🚩🚩🚩🙇🙇🙇 রাধে রাধে 🙇🙇🙇🚩🚩🚩

শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 অষ্টম 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/11/gouranga8.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🔙 পূর্ব লীলা 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 সপ্তম 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/11/gouranga7.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 অষ্টম 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/11/gouranga8.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 ৭১. দাক্ষিণাত‍্য ভ্রমণ উদ্দেশ্যে 🚩 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 অষ্টম 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/11/gouranga8.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৭১) 🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
           *দাক্ষিণাত‍্য ভ্রমণ উদ্দেশ্যে*
          👣👣👣👣👣👣👣👣
*শ্রীগৌরহরি সন্ন‍্যাসী।তাঁর আত্মা বিহঙ্গমের মত এখন মুক্তাকাশে বিচরণ করবার জন্য উন্মুক্ত হয়েছে ; তিনি সংসারের সকল বন্ধন ছিন্ন করেছেন।এখন দেশ-দেশান্তরে ভ্রমণ করে নানা তীর্থ দর্শন করবেন, সাধুগণের সঙ্গে মিলিত হয়ে ধর্মপ্রসঙ্গ করবেন ও হরিগুণ কীর্তনে নরনারীকে প্রেমের পথে,পরিত্রাণের পথে আনয়ন করবেন, এই তাঁর সঙ্কল্প।মাঘ মাসের শুক্লপক্ষ তিথিতে শ্রীগৌরাঙ্গদেব সংসারের সকল মায়া মমতায় বিসর্জন দিয়ে,সন্ন‍্যাসব্রত গ্রহণ করেন, এবং সন্ন‍্যাসান্তে ফাল্গুন মাসে নীলাচলে আগমন করেন।চৈত্রমাসে সেখানে অবস্থিতি করে সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যকে নিজ মতে আনয়ন করেন।চৈত্রমাস অন্তে তিনি দক্ষিণ প্রদেশে গমন করবার জন্য উৎসুক হয়ে উঠেন।তিনি ভক্তগণকে বললেন,দেখ,তোমরা আমার প্রাণাপেক্ষাও প্রিয় ; প্রাণ ছাড়া যায়, কিন্তু তোমাদেরকে পরিত‍্যাগ করা যায় না।তোমরা আমাকে এখানে এনে যথার্থই বন্ধুর কাজ করেছ।এখন আমি দক্ষিণ প্রদেশে গমন করবার জন্য বাসনা করেছি।বিশ্বরূপের সন্ধান এটি আমার একটা প্রধান উদ্দেশ্য।আমি একাকীই গমন করব, তোমরা আমাকে অনুমতি প্রদান কর।মহাপ্রভুর কথা শুনে তাঁর ভক্তগণ চিন্তাকুল হয়ে পড়লেন।তাঁদের প্রফুল্ল মুখমন্ডল যেন মেঘাবৃত হয়ে পড়ল।তিনি দুর্গম পথে কিভাবে একাকী বিচরণ করবেন,এই ভাবনাই তাঁদের প্রধান চিন্তার কারণ হয়ে উঠিল। নিত‍্যানন্দ বললেন,"না,তা হবে না " তোমার সঙ্গে দুই-একজন লোক গমন করুক।আমি দক্ষিণপথে পর্য‍্যটন করেছি ; তুমি যদি আজ্ঞা কর,আমি তোমার সঙ্গে গমন করি। শ্রীচৈতন‍্যদেব তাঁর কথা শুনে বললেন, "আমি নর্তক,তুমি সূত্রধার,তুমি যেমন ভাবে আমাকে নাচাও আমি সেই ভাবেই নেচে থাকি।আমি বৃন্দাবন যেতে ইচ্ছে করলাম, তুমি আমাকে শান্তিপুর অদ্বৈতভবনে এনে উপস্থিত করলে।নীলাচলে আসিবার সময় তুমি আমার দন্ড ভেঙ্গে ফেললে।আর এক কথা,তোমাদের গাঢ় স্নেহেতে আমার সন্ন‍্যাসধর্মের ক্ষতি হচ্ছে।জগদানন্দ আমাকে বিষয়-সুখে আবদ্ধ করতে সর্বদাই প্রয়াসী।আমি তার কাজের বিরুদ্ধে কোন কথা বললেই, সে অভিমান করে আমার সঙ্গে তিনদিন কথা বন্ধ করে থাকে।শীতকালেও আমি দিনে তিনবার স্নান করি ও ভূমিতে শয়ন করি দেখে, মুকুন্দ বড়ই দুঃখিত হয় ; অথচ মুখে প্রকাশ করে না।তার দুঃখ দেখে আমারও প্রাণে বড় কষ্ট হয়।তোমরা সকলে নীলাচলে বাস কর, আমি একাকী তীর্থ পর্য‍্যটন করে আসি।মহাপ্রভুর কথা শুনে তাঁর অনুগত ভক্তগণ তাঁকে একাকী তীর্থ পর্য‍্যটনের অসুবিধা হতে প্রতিনিবৃত্ত হবার জন্য অনেক অনুনয় বিনয় করলেন ; কিন্তু তবুও তাঁর সঙ্কল্প অটুট রইল দেখে অবধূত নিত‍্যানন্দ অতি বিনয়ের সঙ্গে তাঁর জীবনের জীবন শ্রীচৈতন‍্যদেবকে বললেন, তোমার আদেশ আমার শিরোধার্য‍্য। কিন্তু আমার একটা নিবেদন আছে,তুমি বিচার করে দেখ,তোমার আঙ্গুলী সদাই হরিনাম জপে নিযুক্ত থাকে। তুমি কখন কখন প্রেমাবেশে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়বে,এই জন্য তোমার কৌপীন বহির্বাস ও জলপাত্র বহন করতে ও তোমাকে রক্ষা করবার জন্যও একজন লোকের আবশ্যক। নিত‍্যানন্দ শ্রীচৈতন‍্যকে এই কথা বলে, তিনি কৃষ্ণদাস নামক একজন ব্রাহ্মণকে তাঁর সঙ্গের সঙ্গী করতে অনুরোধ করে বললেন, কৃষ্ণদাস তোমার সঙ্গে গমন করুক,সে মস্তকে বহন করে কাজ করবে। নিত‍্যানন্দের এত অনুনয় বিনয় শুনে,মহাপ্রভু তাঁর কথায় সম্মতি দান করলে,তাঁরা সকলে মিলে সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যের ভবনে গমন করলেন। ভট্টাচার্য্য মহাশয় তাঁদেরকে যথোচিত সম্মান করে বসতে আসন দিলেন।কিছুক্ষণ কৃষ্ণকথা প্রসঙ্গের পর শ্রীচৈতন‍্যদেব ভট্টাচার্য্যকে বললেন, বিশ্বরূপ সন্ন‍্যাস গ্রহণ করে দক্ষিণাপথে গমন করেছেন,আমি তাঁর অন্বেষণে সেই অঞ্চলে ভ্রমণ করতে সঙ্কল্প করেছি, এখন তোমার অনুমতি প্রার্থনা করছি। সার্বভৌম তাঁর দেশ ভ্রমণের কথা শুনে দুঃখে কাতর হয়ে পড়লেন, এবং তাঁর চরণ ধরে বললেন, আমি বহু পুণ‍্যফলে তোমার সঙ্গলাভ করেছিলাম,হায়! বিধি সে সঙ্গ আমার ভেঙ্গে দিলেন, আমার শিরে যদি বজ্রপাত হয় ও আমার সন্তান মৃত‍্যুমুখে নিপতিত হয়, আমি তাহাও সহ‍্য করতে পারি, কিন্তু তোমার বিচ্ছেদ,তদপেক্ষা আমার পক্ষে অসহনীয়।তবে যদি তুমি নিতান্তই যেতে চাও, তাহলে আর দিন কয়েক এখানে থাক, আমি তোমার শ্রীচরণ দর্শন করে জীবন শীতল করি। শ্রীচৈতন‍্যের হৃদয় স্নিগ্ধ কুসুমসমান কোমলতাত পূর্ণ। তিনি সার্বভৌমের মিষ্ট কথায় ও মধুর ব‍্যবহারে তাঁর অনুরোধ একেবারে অগ্রাহ‍্য করতে পারলেন না। সার্বভৌম ভট্টাচার্যের প্রতি গৌরহরির অচলা ভক্তি ; তাঁকে একটু সুখী করতে পারলে তিনিও নিজেকে আনন্দিত মনে করেন।গৌরসুন্দর তাঁর কথায় স্বীকৃত হয়ে চার-পাঁচদিন পুরীতে থাকলেন এবং সার্বভৌম কর্তৃক নিমন্ত্রিত হয়ে এই কয়েক দিন তাঁরই বাসভবনে আহার করলেন।সার্বভৌমের পত্নী মহাপ্রভুর জন্য বিবিধ ব‍্যঞ্জন রন্ধন করে তাঁকে মনোসুখে ভোজন করালেন।মহাপ্রভুও আহার করে পরম তৃপ্তি লাভ করতেন।*

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 ৭২. দাক্ষিণাত‍্য ভ্রমণ উদ্দেশ্য 🚩 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 অষ্টম 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/11/gouranga8.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৭২) 🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
         *দাক্ষিণাত‍্য ভ্রমণ উদ্দেশ্য*
         👥👥👥👥👥👥👥👥
*🍁নির্দ্ধারিত দিন ফুরিয়ে গেল।শ্রীচৈতন‍্যদেব আর বিলম্ব করতে পারলেন না। সার্বভৌমের কাছে দক্ষিণাপথ যাবার প্রস্তাব করে অনুমতি পেলেন।পর্য‍্যটনের আগে মহাপ্রভুও তাঁর ভক্তগণসহ শ্রীজগন্নাথ দেবের মন্দিরে গমন করে, তাঁর আশীর্বাদ ও অনুমতি প্রার্থনা করলেন। পূজারী এই অতুল সৌন্দর্য্যপূর্ণ নবীন সন্ন‍্যাসীর গলে মালা পরিয়ে,তাঁকে প্রসাদান্ন প্রদান করলেন।গৌরসুন্দর শ্রীজগন্নাথদেবের অনুগ্রহ ও সকলের শুভ প্রার্থনা মস্তকে ধারণ করে দক্ষিণ দেশে যাত্রার জন্য প্রস্তুত হলেন।*
*🍀সার্বভৌম ভট্টাচার্য্য,চৈতন‍্যদেবের জন্য চারটা নতূন কৌপীন ও চারটা বহির্বাস প্রস্তুত করাইয়ে রেখেছিলেন ; গোপীনাথ তা নিয়ে আলালনাথ পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে গমন করলেন।যাবার সময় বাসুদেব ভট্টাচার্য্য মহাপ্রভুকে বললেন, গোদাবরী (দাক্ষিণাত‍্যের মধ্যে প্রসিদ্ধা নদী, সেটি ব্রহ্মগিরি পর্বত হতে উৎপন্ন হয়েছে)।তীরে বিদ‍্যানগরে রামানন্দ রায় নামে একজন বৈষ্ণব আছেন ; ঐশ্বর্য‍্যের মধ্যে বসবাস করলেও এমন সুপন্ডিত ও ভগবদ্ভক্ত খুবই কম দৃষ্টি গোচর হয়।তুমি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।বিষয়ী বা শূদ্র বলে তাঁকে উপেক্ষা করবে না।তাঁর সহিত ধর্মপ্রসঙ্গ করলেই তুমি বুঝতে পারবে।তিনি কি রকম পরমভক্ত। এমন কৃষ্ণপ্রেমানুরাগী,সুরসিক ভক্তকে আমি পূর্বে ভাল করে বুঝতে না পেরে তাঁকে বৈষ্ণব বলে উপহাস করতাম, এখন তোমার কৃপায় বৈষ্ণবধর্মের মর্ম বুঝতে পেরেছি।গৌরহরি সার্বভৌমের কথা পালন করতে অঙ্গীকার করে, ভট্টাচার্য্যকে প্রেমভরে গাঢ় আলিঙ্গন করে দক্ষিণদেশে যাত্রা করলেন।*
*☘নিত‍্যানন্দ প্রভৃতি কয়েকজন অনুগত ভক্ত তাঁর অনুগমন করলেন।এদিকে সার্বভৌমের অন্তরে মহাপ্রভুর বিচ্ছেদ-যন্ত্রণা এতই প্রবলতর হয়ে উঠিল যে,তিনি আর স্থির থাকতে না পেরে, ভূতলে পড়ে অচেতন হলেন।যাত্রীদল বিশাল বারিধির উপকূল দিয়ে চলতে লাগলেন।যেতে যেতে তাঁরা আলালনাথে উপস্থিত হলেন।মহাপ্রভু আলালনাথের সামনে উপস্থিত হয়ে ভক্তিভরে তাঁকে প্রণাম করলেন, এবং নিজের স্বভাবসিদ্ধ প্রকৃতি অনুসারে নৃত্য করতে লাগলেন।হরিনামের মধুর ধ্বনিতে সকলের কানে যেন সুধা বর্ষিত হতে লাগল। শ্রীমন্মহাপ্রভুর রূপলাবণ‍্য, তরুণযৌবনে কঠোর বৈরাগ‍্য ও ভগবানের প্রতি অলৌকিক প্রীতি দেখে লোকে দলে দলে আলালনাথ দেবমন্দির সম্মুখে এসে উপস্থিত হ'ল।*
*🌹চারিদিকে লোকে পরিপূর্ণ হয়ে গেল।গৌরহরি হৃদয়ের ভগবৎ-প্রেম তড়িৎপ্রবাহের মত সকলকে হরিপ্রেমে উন্মত্ত করে তুললেন।বহুজনাকীর্ণ লোকমন্ডলীর মধ‍্য হতে আকাশভেদী হরিধ্বনি উত্থিত হতে লাগল।মধ‍্যাহ্ন সূর্য‍্য ক্রমে পশ্চিমদিকে হেলে পড়লেন, কিন্তু তবুও জনতার হ্রাস হল না।গৌরহরির অশ্রু-কম্প-পুলক মিশ্রিত ভাব দেখে, সকলেই বিমুগ্ধ।হরিনামের পীযূষ(সুধা) পানে সকলেই আত্মহারা।সমবেত নরনারীর সে জায়গা পরিত‍্যাগ করবার ক্ষমতা ছিল না।নিত‍্যানন্দ সেই আনন্দ কোলাহলপূর্ণ প্রেমের হাট দেখে ভক্তগণকে সম্বোধন করে বললেন, ভাই সব,হরিনামের মধুর হিল্লোলে চারিদিকে প্রবাহিত হবে,গ্রামে গ্রামে নরনারী এই হরিসংকীর্তনে মেতে উঠবে।*
*নিত‍্যানন্দ দেখলেন,গৌরহরি যে হরিনামে মত্ত হয়েছেন,তাঁকে ধরে নিয়ে আহার না করালে দিন অবসান হলেও তাঁর নৃত্য থামবে না।হরিনামে উন্মত্ত ভক্তগণও এস্থান ত‍্যাগ করবে না।তিনি গৌরসুন্দরকে ভোজন করাবার জন্য সেখান হতে তাঁকে নিয়ে গেলেন। কিন্তু বহুসংখ‍্যক ভক্ত,অলিকুলের মত,তাঁর পশ্চাদবর্তী হল।নিত‍্যানন্দ তাঁকে একটু নিভৃত স্থানে নিয়ে গিয়ে ভোজন করালেন।মহাপ্রভুর ভোজনান্তে ভক্তেরাও নিজেদের জীবনকে কৃতার্থ করবার জন্য তাঁর ভোজন পাত্রের অবশিষ্ট খাদ‍্যদ্রব‍্য কিছু কিছু অংশ সেবা করলেন।আহারান্তে নিত‍্যানন্দ তাঁকে নিয়ে মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করলেন, এবং লোকসংঘ হতে কিছু সময় মহাপ্রভুকে বিশ্রাম করাবার জন্য, মন্দিরের দ্বার রুদ্ধ করে দিলেন।দ্বার রুদ্ধ হল বটে, কিন্তু হাজার হাজার লোক দেবমন্দিরের বাইরে দাঁড়িয়ে হরিনামের ধ্বনিতে চারিদিক নিনাদিত করতে লাগল। শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্যের আলালনাথ দেবমন্দিরে আগমন ও তাঁর অপূর্ব ভক্তি লীলার কথা,মুখে মুখে সর্বত্র বর্ণিত হয়ে,গ্রাম-গ্রামান্তরেও প্রবেশ করেছিল।মানবজীবনের এমন শান্তিপথ-প্রদর্শক, এমন মুক্তিপথের সহায়কে দর্শন করে জীবন কৃতার্থ করবার জন্য দলে দলে লোক আসতে লাগল।গৌরহরি আজ আনন্দে ভরপুর।মহাপ্রভু রুদ্ধ দ্বার উন্মুক্ত করতে বললেন।দ্বার খোলা হলে, চৈতন‍্য-দর্শনাভিলাষী নরনারী তাঁর দর্শন লাভ করে মহোল্লাসে হরিধ্বনি করতে লাগল।গৌরসুন্দরও আবার পূর্ববৎ নৃত্য ও কীর্তন করতে লাগলেন।আলালনাথের মন্দির আজ এক জীবন্ত দেবতার আবির্ভাবে উৎসবময় হয়ে উঠেছে। হাজার হাজার লোক শ্রীচৈতন‍্যের পদানুসরণ করে তাঁর প্রদর্শিত বৈষ্ণবধর্মের পথ অবলম্বন করিল।*
🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 অষ্টম 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/11/gouranga8.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৭৩) 🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
            *রামানন্দ রায় সম্মিলন*
                 *অতি সংক্ষেপে*
            <><><><><><>>>>><><>
*🌻রজনী প্রভাত হয়ে গেল।গৌরসুন্দর স্নান করে দক্ষিণপথ পর্য‍্যটনের জন্য আলালনাথ হতে যাত্রা করলেন।বিদায়কালে তিনি প্রেমভরে ভক্তগণকে আলিঙ্গন করলেন। কিন্তু প্রেমময় গৌরহরির বিচ্ছেদ ভক্তদের এতই অসহনীয় হয়ে পড়িল যে,তাঁরা আর স্থির থাকতে না পেরে,সংজ্ঞাহীন হয়ে ভূতলে পড়ে গেলেন।শ্রীচৈতন‍্যদেব সকল মায়ার অতীত হয়েছেন,তাঁর সকল বন্ধন ছিন্ন হয়ে গেছে ; তিনি যাত্রাকালে কারও জন্য পেছনদিকে একবারও তাকিয়ে দেখলেন না।অতুল অনুরাগভরে কৃষ্ণগুণ কীর্তন করতে করতে চলতে লাগলেন।পথিমধ‍্যে তাঁর কন্ঠ হতে, সুধাবর্ষী হরিনামের ধ্বনি শুনে,শত শত লোক তাঁর পশ্চাদনুবর্তী হয়ে তাঁর সঙ্গে সুধামাখা নামকীর্তন করতে লাগল।বহুলোক তাঁর অনুসরণ করলে,তিনি কিছুদূর গমন করার পর সকলকে আলিঙ্গন করে,গৃহে ফিরে যেতে বললেন।লোকে সে পবিত্র হরিরসপূর্ণ দেহের আলিঙ্গন লাভ করে, হরিপ্রেমে আপ্লুত হয়ে পড়ল, সকলের দেহ-মনে এক অপার্থিব তেজোময় শক্তির সঞ্চার হতে লাগল, সকলেই শ্রীচৈতন‍্যের অভিনব ভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে হরিধ্বনি করতে করতে গৃহে গমন করতে লাগলেন।তাঁদের কন্ঠনিঃসৃত হরিধ্বনি শুনে,অন‍্যেরাও সেই সুধামাখা শ্রীনাম উচ্চারণ করতে লাগল।এইভাবে গ্রাম হতে গ্রামান্তরে শ্রীনামের পবিত্র ও মধুর হিল্লোলে সকলের হৃদয় শীতল হতে লাগিল। দক্ষিণাপথের হাজার হাজার নরনারী হরিভক্ত হয়ে উঠিল।শ্রীচৈতন‍্য ক্রমে সেতুবন্ধে,(একে রামেশ্বর সেতুবন্ধ বলে।এটি একটি সুবিখ‍্যাত দ্বীপ)।এসে উপস্থিত হলেন, এবং সেখান হতে তিনি কূর্ম্ম নামক স্থানে গমন করলেন।এখানে কূর্ম্মাবতারের মন্দির আছে।শ্রীচৈতন‍্য কূর্ম্মদেবের গমন করে যথারীতি তাঁর স্তবস্তুতি করলেন, এবং নিজের প্রকৃতি অনুসারে নৃত‍্য গীতাদি বহু সময় করলেন।যারা তাঁর মোহন মূর্তি ও হরিপ্রেমের অপূর্ব দর্শন করিল,তারাই বিমুগ্ধ হয়ে গেল। তাঁর হরিপ্রেমানুরাগের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।গ্রামবাসীরা দলে দলে এমন মোহনমূরতি নবীন সন্ন‍্যাসীর দর্শন লালসায়,দেবমন্দিরের কাছে এসে উপস্থিত হল।প্রেমের স্রোত বহিতে লাগল--, এবং শত শত লোক সে মধুর স্রোতে নিজেদের অঙ্গ ভাসিয়ে দিল।*
*তাই শ্রীপাদ কবিরাজ গোস্বামী তাঁর অমর গ্রন্থ শ্রীচৈতন‍্যচরিতামৃতে লিখেছেন=*
*🌷আশ্চর্য‍্য শুনি সব লোক আইল দেখিবারে।*
*🌷প্রভু রূপ প্রেম দেখি হৈল চমৎকারে।।*
*🌷দর্শনে বৈষ্ণব হৈলা বলে কৃষ্ণ হরি।*
*🌷প্রেমাবেশে নাচে লোক উর্দ্ধবাহু করি।।*
*🌷কৃষ্ণনাম লোক মুখে শুনি অবিরাম।*
*🌷সেই লোক বৈষ্ণব কৈল অন‍্য সব গ্রাম।।*
*🌷এই মত পরম্পরায় দেশ বৈষ্ণব হৈল।*
*🌷কৃষ্ণনামামৃত বন‍্যায় দেশ ভাসাইল।।*
*🌻এই কূর্ম্মস্থানে কূর্ম্ম নামক এক বৈদিক ব্রাহ্মণ বাস করতেন।তিনি মহাপ্রভুর চিত্তহারী শক্তির কথা শুনে, তাঁকে আপন আলয়ে আনিবার জন্য তাঁর কাছে উপস্থিত হলেন, এবং করযোড়ে, নিজ অভিপ্রায় নিবেদন করিলেন।শ্রীচৈতন‍্য তাঁর ব‍্যাকুলতা ও নিষ্ঠার পরিচয় পেয়ে ব্রাহ্মণের প্রার্থনা অনুসারে তাঁর বাসভবনে গমন করলেন।কূর্ম্ম এবং তাঁর পরিবারের সকলে গৌরহরির আগমনে পরম কৃতার্থ বোধ করলেন।কূর্ম্ম তাঁর শ্রীচরণ ধৌত করে দিলেন, এবং তিনি ও তাঁর পরিবারবর্গ সকলে মিলে সেই চরণামৃত পান করলেন।পাদ প্রক্ষালন করিবার পর গৃহস্বামী তাঁর ভোজনের আয়োজন করে, অতি বিনীতভাবে তাঁকে ভোজন করতে অনুরোধ করিলে, মহাপ্রভু সম্মত হয়ে, কূর্ম্মের বাড়ীতে সেদিন ভোজন করলেন।ভোজনান্তে তাঁর প্রসাদান্ন সকলে পেয়ে পরম তৃপ্তি লাভ করলেন। কূর্ম্ম মনে করতে লাগলেন যে, তিনি ঘরে বসে আজ স্বর্গের দেবতাকে দর্শন করলেন, এবং তাঁর পরিবারের সকলেই বহু পুণ‍্যফলে আজ সে দেবতার দর্শন লাভে জীবন সফল করিল।কূর্ম্ম অবশেষে হৃদয়ের আবেগ সংবরণ করতে না পেরে,শ্রীচৈতন‍্যদেবকে বলতে লাগলেন,প্রভো! তোমার পাদপদ্ম দর্শনের জন্য ব্রহ্মাদির মত দেবগণও তপস‍্যা করে থাকেন,আজ তুমি স্বয়ং আমার মত ব‍্যক্তির ঘরে আগমন করলে, তোমার শ্রীচরণ দর্শন ও স্পর্শ করলাম। এর তুল‍্য আমার উচ্চভাগ‍্য আর কি হতে পারে? আজ আমার মানব জন্ম ধন‍্য হল, আমার কুল কৃতার্থ হল।প্রভো!তুমি যদি কৃপা কর, আমি তোমার সঙ্গের সাথী হই, বিষয়ের দুঃখ আর ভোগ করতে ইচ্ছে হয় না। কূর্ম্ম সংসার পরিত‍্যাগ করে সঙ্গের সাথী হবার বাসনা নিবেদন করিলে, মহাপ্রভু তাঁকে সংসার ত‍্যাগ করতে নিষেধ করে বললেন, তুমি ঘরে বসে কৃষ্ণনাম কর, ঘরে বসেই তুমি সে ধন লাভ করবে। হ‍্যাঁ, আর যাকে দেখবে তাকেই শ্রীকৃষ্ণের কথা বলে উপদেশ দিবে। আমার আদেশ তুমি গুরুর ন‍্যায় এদেশে শ্রীকৃষ্ণের মধুময় নামকীর্তন করে,দেশের লোকের উদ্ধার সাধন কর।সংসার তোমার কাজের প্রতিকূলাচরণ করতে সমর্থ হবে না।মহাপ্রভু বৈদিক ব্রাহ্মণ কূর্ম্মের গৃহে সেদিন যাপন করে,পরদিন প্রভাতে পর্য‍্যটনের জন্য যাত্রা করলেন।কূর্ম্মও তাঁর সঙ্গে গমন করতে লাগলেন। কিন্তু কিছুদূর গমন করলে,মহাপ্রভুর আদেশে তিনি গৃহে ফিরে এলেন।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🪔🙏🙏🙏🙏🙏🙏

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 অষ্টম 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/11/gouranga8.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৭৪)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
                *রামানন্দ সম্মিলন*
                    *অতি সংক্ষেপে*
              ▪▪▪▪▪▪▪
*🍀ঐ অঞ্চলে বাসুদেব নামে জনৈক ব্রাহ্মণ কুষ্ঠরোগগ্রস্ত হয়ে অতি কষ্টে জীবন যাপন করছিলেন।তাঁর শরীরের ক্ষতস্থান সব কীটাণুতে পূর্ণ হয়ে থাকত।বাসুদেব যখন শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্যের আগমনবার্তা শুনলেন,তখন তিনি তাঁর দর্শন লালসায়, কূর্ম্মের গৃহাভিমুখে গমন করলেন ; কিন্তু কূর্ম্মভবনে উপস্থিত হয়ে যখন শুনলেন যে, মহাপ্রভু চলে গিয়েছেন, তখন তিনি শোকে ও দুঃখে অধীর হয়ে,বিলাপ করতে করতে হতচেতন হয়ে পড়লেন।এদিকে দয়ার্দ্রচিত্ত করুণার অবতার শ্রীচৈতন‍্যদেব যেতে যেতে কুষ্ঠরোগগ্রস্ত বাসুদেবের কাতরোক্তি হৃদয়ে অনুভব করে, পুনরায় কূর্ম্মস্থানে কূর্ম্মগৃহে আগমন করে বাসুদেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে প্রেমভরে আলিঙ্গন করলেন ; করুণাময় মহাপ্রভুর প্রেমালিঙ্গনে বাসুদেবের ব‍্যাধি আরোগ‍্য হয়ে গেল।তাঁর রোগগ্রস্ত কুৎসিত অঙ্গ সুন্দর হয়ে উঠিল। বাসুদেব তাঁর অলৌকিক শক্তি দেখে, বললেন,প্রভো!এ শক্তি একমাত্র তোমাতেই সম্ভব। কিন্তু প্রভো! আমার দেহ এমন সুন্দর হল বলে মনে অহংকার জন্মিতে পারে ;আমি যখন কীটদষ্ট হয়ে রোগভোগ করছিলাম,তখন আমি নিজেকে অধম বলে মনে করতাম ; আমার আত্মার কল‍্যাণের পক্ষে তাইই শ্রেয়স্কর ছিল।মহাপ্রভু বুঝলেন, বাসুদেব সত‍্যই পরমভক্ত ;তিনি তাই বললেন, তুমি সদাসর্বদা শ্রীকৃষ্ণের নামকীর্তন কর, ও সব লোকের মধ্যে শ্রীনাম প্রচার কর। অভিমান তোমাতে স্থান পাবে না।এই বলে মহাপ্রভু সেখান হতে চলে গেলেন। কূর্ম্ম ও বাসুদেব পরস্পর কন্ঠালিঙ্গন করে উভয়ে মহাপ্রভুর প্রেমলীলা স্মরণ করতঃ অশ্রু ফেলতে লাগলেন।*
*🍁কূর্ম্মস্থানে হরিনামের প্লাবনে সকলকে প্লাবিত করে শ্রীচৈতন‍্যদেব পরদিন সেখান হতে যাত্রা করলেন। প্রাকৃতিক শোভা ও সৌন্দর্যের মধ‍্য দিয়ে হরিগুণ কীর্তন করতে করতে, তিনি কয়েকদিন পরে গোদাবরী তীরে এসে উপস্থিত হলেন।গোদাবরী তীরের সুরম‍্য বনরাজি ও নদীর নির্মল জল দেখে,তাঁর মনে বৃন্দাবনের ভাবে ভাবিত হলেন।নির্মল সলিলা গোদাবরী যমুনা ও তার তীরের ঘন পল্লব আবৃত বৃক্ষগুলি বৃন্দাবনের বন বলে তাঁর প্রতীয়মান (অনুভূত)হ'ল। তিনি আর স্থির থাকতে পারলেন না, বনের মধ্যে প্রবেশ করে,কিছুক্ষণ নৃত্য গীতাদি করলেন, এবং পরে স্নান করে ঘাটের অনতিদূরে বসে নামকীর্তনে রত হলেন।এই জায়গার নাম বিদ‍্যানগর।তিনি কীর্তনানন্দে মত্ত রয়েছেন, এমন সময়ে দেখলেন,এক ব‍্যক্তি বহুজন পরিবেষ্টিত হয়ে দোলায় চেপে নদীর দিকে চলে আসছেন, তাঁর সঙ্গে বাদকেরা বাদ‍্য বাজাচ্ছে ও বৈদিক ব্রাহ্মণগণ বেদমন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে আগমন করছেন।শ্রীচৈতন‍্য দোলায় আরোহণকারীকে দেখে মনে করলেন, ইনিই কি সেই রায় রামানন্দ!ইঁনার বিষয়ই কি সার্বভৌম আমাকে বলেছেন?এদিকে রামানন্দ রায় লোকজনসহ স্নানঘাটের কাছে এসে দোলা থেকে নেমে দেখলেন, এক অপূর্ব রূপলাবণ‍্যময় নবীন সন্ন‍্যাসী নদীতীরে বসে রয়েছেন, তাঁর রূপে যেন চারিদিক আলোকিত হচ্ছে।তাঁর বদনমন্ডল হতে যেন এক অপার্থিব স্বর্গীয় জ‍্যোতিঃ বিনির্গত বা বাহির হচ্ছে। পরম কৃষ্ণভক্ত রামরায়, সন্ন‍্যাসীর শ্রীচরণে ভক্তিভরে প্রণাম করলেন। শ্রীচৈতন‍্যদেব তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন,আপনিই কিসরামানন্দ রায়?রামানন্দ মহাপ্রভুর কথার উত্তরে অতি বিনীতভাবে বললেন, "আমিই সেই অধম শূদ্রই সত‍্য"।মহাপ্রভু তখন নিজের বাহু প্রসারণ করে তাঁকে প্রেমভরে আলিঙ্গন করলেন।উভয়ের হৃদয়ে প্রেমতরঙ্গ উত্থিত হল। উভয়েই ভক্তির আবেশে অচেতন হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন।রাজা রামরায় সমভিব‍্যাহারে ব্রাহ্মণেরা,উভয়ের ভাব দেখে অবাক হয়ে গেলেন।তাঁরা বলাবলি করতে লাগলেন,এ সন্ন‍্যাসীর মধ্যে ব্রহ্মতেজ প্রকাশ পাচ্ছে ; আমাদের রাজা শূদ্র, ইনি সন্ন‍্যাসীকে আলিঙ্গন করে কেনই বা ক্রন্দন করছেন ; আর আমাদের রাজা মহাপন্ডিত, ইনিই বা কেন, এ সন্ন‍্যাসীর কন্ঠালিঙ্গন করে কাঁদছেন?রাজা রামানন্দের সমভিব‍্যাহারে লোকদের কাছে এ দৃশ্য এক অভিনব ঘটনা বলেই বোধ হতে লাগিল।*
🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙏🙌🙌🙌🙌🙌🙌
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 অষ্টম 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/11/gouranga8.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৭৫)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
              *রামানন্দ রায় সম্মিলন*
                   *অতি সংক্ষেপে*
             ☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
*🌻কিছু সময় পরে উভয়ে স্থির হয়ে বসিলেন।শ্রীচৈতন‍্যদেব,রামরায়কে বললেন, "সার্বভৌম ভট্টাচার্য্য আমাকে আপনার অনুপম চরিত্রের কথা বলেছিলেন, আমি আপনাকে দেখবার জন্যই এখানে আগমন করেছি। আমার এখানে আসা সার্থক হ'ল"।রামরায়, চৈতন‍্যদেবের কথা শুনে বিনম্র বচনে বললেন, সার্বভৌম ভট্টাচার্য্য এ দাসের প্রতি কৃপা করে আমার পরিত্রাণের জন্যই আপনাকে এখানে প্রেরণ করেছেন ; আমার মত অধম আপনার শ্রীচরণ দর্শনে মানবজীবন ধারণ আজ সফল হ'ল। আমার পূর্ণ ধারণা আপনি নরদেহধারী নারায়ণ ; আমি রাজসেবী বিষয়ী, আপনি এ অধমের উদ্ধারের জন্যই এখানে আগমন করেছেন ; সত‍্যি আপনি দয়ার অবতার। যে শত শত লোক আমার সঙ্গে আজ আগমন করেছে, তাদের সকলের হৃদয় আপনার দর্শনে দ্রবীভূত হয়েছে ; দেখলাম আপনার রূপমাধুর্য‍্য দর্শন করে,সকলের নয়ন হতে বারিধারা বহিছে, সকলেরই মুখ হতে শ্রীকৃষ্ণের মধুর নাম উচ্চারিত হচ্ছে। শ্রীচৈতন‍্য বললেন, "আপনার অঙ্গ স্পর্শে আজ আমার হৃদয়ও কৃষ্ণপ্রেমে ভাসছে ; সত‍্যই আমার মনে হয়েছে আপনি মহাভাগবত। উভয়ে এরকম কথোপকথন করছেন, এমন সময়ে এক ব্রাহ্মণ এসে উপস্থিত হলেন ; এবং শ্রীচৈতন‍্যদেবকে নিজের বাড়ীতে নিমন্ত্রণ করলেন, সেই ব্রাহ্মণও একজন পরম ভক্তবৈষ্ণব। চৈতন‍্যদেব তাঁর বাড়ীতে ভিক্ষা গ্রহণে প্রস্তুত হয়ে, রামরায়কে বললেন, স্বল্পসময় আপনার সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম, আপনি পরম বৈষ্ণব, আপনার মুখে কৃষ্ণকথা শুনতে আমার বড়ই ভাল লাগল, পুনরায় যেন আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। রামরায় বললেন, যদি এই অধমকে তরাইবার সাধ থাকে,তাহলে আরো বেশ কয়েকদিন এখানে অপেক্ষা করুন। এইকথা বলে রামরায় স্নান ও তর্পণাদি কার্য‍্য সমাধা করে লোকজন পরিবেষ্টিত হয়ে,বাদ‍্যধ্বনি সহকারে গৃহে প্রত‍্যাগমন করলেন।শ্রীচৈতন‍্যদেবও ব্রাহ্মণের বাড়ীতে ভিক্ষা গ্রহণের জন্য গমন করলেন।*
*👑রামানন্দ রায় বিদ‍্যানগরের শাসনকর্তা।ইঁনার উপাধি রাজা।ইনি বিষয়-কার্য‍্যে লিপ্ত থেকেও জীবনে কৃষ্ণভক্তির পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতেন।সন্ধ‍্যা সমাগত হলে,রামরায় ভগবৎ-কথায় সময় অতিবাহিত করবার জন্য শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্যদেবের কাছে উপস্থিত হয়ে দন্ডবৎ প্রণাম করলেন।শ্রীচৈতন‍্যদেবও তাঁকে আলিঙ্গন দান করলেন।তারপর উভয়ে একটি নির্জন স্থানে গিয়ে বসে ভগবৎ প্রসঙ্গে রত হলেন।*
*🌺শ্রীচৈতন‍্য রামরায়কে সাধন সম্বন্ধে কিছু বলতে বলিলে, রামরায় বললেন, "বিষ্ণুভক্তিই পরম সার"।*
*🌺শ্রীচৈতন‍্য বললেন, এটি বাইরের কথা, এর পর কি আছে বল।*
*🌺রামানন্দ বললেন, শ্রীকৃষ্ণে সব কর্ম সমর্পণই সাধনার সার। শ্রীমদ্ভগবতগীতায় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন,আহার,দান,তপ, যা কিছুই করবে,সবই আমাতে অর্পণ করবে।*
*🌺মহাপ্রভু বললেন,এটিও বাইরের কথা, এর পর কি আছে বল।*
*🌺রামানন্দ=স্বধর্ম পরিত‍্যাগ করাই সাধনার সার।শ্রীমদ্ভাগবতে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, যে ব‍্যক্তি বেদবিহিত আচার পরিহার করে আমাকে ভজনা করে, সেই ব‍্যক্তি প্রকৃত পথ পেয়ে থাকেন।ভগবতগীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, স্বধর্ম পরিত‍্যাগ করে যে ব‍্যক্তি আমার শরণাপন্ন হয়,সে সব পাপ হতে মুক্তি লাভ করে।*
*🌺শ্রীচৈতন‍্য= এটিও বাইরের কথা, এর পর কি আছে বল?*
*🌺রামানন্দ=জ্ঞানমিশ্রা ভক্তিই সাধনা সার।গীতায় আছে,সমদর্শী প্রসন্নচিত্ত ব্রতনিষ্ঠ ব‍্যক্তি আমাতে পরাভক্তি লাভ করে।*
*🌺শ্রীচৈতন‍্যদেব= ইহাও বাহিরের কথা, আগে কি আছে বল?*
*🌺রামানন্দ=জ্ঞানশূন‍্যা ভক্তিই সর্বসাধ‍্যসার*।
*🌺শ্রীচৈতন‍্য=এহ বাহ‍্য, আগে কহ আর।*
*🌺রামানন্দ=প্রেমভক্তিই সকলের সার।*
*🌺মহাপ্রভু=এটি সত‍্য বটে, তবে আগে বল আর।*
*🌺রামরায়=দাস‍্য প্রেম উৎকৃষ্ট। ভাগবতে দুর্বাসামুনি অম্বরীষকে বলেছেন,যাঁর নাম শ্রবণমাত্র জীবের পরিত্রাণ হয়,তাঁর দাসেদের আর অবশিষ্ট কি আছে?*
*🌺মহাপ্রভু=বেশ ভাল, তবে আগে আরও কিছু বল।*
*🌺রামানন্দ=সখ‍্যপ্রেম সকল ধর্মের সার।*
*🌺গৌরসুন্দর=সত‍্য কথা, তবে আগে কিছু আর শুনাও।*
*🌺রামরায়=বাৎসল‍্য প্রেম ••••••••,*
*🌺শ্রীচৈতন‍্যদেব=এটিও উত্তম,এর বাইরেও যদি কিছু থাকে বল।*
*🌺রায় রামানন্দ=কান্তভাব প্রেম সাধনার সর্বসাধ‍্যসার। এটি পরম মাধুর্য‍্য রস।শান্ত,দাস‍্য, সখ‍্য ও বাৎসল‍্যের মধ্যে সকল রসেরই সমাবেশ আছে, কিন্তু •••••••••••, শ্রীকৃষ্ণ গোপীদের বলেছেন, যারা আমার প্রতি ভক্তি অর্পণ করেছে,তারা অমৃতত্ব লাভ করেছে।*
*🌺শ্রীগৌরহরি=এটি সাধনার সুন্দর কথা, তবে আর কি কিছু বলা যেতে পারে?*
*🌺রামানন্দ বললেন,এর পর সাধনার বিষয় জানতে চাই,আমি এমন লোক তো এ সংসারে দেখি নাই।তবে রাধাপ্রেমই সর্বশ্রেষ্ঠ।তিনি রাধাপ্রেমের নিগূঢ় তত্ত্বের কথা বলিলে, শ্রীচৈতন‍্যদেব অত‍্যন্ত আনন্দ প্রকাশ করে বললেন, এই বিদ‍্যানগরে আসা আমার সার্থক হল।*
*🌻সেদিন এরকমে রামরায়ের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্যের সমস্ত রজনীই ভক্তিবিষয়ক প্রসঙ্গে অতিবাহিত হল। গৌরহরি, রামরায়ের মুখে রাধাতত্ত্ব,কৃষ্ণতত্ত্ব ও ভক্তির উচ্চ অঙ্গের কথা শুনে অত‍্যন্ত প্রীত হয়ে, প্রেমভরে রামানন্দকে আলিঙ্গন করলেন।উষাকালে রামরায় বিদায়কালে শ্রীগৌরাঙ্গকে বললেন, যদি কৃপা করে এখানে পাতকীর উদ্ধারের জন্য এসেছ, তবে আরও দশদিন অপেক্ষা করলে মনোআশা পূর্ণ হবে।তখন মহাপ্রভু বললেন, তোমার জন্য দশদিন কি, এ জীবন পর্যন্ত সমর্পণ করতে পারি। এইরকম কথাবার্তার পর রামরায় গৌরহরির নিকট হতে বিদায় নিয়ে নিজ ভবনের দিকে চলিলেন।*
*সমস্ত দিন অতিবাহিত হল,সন্ধ‍্যাকাল অতীত হলে,রামরায় পুনরায় গৌরহরির কাছে এসে উপস্থিত হলেন। পূর্বের দিন মত ধর্মপ্রসঙ্গ আরম্ভ হল।গৌরহরি রামরায়কে জিজ্ঞাসা করলেন, বিদ‍্যার মধ্যে কোন্ বিদ‍্যা সার?*
*🌺রামানন্দ=কৃষ্ণভক্তির সম আর বিদ‍্যা নাই।*
*🌺শ্রীচৈতন‍্যদেব= কোন কীর্তি শ্রেষ্ঠ?*
*🌺রামরায়=শ্রীকৃষ্ণের প্রেমিক বলে যাঁরা খ‍্যাত, তাঁদের কীর্তি সর্বশ্রেষ্ঠ।*
*🌺মহাপ্রভু=সম্পত্তির মধ্যে কোন সম্পত্তি শ্রেষ্ঠ?*
*🌺রামরায়=যাঁর শ্রীকৃষ্ণে প্রেম আছে,তিনিই শ্রেষ্ঠ সম্পত্তিশালী।*
*🌺গৌরহরি=দুঃখের মধ্যে প্রধান দুঃখ কি?*
*🌺রামানন্দ=কৃষ্ণভক্তি বিহনে মানবের আর দুঃখ নাই।*
*🌺শ্রীগৌরাঙ্গ=কোন জীবকে মুক্ত বলা যায়?*
*🌺রামরায়=যাঁর কৃষ্ণপ্রেমে সাধনা হয়েছে,সেই মুক্ত।*
*🌺মহাপ্রভু=সঙ্গীতের মধ্যে কোন সঙ্গীত শ্রেষ্ঠ?*
*🌺রায় রামানন্দ=যে সঙ্গীতে শ্রীরাধাকৃষ্ণের প্রেমকেলি আছে।*
*🌺শ্রীচৈতন‍্যদেব=শ্রেয়ের মধ্যে কোন শ্রেয় জীবের সার?*
*🌺কৃষ্ণভক্ত সঙ্গ বিনা আর শ্রেয়ঃ নাই।*
*🌺মহাপ্রভু=মানব সর্বদা কার স্মরণ নেয়?*
*🌺রামরায়=কৃষ্ণনাম গুণ লীলা।*
*🌺গৌরহরি=ধ‍্যেয়ের মধ্যে মানবের কোন বস্তু প্রধান ধ‍্যেয়?*
*🌺রামরায়=শ্রীরাধাকৃষ্ণের শ্রীচরণ ধ‍্যানই প্রধান।*
*🌺জীবের কোথায় বাস করা কর্তব‍্য?*
*🌺রামানন্দ=শ্রীবৃন্দাবন ভূমিই বসবাসের শ্রেষ্ঠ।*
*🌺মহাপ্রভু=শ্রবণের মধ্যে কোন কথা শ্রবণের শ্রেষ্ঠ উপযোগী?*
*🌺শ্রীরাধাগোবিন্দের গুণকীর্তন।*
*🌺মহাপ্রভু=উপাস‍্যের মধ্যে কার উপাসনা প্রধান?*
*🌺রামরায়=শ্রীরাধাকৃষ্ণের যুগল রূপ।*
*🌻শ্রীচৈতন‍্য রামানন্দ রায়কে বললেন, এখানে এসে তোমার নিকট হতে আমি রাধাতত্ত্ব কৃষ্ণতত্ত্ব প্রেমতত্ত্ব প্রভৃতি ভক্তির নতুন নতুন তত্ত্বকথা শুনে অত‍্যন্ত আনন্দ লাভ করলাম।রামরায় কহিলেন, প্রভো! তোমার মুখ দিয়ে তুমি তোমার কথায় প্রকাশ করিলে। তুমি নিজেই রাধা প্রেমতত্ত্বের বক্তা ও নিজেই শ্রোতা।*
*🍁ভক্তিপ্রসঙ্গে উভয়ে মাতোয়ারা, এমন সময়ে রামরায় বললেন,আমি প্রথমে তোমাকে সন্ন‍্যাসীর বেশে দেখেছিলাম, কিন্তু এখন আর তোমার সে রূপ দেখছি না। তোমার শ‍্যামরূপের নিকটে সোনার প্রতিমার ন‍্যায় পঞ্চালিকা (মাটির ধাতু বা কাঠ দিয়ে তৈরি পুতুল)রয়েছে।তাঁর উজ্জ্বল জ‍্যোতিতে তোমার দেহ আলোকিত হয়েছে। শ্রীচৈতন‍্য বললেন, "রাধাকৃষ্ণের প্রতি তোমার প্রেম অসাধারণ, সেইজন‍্য সববস্তু দর্শনেই তোমার হৃদয়ে কৃষ্ণপ্রেমের স্ফূর্তি হয়।কথিত আছে শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্য তারপরে সামান্য হাসি হেসে রসরাজ ও মহাভাব এই দুই ভাবে রামরায়ের নিকট প্রকাশিত হন।রামরায় সে রূপ দর্শনে আনন্দের আবেগে ভূতলে মূর্ছিত হয়ে পড়লেন। মহাপ্রভু তাঁর অঙ্গে হাতস্পর্শ করলে তাঁর চেতনা ফিরল ; তিনি পুনরায় শ্রীচৈতন‍্যকে সন্ন‍্যাসীর বেশে দর্শন করলেন।দশদিন এইভাবে অতিবাহিত হলে, উভয়ের বিদায়কালে রামরায় ক্রন্দন করতে লাগলেন, মহাপ্রভু গাঢ় আলিঙ্গন দিয়ে বললেন, তুমি পুরীতে যাও, আমি তীর্থ পর্য‍্যটন করে সেখানে যাব, উভয়ে কৃষ্ণকথা প্রসঙ্গে দিন কাটাব। শ্রীচৈতন‍্যচরিতামৃতে পায়=*
*🌷বিষয় ছাড়িয়া তুমি যাহ নীলাচলে।*
*🌷আমি তীর্থ করি তাঁহা আসিব অল্পকালে।।*
*🌷দুইজনে নীলাচলে রহিব এক সঙ্গে।*
*🌷সুখে গোঙাইব কাল কৃষ্ণকথা রঙ্গে।।*
*🌻রায় রামানন্দ মহাপ্রভুর বিচ্ছেদে বিষাদিত অন্তরে গৃহে ফিরে গেলেন। শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্য নিশাবসানে বিদ‍্যানগর পরিত‍্যাগ করে তীর্থ ভ্রমণে বাহির হলেন।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙌🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 অষ্টম 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/11/gouranga8.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৭৬)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
               *নানা তীর্থে ভ্রমণ*
              ***********************
*🌷দক্ষিণ গমন প্রভুর অতি বিলক্ষণ।*
*🌷সহস্র সহস্র তীর্থ কৈল দরশন।।*
*🌷সে সব তীর্থ স্পর্শি মহাতীর্থ কৈলা।*
*🌷সেই ছলে সে দেশের লোক নিস্তারিলা।।(চৈঃচঃ)*
*🍀ভক্তচূড়ামণি শ্রীচৈতন‍্যদেব বিদ‍্যানগর হতে গোবিন্দ দাসকে সঙ্গে নিয়ে বাহির হলেন। গোবিন্দ দাস মহাপ্রভুর দক্ষিণাপথ ভ্রমণের সাথী হয়ে কড়চায় অনেক জায়গার অনেক ঘটনা লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন। কয়েকদিন পরে মহাপ্রভু মল্লিকার্জুন তীর্থে গমন করলেন।এখানে দেবমন্দিরে প্রবেশ করতঃ তিনি মহেশকে দর্শন করলেন।তিনি যেখানেই গমন করতেন, সেখানেই তাঁর ভগবদভক্তির জীবন্ত নিদর্শন পেয়ে তারই পথ অনুসরণ করল।গৌরহরি সেখান হতে আহোবলে গমন করে নৃসিংহ দর্শন ও তাঁকে প্রণতি করে সিদ্ধবটে এসে রাম-সীতা দর্শন করেন।তাঁর আগমনবার্তা চারিদিকে প্রচারিত হলে,অনেকে তাঁর দর্শনাকাঙ্ক্ষী হয়ে দলে দলে আসতে লাগিল।এখানে এক রামভক্ত ব্রাহ্মণ তাঁর প্রেমময় মূর্তি দেখে বিমোহিত হয়ে,তাঁকে আগ্রহপূর্বক নিজ ভবনে নিমন্ত্রণ করলেন। গৌরহরি তাঁর নিমন্ত্রণ রক্ষা করে স্কন্ধক্ষেত্রে গমন করে স্কন্ধ দর্শন করলেন।এখন হতে পুনরায় সিদ্ধবটে প্রত‍্যাগমন করবার বাসনা হলে, তিনি সেখানে এসে সেই রামভক্ত ব্রাহ্মণের বাড়ীতে আতিথ‍্য গ্রহণ করলেন।বিপ্র তাঁকে অতি সমাদরে ও ভক্তি সহকারে নিজ বাড়ীতে স্থান দান করে,তাঁর পরিচর্য‍্যায় রত হন।মহাপ্রভু দেখলেন, সেই রামভক্ত ব্রাহ্মণ পূর্বে রামনাম জপ করতেন, কিন্তু এখন তারপরিবর্তে তাঁর রসনা হতে শ্রীকৃষ্ণনাম উচ্চারিত হচ্ছে।তিনি এই পরিবর্তনের কারণ জিজ্ঞাসা করাতে, ব্রাহ্মণ বললেন, "তোমাকে দেখিয়া অবধি,আমার মনের কেমন এক পরিবর্তন উপস্থিত হয়েছে ;আমার জিহ্বা হতে রামনামের পরিবর্তে আপনাআপনিই শ্রীকৃষ্ণনাম বাহির হচ্ছে। যথা চৈতন‍্য চরিতামৃতে=*
*🌷বাল‍্যাবধি রামনাম গ্রহণ আমার।*
*🌷তোমা দেখি কৃষ্ণনাম আইল একবার।।*
*🌷সেই হইতে কৃষ্ণনাম জিহ্বাতে বসিল।*
*🌷কৃষ্ণনাম স্ফুরে রামনাম দূরে গেল।।*
*🌺এই বলে নূতন কৃষ্ণভক্ত ব্রাহ্মণ, গোরহরির চরণে লুন্ঠিত হয়ে নয়নবারি ফেলতে ফেলতে বললেন, "আমি তোমারই মধ্যে সেই শ্রীকৃষ্ণের মোহন মূরতি দর্শন করছি।শ্রীগৌরাঙ্গ তাঁকে আশীর্বাদ করে বৃদ্ধ কাশীতে এসে শিব দর্শন করলেন, এবং এখন হতে কোন নিকটবর্তী গ্রামে গমন করলেন।সেই গ্রামে বহুসংখ‍্যক ব্রাহ্মণের বাস।ইঁনাদের মধ্যে অনেকেই তার্কিক,বৈদান্তিক ও মায়াবাদী।শ্রীচৈতন‍্যদেব সেখানে উপস্থিত হলে,পন্ডিতমন্ডলী তাঁর সঙ্গে বিচারে রত হন। কিন্তু মহাপ্রভুর তীক্ষ্ণ বুদ্ধির প্রভাবে সকলেই পরাভব স্বীকার করে,তাঁদের মধুময় ভক্তিপথের পথিক হয়ে পড়েন।*
*🍁এইখানে একজন বৌদ্ধাচার্য‍্য বাস করতেন।তাঁর অনেক শিষ্য ছিল। বৌদ্ধাচার্য‍্য মহাপ্রভুকে পরাস্ত করবার মানসে তাঁর সঙ্গে বিচারে রত হন।শ্রীচৈতন‍্য তাঁকে বিচারে পরাস্ত করলেন।গুরুকে পরাস্ত হতে দেখে,তাঁর শিষ‍্যেরা ক্রূদ্ধ হয়ে এক অবৈধ উপায় অবলম্বন করে।*
*শ্রীকৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী বলেন,তাঁরা মন্ত্রণা করে একটি থালিতে, উচ্ছিষ্ট অন্ন পূর্ণ করে,কোন ব‍্যক্তির দ্বারা শ্রীচৈতন‍্যের নিকট প্রেরণ করেন।সেই সময় একটি পক্ষী চঞ্চু দ্বারা থালাটি তুলে নিয়ে যাই, এবং উচ্চ জায়গা থেকে টেরচাভাবে বৌদ্ধ গুরুর মাথায় সজোরে ফেলে দেয়।থালার আঘাতে আচার্য‍্যের মাথা কেটে রক্ত বাহির হয়ে সর্বাঙ্গ ভিজে যায়।তাদেখে বৌদ্ধাচার্য‍্য ও তদীয় শিষ‍্যগণ গৌরহরির শরণাপন্ন হয়ে,বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করলেন। তারপর সেখান হতে মহাপ্রভু ত্রিমন্দ নগরে গমন করলেন।সেখানেও অনেক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বাস করতেন। তিনি সেখানে গমন করলে,বৌদ্ধেরা তাঁর সঙ্গে বিচার করতে বসলেন।ত্রিমন্দ নগরের রাজা এই বিচারের মধ‍্যস্থ হলেন।তিনিও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।তর্কযুদ্ধে বৌদ্ধেরা বিচারে পরাস্ত হলেন।বৌদ্ধদের শীর্ষস্থানীয় রামগিরি ভক্তচূড়ামণি শ্রীচৈতন‍্যের বুদ্ধির প্রাখর্য‍্য ও অদ্ভুত ভক্তির লক্ষণ সব দেখে,মন্ত্রমুগ্ধের মত তাঁর চরণতলে বিলুন্ঠিত হয়ে কাতর অন্তরে বলতে লাগলেন, "নবীন সন্ন‍্যাসী" তোমাকে দেখে তো মানুষ বলে বোধ হচ্ছে না ; আমি ঘোর পাষন্ড, তোমাকে দেখে আজ আমার হৃদয় গলে গেল। আমি তোমারই সঙ্গে থাকব, প্রভো!তুমি আমায় মুক্তির পথ প্রদর্শন কর।*
*🍀গোবিন্দ দাস তাঁর কড়চায় লিখেছেন=*
*🌷তুমি ত মানুষ নহ নবীন সন্ন‍্যাসী।*
*🌷থাকিতে তোমার সহ বড় ভালবাসি।।*
*🌷পাষন্ডের শিরোমণি ছিলাম সংসারে।*
*🌷কৃপা করি ভক্তিমার্গ দেখাও আমারে।।*
*শ্রীচৈতন‍্যদেব বৌদ্ধাচার্য‍্যের ব‍্যাকুলতা দেখে আনন্দিত হয়ে তাঁকে মধুময় হরিনাম দান করলেন ; রামগিরি তাঁর নিকট হতে প্রাণপদ ভক্তিধর্মে দীক্ষিত হয়ে নবজীবন লাভ করলেন। তাঁর শুষ্ক হৃদয়ে ভক্তির অমৃতধারা বহিতে লাগল।ত্রিমন্দের সকলেই শ্রীচৈতন‍্যদেবের প্রচারিত ভক্তিমার্গের পক্ষপাতী হলেন, বৌদ্ধগুরু রামগিরির শিষ‍্যগণও তাঁদের গুরুর পথ অনুসরণ করলেন।*
*🌷পন্ডিতের শিরোমণি যত বৌদ্ধগণ।*
*🌷রামগিরি পথে সবে করিল গমন।।*
👌👌👌👌👌👌✋👌👌👌👌👌👌
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 অষ্টম 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/11/gouranga8.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৭৭)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
         *👣নানা তীর্থে ভ্রমণ 👣*
         👣👣👣👣👣👣👣👣
*🌻রামগিরি গৌরহরির অনুগত হলেন,ঢুন্ডিরাম নামক এক বিখ‍্যাত পন্ডিত তাঁর সঙ্গে বিচার করতে রত হলেন। গৌরহরি তার্কিকের চূড়ামণি হলেও জ্ঞানের অস্ত্রে অনেকেরই জ্ঞানগর্ব ছেদন করতে অগ্রসর হতেন না।ভক্তির স্নিগ্ধ ও মধুর ভাবে তিনি অহঙ্কারী জ্ঞানীদের জ্ঞানের গর্ব প্রশমিত করে তাঁদেরকে ভগবৎ প্রেমের বন্ধনে জড়িত করে ফেলতেন। ঢুন্ডিরাম মহাপ্রভুর সঙ্গে বিচারার্থী হলে, তিনি অতি বিনয়ের সঙ্গে বললেন, "তুমি সর্বশাস্ত্রে সুপন্ডিত" আমি অজ্ঞ সন্ন‍্যাসী,আমি তোমার সঙ্গে বিচার করতে সমর্থ হব না,আমি তোমার কাছে পরাভব স্বীকার করলাম বলে জয়পত্র লিখে দিচ্ছি। গৌরহরি এইসব কথা বলে তাঁর সঙ্গে বিচারে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে, ঢুন্ডিরাম এদিক ওদিক তাকাতে লাগলেন, এবং অবশেষে তাঁর চরণে লুন্ঠিত হয়ে পড়লেন।শ্রীচৈতন‍্যদেবের প্রেমের শক্তির প্রভাবে ঢুন্ডিরামের সব গর্ব খর্ব হয়ে গেল, ঢুন্ডিরাম বুঝতে পারলেন যে,ইনি মানুষ নন,মানুষরূপে ভগবান। তিনি নবজীবনের পথে নীত হয়ে মধুময় হরিনাম গ্রহণ করলেন।ঢুন্ডিরামের হৃদয় দ্রবীভূত হয়ে গেল, সর্বশাস্ত্রে সুপন্ডিত জ্ঞানগর্বিত ঢুন্ডিরাম সেই সময় হতে "হরিদাস" নামে অভিহিত হলেন।*
*পরদিন প্রভাতে গোবিন্দ দাসকে সঙ্গে নিয়ে,মহাপ্রভু সেখান হতে বেড়িয়ে পড়লেন। গোবিন্দ খড়ম করঙ্গ বহন করে সঙ্গে সঙ্গে চলতে লাগলেন।ভানু অস্ত গমন করলে তাঁরা বটেশ্বরে উপস্থিত হলেন, এবং ভক্তিভরে বটেশ্বর দর্শন করে সেদিন সেইখানে রাত্রি যাপন করলেন।*
*গোবিন্দ ভিক্ষা সংগ্রহের জন্য বাহির হলেন।ভিক্ষা করে যা পেয়েছিলেন, দুপুরবেলা মহাপ্রভু রন্ধনকার্য‍্য সমাধা করলেন। তারপরে আহারান্তে তাঁরা বসে বিশ্রাম করছেন,এমন সময়ে তত্রত‍্য (সেখানকার) কোন বিখ‍্যাত ধনী, এই নবাগত সন্ন‍্যাসীকে পরীক্ষা করবার জন্য দুইজন কুলটা নারী সঙ্গে নিয়ে সেখানে আগমন করলেন।ধনীর নাম তীর্থরাম।নারীদ্বয়ের নাম সত‍্যবাঈ ও লক্ষ্মীবাঈ।অসচ্চরিত্রা নারীদ্বয় মহাপ্রভুর কাছে এসে নানারকম অঙ্গভঙ্গী করে হাসতে হাসতে তাঁর সহিত কথা বলতে লাগল।তারা যখন দেখল,তাদের মন্দ অভিপ্রায় সিদ্ধ হওয়া সুদূরপরাহত (অসম্ভবপ্রায়), তখন সত‍্যবাঈ লোকসমক্ষে নারীর নিলজ্জতা প্রদর্শন যতদূর সম্ভব,তা করতে ত্রুটি করল না, অর্থ‍্যাৎ নারীর সম্মান নষ্ট করতে চেয়েছে এই প্রমাণ করতে চেষ্টা করল।সে নিজের বক্ষের বস্ত্রাঞ্চল কতক উন্মোচন করে মহাপ্রভুর চিত্তবিকারের চেষ্টা করল।সত‍্যবাঈ এরকম নিলজ্জতার কাজ করলে,মহাপ্রভু আর স্থির থাকতে পারলেন না, তখন তিনি তাকে "মা" বলে সম্বোধন করে বললেন, মা! আমাকে কেন অপরাধী করবার জন্য এরকম করছ!এই বলে মহাপ্রভু উর্দ্ধবাহু হয়ে নৃত্য করতে লাগলেন ; তাঁর মস্তকের জটাবন্ধন খুলে গেল ; শরীর রোমাঞ্চিত হ'ল, নয়নাশ্রুতে বক্ষ ভাসতে লাগিল।এইরকম পরীক্ষার অনলের মধ্যে কোন মানবসন্তান যে অবিকৃত হৃদয়ে থেকে ভগবানের মহিমা কীর্তন করতে পারেন,কুলটা নারীদ্বয় তা কখনও দেখেনি।তখন সত‍্যবাঈ মহাপ্রভুর শ্রীচরণে বিলুন্ঠিত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করল।অবশেষে উভয়েই সে জায়গা হতে পলায়ন করল। আড়াল থেকে তীর্থরাম সবই দেখলেন।তিনি কি আর স্থির থাকতে পারেন? তিনি তখনই গৌরহরির চরণে লুটিয়ে পড়লেন।মহাপ্রভু তখন বাহ‍্যজ্ঞানশূন‍্য হয়ে নৃত্য করছেন।সেই সময় তীর্থরাম শ্রীচৈতন‍্যের মুখে অনুপম স্বর্গীয় জ‍্যোতিঃ ও তাঁর মনের অমানুষিক শক্তি দেখে তীর্থরামের হৃদয় মন একেবারে পরিবর্তন হয়ে গেল। আর তীর্থরাম কাঁদতে লাগলেন, তীর্থরামকে ক্রন্দন করতে দেখে, মহাপ্রভু তাঁর হাত ধরে বললেন, "সংসারের বিষয় বিভব সকলই অতি অসার,এই যে দেহ ধারণ করেছ, এই দেহ-পিঞ্জর হতে প্রাণ-পাখী যখন উড়ে যাবে,তখন সেটি ভস্মসাৎ হবে, বা কাঠের আধার হবে,অথবা মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। চক্ষু বন্ধ হলে কেউ কারও নয়,সব আত্মীয়তাই চলে যাবে।তুমি ধন,মান,বসন,ভূষণ সব দূরে ফেলে দিয়ে,সেই একমাত্র সত‍্য ও নিত‍্য বস্তু শ্রীকৃষ্ণের আশ্রয় গ্রহণ কর। শ্রীচৈতন‍্যদেবের কথাগুলি যেন যাদুকরের মত তাঁর হৃদয়ে পরিবর্তন উপস্থিত করল।যে ব‍্যক্তি ঐশ্বর্যের অধিপতি হয়ে, মানবজীবনের উচ্চতর লক্ষ্যের প্রতি উদাসীন থেকে ইহলোকের খ‍্যাতি ও ধনৈশ্বর্য‍্যকে সর্বস্ব জ্ঞান করে জীবন ধারণ করছিলেন,যে ব‍্যক্তি অতি অল্পক্ষণ পূর্বেই,চঞ্চল ও নিলজ্জ যুবকের ন‍্যায় নারীদ্বয়কে সঙ্গে নিয়ে, মহাপ্রভুর সামনে এসে তাঁর ধর্ম নষ্ট করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন,তিনি এখন পুরোপুরি অন‍্য মানুষে পরিণত হয়েছেন।তীর্থরাম নিজের পত্নী ও আত্মীয়স্বজন হতে দূরে এসে দাঁড়আলেন। অগাধ সম্পত্তি মহাপ্রভুর কৃপা বলে তৃণবৎ মনে করে ঠেলে ফেললেন।চিক্কণ বসন পরিত‍্যাগ করে,কৌপীন ধারণ করে, হরিনামের তিলকে অঙ্গ আচ্ছাদিত করলেন।তাঁর গর্বিত মস্তক, ভক্তি ও বিনয়ে নত হল।তীর্থরাম হরিপ্রেমে বিভোর হয়ে নৃত্য করতে লাগলেন।*
*🌷তীর্থরাম তৃণ সম বিষয় ছাড়িয়া।*
*🌷হরি বলি নাচে দুই বাহু পসারিয়া।।*
🙌 🙌 🙌 🙌 🙌 🙌 🙌 🙌 🙌
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 অষ্টম 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/11/gouranga8.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৭৮)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
           *👥নানা তীর্থ ভ্রমণ👥*
         ▪▪▪▪▪▪▪▪
*🍀তীর্থরাম কৌপীন পরে সন্ন‍্যাস গ্রহণ করলেন।তাঁর সন্ন‍্যাস গ্রহণের কথা তাঁর বাড়ীতে সকলে জানতে পারল,তাঁর পরমাসুন্দরী পত্নী কমলকুমারী কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসিলেন।তাঁর রূপের আলোতে যেন চারিদিক আলোকিত হয়ে উঠিল।তীর্থরাম-পত্নী কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসিলে,তীর্থরাম কমলের হাত ধরে বললেন, "আমি নরক হতে পরিত্রাণ পেয়েছি, আমার সমস্ত বিষয় সম্পত্তি তুমিই ভোগ কর"।পতির মুখ হতে এই নিদারুণ কথা শুনে,কমলকুমারী ভূমিতে পড়ে গিয়ে ক্রন্দন করতে লাগলেন।তীর্থরাম তাঁর পত্নীকে অত‍্যন্ত অধীরা দেখে মায়াজাল ছিন্ন করবার জন্য তাঁকে হরিনাম গ্রহণ করতে বললেন।কমল দেখলেন, স্বামীকে ঘরে ফেরানোর চেষ্টা বৃথা, তখন নয়নের জলে বক্ষ ভাসাতে ভাসাতে গৃহে ফিরে গেলেন।তীর্থরাম সংসারের ধন মান ঐশ্বর্য‍্যে জলাঞ্জলি দিয়ে ধর্মধনে ধনী হয়ে পথ-ভিখারীর ন‍্যায় জীবন অতিবাহিত করতে লাগলেন।*
*🌷কাঁদিতে কাঁদিতে তবে কমলকুমারী।*
*🌷ফিরে গেল তীর্থ হলো পথের ভিখারী।।*
                               *(গোঃ দাস)*
*🍀তীর্থরামকে ভক্তি পথাবলম্বী করে,শ্রীচৈতন‍্য সাতদিন পরে বটেশ্বর গ্রাম ত‍্যাগ করলেন।যেতে যেতে তাঁদেরকে এক নিবিড় অরণ‍্য অতিক্রম করতে হল। মহাপ্রভু বিভুগান কীর্তন করতে করতে চলতে লাগলেন।তাঁর ভয় নাই,কোন চিন্তা নাই, কিন্তু গোবিন্দের প্রাণ সময়ে সময়ে ভয়ে আকুল হয়ে উঠিল। মহাপ্রভুর পেছনে যেতে যেতে তাঁর সব ভীতি ক্রমে বিদূরিত হয়ে গেল।দশক্রোশ ব‍্যাপী সেই নিবিড় অরণ‍্য অতিক্রম করে তাঁরা মুন্নানগরে উপস্থিত হলেন।শ্রীচৈতন‍্যদেব এক বৃক্ষতলে বসিলেন,পল্লীবাসী দুইজন গৃহস্থ তাঁর সেবার জন্য সমস্ত ব‍্যবস্থা করলেন।তারা মহাপ্রভুর মোহন মূর্তি দেখে অনিমিষ নয়নে তাকিয়ে রইল।এই নবীন সন্ন‍্যাসীর আগমনবার্তা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে,নগরের লোকেরা দলে দলে তাঁর দর্শন লালসায় সেখানে আগমন করে সেই দেবসদৃশ গৌরহরির চরণে ভক্তিভরে প্রণাম করতে লাগল ; এবং মহাপ্রভুকে অনেকেই বৃক্ষতল ছেড়ে নিজেদের বাসভবনে আতিথ‍্য গ্রহণের জন্য অনুরোধ করিল। কিন্তু তিনি তাদের সেই আশা পূর্ণ করতে পারলেন না।মহাপ্রভু ভগবৎ প্রেমে বিভোর হয়ে রয়েছেন। কিছুক্ষণ পরেই তিনি করতালি দিয়ে নৃত্য করতে লাগলেন।তাঁর ভাব-এ আগন্তুক লোকেরাও ভাবে বিভোর হয়ে উঠিল এবং গৌরহরির কন্ঠোত্থিতমধুর ধ্বনির সঙ্গে নিজেদের কন্ঠ মিলিয়ে হরিধ্বনি করতে করতে নৃত্য করতে লাগল।এইভাবে প্রায় অর্দ্ধরজনী কেটে গেল। মুন্নানগরে অন্তঃপুরের মধ্যে এই নবীন সন্ন‍্যাসীর আগমন বার্তা জানতে পেরেছিল, সেজন‍্য কুলবধূরা শ্রীগৌরাঙ্গকে দেখবার জন্য দলে দলে আসতে লাগল।দেখে সকলেই বিস্মিত।এমন সুন্দর যুবাপুরুষ সংসারের সকল সুখ বিসর্জন দিয়ে কৃচ্ছ্র সাধনে নিজের দেহকে শীর্ণ করে ফেলেছেন, এই ভেবে তাদের প্রাণ আকুল হয়ে উঠিল।তারা গৌরসুন্দরের মনোহর গঠন ও অনিন্দিত রূপমাধুরী, কঠোর বৈরাগ‍্যের নিষ্পীড়নে রুগ্ন ও মলিন হয়ে গিয়েছে,সেই বিষয়ে বলাবলি করতে লাগল।*
*🌷অবশেষে কুল হতে কুলবধূগণে।*
*🌷গৌরাঙ্গ দেখিতে আসি মিলে সেই স্থানে।।*
*🌷দেখিতে নয়ন মেলি গৌরাঙ্গসুন্দরে।*
*🌷নারীগণ যাইতে না পারে ফিরে ঘরে।।*
*🌷মুখ তাকাতাকি করি এ বলে উহারে।*
*🌷সন্ন‍্যাসী দেখিয়া প্রাণ আকু-বাকু করে।।*
*🌷এমন সুন্দর দিদি কভু দেখি নাই।*
*🌷ইহাকেই বলে সবে চৈতন‍্য গোঁসাই।।*
*🌷আহা মরি না খাইয়া অস্থিচর্মসার।*
*🌷এ বয়সে বাঁধিয়াছে কেন জটা-ভার।।*
*🌷এই কথা বলি যত মুন্নাবাসী নারী।*
*🌷কাঁদিয়া আকুল হলো চক্ষে বহে বারি।।*
*☘সেই দিনরাত্রি এইভাবেই কেটে গেল। পরদিন প্রভাতে মহাপ্রভু অন‍্য স্থানে যাবার জন্য উদ‍্যোগ করছেন, এমন সময়ে এক অন্নক্লিষ্টা, ছিন্নবস্ত্র পরিধেয়া বৃদ্ধা নারী গৌরহরির কাছে এসে ভিক্ষা প্রার্থনা করিল।বৃদ্ধাকে দেখে মহাপ্রভুর হৃদয় একেবারে আনন্দে ভরে উঠিল।তিনি সেই বৃদ্ধার বাসনা পূর্ণ করবার জন্য,মুন্নাবাসী নরনারীদের কাছে খাদ‍্য ও বস্ত্র প্রার্থনা করতে লাগলেন। যার চরণে লোকে কোন বস্তু উপহার প্রদান করতে পারলে নিজেকে কৃতার্থ মনে করে,আজ তিনি স্বয়ং ভিক্ষা প্রার্থনা করছেন, ইহা দেখে সকলে নানান খাদ‍্য সামগ্রী ও বস্ত্রাদি এনে তাঁর সামনে উপস্থিত করিল। এভাবে অনেক খাদ‍্যদ্রব‍্য ও পরিধেয় বস্ত্র সংগৃহীত হলে, শ্রীচৈতন‍্যদেব বৃদ্ধাকে সবগুলোই প্রদান করলেন।বৃদ্ধা কৃতজ্ঞ হৃদয়ে আশাতীত ফললাভে নিজেকে কৃতার্থ মনে করে দাতাকে হৃদয়ের সহিত ধন‍্যবাদ জ্ঞাপন করিল।মুন্নাবাসী তখন শ্রীচৈতন‍্যের ভিক্ষার অভিপ্রায় বুঝতে পেরে তাঁর প্রেমার্দ্র হৃদয়ের প্রত‍্যক্ষ নিদর্শন লাভ করল।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🌻🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 অষ্টম 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/11/gouranga8.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৭৯)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
                 *নানা তীর্থ ভ্রমণ*
               ••••••••••••••••••••••••••••••
*🍀বৃদ্ধার মনোবাঞ্জা পূর্ণ করে শ্রীচৈতন‍্যদেব সেই জায়গা হতে বাহির হলেন।গোবিন্দও তাঁর কৌপীন ও করঙ্গ নিয়ে সঙ্গে চললেন।মুন্নাবাসী বহুলোক শ্রীগৌরাঙ্গদেবের পশ্চাৎ অনুসরণ করিল। মহাপ্রভু একবারও পেছনদিকে না তাকিয়ে বিভুনাম কীর্তন করতে করতে অগ্রসর হতে লাগলেন। কিছুদূর গমন করে একে একে সকলেই আপন আপন গৃহাভিমুখে প্রত‍্যাগমন করিল।এক ব‍্যক্তি আর ফিরলেন না ; তাঁর নাম রামানন্দ স্বামী।শ্রীচৈতন‍্যকে দর্শন করে তাঁর সংসার বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায়।তিনি যেতে যেতে গোবিন্দকে বললেন, "মহাপ্রভুকে দেখে আমার মন প্রাণ তাঁর শ্রীচরণে সমর্পণ করেছি, তিনি যদি আমাকে শিষ‍্য না করেন, তাহলে আমি এ দেহ আর রাখব না। তাঁরা পথ চলতে চলতে বেঙ্কট নগরে উপস্থিত হলেন।সেখানে এক সুবিখ‍্যাত বৈদান্তিক পন্ডিত ছিলেন।নাম রামানন্দ।বৈদান্তিক অদ্বৈতবাদী রামানন্দ শ্রীচৈতন‍্যদেবের সহিত বিচার করবার জন্য বসিলে,তিনি প্রথমে নিজের অজ্ঞতা স্বীকার করে বিচারে রত হতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলেন ; কিন্তু রামানন্দ কিছুতেই ছাড়লেন না। গৌরহরি অগত‍্যা বিচারে রত হলেন।অদ্বৈতবাদ সম্বন্ধে উভয়ের মধ্যে ঘোরতর তর্ক বেধে গেল।বিচারে পন্ডিত রামানন্দ পরাস্ত হলেন।তাঁর জ্ঞানের গর্ব চূর্ণ হয়ে গেল।শ্রীচৈতন‍্যদেবের বুদ্ধির প্রখরতা ও ভগবৎ ভক্তির নিদর্শন পেয়ে রামানন্দ অদ্বৈতবাদের গন্ডী পরিত‍্যাগ করে ভক্তির পথ অনুসরণ করলেন।শ্রীচৈতন‍্যদেব তিনদিন বেঙ্কটনগরে থেকে, সকলকে প্রেমরসে মত্ত করে তুললেন।বৈদান্তিক রামানন্দের শিষ‍্যেরাও তাঁদের গুরুর পথ অনুসরণ করে ভক্তি পথাবলম্বী হলেন।*
*🍁পাপী-তাপীদের জন্য সর্বদাই গৌরসুন্দরের প্রাণ ক্রন্দন করত।নরনারীকে শান্তিময় ভক্তিপথে চালিত করাই তাঁর জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য।বেঙ্কট নগর পরিত‍্যাগ করবার সময় তিনি শুনলেন,সেখান হতে কিছু দূরে এক নিবিড় জঙ্গলের মধ্যে "পন্থভীল" নামে এক দস‍্যু বাস করে।মহাপ্রভু তার কথা শোনা মাত্র সেখানে যেতে উদ‍্যত হলে, সকলে পন্থভীলের ভীতিজনক স্বভাবের কথা বলল, সে নিজের সঙ্গীদের নিয়ে পথিকের সর্বস্ব লুঠ ও জীবন নাশ করে থাকে।তুমি সেখানে যেও না।পাপীর বন্ধু শ্রীগৌরাঙ্গদেব কারও কথায় কর্ণপাত না করে সেই অরণ‍্যের দিকে ধাবিত হলেন।তাঁর সহচর গোবিন্দও মহাপ্রভুর সাথী হলেন।এই নিবিড় জঙ্গলের নাম বগুলা।মহাপ্রভু বনে প্রবেশ করলে, পন্থ শ্রীচৈতন‍্যকে যথোচিত সম্মান প্রদর্শন করে বসতে বললেন। তিনি দস‍্যুপতির কাছে বসে বললেন, "তুমি সাধু পুরুষ, সংসারের সকল মায়া ও নারীসঙ্গ পরিত‍্যাগ করে নিজের বন্ধুদের সঙ্গে অতি সুখেই এই নির্জন বনের মধ্যে বাস করছ।আমি তোমাকে দেখবার জন্যই এখানে আগমন করেছি। পন্থ, গৌরসুন্দরের মনোহর মূর্তি ও এই সব মধুমাখা কথা শুনে মাথা নিচু করে রইল এবং কিছুক্ষণ পরে তাঁর চরণে লুন্ঠিত হয়ে কাঁদতে লাগল।গৌরহরি অমনি তাকে নিজ বক্ষে তুলে নিয়ে তার কর্ণকুহরে সেই পাপতাপহারী মধুর হরিনাম উচ্চারণ করতে লাগলেন।এই নবীন সন্ন‍্যাসীর কন্ঠনিঃসৃত সে নামের ধ্বনি যেন পন্থভীলের কানে সুধা বর্ষণ করতে লাগল।তার পাষাণসম প্রাণ দ্রবীভূত হল, সে নবজীবন লাভ করে,অন‍্য এক মানুষে পরিণত হল।পন্থভীল করতালি দিয়ে নৃত্য করতে করতে হরিনাম কীর্তন করতে লাগল।পন্থভীলের অভাবনীয় পরিবর্তন দেখে তার সহচরেরা অবাক হয়ে গেল এবং তারাও ঐ নামের শক্তিতে নব জীবন লাভ করে হরিনাম করতে করতে নৃত্য করতে লাগল।হরিনামের ধ্বনিতে নিস্তব্ধ নিবিড় জঙ্গল প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠিল।দস‍্যু অরণ‍্য যেন আনন্দ-কাননে পরিণত হল।গৌরহরি পন্থভীল ও তার সহচরদের উদ্ধার করে দ্বারে দ্বারে হরিনাম বিলাতে বিলাতে চলতে লাগলেন। গৌরহরিকে যে একবার দেখত,তারই চিত্ত তাঁর দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ত। মহাপ্রভু পথে যেতে যেতে এক বৃক্ষতলে আশ্রয় গ্রহণ করলেন। অনাহারে সেই বৃক্ষতলে তিনদিন কেটে গেল। শরীর শীর্ণ হয়ে পড়ল। কিন্তু তাঁর রসনা পবিত্র ভগবানের নামকীর্তনে বিরত হল না।তিনদিন পরে এক বৃদ্ধা নারী আটা ও দুগ্ধ নিয়ে এলেন।মহাপ্রভু ও গোবিন্দ দাস তাতেই ক্ষুধা নিবৃত্তি করে গারীশ্বর শিব দর্শন মানসে গমন করলেন।বৃক্ষতল হতে দেবমন্দির প্রায় তিনক্রোশ, তিনি সেই মন্দিরের কাছে উপস্থিত হলেন।মন্দিরটির কাছে একটি প্রকান্ড বিল্গবৃক্ষ ছিল। গোবিন্দ দাস বলেন,বৃক্ষটির শাখা প্রায় অর্ধক্রোশ ব‍্যাপিয়া রয়েছে। গৌরহরি সেই শত শত শাখা ও পত্রবিশিষ্ট বিল্ববৃক্ষ হতে পাতা তুলে ভক্তিভরে শিবকে অঞ্জলী দান করলেন।সেখানে দুইদিন থাকবার পর, শ্রীচৈতন‍্যদেব দেখলেন, এক সন্ন‍্যাসী পর্বত শিখর হতে নেমে মন্দিরে শিব আরাধনা করে পুনরায় পর্বতের উপরে চলে গেলেন।সন্ন‍্যাসী মৌনব্রতধারী।তাঁর জ‍্যোতিঃ যেন তাঁর ছায়া আলোকিত করছে।তাঁকে দেখে শ্রীচৈতন‍্যের হৃদয়ে কেমন এক ভাবের সঞ্চার হল।তাঁর দর্শন লালসায় তিনি পর্বতের দিকে ধাবিত হলেন।গোবিন্দও তাঁর পেছন পেছন চললেন।গিরিশিখরে বৃক্ষতলে সন্ন‍্যাসী চক্ষু নিমীলিত করে বসে আছেন।তিনি যথার্থ উদাসীন।শ্রীচৈতন‍্যদেব জোড়হস্তে সেখানে দাঁড়িয়ে যোগীবরের স্তব করতে লাগলেন।কিছুক্ষণ পরে তিনি চক্ষু উন্মীলন করে,তাঁর দিকে দৃষ্টিপাত করে হাসতে লাগলেন।গৌরহরি তাঁর কাছে গিয়ে বসলেন।সন্ন‍্যাসী আশ্রমে আগত অতিথিদের জন্য পরটা নামক কয়েকটি সুমিষ্ট ফল এনে তাঁদেরকে প্রদান করলেন।গোবিন্দদাস বলেন যে,পরটা খেয়ে তাঁর লালসা আরো বৃদ্ধি হয়ে উঠিল।মহাপ্রভু তা জানতে পেরে নিজের দুইটি ফল তাঁকে প্রদান করলেন।সন্ন‍্যাসী এটি দেখে পুনরায় আরো কয়েকটি ফল আনিয়ে মহাপ্রভুকে প্রদান করলেন।*
🌲🌳🌲🌳🌲🌳🌲🌳🌲🌳🌲🌳🌲
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 অষ্টম 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/11/gouranga8.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৮০)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
              *👣নানা তীর্থ ভ্রমণ👣*
           ☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
*🍀নিস্তব্দ নির্জন পর্বতের উপরে নির্ঝরাণী কুলু কুল রবে বহে যাচ্ছে।পল্লবাবৃত তরুরাজির মধ্যে বিহঙ্গকুল নিজের মনে গান করছে ; প্রকৃতির এই রমণীয় জায়গায় শ্রীচৈতন‍্যদেব কি স্থির হয়ে থাকতে পারেন,তাঁর প্রেমোচ্ছ্বাস উথলিয়ে উঠল।তিনি আনন্দে কীর্তন করতে করতে নৃত্য করতে লাগলেন।অবশেষে তিনি ভূতলে পড়ে গেলে,পাথরের আঘাতে মস্তক ফেটে রক্তধারায়তাঁর শ্রীবদন ভিজে গেল।এই অমানুষিক ভক্তিপ্রবণতা দেখে সন্ন‍্যাসীর হৃদয় দ্রবীভূত হল।তিনিও ভূতলে পড়ে ছটফট করতে লাগলেন।তাঁরও নয়নযুগলের বারিধারায় শুভ্র শ্মশ্রু সিক্ত হয়ে গেল। তিনি শ্রীচৈতন‍্যদেবের শ্রীচরণ ধরে বললেন, "তুমি তো মানব নহ,স্বয়ং ঈশ্বর "। কিন্তু চৈতন‍্যদেব এইরকম স্তুতিতে প্রীত না হয়ে কানে আঙ্গুল দিয়ে বললেন,সন্ন‍্যাসীবর! একথা মুখে আনিও না।*
*🌺তার পর মহাপ্রভু সেখান থেকে বিদায় নিয়ে ত্রিপদিনগরে গমন করে শ্রীরামচন্দ্রের মূর্তি দর্শন করতঃ ভিবে বিভোর হয়ে ধূলায় লুন্ঠিত হলেন। সেখানে মথুরা নামে এক পন্ডিত অনেক শিষ‍্যসহ বাস করতেন।তাঁরা সকলেই রাম-উপাসক ; রামাইত বলে পরিচিত। রামাইত সম্প্রদায়ের শীর্ষ স্থানীয় মথুরা পন্ডিত শ্রীচৈতন‍্যদেবের সঙ্গে বিচারার্থী হলে, তিনি অতি বিনয়ের সহিত বললেন, পন্ডিত! শুকনো বিচারে প্রয়োজন নাই ; ঈশ্বরতত্ত্ব,জীবতত্ত্ব,মায়াবাদ,ধর্মের সূক্ষ্মতত্ত্ব প্রভৃতি সুললিত ভাবে ব‍্যাখ‍্যা কর,শুনে আমাদের প্রাণ শীতল হোক। তুমি সুপ্রসিদ্ধ তার্কিক,আমি তোমার সঙ্গে বিচার করতে অক্ষম।এই বলে মহাপ্রভু আনন্দে উন্মত্তপ্রায় হয়ে দুই বাহু তুলে নৃত্য করতে লাগলেন।মথুরাপন্ডিত ও তাঁর শিষ‍্যগণ শ্রীচৈতন‍্যের মধ্যে এই দেবভাব দেখে তারাও সকলে হরিধ্বনি করে আনন্দে নৃত্য করতে লাগলেন।মহাপ্রভু রামোপাসকদেরকে নিজের মতাবলম্বী করে পাপানরসিংহ দর্শন মানসে ধাবিত হলেন।মথুরাপন্ডিত নিজের হৃদয়ের ভক্তি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মানসে শ্রীচৈতন‍্যদেবের পশ্চাৎ অনুগমন করলেন।কিন্তু কিছুদূর গমন করলে, মহাপ্রভু ঈষৎ হেসে তাঁকে নিজ আশ্রমে গমন করতে বললেন।চৈতন‍্যদেব পানানরসিংহ এসে নৃসিংহ মূর্তি দর্শন করে তাঁর স্তব করলেন।দেব পুরোহিত মাধবেন্দ্র ভুজা নবাগত নবীন সন্ন‍্যাসীর গলে তুলসীর মালা পরিয়ে দিলেন।শর্করার সরবতে নৃসিংহদেবের সেবা হয়ে থাকে।শ্রীচৈতন‍্যদেব ও গোবিন্দ সেই পানা প্রসাদ পেয়ে ভক্ষণ করলেন।এখানে লক্ষ্মীনারায়ণ দর্শন করে তাঁরা পক্ষগিরিতে পক্ষতীর্থ দর্শন করতে গমন করেন।পক্ষগিরির পাদদেশে ভদ্রানদী প্রবাহিতা হচ্ছে। গৌরসুন্দর সেই নদীতে স্নান করে,কিছু জলযোগান্তে এক বৃক্ষতলে শয়ন করলেন। রাত্রে বাঘ এসে বিকট চিৎকার করতে আরম্ভ করল।গোবিন্দদাস বাঘের শব্দে অত‍্যন্ত ভীত হয়ে পড়লেন।তিনি বলেন,গোরাচাঁদ বাঘের ভীষণ চিৎকারে কিছুমাত্র ভীত না হয়ে, আনন্দিত মনে হরিধ্বনি করতে লাগলেন।বাঘ লাফ দিয়ে জঙ্গলের মধ্যে পালিয়ে গেল।মহাপ্রভুর মুখবিনিঃসৃত হরিনামের এই অপূর্ব শক্তি দেখে গোবিন্দ বিস্ময়াবিষ্ট চিত্তে তাঁর পদধূলিমস্তকে গ্রহণ করলেন।*
*ভদ্রানদী হতে প্রায় পাঁচ ক্রোশ দূরে কালতীর্থে বরাহদেবের মূর্তি প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।গৌরহরি সেটি দর্শন করবার জন্য সেখানে গমন করলেন এবং নিষ্ঠা ও ভক্তিসহকারে বরাহদেবের অর্চনা করলেন। তীর্থের এক পান্ডা ফুলের মালা এনে তাঁর গলদেশে পরিয়ে দিলেন।মহাপ্রভু মালা পরবার পরে হতেই নয়ন হতে জলধারা বহিতে লাগল। তিনি সেখান হতে সন্ধিতীর্থে যাত্রা করলেন। নন্দা ও ভদ্রা নামে দুইটি নদীর জলরাশি মিলিত হয়ে সেখানে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি সেখানে স্নান করলেন।সেখানকার তীর্থস্বমীর নাম সদানন্দপুরী ; তিনি সুবিখ‍্যাত পন্ডিত বলে পরিচিত।শ্রীচৈতন‍্যদেব সেখানে গমন করলে,পন্ডিত সদানন্দপুরী তাঁর সঙ্গে অদ্বৈতবাদ সম্বন্ধে বিতন্ডা উপস্থিত করলেন। কিন্তু বিচারে পন্ডিত সদানন্দ নবদ্বীপের দিগ্বিজয়ী নিমাই পন্ডিতের কাছে পরাভূত হয়ে তাঁর চরণতলে লুটিয়ে পড়লেন।*
*🌷তুলিলা অদ্বৈতবাদ সদানন্দপুরী।*
*🌷এক তর্কে পুরীর ভাঙ্গির ভারিভুরি।।*
*🌷অবশেষে সদানন্দ আশ্চর্য‍্য হইয়া।*
*🌷ভক্তিভরে প্রভুপদে পোলো লোটাইয়া।।*
                           *(গোঃ দাস)*
*🌹শ্রীচৈতন‍্যদেব সদানন্দপুরীকে ভক্তিধর্মে দীক্ষিত করে,চাঁইপালা তীর্থে গমন করলেন।তথায় এক ভৈরবী বাস করতেন।তাঁর নাম সিদ্ধেশ্বরী।তাঁর তখন বয়স প্রায় একশ বৎসর। কিন্তু এই দীর্ঘ বয়সেও, তাঁর দেহের গঠন ও রূপলাবণ‍্য দেখে তাঁকে শতবর্ষীয়া নারী বলে বোধ হত না। তেজস্বিনী মহাতপা এক বিল্ববৃক্ষের তলে বসে,ভগবত আরাধনায় রত থেকে বহুদিন অতিবাহিত করেছিলেন।এই মহাতপার অনতিদূরে শৃগালী ভৈরবী নামে আর এক তাপসী নদীর কুলে বসে তপস‍্যা করতেন।শ্রীচৈতন‍্যদেব এই যোগিনীদেরকে দর্শন করে,কাবেরী নদীতটে গমন করে স্নান করলেন।অপরাহ্নে মহাপ্রভুর সঙ্গী গোবিন্দ ভিক্ষার জন্য বাহির হয়ে কিছু আটা সংগ্রহ করে আনিলে, গৌরসুন্দর ভিক্ষালব্ধ আটা নিয়ে রুটি তৈরী করলেন।গোবিন্দও মহাপ্রভুর প্রসাদ পেয়ে পরম আনন্দ লাভ করলেন।*
*🍀অতঃপর শ্রীচৈতন‍্যদেব সেখান হতে পরদিন প্রভাতে বাহির হয়ে,পথে হরিনাম বিলাতে বিলাতে চলতে লাগলেন, এবং নাগর নগরে এসে উপস্থিত হলেন।সেখানে শ্রীরাম লক্ষ্মণের মূর্তি দেখে, প্রেমভরে হরিগুণ কীর্তন করতে লাগলেন।তাঁর প্রেমানুরাগের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল, দশ ক্রোশ দূর হতে তাঁর দর্শন লালসায় লোকে নাগর নগরে আগমন করতে লাগল।বহু সংখ্যক ব‍্যক্তি মহাপ্রভুর রূপদর্শন ও প্রেমে আকৃষ্ট হল। কিন্তু তত্র‍ত‍্য (সেখানকার) এক ব্রাহ্মণ তাঁর বিরোধী হয়ে উঠিল।সে উগ্রমূর্তি ধারণ করে মহাপ্রভুর সামনে উপস্থিত হয়ে অতি তীব্রভাবে তাঁকে গালি দিতে লাগিল ; অবশেষে তাঁর কোমল অঙ্গে প্রহার করতে উদ‍্যত হলে, সমবেত জনমন্ডলী ব্রাহ্মণের এই অস‍ৎ ব‍্যবহারের জন্য সক্রোধে তাঁকে তিরস্কার করতে লাগল। কিন্তু প্রেমাবতার শ্রীচৈতন‍্যদেব এই সুযোগে প্রহার উদ‍্যত ব্রাহ্মণকে সংসারের অনিত‍্যতা বিষয়ে নানান উপদেশ প্রদান করে বললেন, আমাকে প্রহার কর, ক্ষতি নেই, কিন্তু একবার প্রাণভরে হরিনাম কর ; তোমার কাছে আমার এই প্রার্থনা। গোবিন্দদাস তাঁর কড়চায়=*
*🌷আমারে আঘাত কর তাতে দুঃখ নাই।*
*🌷প্রাণভরে হরি বল এই ভিক্ষা চাই।।*
*🌺শ্রীচৈতন‍্যদেবের অপূর্ব ভক্তি,বিনয় ও ধৈর্য্য দেখে ব্রাহ্মণের কঠোর হৃদয় কোমল হল।সে নিজের দুষ্কার্য‍্যের কথা মনে করে অনুতপ্ত হৃদয়ে মহাপ্রভুর চরণে লুটিয়ে পড়ল, এবং প্রাণভরে হরিনাম উচ্চারণ করতে করতে ভক্তের ন‍্যায় নৃত্য করতে লাগল। গৌরহরি ব্রাহ্মণকে উদ্ধার করে সেখান হতে তাঞ্জোরে গমন করলেন। সেখানে ধলেশ্বর নামে এক বিষ্ণুভক্ত ব্রাহ্মণ বাস করতেন।তাঁর বাড়ীর আঙ্গিনায় প্রকান্ড বকুল বৃক্ষতলে, অনেক বৈষ্ণব সন্ন‍্যাসী বাস করতেন।তাঁদের ধর্মনিষ্ঠা ও বৈরাগ‍্য দর্শন করলে, ঘোর সংসার আসক্ত বিষয়ীরও অন্তরে বৈরাগ‍্যের সঞ্চার হত।গৌরসুন্দর এ সব দেখে অনতিদূরবর্তী চন্ডালু নামক এক পর্বতে গমন করলেন।বৃক্ষলতাদি পরিবেষ্টিত এই গিরিগাত্রের বহু গহ্বরের মধ্যে অনেক সাধক,তপঃপরায়ণ ব‍্যক্তি ধ‍্যান স্তিমিত লোচনে পরমাত্মার ধ‍্যানে নিমগ্ন থাকতেন।মহাপ্রভু সে স্থান দর্শন করবার জন্য গমন করলে,সেখানকার ভট্ট নামে এক বিপ্র তাঁকে নিজ ভবনে নিয়ে গেলেন।ভট্টের ভক্তির ভাব দেখে মহাপ্রভু খুবই খুশী হলেন।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🪔🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🔜 ক্রমাগত 👉 

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

   ꧁👇 📖 সূচীপত্র ✍️ শ্রী জয়দেব দাঁ 📖 👇꧂



✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧


✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

   ✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️ 
নিবাস- বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ- বাঁশবাড়ী, থানা- ইংরেজ বাজার, জেলা- মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ, পিন কোড- ৭৩২১০১।

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

  *••••┉❀꧁👇🏠Home Page🏠👇꧂❀┅••••* 


✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

    *••••━❀꧁👇 📖 সূচীপত্র 📖 👇꧂❀┅••••* 



✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

     *••••━❀꧁👇📚 PDF গ্রন্থ 📚👇꧂❀┅••••* 


✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
    *••••┉━❀꧁ 🙏 রাধে রাধে 🙏 ꧂❀━┅••••* 
                   শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ
              হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।।
  *••••┉━❀꧁ 🙏 জয় জগন্নাথ 🙏 ꧂❀━┅••••*
              হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
              হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥
  *••••┉━❀꧁ 🙏 জয় রাধাকান্ত 🙏 ꧂ ❀━┅••••*
   🌷❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀🌷
   🏵️❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀🏵️
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧









শেষ ৩০ দিনের পোস্টের মধ্যে সর্বাধিক Viewer নিম্নে :-

শ্রীকৃষ্ণ লীলা 🙏 সূচীপত্র ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_74.html

শিবরাত্রি ব্রতকথা 🙏 ১০৮ নাম 🙏 মন্ত্র সমূহ 🙏 শিবরাত্রি ব্রত কি ভাবে পৃথিবীতে প্রচলিত হল❓শিবরাত্রি ব্রত পালনে কি ফল লাভ হয় ❓শিবরাত্রি ব্রত পালন কি সকলেই করতে পারেন ❓🙏 সকল ভক্ত 👣 চরণে 👣 অসংখ্যকোটি 🙏 প্রণাম 🙏শ্রী মৃন্ময় নন্দী 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/02/shib.html

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নৌকা গঠন তত্ব ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 https://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_22.html

🙇 রাধে রাধে 🙇 শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ 👏 হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।। 🙇 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/09/today.html

শ্রীঅম্বরীষ মহারাজের ছোট রানী 🙏 চারিযুগের ভক্তগাঁথা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/12/blog-post_97.html

মনোশিক্ষা 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 🙏 শ্রীযুক্ত প্রেমানন্দ দাস ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/jaydeb_14.html

বকরূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে চারটি প্রশ্ন করেছিলেন সেই প্রশ্নই বা কি? ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/05/blog-post_98.html

শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু 🥀 সংক্ষিপ্ত কথন 🙏 প্রথম ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/01/mohaprobhu-joydeb-dawn.html

*নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলং শুকমুখাদকমৃতদ্রবসংযুতম্।**পিবত ভাগবতং রসমালয়ং মুহুরহো রসিকা ভূবি ভাবুকাঃ।।*✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/09/blog-post_89.html

শ্রীআমলকী একাদশী ব্রতের মাহাত্ম‍্য কি ❓ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/ekadoshi.html