🚩🚩🚩🙇🙇🙇 রাধে রাধে 🙇🙇🙇🚩🚩🚩
শ্রীশ্রীজগন্নাথ লীলামৃত 📝 চতুর্থ ভাগ 🙇 শ্রী মৃন্ময় নন্দী কর্ত্তৃক সকল ভক্ত চরণে অসংখ্যকোটি প্রণাম 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/10/jagannath4.html
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🔙 শ্রীশ্রীজগন্নাথ লীলামৃত 📝 তৃতীয় ভাগ 🙇 শ্রী মৃন্ময় নন্দী কর্ত্তৃক সকল ভক্ত চরণে অসংখ্যকোটি প্রণাম 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/10/jagannath3.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 শ্রীশ্রীজগন্নাথ লীলামৃত 📝 চতুর্থ ভাগ 🙇 শ্রী মৃন্ময় নন্দী কর্ত্তৃক সকল ভক্ত চরণে অসংখ্যকোটি প্রণাম 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/10/jagannath4.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 ৩১. রাধা-দামোদর বেশ 🍁 শ্রীশ্রীজগন্নাথ লীলামৃত 📝 চতুর্থ ভাগ 🙇 শ্রী মৃন্ময় নন্দী কর্ত্তৃক সকল ভক্ত চরণে অসংখ্যকোটি প্রণাম 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/10/jagannath4.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
রাধা-দামোদর বেশ:-
ওড়িয়া বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের একাদশী তিথি থেকে শুরু করে কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথি পর্যন্ত শ্রীক্ষেত্রের শ্রীমন্দিরের রত্নসিংহাসনে বিরাজমান জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরাম অত্যন্ত সুন্দর ও প্রাচীন রাধা-দামোদর বেশ শৃঙ্গারে শোভিত হয়ে ওঠেন। শ্রীমন্দিরের রত্নসিংহাসনের দেবদেবীগণ তাঁদের প্রাত্যহিক অবকাশ পর্বের আচার, অনুষ্ঠান, পূজা ও ভোগরাগ শেষ হওয়ার পর প্রায় এক মাস ব্যাপী প্রতিদিন এই বিশেষ ধরনের বেশভূষায় সুসজ্জিত হয়ে ভক্তগণের হৃদয়মন্থন করে শুদ্ধভক্তির অভিষেক ঘটান। ওড়িশার জগন্নাথ-সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করা হয় কার্তিক মাসে মহাবিষ্ণু জগন্নাথকে দামোদর রূপে পূজায় দৈবী মায়া ও মায়াবদ্ধ সংসার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মোক্ষনগরী পুরীতে জগন্নাথ সর্বদাই মোক্ষদাতা পূর্ণব্রহ্ম পরমাত্মা হয়েই বিরাজমান থাকেন। তার সত্ত্বেও জগন্নাথ আকাঙ্ক্ষী অজস্র মানুষ রাধা-দামোদর বেশ শৃঙ্গারের সময় জগন্নাথকে দেখে অনাবিল আনন্দ অনুভব করেন।
কৃষ্ণ বিষয়ক পৌরাণিক কাহিনী ও লোককথা অনুসারে, কংসের রাজধানী মথুরা নগরে যাওয়ার পথে কংসের বিশ্বস্ত রাজকর্মচারী অক্রুর পবিত্র যমুনা নদীতে স্নান করার সময় কৃষ্ণের রাধা-দামোদর বেশ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। আনুমানিক দ্বাদশ শতাব্দী থেকে জগন্নাথের রাধা-দামোদর বেশের প্রবর্তন করা হয়েছিল। দ্বাদশ শতাব্দীতে রাধা চরিত্রটি ওড়িআ ও বাঙালি জাতির আধ্যাত্মিক মননের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি করতে শুরু করে। দ্বাদশ শতাব্দীতে সর্বভারতীয় মানসে রাধা চরিত্রের সঙ্গে কৃষ্ণের নাম একাত্ম হয়ে ওঠার পিছনে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের কবি জয়দেব গোস্বামীর ‘গীতগোবিন্দম্’-এর অনেকখানি প্রভাব রয়েছে। ওড়িআ ও বঙ্গে রাধা-কৃষ্ণ ভাবধারার পরিপুষ্ট স্রোত নির্মাণের পিছনে শুধু বিদ্যাপতির সাহিত্যই নয়, মিথিলার কবি বিদ্যাপতি ঠাকুর ও বঙ্গের কবি চণ্ডীদাসের অবদানও ছিল যথেষ্ট। সর্বভারতীয় বৈষ্ণব মানসে কৃষ্ণের সঙ্গে দেবী রুক্মিনীর পূজা প্রাচীন সময় থেকে প্রচলিত ছিল। বিশেষত পশ্চিম-ভারতে ও দক্ষিণ-ভারতে কৃষ্ণ ও রুক্মিনী দেবীর একত্র পূজার আয়োজন এখনও রয়েছে। পশ্চিম-ভারতের ক্ষেত্রপতি দ্বারকাধীশ কৃষ্ণেরও শক্তিরূপে রুক্মিনী দেবীর পূজা করা হয়। চারধামের অন্যতম দ্বারকাধীশ কৃষ্ণ মন্দিরের অনতিদূরে রুক্মিনী দেবীর মন্দিরও রয়েছে। কৃষ্ণ-রাধার আয়োজন মূলত পূর্ব-ভারতীয় সংস্কৃতি। তাছাড়া জগন্নাথ-সংস্কৃতির সঙ্গে সংযুক্ত বৈষ্ণব সমাজেও রাধার সঙ্গে কৃষ্ণের পরকীয়া প্রেমের বিষয়কে সুনজরে দেখা হয় না। এঁরা কৃষ্ণের স্বকীয়া প্রেমে বিশ্বাসী। রাধা-দামোদর বেশ শৃঙ্গারে জগন্নাথকে সাজানো হলেও রাধার আয়োজন শ্রীমন্দিরে সেভাবে নেই। শ্রীমন্দিরের দেবতা জগন্নাথের স্বকীয়া শক্তি ভগবতী শ্রীদেবী (লক্ষ্মী)। তাঁর শক্তি দেবী প্রসারিত হয়েছেন ভূদেবী ও বিমলা দেবী পর্যন্তই, এর বেশি নয়। রাধা দেবী রূপে ওড়িশার সমাজে আরাধিত হয়েছেন তিনজন ভিন্ন ভিন্ন সময়কালের বৈষ্ণব সাধকের প্রভাবে – বিষ্ণুস্বামী, নিম্বার্ক আচার্য ও চৈতন্যদেব। এঁদের মধ্যে একমাত্র চৈতন্যদেবই বঙ্গসন্তান ও সাধনজীবনের সিংহভাগ সময় শ্রীক্ষেত্রে বসবাস করেছিলেন। বিষ্ণুস্বামী ও নিম্বার্ক আচার্যের ভাবধারা দাক্ষিণাত্যে ও উত্তর-ভারতে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হলেও পূর্ব-ভারতে তাঁদের স্বকীয় বৈষ্ণবীয় ভাবধারা সেভাবে প্রসারিত হতে পারেনি। চৈতন্যদেবের প্রভাব শ্রীক্ষেত্রে ও উৎকলের রাজপরিবারে পড়েছিল। উৎকলের গজপতি মহারাজা প্রতাপরুদ্র দেব সহ তাঁর পরবর্তী অনেক গজপতিই চৈতন্যদেবের ভাবধারার গৌড়ীয় বৈষ্ণব আচার্যগণের কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। গজপতি মহারাজা গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতে আস্থাশীল হলেও শ্রীক্ষেত্রের শ্রীমন্দিরের গৌড়ীয় মত ও আদর্শ সেভাবে প্রবেশাধিকার পায়নি।
ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমদিকে সন্ন্যাস গ্রহণের পর চৈতন্যদেব শ্রীক্ষেত্রে বসবাসের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। চৈতন্যদেব যে সময় সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন সেই সময়ে ওড়িশা আগ্রাসনের জন্য বাংলার রাজা হোসেন শাহ মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু ওড়িশায় হিন্দু সংস্কৃতি ও জগন্নাথের গৌরবময় ইতিহাস রক্ষা তাগিদে রাজা প্রতাপরুদ্র জগন্নাথের কৃপায় হোসেন শাহকে প্রতিবার পরাস্ত করতে সক্ষম হন। কালক্রমে সন্ন্যাসী চৈতন্যদেব ও রাজা প্রতাপরুদ্রের মহামিলনে বঙ্গ ও ওড়িশার সাধারণ জনতার মধ্যে মৈত্রী ঘটে। ধীরে ধীরে ওড়িআ জাতি ও বাঙালি জাতির মধ্যকার যুদ্ধজনিত পারস্পরিক বিদ্বেষ কমে আসে। যেহেতু চৈতন্যদেব ষোড়শ শতাব্দীতে শ্রীক্ষেত্রে এসেছিলেন ও ওড়িশার জনজীবনে তাঁর আগমনের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ ঘটেছিল, তাই অনেকেই মনে করেন জগন্নাথের রাধা-দামোদর বেশের সূচনাকাল ষোড়শ শতাব্দীতে। গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের চোখে চৈতন্যদেব ছিলেন অন্তরঙ্গে রাধা ও বহিরঙ্গে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ-রাধার মিলিত বিগ্রহ। তাছাড়া চৈতন্যদেবের প্রভাবে বাংলার কৃষ্ণ ও ওড়িশার জগন্নাথ একাত্ম হয়ে উঠেছিলেন। শ্রীক্ষেত্রে জগন্নাথকে কৃষ্ণরূপে উপাসনার তথাকথিত প্রসার ঘটেছিল চৈতন্যদেবের সাধনজীবনের প্রভাবে। যদিও শ্রীক্ষেত্রে শ্রীমন্দিরকে দ্বারকা নগর ও গুণ্ডিচা বাড়িকে বৃন্দাবন রূপে দেখার প্রচেষ্টা চৈতন্যদেবের অনেক আগে থেকেই ওড়িশার জগন্নাথ-সংস্কৃতিতে রয়েছে। জগন্নাথকে দ্বারকানাথ কৃষ্ণ ও বৃন্দাবনধন কৃষ্ণ রূপে অর্চনার সূচনা আনুমানিক অষ্টম শতাব্দী থেকে। বস্তুত এই সময়কালের মধ্যেই স্কন্দপুরাণ রচিত হয়েছিল, যার মাধ্যমে জগন্নাথের পৌরাণিক প্রতিষ্ঠাও দেখেছিল প্রাচীন ভারতভূমি। জগন্নাথের রাধা-দামোদর বেশের সূচনা রাজা প্রতাপরুদ্র দেবের সমকালে, এমন একটি মতও ওড়িশায় প্রচলিত রয়েছে। সেদিক থেকে দেখা হলে, প্রতাপরুদ্রের মাধ্যমে চৈতন্যদেবের পরোক্ষ প্রভাব জগন্নাথের রাধা-দামোদর বেশ শৃঙ্গারে রয়েছে। তবে এই মতের সপক্ষে সঠিক তথ্য পাওয়া দুষ্কর। জগন্নাথের বাঁকাচূড়া বেশ প্রচলিত হয়েছিল দ্বাদশ শতাব্দীর শেষদিকে বা ত্রয়োদশ শতাব্দীর সূচনায়। অর্থাৎ, চৈতন্যদেবের জন্ম প্রায় দুই শতাধিক বছর আগে থেকেই জগন্নাথ কৃষ্ণের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত ঘটনার স্মরণে শৃঙ্গার করতে শুরু করেছিলেন। অবশ্য এই প্রথার পিছনে নিম্বার্ক আচার্যের প্রভাব শ্রীক্ষেত্রে রয়েছে।
আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের একাদশী তিথি থেকে শুরু করে কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথি পর্যন্ত রাধা-দামোদর বেশ শৃঙ্গারে জগন্নাথ ও বলভদ্র ওড়িশার ‘ত্রিকাছা’ শৈলীতে পোশাক পরেন। জগন্নাথ ও বলভদ্র তাঁদের হাতে ধারণ করেন সোনালি নালিভূজ। জগন্নাথ ও বলভদ্রের বিগ্রহ সজ্জায় মোট চারটি নালিভূজের ব্যবহার করা হয়। নাতিদীর্ঘ বাঁশের তৈরি লাঠি ও বিভিন্ন রঙের রঙিন কাপড় দিয়ে তৈরি ‘ত্রিমুণ্ডী’ (উচ্চারণভেদে ত্রিমুন্দী) ও সোনার ‘চন্দ্রিকা’ গহনা (সোনার ময়ূর-পালক) জগন্নাথ ও বলভদ্রের মাথায় চূড়ার অংশে শোভিত হয়। রাধা-দামোদর বেশে সোনার চন্দ্র-সূর্য ও তার নীচের অংশে সোনার তৈরি তিলকে সজ্জিত হন জগন্নাথ ও বলভদ্র। এই স্বর্ণতিলক তাঁদের সোনা বেশ শৃঙ্গারেও ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। জগন্নাথ ও বলভদ্রের মাথার দু’পাশে কানের অংশে সোনার বড় বড় দুটি কুণ্ডল পরানো হয়। জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের কোমরে রঙিন উত্তরীয় দিয়ে সাজানো হয়। ‘বড়লাগী’ কাপড়ে শ্রীবিগ্রহগুলি সেজে ওঠে। দেবী সুভদ্রার
সাজে বৈচিত্র্য সেভাবে দেখা না গেলেও তাঁকে রাধা-দামোদর বেশে সোনার কণ্ঠহার ও তাগায় সাজানো হয়। এছাড়াও ত্রিদেবদেবীকে রাধা-দামোদর বেশ শৃঙ্গারে আরও কিছু সোনা ও রূপোর অলংকার এবং অজস্র ধরনের ফুলের সজ্জায় সজ্জিত করা হয়। কখনও কখনও জগন্নাথকে মোটা মোটা তুলসীর মালায় ও পদ্মের মালায় সাজতেও দেখা যায়। হাজার হাজার ভক্ত রাধা-দামোদর দুর্দান্ত পোশাকে সজ্জিত রত্নসিংহাসনের জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামকে এক ঝলক দেখতে ভিড় করে। বিশেষ করে এই সজ্জায় জগন্নাথকে দেখার জন্য বাংলার বৈষ্ণব সমাজে বিশেষ উৎসাহ দেখা যায়। বলাবাহুল্য জগন্নাথের রাধা-দামোদর বেশের জগন্নাথই পূর্ণবিগ্রহে শ্রীমতী রাধার ‘দামোদর’ ভগবান রূপে অর্চিত হন। বহু জগন্নাথ ভক্ত মনে করেন জগন্নাথই দামোদর ও তাঁর সমস্ত ভক্তই রাধা। রাধা ভক্তচূড়ামণি, রাধার মতো রাগানুগা ভক্তিতে ভগবান জগন্নাথকে নিজের মতো করে পাওয়া যায়। রাধার কৃষ্ণ ও ভক্তের জগন্নাথ – এই দুটি কথার অর্থ যেন ওড়িশার জগন্নাথ-সংস্কৃতিতে মিলে মিশে এক হয়ে গিয়েছে কোনো এক প্রাচীন সময় থেকেই।
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 ৩২. বাঁকাচূড়া বেশ 🍁 শ্রীশ্রীজগন্নাথ লীলামৃত 📝 চতুর্থ ভাগ 🙇 শ্রী মৃন্ময় নন্দী কর্ত্তৃক সকল ভক্ত চরণে অসংখ্যকোটি প্রণাম 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/10/jagannath4.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
বাঁকাচূড়া বেশ:-
জগন্নাথের বাঁকাচূড়া বেশটি একাধারে বাৎসরিক বিশেষ বেশ ও পঞ্চুকার (কোনো বছর কার্তিক মাসের তিথি মার্গশীর্ষ অগ্রহায়ণ মাসে সম্প্রসারিত হলে সেই তিথিগুলিকে কেন্দ্র করে উৎসব) পাঁচ দিনের অন্তর্গত অন্যতম একটি বিশেষ বেশ। কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বাদশী তিথিতে শ্রীপুরুষোত্তম জগন্নাথ ও বলভদ্রকে বাঁকাচূড়া বেশে শৃঙ্গার করানো হয়। দ্বাপরযুগের কৃষ্ণের ব্রজলীলার শেষ পর্বের আখ্যানের সঙ্গে জগন্নাথ ও বলভদ্রের বাঁকাচূড়া বেশটি সম্পর্কযুক্ত।
মথুরারাজ কংস তার মৃত্যু সংক্রান্ত দৈববাণীকে মিথ্যা করে দেওয়ার লালসায় নিজের ভগিনী দেবকীর গর্ভজাত সন্তানদের একের পর এক হত্যা করেও নিজের বধ সংক্রান্ত পূর্বনির্ধারিত ভবিতব্যকে খণ্ডন করতে পারেননি। কংস চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখতে চাননি। ভগবতী যোগমায়াকে হত্যার চেষ্টা করতে গিয়ে কংস জেনেছিলেন তাকে যিনি বিনাশ করবেন তিনি গোকুলে বড় হচ্ছেন। তারপরেও কংস একের পর এক ভীষণ অসুরকে ব্রজে পাঠিয়েছেন নিজে বাঁচার জন্য। কিন্তু রাখে হরি মারে কে, আর মারে হরি তো রাখে কে! কৃষ্ণ ও বলরাম কংসের সব উল্লেখযোগ্য অসুরকে বিনাশ করে আরও প্রবলভাবে কংসের জীবনের ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন। কৃষ্ণ ও বলরামের প্রকৃত পরিচয় বৃন্দাবন, মথুরা, হস্তিনাপুর সহ সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়লে কংসরাজ মিত্রের ছদ্মবেশে কৃষ্ণ ও বলরামকে মথুরায় আমন্ত্রণ করে এনে হত্যা করার ষড়যন্ত্র বাঁধেন। কংসের পক্ষ থেকে বৃন্দাবনে গিয়ে কৃষ্ণ ও বলরামকে আমন্ত্রণের দায়িত্ব আরোপিত হয় অক্রুরের ওপর। এই অক্রুর ছিলেন একাধারে কংসের রাজকর্মচারী ও কৃষ্ণের একান্ত ভক্ত। কংসের আজ্ঞাধীন অক্রুর কৃষ্ণ ও বলরামকে মথুরায় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য বৃন্দাবনে এসে কৃষ্ণ ও বলরামকে যে সজ্জায় সজ্জিত দেখেছিলেন, সেই সজ্জায় সজ্জিত করা হয় জগন্নাথ ও বলভদ্রকে। সেই নির্দিষ্ট বেশই রত্নসিংহাসনের দেবগণের বাঁকাচূড়া বেশ নামে পরিচিত। কৃষ্ণ ও বলরামের সেই বিশেষ বেশকে স্মরণ করার জন্য বহু শতাব্দী ধরে বছরের পর বছর নির্দিষ্ট সময়ে বাঁকাচূড়া বেশের আয়োজন করা হয়। ভাগবতের পৌরাণিক ঘটনার স্মৃতিচারণমূলক বেশ হিসেবেও জগন্নাথ ও বলভদ্রের বাঁকাচূড়া বেশটি প্রসিদ্ধ। আনুমানিক দ্বাদশ শতাব্দীর শেষদিকে বা ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুতে জগন্নাথের বাঁকাচূড়া বেশ শৃঙ্গারের সূচনা হয়।
বাঁকাচূড়া বেশ শৃঙ্গারে জগন্নাথ ও বলভদ্রের মাথার দক্ষিণভাগে চন্দ্রিকাচুলা (চুল বাঁধার এক বিশেষ শৈলী) শোভা পায়। দেববিগ্রহে সংযোজিত এই চন্দ্রিকাচুলার শেষ অংশে কিয়া নামক ওড়িশার ঐতিহ্যবাহী সোনার দেবগহনা সজ্জিত থাকে। জগন্নাথ ও বলভদ্রের মাথায় মহামূল্যবান রত্নশোভিত একটি ছোট মাপের সোনার মুকুটের ব্যবহার করা হয়। দেখে মনে হয় জগন্নাথ ও বলভদ্র তাঁদের মাথায় খানিকটা বেনুনীর খোঁপার মতো করে চুল বেঁধে তাতে কিয়া, ফুল ও একটি সোনার মুকুট বেঁধেছেন প্রাচীন গোপশ্রেণির মানুষের গোষ্ঠীস্বামীদের মতো। এছাড়াও জগন্নাথের লক্ষ্মী-নারায়ণ বেশ শৃঙ্গারে ব্যবহৃত অধিকাংশ সোনার অলংকারই বাঁকাচূড়া বেশে শৃঙ্গারের সময় জগন্নাথ ও বলভদ্রকে পরানো হয়। বাঁকাচূড়া বেশেও জগন্নাথ ও বলভদ্রের দুই হাত ও দুই পা শ্রীবিগ্রহদ্বয়ে সংযোজন করা হয়। এই বেশ শৃঙ্গারের সময় জগন্নাথের দক্ষিণ হাতে সুদর্শন চক্র ও বাম হাতে শঙ্খ দেখা যায়। বলরামের দক্ষিণ হাতে মুষল ও বাম হাতে হল ধরা থাকে। সুভদ্রা দেবীর বিগ্রহে বিশেষ পরিবর্তন দেখা যায় না। কিন্তু দেবী সুভদ্রাও মাথায় কিয়া নামক সোনার তৈরি দেবগহনা ধারণ করেন। জগন্নাথের স্বর্ণ বেশ, বামন বেশ ও লক্ষ্মী-নারায়ণ বেশের সঙ্গে জগন্নাথের বাঁকাচূড়া বেশের অনেকখানি মিল রয়েছে। তবে জগন্নাথ ও বলভদ্রের মাথায় চন্দ্রিকাচুলার ব্যবহার এই বেশে রত্নসিংহাসনের দেবগণের পরিচিত সাজসজ্জাকেও নতুন করে তোলে। তবে জগন্নাথের বাঁকাচূড়া বেশ কত প্রাচীন সেই বিষয়ে স্পষ্টভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। অনুমিত হয় দ্বাদশ শতাব্দী বা ত্রয়োদশ শতাব্দীতে সংস্কৃত সাহিত্যের কবি জয়দেবের ‘গীতগোবিন্দম্’ শ্রীমন্দিরে বরণীয় হয়ে ওঠার পর জগন্নাথের কৃষ্ণত্ব প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। এরই পরবর্তীকালে কোনো এক সময়ে জগন্নাথের বাঁকাচূড়া বেশের প্রবর্তন হয় শ্রীক্ষেত্রের শ্রীমন্দিরে।
জগন্নাথ ও বলভদ্রের বাঁকাচূড়া বেশ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ঈশ্বরকে বৈরীভাবে সাধন করলেও তিনি ভক্তের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিজে এগিয়ে গিয়ে তাঁকে কৃপা করেন। আর যে ভক্ত তাঁকে কায়মনোবাক্যে নিরন্তর প্রাণপ্রিয় রূপে জেনে সাধনা করেন তাঁকে তো তিনি সাড়া দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকেন। ভাবগ্রাহী জগন্নাথ। তাঁকে যে যেভাবে নিয়ে ডাকবে, তার কাছে তিনি সেভাবে নিয়েই প্রকাশিত হবেন। তিনি কারও ভাব ভাঙতে দেন না। সমস্ত ভক্তের সমস্ত ভাব রক্ষা করেন।
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 ৩৩. হরিহর বেশ 🍁 শ্রীশ্রীজগন্নাথ লীলামৃত 📝 চতুর্থ ভাগ 🙇 শ্রী মৃন্ময় নন্দী কর্ত্তৃক সকল ভক্ত চরণে অসংখ্যকোটি প্রণাম 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/10/jagannath4.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
হরিহর বেশ:-
ওড়িশার জগন্নাথ-সংস্কৃতিতে বলা হয়, “যো হরিঃ স হরঃ সাক্ষাত যো হরঃ স হরিঃ সদা। (यो हरिः स हरः साक्षात यो हरः स हरिः सदा।)” অর্থাৎ, সাক্ষাৎ যিনি হরি (মহাবিষ্ণু) তিনিই হর (মহাদেব) ও যিনি হর তিনি হরি। তাঁরা স্বরূপত এক, অভিন্ন, একাঙ্গ, অদ্বৈত। শুধু তাঁদের প্রকাশ ভিন্ন ভিন্ন। হরি ও হরের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। শিব ও বিষ্ণু এক। শিবই বিষ্ণু, বিষ্ণুই শিব। পুরীর জগন্নাথ ও বলভদ্র দুজনেই সাক্ষাৎ নারায়ণ ও শিবশঙ্কর রূপে পূজা গ্রহণ করেন। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় যুগাচার্য কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন, “যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্ ।/ মম বর্ত্মানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ ॥” অর্থাৎ‚ যিনি যে প্রকারে আমার উপাসনা করেন‚ আমি তাঁকে সেই ফলদান করে অনুগ্রহ করি। হে পার্থ‚ বর্ণাশ্রমাদি ধর্মনিষ্ঠ মানুষেরা সকল প্রকারেই আমার পথই অনুসরণ করেন। পরম ঈশ্বরকে যে যেভাবে ভজনা করেন, যে পথে তাঁকে দর্শন কামনা করেন, ঈশ্বর ভক্তের আকাঙ্ক্ষা বা মার্গ অনুযায়ী সেভাবেই তাঁর প্রকাশ ঘটান। আধুনিক যুগে শ্রীরামকৃষ্ণ এই আদর্শের সরলীকরণ করে বলেছিলেন, সাকারও সত্য, নিরাকারও সত্য।
প্রতি বছর কার্তিক মাসের অমাবস্যার তিথি থেকে কার্তিকের শুক্লা একাদশী তিথির আগে পর্যন্ত প্রতি সোমবার পুরীর শ্রীমন্দিরে বলভদ্রদেব অবকাশ বেশ পরিবর্তন করার পর হরিহর বেশ ধারণ করেন। সমগ্র কার্তিক মাসে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা রাধাদামোদর বেশে শৃঙ্গার করেন। কার্তিক মাসের অনুষ্ঠিত হরিহর বেশটি রাধাদামোদর বেশেরই একটা ভাগ বা সামান্য পরিবর্তিত রূপ। বলভদ্রের পরিধানে হরিহর বেশের সাজ দেখা গেলেও জগন্নাথ ও সুভদ্রার সজ্জায় রাধাদামোদর বেশই দেখা যায়। হরিহর বেশের অলংকার ও সজ্জা-শৃঙ্গার প্রকরণ রাধাদামোদর বেশের সঙ্গে অভিন্ন হলেও বৈচিত্র্য দেখা যায় বলভদ্রদেবের সজ্জায়। বলভদ্র যে বস্ত্র পরিধান করেন তার অর্ধেকটা কৃষ্ণবর্ণ ও অর্ধেকটা শ্বেতবর্ণের। বিগ্রহের মাথার চূড়া থেকে পাদদেশ পর্যন্ত এমনভাবে সজ্জিত করা হয় যে, কালো ও সাদা কাপড় উলম্বভাবে বলভদ্রের শরীরের দুদিকে শোভা পায়। এই বেশে বলরামকে শুধুমাত্র কার্তিক অমাবস্যা থেকে কার্তিক শুক্লা একাদশীর আগে পর্যন্ত অর্থাৎ দশমী পর্যন্ত সময়পর্বের মধ্যে শুধুমাত্র সোমবার দেখা যায়। এই দশ-এগারো দিনের মধ্যে বলরাম কমপক্ষে একদিন ও সর্বোচ্চ দুদিন হরিহর বেশে সজ্জিত হন। হরিহর বেশ শৃঙ্গারে জগন্নাথ ও বলভদ্র ওড়িশার ‘ত্রিকাছা’ শৈলীতে পোশাক পরেন। জগন্নাথ ও বলভদ্র তাঁদের হাতে ধারণ করেন সোনালি নালিভূজ। হরিহর বেশে জগন্নাথ ও বলভদ্রের বিগ্রহ সজ্জায় মোট চারটি নালিভূজের ব্যবহার করা হয়। নাতিদীর্ঘ সরু বাঁশের তৈরি লাঠি ও বিভিন্ন রঙের রঙিন কাপড় দিয়ে তৈরি ‘ত্রিমুণ্ডী’ (উচ্চারণভেদে ত্রিমুন্দী) ও সোনার ‘চন্দ্রিকা’ গহনা (সোনার ময়ূর-পালক) জগন্নাথের মাথায় চূড়ার অংশে শোভিত হয়। রাধা-দামোদর বেশের অনুকল্পে হরিহর বেশেও সোনার চন্দ্র-সূর্য ও তার নীচের অংশে সোনার তৈরি দীর্ঘ তিলকে সজ্জিত হন জগন্নাথ ও বলভদ্র। এই স্বর্ণতিলক তাঁদের সোনা বেশ সহ আর কয়েকটি বিশেষ শৃঙ্গারেও ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। জগন্নাথ ও বলভদ্রের মাথার দু’পাশে কানের অংশে সোনার তৈরি বড় বড় দুটি কুণ্ডল পরানো হয়। জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের কোমরে রঙিন উত্তরীয় দিয়ে সাজানো হয়। এঁদের মধ্যে বলরামের জন্য নির্দিষ্ট থাকে সাদা ও কালো রঙের ব্যবহার। এর মধ্যে সাদা শিবের ও কালো বিষ্ণুর প্রতীক বহন করে। খুব সম্ভবত শিব ও বিষ্ণুর গাত্রবর্ণের সূত্র ধরে এই দুটি রঙের ব্যবহার এসেছে। ওড়িশার তাঁতে তৈরি ‘বড়লাগী’ কাপড়ে শ্রীবিগ্রহগুলি সেজে ওঠে। দেবী সুভদ্রার সাজে বৈচিত্র্য সেভাবে দেখা না গেলেও তাঁকে হরিহর বেশে সোনার কণ্ঠহার ও তাগায় সাজানো হয়। এছাড়াও ত্রিদেবদেবীকে হরিহর বেশ শৃঙ্গারে আরও কিছু সোনা ও রূপোর অলংকার এবং অজস্র ধরনের ফুলের সজ্জায় সজ্জিত করা হয়। কখনও কখনও জগন্নাথকে মোটা মোটা তুলসীর মালায় ও পদ্মের মালায় সাজতেও দেখা যায়। উৎকলের ব্রাহ্মণেরা বিশ্বাস করেন, তাঁদের ওপর জগন্নাথের নির্দেশ রয়েছে, “মহাদেবং বিনা যো মাং ভজতে শ্রদ্ধয়া সহ।/ নাস্তি তস্য বিনিমোক্ষঃ সংসারাজ্জন্মকোটিভিঃ।। (महादेवं बिना यो मां भजते श्रद्धया सह |/ नास्ति तस्य विनिमोक्षः संसाराज्जन्मकोटिभिः ||)” অর্থাৎ, যে ব্যক্তি আমাকে (মহাবিষ্ণু-জগন্নাথকে) অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে উপাসনা বা ভজনা করে, কিন্তু দেবাদিদেব মহাদেবকে শ্রদ্ধা, পূজা, ভজনা বা উপাসনা করে না, সেই ব্যক্তি শত শত জন্মের পরেও মোক্ষ লাভ করতে পারে না। এর কারণ হলো, “শিবস্য হৃদয়ং বিষ্ণুঃ বিষ্ণুশ্চ হৃদয়ং শিবঃ। (शिवस्य हृदयं विष्णुः विष्णुोश्च हृदयं शिवः।)” অর্থাৎ, বিষ্ণুর হৃদয়ে শিব সদা বিরাজমান, শিবের হৃদয়ে সদা বিরাজমান বিষ্ণু। শিব বিষ্ণুভজনায় প্রীত হন, বিষ্ণু শিবভজনায় প্রীত হন।
আরেকটি শাস্ত্রীয় নির্দেশ পাওয়া যায়, শিবের গুরু বিষ্ণু ও বিষ্ণুর গুরু শিব। কোনো শিবভক্ত যদি বিষ্ণুনিন্দা করেন তবে তিনি শিবের গুরুনিন্দাই করেন; অনুরূপভাবে, কোনো বিষ্ণুভক্ত যদি শিবনিন্দা করেন তবে তিনিও বিষ্ণুর গুরুনিন্দাই করেন। গুরুনিন্দাকারীকে সনাতন ধর্মে সুনজরে দেখা হয় না। শিব উপাসক যদি বিষ্ণুনিন্দা করেন তবে তার শিবপদ লাভ হয় না এবং বিষ্ণু উপাসক যদি শিবনিন্দা করেন তবে তার বিষ্ণুপদ লাভ হয় না। শ্রীক্ষেত্রে জগন্নাথকে ভগবতী বিমলা মায়ের ভৈরব (বা শিব) রূপে দেখা হলেও বলভদ্রকেই শিবস্বরূপ অনুধ্যান করা হয়। এক্ষেত্রে বলভদ্র-মহাশিব, সুভদ্রা-আদ্যাশক্তি, জগন্নাথ-মহাবিষ্ণু রূপে পূজিত হন। নিত্যপূজা উপাসনার সময় বলভদ্রদেবের পূজার বিধিবিধানের সঙ্গে হরিহর বেশে সজ্জিত বলদেবের পূজায় সামান্য কিছু পরিবর্তন ঘটে। হরিহর বেশে তিনি একদেহে শিবরূপে ও বিষ্ণুরূপে ভক্তের পূজা গ্রহণ করেন। হরিহর বেশে সজ্জিত বলদেবের পূজাপদ্ধতিতেও শিবপূজা ও বিষ্ণুপূজার মিশ্রণ দেখা যায়। পূজার উপাচারেও কিছু বৈচিত্র্য ধরা পড়ে। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার এই অপূর্ব বেশ ভক্তের মনের ও আধ্যাত্মিক পথের ভেদবুদ্ধি নাশ করে। শৈব-শাক্ত-বৈষ্ণব ধর্মমতের মধ্যকার সম্প্রদায়গত পারস্পরিক বিদ্বেষ ও বিরোধের অবসান ঘটাতেই শ্রীভগবান হরিহর বেশে সজ্জিত হয়ে ভক্তের মনের যাবতীয় সংশয় সমূলে উৎপাটন করেন। হরি আর হরে কিছু তফাৎ নেই। তাঁরা একই পরমাত্মার দুই প্রকাশ। পৌরাণিক হরিহর মূর্তিতেও দেখা যায় মহাশিব ও মহাবিষ্ণু একই শরীরের অবস্থান করেন। সেই অদ্বৈত বিগ্রহের অর্ধাঙ্গে ভস্ম, অর্ধাঙ্গে চন্দন; অর্ধাঙ্গে জটাজাল, অর্ধাঙ্গে রত্নমুকুট; অর্ধাঙ্গে ব্যাঘ্রচর্মাম্বর, অর্ধাঙ্গে পীতাম্বর; অর্ধাঙ্গে রুদ্রাক্ষমালা, অর্ধাঙ্গে রত্নহার; একপদে বিল্বপত্র, একপদে তুলসীপত্র। শ্রীমন্দিরের রত্নসিংহাসনের দেবতার হরিহর বেশের সঙ্গে পৌরাণিক ইতিবৃত্ত এভাবে প্রচ্ছন্নভাবে জড়িত রয়েছে।
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 ৩৪. পদ্ম বেশ 🌷 শ্রীশ্রীজগন্নাথ লীলামৃত 📝 চতুর্থ ভাগ 🙇 শ্রী মৃন্ময় নন্দী কর্ত্তৃক সকল ভক্ত চরণে অসংখ্যকোটি প্রণাম 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/10/jagannath4.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
পদ্ম বেশ:-
জগন্নাথের ভক্ত মনোহর দাস ছিলেন হিন্দিভাষী। তিনি আজ থেকে আনুমানিক তিন শতাব্দী আগে জগন্নাথের লীলাপ্রচারের অঙ্গ হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ভক্তিমান পুরুষ। জগন্নাথের প্রতি তাঁর একান্ত ভক্তি ও অচল বিশ্বাস ছিল। একবার মনোহর দাস জগন্নাথকে চোখ ভরে দেখার জন্য মনে মনে খুব ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু মনের ভাব তিনি কাউকে বলতে পারছিলেন না। জগন্নাথের প্রতি তাঁর ব্যাকুলতা ক্রমে বাইরেও প্রকাশ পেতে থাকে। অবশেষে জগন্নাথের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠা মনোহর দাস সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি নীলাচলে জগন্নাথ দর্শনে যাবেন। পার্থিব সমগ্র প্রতিবন্ধকতা তিনি পার করে যাবেন শুধুমাত্র জগন্নাথের মহানাম সম্বল করে। মনোহর দাসের যেমন সিদ্ধান্ত তেমনই কাজ।
একদিন ব্রহ্মমুহূর্তে জগন্নাথের নামস্মরণ করে ভক্তরত্ন মনোহর দাস রওনা হয়েছিলেন নীলাচলের দিকে। জগন্নাথের নাম গান করতে করতে তিনি পাহাড়-জঙ্গল, নদ-নদী, জনপদ পেরিয়ে পথ চলতে লাগলেন মনের আনন্দে। তিনি সারাদিন পথ চলতেন ও রাতে বিশ্রামের জন্য একটি আশ্রয়ের সন্ধান করতেন। যেদিন তাও মিলত না সেদিন তিনি পথেই জগন্নাথের নাম স্মরণ করে বিশ্রাম নিয়ে পরের দিন আবার চলতে শুরু করতেন নীলাচলের পথে।
নীলাচলের পথে পথ চলতে চলতে এভাবেই মনোহর দাসের দিন কেটে যাচ্ছিল। একটি করে দিন কাটে আর মনোহর দাস মনে মনে আনন্দ বোধ করেন এই ভেবে যে, তিনি নীলাচলের পথে আরও অনেকটা পথ এগিয়ে এসেছেন। যত দিন যাচ্ছে ততই তিনি জগন্নাথের দর্শনের দিকে এগিয়ে চলেছেন। এমনই একদিন সকালবেলা তিনি তাঁর যাত্রা শুরু করে দুপুরবেলা পথে তিনি তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠলেন। সেই সময় তিনি কাছাকাছি কোনো গ্রাম বা মন্দির বা কোনো আশ্রয় দেখতে পেলেন না। এমনকি কাছাকাছি কোনো পানীয় জলের জলাশয় খুঁজে পেলেন না যেখানে একটু জল পান করে তৃষ্ণা শান্ত করা যায়। তবু তিনি পথে পথচলা থামালেন না। মনে মনে জগন্নাথের নাম সংকীর্তন করতে করতে তিনি এগিয়ে যেতে লাগলেন। অনেক দূর আসার পর তিনি দেখতে পেলেন একটি সুন্দর পুকুর। তিনি সেই সুন্দর পুকুরে প্রথমে কিছুটা জল পান করে তারপর পুকুরে স্নানাদি সেরে নিলেন। পুকুরের মিষ্টি জলে তার তৃষ্ণা সম্পূর্ণ নিবারণ হয়ে গিয়েছিল। তৃপ্ত মনে তিনি পুকুরের দিকে চেয়ে দেখলেন অজস্র সুন্দর পদ্ম ফুল ফুটে রয়েছে। কিন্তু শীতের মরসুমে এমন দৃশ্য দেখে তিনি অবাকই হলেন। শীতে পদ্মফুল ফুটলেও তার শোভা কমে আসে। প্রাকৃতিক উপায়ে শীতে পদ্মফুল খুব কম ফোটে। সূর্যের তেজ পদ্ম ফুটতে সাহায্য করে। শীতকালে একসঙ্গে এত পদ্ম ফুল ফুটে থাকার এমন বিরল দৃশ্য দেখে মনোহর দাস খুবই আশ্চর্য হলেন। তিনি মনে মনে চিন্তা করলেন জগন্নাথের সৃষ্ট পৃথিবীতে আশ্চর্যের কিছুই নেই। জগন্নাথ সমস্ত নিয়ম তৈরি করেন আবার তিনিই নিয়ম ভাঙতে দাঁড়িয়ে থাকেন। জগন্নাথ মূককে সুবক্তা করান, পঙ্গুকে পাহাড় লঙ্ঘন করান। তাঁর সামান্যতম কৃপা কটাক্ষে অসাধ্য সাধন হয়। শীতে পদ্মফুল ফোটা আর কি এমন বড় ব্যাপার। তিনি পুকুরে নেমে সমস্ত পদ্মফুল তুলে নিলেন আর নিজের ছোট্ট কাপড়ে সমস্ত ফুল আঁটি করে নিজের কাঁধের কাপড়ে বেঁধে নিলেন। তিনি কিছুদূর এগিয়ে যেতেই সেই পুকুরটিকে মিলিয়ে যেতে দেখলেন। এসব জগন্নাথেরই অশেষ কৃপায় ছবি বুঝতে পারলেন তিনি। মনোহর দাস মনে মনে হাসলেন।
এভাবে পথে চলতে চলতে মনোহর দাস অবশেষে মাঘ মাসের অমাবস্যার রাতে জগতের রাজা জগন্নাথের রাজধানী পুরীতে গিয়ে পৌঁছলেন। তাঁর বাঞ্ছিতধামে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আনন্দে অধীর হয়ে উঠলেন। তিনি আর দেরি করলেন না সঙ্গে সঙ্গে প্রবেশ করলেন জগন্নাথের শ্রীমন্দিরে। তিনি রত্ন সিংহাসনে বিরাজমান জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা ও সুদর্শনকে দেখে বিমোহিত হয়ে গেলেন। আনন্দে মনের ভেতর থেকে তাঁর ‘জগন্নাথ’ ‘জগন্নাথ’ জয়ধ্বনি হতে লাগল। মনোহর দাসের দুই চোখ বেয়ে আনন্দের অশ্রু বইতে লাগল। মহাবাহু জগন্নাথকে দেখে তাঁর ভেতরে একাধিক সাত্ত্বিক মহাভাবের প্রকাশ হলো। এ যে বড় আনন্দের দেখা ভগবানের সঙ্গে ভক্তের। ঠিকই এরপর মনোহর দাস বাহ্য চেতনা ফিরে পেতেই কয়েকদিন আগে সংগ্রহ করা সেই পদ্মফুলগুলি জগন্নাথকে নিবেদন করতে চাইলেন। জগন্নাথের প্রতি একান্ত অনুরাগে মনোহর দাস ভুলে গিয়েছিলেন যেদিন তিনি পুকুর থেকে প্রস্ফুটিত পদ্মফুলগুলি সংগ্রহ করেছিলেন, সেদিনের পর অনেকগুলি দিন কেটে গেছে। ভাবের ঘোরে থাকা মনোহর দাসের মনেও ছিল না তাঁর সংগ্রহ করা পদ্মফুলগুলি এতদিনে অনেকটা শুকিয়ে গেছে। তবু তাঁর ভক্তহৃদয় এতসব তুচ্ছ বিষয়ে ভাবতে চাইল না। তিনি যে এসব জগন্নাথের জন্যই এতদূর থেকে মাথায় বয়ে এনেছেন। মাঝে যদি এতগুলো দিন কেটে গিয়ে থাকে, তবে সেটাও তো জগন্নাথেরই ইচ্ছে। মনোহর দাস গ্রামে থাকতে এক কথকতার আসরে শুনেছিলেন, জগন্নাথের ইচ্ছা ছাড়া একটা ফুলের রেণুও খসে না, একটা গাছের পাতা নড়ে না।
পুরীর শ্রীমন্দিরে দাঁড়িয়ে মনোহর দাস তাঁর সংগ্রহ করে আনা শুকনো পদ্মফুলগুলি জগন্নাথের ভাবে ভাবিত হয়ে থাকা অবস্থায় নিবেদন করতে চাইলে পুরীর পাণ্ডারা তাঁর ওপর ক্রুদ্ধ হন। জগন্নাথের সেবক ও পাণ্ডারা মনোহর দাসকে বোঝান, জগন্নাথকে শুধুমাত্র টাটকা ফুলই নিবেদন করা উচিত। শুকনো ফুল দেবতাকে নিবেদন করা যায় না। মনোহর দাসের মনে খুব কষ্ট হলো। তিনি তাঁর আরাধ্য দেবতার জন্য এতদিন ধরে মাথায় করে এত শত পদ্মফুল বহন করে আনলেন অথচ সেই ফুলই কিনা তাঁকে দিতে পারলেন না। মনোহর দাস মানসিক কষ্টে ‘জগন্নাথ’ ‘জগন্নাথ’ বলে কাঁদতে লাগলেন। তিনি মনে মনে খুব আহত হয়েছিলেন। তিনি তাঁর সংগ্রহ করে আনা ফুলগুলি সঙ্গে নিয়ে জগন্নাথের শ্রীমন্দিরকে আশাহীন ভাব নিয়ে ছেড়ে বাইরে চলে এলেন। তখনও তিনি মনে মনে বিশ্বাস করে চলেছেন, জগন্নাথ স্বয়ং ভাবগ্রাহী জনার্দন। জগন্নাথ কি তাঁর ভক্তের এই কষ্ট বুঝবেন না? জগন্নাথই যদি এই পদ্মফুলগুলি না চান, তবে আর কীভাবে মনোহর দাস তা জগন্নাথকে দিতে পারে! শ্রীমন্দিরের থেকে একটু দূরে মনোহর দাস রাতের বিশ্রামের জন্য রইলেন। এদিকে শ্রীমন্দিরে জগন্নাথদেব তাঁর ভক্তের আনা ফুলের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। পাণ্ডাদের কৃতকর্মের জন্য জগন্নাথ অভিমানী হয়ে উঠলেন। তিনি সন্ধ্যাকালীন বড় শৃঙ্গার বেশে আর সাজতে চাইলেন না। যতবার জগন্নাথকে সাজানো হয় ততবারই সাজ খুলে পড়ে যায়। এমন ঘটনা বিরল। জগন্নাথের সেবকগণ ভয় পেয়ে গেলেন। প্রধান পুরোহিত ভয়ে কাঁপতে লাগলেন। তাঁরা বুঝতে পারলেন, নিশ্চয়ই কোনো দিব্য মহাত্মার প্রতি অন্যায় হয়েছে শ্রীমন্দিরে। জগন্নাথ তাই রুষ্ট হয়েছেন সকলের ওপর। সেই অন্যায়ের যদি সংশোধন না করা হয় তবে জগন্নাথের সাজ কোনোভাবেই করা যাবে না।
ভাবগ্রাহী জনার্দন জগন্নাথ তাঁর ভক্ত মনোহর দাসের সেবা গ্রহণ করতে চান। তিনি যে ভক্তবাঞ্ছা কল্পতরু। তিনি কারও বাসনা অপূর্ণ রাখেন না, রাখতে পারেন না। মনোহর দাস আশা করে সেই শুকনো হয়ে আসা পদ্মফুলগুলি আগলে বসে থাকলেন। ক্রমে তিনি জগন্নাথের চিন্তা করতে করতে মহাভাবে মূর্ছিত হয়ে গেলেন। এদিকে জগন্নাথ মহাপ্রভু পুরীর গজপতি মহারাজের কাছে প্রত্যাদেশ দিলেন, “হে রাজা, আজ আমার এক প্রিয় ভক্ত শ্রীমন্দিরে আমার সেবার নিমিত্তে তোমার নিয়োজিত পাণ্ডা ও সেবকদের কাছে বিনা কারণে অপমানিত হয়ে ফিরে গেছে। আমার জন্য আমার ভক্ত অনেকগুলি সুন্দর সুন্দর পদ্ম সংগ্রহ করে এনেছিল। সেগুলি তোমার নিয়োজিত পাণ্ডা ও সেবকদের কারণে সে আমাকে উপহার দিতে পারেনি। এখন সেই ভক্তই আমার চিন্তা করতে করতে মূর্ছিত হয়ে মন্দিরের বাইরে সিংহদ্বারের কাছে শুয়ে রয়েছে। সে মনের দুঃখে ব্যথিত হয়ে রয়েছে। আমি তোমাকে আদেশ করছি অনতিবিলম্বে আমার সেই ভক্তের কাছে যাও এবং তাঁর অতিকষ্টে সংগ্রহ করে আনা সেই পদ্মফুলগুলি যেখানে যে অবস্থায় পড়ে আছে সেই অবস্থায় দ্রুত নিয়ে আসার ব্যবস্থা করো। আজকের বড় শৃঙ্গার বেশে আমি মনোহর দাসের পদ্ম দিয়েই সাজতে চাই। আর এর সঙ্গে পদ্মচালের সুমিষ্ট ক্ষীর তৈরি করে আমাকে নিবেদন করে আমার ভক্তকে তা মহাপ্রসাদ রূপে উপহার দাও। আমার ভক্ত মনের দুঃখে অভুক্ত উদর নিয়ে রয়েছে। যাও রাজা, তাঁকে এখনই ফিরিয়ে আনো। আমি আমার ভক্তের জন্য অপেক্ষা করে রয়েছি।” একই সময়ে জগন্নাথের একই প্রত্যাদেশ পেলেন পুরীর শ্রীমন্দিরের প্রধান পূজারী। তিনি বুঝতে পারলেন আজ কত বড় ভুল হয়েছে শ্রীমন্দিরে। নিজেদের ক্রিয়াকাণ্ড ও অহংকারের জন্য প্রধান পুরোহিত লজ্জিত হলেন। জগন্নাথের শৃঙ্গার সাময়িকভাবে থামিয়ে মনোহর দাসের কথা চারিদিকে আলোচিত হতে লাগল। সকলেই উপলব্ধি করলেন বিধিপূজা কতটা বাহ্য বিষয়। ভক্ত যদি সভক্তি সামান্যতম কিছু প্রভুকে অর্পণ করেন তবে তা নিমেষে নিখাদ সোনার মতো বিশুদ্ধ হয়ে যায়। পরশপাথরের স্পর্শ পেলে লোহা কি আর লোহা থাকে? জগন্নাথের এই তো ধারা।
জগন্নাথের এমন অদ্ভুত প্রত্যাদেশ পেয়ে গজপতি মহারাজ আর একটুও দেরি করলেন না। ততক্ষণে শ্রীমন্দির থেকে রাজার কাছে খবর এসেছে জগন্নাথের বড় শৃঙ্গারে আজ বারবার অন্যথা হচ্ছে। জগন্নাথের শরীরে বড় শৃঙ্গারের কোনো উপকরণই ক্ষণমাত্র থাকছে না, শুধুই খসে যাচ্ছে। রাজা বুঝতে পারলেন যে, আসলে শ্রীমন্দিরে কি ঘটেছে। তিনি তৎক্ষণাৎ সিংহদ্বারের কাছে পৌঁছে গেলেন। ভক্ত মনোহর দাস তখনও বাহ্য চেতনা হারিয়ে সিংহদ্বারের কাছে পড়েছিলেন। তখনো তাঁর হাতের কাছে পদ্মফুলগুলি আঁটি করে বেঁধে রাখা ছিল। রাজা স্বয়ং মনোহর দাসের কাছ থেকে পরম শ্রদ্ধায় শুকনো পদ্মফুলগুলি সংগ্রহ করলেন। মনোহর দাসের কানে জগন্নাথের নাম শোনাতে শোনাতে তাঁর বাহ্য চেতনা ফিরে এলো। রাজা মহাপ্রভু জগন্নাথের সেবক ও পাণ্ডাদের নির্দেশ দিলেন আজ মনোহর দাসের আনা এই পদ্মফুলেই হবে জগন্নাথের বড় শৃঙ্গার বেশ। রাজার কথা শুনে সেবক ও পাণ্ডারা আশ্চর্য হলেন। প্রধান পুরোহিত বুঝলেন জগন্নাথ নিশ্চয়ই রাজাকেও প্রত্যাদেশ করেছেন। সবাই বুঝতে পারলেন, এটাই জগন্নাথের ইচ্ছা। মনোহর দাসের সংগ্রহ করে আনা সেই শুকনো পদ্মগুলি সুগন্ধি চন্দনে স্পর্শ করে জগন্নাথের শ্রীবিগ্রহে স্পর্শ করানো সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি সদ্য ফোটার পদ্মের মতো ফুটে উঠতে লাগল। একসঙ্গে এতগুলি পদ্মফুলের সৌরভে সমগ্র মন্দির দিব্যসুগন্ধে ভরে গেল। গজপতি মহারাজ ও শ্রীমন্দিরের সমস্ত জনতা এমন অদ্ভুত অপার্থিব দৃশ্য দেখে আনন্দে বিভোর হয়ে উঠলেন। সকলেই জগন্নাথ ও তাঁর মহান ভক্ত মনোহর দাসের নামে জয়ধ্বনি দিতে লাগলেন।
পুরীর শ্রীমন্দিরে এই ঘটনাটি ঘটেছিল আনুমানিক তিন শতাব্দী আগে কোনো এক মাঘ মাসে। জগন্নাথের ভক্ত মনোহর দাসের এই কিংবদন্তি অনুযায়ী এখনও মাঘ মাসের অমাবস্যার পর থেকে শুক্লপক্ষের শ্রীপঞ্চমী তিথির (সরস্বতী পূজার তিথি) মধ্যবর্তী যে শনিবার বা বুধবার পড়ে সেই দিন জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা ও সুদর্শন পদ্মের সজ্জায় সজ্জিত হয়ে ওঠেন। শুধুমাত্র পুরীতে শ্রীমন্দিরেই নয় ওড়িশায় জগন্নাথ-সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অজস্র মন্দিরে প্রধান দেবতাকে এখন পদ্মবেশে সজ্জিত করা হয়। প্রতি বছর শীতের মরসুমে পদ্মফুলের অভাব ঘটে। কিন্তু ঠিক কোনো না কোনো ভক্ত এই সময়ে জগন্নাথের জন্য অজস্র সুন্দর পদ্ম সংগ্রহ করে আনেন। এছাড়াও সাদা কাগজ ও সাদা শোলা দিয়ে পদ্ম তৈরি করা হয় জগন্নাথকে সাজানোর জন্য। পদ্ম বেশ শৃঙ্গারের সময় জগন্নাথ ও বলভদ্রের পায়ের কাছে কাগজ ও শোলার তৈরি রাজহংস দেখা যায়।
জগন্নাথের এই পদ্মবেশ সারারাত জগন্নাথের গায়ে থাকে। জগন্নাথের অন্য কোনো বিশেষ বেশেই জগন্নাথের শয়ন হয় না। পদ্মবেশ এক্ষেত্রে খুব ব্যতিক্রম। পরেরদিন ভোরে জগন্নাথের মঙ্গলারতির পরও কিছুক্ষণ জগন্নাথ পদ্মবেশে থাকেন। এমনকি সিংহদ্বারের পতিতপাবন বিগ্রহও একইভাবে সেজে থাকেন। মঙ্গলারতির পর এই বেশও খুলে নতুন সাজে জগন্নাথকে সাজানো হয়। জগন্নাথের পদ্মবেশ মনোহর দাসের ভক্তি ও বিশ্বাসের স্মারক। ভক্তের জন্য জগন্নাথ সবকিছু করতে পারেন। ভক্ত যদি জগন্নাথের জন্য সমস্ত নিয়ম ভেঙে জগন্নাথের প্রতি অনুরক্ত হন, তবে জগন্নাথও সমস্ত নিয়ম ভেঙে ভারতের কাছে ধরা দেওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন। ওড়িশার জগন্নাথ-সংস্কৃতিতে পদ্ম একাধারে ভক্তের জ্ঞান, কর্ম, ভক্তি, অভীষ্ট, প্রেম, আনন্দ, লক্ষ্য, উৎসর্গ, সমর্পণ, প্রণিপাত, শুদ্ধতা, আবেগ, বৈরাগ্য, হৃদয়পদ্ম ও নিষ্কাম মনোবৃত্তির প্রতীক। পদ্মবেশে জগন্নাথ স্মরণ করিয়ে দেন, যে ভক্ত একবারও জগন্নাথের হওয়ার কল্পনাও করেছেন, জগন্নাথ সঙ্গে সঙ্গে সেই ভক্তের হয়ে বসে রয়েছেন। ভক্তের হৃদয়পদ্মই জগন্নাথের প্রকৃত আসন। এখানেই জগন্নাথের সর্বাধিক সেবা সম্ভব। এই হৃদয়পদ্মই জগন্নাথকে উৎসর্গ করতে হয়। তবেই ভক্তের সাধনার সার্থকতা।
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 ৩৫. গজ-উদ্ধারণ বেশ 🐘শ্রীশ্রীজগন্নাথ লীলামৃত 📝 চতুর্থ ভাগ 🙇 শ্রী মৃন্ময় নন্দী কর্ত্তৃক সকল ভক্ত চরণে অসংখ্যকোটি প্রণাম 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/10/jagannath4.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
গজ-উদ্ধারণ বেশ:-
শ্রীপুরুষোত্তমধামের মহাবাহু জগন্নাথের পরিত্রাতা রূপটি সর্বজনবিদিত। যে ব্যক্তি জীবনের চরম অসময়ে মাত্র একবারও কায়মনোবাক্যে জগন্নাথের নামস্মরণ করেন, তাতেই তাঁর সংকটের কালো মেঘ কেটে যায়। জগন্নাথের সর্ব আর্তি হরণকারী রূপ তাঁর অনন্য গজ-উদ্ধারণ বেশ শৃঙ্গারে ধরা পড়ে। ওড়িশায় জনে জনে বিশ্বাস রয়েছে, জগন্নাথ মহাপ্রভুর গজ-উদ্ধারণ বেশ দর্শন করলে ও গজেন্দ্র মোক্ষ লীলা শ্রবণ করলে ভক্তের ঐহিক ও পারৈহিক বিপদ সম্পূর্ণ কেটে যায়। জগন্নাথের গজ উদ্ধারণ বেশের সূচনার পিছনের কাহিনিটি শ্রীমদ্ভাগবতে রয়েছে। জগন্নাথের এই অনন্য বেশে জগন্নাথ শ্রীহরি নারায়ণ রূপে প্রকাশিত হন।
ওড়িশার জগন্নাথ-সংস্কৃতির মৌখিক কথা ও কাহিনী অনুযায়ী গজেন্দ্র মোক্ষ কাহিনিতে রয়েছে, এক সময় অযুত যোজন সমান উচ্চতার ত্রিকূট পর্বত ও তার সন্নিহিত অঞ্চল অতিশয় মনোমুগ্ধকর স্থান। এই সুউচ্চ ত্রিকূট পর্বতের একটি গভীর অরণ্যে একদল বিশাল আকারের হাতি শান্তিতে বসবাস করত। ত্রিকূট পর্বতের বনে বনান্তরে খাদ্যের অভাব ছিল না। বনের হিংস্র পশুর সংখ্যাও ছিল তুলনামূলক অনেক কম। ত্রিকূট পর্বতের অরণ্যে বসবাসকারী হাতি বা গজের দলের দলপতি বা রাজা ছিল গজেন্দ্র। তাকে তার বিশাল হস্তিবাহিনীর প্রত্যেকেই প্রধান হাতির সম্মান দিত। সেই হাতিই ক্রমে হয়ে উঠেছিল সমগ্র গজসমাজের গজের রাজা। এই গজেন্দ্র ছিল পূর্বজন্মের অভিশপ্ত। মুনির অভিশাপে গজেন্দ্র পূর্বজন্মের সমস্ত স্মৃতি ভুলে গিয়েছিল। কিন্তু পূর্বজন্মের রাজাসম সংস্কার ও ভগবানের প্রতি ভক্তি তার এই গজজন্মেও বর্তমান ছিল। পূর্বজন্মের ভালো ও মন্দ উভয় প্রকারের সংস্কারই ঈশ্বরের কৃপা ছাড়া বিনা তপস্যায় সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয় না।
গজদলপতি গজেন্দ্র পূর্বজন্মে ছিল দক্ষিণ ভারতের দ্রাবিড় অঞ্চলের একজন উচ্চ বংশীয় প্রজাপালক মহারাজা। পূর্বজন্মে গজেন্দ্রর নাম ছিল ইন্দ্রদ্যুম্ন। একবার দ্রাবিড়ের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন নিজের মাতৃভূমি তথা রাজ্য ত্যাগ করে এসে কিছুকালের জন্য মলয় পর্বতে বাস করছিলেন। রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ছিলেন ভগবান শ্রীমৎ নারায়ণের উত্তম ভক্ত ও মর্তলোকে তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপাসক। রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন বিত্তে যশস্বী পুরুষ ছিলেন। তিনি পার্থিব, অপার্থিব অতুল ঐশ্বর্য ও সম্পদের অধিকারী হয়েও তাঁর আরাধ্য দেবতার প্রতিদিন স্মরণ, মনন, পূজা, যজ্ঞ, জপ, ধ্যান করতেন।
রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন দ্রাবিড় দেশ থেকে মলয় পর্বতে এসে বসবাসকালে তিনি বনবাসী তপস্বীগণের মতোই কষায় রঙের বসন ও শিরে জটা ধারণ করেছিলেন। এই সময়ে তাঁকে ঠিক বনচারী সাধু-ব্রহ্মচারী তপস্বীর মতোই দেখতে লাগত। তাঁর বনবাসী জীবন শান্তিতে ঈশ্বরের নিরন্তর চিন্তায় অতিবাহিত হচ্ছিল। এমনই একদিন যখন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন প্রভাতী স্নান করে সেদিনের মতো নিশ্ছিদ্র মৌনব্রত ধারণ করে গভীর তপস্যার সংকল্প নিয়ে একাগ্রচিত্তে শ্রীবিষ্ণু ভগবানের নিত্যপূজা করতে বসেছিলেন ঠিক তখনই সেখানে দৈবের দোষে ভারতের মধ্যভাগে বিরাজমান মহাযশস্বী তপস্বীসম্রাট অগস্ত্য মহামুনির তাঁর শিষ্যপরিকর সমেত আগমন করেছিলেন। তিনি ছিলেন মধ্যভারতের সবচেয়ে প্রতাপশালী মুনি। মহামুনি অগস্ত্য রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নর সামনে এসে তাঁকে সম্ভাষণ করলেও মৌনব্রতে ব্রতী রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন সম্পূর্ণ চুপ করে রইলেন।
মৌনতা অবলম্বন করে বিরাজমান রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের এই ধরনের আচরণ মহামুনি অগস্ত্যকে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নর প্রতি ক্রোধান্বিত করে তুলতে থাকল। মহামুনি অগস্ত্য মলয় পর্বতে সশিষ্য এসেছিলেন। শিষ্যদের সামনে তাঁর এই নিরুত্তর অনাদর তিনি মেনে নিতে পারলেন না। মহামুনি অগস্ত্যর ক্রোধ রিপু চরমে উঠতে থাকায় তিনি রাজার সামনে থেকে গমনকালে অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করেই রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন অভিশাপ দিলেন। মহামুনি রাজাকে অভিশাপ দিলেন, সামাজিক রীতিনীতির, শিষ্টাচার ও যথার্থ সুশিক্ষার অভাবে অহংকারী রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ক্ষত্রিয় বর্ণের রাজা হিসেবে মুনিঋষিগণের প্রতি নিজের কর্তব্য ভুলে গিয়ে অজস্র তপস্বীগণের সামনে তপস্বী ব্রাহ্মণ অগ্যস্তকে অপমান করেছে। রাজার এই আচরণ তাঁর মূর্খ হস্তীসম জড়বুদ্ধির পরিচয় বহন করে। তাই রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন মনুষ্য জীবন ত্যাগ করে সেই ঘোর অন্ধকারময় হস্তীযোনিতেই গমন করুক ও আগামী জীবন হস্তির জীবন কাটাক। বিনা অপরাধে দ্রাবিড়ের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের অভিশপ্ত হস্তীজন্ম প্রাপ্ত হয়েছিল কিন্তু আগের মনুষ্যজন্মে শ্রীবিষ্ণু ভগবানের নিত্যদিন পূজা-যজ্ঞ-আরাধনার প্রভাবে অভিশপ্ত জড়বুদ্ধিমান গজজীবনেও রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নর চিন্তা চেতনায় শ্রীবিষ্ণু ভগবানের পূজার্চনার পূর্বের শুভস্মৃতি অক্ষয় হয়ে বজায় ছিল।
ত্রিকূট পর্বতে বসন্ত সমাপ্ত হয়ে গ্রীষ্ম এলো। পর্বতের অরণ্যে বসবাসকারী হস্তিরাও রোদের প্রচণ্ড তাপে বিহ্বল হয়ে উঠতে থাকলো। অরণ্যে বসবাসকালে একদিন গজেন্দ্র তাঁর অনুগামী হস্তীবাহিনী নিয়ে অরণ্যের সর্ববৃহৎ সরোবরে যাচ্ছিল সুস্বাদু জল পান ও ঠাণ্ডা জলে স্নানের আকাঙ্ক্ষায়। গ্রীষ্মের দাবদাহে তৃষ্ণার্ত হস্তীবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে গজেন্দ্র যখন বনপথে চলেছিল তখন শেষ বসন্তের ও গ্রীষ্মের প্রারম্ভের ফুলগুলি সুগন্ধি বাতাসে বনের পথ ভরিয়ে তুলেছিল। প্রকৃতির সুরভিত বাতাসে প্রায় মদবিহ্বল নয়নে হস্তিবাহিনীর দলপতি গজেন্দ্র অনেক দূর থেকে পূর্ণ প্রস্ফুটিত পদ্মরেণুর সুগন্ধবাহী বাতাসের আঘ্রাণ লাভ করে সেই বিরাট সরোবরের তীরে দ্রুতগতিতে সদলবলে উপস্থিত হলো।
স্বর্ণকমল, শ্বেতকমল, পীতকমল, নীলকমল ও রক্তকমলের সুবাসে সুরভিত মধুর নির্মল জলের বিরাট সরোবরে গজেন্দ্র প্রথমে অবতরণ করল আর নিজের শুড় দিয়ে সেই সরোবরের সুস্বাদু মিষ্টি জল পান করতে লাগল। অবশেষে গজেন্দ্র সরোবরের জলে নেমে স্নানও করল। এতে গজেন্দ্র খুবই আমোদ পেল। এই জলবিহার বিনোদনে গজেন্দ্র তার অন্য হস্তীবাহিনী সদস্যদেরও সরোবরের ঠাণ্ডা জলে স্নান করিয়ে দিল ও ঠাণ্ডা মিষ্টি জল পান করিয়ে তৃপ্ত করতে সক্ষম হলো। এই বৃহৎ সরোবরটি ছিল দিকপাল বরুণদেবের। সুরভিত বাতাস ও গ্রীষ্মের দিনে এমন ঠাণ্ডা জলে সর্বাঙ্গ ভিজিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে রইল গজেন্দ্র। ক্রমে এতে মোহিত হয়ে গজেন্দ্র সরোবরের মাঝেই উন্মত্তের মতো আচার আচরণ করতে শুরু করল। যেখানে জীব প্রয়োজন পূরণ করতে গিয়ে বিলাসে ডুবে যায়, সেখানেই বিপদ তাকে আক্রমণ করে। গজেন্দ্রও আমোদে বুঁদ হয়ে ভুলেই গিয়েছিল যে তারা সকলে তৃষ্ণনিবারণের জন্য সরোবরে এসেছে, জলবিলাসের জন্য নয়। কিন্তু ভোগের ভ্রমে অন্ধ হয়ে থাকা গজেন্দ্র বুঝতেও পারছিল না এক বড় বিপদ তার এত সন্নিকটে আসছে। ফলে আসন্ন বিপদের বিষয়ে গজেন্দ্র প্রস্তুতও ছিল না।
গজেন্দ্র যখন অরণ্যের সরোবরে উন্মত্তের মতো আচরণ করছিল তখন দৈবপ্রেরিত হয়ে এক বলবান কুমীর নিজের করার দাঁতে দৃঢ়ভাবে গজেন্দ্রর একটি পা কামড়ে ধরল। এই কুমীর পূর্বজন্মে ‘হূহূ’ নামে এক শ্রেষ্ঠ গর্ন্ধব ছিল। মহান ঋষি দেবলের অভিশাপে সেই গন্ধর্বরাজ কুমীরের দেহ ধারণ করে এই সরোবরেই বহুদিন ধরে বসবাস করছিল। গজেন্দ্রর প্রমত্তের মতো আচার আচরণে তার শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছিল। তাই কুমীররূপী যক্ষ গজেন্দ্রর পায়ে ভীষণ আঘাত করে। কুমীর করার দাঁতে গজেন্দ্রর পায়ে কামড় বসানোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গজেন্দ্র সচেতন হয়ে ওঠে। অতি বলবান গজেন্দ্র নিজের সমস্ত দৈহিক শক্তি একত্রিত করে নিজেকে কুমীরের ভীষণ কামড় থেকে মুক্ত করতে চেষ্টা করতে শুরু করল। কিন্তু কুমীরের দাঁতের ভীষণ আঘাত থেকে সে নিজেকে মুক্ত করতে পারল না। বরং সে যত ছটফট করতে লাগল ততই কুমীরের দাঁতারও দৃঢ় হয়ে তার পায়ে বসে যেতে লাগল। গজেন্দ্র এই অবস্থার জন্য একটুও প্রস্তুত ছিল না। ফলে গজেন্দ্র সরোবরে দিশেহারা হয়ে পড়ল। জলে কুমীর বলবান, স্থলে গজের দল। গজেন্দ্র অনায়াসে বুঝতে পারল জলে কুমীরের সঙ্গে লড়াই করা যথেষ্ট কঠিন। অথচ কুমীরও এত শক্তিশালী যে গজেন্দ্র তাকে স্থলে টেনে তুলতে অক্ষম। গজেন্দ্র ও কুমীরের মধ্যে ভীষণ জীবন-মরণ যুদ্ধ শুরু হলো। গজেন্দ্রর সঙ্গে আসা তার বিরাট হস্তীবাহিনীও নিজেদের সমস্ত বল প্রয়োগ করেও নিজেদের প্রিয় দলপতি গজেন্দ্রকে কুমীরের ভীষণ কামড় থেকে ছাড়িয়ে আনতে সক্ষম হল না। এই ভীষণ যুদ্ধে গজেন্দ্র ও কুমীর উভয়েই নিজ নিজ পূর্ণ শারীরিক ও মানসিক শক্তি প্রয়োগ করেছিল। তাছাড়া গজেন্দ্র ও কুমীর উভয় পক্ষই সমান শক্তিশালী হওয়ায় সরোবরের জলে উভয় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন টানাটানি চলতেই থাকল। গজেন্দ্রর নিজের বাহুবলের ওপর গর্বও ছিল।
এভাবে অনেক দিন, অনেক মাস, অনেক বছর অতিক্রান্ত যেতে থাকল। এই যুদ্ধ দেবতাদেরও আশ্চর্য করল । অবশেষে দেখা গেল যে প্রবল পরাক্রমশালী গজেন্দ্র শারীরিক ও মানসিক শক্তি হারিয়ে অবসন্ন হয়ে পড়তে শুরু করল। গজেন্দ্র যতই অবসন্ন হয়ে পড়তে লাগল ততই বলবান হয়ে ওঠতে লাগল কুমীর। ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে আসা গজেন্দ্রকে দেখে তার সঙ্গীসাথীরা তাকে ফেলে রেখে স্বস্থানে গমনে উদ্যত হলো। গজেন্দ্র দেখল এই বিপদের সময়ে একমাত্র সে-ই কুমীরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত, তার সঙ্গীগণ যাদের সে এতদিন আপন ভাবত তারা কেউই তার পাশে নেই। তাকে মরণাপন্ন দেখে একে একে সবাই তাকে ত্যাগ করে চলেছে। এমনকি তার সঙ্গে প্রণয়বদ্ধ তার প্রধান স্ত্রী হস্তিনীও তাকে ত্যাগ করে চলে গেছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে গজেন্দ্র সম্পূর্ণ একা লড়াই করে চলেছে। গজেন্দ্রর মনে বৈরাগ্য এলো। গজেন্দ্র বুঝতে পারল জগতে কেউ কারও নয়। সংসার অসার। ঈশ্বরের প্রতি প্রেমই একমাত্র নিঃস্বার্থ। আর সমস্ত সম্পর্কে স্বার্থ রয়েছে। এখন গজেন্দ্রর সঙ্গে সবার সব স্বার্থ ফুরিয়েছে। এখন গজেন্দ্রকে ত্যাগ করতেও এরা পিছুটান অনুভব করেনি। অথচ গজেন্দ্র এই পরিস্থিতিতে পড়ার আগে এদের নিয়েই মত্ত হয়ে ছিল। গজেন্দ্রর নিজের ওপর ধিক্কার এলো। এই কঠিন পরিস্থিতিতে গজেন্দ্র ক্রমে বুঝতে পারল সরোবরে কুমীররূপে স্বয়ং কালই তাকে গ্রাস করতে বসেছে। আর এই পরিস্থিতিতে তাকে মহাকালের হৃদয়নাথ শ্রীবিষ্ণু নারায়ণই তাকে রক্ষা করতে পারেন। ঈশ্বর ভিন্ন জীবের আপনজন আর কে আছে। যতক্ষণ আনন্দ আছে ততক্ষণ সবাই আছে। যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে তখন যার যার তার তার।
গজেন্দ্রর অন্তরে আত্মজ্ঞান জাগ্রত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে নিজ বুদ্ধিতেই নিজের মনকে জাগতিক চিত্তভূমিতে সম্পূর্ণ স্থির ও শান্ত করে ঈশ্বরের ধ্যানে ডুবে গেলেন। এদিকে সরোবরের জলে কুমীর হয়ে উঠলো আরও হিংস্র। গজেন্দ্রর বাঁচার প্রচেষ্টা বন্ধ হয়েছে দেখে সেও প্রবল প্রতাপে গজেন্দ্রকে জলের মধ্যে টানার চেষ্টা করতে লাগল। গজেন্দ্র পূর্ব জন্মের সংস্কার তার মনের মধ্যে থেকে উত্থিত করতে লাগল একের পর এক বিষ্ণুস্তুতি। গজেন্দ্র বাঁচার ইচ্ছা ত্যাগ করেছে বুঝতে পেরে এবার কুমীরও খানিক আশ্চর্য হলো। কিন্তু গজেন্দ্রকে তখনও কুমীর জলে টানাটানি থেকে বিরত রইল না।
এদিকে বৈকুণ্ঠে বসে সশক্তিক শ্রীবিষ্ণু নারায়ণ তাঁর ভক্ত গজেন্দ্রর জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। তখন ভক্তপ্রবর গজেন্দ্রকে এই ভীষণ যুদ্ধকালীন বিপদ থেকে রক্ষার জন্য বিষ্ণু প্রস্তুত হলেন। বৈকুণ্ঠে নারায়ণের সঙ্গে অবসর যাপনের লীলাখেলায় মেতে ছিলেন লক্ষ্মী দেবী। গজেন্দ্রর অন্তর থেকে উচ্চারিত প্রতিটি ধ্বনি বৈকুণ্ঠে দশগুণ হয়ে পৌঁছাতে লাগল।ভক্ত একভাগ ঈশ্বরভজনা করলে ভগবান নিজের গুণে ভক্তের সেই ভজনাকে দশগুণ বৃদ্ধি করে আহ্লাদন করেন। ভক্তবিলাসী ভগবান ভক্তকে নিজের আপনজন ভাবেন। গজেন্দ্রর স্তুতি বৈকুণ্ঠে পৌঁছালে ভগবতী লক্ষ্মী দেবী খেলা ছেড়ে গজেন্দ্রকে রক্ষার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। শ্রীবিষ্ণু নারায়ণ গরুড়কে বাহন করে ও ভগবতী লক্ষ্মী দেবীকে নিজের বামভাগে বসিয়ে সেই সরোবরের স্থানে উপস্থিত হলেন। স্বয়ং শ্রীবিষ্ণু নারায়ণ ভগবতী লক্ষ্মী দেবীকে সঙ্গে নিয়ে গজেন্দ্রর সামনে স্বয়ং আবির্ভূত হয়েছেন দেখেই গজেন্দ্র আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠল। জগদীশ্বর জগন্নাথ শ্রীহরি বিষ্ণু তাঁর ভক্ত গজেন্দ্রকে অতি কাতর অবস্থায় সরোবরে জীবনসংগ্রামের লিপ্ত দেখে এবং এই কঠোর পরিস্থিতিতও গজেন্দ্রর উচ্চারিত প্রতিটি স্তুব-স্তোত্র-স্তুতি শ্রবণ করে কষ্ট অনুভব করতে লাগলেন। এদিকে গজেন্দ্র নিজের জীবনসংশয়ের কথা ভুলে গেলেন গরুড়ে আরোহণ করে আসা তাঁর প্রভু চক্রপাণি শ্রীবিষ্ণুকে সশক্তিক আসতে দেখে গজেন্দ্র আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। আজ তার বহুজন্মের তপস্যা সার্থক হয়েছে। আজ সে নিজের আরাধ্য ঈশ্বরের সশক্তিক দর্শন পেয়েছে। অথচ নিজের আরাধ্যকে দেওয়ার মতো তার কাছে কিছুই নেই। গজেন্দ্র দুঃখে কাঁদতে লাগলো। তার আরাধ্য দেবতা তার কল্যাণে তার সামনে এসেছেন অথচ পূজা-সেবা-আরতির সুযোগ পর্যন্ত নেই। হয়তো আয়ুও ফুরিয়ে এসেছে তার।
গজেন্দ্র চারিদিকে চেয়ে দেখলেন সরোবরে অজস্র স্বর্ণকমল, শ্বেতকমল, পীতকমল, নীলকমল ও রক্তকমলের ফুটে রয়েছে। গজেন্দ্র চোখ বন্ধ করে ঈশ্বরের ধ্যান করে নিজের শুঁড় দিয়ে সরোবর থেকে একটি পদ্মফুলে তুলে সকাতর স্বরে নারায়ণের উদ্দেশ্যে বলল , “হে ভগবান বিষ্ণু, হে জগতের নাথ জগন্নাথ, হে ভাবগ্রাহী নারায়ণ, প্রভু আমার, প্রাণ আমার, আজ এতকাল পরে আমি আপনার দর্শন পেয়েছি। আপনি আমার আভূমি প্রণাম গ্রহণ করুন। আমি আপনার দর্শন পেয়েই ধন্য হয়ে গেছি। আমি এখন মরি বা বাঁচি কোনোকিছুতেই আমার আপত্তি নেই। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উদ্দেশ্য আজ আপনার দর্শন মাত্রেই আমার পূরিত হয়েছে। ঈশ্বরলাভের পর আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই, পাওয়ার নেই। আমি আপনার দর্শন পেয়েই পূর্ণ হয়ে গেছি। প্রভু, আমাকে গ্রহণ করুন।”
গজেন্দ্রর এমন আর্তি ভরা কথা শুনে শ্রীপতি নারায়ণ আর স্থির থাকতে পারলেন না। ভগবতী লক্ষ্মী দেবীর চোখেও জল দেখা দিল। নারায়ণ তাঁর বাহন গরুড়রাজ থেকে অতি দ্রুত নেমে এসে পরম করুণায় স্বয়ং সেই সরোবরের জলে নেমে গজরাজ গজেন্দ্রর সঙ্গে কুমীরকেও অনায়াসে টানতে টানতে সেই সরোবরের তীরে নিয়ে এসে তুললেন। নারায়ণকে সশক্তিক পৃথিবীতে অবতীর্ণ হতে দেখে ইতোমধ্যেই সেই সরোবরেই তীরে স্বর্গলোকের দেবতাগণও এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁদের সকলের সম্মুখেই ভগবান শ্রীবিষ্ণু তাঁর চক্রকে আজ্ঞা দিলেন, “হে চক্ররাজ সুদর্শন, যাও আমার ভক্ত গজেন্দ্রকে মুক্ত করো।” জগতের নাথের আজ্ঞা পাওয়া মাত্র সুদর্শন চক্র কুমীরের মুখ টুকরো টুকরো করে গজেন্দ্রকে মুক্ত করলেন। ভগবতী লক্ষ্মী দেবীর কৃপায় গজেন্দ্রর পায়ের ক্ষত নিমেষে নিরাময় হয়ে গেল। শ্রীবিষ্ণু ও লক্ষ্মী দেবীর পরিত্রাতা রূপ দেখে আকাশ মার্গে দেবতাগণ অপূর্ব পুষ্পবৃষ্টি করতে লাগলেন। সকলে সমস্বরে গজেন্দ্রমোক্ষ স্তোত্র পাঠ করতে লাগলেন। জগতের নাথের চক্রের আঘাত লাভ করে অভিশপ্ত কুমীর জীবন সমাপ্ত করে যক্ষের দিব্য দেহ ধারণ করল। নারায়ণে কৃপায় গজেন্দ্রও তার অভিশপ্ত হস্তীজন্ম শেষ করে দিব্যদেহ ধারণ করল।
জগন্নাথের গজ-উদ্ধারণ বেশ শৃঙ্গারে শোলা ও কাঠের নিপুণ কাজে জগন্নাথাদি ত্রিবিগ্রহ সাজানো হয়। এই অপূর্ব বেশে জগন্নাথ ও বলভদ্র উভয়েই চতুর্ভুজ ধারণ করেন। এই শৃঙ্গারে জগন্নাথ কাঠের তৈরি পক্ষীরাজ গরুড় মহারাজের ওপরে বসেন। গরুড়ের কাঁধের দুই পাশে জগন্নাথের দুই পা ঝুলে থাকে। জগন্নাথের চার বাহুর ওপরের দক্ষিণ ও বাম বাহুতে যথাক্রমে সুদর্শন চক্র ও শঙ্খ থাকে এবং তাঁর নিচের দক্ষিণ ও বাম বাহুতে যথাক্রমে গদা ও পদ্মফুল শোভিত হয়। জগন্নাথের বাম কোলে বসেন সোনার শ্রীদেবী (লক্ষ্মী দেবী)। গরুড় মহারাজের ডানা দুটি দু’পাশে প্রসারিত অবস্থায় থাকে। গজ-উদ্ধারণ বেশ শৃঙ্গারে বলভদ্রদেবও চতুর্বাহু ধারণ করে চারটি অস্ত্র ধারণ করেন। বলরামের চার বাহুর ওপরের দক্ষিণ ও বাম বাহুতে যথাক্রমে সুদর্শন চক্র ও শঙ্খ থাকে এবং তাঁর নিচের দক্ষিণ ও বাম বাহুতে যথাক্রমে মুষল ও হল (লাঙ্গল) শোভিত হয়। এই বেশে বলভদ্রদেবের দুই পদ দেখা যায়। গজ-উদ্ধারণ বেশের সময় বলভদ্রদেবের বামভাগে পূর্ণ মূর্তিতে থাকেন মহামতি সুভদ্রা দেবী। এই বেশ শৃঙ্গারে সুভদ্রা দেবীকে ত্রিভঙ্গ ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সুভদ্রা দেবীর দুই হাতে দেখা যায় পদ্মফুল। সন্ধ্যাকালে জগন্নাথের রত্নবেদীর নিচে একটি হাতি ও একটি কুমীরের মূর্তি রাখা হয়। এই দুটি মূর্তি পৌরাণিক কাহিনীর গজেন্দ্র ও কুমীরের ভাব বহন করে। আরেকটি হাতি দেখা যায় বলভদ্রদেবের দক্ষিণভাগে। এই হাতির শুঁড়ে একটি ফোটা পদ্মফুল থাকে। এই হাতিটি গজেন্দ্রর জগন্নাথের প্রতি শরণাগতির দ্যোতক। শ্রীমন্দিরে জগন্নাথের সেবায় নিয়োজিত নির্দিষ্ট সেবকগণই জগন্নাথের গজ-উদ্ধারণ বেশ শৃঙ্গারের এই উপকরণগুলি তৈরি করেন। জগন্নাথের গজ-উদ্ধারণ বেশ তাঁর নারায়ণ রূপের ভাব বহন করে।
প্রতি বছর পবিত্র মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে শ্রীপুরুষোত্তম জগন্নাথ শ্রীক্ষেত্রে এই পৌরাণিক গজ উদ্ধারণ বেশে সজ্জিত হন। শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের অষ্টম স্কন্দের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ অধ্যায়ে বর্ণিত গজরাজের আখ্যানের সঙ্গে শ্রীমৎ জগন্নাথ মহাপ্রভুর গজ-উদ্ধারণ বেশ শৃঙ্গারের মিল পাওয়া যায়। রাজ্ঞী বকুল মহাদেবী জগন্নাথের গজ-উদ্ধারণ বেশের পোশাকাদি প্রথম তৈরি করিয়েছিলেন। এরপর মাঝের কিছু বছর জগন্নাথের গজ-উদ্ধারণ বেশ শৃঙ্গার হয়নি। ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে গজপতি রামচন্দ্র দেব পুনরায় জগন্নাথের গজ-উদ্ধারণ বেশের শৃঙ্গারের বিধিব্যবস্থা করিয়েছিলেন। পরে এই বেশের ব্যয়ভার বহন করতে থাকে বাসুদেব মঠের অধ্যক্ষ বা মহন্ত মহারাজ। এখন জগন্নাথের এই বেশ শৃঙ্গারের দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ পায় তাঁর ইচ্ছায় তাঁর ভক্তরা। ওড়িশার জগন্নাথ-সংস্কৃতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশ্বাস রয়েছে মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে শ্রীপুরুষোত্তম জগন্নাথকে গজ-উদ্ধারণ বেশ শৃঙ্গারে দেখলে ও তাঁকে স্মরণ করে শুকদেব কথিত গজেন্দ্রমোক্ষঃ স্তোত্র পাঠ করলে জাগতিক ও আধ্যাত্মিক সমস্ত সংকট জগন্নাথ নিজে এসে মোচন করে দিয়ে যান। ওড়িশার সাধারণ জনগণ যদি মাঘী পূর্ণিমার তিথিতে শ্রীপুরুষোত্তমক্ষেত্রে এসে জগন্নাথদর্শনে সমর্থ না হন তবে তিনি যেখানে রয়েছেন সেখানেই জগন্নাথের নাম স্মরণ করে গজ-উদ্ধারণ বেশের ধ্যানে তৃপ্ত হন। ক্ষণমাহাত্ম্য অনুযায়ী বিশ্বাস করা হয় মাঘী পূর্ণিমার তিথিতে সূর্যাস্তের পর গজেন্দ্রমোক্ষঃ স্তোত্র পাঠ করার প্রশস্ত কাল। এই পবিত্র তিথিতে ওড়িশার জনতার কেউ যদি গজেন্দ্রমোক্ষঃ পাঠের সুযোগ না পান, তবে শুধুমাত্র জগন্নাথের মহানাম স্মরণ করেই জগন্নাথের কৃপার সমান ভাগীদার হয়ে ওঠেন।
শ্রীমদ্ভাবত পুরাণের অষ্টম স্কন্দের তৃতীয় অধ্যায় অনুযায়ী গজেন্দ্রমোক্ষঃ স্তোত্রটি নিম্নরূপ :
শ্রীশুক উবাচ
এবং ব্যবসিতো বুদ্ধ্যা সমাধায় মনো হৃদি ।
জজাপ পরমং জাপ্যং প্রাগ্জন্মন্যনুশিক্ষিতম্ ॥ ১॥
গজেন্দ্র উবাচ
নমো ভগবতে তস্মৈ যত এতচ্চিদাত্মকম্।
পুরুষায়াদিবীজায় পরেশায়াভিধীমহি ॥ ২॥
যস্মিন্নিদং যতশ্চেদং যেনেদং য ইদং স্বয়ম্ ।
যোঽস্মাৎপরস্মাচ্চ পরস্তং প্রপদ্যে স্বয়ম্ভুবম্ ॥ ৩॥
যঃ স্বাত্মনীদং নিজমায়য়ার্পিতং
ক্বচিদ্বিভাতং ক্ব চ তত্তিরোহিতম্ ।
অবিদ্ধদৃক্ সাক্ষ্যুভয়ং তদীক্ষতে
স আত্মমূলোঽবতু মাং পরাৎপরঃ ॥ ৪॥
কালেন পঞ্চৎবমিতেষু কৃৎস্নশো
লোকেষু পালেষু চ সর্বহেতুষু ।
তমস্তদাঽঽসীদ্গহনং গভীরং
যস্তস্য পারেঽভিবিরাজতে বিভুঃ ॥ ৫॥
ন যস্যদেবা ঋষয়ঃপদং বিদু-
র্জন্তুঃ পুনঃ কোঽর্হতি গন্তুমীরিতুম্ ।
যথা নটস্যাকৃতিভির্বিচেষ্টতো
দুরত্যযানুক্রমণঃ স মাবতু ॥ ৬॥
দিদৃক্ষবো যস্য পদং সুমঙ্গলং
বিমুক্ত সঙ্গা মুনয়ঃ সুসাধবঃ ।
চরন্ত্যলোকব্রতমব্রণং বনে
ভূতাত্মভূতাঃ সুহৃদঃ স মে গতিঃ ॥ ৭॥
ন বিদ্যতে যস্য চ জন্ম কর্ম বা
ন নামরূপে গুণদোষ এব বা ।
তথাপি লোকাপ্যযসম্ভবায় যঃ
স্বমায়যা তান্যনুকালমৃচ্ছতি ॥ ৮॥
তস্মৈ নমঃ পরেশায় ব্রহ্মণেঽনন্তশক্তয়ে ।
অরূপায়োরুরূপায় নম আশ্চর্যকর্মণে ॥ ৯॥
নম আত্মপ্রদীপায় সাক্ষিণে পরমাত্মনে ।
নমো গিরাং বিদূরায় মনসশ্চেতসামপি ॥ ১০॥
সত্ত্বেন প্রতিলভ্যায় নৈষ্কর্ম্যেণ বিপশ্চিতা ।
নমঃ কৈবল্যনাথায় নির্বাণসুখসংবিদে ॥ ১১॥
নমঃ শান্তায় ঘোরায় মূঢায় গুণধর্মিণে ।
নির্বিশেষায় সাম্যায় নমো জ্ঞানঘনায় চ ॥ ১২॥
ক্ষেত্রজ্ঞায় নমস্তুভ্যং সর্বাধ্যক্ষায় সাক্ষিণে ।
পুরুষায়াত্মমূলায় মূলপ্রকৃতয়ে নমঃ ॥ ১৩॥
সর্বেন্দ্রিয়গুণদৃষ্টে সর্ব প্রত্যয হেতবে ।
অসতাচ্ছায়যোক্তায় সদাভাসায় তে নমঃ ॥ ১৪॥
নমো নমস্তেঽখিলকারণায়
নিষ্কারণায়াদ্ভুতকারণায় ।
সর্বাগমাম্নায়মহার্ণবায়
নমোঽপবর্গায় পরায়ণায় ॥ ১৫॥
গুণারণিচ্ছন্নচিদূষ্মপায়
তৎক্ষোভবিস্ফূর্জিতমানসায় ।
নৈষ্কর্ম্যভাবেন বিবর্জিতাগম-
স্বয়ংপ্রকাশায় নমস্করোমি ॥ ১৬॥
মাদৃক্প্রপন্নপশুপাশবিমোক্ষণায়
মুক্তায় ভূরিকরুণায় নমোঽলয়ায় ॥
স্বাংশেন সর্বতনুভৃন্মনসি প্রতীত-
প্রত্যগ্দৃশে ভগবতে বৃহতে নমস্তে ॥ ১৭॥
আত্মাঽঽত্মজাপ্তগৃহবিত্তজনেষু সক্তৈ-
র্দুষ্প্রাপণায় গুণসঙ্গবিবর্জিতায় ।
মুক্তাত্মভিঃ স্বহৃদয়ে পরিভাবিতায়
জ্ঞানাত্মনে ভগবতে নম ঈশ্বরায় ॥ ১৮॥
যং ধর্মকামার্থবিমুক্তিকামা
ভজন্ত ইষ্টাং গতিমাপ্নুবন্তি ।
কিং ৎবাশিষো রাত্যপি দেহমব্যযং
করোতু মেঽদভ্রদয়ো বিমোক্ষণম্ ॥ ১৯॥
একান্তিনো যস্য ন কঞ্চনার্থং
বাঞ্ছন্তি যে বৈ ভগবৎপ্রপন্নাঃ ।
অত্যদ্ভুতং তচ্চরিতং সুমঙ্গলং
গায়ন্ত আনন্দসমুদ্রমগ্নাঃ ॥ ২০॥
তমক্ষরম্ব্রহ্ম পরং পরেশ-
মব্যক্তমাধ্যাত্মিকয়োগগম্যম্ ।
অতীন্দ্রিয়ং সূক্ষ্মমিবাতিদূর-
মনন্তমাদ্যং পরিপূর্ণমীডে ॥ ২১॥
যস্য ব্রহ্মাদয়ো দেবা বেদা লোকাশ্চরাচরাঃ ।
নামরূপবিভেদেন ফল্গ্ব্যা চ কলয়া কৃতাঃ ॥ ২২॥
যথার্চিষোঽগ্নেঃ সবিতুর্গভস্তয়ো
নির্যান্তি সংয়ান্ত্যসকৃৎস্বরোচিষঃ ।
তথা যতোঽয়ং গুণসম্প্রবাহো
বুদ্ধির্মনঃ খানি শরীরসর্গাঃ ॥ ২৩॥
স বৈ ন দেবাসুরমর্ত্যতির্যঙ্
ন স্ত্রী ন ষণ্ডো ন পুমান্ন জন্তুঃ ।
নায়ং গুণঃ কর্ম ন সন্ন চাসন্
নিষেধশেষো জয়তাদশেষঃ ॥ ২৪॥
জিজীবিষে নাহমিহামুয়া কি-
মন্তর্বহিশ্চাবৃতয়েভয়োন্যা ।
ইচ্ছামি কালেন ন যস্য বিপ্লব-
স্তস্যাত্মলোকাবরণস্য মোক্ষম্ ॥ ২৫॥
সোঽহং বিশ্বসৃজং বিশ্বমবিশ্বং বিশ্ববেদসম্ ।
বিশ্বাত্মানমজং ব্রহ্ম প্রণতোঽস্মি পরং পদম্ ॥ ২৬॥
যোগরন্ধিতকর্মাণো হৃদি যোগবিভাবিতে ।
যোগিনো যং প্রপশ্যন্তি যোগেশং তং নতোঽস্ম্যহম্ ॥ ২৭॥
নমো নমস্তুভ্যমসহ্য বেগ-
শক্তিত্রয়ায়াখিলধীগুণায় ।
প্রপন্নপালায় দুরন্তশক্তয়ে
কদিন্দ্রিয়াণামনবাপ্যবর্ত্মনে ॥ ২৮॥
নায়ং বেদ স্বমাত্মানং যচ্ছক্ত্যাহন্ধিয়া হতম্ ।
তং দুরত্যযমাহাত্ম্যং ভগবন্তমিতোঽস্ম্যহম্ ॥ ২৯॥
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 ৩৬. রঘুনাথ বেশ 🏹 শ্রীশ্রীজগন্নাথ লীলামৃত 📝 চতুর্থ ভাগ 🙇 শ্রী মৃন্ময় নন্দী কর্ত্তৃক সকল ভক্ত চরণে অসংখ্যকোটি প্রণাম 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/10/jagannath4.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
রঘুনাথ বেশ:-
জগন্নাথ মহাপ্রভুর দুর্লভ বেশগুলির মধ্যে অন্যতম তাঁর রঘুনাথ বেশ বা রাম বেশ। বস্তুত জগন্নাথের রঘুনাথ বেশ এখন এতটা দুর্লভ হয়ে গেছে যে, সাধারণ ভক্তরা ও জগন্নাথের শ্রীমন্দিরের বিভিন্ন শ্রেণির সেবকরা পোশাকের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য বা আলোচনা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করেন। নাগার্জুন বেশের চেয়েও রাম রঘুনাথ বেশ বেশি দুর্লভ। এই বেশ সম্পর্কে আলোচিত বা প্রামাণিক সাক্ষ্য দিতে না পারায় বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ লোকই সচেতন হয়ে গেছেন। প্রাচীন জগন্নাথ ভক্তদের মধ্যে যে সব সৌভাগ্যবান এখনও জীবিত রয়েছেন তাঁরাও তাঁদের জীবনে মাত্র একবারই জগন্নাথের রঘুনাথ বেশ দেখার সুযোগ পেয়েছেন। বহু বছর ধরে বিভিন্ন কারণে পুরীর শ্রীমন্দিরে জগন্নাথ মহাপ্রভুর রঘুনাথ বেশের আয়োজন করা হয়নি। রঘুনাথ বেশ সম্পর্কে যেটুকু তথ্য পাওয়া যায় তার অধিকাংশই মৌখিক। কিছু লিখিত তথ্যও রয়েছে। পুরীধামের শ্রীমন্দির কর্তৃপক্ষ, উৎকল দীপিকা, প্রাচীন উৎকল ও অন্যান্য উৎস থেকে জানা যায় বিগত পাঁচশো বছরে শুধুমাত্র নয় বার জগন্নাথের রঘুনাথ বেশে শৃঙ্গারের আয়োজন হয়েছে। এর মধ্যে শেষবার জগন্নাথের রঘুনাথ বেশের আয়োজন হয়েছিল ১৯০৫ সালে। রেকর্ড অনুযায়ী ১৫৭৭ সালে প্রথমবার জগন্নাথের রঘুনাথ বেশের আয়োজন করা হয়েছিল। এরপর দ্বিতীয় রঘুনাথ বেশের আয়োজন করা হয় ১৭৩৯ সালে। তারপর ১৮০৯, ১৮৩৩, ১৮৪২, ১৮৫০, ১৮৯৩, ১৮৯৬ ও ১৯০৫ সালে সর্বমোট নয় বার জগন্নাথের রঘুনাথ বেশ হয়েছে। এই বেসগুলি সাধারণত রাজা, জমিদার এবং গজপতি দ্বারা স্পনসর করা হত। ১৯৬৯সালের ১৭ই নভেম্বর জগতানন্দ দাস জগন্নাথের রঘুনাথ বেশের আয়োজন, নির্মাণ ও পর্যবেক্ষণের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু জগন্নাথ মহাপ্রভুর রঘুনাথ বেশের আয়োজন উপলক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ এবং প্রাচীন অলঙ্কারগুলি ব্যবহার করতে বাবা জগতানন্দ দাস অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলে শেষ পর্যন্ত জগন্নাথের রঘুনাথ বেশ আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। আবার, ১৯৮৩ সালে জনৈক জেলা কালেক্টর রঘুনাথ বেশ পরিচালনার জন্য শ্রীমন্দির প্রশাসক, মহারাজ, বিভিন্ন পর্যবেক্ষক এবং জগন্নাথ সংস্কৃতির অন্যান্য কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি সভার আয়োজন করেন। এই জাতীয় চার বা পাঁচটি বৈঠকের পরেও জগন্নাথের রঘুনাথ বেশ প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন কারণে আজও কার্যকর করা যায়নি। প্রতি বছর চৈত্র মাস আসে, রামচন্দ্রের জন্মতিথিতে শ্রীক্ষেত্র ও সমগ্র উৎকলের বিভিন্ন ছোট ছোট জগন্নাথ মন্দিরে রঘুনাথ বেশের আয়োজন করা হলেও শ্রীমন্দিরে সম্ভব হয়নি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভক্তরা এখন সবকিছু জগন্নাথ মহাপ্রভুর উপর ছেড়ে দিয়ে প্রার্থনা ও অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন যেদিন তাঁর ইচ্ছা হবে সেদিন আবার তিনি রাম রঘুনাথ বেশ ধারণ করে রত্নসিংহাসনে আলোময় হয়ে বসবেন। বাস্তবে আর্থিক এবং প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতাগুলির জন্য জগন্নাথের রামসুন্দর রঘুনাথ বেশ খুব কমই অনুষ্ঠিত হয়।
জগন্নাথের এই বেশ সম্পর্কে যেটুকু প্রাচীন বিবরণ পাওয়া যায় তা হলো, রঘুনাথ বেশে রামায়ণের কাব্যনায়ক রামচন্দ্রের অযোধ্যার রাজদরবার কক্ষের মতো রত্নসিংহাসনকে সাজানো হয়। রঘুনাথ বেশ শৃঙ্গারে জগন্নাথের অন্যান্য বেশের মতোই জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার দারুবিগ্রহের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি প্রতিমার সহাবস্থান দেখা যায়। রঘুনাথ বেশের সময় জগন্নাথ হন রামচন্দ্র ও বলভদ্র হন ছত্রধর লক্ষ্মণ। রামচন্দ্ররূপ জগন্নাথ স্বর্ণময় সিংহাসনে বসেন। তাঁর এক পদ নিচে এক পদ ওপরে থাকে। তাঁর পদসেবনের জন্য উপস্থিত থাকেন রামগতপ্রাণ বীর হনুমান। জগন্নাথের সঙ্গে থাকে ধনুক ও বান। পীঠে থাকে তূর্ণ। লক্ষ্মণরূপ বলভদ্র একইভাবে সাজেন। তবে তিনি সিংহাসনে বসেন না, জেষ্ঠ্যের সেবায় ছত্র ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। জগন্নাথের লক্ষ্মী দেবী সীতা দেবীর সজ্জায় সজ্জিত হয়ে জগন্নাথের বাম কোলে শোভা পান। তাঁদের ঘিরে থাকেন ভরত, শত্রুঘ্ন, হনুমান, নারদ মুনি, জাম্বমান, বিভীষণ, সুগ্রীব, অঙ্গদ, সুষেণ, দধিমুখ, নীল, নল, দধিগান, বায়ুমুখ, ব্রহ্মা, ইন্দ্র, কুবের, পবনদেব, নৈঋত, বশিষ্ট, বামদেব, যবালি, কাশ্যপ, কাত্যায়ন, গৌতম, বিজয়, গবয়, ঋষভ, দ্বিবিধ, সুমন্ত সহ সর্বমোট বত্রিশটি মূর্তি। এই সমস্ত মূর্তি একটি দীর্ঘ চওড়া সিংহাসনের মতো কাঠের সুসজ্জিত প্ল্যাটফর্মে পর্যায়ক্রমে বসেছিলেন। শুধুমাত্র জগন্নাথের রঘুনাথ বেশ অনুষ্ঠানের জন্য অস্থায়ীভাবে তৈরি করা হয়েছিল এই প্ল্যাটফর্মটি। যার বিস্তৃতি ছিল জগন্নাথের রত্নসিংহাসন থেকে প্রায় কালাহাটা দ্বার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। রঘুনাথ বেশের সময় মূল তিন বিগ্রহ ছাড়াও অন্য দেবদেবীদের সাজানোর জন্য অনেক মূল্যবান গহনা ব্যবহার করা হয়েছিল। শুধুমাত্র অর্থের দিক থেকে নয় শিল্পনৈপুণ্যেও এই আয়োজনেও বিরাট।
সারা বছরের মধ্যে রঘুনাথ বেশ শুধুমাত্র রামচন্দ্রের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানের তিথিতে আয়োজিত হয়। যদিও শ্রীমন্দিরের রেকর্ড অনুযায়ী চৈত্রের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে রঘুনাথ বেশের নির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে। জগন্নাথ সংস্কৃতিতে রঘুনাথ বেশ কবে ও কীভাবে প্রথমবার পালন করা হয়েছিল সে সম্পর্কে দুটি ভিন্ন ভিন্ন বিবরণ পাওয়া যায়। প্রথম মত অনুযায়ী, আনুমানিক দ্বাদশ শতাব্দীতে দক্ষিণ ভারতীয় আচার্য রামানুজ জগন্নাথকে রামচন্দ্রের রূপে অনুভব করেছিলেন। কিংবদন্তি রয়েছে তিনি শ্রীমন্দিরে জগন্নাথদেবের দর্শন করতে এসে প্রবলভাবে অনুভব করেছিলেন শ্রীমন্দিরের ভগবান জগন্নাথ এবং তাঁর আরাধ্য দেবতা রঘুনাথ রামচন্দ্র দুইজনে এক ও অভিন্ন। তাদের দুইরূপে স্বরূপের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। যিনিই পুরুষোত্তম জগন্নাথ তিনিই পুরুষোত্তম রামচন্দ্র। কথিত রামানুজ মানস চক্ষে দেখেছিলেন শ্রীমন্দিরের দেব-দেবীদের অভিষেকের পরে পৌষ পূর্ণিমায় রত্নসিংহাসনে ভগবান জগন্নাথ, বালভদ্র ও সুভদ্রা যথাক্রমে রাম, লক্ষ্মণ এবং সীতার প্রতিনিধিত্ব করার জন্য রামরাজ্যের রাজদরবারের পোশাকে সজ্জিত হয়েছিলেন। আরেকটি মত অনুযায়ী, উৎকলের প্রাচীন রাজা গজপতি রামচন্দ্র দেব জগন্নাথের রঘুনাথ বেশের আয়োজন করেন ষোড়শ শতাব্দীতে ১৫৭৭ সালে। তিথিটি ছিল বৈশাখের কৃষ্ণপক্ষের দশমী। তিনি জগন্নাথের সেবার জন্য ও রঘুনাথ বেশ সজ্জার জন্য প্রচুর গহনা তৈরি করেছিলেন। সেই গহনা জগন্নাথের রঘুনাথ বেশ উপলক্ষে ব্যবহার করা হয়েছিল। গজপতি রামচন্দ্র দেব শ্রাবণ শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে নিজেকে (নব্য) ইন্দ্রদ্যুম্ন হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। এছাড়া তিনি রামাভিষেক মোহর নামে একটি সোনার তৈরি সীল তৈরি করিয়েছিলেন। বলা হয় জগন্নাথের রঘুনাথ বেশকে স্মরণীয় করে রাখতে তিনি বীর রামচন্দ্রপুর গ্রামে নিজের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এছাড়া আরও কয়েকটি কিংবদন্তি রয়েছে, বীর হনুমানকে জগন্নাথ রামচন্দ্রের রূপে দর্শন দিয়েছিলেন। পৌরাণিক অমরদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ রামভক্ত লঙ্কেশ বিভীষণ শ্রীমন্দিরে জগন্নাথদর্শনে এলে জগন্নাথ তাঁকেও রামচন্দ্রের রূপে দর্শন দেন। অবধী ভাষায় ‘রামচরিত্রমানস’-এর কবি তুলসীদাস গোস্বামীও পুরীতে এসে জগন্নাথকে রামচন্দ্রের রূপে দর্শন করেছিলেন। আজ অজস্র রাম অনুরাগী জগন্নাথের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁকে রামরূপে ভজন করে স্বগত বলেন, “শ্রীরাম রাম রামেতি রমে রামে মনোরমে।/ সহস্রনাম তদতুল্যম রামনাম বরাননে।।”
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 ৩৭. বামন বেশ 👣 শ্রীশ্রীজগন্নাথ লীলামৃত 📝 চতুর্থ ভাগ 🙇 শ্রী মৃন্ময় নন্দী কর্ত্তৃক সকল ভক্ত চরণে অসংখ্যকোটি প্রণাম 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/10/jagannath4.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
বামন বেশ:-
ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে শ্রীপুরুষোত্তম জগন্নাথ বামন রূপে প্রকাশিত হন। এই তিথিতে পুরীর শ্রীমন্দিরে জগন্নাথ মহাপ্রভুর বামন বেশ বা বলি-বামন বেশ অনুষ্ঠিত হয়। জগন্নাথকে বামন রূপে দেখার শাস্ত্রীয় বিধান রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, রথযাত্রার সময়ে রথে বিরাজমান বামন স্বরূপ জগন্নাথকে দর্শন করলে জন্মজন্মান্তরের বন্ধন নাশ হয়, জীবের মুক্তি ঘটে। এই বেশ শৃঙ্গারের সময় জগন্নাথকে ভগবান বিষ্ণুর পঞ্চম অবতারের সাজসজ্জায় সাজানো হয়।
বামনদেবের একটি পূর্ব ইতিহাস রয়েছে। সত্যযুগে বিষ্ণু নৃসিংহদেব রূপে অবতার গ্রহণ করে তাঁর দৈত্য কুলোদ্ভব ভক্তশ্রেষ্ঠ প্রহ্লাদকে রক্ষা করেছিলেন এবং দৈত্যরাজ হিরণ্যকশপুকে বধ করেছিলেন। এরপর দৈত্যরাজ হন প্রহ্লাদ। প্রহ্লাদের বংশধরগণ দীর্ঘদিন রাজত্ব করেছিলেন। প্রহ্লাদের বংশধরগণ ধীরে ধীরে প্রতিপত্তি বিস্তার করতে থাকেন। তাদের ক্ষমতা ও বাহুবলে তারা তিনলোকে অজেয় হয়ে উঠতে থাকেন। এই বংশেই জন্মগ্রহণ করেন বলি। বলি দৈত্যরাজ হয়ে ওঠার পর তিন লোকে দৈত্য, রাক্ষস, অসুরদের প্রতিপত্তি আরও বেড়ে যায়। রাজা বলিও প্রায় অজেয় হয়ে ওঠেন। ক্ষমতার মোহ ও লোভে অন্ধ হয়ে স্বর্গের দেবতাদের আবার আক্রমণ করে তারা। দেবতারা ভীষণ চেষ্টার পরেও ব্যর্থ হন। অবশেষে স্বর্গবাসী দেবগণ পরাজিত হয়ে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হন। দেবতারা আশ্রয়হীন হলে দেবজননী ভগবতী অদিতি দেবী খুবই বিচলিত হয়ে ওঠেন। অন্য কোনো উপায়ান্তর না দেখে, ভগবতী অদিতি দেবী নতুন শক্তিশালী বীর পুত্রের জন্য সংসারের পালনহার ভগবান বিষ্ণুর পূজাপূর্বক কঠোর তপস্যা করেন। দেবজননী ভগবতী অদিতির কঠোর সাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান বিষ্ণু তাঁকে আশীর্বাদ করেন, খুব শীঘ্রই বিষ্ণু মহর্ষি কশ্যপের প্রসাদে দেবজননী অদিতির গর্ভে জন্মগ্রহণ করে ভক্তবাঞ্ছা পূর্ণ করবেন। এ তাঁর অঙ্গীকার। এই ঘটনার পর যথাসময়ে ভগবতী অদিতির গর্ভে বিষ্ণু নবরূপে পঞ্চম অবতারে বামন বেশে আবির্ভাব গ্রহণ করেন। অহংকারী ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ দৈত্যরাজ বলিকে দমন করাই ছিল বামন অবতারের প্রধান উদ্দেশ্য। বামনদেব ত্রেতাযুগে প্রকাশিত বিষ্ণুর প্রথম অবতার। তাঁর আবির্ভাবের পর থেকেই দৈত্যরা ক্রমে নিস্তেজ হয়ে পড়তে থাকে। কিন্তু যতদিন যায় ততই সবাই অবাক হয়ে যায়, জন্ম নেওয়া বিষ্ণুর পঞ্চম অবতার একজন বামন। দৈ বা দধি তাঁর বড় প্রিয় খাদ্য, তাই সবাই তাঁকে আদর করে দধিবামন বলেও ডাকেন।
এক সময়ের দৈত্য জনগোষ্ঠীর অধিপতি বলি এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করেন। যজ্ঞে ঋত্বিকদের সঙ্গে ছিলেন দৈত্যগুরু আচার্য শুক্রদেব। যজ্ঞে আগত সকলকে দৈত্যরাজ বলি কিছু না কিছু দান করেছিলেন। যে ব্রাহ্মণ তাঁর কাছে যা চাইছিলেন তিনি তাই-ই দান করেছিলেন। কাউকে তিনি ফেরাচ্ছেন না। সংস্কৃত ভাষায় প্রবাদসম একটি শ্লোক রয়েছে, অতি দর্পে হতা লঙ্কা, অতি মানেশ্চ কৌরবাঃ। অতি দানে বলি বদ্ধা অতি সর্বত্র গর্হিতম।। বামন অবতার বিষ্ণুদেব বলির যজ্ঞভূমিতে উপস্থিত হয়ে দান চাইলেন। দৈত্যরাজ বলিও দানে সমর্থ জানালেন। বলিরাজ বামনদেবকে জিজ্ঞাসা করলেন তাঁর কী চাই? বলি মনে মনে ভেবেছিলেন তিনি ত্রিলোকের অধিপতি এক বামন ব্রাহ্মণ আর কতটুকুই বা চাইবেন। তাছাড়া তার মতো ক্ষমতাবান পুরুষের অদেয় কী থাকতে পারে? বামনদেব বলিরাজকে বলেন তাঁর প্রার্থীত দান বা ভিক্ষা অতি সামান্যই- মাত্র ত্রিপাদ ভূমি। তিন পা ফেলার মতো ভূমি তিনি দানে চান। এই কথা শুনে রাজা বলি অনেকটা তাচ্ছিল্য করে হাসতে হাসতে হাত বাড়ালেন গঙ্গাজলে পূর্ণ কমণ্ডলুর দিকে। কমণ্ডলুর মুখ থেকে নির্গত পবিত্র জল হাতে নিয়ে, সেই জল সংকল্প সহ ভূমিতে নিক্ষেপ করে অন্যকে দান করাই সেই সময় শাস্ত্রসম্মত প্রথা ছিল। দৈত্য রাজ বলির অদ্ভুত আচরণেই তাঁর গুরু শুক্রদেব বুঝতে পেরেছিলেন কোনো একটা বড় বিপদ আসন্ন। বিপদ অনুভব করে দৈত্যগুরু শুক্রদেব রাজা বলির দান-সংকল্পের আগে তাকে এই কাজ থেকে বিরত করতে চাইলেন। শুক্রদেব দৈত্যদের গুরু হলেও তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণ ও সিদ্ধপুরুষ। স্বয়ং মহাদেব শিব তাঁকে বহুবার কৃপা করেছিলেন। দৈবজ্ঞ শুক্রদেব জানতেন, যজ্ঞস্থলে নব্যাগত বামন ব্রাহ্মণ স্বয়ং ভগবান বিষ্ণুর অবতার। তিনি আকারে যতই বামন হোন না কেন, তিনি প্রকারে বৃহৎ ক্ষমতাধর। তিনি অনুমান করেছিলেন, বিষ্ণুর অবতার দধিবামনের এই দান চাওয়ার পিছনে লুকিয়ে রয়েছে আরও একটি বড় ছল। ব্রাহ্মণকে দানের অহংকারে মদমত্ত রাজা বলি তখন অন্ধ। গুরুদেবের সতর্ক নির্দেশ তিনি শুনেও কানে তুলতে চাইলেন না। অহংকারী বলি গুরুর আজ্ঞা উল্লঙ্ঘন করতেও দ্বিধা করলেন না। শিষ্যের অপধার ক্ষমা করে আদর্শ গুরুর মতো গুরু শুক্রদেব শেষ চেষ্টা করলেন। আচার্য শুক্রদেব গোপনে সূক্ষ্ম শরীর ধারণ করে প্রবেশ করলেন বলি রাজার সংকল্পের কমণ্ডলুতে এবং বন্ধ করে দিলেন ভেতরে জল বাইরে আসার সরু পথটি। সংকল্প করার জন্য কমণ্ডলু কাত করেও রাজা বলি যখন দেখলেন জলপূর্ণ কমণ্ডলু থেকে জল পড়ছে না তখন তিনি বিরক্ত হয়ে যজ্ঞস্থলে পড়ে থাকা একটি কুশঘাস দিয়ে কমণ্ডলুর নলটি পরিষ্কার করতে চেষ্টা করলেন। কুশের আঘাতে আহত হয়ে দৈত্যগুরু শুক্রদেব বাইরে বেরিয়ে এলেন। সঙ্গে সঙ্গে রাজা বলি কমণ্ডলু থেকে জল নিয়ে ভূমিতে তা নিক্ষেপ করলেন। রাজা বলি বামনদেবকে বললেন, এবার তিন পদ ভূমি তিনি যেন মেপে নেন।
রাজার নির্দেশ পাওয়া মাত্র দধিবামন ক্ষুদ্রকায় বামন শরীরকে বিরাট রূপে প্রকাশ করলেন। বামনদেবের ত্রিবিক্রম রূপ সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র বিশ্বকে আচ্ছন্ন করে ফেললো। বামনদেবের একটি পায়ে অর্জিত হলো স্বর্গলোক ও অন্য পায়ে অর্জিত হলো মর্ত্যলোক। তখনও এক পায়ের সমান ভূমির প্রয়োজন। বলিরাজের কাছে বামনদেব জানতে চাইলেন, স্বর্গ ও মর্ত্যের সমগ্র ভূমিই তো অর্জন হয়ে গেছে, এখন তৃতীয় পদটি তিনি কোথায় স্থাপন করবেন। নিরুপায় রাজা বলি নিজের মাথা এগিয়ে দিলেন। তাঁর মাথাতেই বিষ্ণুপদ স্থাপনের জন্য অনুরোধ করলেন। বলি রাজার অহংকার চূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভক্তরাজ প্রহ্লাদ এসে তাঁর পৌত্র বলির পার্থিব বন্ধন মুক্তির জন্য আরাধ্য দেবতা বিষ্ণুর জয়গান করলেন। রাজা বলির অহংকার চূর্ণ হলে বামনদেব তাঁকে কৃপা করে পাতাললোকের রসাতল ভূভাগ ছেড়ে দেন। বলি তাঁর বাকিজীবন রসাতললোকেই বসবাস করেন। বামনদেবের কৃপায় দেবতারা তাঁদের স্বর্গরাজ্য ফিরে পান।
ভাদ্রের শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে জগন্নাথ তাঁর ভক্তদের সমস্ত অহংকার ভেঙে দিতে বামনবেশ ধারণ করেন। এই তিথিতে জগন্নাথ স্বর্ণ হস্ত-পদ ধারণ করেন। জগন্নাথের ডান হাতে রূপোর তৈরি কমণ্ডলু ও বাম হাতে ওড়িশার ঐতিহ্যবাহী ছত্র দেখা যায়। জগন্নাথের এই বেশে ব্রাহ্মণকুমারের মতো তাঁর মাথায় কালো রঙের শিখা দেখা যায়। তিনি কপালে সমান্তরাল তিন দাগ বিশিষ্ট ছোট ভস্ম তিলক ধারণ করেন বলরামও স্বর্ণ হস্ত-পদ ধারণ করেন। তাঁর ডান হাতে মুষল ও বাম হাতে হল দেখা যায়। উভয়েই স্বর্ণ তিলক, চন্দ্র-সূর্য, তাগা, কুণ্ডল ও মুকুট ধারণ করেন। তবে এই বেশে বলভদ্রের চূড়ার উচ্চতা তুলনামূলক একটু উঁচু। সুভদ্রা দেবী সোনা বেশের মতোই সজ্জিত হন। জগন্নাথের এই বেশ শৃঙ্গার হয় মধ্যাহ্নধূপের পর এবং বড় শৃঙ্গার বেশের আগে পর্যন্ত জগন্নাথ এই বেশে থাকেন। লোকবিশ্বাস রয়েছে জগন্নাথের বামন বেশ দর্শন করলে ভক্তদের অহংকার নাশ হয়, মানুষ অহংকার মুক্ত হয়ে সৎ জীবনযাপনে ব্রতী হন।
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 ৩৮. নাগার্জুন বেশ 👣 শ্রীশ্রীজগন্নাথ লীলামৃত 📝 চতুর্থ ভাগ 🙇 শ্রী মৃন্ময় নন্দী কর্ত্তৃক সকল ভক্ত চরণে অসংখ্যকোটি প্রণাম 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/10/jagannath4.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
নাগার্জুন বেশ:-
জগন্নাথ সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করা হয় মহাপ্রভু জগন্নাথ সমগ্র মহাবিশ্বের পালক ও শাসক। জগন্নাথ স্বয়ং পরমব্রহ্ম বা পরমাত্মাতত্ত্ব। জগন্নাথ যেমন বৈচিত্র্যময় পুরুষ তেমনই তাঁর বৈচিত্র্যময় সাজসজ্জা। তিনি যখন যেভাবে প্রকাশিত হন তখন সেভাবেই তাঁর শৃঙ্গার করানো হয়। জগন্নাথ মহাপ্রভু যেমন ভক্তের কাছে আকর্ষণীয় ঠিক তেমনই তিনি বিভিন্ন বিশেষ তিথিতে যে যে পোশাকে সজ্জিত হন সেগুলিও সমান দর্শনীয় তথা আকর্ষণীয়। জগন্নাথের সমস্ত বিশেষ বেশ শৃঙ্গারের মধ্যে তাঁর নাগার্জুন বেশ ভক্তদের কাছে সবচেয়ে দর্শনীয় এবং জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জগন্নাথের নাগার্জুন বেশ অন্যতম দুর্লভ বেশ। পুরীর শ্রীমন্দিরে প্রতিবছর নাগার্জুন বেশ অনুষ্ঠিত হয় না। জগন্নাথের নাগার্জুন বেশকে কেন্দ্র করে অজস্র রহস্যময় ঘটনাও রয়েছে। সাধারণত, ওড়িআ বর্ষপঞ্জি বা পাঁজি অনুযায়ী পবিত্র কার্তিক মাসের শেষ পাঁচ দিন (তিথি) পাঁচুকা বা পাঁচুচা বা পঞ্চুকা নামে পরিচিত। এই পাঁচুকা হলো কার্তিক শুক্লার বর্ধিত তিথি দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী ও চতুর্দশী। এই তালিকায় থাকা অতিরিক্ত একটি দিনে শ্রীমন্দিরের রত্নসিংহাসনে বিরাজমান দেবদেবীরা দুর্লভ নাগার্জুন বেশে শৃঙ্গার করেন। পাঁচুকার সময় জগন্নাথ প্রতিদিন বিশেষ বিশেষ শৃঙ্গারে সজ্জিত হন। যে বছর কার্তিক মাসের শেষে জগন্নাথের নাগার্জুন বেশের তিথি আসে সে বছর পাঁচুকা ছয়দিনের জন্য পালন করা হয়। এই সময়ের পাঁচুকাকে তাৎপর্যপূর্ণ, বিশাল ও সমৃদ্ধময় করে তোলে মহাপ্রভু জগন্নাথের নাগার্জুন বেশে সাজসজ্জা। তবে, এই আয়োজনের সুযোগ ঘটে খুব কমই। ২০২০তে জগন্নাথের নাগার্জুন বেশের আয়োজন হয়েছে একটানা ছাব্বিশ বছর পর। এর আগে শেষবার জগন্নাথের নাগার্জুন বেশের আয়োজন হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। অনেক বছর বাদে পাঁচুকায় একটি অতিরিক্ত দিন যুক্ত হওয়ায় ২০২০তে পাঁচুকা ছয় দিনের জন্য পালন করা হয়। কিন্তু দুর্লভ নাগার্জুন বেশের আয়োজন করা হলেও সাধারণ ভক্তরা জগন্নাথের নাগার্জুন বেশ দর্শন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন দেশে অতিমারীর প্রকোপ থাকার জন্য। এছাড়াও ১৯৬৬, ১৯৬৭, ১৯৬৮, ১৯৯৩তে পরপর তিন বছর পঞ্চুকার অতিরিক্ত তিথি বা মল তিথি থাকায় নাগার্জুন বেশে জগন্নাথ ও বলভদ্রের শৃঙ্গার হয়েছিল। প্রাচীন নথিপত্রে প্রতিটি তারিখ পেয়েছি, ইংরেজি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী সেগুলি হলো যথাক্রমে, ২৬-১১-১৯৬৬, ১৬-১১-১৯৬৭, ০৩-১১-১৯৬৭, ২৬-১১-১৯৯৩, ১৬-১১-১৯৯৪ ও ২৮-১১-২০২০ বলভদ্র ও জগন্নাথের নাগার্জুন বেশ সম্পর্কে পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক দুটি পৃথক কাহিনী সূত্র রয়েছে।
পৌরাণিক মতানুসারে ব্যাসদেব প্রণীত মহাভারতের মধ্যম পাণ্ডব অর্জুন নাগসম্রাট বাসুকি নাগের কন্যা উলুপী সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। তাঁদের দুজনের দাম্পত্যের ফলস্বরূপ একটি সুপুত্র জন্ম নিয়েছিল। সেই পুত্রের নাম নাগার্জুন। নাগার্জুনের মধ্যে সমগ্র নাগ সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ পরাক্রম ও পিতা অর্জুনের মতো যশস্বী যোদ্ধার শক্তি প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু নাগার্জুনকে অর্জুন বিশেষভাবে কাছে পাননি। এমনকি তিনি দীর্ঘদিন জানতেও পারেননি অর্জুন তাঁর পিতা। পরবর্তীতে অর্জুন ও নাগার্জুনের মধ্যে বিবাদকালেও তাঁরা পরস্পরকে চিনতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। নাগার্জুনও পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন। নাগার্জুনের মাতা উলুপীর সঙ্গে বিবাহের কাছাকাছি সময়ে অর্জুন মণিপুররাজের কন্যা চিত্রাঙ্গদার সঙ্গেও পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন। চিত্রাঙ্গদা ও অর্জুনের সম্পর্ক আলগা হওয়ার ক্ষেত্রেও উলুপীর অনেকখানি কূটনৈতিক ভূমিকা ছিল।
মহাদেব শিব নাগপৌত্র নাগার্জুনকে পরবর্তী সময়ে পর্বতরাজ হিমালয়ের একটি সুন্দর মনোরম পার্বত্য উদ্যানের দায়িত্বে অভিষিক্ত করেন। উদ্যান রক্ষার ভারপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত নাগার্জুনই ছিলেন সেই পার্বত্য উদ্যানের প্রধান রক্ষক l উদ্যানের সুরক্ষায় নাগার্জুন সবসময় সচেতন থাকতেন। সামান্যতম বিচ্যুতিও তাঁর কাছে অজানা থাকত না।
এমনই একদিন অর্জুন একটি বিশেষ প্রয়োজনে বন্য একশৃঙ্গ গণ্ডারের অনুসন্ধানে বহু পার্বত্যভূমি ও অরণ্যলোকে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে কোথাও একটিও একশৃঙ্গ গণ্ডার না পেয়ে অবশেষে নাগার্জুন রক্ষিত হিমালয়ের প্রাগুক্ত উদ্যানে প্রবেশ করেন। এই অরণ্যসম উদ্যানে ভ্রমণ করতে না করতেই অর্জুন একটি একশৃঙ্গ গণ্ডারের দেখাও পান। উদ্যানে ধনুকের শরসন্ধান করে অর্জুন খড়্গধারী গণ্ডার শিকার করতে উদ্যত হতে না হতেই সেই উদ্যানের রক্ষক নাগার্জুন অর্জুনকে সাবধান করেন। কিন্তু অর্জুন দৃঢ়সংকল্প থাকায় নাগার্জুনের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাঁধে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে নাগার্জুন ও অর্জুনের মধ্যে প্রবল যুদ্ধ শুরু হয় l আদতে পিতা-পুত্রের যুদ্ধ হলেও তাঁরা দুজনেই পরস্পরের প্রকৃত পরিচয় ও সম্পর্ক জানতেন না। নাগার্জুন অর্জুনের মতোই যুদ্ধে দক্ষ। তিনি যুদ্ধকৌশলে অবলীলায় অর্জুনকে পরাস্ত করতে সক্ষম হন। নাগার্জুনের কাছে আহত হয়ে মৃতসম মূর্ছা যান অর্জুন l নাগার্জুন বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়লে সেখানে উপস্থিত হন উলুপী। উদ্যানে মূর্ছিত অর্জুনকে দেখতে পেয়েই উলুপী আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। নাগার্জুনও জানতে পারেন তিনি যাঁর সঙ্গে এতক্ষণ যুদ্ধ করেছেন তিনিই তাঁর পিতা! নিজের স্বামীকে চিনতে পেরে উলুপী বীরেন্দ্র নাগার্জুনকে অজ্ঞাতসারে পিতৃহন্তার গর্হিত অপরাধ থেকে রক্ষা করতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। স্বামীকে বাঁচাতে সূর্যদেবের কাছে অর্জুনের জীবন দান করার অনুরোধ করেন l অনাদি কাল থেকে প্রচলিত জগতের নিয়মানুসারে অতিরিক্ত দিবসে প্রাণদানের প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন হয়। কিন্তু নিয়ত গমনশীল সূর্যের একদিন পিছিয়ে আসা বা থেমে থাকা সম্ভব না। এমন অনর্থ হলে জগৎ অচল হয়ে যাবে। পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠলে সমস্ত নাগ একজোট হয়ে ভগবান কৃষ্ণ ও বলরামকে সেখানে আহ্বান করতে থাকেন l বলরাম ও কৃষ্ণ সেখানে উপস্থিত হন। কৃষ্ণ তাঁর গুহ্য দৈবীশক্তিতে তখন পঞ্চুকা তিথির আহ্বান করেন। আকাশে সাতাশ নক্ষত্রের অবস্থান অদ্ভুত রূপলাভ করে। একটি অতিরিক্ত তিথি তথা দিন তৈরি হলে তার মধ্যেই অর্জুনের প্রাণসঞ্চারে সচেষ্ট হন কৃষ্ণ। নাগদের নাগমণিকে এই সময় ব্যবহার করেছিলেন অর্জুন। চেতনা ফিরে পেয়ে অর্জুন খুবই দুঃখ অনুভব করেন। অর্জুনের বিমর্ষ ভাব দেখে কৃষ্ণ তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেন। অর্জুন তাঁকে বলেন, অর্জুনের ইচ্ছে ছিল শুধুমাত্র কৃষ্ণই যেন তাঁকে পরাজিত করতে পারেন। আর এখানে এক সামান্য তরুণ নাগার্জুন তাঁকে পরাস্ত করেছেন। তখন অর্জুনকে কৃষ্ণ প্রবোধ দিয়ে বলেন, তিনিই নাগার্জুন স্বরূপে রয়েছেন। নাগার্জুন রূপে তিনিই জন্ম নিয়েছেন। সখার এমন বাক্যে অর্জুন আংশিক শান্ত হলেও সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে সংশয় প্রকাশ করেন। আর এতেই ক্রোধান্বিত হয়ে বলরাম কৃষ্ণের বিরাট নাগার্জুন মূর্তির আহ্বান করেন। সঙ্গে সঙ্গে ষোড়শ প্রাণঘাতী অস্ত্রসজ্জিত কৃষ্ণ-বলদেবের রুদ্ররূপ প্রকাশিত হয়। ভয়ে ত্রস্ত হয়ে অর্জুন কৃষ্ণ-বলরামকে এই ভীষণ রূপ সংহার করতে বলেন।
জগন্নাথের নাগার্জুন বেশকে অনেকেই পরশুরাম বেশও বলেন। ব্রাহ্মণরুদ্র পরশুরাম বিভিন্ন অস্ত্রচালনায় দক্ষ ছিলেন। জগন্নাথের নাগার্জুন বেশেও মোট ষোলোটি অস্ত্র তিনি ধারণ করেন। কোমড়ে তাঁর বাঘছাল দেখা যায়। এমনকি জগন্নাথের মুখে পাকানো দাড়িও দেখা যায়। জগন্নাথের এই বেশ যুদ্ধসাজকে চিহ্নিত করে। তবে পুরীর জগন্নাথদেবের নাগার্জুন বেশ কবে থেকে শুরু হয় এই বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। কোনো লিপিবদ্ধ তথ্যও নেই। তবে ওড়িশার অজস্র জগন্নাথ গবেষক মনে করেন প্রাচীন উৎকলের গজপতি মহারাজা অনঙ্গভীম দেব জগন্নাথ-সংস্কৃতিতে প্রথম নাগার্জুন বেশের আয়োজন করেছিলেন।
ঐতিহাসিক তথ্যানুসারে, গজপতি মহারাজা অনঙ্গভীম দেব তাঁর রাজত্বকালে একবার যুদ্ধে পরাস্ত হন। ফিরে এসে তিনি জগন্নাথ মহাপ্রভুর শরণে গিয়ে নিজের দুঃখের কথা বলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন জগতের যা কিছু ঘটে সবই ঈশ্বরের ইচ্ছায় ঘটে। জগন্নাথের ইচ্ছে ছাড়া একটি পাতার নড়ে ওঠার সাধ্য নেই। সমস্ত জীবের মধ্যে তিনি ব্যক্তচেতন রূপে বিরাজমান, সমস্ত জড়ের মধ্যে তিনি সুপ্তচেতন রূপে প্রকাশিত। জগন্নাথের কাছে অনুযোগ করে আসার পর অনঙ্গভীম দেবের রাজগুরু তাঁকে গুহ্য দৈবীশক্তি সমৃদ্ধ নাগার্জুন মন্ত্রে সাধনার নির্দেশ দেন। এই নাগার্জুন মন্ত্র মানুষকে অজেয় করে তোলে। তন্ত্রপদ্ধতিতে নাগার্জুন মন্ত্রের বিশুদ্ধ সাধনা করতে হয়। নাগার্জুন মন্ত্র সাধনা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। কিন্তু এই মন্ত্রে একবার সিদ্ধি অর্জন করলে সাধক জলে-স্থলে-আকাশে অজেয় হয়ে ওঠেন। রাজা অনঙ্গভীম দেব গুপ্ত সাধনায় নাগার্জুন মন্ত্র সাধন করতে শুরু করেন। নির্দিষ্ট সময়ে তিনি নাগার্জুন মন্ত্রের সাধনা সম্পূর্ণ করেন। স্বয়ং দেবতা তাঁকে কৃপা করেন। সিদ্ধ অনঙ্গভীম দেব অজেয় হয়ে ওঠেন। এরপর গজপতি অনঙ্গভীম দেব আর যুদ্ধে হারেননি। কথিত স্বয়ং জগন্নাথ যুদ্ধকালে তাঁর পক্ষে লড়েছিলেন। নাগার্জুন মন্ত্র সাধনা পর প্রথম যুদ্ধে জয়লাভ করে যেদিন অনঙ্গভীম দেব উৎকলে ফিরে এসেছিলেন সেদিনও ছিল পাঁচুকা বা পঞ্চুকার অতিরিক্ত তিথি। আপাত দৃষ্টিতে কাকতালীয় মনে হলেও ঘটনাটি বাস্তবে ঘটেছিল। রাজা অনঙ্গভীম দেব পঞ্চুকা তিথিতেই জগন্নাথকে বিশেষ নাগার্জুন বেশে সাজানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেন। অচিরেই সমস্ত আয়োজন শুরু হয়। কালিয়াঠাকুর জগন্নাথ ও বড়ঠাকুর বলদেব সেজে ওঠেন নাগার্জুন বেশে। জগন্নাথকে অনঙ্গভীম দেব উৎকলের প্রকৃত রাজার মর্যাদা দিয়েছিলেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন জগন্নাথের প্রতিনিধি স্বরূপ তিনি উৎকল রাজ্য শাসন করেন। কালক্রমে জগন্নাথ-বলরামের নাগার্জুন বেশ ওড়িশার ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ-সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে ওঠে। সেই ঐতিহ্য আজও পুরীর শ্রীমন্দির সহ জগন্নাথের অন্য সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্দির বহন করে চলেছে। এমনকি ওড়িশার বহু পুরুষ দেবতার মন্দিরে নাগার্জুন বেশে দেববিগ্রহ সাজানো হয়ে আসছে।
শ্রীক্ষেত্রের শ্রীমন্দিরে শুধুমাত্র জগন্নাথ ও বলদাউ নাগার্জুন বেশে সাজেন। জগন্নাথ ও বলভদ্রের নাগার্জুন রূপের সঙ্গে উপজাতি নাগ সম্প্রদায়ের বেশভূষার আংশিক মিল রয়েছে। অনেকে মনে করেন জগন্নাথের নাগার্জুন বেশ উপজাতি বা অন্ত্যজ বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্মারক। জগন্নাথ যেমন আর্যের তেমনই অনার্যের। জগন্নাথ ও বলভদ্র নাগার্জুন বেশে মূলত যুদ্ধযাত্রী যোদ্ধাদের মতো সজ্জিত হন। দেববিগ্রহের মাথায় শিরস্ত্রাণের অনুকরণে মুকুট দেখা যায়। সাধারণ বস্ত্রের ওপর লেখা বাঘের ছাল। জগন্নাথ ও বলভদ্র নাগার্জুন বেশ শৃঙ্গার করলেও দেবী সুভদ্রা সোনা বেশ শৃঙ্গারের অনুরূপ সাজসজ্জা করেন। প্রাচীনকালে সাধারণত নারীগণ যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করতেন না। কিন্তু প্রাচীন ভারতে বীরাঙ্গনা নারী ছিলেন না, এমন নয়। আদি সাহিত্য রামায়ণেই রয়েছেন কৈকেয়ী দেবী, যিনি রাজা দশরথের সঙ্গে যুদ্ধের প্রান্তরে অংশ নিয়েছিলেন।
অবকাশ বেশ ত্যাগ করে অনতিবিলম্বে নাগার্জুন বেশে জগন্নাথ ও বলভদ্র আপাদমস্তক যুদ্ধসাজে সজ্জিত হন। জগন্নাথ ও বলভদ্রের মাথায় কালো রঙের হাণ্ডিয়া মুকুট শোভা পায়। এই বিশেষ মুকুটের প্রধান রঙ কালো, তার ওপর সোনালী ও রূপোলী জরির কাজ করা থাকে। এই মুকুট তৈরিতে কাগজ, কাপড়, রঙ, পাতলা বেত ও বাঁশের চটার ব্যবহার করা হয়। এটি দেখতে অনেকটা প্রাচীনকালে যুদ্ধে ব্যবহৃত হেলমেট বা শিরস্ত্রাণের মতো। অনেকাংশে টুপির মতো করে এই মুকুটটি পরানো হয়। এই মুকুটের একেবারে চূড়ার অংশে বসানো হয় একটি নাগফুল। এছাড়াও মুকুটের সঙ্গে গাঁথা থাকে ঐতিহ্যবাহী চন্দ্র-সূর্য, আদকানি অলংকার। দুই দেবতারই কপালে সোনার তিলক সাজানো হয়। জগন্নাথ ও বলরাম নাগার্জুন বেশে দাড়ি পরেন। কালো রঙের পাকানো দাড়ি বিগ্রহের গালের ধার বরাবর অর্ধচন্দ্রাকৃতিতে সাজানো হয়। বলাবাহুল্য নাগার্জুন বেশ ছাড়া আর কোনো বেশেই জগন্নাথ ও বলভদ্রের মুখে দাড়ি লাগানোর আয়োজন করা হয় না। রত্নসিংহাসনের দেবতারা সকলেই কানে কুণ্ডল পরেন। জগন্নাথ ও বলভদ্রের গলায় রকেটের মতো করে ঝুলে থাকে বাঘনখী অলংকার। তাঁদের কোমড়ে সোনার কোমড়বন্ধন দেওয়া হয়। এর ঠিক নিচে তাঁরা বাঘছাল ধারণ করেন। শোনা যায়, পূর্বে আসল বাঘছালের আয়োজন করা হতো। কিন্তু এখন বাঘছাল প্রিন্টের কাপড়ের ব্যবহার করা হয়। শাহী যাত্রায় নাগ সম্প্রদায় বা নাগারা যেমন কাঁধে পালকের গুচ্ছ পরেন ঠিক যেন তার অনুসরণে জগন্নাথ ও বলভদ্রের কাঁধে কলমি ফুলের সজ্জা থাকে। জগন্নাথ ও বলভদ্র কোমড়ে ধারণ করেন বাঁকা ছুরি, কাটারি, ঢাল, শিঙা, খড়্গ, রঞ্জকদান ইত্যাদি। নাগার্জুন বেশে জগন্নাথ ও বলভদ্র হাত-পা ধারণ করেন। জগন্নাথের ডান হাতে চক্র ও বাঁ হাতে শঙ্খ থাকে এবং বলদাউ-এর ডান হাতে মুষল ও বাঁ হাতে হল থাকে। জগন্নাথ ও বলভদ্রের পীঠের দিকে ধনুকের মতো করে সাজানো হয় নাগাতাতি বা ধেনু। এর মধ্যে রক্ষিত থাকে অনেকগুলি অস্ত্র। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ত্রিশূল, বর্শা, শর, ত্রিকোণ পতাকা ইত্যাদি। অস্ত্র সহ নাগার্জুন বেশের প্রতিটি সাজই উৎকলের শিল্পীরা হাতে তৈরি করেন। বিভিন্ন কাগজ, কাপড়, বেত, বাঁশ, রঙ ও আঠার ব্যবহার করা হয়। জগন্নাথ ও বলভদ্রের নাগার্জুন বেশ বীর ভাবের উদ্রেক করে। তিনি ভক্তকে আশ্বস্ত করেন ভক্তের সঙ্কটে, বিপদে সর্বক্ষণ তিনি তার সঙ্গে রয়েছেন। লোকবিশ্বাস রয়েছে জগন্নাথের নাগার্জুন বেশ দর্শন করলে ঐহিক ও পারৈহিক শত্রুহানি হয় এবং পার্থিব ও অপার্থিব সমস্ত সঙ্কট নাশ হয়। জগন্নাথ ও বলভদ্র নাগার্জুন বেশে ভক্তের কাছে বার্তা দেন ভক্তকে রক্ষা করতে তিনি সবসময় প্রস্তুত রয়েছেন এবং ভক্তের যাবতীয় সংগ্রামে তিনি সহযোদ্ধা হয়ে সহযোগিতা করেন। জগন্নাথের নাগার্জুন বেশ বার্তা দেয় তিনি অনাথের নাথ, অধনের ধন, অবলের বল হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, আমাদের শুধু নির্ভর করার মতো মানসিক স্থিরতা প্রয়োজন।
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 ৩৯. নবাঙ্ক বেশ 🌼 শ্রীশ্রীজগন্নাথ লীলামৃত 📝 চতুর্থ ভাগ 🙇 শ্রী মৃন্ময় নন্দী কর্ত্তৃক সকল ভক্ত চরণে অসংখ্যকোটি প্রণাম 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/10/jagannath4.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
নবাঙ্ক বেশ:-
শ্রীক্ষেত্রের শ্রীমন্দিরের উত্তরায়ণ উৎসবের অন্তর্গত একটি বিশেষ বেশ জগন্নাথ-বলভদ্রের নবাঙ্ক বেশ। নবাঙ্ক বেশ বিশেষ বৈচিত্র্যপূর্ণ না হলেও দেবতার সাধারণ শৃঙ্গারের চেয়ে আলাদা। নবাঙ্ক বেশ শৃঙ্গারের চেয়ে সেই দিনের আচার-আচরণ ও ঐতিহ্যবাহী যাত্রার গুরুত্ব অনেক। জগন্নাথের প্রতিনিধি দেবতা মদনমোহনই জগন্নাথের হয়ে সেদিনের যাবতীয় আচার-আচরণ সামাল দেন। আর রত্নসিংহাসনের দেবতারা শুধুমাত্র নবাঙ্ক বেশ সজ্জায় সজ্জিত হন।
নবাঙ্ক বেশে জগন্নাথ ও বলভদ্রের বাহুতে যথাক্রমে শঙ্খ-চক্র ও মুষল-হল শোভা পায়। দুই দেববিগ্রহে মোট চারটি অস্ত্র সংযোজন করা হলেও পৃথকভাবে স্বর্ণ হস্ত-পদ যুক্ত করা হয় না। বলাবাহুল্য এই শঙ্খ-চক্র ও মুষল-হল তৈরি করা হয় এক ধরনের বিশেষ প্রকারের শোলা দিয়ে। শোনা যায় থার্মোকলের ব্যবহার শুরু হয়েছে। এই চারটি অস্ত্র ছাড়াও কুণ্ডল ও তাগাদি তৈরি করে রত্নসিংহাসনের দেবতাদের সাজানো হয়। নবাঙ্ক বেশে সোনা-রূপার অলংকারের চেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় সাধারণ প্রাকৃতিক ফুল। বিশেষ করে শীতকালীন ফুলের মধ্যে বিভিন্ন রঙের গাঁদা ফুলের ব্যবহার দেখা যায়। অনেকটা বাংলার টোপরের মতো দেখতে এক ধরনের ফুলের টোপর বা মুকুটে সাজানো হয় জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলদেবকে। সাদা, গেরুয়া, হলুদ, লাল, কমলা, গোলাপী রঙের বিভিন্ন ফুলের মালা দিয়ে টোপরটি তৈরি করা হয়। তুলসীর মালায় সবুজ রঙের বৃত্তে টোপরের শোভা আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। দীর্ঘ রঙিন কাপড়ে আচ্ছাদিত থাকেন দেবগণ। জগন্নাথ ও বলভদ্রের বাহুমূল থেকে বুক, পদপ্রান্ত পর্যন্ত পদ্মমালা সহ আরও কয়েকটি মালা শোভা পায়। বিগ্রহের মাথায়, কানে, কপালে ও নাসায় ঐতিহ্যবাহী ফুলের অলংকার পরানো হয়।
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 ৪০. লক্ষ্মী-নারায়ণ বেশ 🌼 শ্রীশ্রীজগন্নাথ লীলামৃত 📝 চতুর্থ ভাগ 🙇 শ্রী মৃন্ময় নন্দী কর্ত্তৃক সকল ভক্ত চরণে অসংখ্যকোটি প্রণাম 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/10/jagannath4.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
লক্ষ্মী-নারায়ণ বেশ:-
শ্রীমন্দিরে জগন্নাথ-বলভদ্র-সুভদ্রার লক্ষ্মী-নারায়ণ বেশ অনুষ্ঠিত হয় কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে। কিংবদন্তি রয়েছে, দক্ষিণ ভারতীয় বৈষ্ণব আচার্য রামানুজের বড় পছন্দের বেশ ছিল জগন্নাথের লক্ষ্মী-নারায়ণ বেশ। কথিত নিম্বার্ক আচার্যও জগন্নাথকে এই বেশে দর্শন করে আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। লক্ষ্মী-নারায়ণ বেশ অনুষ্ঠিত হয় মহাপ্রভু জগন্নাথের অবকাশ বেশের অনতিবিলম্বে। গোপালবল্লভ ও সকালধুপ অনুষ্ঠান হয় এর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে।
লক্ষ্মী-নারায়ণ বেশে জগন্নাথ রাজার মতো নরম রেশমের কাপড় পরেন। জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলভদ্র হস্ত-পদ ধারণ করে সজ্জিত হয়। জগন্নাথ নারায়ণস্বরূপে ডান হাতে চক্র ও বাঁ হাতে শঙ্খ ধারণ করেন। বলভদ্র রাজার মতো দুই হাতে যথাক্রমে ধনুক আর শর ধরেন। তাঁদের দুজনের কপালে তিলক সাজানো হয়। কখনও কখনও চন্দ্র-সূর্যেরও ব্যবহার করা হয়। সুভদ্রা দেবী জগন্নাথ ও বলভদ্রের মাঝে মহারাজ্ঞীসম বিরাজমান থাকেন। জগন্নাথের লক্ষ্মী-নারায়ণ বেশে জগন্নাথই নারায়ণ ও শ্রীদেবী স্বয়ং লক্ষ্মী। কিন্তু গজ উদ্ধারণ বেশের মতো কোনো গরুড় বিগ্রহ উপস্থিত থাকেন না। রত্নসিংহাসনের দেবতাদের বিভিন্ন সোনার গয়না দিয়ে সাজানো হয়। তুসলীপত্র ও পদ্ম ফুলের মালা দিয়ে জগন্নাথের শৃঙ্গার করা হয়। জগন্নাথের মাথায় সোনার চূড়া, হাতে সোনার চক্র ও রূপার শঙ্খ দেখা যায়। জগন্নাথের লক্ষ্মী-নারায়ণ বেশ সারা ভারতের বিশিষ্ট-অদ্বৈতবাদী অর্থাৎ রামানুজ অনুসারী সাধক পরম্পরায় খুব জনপ্রিয়। প্রতি বছর জগন্নাথের লক্ষ্মী-নারায়ণ বেশ দর্শনের জন্য শ্রীক্ষেত্রে ভিড় হয়। এই বেশের আরেক নাম ঠাইকিআ বেশ।
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🔜 ক্রমাগত 👉 শ্রীশ্রীজগন্নাথ লীলামৃত 📝 পঞ্চম ভাগ 🙇 শ্রী মৃন্ময় নন্দী কর্ত্তৃক সকল ভক্ত চরণে অসংখ্যকোটি প্রণাম 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/11/jagannath5.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝
꧁👇📖সূচীপত্র 🙏 শ্রী মৃন্ময় নন্দী📖👇꧂
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*••••━❀꧁👇 📖 সূচীপত্র 📖 👇꧂❀┅••••*
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*••••━❀꧁👇📚 PDF গ্রন্থ 📚👇꧂❀┅••••*
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ
হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।।
*••••┉━❀꧁ 🙏 জয় জগন্নাথ 🙏 ꧂❀━┅••••*
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥
*••••┉━❀꧁ 🙏 জয় রাধাকান্ত 🙏 ꧂ ❀━┅••••*
🌷❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀🌷
🏵️❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀🏵️
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
শেষ ৩০ দিনের পোস্টের মধ্যে সর্বাধিক Viewer নিম্নে :-
শ্রীকৃষ্ণ লীলা 🙏 সূচীপত্র ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_74.html
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ শ্রীকৃষ্ণ লীলা 🙏 সূচীপত্র ꧂ এই লিংকে 👇👇👇🙏👇👇👇 ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_74.html ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂ ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ 🏠Home Page🏠 👇👇🙏👇👇 📚PDF গ্রন্থ📚 🌐 https://MrinmoyNandy.blogspot.com ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ শ্রীকৃষ্ণ লীলা 🙏 দ্বিতীয় ভাগ ꧂ পদ - পদাবলী 🙏 গৌরচন্দ্রিকা 🙏 ব্যাখ্যা ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂ এই লিংকে 👇👇👇🙏👇👇👇 ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/krishna.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ সুধী ভক্তবৃন্দ যে লীলা অধ্যায়নের করতে চান নিম্নে লিংকের উপর ক্লিক করুন 👇👇👇 ✧═══════════•❁❀❁•═════...
শিবরাত্রি ব্রতকথা 🙏 ১০৮ নাম 🙏 মন্ত্র সমূহ 🙏 শিবরাত্রি ব্রত কি ভাবে পৃথিবীতে প্রচলিত হল❓শিবরাত্রি ব্রত পালনে কি ফল লাভ হয় ❓শিবরাত্রি ব্রত পালন কি সকলেই করতে পারেন ❓🙏 সকল ভক্ত 👣 চরণে 👣 অসংখ্যকোটি 🙏 প্রণাম 🙏শ্রী মৃন্ময় নন্দী 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/02/shib.html
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ শিবরাত্রি ব্রতকথা ꧂ শিবরাত্রি ব্রত কি ভাবে পৃথিবীতে প্রচলিত হল❓ শিবরাত্রি ব্রত পালনে কি ফল লাভ হয় ❓ শিবরাত্রি ব্রত পালন কি সকলেই করতে পারেন ❓ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/02/shib.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ 🏠Home Page🏠 ⬇️⬇️🙏⬇️⬇️ 📚PDF গ্রন্থ📚 ꧁ MrinmoyNandy.blogspot.com 👉 সূচীপত্র ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/11/blog-post_34.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ টিকা বা অন্যান্য ধর্মীয় লিখনী 🙏 সূচীপত্র ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/10/blog-post_54.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ পুরাক...
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নৌকা গঠন তত্ব ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 https://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_22.html
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নৌকা গঠন তত্ব ꧂ https://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_22.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ টিকা বা অন্যান্য ধর্মীয় লিখনী 🙏 সূচীপত্র ꧂ এই লিংকে 👇👇👇🙏👇👇👇 ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/10/blog-post_23.html ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂ ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ *বিবেক বৈরাগ্য দিয়া দু'গলুই করিল।* *ধৈর্য্য তাহার উপর দাঁড়া করিল।।* *আসক্তির তক্তা আনি তাহাতে জুড়িল।* *লালসার পাতান লোহা তাহাতে গড়িল।।* *নববিধা ভক্তি দিয়া নয়টি গুড়া দিল।* *সরল সুবুদ্ধি দিয়া মাস্তুল গড়িল।।* *মন রূপী পাল তাহে উড়াইয়া দিল। *সাধুসঙ্গ কাণি দড়ি চৌদিকে আঁটিল।।* নৌকা গঠন তত্ব দ্বারা।---------------- শ্রী গোবিন্দ আমার সখাদের সঙ্গে গো-চারণ করিতে করিতে সেই কথা মনে পড়েছে, কোন কথা,গোলোক বৃন্দাবনের কথা, ভাই সুবলকে ডেকে বললেন,ওরে ভাই সুবল সখা, আজ আমি যমুন...
🙇 রাধে রাধে 🙇 শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ 👏 হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।। 🙇 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/09/today.html
👉 মতানুসারে 👉 https://drive.google.com/file/d/1lS0aV1XBKbzRfve110-R6hJEsX3JHoMQ/view?usp=drivesdk ✧ ══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧ 🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏 ✧ ══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧ 🔘👉🏠Home🏠 🔘👉📝সূচীপত্র📝 🔘👉📚PDF গ্রন্থ📚 🔘👉✉️WhatsApp Chanel✉️ 🔘👉Apps 🔘👉🌐Google Drive🌐 🔘👉 শ্রীশ্রীরাধাকান্ত মঠ🚩শ্রীশ্রীগৌর গম্ভীরা🐚শ্রীধাম পুরী🐚 🔘👉 🗓️ ব্রত তালিকা 🗓️ শ্রীগিরিগোবর্ধন 🙇 🔘👉 🗓️ ব্রত তালিকা 🗓️ শ্রীরাধাকুণ্ড 🙇 🔘👉🖼️ধর্মীয় চিত্রপট🖼️ 🔘 👉 📝শ্রী জয়দেব দাঁ📝 🔘👉📝শ্রী গোপীশরণ দাস📝 🔘👉📝শ্রী দীপ বাগুই📝 🔘👉 🎶শ্রীমতী কুঞ্জশ্রী দাশগুপ্ত🎶 🔘👉📝শ্রী মৃন্ময় নন্দী📝 ✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧ 🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏 ✧ ══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧ ✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧ 🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷 *শচীসুতাষ্টকম্ ✍️ শ্রীশ্রী সার্বভৌম ভট্টাচার্য্য বিরচিতং 🙏 সংগৃহীত 🙏 শ্রী মৃন্ময় নন্দী কর্ত্তৃক সকল ভক্ত চরণে অসংখ্যকোটি প্রণাম 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন* 👉 http://mrinmoynandy.bl...
শ্রীঅম্বরীষ মহারাজের ছোট রানী 🙏 চারিযুগের ভক্তগাঁথা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/12/blog-post_97.html
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ শ্রীঅম্বরীষ মহারাজের ছোট রানী ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/12/blog-post_97.html ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস ꧂ ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ 🏠Home Page🏠 ⬇️⬇️🙏⬇️⬇️ 📚PDF গ্রন্থ📚 🌐 https://MrinmoyNandy.blogspot.com ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ টিকা বা অন্যান্য ধর্মীয় লিখনী 🙏 সূচীপত্র ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/10/home-page-pdf-httpsmrinmoynandy_25.html ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস ꧂ ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ MrinmoyNandy.blogspot.com 👉 সূচীপত্র ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/11/blog-post_34.html ...
মনোশিক্ষা 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 🙏 শ্রীযুক্ত প্রেমানন্দ দাস ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/jaydeb_14.html
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ৪২. ব্রহ্মা এবং মহেশ্বর যাঁর আরাধনা করেন 🙇 মনোশিক্ষা🙏 দ্বিতীয় ভাগ🙏শ্রী প্রেমানন্দ দাস ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/jaydeb_14.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ *(৪২)🔥🔥মনো শিক্ষা 🔥🔥* •••••••••••••••••••••••••••••••••••••• *ওরে মন! বিচারিয়া দেখ না হৃদয়* *ধনে জনে যত আর্তি,বাড়ে বই নহে নিবৃত্তি,* *হরি-পদে হৈলে কি না হয়।।* *যা ভাবিলে হবে নাই,তাই ভেবে কাট আই,* *ভাবিলে যে পাও তা না কর।* *লক্ষকোটি যার ধন,সে কি পায় এক মণ,* *বুঝি কেনে ধৈরয না ধর।।* *খাওয়া পরা ভাল চাও,তাই কি ভাবিলে পাও,* *পূর্ব-জন্মার্জিত সেই পাবে।* *কার ধন চিরস্থায়ী,না গণ'আপন আই,* *কত কাল তুমি বা বাঁচিবে।।* *অজ ভব ভবে যাঁরে,কি মদে পাসর তাঁরে,* *"হরি" ভুলি জীয় কোন্ কাজে।* *"হরিনাম"যাতে নাই,সে বদনে পড়ুক ছাই,* *সে মুখ সে দেখায় কোন্ লাজে।।* *...
বকরূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে চারটি প্রশ্ন করেছিলেন সেই প্রশ্নই বা কি? ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/05/blog-post_98.html
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ বকরূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে চারটি প্রশ্ন করেছিলেন সেই প্রশ্নই বা কি? ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/05/blog-post_98.html ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂ ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ 🏠Home Page🏠 ⬇️⬇️🙏⬇️⬇️ 📚PDF গ্রন্থ📚 🌐 https://MrinmoyNandy.blogspot.com ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ MrinmoyNandy.blogspot.com 👉 সূচীপত্র ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/11/blog-post_34.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ টিকা বা অন্যান্য ধর্মীয় লিখনী 🙏 সূচীপত্র ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/10/blog-post_23.html ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂ ✧═══════════•❁❀❁•═════...
শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু 🥀 সংক্ষিপ্ত কথন 🙏 প্রথম ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/01/mohaprobhu-joydeb-dawn.html
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু 🙏 প্রথম ভাগ ꧂ ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/01/mohaprobhu-joydeb-dawn.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ *••••┉❀꧁👇 🏠Home Page🏠👇 ꧂❀┅••••* 👉 MrinmoyNandy.blogspot.com 👉 Boisnob.blogspot.com ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ *••••━❀꧁👇 📖 সূচীপত্র 📖 👇꧂❀┅••••* 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/11/blog-post_34.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ *••••━❀꧁👇📚 PDF গ্রন্থ 📚👇꧂❀┅••••* 👉 https://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/09/pdf_22.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ *•❀꧁ 📖সূচীপত্র 🙏 শ্রী জয়দেব দাঁ 📖 ꧂❀•* 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/10/blog-post_23.html 👉...
শ্রীআমলকী একাদশী ব্রতের মাহাত্ম্য কি ❓ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/ekadoshi.html
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ শ্রীআমলকী একাদশী ব্রতের মাহাত্ম্য ꧂ ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/ekadoshi.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ 🏠Home Page🏠 ⬇️⬇️🙏⬇️⬇️ 📚PDF গ্রন্থ📚 ꧁ MrinmoyNandy.blogspot.com 👉 সূচীপত্র ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/11/blog-post_34.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ https://Gopisharan.blogspot.com 🙏 সূচীপত্র ꧂ ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/10/home-page-pdf-httpsmrinmoynandy_25.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ *শ্রীআমলকী একাদশী ব্রতের মাহ...
*নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলং শুকমুখাদকমৃতদ্রবসংযুতম্।**পিবত ভাগবতং রসমালয়ং মুহুরহো রসিকা ভূবি ভাবুকাঃ।।*✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/09/blog-post_89.html
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ *নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলং শুকমুখাদকমৃতদ্রবসংযুতম্* ꧂ এই লিংকে 👇👇👇🙏👇👇👇 ক্লিক করুন 🌐 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/09/blog-post_89.html ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂ ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ 🏠Home Page🏠👇👇🙏👇👇📚PDF গ্রন্থ📚 🌐 https://MrinmoyNandy.blogspot.com ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ টিকা বা অন্যান্য ধর্মীয় লিখনী 🙏 সূচীপত্র ꧂ এই লিংকে 👇👇👇🙏👇👇👇 ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/10/blog-post_23.html ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂ ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ *নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলং শুকমুখাদকমৃতদ্রবসংযুতম্।* *পিবত ভাগবতং রসমালয়ং মুহুরহো রসিকা ভূবি ভাবুকাঃ।।* = = = = = = = = = = = = = = = = = *মুলানুবাদ=হে রসবিশেষভাবনা-চতুর রসিক ভক্তগণ!শুকমুনির মুখনির্গলিত দেব-কল্পতরুর শ্রীমদ্ভাগবত নামক পরমানন্দরসময় ফল সাধনকাল হতে মোক্ষক...