🚩🚩🚩🙇🙇🙇 রাধে রাধে 🙇🙇🙇🚩🚩🚩

শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 একাদশ ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/gouranga11.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🔙 পূর্ব লীলা 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 দশম ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/12/gouranga10.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 একাদশ ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/gouranga11.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 একাদশ ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/gouranga11.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১০১)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
             *শ্রীরূপ-সনাতন সম্মিলন*
             <><><><><><><><><><>
*🍁মহাপ্রভু বারাণসী ধামে প্রবেশ করবার সময়,চন্দ্রশেখর এসে তাঁর চরণে মস্তক নত করে দন্ডবৎ প্রণাম করে বললেন,প্রভো!আমি গতকাল রাত্রিতে আপনার আগমনের স্বপ্ন দেখে,আপনাকে নিয়ে যাবার জন্য এখানে অপেক্ষা করছি।এই বলে তিনি গৌরহরিকে নিজ ভবনে নিয়ে গেলেন।শ্রীচৈতন‍্যদেবের আগমন বার্তা শুনে তপনমিশ্র এসে উপস্থিত হলেন এবং নিমন্ত্রণ করে তাঁকে নিজ ভবনে নিয়ে গেলেন।চন্দ্রশেখরের ভবনেই মহাপ্রভুর বাসস্থান নির্দিষ্ট হল।*
*শ্রীরূপ যখন শ্রীবৃন্দাবনে গমন করেন,তখন সনাতন বন্দিদশায় কারাগারে আছেন।শ্রীরূপ সনাতনকে লিখিলেন,আমি আর অনুপম শ্রীচৈতন‍্যের দর্শন অভিলাষী হয়ে বৃন্দাবন যাত্রা করছি ; আমি মুদির কাছে দশহাজার মুদ্রা রেখে গেলাম ; তুমি ঐ মুদ্রা নিয়ে,কারামুক্ত হবার জন্য চেষ্টা করবে এবং মুক্তি পেয়েই বৃন্দাবনে যাবে।শ্রীরূপ গোস্বামীর পত্র পেয়ে মহাপ্রভুর কাছে যাবার জন্য ব‍্যাকুল হয়ে উঠলেন। তিনি কারাধ‍্যক্ষকে বললেন, "মিঞাসাহেব" আপনি জানেন,কোন ব‍্যক্তির বন্ধন মোচন করতে পারলে, ভগবান তার সংসার-বন্ধন বিমোচন করে দেন।আমি এজীবনে আপনার যে উপকার করেছি,তার প্রত‍্যুপকার স্বরূপ আমাকে যেকোন প্রকারে মুক্ত করার চেষ্টা করুন।এই কথা বলে সনাতন তাঁকে পাঁচহাজার মুদ্রা দিবেন বললেন।কারাধ‍্যক্ষ বললেন, আমি আপনাকে কারামুক্ত করলে হোসেন শাহ ভীষণ ক্রুদ্ধ হবেন ; সেজন‍্য আমাকেও তার ফলভোগী হতে হবে।সনাতন তার উত্তরে বললেন,রাজা এখন যুদ্ধে যাচ্ছেন,আর ফিরবেন কি না,তার কোন নিশ্চয়তা নাই।আমার বিষয় জিজ্ঞাসা করলে বলবেন যে, তিনি কোথায় পালিয়ে গেছেন,তা আমি বলতে পারব না।সনাতন তারপরে সাতহাজার মুদ্রা তাঁকে দিতে রাজী হলেন ; কারাধ‍্যক্ষ এবার আর লোভ সম্বরণ করতে পারলেন না।লোক দ্বারা মুদির কাছ হতে মুদ্রা আনিয়ে কারাধ‍্যক্ষের সামনে ধরলেন, কারাধ‍্যক্ষ টাকাগুলি বা মুদ্রা গ্রহণ করলেন, এবং সনাতনকে সঙ্গে নিয়ে গঙ্গার পরপারে রেখে আসিলেন। সনাতন কারাগার হতে যাবার সময় ঈশান নামক এক বিশ্বস্ত ভৃত‍্যকে সঙ্গে নিয়ে বৃন্দাবনের দিকে রওনা হলেন।তাঁরা যেতে যেতে ঘন বৃক্ষে ভরা জঙ্গল দিয়ে চলতে লাগলেন, চলতে চলতে "পাতড়া" নামক এক পর্বতের কাছে উপস্থিত হন।এখানে ভূঞা নামক এক দস‍্যু বাস করে পথিকদের সর্বস্ব লুঠ করে নিত।ভূঞার কাছে এক গণক সবসময় বাস করে, পথিকের কাছে কি আছে গণনা দ্বারা তা জেনে দস‍্যুপতিকে জানাত।সনাতন ঈশানকে নিয়ে পাতড়া পর্বতে উপস্থিত হলে,জ‍্যোতিষী গণনা দ্বারা ঈশানের কাছে আটটি মোহর আছে, জেনে ভূঞাকে জানাল।দস‍্যু অর্থলোভে সনাতনকে খুব আদর অভ‍্যর্থনা করে তাঁদেরকে খুব ভাল করে ভোজনের ব‍্যবস্থা করে দিলেন।সনাতন রাজমন্ত্রী ছিলেন ; তাঁর বুদ্ধি সুতীক্ষ্ণ।তাঁদের প্রতি ভূঞার এরকম আদর যত্ন দেখে ভূঞার কাজের উপর তাঁর ভীষণ সন্দেহ হল।তিনি গোপনে ঈশানকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কাছে কি কিছু অর্থ আছে?ঈশান বলল, আমার কাছে সাতটি মোহর আছে। তখন সনাতন বললেন, "ও কাল যম কেন সঙ্গে করে এনেছ?" তখন সনাতন গোস্বামী ভূঞার হাতে সাতটি মোহর দিয়ে বললেন, আমাকে পাতড়া পর্বত পার করে দাও ; আমি রাজবন্দী,আমি প্রকাশ‍্য পথে যাব না। নির্জন বনপথে যেতে চাই।দস‍্যু তখন ঈষৎ হেসে বলল, তুমি বেশ বুদ্ধিমান লোক,আমি গণকের দ্বারা তোমার কাছে আটটি মোহর আছে জেনেছিলাম।আমি তোমার মোহর নিতে ইচ্ছা করি না।সনাতন বললেন, আমি সেটি আমার কাছে রেখে কি করব,পথে অন‍্য দস‍্যু জানতে পারলে কেড়ে নিবে।ভূঞা তারপর সনাতনের সঙ্গে একজন বিশ্বস্ত লোক দিয়ে,তাঁকে পাতড়া পর্বত পার করে দিতে বলল।ভক্ত ও বিশ্বাসী সনাতন, তার সঙ্গে নিবিড় জঙ্গল ও পর্বতশ্রেণী অতিক্রম করে চলতে লাগলেন।ভূঞার ভৃত‍্য সনাতনকে পর্বত পার করে দিয়ে ফিরে আসিল।কিছুদূর গমন করলে,সনাতন ঈশানকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার সঙ্গে কি আর একটি মোহর আছে? ঈশান তা স্বীকার করলে তিনি তাকে সেখান হতে ঐ মোহর নিয়েই বিদায় নিতে বললেন।ঈশান নিজ ঘরের দিকে প্রত‍্যাগমন করল।*
*বৈরাগী ভক্ত সনাতন,হরিনাম করতে করতে একাকী চলতে লাগলেন।যেতে যেতে তিনি মজঃফরপুরের অন্তর্গত হাজিপুর নামক জায়গায় উপস্থিত হলেন।তাঁর ভগিনীপতি শ্রীকান্ত একজন বিখ‍্যাত রাজকর্মচারী।তিনি হাজিপুরে এক উদ‍্যানের ভেতরে বিরাট অট্টালিকার মধ্যে বাস করছিলেন।এমন সময় হরিগুণ কীর্তনের শব্দ তাঁর শ্রুতিগোচর হল।কন্ঠস্বর সনাতনের বলে তাঁর মনে হওয়ায় তিনি প্রাসাদ ভবন হতে দেখলেন,সত‍্যই সনাতন,ছিঁড়া কাঁথা গায়ে দিয়ে বৃক্ষতলে বসে হরিগুণ কীর্তন করছেন।শ্রীকান্ত তাঁর সামনে উপস্থিত হয়ে,কাঁদতে কাঁদতে বললেন,যিনি অতুল ঐশ্বর্য‍্যের মধ্যে বাস করছিলেন,তাঁর আজ একি দশা?তিনি সনাতনকে মলিন ছিন্ন কাঁথা পরিত‍্যাগ করতে বলে একটি উৎকৃষ্ট শাল বা ভোটকম্বল দিলেন।সনাতন তা কিছুতেই গ্রহণ করছিলেন না।অবশেষে শ্রীকান্তের একান্ত অনুরোধে তিনি সেই ভোটকম্বল গ্রহণ করলেন।রাজমন্ত্রী অতুল ঐশ্বর্য‍্যশালী সনাতন আজ পথের ভিখারী হলেন দেখে,শ্রীকান্ত বিষাদিত অন্তরে নয়নের জল ফেলতে ফেলতে নিজ ভবনে গমন করলেন।*
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌻🌹🌹🌹🌹🌹🌹
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 একাদশ ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/gouranga11.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১০২)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
             *শ্রীরূপ-সনাতন সম্মিলন*
             ^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*🌻সনাতন ভোটকম্বল গায়ে দিয়ে কিছুদিন পরে কাশীধামে উপনীত হলেন।গৌরাঙ্গ দর্শনের জন্য তাঁর প্রাণ ব‍্যাকুল হয়েছে।লোকমুখে জানতে পারলেন যে,মহাপ্রভু চন্দ্রশেখরের বাড়ীতে আছেন।তিনি দুইহাতে দুইগুচ্ছ ও দন্তে তৃণ ধরে চন্দ্রশেখরের বাড়ীর বহির্দ্বারে গিয়ে দাঁড়ালেন।মহাপ্রভুর কাছে একটি সংবাদ গেল যে,একজন ফকির বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে,মহাপ্রভুর আদেশে সনাতনকে তাঁর কাছে নিয়ে যাওয়া হল।সনাতনকে দেখে মহাপ্রভুর প্রাণ আনন্দে উথলিয়ে উঠিল।তিনি তাঁকে প্রেমভরে আলিঙ্গন করতে গেলেন, তখন সনাতন বললেন, আমি অধম নীচজাতি, আমাকে স্পর্শ করবেন না।এইকথা বলে তিনি কাঁদতে লাগলেন। প্রেমময় মহাপ্রভু তাঁকে বসিয়ে স্নেহময়ী মায়ের মত তাঁর অঙ্গে নিজের সুকোমল হাত বুলাতে লাগলেন।মহাপ্রভু বললেন,সনাতন দৈন‍্য সম্বরণ কর!তোমার দীনতা দেখে আমার বক্ষ ফেটে যাচ্ছে। তারপর গৌরহরি সনাতনকে তাঁর কারামুক্তির কথা জিজ্ঞাসা করলে,তিনি আদ‍্যপান্ত সমস্ত বিষয় জানালেন। এক মহারাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণ সনাতনকে কাশীতে থাকাকালীন তাঁর ভবনে ভোজনের জন্য অনুরোধ করেন, সনাতন তাতে রাজী না হয়ে বললেন,আমি ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করব।সনাতন বারাণসীর দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।বৈরাগ‍্য ও ভক্তিপথাবলম্বী সনাতনকে ক্ষৌর করাবার জন্য,মহাপ্রভু চন্দ্রশেখরকে আদেশ করলেন।ক্ষৌরকার্য‍্য সমাধা হল।স্নানান্তে চন্দ্রশেখর তাঁকে একটি নতুন বস্ত্র পরিধান করবার জন্য দিলেন। কিন্তু সনাতন তা গ্রহণ না করে একটি পুরাতন বস্ত্র প্রার্থনা করলেন।চন্দ্রশেখর নতুন সন্ন‍্যাসীর ইচ্ছা অনুসারেই কাজ করলেন।সনাতন পুরাতন বস্ত্রটি পেয়ে তা দুইখন্ড করে অর্দ্ধাংশ পরিধান করলেন, অপরার্দ্ধাংশ বহির্বাস করলেন।শ্রীকান্তের দেওয়া ভোটকম্বলটি তখনও পর্যন্ত তিনি ব‍্যবহার করছিলেন, কিন্তু মহাপ্রভু বারবার সেই জিনিসটির প্রতি দেখছেন, তা সনাতন দেখে বুঝলেন,সন্ন‍্যাসীর পক্ষে এ মূল‍্যবান ভোটকম্বল ব‍্যবহার মহাপ্রভুর অপছন্দ,তিনি তখুনি কিছু দূরে গমন করে,এক দরিদ্রকে ঐ কম্বলটি দিয়ে তার ছেড়া কাথা নিলেন। নিয়ে সেটি গায়ে দিয়ে মহাপ্রভুর নিকট আসিলেন।শ্রীচৈতন‍্যদেব সনাতনের কার্য‍্যে অত‍্যন্ত পুলকিত হয়ে বললেন, "কোন ভাল বৈদ‍্য কি রোগের শেষ রেখে দেয়?" মহাপ্রভু দুইমাস কাশীধামে থেকে সনাতনকে ভক্তিতত্ত্ব উপদেশ শিক্ষা দান করেন।শ্রীকৃষ্ণই জগতের আদি কারণ, ও ব্রহ্মান্ডের অধিপতি ; তাঁর বহু অবতার। শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্য এইভাবে ভক্তির অতি নিগূঢ় তত্ত্ব সব তাঁকে শিক্ষা দান করলে,সনাতন বললেন,আপনি সার্বভৌম ভট্টাচার্যের নিকট "আত্মারামশ্চ মুনয়ো" শ্লোকের আঠার প্রকার ব‍্যাখ‍্যা করেছিলেন তা আমার শুনতে অত‍্যন্ত বাসনা হচ্ছে।গৌরহরি বললেন,আমি তখন কি পাগলামী করেছিলাম এখন আমার তা স্মরণে আসছে না।তারপর তাঁর মনে কি এক উৎসাহের সঞ্চার হল, তিনি ঐ শ্লোকের একষট্টি প্রকার ব‍্যাখ‍্যা করলেন।সনাতন মহাপ্রভুর অত‍্যাশ্চর্য‍্য শক্তি দেখে বিমুগ্ধ হয়ে গেলেন।শ্রীচৈতন‍্য তাঁকে বৃন্দাবনে বাস করে,নরনারীর কল‍্যাণের জন্য ভক্তিগ্রন্থ রচনা, ও লুপ্ত বৃন্দাবনের পুনরুদ্ধার করবার জন্য আদেশ করলেন।সনাতন বললেন, মহাপ্রভু! আমি ভক্তিগ্রন্থ রচনা করব আমার এমন কি শক্তি আছে?আপনি যদি কৃপা করেন তবেই এই কাজে রত হতে পারি।গৌরসুন্দর তাঁর গ্রন্থ রচনার জন্য মূল সূত্র সব রচনা করে দিলেন।সনাতন মহাপ্রভুর শ্রীচরণে প্রণাম করে বৃন্দাবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন।*
*কাশীধাম সন্ন‍্যাসীদের লীলাক্ষেত্র বললে বেশী বলা হয় না।ইঁনাদের মধ্যে অনেকেই শুষ্ক জ্ঞান আলোচনায় অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেন।ভক্তির সুমিষ্ট রসাস্বাদনে ইঁনাদের সেরকম ভাব দেখা যায় না।শ্রকচৈতন‍্য যখন বারাণসীতে থাকাকালীন,তিনি ইঁনাদের সঙ্গে মেলামেশা করতেন না।একাকী কৃষ্ণ-প্রসঙ্গে ও সনাতনের শিক্ষায় দিন অতিবাহিত করতেন।*
*🍀প্রকাশানন্দ প্রমুখ দন্ডী সন্ন‍্যাসীরা শ্রীচৈতন‍্যকে ভাবুক বলে নিন্দা করতেন।চন্দ্রশেখর,তপন মিশ্র ও মহারাষ্ট্রীয় ব্রাহ্মণ মহাপ্রভুর কাছে গিয়ে বললেন, প্রকাশানন্দের শিষ‍্যরা সর্বদাই আপনার নিন্দা করে থাকে। গৌরহরি তাঁদের কথা শুনে মৃদু হাসলেন।একদিন এক বিপ্র মহাপ্রভুর কাছে এসে বললেন,আজ প্রকাশানন্দ স্বামী ও এ জায়গার সমস্ত দন্ডী ও সন্ন‍্যাসী মিলিত হবেন।আপনাকে সেই সভায় উপস্থিত হবার জন্য সাদরে আহ্বান করছি। আপনি আজ মধ‍্যাহ্নে সভায় উপস্থিত হয়ে আমাদেরকে সুখী করবেন। শ্রীচৈতন‍্যদেব যথাসময়ে সভাতে উপস্থিত হলেন।সভাগৃহ বহু লোকে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে।শ্রীচৈতন‍্য সভায় প্রবেশ করে এক পার্শ্বে বসে পড়লেন।মহাপ্রভুর রূপ দর্শন করে প্রকাশানন্দ নিজের কাছে মধ‍্যস্থলে বসতে বললে, মহাপ্রভু অতি বিনীতভাবে বললেন,আমি সামান্য সন্ন‍্যাসী, উচ্চস্থলে বসবার উপযুক্ত নই। প্রকাশানন্দ তৎক্ষণাৎ তাঁর হাত ধরে তাঁকে নিজের কাছে বসালেন।সভাতে কাশীর প্রধান পন্ডিতগণ সকলেই উপস্থিত ছিলেন।*
*অদ্বৈতবাদ সম্বন্ধে বিচার আরম্ভ হ'লে,মহাপ্রভু একে একে অদ্বৈতবাদের সপক্ষের যুক্তিগুলি খন্ডন করতে লাগলেন।জীব ও ব্রহ্ম যে এক হতে পারে না,এ বিষয়ে তিনি অতি যুক্তি সহকারে প্রতিপন্ন(প্রমাণ সিদ্ধ) করলে,তাঁর বুদ্ধির প্রাখর্য‍্য (তীক্ষ্ণতা)দেখে পন্ডিতমন্ডলী নিরুত্তর হয়ে রইলেন।বৈদান্তিকদের শিরোভূষণ প্রকাশানন্দ সরস্বতী বেদান্তের নিগূঢ় ও সুললিত ব‍্যাখ‍্যা শুনে অবাক হয়ে গেলেন।সকলেই একসুরে শ্রীচৈতন‍্যদেবের জয় ঘোষণা করতে লাগলেন।তারপর গৌরহরি গৃহে এসে চন্দ্রশেখর,তপন মিশ্র ও মহারাষ্ট্রীয় বিপ্রকে হেসে বললেন, "আমার ভাবকালি এখানে বিক্রয় হবে না শুনেছিলাম ; কিন্তু দেখছি বিক্রি হয়ে গেল।মহাপ্রভুর ভক্তগণ আনন্দে পুলকিত হয়ে উঠলেন।*
*শ্রীচৈতন‍্য একদিন বিন্দুমাধব মন্দিরের সামনে ভক্তগণ সহ ভাবে বিভোর হয়ে হরিনাম সংকীর্তন করছেন,এমন সময় প্রকাশানন্দ মহাপ্রভুর নৃত্য ও তাঁর স্বর্গীয় রূপমাধুরী দেখে বিমুগ্ধ হয়ে তাঁর চরণ বন্দনা করতে লাগলেন।করুণাময় মহাপ্রভুও তৎক্ষণাৎ তাঁর চরণ ধরে বললেন,আপনি জগদ্ গুরু, আমি আপনার শিষ‍্যস্থানীয় হবার উপযুক্ত নয়।তখন প্রকাশানন্দ বললেন,তুমি মানব নহ ; সাক্ষাৎ ভগবানের অবতার।অবশেষে উভয়ে সেখানে বসিলেন।তত্ত্বজ্ঞানের প্রসঙ্গ আরম্ভ হ'ল।শ্রীচৈতন‍্যদেব প্রকাশানন্দের প্রশ্নের সদুত্তর দিয়ে ভক্তির মহিমা কীর্তন করলেন।বৈদান্তিক চূড়ামণির জ্ঞানগর্ব খর্ব হয়ে গেল।তিনি মধুর ভক্তিরসের রসিক হয়ে শ্রীচৈতন‍্যদেবের পথাবলম্বী হলেন! শুকনো বারাণসী ভূমিতে ভক্তির স্রোত বহিতে লাগল ; হরিনামের মধুর ধ্বনিতে চারিদিক মুখরিত হয়ে উঠিল। শ্রীপাদ কবিরাজ বলেছেন=*
*🌷সব কাশীবাসী করে নামসংকীর্তন।*
*🌷প্রেমে হাসে কান্দে গায় করয়ে নর্তন।।*
*🌷সন্ন‍্যাসী পন্ডিত করে ভাগবত বিচার।*
*🌷বারাণসী মহাপ্রভু করিল নিস্তার।।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙌🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 একাদশ ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/gouranga11.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১০৩)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
     *নীলাচলে শ্রীরূপের আগমন*
     ☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
*☘শ্রীচৈতন‍্য মহাপ্রভু বৃন্দাবন হতে নীলাচলে আগমন করলেন।সন্ন‍্যাস গ্রহণের পর হতে ছয় বৎসর কাল নানাতীর্থ পরিভ্রমণে অতিবাহিত হল।এখন হতে অবশিষ্ট অষ্টাদশ বর্ষ তিনি শ্রীক্ষেত্রেই অতিবাহিত করেছিলেন।বঙ্গদেশ হতে বছর বছর রথোৎসবের সময় ভক্তগণ পুরুষোত্তমে আগমন করে,চারমাস কাল অবস্থান করে,মহাপ্রভুর সঙ্গে ভক্তিতত্ত্ব আলোচনায় ও কীর্তনাদিতে যাপন করলেন।তারমধ‍্যে বার-বৎসর গম্ভীরা কক্ষে থেকে সাড়েতিনজন রসের পাত্রকে নিয়ে ব্রজের লুপ্ত লীলা প্রকাশ করেছিলেন।মহাপ্রভুর সন্ন‍্যাস গ্রহণের পর তাঁরা বহু বৎসর কাল নীলাচলে আগমন করেছিলেন।অষ্টাদশ বৎসরের মধ্যে শেষ দ্বাদশ বৎসর মহাপ্রভু সর্বদা ভগবৎ-প্রেমরসেই মগ্ন হয়ে থাকতেন।এই প্রেম বিহ্বলতায় তিনি কখন ভূমিতে মুখ রগড়াতেন ; সময়ে সময়ে প্রলাপ বাক‍্য বলতেন ; অনিদ্রায় নিশি যাপন করতেন, এবং কৃষ্ণ বিরহে সময়ে সময়ে মূর্ছিত হয়ে পড়তেন।*
*মহাপ্রভু নীলাচলে আসিবার পূর্বেই শ্রীরূপ প্রয়াগে গৌরহরির নিকট তত্ত্বোপদেশ লাভ করে বল্লভের সঙ্গে বৃন্দাবনে গমন করেন।সেখানে শ্রীরূপের মনে নাটক রচনার বাসনা উদিত হয় এবং সেখানেই তিনি গ্রন্থ সূচনা করেন।তারপর দুই ভাই বারাণসী হয়ে গৌড়দেশে যাত্রা করেন।কিন্তু বল্লভ যাত্রাকালীন পথেই মানবলীলা শেষ করেন।শ্রীরূপ নবদ্বীপে গিয়ে শুনলেন,মহাপ্রভুর ভক্তবৃন্দ বাৎসরিক রথোৎসব দর্শন করবার জন্য নীলাচলে যাত্রা করছেন, তিনিও স্থির থাকতে পারলেন না,গৌরহরির নিকট পুরীধামে পূণ‍্যভূমিতে যাত্রা করলেন।কৃষ্ণভক্ত পরম বৈরাগী শ্রীরূপ মনের আনন্দে বন,উপবন ও নদনদীর সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে চলতে লাগলেন ; বিশ্রামের জন্য কোন পান্থশালায় উপস্থিত হতেন,তখন মনের কল্পনাগুলি লিখে রাখতেন।উৎকল দেশে আসবার সময় শ্রীরূপ সত‍্যভামাপুর নামে কোন গ্রামে বিশ্রামের জন্য রাত্রি যাপন করেন।তিনি যখন নিদ্রায় মগ্ন,তখন স্বপ্নে কোন সুন্দরী নারী তাঁর সামনে প্রকাশিত হয়ে বলেন,নাটক দুই ভাগে বিভক্ত করে রচনা কর।তোমার মনোকামনা পূর্ণ হবে।শ্রীরূপ সেই স্বপ্নদৃষ্টা দেবীর কথা শিরোধার্য‍্য করে গ্রন্থে বিষয় চিন্তা করতে করতে নীলাচলে আগমন করলেন, এবং ভক্ত হরিদাসের কুটিরে আতিথ‍্য গ্রহণ করলেন।হরিদাস শ্রীরূপকে দর্শন করে পরম পুলকিত হলেন।শ্রীচৈতন‍্যদেব প্রতিদিন হরিদাসের কুটিরে আগমন করতেন।তিনি যখন সেখানে আগমন করলেন, তখন শ্রীরূপ মহাপ্রভুর দর্শনমাত্র চরণে পড়ে দন্ডবৎ প্রণাম করলেন।*
👣👣👣👣👣👣👣👣👣👣👣👣👣
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 একাদশ ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/gouranga11.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১০৪)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
      *নীলাচলে শ্রীরূপের আগমন*
      ••••••••••••••••••••••••••••••••••
*🍀নামাচার্য‍্য হরিদাস মহাপ্রভুকে বললেন,শ্রীরূপ তোমাকে প্রণাম করেছে।তখন গৌরহরি শ্রীরূপের হাত ধরে মাটি থেকে তুলে তাঁকে প্রেমভরে আলিঙ্গন করলেন।তারপর শ্রীচৈতন‍্যদেব তাঁকে সনাতনের কথা জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বললেন, সনাতনের সঙ্গে আমার আর সাক্ষাৎ হয়নি, আমি প্রয়াগে এসে শুনলাম তিনি বৃন্দাবনে গমন করেছেন।শ্রীরূপ তৎপর বল্লভের পরলোক গমনের কথা মহাপ্রভুকে বললেন।মহাপ্রভু তাঁর প্রিয় বল্লভের পরলোকগমনের খবর পেয়ে অত‍্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করলেন।সে সময় গৌড়ীয় ভক্তগণ নীলাচলে আগমন করেছিলেন,সকলের আগমনে পুরুষোত্তমে যেন ভক্তির ঢেউ বইতেছিল।শ্রীরূপ এই ভক্ত সম্মিলনের সময় উপস্থিত হয়েছেন।গৌরহরি অতুল ঐশ্বর্য‍্যত‍্যাগী পরমভক্ত শ্রীরূপের সঙ্গে অদ্বৈতাচার্য‍্য প্রভৃতি ভক্তদের পরিচয় করিয়ে দিলেন।শ্রীরূপও গৌড়ীয় ভক্তদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে পরম পুলকিত চিত্তে ও বিনয়াবনত মস্তকে সকলের চরণ স্পর্শ করে দন্ডবৎ প্রণাম করলেন।*
*🍁রথযাত্রার উৎসব আরম্ভ হল।অন‍্যান‍্য বৎসরের ন‍্যায় এবারও মহাপ্রভু ভক্তগণসহ গুন্ডিচা মন্দির সংস্কার করে আইটোটা এসে কয়েকদিন সময় অতিবাহিত করলেন।যখন জগন্নাথদেব রথারোহণে গুন্ডিচার দিকে গমন করেন,তখন মহাপ্রভু রথের আগে নৃত্য করতে করতে গমন করবার সময় এইটি শ্লোক পড়তে লাগলেন।সেই শ্লোকের ভাবার্থ অন‍্য কেউ বুঝতে সক্ষম হলেন না ; কিন্তু ভাবগ্রাহী শ্রীরূপ গোঁসাই মহাপ্রভুর শ্লোকের ভাবার্থ বুঝে সেই সময় একটি রচনা করেন।পরদিন তিনি তালপত্রে সেই শ্লোকের ভাবার্থ লিখে চালের বাতায় গুঁজে রেখে সমুদ্র স্নান করতে গেলেন।এমন সময় গৌরহরি এসে চালের বাতায় তালপত্র দেখে সেটি নিয়ে পাঠ করে অপার আনন্দ লাভ করলেন।শ্রীরূপ স্নান করে ফিরে এসে দেখলেন,মহাপ্রভু সেই তালপাতায় লেখা শ্লোক পাঠ করছেন।শ্রীরূপকে দেখেই মহাপ্রভু তাঁকে গাঢ় আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে বললেন, রূপ!তুমি কিভাবে আমার মনের ভাব বুঝে এমন চিত্তাকর্ষক শ্লোক রচনা করলে?রূপ গোঁসাই বললেন, প্রভো!তুমিই আমাকে কৃপা করেছ বলেই তো,তোমার হৃদয়ের ভাব আমি অবগত হয়েছি। আমার নিজস্থ কোন শক্তি নেই। তারপর চাতুর্মাস‍্য করে গৌড়ীয় ভক্তগণ স্বদেশে প্রত‍্যাগমন করলে মহাপ্রভু সার্বভৌম ভট্টাচার্য্য ও রায় রামানন্দ প্রভৃতির সঙ্গে স্বরূপ গোস্বামীর পরিচয় করিয়ে দিলেন।একদিন জনসমক্ষে মহাপ্রভু শ্রীরূপকে তাঁর স্বরচিত নাটক পাঠ করতে বললেন।শ্রীরূ প্রথমত নিজের রচিত গ্রন্থের বিষয় পন্ডিতমন্ডলীর মধ্যে পাঠ করতে লজ্জা বোধ করে কিছুক্ষণ মস্তক নত করে রইলেন। কিন্তু গৌরহরির কথা রক্ষা করতেই হবে ; মনে ভেবে তিনি অবশেষে পাঠ করতে লাগলেন।সভার সকলেই তাঁর নাটকের বিষয় শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলেন। সার্বভৌম,রামানন্দ,স্বরূপদামোদর প্রভৃতি ভাবগ্রাহী সুপন্ডিতগণ তাঁর রচিত নাটকের বিশেষ প্রশংসা করতে লাগলেন।শ্রীরূপ গোস্বামী তারপর নীলাচলে এক বৎসর বসবাস করে বৃন্দাবনে গমন করেন, এবং সেখানে দুইভাই ভক্তিবিষয়ক বহু গ্রন্থ রচনা করেন।*
🙏🙏🙏🌷🌷🌷🙏🙏🙏🪷🪷🪷🦚
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 একাদশ ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/gouranga11.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১০৫)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
 *ছোট হরিদাসের প্রতি দন্ডবিধান*
  ^^^^^^^^^^^^*^^^^^^^^^*^^^^^^^^
*🍀পুরীধামে ভগবান আচার্য‍্য নামে একজন সুপন্ডিত পরম বৈষ্ণব বাস করতেন।ইঁনার পিতার নাম শতানন্দ খান।শতানন্দ ঐশ্বর্য‍্যশালী ব‍্যক্তি ছিলেন ; কিন্তু ঐশ্বর্য‍্যের মধ্যে বাস করেও ইনি বিষয়ে অনাসক্ত ছিলেন।তাঁর পুত্র ভগবান আচার্য‍্য ভক্তচূড়ামণি শ্রীচৈতন‍্যদেবের বড় অনুরক্ত(অনুরাগী) ছিলেন। ভগবান আচার্য‍্য সুপন্ডিত ও ভক্ত হয়েও রন্ধন কার্য‍্যে বড় সুপটু ছিলেন। তিনি সময়ে সময়ে মহাপ্রভুকে নিমন্ত্রণ করে নানান ব‍্যঞ্জন দ্বারা ভোজন করাতেন।একদিন গৌরহরিকে ভোজন করাবার জন্য ভগবান আচার্য‍্য ছোট হরিদাসকে শিখি মাহিতির বোন বৃদ্ধা ধর্মপরায়ণা মাধবী দাসীর নিকট হতে এক মণ ভাল চাল আনবার জন্য পাঠালেন।হরিদাস আচার্য‍্যের কথা অনুসারে তাইই করলেন। ভগবান সেই তন্ডুলে অন্ন ও বিবিধ ব‍্যঞ্জন তৈরী করলেন।মহাপ্রভু যখন আচার্য‍্যের ভবনে আহার করতে বসলেন,তখন অন্নের সুগন্ধিতে মুগ্ধ হয়ে ভগবান আচার্য‍্যকে জিজ্ঞাসা করলেন, এ চাল কোথায় পেলে?আচার্য‍্য বললেন, ছোট হরিদাসকে আমি মাধবী দাসীর নিকট হতে চেয়ে আনতে বলেছিলাম,হরিদাস তাঁর কাছ হতে এই চাল নিয়ে এসেছে।মহাপ্রভু তখন কিছু না বলে ভোজনান্তে গৃহে গমন করে ভৃত‍্য গোবিন্দকে ডেকে বললেন, "ছোট হরিদাসকে আজ হতে এখানে আসতে নিষেধ করিও।"*
*🌺ছোট হরিদাস খুবই সুন্দর কীর্তন করতে পারতেন,সেজন‍্য তিনি মহাপ্রভুর বাসায় থেকে মধুর কীর্তন করে তাঁর প্রাণে আনন্দ দিতেন।কীর্তনীয়া হরিদাস নারীর নিকট হতে ভিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন বলে শ্রীচৈতন‍্যদেব তাঁর মুখ দেখবেন না বলে স্থির করলেন।হরিদাস যখন শুনলেন, মাধবী দাসীর নিকট হতে তিনি চাল এনেছিলেন বলে মহাপ্রভু আর তাঁর মুখ দেখবেন না বলে মনে সঙ্কল্প করেছেন,তখন তাঁর হৃদয়-মন যেন দুঃখে ভরে উঠিল।মহাপ্রভুর কৃপা হতে বঞ্চিত হওয়ার মত মহাকষ্ট আর কি হতে পারে!ছোট হরিদাস এ কঠোর দন্ডের কথা শুনে অনাহারে কয়েকদিন কাটিয়ে দিলেন।মহাপ্রভুর অন‍্যান‍্য ভক্তদের মধ্যে হরিদাসের দন্ডের কথা প্রচার হয়ে গেল।অনেকেই হরিদাসের অপরাধের ক্ষমা প্রার্থনা করবার জন্য গৌরহরির কাছে উপস্থিত হলেন। কিন্তু তিনি তাঁদের কথায় কর্ণপাত না করে নিজ সঙ্কল্পে অটল থাকলেন। প্রভু বললেন, তোমরা আমাকে আর এরকম অনুরোধ করবে না, করলে--,আমি এ জায়গা ত‍্যাগ করে অন‍্যত্র চলে যাব। বৈরাগী হয়ে যে ব‍্যক্তি প্রকৃতি-সঙ্গ করতে চায়,আমি তার মুখ দেখতে চাই না। হরিদাসের জন্য কেউ অনুরোধ করলে, শ্রীচৈতন‍্যদেব এস্থান পরিত‍্যাগ করবেন,এই ভয়ে ভীত হয়ে আর কেউ তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করতে সাহসী হলেন না।ধরাধামে শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্যের সঙ্গ হতে বঞ্চিত হয়ে ছোটহরিদাস মৃতের ন‍্যায় শ্রীক্ষেত্রে বাস করতে লাগলেন।এইভাবে এক বৎসর কেটে গেল।একদিন মনের দুঃখে ও কষ্টে ছোটহরিদাস গৌর বিহনে জীবন বিসর্জন দেওয়াই ঠিক মনে করে প্রয়াগে গমন করলেন, এবং ইহলোকের সব সম্বন্ধ ঘুচিয়ে ত্রিবেণীর খরতর স্রোতে আত্মবিসর্জন করলেন।*
*🍁এ মর-জগতে মানবের দেহান্ত হলে যে তার সঙ্গে সঙ্গে তার আত্মার ও মনের সদ্ গুণরাশি বিনষ্ট হয়ে যায় তা নয়।ব‍্যক্তি বিশেষের প্রতি প্রগাঢ় ভক্তি ও অকৃত্রিম স্নেহ প্রভৃতি সদ্ গুণ চিরতরে ধ্বংস হতে পারে না।ছোটহরিদাসের দুই দিনের শরীর ধ্বংস হল বটে, কিন্তু এ জগতে কীর্তন করে যে ধর্মাত্মার হৃদয়ে তিনি সুধা বর্ষণ করতেন এবং নিজেও সে সুখে ও আনন্দে ভেসে যেতেন, তিনি কি মরণান্তে সে সব একেবারে বিস্মৃত হয়ে যাবেন?কথিত আছে,হরিদিস ত্রিবেণীর জলে জড়দেহ বিসর্জন দিয়ে দিব‍্যদেহ পরিগ্রহ(ধারণ) করে তাঁর ইহলোকের পরমগুরু শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্যের নিকট উপস্থিত হয়ে নিশীথ সময়ে মধুর স্বরে বিভুগুণ-গানে তাঁর চিত্ত হরণ করতেন।*
*এমন সময় একদিন মহাপ্রভু তাঁর পরিত‍্যজ‍্য ছোটহরিদাসকে দেখবার জন্য বাসনা প্রকাশ করেন, এবং সেজন‍্য তাঁকে তাঁর কাছে আনবার জন্য ভক্তদের প্রতি আদেশ করেন। তাঁরা বললেন,এক বৎসর পূর্ণ হ'ল, তিনি কাউকে কিছু না বোলে কোথায় চলে গিয়েছেন, আমরা তা কিছুই জানি না।গৌরহরি নীরব রইলেন। একদিন জগদানন্দ,স্বরূপ-দামোদর প্রভৃতি সমুদ্রে স্নান করতে গমন করেছেন, এমন সময় তাঁরা সুমধুর স্বরে হরিগুণানুকীর্তন শুনতে পেলেন।কন্ঠস্বরে তাঁরা কীর্তনীয়া ছোটহরিদাসেরই কন্ঠধ্বনি বলে বুঝতে পারলেন ; কিন্তু তাঁরা চারিদিকে তাকিয়ে দেখলেন, সেখানে হরীদাস বা অন‍্য কোন মানুষ নাই।হরিদাস অশরীরী হয়ে বিভুনাম কীর্তন করছেন, এটি প্রত‍্যক্ষ অনুভব করে,এক ব‍্যক্তি বললেন,হরিদাস হয়ত চরম মনোকষ্টে আত্মঘাতী হয়ে,ব্রহ্মরাক্ষস হয়ে এইভাবে বাস করছে।স্বরূপ দামোদর তার প্রতিবাদ করে বললেন,হরিদাস আজীবন কৃষ্ণনাম কীর্তনে ও মহাপ্রভুর সেবাতে জীবন অতিবাহিত করেছেন, তিনি কি আর নিকৃষ্টজন্ম লাভ করতে পারেন? এ সকলের পেছনে মহাপ্রভুর লীলা প্রকাশ পাচ্ছে বলেই বোধ হচ্ছে।ইতোমধ‍্যে প্রয়াগ হতে এক বৈষ্ণব পুরুষোত্তমে আগমন করে ছোটহরিদাসের ত্রিবেণীতে দেহত‍্যাগের বার্তা প্রদান করল।হরিদাসের এরকম দেহত‍্যাগের কথা শুনে সকলেই দুঃখিত হলেন।শ্রীচৈতন‍্যপ্রভু যখন শ্রীবাসাদির নিকট হতে এই বার্তা শুনলেন,তখন তিনি "স্বকর্ম ফলভুক্ পুমান্" এইকথা বলেছিলেন।*
🪔🪔🪔🪔🪔🪔🙏🪔🪔🪔🪔🪔🪔
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 একাদশ ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/gouranga11.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১০৬)🙌শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা *মহাপ্রভুর প্রতি দামোদরের উক্তি ও*
*শ্রীসনাতনের শ্রীক্ষেত্রে আগমন।*
☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
*🍀শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্যদেব যদিও সন্ন‍্যাসী কিন্তু তিনি প্রেমের অবতার। বালক যুবক বৃদ্ধ সকলেরই প্রতি তাঁর প্রেম বর্ষিত হত।পুরুষোত্তমে একটি সুন্দর পিতৃহীন ব্রাহ্মণকুমার সতত তাঁর নিকট আসিত।বালকেরা যেখানে ভালবাসা পায়,সেইখানেই তাদের মন ধাবিত হয়।পিতৃহীন সরল সুন্দর ব্রাহ্মণ কুমারটিকে মহাপ্রভু অত‍্যন্ত স্নেহ করতেন। কিন্তু স্বরূপ দামোদরের তা সহ‍্য হত না।ব্রাহ্মণ তনয়টির জননী ছিলেন,অল্পবয়স্কা পতিহীনা সুন্দরী যুবতী।স্বরূপ ভাবলেন,এই ব্রাহ্মণ বালকের প্রতি গৌরহরির স্নেহ দেখে লোকে অন‍্যরকম ভাবতে পারে।এইজন‍্য তিনি একদিন মহাপ্রভুকে বললেন,তুমি অন‍্যকে উপদেশ দিতে পারো ; কিন্তু তুমি কেমন গোঁসাই এবার সব লোকে তা কি ভাল বুঝবে? লোকের মুখ তো চাপা দিতে পারবে না।মহাপ্রভু বললেন,দামোদর!তুমি কি বলছ?দামোদর বললেন, তুমি ঐ ব্রাহ্মণের ছেলেটিকে অত‍্যন্ত ভালবাস, তার মা বিধবা,সুন্দরী যুবতী,আর তুমিও পরম সুন্দর যুবা পুরুষ।বালকের মা তপস্বিনী হলেও, লোকে এই নিয়ে কানাঘুষা করতে পারে।এইসব কথা বলে দামোদর মৌন অবলম্বন করলেন।শ্রীচৈতন‍্যদেব বুঝলেন যে,যাতে লোকের মিথ‍্যা ধারণায়,তাঁর জীবনের মহান কাজের ব‍্যাঘাত না হয়, সে জন্য দামোদর তাঁর যথার্থ হিতাকাঙ্ক্ষীর মতই তাঁকে ভর্ৎসনা করলেন।মহাপ্রভু দামোদরের কথায় মৃদু হেসে, তিনি যে তার হিতৈষী তাইই প্রকাশ করেছিলেন। কয়েকদিন পরে মহাপ্রভু স্বরূপকে ডেকে বললেন, তুমি নবদ্বীপে থেকে আমার জননীর দেখাশুনার ভার গ্রহণ কর।তোমার মত ব‍্যক্তিই এই কাজের উপযুক্ত।স্বরূপ দামোদর মহাপ্রভুর কথা শিরোধার্য‍্য করে নবদ্বীপে গমন করে শচীমাতার গৃহে তাঁদের অভিভাবকের মত বসবাস করতে লাগলেন।*
*🌻শ্রীসনাতনের শ্রীক্ষেত্রে আগমন*
*🌹শ্রীরূপ গোস্বামী কিছুকাল পুরীধামে মহাপ্রভুর সহবাসে থেকে,গৌড়দেশে গমন করলে,তাঁর জ‍্যেষ্ঠ সহোদর শ্রীসনাতন গোস্বামী, মথুরাধাম হতে পুরুষোত্তমে আগমন করলেন। তিনি এই পুণ‍্যক্ষেত্রে আসবার সময়,একাকী ঝারখন্ডের পথ দিয়ে আসবার সময় কখনও সামান্য আহারে, কখন বা অনশনে তাঁকে দিন যাপন করতে হয়েছিল।পথের আরো কষ্টের তো কথায় নাই। এই অস্বাস্থ‍্যকর ঝারিখন্ডের পথে চলতে চলতে তিনি কন্ডুরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন।তাঁর দেহ হতে রক্ত ও রস বাহির হতে লাগল। শরীরের এই অবস্থা দেখে তিনি ভাবলেন,এরকম কন্ডুরোগাক্রান্ত হয়ে শ্রীজগন্নাথ দর্শন ও মহাপ্রভুর কাছে বাস করা সম্ভবপর নয়।অতএব এ জীবন না রাখাই শ্রেয়স্কর বা হিতকর।সনাতন স্থির করলেন, রথযাত্রার দিন জগন্নাথদেব ও মহাপ্রভুকে দর্শন করতে করতে রথেরচাকার নিচে এ দেহপাত করে ভবধাম পরিত‍্যাগ করবেন।এই সঙ্কল্প হৃদয়ে ধারণ করে, তিনি পুরুষোত্তমে আগমন করে ভক্ত হরিদাসের কুটিরে উপস্থিত হলেন।ভক্ত হরিদাস তাঁকে দেখে ভীষণ ভীষণ আনন্দ পেলেন।শ্রীচৈতন‍্যগতপ্রাণ শ্রীসনাতন হরিদাসের কুটিরে মহাপ্রভুর আগমন অপেক্ষা করতে লাগলেন।মহাপ্রভু তাঁর অনুগত ভক্ত হরিদাসের কুটিরে প্রত‍্যেকদিনই একবার করে আসতেন।ইতিমধ‍্যে গৌরহরি এসে উপস্থিত হলেন।সনাতন ও হরিদাস ভক্তিভরে তাঁর চরণে দন্ডবৎ প্রণাম করলেন।মহাপ্রভু সনাতনকে দেখে, মহানন্দে তাঁকে আলিঙ্গন করতে গেলে,সনাতন পিছু সরে বললেন,প্রভু!আমাকে স্পর্শ করবেন না ; আমার সমস্ত অঙ্গ কন্ডুরসে পরিপূর্ণ।আমার মত নীচ,অধমকে স্পর্শ করবেন না।প্রেমাবতার শ্রীচৈতন‍্যদেব সে কথায় কর্ণপাত না করে তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে সনাতনকে আলিঙ্গন করলেন।গৌরের গৌর অঙ্গ কন্ডুরসে পূর্ণ হয়ে গেল। সনাতন মহাপ্রভুর প্রেমে মুগ্ধ হয়ে গেলেন।পরক্ষণেই দেখলেন সনাতনের শ্রীঅঙ্গ পূর্ণরূপে স্বর্ণবর্ণে পরিণত হল।মহাপ্রভু সনাতনকে আলিঙ্গন করবার পর তাঁকে কাছে বসিয়ে, শ্রীরূপের পুরুষোত্তমে আগমন ও তাঁর দশমাসকাল বাস ও বল্পভের ইহলোক হতে পরলোকে গমন সব কথা বললেন।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🌻🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 একাদশ ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/gouranga11.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১০৭)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
 *শ্রীসনাতনের পুরীধামে আগমন*
  ∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆∆
*🍀সনাতন ছোট ভাইয়ের গঙ্গালাভের কথা শুনে অত‍্যন্ত ব‍্যথিত হয়ে নয়নবারি ফেলতে লাগলেন।দিন কয়েকের মধ্যে মহাপ্রভু হরিদাসের কুটিরে এসে সনাতনকে হঠাৎ বললেন, সনাতন! দেহত‍্যাগ করলেই শ্রীকৃষ্ণকে পাওয়া যায় না, দেহত‍্যাগ করলেই যদি শ্রীকৃষ্ণকে পাওয়া যেত,তাহলে আমি কোটিবার দেহত‍্যাগ করতাম।মনে রেখ, ভক্তি ছাড়া তাঁকে কিছুতেই লাভ করা যায় না। সনাতন!তুমি আমাকে আত্মসমর্পণ করেছ,এখন তোমার দেহের উপর আমার সম্পূর্ণ অধিকার ; তুমি স্ব ইচ্ছায় তোমার দেহ বিনাশ করতে পারো না।তোমার দ্বারা আমি অনেক কাজ করাব স্থির করেছি।তুমি লোকদের ভক্তিতত্ত্ব, কৃষ্ণপ্রেমতত্ত্ব ও বৈরাগ‍্যশিক্ষা দান করবে ; লুপ্ত বৃন্দাবন তীর্থ উদ্ধার করবে। আমি নীলাচলে বাস করি। কিন্তু তোমার দেহে যে আমার বিশেষ প্রয়োজন আছে ; আর তুমি এ দেহ বিনাশ করতে চাও? সনাতন মহাপ্রভুর এইসব কথা শুনে বললেন, তোমার হৃদয়ের মর্ম কে বুঝতে পারে? তুমি আমাকে যেমন নাচাও আমি তেমনই নাচতে থাকি।মহাপ্রভু তারপর হরিদাসকে বললেন,দেখ হরিদাস! সনাতন পরের দ্রব‍্য নষ্ট করতে চাই।তুমি একে এমন কাজ করতে নিষেধ করিও।হরিদাস বললেন,প্রভো!তোমার হৃদয়ের মহৎ ভাব কে বুঝতে পারে,কার জীবনের কি কাজ, তুমি না জানালে সে কিভাবে জানতে পারবে?গৌরহরি তারপর উভয়কে প্রেমালিঙ্গন দান করে ভোজনের জন্য গমন করলেন।*
*🍁জ‍্যৈষ্ঠ মাসে মহাপ্রভু যমেশ্বর টোটা নামক স্থানে গমন করলেন।সেখানে গিয়ে তিনি সনাতনকে ডেকে পাঠান।সনাতন গৌরহরির আহ্বানে পরম পুলকিত হয়ে সেখানে গমন করেন।যমেশ্বর টোটা যাবার দুইটি পথ। জগন্নাথদেবের মন্দিরের সামনে সিংহদ্বার দিয়ে ; অপরটি সমুদ্রের তট দিয়ে।সিংহদ্বার দিয়ে যে পথ,সেটি বৃক্ষচ্ছায়ায় সুশীতল ; সমুদের উপকূল দিয়ে যে পথ,সেটি রৌদ্রের উত্তাপে উত্তপ্ত হয়ে থাকে।সনাতন এই নিদাঘকালে বা গ্রীষ্মকালে মধ‍্যাহ্ন সময়ে সাগরতটে উত্তপ্ত বালুকার উপর দিয়ে সনাতন গোস্বামীর পায়ে ফোসকা পড়ে গেল।সনাতন যমেশ্বর টোটায় গমন করলে,মহাপ্রভু জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কোন পথ দিয়ে এখানে আসিলে?সনাতন বললেন,সমুদ্রের উপকূল দিয়ে। পুনঃ শ্রীচৈতন‍্যদেব জিজ্ঞাসা করলেন, সিংহদ্বারের পথ দিয়ে কেন আসিলে না? সনাতন বিনীতভাবে বললেন, "আমি নীচ জাতি,অতি অধম ; যে পথে ভক্তগণ যাতায়াত করেন,আমি সে পথ দিয়ে কিভাবে যাব?মহাপ্রভু সনাতনের এই বিনয় দৈন‍্য দেখে অত‍্যন্ত সন্তুষ্ট হলেন। কিন্তু পরে বললেন, সনাতন!মর্য‍্যাদা রক্ষা নিতান্ত আবশ্যক ; বৈষ্ণবের পক্ষে সেটি রক্ষা করা একান্ত কর্তব‍্য।*
*মর্য‍্যাদা রক্ষা না করলে লোকে উপহাস করে।এই বলে তিনি দুইবাহু প্রসারণ করে সনাতনকে জড়িয়ে ধরলেন।কিছুদিন পরে রথযাত্রা উপলক্ষ্যে গৌড় হতে ভক্তগণ নীলাচলে আসিলেন।গৌরহরি সনাতনের সঙ্গে অদ্বৈতাচার্য‍্য, নিত‍্যানন্দ প্রভৃতি ভক্তগণের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন।অন‍্যান‍্য বৎসরের মত গৌরভক্তগণ পরমানন্দে নৃত্য কীর্তন ও প্রীতিভোজনে সময় অতিবাহিত করলেন।রথোৎসব সমাপনান্তে গৌড়ীয় ভক্তগণ স্বদেশে চলে গেলে, মহাপ্রভু সনাতনকে বললেন,এখানে কয়েকমাস থাকো,তারপর আমি তোমায় বৃন্দাবনে পাঠিয়ে দিব।সনাতন মহাপ্রভুর সঙ্গে এক বৎসর নীলাচলে থেকে,নামকীর্তন ও ভক্তিতত্ত্ব আলোচনা করে বৃন্দাবনে যাত্রা করলেন।বৃন্দাবনে যাবার সময় গৌরহরি যে পথ দিয়ে গিয়েছিলেন, তিনি সেই পথ দিয়েই বৃন্দাবন যেতে মনস্থির করলে,বলভদ্র তাঁকে সেইসব পথের কিঞ্চিৎ বিবরণ লিখে দিলেন।সনাতন নিবিড় অরণ‍্যের মধ‍্য দিয়ে হরিনামকীর্তন করতে করতে বৃন্দাবনাভিমুখে যাত্রা করলেন। সনাতন বৃন্দাবনে যাত্রা করলে, কিছুদিন পরে শ্রীরূপ ও বল্লভের পুত্র শ্রীজীব গোস্বামী এসে সেখানে উপস্থিত হলেন।ইঁনারা তিনজনে মিলিত হয়ে ভক্তিবিষয়ক বহু গ্রন্থ রচনা করে গিয়েছেন।*
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌹🌻🌻🌻🌻🌻🌻
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 একাদশ ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/gouranga11.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১০৮)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
             *শ্রীরঘুনাথ দাস সম্মিলন*
              ☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
*🍀যে সব সাধুপুরুষ বৈষ্ণব ইতিবৃত্তকে নিজেদের ভক্তি,নিষ্ঠা, বৈরাগ‍্য প্রভৃতি মহৎ গুণের দ্বারা উজ্জ্বল করে গিয়েছেন,শ্রীরঘুনাথ দাস তাঁদের মধ্যে অন‍্যতম।প্রায় চারশ বৎসর পূর্বে ধন-জন-গৌরবে গৌরবান্বিত হিরণ‍্যদাস ও গোবর্ধনদাস নামে ঐশ্বর্য‍্যশালী দুই সহোদর বাস করতেন।শ্রীহিরণ‍্য ও গোবর্ধন হোসেন শাহর অধীনে সপ্তগ্রামের করসংগ্রহের কাজে নিযুক্ত ছিলেন।সপ্তগ্রাম হতে বার্ষিক বিল লক্ষ মুদ্রা কর আদায় হত ; এই বিশ লক্ষ সংগৃহীত মুদ্রা হতে নবাব সরকারে ১২ লক্ষ মুদ্রা দিতে হত, অবশিষ্ট আটলক্ষ মুদ্রা তাঁরা পেতেন।এই মুদ্রা এখনকার প্রায় আশীলক্ষ মুদ্রার সমতুল‍্য বলে অনুমান করা যেতে পারে।*
*🌺হিরণ‍্য দাসের কোন সন্তান সন্ততি ছিল না।গোবর্দ্ধন দাসের কেবল একমাত্র সন্তান রঘুনাথ নামে ছিলেন। রঘুনাথ এই ধনসম্পন্ন গৃহে কিভাবে যত্নের সহিত প্রতিপালিত হতেন, তা সহজেই বুঝতে পারা যায়। গোবর্দ্ধন দাস একমাত্র সন্তানকে বাল‍্যকাল হতেই রীতিমত সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা দান করিয়েছিলেন।এই অতুল ঐশ্বর্য-মধ‍্যে রঘুনাথ বাল‍্যজীবনেই সংসারের প্রতি অনাসক্তির ভাব প্রকাশ করতে লাগলেন।সন্তানের এইরকম ভাব দেখে মাতা পিতা, আত্মীয়স্বজন প্রভৃতি সকলেই চিন্তান্বিত হয়ে পড়লেন।যখন কোন মহাপরুষ মানবাত্মাতে ধর্মের নবশক্তি সঞ্চার করবার জন্য অভ‍্যুদিত হন,তখন তাঁর প্রভাব চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।শ্রীচৈতন‍্যদেব যখন সন্ন‍্যাসধর্ম অবলম্বন করে শান্তিপুরে অদ্বৈত-ভবনে আগমন করেন,তখন তাঁর দর্শনের জন্য বহুলোক সমবেত হয়েছিল। রঘুনাথ দাসও সে সময় তাঁর দর্শনের জন্য অদ্বৈত-ভবনে গিয়েছিলেন।যাবার সময় গোবর্দ্ধন দাস সন্তানের সঙ্গে কয়েকজন ভৃত‍্য ও বিবিধ দ্রব‍্যসম্ভার দিয়ে তাঁকে সুসজ্জিত দোলারোহণে পাঠিয়েছিলেন। রঘুনাথ অদ্বৈত-ভবনে এসে, কয়েকদিন সেখানে থাকবার পর শ্রীচৈতন‍্যের মধুর ভক্তিভাব দেখে ও তাঁর উপদেশ লাভ করে পরম তৃপ্তি লাভ করেছিলেন।*
*🍁রঘুনাথ গৃহে ফিরে আসিলে, বৈরাগ‍্যের যে অনলশিখা তাঁর হৃদয়ে প্রধূমিত হচ্ছিল,তা শ্রীচৈতন‍্যের সহবাসে আরো উদ্দীপ্ত হয়ে উঠিল ; তাঁর হৃদয় সততই বিষয়ের বন্ধন ছিন্ন করবার জন্য ব‍্যগ্র হয়ে পড়ল।*
*এ সময় শ্রীচৈতন‍্যদেব পুরুষোত্তমে বাস করতেন।রঘুনাথ তাঁর সঙ্গে থাকবার জন্য সময়ে সময়ে গৃহত‍্যাগ করে গোপনে পালানোর চেষ্টা করতেন।গোবর্ধন দাস তাঁকে ঘরে রাখবার জন্য প্রহরী নিযুক্ত রেখেছিলেন।তারা সবসময়ই তাঁর দিকে নজর রাখিত। রঘুনাথ বেশ কয়েকবার শ্রীক্ষেত্রে যাবার জন্য চেষ্টা করেও সফল হতে পারেননি।*
*🍀রঘুনাথের পিতা-মাতা বেশ বুঝলেন,ধনৈশ্বর্য‍্যের প্রতি রঘুনাথের কিছুমাত্র আসক্তি নাই। তখন পুত্রের মতি-গতি ফেরানোর জন্য, পুত্রকে সংসার অনুরাগী করবার জন্য এক পরমাসুন্দরী নারীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে দিলেন। কিন্তু রঘুনাথের সেইদিকেও কোন আসক্তি দেখা গেল না।রঘুনাথের উত্তরোত্তর বৈরাগ‍্য প্রণোদিত হয়ে সংসারের প্রতি বীতরাগ প্রকাশ করতে লাগলেন, তখন রঘুনাথের জননী একদিন স্বামীকে বললেন, ছেলে পাগল হয়েছে,এখন থেকে রঘুনাথকে বেঁধে রাখুা উচিত। পত্নীর কথা শুনে গোবর্দ্ধন বললেন,এই অগাধ সম্পত্তি ও পরমাসুন্দরী নারী যাকে বাঁধতে পারল না,সামান‍্য দড়ির বন্ধনে তাকে কি বাঁধতে পারা যায়?*
*🌻রঘুনাথের দিন এইভাবেই কাটতে লাগল।যাঁর প্রাণপাখী মুক্তভাবে ভক্তসঙ্গে হরিগুণ কীর্তনে দিনরাত্রি যাপন করবার জন্য ব‍্যাকুল হয়েছে, সংসারের শিকলেকি আর তাঁকে আবদ্ধ করে রাখতে পারে? রঘুনাথ এখন বিষয়ের মধ্যে বাস করেও বৈরাগী,বলবান রক্ষকদের দ্বারা ঘেরা থেকেও তিনি মুক্ত। শ্রীচৈতন‍্যদেব যখন এক বৎসর পরে পুনরায় শান্তিপুরে অদ্বৈত-ভবনে এসেছিলেন, তখন রঘুনাথ পিতাকে বললেন, শ্রীচৈতন‍্যদেবকে দর্শন করবার জন্য আমার মন চঞ্চল হয়ে উঠেছে, আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে দর্শন করে আসি, যদি অনুমতি না দেন তাহলে আমার এ তুচ্ছ জীবন পরিত‍্যাগ করব।তখন গোবর্দ্ধন দাস সন্তানের এই প্রবল ইচ্ছার বিরুদ্ধে আর কিছু না বলে,তাঁকে লোকজন ও নানান দ্রব‍্য সঙ্গে দিয়ে সেখানে পাঠিয়ে দিলেন। গৌরহরি রঘুনাথকে দেখে ভীষণ আনন্দ পেলেন।তিনি রঘুনাথের ব‍্যাকুলতা দেখে তাঁর হৃদয়ের অবস্থা সবই বুঝতে পেরে বললেন,এখন অনাসক্ত ভাবে সংসারে বাস করো। অন্তরে বৈরাগ‍্য রক্ষা করে বিষয় সম্ভোগ করো, পাগলের মত কোন কাজ করিও না, মর্কট বৈরাগ‍্য পরিত‍্যাগ করবে। শ্রীকৃষ্ণ তোমার বিষয়-বন্ধন মোচন করবেন।আমি যখন বৃন্দাবন দর্শন করে নীলাচলে ফিরে আসব তখন তুমি সেখানে গমন করিও।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🌻🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 একাদশ ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/gouranga11.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১০৯)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
             *শ্রীরঘুনাথ দাস সম্মিলন*
              +++++++++++++++++
*শ্রীরঘুনাথ দাস শ্রীচৈতন‍্যের সঙ্গে কয়েকদিন বাস করে নিজ গৃহে ফিরে এলেন। কিন্তু এখন আর আগের মত সংসার পরিত‍্যাগের জন্য কোন বাহ‍্য উদ‍্যোগ প্রকাশ করতেন না।মহাপ্রভু তাঁকে অনাসক্ত ভাবে সংসারে বাস করতে অনুমতি করেছিলেন।তাই তিনি তাঁর আদেশ শিরোধার্য‍্য করে অন্তরে বৈরাগ‍্য ধারণ করে বিষয় বিভবের মধ্যে বাস করতে লাগলেন। রঘুনাথের পরিবারের সকলে রঘুনাথের এইরকম ভাব দেখে মনে করতে লাগলেন,তাঁর হৃদয়ের বৈরাগ‍্যানল ক্রমে প্রশমিত হচ্ছে। ঘরে ফিরে আসার কয়দিন পরে শ্রীনিত‍্যানন্দপ্রভু পানিহাটী গ্রামে বৈষ্ণবধর্ম প্রচারের জন্য এসেছেন। একদিন রঘুনাথ তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গমন করলে,নিতাইচাঁদ তাঁকে নানান কথার মধ্যে চিড়া মহোৎসবের আয়োজন করতে বলেন।বহুর্সখ‍্যক লোক এই মহোৎসবে যোগ দিয়ে,পরিতোষ পূর্বক দুধ,চিড়া, দধি,ক্ষীর, কলা ও মিষ্টান্ন আহার করে।এই উপলক্ষ্যে তিনি অর্থদানও করেছিলেন। তারপর নিতাইচাঁদ রঘুনাথের ব‍্যাকুলতা দেখে আশীর্বাদ করলেন যে,শীঘ্রই তোমার বিষয়-বন্ধন মোচন হোক।*
*রঘুনাথের মনের মধ্যে যে অগ্নি প্রজ্বলিত হয়েছে,তা কি আর নেভে?সেটি মানবচক্ষুর অগোচরে ধীরে ধীরে ক্রমশ উজ্জ্বলতর হয়ে উঠতে লাগল।ওদিকে শ্রীচৈতন‍্যদেব বৃন্দাবন দর্শন করে নীলাচলে ফিরে এলেন। রঘুনাথের কাছে এ সংবাদ অজানা রইল না ; তাঁর প্রাণ শ্রীচৈতন‍্য মহাপ্রভুকে দেখবার জন্য ব‍্যাকুল হয়ে পড়লেন। তিনি আর স্থির থাকতে পারলেন না।একদিন যখন সকলে রাত্রিতে গভীর নিদ্রায় নিদ্রিত আছেন,তখন রঘুনাথ শয‍্যা পরিত‍্যিগ করে গৃহত‍্যাগ করে নীলাচলে যাত্রা করলেন।সাধারণ পথ ধরে যেতে গেলে পাছে তাঁর উদ্দেশ্য সাধনের বিঘ্ন উপস্থিত হয়,তারজন‍্য তিনি জঙ্গলাকীর্ণ পথ ধরে চলতে লাগলেন।এদিকে সকালবেলা রঘুনাথের দেখা না পেয়ে পরিবারের মধ্যে কান্নার রোল উঠিল।সকলেই বুঝলেন রঘুনাথ পালিয়ে গিয়েছে।সে সময় গৌড়ীয় ভক্তদের নীলাচলে যাবার সময়। সেজন‍্য গোবর্ধন দাস ভক্তদের পরিচালক শিবানন্দ সেনের নামে একটি পত্র দিয়ে কয়েকজন লোক তাঁর কাছে পাঠিয়ে দিলেন।গোবর্ধন দাসের লোকেরা বহুদূর গিয়ে নীলাচলগামী গৌড়ীয় ভক্তদের দেখা পায়।শিবানন্দ সেনের হাতে গোবর্ধন দাসের পত্র দিলেন।শিবানন্দ তদুত্তরে জানালেন, রঘুনাথ তাঁদের সঙ্গে নাই।প্রেরিত লোকেরা শিবানন্দ সেনের পত্র নিয়ে সপ্তগ্রামে ফিরে এলে হিরণ‍্য ও গোবর্ধন দাসের পরিবারের মধ্যে বিষাদের ছায়া পড়েছে।মাতা পিতা আত্মীয়স্বজনেরা দুঃখে আকুল হয়ে পড়লেন।রঘুনাথের অল্পবয়স্কা পত্নীর হৃদয়ে যে দারুণ যন্ত্রণা উপস্থিত হল,তা বলবার নহে।*
*🍀এদিকে রঘুনাথ দুর্গম পথ দিয়ে চলতে লাগলেন।কি খাবেন,সে চিন্তা তাঁর নাই।কোনদিন আহার মিলিত, কোনদিন বা অনাহারেই দিন যাপন করতেন।এইভাবে তিনি তিরিশদিনের পথ দ্বাদশ দিনে নীলাচলে উপনীত হলেন।এই দ্বাদশ দিনের মধ্যে তিনি তিনদিন মাত্র আহার করে ছিলেন।নীলাচলে শ্রীচৈতন‍্যদেব ভক্তগণসহ উপবিষ্ট হয়ে কৃষ্ণকথায় রত ছিলেন,এমন সময় রঘুনাথ সেখানে উপস্থিত হলেন।শ্রীগৌরাঙ্গ রঘুনাথকে দেখে আনন্দ চিত্তে ও প্রেমভরে তাঁকে আলিঙ্গন করলেন, এবং বললেন, শ্রীকৃষ্ণ তোমাকে বিষয়-কূপ হতে মুক্তিদান করলেন,তাঁর কি অপার করুণা।*
🦋🦚🙏🌷🪔🪷🌸🙏🌷🪔🦚🦋🪷
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 একাদশ ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/gouranga11.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১১০)🙏শ্রীগৌরাঙ্গের চরিতসুধা*
               *শ্রীরঘুনাথ দাস সম্মিলন*
               ☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
*🌺রঘুনাথ অনাহারে ও পথশ্রমে অত‍্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন।শ্রীচৈতন‍্যদেব তাঁকে অত‍্যন্ত শ্রান্ত দেখে, স্বরূপ দামোদরকে বললেন, রঘুনাথ পথে ভীষণ কষ্ট পেয়েছে, আমি তোমার হাতে অর্পণ করলাম। তুমি রঘুকে ভালভাবে আহারাদি করাইয়ে তাঁর শরীরকে সুস্থ করতে চেষ্টা করবে।দামোদর মহাপ্রভুর কথা শুনে, রঘুনাথকে নিয়ে বিশেষ যত্ন করে,তাঁর শরীর সুস্থ করতে যত্নবান হলেন। এবং নানান খাদ‍্য দ্রব‍্য আনিয়ে যত্ন সহকারে পূর্ণ সুস্থ করে তুললেন। কিন্তু পাঁচদিন পরে এরকম সুস্বাদু ভোজন আর তাঁর ভাল লাগল না ; তিনি মনে করলেন,এতে বিলাসিতা বাড়বে। তিনি সেজন‍্য জগন্নাথদেবের মন্দিরের সিংহদ্বারে গিয়ে অন‍্যান‍্য ভিখারীর মত ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতে লাগলেন।লোকে যখন শুনল,অতি ধনাঢ‍্যঘরের সন্তান রঘুনাথ এইভাবে সাধারণ লোকের মত ভিক্ষা করছেন, তখন সকলে তাঁকে বেশী পরিমাণে কিছু ব‍্যক্তি খাদ‍্যসামগ্রী প্রদান করতে আরম্ভ করল।রঘুনাথ সেজন‍্য সিংহদ্বারে ভিক্ষা করা বন্ধ করে দিলেন।*
*একদিন রঘুনাথ মহাপ্রভুর নিকট উপদেশপ্রার্থী হলে,তিনি বললেন,গ্রাম‍্য কথা শুনবে না,উগ্র আহার করবে না, সর্বদা শ্রীরাধাকৃষ্ণের উপাসনাতেই রত থাকবে। অতি সংক্ষেপে তোমাকে এই কয়টি কথা বললাম।এই সব কথা বলে তিনি এই শ্লোকটি বললেন=*
*🌷তৃণাদপি সুনীচেন তরোরিব সহিষ্ণুনা।*
*🌷অমানিনা মান দেন কীর্তনীয় সদা হরি।।*
*🌹তৃণ হতেও নীচ,বৃক্ষের মত সহিষ্ণু (সহনশীল, ধৈর্য‍্যশীল ও ক্ষমাশীল)হবে, এবং নিজে অমানী হয়ে অপরকে সম্মান দান করবে।*
*🌻কিছুদিন পরেই গৌড়ীয় ভক্তগণ নীলাচলে আসতে লাগলেন।মহাপ্রভু অদ্বৈতাচার্য‍্য,শ্রীবাস পন্ডিত প্রভৃতির সহিত রঘুনাথের পরিচয় করিয়ে দিলেন। সেখানে শিবানন্দ সেন রঘুনাথকে বললেন যে, তোমার পিতা তোমার খোঁজের জন্য দশজন লোক পাঠিয়েছিলেন, এবং আমার নামে একটি পত্র দিয়েছিলেন। কিন্তু তোমার কোন খোঁজখবর না পেয়ে,তারা নিরাশ মনে ফিরে গিয়েছে।আমিও তোমার তোমার বিষয়ে কিছু অবগত নই বলে তোমার পিতার পত্রের উত্তর দিয়েছি।*
*যাইহোক,রথোৎসব আরম্ভ হ'ল। রঘুনাথ দাস ভক্তদের নৃত্য কীর্তনাদি দর্শন করে পরম প্রীতি লাভ করলেন।ভক্তগণ চারমাস কাল নীলাচলে থেকে,স্বদেশে ফিরে গেলেন।গোবর্ধন দাসের নিকট নিকট রঘুনাথের নীলাচলে পৌঁছিবার কথা উপস্থিত হল। এইকথা শুনে রঘুনাথের জন্য চারশ মুদ্রা পাঠিয়ে দিলেন।রঘুনাথ প্রথমে নিতে অস্বীকার করেছিলেন, পরে তিনি এই অর্থের সদ্ব‍্যবহার করবার জন্য মাসে দুইদিন করে, শ্রীচৈতন‍্য মহাপ্রভুকে নিমন্ত্রণ করতেন।এই নিমন্ত্রণে অষ্টপণ কড়ি ব‍্যয় হত। কিছুদিন পরে রঘুনাথের মনে হল, বিষয়ীর অর্থে মহাপ্রভুকে এরকম ভাবে নিমন্ত্রণ করে সেবা দেওয়া উচিত নয়, সেজন‍্য তিনি মহাপ্রভুকে সেবা দেওয়া বন্ধ করে দিলেন।একদিন মহাপ্রভু স্বরূপকে জিজ্ঞাসা করলেন,রঘুনাথ কেন আমায় আর নিমন্ত্রণ করে না?স্বরূপ বললেন, রঘুনাথ বলেছেন, আমি বিষয়ীর দ্রব‍্য নিয়ে মহাপ্রভুকে নিমন্ত্রণ করি, ও নিমন্ত্রণে গৌরহরির মন তৃপ্ত হয় না ; কেবল আমার অনুরোধে তিনি এ নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে থাকেন, এজন‍্য আমি মহাপ্রভুর সেবা বন্ধ করেছি।শ্রীচৈতন‍্যদেব স্বরূপের কথা শুনে ঈষৎ হেসে বললেন,রঘুনাথ ঠিকই করেছে ; "বিষয়ীর অন্নগ্রহণে মন মলিন হয়, এবং মন মলিন হলে, কৃষ্ণভজনের ব‍্যাঘাত জন্মে।*
*এই পরমভক্ত বৈরাগ‍্য পুরুষ রঘুনাথ পুরুষোত্তমে বাস করে প্রত‍্যহ কীর্তন ও সাধন ভজনেই রত থাকতেন।আহার নিদ্রায় প্রায় তাঁর চারদন্ড সময় অতিবাহিত হত, (ষাট দন্ডে দিনরাত)শ্রীচৈতন‍্যদেবের অপ্রকটের পরও তিনি কিছুদিন শ্রীক্ষেত্রে বাস করেছিলেন, কিন্তু মহাপ্রভুর শোকে এতঅধীর হয়ে পড়েছিলেন যে, শেষে তিনি বৃন্দাবনে গমন করে,গোবর্ধন পর্বতের উপর হতে ঝাঁপ দিয়ে নিচে পড়ে দেহত‍্যাগ করবেন, এই স্থির করে ছিলেন। রঘুনাথ বৃন্দাবনে পৌঁছিলে শ্রীরূপ-সনাতন তাঁর এই সঙ্কল্প অনুভব করতে পেরে,তাঁকে এই কর্ম হতে প্রতিনিবৃত্ত (ক্ষান্তি, ক্ষান্ত হয়েছে এমন) করলেন। রঘুনাথ অবশিষ্ট জীবন বৃন্দাবনে বাস করে গ্রন্থাদি প্রণয়ন ও নাম-ধ‍্যান ও নামকীর্তনে অতিবাহিত করেন।শ্রীচৈতন‍্যচরিতামৃতকার শ্রীপাদ কবিরাজ গোস্বামী শ্রীরঘুনাথ দাসের শিষ‍্যত্ব স্বীকার করেছিলেন এবং ইনি তাঁরই নিকট হতে মহাপ্রভুর জীবনের অনেক বিষয়বস্তু জানতে পেরে ছিলেন।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🔜 ক্রমাগত 👉 শ্রীগৌরাঙ্গ চরিত 📖 দ্বাদশ ভাগ 🏵️ শ্রী শশীভূষণ বসু ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/gouranga12.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

   ꧁👇 📖 সূচীপত্র ✍️ শ্রী জয়দেব দাঁ 📖 👇꧂



✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧


✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

   ✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️ 
নিবাস- বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ- বাঁশবাড়ী, থানা- ইংরেজ বাজার, জেলা- মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ, পিন কোড- ৭৩২১০১।

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

  *••••┉❀꧁👇🏠Home Page🏠👇꧂❀┅••••* 


✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

    *••••━❀꧁👇 📖 সূচীপত্র 📖 👇꧂❀┅••••* 



✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

     *••••━❀꧁👇📚 PDF গ্রন্থ 📚👇꧂❀┅••••* 


✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
    *••••┉━❀꧁ 🙏 রাধে রাধে 🙏 ꧂❀━┅••••* 
                   শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ
              হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।।
  *••••┉━❀꧁ 🙏 জয় জগন্নাথ 🙏 ꧂❀━┅••••*
              হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
              হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥
  *••••┉━❀꧁ 🙏 জয় রাধাকান্ত 🙏 ꧂ ❀━┅••••*
   🌷❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀🌷
   🏵️❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀🏵️
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧





শেষ ৩০ দিনের পোস্টের মধ্যে সর্বাধিক Viewer নিম্নে :-

শ্রীকৃষ্ণ লীলা 🙏 সূচীপত্র ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_74.html

শিবরাত্রি ব্রতকথা 🙏 ১০৮ নাম 🙏 মন্ত্র সমূহ 🙏 শিবরাত্রি ব্রত কি ভাবে পৃথিবীতে প্রচলিত হল❓শিবরাত্রি ব্রত পালনে কি ফল লাভ হয় ❓শিবরাত্রি ব্রত পালন কি সকলেই করতে পারেন ❓🙏 সকল ভক্ত 👣 চরণে 👣 অসংখ্যকোটি 🙏 প্রণাম 🙏শ্রী মৃন্ময় নন্দী 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/02/shib.html

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নৌকা গঠন তত্ব ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 https://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_22.html

🙇 রাধে রাধে 🙇 শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ 👏 হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।। 🙇 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/09/today.html

শ্রীঅম্বরীষ মহারাজের ছোট রানী 🙏 চারিযুগের ভক্তগাঁথা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/12/blog-post_97.html

মনোশিক্ষা 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 🙏 শ্রীযুক্ত প্রেমানন্দ দাস ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/jaydeb_14.html

বকরূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে চারটি প্রশ্ন করেছিলেন সেই প্রশ্নই বা কি? ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/05/blog-post_98.html

শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু 🥀 সংক্ষিপ্ত কথন 🙏 প্রথম ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/01/mohaprobhu-joydeb-dawn.html

শ্রীআমলকী একাদশী ব্রতের মাহাত্ম‍্য কি ❓ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/ekadoshi.html

*নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলং শুকমুখাদকমৃতদ্রবসংযুতম্।**পিবত ভাগবতং রসমালয়ং মুহুরহো রসিকা ভূবি ভাবুকাঃ।।*✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/09/blog-post_89.html