🚩🚩🚩🙇🙇🙇 রাধে রাধে 🙇🙇🙇🚩🚩🚩

শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 দশম ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/12/gouranga10.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🔙 পূর্ব লীলা 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 নবম ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 https://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/12/gouranga9.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 দশম ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/12/gouranga10.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 দশম ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/12/gouranga10.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৯১)🙏শ্রীগৌরিঙ্গের চরিতসুধা*
        *রথ উৎসব ও ভক্ত সম্মিলন*
       °°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
*🍀শ্রীচৈতন‍্যদেব মুরারি গুপ্তকে আলিঙ্গন করে সকলকে বললেন, ইনি রামভক্ত, আমি এঁকে কৃষ্ণনাম করতে বলি।ইনি আমার আজ্ঞা প্রতিপাল‍্য বলিয়া গৃহে গমন করলেন।পরদিন আমার কাছে এসে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, "রামকে হৃদয় হতে পরিত‍্যাগ করতে আমার প্রাণ যেন ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় "।আমি তাঁর এইকথা শুনে তাঁকে আলিঙ্গন করে বললাম,তোমার বিশ্বাস দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি,এরকম বিশ্বাসই প্রয়োজন। ভক্তগণ তাঁর প্রেমপূর্ণ কথা শুনে ও প্রীতি ও আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে গভীর ব‍্যথা নিয়ে বিদায় নিলেন।(শ্রীচৈতন‍্যদেবকে ছেড়ে যেতে হচ্ছে এই গভীর ব‍্যথা)।মহাপ্রভুও তাঁর স্নেহের পাত্রদেরকে বিদায় দিয়ে অশ্রু বিসর্জন করতে লাগলেন।পুরুষোত্তমে গদাধর পন্ডিত,জলেশ্বর,পুরীগোঁসাই, জগদানন্দ,স্বরূপদামোদর পন্ডিত,গোবিন্দ, কাশীশ্বর প্রভৃতি ভক্ত ও সেবকেরা তাঁর সঙ্গে বাস করতে লাগলেন। গৌড়ভক্তগণ স্বদেশে প্রত‍্যাগমন করলে, সার্বভৌম ভট্টাচার্য্য মহাপ্রভুর কাছে এসে তাঁকে একমাস কাল নিমন্ত্রণ গ্রহণ করবার জন্য অনুরোধ করলেন। শ্রীচৈতন‍্যদেব বললেন, সন্ন‍্যাসীর পক্ষে একমাস এককভাবে কোন গৃহস্থের বাড়ীতে ভিক্ষা গ্রহণ উচিত নয়,তাতে তার ধর্মহানিহবার সম্ভাবনা। ভট্টাচার্য্য তাঁকে কুড়ি দিনের জন্য তাঁর অনুরোধ রক্ষা করতে বললেন, গৌরহরি তাহাও যতীর কর্তব‍্য নয় বলে রাজি হলেন না। পনের দিনের জন্য সার্বভৌম অনুরোধ করলেন,তাঁর সে অনুরোধও রক্ষিত হল না।অবশেষে পাঁচ দিনের জন্য বলিলে,মহাপ্রভু আর আপত্তি না করে ভিক্ষা গ্রহণে স্বীকৃত হলেন। ভট্টাচার্য্য পুরীগোঁসাই প্রভৃতিকেও ভিন্ন ভিন্ন দিনে নিমন্ত্রণ করে একমাস পূর্ণ করলেন। সার্বভৌম বাড়ীতে এসে নিজের পত্নীকে শ্রীগৌরাঙ্গের জন্য নানান অন্ন ব‍্যঞ্জন রন্ধন করতে বললেন।বাসুদেব সার্বভৌম ভট্টাচার্যের ষাটি নামে এক কন‍্যা ছিল, এবং অমোঘ নামে তার স্বামী শ্বশুরালয়ে বাস করত। মহাপ্রভু যথাসময়ে ভট্টাচার্যের গৃহে উপস্থিত হলেন।বড় কলাপাতায় অন্ন রাখা হল, এবং তার উপরে পীতবর্ণ গব‍্যঘৃত দেওয়া হল।নানান প্রকার ব‍্যঞ্জন দুধ কলা ক্ষীর পাতার চারিদিকে সাজিয়ে দেওয়া হল। গৌরহরি প্র‍থমে এত অন্ন দেখে সে পাতায় বসতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে, সার্বভৌম বললেন, যা পার তাই খাও,অনুরুদ্ধ হয়ে, মহাপ্রভু ভোজনে বসিলেন। হঠাৎ সার্বভৌমের জামাতা অমোঘ,সবসময় তার মুখে সাধুনিন্দা ছাড়া ভাল কথা বলত না, গৌরহরি আহার করতে বসিলে, সে জানলা দিয়ে উঁকি মেরে বলল, এ সন্ন‍্যাসী তো দশজনের খাবার একাই খাচ্ছে। সার্বভৌম অমোঘের কথা শুনে হাতে লাঠি নিয়ে তাকে ধরতে গেলেন কিন্তু পারলেন না।গৌরহরি এই অবস্থা দেখে হাসতে লাগলেন। সার্বভৌম বাড়ীতে এসে বললেন,ষাটি বিধবা হোক, ইত্যাদি কথা বলে অমোঘের প্রতি ভয়ানক ক্রোধ প্রকাশ করতে লাগলেন।মহাপ্রভুর আহারের শেষে সার্বভৌম অতি বিনীতভাবে বললেন, তোমাকে নিমন্ত্রণ করে আজ তোমার মনে বড়ই কষ্ট দিলাম। মহাপ্রভু বললেন, অমোঘের কথায় আমার কোনই কষ্ট হয়নি, সে যথার্থ কথায় বলেছে। ভট্টাচার্য্য মনের দুঃখে সেদিন অনাহারেই দিন যাপন করেন।অমোঘ সে রাত্রে যেখানে থাকে সেখানে সে বিসূচিকা রোগে আক্রান্ত হয়। গোপীনাথাচার্য‍্য মহাপ্রভুকে এই সমাচার দিলে,তিনি তৎক্ষণাৎ অমোঘের শয‍্যাপার্শ্বে উপস্থিত হয়ে তাঁর সুকোমল হাত অমোঘের বক্ষে রাখে বললেন, এই মাৎসর্য‍্যরূপ চন্ডালকে স্থানদান করে কেন এ পবিত্র জায়গাকে অপবিত্র করছ?উঠ, ভক্তিভরে হরিনাম কর, অচিরে ভগবানের কৃপা লাভ করবে। সানুনিন্দুক অমোঘ শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্যদেবের সুকোমল হস্তস্পর্শে শারীরিক ও মানসিক ব‍্যাধি হতে মুক্তীলাভ করল। সে মহাপ্রভুর কথায় উঠে বসিল এবং তাঁর চরণ ধরে কাঁদতে কাঁতে ক্ষমা প্রার্থনা করল। সেই মুহূর্তে অমোঘ শ্রীচৈতন‍্যের মধুময় ভক্তিপথের পথিক হয়ে বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করে জীবন অতিবাহিত করতে লাগিল।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🌻🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 দশম ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/12/gouranga10.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৯২)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
*বৃন্দাবনযাত্রা ও গৌড়দর্শন এবং পুনরায় নীলাচলে প্রত‍্যাবর্তন*
☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
*🍀দেখতে দেখতে সন্ন‍্যাস গ্রহণের পর শ্রীচৈতন‍্যদেবের চার বৎসর কেটে গেল।দক্ষিণদেশ ভ্রমণ ও অন‍্যান‍্য স্থানে দুই বৎসর ও পুরুষোত্তমে অপরার্দ্ধ গত হল।শেষে দুই বৎসর বৃন্দাবনগমনের বাসনা প্রবল হয়ে উঠে, কিন্তু ভক্তবৃন্দগণ তাঁর বিচ্ছেদ অতীব কষ্টকর হবে বলে, তাঁর মনের বাসনা পূর্ণ হতে দেন নাই।তৃতীয় বৎসরে গৌড়ীয় ভক্তগণ পূর্বের ন‍্যায় রথযাত্রার সময় পুরুষোত্তমে আগমন করলেন।এবার মহাপ্রভুর দর্শন লালসায় অদ্বৈতাচার্য‍্যের পত্নী সীতাদেবী,শ্রীবাস পন্ডিতের পত্নী মালিনীদেবী ও শিবানন্দ সেন প্রভৃতির পত্নীরা আপন আপন স্বামীসহ নীলাচলে আগমন করেছেন।গৌড়ীয় ললনারা গৌরহরির জন্য নানারকম খাদ‍্যদ্রব‍্য সঙ্গে করে এনেছেন।তাঁরা দূর হতে মহাপ্রভুকে দর্শন করে ভক্তিভরে দন্ডবৎ প্রণাম করলেন ; শ্রীচৈতন‍্যদেবও তাঁদেরকে শুভাশীর্বাদ জ্ঞাপন করলেন। এবৎসরও পূর্ব বৎসরের ন‍্যায় গুন্ডিচা মার্জন,রথোৎসবে কীর্তন,পংক্তিতে প্রসাদান্ন ভোজন প্রভৃতিতে অতিবাহিত হল।রথোৎসব সম্পন্ন হলে,ভক্তগণ গৌরহরি সঙ্গে চারমাস যাপন করলেন।এই সময়ে অদ্বৈতাচার্য‍্যের বাসায়(পুরীতে সেখানে ছিলেন ) গৌরহরি অনেক সময় নিমন্ত্রিত হতেন।গৌড়বাসীরা এই চারমাস শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্যের সঙ্গে ধর্ম-প্রসঙ্গে ও কীর্তনানন্দে অতিবাহিত করেন ; এবং বিদায়কালে তাঁর আশীর্বাদ মস্তকে নিয়ে স্বদেশে প্রত‍্যাবর্তন করলেন।*
*🌺পঞ্চম বর্ষে গৌরাঙ্গপ্রভু বৃন্দাবন গমনের উদ্দেশ্য রামরায় ও সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যকে নিজের মনের কথাগুলি বললেন, তোমরা দুই বৎসরকাল আমাকে আজ-কাল করে এখানে রেখেছ, এখন খুশীমনে আমাকে বিদায় দাও ; শ্রীধাম বৃন্দাবন দর্শন করে আসি।গৌড়দেশে আমার আমার অত‍্যন্ত অন্তরের বস্তু রয়েছে,জননী ও জাহ্নবী।যাবার সময় গৌড়ে ইঁনাদের দর্শন করে যাব স্থির করেছি।তখন রামরায় ও সার্বভৌম ভাবলেন, নিজেদের সুখের জন্য মহাপ্রভুর সঙ্কল্পের পথে আর বিঘ্ন দেওয়া কর্তব‍্য নয়। তাঁরা উভয়ে পরামর্শ করে বললেন,এখন বর্ষাকাল, এ সময় বাহির হলে পথে অত‍্যন্ত কষ্ট হবে, আগামী বিজয়াদশমীর দিন বৃন্দাবন যাত্রা নির্দ্ধারণ করলে ভাল হয়।ভক্তবৎসল গৌরহরি তাঁদের পরামর্শ অনুসারে কয়েক মাস পরে বিজয়া দশমীর দিন সকালবেলা শ্রীজগন্নাথদেব দর্শন করে বৃন্দাবন যাত্রা করলেন।বহুভক্ত সঙ্গের সাথী হয়ে মহাপ্রভুর সঙ্গে গমন করতে লাগলেন।ভক্তদল ভবানীপুরে উপস্থিত হলে,বাণীনাথ প্রসাদান্ন নিয়ে ও রামানন্দ দোলায় করে সেখানে উপস্থিত হলেন।তার পরদিন তাঁরা ভুবনেশ্বর দর্শন করে কটকে উপধীত হলেন। এখানে স্বপ্নেশ্বর নামক জনৈক ব্রাহ্মণের অনুরোধে মহাপ্রভু তাঁর ভবনে ভিক্ষা গ্রহণ করে,আহারান্তে এক বকুল বৃক্ষের তলে আশ্রয় নিলেন।উৎকলাধিপতি রাজা প্রতাপরুদ্র ইতিপূর্বেই মহাপ্রভুর বৃন্দাবন-যাত্রার বিষয়,অবগত হয়েছিলেন ; বর্তমানে কটকে তাঁর আগমনবার্তা শুনে,তাড়াতাড়ি বকুলতলায় এসে শ্রীচৈতন‍্যদেবের শ্রীচরণে দন্ডবৎ প্রণাম করে,ভক্তি প্রণোদিত অন্তরে স্তুতি করতে লাগলেন। মহাপ্রভু তাঁর ব‍্যাকুলতা দেখে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে প্রেমভরে আলিঙ্গন করলেন।রাজকর্মচারীরাও প্রণাম করল। তারপর রাজা মহাপ্রভুর কাছ হতে বিদায় নিয়ে গমনপথের সবরকম সুব‍্যবস্থা করবার জন্য কর্মচারীদের আদেশ করলেন।রাজার আদেশে কর্মচারীগণ মহাপ্রভুর নদী পার হবার জন্য সমস্ত ব‍্যবস্থা করল।মহাপ্রভু সদলে নদী পার হবেন বলে তটে সুন্দর নৌকা রাখা হল।রাজা প্রতাপরুদ্র গৌরহরিকে নিরাপদে নিয়ে যাবার জন্য কয়েকজন লেঠেল সঙ্গে যেতে আদেশ করলেন, এবং রামরায়কেও সঙ্গে থাকতে বললেন। মহাপ্রভু সন্ধ‍্যার সময় যাত্রা করবেন শুনে উৎকলাধিপতি হাতীপিঠে পটমন্ডপাচ্ছাদিত করে রাজমহিষী ও পুরাঙ্গনাদেরকে নিয়ে মহাপ্রভুর যাত্রাপথে অপেক্ষা করতে লাগলেন ; সন্ধ‍্যা হলে ভক্তসকল যখন মহাপ্রভুকে নিয়ে গমন করতে লাগলেন,তখন রাজমহিষীগণ তাঁকে প্রণাম করলেন, এবং তাঁর ভক্তিপূর্ণ মূর্তিদর্শনে বিমোহিত হয়ে অশ্রু বিসর্জন করতে লাগলেন।প্রভু নদীতটে উপস্থিত হলে,অন‍্যান‍্য ভক্তদের মত গদাধর তাঁর সঙ্গে যেতে ইচ্ছে প্রকাশ করলে, তিনি তাঁকে সঙ্গে যেতে নিষেধ করে বললেন, তুমি আমার সঙ্গে গেলে গোপীনাথের সেবা হবে না।গদাধর পন্ডিত বললেন, তুমি যেখানেই থাক সেই নীলাচল, আর তোমার শ্রীচরণ দর্শনেই কোটি দেবসেবার ফল হয়ে থাকে। মহাপ্রভু তাঁকে বুঝিয়ে বললেন,দেবসেবা পরিত‍্যাগ করলে তোমার অপরাধ হবে আর তুমি নীলাচলে থাকলে আমি ভীষণ সুখী হব।এই বলে তিনি নৌকায় চড়িলেন।রায় রামানন্দ, মঙ্গরাজ,হরিচন্দন, রাজাদিষ্ট কর্মচারী ও পুরীগোঁসাই,স্বরূপদামোদর, জগদানন্দ,মুকুন্দ,গোবিন্দ, কাশীশ্বর, হরিদাস ঠাকুর, গোপীনাথাচার্য‍্য, পন্ডিত দামোদর মহাপ্রভুর সঙ্গে নৌকায় চড়িলেন।গদাধর পন্ডিত প্রভুর অনুমতি না পেয়ে মনে ব‍্যাথা পেয়ে নদীতটে চেতনাহীন হয়ে পড়লেন।প্রভুর বিদায়কালে সার্বভৌম কাছেই ছিলেন। যদিও গৌরাঙ্গ বিচ্ছেদে তাঁরও প্রাণ শোকাকুল হয়ে পড়েছিল,তথাপি গদাধর পন্ডিতের অবস্থা দেখে তিনি প্রবোধবাক‍্যে তাঁর মনে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন।অবশেষে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে নীলাচলে প্রত‍্যাগমন করলেন।*
👣👣👣👣👣👣👣👣👣👣👣👣👣
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 দশম ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/12/gouranga10.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৯৩)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
*বৃন্দাবনযাত্রা ও গৌড়দর্শন এবং মাঝপথ হতে নীলাচলে প্রত‍্যাবর্তন*
☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
*⚪আজ জ‍্যোৎস্নাময়ী রজনী ;চন্দ্রমার রজত কিরণে চারিদিক আলোকিত ; স্রোতস্বিনী বহে নৌকাটি পূণ‍্যাত্মাদেরকে নিয়ে পরপারে উপস্থিত হল।গৌরহরি সপার্ষদে চতুর্দ্বার নামক স্থানে রাত্রি যাপন করলেন।রাজার আজ্ঞায় সব জায়গায়ই রাজকর্মচারীরা তাঁদের পরিচর্য‍্যায় নিজেদের যতটুকু করা কর্তব‍্য তাইই করেছিল।তাঁরা যেখানেই গিয়েছন সেখানেই চরম সম্মান পেতে লাগলেন।কেবল রাজ আজ্ঞায় নহে, শ্রীচৈতন‍্যদেবের দর্শন ও সেবাতে লোকে নিজেদের জন্ম সার্থক হল মনে করতে লাগলেন।পরদিন সকালে চতুর্দ্বারে বাণীনাথের পাঠানো প্রসাদান্ন উপস্থিত হল।সকলে স্নানান্তে চরম আনন্দ সহকারে ভোজন করে পুনরায় চলতে লাগলেন। ক্রমে তাঁরা যাজপুরে উপস্থিত হলেন,যে দুইজন রাজকর্মচারী তাঁর সঙ্গে আগমন করছিলেন,মহাপ্রভু তাদেরকে বিদায় দিলেন।যাজপুর হতে তাঁরা রেমুনায় উপস্থিত হলেন।মহাপ্রভু এখান হতে রামরায়কে বিদায় করলেন।এ পর্যন্ত তিনি রামানন্দের সঙ্গে কৃষ্ণকথা প্রসঙ্গে সময় অতিবাহিত করছিলেন।বিদায়কালে রামরায়ের মন ভীষণ কষ্ট পেতে লাগল।তাঁর নয়ন দিয়ে অবিরল বারিধারা বহিতে লাগল। তিনি বিচ্ছেদ-যন্ত্রণা সহ‍্য করতে না পেরে মূর্ছিত হয়ে পড়লেন। করুণাময় গৌরহরি রামরায়কে কোলে তুলে নিয়ে ক্রন্দন করতে লাগলেন। তারপর সেখান হতে ক্রমে সকলে উৎকল রাজ‍্যের সীমান্ত প্রদেশে এসে পৌঁছলেন।এখানে উৎকলাধিপতির জনৈক কর্মচারী শ্রীচৈতন‍্যদেবের প্রতি যথোচিত ভক্তি প্রদর্শন করে তাঁদের থাকবার ব‍্যবস্থা ও সেবার আয়োজন করে দিলেন।রাজকর্মচারী মহাপ্রভুকে বললেন, এটিই উৎকল রাজার সীমান্ত প্রদেশ ; নিকটবর্তী পিছিলদা নদীর পরপার হতে মদ‍্যপ যবন রাজার আধিপত‍্য।আপনারা এখানে দিনকয়েক অপেক্ষা করুন।মুসলমান অধিপতির সঙ্গে একটা সন্ধি করে নেয়।তারপর আপনাদেরকে পিছিলদা পার করাইয়ে দিব।পরপারে যাত্রীদের বিচরণ নিরাপদ নয়।ইতিমধ‍্যে মদ‍্যপের এক হিন্দু চর ছদ্মবেশে মহাপ্রভুর দর্শনার্থে আগমন করে।সে চৈতন‍্য মহাপ্রভুর অসাধারণ ঈশ্বরানুরাগ ও তাঁর সঙ্গীদের জীবনের অনুপম সৌন্দর্য্য দেখে বিস্মিত হয়ে রাজার হয়ে রাজার কাছে গিয়ে সে সকলের উল্লেখ করতে করতে যেন আত্মহারা হয়ে পড়ল এবং কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে প্রেমোন্মত্ত বৈষ্ণবের মত নৃত্য করতে লাগল।এরকম শক্তি যিনি মানবের অন্তরে সঞ্চার করাইতে পারেন,তিনি নরলোকের অতীত।এই কথা শুনে মনের বিশ্বাসে মদ‍্যপরাজ শ্রীচৈতন‍্যের দর্শন-লালসায় ব‍্যাকুল হয়ে তাঁর কাছে একজন কর্মচারী পাঠিয়ে দিলেন।যবনরাজ আপন কর্মচারীকে এই উপলক্ষ্যে উৎকলের সঙ্গে সন্ধি স্থাপিত হবে বলে উৎকল-সীমান্ত-রাজকর্মচারী মহাপাত্রকে জ্ঞাপন করলেন। মদ‍্যপরাজার পাঠানো লোক এসে শ্রীচৈতন‍্য-চরণে প্রণাম করে যবনরাজের দর্শনের ইচ্ছা বলল।মহাপাত্র মদ‍্যপরাজার লোককে যথোচিত সম্মান করে বললেন,যবনরাজ নিরস্ত্র চার পাঁচজন লোক সঙ্গে নিয়ে মহাপ্রভুকে দেখতে এখানে আসতে পারেন।মদ‍্যপ কর্মচারী যবনরাজের সন্ধি স্থাপনের বাসনাও জানাল।যবনরাজ দূতমুখে মহাপাত্রের সম্মতি জেনে শ্রীচৈতন‍্যকে দেখবার জন্য বেরোলেন এবং অনেক দূর হতে তাঁকে দন্ডবৎ প্রণাম করলেন।মহাপাত্র আগন্তুককে অভ‍্যর্থনা করে আনয়ন করলেন।যবনরাজ মহাপ্রভুর কাছে এসে বললেন, আমি যদি যবনকুলে জন্মগ্রহণ না করে হিন্দু হতাম তাহলে আমি তোমার পবিত্র শ্রীচরণে স্থান পেতাম।গৌরহরি তার হৃদয়ের ব‍্যাকুলতা দেখে পরম আনন্দিত হয়ে তাকে কৃষ্ণনাম গ্রহণ করতে বললেন।যবনরাজ মহাপ্রভুর কৃপায় মুগ্ধ হয়ে বললেন,যদি আমার পরিত্রাণের জন্য কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষিত করলে,তাহলে আমাকে কৃপা করে তোমার সেবার অধিকারী কর।আমি বৈষ্ণব-নিন্দা প্রভৃতি অনেক অপরাধে এ জীবন কলঙ্কিত করেছি ; এমন সময় মুকুন্দ দত্ত মুসলমান অধিপতিকে বললেন, মহাপ্রভুর গঙ্গা-পথে যাবার যদি ব‍্যবস্থা করে দেন তাহলেই এ সময় বিশেষ উপকার করা হয়।তাঁর পক্ষে শ্রীচৈতন‍্যেদেবের জন্য এই উপকার অকিঞ্চিৎকর মনে করে মদ‍্যপরাজ তৎক্ষণাৎ মুকুন্দের প্রস্তাবে রাজি হয়ে সেদিন মহাপ্রভুর চরণে প্রণত হয়ে বিদায় নিলেন।পরদিন যবনরাজ মহাপ্রভুর যাবার জন্য একটি সুন্দর সুসজ্জিত বড় নৌকা পাঠিয়ে দিলেন।*
*🍀সেইসময়ে স্থলপথ ও জলপথ দস‍্যুদের অত‍্যাচার ছিল। এ জন্য ভক্তদের রক্ষার জন্য সৈন‍্যপূর্ণ আরো দশটি নৌকা সঙ্গে নিয়ে যবনরাজ স্বয়ং ভক্তগণের সঙ্গে গমন করতে লাগলেন। শ্রীগৌরাঙ্গের নৌকা অবশেষে নদ নদী ও বঙ্গোপসাগর অতিক্রম করে পানিহাটী গ্রামে উপস্থিত হল।শ্রীচৈতন‍্যপ্রভুর আগমনবার্তা চারিদিকে প্রচারিত হয়ে পড়ল।পথে এত লোক হয়েছিল যে,রাঘব পন্ডিত লোকের ভিড় ঠেলে অতিকষ্টে তাঁকে নিজ ভবনে নিয়ে আসিলেন।সেখানে একদিন থাকবার পর তিনি কুমারহট্ট শ্রীবাসের গৃহে অবস্থান করে অবশেষে বাচস্পতির গৃহে আতিথ‍্য গ্রহণ করলেন।মহাপ্রভুকে দেখবার জন্য সেখানে বহুলোকের সমাগম হতে লাগল।*
*🌺এত লোকজনের ভিড় দেখে মহাপ্রভু গোপনে বাচস্পতির গৃহ হতে অন‍্যত্র চলে যান।কিন্তু যাঁকে দেখবার জন্য হাজার হাজার লোক ব‍্যাকুল হয়ে উঠেছে,বাচস্পতি গৃহে তাঁকে দেখতে না পেয়ে, অনেকেই বাচস্পতিকে দোষারোপ করে বলতে লাগল যে,তিনি গৌরসুন্দরকে লুকিয়ে রেখেছেন। গৌরহরি কোথায় গেছেন তা বাচস্পতি জানেন না। একদিকে লোকের গঞ্জনা, অন‍্যদিকে মহাপ্রভু বিরহের কষ্ট,এইসবে তাঁর চিত্ত অস্থির হয়ে পড়ল।তাঁর নয়ন দিয়ে বারিধারা বহিতে লাগল। অল্প সময়ের মধ্যে প্রচারিত হয়ে পড়ল যে, গৌরহরি কুলিয়াগ্রামে মাধবদাসের বাড়িতে রয়েছেন।মহাপ্রভু কুলিয়ায় এক সপ্তাহ বাস করেন।এই কয়েকদিন গৌরচন্দ্রের দর্শন অভিলাষী হয়ে হাজার হাজার লোক গ্রাম গ্রামান্তর হতে কুলিয়ায় আসতে লাগল।*
🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 দশম ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/12/gouranga10.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৯৪)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
*বৃন্দাবনযাত্রা ও গৌড়দর্শন ও মাঝপথ হতে নীলাচলে প্রত‍্যাবর্তন*
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆
*🍁লোকের পারাপারের জন্য নদীবক্ষে বহু নৌকা রাখা হল।কিন্তু জনগণ এত বেশী হয়ে পড়ল যে,বহুসংখ‍্যক নৌকা হওয়া সত্ত্বেও তাতে তাদের জায়গা হল না। অনেক লোক কলস প্রভৃতির সাহায্যে নদী পার হতে লাগল।গ্রামের পথে আর যেন জায়গা নেই, অনেকে গাছের উপর উঠে একবার নবদ্বীপচন্দ্র গৌরসুন্দরকে দেখে নয়ন সার্থক করতে লাগল।নানা জায়গায় মহোৎসবের মত মেলা বসে গেল।*
*🌺মহাপ্রভু তারপর সকলকে নিয়ে শান্তিপুরে অদ্বৈতাচার্য‍্যের ভবনে গমন করলেন।আচার্য‍্য শচীদেবীকে নিজ ভবনে আনয়ন করেন।তিনি আচার্য‍্য ভবনে এসে পুত্রের চাঁদবদন দর্শন করে আনন্দলাভ করলেন।নবদ্বীপ হতে বহু সংখ্যক লোক আচার্য‍্য ভবনে আসেন। গৌরহরি দশদিন আচার্য‍্যভবনে ছিলেন।এই দশদিন যেন তাঁর ভবনে এক মহোৎসব হয়েছিল মহাপ্রভুকে কেন্দ্র করে। সেখানে শচীমা স্বহস্তে রন্ধন করে নিমাইকে ও তাঁর ভক্তগণকে ভোজন করিয়ে পরম আনন্দ লাভ করতে লাগলেন।এখানে ধনশালী গোবর্দ্ধন দাসের পুত্র রঘুনাথ দাস আগমন করতঃ মহাপ্রভুর দর্শনলাভে চরিতার্থ হন।*
*🌺গৌরসুন্দর তারপরে বঙ্গের রাজধানী গৌড়ের নিকটবর্তী রামকেলিগ্রামে আগমন করেন।হোসেন শাহ তখন গৌড়ের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত।গৌরহরি যেখানেই যেতেন সেইখানেই বহু বহুলোকের সমাগম হত।রাজনানীর নিকটবর্তী রামকেলিগ্রামে তিনি উপস্থিত হলে গৌড়াধিপতি মহাপ্রভুর আগমনবার্তা ও তাঁর প্রচারপ্রণালীর বিষয় শুনে, তাঁর জনৈক কর্মচারীকে মহাপ্রভুর প্রভাব সম্বন্ধে বলেন, আমি অর্থ ব‍্যয় করেও আমার কর্মচারীদের এমন আনুগত‍্য লাভ করতে সমর্থ হই না। আর শত শত লোক বিনা অর্থে এ ব‍্যক্তির আদেশ পালন ও পরিচর্য‍্যা করে নিজেদের জীবন সফল হল বলে মনে করছে।* *মুসলমান উপাধিধারী "বীরখাস বা সাকরমল্লিক" ও "দবিরখাস" নামে গৌড়াধিপতির দুইজন কর্মচারী ছিলেন,তাঁরা পরমভক্ত ও ধর্মানুরাগী এবং পন্ডিত ছিলেন।অনেক দিন হতে শ্রীচৈতন‍্যের প্রতি অনুরাগী হয়ে ভক্তির পথ অবলম্বন করেছিলেন।তাঁরা ভাবলেন, মুসলমানধিপতিকে বিশ্বাস নাই। হয়ত কোন সময় বিপদ ঘটাতে পারে।তাঁরা এইজন‍্য গৌরহরিকে রামকেলি হতে অন‍্যত্র গমন করবার জন্য বললেন।*
*🍀শ্রীচৈতন‍্যের ভক্তবৃন্দের মধ্যে যাঁরা চরম ভগবৎপ্রেম,বিভিন্ন শাস্ত্র অধ‍্যয়ন ও বৈরাগ‍্যের অত‍্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রদর্শন করে গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে শ্রীরূপ-সনাতনের নাম চিরদিনই উজ্জ্বলবর্ণে চিত্রিত থাকবে। যজুর্বেদীয় ব্রাহ্মণবংশে কর্ণাটরাজ সর্বজ্ঞ জন্মগ্রহণ করেন।দেহান্তের সময় তিনি তাঁর পুত্র অনিরুদ্ধের হাতে রাজ‍্যভার অর্পণ করে যান।অনিরুদ্ধের দুই পত্নীর গর্ভে রূপেশ্বর ও হরিহর দুই সহোদর জন্মগ্রহণ করেন। রূপেশ্বর কনিষ্ঠ ভাই হরিহর কর্তৃক রাজ‍্যচ‍্যুত হয়ে মা ও পত্নীসহ পৌরস্ত দেশে আসিয়া বাস করেন। এখানে তাঁর একটি পুত্র জন্মগ্রহণ করে।তাঁর নাম পদ্মনাভ। পদ্মনাভ বড় হয়ে,গঙ্গাতীরে বাস করবার জন্য নবহট্ট (নৈহাটি) গ্রামে এসে বাসগৃহ নির্মাণ করেন।পদ্মনাভ ধর্মপরায়ণ ছিলেন, এইজন‍্য যাগযজ্ঞ অনুষ্ঠানে পরমানন্দেই সময় অতিবাহিত করতেন।ইঁনার ১৮ কন‍্যা ও পাঁচ পুত্র জন্মগ্রহণ করেন।এই পঞ্চপুত্রের সর্বকনিষ্ঠের নাম মুকুন্দ।মুকুন্দের পুত্র কুমারদেব। ইঁনি অতি ধীর ও ধর্মাত্মা ব‍্যক্তি ছিলেন।*
*হিন্দুসমাজের উৎকট জাত‍্যভিমানের(আভিজাত‍্যের জন্য অর্থ‍্যাৎ উচু বংশে জন্মের জন্য কুলগর্ব)জন‍্য কুমারদেব যবন দেখলেই ধর্মনষ্ট হল বলে তারজন‍্য প্রায়শ্চিত্ত করতেন। কিন্তু জানা যায় না কেন, ইনি গ্রামের আত্মীয়স্বজনের অপ্রিয় ব‍্যবহারে উত‍্যক্ত হয়ে বাখরগঞ্জে এসে বাস করেন, এবং যশোহরের মধ্যে ফতোয়াবাদে গৃহ নির্মাণ করেন। এই জায়গায় শ্রীরূপ-সনাতন জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সনাতন জ‍্যেষ্ঠ রূপ মধ‍্যম,বল্লভ বা অনুপম নামে আরেক ভাই ছিলেন তিনি কনিষ্ঠ।শ্রীরূপ সনাতন বাল‍্যকালে সংস্কৃতভাষায় বিশেষ ব‍্যুৎপত্তিলাভ করেছিলেন। সনাতন সার্বভৌম ভট্টাচার্য্যের সহোদর বিদ‍্যাবাচস্পতির কাছে যথানিয়মে শ্রুতি,স্মৃতি,দর্শন প্রভৃতি অধ‍্যয়ন করেছিলেন। তিনি তাঁর কোন গ্রন্থে শিক্ষাগুরুর নাম উল্লেখ করে গিয়েছেন। শ্রীরূপ-সনাতন যেমন সুপন্ডিত তেমনি ধর্মানুরাগী ছিলেন।ইঁনাদের বুদ্ধিও প্রখর ছিল। সেইসময় হোসেন শাহ বঙ্গের রাজধানী গৌড়ের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন।গৌড়েশ্বর শ্রীরূপ-সনাতনের পান্ডিত‍্য ও বুদ্ধিমত্তার কথা শুনে সনাতনকে সচিবের ও রূপকে রাজ‍্যের উচ্চতর পদে অধিষ্ঠিত করেন।ভ্রাতৃদ্বয় মুসলমান রাজসরকারে কাজ করতে ইচ্ছুক  ছিলেন না, কিন্তু তাঁদের প্রতি কোন উৎপীড়ন হয়, এই ভয়ে কর্মে যুক্ত হতে বাধ‍্য হন। অল্পকাল মধ্যে গৌড়েশ্বর দুইভাইয়ের কার্যদক্ষতা দেখে ভীষণ সন্তুষ্ট হয়ে তাঁদেরকে স্বল্প করে অনেক জমিদারী দান করেন।তাঁরা গৌড়ের কাছে রামকেলিগ্রামে নেজেদের বাসভবন নির্মাণ করেছিলেন।অতুল ঐশ্বর্যের অধিকারী হয়ে,তাঁরা পন্ডিত ও সাধুদের সঙ্গে জ্ঞান ও ধর্মচর্চায় অনেক সময় অতিবাহিত করতেন।*
*শ্রীরূপ-সনাতন বাড়ীর সম্মুখে কদম্ববৃক্ষ-পরিবেষ্টিত শ‍্যাম ও রাধাকুন্ড নামে দুইটি জলাশয় খনন করে সেই খানে বসে হরির ধ‍্যান ও কীর্তনে রত হতেন।শ্রীসনাতন রাজমন্ত্রীর পদে থেকেও রাজ‍্যের সমস্ত ভার মাথায় নিয়েও "হংসদূত" ও "পদাবলী" নামক দুইখানি সংস্কৃত গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।যেসময় শ্রীচৈতন‍্যদেব হরিনামের মধুর কীর্তনে বঙ্গের নানাজায়গায় লোকদেরকে মাতোয়ারা করে তুলেছিলেন, ভক্তির সুধারসে শুকনো কঠোর বৈদান্তিকদের হৃদয় অভিষিক্ত করে তাঁদেরকে ভক্তিপথাবলম্বী করেছেন। সেসময় শ্রীচৈতন‍্যচন্দ্রের পবিত্র সঙ্গ লাভ করবার জন্য রূপসনাতনের চিত্ত ব‍্যাকুল হয়ে উঠে ; কিন্তু রাজকার্য‍্যের গুরুতর ভারে লিপ্ত থাকায় তা পূর্ণ হওয়া সম্ভব নয় মনে করে,তাঁরা হৃদয়ের পিপাসা নিবারণের জন্য অতি দীনভাবে তাঁর কাছে পত্র লিখতেন।মহাপ্রভু তাঁদের ব‍্যাকুলতা দেখে বিমুগ্ধ হয়ে পত্রদ্বারা এই শ্লোক লিখে পাঠিয়েছিলেন।*
*🌷পরব‍্যসনিনী নারী ব‍্যগ্রাপি গৃহকর্মসু।*
*🌷✋তমেবা স্বাদয়ত‍্যন্তর্নবসঙ্গরসায়নম্।।*
*🌺কোন কুলনারী অন‍্য পুরুষে আসক্তা হয়ে গৃহকর্মে রতা থেকেও যেমন অন্তরের ভিতর প্রেমরস আস্বাদন করে থাকেন,তদ্রূপ কার্য‍্যের মধ্যে লিপ্ত থেকেও সেই ভগবানের মধুর রসে সতত চিত্তকে নিমগ্ন রাখবে।ধর্মানুরাগী দুইভাই শ্রীচৈতন‍্যের উপদেশ অনুসারেই বিষয়ের মধ্যে থেকেও হরিপ্রেমানুরাগী হয়েই বাস করতেন।*
*🌳শ্রীচৈতন‍্যদেব বৃন্দাবন যাত্রাকালে যখন রামকেলি 🌹মালদহ হতে প্রায় ৮/৯ ক্রোশ দূরে অবস্থিত।সনাতন গোস্বামী খোদিত সনাতনসাগর ও রূপ গোস্বামী খোদিত রূপসাগর আজও উক্ত গ্রামে এই ভক্তদ্বয়ের স্মৃতিচিহ্ন রক্ষা করছে।এখানে প্রতি বৎসর জ‍্যৈষ্ঠ মাসের সংক্রান্তিতে বৈষ্ণবভক্তগণের বিশাল মিলনমেলা শুরু হয়।*
*🍀তখন শ্রীরূপ-সনাতন তাঁর দর্শন অভিলাষী হয়ে,গভীর রাত্রিতে দীনবেশে হরিদাস ও নিত‍্যানন্দের সামনে উপস্থিত হলেন।গৌরহরি ভক্তদ্বয়কে দেখে পুলকিত অন্তরে তাঁদেরকে আলিঙ্গন করলেন।শ্রীরূপ সনাতন অতি দীনভাবে কাঁদতে কাঁদতে শ্রীচৈতন‍্য চরণে দন্ডবৎ ও প্রণাম করে বললেন, আমরা অতি হীন,মহাপাপী,বিষয় কূপে ডুবে রয়েছি।কিভাবে পরিত্রাণ লাভ করব, তার উপায় বলে দিন। শ্রীচৈতন‍্য তাঁদের প্রার্থনায় মুগ্ধ হয়ে বললেন, শীঘ্রই কৃষ্ণ তোমাদের বন্ধন মোচন করবেন। তোমরা এখন যেমত কর্মে রত আছ, সেরকম ভাবেই থাক।অবশেষে গৌরহরি তাঁদের সম্বোধন করে বললেন, অদ‍্য হতে যাবনিক নামের পরিবর্তে তোমাদের নাম হল শ্রীরূপ ও শ্রীসনাতন।সকলেই এই নামে এঁদেরকে সম্বোধন করবে।দবিরখাস ও সাকরমল্লিকের প্রতি কৃপা-আশীর্বাদ ও তাঁদের নতুন নামকরণে সকলের হৃদয় আনন্দে ভরে গেল।তাঁরা হরিধ্বনিতে নিস্তব্ধ নৈশগগন বিকম্পিত করে তুললেন। বিদায় নিবার সময় সনাতন বললেন, প্রভো! যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের উদ্ধার করুন। পরদিন প্রভাতে মহাপ্রভু কানাইয়ের নাটশালায় আগমন করলেন।🌹কানাইয়ের নাটশালা, গৌড়ের নিকটে রাজমহল হতে তিন ক্রোশ দূরে।*
*🍁মহাপ্রভু যেখানেই যান সেইখানেই প্রবল জনস্রোত তাঁর অনুগমন করে। বৃন্দাবনের পথে যেতে যেতে কি যেন মনে হল মহাপ্রভুর, তিনি কি যেন মনে ভাবলেন এবং নীলাদ্রি যাবেন বলে মনোস্থির করে, পুনঃ কি যেন চিন্তা হল! তিনি পুনরায় শান্তিপুরে অদ্বৈতাচার্য‍্যের ভবনে গমন করলেন। সেখানে শচীমাকে পুনঃ আনা হয় এবং শচীমা স্বয়ং রন্ধনাদি করে সকলকে আহার করান।মহাপ্রভু এখানে দশদিন থেকে ভক্তসঙ্গে কীর্তন করে নীলাচলাভিমুখে প্রত‍্যাগমন করেন। মহাপ্রভু নীলাচল পথে যেতে যেতে বরাহনগর নামে কোন গ্রামে উপস্থিত হন।সেই গ্রামে এক ব্রাহ্মণ বাস করতেন, ইনি সুপন্ডিত।শ্রীচৈতন‍্যদেব,তাঁর ভাগবত পাঠ শুনে প্রেমাবিষ্ট হয়ে পড়লেন ; এবং বিপ্রকে বললেন, আমি তোমার মুখে যেরকম ভাগবত পাঠ শুনলাম, সত‍্যই অন‍্য কারো মুখ হতে এমন মিষ্ট পাঠ শুনি নাই।শ্রীচৈতন‍্য বিপ্র গৃহে গভীর রাত্রি পর্যন্ত ভাগবত শ্রবণ ও কীর্তনাদিতে যাপন করে গন্তব‍্য স্থলে যাত্রা করলেন।যাবার সময় তিনি ব্রাহ্মণকে "ভাগবতাচার্য‍্য" উপাধি দান করেন।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🦚🙏🙏🙏🙏🙏🙏
══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 দশম ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/12/gouranga10.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৯৫)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
           *বৃন্দাবন যাত্রা ও বিহার*
           👣👣👣👣👣👣👣👣
*🍀শ্রীচৈতন‍্যদেব নীলাচলে ফিরে বৃন্দাবন গমনের বাধা-বিপত্তির কথা সকল ভক্তকে জানালেন, এবং রামরায় ও দামোদরকে বললেন, আমি এবার কাউকেও সঙ্গে না নিয়ে একাকীই বনপথে গমন করব স্থির করেছি।তোমরা এ বিষয়ে বাধা-বিপত্তির কারণ হইও না।সন্তুষ্টমনে আমাকে সেখানে যাবার অনুমতি দাও।মহাপ্রভুর বৃন্দাবনগমনের একান্ত বাসনার বিষয় সকলেই জানতেন।এখন যেন মহাপ্রভুর মনের বাসনা পূর্ণ হয় আমাদের সেই ব‍্যবস্থা করতে হবে, রামরায় একথা বললেন।তবে এখন বর্ষাকাল নিকটবর্তী ; পথে বাহির হলে অত‍্যন্ত কষ্ট পেতে হবে ; বর্ষান্তে শরতের শুরুতে বাহির হওয়ায় ভাল।আর ঐ দুর্গম পথে গমন করতে হলে, তোমার সেবার জন্য দুইজন লোক সঙ্গে থাকা চাই।মহাপ্রভু বললেন, সঙ্গীদের মধ্যে একজনকে নিলে অন‍্যজনও আমার সাথী হতে চাইবে।তখন পরামর্শদাতারা বললেন, "বলভদ্র ভট্টাচার্য্য সম্প্রতি তোমার সঙ্গে গৌড় হতে এসেছেন,তাঁর সঙ্গে একজন ভাল ব্রাহ্মণ সেবক আছে।সাথী করে নিলে,তোমারও সাহায্য হবে আর ইঁনারাও তোমার সঙ্গে থেকে তোমার সেবাতে ও তীর্থদর্শনে নিজেদের জীবনকে সার্থক বিবেচনা করবে।মহাপ্রভু তাঁদের কথায় কোন উত্তর দিলেন না নীরব হয়ে রইলেন।শরৎকাল সমাগত হলে,চৈতন‍্যদেব একদিন শ্রীজগন্নাথ দর্শন ও তদীয় আজ্ঞা নিয়ে উষাকালে বলভদ্র ভট্টাচার্য্য ও তদীয় সহচরকে সঙ্গে নিয়ে অজ্ঞাতসারে বৃন্দাবন যাত্রা করলেন।নির্জন বনপথে সেই হৃদয়বিহারী হরির মধুময় নাম কীর্তন করতে করতে গমন করবেন,এই তাঁর হৃদয়ের বাসনা।গৌরহরি এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মানুষের সাধারণ যাতাযাতের পথ ছেড়ে দিয়ে কটক শহর ডানদিকে রেখে বনপথে প্রবেশ করলেন।ক্রমে ঘন হতে ঘনতর জঙ্গলের মধ্যে তাঁরা প্রবেশ করতে লাগলেন।ভগবৎ প্রেমিকেরা চিরদিনই সব দেশে ও সব জায়গায় নির্জন প্রকৃতির সঙ্গ উপভোগে অপার আনন্দ অনুভব করে থাকেন।আজ ভগবদ্ভক্তদের শিরোভূষণ শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্যদেব বৃন্দাবন যাত্রাকালে গহন বনে পাখীররবে বৃক্ষশ্রেণীর মধ‍্য দিয়ে,মনের উল্লাসে নিজ ইষ্টদেবতার নামকীর্তন করতে করতে গমন করতে লাগলেন।🌹কথিত আছে,এই নিবিড় জঙ্গলে, তিনি বাঘ সিংহ প্রভৃতি হিংস্র জন্তু সকলের মধ‍্য দিয়ে যখন গমন করতে লাগলেন,তখন তারাও মহাপ্রভুর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে, নিজেদের হিংসাবৃত্তি ভুলে হরিনামামৃত রসে ডুবে গিয়েছিল।শ্রীচৈতন‍্যচরিতামৃতে পাই=একদিন একটা বাঘ পথেরমধ‍্যে শুয়েছিল, চৈতন‍্যদেব ভাবে বিভোর হয়ে চলতে চলতে, বাঘের গায়ে চরণ স্পর্শিত হলে,বাঘ তৎক্ষণাৎ মাটি হতে উঠে "কৃষ্ণ কৃষ্ণ"বলে নৃত্য করতে লাগল।🌹আর একদিন মহাপ্রভু অরণ‍্য মাঝে নদীতে স্নান করছিলেন, এমন সময় এক হাতীরদল জল পান করবার জন্য সেই নদীতে নামল ;মহাপ্রভু অঞ্জলী ভরে,হাতীর দলের গায়ে জল ফেললেন, তাদের গায়ে জল পড়লে,তারা ভাবে প্রেমে উন্মত্ত হয়ে কৃষ্ণনাম উচ্চারণ করতে করতে,কেউ মাটিতে গড়াগড়ি দিতে লাগল, কেউ বা নৃত্য করতে লাগল। শ্রীচৈতন‍্যের কন্ঠনিঃসৃত সুমধুর হরিনাম শুনে কুরঙ্গের(মৃগ বা হরিণের) দল আকৃষ্ট হয়ে,তাঁর সামনে উপস্থিত হল, এবং প্রেমাবিষ্ট হয়ে হরিগুণ কীর্তন করতে নৃত্য করতে লাগিল।ময়ূর ও অরণ‍্যের বিহগকুল মধুর হরিগুণ কীর্তন করে আনন্দে নাচতে নাচতে মহাপ্রভুর সঙ্গে চলতে লাগল।মহাপ্রভুর আগমনে ঝারিখন্ড অরণ‍্যের তরুলতা সবও যেন কৃষ্ণপ্রেমের মধুর আস্বাদনে বিভোর হয়ে,হরিধ্বনি করতে লাগল।শ্রীচৈতন‍্যচরিতামৃতে শ্রীপাদ কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী এ সকল ঘটনা বলভদ্র ভট্টাচার্য্যের চাক্ষুষ দর্শনের প্রমাণ বলে বর্ণনা করে গিয়েছেন।*
*বনপথে অসভ‍্য ভীলদের ছোট ছোট পল্লী অতিক্রম করে চলতে হয়েছিল। যিনি গৌড়দেশ, দাক্ষিণাত‍্য ও উৎকল-বাসীদের কৃষ্ণনামে যেমন উন্মত্ত করে তুলেছিলেন, তিনি নিরক্ষর অর্দ্ধ উলঙ্গাকৃতি ভীলদেরকেও সেই প্রেমের অধিকারী করে তুলতে লাগলেন।তারাও মহাপ্রভুর আগমনে ও সুমধুর হরিনামে "হরি হরি" বলে নাচতে লাগল।*
*🍀মহাপ্রভু ও সঙ্গীগণ আনন্দিত মনে নির্জন বনে চলতে লাগলেন।গৌরহরি ঝরণার উষ্ণজলে ত্রিসন্ধ‍্যা স্নান করতেন, বনের কাষ্ঠখন্ড জ্বালিয়ে কোন কোনও সময় শীত নিবারণ করতেন।তাঁরা যখন কোন জনপদে দিয়ে চলতেন,তখন বলভদ্র ভট্টাচার্য্য সময়ে সময়ে দীর্ঘকাল চলার জন্য,ভিক্ষালব্ধ তন্ডুলাদি সঞ্চয় করে রাখতেন।ভট্টাচার্য‍্য বনের বিভিন্ন শাক নিয়ে রন্ধন করতেন, মহাপ্রভু অতি আনন্দমনে শাকান্ন ভোজন করে পরম আনন্দ উপভোগ করতেন।মহাপ্রভু আরও বললেন যে,শ্রীকৃষ্ণ কৃপাময়,তিনি আমাকে এই নির্জন পথে নিয়ে আসিলেন। আহা!তাঁর কি অপার করুণা!আমি বনপথে বিচরণ করে যে সুখ অনুভব করছি,তা আমি আর জীবনে কখনও করিনি।শ্রীকৃষ্ণের অপার করুণা ছাড়া জীবনে কোন সুখই লাভ হয় না।বলভদ্র বিনম্র ভাবে বললেন,প্রভো!আমি অধম পামর,তুমি সাক্ষাৎ শ্রীকৃষ্ণ,তুমি যে কৃপা করে, আমাকে সঙ্গে নিয়ে আসিলে,এটিই আমার পরম সৌভাগ্য,তুমি আমাকে সঙ্গে এনে কাককে গরুঅএর সম্মান দান করলে।*
*শ্রীচৈতন‍্যদেব এরকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে সঙ্গীদের সঙ্গে কাশীধামে উপনীত হলেন। দুপুরে যখন তিনি মণিকর্ণিকার ঘাটে স্নান করবার জন্য যাচ্ছিলেন, তখন তপন মিশ্রও স্নানের জন্য সেখানে যাচ্ছিলেন।🌹মহাপ্রভু যখন পূর্ববঙ্গে গিয়েছিলেন,তখন তপন মিশ্রের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়, এ বিষয় পূর্বেই বলা হয়েছে।মিশ্র গৌরহরিকে দেখেই ভক্তিভরে তাঁর চরণে দন্ডবৎ প্রণাম করলেন, মহাপ্রভু তাঁর হাত ধরে তুলে প্রেমভরে আলিঙ্গন করলেন।*
🙌 🙌 🙌 🙌 🙌 🙌 🙌 🙌  🙌 🙌 🙌
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 দশম ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/12/gouranga10.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৯৬)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
     *শ্রীধামবৃন্দাবন যাত্রা ও বিহার*
    ☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
*🍀বহুদিন পরে গৌরহরিকে দেখে তপন মিশ্রের নয়ন হতে অশ্রু বর্ষিত হতে লাগল।যাইহোক, স্নানের পর বিশ্বেশ্বর ও বিন্দুমাধব দর্শন করবার পর মিশ্র মহাপ্রভুকে নিজ ভবনে ভিক্ষার জন্য নিমন্ত্রণ করলেন।শ্রীচৈতন‍্যদেব মিশ্রের ভবনে গমন করলে, মিশ্র-পরিবারের সকলে,যেন আনন্দ-নীরে ভাসতে লাগলেন ;এবং তাঁর শ্রীচরণ ধৌত করে,পাদোদক পান করলেন।বলভদ্র মহাপ্রভুর জন্য রন্ধন করলেন।ভোজনান্তে গোরাচাঁদ শয়ন করলে,তপন মিশ্রের পুত্র রঘুনাথ তাঁর চরণ-সেবা করতে লাগলেন।তাঁর আগমনবার্তা শুনে মহাপ্রভুর পরিচিত চন্দ্রশেখর এসে উপস্থিত হলেন।ইনি কাশীতে লিখনকার্য করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।চন্দ্রশেখর মহাপ্রভুকে দেখে ভক্তিভরে শ্রীচরণতলে পড়ে কাঁদতে লাগলেন।দয়াময় মহাপ্রভুও প্রেমভরে তাঁর হাত ধরে তুললেন।চন্দ্রশেখর কাঁদতে কাঁদতে বললেন,প্রভো!এই জায়গায় মায়াবাদ,অদ্বৈতবাদ ও শুকনো বেদান্তের কথা ছাড়া আর অন‍্য কোন ভক্তিমার্গের কথা শুনতে পাবেন না কেবল তপনমিশ্র আমাকে হরিকথা শুনিয়ে আমার তাপিত প্রাণ শীতল করে থাকেন। আমরা নিত‍্যই আপনার অনুপম চরিত্রের গুণানুকীর্তন করি।*
*🌺সেইসময়ে কাশীতে প্রকাশানন্দ স্বামী বৈদান্তিকদের মধ্যে বিশিষ্ট ব‍্যক্তি বলে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন।তিনি শিষ‍্যদেরকে বেদান্ত শিক্ষা দিতেন।একদিন এক ব্রাহ্মণ প্রকাশানন্দ স্বামীর কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, "শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্যদেব নামে এক পরম ভক্ত এখানে এসেছেন।এই পরমরূপবান সন্ন‍্যাসীর মধ্যে দেব-বাঞ্জিত ভক্তির সব লক্ষণই প্রকাশ পেয়ে থাকে, তিনি কখন ভক্তির উচ্ছ্বাসে নাচেন, আবার কখনও কাঁদেন।ইঁনাকে দেখলেই সাক্ষাৎ বৈকুন্ঠের নারায়ণ বলে প্রতীয়মান হয়।বৈদান্তিক প্রকাশানন্দ বিপ্রের মুখ হতে শ্রীচৈতন‍্যদেবের দেবোপম গুণাবলীর কথা শুনে,তাচ্ছিল‍্যের হাসি হেসে বলতে লাগলেন, "গৌড়দেশেরএক ভাবুক সন্ন‍্যাসী কেশবভারতীর শিষ্য,ঐন্দ্রজালিক শক্তিপ্রভাবে লোককে বিমোহিত করেন ; এবং দেশে দেশে,গ্রামে গ্রামে লোক নাচিয়ে বেড়ান,তা শুনেছি।এই ভাবুক সন্ন‍্যাসী প্রসিদ্ধ বৈদান্তিক সার্বভৌম বাসুদেব ভট্টাচার্য্যকেও নাকি মোহিনীশক্তি প্রভাবে ভাব-রসের রসিক করে ফেলেছেন। কিন্তু কাশীধাম ভাব-প্রধান জায়গা নয় ; এখানে তাঁর ভাবকালি বিক্রি হবে না। বিপ্র শ্রীচৈতন‍্যদেবের প্রতি প্রকাশানন্দের এইরকম ভাব,ও তাচ্ছিল‍্যরূপ কথাবার্তা শুনে ব‍্যথিত হৃদয়ে, মহাপ্রভুর কাছে এসে সব কথা নিবেদন করলেন।শ্রীচৈতন‍্য মিষ্টি মধুর হাসি হেসে বললেন,কাশীধামে ভাবকালি বিক্রি করবার জন্য এসেছি, যদি বিক্রি না হয় তাহলে আপন গৃহে ফিরে যাব, অথবা সুবিধা হলে অল্পমূল‍্যেও বিক্রি করব।*
*🌹মহাপ্রভু বারাণসীধামে থাকাকালীন সুবুদ্ধি রায়কে হরিনাম গ্রহণ করতে বলে তাঁর পরিত্রাণের পথ দেখিয়ে ছিলেন।সুবুদ্ধি রায় একসময়ে গৌড়ের অধীশ্বর ছিলেন।তাঁর অধীনে হোসেন শাহ কর্ম করতেন।একবার এক দীঘি খনন করবার ভার হোসেনের উপর অর্পিত হয় ; সুবুদ্ধি রায় তার কাজের ভুলের জন্য তার পিঠে চাবুকের আঘাত করেন।যে কোন কারণেই একসময় হোসেন শাহ গৌড়ের সিংহাসনে বসেন।হোসেন শাহর পত্নী,স্বামীর প্রতি সুবুদ্ধি রায়ের প্রহারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাঁকে হত‍্যা করতে বলে।হোসেন শাহ বললেন,সুবুদ্ধি রায়ের কাছ হতে আমি অনেক উপকার পেয়েছি, আমি তাঁর প্রাণ বিনাশ অপরাধে অপরাধী হতে পারব না। কিন্তু শাহ পত্নী জেদবশত, পুনঃপুনঃ স্বামীকে বলতে লাগলেন যে যদি তাঁকে যথাযোগ্য শাস্তি না দেন আমি থাকব না।পত্নীর কথা আর ফেলতে পারলেন না,হোসেন শাহ সুবুদ্ধি রায়ের মুখে জাতি নষ্ট করবার জন্য করোয়ার জল মুখে ঢেলে দেন।সুবুদ্ধিরায় জাতিভ্রষ্ট হয়ে ঘৃণায় ও লজ্জায় চিরদিনের জন্য নিজের আবাস ভূমি পরিত‍্যাগ করে কাশীধামে চলে আসেন।কারণ সেখানে ব্রাহ্মণ পন্ডিতদের কাছ হতে,প্রায়শ্চিত্তের বিধান প্রার্থনা করাতে,পন্ডিতগণ তপ্তঘৃত পানে জীবন নাশ করায় এ পাপের প্রায়শ্চিত্ত বলে বিধান দেন।সুবুদ্ধি রায় হিন্দু পন্ডিতদের এই বিধান পালনে বিমুখ হয়ে, মনের দুঃখে লোকের আড়ালে বাস করতে লাগলেন।যখন শ্রীচৈতন‍্যদেব কাশীধামে আসেন,তখন সুবুদ্ধি রায় তাঁর কাছে এসে সমস্ত কথা বললেন।চৈতন‍্যদেব তাঁর সমস্ত কথা শুনে বললেন, "তুমি সদাসর্বদা হরিনাম কীর্তন কর, এটিই তোমার প্রকৃত প্রায়শ্চিত্ত হবে "।সুবুদ্ধি রায় মহাপ্রভুর এইকথা শুনে হরিনামামৃত রসপানে ও দীন-দুঃখীদের সেবায় জীবন কাটাতে লাগলেন।*
🙌🙌🙌🙌🙌🙌👣🙌🙌🙌🙌🙌🙌
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 দশম ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/12/gouranga10.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৯৭)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
     *শ্রীধামবৃন্দাবন যাত্রা ও বিহার*
    ◆☆∆◆☆∆◆☆∆◆☆∆◆☆∆
*🍀অনন্তর গৌরহরি কাশীধাম পরিত‍্যাগ করে প্রয়াগে গমন করেন। এখানে যমুনা দর্শন করে তাঁর এমন ভাবোদয় হল যে,তিনি তাতে ঝাঁপ দিলেন।বলভদ্র ভট্টাচার্য্য তৎক্ষণাৎ জলে ঝাঁপ দিয়ে মহাপ্রভুকে জল হতে ডাঙ্গায় উঠিয়ে নিয়ে এলেন।মহাপ্রভু তিনদিন প্রয়াগে থেকে বহু লোককে কৃষ্ণপ্রেমানুরাগী করে,মথুরাধামে গমন করলেন।এখানে বিশ্রামতীর্থে স্নান করে তিনি কেশব দর্শন করে তিনি ভাবে-বিভোর হয়ে নৃত্য কীর্তনাদি করলেন।এখানে এক বিপ্র তাঁর সঙ্গে নৃত্য ও কীর্তনাদি করছেন দেখে,তাঁকে পরম কৃষ্ণভক্ত বলে মনে হল।মহাপ্রভু তাঁকে নিভৃতে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার মধ্যে আমি চরম ভগবৎভক্তির ভাব দর্শন করছি ; তুমি এ মধুর ভাব কোথা হতে লাভ করলে?বিপ্র তদুত্তরে বললেন, শ্রীপাদ মাধবেন্দ্রপুরী একবার এখানে এসেছিলেন,কৃপা করে আমার গৃহে আতিথ‍্য স্বীকার করেন, এবং আমার হাতের রান্না তিনি ভোজন করেছিলেন।তিনি গরিবের গৃহে কয়েকদিন থেকে আমাকে কৃতার্থ করেন, এবং দীক্ষাদানে আমাকে তাঁর শিষ‍্য করে যান।গৌরহরি মাধবেন্দ্রপুরীর কথা শুনে চরম ভক্তিভরে সেই বিপ্রের চরণে প্রণিপাত করলেন। শ্রীচৈতন‍্যদেবের এইরকম কাজ দেখে বিপ্র ভীত ও লজ্জিত হয়ে বললেন,আমি সামান্য মানুষ,আপনি আমার চরণ স্পর্শ করে আমাকে কেন চরম অপরাধী করেন?এইকথা বলে বিপ্র মহাপ্রভুর শ্রীচরণে লুটিয়ে পড়লেন।তখন বলভদ্র ভট্টাচার্য্য বিপ্রকে বললেন, মাধবেন্দ্রপুরীর শিষ্য ঈশ্বরপুরী মহাপ্রভুর গুরুদেব।তখন বিপ্র গৌরসুন্দরকে নিজ ভবনে ভিক্ষা গ্রহণের জন্য নিমন্ত্রণ করলেন।ভাবময় গৌরহরি নিমন্ত্রণ স্বীকার করলে বিপ্র তাঁদেরকে নিজ ভবনে নিয়ে গেলেন। বিপ্রগৃহে বলভদ্র ভট্টাচার্য্য রন্ধন করলেন এবং মহাপ্রভু ভোজন করলেন।সনোড়িয়া ব্রাহ্মণের গৃহে সাধারণত সন্ন‍্যাসীগণ ভোজন করেন না ; কিন্তু মাধবেন্দ্রপুরী ও শ্রীচৈতন‍্যদেব সে নিয়ম উলঙ্ঘন করেছিলেন।বিপ্র মহাপ্রভুর অপূর্ব ভক্তি ও উদারতার কথা উল্লেখ করে বললেন,তুমি আমার গৃহে ভিক্ষা গ্রহণ করলে, এ আমার পরম সৌভাগ্য ; তুমি তো আর মনুষ‍্য নহে, তুমি সাধারণ বিধির অতীত।*
*🍁মহাপ্রভু যখন এই সনোড়িয়া ব্রাক্ষণের গৃহে অতিথি হলেন,তখন তাঁর আগমনবার্তা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।বহুসংখ‍্যক লোক তাঁকে দেখবার জন্য আসতে লাগল।বিপ্র গৌরহরিকে সঙ্গে করে বৃন্দাবনের নানাস্থান দেখাতে লাগলেন।শ্রীগৌরাঙ্গ বৃন্দাবনের চব্বিশ ঘাটে স্নান করলেন, এবং মধুবন,তালবন প্রভৃতি ভক্তিভরে দেখলেন।🌹কথিত আছে,তিনি যখন বৃন্দাবনের পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন,তখন গাভীগণ হাম্বারবে কাছে এসে তাঁর গাত্র লেহন করেছিল ; মৃগীগণও নির্ভয়ে তাঁর মুখের দিকে অনিমিষনয়নে তাকিয়ে থাকত।বিহঙ্গমগণ বৃক্ষশাখা হতে মধুরস্বরে গান করত ; ময়ূর তাদের পুচ্ছ বিস্তার নৃত্য করত ;তরুলতা সব প্রেমে বিভোর হয়ে পুষ্পবর্ষণ করত, তাঁর অভ‍্যর্থনা করত।শুক-সারী গাছেরডালে বসে রাধাকৃষ্ণের গুণাবলী কীর্তনে মহাপ্রভুর হৃদয়ে সুধা বর্ষণ করত। এইভাবে শ্রীবৃন্দাবনধাম শ্রীরাধাগোবিন্দের মিলিত তনু শ্রীগৌরাঙ্গের আগমনে যেন এক নতুন আকার ধারণ করল।জল-স্থল যেন হরিপ্রেমরসে অনুরঞ্জিত হয়ে উঠিল।বৃন্দাবন দর্শনে শ্রীচৈতন‍্য মহাপ্রভুরও কৃষ্ণপ্রেম পূর্বাপেক্ষা আরো ঘনীভূত হয়ে দাঁড়াল ; সকল বস্তুই তাঁর হৃদয়ের প্রেম প্রস্রবণকে আরো উচ্ছ্বসিত করে তুলতে লাগল, সব বস্তুতেই তাঁর কৃষ্ণস্ফূর্তি জেগে উঠতে লাগল।একবার কাঁটায়ভরা দুর্গম পথে যেতে যেতে ময়ূর দেখে তাঁর কৃষ্ণস্মৃতি উদিত হয়ে উঠিল, তিনি হঠাৎ মূর্ছিত হয়ে পড়লেন।বলভদ্র ভট্টাচার্য্য তাঁর কানে কৃষ্ণনাম উচ্চারণ করাতে,তিনি চেতনা লাভ করে,পথে গড়াগড়ি দিতে লাগলেন।কাঁটায় তাঁর শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে রক্তেরধারা বহিতে লাগল।ভট্টাচার্য‍্য জলসেক প্রভৃতির দ্বারা তাঁর সেবা করতে লাগলেন ; মহাপ্রভু প্রেমানন্দে নৃত্য গীত করতে করতে বৃন্দাবনের দ্বাদশবন ভ্রমণ করে অরিটগ্রামে উপনীত হলেন। সেখানে গমন করে,তিনি গ্রামের লোককে জিজ্ঞাসা করলেন, "রাধাকুন্ড কোথায়"? কেউ তার তত্ত্ব বলতে না পারায়, তিনি কুন্ডের উদ্দেশ্যে এক ধানক্ষেতের জলে স্নান করলেন।বৃন্দাবনধাম চৌরাশী ক্রোশ।শ্রীচৈতন‍্যের বৃন্দাবন গমনের পূর্বে প্রকৃত বৃন্দাবন ক্ষেত্র বলে কোন নির্দিষ্ট স্থান লোকে নির্ণয় করতে পারত না।তাঁর সময় হতেই বৃন্দাবনের স্থান নির্দিষ্ট হ'ল,শ্রীকৃষ্ণের লুপ্ত কীর্তি সব পুনর্জীবন লাভ করল, বৃন্দাবনের মাহাত্ম্য ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে লাগল।*
*🌲মহাপ্রভু তারপর সুমোল সরোবর ও গোবর্দ্ধন গিরি দর্শন করেন।গিরি গৌবর্দ্ধন দর্শন করে কৃষ্ণলীলার স্মৃতি তাঁর হৃদয়পথে উদিত হয়ে তাঁকে প্রেমে বিহ্বল করে দিল।তৎপর অন্নকূট, গোকুল প্রভৃতি জায়গা দর্শন করে,তিনি পুনরায় মথুরায় ফিরে গেলেন। মথুরায় আসিলে,তাঁকে দেখবার জন্য বহু বহুলোক এক এককরে জমায়েত হতে লাগল।লোক সমাগম দেখে তিনি নির্জনতা লাভের জন্য অক্রূর তীর্থে গমন করলেন।এখানে যমুনার কাছে একটি তেঁতুল গাছের তলায় সুন্দর বসবার জন্য বেদীর মত ছিল,বৃক্ষটি বহু পুরাতন।এই বৃক্ষটি দ্বাপরযুগে শ্রীকৃষ্ণলীলা সময়কার বলে পরিচিত।মহাপ্রভু এই রমণীয় জায়গায় খুব আনন্দ মনে বসিলেন।বৃক্ষতলে বসে,তিনি সম্মুখে পবিত্র যমুনার স্রোত প্রবাহিত হতে দেখে শ্রীকৃষ্ণের গুণগানে রত হলেন।জনকোলাহলশূন‍্য জায়গায় তিনি তাঁর প্রাণনাথকে নিয়ে হৃদয়ে সম্ভোগ করবেন, এই বাসনা তাঁর প্রবল হয়েছিল বটে, কিন্তু তা পূর্ণ হল না। তাঁর দর্শনলালসা লোকের হৃদয়ে এত প্রবল হয়ে উঠেছিল যে,তিনি যেখানেই যেতেন জনস্রোত তাঁর পেছন পেছন ধাবিত হয়ে তাঁকে ঘিরে ফেলত,এই নির্জন জায়গাতেও তা ঘটিল।যারা তাঁকে দেখত,তাঁর কন্ঠ হতে সুধামাখা হরিধ্বনি শুনত, তারাই মন্ত্রমুগ্ধের মত তাঁর পথ অনুসরণ করত।বৃন্দাবনধামে তিনি বহুসংখ‍্যক লোককে শ্রীকৃষ্ণের উপাসক করেছিলেন।ব্রজবাসীগণ তাঁকেই শ্রীকৃষ্ণ জ্ঞানে,শ্রীকৃষ্ণ প্রকট হয়েছেন বলে ঘোষণা করতে লাগলেন।মহাপ্রভু এক বৃক্ষেরতলে বসে আছেন,এমন সময় এক ব‍্যক্তি এসে বলল,বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ অবতীর্ণ হয়েছেন। শ্রীচৈতন‍্য জিজ্ঞাসা করলেন,তিনি কোথায়?সে বলল, সে যে স্বয়ং আপনিই।শ্রীচৈতন‍্য তার কথা শুনে বললেন,"বিষ্ণু বিষ্ণু" জীবাধমকে কোনদিনও কৃষ্ণ বলিও না।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏👣🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 দশম ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/12/gouranga10.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৯৮)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
     *শ্রীধামবৃন্দাবন যাত্রা ও বিহার*
    👣👣👣👣👣👣👣👣👣
*🌳অক্রূরতীর্থে থাকাকালীন কৃষ্ণদাস নামে এক রাজপুত মহাপ্রভুকে দেখতে এসে তাঁর রূপগুণে এতই আকৃষ্ট হয়ে পড়ল যে,সে ব‍্যক্তি বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করে সংসার সুখ একেবারেই বিসর্জন দিয়ে সন্ন‍্যাসের পথ অবলম্বন করল। এস্থলে অবস্থান থাকাকালীন লোকে তাঁকে দেখেই যে হৃদয়ের পিপাসা নিবৃত্তি করত তা নয়,বহুসংখ‍্যক লোক তাঁকে নিজ ভবনে ভিক্ষা গ্রহণের জন্য নিমন্ত্রণ করতে লাগল।বলভদ্র প্রতিদিন একটির বেশী নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতেন না।অক্রূরতীর্থে কিছুদিন থাকবার পর বলভদ্র,বিপ্র কৃষ্ণদাস মহাপ্রভুকে নিয়ে প্রয়াগে যাত্রা করলেন।পথে যেতে যেতে গৌরহরি সঙ্গীদের ক্লান্তি দেখে, বিশ্রামের জন্য এক বৃক্ষতলে বসিলেন। সেই সময় হঠাৎ এক গোপ বাঁশী বাজাতে আরম্ভ করে ; ভাবনিধি গৌরহরি বংশীধ্বনি শুনে বিমুগ্ধ হয়ে ভূতলে মূর্ছিত হয়ে পড়লেন।তাঁর মুখ হতে ফেন নির্গত হতে লাগল ; সঙ্গীরা সহজে তাঁর চেতনা ফেরাতে পারলেন না।এমন সময়ে দশজন পাঠান সৈন‍্য অশ্বারোহণে সেইদিক দিয়ে আসছিল,তারা সেই জায়গায় ঘোড়ার পিঠ হতে নেমে শ্রীচৈতন‍্যের চেতনাহীন অবস্থা দেখে মনে করল, ইঁনার কাছে যারা বসে আছে,এরাই অর্থলোভে এই ব‍্যক্তিকে নেশার বস্তু খাইয়েছে ; এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে তারা বলভদ্র প্রভৃতিকে প্রাণদন্ডের ভয় দেখিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলল।অশ্বারোহী পাঠানদের কথায় সকলেই ভীত হলেন। কিন্তু রাজপুত কৃষ্ণদাস নির্ভয়ে বললেন,যিনি অজ্ঞান অবস্থায় শয়ন করে আছেন, ইনি আমাদের গুরু ; ইঁনার মৃগীরোগ আছে। কিছুক্ষণ পরেই মহাপ্রভু চেতনা লাভ করবেন।এই বলে আবার কৃষ্ণদাস বললেন,এই গ্রামেই আমার নিবাস ; আমি যদি এখনই গ্রামে সংবাদ দেয় তাহলে দুইশ তুরুকী এখানে উপস্থিত হবে এবং দুইশ কামানও আসবে ; তুরুকীরা তোমাদের যা কিছু আছে সমস্ত কেড়ে নিয়ে অনেক কিছুই করতে পারে। যাদের তুমি চোর বলছ, এঁরা কেউই চোর নহে।রাজপুতের মুখ হতে এইসব কথা শুনে তারা সকলেই ভয় পেল, যাদের দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছিল,তাদের মুক্ত করল। এইসব কথোপকথনের মাঝে শ্রীচৈতন‍্যদেবের মূর্ছা ভঙ্গ হয়ে গেল, তিনি প্রেমাবেশে উর্দ্ধবাহু হয়ে হরি হরি বলতে বলতে নৃত্য করতে লাগলেন।পাঠানগণ মহাপ্রভুর এইরকম দেবভাব দেখে তাঁর চরণ বন্দনা করল।এই পাঠানদের মধ্যে এক ব‍্যক্তি অদ্বৈতবাদ বিষয়ে প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে, গৌরসুন্দর তা খন্ডন করে দিলেন।সে ব‍্যক্তি মহাপ্রভুর যুক্তি শুনে পরম সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর চরণ ধরে বলল,আমি অধম,আমাকে দয়া কর। আমি অনেক শাস্ত্রাদি আলোচনা করেছি, কিন্তু এতদিন আমি কোনপথ নির্দ্ধারণ করতে পারেনি।আজ আমার সব সংশয় দূর হল।তুমি মানব নহে,সাক্ষাৎ পরমেশ্বর।মহাপ্রভু তাকে কৃষ্ণনাম করতে বললেন, আর তাকে রামদাস নামে তার করণ করলেন।অশ্বারোহীদের মধ্যে একজন নবীনবয়স্ক রাজকুমার ছিলেন, মহাপ্রভু তারও পূর্বনামের পরিবর্তে "বিজুলী" নাম রাখলেন। বর্তমানে রাজকুমার বিজুলী ও রামদাস প্রভৃতি পাঠানই মহাপ্রভু শ্রীচরণে প্রণিপাত করল, এবং তাঁরই উপদেশ অনুসারে কৃষ্ণ-উপাসক হয়ে বৈষ্ণবধর্ম গ্রহণ করল।*
🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌🙌
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 দশম ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/12/gouranga10.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৯৯)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
          *শ্রীরূপ-সনাতন সম্মিলন*
          ☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
*🍀বহুদিন হতেই রূপ-সনাতনের হৃদয়ে সংসারত‍্যাগের বাসনা প্রবল হয়ে উঠেছিল।মহাপ্রভু রামকেলি গ্রামে যখন গমন করেন,তখন রূপ-সনাতন তাঁর দর্শন লাভে কৃতার্থ হন।গৌরহরি তাঁদের সংকল্পের সহায় হয়ে,তাঁদের প্রাণে বৈরাগ‍্যানল প্রদীপ্ত করে দেন দুইভাই ঘরে ফিরে এসে বিষয়-বন্ধন একেবারে ছিন্ন করবার জন্য প্রস্তুত হতে লাগলেন।শ্রীরূপ-সনাতন গৌড়াধিপতির প্রধান কর্মচারী।তাঁরা জানতেন,কাজ হতে অবসর নিতে চাইলে হোসেন শাহ কখনই অনুমতি দিবেন না। কিন্তু তাঁদের অন্তরে যে আগুনেরশিখা জ্বলে উঠেছে তা উত্তরোত্তর বাড়তে লাগল।শ্রীসনাতন রাজমন্ত্রী ; তাঁকে সবসময়ই রাজধানীতে থাকতে হত। শ্রীরূপ রাজ‍্যের অন‍্যত্র কাজ করতেন।তারজন‍্য তিনি গোপনে নিজের অভিলাষ সিদ্ধ করবার সুযোগ পেলেন। তিনি সমস্ত ধনসম্পত্তি নৌকা পূর্ণ করে স্বদেশাভিমুখে যাত্রা করলেন।যাবার সময় কি মনে হল,এক মুদির দোকানে মুদির দোকানদারের হাতে দশহাজার মুদ্রা জমা রেখে দিলেন, এই ভেবেই যে, যদি জ‍্যেষ্ঠভ্রাতা সনাতনের আবশ‍্যক হলে তাঁকে দিয়ে দিবেন।শ্রীরূপ,বাড়ীতে গিয়ে সমস্ত সম্পত্তি ব্রাহ্মণ,বৈষ্ণব ও আত্মীয়স্বজনদের ভাগ করে দিলেন।* *এদিকে সনাতন বিষয়-পিঞ্জর হতে মুক্তি লাভ করবার জন্য ব‍্যাকুল হয়ে উঠলেন।তিনি মনে মনে ভাবলেন,রাজার কোন অপ্রিয় কাজ করে তাঁর প্রাণে অসন্তোষ ভাব না জাগাতে পারলে,তাঁর মনোবাঞ্জা পূরণ হবার উপায় নাই।সনাতন পাতশার (মুসলমাল সম্রাট বা নৃপতির)কাছে নিজ শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে রাজকার্য‍্যে অবহেলা করে ঘরে বসে,ভাগবত অধ‍্যয়ন, ও ব্রাহ্মণ পন্ডিতদের সঙ্গে শাস্ত্র আলোচনায় সময় কাটাতে লাগলেন।হোসেন শাহ রাজমন্ত্রীর অসুস্থতার কথা শুনে চিকিৎসার জন্য রাজবৈদ‍্য পাঠিয়ে দিলেন।বৈদ‍্য এসে দেখলেন, সনাতনের কোন রোগেরই লক্ষণ নাই। রাজবৈদ‍্য কর্তব‍্যানুরোধে রাজাকে তদনুরূপ সংবাদ প্রদান করলেন।*
*সনাতন সুস্থদেহে রাজকার্য‍্য পরিত‍্যাগ করে ঘরে বসে আছেন শুনে হোসেন শাহ অবাক হলেন এবং এর প্রকৃত কারণ নির্ণয় করবার জন্য একদিন তিনি স্বয়ং হঠাৎ সনাতনের ভবনে চলে গেলেন।গৌড়াধিপতি সনাতন গৃহে গেলে,সকলে সসম্ভ্রমে দাঁড়িয়ে থেকে যথোচিত অভ‍্যর্থনা করে তাঁকে বসবার আসন দিলেন।রাজা আসনে বসে থেকে বললেন, তোমার অসুস্থতার সংবাদ শুনে বৈদ‍্য পাঠালাম, কিন্তু তিনি তোমার সুস্থতার কথা বললেন।তোমাকে নিয়েই আমার সমস্ত কাজ ; আমার যে সর্বনাশ হচ্ছে! তোমার মনে কি ভাব আমায় খুলে বলতে পার?সনাতন বিনীতভাবে বললেন,জাঁহাপনা!বিষয়কার্য‍্য করবার আমার আর বাসনা নাই ; আমা হতে আপনার আর রাজকার্য‍্য চলবে না, আপনি অন্য লোক নিযুক্ত করে কার্য‍্য পরিচালনের ব‍্যবস্থা করুন।হোসেন শাহ সনাতনের কথা শুনে বিরক্তির স্বরে বললেন, তোমার ভাই রূপ যেন দস‍্যুর মত পালিয়ে গিয়েছে।পরম বৈরাগী ও ভক্ত রূপের প্রতি গৌড়েশ্বর ঐরকম কর্কশ বা রুক্ষ কথা শুনে সনাতন মনে মনে অত‍্যন্ত বিরক্ত হয়ে বললেন,আপনি স্বাধীন রাজা, দোষীর প্রতি আপনি যেরকম শাস্তি উচিত মনে করেন,তাইই বিধান করতে পারেন।সনাতনের এই কথা শুনে হোসেন শাহ ক্রব্ধচিত্তে আসন পরিত‍্যাগ করে উঠলেন, এবং সনাতনকে বন্দী করতে আদেশ করে রাজপ্রাসাদে প্রত‍্যাগমন করলেন।*
*শ্রীরূপ যখন বিষয়-সম্পত্তি সকলের মধ্যে ভাগ করে দিলেন,তখন শ্রীচৈতন‍্য মহাপ্রভু কোথায় আছেন তা অবগত হবার জন্য দুইজন ভৃত‍্য নীলাচলে পাঠিয়ে দিলেন।তারা ফিরে এসে মহাপ্রভুর বৃন্দাবন যাত্রার বিষয় তাঁকে অবগত করল।শ্রীরূপ তাঁর ছোট ভাই বল্লভের সঙ্গে বৃন্দাবন যাত্রা করলেন।যাবার সময় সনাতনকে সমস্ত বিষয় উল্লেখ করে একটি পত্র লিখে গেলেন।*
*বিপদসঙ্কুল দুর্গম পথ অতিক্রম করে তাঁরা প্রয়াগে উপনীত হলেন।গিয়ে দেখলেন,মহাপ্রভু তখন বিন্দুমাধব মন্দিরের কাছে প্রেমানন্দে উর্দ্ধবাহু হয়ে,মধুর হরিনাম কীর্তন করতে করতে নৃত্য করছেন।তাঁর নয়নযুগল থেকে বারিধারা প্রবাহিত হয়ে তাঁর গাল ভাসিয়ে দিচ্ছে।সমবেত লোকমন্ডলীও তাঁর সঙ্গে কন্ঠ মিলিয়ে,উচ্চরবে ভক্তিভরে হরিধ্বনিতে চারিদিক প্রতিধ্বনিত করছে,প্রেমাবেশে তারাও মাটিতে গড়াগড়ি দিচ্ছে।*
👣👣👣👣👣👣🙏👣👣👣👣👣👣
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 দশম ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/12/gouranga10.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১০০)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
             *শ্রীরূপ-সনাতন সম্মিলন*
            •••••••••••••••••••••••••••••••
*🍀প্রেমাবেশে তারাও মাটিতে গড়াগড়ি দিচ্ছে। শ্রীপাদ কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী কলম দিয়েছেন=*
*🌷কেহ কাঁন্দে কেহ হাসে কেহ নাচে গায়।*
*🌷কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলি কেহ গড়াগড়ি যায়।।*
*🌷গঙ্গা যমুনা প্রয়াগ নারিল ডুবাতে।*
*🌷প্রভু ডুবাইল প্রেমের বন‍্যাতে।।*
*শ্রীরূপ ও সনাতন এই জনবহুল ঠেলে মহাপ্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা বিশেষ সুবিধা নয় মনে করে তাঁরা জনমন্ডলীর এক পার্শ্বে দাঁড়িয়ে থেকে মহাপ্রভুর অপরূপ লীলা দেখতে লাগলেন। এই সময় এক বিপ্র গৌরহরিকে নিজ ভবনে ভিক্ষার জন্য নিমন্ত্রণ করে গেলেন।সেখানে মহাপ্রভু এক নিভৃত জায়গায় বসে,শ্রীরূপ ও বল্লভ দুইজনে দুইগুচ্ছ তৃণ দন্তে করে দূর হতে দন্ডবৎ প্রণাম করে,ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে লাগলেন।মহাপ্রভু শ্রীরূপকে দেখে হাত ধরে "উঠ,উঠ" বলে,তাঁকে মাটি থেকে তুলে কাছে বসিয়ে সনাতনের কথা জিজ্ঞাসা করলেন।শ্রীরূপ, গৌড়াধিপতি কর্তৃক তাঁর কারাগারে বন্দী হয়েছেন সেই কথা বললে, মহাপ্রভু বললেন,"সনাতন কারামুক্ত হয়েছে,শীঘ্রই আমার সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হবে "।শ্রীরূপ ও বল্লভ প্রয়াগে বসবাস করতে লাগলেন।প্রয়াগের কাছেই যমুনার পরপারে বল্লভ ভট্ট নামে এক সুপন্ডিত ব্রাহ্মণ বাস করতেন।তিনি শ্রীচৈতন‍্যদেবের আগমনবার্তা শুনে,তাঁকে নিমন্ত্রণ করবার জন্য ছুটে এলেন।ভট্ট আগমন করলে শ্রীচৈতন‍্যদেব,শ্রীরূপ ও বল্লভের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় করে দিলেন।ভট্ট এই নবাগত ভক্তদেরকে আলিঙ্গন করতে গেলে,তাঁরা নিজেদেরকে অস্পৃশ‍্য বলে দূরে সরে গেলেন।বল্লভ ভট্ট তাঁদের বিনয় ও ভগবন্নিষ্ঠা দর্শন করে মুগ্ধ হলেন।মহাপ্রভু বল্লভ ভট্টের সঙ্গে অম্বুলি গ্রামে গমন করলেন।অম্বুলি গ্রামে যমুনার নিকটবর্তী।মহাপ্রভু প্রসন্নসলিলা,কলনাদিনী যমুনার শ‍্যামল জলরাশি দেখে ভাবে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। তিনি এখানে উপস্থিত হলে, বহুসংখ‍্যক লোক তাঁর দর্শন করবার জন্য আসতে লাগল ; এবং তাঁর জীবনের অনুপম মাধুরী দর্শনে বিমুগ্ধ হয়ে,তাঁরই প্রদর্শিত মধুময়ভক্তিপথের পথিক হয়ে পড়ল।যমুনার কাছে গিয়ে মহাপ্রভু ভাবোচ্ছাসে উচ্ছসিত হয়ে যমুনায় ঝাঁপ দিতে পারেন মনে করে,এই ভয়ে,বল্লভাচার্য‍্য তাঁকে পুনরায় প্রয়াগে আনয়ন করলেন।*
*শ্রীচৈতন‍্যদেব শ্রীরূপের হৃদয়ে শক্তি সঞ্চার করে,ভক্তিতত্ত্ব উপদেশ শিক্ষা দিয়েছিলেন।মহাপ্রভু বলেছিলেন, রূপ!ভক্তিসিন্ধু অনন্ত গম্ভীর ও পারাপারশূন‍্য।কেশাগ্র শতভাগ করে, সেটি পুনরায় শতভাগ করলে যেরকম হয়,জীবের স্বরূপ তদ্রূপ জানবে।মানব অনেক সময়ে জীবাত্মা ও পরমাত্মার মধ্যে অভেদ স্বীকার করে থাকে,এটি অত‍্যন্ত ভ্রম।জীব ক্ষুদ্র, ভগবান অপরিমেয়, তিনি সর্বগত ও সৃষ্টিকর্তা।জগৎ সৃষ্ট ; তিনি শাসনকর্তা,মানব শাসনাধীন।যাঁরা ঈশ্বর ও জীব তুল‍্য মনে করেন,তাঁরা বিশ্বনিয়ন্তার স্বরূপ সম্বন্ধে বড়ই অনভিজ্ঞ।*
*মানুষ ও জীবজন্তপূর্ণ এই বিশাল সংসার সেই অনন্ত স্বরূপের তুলনায়, অতি ক্ষুদ্রতম।নিকৃষ্ট প্রাণীদের মধ্যে মানুষের সংখ্যা যৎসামান্য বললেই হয় ; তার মধ্যে ম্লেচ্ছ,পুলিন্দ,বৌদ্ধ ও শবর আছে ; বেদনিষ্ঠদের মধ্যে, অধিকাংশ ব‍্যক্তিই বেদবিহিত কর্ম প্রতিপালন করে না,কেবল মুখেই বেদনিষ্ঠ বলে স্বীকার করে থাকে।ধর্মচারীদের মধ্যে অধিকাংশ* *কর্মনিষ্ঠ। কোটি ধর্মনিষ্ঠদের মধ্যে কেবল একজন মাত্র ব‍্যক্তিকেই জ্ঞাননিষ্ঠ বলা হয়।কোটি জ্ঞানীর মধ্যে একজন মুক্ত ; আবার কোটি মুক্ত জীবের মধ্যে একজন প্রকৃত কৃষ্ণভক্ত পাওয়া যায়।কৃষ্ণভক্তগণ কামনাশূন‍্য,অতএব শান্ত।যাঁরা* *মুক্তিপ্রার্থী,সিদ্ধ ও ফলকামী,তাঁরা*
*অশান্ত।যদি কোন ভাগ‍্যবান ব‍্যক্তি শ্রীকৃষ্ণের প্রসাদে ভক্তিলতা বীজ প্রাপ্ত হন, এবং তদুপরি শ্রবণ-কীর্তনরূপ জলসেচন করেন, তাহলে সেই লতা,গোলোকে, শ্রীকৃষ্ণচরণরূপ কল্পবৃক্ষ আশ্রয় করে ; সেটি হতেই প্রেমফল উৎপন্ন হয়।বৈষ্ণব-অপরাধরূপ হাতী যদি মস্তক উত্তোলন করে, তাহলে ভক্তিলতা উৎপাটিত,ছিন্ন ও শুষ্ক হয়ে যায়।*
*যদি বিষয়-লালসা,মুক্তির বাসনা প্রভৃতি উপশাখাগণ তারসঙ্গে উত্থিত হয়, তাহলে ভক্তিলতাকে একেবারে বিনষ্ট করা ফেলে ; এই জন্য আগে উপশাখা সব ছেদন করে ফেলতে হবে।ইক্ষুরস গাঢ় হলে যেমন তা হতে ক্রমে মিছরি তৈরী হয়,সেরকম সাধনভক্তি হতে রতি জন্মায়।এই রতি গাঢ় হলে,তাকে প্রেম বলা যায়।প্রেম হতে প্রণয়,অনুরাগ,ভাব ও মহাভাব সমস্ত উৎপন্ন হয়ে থাকে।ভক্তির প্রকৃতিভেদে রতি পাঁচ প্রকার= যথা,শান্ত,দাস‍্য,সখ‍্য,বাৎসল‍্য ও মধুর। এই মাধুর্য‍্য রসে সব রসেরই সমাবেশ হয়ে থাকে।হে রূপ!ভক্তির পথ ভাল করে অবলম্বন কর।ভক্তিতেই প্রকৃত শান্তি। মহাপ্রভু শ্রীরূপকে ভক্তিতত্ত্ব সম্বন্ধে উপদেশ দান করে, বারাণসী যাবার জন্য প্রস্তুত হলেন।শ্রীরূপ তাঁর সঙ্গে যেতে চাইলে,মহাপ্রভু বললেন, বৃন্দাবনের এত কাছে এসে, সেটি দর্শন করা উচিত। তুমি এখন বৃন্দাবনে যাও,পরে গৌড় হয়ে নীলাচলে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিও।এই বলিয়া মহাপ্রভু ভট্টাচার্যের সঙ্গে কাশীধামে যাত্রা করলেন।শ্রীরূপ প্রভুবিরহে অত‍্যন্ত শোকাকুল হয়ে পড়লেন।অবশেষে তিনি বল্লভকে সঙ্গে নিয়ে বৃন্দাবনে গমন করলেন।*
👣👣👣👣👣👣🙏👣👣👣👣👣👣👣
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🔜 ক্রমাগত 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 একাদশ ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/gouranga11.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

   ꧁👇 📖 সূচীপত্র ✍️ শ্রী জয়দেব দাঁ 📖 👇꧂



✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧


✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

   ✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️ 
নিবাস- বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ- বাঁশবাড়ী, থানা- ইংরেজ বাজার, জেলা- মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ, পিন কোড- ৭৩২১০১।

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

  *••••┉❀꧁👇🏠Home Page🏠👇꧂❀┅••••* 


✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

    *••••━❀꧁👇 📖 সূচীপত্র 📖 👇꧂❀┅••••* 



✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

     *••••━❀꧁👇📚 PDF গ্রন্থ 📚👇꧂❀┅••••* 


✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
    *••••┉━❀꧁ 🙏 রাধে রাধে 🙏 ꧂❀━┅••••* 
                   শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ
              হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।।
  *••••┉━❀꧁ 🙏 জয় জগন্নাথ 🙏 ꧂❀━┅••••*
              হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
              হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥
  *••••┉━❀꧁ 🙏 জয় রাধাকান্ত 🙏 ꧂ ❀━┅••••*
   🌷❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀🌷
   🏵️❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀🏵️
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧





শেষ ৩০ দিনের পোস্টের মধ্যে সর্বাধিক Viewer নিম্নে :-

শ্রীকৃষ্ণ লীলা 🙏 সূচীপত্র ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_74.html

শিবরাত্রি ব্রতকথা 🙏 ১০৮ নাম 🙏 মন্ত্র সমূহ 🙏 শিবরাত্রি ব্রত কি ভাবে পৃথিবীতে প্রচলিত হল❓শিবরাত্রি ব্রত পালনে কি ফল লাভ হয় ❓শিবরাত্রি ব্রত পালন কি সকলেই করতে পারেন ❓🙏 সকল ভক্ত 👣 চরণে 👣 অসংখ্যকোটি 🙏 প্রণাম 🙏শ্রী মৃন্ময় নন্দী 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/02/shib.html

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নৌকা গঠন তত্ব ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 https://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_22.html

🙇 রাধে রাধে 🙇 শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ 👏 হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।। 🙇 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/09/today.html

শ্রীঅম্বরীষ মহারাজের ছোট রানী 🙏 চারিযুগের ভক্তগাঁথা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/12/blog-post_97.html

মনোশিক্ষা 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 🙏 শ্রীযুক্ত প্রেমানন্দ দাস ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/jaydeb_14.html

বকরূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে চারটি প্রশ্ন করেছিলেন সেই প্রশ্নই বা কি? ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/05/blog-post_98.html

শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু 🥀 সংক্ষিপ্ত কথন 🙏 প্রথম ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/01/mohaprobhu-joydeb-dawn.html

শ্রীআমলকী একাদশী ব্রতের মাহাত্ম‍্য কি ❓ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/ekadoshi.html

*নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলং শুকমুখাদকমৃতদ্রবসংযুতম্।**পিবত ভাগবতং রসমালয়ং মুহুরহো রসিকা ভূবি ভাবুকাঃ।।*✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/09/blog-post_89.html