🚩🚩🚩🙇🙇🙇 রাধে রাধে 🙇🙇🙇🚩🚩🚩

৪৫. (২) স্বপ্ন বিলাস লীলা 🌷 শ্রীকৃষ্ণ লীলা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/04/swapnabilasleela.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 👉 ৪৫. (২) স্বপ্ন বিলাস লীলা 🌷 শ্রীকৃষ্ণ লীলা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/04/swapnabilasleela.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

*শ্রীমদ্ভাগবতে পাওয়া যায়----*
*🌷কৃষ্ণবর্ণং ত্বিষাহকৃষ্ণং সাঙ্গোপাঙ্গাস্ত্রপার্ষদম্।*
*🌷যজ্ঞৈঃ সংকীর্তন-প্রায়ৈর্যজন্তি হি সুমেধসঃ।।*
*🌻সুমেধসঃ=সুবুদ্ধি ব‍্যক্তিগণ, ত্বিষা=অঙ্গকান্তিতে, অকৃষ্ণং= অকৃষ্ণ অর্থ‍্যাৎ পীতবর্ণ বা গৌরবর্ণ, সাঙ্গোপাঙ্গাস্ত্রপার্ষদ= যেনি অঙ্গ ও উপাঙ্গরূপ অস্ত্র ও পার্ষদগণের সহিত বিদ‍্যমান, কৃষ্ণবর্ণং= কৃষ্ণবর্ণ, [ভগবন্তং]=ভগবানকে, সংকীর্তন প্রায়ৈ যজ্ঞৈঃ হি যজন্তি =সংকীর্তন প্রধান পূজোপকরণ দ্বারা নিশ্চিত পূজা করেন।*
*🌹সুবুদ্ধি ব‍্যক্তিগণ সংকীর্তন প্রধান পূজা উপকরণ দ্বারা, অঙ্গ ও উপাঙ্গরূপ অস্ত্র এবং পার্ষদগণের সঙ্গে বিদ‍্যমান গৌরকান্তি বিশিষ্ট কৃষ্ণবর্ণ (ভগবানকে)অর্চনা করে থাকেন।*
*🔵এই শ্লোকে কৃষ্ণবর্ণ শব্দের অর্থ দুটিকে ত্বিষাকৃষ্ণ শব্দের দুটি অর্থের সঙ্গে মিলালে মোট চারটি অর্থ পাওয়া যায়।*
*যেমন (১)যাঁর বর্ণ কৃষ্ণ এবং কান্তিও কৃষ্ণ,(২)যিনি কৃষ্ণকে বর্ণন করেন যাঁর কান্তি কৃষ্ণ,(৩)যাঁর বর্ণ কৃষ্ণ, কিন্তু কান্তি কৃষ্ণবর্ণ নয় বা পীত বা গৌর এবং (৪)যিনি কৃষ্ণকে বর্ণন করেন এবং যাঁর কান্তি কৃষ্ণবর্ণ নয় বা পীত।◆কিন্তু প্রথম দুইটি অর্থ অসঙ্গত, কারণ কলিযুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, অন‍্য বর্ণের দ্বারা আচ্ছাদিত,ছন্ন অবতার,তাই তাঁর কান্তি কখনো কৃষ্ণ হতে পারে না। তাহলে শেষ দুইটি অর্থই সঙ্গত,কারণ কলিতে স্বয়ং ভগবান ভিতরে কৃষ্ণবর্ণ,বাইরে পীত বা গৌরবর্ণ ; অর্থ‍্যাৎ তিনি অন্তঃকৃষ্ণ বহির্গৌর। তাই "ত্বিষা কৃষ্ণম্"(সন্ধিহীন)পাঠ সঙ্গত নয় ; "ত্বিষা অকৃষ্ণম্"(সন্ধিবদ্ধ) পাঠই সঙ্গত।*
*🍀ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই পীত বা গৌরবর্ণ কোথা হতে পেলেন?এটি তাঁর অন্তরঙ্গ স্বরূপশক্তির বর্ণ।স্বরূপ-শক্তি আবার দুইভাবে বিভক্ত= অমূর্ত্ত ও মূর্ত্ত।অমূর্ত্তভাবে শক্তি থাকে শক্তিমানের মধ্যে, যা সমস্ত ভগবৎ-স্বরূপেই থাকে, কিন্তু এই শক্তির কোন বর্ণ নেই।আর শক্তির মূর্ত্ত হল,সর্বশক্তিগরীয়সী হ্লাদিনীর পরমসারভূতা মাদনাখ‍্য মহাভাবস্বরূপিনী শ্রীমতী রাধাঠাকুরাণী ; তাঁর বর্ণ পীত বা নবগোরচনাগৌর।কেবল তাঁর পীত বর্ণ নয়,তাঁর পীত অঙ্গদ্বারাই যেন শ্রীকৃষ্ণ আচ্ছাদিত হন।*
*🌷রাধায়া ভবতশ্চ চিত্তজতুনী স্বেদৈর্বিলাপ‍্য।*
        *(উজ্জ্বলনীলমণি,স্থাঃ ১১০)*
*🍀ইত‍্যাদি শ্রীকৃষ্ণের প্রতি শ্রীবৃন্দাদেবীর উক্তি দ্বারা বুঝা যায়, প্রেমপরিপাক শ্রীরাধাকৃষ্ণের চিত্তকে গলিয়ে এক করে দিয়েছিল ; সেই মহাপরাক্রান্ত প্রেমই কৃষ্ণ প্রেমময়ী শ্রীরাধার অঙ্গকেও গলিয়ে যেন তাঁর প্রতি অঙ্গদ্বারা শ্রীকৃষ্ণের প্রতি শ‍্যামঅঙ্গকে আলিঙ্গন করে পীতবর্ণ করে দিয়েছেন,শ‍্যামসুন্দরকে অন্তঃকৃষ্ণ বহির্গৌর করে দিয়েছেন।তাই এই কলিযুগের এই অবতার শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের যুগলিত বিগ্রহ।*
*🌷"কৃষ্ণ"এই দুই বর্ণ সদা যাঁর মুখে।*
*🌷অথবা কৃষ্ণকে তিহোঁ বর্ণে নিজ সুখে।।*
*🌷কৃষ্ণবর্ণ শব্দের অর্থ দুইত প্রমাণ।*
*🌷কৃষ্ণ বিনা তাঁর মুখে নাহি আইসে আন।।*
*🌷কেহ তারে বলে যদি "কৃষ্ণ-বরণ"।*
*🌷আর বিশেষণে তার করে নিবারণ।।*
*🌷দেহ-কান্ত‍্যে হয় তিহোঁ অকৃষ্ণ-বরণ।*
*🌷অকৃষ্ণ-বরণে শব্দে কহে পীত-বরণ।।*
*🌻ব্রহ্মা-শিবের পক্ষেও সুদুর্লভ যে ব্রজ প্রেম তা জনসাধারণের মধ্যে অকাতরে বিতরণের উদ্দেশ্যে স্বয়ং ভগবান প্রেমময়ী শ্রীরাধার ভাবকান্তি অঙ্গীকার করে গৌররূপে এই কলিতে অবতীর্ণ হয়েছেন।এটিই শ্রীচৈতন‍্যের মহিমা সীমা বা করুণার পরাকাষ্ঠা।*
*🌷শুন ভাই এই সব চৈতন‍্য-মহিমা।*
*🌷এই শ্লোকে কহে তাঁর মহিমার সীমা।*
🙏 🙏 🙏


*🌻গৌরচন্দ্রিকায় বলা যাবে।*

*🌹প্রত‍্যক্ষ তাহার তপ্ত কাঞ্চনের দ‍্যুতি।*
*🌹যাহার ছটায় নাশে অজ্ঞান-তমস্তুতি।।*
*🛑কলি অবতার শ্রীমন্মহাপ্রভুকে যাঁরা স্বচক্ষে দর্শন করেছেন,তাঁরা জানেন গলিত স্বর্ণের ন‍্যায় পীতবর্ণ তাঁর দেহকান্তি,যার প্রভাবে অজ্ঞানরূপ অন্ধকার বিনষ্ট হয়।*

*🌷জীবের কল্মষ তমো নাশ করিবারে।*
*🌷অঙ্গ উপাঙ্গ নাম নানা অস্ত্র ধরে।।* *🌷ভক্তির বিরোধী কর্ম ধর্ম বা অধর্ম।*
*🌷তাহার কল্মষ নাম সেই মহাতম।।*

*🛑কল্মষ=ভক্তিবিরোধী কর্ম। তা ধর্মই হোক আর অধর্মই হোক,যা কিছু ভক্তির প্রতিকূল বা অন্তরায় তা-ই কল্মষ।এমনকি বৈদিক অনুষ্ঠান ধর্ম নামে অভিহিত হলেও তা আত্মেন্দ্রিয় প্রীতিমূলক হওয়ায় ভক্তিবিরোধী।*
*🌺আত্মেন্দ্রিয় প্রীতি বাঞ্জা তারে বলে কাম।*
*🛑মুক্তির উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত কর্মও ভক্তিবিরোধী। অর্থ‍্যাৎ যাতে শ্রীকৃষ্ণপ্রীতি নেই তাই ভক্তিবিরোধী।ভক্তির একমাত্র তাৎপর্য‍্য হল-- শ্রীকৃষ্ণপ্রীতি।*
*🌺কৃষ্ণেন্দ্রিয় প্রীতি বাঞ্জা ধরে প্রেমনাম।*
*🛑ভুক্তি-মুক্তি সিদ্ধি বাসনা হৃদয়ে জাগ্রত থাকলে,সেখানে ভক্তিরাণী কখনো আসন গ্রহণ করেন না।তাই ভঃ রঃ সিন্ধু পূঃ ২|১৫ বলেছেন---*
*🌺ভুক্তি-মুক্তি-স্পৃহা যাবৎ পিশাচী হৃদি বর্ততে।*
*🌺তাবৎ ভক্তিসুখস‍্যাত্র কথমভ‍্যূদয়ো ভবেৎ।*

*🛑কলিহত জীবের এই ভক্তিবিরোধী কর্মাসক্তি দূর করবার জন্য শ্রীগৌরাঙ্গ অঙ্গ,উপাঙ্গ ও হরেকৃষ্ণ নাম-রূপ অস্ত্র নিয়েই অবতীর্ণ হয়েছেন।*


*🌻গৌরচন্দ্রিকায় বলা যাবে।*

*🌷'অঙ্গ' শব্দে অংশ কহে শাস্ত্র পরমাণ।*
*🌷অঙ্গের অবয়ব তার "উপাঙ্গ" ব‍্যাখ‍্যান।।*

*🔵অঙ্গের অবয়ব= অঙ্গের অঙ্গ অর্থ‍্যাৎ উপাঙ্গ। সামান্য একটু ব‍্যাখ‍্যা করি।*
*🌹জলশায়ী কারণার্ণবশায়ী,গর্ভোদশায়ী এবং ক্ষীরোদশায়ী পুরুষ প্রকৃতির অন্তর্য‍্যামী, ব্রহ্মান্ডের অন্তর্য‍্যামী এবং ব‍্যষ্টি (পৃথক পৃথক) জীবের অন্তর্য‍্যামী বা পরমাত্মা রূপে বিরাজিত।এঁরা শ্রীকৃষ্ণের অংশ বা স্বাংশ।*
*🌻শ্রীমদ্ভাগবতে ১০|১৪|১৪ পাই*
*🌷নারায়ণস্ত্বং ন হি সর্বদেহিনা-,*
   *মাত্মাস‍্যধীশাখিল লোকসাক্ষী।*
*🌷নারায়ণোহঙ্গং নবভূজলায়নাত্তচ্চাপি,*
     *সত‍্যং ন তবৈব মায়া।।*

*🌺ত্বং নারায়ণঃ ন হি =তুমি কি নারায়ণ নহ?; যতঃ ত্বং সর্বদেহিনাং আত্মা আসি = যেহেতু তুমি সকল দেহীদের আত্মা ; অধীশ= হে সর্বেশ্বর ; অখিল লোকসাক্ষী অসি =সকল লোকের দ্রষ্টা বা অন্তর্য‍্যামী হও ; নবভূজলায়নাৎ নারায়ণঃ= জীব হৃদয়ে ও কারণ সলিলে আশ্রয় হেতু যিনি নারায়ণ ; তব অঙ্গং= তিনি তোমারই দেহ ; তৎ চ অপি সত‍্যং এব ন তু মায়া = সেই অঙ্গও অপ্রাকৃত বা সত‍্য তোমার মায়া নয়।*
*🔵ব্রহ্মা শ্রীকৃষ্ণকে বললেন-- তুমি নারায়ণ না? যেহেতু তুমি সকল দেহীগণের আত্মা হও, হে সর্বেশ্বর! তুমি সব লোকের দ্রষ্টা বা অন্তর্য‍্যামী হও।জীব হৃদয়ে এবং কারণ সলিলে বা জলে আশ্রয় হেতু যিনি নারায়ণ তিনি তোমারই অঙ্গ।সেই অঙ্গও অপ্রাকৃত বা সত‍্য, তা তোমার মায়া নয়।*

*🛑অর্থ‍্যাৎ এই শ্লোকে "নারায়ণোহঙ্গং" বাক‍্যে নারায়ণকে শ্রীকৃষ্ণের অঙ্গ বলা হয়েছে। তবে নারায়ণ মায়িক বস্তু নন, তিনি চিদানন্দময়,নিত‍্য সত‍্য।*
*🌺শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্যের দুই অঙ্গ বা অংশ হলেন শ্রীঅদ্বৈত ও শ্রীমন্নিত‍্যানন্দ। আর শ্রীঅদ্বৈত ও নিত‍্যানন্দের যে অঙ্গ বা অংশ তাঁরা হলেন শ্রীচৈতন‍্যের উপাঙ্গ ; শ্রীবাসাদি ভক্তগণই হলেন শ্রীচৈতন‍্যের উপাঙ্গ।*

*🔷গৌরচন্দ্রিকায় বলা যাবে পদের কথা অনুযায়ী।*

*🍀যমুনাচার্য‍্যস্তোত্র (১৫)*

*🌷ত্বাং শীলরূপচরিতৈঃ পরমপ্রকৃষ্টৈঃ,*
*সত্ত্বেন সাত্ত্বিকতয়া প্রবলৈশ্চ শাস্ত্রৈঃ।*
*🌷প্রখ‍্যাতদৈবপরমার্থবিদাং মতৈশ্চ,*
*নৈবাসুরপ্রকৃতয়ঃ প্রভবন্তি বোদ্ধুম্।।*

*🌹হে ভগবন্ =হে ভগবন্ ; পরম প্রকৃষ্টৈঃ = সর্বোৎকৃষ্ট ; শীলরূপচরিতৈঃ = স্বভাব, রূপ ও আচরণের দ্বারা ; সত্ত্বেন= শুদ্ধ সত্ত্বের অলৌকিক প্রভাব দ্বারা ; সাত্ত্বিকতয়া = সাত্ত্বিক ভাবের দ্বারা ; প্রবলৈঃ শাস্ত্রৈঃ= প্রবল শাস্ত্রগুলি দ্বারা ; চ=এবং ; প্রখ‍্যাতদৈবপরমার্থ বিদাং মতৈঃ = দৈব ও পরমার্থ বিষয়ে প্রখ‍্যাত পন্ডিতগণের মতের দ্বারাও ; অসুর-প্রকৃতয়ঃ = অসুরপ্রকৃতি ব‍্যক্তিগণ ; ত্বাং বোদ্ধুং ন প্রভবন্তি এব = তোমাকে জানতে সমর্থ হয়ই না।*

*🔵হে ভগবান! তোমার সর্বোৎকৃষ্ট স্বভাব,রূপ ও আচরণের দ্বারা, শুদ্ধ সত্ত্বের অলৌকিক প্রভাব বা সাত্ত্বিকভাবের দ্বারা প্রবল প্রামাণ‍্য শাস্ত্রগুলির উপদেশ শ্রবণ করে এবং দৈব ও পরমার্থ বিষয়ে প্রখ‍্যাত পন্ডিতগণের মতের আলোচনা দ্বারাও অসুর প্রকৃতির ব‍্যক্তিগণ তোমাকে জানতে পারে না বা সমর্থ হয় না।*

*🌳গৌরচন্দ্রিকায় বলা যাবে পদ অনুযায়ী।*

*🌷আপনা লুকাইতে প্রভু নানা যত্ন করে।*
*🌷তথাপি তাঁহার ভক্ত জানয়ে তাঁহারে।।*
*🌷অসুর স্বভাবে কৃষ্ণে কভু নাহি জানে।*
*🌷লুকাইতে নারে কৃষ্ণ ভক্তজন স্থানে।।*

*🌹ভগবান ভক্তগণের নিকটে আত্মগোপন করতে চেষ্টা করেন। ভক্তভাব অঙ্গীকার করে তাঁর সেই আত্মগোপন করার চেষ্টা তাঁর প্রিয় ভক্তগণের কাছে প্রকাশিত হয়ে যায়।কারণ শুদ্ধভক্তির প্রভাবে ভক্তের চিত্ত গুণাতীত নির্মলত্ব লাভ করে ভগবৎ কৃপাশক্তি ধারণের যোগ‍্যতা লাভ করে বলে ভগবান ভক্তের কাছে আত্মগোপন করতে পারেন না। (যা রায় রামানন্দ শ্রীমন্মহাপ্রভুর মধ্যে রসরাজ ও মহাভাব রূপ দর্শন করেছিলেন, বাইরে সন্নাসীর বেশ)। কিন্তু আসুরিক প্রকৃতিসম্পন্ন ব‍্যক্তিগণ অর্থ‍্যাৎ অভক্তগণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে কখনো জানতে পারে না।*
*🌻শাস্ত্রে পাওয়া যায়----*
*🌷উল্লিঙ্ঘিত-ত্রিবিধসীমসমাতিশায়ী,*
*🌷সম্ভাবনং তব পরিব্রঢ়িমস্বভাবম্।*
*🌷মায়াবলেন ভবতাপি নিগুহ‍্যমানং,*
*🌷পশ‍্যন্তি কেচিদনিশং ত্বদনন‍্যভাবাঃ।।*

*🌻হে ভগবন্= হে ভগবান্ ; কেচিৎ =কোনো কোনো ; ত্বদনন‍্যভাবাঃ= তোমার একান্ত ভক্ত ; ভবতা মায়াবলেন নিগুহ‍্যমানমপি= যোগমায়াবলে তুমি গোপন করলেও ; উল্লিঙ্ঘিত-ত্রিসীম-সমাতিশায়ী-সম্ভাবনং = যা দেশ ও কালকৃত পরিচ্ছেদ ও পরিমাণ-- এই তিন সীমার অতীত, যাঁর সমান বা উর্ধ্বে কেউ নেই এবং নিজের যোগমায়ার বলে তুমি যাঁকে সর্বদা গোপন করতে চেষ্টা করছ, তোমার সেই প্রভুত্ব স্বরূপকে ; অনিশং পশ‍্যন্তি= সর্বদা দর্শন করে থাকেন।*

*🛑হে ভগবান! যিনি দেশ,কাল ও পরিমাণ --এই তিন সীমার অতীত,যাঁর সমান বা উর্ধ্বে আর কেউ নেই এবং নিজের যোগমায়ার বলে তুমি যাঁকে সর্বদা গোপন করতে চেষ্টা করছ, তোমার সেই প্রভুত্বপূর্ণ স্বরূপকে তোমার একান্ত কোনো কোনো ভক্ত সর্বদা দর্শন করে থাকেন।*

*🙏এই জগতে দুই রকমের প্রাণী সৃষ্টি আছে---দৈব ও আসুর।যাঁরা বিষ্ণুভক্ত তাঁরা দৈব নামে ও যারা তার বিপরীত অর্থ‍্যাৎ বিষ্ণুভক্তহীন তারা আসুর নামে কথিত।*

*🌻শ্রীধাম বৃন্দাবনের প্রধান গোপীনাথ বিগ্রহ প্রকট কাহিনী।*

*শ্রীধাম বৃন্দাবনে গোবিন্দ-- গোপীনাথ--মদনমোহন এই তিন বিগ্রহই সর্ব প্রধান।এইসব বিগ্রহ গুলি প্রস্তুত করেছিলেন বজ্রনাভদেব যিনি ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের প্রপৌত্র। অর্থ‍্যাৎ এইসব শ্রীবিগ্রহ দ্বাপর যুগের স্থাপন এবং ধাম বৃন্দাবনই যে সত‍্যসত‍্যই সেই আদি চিন্ময়ধাম তার বাস্তব প্রমাণ যমুনা প্রবাহ এবং গিরিগোবর্দ্ধন। তদুপরি শ্রীমন্মহাপ্রভু তাঁরই ভগবত্তার দ্বারা বুঝতে পারেন এই স্থানের মহিমা এবং সেজন‍্য তাঁরই সঞ্চারিত শক্তির দ্বারা গোস্বামীগণ এই চিন্ময় ধামের লুপ্ত মহিমা উদ্ধার করেন যা আমর্রএক প্রকার সকলেই জানি।*
*🌷শ্রীপাদরূপ গোস্বামী প্রকট করেছিলেন শ্রীগোবিন্দকে, শ্রীপাদ সনাতন গোস্বামী প্রকট করেছিলেন শ্রীমদনমোহনকে, কিন্তু একথা সকলেই অবশ‍্য স্বীকরবেন যে এই তিন বিগ্রহের মধ্যে গোপীনাথ বিগ্রহ কে,কিভাবে প্রকট করেছিলেন তার বৃত্তান্ত অনেকেই জানেন না।অথচ গোবিন্দ, গোপীনাথ, মদনমোহন এই তিন বিগ্রহই ধাম বৃন্দাবনের সর্ব প্রধান এবং--- গোবিন্দনাথজী হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণের মুখারবিন্দ, গোপীনাথজী হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণের বক্ষদেশ, মদনমোহন হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণের চরণযুগল। অর্থ‍্যাৎ এই তিন বিগ্রহ দর্শন করলেই কৃষ্ণদর্শন হয় ইহাই ধর্মীয় বিশ্বাস। গোপীনাথ বিগ্রহ কে প্রকট করেছিলেন তা সকলে গৌরভক্তগণের জানা দরকার।এই মহাপুরুষ মহাভক্তের নাম শ্রীমধুপন্ডিত, যিনি ছিলেন নবদ্বীপবাসী এবং তাঁর শ্রীগুরুদেব হচ্ছেন পঞ্চতত্ত্বের গদাধর পন্ডিত।*

*গুরুকৃপায় শ্রীমধুপন্ডিত শ্রীকৃষ্ণ গুণগানে দিবানিশি বিভোর থাকতেন, একদিন ভক্তমুখে শ্রীকৃষ্ণের গুণ,রূপ,লীলা, মাধুরী শুনে শ্রীকৃষ্ণ দর্শনের জন্য অত‍্যন্ত ব‍্যাকুল হয়ে উঠলেন।একদিন প্রভুর প্রবল আকর্ষণে হঠাৎ পাগলের মত গৃহত‍্যাগ করে শ্রীবৃন্দাবনে আগমন করে কেশীঘাটে পরমানন্দ ভট্টাচার্য্যের কাছে বাস করতে লাগলেন। কিন্তু হৃদয়ে শ্রীকৃষ্ণ দর্শন লালসা প্রবলভাবে বৃদ্ধি হওয়ায় তিনি আর স্থির হতে না পেরে পাগলেরমত হয়ে শ্রীবৃন্দাবনের সব জায়গা ভ্রমণ করতে লাগলেন।এইভাবে ভ্রমণ করতে করতে একদিন বংশীবটের তটে বসে অত‍্যন্ত বিহ্বল অন্তরে বিলাপ করতে করতে মূর্ছা হয়ে যান।ভক্তবৎসল ভগবান ভক্তের ব‍্যাকুল ক্রন্দনে আর স্থির থাকতে পারলেন না,তখন অপরূপ রাস-রসারম্ভী ললিত ত্রিভঙ্গ স্বরূপে মধুর মুরলী বাজাতে বাজাতে শ্রীগোপীনাথরূপে তাঁকে দর্শন দিলেন।তৃষিত চাতকের ন‍্যায় তাঁর রূপামৃতপানে অতৃপ্ত হয়ে প্রার্থনা করলেন--প্রভু তুমি এইরূপেই আমার কাছে সর্বদা অবস্থান কর।আমাকে আর বঞ্চনা করিও না।ভক্তবৎসল ভগবান মধুপন্ডিতকে বললেন মধু! আমি তোমার কাছে সর্বদা এইরূপেই অবস্থান করব, কিন্তু এক্ষণে কলিকাল সুতরাং সকলের সমক্ষে আমার এইরূপে অবস্থান সম্ভব না,সকলের জন্য আমি শ্রীমূরতিরূপে দর্শন দিব,এই বলে শ্রীগোপীনাথ শ্রীমূর্তিরূপে আবির্ভূত হলেন,শ্রীমধু পন্ডিত প্রেমে তাঁকে আলিঙ্গন করে নিজস্থানে আনলেন এবং শ্রীরাধিকার সঙ্গে শ্রীরাধা-গোপীনাথ নামে সেই মূরতি প্রতিষ্ঠিত করলেন।এইভাবে শ্রীধাম বৃন্দাবনের গোপীনাথ বিগ্রহ প্রকট হন,যার মূল হোতা হচ্ছেন শ্রীমধুপন্ডিত।*
👣👣👣👣👣👣🙏👣👣👣👣👣👣

*🌻স্বপ্নবিলাস গৌরচন্দ্রিকার ব‍্যাখ‍্যা।*
*🌹🌹🌹🌹পদ🌹🌹🌹🌹*
*রসে তনু ঢর ঢর,গৌর কিশোর বর,*
       *নাম যাঁর শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্য।*
*এ সব নিগূঢ় কথা,কহিতে অন্তরে ব‍্যথা,*
       *ভক্ত বিনা নাহি জানে অন‍্য।।*
*🌻রসে তনু ঢর ঢর,গৌর কিশোর বর=রস--এই রস নয় প্রকার মতান্তরে দশ প্রকার।এই নয় প্রকার রস কি কি? শৃঙ্গার বা আদিরস,বীররস, করুণরস,অদ্ভুতরস,হাস‍্যরস,ভয়ানকরস,বীভৎসরস,রৌদ্ররস ও শান্তরস। কিন্তু দশমরস হচ্ছে বাৎসল‍্যরস।*
*(১)শৃঙ্গাররস=স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে পরস্পর সম্ভোগেচ্ছাজনিত ভাব।অনুরাগ ইহার স্থায়ীভাব।*
*(২)বীররস=যে রসে উৎসাহ বৃদ্ধি করে।*
*(৩)করুণরস=ইষ্টনাশ, ক্লেশ বা কষ্ট উপতাপাদিজনিত যে ভাব চিত্ত দ্রবীভূত করে,শোক ইহার স্থায়ীভাব।*
*(৪)অদ্ভুতরস=যে স্থায়ীভাব বিস্ময় উৎপাদন করে এবং তদ্দ্বারা চিত্তকে অভিভূত বা আপ্লুত করে।*
*(৫)হাস‍্যরস=হাস‍্যের উৎপত্তিজনক স্থায়ীভাব।*
*(৬)ভয়ানকরস=ভয়ের উৎপত্তিজনক স্থায়ীভাব।*
*(৭)বীভৎসরস=জুগুপ্সা বা ঘৃণার উৎপাদক স্থায়ীভাব।*
*(৮)রৌদ্ররস=ক্রোধ উৎপাদক স্থায়ী ভাব।*
*(৯)শান্তরস=সংসারের অনিত‍্যতা বা আত্মদর্শনজনিত শান্তির উৎপাদক স্থায়ীভাব।*
*(১০)বৎসল বা বাৎসল‍্যরস= সন্তানের প্রতি যে স্বাভাবিক স্নেহ তার উৎপাদক স্থায়ীভাব।*
*🌻জয় নিতাই, এখানে পদকর্তা কি এই দশম রসের মধ্যে শৃঙ্গার রসের কথা বলেছেন? এখানে পদকর্তা সেই উজ্জ্বলরসের কথা বলেছেন।তাহলে উজ্জ্বররস কি?এই উজ্জ্বলরসের উৎস কোথা হতে?এই উজ্জ্বলরসের উৎসের সন্ধান করতে গেলে আমাদের দ্বাপরযুগে প্রবেশ করতে হবে।*
*🌹শ্রীকৃষ্ণ শৃঙ্গার বা উজ্জ্বলরস,সর্বস্বশৃঙ্গার বা উজ্জ্বলরসের ঘনীভূত মূর্তি, সেইজন‍্য তাঁর হৃদয়ে সততই শৃঙ্গার শুচি বা প্রেমদ্বারা পরমোজ্জ্বল রস পিপাসা জেগে থাকে। নিরন্তর প্রেমক্রীড়া যাঁর চরিত,সেই প্রেমতৃষ্ণা শান্তির জন্য শ্রীরাধিকা উজ্জ্বল শ‍্যামরসই পরিবেশন করেন।শ্রীরাধারস সুধানিধি গ্রন্থে শ্রীপ্রবোধানন্দ সরস্বতীপাদ শ্রীরাধাকে "শ‍্যাম মন্ডল মৌলীমন্ডল মণিঃ" বলে আখ‍্যা দিয়েছেন।শ্রীকৃষ্ণ বিষয়ক শৃঙ্গার রস হতে যে উদ্দাম প্রেমময়ী তৃষ্ণা উপজাত হয়,সেই প্রেম-উন্মত্ততা রূপ মধু (শ‍্যামরস মধু) শ্রীরাধা শ‍্যামসুন্দরকে পরিবেশন করেন। তাই শ্রীচৈতন‍্যচরিতামৃতে বর্ণিত হয়েছে,যথা--*
*🌷কৃষ্ণবাঞ্জা পূর্তিরূপ করে আরাধনে।*
*🌷অতএব রাধানাম পুরাণে ব‍্যাখ‍্যানে।।*
*🌷অন‍্যত্র,কৃষ্ণকে করায় শ‍্যামরস মধুপানে।*
*🌷নিরন্তর পূর্ণ করেন কৃষ্ণের সর্বকামে।।*
*🌻মধুর শ্রীবৃন্দাবনে সূর্য‍্যপূজা,দান,মান,রাস প্রভৃতি নানান প্রেয়সী প্রেমবশ‍্যতাময়ী লীলার মধ‍্য দিয়ে শ্রীরাধা ধীরললিত,নায়ক শিরোমণি প্রাণবল্লভ শ‍্যামসুন্দরকে নানাভাবে নব নব নিগূঢ় প্রেমরসই আস্বাদন করিয়েছিলেন।*
*🌻সেই রাধাকৃষ্ণের মিলিত তনু শ্রীগৌরাঙ্গ,শ্রীরাধার নিগূঢ় প্রেমরসে পরিপূর্ণ হয়ে ঢর ঢর।*
 *🔵বিদগ্ধমাধবে(১|২) শ্রীপাদ রূপগোস্বামী বলেছেন---*
*🌷অনর্পিতচরীং চিরাৎ করুণয়াবতীর্ণঃ কলৌ,*
*🌷সমর্পয়িতুমুন্নতোজ্জ্বলরসাং স্বভক্তিশ্রিয়ম্।*
*🌷হরিঃ পুরটসুন্দরদ‍্যুতিকদম্বসন্দীপিতঃ,*
*🌷সদা হৃদয়কন্দরে স্ফুরতু বঃ শচীনন্দনঃ।।*


*চিরাৎ=বহুকাল পর্যন্ত, অনর্পিতচরীং =পূর্বে যাণ করা হয়নি, উন্নতোজ্জ্বলং রসাং=উন্নত এবং উজ্জ্বল অর্থ‍্যাৎ মধুর রসময়ী, স্বভক্তিশ্রিয়ং= নিজের ভক্তি-সম্পত্তি, সমর্পয়িতুং=দান করবার জন্য,কলৌ=কলিযুগে, করুণয়া= কৃপাবশত, অবতীর্ণঃ= অবতীর্ণ হয়েছেন,সেই ; পুরটসুন্দর-দ‍্যুতিকদম্বসন্দীপিতঃ = স্বর্ণ হতেও অতি সুন্দর দ‍্যুতি সমন্বিত ; শচীনন্দনঃ হরিঃ=শচীনন্দনরূপী শ্রীহরি ; সদা বঃ হৃদয়-কন্দরে স্ফুরতু= আপনাদের হৃদয়রূপ গুহায় সর্বদা প্রকাশিত হন।*
*🌹বহুকাল পর্যন্ত পূর্বে যা অর্পণ করা হয়নি, সেই উন্নত-উজ্জ্বল রসময়ী নিজস্ব ভক্তি-সম্পদ দান করবার জন্য যিনি কৃপা করে এই কলিযুগে অবতীর্ণ হয়েছেন, স্বর্ণ থেকেও অতি উজ্জ্বল দ‍্যুতিসম্পন্ন সেই শচীনন্দন শ্রীগৌরহরি আপনাদের হৃদয় কন্দরে সর্বদা প্রকাশিত হন।*
*🍀আর একটু পরিস্কার করে বলিলে--, সত‍্য,ত্রেতা,দ্বাপরের মত বহুকাল পর্যন্ত ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর ভক্তিসম্পদ দান করেননি। স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এক-কল্পে (অর্থ‍্যাৎ ব্রহ্মার একদিনে) একবার জগতে অবতীর্ণ হন।যে দ্বাপরে তিনি ব্রজে অবতীর্ণ হয়ে রাসলীলাদি প্রকাশ করেন, ঠিক তার পরবর্তী কলিতেই তিনি শ্রীরাধার ভাবকান্তি অঙ্গীকার করে শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গসুন্দররূপে নবদ্বীপে অবতীর্ণ হয়ে অতি সুদুর্লভ কৃষ্ণপ্রেম বা ভক্তিসম্পত্তি (ব্রজপ্রেম) দান করেন। কিন্তু তার পরে এবং বতর্মান কলির পূর্বে এই সুদীর্ঘকাল সেরকম প্রেমভক্তি আর দান করেননি। পুনরায় এই কলিতে সেই লুপ্তপ্রায় উন্নত-উজ্জ্বল রসময়ী শৃঙ্গার বা মধুর ভাবসম্পন্ন প্রেমভক্তি কলিহত জীবের মধ্যে বিতরণের জন্য স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কৃপাকরে শ্রীশ্রীগৌরসুন্দররূপে অবতীর্ণ হলেন।*
*🛑শ্রীশ্রীগৌরসুন্দরের বিতরিত বস্তুকে উন্নত এবং উজ্জ্বল রস বলা হয় কেন?উন্নত অর্থ‍্যাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ রস হল মধুররস।ব্রজেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃষ্ণ ব্রজে চারভাবের ভক্তের প্রেমরস আস্বাদন করেছেন, যথা--দাস‍্য, সখ‍্য, বাৎল‍্য ও মধুর।ব্রজবাসীজনের শ্রীকৃষ্ণে মমতা-বুদ্ধির গাঢ়তা অনুযায়ী ভালবাসার উৎকণ্ঠাও তীব্র থেকে তীব্রতম হয়ে থাকে।ব্রজে শ্রীকৃষ্ণ তাঁদের একান্ত আপনজন, কিন্তু তাঁদেরও মমতা-বুদ্ধির তারতম্য আছে।তাই দাস‍্য অপেক্ষা সখ‍্যে, সখ‍্য অপেক্ষা বাৎসল‍্যে, বাৎসল‍্য অপেক্ষা মধুরে মমতা-বুদ্ধির তীব্রতা বেশী।শ্রীকৃষ্ণের রসাস্বাদন চমৎকারিতা এবং প্রেমবশ‍্যতাও বেশী।এই কারণে দাস‍্য অপেক্ষা সখ‍্যে,সখ‍্য অপেক্ষা বাৎসল‍্য, বাৎসল‍্য অপেক্ষা মধুর ভাব উন্নত।শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলেছেন--*
*🌷সব রস হৈতে শৃঙ্গারে অধিক মাধুরী।১|৪|৪০*
☆ ☆ ☆ ☆
*🌷পরিপূর্ণ কৃষ্ণপ্রাপ্তি এই প্রেমা হইতে।২|৮|৬৯*
*🌻আর ভক্ত কেবল প্রেমের মাধ‍্যমেই শ্রীকৃষ্ণ-মাধুর্য‍্য আস্বাদন করতে পারেন। সুতরাং দাস‍্য-সখ‍্য-বাৎসল‍্য অপেক্ষা মধুরভাবেই শ্রীকৃষ্ণমাধুর্য‍্য আস্বাদনের শ্রেষ্ঠ উৎকর্ষতা।এই উন্নত উজ্জ্বলরস অর্থ‍্যাৎ শ্রেষ্ঠবস্তু সকলকে দান করবার জন্যই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই কলিযুগে অবতীর্ণ হয়েছেন।*
*🌷এ সব নিগূঢ় কথা,কহিতে অন্তরে ব‍্যথা,*
         *ভক্ত বিনা নাহি জানে অন‍্য।*
              *🌻🌻প্রথম🌻🌻*

*🌻স্বপ্নবিলাস গৌরচন্দ্রিকা ২য় অন্তরা*

*দ্বাপর যুগেতে শ‍্যাম,কলিতে চৈতন‍্য নাম,*
       *গর্গবাক‍্য ভাগবতে লিখি।*
*মনে করি অনুমান,গৌরাঙ্গ ভেল শ‍্যাম,*
       *রাধাকৃষ্ণ তনু তার সাখি।।*

*🌹শ্রীস্বরূপগোস্বামী কড়চা থেকে পাওয়া যায় যে------*
*🌷রাধা কৃষ্ণপ্রণয়বিকৃতির্হ্লাদিনীশক্তিরস্মা-,*
*🌷দেকাত্মানাবপি-ভুবি পুরা-দেহভেদং গতৌ তৌ।*
*🌷চৈতন‍্যাখ‍্যং প্রকটমধুনা তদ্দ্বয়ঞ্চৈক‍্যমাপ্তং,*
*🌷রাধাভাবদ‍্যুতিসুবলিতং নৌমি কৃষ্ণস্বরূপম্।।*

*🌺রাধা=(শ্রীরাধিকা); কৃষ্ণপ্রণয়বিকৃতিঃ=(কৃষ্ণপ্রণয়ের বিকার রূপ) ; হ্লাদিনী শক্তিঃ=(শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী বা আনন্দদায়িনী শক্তি) ; অস্মাৎ=(এই হেতু) ; তৌ=(শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণ উভয়ে); একাত্মানৌ=(স্বরূপত এক আত্মা বা অভিন্ন) ; অপি= (হয়েও) ; ভুবি= (গোলোকে) ; পুরা দেহভেদং গতৌ= (অনাদিকাল হতেই ভিন্ন দেহ ধারণ করেছেন) ;তদ্দ্বয়ং ঐকং আপ্তং =(সেই দুইজন একত্ব প্রাপ্ত হয়ে ) ; রাধাভাবদ‍্যুতিসুবলিতং= (শ্রীরাধার ভাব ও অঙ্গকান্তির দ্বারা সুশোভিত) ; অধুনা প্রকটং= (সম্প্রতি প্রকটিত) ; চৈতন‍্যাখ‍্যং= (শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্য নামক) ; কৃষ্ণস্বরূপং=(শ্রীকৃষ্ণস্বরূপকে) ; নৌমি=(নমস্কার করি)।*

*🛑শ্রীকৃষ্ণের ভালবাসা স্বরূপা শ্রীরাধিকা হলেন শ্রীকৃষ্ণেরই হ্লাদিনী বা আনন্দদায়িনী শক্তি,স্বরূপত উভয়ে এক আত্মা বা অভিন্ন হয়েও অনাদিকাল থেকে গোলোকে ভিন্ন দেহ ধারণ করে রয়েছেন।তাঁদের একত্বরূপে শ্রীরাধার ভাব ও অঙ্গকান্তিতে সুশোভিত হয়ে প্রকাশিত শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্য নামক শ্রীকৃষ্ণস্বরূপকে আমি প্রণাম করি।*
*🌳একটু পরিস্কার করে বলি--- স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আনন্দদায়িকা শক্তির নাম হ্লাদিনী-শক্তি।হ্লাদিনী-শক্তির ঘনীভূত বিলাসই প্রেম, আর প্রেমের ঘনীভূত রূপ হল মহাভাব।প্রেমসার মহাভাবস্বরূপিনী শ্রীরাধাই মহাভাবস্বরূপিনী বলে তাঁকে কৃষ্ণ-প্রণয়-বিকৃতি বলা হয়েছে।*
*আবার রাধা পূর্ণ শক্তি,কৃষ্ণ পূর্ণ শক্তিমান। শক্তি ও শক্তিমানের অভেদ-বশত শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণে কোন ভেদ নেই। কিন্তু লীলারস আস্বাদনের জন্য তাঁরা পৃথক দেহ ধারণ করে শ্রীকৃষ্ণের নিত‍্য লীলার ধাম শ্রীগোলোকে অনাদিকাল অবস্থান করছেন।এখন এই কলিযুগে সেই দুইদেহ এক আত্মা একদেহে অবস্থান করে শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্যরূপে বিরাজিত।তাই শ্রীরাধার ভাব ও কান্তি অঙ্গীকার করে অন্তঃকৃষ্ণ বহির্গৌর হয়ে এই কলিযুগে শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্যরূপে শ্রীকৃষ্ণই নবদ্বীপে আবির্ভূত হলেন।*
*🌻শ্রীচৈতন‍্যচরিতামৃতে আদি লীলায় পাই---*
*🌷ভাগবত ভারত-শাস্ত্র আগম পুরাণ।*
*🌷চৈতন‍্যকৃষ্ণ অবতারে প্রকট প্রমাণ।।*
*🛑অর্থ‍্যাৎ স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণই যে শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্যরূপে অবতীর্ণ হয়েছেন, শ্রীমদ্ভাগবত,মহাভারত, উপপুরাণ এবং আগমাদি শাস্ত্রের শ্লোকই তার উজ্জ্বল প্রমাণ।*
                  *দ্বিতীয় অন্তরা*

*🌻স্বপ্নবিলাস গৌরচন্দ্রিকা ৩য় অন্তরা--*
*🌷অন্তরে শ‍্যাম তনু, বাহিরে গৌরাঙ্গ যনু,*
        *অপরূপ গৌরাঙ্গের লীলা।*
*🌷রাই সঙ্গে খেলাইতে,কুঞ্জরস বিলসিতে,*
       *অনুরাগে গৌর তনু হৈলা।।*

*🙏শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্য প্রভু স্বয়ং ভগবান।*
*🙏তাঁহার পদারবিন্দে অনন্ত প্রণাম।।*
*🌻শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান।এই তত্ত্ব অনুসারে চৈতন‍্যচরিতামৃতে শ্রীপাদ কবিরাজ গোস্বামী জানালেন---*
*🌷নন্দসুত বলি যাঁরে ভাগবতে গাই।*
*🌷সেই কৃষ্ণ অবতরি চৈতন‍্য গোঁসাই।।*

*🌻আমার প্রেমের ঠাকুর সেই শ্রীচৈতন‍্যই আবার বললেন---*

*🌷রাঘব! তোমারে আমি নিজ গোপ‍্য কই।*
*🌷আমার দ্বিতীয় নাই নিত‍্যানন্দ বই।।*
*🙏ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্যদেব নিজ শ্রীমুখে বলেছেন,অতি গোপন কথা তোমাকে বলি, আমার বহু বহু অন্তরঙ্গ ভক্ত আছে, কিন্তু একমাত্র তুমিই আমার দ্বিতীয় কায়া,তোমা হতেই কারণার্ণবশায়ী,গর্ভোদশায়ী ও ক্ষীরোদশায়ী বিষ্ণু-মহাবিষ্ণুর উৎপত্তি।*
*🍀যাইহোক,গৌড়ীয় ভক্তিশাস্ত্র অনুযায়ী শ্রীচৈতন‍্যদেবের কৃপা পেতে হলে সর্ব প্রথমে শ্রীনিতাইচাঁদের কৃপা পেতে হবে,তবেই বৃন্দাবনে যুগলভজন অর্থ‍্যাৎ শ্রীশ্রীরাধাগোবিন্দ ভজনে অপ্রাকৃত প্রেম-আস্বাদন হবে।নরোত্তম ঠাকুর মহাশয় বললেন--*

*নিতাই পদকমল,কোটিচন্দ্র সুশীতল,*
       *যে ছায়ায় জগৎ জুড়ায়।*
*হেন নিতাই বিনে ভাই,রাধাকৃষ্ণ পাইতে নাই,*
       *দৃঢ় করি ধর নিতাই পায়।।*
*🌻কৃষ্ণতত্ত্ব,রাধাতত্ত্ব,গৌরতত্ত্ব,নিত‍্যানন্দতত্ত্বাদি না জানলে ভক্তি দৃঢ় হয় না, এবং ভজনে নিষ্ঠা আসে না।*

*🙏শ্রীনিতাইচাঁদের শ্রীচরণকমল কোটিচন্দ্রের ন‍্যায় সুশীতল, সূর্য‍্য কিরণ আমাদের ভস্মিভূত করে, আর চন্দ্র শীতল করে,সেই কোটিচন্দ্র সম আমার নিত‍্যানন্দ,যাঁর ছায়ায় বিশ্বমানবের ত্রিতাপজ্বালা জুড়িয়ে যায়।কমলে শীতলতা এবং তার মকরন্দের মাদকতা রয়েছে,চন্দ্রে শীতলতা ও অমৃতের স্বাদুতা আছে এবং কল্পতরুতে শীতলতার সঙ্গে সর্ব অভীষ্টপ্রদ গুণ রয়েছে।শ্রীশ্রীনিতাইচাঁদের শ্রীচরণাশ্রয়ে আশ্রয়ী যাঁরা তাঁরা প্রেমরসের উন্মাদনায় মত্ত হয়ে থাকেন।শ্রীশ্রীগৌরগোবিন্দ-সেবামৃতের আস্বাদন পেয়ে সর্বাভীষ্ট পেয়ে ধন‍্য হয়ে থাকেন এবং তাঁর সমস্ত তাপ অর্থ‍্যাৎ ত্রিতাপজ্বালা বিনাশ হয়ে থাকে।*
*🍀শ্রীগৌরলীলার মধ্যে প্রধানত দুটি ভাব দেখা যায়,একটি আকর্ষণ, অন‍্যটি ভগবৎপ্রেম বা বিশ্বপ্রেম। আকর্ষণ হচ্ছে প্রেমের প্রধান কাজ।"প্রেম" নিজ-পর সব বস্তুকেই আকর্ষণ করে নিজের করতে চাই। এটিই প্রেমের স্বরূপগত ধর্ম।যেখানে প্রেম, সেখানেই আকর্ষণ,প্রেম ও আকর্ষণ যেন একই বস্তু।প্রেম কারণ, আকর্ষণ তার কাজ।শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্য প্রেমস্বরূপ বিশ্বকে প্রেমদানে ধন‍্য করবার ব‍্যাপক আকাঙ্ক্ষা তাঁর অন্তরে বিরাজিত।সেই আকাঙ্ক্ষা পূর্তির জন্য যিনি সবাইকে আকর্ষণ করছেন, তিনিই মহাসঙ্কর্ষণেরও অংশী মূলসঙ্কর্ষণ শ্রীমন্নিত‍্যানন্দপ্রভু। প্রেমময় শ্রীগৌরহরির শ্রীচরণে বিশ্বমানবকে আকর্ষণ করবার জন্য তাঁর কত দায়িত্ব, "দন্তে তৃণ ধরি নিতাই নগরে বেড়ায়"।*
*🌷যারে দেখে তারে কহে দন্তে তৃণ ধরি।*
*🌷আমারে কিনিয়া লহ বল গৌরহরি।।*
*🙏এইরকম করুণাময় প্রভুর পাদকল্পতরুর সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় ছাড়া ত্রিতাপজ্বালা কলিজীবের হৃদয় জুড়াবার এবং শ্রীগৌরহরির অনর্পিতচরীং শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের চরণে প্রেমলাভের আর উপায় কি আছে। তাই ঠাকুরমহাশয় নিজ মনকে বলছেন--*
*🌷হেন নিতাই বিনে ভাই,*
*🌷রাধাকৃষ্ণ পাইতে নাই,*
*🌷দৃঢ় করি ধর নিতাইয়ের পায়।*
*🌻শ্রীনিতাইচাঁদের বিহনে শ্রীরাধাগোবিন্দকে পাবার চেষ্টা করিও না,নিতাই বিনে শ্রীরাধাকৃষ্ণ পেতে নাই বা পাওয়া উচিত নয়। আর যদি নেহাত পেয়ে যাও,তাঁদের মাধুর্য‍্য আস্বাদন করতে পারবে না।অভীষ্টের মাধুর্য‍্য আস্বাদনই যখন ভক্তিসাধনার চরমলক্ষ‍্য।প্রশ্ন হতে পারে, শ্রীরাধাকৃষ্ণের মাধুর্য‍্য আস্বাদনের জন্য শ্রীনিতাইচাঁদের কৃপার বা তাঁর ভজনের এত অপেক্ষা কেন?একমাত্র প্রেমই ভগবৎ-মাধুরী আস্বাদনের কারণ বা উপায়।আবার জাতিগত বা পরিমাণগত যাঁর যেরকম প্রেম,তিনি সেইরকমই ভগবৎ-মাধুরী আস্বাদন করে থাকেন।শ্রীশ্রীরাধাগোবিন্দের মাধুর্য‍্য আস্বাদনে একমাত্র গোপীভাবই উপজীব‍্যতা। ব‍্যাসাবতার শ্রীবৃন্দাবনদাস ঠাকুর লিখেছেন--*
*🌷যে ভক্তি গোপীকাগণে কহে ভাগবতে।*
*🌷নিত‍্যানন্দ হইতে তাহা পাইল জগতে।।চৈঃভাঃঅন্ত‍্য ৫ম অঃ।*
*🙏করুণাময় শ্রীমন্মহাপ্রভু পরমকরুণ শ্রীনিতাইচাঁদের প্রতি এই রহস‍্যময় গোপীপ্রেম প্রচারের ভার দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন। তাই বলেছেন--*
*🌷দৃঢ় করি ধর নিতাইয়ের পায়।*
*🌻অতি সংক্ষেপে বর্ণনা।*
*🛑এবার "অন্তরে শ‍্যাম তনু" কথায় আসি।*
*🌷ভাগবতসন্দর্ভ গ্রন্থের মঙ্গলাচরণে।*
*🌷এই শ্লোক জীব গোসাঞী করিয়াছেন ব‍্যাখ‍্যানে।।*


*🌷অন্তঃ কৃষ্ণং বহির্গৌর দর্শিতাঙ্গাদিবৈভবম্।*
*🌷কলৌ সংকীর্তনাদ‍্যৈঃ স্মঃ কৃষ্ণচৈতন‍্যমাশ্রিতাঃ।।*

*🍀অন্বয়= কলৌ=কলিযুগে, অন্তঃ কৃষ্ণং বহির্গৌর= ভেতরে কৃষ্ণ বাইরে গৌর, দর্শিতাঙ্গাদি বৈভবং= অঙ্গাদি দ্বারা নিজের বৈভব প্রকাশ, কৃষ্ণচৈতন‍্যং=শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্যকে, [বয়ং]=আমরা, সঙ্কীর্তনাদ‍্যৈঃ আশ্রিতাঃ স্মঃ=ষংকীর্তন প্রধান যজ্ঞ দ্বারা আশ্রয় করেছি।*
*🌻শ্রীপাদ শ্রীজীবগোস্বামী এই শ্লোকে বলেছেন--, যিনি ভিতরে কৃষ্ণবর্ণ, কিন্তু বাইরে গৌরবর্ণ অঙ্গাদি দ্বারা নিজের মহিমা প্রকাশ করেছেন,সেই শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্যকে কলিযুগে সংকীর্তনপ্রধান যজ্ঞের দ্বারা আমরা আশ্রয় করেছি।*
*🌷অন্তরে শ‍্যাম তনু,বাহিরে গৌরাঙ্গ যনু,*
       *অপরূপ গৌরাঙ্গের লীলা।*
*🛑রাই সঙ্গে খেলাইতে,কুঞ্জরস বিলসিতে,*
        *অনুরাগে গৌর তনু হৈলা।।*
*🌻দ্বাপরযুগের ব্রজলীলায় প্রবেশ করতে হবে, তবেই এর মাহাত্ম্য অনুভব হবে।*

*🌻শ্রীকৃষ্ণের এই প্রতিজ্ঞা পর্যন্ত গোপীর ভজনে বিফল হয়ে যায়।*
*🌷কৃষ্ণের প্রতিজ্ঞা দৃঢ় সর্বকালে আছে।*
*🌷যে যৈছে ভজে কৃষ্ণে তারে ভজে তৈছে।।*
*🌷সে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হইল গোপীর ভজনে।*
*🌷তাহাতে প্রমাণ কৃষ্ণ শ্রীমুখবচনে।।*
*🛑শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্ধে বত্রিশ অধ‍্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ গোপীগণকে বলেছিলেন---*

*ন পারয়েহহং নিরবদ‍্য সংযুজাং,*
*স্বসাধুকৃত‍্যং বিবুধায়ূষাপি বঃ।*
*যা মাভজন্ দুর্জ্জর গেহশৃঙ্খলাঃ,*
*সংবৃশ্চ‍্য তদ্বঃ প্রতিযাতু সাধুনা।।*

*🍀নিরবদ‍্যসংযুজাং বঃ = অনিন্দ‍্য সংযোগবতী তোমাদের, স্ব সাধুকৃত‍্যং = স্বীয় বা নিজ সাধুকৃত‍্য, অহং বিবুধায়ূষাপি ন পারয়ে= অমর আয়ু লাভ করেও আমি তোমাদের ঋণ শোধ করতে সমর্থ হব না, দুর্জ্জরগেহশৃঙ্খলাঃ সংবৃশ্চ‍্য= যেহেতু তোমরা দুশ্ছেদ‍্য গৃহশৃঙ্খল ছিন্ন করেও, মাভজন্=আমাকে ভজন করেছ, বঃ সাধুনা তৎ প্রতিযাতু= তোমার সাধুকৃত‍্যের দ্বারাই তার শ্রতিশোধ হোক।*
*🌻শ্রীকৃষ্ণ গোপীগণকে বলছেন= হে গোপীগণ! তোমাদের নির্দোষ ও নিষ্কাম মিলন এবং প্রেম ব‍্যবহারের ঋণ আমি অনন্তকালেও পরিশোধ করতে পারব না।তোমরা যে ছিদ্রহীন গৃহশৃঙ্খল ছিন্ন করে আমাকে ভজন করেছ, তার ঋণ তোমাদের নিজগুণেই পরিশোধ হতে পারে। কিন্তু আমার এমন ক্ষমতা নাই যে, তোমাদের সেই ঋণ আমি পরিশোধ করি।*

*🛑গোপীগণ ধৈর্য‍্য,লজ্জা,কুল,শীল, মান, ভয়াদি সব ত‍্যাগ করে শ্রীকৃষ্ণের সেবা করেছিলেন।এমন সেবা অনন্তকোটি ব্রহ্মান্ডে আর কেউ করতে পারেনি বলে শ্রীকৃষ্ণ গোপীগণের কাছে ঋণ হয়ে, সেই ঋণ শোধের লাগি,ভগবানত্ব ত‍্যাগ করে কলিযুগে ভক্ত হয়ে এসেছিলেন।*
*🌷রাই সঙ্গে খেলাইতে, কুঞ্জরস বিলসিতে,*
          *অনুরাগে গৌর তনু হৈলা।।*
*🙏তৃতীয় অন্তরা ব‍্যাখ‍্যা*

*🌻স্বপ্নবিলাস গৌরচন্দ্রিকার ব‍্যাখ‍্যা চতুর্থ অন্তরা বা বিরাম।*

*🌷কহিবার কথা নয়,*
*🌷কহিলে কি জানি হয়,*
*🌷মনে মোর এই বর তাপ।*
*🌷চিতে অনুমান করি,*
*🌷হৃদয়ে গৌরাঙ্গ ধরি,*
*🌷নরহরি করয়ে বিলাপ।।*

*🌻জয় নিতাই, এই অন্তরাতে পদকর্তা কি বলতে চেয়েছেন, তা অনুমান করা আমার মত অধমের পক্ষে সম্ভব নহে।তবে আমার মহাপ্রভু আমাকে যেমন লিখাবেন, আমি নিমিত্তমাত্র হয়ে লিখিব।পদকর্তা নরহরি দাসের মনে কি তাপ, কি ব‍্যথা,কেন যে তিনি পদটি লিখে বিলাপ করেছেন জানি না।*

*🌷জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্য জয় নিত‍্যানন্দ।*
*🌷জয় অদ্বৈতচন্দ্র জয় গৌর ভক্তবৃন্দ।।*
*🌷বৃন্দাবনদাস কবিরাজ গোস্বামীর চরণ শিরে ধরি।*
*🌷নিতাই-গৌরাঙ্গ-পাদপদ্মে ভৃঙ্গ হৈয়া মধু পান করি।।*

*🌻শ্রীগৌরসুন্দর কখনও কৃষ্ণ-বিরহিনী রাধাভাবে ব‍্যাকুল হয়ে কাঁদছেন,তাঁর হৃদয় নিকুঞ্জে শ্রীমতীর ভাবে নিজের অন্তর ভাবিতা করে নিয়েছেন।তখন তিনি শুনলেন, "কৃষ্ণবর্ণ শিশু এক মুরলী বাজায়"। শ্রীগৌরাঙ্গের চিত্ত নিকুঞ্জ বাসিনী কৃষ্ণাঙ্গিনী কিশোরী শ্রীরাধা যে মুরলী বাজাচ্ছেন তাইই গৌরহরি শুনে প্রেম উন্মত্ত হয়েছেন।প্রাণকোটি প্রিয়তমকে নিজের কাছে পেয়ে বিরহ উন্মাদনা এটি প্রেমবৈচিত্র‍্যে, এখানে বাঞ্জাত্রয়ের আংশিকভাবে পূর্ণ হল।*
*🌻এর পর যখন নবীন সন্ন‍্যাসী শ্রীচৈতন‍্যদেব প্রেমোন্মত্ত হয়ে শ্রীজগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ করে,জগন্নাথকে আলিঙ্গন করে প্রেমাবিষ্ট হয়ে মন্দিরে মূর্ছিত হয়ে পড়লেন,তখন শ্রীচৈতন‍্যের শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ,উদর স্পন্দন নাই।তাঁর দশা দেখে সার্বভৌম ভীষণ চিন্তিত হলেন, এটি অধিরূঢ় মহাভাবের সুদীপ্ত সাত্ত্বিক বিকার।তিনঘন্টা পর্যন্ত ছিল।এখানেও গোপীঋণ পরিশোধ হতে লাগল।*

*🌻রথযাত্রায় শ্রীচৈতন‍্যদেব শ্রীস্বরূপদামোদরকে-- "সেই ত পরাণনাথ পাইলু" পদ গাইতে বললেন।গান শুনে মহাপ্রভুর ব্রজের ভাবে ভাবিত হয়ে, স্বরূপের গলা ধরে আস্বাদন করলেন, মনে হল শ্রীরাধা ললিতার কাছে কৃষ্ণ মাধুর্য‍্য বর্ণনা করছেন।তার পর জগন্নাথকে মালা ও অলঙ্কারে ভূষিত দেখে মহাপ্রভুর আনন্দসিন্ধু উথলিয়ে উঠিল।তারসঙ্গে প্রেমের উন্মাদ প্রবলভাবে বাড়তে লাগলে,শ্রীমুখ হতে ফেন ও লালাস্রাব হতে লাগল।এটি অধিরূঢ় মহাভাবে দিব‍্য উন্মাদ দশা।এইভাবে ধীরে ধীরে রাধা ঋণ শোধ হতে লাগল।শ্রীচৈতন‍্যদেব রাধাভাবে শ্রীকৃষ্ণের মাধুর্য‍্যাস্বাদন করে তিন বাঞ্জা পূর্ণ করলেন।*
*🌻মহাপ্রভুর কৃষ্ণ দর্শনের উৎকণ্ঠায় চিন্তা,জাগরণ,উন্মাদ ও মূর্ছা প্রভৃতি দশদশায় দীর্ঘাকৃতি মূর্তি ধারণ করেছিলেন।এটিও রাধা ঋণ পরিশোধের একঅঙ্গ।*

*🌻গোপীগণের মধ্যে যিনি সর্বোত্তমা অর্থ‍্যাৎ শ্রীরাধা,যাঁর নিজ সুখের বিন্দুমাত্র সুখবাঞ্জা নেই, যার মাদনাখ‍্য মহাভাবে দিব‍্য বা অলৌকিক মধু বিশেষের মত মাদকতা সম্পন্ন সেই রাধার ভাবে ভক্তভাব অঙ্গীকার করে নীলাচলে গম্ভীরার মধ্যে শ্রীকৃষ্ণ-মাধুর্য‍্য ও বৃন্দাবন লীলা রসাস্বাদন করেছিলেন।শ্রীকৃষ্ণের তিনটি বাঞ্জা যথা,শ্রীরাধার প্রণয়মহিমার তাৎপর্য‍্য, শ্রীরাধা কর্তৃক মাদনাখ‍্য মহাভাবের দ্বারা আস্বাদ‍্য শ্রীকৃষ্ণের অনন্ত মাধুর্য‍্য ও শ্রীকৃষ্ণের এই অদ্ভুত,অনন্ত মধুরিমা অনুভব করে শ্রীকৃষ্ণ হতে শ্রীরাধার কোটিগুণ সুখানুভূতি কিরকম, ইত্যাদি পরিপূর্ণ হল। শ্রীমদ্ভাগবতে ১০|৩২|২০ " ন পারয়েহহং" শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ গোপীগণের ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে এবং গীতার "যে যথা মাং প্রপদন্তে" শ্লোকে গোপীর প্রীতি অনুরূপ প্রীতি করতে অসমর্থ হয়ে ধন‍্য কলিযুগে শ্রীগৌররূপে অবতীর্ণ হলেন।গোপীঋণ বা রাধাঋণ এতই ভারী ও গরীয়ান যে শ্রীগৌরহরি কলির জীবের ঘরে ঘরে জয়রাধে শ্রীরাধে বলে নয়নজলে বক্ষ প্লাবিত করে শ্রীরাধার মহিমা ও প্রেম রসসীমা প্রকাশ করলেন।গম্ভীরাতে দিব‍্যোন্মাদ দশা দশম দশা,দীর্ঘাকৃতি,কূর্মাকৃতি প্রভৃতি মহাভাব দ্বারা শ্রীরাধার প্রেম পরিশোধ হল।তারপর ধীরে ধীরে শ্রীচৈতন‍্যদেবের দেহ ক্ষীণ হতে লাগল।এই ভাবে যখন তিনবাঞ্জা পরিশোধ হল,তখন আর বেশীদিন থাকবার ইচ্ছা মনে হল না।*
*🌻লেখকের উক্তি, সম্প্রতি "শ্রীচৈতন‍্য কড়চা" নামে উড়িয়া ভাষায় একটি গ্রন্থ পাওয়া গিয়েছে, সেটি যুগান্তর পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছে।শ্রীমন্মহাপ্রভু শ্রীজগন্নাথ মন্দিরে গরুড় স্তম্ভের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন,তখন ভক্তগণ ও অগণিত লোকগুলি একটি চোখ ধাধান দিব‍্য জ‍্যোতি দেখতে পেলেন,পরমুহূর্ত‍্যেই আর মহাপ্রভুকে দেখা গেল না,শুধু দেখা গেল তাঁর পরিধেয় কৌপীনবস্ত্র,সেটি পরিশেষে আইটোটায় অবস্থিত পন্ডিত গদাধরের আশ্রমে সমাধিস্থ হয়। লেখক প্রায় চল্লিশ বৎসর পূর্বে গদাধর সেবিত শ্রীগোপীনাথ জীউকে দর্শন করতে গিয়েছিলেন, তখন একটি ফলকে লেখা ছিল----*
*🌷কি বলিব দুঃখের কথা বক্ষ ফেটে যায়।*
*🌷মহাপ্রভু মিলিলেন গোপীনাথের গায়।।*
*🌻মহাপ্রভুর আবির্ভাব--, ১৪০৭ শকে ২৩শে ফাল্গুন, ১৪৮৬ খৃষ্টাব্দে ১৮ই ফেব্রুয়ারি।তিরোভাব--, ১৫৩৩ খৃষ্টাব্দে ২৯শে জুন,(৩১শে আষাঢ়)তাঁর জীবনকাল মাত্র ৪৭ বৎসর ০৪ মাস।*

*🍀হয়ত পদকর্তার মনে এই ভাবনাগুলো জাগরিত হয়ে, "কহিবার•••••••••••••••••বিলাপ।।*

*🙏যাইহোক, বানান ভুলভ্রান্তি মাজনীয়।*

*🌻পদটি এই রকম-----*
*🌷রসে তনু ঢরঢর,গৌর কিশোর বর,*
          *নাম যাঁর শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্য।*
*🌷এ সব নিগূঢ় কথা,কহিতে অন্তরে ব‍্যথা,*
      *ভক্তি বিনা নাহি জানে অন‍্য।।*
*🌷দ্বাপর যুগেতে শ‍্যাম,কলিতে চৈতন‍্য নাম,*
          *গর্গবাক‍্য ভাগবতে লিখি।*
*🌷মনে করি অনুমান,গৌরাঙ্গ ভেল শ‍্যাম,*
            *রাধাকৃষ্ণ তনু তার সাখি।।*
*🌷অন্তরে শ‍্যাম তনু,বাহিরে গৌরাঙ্গ যনু,*
        *অপরূপ গৌরাঙ্গ লীলা।*
*🌷রাই সঙ্গে খেলাইতে,কুঞ্জরস বিলসিতে,*
          *অনুরাগে গৌর তনু হৈলা।।*
*🌷কহিবার কথা নয়,কহিলে কি জানি হয়,*
           *মনে মোর এই বর তাপ।*
*🌷চিতে অনুমান করি,হৃদয়ে গৌরাঙ্গ ধরি,*
           *নরহরি করয়ে বিলাপ।।*

🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏






*🌻স্বপ্নবিলাস ব্রজলীলা ১ম পদ*
      •••••••••••••••••••••••••••••••••••
*🍀প্রথম পদে প্রথম অন্তরা---*
*নিধুবনে দুহুঁজনে,চৌদিকে সখীগণে,*
         *শুতিয়াছে রসের আলসে।*
*নিশিশেষে বিধুমুখী,উঠিলেন স্বপ্ন দেখি,*
        *কাঁদি কাঁদি কহে বঁধূ পাশে।।*

*🌻ভক্তবৎসল প্রেমময় শ্রীকৃষ্ণ, রাধারাণী তথা সমস্ত সখীগণের কাছে তাঁদের সেবায় শ্রীকৃষ্ণ ঋণী হয়েছেন।শ্রীকৃষ্ণ এই কথাও বলেছিলেন যে, তোমরাই পারবে আমার এই ঋণ মুক্ত করতে, তোমাদের এই ঋণ আমি কোনদিনই পরিশোধ করতে পারব না।তাই চতুরের শিরোমণি শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমতী রাধারাণীর সঙ্গে চাতুরিতা করেছিলেন। কি চাতুরিতা? আস্বাদন করুন।*
*🍀রাসমঞ্চে সারানিশি নৃত্য-গীত করে ভীষণ পরিশ্রান্ত হয়েছেন সকলেই,সখীদের কর্ম কেবল যুগলরূপ দর্শন ও সেবা করে চরম আনন্দ লাভ করা।শেষে সখীগণ বুঝতে পারলেন যে নৃত‍্যগীতে রাধারাণীর জয় হয়েছে,এবার বিশ্রামের প্রয়োজন, তখন তাঁরা নিকুঞ্জ বনে কুসুম দিয়ে শয‍্যা রচনা করলেন, সেই শয‍্যায় রাধাগোবিন্দ শয়ন করলেন।*

*রাধারাণীর অষ্টসখী, এই অষ্টসখীর সেবা ললিতার তাম্বুলসেবা, বিশাখার নূপুর সেবা,চিত্রা বসন সেবা,চম্পকলতার চামর সেবা, তুঙ্গবিদ‍্যার গীতবাদ‍্য সেবা ও দুগ্ধ সেবা,ইন্দুরেখা শ্রীমতীর সঙ্গে নৃত‍্য সেবা করেন,রঙ্গদেবীর আলতা সেবা, ও সুদেবীর জল-সেবা। এই অষ্টসখীর সেবাকার্য‍্য। এছাড়াও অন‍্য কিছু সখী আছেন যেমন শশীরেখার দর্পণাদি রক্ষণের কাজ, বিমলার পদসেবায়, পালিকার কুসুমশয‍্যা রচনাকারিণী, শ‍্যামলার চন্দনাদি প্রলপনে নিয়োজিতা,অঙ্গনার মলাদি রচনা, মধুমতীর বস্ত্রাদি রক্ষণায় নিয়োজিত।*
*শ্রীরাধাগোবিন্দ শয়নে আছেন আর শয়নকালের যে সেবা, সখীগণ নিজ নিজ সেবা করছেন।এইভাবে নিশি প্রায় শেষ হতে চলেছে,এমন সময় শ্রীকৃষ্ণ ছলনা করে শ্রীমতীকে স্বপ্ন দেখালেন, কেন? পূর্বেই বলেছি যে তিনি ঋণ হয়েছেন, এই ঋণ শোধ করতে হলে একমাত্র রাধারাণীর অনুমতি না পেলে কোন কর্মই সফল হবে না।তাই কৃষ্ণচন্দ্র গৌররূপ ধারণ করে রাইধনিতে স্বপ্ন দেখালেন।স্বপ্ন দেখে রাইধনি কেঁদে কেঁ‍দে প্রাণবল্লভকে বলছেন।*


*স্বপ্নবিলাস ব্রজলীলা ২য় কলির ব‍্যাখ‍্যা।*

*🌻🌻🌻🌻পদ🌻🌻🌻🌻*
*উঠ উঠ প্রাণনাথ,কি দেখিলাম অকস্মাৎ,*
        *এক যুবা গৌরবরণ।*
*কিবা তার রূপঠাম,জিনি কত কোটি কাম,*
        *রসরাজ রসের সদন।।*

*🌻শ্রীমতী প্রেমময়ী রাইধনি দেখলেন তাঁর প্রাণবল্লভ শয়নে আছেন,ঘুমন্ত অবস্থায় কাউকেও জাগাতে নেই,তাই তিনি ক্রন্দনরত অবস্থায় ব্রজবিহারী শ্রীকৃষ্ণের চরণসেবা করতে লাগলেন।চরণসেবা করতে করতে যদি প্রাণনাথের নিদ্রা ভঙ্গ হয়,তাহলে তিনি সেই স্বপ্নের কথা বলবেন।তিনি অন্তরে বলছেন, " উঠ উঠ প্রাণনাথ" বদন দিয়ে কিন্তু বাহির হচ্ছে না।চতুরের শিরোমণি ছলনা করে ঘুমিয়ে ছিলেন, রাধারাণী কি করেন তা দেখবার জন্য।রাইধনির পদসেবায় কৃষ্ণের নিদ্রা ভঙ্গ হল, এটিই তিনি শ্রীমতীর সম্মুখে দেখালেন।যখন তিনি উঠলেন, রাইধনি বলছেন, প্রাণবল্লভ! কি এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম, "এক মনোহরণকারী নব যুবক গৌরবর্ণ দেখলাম, অহো! কি তার রূপ!আমি জানি যে কামদেব দেখতে অতীব সুন্দর, কিন্তু ঐ যুবকের রূপ দেখে মনে হল ঐরকম কোটি কামদেব তার রূপের কাছে তুচ্ছাতিতুচ্ছ।যেন মনে হল তিনি রসে টইটম্বুর, রসের ভান্ডার।*
*কিবা তার রূপঠাম,জিনি কত কোটি কাম,*
        *রসরাজ রসের সদন।।*

*স্বপ্নবিলাস ৩য় কলির ব‍্যাখ‍্যা*

*অশ্রু কম্প পুলকাদি,ভাব ভূষা নিরবধি,*
         *নাচে গায় মহা মত্ত হৈয়া।*
*অনুপম রূপ দেখি,জুড়াইল মোর আঁখি,*
         *মন ধায় তাহারে দেখিয়া।।*

*🌻হে প্রাণবল্লভ!সেই অপরূপ রূপের গৌরবরণ যুবকটির মধ্যে অষ্টসাত্ত্বিকের বেশ অনেকগুলি ভাব প্রকাশ পেয়ে,দেখলাম মহানন্দে মহা মত্ত হয়ে নৃত্য গীত করছে। বলতে আমার বড়ই লজ্জা করছে যে, আমার তো একটি মন, সেই মন প্রাণ সমস্ত তোমার শ্রীচরণে অর্পণ করেছি, কিন্তু কেন যে ঐ যুবকের রূপে আমার দেহ মন প্রাণ তার চরণে সঁপে দিলাম, আর কেনই বা ঐ রূপ দেখে আমার আঁখি জুড়াইল কিছুই বুঝতে পারলাম না,স্বপ্নে যখন থেকে আমি ঐ গৌরবরণ যুবককে দেখেছি, আমার মন তার দিকে ধাবিত হয়েছে।*
*অনুপম রূপ দেখি,জুড়াইল মোর আঁখি,*
        *মন ধায় তাহারে দেখিয়া।।*

*স্বপ্নবিলাস ব্রজলীলার ৪র্থ কলির সংক্ষেপে ব‍্যাখ‍্যা।*

*নব জলধর রূপ, রসময় রসকূপ,*
        *ইহা বৈ না দেখি নয়নে।*
*তবে কেন বিপরীত,হেন ভেল আচম্বিত,*
       *কহ নাথ ইহার কারণে।।*

*🌻হে প্রাণেশ্বর! এই ব্রজে, তোমার কাছে বোধহয় আমার আর মান-সম্মান রইল না, একজন সতীনারীর একমাত্র সম্বল তার পতি, যে সতীনারী নিজ পতি ত‍্যাগ করে অন‍্য পরপুরুষের প্রতি নজর দেয় তাকে কুলটাই বলে, তাইনা? যে এক কুল হতে অন‍্য কুলে গমন করে, "ভুলিনু রূপের জালে,কুলটা হইনু কালে। চতুরের শিরোমণি চোখ-মুখ বন্ধ করে রাইধনির কথাগুলি শুনছেন, আর মনে মনে হাসছেন, এবং বলছেন--আমার বাসনা পূর্ণ হ'ল। শ্রীমতী রাধা আরও বললেন, প্রাণনাথ!কি রূপই না দেখলাম!ব্রজে এতকাল ধরে বাস করছি পূর্বে কখনই এমন স্বপ্ন দেখি নাই।এইরকম কেন হল বল না?তুমি যদি জান তবে এর কারণটি আমায় বল।*
*তবে কেন বিপরীত,হেন ভেল আচম্বিত,*
       *কহ নাথ ইহার কারণে।।*

*স্বপ্নবিলাস ব্রজলীলা বিরাম কলি*

*চতুর্ভূজ আদি কত,বনের দেবতা যত,*
      *দেখিয়াছি এই বৃন্দাবনে।*
*তাহে তিরপিত মন,না হইল কদাচন,*
       *(এই)গৌরাঙ্গ হরিল মোর মন।।*
*এতেক কহিতে ধনি,মূর্ছাপ্রায় ভেল জানি,*
       *বিদগধ রসিক নাগর।*
*কোলেতে করিয়া গোরী,মুখ চুম্বে বেরি বেরি,*
        *হেরিয়া জগদানন্দ ভোর।।*

*🌻রাধারাণী এওও বললেন, যেদিন আমি রাখাল বেশ ধারণ করে গোচারণ ভূমিতে গিয়েছিলাম, তখন সেই গোচারণ ভূমিতে কত দেব দেবতাগণ এসে আমার শ্রীচরণ দর্শন করবার জন্য লালায়িত হয়েছিলেন, কিন্তু তাতেও আমার মন তাঁদের দেখে তিরপিত (তৃপ্তি) হয়নি,তবে আজ কেন এমন হল, বলো প্রাণনাথ? এই কথাগুলি বলতে বলতে রসময়ী রাধারাণী প্রায় অচেতন হয়ে পড়লেন।যখন অচেতন হলেন রসিকনাগর রসের সাগর শ্রীকৃষ্ণ, রাইধনিকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলেন। পদকর্তা সখী ভাবাবিষ্ট হয়ে জগদানন্দ শ্রীকৃষ্ণের কোলে রাইধনীকে আদর করতে দেখে আনন্দে বিভোর হলেন।*
*কোলেতে করিয়া ধনি,মুখ চুম্বে বেরি বেরি,*
      *হেরিয়া জগদানন্দ ভোর।।*

*🌻স্বপ্নবিলাস ব্রজলীলা ২য় পদের ১ম কলি।*

*শুনইতে রাই, বচন-অধরামৃত,*
      *বিদগধ রসময় কান।*
*আপনাক ভাবে, ভাব প্রকাশিত,*
     *ধনী অনুমতি ভেল জান।।*
  *সুন্দরি যে দেখিলা গৌর-স্বরূপ।*
*সো নহি আন, কেবল তুয়া প্রেম,*
       *মোহে করব তেন রূপ।।*

*🌻ভক্তবৎসল শ্রীকৃষ্ণ আগত কলিযুগের জীবের দশা মনে করে চিন্তায় আকুল হয়েছিলেন সেই দ্বাপরযুগে।তিনি ভেবেছিলেন একমাত্র রাধারাণী ছাড়া আমার কলিযুগে সম্ভব নই,তাই হেন তেন প্রকারে রাধারাণীর অনুমতি না পেলে আমি কলিযুগে গৌরাঙ্গ হয়ে যেতে পারব না,রাধারাণীর স্বপ্নকথা শুনে বুঝতে পারলেন যে,রাইধনি সেই গৌরবরণ রূপে দেহ মন প্রাণ সমস্ত কিছুই অর্পণ করে দিয়েছেন,এও ভাবলেন যে,সত‍্যিই আমি রাইয়ের অনুমতি পেলাম।*
*আপনাক ভাবে, ভাব প্রকাশিতে,*
       *ধনি অনুমতি ভেল জান।।*
*🍀তখন শ্রীকৃষ্ণ প্রেমময়ী রাইধনিকে বললেন, রাধে! তুমি যে গৌর-স্বরূপ দেখলে,তা আন নহি, একেবারেই সত‍্য, এই গৌররূপ ধারণ আমার পক্ষে সম্ভব নয়,একমাত্র তোমার প্রেম সম্বল করে, এবং তোমার রূপ অঙ্গে ধারণ করে আমায় যেতে হবে।*
*সো নহি আন, কেবল তুয়া প্রেম,*
       *মোহে করব তেন রূপ।।*

*কৈছন তুয়া প্রেমা,কৈছন মধুরিমা,*
       *কৈছন সুখে তুহুঁ ভোর।*
*এ তিন বাঞ্জিত ধন,ব্রজে নহিল পূরণ,*
        *কি কহব না পাইয়া ওর।।*

*🌻শ্রীকৃষ্ণ মহাভাব প্রেমময়ী কৃষ্ণানুরাগিনী রাধাঠাকুরাণীকে বলছেন, রাই! তুমি ছাড়া আমার গতি নাই, বিশেষ করে তোমার প্রেম মহিমা কিরকম, তুমি যে প্রেম সহকারে আস্বাদন করেছ সেই মাধুর্য‍্যই বা কিরকম, তুমি আমাকে ভালবেসে যে আনন্দ উপভোগ করেছ,সেই আনন্দই বা কিরকম। এই তিনটি বিষয়ে লোভবশবর্তী হয়ে আমি কলিযুগে নদীয়ায় অবতীর্ণ হব।*
*এ তিন বাঞ্জিত ধন,ব্রজে নহিল পূরণ,*
       *কি কহব না পাইয়া ওর।।*
              *ক্রমাগত*

*🌻স্বপ্নবিলাস ব্রজলীলা পদের ব‍্যাখ‍্যা।*

*ভাবিয়া দেখিনু মনে,তোঁহারি স্বরূপ বিনে,*
       *এ বাসনা পূর্ণ কভু নয়।*
*তুয়া ভাব কান্তি ধরি, তুয়া প্রেম গুরু করি,*
      *নদীয়াতে করব উদয়।।*

*🌻খুবই সহজ পদের মধ্যেই ব‍্যাখ‍্যা আছে।*
*🌻আগত কলিযুগের জীব কাম-কামনা,বিষয়-বাসনায় মত্ত হয়ে আছে, তা ভক্তবৎসল শ্রীকৃষ্ণ দ্বাপরযুগের দেখতে পাচ্ছেন, কারণ তিনি সর্ব কারণ কারণ,তাই মুখ‍্য ও গৌণ দুইটি কারণ নিয়ে নদীয়ায় অবতীর্ণ হবেন।* *তাহলে কলির জীবকে আকর্ষণ করতে হলে অপরূপ রূপের মানুষ হয়ে অবতীর্ণ হতে হবে, তাই অনন্তকোটি ব্রহ্মান্ডে একমাত্র শ্রীরাধার থেকে সুন্দরী আর কেউ নেই, তাই শ্রীকৃষ্ণের মনের বাঞ্জা শ্রীরাধার ভাবকান্তি ধারণ করে তিনি অবতীর্ণ হবেন।*
*তুয়া ভাব কান্তি ধরি,তুয়া প্রেম গুরু করি,*
      *নদীয়াতে করব উদয়।।*

*সাধিব মনের সাধা,ঘুচাব মনের বাধা,*
     *জগতে বিলাব প্রেমধন।*
*বলরাম দাসে কয়,প্রভু মোর দয়াময়,*
      *না ভজিনু মুঞি নরাধম।।*

*🌻আমরা ভগবানের জন্য কতটুকু ভাবি, তাইনা? কিন্তু ভক্তবৎসল শ্রীকৃষ্ণ আমাদের মত অবাধ‍্য সন্তানদের জন্য দ্বাপরযুগ থেকেই ভাবছেন যে, তাদের কেমন করে উদ্ধার করব।কেমন করে অবাধ‍্য সন্তানরা আনন্দে মুখরিত হবে এই চিন্তায় ব‍্যাকুল।তাই শ্রীরাধার প্রেমধন হৃদয়ে নিয়ে,সেই প্রেমধন বিতরণ করে কলির জীবকে উদ্ধার করব।অন‍্যান‍্য যুগে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অসুর নিধন করে ধর্ম স্থাপন করেছি, কিন্তু কলি জীবের পরমায়ু অতি স্বল্প, এই স্বল্পায়ু জীবদের একমাত্র প্রেমভক্তি দিয়েই উদ্ধার করতে হবে। পদকর্তা বলরামদাস সখী ভাবাবিষ্ট হয়ে বলছেন,প্রভু (কৃষ্ণ) আমার কত দয়াময়,আমাদের জন্য তাঁর কত ব‍্যাকুলতা,এমন সুদুর্লভ মনুষ‍্য জনম পেয়েও এমন প্রেমের ঠাকুরকে ভজিলাম না।*

*বলরামদাসে কয়,প্রভু মোর দয়াময়,*
      *না ভজিনু মুঞি নরাধম।।*

*স্বপ্নবিলাস ব্রজলীলা ৩য় পদের ব‍্যাখ‍্যা।*

    *বঁধূ হে শুনইতে কাঁপই দেহা।*
*তুহুঁ ব্রজ-জীবন,তুয়া বিনু কৈছন,*
       *ব্রজপুর বাঁধব থেহা।।*
*🌻কৃষ্ণহৃদিবিলাসিনী,শ‍্যামকন্ঠ হেমমণি,রমণীমুকুটমণি,কৃষ্ণমনমোহিনী,মহাভাবস্বরূপিনী শ্রীরাধাঠাকুরাণী বলছেন---, হে আমার প্রাণবল্লভ শ‍্যামসুন্দর!তুমি কি কথা শুনালে!তোমার কথাগুলি শুনে আমার সমস্ত শরীর যেন কাঁপতে লাগিল।হে প্রাণনাথ!ব্রজজনের জীবন,তুমি আমার হৃদয়ের ধন,তুমি আমার জীবন,তুমি আমার সবকিছু,তোমাকে ছেড়ে কি করে এই ব্রজে থাকব?*
*তুহুঁ ব্রজ-জীবন, তুয়া বিনু কৈছন,*
        *ব্রজপুর বাঁধব থেহা।।*

*জল বিনু মীন, ফণী বিনু মণি,*
      *তেজয়ে আপন পরাণ।*
*তিল আধ তুহাঁরি,দরশ বিনু তৈছন,*
        *ব্রজপুর গতি তুহুঁ জান।।*

*🌻শ্রীনামের তত্ত্ব।*

*🌷যত্ন করি কৃপা মাগি ব‍্যাকুল অন্তরে।*
*🌷তুমি কৃপাময় কৃপা কর অতঃপরে।।*
*🌷তব কৃপালাভে যদি না করি যতন।*
*🌷তবে আমি ভাগ‍্যহীন হে শচীনন্দন।।*
*🌻যে সব মানুষ কেবল নিজবুদ্ধি ও অর্থ চেষ্টা বলে ভজনে রত হন,তাঁরা কখনই ফললাভ করতে পারেন না।কৃষ্ণ কৃপায় সব কাজের মূল। সুতরাং যিনি কৃষ্ণ কৃপা পাবার চেষ্টা না করেন তিনি নিতান্ত ভাগ‍্যহীন।*
*🍀এই পরিচ্ছেদ শেষে একাগ্র মানসে যে নাম স্মৃতি অভ‍্যাস করবে বলা হয়,তার সম্বন্ধে সর্বজীবের প্রতি শ্রীমন্মহাপ্রভুর উপদেশ (চৈঃভাঃ মধ‍্য)*
*🌷আপন সবারে প্রভু করে উপদেশে।*
*🌷কৃষ্ণনাম মহামন্ত্র শুনহ হরিষে।।*
*🌷হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।*
*🌷হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।*
*🌷 প্রভু বলে হরিনাম এই মহামন্ত্র।*
*🌷ইহা জপ গিয়া সবে করিয়া নির্ব্বন্ধ।।*
*🌷ইহা হইতে সর্ব সিদ্ধি হইবে সবার।*
*🌷সর্বক্ষণ বল ইথে বিধি নাহি আর।।*
*🌻এখানে নির্ব্বন্ধ শব্দের অর্থ এই যে সাধক ১০৮ সংখ্যক তুলসীমালায় এই ষোলনাম বত্রিশ অক্ষর জপ করবেন।চারবার মালা ফিরিলে একগ্রন্থ হয়।একগ্রন্থ নিয়ম করে ক্রমশ বৃদ্ধি করতে করতে ১৬ গ্রন্থে এক লক্ষ নাম নির্ব্বন্ধ হবে।ক্রমশ তিন লক্ষ করলে অখিলকার নামেতেই যাপিত হবে।সমস্ত পূর্বমহাজনগণ মহাপ্রভুর এই আদেশ পালন করে সর্বসিদ্ধিলাভ করেছিলেন।এখনও এই নাম জপ দ্বারা সকলেরই সর্বসিদ্ধি লাভের সম্ভাবনা।মুক্ত,মুমুক্ষু,বিষয়ী সকলেই এই নামের অধিকারী।মুক্ত প্রভৃতির নামে কিছু কিছু ভাবনা ভেদ দেখা যায়।বিরহ ও সম্ভোগ উভয় অবস্থায় এই নাম ভাবনাভেদে নিত‍্য আস্বাদ‍্য।*
*🌷হরিনাম চিন্তামণি অলঙ্কার যার।*
*🌷 হরিদাস পদযুগ ভরসা তাহার।।*
👣👣👣👣👣👣🙏👣👣👣👣👣👣


*স্বপ্নবিলাস ব্রজলীলা ৩য় পদ*

*🍀যেমন মণি ছাড়া ফণি, জল ছাড়া মাছ বাঁচে না, তেমনি আমি তোমায় ছাড়া বাঁচতে পারব না।*

*তিল আধ তুহাঁরি,দরশ বিনু তৈছন,*
       *ব্রজপুর গতি তুহুঁ জান।*
*🍀হে নাথ!এই ব্রজপুরের একমাত্র তুমিই আমার প্রাণ, তোমাকে তিলমাত্র সময় দর্শন না করে থাকতে পারি না,আর তুমি বলছ গৌর হয়ে নদীয়ায় চলে যাবে!*

*সকল সমাধি,কোন সিধি সাধবি,*
       *পাওবি কোন সুখ।*
*কিয়ে আন জন,তুয়া মরমহি জানব,*
      *ইথি লাগি বিদরয়ে বুক।*
*🌻এক বিষয়ে মনোনিবশই "একাগ্রতা" ,একাগ্রতা বদ্ধমূল হলেই তার নাম "ধারণা",ধারণা বদ্ধমূল হলেই তাকে "ধ‍্যান" বলে, ধ‍্যান বদ্ধমূল বা গাঢ় হলেই ঐ ধ‍্যানকে "সমাধি" বলে।সমাধি দশায় অহং-জ্ঞান থাকে না,কেবলমাত্র ধ‍্যেয় বস্তুরই আভাস থাকে।*
*🍀তাই রাধারাণী বলছেন,কিসের জন্য তুমি নদীয়ায় যাবে, ঐখানে কোন সমাধি সাধন করবে?ঐখানে গিয়ে তুমি কোন সুখ পাবে?নদীয়ার আনজন সাধারণ মানুষগুলি কি তোমার মর্ম বুঝবে?না জানি তোমার কত না কষ্ট হবে, তোমার কথা শোনার পর হতেই আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।*
*🌷ইথি লাগি বিদরয়ে বুক।*

*বৃন্দাবন কুঞ্জ,নিকুঞ্জহি নিবসয়ি,*
         *তুহুঁ বর নাগর কান।*
*অহনিশি তুহাঁরি, দরশ বিনু ঝুরব,*
         *তেজব সবহুঁ পরাণ।।*

*🌻হে নাথ! বলতে বড় ব‍্যথা লাগছে, তুমি চলে গেলে দিবানিশি তোমার দর্শন না পেয়ে আমরা সকলেই প্রাণ ত‍্যাগ করব।*

*অগ্রজ সঙ্গে, রঙ্গে যমুনা তটে,*
    *সখা সঙ্গে করবি বিলাস।*
*পরিহরি মুঝে কিয়ে,প্রেম প্রকাশবি,*
      *না বুঝয়ে বলরাম দাস।।*


*🌻🌻🌻🌻শরীর তত্ত্ব🌻🌻🌻🌻*

*🌷নবচক্রং ষোড়শধারং ত্রিলক্ষ‍্যং বোমপঞ্চকং।*
*🌷স্বদেহে যো ন জানন্তি কথং সিদ্ধ‍্যন্তি যোগিনঃ।।*
                   *(উৎপত্তিতত্ত্ব)*

*🌹নবচক্র,ষোড়শাধার,ত্রিলক্ষ‍্য ও পঞ্চাকাশ স্বদেহে যে লোক জানে না,তার সিদ্ধি কিরকম ভাবে হবে?যে কোন সাধনের জন্য যা প্রয়োজন,সমস্তই দেহমধ‍্যে আছে।*

*🌷ত্রৈলোক‍্য যানি ভূতানি তানি সর্বাণি দেহতঃ।*
*🌷মেরুং সংবেষ্ট‍্য সর্বত্র ব‍্যবহারঃ প্রবর্ততে।।শিব সংহিতা ২|৪*

*🌹ভূ-ভূর্বঃ-স্বঃ এই তিনলোকমধ‍্যে যত রকম জীব আছে,তার সমস্তই দেহের মধ্যে অবস্থিত করছে।সেই সব পদার্থ মেরুকে বেষ্টন বা ঘিরে আপন আপন বিষয়ের সম্পাদন করছে।*

*🌷দেহেহস্মিন্ বর্ততে মেরুঃ সপ্তদীপসমন্বিতঃ।*
*🌷সরিতঃ সাগরাঃ শৈলাঃ ক্ষেত্রাণি ক্ষেত্রপালকাঃ।।*
*🌷ঋষয়ো মনয়ঃ সর্বে নক্ষত্রাণি গ্রহাস্তথা।*
*🌷পুণ‍্যতীর্থানি পীঠানি বর্তন্তে পীঠদেবতাঃ।।*
*🌷সৃষ্টিসংহারকর্তারৌ ভ্রমন্তৌ শশিভাস্করৌ।*
*🌷নভো বায়ুশ্চ বহ্নিশ্চ জলং পৃথ্বী তথৈব চ।।*
                        *(শিবসংহিতা ২|১-৩)*

*🌹জীবদেহে সপ্তদীপের সঙ্গে সুমেরু পর্বত অবস্থিতি করে এবং সকল নদ,নদী,সমুদ্র,পর্বত,ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রপাল প্রভৃতিও অবস্থান করে থাকে।মুনি-ঋষিসকল,গ্রহ-নক্ষত্র, পুণ‍্যতীর্থ,পুণ‍্যপীঠ ও পীঠদেবতাগণ এই দেহে নিত‍্য বিরাজ করছেন।সৃষ্টিসংহারক চন্দ্র-সূর্য‍্য এই দেহে সবসময় ভ্রমণ করছেন।আর পৃথিবী,জল,অগ্নি,বায়ু ও আকাশ প্রভৃতি পঞ্চমহাভূতও দেহে অধিষ্ঠিত হয়ে আছেন।*

*🌷জানাতি যঃ সর্বমিদং স যোগী নাত্র সংশয়ঃ। *(ঐ-২|৫)*

*🌹যে ব‍্যক্তি দেহের এই সমস্ত বৃতান্ত জানতে পারে,সেই ব‍্যক্তিই যোগী। সুতরাং সবার আগে দেহতত্ত্বটি জানা দরকার।*

*🌻প্রত‍্যেক জীবশরীরই শুক্র,শোণিত,মজ্জা, মেদ, মাংস, অস্থি ও ত্বক্ এই সাতটি ধাতুদ্বারা নির্মিত।মৃত্তিকা,বায়ু,অগ্নি,জল ও আকাশ--এই পঞ্চভূত হতে শরীর নির্মাণ হয় এই সপ্তধাতু এবং ক্ষুধা তৃষ্ণাদি শরীর-ধর্ম উৎপন্ন হয়েছে।পঞ্চভূত হতে এই শরীর জন্ম বলে ইহাকে ভৌতিক দেহ বলে।ভৌতিক দেহ নির্জীব ও জড়সম্পন্ন ; কিন্তু এটি চৈতন‍্যরূপী পুরুষের আবাসভূমি হওয়াতে সচেতনের মত প্রতীয়মান বা বোধগম্য হয়।শরীরের অভ‍্যন্তরে পঞ্চভূতের প্রত‍্যেকের অধিষ্ঠানের জন্য স্বতন্ত্র জায়গা আছে, ঐ জায়গাগুলিকে চক্র বলে।তারা নিজ নিজ চক্রে অবস্থান করে শারীরিক সমস্ত কাজ পরিচালনা করছে।গুহ‍্যদেশে মূলাধারচক্রটি পৃথিবীতত্ত্বের জায়গা, লিঙ্গমূলে স্বাধিষ্ঠনচক্রটি জলতত্ত্বের জায়গা, নাভিমূলে মণিপুরচক্রটি অগ্নতত্ত্বের জায়গা,হৃদ্দেশে হৃদয়দেশে অনাহতচক্রটি বায়ুতত্ত্বের জায়গা, কন্ঠদেশে বিশুদ্ধচক্রটি আকাশতত্ত্বের জায়গা।যোগীগণ এই পাঁচটি পৃথ্ব‍্যাদি ক্রমে পঞ্চমহাভূতের ধ‍্যান করে থাকেন।এটি ছাড়া চিন্তাযোগ‍্য আরও কয়েকটি চক্র আছে।ললাটদেশে আজ্ঞা নামক চক্রে পঞ্চতন্মাত্রতত্ত্ব,ইন্দ্রিয়তত্ত্ব, চিত্ত ও মনের জায়গা।তারউপরে জ্ঞান নামক চক্রে অহংতত্ত্বের জায়গা।তারওউর্ধে ব্রহ্মরন্ধ্রে একটি শতদলচক্র আছে, তারমধ‍্যে মহত্ততত্ত্বের জায়গা।আবার তারওউপরে মহাশূন‍্যে সহস্রদলচক্রে প্রকৃতি-পুরুষ পরমাত্মার স্থান।যোগীগণ পৃথ্বীতত্ত্ব হতে পরমাত্মা পর্যন্ত সমস্ত তত্ত্ব এই ভৌতিক দেহে চিন্তা করে থাকেন।*


*🔆🔆🔆নাড়ীর কথা🔆🔆🔆*
⁉⁉⁉⁉⁉⁉⁉⁉⁉⁉

*🌷সার্দ্ধলক্ষত্রয়ং নাড‍্যঃ সন্তি দেহান্তরে নৃণাম্।*
*🌷প্রধানভূতা নাড‍্যস্তু তাসু মুখ‍্যাশ্চতুর্দশঃ।।*
                *(শিবসংহিতা ২|১৩)*

*🌹ভৌতিক দেহটি কার্যঁম হবার জন্য মূলাধার হতে প্রধানভূতা সাড়েতিনলক্ষ নাড়ী উৎপন্ন হয়ে, "গলিত অশ্বত্থ বা পদ্মপত্রে যেরকম শিরাজাল দেখা যায়,তদ্রূপ অস্থিময় দেহের উপর ওতপ্রোতভাবে পরিব‍্যাপ্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থেকে অঙ্গ প্রত‍্যঙ্গের কার্যসব সম্পন্ন করছে।এই সাড়ে তিন লক্ষ নাড়ীর মধ্যে চোদ্দটি প্রধান।*

*🌷সুষুম্নেড়া পিঙ্গলা চ গান্ধারী হস্তিজিহ্বিকা।*
*🌷কুহূঃ সরস্বতী পূষা শঙ্খিনী চ পয়স্বিনী।।*
*🌷বারুণ‍্যলম্বুষা চৈব বিশ্বোদরী যশস্বিনী।*
*🌷এতাসু তিস্রো মুখ‍্যাঃ স‍্যুঃ পিঙ্গলেড়াসুষুম্নিকা।।*
                  *(শিবসংহিতা ২|১৪-১৫)*

*🌹ইড়া,পিঙ্গলা,সুষুম্না,গান্ধারী,হস্তিজিহ্বা, কুহূ,সরস্বতী,পূষা,শঙ্খিনী, পয়স্বিনী, বারুণী,অলম্বুষা,বিশ্বোদরী ও যশস্বিনী--এই চোদ্দটি নাড়ীর মধ্যে ইড়া,পিঙ্গলা ও সুষুম্না-- এই তিন নাড়ী প্রধানা।সুষুম্না নাড়ী মূলাধার হতে উৎপন্ন হয়ে নাভিমন্ডলে যে ডিম্বাকৃতি নাড়ীচক্র আছে,তার ঠিক মধ‍্যস্থল দিয়ে উত্থিত হয়ে ব্রহ্মরন্ধ্র পর্যন্ত গমন করেছে। সুষুম্নার বামপার্শ্ব হতে ইড়া এবং দক্ষিণপার্শ্ব হতে পিঙ্গলা উত্থিত হয়ে স্বাধিষ্ঠান,মণিপুর, অনাহত ও বিশুদ্ধ চক্রকে ধনুকাকারে বেষ্টন করে ইড়া দক্ষিণ বা ডান নাসাপুট বা নাকেরগর্ত পর্যন্ত এবং পিঙ্গলা বাম নাসাপুট পর্যন্ত গমন করেছে।মেরুদন্ডের রন্ধ্র ভিতর দিয়ে সুষুম্না নাড়ী ও মেরুদন্ডের বহির্দেশ দিয়ে পিঙ্গলেড়া(পিঙ্গলা ও ইড়া) নাড়ীদ্বয় গমন করেছে।ইড়া চন্দ্রস্বরূপা, পিঙ্গলা সূর্য‍্যস্বরূপা এবং সুষুম্না চন্দ্র,সূর্য‍্য ও অগ্নিস্বরূপা,সত্ত্ব,রজঃ ও তমঃ এই ত্রিগুণযুক্ত ও প্রস্ফুটিত ধুস্তুরপুষ্পষদৃশ শ্বেতবর্ণা।*

*🍀আগের অন‍্যান‍্য প্রধানা নাড়ীর মধ্যে কুহূ নাড়ী সুষুম্নার বাম দিক হতে উঠে মেঢ্রদেশ (পুরুষের শিশ্ন)পর্যন্ত গমন করেছে।বারুণী নাড়ী দেহের ঊর্ধ্ব এবং অধঃ প্রভৃতি সর্বগায়েই (সমস্ত শরীরেই) আচ্ছাদন আছে।যশস্বিনী নাড়ী ডান পায়ের অঙ্গুষ্ঠাভাগ পর্যন্ত,পূষানাড়ী ডান চোখ পর্যন্ত, পয়স্বিনী ডান কান পর্যন্ত, সরস্বতী জিহ্বাগ্র পর্যন্ত,শঙ্খিনী বাম কান পর্যন্ত,গান্ধারী বাম চোখ পর্যন্ত, হস্তিজিহ্বা বামপদাঙ্গুষ্ঠ পর্যন্ত,অলম্বুষা বদন পর্যন্ত এবং বিশ্বোদরী উদর পর্যন্ত গমন করেছে। এইভাবে সমস্ত শরীরটি নাড়ীদ্বারা আবৃত হয়ে রয়েছে।নাড়ীর উৎপত্তি ও বিস্তার সম্বন্ধে মনঃস্থির করে চিন্তা করলে বোধ হবে।*

*কন্দমূলটি ঠিক যেন পদ্মবীজকোষের চারপাশটি কেশরের মত নাড়ীগুলি দ্বারা ঘিরে আছে ; এবং বীজকোষটির মধ‍্যস্থল হতে ইড়া, পিঙ্গলা ও সুষুম্না নাড়ী পরাগকেশরের মত উঠে পূর্বোক্ত জায়গা পর্যন্ত গমন করেছে। ক্রমে ঐ সব নাড়ী হতে শাখা-প্রশাখাসব উঠে শরীরটিকে আপাদমস্তক কাপড়ের টানা পড়িয়ানের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।*
*🍀যোগীগণ প্রধানভূতা এই চোদ্দ নাড়ীকে পুণ‍্যনদী বলে থাকেন।কুহূনামে নাড়ীকে নর্মদা,শঙ্খিনী নাড়ীকে তাপ্তী,অলম্বুশা নাড়ীকে গোমতী,গান্ধারী ধাড়ীকে কাবেরী, পূষা নাড়ীকে তাম্রপর্ণী এবং হস্তিজিহ্বা নাড়ীকে সিন্ধু বলে। ইড়া গঙ্গারূপা,পিঙ্গলা যমুধারূপা আর সুষুম্না সরস্বতীরূপিনী। এই তিন নদী আজ্ঞাচক্রের উপরে যে জায়গায় মিলিত হয়েছে, সেই জায়গার ত্রিকূট বা ত্রিবেণী।এলাহাবাদে ত্রিবেণীতে লোক কষ্টে উপার্জিত পয়সা ব‍্যায় করে কিম্বা শারীরিক কষ্ট স্বীকার করে স্নান করতে যান, কিন্তু ঐসব নদীতে বাহ‍্যস্নান করলে যদি মুক্ত হত,তবে তীর্থাদির জলে জলচর জীবজন্তু থাকত না, সবাই উদ্ধার পেত। শাস্ত্রেও ব‍্যক্ত আছে যে---*

*🌷অন্তঃস্নানবিহীনস‍্য বহিঃস্নানেন কিং ফলম্।*

*🌹অন্তঃস্নান বিহীন ব‍্যক্তির বাইরের স্নানে কোন ফল নাই।গুরুর কৃপায় যিনি আত্মতীর্থ জেনেছেন,আজ্ঞাচক্রোর্ধ্বে এই তীর্থরাজ ত্রিবেণীতে মানস স্নান বা যৌগিক স্নান করেন,তিনি নিশ্চয়ই মুক্তিপদ লাভ করেন, শিববাক‍্যে সন্দেহ নাই।*
*💮ইড়া,পিঙ্গলা ও সুষম্না এই প্রধান তিনটি নাড়ীর মধ্যে সুষুম্না সর্বপ্রধান। এর গর্ভে বজ্রাণী নামক নাড়ী আছে। ঐ নাড়ী শিশ্নদেশ হতে আরম্ভ করে শিরঃস্থান বা মাথা পর্যন্ত পরিব‍্যাপ্ত বা ছড়িয়ে আছে।বজ্রনাড়ীর প্রণবযুক্তা অর্থ‍্যাৎ চন্দ্র,সূর্য‍্য ও অগ্নিস্বরূপ ব্রহ্মা, বিষ্ণু,শিব দ্বারা আদিতে ও অন্তে পরিবৃতা মাকড়সার জালের মত অতি সূক্ষ্মা চিত্রাণীনামক আর একটি নাড়ী আছে।এই চিত্রাণীনাড়ীতে পদ্ম বা চক্রসব গ্রথিত(গাথা) রয়েছে।চিত্রাণী নাড়ীর মধ্যে আর একটি বিদ‍্যুৎবর্ণা নাড়ী আছে, তার নাম ব্রহ্মনাড়ী।ব্রহ্মনাড়ী মূলাধার পদ্মস্থিত মহাদেবের মুখবিবর হতে উঠে শিরঃস্থিত সহস্রদল পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। যথা----*

*🌷তন্মধ‍্যে চিত্রাণী সা প্রণববিলসিতা যোগীনাং যোগগম‍্যা,*
*🌷লূতাতন্তূপমেয়া সকলসরসিজান্ মেরুমধ‍্যান্তরস্থান।*
*🌷ভিত্ত্বা দেদীপ‍্যতে তদ্ গ্রনরচনায়া শুদ্ধবুদ্ধিপ্রবোধা,*
*🌷তস‍্যান্তর্ব্রহ্মনাড়ী হরমুকুহরাদাদিদেবান্তসংস্থা।।*
  *(পূর্ণানন্দ পরমহংসকৃত ষট্ চক্রনিরূপণম্, ৩)*

*🌹এই ব্রহ্মনাড়ীটি অহর্নিশ বা সবসময়ই যোগীগণের পরিচিন্তনীয়। কারণ,যোগসাধনার চরম ফল এই ব্রহ্মনাড়ীটি হতে লাভ হয়ে থাকে।এই ব্রহ্মনাড়ীর ভিতর দিয়ে গমন করতে পারলে আত্ম সাক্ষাৎকার লাভ হয় এবং যোগের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়ে মুক্তিলাভ হয়ে থাকে।এখানে কোন নাড়ীতে কিরকম বায়ু সঞ্চরণ করে জানা আবশ্যক।*

*স্বপ্নবিলাস ব্রজলীলা ৪র্থ পদ*
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆

*🌹ভক্তবৎসল শ্রীগোবিন্দ, শ্রীরাধিকার কথা শুনে প্রেমভরে বলছেন----*

*🌷শুনহ সুন্দরী মঝু অভিলাষ।*
*🌷ব্রজপুর-প্রেম করব পরকাশ।।*

*🌻হে রাইধনি! তোমার হৃদয়ের ব‍্যথার কথা শুনে আমারও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু কি করব, আমি যে তোমাদের ঋণে জর্জরিত হয়ে চরম ঋণী হয়ে গেছি, আর আগত কলিজীবের কথা চিন্তা করেও আমি স্থির থাকতে পারছি না।অন‍্যান‍্য যুগে অস্ত্র-শস্ত্র ধারণ করে অধর্মকে নাশ করে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছিলাম।কিন্তু আগত কলিজীবের স্বল্প পরমায়ু, "আমি এবে অস্ত্র না ধরিব, প্রেমভক্তি দিয়ে জীব উদ্ধারিব"।তাই আমার মনের বাসনা তোমার এই ব্রজপ্রেম আগত কলিযুগে আমি প্রকাশ করব।*
*🌻শুনহ সুন্দরী মঝু অভিলাষ।*
*🌻ব্রজপুর-প্রেম করব পরকাশ।।*

*🌷গোপ গোপাল সব জন মিলি।*
*🌷নদীয়া নগরে পরে করবহুঁ কেলি।।*

*🌹রাইধনি! আমায় কৃপা কর,ব্রজের যত গোপ-গোপাল-গোপী আছেন আমি সকলকে নিয়ে আগত কলিযুগে অবতীর্ণ হয়ে লীলাবিলাস করে সকলকে আনন্দ দিব আর কলিজীবকে উদ্ধার করব। তোমার অষ্টসখী আর চৌষট্টি মঞ্জরী আমার দ্বাদশ গোপাল আর অন‍্যান‍্য সখাগণকে নিয়ে মহানন্দ করব।তাছাড়া আমার যে গুপ্ত মনোবাসনা তা রসের ভক্তদের নিয়ে পূর্ণ করব।*
*🌻গোপ গোপাল সব জন মিলি।*
*🌻নদীয়া নগরে পরে করবহুঁ কেলি।।*

*🌷তনু তনু মেলি হোই এক ঠাম।*
*🌷অবিরত বদনে বোলব তব নাম।।*

*🌹হে প্রেমময়ী রাধে! আমার একান্ত ইচ্ছে তুমি আমি এক হয়েই আগত কলিযুগে নদীয়া নগরে অবতীর্ণ হয়ে,অবিরত, সবসময়ই এই বদনে তোমার নাম করব।*
*💮জয় রাধে রাধে,*
*💮রাধে তুমি কৃপা কর, জয় রাধে রাধে।*
*💮তোমা বিনে গতি নাই, রাধে রাধে।*
*💮প্রেমভক্তি ভান্ডারিনী, রাধে রাধে।*
*💮মঝু অভিলাষ পূর্ণকারিণী, রাধে রাধে।*
*💮জয় রাধে, জয় রাধে, জয় রাধে।*
*🌻তনু তনু মেলি হোই এক ঠাম।*
*🌻অবিরত বদনে বোলব তব নাম।।*

*🌷 ব্রজপুর পরিহরি কবহুঁ না যাব।*
*🌷ব্রজ বিনু প্রেম না হোয়ব লাভ।।*
*🌷ব্রজপুর-ভাব পূরব মন কাম।*
*🌷 অনুভবি জানল দাস বলরাম।।*

*🌻অনাদিরাদি গোবিন্দ শ্রীমতী প্রেমময়ীকে বলছেন, হে প্রেমময়ী! আমি তোমায় কথা দিলাম, আমি কখনই এই ব্রজপুর ত‍্যাগ করে কোথাও যাব না।এর প্রমাণ কি?এইকথার প্রমাণ পায় যে--*
*🌹শ্রীকৃষ্ণ দ্বাপরযুগে লীলাবিলাস করেছিলেন,আর আমরা কলিযুগে এই সমস্ত তত্ত্বগুলি আস্বাদন করছি।কি করে জানব যে তিনি ব্রজপুর ছেড়ে কখনই অন‍্যত্র যাননি।এর প্রমাণ--*
*🍀অদ‍্যাবধি রাধাকৃষ্ণ লীলা করে যায়।*
*🍀কোন কোন ভাগ‍্যবান ভাগ‍্যবতী দেখিবারে পায়।।*
*🌻ব্রজে সাধারণত দুইপ্রকার লীলার কথা শোনা যায়,নিত‍্যলীলা ও নৈমিত্তিক লীলা।নিত‍্যলীলার ক্ষেত্রে এই প্রবাদটি আছে।তাহলে শ্রীকৃষ্ণ যে বলেছেন,*
*🍀 ব্রজপুর পরিহরি কবহুঁ না যাব।*
*🌹আমি গোলোকে বহু কোটি বৎসর লীলা করেছি, কিন্তু তার থেকে সর্বোত্তম লীলা আমি মর্ত্ত‍্য বৃন্দাবনে করে আনন্দ পেয়েছি বা দিয়েছি।তাই একমাত্র ব্রজপুর ভাবই আমি নদীয়ায় গিয়ে বিতরণ করব।*
*🌻যাঁরা পরম রসিকভক্ত হন, ভাগবতচূড়ামণি হন, একমাত্র তাঁরাই শ্রীরাধাগোবিন্দের লীলা মানসনেত্রে দর্শন করতে পারেন।সেই লীলা দর্শন করে পদকর্তা সখী ভাবাবিষ্ট হয়ে বলেছেন,শ্রীকৃষ্ণই গৌররূপ ধারণ করে নদীয়ায় অবতরী হবেন।এই অনুভব আমার মনে হয়েছে।*
*🛑অতি সংক্ষেপে দুই-এক কথায় ব‍্যাখ‍্যা।*


*🌻🌻দেহতত্ত্ব বায়ুর কথা🌻🌻*
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌻

*ভৌতিক দেহে যত প্রকার শারীরিক কাজ হয়ে থাকে,তার সমস্তই বায়ুর সাহায্যে সম্পন্ন হয়।চৈতন‍্যের সাহায্যে এই জড় দেহে বায়ুই জীবরূপে সমস্ত দৈহিক কাজ সম্পন্ন করছে।দেহ কেবল যন্ত্র মাত্র। বায়ু ঐ যন্ত্র চালনা করবার উপকরণ। সুতরাং বায়ুকে বশ করবার উপায়ের নাম যোগসাধন।বায়ু বশ হলেই মনও বশ হয়,মন নিজের বশে আসিলে ইন্দ্রিয় জয় করা যায়, ইন্দ্রিয় জয় হলেই সিদ্ধিলাভের আর বাকী থাকে না। বায়ু জয় করে যাতে চৈতন‍্যস্বরূপ পুরুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ হয়, তার জন্যই যোগীগণ যোগসাধন করে থাকেন, সুতরাং সবার আগে বায়ুর বিষয় জানা ভীষণ দরকার।*
*🍀মানবদেহের অভ‍্যন্তরে হৃদ্দেশে "অনাহত" নামক একটি রক্তবর্ণ পদ্ম আছে,তার মধ্যে ত্রিকাণাকার পীঠে "বায়ুবীজ (যং)নিহিত আছে।ঐ বায়ুবীজ বা বায়ুযন্ত্র প্রাণ নামে অভিহিত হয়ে থাকে।প্রাণবায়ু শরীরের নানাস্থানে অবস্থিত থেকে দৈহিক কার্যভেদে দশ নাম ধারণ করেছে।*
*🌷প্রাণোহপানঃ সমানশ্চোদানব‍্যানৌ চ বায়বঃ।*
*🌷নাগঃ কূর্মোহথ কৃকরো দেবদত্তো ধনঞ্জয়ঃ।।*
               *(গোরক্ষ সংহিতা ১|২৯)*
*🌻প্রাণ,অপান,সমান,উদান,ব‍্যান,নাগ,কূর্ম,কৃকর,দেবদত্ত ও ধনঞ্জয় এই দশ নামে প্রাণবায়ু অভিহিত হয়ে থাকে।এই দশ বায়ুর মধ্যে প্রাণাদি পঞ্চবায়ু অন্তঃস্থ এবং নাগাদি পঞ্চবায়ু বহিঃস্থ।অন্তঃস্থ পঞ্চপ্রাণের দেহমধ‍্যে পৃথক পৃথক জায়গা নির্দিষ্ট আছে, যথা-----*
*🌷হৃদি প্রাণো বসেন্নিত‍্যমপানো গুহ‍্যমন্ডলে।।*
*🌷সমানো নাভিদেশে তু উদানঃ কন্ঠমধ‍্যগঃ।*
*🌷ব‍্যানো ব‍্যাপী শরীরে তু প্রধানাঃ পঞ্চবায়বঃ।।*
                           *(ঐ--১|৩০)*
*🌻প্রধান পঞ্চবায়ুর মধ্যে প্রাণবায়ু হৃদ্দেশে,অপানবায়ু গুহ‍্যদেশে,সমানবায়ু নাভিমন্ডলে, উদানবায়ু কন্ঠদেশে, ব‍্যানবায়ু সর্বশরীর ব‍্যাপিয়া অবস্থান করছে।*
*🛑যদিও বা বিভিন্ন নাম পেয়েছে, তথাপি এক প্রাণবায়ুই মূল ও প্রধান।*
*🌷প্রাণস‍্য বৃত্তিভেদেন নামানি বিবিধানি চ।*
                          *(শিবসংহিতা ৩|৩)*
*🌻প্রাণবায়ুর বৃত্তিভেদে নানান নাম সংকল্পিত হয়েছে।*

*🌻🌻🌻দশবায়ুর গুণ🌻🌻🌻*
*জানা আবশ্যক।প্রাণাদি অন্তঃস্থ পঞ্চবায়ু ও নাগাদি বহিঃস্থ পঞ্চবায়ু যথাস্থানে অবস্থিত থেকে শারীরিক সমস্ত কাজ সম্পন্ন করছে।যথা--*
*🌷নিঃশ্বাসোচ্ছ্বাসরূপেণ প্রাণকর্ম সমীরিতম্।*
*🌷অপানবায়োঃ কর্মৈতদ্বিন্মূত্রাদিবিসর্জনম্।।*
*🌷হানোপাদানচেষ্টাদির্ব‍্যানকর্মেতি চেষ‍্যতে।*
*🌷উদানকর্ম তচ্চোক্তং দেহস‍্যোন্নয়নাদি যৎ।।*
*🌷পোষণাদি সমানস‍্য শরীরে কর্ম কীর্তিতম্।*
*🌷উদ্গারাদির্গুণো যস্তু নাগকর্ম সমীরিতম্।।*
*🌷নিমীলনাদি কূর্মস‍্য ক্ষুত্তৃষ্ণে কৃকরস‍্য চ।*
*🌷দেবদত্তস‍্য বিপ্রেন্দ্র তন্দ্রাকর্মেতি কীর্তিতম্।*
*🌷ধনঞ্জয়স‍্য শোষাদি সর্বকর্ম প্রকীর্তিতম্।।*
               *(যোগীযাজ্ঞবল্ক‍্যম্, ৪|৬৬-৬৭)*
*🌻নাক দ্বারা হৃদয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস, উদরে ভুক্তান্ন-পানীয়কে পরিপাক ও আলাদা করা,নাভিস্থলে পুরীষরূপে, পানীয়কে স্বেদ বা ঘাম ও মূত্ররূপে এবং রসাদিকে বীর্যরূপে পরিণত করা প্রাণবায়ুর কাজ ; উদরে অন্নাদি পরিপাক বা হজম করবার জন্য অগ্নিপ্রজ্বলন করা,গুহ‍্যে মলনিঃসারণ করা,উপস্থে মূত্রনিঃসারণ করা,অন্ডকোষে বীর্যনিঃসারণ করা এবং মেঢ্র,ঊরু,জানু,কটিদেশ বা কোমরে ও জঙ্ঘাদ্বয়ের কাজ সম্পন্ন করা অপানবায়ুর কাজ। পরিপক্ক রসাদিকে বাহাত্তর হাজার নাড়ী মধ্যে পরিব‍্যাপ্ত করা, দেহের পুষ্টিসাধন করা ও স্বেদ বা ঘাম বাহির করা সমানবায়ুর কাজ।অঙ্গ-প্রত‍্যঙ্গের সন্ধিস্থান ও অঙ্গের উন্নয়ন করা উদানবায়ুর কাজ,কান,চোখ,কাঁধ,গুলফ্,গলা ও কোমরের অধোদেশের কাজ সম্পন্ন করা ব‍্যানবায়ুর কাজ।উদ্গারাদি বা বমনাদি নাগবায়ু, সঙ্কোচনাদি কূর্মবায়ু,ক্ষুধা-তৃষ্ণাদি কৃকরবায়ু, নিদ্রা-তন্দ্রাদি দেবদত্তবায়ু ও শোষনাদি কাজ ধনঞ্জয়বায়ু সম্পন্ন করে থাকে।বায়ুর এই সব গুণ জেনে বায়ুজয় করতে পারলে স্বেচ্ছামত শরীরের উপর আধিপত‍্য স্থাপন এবং শরীর সুস্থ,নীরোগ ও পুষ্টিকান্তিবিশিষ্ট করা যায়।*
*🌹শরীরে যে পর্যন্ত বায়ু বিদ‍্যমান থাকে,সেই পর্যন্ত দেহ জীবিত থাকে।সেই বায়ু দেহ হতে নিষ্ক্রান্ত(বাহির) হয়ে পুনঃ প্রবিষ্ট বা প্রবেশ না হলে মৃত‍্যু সংঘটন হয়।প্রাণবায়ু নাকের ভিতর দিয়ে আকৃষ্ট হয়ে নাভিগ্রন্থি পর্যন্ত গমনাগমন করে,আর যোনিস্থান হতে নাভিগ্রন্থি পর্যন্ত অপানবায়ু অধোভাগে গমনাগমন করে।যখন নাকের ভিতর দিয়ে প্রাণবায়ু আকৃষ্ট হয়ে নাভিমন্ডলের উর্ধ্বভাগ স্ফীত করতে থাকে,সেইকালেই অপানবায়ু যোনিদেশ হতে আকৃষ্ট হয়ে নাভিমন্ডলের অধোভাগ স্ফীত(বৃদ্ধি) করতে থাকে।এইরকম নাসারন্ধ্র ও যোনিস্থান উভয় দিক হতে প্রাণ ও অপান এই দুই বায়ুই পূরণকালে নাভিগ্রন্থিতে আকৃষ্ট হয় এবং রেচনকালে(নিঃসরণকালে) দুই বায়ু দুই দিকে গমন করে। যথা-----*
*🌷অপান কর্ষতি প্রাণং প্রাণোহপানঞ্চ কর্ষতি।*
*🌷রজ্জুবদ্ধোযথা শ‍্যেনো গতোহপ‍্যাকৃষ‍্যতে পুনঃ।।*
*🌷তথা চৈতৌ বিসম্বাদে সম্বাদে সন্ত‍্যজেদিদম্।*
                    *(ষট্ চক্রভেদটীকা)*
*🌻অপানবায়ুকে আকর্ষণ করে এবং প্রাণ অপানবায়ুকে আকর্ষণ করে।যেমন শ‍্যেনপাখী রজ্জুবদ্ধ থাকলে,উড্ডীয়মান হয়েও পুনর্বার প্রত‍্যাগমন করে,প্রাণবায়ুও সেইরকম নাকের ভিতর থেকে বাহির হয়েও অপানবায়ু কর্তৃক আকৃষ্ট হয়ে পুনর্বার দেহমধ‍্যে প্রবেশ করে।এই দুই বায়ুর বিসম্বাদে অর্থ‍্যাৎ নাক ও যোনিস্থানের অভিমুখে বিপরীত ভাবে গমনে জীবন রক্ষা হয়।আর যখন ঐ দুই বায়ু নাভিগ্রন্থি ভেদ পূর্বক একত্রে মিলিত হয়ে গমন করে,তখন তারা দেহ ত‍্যাগ করে, পৃথিবীর ভাষায় জীবেরও মৃত‍্যু হয়।গমনকালে ঐভাবকে নাভিশ্বাস বলে।বায়ুর ঐ সব তত্ত্ব জেনে নিয়ে যোগাভ‍্যাসে রত হওয়া উচিত।বর্তমান শরীরের হংসাচারের বিষয় জানা আবশ্যক।*

*🌻🌻🌻প্রাণায়াম🌻🌻🌻*
  🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹

*🍀প্রাণায়াম কাকে বলে?*
*🌷তস্মিন্ সতি শ্বাসপ্রশ্বাসয়োর্গতিবিচ্ছেদঃ প্রাণায়ামঃ।*
                *(পাতঞ্জল,সাধনপাদ,৪৯)*
*🌻শ্বাস-প্রশ্বাসের স্বাভাবিক গতি ভেঙ্গে শাস্ত্রোক্ত নিয়মে বিধৃত করার নাম প্রাণায়াম।তাছাড়া প্রাণ ও অপান বায়ুর সংযোগকেও প্রাণায়াম বলে। যথা---*
*🌷প্রাণাপানসমাযোগঃ প্রাণায়াম ইতীরিতঃ।*
*🌷প্রাণায়াম ইতি প্রোক্তো রেচকপূরককুম্ভকৈঃ।।*
               *(যোগীযাজ্ঞবল্ক‍্যম্,৬|২)*
*🌻প্রাণায়াম বললে আমরা সাধারণত রেচক,পূরক ও কুম্ভক এই তিন ক্রিয়াই বুঝে থাকি।বাইরের বায়ু আকর্ষণ করে ভেতরের অংশ পূরণ করাকে পূরক বলা হয়,জলপূর্ণ কলসীর মত অভ‍্যন্তরে বায়ু ধারণ করাকে কুম্ভক এবং ঐ ধৃত বায়ুকে বাইরে নিঃসারণ বা বাহির করাকে রেচক বলে।প্রথমে ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে ডান নাক ধারণ করে বায়ু রোধ করে প্রণব (ওঁ) অথবা নিজ নিজ ইষ্টমন্ত্র ষোড়শ বার জপ করতে করতে বাম নাক দিয়ে বায়ু পূরণ করে,কনিষ্ঠা ও অনামিকা আঙ্গুল দিয়ে বাম নাক ধরে,বায়ু রোধ করে ওঁ বা মূলমন্ত্র চৌষট্টি বার জপ করতে করতে কুম্ভক করবে।তারপরে আঙ্গুল ডান নাক হতে তুলে নিয়ে ওঁ বা মূলমন্ত্র বত্রিশবার জপ করতে করতে ডান নাক দিয়ে বায়ু রেচন করবে।এইভাবে পুনরায় বিপরীতক্রমে অর্থ‍্যাৎ শ্বাসত‍্যাগের পর ঐ ডান নাক দিয়েই ওঁ বা মূলমন্ত্র জপ করতে করতে পূরক এবং উভয় নাক ধরে কুম্ভক, শেষে বাম নাকে রেচন করবে। অতঃপর পুনরায় অবিকল প্রথমবারের মত নাকধরে ক্রমানুসারে পূরক,কুম্ভক ও রেচক করবে।বাম হাতের কররেখায় জপের সংখ্যা রাখবে।*
*🌻প্রথম প্রথম প্রাগুক্ত (আগেরমত) সংখ্যায় প্রাণায়াম করতে না পারলে, ৮|৩২|১৬ অথবা ৪|১৬|৮ বার জপ করতে করতে প্রাণায়াম করবে।অন‍্য ধর্মাবলম্বিগণ বা যাঁদের মন্ত্রজপের সুবিধা নাই,তাঁরা ১|২ এইরকম সংখ্যার দ্বারাই প্রাণায়াম করবে।নতুবা ফল হবে না।কেননা,তালে তালে নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের কাজ সম্পন্ন করতে হয়। আর সাবধান!যেন সবেগে রেচক বা পূরক না হয়,ধীরে ধীরে।রেচকের সময় বিশেষ সতর্ক ও সাবধান হওয়া কর্তব‍্য।এরকম অল্প বেগে শ্বাস ত‍্যাগ করতে হবে যে হাতের শক্তু যেন নিঃশ্বাস বেগে উড়ে না যায়। প্রাণায়ামকালীন সুখাসনে বসে মুরুদন্ড,ঘাড় ও মাথা সোজা ভাবে রাখতে হয় এবং ভ্রুর মাঝারে দৃষ্টি রাখতে হয়।ইহাকে সহিত-কুম্ভক বলে।যোগশাস্ত্রে আট প্রকার কুম্ভকের কথা উল্লেখ আছে।যথা----*
*🌷সহিতঃ সূর্যভেদশ্চ উজ্জায়ী শীতলী তথা।*
*🌷ভস্ত্রিকা ভ্রামরী মূর্ছা কেবলী চাষ্টমুম্ভিকা।।*
                 *(গোরক্ষ-সংহিতা ১|১৯৫)*
*🌻সহিত,সূর্য‍্যভেদ,উজ্জায়ী,শীতলী,ভস্ত্রিকা,ভ্রামরী,মূর্ছা ও কেবলী এই আট প্রকার কুম্ভক।◆(মৎপ্রণীত "জ্ঞানীগুরু" গ্রন্থে এই আট প্রকার প্রাণায়ামের সাধন-পদ্ধতি লিখিত হয়েছে।)*
*🍀এদের বিশেষ বিবরণ মুখে বলে কৌশল দেখিয়ে না দিলে সাধারণের কোন উপকার দর্শিবে না, তাই বিরাম রইলাম।*

*🌷ততঃ ক্ষীয়তে প্রকাশাবরণম্।*
*🌻প্রাণায়াম সিদ্ধ হলে মোহরূপ আবরণ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে দিব‍্যজ্ঞান প্রকাশিত হয়।প্রাণায়াম পরায়ণ ব‍্যক্তি সর্বরোগ মুক্ত হন। কিন্তু অনুষ্ঠানের ব‍্যতিক্রমে নানারকম রোগের জন্ম হয়। যথা----*

*🌷প্রাণায়ামেন যুক্তেন সর্বরোগক্ষয়ো ভবেৎ।*
*🌷অযুক্তাভ‍্যাসযোগেন সর্বরোগ সমুদ্ভবঃ।।*
*🌷হিক্কা শ্বাসশ্চ কাসশ্চ শিরঃকর্ণাক্ষিবেদনা।*
*🌷ভবন্তি বিবিধা দোষাঃ পবনস‍্য ব‍্যতিক্রমাৎ।।*
                       *(সিদ্ধিযোগ গ্রন্থ)*
*🌻নিয়মমত প্রাণায়াম করলে সর্বরোগ ক্ষয় হয় ; কিন্তু অনিয়মে বায়ুর ব‍্যতিক্রম হলে হিক্কা,শ্বাস,কাস ও চক্ষু-কর্ণ-মস্তকের রোগাদি নানা রোগ জন্ম হয়ে থাকে।*
                *ক্রমাগত*


*🌻🌻প্রাণায়াম (প্রত‍্যাহার)🌻🌻*
*🌷স্ববিষয়াসম্প্রয়োগে চিত্তস্বরূপানুকার,*
*🌷ইবেন্দ্রিয়াণাং প্রত‍্যাহারঃ। (পাতঞ্জল,সাধনপাদ,৫৪)*
*🌻প্রত‍্যেক ইন্দ্রিয়ের নিজ নিজ গ্রহীতব‍্য বিষয় পরিত‍্যাগ করে অবিকৃত অবস্থায় চিত্তের অনুগত হয়ে থাকার নাম প্রত‍্যাহার। ইন্দ্রিয়গণ স্বাভাবতঃ ভোগ‍্য বিষয়ের প্রতি প্রধাবিত হয়ে থাকে,(মাছ,মাংস, ডিম ও অন‍্যান‍্য মুখরুচি বিষয়ক খাবারের দিকে মন ধাবিত হয়)এই বিষয় হতে তাদেরকে* *(ইন্দ্রিয়গুলিকে)প্রতিনিবৃত্ত(বা সংযম)*
 *করাকে প্রত‍্যাহার বলে।*
*🌷ততঃ পরমা বশ‍্যতেন্দ্রিয়াণাম্।(ঐ ৫৫)*
*🌻প্রত‍্যাহার সাধনায় ইন্দ্রিয়গণ বশীভূত হয়।প্রত‍্যাহার পরায়ণ যোগী প্রকৃতিকে চিত্তের বশে আনয়ন করে পরম ধৈর্য‍্য লাভ করবেন, এতেই বহিঃপ্রকৃতি বশীভূতা হবেন। প্রত‍্যাহারের পর যোগের ষষ্ঠাঙ্গ।*

        *🌻🌻ধারণা🌻🌻*
           🍀🍀🍀🍀🍀
*🌷দেশবন্ধশ্চিত্তস‍্য ধারণা।*
               *(পাতঞ্জল,বিভূতিপাদ ১)*
*🌻চিত্তকে বা মনকে দেশবিদেশে বন্ধন করে রাখার নাম ধারণা অর্থ‍্যাৎ পূর্বোক্ত ষোড়শধারে কিংবা কোন দেব-দেবীর প্রতিমূর্তিতে আবদ্ধ করে রাখার নাম ধারণা।*
*🌹বিষয়ের চিন্তা পরিত‍্যাগ করে যে কোন একটি বস্তুতে মনকে আরোপণ করে বেঁধে রাখবার চেষ্টা করলে ক্রমশ মন একমুখী হবে।ধারণা স্থায়ী হলে ক্রমে তাহাই----- ধ‍্যান।*

          *🌻🌻ধ‍্যান🌻🌻*
            🌺🌺🌺🌺🌺
*🌷তত্র প্রত‍্যয়ৈকতানতা ধ‍্যানম্।(ঐ ২)*

*🌻ধারণা দ্বারা ধারণীয় পদার্থে মনের যে একাগ্রতা ভাব জন্মে,তার নাম ধ‍্যান।চিত্ত দ্বারা আত্মার স্বরূপ চিন্তা করাকে ধ‍্যান বলে।সগুণ ও নির্গুণ ভেদে ধ‍্যান দুইপ্রকার।*
*🍀পরমব্রহ্মের কিম্বা সহস্রারস্থিত পরমাত্মার ধ‍্যান করার নাম নির্গুণ ধ‍্যান। সূর্য‍্য,গণপতি,বিষ্ণু,শিব ও আদ‍্যাপ্রকৃতি কিম্বা ষট্ চক্রস্থিত ভিন্ন ভিন্ন দেবতার ধ‍্যান করবার নাম সগুণ ধ‍্যান। সগুণ ও নির্গুণধ‍্যান ছাড়া জ‍্যোতির্ধ‍্যান অনেকে করে থাকেন।ধ‍্যানের পরিপক্ক অবস্থায়।*

*🔵🔵🔵🔵সমাধি🔵🔵🔵🔵*
   🔷🔷🔷🔷🔷🔷🔷🔷🔷
*🌹ধ‍্যান গাঢ় হলে,ধ‍্যেয়বস্তু ও আমি এরকম জ্ঞান থাকে না। চিত্ত তখন ধ‍্যেয় বস্তুতেই প্রবেশ করে থাকে ; স্থূল কথায় তাতে লীন। সেই লয় অবস্থাকেই সমাধি বলে।*

*🌷তদেবার্থমাত্রনির্ভাসং স্বরূপশূন‍্যমিব সমাধিঃ।*
                              *(ঐ----৩)*
*🌺কেবল সেই পদার্থ(স্বরূপ আত্মা) আছেন,সেইরকম আভাস জ্ঞান মাত্র থাকবে,আর কিছু জ্ঞান থাকবে না, চিত্তের ধ‍্যেয় বস্তুতে এইরকম যে বিভোরতা,তার নাম সমাধি। জীবাত্মা পরমাত্মার সমতা অবস্থাকে সমাধি বলে।*
*🌷সমাধিঃ সমতাবস্থা জীবাত্মপরমাত্মনোঃ।*
                   *(দত্তাত্রেয়সংহিতা)*
*🌹বেদান্তমতে সমাধি দুই প্রকার। যথা-- সবিকল্প ও নির্বিকল্প।জ্ঞাতা,জ্ঞান,জ্ঞেয় এই পদার্থ তিনের ভিন্ন ভিন্ন জ্ঞানসত্ত্বেও অদ্বিতীয় ব্রহ্মবস্তুতে অখন্ডাকার চিত্তবৃত্তির অবস্থানের নাম সবিকল্প সমাধি।*
*🌹পাতঞ্জল-দর্শনে এটিই সম্প্রজ্ঞাত সমাধি নামে উক্ত আছে।*
*🍀জ্ঞাতা,জ্ঞান ও জ্ঞেয় এই পদার্থ তিনের ভিন্ন ভিন্ন জ্ঞানের অভাব হয়ে অদ্বিতীয় ব্রহ্মবস্তুতে অখন্ডাকার চিত্তবৃত্তির নাম নির্বিকল্প সমাধি।পাতঞ্জল মতে এটিই অসম্প্রজ্ঞাত সমাধি।* 

*🛑এই বক্ষ‍্যমাণ (আলোচ‍্য) অষ্টাঙ্গ যোগের প্রণালী সর্বোৎকৃষ্ট।পর পর এই অষ্টাঙ্গযোগ সাধনায় সিদ্ধিলাভ করতে পারলে মরজগতে অমরত্ব লাভ হয়।বেশী কি,কোন প্রকার ক্রিয়ার অনুষ্ঠান না করে ইহার যম-নিয়ম পালনেই প্রকৃত মনুষ‍্যত্ব জন্মে।অষ্টাঙ্গ সাধন করলে আর কি চাই?মানবজন্ম ধারণ সার্থক! কিন্তু এটি যেমন সর্বোৎকৃষ্ট,তেমনি কঠিন ও গুরুতর ব‍্যাপার।সকলের সাধ‍্যের মধ্যে পড়ে না।তাই সিদ্ধযোগীগণ এই মূল অষ্টাঙ্গযোগ হতে ভেঙ্গে গড়ে সহজ সুখসাধ‍্য যোগের কৌশল বাহির করেছেন।*


*স্বপ্নবিলাস ব্রজলীলা ৪র্থ পদ*
◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆◆

*🌹ভক্তবৎসল শ্রীগোবিন্দ, শ্রীরাধিকার কথা শুনে প্রেমভরে বলছেন----*

*🌷শুনহ সুন্দরী মঝু অভিলাষ।*
*🌷ব্রজপুর-প্রেম করব পরকাশ।।*

*🌻হে রাইধনি! তোমার হৃদয়ের ব‍্যথার কথা শুনে আমারও ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু কি করব, আমি যে তোমাদের ঋণে জর্জরিত হয়ে চরম ঋণী হয়ে গেছি, আর আগত কলিজীবের কথা চিন্তা করেও আমি স্থির থাকতে পারছি না।অন‍্যান‍্য যুগে অস্ত্র-শস্ত্র ধারণ করে অধর্মকে নাশ করে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছিলাম।কিন্তু আগত কলিজীবের স্বল্প পরমায়ু, "আমি এবে অস্ত্র না ধরিব, প্রেমভক্তি দিয়ে জীব উদ্ধারিব"।তাই আমার মনের বাসনা তোমার এই ব্রজপ্রেম আগত কলিযুগে আমি প্রকাশ করব।*
*🌻শুনহ সুন্দরী মঝু অভিলাষ।*
*🌻ব্রজপুর-প্রেম করব পরকাশ।।*

*🌷গোপ গোপাল সব জন মিলি।*
*🌷নদীয়া নগরে পরে করবহুঁ কেলি।।*

*🌹রাইধনি! আমায় কৃপা কর,ব্রজের যত গোপ-গোপাল-গোপী আছেন আমি সকলকে নিয়ে আগত কলিযুগে অবতীর্ণ হয়ে লীলাবিলাস করে সকলকে আনন্দ দিব আর কলিজীবকে উদ্ধার করব। তোমার অষ্টসখী আর চৌষট্টি মঞ্জরী আমার দ্বাদশ গোপাল আর অন‍্যান‍্য সখাগণকে নিয়ে মহানন্দ করব।তাছাড়া আমার যে গুপ্ত মনোবাসনা তা রসের ভক্তদের নিয়ে পূর্ণ করব।*
*🌻গোপ গোপাল সব জন মিলি।*
*🌻নদীয়া নগরে পরে করবহুঁ কেলি।।*

*🌷তনু তনু মেলি হোই এক ঠাম।*
*🌷অবিরত বদনে বোলব তব নাম।।*

*🌹হে প্রেমময়ী রাধে! আমার একান্ত ইচ্ছে তুমি আমি এক হয়েই আগত কলিযুগে নদীয়া নগরে অবতীর্ণ হয়ে,অবিরত, সবসময়ই এই বদনে তোমার নাম করব।*
*💮জয় রাধে রাধে,*
*💮রাধে তুমি কৃপা কর, জয় রাধে রাধে।*
*💮তোমা বিনে গতি নাই, রাধে রাধে।*
*💮প্রেমভক্তি ভান্ডারিনী, রাধে রাধে।*
*💮মঝু অভিলাষ পূর্ণকারিণী, রাধে রাধে।*
*💮জয় রাধে, জয় রাধে, জয় রাধে।*
*🌻তনু তনু মেলি হোই এক ঠাম।*
*🌻অবিরত বদনে বোলব তব নাম।।*

*🌷 ব্রজপুর পরিহরি কবহুঁ না যাব।*
*🌷ব্রজ বিনু প্রেম না হোয়ব লাভ।।*
*🌷ব্রজপুর-ভাব পূরব মন কাম।*
*🌷 অনুভবি জানল দাস বলরাম।।*

*🌻অনাদিরাদি গোবিন্দ শ্রীমতী প্রেমময়ীকে বলছেন, হে প্রেমময়ী! আমি তোমায় কথা দিলাম, আমি কখনই এই ব্রজপুর ত‍্যাগ করে কোথাও যাব না।এর প্রমাণ কি?এইকথার প্রমাণ পায় যে--*
*🌹শ্রীকৃষ্ণ দ্বাপরযুগে লীলাবিলাস করেছিলেন,আর আমরা কলিযুগে এই সমস্ত তত্ত্বগুলি আস্বাদন করছি।কি করে জানব যে তিনি ব্রজপুর ছেড়ে কখনই অন‍্যত্র যাননি।এর প্রমাণ--*
*🍀অদ‍্যাবধি রাধাকৃষ্ণ লীলা করে যায়।*
*🍀কোন কোন ভাগ‍্যবান ভাগ‍্যবতী দেখিবারে পায়।।*
*🌻ব্রজে সাধারণত দুইপ্রকার লীলার কথা শোনা যায়,নিত‍্যলীলা ও নৈমিত্তিক লীলা।নিত‍্যলীলার ক্ষেত্রে এই প্রবাদটি আছে।তাহলে শ্রীকৃষ্ণ যে বলেছেন,*
*🍀 ব্রজপুর পরিহরি কবহুঁ না যাব।*
*🌹আমি গোলোকে বহু কোটি বৎসর লীলা করেছি, কিন্তু তার থেকে সর্বোত্তম লীলা আমি মর্ত্ত‍্য বৃন্দাবনে করে আনন্দ পেয়েছি বা দিয়েছি।তাই একমাত্র ব্রজপুর ভাবই আমি নদীয়ায় গিয়ে বিতরণ করব।*
*🌻যাঁরা পরম রসিকভক্ত হন, ভাগবতচূড়ামণি হন, একমাত্র তাঁরাই শ্রীরাধাগোবিন্দের লীলা মানসনেত্রে দর্শন করতে পারেন।সেই লীলা দর্শন করে পদকর্তা সখী ভাবাবিষ্ট হয়ে বলেছেন,শ্রীকৃষ্ণই গৌররূপ ধারণ করে নদীয়ায় অবতরী হবেন।এই অনুভব আমার মনে হয়েছে।*
*🛑অতি সংক্ষেপে দুই-এক কথায় ব‍্যাখ‍্যা।*


*🌻স্বপ্নবিলাস ব্রজলীলা বিরাম পদ।*
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
*🔵শ্রীমতী রাইধনি তাঁর প্রাণনাথকে বলছেন------------*

*এত শুনি বিধুমুখী,মনে হয়ে অতি সুখী,*
        *কহে পুন প্রাণনাথ তুমি।*
*কহিলে সকল তত্ত্ব,বুঝিনু স্বপন সত‍্য,*
       *সেই রূপ দেখিব হে আমি।।*
*🌻শ্রীমতী রাধারাণী শ্রীকৃষ্ণকে বলছেন, প্রাণনাথ!আমি তোমার কথা শুনে খুবই আনন্দ পেলাম।তোমার সমস্ত কথা আমি বুঝতে পারলাম, আর এও বুঝতে পারলাম যে আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম তাহাও সত‍্য।হে প্রাণনাথ! তুমি যে রূপে নদীয়া নগরে যেতে চাও,আমি সেই রূপ পুন দেখতে চাই।*
*🌷সেই রূপ দেখিব হে আমি।।*

*আমারে যে সঙ্গে লবে,দুই দেহ এক হবে,*
        *অসম্ভব হইবে কেমনে।*
*চূড়া ধড়া কোথা যাবে,বাঁশী কোথা লুকাইবে,*
       *কালো গৌর হইবে কেমনে।।*

*🌻রাইধনি পুনঃ বললেন--, তুমি পূর্বে বলেছিলে,আমি ছাড়া এই কর্ম সম্ভব হবে না,আমাকে যে সঙ্গে নিবে,তাহলে এই দুইদেহ কেমন করে এক হবে?তা বাদেও,তোমার মাথার চূড়া,পরিধানের ধড়া,তোমার প্রাণের থেকেও বেশী তোমার বাঁশী,কোথায় লুকাবে?আরও আশ্চর্য‍্যের বিষয়! তোমার এই কালো বর্ণ গৌর অর্থ‍্যাৎ শ্বেত করবে কেমন করে?*
*🌷কালো গৌর হইবে কেমনে।।*

*🌷এত শুনি কৃষ্ণচন্দ্র,কৌস্তুভের প্রতিবিম্বে,*
            *দেখাওল শ্রীরাধার অঙ্গ।*
*🌷আপনি তাহে প্রবেশিলা,দুইদেহ এক হৈলা,*
            *ভাব-প্রেমময় সব অঙ্গ।।*

*🌻ভক্তবৎসল শ্রীকৃষ্ণ রাধারাণীর সমস্ত কথা শুনে বললেন, প্রিয়তমা একটু অপেক্ষা কর, শ্রীকৃষ্ণ তখন তাঁর বক্ষের শ্রীবৎস বা কৌস্তুভ দেখালেন, দেখামাত্র দুই দেহ এক হয়ে গেল, কালো বরণ দূরে গেল, গৌর বরণ প্রকাশ পেল।"অন্তঃকৃষ্ণ বহির্গৌর হলেন।*
*🌻শ্রীবৎস বা কৌস্তুভ সম্বন্ধে দুই একটি কথা বলি।মহাভারতে পাই--, শ্রীবৎস লাঞ্জন-- শ্রীর মানে লক্ষ্মীর, বৎস মানে প্রিয়, লাঞ্জন মানে চিহ্ন, অথবা যাঁর বৎস অর্থ‍্যাৎ "বক্ষ",শ্রীর মানে লক্ষ্মীর,লাঞ্জন মানে চিহ্ন, ধারণ করেন বিষ্ণু।বিষ্ণুর বক্ষে রোমাবর্ত বিশেষ শ্রীবৎসই কৌস্তুভমণি।*
*🌹মতান্তরে= শ্রীর মানে লক্ষ্মীর, পিতা অর্থ‍্যাৎ ভৃগু,কর্তৃক অঙ্কিত চিহ্ন যাঁর বক্ষে,তাইই শ্রীবৎস বা কৌস্তুভ।ব্রহ্মার মানসপুত্র ভৃগু, ব্রহ্মা-বিষ্ণু ও মহাদেবের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ তা জানবার জন্য প্রথমে ব্রহ্মার কাছে গিয়ে তাঁকে যথোচিত প্রণাম করেননি।অসন্তুষ্ট ব্রহ্মা তাঁকে (ভৃগুকে) খুব তিরস্কার করলে তিনি ব্রহ্মাকে স্তবস্তুতি করে শান্ত করেন।তারপরে মহাদেবের কাছেও ঐ একই ব‍্যাপার ঘটে এবং ক্রদ্ধ শিবকে তুষ্ট করে তিনি বিষ্ণুর কাছে গেলেন।সেইকালে যোগনিদ্রাভিভূত বিষ্ণুর বক্ষে ভৃগু পদাঘাত করেন।বিষ্ণু জাগরিত হয়ে ক্রদ্ধ হওয়া তো দূরের কথা, পরম ব্রাহ্মণ ভৃগুর পায়ে আঘাত লেগেছে কিনা জানবার জন্য ব‍্যস্ত হয়ে উঠেন।বিষ্ণুর ব‍্যবহারে ভৃগু অভিভূত হয়ে তাঁর চরণতলে লুটিয়ে পড়েন এবং দেবত্রয়ের মধ্যে তাঁর (বিষ্ণুর) শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করেন।বিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণ বক্ষে যে ভৃগু-পদচিহ্ন তাহাই কৌস্তুভমণি।*

*🌻সেই কৌস্তুভমণিতে দুইদেহ এক হয়ে ছিলেন।কালোরূপ লুকাইল আর গৌররূপ প্রকাশ পেল, মহাভাব প্রেমময়ী রাধারাণীর গৌরবরণ বাইরে প্রকাশ পেল।দুইদেহ এক হয়ে ভাবময় দেহে পরিণত হল।*
*🌷ভাব-প্রেমময় সব অঙ্গ।।*

*নিধুবনে এই কহে,দুহুঁ তনু এক হয়ে,*
       *নদীয়াতে হইলা উদয়।*
*সঙ্গেতে সে ভক্তগণে,হরিনাম সঙ্কীর্তনে,*
      *প্রেমবন‍্যায় জগত ভাসায়।।*
*বাহিরে জীব উদ্ধারণ,অন্তরে রস আস্বাদন,*
      *ব্রজবাসী সখা-সখী সঙ্গে।*
*বৈষ্ণব দাসের মন,হেরি রাঙ্গা শ্রীচরণ,*
        *না ভাসিলাম সে সুখতরঙ্গে।।*

*🌻দ্বাপরযুগে রাধাকৃষ্ণের দুই অঙ্গ এক হয়েছিল সেই ব্রজের নিধুবনে। তারপর দ্বারকালীলা সমাপন করে তিনি কলির প্রথম সন্ধ‍্যায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।সঙ্গে ব্রজের সখা-সখীদের নিয়েছিলেন।বাইরে জীব উদ্ধার, প্রেমভক্তি বিতরণ ও জীবশিক্ষা, অন্তরে ১২ বৎসর গম্ভীরাতে অন্তরঙ্গ ভক্তের সঙ্গে রসাস্বাদন করেছিলেন।*
*🌹ভাবাবিষ্ট পদকর্তা সখীভাবে তা দর্শন করে বলেছেন,আমি যুগলরূপ দর্শন করলাম বটে, কিন্তু আমি সেই সুখতরঙ্গে ভাসতে পারলাম না।প্রকৃত বৈষ্ণবের লক্ষণই তাই, যে রাধাগোবিন্দের লীলা যতই দর্শন করেন,ততই তাঁর লালসা বেড়ে যায়।*

*🙏স্বপ্নবিলাস ব্রজলীলা এখানেই বিরাম হ'ল।বানান ভুল ভ্রান্তি মার্জনীয়।*
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

                ꧁ শ্রীকৃষ্ণ লীলা 🙏 সূচীপত্র ꧂
           ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে 👇👇👇🙏👇👇👇 ক্লিক করুন 

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

    📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝
    ꧁👇📖 সূচীপত্র ✍️ শ্রী জয়দেব দাঁ 📖👇꧂



✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧


✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

   ✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️ 
নিবাস- বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ- বাঁশবাড়ী, থানা- ইংরেজ বাজার, জেলা- মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ, পিন কোড- ৭৩২১০১।

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

  *••••┉❀꧁👇🏠Home Page🏠👇꧂❀┅••••* 


✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

    *••••━❀꧁👇 📖 সূচীপত্র 📖 👇꧂❀┅••••* 



✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

     *••••━❀꧁👇📚 PDF গ্রন্থ 📚👇꧂❀┅••••* 


✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
    *••••┉━❀꧁ 🙏 রাধে রাধে 🙏 ꧂❀━┅••••* 
                   শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ
              হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।।
  *••••┉━❀꧁ 🙏 জয় জগন্নাথ 🙏 ꧂❀━┅••••*
              হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
              হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥
  *••••┉━❀꧁ 🙏 জয় রাধাকান্ত 🙏 ꧂ ❀━┅••••*
   🌷❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀🌷
   🏵️❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀🏵️
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧


শেষ ৩০ দিনের পোস্টের মধ্যে সর্বাধিক Viewer নিম্নে :-

শ্রীকৃষ্ণ লীলা 🙏 সূচীপত্র ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_74.html

শিবরাত্রি ব্রতকথা 🙏 ১০৮ নাম 🙏 মন্ত্র সমূহ 🙏 শিবরাত্রি ব্রত কি ভাবে পৃথিবীতে প্রচলিত হল❓শিবরাত্রি ব্রত পালনে কি ফল লাভ হয় ❓শিবরাত্রি ব্রত পালন কি সকলেই করতে পারেন ❓🙏 সকল ভক্ত 👣 চরণে 👣 অসংখ্যকোটি 🙏 প্রণাম 🙏শ্রী মৃন্ময় নন্দী 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/02/shib.html

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নৌকা গঠন তত্ব ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 https://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_22.html

🙇 রাধে রাধে 🙇 শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ 👏 হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।। 🙇 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/09/today.html

শ্রীঅম্বরীষ মহারাজের ছোট রানী 🙏 চারিযুগের ভক্তগাঁথা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/12/blog-post_97.html

মনোশিক্ষা 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 🙏 শ্রীযুক্ত প্রেমানন্দ দাস ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/jaydeb_14.html

বকরূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে চারটি প্রশ্ন করেছিলেন সেই প্রশ্নই বা কি? ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/05/blog-post_98.html

শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু 🥀 সংক্ষিপ্ত কথন 🙏 প্রথম ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/01/mohaprobhu-joydeb-dawn.html

*নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলং শুকমুখাদকমৃতদ্রবসংযুতম্।**পিবত ভাগবতং রসমালয়ং মুহুরহো রসিকা ভূবি ভাবুকাঃ।।*✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/09/blog-post_89.html

শ্রীআমলকী একাদশী ব্রতের মাহাত্ম‍্য কি ❓ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/ekadoshi.html