🚩🚩🚩🙇🙇🙇 রাধে রাধে 🙇🙇🙇🚩🚩🚩

শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ 🌷 প্রথম ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/jagannath.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ 🌷 প্রথম ভাগ 🌻 শ্রীযুক্ত রাজর্ষি গোপালচন্দ্র আচার্য‍্য চৌধুরী প্রণীত ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/jagannath.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(০১)শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ*
                *প্রস্তাবনা*
*🙏শ্রীযুক্ত রাজর্ষি গোপালচন্দ্র আচার্য‍্য চৌধুরী প্রণীত। পুরী আনন্দধাম হ'তে শ্রীযুক্ত নরহরি ঠাকুর কর্ত্তৃক প্রকাশিত। বাংলা ১৩২৩ সন ও ইংরেজি ১৯১৬। মূল‍্য মাত্র দুইটাকা।*
🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷
*🌻ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়।*
     -------------------------------------------
*🌹আমরা কি চাই?কেবল আমরা কেন--,সমস্ত জীবজন্তু পশুপক্ষী এবং অন‍্যান‍্য প্রাণীসব কি চায়?সমস্ত জগৎ যে অনবরত ছুটোছুটি করছে,মাথার ঘাম পায়ে ফেলছে-- কি উদ্দেশ্য?ধনীর প্রাসাদে যাও,গরীবের কুটিরে যাও,বালক,বৃদ্ধ, যুবক সকলের দিকে তাকাও--, সকলেই যেন এক উদ্দেশ্যে একদিকে ধাবিত হচ্ছে।খোঁজখবর করলে কি বুঝতে পারা যায়?স্ত্রী স্বামীকে ভালবাসে,পিতা পুত্রকে ভালবাসে, সকলেরই উদ্দেশ্য এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হয়েছে।সকলেই চাই সুখ হোক,দুঃখ না হোক।*
*🌷সুখং মে ভূয়াৎ,দুঃখং মে মা ভূৎ।*
*🌻শ্রুতি,স্মৃতি,পুরাণ সকলেই এই কথার সাক্ষ‍্য দিচ্ছে। বেদান্ত বলেন,বিনা প্রয়োজনে কোন কাজ হয় না। তবে সেই প্রয়োজন কি? অজ্ঞানের বিরতি এবং সুখের প্রাপ্তি।অজ্ঞান বিরতি হলেই সমস্ত দুঃখের অবসান হয়, এবং নিত‍্য সুখ লাভ হয়। বেদান্ত বলছেন-----*
*🌷প্রয়োজনস্তু তদৈক‍্যপ্রমেয়গতাজ্ঞাননিবৃত্তিঃ তৎস্বরূপানন্দাবাপ্তিশ্চ। শোকং তরন্তি সাধবঃ ব্রহ্মবিদ্ ব্রহ্মৈব ভবতি।।*
*🌺আমাদের প্রয়োজন কি তা ব‍্যাখ‍্যা করছেন--, আমাদের প্রয়োজন অজ্ঞানের বিরতি ; অজ্ঞানের নিবৃত্তি হলেই প্রকৃত সুখ লাভ হয়, অর্থ‍্যাৎ আনন্দময় আত্মার বিকাশ হয়।প্রয়োজন সিদ্ধ বা সফল হলেই শোকের নিবৃত্তি হয়--- ব্রহ্মজ্ঞান হলেই ব্রহ্ম হয়ে যায়। মানুষ সুখের আশায় সংসারের সমস্ত বস্তু সংগ্রহ করছে, কিন্তু তা বেশীদিন ভাল লাগে না, আবার নতুন করে আরম্ভ করতে থাকে।এইরকম একবার ধরছে, আবার ছাড়ছে, কোনটিতেই স্থায়ী সুখ হয় না বলে,মনে করে,অন‍্যটা ধরলে বোধহয় সুখ হবে, কিন্তু কিছুতেই তার মনের বাসনা পূরণ হয় না।বেদান্ত এই সম্বন্ধে একটি গল্পের আভাস দিয়েছেন, তার উল্লেখ করছি।🌹কোন ব‍্যক্তি কোন একটা জিনিস হারিয়ে ফেলেছে,কোন জিনিস হারিয়েছে তা বলছে না।কত জিনিস তার সামনে এনে দেখান হচ্ছে, কিন্তু সেই সব জিনিস দেখে বলছে এটি আমার হারানো বস্তু নয়।এইভাবে অনেকদিন কেটে গেল কিন্তু তার হারানো বস্তু আর পাওয়া গেল না। এই জিনিসের শোকে অত‍্যন্ত মুহ‍্যমান (অতিশয় কাতর) হয়ে নানারকম পরিতাপ করছে,এমন সময়ে একজন পথিক জিজ্ঞাসা করল, তোমার কি হারিয়েছে?সে বলল,আমার কন্ঠমণি। ঐ পথিক তার কন্ঠ দেখিয়ে বলল, তোমার কন্ঠে ওটা কি?তখন কন্ঠে হাত দিয়ে তার জ্ঞান হল যে তার ভুল হয়েছে,তার হারিয়ে যাওয়া হার তার কন্ঠেই আছে।*
*🌻আরও একটি দৃষ্টান্তের অবতারণা করছি।মৃগনাভি সকলেই জানেন।এক প্রকার পার্বতীয় মৃগ আছে,তার নাভিদেশে কস্তূরী জন্মে।যখন কস্তূরী প্রস্ফুটিত হয়,তখন তার গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মৃগ সেই গন্ধে অত‍্যন্ত ব‍্যাকুল হয়ে গন্ধোৎপাদক সামগ্রী লাভের জন্য সমস্ত বন খোঁজ করতে থাকে ; কিন্তু মৃগ কিছুতেই তা স্থির করতে পারে না।তার নাভিতে কস্তূরী আছে,অথচ সে তা বুঝতে না পেরে দুনিয়া খুঁজে বেড়াচ্ছে।তাই তুলসীদাস বলছেন=*
*🌷সব ঘটমে হরি হ‍্যায়,পছন্তায় নেই কই।*
*🌷নাভিকা সুগন্ধ মৃগ নাহি জানত,*
     *🌷ঢোড়ত ব‍্যাকুল হোই।।*
*🌲মানুষও তার অন্তরস্থ আত্মতত্ত্ব ভুলে গিয়ে তার সুগন্ধস্বরূপ যে ক্ষণিক সাংসারিক সুখ,তাইই গ্রহণ করছে, কিন্তু তাতে স্থায়ী সুখের কোনও সম্ভাবনা নাই ; তা কয়েকদিন পরেই ফুরিয়ে যায়, আবার অন‍্য বস্তু ধরে। জীব আত্মতত্ত্ব বা নিজতত্ত্ব ভুলে গিয়ে,হরিণের মত সংসার অরণ‍্যে ঘুরে মরছে।ভাগ‍্যবশতঃ যদি সদ্ গুরু লাভ হয়,তবে তার প্রকৃত জ্ঞানলাভ হয় ; এবং একদিন যে নিজতত্ত্ব ভুলে গিয়েছিল,তখন তার উপলব্ধি হয়।পূর্বে যে পথিকের কথা বলেছি তাহাই গুরু।*
*অজ্ঞানতিমিরান্ধস‍্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া।*
*চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।*
*🌷সদ্ গুরু পাওয়ে, ভেদ বাতাওয়ে,*
            *জ্ঞান কর উপদেশ।*
*🌷কয়লা কি ময়লা, ছোটে---যব,*
          *আগ্ করে প্রবেশ।।*
                              *(তুলসীদাস)*
*🍀তথাচ বেদান্তে=*
*নিত‍্যপ্রাপ্তস‍্য আত্মনঃ অজ্ঞানমোহান্ধ-,*
*-কারাবৃতত্বেন বিস্মৃতস্বস্বরূপস‍্য গুরুশ্রুতিবাক‍্য-,*
*-শ্রবণানন্তরং অজ্ঞানমোহান্ধকার নিবৃত্তিঃ স‍্যাৎ।*
*☘আত্মা নিত‍্য স্বপ্রকাশ,অজ্ঞান-মোহ-অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে তাঁর নিজের স্বরূপ ভুলে গিয়েছেন।কালক্রমে গুরু শ্রুতিবাক‍্য শুনে অজ্ঞান-মোহ-অন্ধকার বিরতি হয়ে থাকে।*
*🌷জনন-মরণাদি-সংসারানল-সন্তপ্তঃ প্রদাপ্তশিরা জলরাশিমিবোপহারপাণিঃ শ্রোত্রিয়ং ব্রহ্মনিষ্ঠং গুরুমুপসৃত‍্য তমনুসরতি।*
*🌻সূর্য‍্যতাপে প্রদীপ্তশির (মাথা ভীষণ গরম হয়ে ) পথিক যেমন কোন জলাশয় খোঁজ করে জন্মমরণাদি সংসারানল (সংসারের আগুনে পুড়ে) সন্তপ্ত (মানসিক যন্ত্রণা ) হয়ে, শিষ‍্য সেরকম জন্মমরণাদি ত্রিতাপ জ্বালা জুড়াবার জন্য সদ্ গুরুর আশ্রয় গ্রহণ করে তার অনুসরণ করতে থাকে।*
🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸🌸
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ 🌷 প্রথম ভাগ 🌻 শ্রীযুক্ত রাজর্ষি গোপালচন্দ্র আচার্য‍্য চৌধুরী প্রণীত ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/jagannath.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(০২)শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ*
            *🌻প্রস্তাবনা🌻*
           🌹🌹🌹🌹🌹
*🍀বৃহদারণ‍্যক উপনিষদ্ বলেছেন=*
*ন বা অরে সর্ব্বস‍্য কামায় সর্ব্বং প্রিয়ং ভবতি,*
*কিন্ত্বাত্মনস্তু কামায় সর্ব্বং প্রিয়ং ভবতি।*
*☘অরে,সমস্ত বস্তু যে আমাদের কাছে প্রিয় কি জন্য?স্ত্রীকে ভালবাসি,পুত্রক‍ে ভালবাসি এবং কত উপাদেয় সামগ্রী প্রিয় বলে গ্রহণ করছি ; কিন্তু কোন জিনিসই দ্রব‍্যের প্রয়োজনীয়তা বলে গ্রহণ করা হয় নাই।এটি আত্মার প্রয়োজন,তাই সমস্ত উপহার তাকে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত আত্মতত্ত্ব উপলব্ধি না হওয়া পর্য‍্যন্ত অন‍্য কিছু দ্বারা তার পূরণ হচ্ছে না। আত্মতত্ত্ব না জেনে সমস্ত বেদ,সমস্ত শাস্ত্র পাঠ করলেও,সমস্ত বিদ‍্যা জানলেও তার সেই তৃপ্তিলাভ হবে না। সুতরাং আত্মাকে লাভ করাই সমস্ত প্রয়োজনের মূলতত্ত্ব।*
*🍁পরম কারুণিক পরমেশ্বর আমাদের আত্মোন্নতি লাভের জন্য নানা উপায় সৃষ্টি করেছেন--,চারবেদ দিয়েছেন।ঋষিগণ আত্মতত্ত্ববিদ, সুতরাং তাঁরা আত্মার স্বরূপ বর্ণনে সমর্থ ; এই জন্য শাস্ত্র-প্রচার কাজে ঋষিদেরকে নিয়োগ করেছেন। ভগবান জীবগণের প্রতি দয়া করে বহু তীর্থ সৃষ্টি করে রেখেছেন,যাতে অতি সহজে ভগবৎ স্বরূপ লাভ করা যায়।বেদ,বেদান্ত,স্মৃতি,পুরাণ সমস্ত শাস্ত্র পাঠ করে আত্মতত্ত্ব লাভ করা বড়ই দুঃসাধ‍্য ও দুর্গম।কলির জীব খুবই দুর্বলচিত্ত, সত‍্যযুগের জীবদের মত কলির জীবের শক্তি নাই।সেই জন্য কলির জীবের উদ্ধারের ব‍্যবস্থা স্বতন্ত্র।তাদের উদ্ধারের উপায় তীর্থদর্শন এবং হরিনাম কীর্তন। প্রশ্ন এই হতে পারে যে কেমন করে তীর্থ উদ্ধার করতে সমর্থ হয়?তাতে আত্মার তো কোনও উন্নতি হল না, আত্মতত্ত্ব কেমন করে লাভ হবে?তার উত্তর এই যে,আত্মা স্বপ্রকাশ,তার কোনও পরিবর্তন ঘটে না।মায়ার দ্বারা আবৃত হওয়ায় তার দর্শন হয় না --,মায়া কাটাতে পারলেই আত্মার বিকাশ হয়।*
*🌷নিত‍্যসিদ্ধ কৃষ্ণপ্রেম সাধ‍্য কভু নয়।*
*🌷শ্রবণাদি-শুদ্ধ-চিত্তে করয় উদয়।।চৈঃচঃ।।*
*🌹নিত‍্য প্রাপ্তস‍্য আত্মনঃ ইত্যাদি*।
*🍀তীর্থদর্শন দ্বারা মায়ার খন্ডন হয়-- শাস্ত্রসিদ্ধ। ব্রহ্মান্ডে স্কন্দে=*
*কিং ব্রতৈঃ কিং তপোদানৈঃ কিং তীথৈঃ ক্রতুভিস্তথা।*
*কিমষ্টাঙ্গেন যোগেন সাংখ‍্যেন পরমেণ চ।।*
*তীর্থরাজজলে স্নাত্বা ক্ষেত্রে শ্রীপুরুষোত্তমে।*
*ন‍্যগ্রোধমূলে বসতৌ বসন্তং চর্ম্মচক্ষুষা।*
*দৃষ্ট্বা দারুময়ং ব্রহ্ম মোহবন্ধাৎ প্রমুচ‍্যতে।।*
*যত্র সাক্ষাৎ জগন্নাথঃ শঙ্খচক্রগদাধরঃ।*
*জন্তূনাং দর্শনান্মুক্তিং যো দদাতি কৃপানিধিঃ।।*
*🌺তথাচ গারুড় পুরাণে ব‍্যাস উবাচ=*
*কলিকাল-মহাঘোর-তিমিরাবৃতচক্ষুষাং।*
*নীলাচলশিরোরত্নং আত্মতত্ত্ব-প্রকাশকং।।*
*যদ্ যূয়ং বৈ সুরশ্রেষ্ঠাঃ সংসারং তর্ত্তুমিচ্ছথ।*
*তদা কদাচিৎ পশ‍্যন্তু নীলশৈলশিরোমণিং।।*
*🪷 পদ্মপুরাণে ব্রহ্মাণং প্রতি শ্রীভগবদ্ বাক‍্যম্=*
*শ্রুতি-স্মৃতীতিহাস-পুরাণগোপিতং*
*মন্মায়য়া যন্নহি কস‍্য গোচরং।*
*প্রসাদতোমে স্তুবতস্তবাধুনা প্রকাশমায়াস‍্যতি সর্বগোচরং।।*
*ব্রতেষু তীর্থেষু চ যজ্ঞদানয়োঃ পুণ‍্যং,*
*ষদুক্তং বিমলাত্মনাং হি।*
*অহো নিবাসাল্লভতেহত্র সর্বং,*
*নিশ্বাসবাসাৎ খলু চাশ্বমেধিকম্।।*
*🌻তীর্থ-দর্শন দ্বারা আমাদের জ্ঞান, ভক্তি এবং মুক্তি,সমস্তই লাভ হয়ে থাকে ; এবং যোগাদি দ্বারা যেরকম ভাবে হয়,তা অপেক্ষা তীর্থদর্শনে সহজভাবে লাভ হয়।*
*🔵তন্ত্রযামলে ইন্দ্রদ‍্যুম্নং প্রতি বশিষ্ঠবাক‍্যং=*
*🌷ভারতে চোৎকলে দেশে ভূস্বর্গে পুরুষোত্তমে।*
*🌷দারুরূপী জগন্নাথো ভক্তানামভয়প্রদঃ।।*
*🌷নরচেষ্টামুপাদায় আস্তে মোক্ষৈককারণঃ।*
*🌷তস‍্যোপভুক্তদানেন নরঃ পাপাৎ বিমুচ‍্যতে।।*
*🌷নাস্তি তত্রৈব রাজেন্দ্র স্পৃষ্টাস্পৃষ্টবিবেচনং।*
*🌷যস‍্য সংস্পৃষ্টমাত্রেণ যান্ত‍্যমেধ‍্যাঃ পবিত্রতাং।।*
*🌷নির্ম্মাল‍্যদানাৎ পাপানি ক্ষয়ং যান্তি নৃপোত্তম।*
*🌷ভক্তিরুৎপদ‍্যতে পাপক্ষয়াদব‍্যভিচারিণী।।*
*🌷ভক্ত‍্যা বিজ্ঞানমাপ্নোতি জ্ঞানান্মুক্তিরবাপ‍্যতে।*
*🌷তস্মাদ্ যত্নেন নির্ম্মাল‍্যদানং দদ‍্যাদ্ দ্বিজাতয়ে।।*
☆ ☆ ☆ ☆
*🌷সর্ব্বপাপ-বিনির্ম্মুক্তো বিষ্ণুভক্তি-সমন্বিতঃ।*
*🌷নির্ম্মলজ্ঞান-সম্পন্নস্ততো মোক্ষমবাপ্ন য়াৎ।।*
*🔴নদীয়াবিহারী শ্রীগৌরাঙ্গদেব প্রত‍্যহ শ্রীজগন্নাথ দর্শন করতেন।*
*🌷আপনি আচরি ধর্ম জীবেরে শিখায়।*
*🔵নিজের দৃষ্টান্ত দ্বারা জীবকে তীর্থদর্শনের মাহাত্ম্য শিক্ষা দিতেন।তিনি গরুড়স্তম্ভের কাছে দাঁড়াতেন--, মণি কোঠার ভিতরে প্রবেশ করতেন না। ঐ জায়গায় দাঁড়িয়ে তিনি দর্শন করতেন, তিনি দেখতেন ব্রজের শ্রীকৃষ্ণ অবতীর্ণ। এই মূর্তি দর্শন কালে তাঁর নয়ন হতে বারিবর্ষণ হত, এতই পরিমাণে বারিবর্ষণ হত যা পাঠক বিশ্বাস করবেন না।যেমন নর্দমার জল সজোরে নিক্ষিপ্ত হয়,এইরকমভাবে তাঁর চক্ষু হতে জল পড়ত।সেই চোখের জলে কুন্ড হয়েছে।চোখের জলে পাথর ক্ষয় হয়ে কুন্ড হওয়া কি কেউ বিশ্বাস করতে পারেন।শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গদেব নিজে এইরকম দেখিয়ে তীর্থদর্শনের মাহাত্ম্য বিস্তার করেছেন।ভক্তিতে মন পরিস্কার হয়,যোগের দ্বারাও সেইরকম হয়। সুতরাং বেদান্তের যোগে ও ভক্তি-যোগে যে ফল হয়, তীর্থদর্শনে সেই ফল লাভ হয়।*
🪷🪷🪷🪷🪷🪷🪷🪷🪷🪷🪷🪷🪷
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ 🌷 প্রথম ভাগ 🌻 শ্রীযুক্ত রাজর্ষি গোপালচন্দ্র আচার্য‍্য চৌধুরী প্রণীত ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/jagannath.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(০৩)শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ*
           *🌻🌻প্রস্তাবনা🌻🌻*
          ************************
*🍀মায়াদ্বারা আত্মা যে আবৃত হইয়া রয়েছে,তার আর একটু বিস্তৃত ব‍্যাখ‍্যা দরকার মনে করছি।সমস্ত শাস্ত্রেরই লক্ষ্য মায়ার নিবৃত্তি করা,মায়া-নিবৃত্তি হলেই দুঃখের নিবৃত্তি হয় ও আনন্দের উদ্ভব হয়। সুতরাং মায়া যে কি তা বুঝাবার জন্য বেদান্তের একটি শ্লোক উদ্ধৃত করা গেল, যথা=*
*🌷অজ্ঞানস‍্য শক্তিদ্বয়মস্তি আবরণ-বিক্ষেপনামকং।*
*🔴অজ্ঞানের দুইটি শক্তি--আবরণ ও বিক্ষেপ (চাঞ্চল‍্য)।অজ্ঞান অর্থ‍্যাৎ মায়া। এক শক্তিতে (আবরণ শক্তিতে) সচ্চিদানন্দস্বরূপকে আবরণ করে রেখেছে--তাতে প্রকৃত আত্মার স্বরূপ বুঝতে দেয় না।দ্বিতীয়টি বিক্ষেপ শক্তি---তাতে এ জগৎ সৃষ্টি করছে।প্রথম শক্তি সমস্ত অলীক জগৎকে সৎপদার্থ বলে প্রতীয়মান বা অনুভূত করাচ্ছে।এই মায়াই কথায় ভগবান গীতাতে বলেছেন=*
*🌷দৈবী হ‍্যেষা গুণময়ী মম মায়া দুরত‍্যয়া।*
*🌷মামেব যে প্রপদ‍্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তে।।*
*🌻এই কথায় চন্ডীতে বলা হয়েছে=*
*তথাপি মমতাবর্ত্তে মোহগর্ত্তে নিপতিতাঃ।*
*মহামায়া-প্রভাবেণ সংসারস্থিতিকারিণঃ।।*
*জ্ঞানিনামপি চেতাংসি দেবী ভগবতী হি সা।*
*বলাদাকৃষ‍্য মোহায় মহামায়া প্রযচ্ছতি।।*
*তয়া বিসৃজ‍্যতে বিশ্বং জগদেতচ্চরাচরম্।*
*সৈষা প্রসন্না বরদা নৃণাং ভবতি মুক্তয়ে।।*
*সা বিদ‍্যা পরমা মুক্তের্হেতুভূতা সনাতনী।*
*সংসার-বন্ধহেতুশ্চ সৈব সর্ব্বেশ্বরেশ্বরী।।*
*🌹এখানে বেদান্তের অজ্ঞান,চন্ডীর মহামায়া এবং গীতার মায়া একই বস্তু।বেদান্তের মায়া শক্তি দ্বারা আবরণ ও বিক্ষেপ জন্মাচ্ছে।চন্ডীতেও আমরা সেই দুই শক্তির কাজই দেখছি।কারণ যিনি মোহগর্তে ডুবে আছেন,তিনি সৃষ্টিও করছেন।এই মহামায়া যে আমাদেরকে মোহেতে আবৃত করে রেখেছেন বা ঢেকে রেখেছেন,সেই কথার প্রমাণ স্বরূপ শ্রীরামপ্রসাদের একটি গানের কয়েকটি পংক্তি উল্লেখ করছি=*
*🌷মা আমায় ঘুরাবি কত।*
*🌷কলুর চোক ঢাকা বলদের মত।।*
*🍀ভবের গাছে জুড়ে দিয়ে মা আমায় পাক দিতেছ অবিরত খুলে দে মা চোখের ঠুলি,হেরি তোমার অভয় পদ।।*
*🌻এখন আমরা মায়া বোধহয় চিনতে পারলাম। অঘটন-ঘটন-পটীয়সী যোগমায়া, এই মায়াতে আমাদেরকে বহির্মুখ করে রেখেছে,ভগবন্মুখী হতে দেয় না।*
*🌷বিষয়াসক্ত-চিত্তস‍্য কৃষ্ণাবেশঃ সুদূরতঃ।*
*🌷বারুণীদিগগতং বস্তু ব্রজন্নৈন্দ্রীং কিমাপ্নুয়াৎ।।*
*🍁যেমন পূর্বদিকের বস্তু পশ্চিমদিকে গমনশীল ব‍্যক্তির পাওয়া অসম্ভব,সেইরকম সংসারাসক্ত ব‍্যক্তির পক্ষে ঈশ্বর লাভ করা অসম্ভব।*
*🌳কর্মযোগ,জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগ ত্রিবিধ উপায়ে আত্মতত্ত্ব বা ভগবানকে লাভ করা যায়। এটির কোপটি ভালো,কোনটি মন্দ তা বলা কঠিন ; অধিকারী ভেদে ব‍্যবস্থা।তাই চৈতন‍্যচরিতামৃতে উল্লেখ করেছেন=*
*🌷যার যেই ভাব সেই সর্বোত্তম।*
*🌷তটস্থ হইয়া বিচারিলে আছে তারতম।।*
*🌺যিনি কর্মযোগের অধিকারী,তাঁর পক্ষেকর্মযোগই প্রশস্ত,তাঁকে জ্জানযোগ দিলে তাঁর পক্ষে উপযুক্ত হবে না।তা দ্বারা,তাঁর সাধনের সেরূপ উপকারও হবে না। এইরকম ভক্তিযোগও যার পক্ষে উপযুক্ত নয়,তাকে উপদেশ দিলে সেরকম ফল ফলবে না। সুতরাং যার যে উপাদান তদনুসারে ধর্ম হলেই তার সাধনের অনুকূল হয়,রুচির সঙ্গেও মিলে।এই জন্য রুচি অনুসারে ধর্ম নানারকম হয়েছে।*
*রুচীনাং বৈচিত্র‍্যাদৃজুকুটিল নানাপথযুষাং,*
*নৃণামেকো গম‍্য স্ত্বমসি পয়সামর্ণব ইব।*
*🌹রুচির বিচিত্রতা অনুসারে ধর্ম সাধনের নানাপথ হয়েছে,কোনটা সহজ,কোনটা কঠিন, কিন্তু গন্তব‍্যস্থান একই।নদী যেমন নানা পথ দিয়ে আসে, কিন্তু এক সমুদ্রেই গিয়ে সমস্ত মিলিত হয়,ধর্মেরও সাধন নানা প্রকার। বিভিন্ন মতে হলেও উদ্দেশ্য সকলেরই এক এবং যখন প্রকৃত জ্ঞান জন্মে, তখন সকলেই দেখেন যে,একমাত্র ভগবানই উপাস‍্য।নীচস্তরে যতক্ষণ থাকে,তথক্ষণই নানারকম বিভিন্নতা দেখা যায়।কবীরের একটি দোহা এখানে উল্লেখ করছি,তা দ্বারা এ কথার সমর্থন হবে।*
*🌷ঐহি দেশমে মেরি যানা।*
*🌷যাহা নেহি আপনা বেগানা।।*
*যাহা চন্দ্র সূরয নাহি ভাওয়ে,*
*যাহা শোকতাপ নাহি পাওয়ে,*
*যাহা নেহি জমিন আসমানা।*
*যাহা মিট গিয়া সব ধন্দা,*
*রাম রহিম এক বান্দা,*
*যাহা নেহি বেদ কোরাণা।।*
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌻🌹🌹🌹🌹🌹🌹
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ 🌷 প্রথম ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/jagannath.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(০৪)শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ*
             *🌹🌹প্রস্তাবনা🌹🌹*
            🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
*🍀তীর্থদর্শন কর্মকান্ডের অন্তর্ভুক্ত বলা যায়।*
*🌷অনাশ্রিতঃ কর্মফলং কার্য‍্যং কর্ম করোতি যঃ।*
*🌷স সন্ন‍্যাসী চ যোগী চ ন নিরগ্নির্ন চাক্রিয়ঃ।।*
*🌻যোগীদের যোগ সাধন দ্বারা যা হয়,নিষ্কাম কর্ম দ্বারা সেই ফল হয়।তিনি গৃহস্থ হয়েও সন্ন‍্যাসীর ফল লাভ করতে পারেন।*
*🌳কর্মযোগ,জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগ-- ভগবান প্রাপ্তির যে তিনটি উপায় বর্ণিত হয়েছে,তারও একটু আলোচনা হওয়া দরকার মনে করছি।প্রথমতঃ কর্মযোগটি কি তা বুঝবার চেষ্টা করা যাক। কায়িক,বাচনিক,মানসিক তিন উপায়েতে আমাদের কর্মের অভিব‍্যক্তি হয়।এক হিসাবে বলতে পারি,ভক্তিযোগ ও জ্ঞানযোগ কর্মেরই ফল,তা একই পদার্থ।একটি দৃষ্টান্ত দ্বারা বুঝতে চেষ্টা করি-- যেমন শ্রীজগন্নাথের শ্রীমূর্তিদর্শন করলে ভক্তি ও জ্ঞানের উদয় হয়। শ্রীমূর্তিদর্শনটি কর্ম,ভক্তি ও জ্ঞান তার ফল।আমি অন্নভোজন করছি, অন্নভোজনটি কর্ম, তজ্জনিত ক্ষুধানিবৃত্তি ও আনন্দ তার আনুসঙ্গিক ফল।ক্ষুধানিবৃত্তি ও আনন্দ এই দুই ব‍্যাপার কর্মের সঙ্গে সঙ্গেই হচ্ছে, সুতরাং সেটিও কর্মসংজ্ঞায়র মধ্যে ভুক্ত।তার আর পৃথক সত্ত্বা নেই।এইরকমে কায়িক,মানসিক বাচনিক যে ভাবেতেই ভগবানের উদ্দেশ্যে কর্ম করি না কেন,কর্মের হেতুও কর্মই বলা যেতে পারে।ভক্তি ও জ্ঞানকে বিশেষ করে দেখাবার জন্য কর্ম হতে ঐ দুইটিকে পৃথক করে ব‍্যাখ‍্যা করা হয়েছে।কর্ম দুই প্রকার=সকাম ও নিষ্কাম।সকাম কর্মেতে ভগবানকে কামনা করিয়া পূজা করা হয়।যতদিন পর্য‍্যন্ত আকাঙ্ক্ষা থাকবে,অন্তর্নিহিত কামনাবীজের মূল-উৎপাটন না হবে, ততদিন এইরকম ভাবে কর্ম করতে হবে।দূর্গোৎসবাদি পূজাতে উভয় রকমের ব‍্যবস্থাই দেখা যায়। "ধনং দেহি পুত্রং দেহি ইত্যাদি বলে পূজা করা হয়,আবার নিষ্কাম ভাবেও পূজা করা হয়!চন্ডীতে এর দুইটি দৃষ্টান্ত আছে =*
*🌻সুরথ রাজা কামনা করে পূজা করেছিলেন, আবার বৈশ‍্য সমাধি নিষ্কামভাবে পূজা করে জ্ঞানলাভ করেছিলেন। সাকার উপাসনা ও বৈদিক কর্ম সমস্তই কর্মকান্ডের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।যতদিন পর্য‍্যন্ত মানুষ জ্ঞান ও ভক্তিযোগের অধিকারী না হয়,ততদিন পর্য‍্যন্ত সাকার উপাসনা করে মন নির্মল করতে হবে।মন নির্মল হলে জ্ঞানযোগ এবং ভক্তিযোগের অধিকারী হবে। শ্রীমদ্ভাগবতে একাদশ স্কন্ধে=*
*🌷যাবন্ন জায়েত পরাবরেহস্মিন্,*
*🌷বিশ্বেশ্বরে দ্রষ্টরি ভক্তিযোগঃ।*
*🌷তাবৎ স্থবেয়ুঃ পুরুষস‍্য রূপম্,*
*🌷কর্ম্মাবসানে প্রযতঃ স্মরেত।।*
*🔶যে পর্য‍্যন্ত জগন্ময় ভগবানেতে পূজা করতে না পারবে, ততদিন পর্য‍্যন্ত ভগবানের স্থূলরূপেতেই পূজা করতে হবে।*
*🔵উপাসনার প্রথম আরম্ভে স্থূলের উপাসনা করতে হবে।এইরকম চিন্তা করতে করতেই সূক্ষ্মরূপের অধিকারী হবে,তখন মানসে পূজা করতে হবে।অবশেষে নাম এবং রূপ কিছুই থাকবে না এবং কর্মেরও কোন প্রয়োজন থাকবে না। সেইজন‍্য ভগবান গীতার ষষ্ঠ অধ‍্যায়ে বলেছেন=*
*আরোরুক্ষোর্মুনের্যোগং কর্ম কারণমুচ‍্যতে।*
*যোগারূঢ়স‍্য তস‍্যৈব শমঃ কারণম‍্যুচ‍্যতে।।*
*⭐কামনার মূল-উৎপাটনের প্রধান উপায় নিষ্কাম কর্ম করা।নিষ্কাম কর্ম করলে তার আকাঙ্ক্ষা থাকে না, সুতরাং তার পুনরাবৃত্তি নাই। অতএব, মানুষ কর্মদ্বারা মোক্ষলাভ করতে পারে।*
*যুক্তঃ কর্মফলং ত‍্যক্ত্বা শান্তিমাপ্নোতি নৈষ্ঠিকীম্।*
*অযুক্তঃ কামকারেণ ফলে সক্তো নিবধ‍্যতে।।*
              *(গীতা=পঞ্চম অধ‍্যায়)*
*☘ফলের আকাঙ্ক্ষা পরিত‍্যাগ করে যিনি কর্ম করেন,তিনি পরম শান্তি লাভ করেন ; কিন্তু যাঁর বলবতী কামনা ভিতরে রয়েছে, অথচ কর্মত‍্যাগ করেছেন,তিনি কর্ম না করেও সংসার বদ্ধ হয়ে থাকেন। সুতরাং নিষ্কাম কর্ম ভগবৎ-প্রাপ্তির প্রধান উপায়। আমাদের এ ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ের কোনটি বিস্তারিত বর্ণনা করবার অভিপ্রায় নাই। কেবল সামান্যভাবে একটু আভাষ দিয়ে যাওয়া মাত্র।সাকার উপাসনা করেও পরে ভক্তি এবং জ্ঞানের উচ্চ সোপানে আরোহণ করা যায়। ভক্তপ্রবর রামপ্রসাদের একটি গানে বিশেষভাবে তা প্রকাশিত হয়েছে।রামপ্রসাদ প্রথমে মায়ের মূর্তি পূজা দ্বারা তাঁর ভজন আরম্ভ করেন।তাঁর প্রাথগান সব পাঠ করলে বুঝা যায় যে,প্রথমস্তরে বিবেক বৈরাগ‍্যকে অবলম্বন করে তিনি বিধিমার্গে ভগবতীকে অর্চনা করতেন=*
*🌷মন,তুমি কৃষিকাজ জান না,*
*🌷এমন মানব জমি রইল পতিত,*
*🌷আবাদ করলে ফলত্ সোনা।*
*🔴এই গানটি দ্বারা বুঝা যায় যে তিনি প্রথম স্তরে বিবেক অবস্থায় মনকে সাংসারিক কাজ হতে ছাড়িয়ে নিবৃত্তি মার্গে নিবার জন্য চেষ্টা করেছেন।তারপর মূর্তি পূজার অবস্থা শেষ হলে মানসপূজার অধিকারী হলেন।সে অবস্থার একটি গান উল্লেখ করছি=*
*ধাতুপাষাণ মাটিমূর্তি কাজ কিরে তোর সে গঠনে,*
*তুমি মনোময় প্রতিমা গড়ি বসাও হৃদি পদ্মাসনে।*
*আলোচাল আর পাকাকলা কাজ কিরে তোর আয়োজনে,*
*তুমি ভক্তিসুধা খাওয়াইয়ে তারে তৃপ্ত কর আপন মনে।*
*মেষ ছাগল মহিষাদি কাজ কিরে তোর বলিদানে,*
*তুমি জয় কালী জয় কালী বলে বলি দাও ষড়্ রিপুগণে।*
*🌹তারপরে এটি অপেক্ষা আরও উচ্চ সোপানে উঠলেন, এই গানটি দ্বারা বুঝতে পারবেন=*
*🌷মন তোর এই ভ্রম গেল না,*
*🌷কালী কেমন তায় চেয়ে দেখলি না ;*
*🌷ওরে ত্রিভূবন যে মায়ের মূর্তি,*
*🌷জেনেও কি মন তাও জান না।*
*তবে কেমনে ক্ষুদ্র মূর্তিতে করতে চাও তাঁর অর্চনা।*
*🌷জগৎকে সাজাচ্ছেন যে মা,*
            *দিয়ে কত রত্ন সোনা।*
*🌷ওরে কোন লাজে সাজাতে চাস্,*
        *তায় দিয়ে ছার ডাকের গহনা।*
*🌷জগৎকে খাওয়াচ্ছেন যে মা,*
           *সুমধুর সুখাদ‍্য নানা।*
*ওরে কোন লাজে খাওয়াতে চাস্,*
      *তায় আলোচাল আর বুট ভিজানা।*
*🌷জগৎকে পালিছেন যে মা,*
       *সাদরে তাও কি জান না।*
*ওরে কেমনে দিতে চাস্ বলি,*
     *মেষমহিষ আর ছাগলছানা।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🌹🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ 🌷 প্রথম ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/jagannath.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(০৫)শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ*
         *⚪⚪প্রস্তাবনা⚪⚪*
         **********************
*🍀পুন রামপ্রসাদ গাইছেন=*
*শয়নে প্রণাম জ্ঞান,নিদ্রায় কর মাকে ধ‍্যান।*
*ওরে নগর ফির মনে কর প্রদক্ষিণ শ‍্যামা মারে।।*
*যত শোন কর্ণপুটে,সবই মায়ের মন্ত্র বটে।*
*কালী পঞ্চাশৎ বর্ণময়ী বর্ণে বর্ণে নাম ধরে।।*
*কৌতুকে রামপ্রসাদ রটে ব্রহ্মময়ী সর্বঘটে।*
*ওরে আহার কর মনে কর আহুতি দেই শ‍্যামা মারে।।*
*🌹রামপ্রসাদ বেদ বেদান্ত কিছুই পড়েননি কিন্তু সাধনা দ্বারা যা লাভ হয়েছে,তা অক্ষরে অক্ষরে শাস্ত্র সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।এই গানটি=*
*যজ্জুহোসি যদশ্নাসি যৎ করোষি দদাসি যৎ।*
*যৎ তপস‍্যসি কৌন্তেয় তৎ কুরুষ্ব মদর্পণং।।গীতা।।*
*🔷এরই অনুবাদ মাত্র=*
*ব্রহ্মার্পণং ব্রহ্ম হবিঃ ব্রহ্মাগ্নৌ ব্রহ্মণা হুতম্।*
*ব্রহ্মৈব তেন গন্তব‍্যং ব্রহ্মকর্ম-সমাধিনা।।*
*🌻এই উভয় শ্লোক দ্বারা যে ব্রহ্মজ্ঞানের ভাব প্রকটিত করছে,রামপ্রসাদ তা অনুভূতিতে বুঝে গানে প্রকাশ করেছেন। সুতরাং তাঁর গান আর শাস্ত্র একই কথা প্রকাশ করছে।রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কথা আলোচনা করলেও আমরা তাইই দেখতে পাই।তিনিও নিরক্ষর ছিলেন ; কিন্তু সাধন দ্বারা সমস্ত শাস্ত্রতত্ত্ব অনুভূতি করেছিলেন।বহু শাস্ত্র পড়েও পন্ডিতেরা যা ব‍্যাখ‍্যা করতে পারতেন না,তিনি তা অতি সহজ ভাষায় ভক্তদের হৃদয়ঙ্গম করিয়ে দিতেন। সুতরাং সাধনাই সমস্ত পান্ডিত‍্যের মূল।*
*🌲এখন দেখুন বাহ‍্য মূর্তি-পূজা হতে আরম্ভ করে ভক্তির মধ‍্য দিয়ে রামপ্রসাদ ক্রমে জ্ঞানের চরমসীমায় উপনীত হয়েছেন।"সর্ব্বং খল্বিদং ব্রহ্ম" এই পূর্ণ ব্রহ্ম জ্ঞান তখন তাঁর হৃদয়ে উপলব্ধি হয়েছে।সাকার পূজা হতে ভক্তি এ জ্ঞান,এবং কর্ম হতেও ভক্তি এবং জ্ঞান উভয় পাওয়া গেল। সুতরাং নিষ্কাম কর্ম কেবল কর্মতেই নিবদ্ধনয়,এটি ভজনের চরমসীমায় নিয়ে যায়।কর্ম আমরা এইরূপ বুঝলাম।ভক্তি ও জ্ঞানের বিষয় কিছু আলোচনা করা যাক।*
*🙏ভক্তি তিন প্রকার=বৈধী ভক্তি, জ্ঞানমিশ্রা ভক্তি ও পরা ভক্তি।এই পরাভক্তি আবার গাঢ় হলে তা প্রেম নামে অভিহিত হয়।*
*🌷রতি গাঢ় হইলে তার প্রেম নাম কই।*
*☘ভক্তি নবধা=*
*শ্রবণং কীর্তনং বিষ্ণোঃ স্মরণং পাদসেবনং।*
*অর্চ্চনং বন্দনং দাস‍্যং সখ‍্যমাত্মনিবেদনম্।।*
*🌻প্রথমে যে বৈধী ভক্তির কথা বলা হয়েছে--, এই নববিধা ভক্তি তারই অঙ্গীভূত এই বৈধী ভক্তি নয়ভাগে বিভক্ত হয়েছে।এর এক একটি ভাব নিয়ে এক একজন কৃতার্থ হয়েছেন।*
*শ্রীবিষ্ণোঃ শ্রবণে পরীক্ষিদভবদ্ বৈয়াসকিঃ কীর্তনে।*
*প্রহ্লাদঃ স্মরণে তদঙ্ঘ্রি ভজনে লক্ষ্মীঃ পৃথুঃ পূজনে।।*
*অক্রূরঃ স্তুতিবন্দনে কপিপতির্দাস‍্যেহথ সখ‍্যেহর্জ্জুনঃ।*
*সর্ব্বস্বাত্মনিবেদনে বলিরভূৎ কৃষ্ণাপ্তিরেষাং পরম্।।*
               *(রায় রামানন্দ সংবাদ)*
*🌺শ্রীবিষ্ণুর গুণকীর্তন শ্রবণ দ্বারা পরীক্ষিৎ মুক্ত হয়েছিলেন,কীর্তন করে বৈয়াসকি (শুকদেব) মুক্তি লাভ করেছিলেন,প্রহ্লাদ নাম স্মরণে,লক্ষ্মীদেবী তাঁর পাদপদ্ম সেবনে এবং পৃথুরাজা পূজা করে, অক্রূর স্তুতি-বন্দনা করে,হনুমান দাস‍্য ভক্তিদ্বারা,অর্জুন সখ‍্যে এবং বলিরাজা সর্বস্ব নিবেদন করে শ্রীকৃষ্ণকে লাভ করেছিলেন।*
*🔴পূর্বোক্ত শ্লোকে মহারাজ অম্বরীষের নাম নেই ; কিন্তু ইনি একজন পরম ভক্ত,ভগবৎ সেবাই তাঁর প্রাণ।ইনি বিধি-সেবাদ্বারা সিদ্ধি লাভ করেছিলেন, ইনি ভক্তি প্রভাবে মহর্ষি দুর্বাসার দর্প চূর্ণ করেছিলেন।ইঁনার সম্বন্ধে শ্রীমদ্ভাগবতে যা উল্লেখ আছে,তা নিচে দেওয়া হল।*
*🌻স বৈ মনঃ কৃষ্ণপদারবিন্দয়োর্বচাংসি বৈকুন্ঠগুণানুবর্ণনে।*
*করৌ হরের্মন্দিরমার্জনিদিষু শ্রুতিঞ্চকারাচ‍্যুতসৎকথোদয়ে।।*
*মুকুন্দলিঙ্গালয়দর্শনে দৃশৌ তদভৃত‍্যগাত্রস্পর্শেহঙ্গসঙ্গমম্।*
*ঘ্রাণঞ্চ তৎপাদ-সরোজসৌরভে শ্রীমত্তুলস‍্যা রসনাং তদর্পিতে।।*
*পাদৌ হরেঃ ক্ষেত্রপদানুসর্পণে শিরোহৃষিকেশ-পদাভিবন্দনে।*
*কামঞ্চ দাস‍্যে নতু কামকাম‍্যয়া যথোত্তমঃশ্লোকজনাশ্রয়া রাতঃ।।*
*🌺সুতরাং বৈধীভক্তি ক্রমিক উন্নতির দ্বারা দাস‍্য,সখ‍্য ও আত্ম-নিবেদন পর্য‍্যন্ত পৌঁছেছে। দাস‍্য, সখ‍্য ও আত্ম-নিবেদন, এই তিনটি প্রেমভক্তির অন্তর্ভুক্ত।বৈধীভক্তি যখন চরমসীমায় উপনীত হয়,তখন প্রেম রাজ‍্যের আভাস আসে,তখন কতক প্রেম কতক ভক্তি এই ভাবে জড়িত থাকে।এই জন‍্যই বোধহয় এই তিনটিও বৈধী ভক্তির শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে।ভক্তির ক্রমিক বিকাশ শ্রীরায় রামানন্দ ও শ্রীশ্রী মহাপ্রভুর সংবাদে বিস্তারিত ভাবে লেখা হবে।এখানে আর সে বিষয়ের বিশেষ আলোচনা নিষ্প্রয়োজন।ভক্তির প্রথম অবস্থায় শ্রবণ কীর্তন দ্বারা আরম্ভ হয়।ভক্ত যখন প্রেমরাজ‍্যে গিয়ে পড়েন,তখন ভক্ত আর বিধির অধীন থাকেন না। একেবারে চরমসীমার একটি শ্লোক উদ্ধৃত করছি,এই শ্লোকে নামের মহিমাও কীর্তিত হয়েছে।*
🦚🦚🦚🦚🦚🦚🙏🦚🦚🦚🦚🦚🦚
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ 🌷 প্রথম ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/jagannath.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(০৬)শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ*
        *🙏নীলাচলে মহাপ্রভু🙏*
           *🌻 🌻প্রস্তাবনা🌻🌻*
*🌹এবং ব্রতস্বপ্রিয়-নাম-কীর্ত্ত‍্যা জাতানুরাগো দ্রুতচিত্ত উচ্চৈহসত‍্যথৌ রোদিতি রৌতি গায়ত‍্যুন্মাদবন্ নৃত‍্যতি লোকবাহ‍্য।ইত‍্যাদি।*
*🌻মুরারিগুপ্তের একটি গান উদ্ধৃত করছি,তা দ্বারাও প্রেমেতে মানুষকে কি করে তুলে তা বুঝতে পারবেন। গানটি এই=*
     *সখি হে,ফিরিয়া আপন ঘরে যাও।*
*জীয়ন্তে মরিয়া যে,আপনারে খাইয়াছে,*
        *তারে তুমি কি আর সুধাও।।*
*নয়নপুতলি করি,লইনু মোহন রূপ,*
       *হিয়ার মাঝারে করি প্রাণ।*
*পিরীতি আগুন জ্বালি,সকলি পোড়াইনু,*
       *জাতি কুল শীল অভিমান।।*
*না জানিয়া মূঢ় লোকে,কত কি না বলে মোকে,*
          *না করিয়া শ্রবণ গোচরে।*
*স্রোতের বিথার জলে,এ তনু ভাসাইনু,*
         *কি করিবে কুলের কুক্কুরে।।*
*খাইতে শুইতে, আর নাহি লয় চিতে,*
         *কানু বিনে আন নাহি ভায়।*
*মুরারি গুপতে কহে,পিরীতি এমতি হ'লে,*
         *তার গুন তিন লোকে গায়।।*
*🌲এই গানটি দ্বারা ভক্তির একটা অবস্থা বর্ণিত হচ্ছে।বৈষ্ণব শাস্ত্রকারগণ এই অবস্থাকে প্রেমের অবস্থা বলেন।তাঁদের মতে প্রেমের স্থান জ্ঞানের উপরে।শ্রীমদ্ভাগবতেও জ্ঞানের অবস্থার পরেই প্রেমের অধিকার বর্ণিত হয়েছে।শুকদেব গোস্বামী যখন জ্ঞানের পূর্ণাবস্থা প্রাপ্ত হয়েছেন,তখন ব‍্যাসদেব তাঁকে গোপী ধর্ম বলবার উপযুক্ত পাত্র বলে মনে করেছিলেন।আবার বেদান্তমতে জ্ঞানেরই শ্রেষ্ঠত্ত্ব নির্ণীত হয়েছে।এ বিষয়ে তারতম‍্য করবার অধিকার আমার নাই--প্রয়োজনও নাই।তুলসীদাস জ্ঞান ভক্তির শ্রেষ্ঠতা সম্বন্ধে বলেছেন=জ্ঞান পিতা,ভক্তি মাতা,ইঁনার কে বড়,কে ছোট কিছুই বলতে পারি না--"জ্ঞান পিতারি,ভক্তি মাতারি, দুনো পাল্লা ভারী"।তুলসীদাস একজন পরম ভক্ত।ইঁনার একটি দোহা উল্লেখ করছি,যা দ্বারা বৈধী ভক্তির অনেকটা আভাষ পাওয়া যেতে পারে।*
*🌷হরি সে লাগি রহরে ভাই,*
*🌷(তেরি বিগারা)বনেত বনেত বনি যাই।*
*🌷রাঙ্কা তরে বাঙ্কা তরে তরে সুধন কষাই,*
*🌷সুয়া পড়াকে গণিকা তরে তরে মীরা বাই।*
*🌷দৌলত দুনিয়া মালখাজানা বেনিয়া বয়েল চড়াই,*
*🌷এক বাতমে ঠান্ডি হো যায় খোঁজ খবর নাহি পাই,*
*🌷এইসা ভকতি কর ঘট ভিতর ছোড়ে কপট চতুরাই,*
*🌷সেবা বন্দনা আউর দীনতা সহজে মিলয়ে গোঁসাই।*
*❤তুলসীদাস ভগবানের দাস‍্য ভাবের ভক্ত ছিলেন। যেমন ত্রেতাযুগে হনুমান শ্রীরামচন্দ্রের ভক্ত ছিলেন ; তুলসীদাসেরও সেই ভাব,ইনিও শ্রীরামচন্দ্রের ভক্ত ছিলেন।হনুমান ইঁনার গুরু এইরকম জনপ্রবাদ আছে।প্রহ্লাদ,অম্বরীষ,বলি,অর্জুন-- ইঁনারা নববিধা ভক্তির ভাব নিয়েই কৃতার্থ হয়ে গিয়েছেন।কথিত হয়েছে তারমধ‍্যে অম্বরীষ পঞ্চেন্দ্রিয়ের সেবা দ্বারা,প্রহ্লাদ দাস‍্য ভক্তি দ্বারা,বলি আত্মনিবেদনে, এবং অর্জুন সখ‍্যে ভগবানকে লাভ করেছিলেন। মহাপ্রভুগণের ভিতরেও অনেকে বৈধীভক্তির ভাবের সেবা করতেন-- তারমধ‍্যে প্রধান দৃষ্টান্তের স্থল শ্রীহরিদাস।তিনি কেবল হরিনাম সংকীর্তনের দ্বারাই সমস্ত জীবন অতিবাহিত করেছেন।মৃত‍্যু পর্য‍্যন্ত তিনি বিধি-ত‍্যাগ করেননি-- এর উদ্দেশ্য তাঁর নিজের উদ্ধারের জন্য নয়,জীব শিক্ষার জন্য। নাম জপে তিনি নামের মাহাত্ম্য বিস্তার করেছেন, দেখিয়েছেন শ্রীনামের কি অদ্ভুত শক্তি ; শ্রীনাম কেবল পাপ হরণ করেন তা নয়,প্রেমও এনে দেন।বিধিমার্গ অবলম্বন করে তিনি ব্রহ্মত্ব লাভ করেছিলেন,এজন‍্য তাঁর নাম ব্রহ্মহরিদাস বলে খ‍্যাত হয়েছিলেন।নামের দ্বারা যে প্রেম হয়,তার দৃষ্টান্ত স্বরূপ একটি গান উদ্ধৃত করছি।*
     *সই,কেবা শুনাইল শ‍্যাম নাম।*
*কানের ভিতর দিয়া,মরমে পশিল গো,*
      *আকুল করিল মোর প্রাণ।।*
*নাহি জানি কত মধু,শ‍্যাম নামে আছে গো,*
      *বদন ছাড়িতে নাহি পারে।*
*জপিতে জপিতে অঙ্গ,অবশ করিল গো,*
      *কেমনে পাইব সই তারে।।*
*🍀এই পদটি দ্বারা বুঝলাম শ্রীনামই প্রেমের পথ-প্রদর্শক,অকুল সমুদ্রে ধ্রুবতারা।*
*🌺এই নাম মাহাত্ম্য সম্বন্ধে মহাপ্রভু শ্রীগৌরাঙ্গদেব যেরকম বলেছিলেন,তা চরিতামৃত গ্রন্থে লেখা হয়েছে,তা পাঠকগণকে শুনাচ্ছি। সাধনমার্গের প্রথম সোপানে আরোহণ করতে হলে শ্রীনাম একমাত্র সম্বল,তার প্রমাণ স্বরূপ শাস্ত্র উল্লেখ করেছেন।*
*🌷হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলং।*
*🌷কলৌ নাস্ত‍্যেব নাস্ত‍্যেব নাস্ত‍্যেব গতারন‍্যথা।।*
*🌻তারপরকেবল নাম করলে হবে না,কেমন করে নাম করতে হবে,তা বলেছেন=*
*🌷তৃণাদপি সুনীচেন তরোরপি সহিষ্ণুনা।*
*🌷অমানিনা মান দেন কীর্তনীয়ঃ সদা হরিঃ।।*
*🙏নিজকে তৃণ হতেও ক্ষুদ্র মনে করতে হবে,বৃক্ষ হতেও সহিষ্ণু (ক্ষমাশীল)হতে হবে,অমানী হতে হবে, এবং অপরকে মান দান করতে হবে, এইভাবে শ্রীনাম করলে হরিনামের প্রকৃত ফললাভ হবে।*
*🌷নাম সংকীর্তন হইতে সর্ব্বানর্থনাশ।*
*🌷সর্ব্বশুভোদয় কৃষ্ণে প্রেমের উল্লাস।।*
   *🔶মহাপ্রভুর নিজকৃত শ্লোক*
*চেতোদর্পণমার্জ্জনং ভবমহাদাবাগ্নিনির্ব্বাপণং।*
*চেতঃকৈরব-চন্দ্রিকাবিতরণং বিদ‍্যাবধূজীবনম্।।*
*আনন্দাম্বুধিবর্দ্ধনং প্রতিপদং পূর্ণামৃতাস্বাদনম্।*
*সর্ব্বাত্মস্নপনং পরং বিজয়তে শ্রীকৃষ্ণসংকীর্তনম্।।*
*🍁বৈধীভক্তি এবং প্রেমভক্তি উভয়েরই এক-দুইটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করলাম। জ্ঞানমিশ্রা ভক্তি সম্বন্ধে কিছুই বলা হয়নি।এই উভয় ভক্তির মধ‍্যস্থলের যে অবস্থা,তাইই জ্ঞানমিশ্রা ভক্তি।এই অবস্থা পর্য‍্যন্তও, ভক্ত একেবারে আত্মহারা হয় না,জীয়ন্তে মরে না,আমিত্ব একেবারে বিলুপ্ত হয় না।এই অবস্থায় ভক্ত কখনও প্রেমেতে বিহ্বল হয়,আবার তাকে বিধির সংস্কারেতে জাগিয়ে রাখে।জ্ঞানমিশ্রা ভক্তির দৃষ্টান্ত খুব অল্টই আছে। রায় রামানন্দ সংবাদে জ্ঞানমিশ্রা ভক্তির একটি শ্লোক উল্লিখিত হয়েছে =*
*ব্রহ্মভূতঃ প্রসন্নাত্মা ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি।*
*সমঃ সর্ব্বেষু ভূতেষু মদ্ ভক্তিং লভতে পরাং।।*
                                      *(গীতা)*
*🌻সর্বভূতেতে ব্রহ্মজ্ঞান,সদা প্রসন্নচিত্ত,কোন দুঃখ বা আকাঙ্ক্ষা থাকে না,সমস্ত প্রাণীতে সমজ্ঞান হয়।এরপরে পরাভক্তি লাভের অধিকারী হয়।*
🦚🪷🌸🙏🌷🪷🌸🙏🌷🌸🪷🦚
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ 🌷 প্রথম ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/jagannath.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(০৭)শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ*
           *🌻নীলাচলে মহাপ্রভু🌻*
                   *🌹প্রস্তাবনা🌹*
    ####################
*🍀পরে পরাভক্তি লাভের অধিকারী হয়।এর পরস্তরেই ভক্ত একেবারে ডুবে যায়,তাই মুরারি গুপ্ত বলেছেন=*
*🌷স্রোতের বিথার জলে এ তনু ভাসাইনু,*
           *কি করিবে কুলের কুক্কুরে।*
*🍁এই মর্ম্মে চন্ডীদাসেরও একটি গান উদ্ধৃত করছি=*
    *বঁধু তুমি সে আমার প্রাণ!*
*দেহ মন আদি, তোঁহারে সঁপেছি,*
         *কুল শীল জাতি মান।।*
*অখিলের নাথ, তুমি হে কালিয়া,*
         *যোগীর আরাধ‍্য ধন।*
*গোপ গোয়ালিনী, হাম অতি হীন,*
         *না জানি ভজন পূজন।।*
*পিরীতি রসেতে, ঢালি তনু মন,*
        *দিয়াছি তুহারি পায়।*
*তুমি মোর পতি, তুমি মোর গতি,*
        *মন নাহি আন ভায়।।*
*কলঙ্কী বলিয়া, ডাকে সব লোকে,*
        *তাহাতে নাহিক দুঃখ।*
*তোমারি লাগিয়া, কলঙ্কেরি হার,*
        *গলায় পরিতে সুখ।।*
*সতী বা অসতী, তোমাতে বিদিত,*
        *ভাল মন্দ নাহি জানি।*
*কহে চন্ডীদাস, পাপ পূণ‍্য সম,*
         *তোহারি চরণ খানি।।*
*🌹নিধুবাবুর গানে আছে =*
     *ননদিনী বলগে নগরে নগরে।*
*ডুবেছে রাই রাজনন্দিনী কৃষ্ণ কলঙ্ক সাগরে।।*
*কাজ কি বাসে, কাজ কি বাসে,*
      *কাজ কিবা সে পীতবাসে।*
*সে যাহারে ভালবাসে,সে কি বাসে বাস করে।।*
*কাজ কি গোকুল,কাজ কি গোকুল,*
      *ব্রজকুল সব হোক প্রতিকূল।*
*আমি সঁপেছি গো কুল অকুল কান্ডারীর করে।।*
*🌻প্রেমের চরম সীমা রাধা-প্রেম।রাধা নিজে ভক্তস্থানীয়া হয়ে কিরকম ভাবে কৃষ্ণপ্রেমে উন্মাদিনী হতে হয়,তা নিজে উন্মাদিনী হয়ে দেখিয়েছেন। কেবল উন্মাদিনী নয় প্রেমে যে মরতে হয়,তাওও দেখিয়েছেন।শ্রীকৃষ্ণবিরহ প্রেমের চরম সীমা।কৃষ্ণ বিরহের মুর্ম্মুর দাহে রাইয়ের যে কি দশা হয়েছিল তা চন্ডীদাস এইরকম বর্ণনা করেছেন।*
*বিরহ কাতরা বিনোদিনী রাই পরাণে বাঁচে না বাঁচে।*
*নিদান দেখিয়া আসীনু হেথায়,কহিনু তোহারি কাছে।।*
      *যদি দেখিবে তোমার প‍্যারী,*
*চল এইক্ষণে রাধার শপথ আর না করিও দেরী।*
*কালিন্দী পুলিনে কমলের সেজে রাখিয়া রাইয়ের দেহ,*
*কোন সখী অঙ্গে লিখে শ‍্যাম নাম, নিশ্বাস হেরয়ে কেহ।*
*কেহ কহে তোর বঁধুয়া আসিল,সে কথা শুনিয়া কানে,*
*মেলিয়া নয়ন,চৌদিশে নেহারে, দেখিয়া না সহে প্রাণে।*
*যখন হইনু যমুনা পার দেখিনু সখীরা মেলি--*
*যমুনার জলে রাখে অন্তর্জ্জলে রাই দেহ হরি রলি।*
*দেখিতে যদ‍্যপি সাধ থাকে তব ঝাট চল ব্রজে যাই,*
*বলে চন্ডীদাস বিলম্ব হইলে আর না দেখিবে রাই।*
*🌹শ্রীগৌরাঙ্গ রাধা-ভাবেতে এই কৃষ্ণবিরহবেদনা যে কি বস্তু তা নিজে রাধা হয়ে প্রত‍্যক্ষ দৃষ্টান্ত দ্বারা দেখিয়েছেন। তাঁর সেই বিরহের ভাব দেখলে, এবং তাঁর সেই বিরহিনীর দুঃখপূর্ণ মুখ দর্শন করলে সমস্ত ভক্তের হৃদয় সেই দুঃখে ফেটে যেত। গম্ভীরা লীলায় এ বিষয় বিস্তারিত বর্ণিত হবে।*
*🌺এখন "জ্ঞান" সম্বন্ধে কিছু আলোচনা করব।"জ্ঞান" বলতে এখানে "আত্মতত্ত্বজ্ঞান" আলোচনা করব।জ্ঞান হৃদয়ের একটি বৃত্তিবিশেষ ; এটি দ্বারা পরমাত্মারূপী পরমেশ্বরকে জানা যায়।যতদিন পর্য‍্যন্ত এই জ্ঞানলাভ না হবে,ততদিন পর্য‍্যন্ত আমাদের হৃদয়ের মধ্যে পরমব্রহ্ম পরমাত্মাকে জানতে পারব না।এখন এটিকে উদ্বোধন করাই জীবের প্রধান কর্তব‍্য।আগেই লিখেছি=*
*প্রয়োজনস্তু তদৈক‍্য-প্রমেয়-গতাজ্ঞাননিবৃত্তি তৎস্বরূপানন্দাবাপ্তিশ্চ।*
*🍀বেদান্তবিদ্ বেদান্ত লিখতে গিয়ে তিনটি বিষয়ের প্রথমেই আলোচনা করেছেন,বিষয়,সম্বন্ধ,প্রয়োজন।*
*🍀জীবব্রহ্মৈক‍্যং শুদ্ধচৈতন‍্যং প্রমেয়ং। জীব এবং ব্রহ্মের একত্ব, অর্থ‍্যাৎজীব এবং ব্রহ্ম যে এক বস্তু তা প্রমাণ করাই বেদান্তের বিষয়। বোধ‍্য-বোধক-ভাবঃ সম্বন্ধ। গ্রন্থের সহিত ব্রহ্মের বোধ‍্য বোধকভাব সম্বন্ধ।*
*🌳জীবব্রহ্মে একত্বের প্রতিবন্ধক অজ্ঞানের নিবৃত্তি এবং তৎস্বরূপ অর্থ‍্যাৎ ব্রহ্মের স্বরূপ যে আনন্দ তাকে লাভ করা-- এই প্রয়োজন। জীবের ব্রহ্মত্ব লাভ-- এটি জীবের প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু সেখানে পৌঁছিতে গেলেই প্রতিবন্ধক বা বাধা স্বরূপ যে অজ্ঞান রয়েছে,তাকে সরাতে না পারলে লক্ষিত জায়গায় পৌঁছান যায় না।যদিও আমার অজ্ঞান নিবৃত্তির কোনও প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু প্রতিরোধীকে নিবৃত্তি করতে না পারলে,উদ্দেশ‍্য সাধন হয় না ; কাজেই অজ্ঞানের বিরতিও প্রয়োজন হয়ে উঠিল।🌹যেমন কোন রাজা যদি অন‍্য কোন রাজার সম্পত্তি গ্রহণ করতে চান,তাহলে রাজ‍্যাধিকারই তার প্রধান উদ্দেশ্য ; বিরোধীয় রাজাকে পরাজিত করতে না পারলে,রাজ‍্য হস্তগত হয় না, সুতরাং প্রতিদ্বন্দ্বীর পরাজয় প্রয়োজন হল।এখানেও সেইরকম অজ্ঞানই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী,তাকে নিবৃত্তি বা বিরতি করতে না পারলে লক্ষ্যেতে পৌঁছিতে পারি না।তার জন‍্যই নানারকম আয়োজন করতে হয়।কোন রাজ‍্য আক্রমণ করতে হলেই সেই দেশের অবস্থা রীতিনীতি অভিজ্ঞ ব‍্যক্তির মন্ত্রণার প্রয়োজন।এই দেশও যিনি লাভ করতে চান,তাঁরও এই দেশের অভিজ্ঞ লোক চাই।এই দেশের লোকবেদ-পরাগ হচ্ছেন শ্রীগুরুদেব।তিনি মন্ত্র দিবেন,তিনিই সমস্ত রীতি-নীতি স্বরূপ যে বেদবেদান্ত উপনিষদাদি শাস্ত্র--তা উপদেশ করবেন ; তখন শিষ্য সেই গুরুর মন্ত্রণা দ্বারা রণে মায়ারূপ শত্রু হতে উত্তীর্ণ হতে পারবেন। শ্রবণ,মনন, নিদিধ‍্যাসন-- এই যুদ্ধের অস্ত্র।সক্ষেপতঃ ইহাকে প্রাণায়াম সাধন বলা যায়।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙌🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ 🌷 প্রথম ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/jagannath.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(০৮)শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ*
          *🌺নীলাচলে মহাপ্রভু🌺*
                  *🌳প্রস্তাবনা🌳*
*🌹প্রাণায়ামের শাস্ত্রোক্ত প্রমাণ উদ্ধৃত করছি=*
*🌷ইড়য়া পূরয়েৎ বায়ুং মুঞ্চেদ্ দক্ষিণয়ানিলং।*
*🌷যাবৎ শ্বাসং সমাসীনঃ কুম্ভয়েত্তং সুষুম্নয়া।।*
*🌻যাবদ্ যোগী পদ্মাদ‍্যাসনে উপবিশ‍্য যোগমভ‍্যস‍্যতি তদা গুলফাভ‍্যাং গুহ‍্যমূলং নিষ্পীড‍্য খেচরীমুদ্রা-সাহায‍্যেন প্রাণধারণয়া সুষুম্না-মার্গেণ মূলাধারাৎ কুন্ডলিনীমুত্থাপ‍্য স্বাধিষ্ঠানমণিপূরকানাহত-বিশুদ্ধাজ্ঞাখ‍্য-ষট্ চক্রভেদক্রমেণ সহস্র-দল-কমল-কর্ণিকায়াং বিদ‍্যমান পরমাত্মনা সহ সংযোজ‍্য তত্রৈব চিত্তং নির্বাত-দীপবদচলং কৃত্বা আত্মানন্দরসং পিবতি।*
*🔴এখন পাঠককে প্রথমতঃ ঐ যুদ্ধের ক‍্যাম্প কোথায় বলা দরকার।আক্রমণকারীর ক‍্যাম্প শরীরস্থ মূলাধার চক্রে। প্রতিদ্বন্দ্বীর দুর্গ বহুতর,তারমধ‍্যে প্রধানতম দুর্গ ছয়টি--মূলাধার,স্বাধিষ্ঠান,মণিপূরক, অনাহত,বিশুদ্ধ ও আজ্ঞাখ‍্য।এই সব দুর্গ আক্রমণ করে সহস্র দলে পৌঁছিতে হবে।সহস্র দলে পৌঁছবার রাস্তা তিনটি--ইড়া,পিঙ্গলা ও সুষুম্না। এই পথ নির্বাচন,যিনি এই ব‍্যাপারের কাপ্তান হবেন,তাঁর বিবেচনাধীন।সুষুম্না মধ‍্যবর্তী পথ--অন‍্য দুই রাস্তা এর দুই দিকে।মূলাধারে যিনি ক‍্যাম্প করেছেন,তাঁর কাছাকাছি জায়গায় কুলকুন্ডলিনী শক্তি আছেন। তিনি ঐ দরজার প্রহরী স্বরূপা ; তিনি অচৈতন‍্য অবস্থায় থাকেন।তাঁর ত্রিবলি-বেষ্টিত সর্পাকার দেহ।ইঁহাকে পূজা দিয়ে সন্তুষ্ট করতে না পারলে,জয়ের কোন আশা নাই ; সুতরাং প্রথমতঃ ইঁহার প্রীতিসাধন করাই যুদ্ধার্থী সাধকের কর্তব‍্য।ইনি সুপ্রসন্ন হলে,মূলাধার হতে স্বাধিষ্ঠান দুর্গে যাত্রা করতে হবে।প্রত‍্যেক দুর্গেই এক বৎসর,দুইবৎসর, কি কার দুর্ভাগ‍্যবশত দশ বৎসরও হতে পারে।এই যুদ্ধের সৈন‍্য ইন্দ্রিয়গণ--এদেরকে বশে রাখাও বিশেষ কৌশলের প্রয়োজন।অনেক সময় সৈন‍্যদলের ভিতরে বিদ্রোহী হওয়াতে নানা বিশৃঙ্খলা ঘটে থাকে।এদের চালক মন, ও মনের চালক বুদ্ধি।ঐ রাজ‍্যের প্রধান নগর সহস্রার।সহস্রারে পৌঁছিলেই সব গোল চুকে যায়।তখন সমস্ত বন্ধন ছিন্ন হয়,তখন হৃদয়গ্রন্থি ভেদ হয় =*
*ভিদ‍্যতে হৃদয়গ্রন্থিঃ ছিদ‍্যন্তে সর্বসংশয়াঃ।*
*ক্ষীয়ন্তে তস‍্য কর্মাণি তস্মিন্ দৃষ্টে পরাবরে।।*
*🌻এ বিষয়ের প্রারম্ভেই কিছু জ্ঞানতত্ত্বের আলোচনা করা হয়েছে ; আর একটু বিশদরূপে প্রকাশ করবার র্জ,আর একটি গল্পের অবতারণা করছি।🌹অনাহতপুরে সঞ্জীব চন্দ্র নামে এক রাজা ছিলেন। তিনি অতি ধার্মিক,সরল ও বিশ্বাসী ছিলেন।তাঁর এক বিশ্বাসী মন্ত্রী ছিল,তাঁর নাম জ্ঞানবন্ত।সেই মন্ত্রীর আর দুই জন সাহায্যকারী কর্মচারী ছিল,তাদের নাম বিবেকরাম ও বিশ্বাসরাম।এদের অধীনে অন‍্যান‍্য কর্মচারী,সৈন‍্য সামন্ত,লোকজন পরিচালিত হত।এ মন্ত্রীর পরামর্শে রাজ‍্য অতি সুশৃঙ্খলভাবে চলছিল।এ রাজ‍্যের উন্নতি দেখে অন‍্যান‍্য রাজাগণ অত‍্যন্ত ঈর্ষান্বিত হয়েছিলেন।মন্ত্রী সবসময়েই বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে রাজাকে রক্ষা করতেন।রাজা স্থভাবতঃ ভাল মানুষ ; কিন্তু তাঁর দোষ এই যে,যে যা বলে,তাইই বিশ্বাস করেন,এইজন‍্য তাঁর উপর সহজেই আধিপত‍্য করতে পারা যায়।এইজন‍্য মন্ত্রী সবসময়েই সতর্ক থাকতেন,কোন সময়ে কুলোক এসে রাজার মন বিগড়িয়ে দেয়।ঐ রাজ‍্যের কাছাকাছি মায়াপুর নামে এক রাজ‍্য ছিল।তার রাণীর নাম মায়াবতী।তিনি অতি প্রখরা,বুদ্ধিমতী ও বিষয়কার্য‍্যে অতি নিপুণা।তিনি স্ত্রীলোক হয়েও বুদ্ধিকৌশলে অনেক পুরুষকে পরাভব করতেন, এবং তাঁর মন্ত্রীর নাম ছিল অহঙ্কার-চূড়ামণি। মায়াবতীর অনেক সহচরী ছিল,তারাই অনেক কাজ নির্বাহ করত।তাঁর সহচরীর নাম--কামনাসুন্দরী,বিলাসিনী,কুমতি, জটিলা,কুটিলা,রতি এবং এইরকম আরও অনেক সহচরী ছিল।এক সময়ে এই রাণীর,সঞ্জীব রাজার রাজ‍্য আক্রমণ করার ইচ্ছা হল।রাণী দেখলেন,রাজাকে প্রকাশ‍্য ভাবে যদি আক্রমণ করি,তাহলে সুবিধা হবে না এবং বহুলোক ক্ষয় হবে। তিনি রাজার নিকটে গুপ্তচর পাঠিয়ে,তাঁকে বাধ‍্য করা নিরাপদ মনে করলেন।তবে এমন ভাবে লোক পাঠাতে হবে যাতে মন্ত্রী জ্ঞানবন্তও বুঝতে না পারেন যে,তাঁদের শত্রুপক্ষীয় কোন লোক এসেছে।তখন তিনি অহঙ্কার-চূড়ামণি মন্ত্রীর পরামর্শ করলেন,তিনিও তাঁর মতের প্রশংসা করলেন এবং সহজে কার্য‍্যোদ্ধার করতে পারবেন বলে স্পর্দ্ধা করলেন।তদনুসারে অহঙ্কার চূড়ামণিকে, এবং রতি,বিলাসিনী,কামনা,সুন্দরী এই সমস্ত সহচরীকে Spy ভাবে নিযুক্ত করলেন।এদের শক্তি ছিল,যত বড় বীর পুরুষই হোক না কেন,স্থির প্রতিজ্ঞ হোক না কেন,তাদের হাতে পড়লে তাদেরকে হাতের খেলার পুতুল বানাতে পারত।তারা এই কয়জন সঞ্জীব রাজার বাড়িতে প্রবেশ করল।বৃদ্ধ মন্ত্রীও তাদের ছল বুঝতে পারলেন না,তিনিও তাদেরকে নিজের লোক বলেই মনে করলেন।এদের মধ্যে অহঙ্কার চূড়ামণিপারিষদ দলের মধ্যে মিশলেন, এবং কামনা, বিলাসিনী,রতি সুন্দরী এ কয়েকজন অন্তঃপুর-বাসিনীদের অন্তর্ভুক্ত হলেন। কেউই এদের চতুরতা বুঝতে পারল না। রতি,বিলাসিনী,সুন্দরী এরা নৃত্যগীতাদিতে এবং সৌন্দর্য্যে অন‍্য গায়িকা এবং নর্তকী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠা হলেন।আবার বাড়ীর বাইরে অহঙ্কার চূড়ামণিও পারিষদবর্গের ভিতরে খুব অল্পদিনের মধ্যে রাজার অতি প্রিয় পাত্র হলেন।রাজা ক্রমশঃ অহঙ্কার চূড়ামণির সংসর্গে থেকে, মন্ত্রী জ্ঞানবন্ত এবং তাঁর সহচর বিবেকরাম ও বিশ্বাসরামের মন্ত্রণায় উদাসীনতা প্রকাশ করতে লাগলেন।এরা এতদূর আধিপত‍্য বিস্তার করল,যে তিনি বাইরে যখন আসেন,তখন অহঙ্কার চূড়ামণি ছাড়া অন‍্য কারও কথায় কর্ণপাত করেন না, এবং ভিতরে যখন থাকেন,তখন রতি,বিলাসিনী সুন্দরী এদেরকে নিয়েই থাকেন।থাকতে থাকতে এইরকম হল যে,অহঙ্কার চূড়ামণি এবং রতি বিলাসিনীর কুমন্ত্রণায় মন্ত্রী জ্ঞানবন্ত এবং বিবেকরাম ও বিশ্বাসরাম তাঁদের অনুচরবর্গ সমেত রাজ‍্য হতে বাহির হয়ে যাবার আদেশ হল।এই সংবাদে মায়াপুরে অবিলম্বে পৌঁছিল।মায়াবতী নিজের সমস্ত সৈন‍্য এই সময়ে তাঁর রাজ‍্য মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন।মায়াবতীর সুকৌশলে বিনা যুদ্ধে ও বিনা রক্তপাতে রাজা সঞ্জীবচন্দ্র বন্দী হলেন।রাজা বুঝতে পারলেন না যে,তিনি বন্দী হয়েছেন। বাস্তবিকও সৈন‍্য সামন্ত প্রহরী পরিবেষ্টিত রেখে যে বন্দী করা,তা হয়নি।তাঁর মনকে সম্পূর্ণরূপে বন্দী করা হয়েছে,তাঁর বিবেককে বন্দী করা হয়েছে, এবং জ্ঞানকে আচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে। সুতরাং তিনি মায়াবতীর খেলার পুতুল বৈ আর কিছুই নন।মায়াবতী তাঁর সৈন‍্য সামন্ত দিয়ে চারিদিক ঘিরে রাখলেন যে,জ্ঞানবন্ত,বিবেকরাম ও বিশ্বাসরাম কোনমতে রাজার সঙ্গে দেখা করতে না পারেন, বা রাজবাড়ীতে না আসতে পারেন। এবং শূন‍্যপথে বৈদ‍্যুতিক আলোক সংযোগে যাতে প্রবেশ করতে না পারেন,তারজন‍্য সমস্ত নগর অন্ধকার করে রাখলেন।মায়াবতী বর্তমান airship, zeppclin প্রভৃতির খবর না রাখতে পারেন, কিন্তু কার্য‍্যত বুঝা যায় যে,ঐরকম কোন যন্ত্র তখন ছিল, যাতে শূন‍্যপথে প্রবেশ করা যায়।*
🔵🔴🌖🔴🌖🔴🔵🔵🔴🌖🔵🔴🌖
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ 🌷 প্রথম ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/jagannath.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(০৯)শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ*
         *🌻নীলাচলে মহাপ্রভু🌻*
               *🌻প্রস্তাবনা🌻*
     ~~~~~~~~~~~~~~~~~~
*🍀এখন যেরকম লন্ডন নগর অন্ধকারাচ্ছন্ন,অনাহত পুরীও সেইরকমই অন্ধকারাচ্ছন্ন করা হয়েছিল ; লন্ডন নগর কেবল রাত্রে অন্ধকার করা হয়, কিন্তু অনাহতপুরী দিন-রাত্রিই অন্ধকারাচ্ছন্ন করা হয়েছিল।মন্ত্রী জ্ঞানবন্ত দেখলেন,এখন তাঁর কৌশল অবলম্বন করেই পুনরায় রাজার কাছে পৌঁছতে হবে। এইজন‍্য বিবেকরাম ও বিশ্বাসরামকে নিযুক্ত করলেন।এ দিকে অনেকদিন গত হলে,মায়াবতীর বিশ্বাস হল যে রাজা এবং মন্ত্রী কেউই আর কিছু করতে পারবেন না।এই বিশ্বাসেতে তিনি কড়া প্রহরী হতে অনেকটাই শিথিল হলেন।এরকম সকলেরই ঘটে থাকে,মনে করেন আমার করায়ত্ত হয়ে গেছে।রাজারও বহুদিন এইরকম ভোগের পর,ভোগের লালসা অনেক পরিমাণে মন্দীভূত বা কম হয়ে আসিল।সব কাজেরই একটা প্রতিক্রিয়া (Reaction) হয়, বহুদিন ভোগ করে ভোগবাসনার বিরতি বা নিবৃত্তি হয়।সঞ্জীবচন্দ্রেরও তাইই ঘটিল।মায়াবতীর প্রহরীরা আর সেরকম পাহারা দেয় না। সুযোগ পেয়ে বিবেকরাম ও বিশ্বাসরাম শূন‍্যপথে ভিক্ষুকের বেশে সঞ্জীবচন্দ্রের কাছে উপস্থিত হলেন এবং বিবেকরাম শঙ্করাচার্য‍্যের মোহমুগদর আবৃত্তি করতে আরম্ভ করলেন।*
*🔷মূঢ় জহীহি ধনাগমতৃষ্ণাং কুরু তনুবুদ্ধে মনসি বিতৃষ্ণাং।*
*🔷যল্লভসে নিজ-কর্মোপাত্তং বিত্তং তেন বিনোদয় চিত্তং।।*
*🔷নলিনীদলগত-জলমতিতরলম্ তদবজ্জীবনমতিশয়চপলম্।*
*🔷ক্ষণমিহ সজ্জনসঙ্গতিরেকা ভবতি ভবার্ণবতরণে নৌকা।।*
*🔷কা তব কান্তা কস্তে পুত্রঃ সংসারোহয়মতীব বিচিত্রঃ।*
*🔷কস‍্য ত্বং বা কুত আয়াতস্তত্ত্বং চিন্তয় তদিদং ভ্রাতঃ।।*
*🔷অঙ্গং গলিতং পলিতং মুন্ডং দন্তবিহীনং জাতং তুন্ডং।*
*🔷করধৃত-কম্পিত-শোভিত-দন্ডং তদপি ন মুঞ্চত‍্যাশাভান্ডং।।*
*🔷বালস্তাবৎ ক্রীড়াসক্তস্তরুণস্তাবৎ তরুণীরক্তঃ।*
*🔷বৃদ্ধস্তাবচ্চিন্তামগ্নঃ পরমে ব্রহ্মণি কোহপি ন লগ্নঃ।।*
*🔷দিনযামিন‍্যৌ সায়ম্প্রাতঃ শিশির বসন্তৌ পুনরায়াতঃ।*
*🔷কালঃ ক্রীড়তি গচ্ছত‍্যায়ুস্তদপি ন মুঞ্চত‍্যাশাবায়ুঃ।।*
*🔷মা কুরু ধনজনযৌবনগর্বং হরতি নিমেষাৎ কালঃ সর্বং।*
*🔷মায়াময়মিদমখিলং হিত্বা ব্রহ্মপদং প্রবিশাশু বিদিত্বা।।*
*🔷যাবদ্বিত্তোপার্জ্জনশক্তস্তাবন্নিজ পরিবারো রক্তঃ।*
*🔷তদ চ জরয়া জর্জ্জর-দেহে বার্ত্তাং কোহপি ন পৃচ্ছতি গেহে।।*
*🔷পুনরপি জননং পুনরপি মরণং পুনরপি জননী-জঠরে শয়নং।*
*🔷ইতি সংসারে স্ফুটতরদোষঃ কথমিহ মানব তব সন্তোষঃ।।*
*🔷যাবজ্জীবো নিবসতি দেহে কুশলং তাবৎ পৃচ্ছতি গেহে।*
*🔷গতবতি বায়ৌ দেহাপায়ে ভার্য‍্যা বিভ‍্যতি তস্মিন্ কায়ে।।*
*🔷অর্থমনর্থং ভাবয় নিত‍্যংনাস্তি ততঃ সুখলেশঃ সত‍্যং।*
*🔷পুত্রাদপি ধনভাজাং ভীতিঃ সর্বত্রৈষা কথিতা নীতাঃ।।*
*🔷কামং ক্রোধং লোভং মোহং ত‍্যক্ত্বাত্মানং ভাবয় কোহহম্।*
*🔷আত্মজ্ঞানবিহীনা মূঢ়াস্তে পচ‍্যন্তে নরকনিগূঢ়াঃ।।*
*🔷সুরমন্দিরতরুমূলনিবাসঃ শয‍্যা ভূতলমজিনং রাসঃ।*
*🔷সর্বপরিগ্রহ-ভোগত‍্যাগঃ কস‍্য সুখং ন করোতি বিরাগঃ।।*
*🔷শত্রৌ মিত্রে পুত্রে বন্ধৌ মা কুরু যত্নং বিগ্রহসন্ধৌ।*
*🔷ভব সমচিত্তঃ সর্বত্র ত্বং বাঞ্জস‍্যচিরাদ্ যদি বিষ্ণুত্বং।।*
*🔷ত্বয়ি ময়ি চান‍্যত্রৈকো বিষ্ণুর্ব‍্যর্থং কুপ‍্যসি ময‍্যসহিষ্ণুঃ।*
*🔷সর্বস্মিন্নপি পশ‍্যাত্মানং সর্বত্রোৎসৃজ ভেদজ্ঞানং।।*
*🌻এর পর বিবেকরাম বলেছেন=*
*🔶যদুপতেঃ ক্ব গতা মথুরাপুরী রঘুপতেঃক্ব গতোত্তরকোশলা।*
*🔶ইতি বিচিন্ত‍্য কুরুষ্ব মনঃস্থিরং ন সদিদং জগদিত‍্যবধারয়।।*
*🔶অহন‍্যহনি ভূতানি গচ্ছতি যমমন্দিরং।*
*🔶শেষাঃ স্থিরত্বমিচ্ছন্তি কিমশ্চার্য‍্যমতঃ পরং।।*
*🔶শ্বঃ কার্য‍্যমদ‍্য কুর্ব্বীত পূর্বাহ্নে চাপরাহ্নিকম্।*
*🔶নহি প্রতীক্ষতে মৃত‍্যুঃ কৃতমস‍্য ন বা কৃতম্।।*
*🌹বিশ্বাসরাম বলছেন=*
*🌷হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম্।*
*🌷কলৌ নাস্ত‍্যেব নাস্ত‍্যেব নাস্ত‍্যেব গতিরন‍্যথা।।*
*🍀হরি সে লাগি রহরে ভাই।*
*(তেরি বিগারা)বনেত বনেত বনি যাই।*
*রাঙ্কা তরে বাঙ্কা তরে তরে সুধন কষাই।।*
*সুয়া পড়াকে গণিকা তরে তরে মীরা বাই।*
*দৌলত দুনিয়া মালখাজানা বেনিয়া বয়েল চড়াই।*
*এক বাৎসে ঠান্ডি হো যাই খোজ খবর নেই পাই।।*
*এইসা ভকতি কর ঘট ভিতর ছোড় কপট চতুরাই।*
*সেবা বন্দনা আউর দীনতা সহজে মিলয়ে গোসাঁই।।*
*(ভয়ংভয়ানামপহারিণি স্থিতে মনস‍্যনন্তে মম কুত্র তিষ্ঠতি।*
*যস্মিন্ স্মৃতে জন্মজরান্তকাদি ভয়ানি সর্বাণ‍্যপয়ান্তি তাত।।*)
                               *(বিষ্ণুপুরাণ)*
*🌻এইসব কবিতা গ্রহণ করেই সঞ্জীবচন্দ্রের ভাবান্তর উপস্থিত হল, তাঁর পূর্বস্মৃতি জেগে উঠিল। কিন্তু মায়াবতীর অনুচরেরা মনে করল, যেরকম ভিখারিরা এসে থাকে, এরাও সেই শ্রেণীর।তারা দুই-এক পয়সা দিয়ে ভিখারিদের বিদায় করবার চেষ্টা করল, কিন্তু তারা যাবার লোক না। রাজাও তখন বুঝতে পারলেন যে,এরা তাঁর পূর্ব পরিচিত মন্ত্রী-সহচর।সময় হলে এরকমই হয়। "সময় তো যায়,বাবা খাইতে আস" (বাসনা জ্বালিয়ে দাও) এই কথা বলাতেই লালাবাবু প্রেমের পথের পথিক হলেন।এইরকম কথা তো কতই শোনা যায়।*
               *ক্রমাগত*
🦜🦜🦜🦜🦜🦜🦜🦜🦜🦜🦜🦜🦜
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ 🌷 প্রথম ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/jagannath.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১০)শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ*
           *🌹নীলাচলে মহাপ্রভু🌹*
                   *🌻প্রস্তাবনা🌻*
          *************************
*🍀লালাবাবুরও হয়ত আগে এরকম কথা অনেক শুনেছেন,কিন্তু তখন তাঁর সেরকম লাগেনি।আজ কেমন সুসময়ে কথাটি পড়েছে,মন পূর্বেই তৈরী হয়েছিল,অমনিই প্রাণের ভিতর লাগল।চুম্বকে যেমন লৌহাকে আকর্ষণ করে,সেরকম করতে লাগল।সঞ্জীবচন্দ্রেরও আজ সেই অবস্থা।ভোগ করে ভোগের আকাঙ্ক্ষা নিবৃত্তি হয়েছে।এখন চায় প্রাণে নিবৃত্তি-- সেই সময়েই ঐ সব শ্লোক বিবেকরাম ও বিশ্বাসরামের মুখে শুনতে পেল,আর চৈতন‍্যের উদয় হল।*
*তখনই মায়াবতীর লোক বুঝতে পারল যে,সেই মন্ত্রীর সেই দুই অনুচর উপস্থিত হয়েছে, এবং রাজাকে পূর্ব স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে।এদিকে লাজার ও বিবেকরামের ইঙ্গিতমাত্র মন্ত্রী জ্ঞানবন্ত সদলে প্রবেশ করতে আরম্ভ করলেন।মায়াবতীর লোক অহঙ্কার-চূড়ামণি,কামনা,বিলাসিনী প্রভৃতি ক্রমশ সরে গেল,রাজ‍্যের ও রাজার পুনরুদ্ধার হল। সঙ্গে সঙ্গেই সমস্ত শহর,নগর,গ্রাম আলোয় উদ্ভাসিত হল,দুঃখের অবসান হল,সকলে সুখ সাগরে ভাসতে লাগল, রাজ‍্য মধ্যে আবার আগের মত বেদাধ‍্যয়ন,শাস্ত্রালোচনা প্রভৃতি আরম্ভ হল।তখন সঞ্জীবচন্দ্র আর সে সঞ্জীবচন্দ্র নাই,তিনি তখন দীন কাঙাল, "তৃণদপি সুনীচেন"ভাবের মহিমা তাঁর হৃদয়ে প্রকাশ পেয়েছে সুতরাং ব্রহ্মত্বলাভে আনন্দময় হয়ে গিয়েছেন। তিনি তখন প্রকৃত তত্ত্ব যে কি তা বুঝতে পারলেন।*
*🌷রূপং মহত্তে স্থিতমত্র বিশ্বং ততশ্চ সূক্ষ্মাং জগদেতদীশ।*
*🌷রূপাণি সর্বাণি চ ভূতভেদাস্তেহন্তরাত্মাখ‍্যমতীব সূক্ষ্মম্।।*
*🌷তস্মাচ্চ সূক্ষ্মাদি-বিশেষণানামগোচর যৎ পরমাত্মরূপং।*
*🌷কিমপ‍্যচিন্ত‍্যং তব রূপমস্তি তস্মৈ নমস্তে পুরুষোত্তমায়।।*
*🌷নমোহস্তু বিষ্ণবে তস্মৈ নমস্তস্মৈ পুনঃ পুনঃ।*
*🌷যত্র সর্বং যতঃ সর্বং যঃ সর্বং সর্বসংশ্রয়ঃ।।*
*🌷সর্বগত্বাদনন্তস‍্য স এবাহমবস্থিতঃ।*
*🌷মত্তঃ সর্বমহং সর্বং ময়ি সর্বং সনাতনে।।*
*🍁অনন্তর, গ্রহ-নক্ষত্রাদি-সুশোভিত আকাশাদি সহিত বিশ্ব তোমার বৃহৎ রূপ,পয়োধি ও ভূধরাদি-সমন্বিত পৃথিবী তোমার অপেক্ষাকৃত সূক্ষ্মরূপ, জীবদেহ তা হতেও সূক্ষ্ম, তদপেক্ষা তোমার সূক্ষ্মরূপ দৈহান্তর্বর্তী অন্তরাত্মা,তদতিরিক্ত সূক্ষ্মাদি বিশেষণের অগোচর, অচিন্ত‍্যনীয় পরমাত্মা স্বরূপ তোমার যে রূপ আছে, আমি সেই পুরুষোত্তম পরম ব্রহ্মকে নমস্কার করি।যেহেতু এই অনন্তদেব সর্বময়, অতএব আমিই সেই ঈশ্বর,আমা হতে বিশ্বের উৎপত্তি হয়েছে,আমি জগন্ময়, অবিনশ্বর,আমাতেই জগত অবস্থিত।(জ্ঞানযোগ)।*
*🍀এতদিন সঞ্জীবচন্দ্র মায়ামোহে ভুলেছিলেন,এখন মায়া কেটে গেল।নিত‍্য,শুদ্ধ,বুদ্ধ,মুক্ত,সত্ত্বস্বভাব পরমানন্দাকারাকারিতা চিত্তবৃত্তির উদয় হল, জ্ঞানের উদয় হল,অজ্ঞানের পরাজয় হল। এখন সঞ্জীবচন্দ্র বুঝলেন,অহঙ্কার-চূড়ামণি যে,দেহেন্দ্রিয়ই আত্মা বুঝিয়েছিলেন।*
*তদনুসারেই তিনি এতদিন দেহের সেবা করতেছিলেন।এখন তিনি বুঝেছেন দেহ,ইন্দ্রিয়,মন,বুদ্ধি, অহঙ্কার কেউই আত্মা নহে,মায়ার চর।বাস্তবিক আত্মা--,দেহ,ইন্দ্রিয়, মন, বুদ্ধি সমস্তের অতীত-- নিত‍্য চৈতন‍্য স্বরূপ। "অহঙ্কার-বিমূরাত্মা কর্ত্তাহমিতি মন‍্যতে"।অহঙ্কার দ্বারা বিমুগ্ধ হয়ে লোকে নিজেকেই সমস্ত কাজের কর্তা মনে করে থাকেন। সঞ্জীবচন্দ্রের দেহেতে যে অহংভাব ছিল,তা চলে গেল।তখন বুঝতে পারলেন,জীবাত্মা ও পরমাত্মা একই বস্তু ; জীবাত্মা মায়াবচ্ছিন্ন আর পরমাত্মা মায়ামুক্ত-- কিন্তু তত্ত্বতঃ একই বস্তু।তাই মহারাজ পরীক্ষিৎকে শুকদেব গোস্বামী শিক্ষা দিয়েছিলেন=*
*🌷অহং ব্রহ্ম পরং ধাম ব্রহ্মাহং পরমং পদং। ইত্যাদি।*
                         *(শ্রীমদ্ ভাগবৎ ১২শ স্কন্ধ)*
*🍁এই উপদেশ পেয়ে,তিনি এবং দংশনকারী সর্প এবং পরমাত্মা তিনেতেই অভেদ জ্ঞান হয়ে তাঁর মৃত‍্যুভয় দূরীভূত হয়েছিল।*
*🌷যথা নদ‍্যঃ স‍্যন্দমানা সমুদ্রেহস্তং গচ্ছন্তি নামরূপে বিহায়।*
*🌷তথা বিদ্বান্নামরূপাৎ বিমুক্তঃ পরাৎ পরং পুরুষ-মুপৈতি দিব‍্যম্।।*
                  *(জ্ঞানযোগ উপনিষদ্)*
*🌹নদীগুলি যেমন তত্তন্নাম পরিত‍্যাগ করে সমুদ্রে মিশে যায়,সেইরকম জ্ঞানবান্ নাম-রূপ দেহেন্দ্রিয়াদিতে আত্মাভিমানাদি ত‍্যাগ করে পরমাত্মাতে মিশে যান, অর্থ‍্যাৎ মুক্তিলাভ করেন।জীবাত্মা ব‍্যষ্টিরূপ(পৃথক পৃথক ভাব, স্ব স্ব ভাব, সমষ্টির বিপরীত) ও পরমাত্মা সমষ্টিরূপ।এখন পাঠককে বুঝতে হবে, সঞ্জীবচন্দ্র ইনি জীবাত্মা,অনাহতপুরীতে অর্থ‍্যাৎ অনাহত চক্রে ইঁনার বাস ; আর জ্ঞানবন্ত ইনিই জ্ঞান, দেহধারী হয়ে জীবকে শিক্ষা দিবার জন্য গুরুরূপে প্রকটিভূত হয়েছেন, আর গুরুরূপে ভিতরে থেকে শিক্ষা দেন। অহঙ্কার-চূড়ামণি ইনি অহংকার ; মায়াবতী মায়া,অবিদ‍্যা, সুতরাং মায়াপুরে তার বাস-- অহঙ্কার,রতি, বিলাস ইত্যাদি মায়ারই কাজ।*
*পরমহংসদেব বলতেন,অহঙ্কার না গেলে, জ্ঞানআসে না,উচু ঢিবিতে জল আসে না। মহাপ্রভুও সেইজন‍্য "তৃণাদপি সুনীচেন" ইত্যাদি দ্বারা অহঙ্কার নিবৃত্তি হলে,ভক্তির উদয় হয়,এই শিক্ষা দিয়েছিলেন।বৈষ্ণব-দর্শন অনুসারে জীব এবং পরমব্রহ্ম এক বস্তু নয়। মহাপ্রভুও জীবাত্মা এবং পরমাত্মা এক হতে পারে না বলেছেন,তা শ্রীপাদ কবিরাজ গোস্বামী উল্লেখ করেছেন। বেদান্ত মতে জীব এবং পরমাত্মা একই পদার্থ।কেবল মায়া দ্বারা বিভিন্ন হয়েছে।*
🔵🔴🔵🔴🔵🔴🔵🔴🔵🔴🔵🔴⚪
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🔜 ক্রমাগত 👉 শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ 🌷 দ্বিতীয় ভাগ 🌻 শ্রীযুক্ত রাজর্ষি গোপালচন্দ্র আচার্য‍্য চৌধুরী প্রণীত ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/jagannath2.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

    📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝
    ꧁👇📖 সূচীপত্র ✍️ শ্রী জয়দেব দাঁ 📖👇



✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧


✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

   ✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️ 
নিবাস- বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ- বাঁশবাড়ী, থানা- ইংরেজ বাজার, জেলা- মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ, পিন কোড- ৭৩২১০১।

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

  *••••┉❀꧁👇🏠Home Page🏠👇꧂❀┅••••* 


✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

    *••••━❀꧁👇 📖 সূচীপত্র 📖 👇꧂❀┅••••* 



✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

     *••••━❀꧁👇📚 PDF গ্রন্থ 📚👇꧂❀┅••••* 


✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
    *••••┉━❀꧁ 🙏 রাধে রাধে 🙏 ꧂❀━┅••••* 
                   শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ
              হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।।
  *••••┉━❀꧁ 🙏 জয় জগন্নাথ 🙏 ꧂❀━┅••••*
              হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
              হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥
  *••••┉━❀꧁ 🙏 জয় রাধাকান্ত 🙏 ꧂ ❀━┅••••*
   🌷❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀🌷
   🏵️❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀🏵️
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧







শেষ ৩০ দিনের পোস্টের মধ্যে সর্বাধিক Viewer নিম্নে :-

শ্রীকৃষ্ণ লীলা 🙏 সূচীপত্র ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_74.html

শিবরাত্রি ব্রতকথা 🙏 ১০৮ নাম 🙏 মন্ত্র সমূহ 🙏 শিবরাত্রি ব্রত কি ভাবে পৃথিবীতে প্রচলিত হল❓শিবরাত্রি ব্রত পালনে কি ফল লাভ হয় ❓শিবরাত্রি ব্রত পালন কি সকলেই করতে পারেন ❓🙏 সকল ভক্ত 👣 চরণে 👣 অসংখ্যকোটি 🙏 প্রণাম 🙏শ্রী মৃন্ময় নন্দী 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/02/shib.html

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নৌকা গঠন তত্ব ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 https://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_22.html

🙇 রাধে রাধে 🙇 শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ 👏 হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।। 🙇 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/09/today.html

শ্রীঅম্বরীষ মহারাজের ছোট রানী 🙏 চারিযুগের ভক্তগাঁথা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/12/blog-post_97.html

মনোশিক্ষা 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 🙏 শ্রীযুক্ত প্রেমানন্দ দাস ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/jaydeb_14.html

বকরূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে চারটি প্রশ্ন করেছিলেন সেই প্রশ্নই বা কি? ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/05/blog-post_98.html

শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু 🥀 সংক্ষিপ্ত কথন 🙏 প্রথম ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/01/mohaprobhu-joydeb-dawn.html

*নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলং শুকমুখাদকমৃতদ্রবসংযুতম্।**পিবত ভাগবতং রসমালয়ং মুহুরহো রসিকা ভূবি ভাবুকাঃ।।*✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/09/blog-post_89.html

শ্রীআমলকী একাদশী ব্রতের মাহাত্ম‍্য কি ❓ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/ekadoshi.html