই অর্থ কহি শুন শাস্ত্র বিবরণ।।*
*স্বয়ং ভগবান্ কৃষ্ণ,কৃষ্ণ পরতত্ত্ব।*
*কৃষ্ণ পূর্ণানন্দ, কৃষ্ণ পরমমহত্ত্ব।।*
☆ ☆ ☆ ☆
*প্রকাশ বিশেষে তিঁহো ধরে তিন নাম।*
*ব্রহ্ম,পরমাত্মা,আর পূর্ণ ভগবান*।।
*🌹শ্রীচৈতন‍্যচরিতামৃতের আদিলীলায় দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে উদাহরণ সহ ইহার অতি বিশদ ব‍্যাখ‍্যা করা হয়েছে।অন‍্যত্রও লিখিত হয়েছে।*
*জ্ঞান যোগ ভক্তি এই তিন সাধনের বশে।*
*ব্রহ্ম,আত্মা,ভগবান্ ত্রিবিধ প্রকাশে।।*
*🍀ভক্তির সাধনাতেই ভগবত্তত্ত্বের স্ফুর্তি হয়।*
💧💧💧💧💧💧💧💧💧💧💧💧💧
 ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
      ꧁ ২৭. শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(২৭)শ্রীরামানন্দ রায়,কাষ্ঠ পুত্তলিকা,*
*🙏🙏শ্রীকৃষ্ণ--তত্ত্ব🙏🙏*
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
*🌻ভক্তির সাধনাতেই ভগবত্তত্ত্বের স্ফুর্তি হয়। এখন ভগবৎ শব্দের অর্থ, নিরূপণ করা যাচ্ছে।*
*জ্ঞানং বিশুদ্ধং পরমার্থমেক মনন্তরং ত্ববহির্ব্রহ্মসত‍্যম্।*
*প্রত‍্যক্ প্রশান্তংভগবচ্ছব্দসংজ্ঞং যদ্ বাসুদেবং কবয়ো বদন্তি।।*
          *(ল্রীভাগবত=৫|১২|১১)*
*💧ভগবৎ শব্দার্থ সম্বন্ধে শ্রীবিষ্ণুপুরাণ বলেন=*
*যত্তদব‍্যক্ত মজরমচিন্ত‍্য মজমক্ষয়ম্।*
*অনির্দেশ‍্য মরূপঞ্চ পাণিপাদাদ‍্যসংযুক্তম্।।*
*বিভুং সর্বগতং নিত‍্যং ভূতযোনিমকারণম্।*
*ব‍্যাপাব‍্যাপ‍্যং যতঃ সর্বং তদবৈ পশ‍্যন্তিসুরয়ঃ।।*
*তদব্রহ্ম পরমং ধাম তদ্ধেয়ং মোক্ষকাঙ্খিণাম্।*
*শ্রুতিবাক‍্যোদিতং সূক্ষ্মং তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদম্।।*
*তদেতদ্ ভগবদ্বাচ‍্যং স্বরূপং পরমাত্মনঃ।*
*বাচকো ভগবচ্ছব্দস্তস‍্যাদ‍্যস‍্যাক্ষরাত্মনঃ।।*
*🌹শ্রীপাদ শ্রীজীবগোস্বামী মহোদয় ভগবৎ সন্দর্ভে এর যে টীকা করেছেন তার মর্ম এইরকম= এ বচন প্রমাণ সমূহের বিশেষ‍্য-বিশেষণবিশিষ্টতা সম্বন্ধ বিচার করা কর্তব‍্য।"অরূপম্" "পাণিপাদাদ‍্যসংযুতম্" এই দুটি পদ ব্রহ্মাখ‍্যকেবলবিশেষ‍্যাবির্ভাবনিষ্ঠ, "অরূপম্" প্রাকৃতরূপনিষেধসূচক ইত‍্যাদি।*
*অপিচ ঃ-------(আরও)*
*ঐশ্বর্য‍্যস‍্য সমগ্রস‍্য যশস‍ঃ শ্রিয়ঃ।*
*জ্ঞানবৈরাগ‍্যবোশ্চৈব* 
*ষণ্ণাং ভগ ইতীজনা।।*
*জ্ঞানশক্তিবলৈশ্বর্য‍্য বীর্য‍্যতেজাংস‍্যশেষতঃ।*
*ভগবচ্ছব্দ বাচ‍্যানি বিনা হেয়ৈর্গুণাদিভিঃ।।*
*🌺এই দুই শ্লোকের প্রথম শ্লোকে "ভগ" শব্দের অর্থ বলা হয়েছে। ভগ শব্দের উত্তর নিত‍্যযোগে মতুপ্ প্রত‍্যয় করে ভগবৎ শব্দ সাধিত হয়।এতে পূর্ণাবির্ভাব ধ্বনিত হয়েছে। শ্রীভগবৎসন্দর্ভে এইগুলির সম্বন্ধে যে সুবিস্তার আলোচনা করা হয়েছে,বিশেষ জ্ঞানলাভার্থীদের পক্ষে তার মর্ম-অবগতি প্রয়োজনীয়।*
*🌻শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান্, বৈষ্ণব সাহিত‍্যপাঠীদের পক্ষে এ কথা অতি পুরাতন। কিন্তু কি প্রকারে শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ং ভগবত্তা সংস্থাপিত, সন্দর্ভের সে বিচার অতি সূক্ষ্ম।পূজ‍্যপাদ সন্দর্ভকার এর যে নিরুক্তির উল্লেখ করেছেন তা এই=*
*সংভর্তেতি তথাভর্তা ভকারোহর্থদ্বয়ান্বিতঃ।*
*নেতা গময়িতা স্রষ্টা গকারার্থস্তথা মুনে।।*
*ঐশ্বর্য‍্যস‍্য সমগ্রস‍্য বীর্য‍্যস‍্য যশসঃ শ্রিয়ঃ।*
*জ্ঞানবৈরাগ‍্যয়োশ্চৈব ষণ্ণাং ভগইতীঙ্গনা।।*
*বসন্তি তত্র ভূতানি ভূতাত্মন‍্যখিলাত্মনি।*
*সচ ভূতেষ্বশেষেষু বকারার্থ স্ততোহব‍্যয়ঃ।।*
*🌹অর্থ‍্যাৎ ভগবান পদের ভগ অংশের বিচার করা যাচ্ছে। "ভ" অক্ষরের থুই অর্থ=সংভর্তা ও ভর্তা। সংভর্তা শব্দের অর্থ স্বভক্তগণের পোষক। ভর্তা শব্দের অর্থ ধারক ও স্থাপক। "গ" কারের অর্থ তিনটি,নেতা, গময়িতা ও স্রষ্টা।নেতা অর্থ যিনি স্বভক্তি ফলস্বরূপ প্রেমের প্রাপক, তিনিই নেতা।গময়িতার অর্থ স্বলোক প্রাপক।আর স্রষ্টা অর্থ স্বভক্তগণের তত্তৎগুণগণের উদগমিতা। এর অপর অর্থ এই যে সমগ্র ঐশ্বর্য‍্য বীর্য‍্য যশ শ্রী জ্ঞান ও বৈরাগ‍্য এই ছয় গুণের সমষ্টিই ভগ শব্দ বাচ‍্য।ঐশ্বর্য‍্য অর্থে বশীকারিত্ব,বীর্য‍্যমণিমন্ত্রাদির মতো প্রভাব,যশ বাক‍্যমন শরীরের সদ্গ খ‍্যাতি।শ্রী অর্থে সর্বপ্রকার সম্পদ। জ্ঞান অর্থে সর্বজ্ঞত্ব, বৈরাগ‍্য= প্রপঞ্চবস্তুতে অনাসক্তি।*
    *আজ এই পর্যন্ত*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
      ꧁ ২৮. শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(২৮)শ্রীরামানন্দ রায় কাষ্ঠ পুত্তলিকা*
*💧শ্রীকৃষ্ণ-----তত্ত্ব বর্ণন💧*
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
*🌻কিন্তু ভাগবৎ সম্বন্ধে শ্রীপাদ শ্রীজীব গোস্বামী মহোদয় যে লক্ষণ করেছেন তা এই ঃ----*
*"অথ তদেকং তত্ত্বং স্বরূপভূতয়ৈব শক্ত‍্যা কমপি বিশেষং ধর্তু পরাসামপি শক্তীনাং মূলাশ্রয়রূপং তদনুভবানন্দ- সন্দোহান্তর্ভাবিততাদৃশব্রহ্মানন্দানাং ভাগবতপরমহংসানাং তথানুভবৈকসাধকতম তদীয় স্বরূপানন্দশক্তিবিশেষাত্মকভক্তিভাবিতেষ্বন্তর্বহিরপীন্দ্রিয়েষু পরিস্ফুরদবা তদবদেব বিবিক্তাতাদৃশশক্তিশক্তিমত্তাভেদেন প্রতিপাদ‍্যমানং ফা ভগবানিতি শব্দ‍্যতে।*
*⭐এর ভাবার্থ এই যে সেই এক তত্ত্বই বিশেষ বিশেষ ভাবে অনুভূত হয়ে থাকেন। তিনি তাঁর স্বরূপভূত- পরাশক্তিসমূহের অবিবিক্তভাবে (আলাদাভাবে) জ্ঞানীদের নিকট ব্রহ্মভাবে প্রকাশিত হন।তাঁরা তাঁকে ব্রহ্ম বলে জানেন। কিন্তু তিনিই পরাশক্তিসমূহের মূলাশ্রয়। ব্রহ্মানন্দ- বিশিষ্ট মুনিগণ তাঁর অনুভাবানন্দ লাভ করে থাকেন। এটি অমূর্তানন্দ (মূর্তিহীন)। কিন্তু তাঁর স্বরূপানন্দশক্তি বিশেষত্মকভক্তিই সাধকতম। এই ভক্তিভাবিত ভাগবত পরমহংসগণের হৃদয়ে পরমতত্ত্বের যে প্রকার স্ফুর্তি হন, তাই-ই "ভগবান" শব্দ বাচ‍্য। শ্রীভগবানে শক্তি ও শক্তমান্ অচিন্ত‍্য অব‍্যক্তরূপে পৃথকভাবে প্রতিভাত (উজ্জ্বলরূপে প্রকাশ) হয়ে থাকেন।তাঁর স্বরূপানন্দশক্তিবিশেষাত্মক ভক্তিভাবিতচিত্ত ভাগবতপরমহংসগণের অন্তরে বাহিরে ইন্দ্রিয়াদির গোচরে শক্তিশক্তিমত্তার বিচিত্র আলাদাভাবে যে আনন্দময় তত্ত্বেরদিফানিশি স্ফুর্তি হয়,তাই-ই "ভগবান" শব্দ বাচ‍্য।ইহাই ভাগবৎ শব্দের দার্শনিক তত্ত্ব। সুতরাং শ্রীকৃষ্ণই মূর্তানন্দ।অতঃপর শ্রীকৃষ্ণই যে স্বয়ং ভগবান,সেই সম্বন্ধে আলোচনা করব।*
*🙏অত‍্যন্ত গভীর তত্ত্ব সচরাচর যেখানে সেখানে পাওয়া যাবে না।*
*🌻ব্রহ্মতত্ত্ব শ্রীভগবত্তত্ত্বের অন্তর্গত। এই সম্বন্ধে শ্রীপাদ শ্রীজীবগোস্বামী প্রণীত ভগবৎসন্দর্ভে অতীব সূক্ষ্মবিচার পরিলক্ষিত হয়। সেই গ্রন্থ হতে জানা যায় ----*
*"ব‍্যঞ্জিতে ভগবত্তত্ত্বে ব্রহ্ম চ ব‍্যজ‍্যতে স্বয়ম্।*
*🌹অর্থ‍্যাৎ ভগবত্তত্ত্ব প্রকাশিত হলেই ব্রহ্মতত্ত্ব স্বয়ং প্রকটিত হয়ে পড়ে। ভগবত্তত্ত্ব যে মায়ালেশবিবর্জিত ও মায়ার অস্পশ‍্য,(ভগবত্তত্ত্বে মায়া নামক কিছুই নেই।)এই সন্দর্ভে তার বিচার করা হয়েছে। শ্রীচরিতামৃতকার বলেন ঃ---*
*সেই তিন জলশায়ী সর্ব অন্তর্য‍্যামী*।
*ব্রহ্মান্ডবৃন্দের আত্মা যে পুরুষ নামী।।*
*হিরণ‍্য গর্ভের আত্মা গর্ভোদক শায়ী।*
*ব‍্যষ্টিজীব অন্তর্য‍্যামী ক্ষীরোদ শায়ী।।*
*ইহা সভার দর্শনাদ‍্যে আছে মায়াগন্ধ।*
*তুরীয় কৃষ্ণেতে নাহি মায়ার সম্বন্ধ।।*
*🍀ভগবৎসন্দর্ভে লেখা হয়েছে =*
*বিরাট্ হিরণ‍্যগর্ভশ্চ কারণঞ্চেত‍্যুপাধয়ঃ।*
*ঈশস‍্য যৎ ত্রিভির্হীনং তুরীয়ং তৎপদং বিদুঃ।।*
*🌺কিন্তু যদিও উক্ত তত্ত্বত্রয় মায়া নিয়েই প্রকটিত হলেন, কিন্তু তাঁরাও মায়ার পার। সুতরাং ভগবত্তত্ত্ব সম্বন্ধে আর কথা কি?*
*🌷এতদ্বারা প্রকাশিত হল যে যোগ‍্যতাবৈশিষ্ট‍্যের ক্রম প্রাধান‍্যের নিয়মানুসারে আবির্ভাব-বৈশিষ্ট‍্যের প্রাধান‍্য হয়ে থাকে।ব্রহ্মতত্ত্ব ভগবত্তত্ত্বের অন্তর্গত।জ্ঞানের সাধনে ব্রহ্মতত্ত্বের প্রকাশ হয়।ভক্তি জ্ঞানের পরাবস্থা,এই ভক্তির সাধনেই ভগবত্তত্ত্ব প্রকটিত হয়ে থাকে। এই জন্য শ্রীগীতোপনিষদে লেখা হয়েছে।*
*"ভক্ত‍্যা মামভিজানাতি", ভক্তিলভ‍্য স্বনস‍্যরা।*
*🌻এই জন‍্যই ভাগবত বলছেন=*
*ত্বং ভক্তিযোশৈপরিভাবিতহৃৎ সরোজে।*
*আসসে শ্রুতেক্ষিতপথোননু নাথ পুংসাম্।।*
*যদ্ যদ্ধিয়া ত উরুগায় বিভাবয়ন্তি*।
*তৎতদ্ বপুঃ প্রণয়সে সদনুগ্রহায়*।।
*🍀শ্রীজীবগোস্বামীপাদ এই পদ‍্যের "প্রণয়সে" শব্দের অর্থ করেছেন "প্রকর্ষেণ নয়সি,প্রকটয়সি অর্থ‍্যাৎ তুমি ভক্তিযোগশীল যোগীর হৃৎপদ্মে তাঁর বিভাবনা অনুসারে প্রকটিত হও।*
            *ক্রমাগত*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
      ꧁ ২৯. শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(২৯)শ্রীরামানন্দ রায় কাষ্ঠ পুত্তলিকা*
*🙏শুদ্ধ শ্রীকৃষ্ণ--তত্ত্ব বর্ণন🙏*
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
*🌻কিন্তু শ্রীভগবানের এই শ্রীমূর্তি কি কাল্পনিক?শ্রীপাদ শ্রীজীব বলেন=*
*"শ্রুত‍্যেক্ষিতপথ" ইত‍্যনেন কল্পনায়া র্নিরস্তত্বাৎ।*
*🍀অর্থ‍্যাৎ "শ্রুত‍্যেক্ষিতপথ" এই কথা বলাতেই ব‍্যক্তিগত কল্পনা নিরস্ত (ক্ষান্ত বা বিরতি) হয়েছে সেই অদ্বৈয়তত্ত্ব জ্ঞানীব্রহ্মবাদীদের কাছে নিরাকার হলেও জ্ঞানের চরম অবস্থাগামী ভজনশীল পরাভক্তিরসিদ্ধগণের কাছে সর্বদাই ভুবনমোহন শ‍্যামসুন্দররূপে প্রকাশিত। তাই ব্রহ্মসংহিতায় বলেন।*
*"প্রেমাঞ্জনচ্ছুরিতভক্তিবিলোচনেন সন্তঃ সদেব হৃদয়েহপি বিলোকয়ন্তি।*
*যং শ‍্যামসুন্দর মচিন্ত‍্যগুণপ্রকাশং গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি।।"*
*🌷শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব বুঝতে হলে ভগবত্তত্ত্ব বুঝতে হবে।ভক্তিতত্ত্বের বিকাশেই (প্রকাশই)ভগবত্তত্ত্বের স্ফুর্তি(হর্ষ বা উৎসাহ)হলেই কৃষ্ণতত্ত্ব-জ্ঞানের সঞ্চার(এক জায়গা হতে অন‍্য জায়গায় গমন)হয়।কেননা সাধুগণ সততই(সর্বদাই)প্রেমাঞ্জনচ্ছুরিত ভক্তিচক্ষু দ্বারা স্বীয় (নিজ) হৃদয়ে অচিন্ত‍্য-গুণপ্রকাশশীল শ‍্যামসুন্দরকে নিরীক্ষণ(মনোযোগের সঙ্গে দেখা) করে থাকেন। প্রেমাঞ্জনচ্ছুরিত (দেহ মন প্রাণ করে ) ভক্তির দিব‍্যনেত্রই শ‍্যামসুন্দরের ভুবনমোহনরূপ নিরীক্ষণে সমর্থ।*
*🌹শ্রীকৃষ্ণের স্বরূপশক্তির সাহায্য ভিন্ন কেউ কখনও তদীয় (তাঁর বা সেই ব‍্যক্তির) তত্ত্ব জানতে পারেন না।শ্রীকৃষ্ণ আদ‍্যপুরুষের আদি বীজ।শ্রীকৃষ্ণ এই অনন্তকোটি বিশ্বব্রহ্মান্ডের কারণসমূহের বীজকারণ,তিনি অনন্তশক্তির আশ্রয়, তিনি ভগবান অর্থ‍্যাৎ সমগ্র ঐশ্বর্য‍্য বীর্য‍্য যশ শ্রী প্রভৃতির পূর্ণ আধার। কিন্তু শ্রীরামরায় মহাপ্রভুর কাছে যে কৃষ্ণতত্ত্বের কথা উত্থাপন করেন তা আরও সূক্ষ্মতম, সে তত্ত্ব আরও অনেক অনেক উন্নত মানের, যা সাধারণের পক্ষে সত‍্যিই ভীষণ কঠিন।*
*🍀শ্রীকৃষ্ণতত্ত্বের আলোচনা করতে গিয়ে শ্রীপাদ শ্রীজীব গোস্বামী মহোদয় ষট্ সন্দর্ভে যে প্রকার শাস্ত্রবিচার করেছেন তার পরিস্ফুট (স্পষ্টভাবে প্রকাশিত)বঙ্গানুবাদ ও বিশদ ব‍্যাখ‍্যা না করলে এ সম্বন্ধে চিত্তের তৃপ্তিসাধ হয় না। সূক্ষ্ম শাস্ত্রের আলোচনায় সাধারণ পাঠকের কষ্টের কারণ হওয়া অসম্ভব নহে, কিন্তু যে কৃষ্ণতত্ত্ব সচ্চিদানন্দরসময়, শাস্ত্রের উপদেশ ভিন্ন,শাস্ত্রনির্দিষ্ট ভক্তিপূর্ণভজন ছাড়া সেই তত্ত্বের পরিস্ফুরণ অসম্ভব।তাই পরম করুণাময় শাস্ত্রকারগণ শ্রীকৃষ্ণতত্ত্বের বহু আলোচনা করেছেন।আমরা এ সম্বন্ধে সবিশেষ কোন কথার উল্লেখ না করলেও ষট্ সন্দর্ভের জয়ধ্বনি করে এস্থলে কেবল এইমাত্র বলছি যে শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভে শ্রীভাগবতের একটি শ্লোকই শ্রীকৃষ্ণের ভগবত্তা প্রকাশক মূলশ্লোকরূপে আলোচিত হয়েছে এবং সেই শ্লোকের পরিপোষক বহু শ্লোক ও তদ্ ব‍্যাখ‍্যায় শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব, ভজননিষ্ঠ ভক্তপাঠকের হৃদয়ঙ্গম করার উপায় প্রর্দিত হয়েছে।শ্রীপাদসন্দর্ভকার।*
*"এতেচাংশ কলাঃ পুঃসঃ কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ম্ "।*
*🙏এই শ্লোকটিকে "বচন-রাজ" বলে অভিহিত করেছেন।অর্থ‍্যাৎ শ্রীকৃষ্ণের ভগবত্তা-নিরূপণে এই বচনটি রাজার ন‍্যায়।রাজা হলে তাঁর সৈন‍্য থাকা প্রয়োজনীয়,তাই সন্দর্ভকার এঁর প্রতিপোষক অনেক বচন প্রমাণ স্বরূপে উদ্ধৃত করে তার বিচার করেছেন। তিনি এসব করেও ক্ষিন্ত হননি,এই বচন-রাজের অনেক প্রতিনিধি বচন সংগ্রহ করে শ্রীকৃষ্ণের ভগবত্তা শাস্ত্রীয় প্রমাণে দৃঢ়রূপে সংস্থাপিত করেছেন। শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ হতে তাঁর নিজের কথারই উল্লেখ করছি। তদ্ যথা=*
*"তস্মাৎ সাধুক্তং-- এতেচাংশকলাঃ পুঃসঃ কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়মিতি।*
*তদেবমস‍্য বচনরাজস‍্য সেনাসংগ্রহ নিরুপিতঃ ;*
*তথা তস‍্য প্রতিনিধিরূপাণি বাক‍্যান্তরাণি অপি দৃশ্যতে "।।*
*🌹শ্রীচৈতন‍্যচরিতামৃতে এই বচনরাজের যে বিচার দেখা যায়, সেটি শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ হতেই সংগৃহীত।দৃষ্টন্ত স্বরূপ দুই-একটি জায়গার উল্লেখ করা হচ্ছে।শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভে লেখা আছে=*
*অনুবাদ মনুক্তৈব ন বিধেয় মুদীরয়েদিতি বচনাৎ কৃষ্ণস‍্যৈব ভগবত্ত্ব লক্ষণো ধর্মঃ সাধ‍্যতে নতু ভগবতঃ কৃষ্ণত্ব মিত‍্যায়াতম্। ততশ্চ কৃষ্ণস‍্যৈব ভগবত্ত্বলক্ষণধর্মিত্বে সিদ্ধে মূলাবতারত্বমেব সিদ্ধতি, নতু ততঃ প্রাদুর্ভূতত্বম্।*
*🌻শ্রীপাদ কবিরাজ এই বাক‍্যের পূর্বাপর আলোচনা করে এঁর অতি বিশদ ব‍্যাখ‍্যা করেছেন। "পরমব‍্যোম নারায়ণ স্বয়ং ভগবান নন" শ্রীকৃষ্ণই স্বয়ং ভগবান্ এই সিদ্ধান্ত স্থাপনের জন‍্যই "কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ম্" বাক‍্যের অবতারণা। শ্রীপাদ কবিরাজ ষট্ সন্দর্ভের উদ্ধৃত অংশের পৌর্বাপর্য‍্য পর্য‍্যালোচনা করে যে ব‍্যাখ‍্যা করেছেন শ্রীচৈতন‍্যচরিতামৃত হতে এস্থলে তা উদ্ধৃত করে যাচ্ছে। যথা=*
*অনুবাদ না কহিয়ে,না কহি বিধেয়।*
*আগে অনুবাদ কহি পশ্চাৎ বিধেয়।।*
*"বিধেয়" কহিয়ে তারে যে বস্তু অজ্ঞাত।*
*"অনুবাদ" কহি তারে যেই বস্তু জ্ঞাত।।*
*যৈছে কহি এই বিপ্র পরম পন্ডিত।*
*বিপ্র অনুবাদ,ইহার বিদেয় পন্ডিত।*
*বিপ্রত্ত্ব বিখ‍্যাত তার পান্ডিত‍্য অজ্ঞাত।।*
*অতএব বিপ্র আগে,পান্ডিত‍্য পশ্চাৎ।*
*তৈছে ইহা অবতার সব হইল জ্ঞাত।।*
*কার অবতার? এই বস্তু অবিজ্ঞাত*।
*"এতে" শব্দে অবতারের আগে অনুবাদ।।*
*পুরুষের অংশ পাছে বিধেয় সংবাদ।*
*তৈছে কৃষ্ণ অবতার ভিতরে হৈল জ্ঞাত।।*
*তাহার বিশেষ জ্ঞানে সেই অবিজ্ঞাত।*
*অতএব কৃষ্ণ শব্দ আগে অনুবাদ।।*
*স্বয়ং ভগবত্ত্ব পিছে বিধেয় সংবাদ*।।
 *কৃষ্ণের স্বয়ং ভগবত্ত্ব ইহা হৈল সাধ‍্য।*
*স্বয়ং ভগবানের কৃষ্ণত্ব হৈল বাধ‍্য*।।
*🌻কথা এই যে,শ্রীকৃষ্ণই স্বয়ং ভগবান, নারায়ণ স্বয়ং ভগবান নন, এই সিদ্ধান্ত-সংস্থাপনের জন্য "কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ম্" এই বচনরাজ প্রমাণস্বরূপে গ্রহণ করে এর বিচার করা হয়েছে।শাস্ত্রের একটা নিয়ম এই যে অনুবাদ না বলে বেধেয় বলা অসঙ্গত। এই প্রণালী আর্য‍্যশাস্ত্রের সব জায়গায় অবলম্বিত হয়েছে। যা জ্ঞাত, তাইই অনুবাদ নামে খ‍্যাত।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
      ꧁ ৩০. শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(৩০)শ্রীরামানন্দ রায় কাষ্ঠ পুত্তলিকা*
*🙏বিশুদ্ধ শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব বর্ণন🙏*
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
*🍀যেমন "এই বিপ্র পরম পন্ডিত"। এই স্থলে বিপ্র শব্দটি "অনুবাদ" কেননা ইহা জ্ঞাত।বিপ্র যে পন্ডিত এটি জানা ছিল না "পন্ডিত"শব্দ বলায় বিপ্রের এই অজ্ঞাত গুণ ব‍্যক্ত হল। স্বয়ং ভগবান্ পদ শ্রীকৃষ্ণের বিধেয়(বিধিসম্মত বা ন‍্যায় সঙ্গত)বিশেষণ। শ্রীকৃষ্ণ সর্ব অবতারের মূল,ইহা হতেই সমস্ত অবতার,ইনিই স্বয়ং ভগবান।ইঁহা হতেই অপরের ভগবত্ত্বা।শ্রীকৃষ্ণেরই ভগবত্ত্ব,কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ কোন ভগবানের অংশ নন।এই তত্ত্ব প্রকাশের জন্যই মহর্ষি বেদব‍্যাস বলেছেন "শ্রীকৃষ্ণই স্বয়ং ভগবান"।কৃষ্ণতত্ত্ব বিচারে ষট্ সন্দর্ভের বহু জায়গায় এই বচনরাজের উল্লেখ এবং এই সম্বন্ধে সূক্ষ্ম বিচার করা হয়েছে।*
*🌼বৈষ্ণব দর্শনের অভিপ্রায়ানুসারে শ্রীকৃষ্ণতত্ত্বের আলোচনা করা এক মহান্ ব‍্যাপার। কিন্তু পরম কারুণিক শ্রীপাদ গোস্বামীগণ এই সম্বন্ধে সুপ্রণালীবদ্ধরূপে যেরকম আলোচনা করে সন্দর্ভ লিখে রেখেছেন,আমরা তার যৎকিঞ্চিৎ পর্য‍্যালোচনা করতে পারলেও পরমতত্ত্বের অংশকণা পরিজ্ঞানে কৃতার্থ হতে পারি।এই বাসনায় প্রণোদিত(প্ররণা) হয়ে ইতঃপূর্বে এতকিছু সম্বন্ধে যৎকিঞ্চিৎ আলোচনা করা হয়েছে।বিষয় অতি গুরুতর। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ যখন অখিলরসামৃতমূর্তি,শ্রীকৃষ্ণ যখন মূর্তানন্দ,তাঁর তত্ত্ব নীরস বা অপ্রীতিকর হবে কেন? প্রামাণ‍্য গ্রন্থ পড়তে পড়তে কিঞ্চিৎ অভ‍্যাস হলে নীরসতার পরিবর্তে এই সব কথায় সরসবৎ প্রতীয়মান(অনুভূত বা নাম ও নামীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই) হয়।*
*🌹(ক)মহামহোপাধ‍্যায় ঁ চন্দ্রকান্ত তর্কালঙ্কার মহাশয় লিখেছেন,কেউ কেউ নীরসতা জ্ঞানে দর্শনশাস্ত্র পাঠে উপেক্ষা করেন, ফলে সরস ও নীরস কাকে বলে তাঁরা তা জানেন না। যেমন নারকেলের উপরের অংশ অতি কঠিন বলে বোধ হয় তাইনা? কিন্তু যাঁরা একটু পরিশ্রম করেন তাঁরা সেটির স্বাদু সুপেয় সুস্নিগ্ধ উদকাদি ভেতরের জলাদি লাভ করে সেটিকে নীরস না বলে অতীব সরস বলেই প্রকাশ করেন।*
*(খ)শ্রীবৃন্দাবনের সুবিখ‍্যাত শ্রীগৌরাঙ্গভক্ত পন্ডিত শ্রীমন্মধুসূদন গোস্বামীমহোদয় তাঁর নবপ্রকাশিত বৈষ্ণবমতসম্মত বেদভাষ‍্যে গ্রন্থের উপক্রমণিকায় লিখেছেন=*
*🍀দার্শনিক ভাষা কোই দুসরী ভাষা নহী হৈ, কেবল উসকী প্রণালী হৈ।কুচ্ছদিন পড়নে হী সে যহ প্রণালী সরল হো জায়েগী, ঔর ফির বড়ী প্রিয় ঔর মনোহর জান্ পড়েগী।*
*🌺অর্থ‍্যাৎ এই যে দার্শনিক ভাষা দোসর ভাষা নয়।কেবল উহার প্রনালী পৃথক।কিছুদিন পাঠ করলেই উহা সরল হয়ে যায়।এমন কি উহা তখন অপরপক্ষে বড় প্রিয় ও মনোহরবৎ প্রতিভাত হয়।*
*🌻ফলে শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব, ও শ্রীরাধাতত্ত্ব প্রভৃতির কিঞ্চিৎ জ্ঞান না হলে ব্রজরসের জ্ঞানলাভ অসম্ভব, স্বাদ গ্রহণ তো দূরের কথা।ব্রজরস বা অকৈতব কৃষ্ণপ্রেম বুঝাবার জন্যই পরম দয়াল গৌরচন্দ্র শ্রীপাদ স্বরূপ দামোদর ও রামানন্দ রায় মহাশয় দ্বারা কেবল রসের আলোচনায় রসের বিশুদ্ধি-সংরক্ষণ অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং তা হতেই ষমাজে নানাপ্রকার দুষ্টমত প্রচলিত হতে আরব্ধ হয় ব্রজের রস বুঝবার স্পৃহা হলে,পরম কারণিক শ্রীপাদ গোস্বামীপাদগণের শ্রীগ্রন্থের মর্ম যৎকিঞ্চিৎ বুঝবার চেষ্টা করা একান্ত কর্তব‍্য।তবে ভজননিষ্ঠ সাধকগণের পক্ষে স্বতন্ত্র কথা।ভজন সাধনবলে তাঁদের হৃদয়ে যে তত্ত্বের স্ফুর্তি হয়, অজ্ঞানব‍্যক্তি কোটি কোটি জন্মেও তা লাভ করতে পারেন না। কিন্তু শ্রদ্ধা ভক্তি সহকারে লীলা ও তত্ত্ব অধ‍্যয়ন বা শ্রবণ করাও সাধন বিশেষ।কেননা তাতেও শ্রীভগবানেই চিত্ত আকৃষ্ট হয়ে থাকে।শ্রীরামানন্দের উপদেশ আলোচনা করতে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণতত্ত্বাদি সম্বন্ধে কতকগুলি শাস্ত্রীয় কথা নিয়ে কেন প্রবন্ধ-বিস্তার করা যাচ্ছে ত‍্য সম্বন্ধে প্রাগুক্ত(পূর্বোক্ত) যুক্তিই আমার একমাত্র কৈফিয়ত।এখন আবার প্রকৃত প্রস্তাবের অনুসরণ করছে।*
*🌹মায়াবাদ বৌদ্ধবাদেরই ছায়া বিশেষ।বৌদ্ধ দর্শন ব্রহ্ম স্বীকার করেন না,মায়াবাদ-ব্রহ্ম স্বীকার করেন, কিন্তু সে ব্রহ্ম কেবল একটি কথার কথা মাত্র।কেননা,তাঁর কোনও শক্তি নাই।যে সকল উপায়ে পদার্থের অস্তিত্ব উপলব্ধ হয়,মায়াবাদীদের ব্রহ্মে তার কোনও পরিচয় পাওয়া যায় না।মায়াবাদী ব্রহ্ম সর্বশক্তি বিবর্জিত।অথচ ব্রহ্ম-সূত্রের ভাষ‍্যে মায়াবাদী বলেন, ব্রহ্ম হতেই এই জগতের উৎপত্তি স্থিতি ও লয়। অদ্ভুত অসামঞ্জস্য।*
*🌷যাইহোক, বৈষ্ণব বেদান্তীগণ ব্রহ্মে শক্তির অস্তিত্ব স্বীকার করেন। এঁরা বলেন ভগবত্তা ভিন্ন ব্রহ্মের ব্রহ্মত্বই অসিদ্ধ। ব্রহ্ম বললেই "ভগবান্" বুঝতে হবে।অশেষকল‍্যাণগুণময় পুরষই ভগবান ; ইনি অনন্তশক্তিময়। ভগবানের শক্তিগুলি প্রধানতঃ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত হয়েছে।তদ্ যথা=স্বরূপ শক্তি, তটস্থ শক্তি ও মায়া শক্তি।স্বরূপশক্তির অপর নাম অন্তরঙ্গা শক্তি,তটস্থ শক্তির অপর নাম জীবশক্তি,মায়াশক্তির নাম বহিরঙ্গা শক্তি।*
*🍀স্বরূপশক্তি আবার তিন ভাগে বিভক্ত=সন্ধিনী,সম্বিদ্ ও হ্লাদিনী।ইহাই বেদান্তের স্বীকৃত সৎ,চিৎ ও আনন্দ।*
🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
      ꧁ ৩১. শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(৩১)শ্রীরামানন্দ রায় কাষ্ঠ পুত্তলিকা*
*🙏বিশুদ্ধ শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব বর্ণন🙏*
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
*🌻এই কয়েকটি কথায় শ্রীভগবান, শ্রীভগবানের বিভূতি(ঐশ্বর্য‍্য বা শক্তি), জীব ও বিশাল বিশ্ব-ব্রহ্মান্ডের সকল প্রকার তত্ত্বই(স্বরূপ,সত‍্য ও যথার্থ রূপ) নিরূপিত হয়েছে।শ্রীবিষ্ণুপুরাণের প্রমাণ-বচনে এই তিন শক্তির উল্লেখ আছে।যথা=*
*"বিষ্ণুশক্তিঃ পরা প্রোক্তা ক্ষেত্রজ্ঞাখ‍্যা তথাপরা।*
*অবিদ‍্যা কর্মসংজ্ঞান‍্যা তৃতীয়া শক্তিরিষ‍্যতে।।*
*যয়া ক্ষেত্রজ্ঞ-শক্তিঃ সা বেষ্টিতা নৃপ সর্বগা।*
*সংসারতাপানখিলানবাপ্নোত‍্যনুসন্ততান্ "।।*
                        *(বিষ্ণুপুরাণ=৬|৭|৬০)*
*অপিচ অর্থ‍্যাৎ আরও=*
*"হ্লাদিনী সন্ধিনী সংবিত্তয‍্যেকা সর্বসংশ্রয়ে।*
*হ্লাদতাপকরী মিশ্রা ত্বয়ি নো গুণবর্জিতে "।।*
                  *(বিষ্ণুপুরাণ=১|১২|৪৮)*
*🍀শ্রীচরিতামৃতে এই তিনটি শ্লোক অবলম্বনে লিখা হয়েছে =*
*☆☆☆☆☆☆☆--অনন্ত বিভেদ।*
*অনন্তরূপে একরূপ নাহি কিছু ভেদ।।*
*চিচ্ছক্তি,স্বরূপশক্তি অন্তরঙ্গা নাম*।
*তাহার বৈভবানন্ত বৈকুন্ঠাদি ধাম*।।
*মায়াশক্তি বহিরঙ্গা জগৎ কারণ।*
*তাহার বৈভবানন্ত ব্রহ্মান্ডের গণ*।।
*জীবশক্তি তটস্থাখ‍্য-- নাহি তার অন্ত।*
*মুখ‍্য তিন শক্তি তার বিভেদ অনন্ত।।*
*এমত স্বরূপগণ,আর তিন শক্তি।*
*সভার আশ্রয় কৃষ্ণ,কৃষ্ণ সভার স্থিতি।।*
*যদ‍্যপি ব্রহ্মান্ডগণের পুরুষ আশ্রয়।*
*স্বয়ং ভগবান্ কৃষ্ণ-- কৃষ্ণ সর্বাশ্রয়।।*
*পরম ঈশ্বর কৃষ্ণ সর্ব শাস্ত্রে কয়।*
        *(শ্রীচরিতামৃত, আদি ৩ অধ‍্যায়)*
*☘অপিচ=*
*সৎ চিৎ আনন্দময় ঈশ্বর স্বরূপ।*
*তিন অংশে চিচ্ছক্তি হয় তিন রূপ।।*
*আনন্দাংশে হ্লাদিনী,সদংশে সন্ধিনী।*
*চিদংশে সংবিৎ যারে জ্ঞান করি মানি।।*
*অন্তরঙ্গা চিচ্ছক্তি,তটস্থা জীবশক্তি।*
*বহিরঙ্গামায়া তিনে করে প্রেমভক্তি।।*
             *(শ্রীচৈঃ মঃলীঃ ৬ষ্ঠ পরিঃ)*
*আরও পাই=*
*কৃষ্ণের স্বরূপ অনন্ত বৈভব অপার।*
*চিচ্ছক্তি মায়াশক্তি জীবশক্তি আর।।*
*বৈকুন্ঠ ব্রহ্মান্ডগণ-- শক্তি কার্য‍্য হয়।*
*স্বরূপশক্তি, শক্তি কার্য‍্যের কৃষ্ণ সমাশ্রয়।।* 
                  *(ঐ= ২০ পরিচ্ছেদ)*
*অপিচ=*
*অনন্তশক্তির মধ্যে কৃষ্ণের তিনশক্তি প্রধান।*
*ইচ্ছাশক্তি,জ্ঞানশক্তি,ক্রিয়াশক্তি নাম।।*
*ইচ্ছাশক্তি প্রধান কৃষ্ণ ইচ্ছায় সর্বকর্তা।*
*জ্ঞানশক্তি প্রধান বাসুদেব অধিষ্ঠাতা।।*
*ইচ্ছা জ্ঞান ক্রিয়া বিনা না হয় সৃজন।*
*তিনের তিন শক্তি মিলি প্রপঞ্চ-রচন।।*
*ক্রিয়া-শক্তি-প্রধান সঙ্কর্ষণ বলরাম।*
*প্রাকৃতাপ্রাকৃত সৃষ্টি করেন নির্মাণ।।*
*অহঙ্কারে অধিষ্ঠাতা কৃষ্ণের ইচ্ছায়।*
*গোলোক বৈকুন্ঠ সৃজে চিচ্ছক্তি দ্বারায়।।*
*যদ‍্যপি অসৃজ‍্য নিত‍্য চিচ্ছক্তি-বিলাস।*
*তথাপি সঙ্কর্ষণ ইচ্ছায় তাহার প্রকাশ।।*
*মায়াদ্বারা সৃজে তিঁহো ব্রহ্মান্ডের গণ।*
*জড়রূপা প্রকৃতি নহে,ব্রহ্মান্ড কারণ।।*
*জড় হৈতে সৃষ্টি নহে,ঈশ্বর-শক্তি বিনে।*
*তাহাতে সঙ্কর্ষণ করে শক্তি আধানে।।*
*ঈশ্বরের শক্ত‍্যে সৃষ্টি করয়ে প্রকৃতি*।
*লৌহে যেন অগ্নশক্ত‍্যে হয় দাহশক্তি।।*
*🌻ইহা গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণের ভগবত্তত্ত্বের ও বিশ্বতত্ত্বের (Cosmogony) দিগ্ দর্শন মাত্র। এইসব কথার মধ্যে পূর্ণ মাত্রায় বৈজ্ঞানিক,দার্শনিক ও আধ‍্যাত্মিকতত্ত্ব ঘনীভূতাকারে বিদ‍্যমান রয়েছে। বিষ্ণুপুরাণের উক্ত এতৎ সম্বন্ধীয় শ্লোকগুলি শ্রীচৈতন‍্যচরিতামৃতে উদ্ধৃত হয়েছে।ঐ সকল শ্লোকে মৈত্রেয় মুনি,পরাশরমুনিকে জিজ্ঞাসা করছেন।=*
*"নির্গুণস‍্যাপ্রেময়স‍্য শুদ্ধস‍্যাপ‍্যমলাত্মনঃ।*
*কথং স্বর্গাদিকর্তৃত্বং ব্রহ্মণেহপ‍্যভ‍্যুপাগতম্"।।*
*🌺এর প্রত‍্যুত্তরে পরাশর বলছেন=*
*শক্তয়ঃ সর্বভাবানামচিন্ত‍্যজ্ঞানগোচরাঃ।*
*যতোহতো ব্রহ্মণস্তাস্তু সর্গাদ‍্যা ভাবশক্তয়ঃ।*
*ভবন্তি তপতাং শ্রেষ্ঠ পাবকস‍্য যথোষ্ণতা"।।*
*🍀শ্রীধরস্বামী ইহার যে টীকা করেছেন ভগবৎসন্দর্ভে উক্ত টীকা উদ্ধৃত হয়েছে।সেটির মর্ম সম্বন্ধে শ্রীজীব এই মন্তব‍্য প্রকাশ করেছেন=*
*🌻এই শ্লোকে ব্রহ্মের সৃষ্টি-আদি কর্তৃত্ব শক্তি সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু কথা এই যে ব্রহ্মকে যখন নির্গুণ বলা হ'ল, তখন সেই নির্গুণের আবার সৃষ্টি আদি করার শক্তি কোথায়। শ্রীধরস্বামীর মতে উক্ত শ্লোকের অর্থ এইরকম=*
*🍀ব্রহ্ম নির্গুণ (সত্ত্বাদিগুণরহিত), অপ্রমেয়(দেশকালাদি দ্বারা অপরিচ্ছন্ন) শুদ্ধ (অদেহ,সহকারীশূন‍্য) অমলাত্মা (পুণ‍্যপাপ সংস্কার বিহীন,অথবা রাগদ্বেষাদিশূন‍্য)এইরকম স্বভাব বিশিষ্ট ব্রহ্মের সৃষ্টি করবার কর্তৃত্ব থাকতে পারে কি?যাঁর প্রবৃত্ত আছে,কাজ করবার সামর্থ‍্য আছে, এ জগতের তিনিই কর্তা এবং তাঁর দ্বারায় কার্য‍্য নিষ্পত্তি হয়ে থাকে।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
      ꧁ ৩২. শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
: *(৩২)শ্রীরামানন্দ রায় কাষ্ঠ পুত্তলিকা*
*🙏বিশুদ্ধ শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব বর্ণন🙏*
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
*☘আমরা ঘট আদি যেসব সৃষ্ট পদার্থ দেখতে পাই,তা দেখে আমাদের ধারণা হয় যে,এইসব সৃষ্ট পদার্থের অবশ্যই একজন কর্তা আছেন।যিনি কর্তা অবশ্যই তাঁর কার্য‍্য করবার বাসনা এবং তদপুযোগিনী শক্তি আছে। কিন্তু ব্রহ্ম যদি নির্গুণ হন, তবে তাঁকে কিভাবে সৃষ্টিকর্তা বলা যেতে পারে? এই আশঙ্কা স্বাভাবিক। এই আশঙ্কা পরিহারের (বর্জনের) জন্য পূজ‍্যপাদ শ্রীধরস্বামী পরিস্ফুট (স্পষ্টভাবে প্রকশিত) ব‍্যাখ‍্যা করেছেন।তিনি বলেন,এই প্রশ্নের সদুত্তর এই শ্লোকেই প্রদত্ত(দেওয়া) হয়েছে। শ্লোকে বলা হয়েছে,ইহ জগতে দেখতে পাওয়া যায় যে মণি- মন্ত্রাদির শক্তিই তর্কযুক্তি দ্বারা বুঝা যেতে পারে না।কেননা,সকল শক্তিই অচিন্ত‍্যজ্ঞানগোচর ; মণিমন্ত্রাদির শক্তি যেমন অচিন্ত‍্যজ্ঞানগোচর ও স্বভাবসিদ্ধ, আগুনের দাহিকা শক্তি যেমন অচিন্ত‍্যজ্ঞানগোচর স্বভাবসিদ্ধ, ব্রহ্মের সৃষ্টি প্রভৃতি কার্য‍্যও তেমনি অচিন্ত‍্যজ্ঞানগোচর ও স্বাভাবসিদ্ধ। সুতরাং ব্রহ্ম, গুণাদিহীন হলেও ব্রহ্ম তিনি অচিন্ত‍্যশক্তিমান, তখন এ অবস্থায় জগৎ সৃষ্টি আদি কার্য‍্য তাঁর পক্ষে অসম্ভব নহে। শ্রুতিতে লেখা রয়েছে =*
*ন তস‍্য কার্য‍্যং করণঞ্চ বিদ‍্যতে ন তৎ সমশ্চাভ‍্যধিকশ্চ দৃশ্যতে।*
*পরাস‍্য শক্তি র্বিবিধৈব শ্রূয়তে স্বাভাবিকী জ্ঞানবলক্রিয়াচ"।।*
       *(শ্বেতাশ্বেতরোপনিষদে=৬|৮)*
*মায়ান্তু প্রকৃতিং বিদ‍্যান্মায়িনন্তু মহেশ্বরম্।*
*তস‍্যাবয়বভূতৈস্তু ব‍্যাপ্তং সর্বমিদং জগৎ।। (ঐ=৪|১০)*
*🌹ফলে মণিমন্ত্রাদির প্রভাব যেমন স্বাভাবিক,ব্রহ্মশক্তিও সেইরকম স্বাভাবিকী এবং সেটি তর্কযুক্তির অতীত বা বাইরে।এই সম্বন্ধেও একটি শ্রুতি উদ্ধৃত(কোন রচনা বা প্রামাণ্য উক্তি হতে আহরণ) হয়েছে।যথা=*
*🍀স বা ☆ সর্বস‍্য বশী সর্বেস‍্যশানঃ সর্বাস‍্যধিপতিরিত‍্যাদি*।
           *(বৃহদারণ‍্যক=৪|৪|২২)*
*🌹এইসব শ্রুতিদ্বারা স্পষ্টতঃ প্রতিপন্ন (প্রমাণসিদ্ধ)হচ্ছে যে ব্রহ্মই এইসবের হেতু এবং তা হতেই এই বিশাল বিশ্বব্রহ্মান্ড প্রাদুর্ভূত হয়েছে।*
*🌻জীব শ্রীকৃষ্ণের নিত‍্যদাস এবং শ্রীকৃষ্ণের তটস্থাশক্তি, এটিই জীবের স্বরূপ।ব্রহ্মসূত্রের ২ অঃ ৩ পাদের ৪৩ সূত্রের (অপিস্মর্য‍্যতে) শ্রীগোবিন্দ-ভাষ‍্যে স্মৃতির একটি প্রমাণ -কথা উদ্ধৃত হয়েছে।যথা=*
*"জ্ঞানাশ্রয়ো জ্ঞানগুণশ্চেতনঃ প্রকৃতেঃ পরঃ।*
*ন জাতো নির্বিকারশ্চ একরূপঃ স্বরূপভাক্।।*
*অণুর্নিত‍্যো ব‍্যাপ্তিশীলশ্চিদানন্দাত্মকস্তথা।*
*অহমর্থোব‍্যয়ঃ সাক্ষী ভিন্নরূপঃ সনাতনঃ।।*
*অদাহ‍্যোহচ্ছেদ‍্যোহক্লেদ‍্যঃ অশোষ‍্যোহক্ষর এব বা।*
*এবমাদিগুণৈর্যুক্তঃ শেষভূতঃ পরস‍্য বৈ।।*
*মকারেণ‍্যোচ‍্যতে জীবঃ ক্ষেত্রজ্ঞঃ পরবান্ সদা।*
*"দাসভূতো হরেরেব নান‍্যস‍্যৈব কদাচন"।।*
*🌷অতএব জীব শ্রীহরির দাস, অপরের দাস কখনও নহে এটিই সিদ্ধান্ত। শ্রীনারদ পঞ্চরাত্রে জীবকে "তটস্থ" বলা হয়েছে, যথা=*
*যৎতটস্থন্তু চিদ্রূপং স্বসম্বেদ‍্যাদবিনির্গতং।*
*রঞ্জিতং গুণরাগেণ সজীব ইতি কথ‍্যতে"।।*
*🌺অর্থ‍্যাৎ চিৎ পদার্থ,স্বীয় সম্বেদ‍্য, মূল পরমপূর্ণ পদার্থ হতে বিনির্গত এবং তটস্থ হয়ে থাকেন।গুণরাগ দ্বারা রঞ্জিত তটস্থ চিদ্রূপই জীব সংজ্ঞায় অভিহিত।*
*🙏শক্তি বিচার ও নির্বিশেষবাদ খন্ডন🙏*
*🍀আগেই বলা হয়েছে -- নির্বিশেষ ব্রহ্মবাদি-বেদান্তিগণ ব্রহ্মের গুণশক্তি প্রভৃতি স্বীকার করেন না।বৈষ্ণব বৈদান্তিগণ তাঁদের উক্ত সিদ্ধান্ত শাস্ত্র- যুক্তি প্রমাণবলে খন্ডিত করেছেন। শক্তিতত্ত্ব সম্বন্ধে সর্বপ্রথমে শ্রীজীব গোস্বামীকৃত ভগবৎসন্দর্ভ হতে আলোচনা করা হচ্ছে ঃ-----*
*"তত্র বস্তু তস‍্য সশক্তিত্বমাহ ঃ---*
*"বেদ‍্যং বাস্তবমত্রবস্তু ইতি "।*
*অস‍্য বিশেষণাভ‍্যামেব "শিবদং" "তাপত্রয়োন্মূলনমিতি"।*
*শিবং পরমানন্দং তদ্দানঞ্চ স্বরূপশক্ত‍্যা।*
*তাপত্রয়ং= মায়া শক্তিকার্য‍্যম্, তদুন্মুলনঞ্চ তয়া (স্বরূপশক্ত‍্যা)।।*
*🌻অর্থ‍্যাৎ সেই পরমবস্তু যে শক্তিশালী তৎসম্বন্ধে বলা হয়েছে ঃ-- শ্রীমদ্ভাগবতের ১|১|২ শ্লোকে এর প্রমাণ আছে। এই শ্লোকের "শিবদং" এবং "তাপত্রয়ন্মূলনম্" এই দুটি বিশেষণ পদ আছে।তাপত্রয়= মায়াশক্তির কাজ। স্বযূপশক্তির প্রভাবেই ত্রিতাপের উন্মূলন (বিচ্ছেদ) হয়।মায়াশক্তি ও স্বরূপশক্তি পরস্পর বিরুদ্ধ ; ওদের বৃত্তি ও আপন আপনগণ পরস্পরের বিরুদ্ধ, আরও কথা এই যে ওরা অনেক, কিন্তু তাহলেও এইসব পরস্পরবিরুদ্ধ বৃত্তি ও গণের নিদান এক।*
           *ক্রমাগত*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
      ꧁ ৩৩. শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
 *(৩৩)শ্রীরায় রামানন্দ কাষ্ঠ পুত্তলিকা*
*🙏বিশুদ্ধ শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব বর্ণন🙏*
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""'
*যচ্ছক্তয়ো বদতাং বাদিনাং বৈ বিবাদসম্বাদভুবো ভবন্তি।*
*কুর্বন্তি চৈষাং মুহুরাত্মমোহং তস্মৈ নমোহনন্তগুণায় ভূম্নে।।*
                               *(ভাঃ=৬|৪|২৬)*
*🍀অর্থ‍্যাৎ যাঁর শক্তসমূহ বাদী ও বিবাদিগণের বাদ প্রতিবাদের স্থানস্বরূপ, এবং যাঁর শক্তিসমূহ এইসব বাদিপ্রতিবাদিগণের আত্মমোহর সৃষ্টি করে থাকেন, আমি সেই অনন্তগুণশালী ভূমা(সর্বব‍্যাপী) পুরুষকে প্রণাম করি।*
*🌻ফলে ব্রহ্মস্বরূপ সম্বন্ধে জগতে বাদবিসম্বাদের অত‍্যন্ত আধিক‍্য (বেশী) পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। প্রথমে দেখুন, স্বজাতীয়বিজাতীয়স্বগতভেদাসহিষ্ণু অদ্বৈত‍বাদী।এই অদ্বৈতবাদীদের সঙ্গে ষোড়শ পদার্থবাদী নৈয়ায়িকদের মতভেদ জন্য বিসম্বাদ হয়।মীমাংসকদের সঙ্গে বৈশেষিক মতের বিরোধ দেখতে পাওয়া যায়, আবার স্বভাববাদীদের ও সাঙ্খ‍্যগণের স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র অভিমত। শ্রীভাগবতের টীকাকার শ্রীমদ্ বীর রাঘবাচার্য‍্য পৃথিব‍্যাদিকেও ভগবৎশক্তি বলে নির্দেশ করেছেন। "শক্তিশব্দেন পৃথিব‍্যাদর উচ‍্যন্ত‍ে"।ইনি এর এই উক্ত সপ্রমাণ করার জন্য শ্রুতি স্মৃতির প্রমাণ কথা উদ্ধৃত করেছেন। যথা=*
*যস‍্যাত্মা শরীরম্, যস‍্য পৃথিবী শরীরম্, যস‍্যাক্ষরং শরীরম্, যস‍্যাব‍্যক্তং শরীর মাত্মন আকাশঃ সম্ভূতঃ তোয়েন জীবান্ বিসসর্জ ভূম‍্যাং নাসদাসীম্নো সদাসীৎ তদানীং তম আসীৎ।*
*⭐আবার অন‍্যত্র স্মৃতি প্রমাণ উদ্ধৃত হয়েছে,যথা=*
*তথাচ ভগবান পরাশরঃ==*
*"একদেশস্থিতস‍্যাপ্নের্জ‍্যোৎস্নাবিস্তারিণী যথা।*
*পরস‍্য ব্রহ্মণঃশক্তি স্তবদমখিলং জগৎ"।।*
                           *(বিষ্ণুপুরাণ)*
*🌹জগৎ সৃষ্টি সম্বন্ধেও বহু বাদবিবাদ আছে।ব্রহ্মবাদীবৈষ্ণব বেদান্তীদের মতে ভগবান অনন্ত শক্তিময় ও অনন্ত কল‍্যাণময়।এঁরা সাংখ‍্য বৈশেষিক প্রভৃতির সিদ্ধান্ত খন্ডন করে বলেন প্রধানাদির বিশ্বরচনার যোগ‍্যতা নাই, জগৎরচনা ভগবৎশক্তিরই কাজ, এবং এতে কেবল সেই ভগবৎশক্তিরই যোগ‍্যতা আছে। এই বিশ্বের সৃষ্টি,নিরমন ধারণ, রক্ষণ,পালনাদির প্রয়োজনীয় অনন্ত গুণ কেবল শ্রীভগবানেরই আছে। শাস্ত্র বলেন "তিনি অখন্ডকল‍্যাণগুণাত্মক" শ্রীমৎ শুকদেব কৃত সিদ্ধান্তপ্রদীপনাম্নী ব‍্যাখ‍্যাতেও এইরকম অভিমত দেখা যায়।এই বিশাল বিশ্বব্রহ্মান্ড যে জ্ঞানময় সশক্তি পুরুষের সৃষ্ট, ইহাই শ্রীপাদ বৈষ্ণব পন্ডিতগণের অভিমত।*
*🌺পূজ‍্যপাদ সন্দর্ভকার আরও একটি পদ‍্য উদ্ধৃত করেছেন, যথা=*
*যস্মিন্ বিরুদ্ধগতয়ো হ‍্যনিশং পতন্তি বিদ‍্যাদয়ো বিবিধ শক্তয় আনুপূর্ব‍্যা।*
*তদ্ ব্রহ্ম বিশ্বভবমেকমনন্তমাদ‍্য- মানন্দমাত্রমবিকারমহং প্রপদ‍্যে"।।*
              *(ভাগবত=৪|৯|১৬)*
*🍀অর্থ‍্যাৎ বিদ‍্যাদি নানান আনুপূর্ব‍্য (আগেপরে বা পরম্পরা) শক্তিসমূহ পরস্পর বিরোধী হলেও যে একমাত্র ব্রহ্ম হতে অর্হিনশ উদ্ভূত হয়,সেই বিশ্ববীজ,আদ‍্য ও এক আনন্দমাত্র অবিকার ব্রহ্মের শরণাপন্ন হলাম।*
*🌻শ্রীপাদ শ্রীজীব গোস্বামী মহোদয় সন্দর্ভে "আনুপূর্ব‍্যা" পদের ব‍্যাখ‍্যায় লিখেছেন= "স্বস্ববর্গে উত্তমমধ‍্যম- কনিষ্ঠভাবেন বিদ‍্যামানা"। "পতন্তি" পদের ব‍্যাখ‍্যায় লেখা হয়েছে, "প্রবর্তন্তে--- স্বস্ব ব‍্যাপারং প্রকুর্বন্তি"। অর্থ‍্যাৎ এরা আনুপৌর্বিক ক্রমে বিদ‍্যমান থেকে স্ব-স্ব কাজ সম্পন্ন করে থাকে। এই প্রমাণেও ব্রহ্মের সশক্তিত্ব সপ্রমাণ হয়েছে। অপর প্রমাণ=*
*"সর্গাদি যোহস‍্যানুরনদ্ধি শক্তিভি দ্রব‍্যক্রিয়াকারকচেতনাত্মভিঃ।*
*তস্মৈ সমুন্নদ্ধবিরুদ্ধশক্তয়ে নমঃ পরস্মৈ পুরুষায় বেধসে"।।*
                      *(ভাঃ=৪|১৭|২৮)*
*🌹যিনি দ্রব‍্য (মহাভূত গণ) ক্রিয়া (ইন্দ্রিয় গণ) কারক ( দেবতা) চেতনা (বুদ্ধি) আত্মা (অহঙ্কার), এই সব শক্তিদ্বারা এই জগতের সৃষ্টি-স্থিতি ও প্রলয় সাধন করেন সেই সমুন্নদ্ধ(সবারউর্ধে) বিরুদ্ধ শক্তিশালী মহান পরম পুরুষকে নমস্কার করি।*
*🌺এইসব কথা দ্বারা সপ্রমাণ হল যে,যিনি পরমতত্ত্ব, তিনি তিনি শক্তিগণের বিরুদ্ধ শক্তিগণের সমাশ্রয়।শক্তির অনন্তত্ব পরিলক্ষিত হলেও শক্তির আধার স্বরূপ শ্রীভগবান এক ও অদ্বিতীয়। এই শক্তিগণ যে অচিন্ত‍্য,পূজ‍্যপাদ সন্দর্ভকার শ্রীজীব গোস্বামী মহোদয় তাহাও প্রমাণ করেছেন=*
*"তাসামচিন্ত‍্যত্বমাহ ঃ--- "আত্মেশ্বরহতর্ক‍্য সহস্র শক্তিঃ ইতি*
*🍀অর্থ‍্যাৎ সেই আত্মেশ্বর বহুল অচিন্ত‍্যশক্তিবিশিষ্ট। শ্রীপাদ শ্রীজীব গোস্বামী লিখেছেন= বেদান্ত সূত্রেও অচিন্ত‍্যত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় যথা=*
*(১) শ্রুতস্তু শব্দমূলত্বাৎ! ২অঃ ১পাঃ ২৭ সূত্র।*
*🍀এই সূত্রটির শাঙ্করভাষ‍্যে অচিন্ত‍্যত্ব সম্বন্ধে ব‍্যাখ‍্যা আছে তদ্ যথা=*
*"লৌকিকানামপি মণিমন্ত্রৌষধী প্রভৃতীনাং দেশকালনিমিত্তদেশমন্তরেণ কেবলেন তর্কেণাবগন্তুং শক‍্যন্তে। অস‍্য বস্তুন এতাবত‍্য এতৎসহায়া,এতদ্বিধয়া, এতৎপ্রয়োজনাশ্চ শক্তয় ইতি ; কিমুতাহ চিন্তপ্রভাবস‍্য ব্রহ্মণো রূপং বিনা শব্দেন নিরূপ‍্যেত।তত্রাহুঃ পৌরাণিকাঃ=*
*"অচিন্ত‍্যাঃ খলু যে ভাবা ন তাংস্তর্কেণ যোজয়েৎ।*
*প্রকৃতিভ‍্যঃ পরং যদ্ধি তদচিন্তস‍্য লক্ষণম্"।।*
*🌹অর্থ‍্যাৎ এই প্রত‍্যক্ষ পরিদৃশ‍্যমান জগতেও দেখতে পাওয়া যায়,মণি মন্ত্র ও ঔষধাদির শক্তিগণ দেশকাল
*🌹অর্থ‍্যাৎ এই প্রত‍্যক্ষ পরিদৃশ‍্যমান জগতেও দেখতে পাওয়া যায়,মণিমন্ত্র ও ঔষধাদির শক্তিগণ দেশকাল নিমিত্ত বৈচিত্র্যবশত বহু বিরুদ্ধ কাজ উৎপন্ন করে থাকে।এইসব শক্তির তত্ত্ব, উপদেশ ব‍্যতীত কেবল যুক্তিতর্কের পর্য‍্যালোচনায় অধিগম‍্য (জ্ঞানলাভের যোগ‍্য) হয় না।এই প্রত‍্যক্ষ বস্তুর এই শক্তি,এই সহায়,এই বিষয়, এই প্রয়োজন,ইহাই যখন তর্ক দ্বারা জানা যায় না,তখন শাস্ত্রৈকগম‍্য অচিন্ত‍্য প্রভাব কিভাবে জানা যাবে? পৌরাণিকগণ বলেন=যে সকল বিষয় অচিন্ত‍্য,সেই সব বিষয়কে তর্কতর্কির মধ্যে যাবে না।যা প্রকৃতির পরে, তাহাই অচিন্ত‍্য।*
*🌼দ্বিতীয় প্রমাণ আগামী পর্বে🌼*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
      ꧁ ৩৪. শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(৩৪)শ্রীরামানন্দ রায় কাষ্ঠ পুত্তলিকা*
*🙏বিশুদ্ধ শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব বর্ণন🙏*
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
*🍀দ্বিতীয় প্রমাণ এই যে ঃ------*
*(২) আত্মনি চৈবং বিচিত্রাশ্চ। ব্রহ্মসূত্র,২|১|২৮ সূত্র।*
*🌹ব্রহ্ম এক ও অসহায়। তাঁতে অনেকাকার সৃষ্ট হয়।অথচ তাঁর স্বরূপ নষ্ট হয় না।এরূপ কি ভাবে ঘটে,মনে স্বতঃই (নিজে থেকে ) এই তর্ক উঠতে পারে।কিন্তু ভেবে দেখুন স্বপ্নদেখা আত্মা এক ; স্বপ্নকালে তাতেও অনেকাকার সৃষ্টি হয়, অথচ আত্মার স্বরূপ অবিকল থাকে।বিচিত্র স্বপ্নের সৃষ্টির কথা শ্রুতিতেও পঠিত হয়েছে, তদ্ যথা=*
*ন তত্র রথা ন রথযোগা, ন পন্থানো ভবন্ত‍্যথ রথান্ রথযোগান্ পথঃ সৃজ‍্যতে।*
*🌺অর্থ‍্যাৎ সেখানে (আত্মায়)রথ নাই, রথবাহী অশ্বও নাই,পথও নাই, স্বপ্নেদেখা রথ,অশ্ব ও পথ সৃষ্টি করে। পক্ষান্তরে ভাষ‍্যকার আরও লিখেছেন।*
*"লোকেহপি দেবাদিষু মায়াব‍্যাদিষু চ স্বরূপানুপমর্দেনৈব বিচিত্রা হস্ত‍্যশ্বাদি সৃষ্টয়ো দৃশ্যন্তে, তথৈকস্মিন্নপি ব্রহ্মণি স্বরূপানুমর্দেনৈবানেকাকারা সৃষ্টির্ভবিষ‍্যতীতি"।*
*🌷অর্থ‍্যাৎ লোকমধ‍্যে দেবতা ও ঐন্দ্রজালিক(জাদুকর) প্রভৃতিতে ওদের স্বরূপানুমর্দন অর্থ‍্যাৎ স্বরূপের বিনাশ না হয়েও হাতী প্রভৃতির সৃষ্টি চোখে দেখা যায়।অর্থ‍্যাৎ মায়াবীরা মায়াবলে স্বদেহকে হাতী প্রভৃতিতে পরিণত করেন,অথচ তাঁরা অবিকল অবস্থায় থাকেন।*
*🌻এইসব শক্তি,অচিন্ত‍্য শক্তিরই প্রমাণ স্বরূপ।*
*🍁কিন্তু মায়াবাদীরা ব্রহ্মে শক্তির অস্তিত্ব স্বীকার করেন না।এঁরা বলেন ব্রহ্মবস্তু, চিদেকমাত্র এঁরা চিৎ ভিন্ন অপর পদার্থ স্বীকার করেন না।এই সিদ্ধান্ত খন্ডন করবার জন্য শ্রীজীব গোস্বামীপাদ ব্রহ্মে শক্তির অস্তিত্ব ও স্বাভাবিকত্ব সম্বন্ধে সপ্রমাণ করেছেন। তিনি এই জন্য প্রথমে শ্রীভাগবতের একটি শ্লোক উদ্ধৃত করে সেটির ব‍্যাখ‍্যা দ্বারা বিচার করেছেন। যথা=*
*"সত্ত্বংরজস্তম ইতি ত্রিবৃদেকমাদৌ সূত্রং মহানহমিতি প্রবদন্তি জীবম্।*
*জ্ঞানক্রিয়ার্থফলরূপতয়োরুশক্তি ব্রক্ষৈব ভাতি সদসচ্চ তয়োঃ পরং যৎ।।*
            *(ভাগবত=১১|৩|৩৮)*
*☘অর্থ‍্যাৎ ব্রহ্মই অনেকাত্মশক্তিশালী বলে প্রতিভাত (উজ্জ্বলরূপে প্রকাশিত)হয়ে থাকেন। মূলে "ব্রক্ষৈব" পদে একটি "এব" শব্দ আছে।এই "এব" শব্দটি "নিশ্চিত" অর্থে ব‍্যবহৃত হয়েছে।অর্থ‍্যাৎ সেই শক্তি কল্পিত নহে, সেটি ব্রহ্মার স্বাভাবিক শক্তি।ব্রহ্ম সদ সদাত্মক হয়েও এই দুই বহিরঙ্গ বৈভবের অতিরিক্ত বস্তু।অর্থ‍্যাৎ সৎ= স্থূলকার্য‍্য, যেমন পৃথিব‍্যাদি ; অসৎ= সূক্ষ্ম কারণ, যেমন প্রকৃত‍্যাদি ; ব্রহ্ম এই দুই বহিরঙ্গ পদার্থের অতিরিক্ত শ্রীবৈকুন্ঠ তাঁর বৈভবস্বরূপ ; এবং তটস্থ বৈভব, শুদ্ধ জীবস্বরূপ।পৃথিব‍্যাদি স্থূলদৃষ্টি গ্রাহ‍্য পদার্থ এবং প্রকৃতি প্রভৃতি সূক্ষ্ম অদৃষ্টচর পদার্থ এস্থলে "সদসৎ" নামে অভিহিত হয়েছে। ব্রহ্ম সদ সদ্ রূপে প্রতিভাত হন,কেননা,তিনি দুইয়ের কারণ স্বরূপ।এইসব পদার্থ ব্রহ্ম অতিরিক্ত নহে।যেহেতু ব্রহ্ম ভিন্ন আর কোনও পদার্থ নাই।* 
*🌷তাহলে শক্তিগণকে ব্রহ্ম হতে স্বতন্ত্র কল্পনা করলে এইসব শক্তি অসিদ্ধ হয়ে উঠে।জ্ঞান,ক্রিয়া,অর্থ ও ফল দ্বারা ব্রহ্মবৈভবের অস্তিত্ব উপলব্ধ হয়ে থাকে,মহদাদি জ্ঞানশক্তিরূপ,সূত্রাদি ব্রহ্ম=কার্য‍্যের আধার,এইজন‍্য ইনি সূত্রস্থানীয়। শব্দ,স্পর্শ,রূপ,রস ও গন্ধ এই পঞ্চতন্মাত্র ইন্দ্রিয় অর্থ রূপ প্রকৃতি, এই প্রকৃতিতে সর্বভাবের সমাবেশ সূচিত হয়।এই জন্য ব্রহ্মকে সদসৎস্বরূপ বলা হয়েছে। কিন্তু ব্রহ্ম ফলরূপে এই সদসতেরও পর। পুরুষাখ‍্য স্বরূপ,অবৈভব ভগবদাখ‍্য চিদ্বস্তু এবং তদনুগত শুদ্ধাখ‍্য জীববস্তু এই উভয়ই ফলস্বরূপ।রূপ জ্ঞান ক্রিয়াদি দ্বারা ব্রহ্মের বহু শক্তিত্ব ব‍্যঞ্জিত(সূচিত)হয়েছে।*
*🌺এই এক অদ্বিতীয় ব্রহ্ম হতে কি রকমে বহু শক্তির প্রকাশ হল,শ্রীপাদ শ্রীজব উক্ত শ্লোকের ব‍্যাখ‍্যায় স্পষ্ট করেছেন। প্রথমে আদিতে এক অদ্বিতীয় ব্রহ্ম ; তাঁহা হতে সত্ত্ব,রজ ও তম এই তিন গুণাত্মক প্রধান ; তা হতে ক্রিয়া শক্তিদ্বারা কার্য‍্যাধারস্বরূপ সূত্র ; জ্ঞান শক্তিদ্বারা মহান্ ; এই মহৎতত্ত্ব হতে অহঙ্কার ; এই অহঙ্কারই জীব বা তটস্থ শক্তি।বৈকুন্ঠাদিবৈভব জীবেরই উপলক্ষণ।এই কথা সপ্রমাণ করার জন্য পূজ‍্যপাদ ব‍্যাখ‍্যাকার শ্রীজীব ছান্দোগ‍্য শ্রুতি লক্ষ্য করেছেন তদ্ যথা=*
            *ক্রমাগত*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
      ꧁ ৩৫. শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(৩৫)শ্রীরায় রামানন্দ কাষ্ঠ পুত্তলিকা*
*🙏বিশুদ্ধ শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব বর্ণন🙏*
*******************************
*🌻ছান্দোগ‍্য শ্রুতি হতে পায়=*
*"তে চ--- সদেব সোমেদমগ্র আসীদিত‍্যাদ‍্যাঃ।"*
*🍀আমরা শ্রুতিগুলি নিম্নে উদ্ধৃত করে দিচ্ছি ঃ-----*
*(১)"সদেব সোম‍্যেদমগ্র আসীদেকমেবাদ্বিতীয়ম্।*
*তদ্ধৈক আহুরসদেবেদমগ্র আসীদেকমেবাদ্বিতীয়ম্।*
*তস্মাদসতঃ সজ্জায়েত।। ইত‍্যাদি।*
        *(ছান্দোগ‍্য ৬ষ্ঠ প্রপা ২খন্ড)*
*(১)অর্থ‍্যাৎ হে সোম‍্য!এই এক অদ্বিতীয় সদ্ বস্তু বিদ‍্যমান ছিলেন।কেউ বলেন আদিতে একমাত্র অদ্বিতীয় অসৎবস্তু বিদ‍্যমান ছিলেন।সেই অসৎ হতে এই পরিদৃশ‍্যমান প্রপঞ্চ আবির্ভূত হয়েছে।*
*(২)কুতস্তু খলু সোম‍্যৈবং স‍্যাদিতি হোবাচ কথমসতঃ সজ্জায়েতেতি।*
*সত্ত্বেব সোম‍্যেদমগ্র মাসীদেকমেবাদ্বিতীয়ম্।তত্রৈব ২য়*।
*(২)অর্থ‍্যাৎ হে সোম‍্য!ইহা কি প্রকার? অসৎ হতে কি প্রকারে সৎজাত হতে পারে?হে সোম‍্য,এক অদ্বিতীয় সৎ-ই অগ্রে ছিলেন।*
*(৩)তদৈক্ষত বহুস‍্যাং প্রজায়েয়েতি তত্তেজোহসৃজত ইত‍্যাদি।*
*(৩)অর্থ‍্যাৎ তিনি মনে করলেন, আমি বহু হ'ব, এই মনে করে তেজের সৃষ্টি করেলেন।*
*🍀অতঃপরের প্রপাঠকে নিম্নলিখিত শ্রুতিগুলি পঠিত হয়েছে, যথা=*
*(১)তেষাং খল্বেষাং ভূতানাং ত্রীণ‍্যেব বীজাণি ভবন্ত‍্যন্ডজং জীবজমুদ্ভিজ্জমিতি।*
*(২)সেয়ং দেবতৈক্ষত হন্তাহমিমাস্তিস্রো দেবতা অনেন জীবেনাত্মনানুপ্রবিশ‍্য নামরূপে ব‍্যাকরবাণীতি।*
*(৩)তাসাং ত্রিবৃতং ত্রিবৃতমেকৈকাং করবাণীতি সেয়ং দেবতেমাস্তিস্রো দেবতা অনেনৈব জীবেনাত্মনানুপ্রবিশ‍্য নামরূপে ব‍্যাকরোৎ।*
*(১)🍀এই ভূতগণ অন্ডজ জীবজ ও উদ্ভিজ্জ  এই তিন প্রকার বীজ হতে উৎপন্ন হয়।*
*(২)🍀তখন সেই দেবতা মনে করলেন,আমি জীবাত্মরূপে এই তিন দেবতায় প্রবেশ করব এবং এদের মধ্যে প্রবেশ করে ভিন্ন ভিন্ন নাম প্রকাশ পাব।*
*(৩)🍀তারপরে দেবতা মনে করলেন আমি এই তিনের প্রত‍্যককে ত্রিবৃত করব।তিনি জীবাত্মরূপে প্রবেশ করে সেইরকম প্রত‍্যেককে ভিন্ন ভিন্ন নামে ত্রিবৃত করলেন।*
*🌻অতঃপরে শ্রীজীব লিখেছেন=*
*আদাবেকং ততস্তদতদরূপমিতিশক্ত‍েঃ স্বাভাবিকত্বমায়াতম্।*
*🍀অর্থ‍্যাৎ ব্রহ্ম আদিতে এক, তারপরে তাঁর ভিন্ন ভিন্ন শক্তি প্রকাশ পায়,এতদ্বারা শক্তির স্বাভাবিকত্ব স্পষ্টরূপে প্রতিপন্ন(উজ্জ্বলরূপে প্রকাশ) হল*।
*🔥যাঁরা আধুনিক বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্র পাঠ করেছেন, তাঁরা এই সিদ্ধান্ত সুচারুরূপে হৃদয়ঙ্গম করতে সমর্থ হবেন। অদ্বিতীয় এক হতে বহুত্বের আবির্ভাব, এই সিদ্ধান্ত বিজ্ঞানসম্মত।🌹সুবিখ‍্যাত দার্শনিক পন্ডিত হারবার্ট স্পেন্সর তদীয় "ফাষ্ট প্রিন্সিপাল " নামক গ্রন্থে শক্তিতত্ত্ব সম্বন্ধে যেসব সিদ্ধান্ত করেছেন, তাতে জানা যায় যে এক শক্তি হতেই অনন্ত শক্তির উৎপত্তি। বিশ্বকারণ (একমেবাদ্বিতীয়ম্) হতেই বহু হয়েছেন, এ সিদ্ধান্ত বিজ্ঞানসম্মত। শক্তির এই স্বাভাবিকত্ব অবশ্যই স্বীকার্য‍্য। কেননা=*
*"অন‍্যস‍্যাসদ্ভাবেনৌপাধিকত্বাযোগাৎ"।*
*🌷অর্থ‍্যাৎ শ্রুতি অনুসারে এক অদ্বিতীয় সৎবস্তু ভিন্ন পূর্বে যখন কিছুই ছিল না,এ অবস্থায় অন‍্য বস্তু না থাকায় ঔপাধিকত্বের অযোগহেতু এই শক্তি ব্রহ্মেরই স্বাভাবিকী।*
    *🙏শ্রীজীব গোস্বামীর জয়🙏*
                *ক্রমাগত*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
      ꧁ ৩৬. শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(৩৬)শ্রীরামানন্দ রায় কাষ্ঠ পুত্তলিকা*
*🙏বিশুদ্ধ শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব বর্ণন🙏*
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
*🍀এইসব শক্তি ব্রহ্মের স্বরূপ বৈভবের অঙ্গ-প্রত‍্যঙ্গবৎ নিত‍্যসিদ্ধ হলেও সূর্য‍্যের  রশ্মিপরমাণুবৃন্দ যেমন  সূর্য‍্যেরই উপাদান ও সূর্য‍্যমূলক ছাড়া অপর কিছু নয়, এইসব শক্তিও তদ্রূপ ব্রহ্মসত্ত্বা হতে স্বীয় স্বীয়(নিজ নিজ) সত্ত্বা প্রাপ্ত হয়েছে, সুতরাং এরা ব্রহ্মসত্ত্বামূলক ও ব্রহ্মেরই উপাদান। এইরকম সিদ্ধান্ত করে শ্রীজীব শ্রৌত প্রমাণ উদ্ধৃত করেছেন, যথা=*
        *"তস‍্য ভাসা সর্বমিদং বিভাতি"।*
*🌷এটি মুন্ডক শ্রুতি, যথা ঃ----*
*ন তত্র সূর্য‍্যো ভাতি ন চন্দ্রতারকং নেমা বিদ‍্যুতো ভান্তি কুতোহয়মগ্নিঃ*।
*তমেব ভান্তমনুভাতি সর্বং তস‍্য ভাসা সর্বমিদং বিভাতি।।*
*🍀অতঃপরে শক্তির স্বাভাবিকত্ব ও অচিন্ত‍্যত্ব সম্বন্ধে বিষ্ণুপুরাণে প্রাগুক্ত (পূর্বে কথিত) শ্লোক সমূহ উদ্ধৃত করা হয়েছে।*
*🌹মায়াবাদীদের মতে ব্রহ্ম নির্বিশেষ,(যাতে বিশেষ বা প্রভেদ নাই, ভেদাভেদহীন),নির্গুণ, সুতরাং প্রমাণের অগোচর। কিন্তু ব্রহ্ম নির্গুণ হলে এই বিশ্বব্রহ্মান্ড ব্রহ্মের সৃষ্ট হতে পারে না।ব্রহ্মে অবশ্যই নানান শক্তি আছে,এইকথা শ্রুতিতেও জানা গিয়েছে। সুতরাং ব্রহ্ম যে নির্বিশেষ, মায়াবাদীদের এইমত গ্রহণ যোগ্য নয়।মায়াবাদীরা ব্রহ্মে শক্তির অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয় বটে,কিন্তু সেটি "আগন্তুক",(অতিথি)।অর্থ‍্যাৎ জল যেমন স্থভাবত শীতল, কিন্তু আগুনের তাপে এতে উষ্ণতার আবির্ভাব হয়, সেইরকম ব্রহ্মে শক্তির আপাতত প্রতীয়মানতা(অনুভূততা) কেবল মায়ারই বিলাস মাত্র। এই আপত্তি খন্ডনের জন্য সন্দর্ভকার শ্রীজীব গোস্বামীপাদ লিখেছেন।এইরকম আগন্তুকত্ব ব্রহ্মে স্বীকৃত হতে পারে না। কেননা, শ্রুতি বলেন=*
*"ন তৎসমশ্চাভ‍্যধিকশ্চ দৃশ‍্যতে"।*
*☘"অর্থ‍্যাৎ তাঁর সমান বা তাঁহা হতে অতিরিক্ত আর কিছুই নাই। সুতরাং ব্রহ্মে শক্তি আছে "।*
*🍀এইকথা স্বীকার করলেই বলতে হবে যে এই শক্তি ব্রহ্মের স্বাভাবিক শক্তি,সেটি আগন্তুক নহে।ব্রহ্মের স্বরূপশক্তি প্রভাব দ্বারা প্রাকৃত সত্ত্বাদিগুণের পরিণাম ঘটে এবং তার ফলেই সৃষ্টি আদি ব‍্যাপার সাধিত হয়। অপরন্তু ব্রহ্ম বললেই বুঝতে হবে যে----*
       *🍀সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম।*
*🌷এই পরিদৃশ‍্যমান বিশাল বিশ্বব্রহ্মান্ডে যা কিছু আমাদের প্রত‍্যক্ষ হচ্ছে সবকিছুই ব্রহ্ম। সুতরাং প্রাপঞ্চিক গুণাদিও ব্রহ্মের অতিরিক্ত নয়।মায়াও ব্রহ্মেরই শক্তি, সুতরাং তাতে গুণের অত‍্যন্তাভাব প্রাকৃত গুণাদি দ্বারা স্পৃষ্ট নহেন, অপ্রাকৃত অশেষ কল‍্যাণগুণ তাঁতে বতর্মান। মায়া তাঁর শক্তি বলে স্বীকৃত হলেও সেটি তাঁর বহিরঙ্গ শক্তি, কিন্তু স্বরূপ শক্তি নহেন।মায়া ভগবানের অধীন, এইজন‍্য তিনি মায়াধীশ তাঁর স্বরূপ শক্তি স্বাভাবিকী এবং সেটি মায়াস্পৃষ্ট নয়।অর্থ‍্যাৎ মায়া পরশ করতে পারে না।শ্রীমদ্ভাগবতগীতাতেও লেখা হয়েছে =*
*জ্ঞেয়ং যৎতৎ প্রবক্ষ‍্যামি যজজ্ঞাত্বামৃতমশ্নুতে।*
*অনাদিমৎ পরংব‍্রহ্ম ন সৎতন্নাসদুচ‍্যতে।।*
*(২)সর্বতঃ পাণিপাদন্তদিত‍্যাদি।*
*🍀এইরূপ প্রমাণ-যুক্তির অবতারণা করে শ্রীপাদ শ্রীজীব গোস্বামী শ্রীভগবৎ সন্দর্ভে যে সিদ্ধান্ত সংস্থাপন করেছেন তা এই=*
*"একমেব তৎ পরমতত্ত্বং স্বাভাবিকীচিন্ত‍্যশক্ত‍্যা সর্বদৈব স্বরূপ-তদ্রূপ বৈভবজীবপ্রধানরূপেণ চতুর্ধাবতিষ্ঠতে। সূর্য‍্যান্তর্মন্ডলস্থতেজ ইব মন্ডলতদ্বহির্গতরশ্মি তৎ প্রতিচ্ছবিরূপেণ।।*
*🌻অর্থ‍্যাৎ একই সেই পরমতত্ত্ব স্বাভাবিক অচিন্ত‍্য শক্তি দ্বারা সর্বদাই স্বরূপ শক্তি, বৈকুন্ঠাদি স্বরূপবৈভব, জীব ও প্রধান এই চারভাবে সর্বদাই বিরাজমান। সূর্য‍্যের অন্তর্মন্ডলের তেজ,মন্ডল,মন্ডলের বাইরের রশ্মিমালা ও তাঁর প্রতিছবি উক্ত কথার উদাহরণ স্বরূপ গৃহীত হতে পারে।এইরকম শক্তিবিভাগ বিষ্ণুপুরাণেও দেখতে পাওয়া যায় যথা=*
*একদেশস্থিতস‍্যাগ্নের্জ‍্যোৎনাবিস্তারিণী যথা।*
*পরস‍্য ব্রহ্মণঃ শক্তিস্তথেদমখিলং জগত।।*
*🌺শ্রুতিও বলেন=*
*যস‍্য ভাসা সর্বমিদং বিভাতীতি।*
*🌷এতে একটি আপত্তি উত্থাপিত হতে পারে। সে আপত্তি এই যে প্রত‍্যক শক্তি যদি বিশ্বব‍্যাপিকা ও নিত‍্য হয়, তবে ওদের একত্র সমাবেশ কিভাবে সম্ভাবিত হতে পারে?এই অনুপপত্তি সহজেই খন্ডিত হতে পারে।পূর্বে বলা হয়েছে যে ভগবানের শক্তিগণ অচিন্ত‍্য, যা দুর্ঘটক তাইই অচিন্ত‍্য। শ্রীজীবগোস্বামী লিখেছেন=*
*"দুর্ঘটঘটকত্বং হ‍্যচিন্ত‍্যত্বম্।শক্তি সাধারণত তিন প্রকার=অন্তরঙ্গা,বহিরঙ্গা ও তটস্থা। স্বরূপশক্তিও বেকুন্ঠাদি স্বরূপবৈভব অন্তরঙ্গা শক্তির অন্তর্গত।এঁরা সুর্য‍্যের তেজের থেকেও  অনেক বেশী।তটস্থা শক্তি রশ্মি স্থানীয়।এই শক্তি চিন্ময় শুদ্ধ জীবরূপিনী।বহিরঙ্গা মায়া শক্তি প্রতিছবিগতবর্ণশাবল‍্য স্থানীয় ; এটি সেই পরমতত্ত্বের বহিরঙ্গবৈভব জড়ময় "প্রধান"।*
            *ক্রমাগত*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
      ꧁ ৩৭. শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(৩৭)শ্রীরায় রামানন্দ কাষ্ঠ পুত্তলিকা*
*🙏বিশুদ্ধ শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব বর্ণন🙏*
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
*🍀পূর্বেই পরম-তত্ত্বের চার প্রকার অবস্থানের কথা বলা হয়েছে, যথা= স্বরূপ,স্বরূপ=বৈভব,জীব ও প্রধান। বিষ্ণুপুরাণেও প্রধানকে মায়াবৈভবের অন্তর্ভুক্ত করে শক্তিত্রয়ের সংখ্যা করা হয়েছে।জীবশক্তিই তটস্থ শক্তি। বিষ্ণুপুরাণের প্রমাণ এই=*
*"বিষ্ণুশক্তি পরাপ্রোক্তা ক্ষেত্রজ্ঞাখ‍্যা তথাপরা।*
*অবিদ‍্যা কর্মসংজ্ঞান‍্যা তৃতীয়া শক্তিরিষ‍্যতে।।*
*তয়া তিরোহিতত্বাচ্চ শক্তিঃ ক্ষেত্রজ্ঞসংজ্ঞিতা।*
*সর্বভূতেষু ভূপাল তারতম‍্যেন বর্ততে"।।*
*🌻পূর্বেও এর ব‍্যাখ‍্যা করা হয়েছে। মায়া বহিরঙ্গা শক্তি হলেও এর আবরণী শক্তিপ্রভাবে তটস্থ শক্তিময় জীবকে সহজেই অজ্ঞানতমঃপ্রভাবে সমাবৃত করতে সমর্থ।এই মায়ার আবরণের তারতম‍্যানুসারে ক্ষেত্রজ্ঞখ‍্যশক্তি ব্রহ্মা হতে স্থাবর পর্য‍্যন্ত সর্বদেহে কমবেশী পরিমাণে প্রকাশ পায়।ফলে ল্রীভগবানে এইসব শক্তিই মিলিতভাবে অবস্থান করে। চিদচিৎ সকল পদার্থই ভগবানের শরীর। যথা শ্রীভাগবতে=*
*"খং বায়ুমগ্নিং সলিলং মহীষ্ণ জ‍্যোতীংষি সত্ত্বানি দিশো দ্রুমাদীন্*।
*সরিৎ সমুদ্রাংশ্চ হরেঃ শরীরং যৎকিঞ্চভূতং প্রণমেদনন‍্যঃ"।।*
                           *(১১|৩৪|১)*
*🍁শ্রীভগবান যে চিদচিৎশক্তিযুক্ত, ভাগবতে তার প্রমাণ আরও আছে যথা=*
*"অনন্তব‍্যক্তরূপেণ যেনেদমখিলং ততম্।*
*চিদচিচ্ছক্তিযুক্তায় তস্মৈ ভগবতে নমঃ"।।*
                                       *(৭৩|৩৪)*
*🙏শ্রীভগবান চিৎ অচিৎ সর্বশক্তিময়।শ্রীভাগবতেও এইরূপে ব্রহ্মশক্তি বা ভগবৎ শক্তির যথেষ্ট আলোচনা আছে। শ্রীভগবৎসন্দর্ভে অতঃপরে মায়া শক্তির বিস্তৃত আলোচনা আছে।পরমাত্মসন্দর্ভে তটস্থা বা জীবশক্তির ব‍্যাখ‍্যা ও বিচার করা হয়েছে।শ্রীশঙ্করাচার্য‍্যও একবারে শক্তি অস্বীকার করতে পারেননি।সর্বসংবাদিনী গ্রন্থে অতি বিশদ রূপে তা সপ্রমাণ হয়েছে। শ্রীপাদ শ্রীজীব সর্বসংবাদিনী গ্রন্থেও ভগবৎশক্তিতত্ত্বের বিস্তৃত ব‍্যাখ‍্যা করেছেন। তিনি প্রথমে কেবলাদ্বৈতবাদিগণের অভিমত উল্লেখ করে লিখেছেন, "অদ্বয়বাদিগণ বলেন স্বজাতীয় বিজাতীয় স্বগতভেদরহিত জ্ঞানই পরতত্ত্ব।ভাগবতে "বদন্তি" শ্লোকে যে "অদ্বয়"পদটি আছে সেই পদের প্রয়োগেই উপপন্ন(যুক্তিযুক্ত) হচ্ছে যে পরমতত্ত্ব সজাতীয়াদিভেদরহিত। সুতরাং এই তত্ত্ব অনন্ত ও সত‍্য।জ্ঞেয়, জ্ঞান ও তৎসাধনসমূহের প্রবিভাগে ব্রহ্মান্ডসৃষ্ট‍্যাদিসাধনে অদ্বয়তত্ত্ব শান্ত হয়ে পড়েন। যদি বল,অদ্বয়তত্ত্ব জগতের কর্তা, তবে জ্ঞানই কর্তা হয়ে উঠেন।আর যদি অদ্বয়তত্ত্ব বিক্রিয়মাণ হয়ে জগতের করণস্বরূপ হন,তাহলে অদ্বয়জ্ঞানকে বাস‍্যাদিবৎ জড় বলে প্রতিপন্ন করা হয়। তাহলে অদ্বয়জ্ঞান অসত‍্য হয়ে পড়েন।*এঁরা আরও বলেন,জ্ঞান শব্দটি,জ্ঞপ্তি, অববোধ ও বোধপর্য‍্যায় ভুক্ত।এই জ্ঞান নামক তত্ত্বটি "শক্তিমৎ" একথা বলাও অসঙ্গত।যদি বল যে "এই অদ্বয়জ্ঞান-তত্ত্ব "স্বরূপভূত শক্তি" তাও বলতে পার না, স্বরূপশক্তি বস্তুটি কি?এই শক্তি অদ্বয়জ্ঞানহতে অতিরিক্ত,কি অনতিরিক্ত?এর আদ‍্যেই বা স্বরূপত্ব কেন,আর অন্ত‍্যেই বা শক্তিত্ব কেন?সত‍্য বটে,এই অদ্বয়জ্ঞানকে ভগবান বলা হয়েছে। কিন্তু এর ভগময়ত্ব যে গুণাত্মক,যে গুণদ্বারা ইনি "ভগবান" বলে শব্দিত হয়েছেন তা বিশুদ্ধ জ্ঞানস্বরূপ। সুতরাং একটা স্বরূপশক্তি কল্পনা করলেও উহা জ্ঞান ভিন্ন আর কিছুই নয়।এই জ্ঞানবিলাসের বহুত্ব বা নানাত্বও কল্পিত হতে পারে না। আরও নানারত্নে ঈশিত্ব(ঈশ্বরত্ব) লক্ষণবিশিষ্ট গুণক্রিয়াদিই বা কি প্রকারে সম্ভাবিত হতে পারে।*
💧💧💧💧💧💧💧💧💧💧💧💧
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
      ꧁ ৩৮. শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(৩৮)শ্রীরামানন্দ রায় কাষ্ঠ পুত্তলিকা*
*🙏বিশুদ্ধ শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব বর্ণন🙏*
========================
*🌻আরও কথা এই যে এই অদ্বয়জ্ঞান-তত্ত্বের নীলপীতাদি আকারত্ব ও পরিচ্ছন্নত্বই বা কিভাবে সম্ভাবিত হয়? অদ্বয়জ্ঞানের আবার বর্ণ কি,তার পরিচ্ছদই বা কি? পরিচ্ছদ হচ্ছে=দ্রব‍্য বিশেষ, বৈকুন্ঠ = লোকবিশেষ,সেখানে যারা গমন করে তারা জীববিশেষ,এই সকলের অদ্বয়জ্ঞানত্ব কিভাবে সম্ভবপর হয়? এই অদ্বয়জ্ঞানতত্ত্বের ঐ সকল অবস্থা স্বীকার করলে সকল কথায় হস্তিস্নানের মতো অকর্মণ‍্য ও অযথা হয়ে পড়ে। অর্থ‍্যাৎ হাতীকে স্নান করালে সেই মুহূর্তে স্বীয় (নিজ) স্বভাবে হাতী আবার নিজ দেহকে ধূলি ধূসরিত করে।অদ্বয়তত্ত্বে শক্তি সংযোজনও সেইরকম নিরর্থক।ঐ রকম সিদ্ধান্ত কখনও স্বভাবত নির্মল ও দোষশূন‍্য হবে না।*
*🍀তবে বলতে পার যে "এই জগৎ যখন কার্য‍্যময়।শক্তি ভিন্ন কখনও কার্য‍্য নিষ্পত্তি হয় না, সুতরাং শক্তি অবশ্যই স্বীকার্য‍্য।তদুত্তরে আমরা বলি এই শক্তি,তত্ত্ব নহে,অতত্ত্বও নহে, সেটি অনির্বচনীয়, সুতরাং সেটি মিথ‍্যা এবং স্বরূপভূতা নহে।ভগাদি কেবল উপলক্ষণ মাত্র।"জহদজহৎলক্ষণা" দ্বারা ভগবান্ শব্দটি এখনে অদ্বয়জ্ঞানের সঙ্গে সামানাধিকরণ‍্যে প্রযুক্ত মাত্র।যেমন "সেই ইনিই দেবদত্ত" বললে "দেবদত্ত" শব্দটি উপস্থিত দৃশ‍্যমান ব‍্যক্তির পরিচায়করূপে প্রতিপন্ন হয়, সেইরকম "অদ্বয়জ্ঞানই ভগবান্" এইকথা বললে জহদজহৎ লক্ষণা দ্বারা অদ্বয়জ্ঞানেরই মুখ‍্যত্ব সূচিত হয়ে থাকে।*
*🍁কেবলাদ্বৈতবাদীদের এই আপত্তি খন্ডনের জন্য বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী শ্রীবৈষ্ণবগণ বলেন,অদ্বয়তত্ত্বটি যখন ভাবরূপতত্ত্ব সুতরাং "গলগৃহীত" ন‍্যায় অনুসারে এর স্বরূপশক্তি কেবলাদ্বৈতবাদীদেরও স্বীকার করতে হবে।জগদাদিকার্য‍্য দর্শনে শক্তির অস্তিত্ব কে না করবে?কেবলাদ্বৈতবাদীগণের আপত্তি দোষস্পৃষ্ট।জগৎ যখন কার্য‍্য,কার্য‍্যসিদ্ধির জন্য শক্তি অবশ্যই স্বীকার্য‍্য। সুতরাং এই শক্তি,বস্তুর ধর্মবিশেষ, ঐ ধর্ম ছাড়া কোনও কার্য‍্যসিদ্ধ হয় না।ব্রহ্মান্ডের উপাদানে ও নিমিত্তকারণে এই স্বরূপভূতা শক্তি নিত‍্য বিরাজমান।এই শক্তি দ্বারাই কার্য‍্য বিশেষের উৎপত্তি হয়।সেটি ত‍্যাগ করে অপর বস্তুবিশেষ স্বীকার অনর্থক।বিবর্তবাদীদের পক্ষেও একটা অধিষ্ঠান স্বীকার্য‍্য। শুক্তিতেরজতভ্রম হয়,এই অবস্থায় শুক্তিকেই রজতভ্রমের অধিষ্ঠান স্বীকার করতে হয়। কিন্তু শুক্তিতেই রজতের ভ্রম হয়।তাহলে ব্রহ্মই জগৎ ভ্রমের অধিষ্ঠান।যখন ব্রহ্ম অতিরিক্ত অন‍্য পদার্থ নাই, সুতরাং জগৎ ব্রহ্মশক্তিরই পরিচায়ক।*
*🌺সর্বসংবাদিনীকার মায়াবাদের বিরুদ্ধে শ্রীসম্প্রদায়ের উক্ত প্রতিবাদ উদ্ধৃত করে লিখেছেন, "আরও একটা কথা এই যে ব্রহ্ম যখন জগৎরূপে বিবর্তিত হন,তখন তিনি নিজে তৎসম্বন্ধে কিছু করেন কিনা,যদি এই বিষয়ে তাঁর নিজের কোন কার্য না থাকে,তাহলে বুঝতে হবে যে অজ্ঞান দ্বারাই বিবর্তন(ঘূর্ণন)সাধিত হয়েছে। কিন্তু শ্রুতি বলেছেন "সর্ব খল্বিদং ব্রহ্ম" সুতরাং তদতিরিক্ত অজ্ঞানের অস্তিত্বই বা কিভাবে স্বীকৃত হতে পারে? যদি ঘূর্ণন-ব‍্যাপারে ব্রহ্মের কিঞ্চিকরত্ব স্বীকার করা যায়,তাহলে সেই জ্ঞানাশ্রয় শুদ্ধ বস্তুর শক্তি স্বতঃই (নিজে থেকেই) এসে দাঁড়ায়। অদ্বৈতশারীরকভাষ‍্যকার শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য‍্য স্বয়ংই লিখেছেন=*
*"শক্তিশ্চ কারণস‍্য কার্যনিয়মার্থা কল্প‍্যমানা নান‍্যা নাপ‍্যসতী বা কার্য‍্যং নিযচ্ছেৎ,অসত্ত্বাবিশেষাদন‍্যত্বাবিশেষাচ্চ তস্মাৎ কারণস‍্যাত্মভূতা শক্তিঃ শক্তেশ্চাত্মভূতং কার্য‍্যমিতি"।২|১|১৮ সূত্র ভাষ‍্য।*
*🌹অর্থ‍্যাৎ শক্তি কারণে অবস্থান করে কারণগত কাজের নিয়মন (নির্দেশ)করে।যাতে কার্য‍্য শক্তি থাকে না, তা কারণ নয়, সুতরাং কার্য‍্যও জন্মায় না।শক্তি কার্য‍্যকারণ হতে ভিন্ন ও কার্য‍্যের মতো অসৎ (অভাবরূপিনী) হলে সেটি কখনও কার্য‍্যের নিয়ামক(নিয়ন্ত্রণকারী) হতে পারত না।তাহলে এই বস্তুদ্বারা এই কার্য‍্য সাধিত হবে,ঐ বস্তুদ্বারা এ কাজ সাধিত হবে না, কার্য‍্য-সাধনের এইরকম নিয়ম থাকত না।অসত্ত্বের ও অন‍্যত্বের অবিশেষ প্রযুক্ত অনিয়মেই কার্য‍্য হত, কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম থাকত না। সুতরাং শক্তি কারণেরই স্বরূপ এবং কার্য‍্য শক্তিরই স্বরূপ, এটি অবশ্যই স্বীকার্য‍্য(গ্রহণীয়)।*
*🍀সর্বসংবাদিনীকার শ্রীমৎ শ্রীজীব গোস্বামী বেদান্তের আলোক নিয়ে শ্রীভগবৎশক্তিতত্ত্বকে অতীব পরিস্ফুট(স্পষ্টভাবে প্রকাশিত) করেছেন। তিনি বলেন আলোকের অনুচর অন্ধকারের মতো অজ্ঞান চৈতন‍্যের অনুচর, অর্থ‍্যাৎ যেখানে চৈতন‍্য সেইখানেই অজ্ঞান, এটিই নিয়ম।এই নিয়ম দেখে বুঝা যায় যে এই অজ্ঞানের সত্ত্বাও চৈতন‍্য হতে উদ্ভূত(উৎপন্ন)।এই সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত হতে আরও বুঝা যায় যে এই অজ্ঞানসত্ত্বার স্ফুরণ-ধর্ম দ্বারাই স্বরূপ শক্তির উপলব্ধি হয়ে থাকে। শ্রুতি বলেন=*
*"অথ কস্মাদুচ‍্যতে ব্রহ্ম বৃংহতি বৃংহয়তীতি"।*
*🔥শ্রীবিষ্ণুপুরাণে এই শ্রুতি অবলম্বনে লিখিত হয়েছে।*
*"বৃহত্ত্বাদ্ বৃংহণত্বাচ্চ যদ্ ব্রহ্ম পরমং বিদুঃ"।*
*🌺বৃহত্ত্বই তাঁর শক্তিমত্তার প্রদর্শক।অন‍্যান‍্য পদার্থে আমরা যে শক্তির স্ফুরণ(কম্পণ বা দীপ্তি)দেখতে পাই, সেইসব শক্তির মূল প্রস্রবণ(ঝরনা বা ক্ষরণ)চিৎশক্তির সন্নিধানত্ব ; নতুবা জড়ে শক্তির ক্রিয়া অসম্ভব।অন‍্যান‍্য পদার্থে যে সব শক্তি দেখতে পাই,তাও ভগবৎশক্তির স্ফুর্তিমাত্র।এর প্রমাণ বেদান্ত সূত্রভাষ‍্য।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
      ꧁ ৩৯. শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(৩৯)শ্রীরামানন্দ রায়,কাষ্ঠ পুত্তলিকা*
*🙏বিশুদ্ধ শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব বর্ণন🙏*
<><><><><><><><><><><><><>
*🔥বেদান্তের সূত্রভাষ‍্য=*
          *প্রবৃত্তশ্চ। ২|২|২*
*"ইতি অত্রাদ্বৈতশারীরককৃতাপি (ব‍্যাখ‍্যাতম্) ননু তব দেহাদিসংযুক্ত- স‍্যাপ‍্যাত্মনো বিজ্ঞানস্বরূপমাত্রাব‍্যতিরেকেণ প্রবৃত্তা নুপপত্তেরনুপপন্নং প্রবর্তকত্বমিতিচেৎ ন অয়স্কান্তবদ্রূপাদিবচ্চ প্রবৃত্তিরহিতস‍্যাপি প্রবর্তকত্বোপপত্তেঃ"।*
*🍀এস্থলে লোকায়তিক নাস্তিকগণের মত-নিরসানার্থ তাদের মত উদ্ধৃত করে উক্ত মতের পরিহার করা হচ্ছে।🌷নাস্তিকগণ বলেন,তুমি কেবল বলছ আত্মার প্রবৃত্তি আছে কিন্তু তুমি যে প্রবৃত্তি দেখাচ্ছ সেটি দেহসংযুক্ত আত্মারই প্রবৃত্তি ; বিজ্ঞানস্বরূপ মাত্র বস্তুর প্রবৃত্তি (নিযুক্ত) কোথায়? সুতরাং প্রবৃত্তিবিহীন শুদ্ধ চেতনার প্রবর্তকত্ব উপপন্ন(যুক্তিযুক্ত) হচ্ছে না। লোকায়তিকগণের এই মত পরিহারার্থ শঙ্কর বলেন, "প্রবৃত্তি না থাকলেই যে কোন বস্তু প্রবর্তক হতে পারে না একথা বলতে পার না।অয়স্কামণি (চুম্বক) স্বয়ং প্রবৃত্তিরহিত হয়েও চক্ষুর প্রবর্তক হয়।সর্বপ্রবৃত্তি রহিত হয়েও ঈশ্বর সর্বগত সর্বাত্মা ও সর্বশক্তি হয়ে সকল পদার্থের প্রবর্তক।*
*🍁যদি বল "অজ্ঞান হতেই জগদ্রূপ কার্য‍্য হয়ে থাকে, অজ্ঞান ও মিথ‍্যা, জগৎরূপ কার্য‍্যও মিথ‍্যা। সুতরাং জগৎ প্রবর্তকত্বাদি শক্তি ব্রহ্মের নহে, সেটি অজ্ঞানের"। মায়াবাদিন্, তুমি একথাও বলতে পার না।কেন না "জন্মাদ‍্যস‍্য যতঃ" সূত্রের ব‍্যাখ‍্যায় শঙ্করও এই ব‍্যাপারেই ব্রহ্মের প্রসঙ্গ করেছেন।ব্রহ্ম হতেই জগতের উৎপত্তি আদি হয়ে থাকে।জগৎকার্য‍্যত্বে ব্রহ্মপ্রসঙ্গ স্বীকার করলে ব্রহ্মে অজ্ঞান ও তৎকার্য‍্যের অতিরিক্ত স্বরূপ-শক্তির স্থিতি একেবারেই দুর্নিবার হয়ে উঠে।কেননা এতৎপক্ষে কোনও প্রতিবন্ধকতা দেখতে পাওয়া যায় না।সবিতুপ্রকাশক প্রকাশ‍্যনাশেও নষ্ট হয় না,সবিতার (সূর্য‍্যের) মতো বতর্মান থাকে।সবিতা আছেন অথচ তার প্রকাশ নাই,ব্রহ্ম আছেন অথচ তাঁর শক্তি নাই এটি অর্ধ কুক্কুটিবৎ(মোরগবৎ) উপহাস‍্য।*
*🍀এইরকম উক্তির পরে শ্রীপাদ গোস্বামী শ্রীমৎশঙ্করের ভাষ‍্যে উদ্ধৃত করেছেন।শঙ্করও ব্রহ্মসূত্র ভাষ‍্যে স্বীকার করেছেন। যথা=*
      *"ঈক্ষতে র্নাশব্দম্"১|১১৫*
*🍀এই সূত্রভাষ‍্যে=অসত‍্যপি কর্মণি সবিতা প্রকাশক ইতি কর্তৃত্বব‍্যপদেশদর্শনাৎ।এবম্ সত‍্যপি কর্মণি ব্রহ্মণ স্তদৈক্ষতেতি কর্তৃত্বব‍্যপদেশোপপত্তে র্ন দৃষ্টান্তবৈষম‍্যমিতি"।*
*🌺অর্থ‍্যাৎ কর্ম বা প্রকাশ‍্য বস্তুর সঙ্গে সম্বন্ধ অবিবক্ষিত থাকে তখন যেমন সূর্য‍্য প্রকাশ পাচ্ছেন" এইরকম বলা হয় এবং অকর্মককর্তৃত্বের ব‍্যবহার পরিলক্ষিত হয়,তদ্রূপ সৃষ্টির পূর্বে জ্ঞানকর্ম (জ্ঞেয়বস্তু)না থাকতেও "তৎ ঐক্ষত" তিনি ঈক্ষণ করলেন তদ্রূপ অকর্মক কর্তৃত্ব ব‍্যবহারও সিদ্ধ হয়ে থাকে।এতে দৃষ্টান্তের কোনও বৈষম‍্য নাই।*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
      ꧁ ৪০. শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 তৃতীয় ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(৪০)শ্রীরায় রামানন্দ,কাষ্ঠ পুত্তলিকা*
*🙏বিশুদ্ধ শ্রীকৃষ্ণতত্ত্ব বর্ণন🙏*
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*🍀শ্রীমৎ শঙ্করাচার্য‍্য সহস্রনামভাষ‍্যেও লিখেছেন= "স্বরূপসামর্থ‍্যেন ন চ‍্যুতো ন চ‍্যব‍্যতে ন চ‍্যবিষ‍্যতে ইত‍্যচ‍্যুতঃ। শাশ্বতং শিবমচ‍্যুতমিতি শ্রুতিঃ।*
*🌷সুতরাং এস্থলেও শঙ্কর ব্রহ্মের স্বরূপ-সামর্থ‍্য বা স্বরূপশক্তির প্রসঙ্গ স্বীকার করেছেন।বস্তুর শক্তি,কার্য‍্যের উত্তরকালে ও পূর্বকালে তৎ তৎ (সেই সেই) বস্তুতে মন্ত্রশক্তির মতো বিরাজমান থাকে।কার্য‍্যকাল প্রাপ্ত হয়ে সেটি প্রকাশিত হয়,এই মাত্র বিশেষ।ব্রহ্মশক্তি সম্বন্ধেও এইকথা। শঙ্করভাষ‍্যেও এইরকম উক্তি দেখতে পাওয়া যায় যথা=*
*"বিষয়াভাবাদিয়মচেতয়মানতা ন চৈতন‍্যাভাবাৎ"।*
*🍀অর্থ‍্যাৎ যে যে স্থলে অচেতয়ামানতা দেখা যায়,তা কেবল বিষয়াভাব নিবন্ধন, কিন্তু চৈতন‍্যভাব জনিত নয়।*
*☘সর্বসংবাদিনীকার বলেন,যদি বল জ্ঞানের নিত‍্যতায় জ্ঞান-বিষয় স্বাতন্ত্রের ব‍্যপদেশ(ছল বা ইঙ্গিত) দেখা যায় না,এরকম আপত্তিও করতে পার না।কেননা,সূর্য‍্য প্রকাশে ও দহন উভয়ই উপলব্ধি হয়।*
*"নাভাব উপলব্ধোঃ।*
*🍀এই ব্রহ্মসূত্রের ভাষ‍্য শঙ্কর বিজ্ঞানবাদনিরাকরণ করেছেন।তাঁর ব‍্যাখ‍্যায় আত্মার সাক্ষীত্ব স্বীকার করা হয়েছে। সুতরাং একই তত্ত্বেরই স্বরূপত্বও স্বীকার করা হয়েছে।স্বরূপত্ত্ব স্বীকৃত হলেই শক্তিত্ত্ব স্বীকার্য‍্য (গ্রহণীয় )হয়ে উঠে।শাস্ত্রে উক্ত আছে পরমেশ্বরের বিমলা চিচ্ছক্তি চৈতন‍্য নামে অভিহিতা।এই শক্তি সত‍্যা ও পরা। ভগবানের জড়া শক্তি অবিদ‍্যা নামে অভিহিত হয়ে থাকে।এই উভয় শক্তির পরস্পর সংযোগে চিজ্জড়াত্মক জগতের উৎপন্ন হয়।*
*🌻সর্ব-সংবাদিনীকার এইরকম সিদ্ধান্ত সংস্থাপন করে আরও প্রমাণার্থ বিষ্ণুপুরাণের "বিষ্ণুশক্তি পরাপ্রোক্তা" শ্লোকটি উদ্ধৃত করে শ্রীধর স্বামীকৃত সেটির টীকা উদ্ধৃত করেছেন।শ্রীধর লিখেছেন বিষ্ণুশক্তি শব্দের অর্থ বিষ্ণুর স্বরূপভূতা চিৎশক্তি।এই শক্তি পরব্রহ্ম পর-তত্ত্বাখ‍্যা।এটি ভেদরহিত সত্তামাত্র নামেও অভিহিত হয়ে থাকে।স্বরুপশক্তি বললে কার্য‍্যোন্মুখত্ব দ্বারাই স্বরূপের শক্তিত্ব স্বীকৃত হয়ে থাকে।স্বরূপ বিশেষ‍্যরূপ।এই শক্তিমৎ বিশেষণরূপ কার্য‍্যোন্মুখত্বই শক্তি।জগৎ কার্য‍্যক্ষমত্বমূলক।জগৎ কার্য‍্যোক্ষমত্বের পরিচায়ক।এই ক্ষমত্বসিদ্ধরূপা শক্তি নিত‍্যা।সুতরাং সেটিই স্বরূপশক্তি।তথাপি এই বস্তু হতে অত‍্যন্ত পৃথক। আবার এই শক্তি সম্বন্ধে বস্তুর নিরূপণযোগ‍্যতা নাই সুতরাং পৃথকত্ব নাই। সুতরাং এই শক্তিকে শক্তিমদ্ বিশেষণরূপ কার্য‍্যোন্মুখত্ব নামে অভিহিত করা হয়েছে। প্রতিবাদী বলতে পারেন যে যদি একে তোমরা শক্তি বল,তবে সেই শক্তির নাম বস্তুই হোক না কেন?সেটিতো বস্তুনিষ্ঠ ধর্ম বিশেষ।শক্তি স্বীকারে কি প্রয়োজন?এর উত্তরে বৈষ্ণব বেদান্তিগণ বলেন,আমরা সেটিকে বস্তু বলতে পারি না।বস্তু থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রাদি দ্বারা বস্তুশক্তিই স্তম্ভিত হয়। বস্তু আছে,কিন্তু সেটির কার্য‍্যোন্মুখত্ব স্তম্ভিত,এমত স্থলে শক্তির পৃথকত্ব অবশ‍্য গ্রহণীয়।নতুবা এইরকম স্থলে যুক্তি-বিরুদ্ধতা দোষ ঘটে।ইহাকে স্বরূপ হতে অভিন্নরূপে চিন্তা করা যায় না, সুতরাং সেটি ভিন্ন ; এবং ভিন্নভাবেও চিন্তা করা যায় না এই জন্য সেটি অভিন্ন।এই জন্য শক্তি ও শক্তিমান্ অচিন্ত‍্য বলেও অভিহিত হয়েছে।ইহাই গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণের অচিন্ত‍্য ভেদাভেদবাদ। ব্রহ্ম-শক্তিবাদ সম্বন্ধে এটিই বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত।*
*🌺কিন্তু এই শক্তিতত্ত্বের পরেও শ্রীরামানন্দ রায় শ্রীকৃষ্ণতত্ত্বের যে উচ্চতম ভাবের উল্লেখ করেছেন এখন তারই কিঞ্চিৎ আলোচনা করব।*
          *ক্রমাগত*
 ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧         
           ꧁ শ্রীরামানন্দ রায় 🙏 চতুর্থ ভাগ 
             ꧁   শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
                                🙏 ক্রমশ 🙏
  ✧═══════════•❁❀❁•══════════✧
   ✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️
নিবাস- বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ- বাঁশবাড়ী, থানা- ইংরেজ বাজার, জেলা- মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ, পিন কোড- ৭৩২১০১।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
    *••••┉━❀꧁ 🙏 রাধে রাধে 🙏 ꧂❀━┅••••* 
                   শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ
              হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।।
  *••••┉━❀꧁ 🙏 জয় জগন্নাথ 🙏 ꧂❀━┅••••*
              হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
              হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥
  *••••┉━❀꧁ 🙏 জয় রাধাকান্ত 🙏 ꧂ ❀━┅••••*
   💮❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀💮
   💮❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀💮
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧




শেষ ৩০ দিনের পোস্টের মধ্যে সর্বাধিক Viewer নিম্নে :-

শ্রীকৃষ্ণ লীলা 🙏 সূচীপত্র ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_74.html

শিবরাত্রি ব্রতকথা 🙏 ১০৮ নাম 🙏 মন্ত্র সমূহ 🙏 শিবরাত্রি ব্রত কি ভাবে পৃথিবীতে প্রচলিত হল❓শিবরাত্রি ব্রত পালনে কি ফল লাভ হয় ❓শিবরাত্রি ব্রত পালন কি সকলেই করতে পারেন ❓🙏 সকল ভক্ত 👣 চরণে 👣 অসংখ্যকোটি 🙏 প্রণাম 🙏শ্রী মৃন্ময় নন্দী 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/02/shib.html

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নৌকা গঠন তত্ব ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 https://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_22.html

🙇 রাধে রাধে 🙇 শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ 👏 হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।। 🙇 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/09/today.html

শ্রীঅম্বরীষ মহারাজের ছোট রানী 🙏 চারিযুগের ভক্তগাঁথা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/12/blog-post_97.html

মনোশিক্ষা 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 🙏 শ্রীযুক্ত প্রেমানন্দ দাস ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/jaydeb_14.html

বকরূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে চারটি প্রশ্ন করেছিলেন সেই প্রশ্নই বা কি? ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/05/blog-post_98.html

শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু 🥀 সংক্ষিপ্ত কথন 🙏 প্রথম ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/01/mohaprobhu-joydeb-dawn.html

*নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলং শুকমুখাদকমৃতদ্রবসংযুতম্।**পিবত ভাগবতং রসমালয়ং মুহুরহো রসিকা ভূবি ভাবুকাঃ।।*✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/09/blog-post_89.html

শ্রীআমলকী একাদশী ব্রতের মাহাত্ম‍্য কি ❓ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/ekadoshi.html