🚩🚩🚩🙇🙇🙇 রাধে রাধে 🙇🙇🙇🚩🚩🚩
কিছু গুরুত্বপূর্ণ তত্ব ✍️ লিখনী সেবা- শ্রীজয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/04/blog-post_27.html
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
꧁লিখনী সেবা- শ্রীজয়দেব দাঁ ꧂
নিবাস- বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ- বাঁশবাড়ী, থানা-ইংরেজ বাজার, জেলা-মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ-৭৩২১০১
লীলা কীর্তন PDF 📚 ভবিষ্যতে আরো PDF এই লিঙ্কে আপলোড করা হবে।👉 https://drive.google.com/drive/folders/1j7S6jqXPssNeUbC2Fq9lPJbN2vFwfWn3
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
꧁ টিকা বা অন্যান্য ধর্মীয় লিখনী 🙏 সূচীপত্র ꧂
এই লিংকে 👇👇👇🙏👇👇👇 ক্লিক করুন
꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*নিশি পরভাতে গোরা বসি নিরজনে*
*ছল ছল ধারা বহে অরুণ নয়নে*
*কহইতে অন্তর গদ গদ ভাষ*
*ক্ষণে কৃষ্ণ বলি গোরা ছারয়ে নিশ্বাস*
*কম্প পূলকঘন ক্ষণে চমকিত*
*হেরি সহচরগণ না বুঝয়ে রীত*
*মেঘ পানে চাহে ক্ষণে নিরখয়ে বাঁশ*
*জ্ঞানদাস কহে বাঁশী দেহ গৌরীদাস*
═══════════✧
*কলঙ্ক মোচন লীলার গৌরচন্দ্রিকা*
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*গৌরাঙ্গচাঁদের ভাব কহনে না যায়*।
*বিরলে বসিয়া পহুঁ করে হায় হায়*।।
**আজকে এই গৌরচন্দ্রিকার ভাবার্থ
একটু অন্য ভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরব।আমার দয়াল ঠাকুর, প্রেমের ঠাকুর ও করুণার সাগর গৌরহরি তিনি কি দিয়েছেন আমাদের, তারপর বিচার করি তিনি কে? কারণ তিনি কি দিলেন আগে জানা প্রয়োজন,তবেই প্রীতি জন্মাবে।
তারপরে তাঁকে জানা প্রয়োজন হবে, যখন চরম জানা হবে।কেমন?তিনি ""সর্বতত্ত্ব, সর্বাবতারের সার""। তখন সম্বন্ধ স্থাপনের প্রয়োজন হবে।তিনি কি দিলেন?যা ইতিপূর্বে কেহ দেন নাই।প্রথম থেকে বিচার করলে দেখা যায় বিদ্যা অধ্যয়ন করে শিক্ষা দিলেন, চরম বিদ্যার অধ্যয়ন করলে জ্ঞান হবে। আজ যে অহিংসা মত বলে প্রচারিত হয়, এই অহিংসা আমার নিতাই-গৌরচাঁদের প্রচার,
নিতাইচাঁদ মার খেয়ে রক্তারক্তি অবস্থায় কোলে নিয়ে জগাই-মাধাইকে প্রেম দিয়েছেন।
হিংসার প্রতিদানে হিংসা নহে প্রীতি বা
ভালবাসা প্রেমদান। এইভাবে প্রীতি দিলে তবেই সে হিংসা ভুলে যাবে, তবেই দশের কল্যাণ হবে। আজ হিংসার প্রতিদানে হিংসার জন্যই আগুন, এই আগুনে যোগ দিয়েই বিশ্ব
ধ্বংসের মুখে এগিয়ে চলেছে। আগুন দিয়ে আগুন নেভে না, জলে আগুন নেভে, এই অহিংসা প্রতিদান শিক্ষাদান করলেন আমার গৌরহরি।
মনুষ্য জনমের প্রকৃত কর্তব্য সাধন,
তিনি নিজে করিয়া শিক্ষা দিয়াছেন।
বলা যেতে পারে এসব সামান্য প্রমাণ।
বিশেষ প্রমাণ যুগধর্ম শ্রীহরি নাম-
সংকর্তন ধর্ম প্রচার নিজে আচরণ করিয়া শিক্ষা দিয়াছেন। প্রমাণ সত্যযুগে তপস্যা,ত্রেতাযুগে যজ্ঞ, দ্বাপরে অর্চনা আর -----------------------
*কলিতে হরি কীর্তন আপনি হরি হইয়া*
*হরিবলে কেঁদে কেঁদে হরি বলাইল জগৎ ভরিয়া*
আখর=তোরা হরিবল হরিবল,
কেঁদে কেঁদে বলে হরি,
তোরা ---------------হরিবল।
সব দুঃখ দূরে যাবে, হরিবল হরিবল।
মনে তোরা শান্তি পাবি,হরিবল হরিবল।
বলেন, ভাবনিধি গৌরহরি---(মাতান)
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
আজ বিশ্ববাসী সেই গৌরহরিকে জানবার জন্য হিন্দু,মুসলমান, খৃষ্টান
একমনে একপ্রাণে সেই বিশ্বম্ভর ( গৌরহরিকে) বিশেষভাবে বুঝা ও জানবার চেষ্টা করেছন। যদিও ভিন্ন ভিন্ন রুচির মানুষ, একমত,একপ্রাণে ভজা বড়ই কঠিন হলেও আজ যেন মনে হচ্ছে যে ধীরে ধীরে সেদিন ঘনিয়ে এসেছে। শ্রীমন্মহাপ্রভু নিজ মুখে বলেছেন--
*পৃথিবীর মধ্যে আছে যত দেশ গ্রাম*
*সর্বত্র প্রচার হইবেক মোর নাম*
আজ তাঁর বাক্যের সত্যতা কে করবে? যাঁকে তিনি ভার দিয়ে গেলেন
সেই জগৎগুরু নিত্যানন্দ প্রভু। একদিন গম্ভীরাতে শ্রীগৌরসুন্দর, নিতাইচাঁদের হাতে ধরে কেঁদে কেঁদে
বলেছিলেন, তুমি আমার লীলার প্রধান সহায়কারী---
*আমার বিশ্বম্ভর নাম পূর্ণ কর*
*অবিচারে নাম-প্রেম দান কর*
#####################
*বিরলে নিতাই পাইয়া*
*হাতে ধরি বসাইয়া*
*মধুর কথা কন ধীরে ধীরে*।
*জীবেরে সদয় হৈয়া*
*হরিনাম লওয়াও গিয়া*
*যাও নিতাই সুরধূনী তীরে*।।
*প্রভু কহে নিত্যানন্দ*
*জগ জীব হইল অন্ধ*
*কেহত না পাইল হরিনাম*।
*(নিতাই)এই নিবেদন তোরে*
*নয়নে দেখিবে যারে*
*কৃপা করি লওয়াও হরিনাম*।।
(অল্প পদের অংশ লিখিলাম)
সেই সময় সকলে শাক্ত পূজোয় মত্ত
হয়ে অখাদ্য ভক্ষণে প্রেমভক্তির লেশমাত্রও ছিল না।
যাইহোক, আজকাল অনেকেই প্রশ্ন করেন গৌরহরিকে ভজন করবে কেন? কৃষ্ণ-রামকে ভজিলে হবে না?
*না* *হবে না*।কারণ যে যুগের যে ভগবান তাঁকে না ভজিলে দৈত্য বা রাক্ষস বলিয়া মানি। প্রমাণ, দ্বাপর- যুগে কংস ও জরাসন্ধ প্রভৃতি বিষ্ণু
পূজো করত কিন্তু যুগাবতার শ্রীকৃষ্ণকে মানত না বলিয়াই দৈত্য বলা হয়েছে।তদ্রুপ কলিযুগাবতার
শ্রীগৌরহরি। এই গৌরহরিকে সর্ব সম্প্রদায় ও সমগ্র পৃথিবীর লোকের
জানা ও ভজনার প্রয়োজন।
*নিতাই গৌরাঙ্গ ভজ কুতর্ক ছাড়িয়া*।।
আহা এমন পরমদয়াল পতিতপাবন
মহাপ্রভু কোনযুগে কোনকালেই হয়নাই আর বোধহয় হবে কি না জানিনা!
*রাম আদি অবতারে*
*ক্রোধে নানা অস্ত্র ধরে*
*অসুরের করিল সংহার*।
*এবে অস্ত্র না ধরিল*
*প্রাণে কারো না মারিল*
*চিত্ত শুদ্ধি করিল সবার*।।
আহা-হা এমন করুণাময় মহাপ্রভুকে ছেড়ে কোথায় যাব?
*সর্ব অবতারের সার গৌর অবতার*
**শ্রীরামচন্দ্র পূর্ণ ভগবান হলেও একনাথ কেবল সীতাপতি। এই প্রসঙ্গে একটি ঘটনা বলি= যখন সীতা হরণ হলেন তখন শ্রীরামচন্দ্র সীতা বিরহে বনে বনে খুঁজে বেড়াচ্ছেন, বৃক্ষ লতা পাহাড় যাকে দেখছেন কেঁদে কেঁদে বলছেন ওগো তোমরা আমার সীতাকে দেখেছ কি?
এই অবস্থার সময় শিব-দূর্গা, ঐ পথ দিয়া যাচ্ছিলেন, পূর্ণব্রহ্ম রামচন্দ্রের
এই অবস্থা দেখে দূর্গা শিবকে বললেন, প্রাণনাথ এ কী! যে পূর্ণব্রহ্ম ভগবান,যাঁর নাম নিরন্তর আপনি জপ করেন আজ তাঁর এই দশা? তখন মহাদেব বললেন প্রিয়ে! বুঝতে পারবে না, এ আমার প্রভুর লীলা। দূর্গা মনে মনে ভাবলেন, খুব ভাল সময়, আমার স্বামী যাঁর ভজনা করেন সে পূর্ণব্রহ্ম ভগবানের এই অবস্থা। আমি যদি সীতার রূপ ধরে দাঁড়িয়ে থাকি,তাহলে সীতা মনে করিয়া আমাকে আলিঙ্গন করবেন,
তাহলে রামচন্দ্রের আলিঙ্গন পেয়ে যাব, তিনি সুখী হবেন, আমারও ইচ্ছে পূর্ণ হবে। এই আশা অন্তরে রেখে দেবী দূর্গা প্রকাশ্যে শিবকে বললেন,
আমি পরীক্ষা করব, শিব বললেন, দেবী পরীক্ষা করতে তুমি মহা সমস্যায় পড়বে।তথাপি বারণ না শুনে
ছদ্মবেশে সীতারূপ ধারণ ধরে রামচন্দ্রের আসবার পথে দাঁড়িয়ে রইলেন।রামচন্দ্র কাঁদতে কাঁদতে এসে বললেন, দেবী! আপনি এই রূপে কেন দাঁড়িয়ে আছেন?তখন দেবী লজ্জায় অন্তর্ধান হয়ে শিবের কাছে চলে এলেন।এসে বললেন কি অদ্ভুত!
এত অজ্ঞানতার সঙ্গে এত জ্ঞান, আমাকে চিনে নিলেন!তখন শিব বললেন, আমি তোমাকে আগেয় বলেছিলাম এ আমার প্রভুর লীলা।
তুমি ত শুনলে না, তুমি আমার মায়ের রূপ ধরেছিলে তাই আমি আর তোমাকে স্পর্শ করব না, অতএব রামচন্দ্র পূর্ণব্রহ্ম হলেও একনাথ, কেবল সীতাপতি, জগন্নাথ নহে।
শ্রীকৃষ্ণ পূর্ণব্রহ্ম ভগবান হলেও কেবল দুইনাথ,রাধানাথ ও গোপীনাথ,
জগন্নাথ নন।তবে জগন্নাথ কে? শ্রী-
গৌরহরি ও নীলাচলচন্দ্র জগন্নাথ হলেন জগন্নাথ। আরো প্রমাণ, বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ রাসলীলা করেছেন
কাদের নিয়ে? নিত্যসিদ্ধা,সাধনসিদ্ধা ও কৃপাসিদ্ধাদের নিয়ে, তাঁরা হলেন অধিকারী। যাঁরা গুরুজন তাঁরা বাদ।
যাঁরা পুরুষ দেহ ধারী তাঁরাও বাদ।
কিন্তু আমার গৌরহরি প্রেম দিলেন
জগতভরে। মানুষের কি কথা, ঝাড়ি
খন্ডের পথে সিংহ বাঘকেও প্রেম দিয়ে কাঁদালেন।এমন প্রেমের ভগবান
কোথায় পাবে?
যাইহোক, আমরা যেমন কলিহত পতিতজীব তেমনি সর্ব অবতার পতিতপাবন দয়াল,করুণার মূরতি নিতাই গৌর।সেই পতিতপাবন গৌরহরি কলিহত জীবের চিন্তা করে,
কলিহত জীবকে কেমন করে সুপথে এনে হরিনাম দিব এই ভাবনায়!!!!!!!
*বিরলে বসিয়া পহুঁ করে হায় হায়*
এখানে প্রমাণ যখন শ্রীবামনদেব বলিরাজার কাছে দান চাইলেন ত্রিপাদ ভূমি ও দান নেবার সময় ত্রিবিক্রম রূপ ধারণ করে দুই চরণ মর্ত্যে ও পাতালে রেখে তৃতীয় চরণটি স্বর্গের দিকে চলিল। সেটি ক্রমশঃ ভূ-
ভূব-স্ব-মহ-জন প্রভৃতি লোক ভেদ করে আট আবরণ ক্ষিতি-জল-অগ্নি-
বায়ু-আকাশ-অহংকার প্রভৃতি তত্ত্ব
ভেদ করে বিরজা বা ভবসমুদ্রের চেতন জল বামনরূপী বিষ্ণুর নখের কোণে একবিন্দু ঢুকে গেল।নখের কোণে লেগে থাকা "কারণ সমুদ্রের ঐ একবিন্দু জল হল গঙ্গা।যা মহানন্দে ব্রহ্মা নিজ কমন্ডুলে ধরে রাখলেন।আর শিব নিজ মস্তকের জটায় ধারণ করলেন।কারণ এই জল ব্রহ্মার দুর্লভ বস্তু।এই জলই ভগীরথ মর্ত্যে গঙ্গাধারা রূপে আনলেন।আর যত যত অবতার আছে সবই মহাসঙ্কষণ
বলদেবের প্রকাশ।সেই বলদেবই নিত্যানন্দ প্রভু। শেষশায়ী সঙ্কর্ষণ, অবতারী নারায়ণ,যার অংশ কলাতে গমন।অর্থ্যাৎ শ্রীকৃষ্ণ হতে কোন অবতার হয় না। সবই বলরাম মহাসঙ্কর্ষণ হতে।অর্থ্যাৎ দেখা যাচ্ছে সকলের মূল নিত্যানন্দ। তাই বৃন্দাবন দাস ঠাকুর সে মূলকে লক্ষ্য করে বলেছেন-- *গঙ্গা যার পদজল*
জীব কবে থেকে বদ্ধ হয়েছে তার কোন নির্দিষ্ট দিন নাই বলে অনাদিকাল বলা হয়েছে, ভগবান তাঁর লীলা,পরিকর,ধাম সবই নিত্য ও অনাদি। জীব দুই প্রকার হলেও তার আরো ভাগ আছে। *মুক্ত,মূমূক্ষ ও বদ্ধ*। নিত্যমুক্ত জীব নিত্যলীলায় নিত্যপরিকর সহ নিত্যসেবায় গোলোক ভূমিতে অবস্থান করেন। এঁরা সেবকতত্ত্ব, জীব সেবানন্দে সদা বিভোর। এই মুক্তেরও দুই ভাগ। মাধুর্য্যভোগী ও ঐশ্বর্যভোগী।
*মাধুর্য্যভোগী*=প্রেমভক্তি যুক্ত জীব গৌর গোবিন্দে নিজ নিজ ভাব অনুসারে দাস্য,সখ্য,বাৎসল্য ও মধুর রসে সেবারত।
*ঐশ্বর্য্যভোগী*=ঐশ্বর্য্যযুক্ত মুক্তজীব বৈকুন্ঠাদিতে ভগবৎ-ঐশ্বর্যভোগে বিভোর।
আর মায়াধীন ব্রহ্মান্ডে জীবও তিন প্রকার। মুক্ত,মূমূক্ষ ও বদ্ধ।মুক্ত যথা ঋষিদেহ, দেবদেহ প্রাপ্ত জীব।
মূমূক্ষ=শ্রীগুরু বৈষ্ণব কৃপায় যারা সাধনে উন্মুখ, এরা দুইজনেই মায়ামুক্ত হলেও এই চৌদ্দ ভূবনের মধ্যে অর্থ্যাৎ মায়ার মধ্যে থাকার জন্য উন্মুখ জীব বলা হয়েছে।যখন নিত্যলীলায় নিত্যসেবায় যুক্ত হবে তখনই পূর্ণতা বা মুক্ত আখ্যা পাবে।আর নিত্য বদ্ধ জীব মায়ার মধ্যে কামনা বাসনা যুক্ত হয়ে চৌরাশি লক্ষ যোনি ভ্রমণ করছে।(বহু তত্ত্ব এখানেই রাখলাম)
*গৌরাঙ্গে চাঁদের ভাব কহনে না যায়*
*বিরলে বসিয়া পহুঁ করে হায় হায়*
*প্রিয় পারিষদগণ পুছয়ে তাহারে*
*কহে মুই ঝাঁপ দিব যমুনার নীরে*
*করিনু দারুণ প্রেম আপনা আপনি*
*দুকূলে কলঙ্ক হৈল না যায় পরাণি*
*এত কহি গোরাচাঁদ ছাড়য়ে নিশ্বাস*
*মরম বুঝিয়া কহে নরহরি দাস*
(ভুল ভ্রান্তি মার্জনীয়,জয় নিতাই)
[5/5, 8:41 AM] Joydeb Dawn: একটু জীবতত্ত্ব নিয়ে কয়েকটি কথা শোনা যাক।কেন শুনব? কারণ আগে আত্মজ্ঞান না জন্মাইলে অর্থ্যাৎ আমি কে এই জ্ঞান না জন্মালে, আমার কি প্রয়োজন কেমন করে জানব? আর এই প্রয়োজনীয় বস্তু সম্বন্ধে জ্ঞান,কে আমাকে জানাবে? বা কার সাহায্যে ঐ প্রয়োজনীয় বস্তু প্রাপ্ত হব।যখন বুঝব জীব অণুচৈতন্য, নিত্যকৃষ্ণদাস
আনন্দকণা তখনই প্রয়োজন বোধ জাগবে।এই বোধ জাগলেই জানতে পারা যাবে বিভুচৈতন্য অনাদি-আদি শ্রীগোবিন্দ। সৎ-চিৎ-আনন্দঘনবিগ্রহ
শ্রীকৃষ্ণের সান্নিধ্য লাভ বা সেবাপ্রাপ্তি
ও গোবিন্দের সর্বশ্রেষ্ঠ স্বরূপ গৌরচরণ প্রাপ্তিই একমাত্র প্রয়োজন।
তবে অণুচৈতন্য জীবের বিভুচৈতন্য শ্রীগোবিন্দচরণ পাওয়া বড়ই কঠিন।
বহু ব্যবধান।কে যোগাযোগ বা গোবিন্দ চরণ প্রাপ্তি করাবেন? শ্রীগুরুদেব, কারণ হরি যেমন নিজের ভজন জানাতে""হর"" অর্থ্যাৎ মহাদেব হয়েছেন,তেমনি শ্রীগোবিন্দ নিজের প্রাপ্তি উপায় ও প্রেমভক্তি দানের জন্য
গুরুরূপে প্রকাশ হয়েছেন।তাই ভাগবতে,
*আচার্য্যং মাং বিজানীয়ান্নাবমন্যেত কর্হিচিৎ ন মর্ত্যবুদ্ধ্যা সূয়েত সর্বদেব ময়ো গুরু*।।(১১|১৭|২৭)
জীব কে? ও কোথা হতে প্রকাশ।
চৌরাশি লক্ষ যোনি কেন ভ্রমণ করছে
এর হাত থেকে কি ভাবে মুক্তি পাবে। এই প্রশ্নই শ্রীসনাতন গোস্বামীপাদ শ্রীমন্মহাপ্রভুকে করেছিলেন। *কে আমি কেনে আমারে জারে তাপত্রয়*
*ইহা নাহি জানি আমি কেমনে হিত হয়*
মহাপ্রভু উত্তর দিলেন----
*জীব নিত্য কৃষ্ণদাস তাহা ভুলি গেল*
*সে কারণে মায়া পিশাচী তার গলায় বাঁন্ধিল*
(যদিও ভগবান গীতায় বলেছেন)
*মমৈবাংশো জীব লোক জীবভূতঃ সনাতনঃ*
*মনঃ ষষ্ঠানীন্দ্রিয়ানি প্রকৃতিস্থানি কর্ষাতি*
(শ্রুতি বাক্য যথা)
*কেশাগ্রশতভাগ্স্য শতাংশ সদৃশাত্মকঃ*
*জীব সূক্ষ্মস্বরূপোহয়ং সংখ্যাতীতোহি চিৎকণঃ*
গীতা ও শ্রুতি বাক্যে জানা যায় শ্রীকৃষ্ণের অংশ জীব। কোন পরম ভক্তচূড়ামণি বলেছেন,হ্লাদিনীর বৃত্তিঃ
জীব অর্থ্যাৎ রাধার অংশ।কোনটি সত্য? ভগবান না ভক্তের? ভক্তের কথায় আসি,(পেট্টলে আগুন দিলে জ্বলে বটে,কিন্তু স্ফুলিঙ্গ বা কণা সৃষ্টি হয় না। কণা কখন সৃষ্টি হয়, যখন ঐ আগুনে কাঠ সংযোজন হয়।কাঠ যত বেশী জ্বলবে ততই কণা বেশী হবে।কণা যে কাঠেরই অংশ কীভাবে বুঝা যাবে?যখন স্ফুলিঙ্গ মাটিতে পড়ে নিভে যাবে,আর ঐ নিভে যাওয়া অংশের ছাই দেখে বুঝা যাবে এটি কাঠের অংশ।তদ্রুপ শ্রীমতী রাধারাণী
কাঠের মতো।আর শ্রীকৃষ্ণ অগ্নির মত। এই দুইজনের যতই মিলন হবে
ততই অনন্তকোটি জীবগণের উৎপত্তি হবে। প্রাকৃত জগতের এইযে কাঠ অগ্নি সংযোজন প্রভৃতির উপমা ইহা কেবল মূল বস্তু বুঝাবার জন্য।অপ্রাকৃত গৌর-গোবিন্দের বুঝাবার উপমা এ জগতে কিছুই নাই।এবারে গীতা ও শ্রুতির কথা বলা। শ্রীবৃন্দাবন
দাস ঠাকুর বলেছেন--
*গঙ্গা যার পদজল হর শিরে ধরে*
*হেন নিতাই না ভজে জীব দুঃখ পেয়ে মরে*
আমরা জানি পুরাণে আছে, বিষ্ণুর
চরণ হতে গঙ্গার উৎপত্তি।তবে শ্রীবৃন্দাবন দাস কী করে বললেন যে
*গঙ্গা নিতাই পদজল*। বাকী অংশ পরে।
[5/5, 8:41 AM] Joydeb Dawn: তৃতীয় পর্যায় ঃ------------------------
মাধুর্য্যভোগী = প্রেমভক্তি যুক্ত জীব গৌর গোবিন্দে নিজ নিজ ভাব অনুসারে দাস্য,সখ্য,বাৎসল্য ও মধুর
রসে সেবারত।
ঐশ্বর্য্যভোগী=ঐশ্বর্য্যযুক্ত মুক্তজীব বৈকুন্ঠাদিতে ভগবৎ-ঐশ্বর্য্যভোগে বিভোর।
**আর মায়াধীন ব্রহ্মান্ডে জীবও তিন প্রকার= মুক্ত,মুমুক্ষ ও বদ্ধ।মুক্ত যথা ঋষিদেহ,দেবদেহ প্রাপ্ত জীব।
মুমুক্ষ=শ্রীগুরু বৈষ্ণব কৃপায় যারা সাধনে উন্মুখ। এরা দুইজনেই মায়া-
মুক্ত হলেও এই চৌদ্দ ভুবনের মধ্যে
অর্থ্যাৎ মায়ার মধ্যে থাকার জন্য উন্মুখ জীব বলা হয়েছে।যখন নিত্যলীলায় নিত্যসেবায় যুক্ত হবে তখনই পূর্ণতা বা মুক্ত আখ্যা পাবে। আর নিত্যবদ্ধ জীব মায়ার মধ্যে কামনা-বাসনা যুক্ত হয়ে চৌরাশি লক্ষ যোনি ভ্রমণ করছে। আনন্দিনীর কণা হ্লাদিনীর বৃত্তি জীব।পরম ভক্তচূড়ামণি বলেছেন জীব নিত্য রাধাদাসী।রাধাদাসীত্ব না হলে গোবিন্দসেবা কী করে লাভ হবে।এর উৎপত্তি গোলোকে।নিত্যমুক্ত জীব নিত্য পরিকরত্ব লাভ করে নিত্যধামে নিত্যসেবাতে নিযুক্ত। নিত্যবদ্ধ মায়ার
ব্রহ্মান্ডে দুই ভাগে বিভক্ত।এক= সাধনায় যুক্ত,ভগবৎ উন্মুখ, আর এক
মায়ায় যুক্ত ভগবৎ বহির্মুখ।মোটকথা নিত্যধামস্থিত নিত্যপরিকর জীবকে লক্ষ্য করে এই মায়াময় ব্রহ্মান্ডের জীবসমূহ সাধনা করে নিত্যত্ব অর্থ্যাৎ
নিজের স্বরূপ প্রাপ্তি ও সেবা প্রাপ্তির জন্য চেষ্টা করে।যাঁরা নিত্যধামে আছেন তাঁরা এই মায়ার জগতে আসেন না।তাঁরা জন্ম-মৃত্যুরহিত।যদিও বা কেহ আসেন দুটি কারণে ; প্রথমতঃ শ্রীভগবান জগতে লীলা করার জন্য আবির্ভূত হলে জীব সেই লীলা দর্শনের জন্য বা ভগবানকে সেবা করবার জন্য আসেন, দ্বিতীয়ত
বদ্ধজীবকে সেবায় উন্মুখ করিয়ে ভগবৎ চরণে নিয়ে যাবার জন্য আসেন। এই যে বদ্ধজীব এর স্থিতি কারণার্ণবশায়ী প্রথম পুরুষে।ইহা ঠিক ধান চাষের মত।ধান কেটে বিক্রয় করে দিলেও প্রয়োজন মত বীজধান আগামী বৎসরের চাষের জন্য রেখে দেয়, ঠিক সেইরূপ মহাপ্রলয় হলেও সব জীব সূক্ষ্মভাবে
কারণার্ণশায়ী শ্রীভগবানের ভেতরে প্রবেশ করে।(বিষ্ণু পুরাণ দেখা যায় )
বিষ্ণু শক্তিঃ পরা প্রোক্তা ক্ষেত্রজ্ঞাখ্যা তথাপরা।
অবিদ্যা কর্মসংজ্ঞান্যা তৃতীয়া শক্তিরিষ্যতে।। ৬|৭|৬০
শ্রীবিষ্ণুপুরাণ মতে বিষ্ণুশক্তিতিন প্রকার=পরা অর্থ্যাৎ স্বরূপ শক্তি ক্ষেত্রজ্ঞা নাম্নী অর্থ্যাৎ জীবশক্তি অবিদ্যা মায়াশক্তি। আর একটি বিষয় বিষ্ণুপুরাণে আছে। আমার অংশ জীব,এর সমাধান কী?কারণ ইতিপূর্বে গীতাবাক্য জীব কৃষ্ণ অংশ ওমহাপুরুষ বাক্য জীব হ্লাদিনী রাধার অংশ, কিন্তু বিষ্ণুপুরাণের বাক্য বিচার করে দেখা যাক এবার।যেমন ধান চাষ হয়,ধান পাকলে কিছু বিক্রি করা হয় আর কিছুটা রেখে দেওয়া হয় বীজরূপে।যাহাতে এই বীজ বপন করে সামনের মরসুমে আবার ধান চাষ করা হয় তাইনা? সেইরূপ এই মায়া ব্রহ্মান্ডে চৌদ্দ ভুবনের সমস্ত জীব মহাপ্রলয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংস প্রাপ্ত জীবসমূহ কারণার্ণবশাশী
মহাবিষ্ণুর দেহে লয়প্রাপ্ত হয়।সেই পূর্ব
জন্মের কর্মফল অনুযায়ীই বা পূর্বের সেই কর্মফলের বীজ অনুসারেই ব্রহ্মান্ড মধ্যে পতিত হয়ে চৌরাশি লক্ষ যোনি ভ্রমণ করতে থাকে। সেই
ভাবেই অনাদিকাল ধরে অনন্তকাল পর্যন্ত একই ধারা বয়ে যায়।তবে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে জীবের ভাগ্য কি এমনি করেই চক্রাকারেই আবর্তিত হবে? কোন কালে কি এর পরিবর্তন হবে না? হবে= যখন শ্রীগুরুকৃপায় প্রেমভক্তি লাভ হবে তখনই জন্মমৃত্যু কবল হতে মুক্তি আসে।কী ভাবে? না
শ্রীগুরুরকৃপায় প্রেমভক্তি লাভ হয়ে নিত্যলীলায় গৌরগোবিন্দ সেবা পেয়ে গেলে পরম আনন্দ লাভ হয় ও জন্মমৃত্যু প্রবাদ রদ হয়ে যায়। তাই নিত্যানন্দ প্রভুর আবেশ অবতার শ্রী
নরোত্তম ঠাকুর বলেছেন-------------
প্রেমভক্তি হয় যদি,তবে হয় মনশুদ্ধি
তবে যায় হৃদয়ের ব্যথা।
* হৃদয়ের ব্যথা বলতে জন্মমৃত্যুর কবল হতে পরিত্রাণ।কেননা কর্মফল ভোগ না থাকলে জন্মমৃত্যু থাকে না।কর্মফলই জন্মমৃত্যুর চক্রে বাঁধা।
এই বিষয়ে আমাদের বিশেষভাবে অনুভব করতে হবে।একে লক্ষ্য করেই বিষ্ণুপুরাণে বলা হয় জীব আমারই অংশ অর্থ্যাৎ ধানের মধ্যে বীজের মতোই মহাবিষ্ণু জীবের আশ্রয়স্থান।
এই মহাবিষ্ণু কারণার্ণবশায়ী। প্রথম পুরুষ ইহারই অংশ স্বরূপ গর্ভোদকশায়ী দ্বিতীয় পুরুষ যাঁর নাভিপদ্ম হতে ব্রহ্মার উৎপত্তি ও চৌদ্দভূবনের সৃষ্টি।প্রথম পুরুষের কলা স্বরূপ তৃতীয় পুরুষ ক্ষীরোদক
শায়ী =যিনি অখিল জীব-আত্মা।
তৃতীয় এখানে থাক
[5/3, 2:00 PM] +91 70011 38871: বস্ত্র হরণলীলার কিছু
তত্ব কথন:-----------
শ্রী কৃষ্ণের সাত বৎসর বয়সে কার্তিক মাসের শুক্লা
প্রতিপদে ইন্দ্র যজ্ঞের
পরিবর্তে গোবর্দ্ধন যজ্ঞ আরম্ভ হয় এবং
শুক্লা তৃতীয়া তিথি হইতে নবমীতিথি পর্যন্ত সাতদিন তিনি
গোবর্দ্ধন ধারণ করিয়াছিলেন। সেই
বৎসরে অগ্রহায়ণ মাসে গোপের কুমারীগণ কাত্যায়নী
ব্রত করেন এবং পরের বৎসর শরৎ
পূর্ণিমায় রাসলীলায়
গোপকুমারীগণের সহিত শ্রী কৃষ্ণের মিলন হয়। অতএব
শ্রী কৃষ্ণের যখন সাত
বৎসর বয়স তখন
কাত্যায়ণী ব্রত পরায়ণা গোপকুমারী
গণ যে নিতান্তই বালিকা তাহা স্পষ্ট।
তাহলে শাস্ত্রে আছে
সাতবৎসর বালক ও
বালিকা প্রতি মদনের প্রভাব খাটে
না। সেই জন্য বালক ও বালিকাকে কুমার ও কুমারী বলা হয়।
একদিন ব্রজকুমারী
গণ ও ব্রজ মন্ডল বাসিনী গোপীগণ কোনো নির্জন স্থানে
মিলিত হইয়া পরস্পর নিজ নিজ
অন্তরের কথা বলা
বলি করছেন ও নয়ন জলে ভাসছেন,
এমন সময় বৃন্দা(বড়াইবুড়ি)
তাঁহাদের হিতাকাঙ্খী
ছদ্মবেশে এলেন,তখন গোপ
কুমারীগণ তাঁকে প্রণাম করিলেন। বৃন্দা বললেন, তোমাদের মনের কথা আমি জানতে
পেরেছি,কারণ আমি
সিদ্ধ বিদ্যা জানি। আমি যাহা বলি শ্রবণ কর,ইহাতে
তোমাদের সামান্য কষ্ট হবে বটে,তবে
তোমাদের মনের আশা পূর্ণ হবে
# কর্মে রত হইলাম#
পরে।
[5/3, 2:00 PM] +91 70011 38871: তবে আমি তোমাদের একটি মন্ত্র শিখিয়ে দিব,
সেই মন্ত্রে তোমরা ও
অন্যান্য বিধিসহ কর্ম
করিলে মানস পূর্ণ হবে। এই ব্রত এক
মাসের, ব্রতের নাম
কাত্যায়ণী ব্রত, বৃন্দা
দেবীর এই উপদেশে
গোপকুমারীগণ পরমানন্দ সাগরে নিমগ্ন হলেন এবং মনে মনে চিন্তা করলেন, এইবার আমরা শ্রীকৃষ্ণ কে
নিশ্চয় পতিরূপে পাইয়া কৃতার্থ হইব।
শ্রীকৃষ্ণেকে পাইবার
জন্য প্রবল লালসাবতী গোপকুমারীগণ গৌণ চান্দ্র অগ্রহায়ণ
মাসের প্রথম দিন থেকেই একমাস কাল প্রত্যহ কাত্যায়ণীর মহা ব্রত
অনুষ্ঠান করিয়াছিলেন।(কার্তিকী পূর্ণিমায় গৌণ চান্দ্র কার্তিক মাস শেষ হয়, তারপরদিন হইতে
অগ্রহায়ণী পূর্ণিমা পর্যন্ত গৌণ চান্দ্র অগ্রহায়ণ মাস)।
তাঁহারা প্রত্যহ সূর্য
উদয়ের চারি দন্ড পূর্বে (ব্রাহ্ম মুহূর্তে)
যমুনা তীরে উপস্থিত
হইয়া যমুনায় অবগাহন (স্নান) করেন। হেমন্তকালে
সূর্যোদয়ের পূর্বে যমুনার শীতল জলে
স্নান করা বিশেষ কষ্ট
কর হইলেও
কৃষ্ণানুরাগ বশতঃ
তাদের তাহা অনুভব
হইত না। স্নানাদি
সমাপনান্তে যমুনার
বালুকাময় স্থানে
সারি সারি উপবেশন
করিয়া বালুকা দ্বারা
কাত্যায়ণী দেবীর
প্রতিমা নির্মাণ করেন
কাত্যায়ণী পূজাদি
সমাপণ করিয়া পুনঃ
সূর্যোদয়ের পূর্বে নিজ নিজ গৃহে গমন
করেন, কিন্তু অন্য কেহ তাহা জানতে
পারিতেন না। এই ভাবেই তাঁদের একমাস পূর্ণ করতে হবে।গোপকুমারীগণ
প্রথমতঃ সেই বালুকা
ময়ী কাত্যায়ণী মূর্তি
কে চিন্ময় রূপে ভাবনা করিয়া সকলেই একই ভাবে
তাঁহাকে আহ্বান করিতেন,(শ্রীপাদ
জীব গোস্বামীর গোপাল চমপু গ্রন্থে
পাওয়া যায় গোপালের বয়স সাত বৎসর,তাহাহইলে
রাধা,ললিতা,বিশাখা
এঁদের বয়স তাঁর আশে পাশে ছিল,এত ছোট বয়সে ব্রাহ্মমুহূত্যে
যমুনায় স্নান করে একমাস কাল ব্রত করা এক মাত্র
বৃন্দাবনেই সম্ভব,তাইনা?তার
মধ্যে হেমন্তকাল বেশ শীত, যাইহোক
তাঁহাদের কৃষ্ণ প্রেমের অচিন্ত্য প্রভাবে তাঁহাদের
আরব্ধ (যা আরম্ভ বা
সূত্রপাত করা হয়েছে) কার্যের কোনো প্রকার বাধা
ঘটিল না এবং একমাস কাল কাত্যায়ণীর অর্চনা তেই তাঁহাদের মনো
বাসনা পূর্ণতা হয়েছিল।
# এখন এই পর্যন্ত।
[5/3, 2:00 PM] +91 70011 38871: তাহাদের মনে কৃষ্ণ
প্রাপ্তি ব্যতীত অন্য
কামনাযদি থাকত,
তাহা হইলে এত অল্প
সময়ে,এত অল্প বয়সে,এত অল্প দিনের মধ্যে কিছুতেই তাঁদের
মনোরথ পূর্ণ হইত
না।
০২------------------
যাহাদের কৃষ্ণ প্রাপ্তির জন্য প্রকৃত
লালসা আছে, তাঁদের কদাপি কোন
প্রকার কৃষ্ণ প্রাপ্তির
সাধনা অনুষ্ঠানে ত্রুটি,আলস্য,বা ঔদাসীন্য দেখা যায় না। যাঁদের কৃষ্ণ প্রাপ্তির জন্য প্রকৃত
আগ্রহ নেই, কেবলমাত্র মুখে"কৃষ্ণ কৃষ্ণ"এবং
আগ্রহের অভিনয় মাত্র আছে, তাঁহারাই
প্রেমের দোহাই দিয়ে
এবং কৃষ্ণ বড় দয়াময়, তাঁহার কৃপায় সবকিছু হবে,
তিনি বাহ্য কার্যের
অপেক্ষা রাখেন না, কেবলমাত্র অন্তরের
ভাব চাহেন ইত্যাদি
নানাবিধ বাক্যজাল
বিস্তার করিয়া দৈহিক আলস্য ও
আন্তরিক বিষয়া শক্তির অনুরূপ কার্য
করিয়া থাকে। যাঁদের অন্তরে প্রকৃত
কৃষ্ণ চরণ প্রাপ্তির
লালসা থাকে তাঁরা
কোনদিন কাউকেও
বাক্যজালে আবদ্ধ
করেন না।
যাইহোক গোপকুমারীগণ প্রত্যহ যেমন কাত্যায়ণী পূজার পরই নিজ নিজ গৃহে চলে যান, ব্রত শেষ
দিনে তাঁরা তাহা না করিয়া যমুনা তীরেই
রইলেন, এবং মনে মনে চিন্তা করতে লাগলেন যে,আজ ত
আমাদের ব্রত শেষ,
কিন্তু শ্রী কৃষ্ণ এসে
আমাদের মনোবাসনা পূর্ণ করলেন না।
###########
[5/3, 2:00 PM] +91 70011 38871: বাইশ খন্ড ভাগবতে
পাই, শ্রীকৃষ্ণ দাম,সুদাম,বসুদাম ও কিঙ্কিণী নামক চারজন সখা তাঁর সঙ্গে সঙ্গে যমুনায়
যাইতে আরম্ভ করিল,এই সমস্ত সখাগণ অনেক অল্প
বয়স্ক, স্ত্রী- পুরুষ ভেদজ্ঞান রহিত। ইঁহারা শ্রীকৃষ্ণকে বড়ই ভালবাসে বলিয়া সর্বদাই শ্রীকৃষ্ণের নিকট থাকে, কৃষ্ণ যখন
গোচারণ করিবার জন্য বনে গমন করেন,তখন তাঁরা
মাতৃ কোল ত্যাগ করিয়া"ভাইকানাই"
"ভাই কানাই"বলিতে বলিতে তাঁর পেছন পেছন ধাবিত হয়।
[5/3, 2:00 PM] +91 70011 38871: তখন আরেক সখী
এসে বললেন, আমাদের কাত্যায়ণীর পূজারূপ মহাযজ্ঞের
অবসান হয়েছে বটে, কিন্তু আমাদের এখনও যজ্ঞ শেষে
অবশ্য কর্তব্য (অবভৃত) স্নান করা
হয় নাই, অতএব কালবিলম্ব না করিয়া আমাদের এখনই অবভৃত স্নান
(যজ্ঞ শেষ করে যে স্নান)সমাপন করা
কর্তব্য। শুনিয়া তখন
সকল সখীগণ বুকভরা প্রেম লইয়া
চীরঘাটে গিয়ে মনে
মনে শ্রীকৃষ্ণ চরণে
প্রার্থনা জানাইলেন,
হে প্রাণ প্রিয়,আমরা
তোমার অপেক্ষায় এই যমুনা বক্ষে
অবস্থান করছি, তুমি না আসিলে আমাদের এই ব্যর্থ জীবন যমুনার জলে
বিসর্জন দিয়ে সকল
তাপ শান্তি করিব।
যমুনা কুলে আসিয়া
তাঁহারা তাঁহাদের পরিধেয় বস্ত্র উন্মোচন করিয়া যমুনাতীরে রাখিলেন এবং নগ্নাভাবে যমুনা
অবগাহন করিতে
নামলেন আর কৃষ্ণের গুণগান করতে লাগলেন। তাঁরা নবীনা বটে,তবে ভাবে নবীনা নহে। ভক্তাধীন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অন্তরে জানতে পারিয়া---
কৃষ্ণ সখাগণদের সঙ্গেনিয়ে গোচারণ
ভূমিতে চলিলেন।ঐ
দিকে যমুনায় স্নানরতা গোপকুমারীগণ মিলিত কন্ঠে কৃষ্ণ গুণগান ক্রমশ উচ্চ
হইতে উচ্চতর হয়ে
যমুনা মুখরিত হইল,আর কানন
ভূমিতে কৃষ্ণ যেবনে
ছিলেন সেই খানে
গুণগান স্বর পৌঁছল।
এইরকম অনুরাগ গীতী কর্ণ গোচর হতেই শ্রীকৃষ্ণ পরম
প্রীতি লাভ করলেন
এবং তাঁদের কাছে
যাবার জন্য অত্যন্ত
ব্যাকুল হইলেন আর
উপায় চিন্তা করিতে
লাগলেন।বনের মধ্যে গোবৎসগণ ছিল, সামনে নবতৃণ
দেখিয়া গোবৎসগণ
কে রাখিলেন,আর
বলরাম কৃষ্ণ কে
বললেন,ভাই তুই ছোট এখানেই থাক,আমি গোবৎস
দেখাশুনা করছি। বলরামের সহিত শ্রী দাম,সুদাম দাম,বসুদাম,দের নিয়ে ধেনুপালের
পাছে পাছে অগ্রসর
হলেন,আর কৃষ্ণ
গোপকুমারীগণের
মনোবাসনা পূর্ণ করি
বার জন্য যমুনার দিকে অগ্রসর হইলেন।
*******"""""""""+++
[5/3, 2:00 PM] +91 70011 38871: বস্ত্র হরণ লীলার তত্ব
দ্বিতীয়
তখন তিনি সেই বসন লইয়া কদম্ব বৃক্ষে উঠিলেন তারপর শ্রীকৃষ্ণের চার সঙ্গী অতি অট্টহাসি হাসলেন, সেই হাসিতেই কৃষ্ণের প্রতি সখী গণের নজর পড়িল।
বেলা প্রায় মধ্যাহ্ন অবসান,তারপর সখীগণ যখন যমুনা
তীরের দিকে দৃষ্টি পাত করলেন,অমনই
কদম্ব বৃক্ষে তাঁহাদের
কাত্যায়ণী ব্রতের মূর্তিমান ফল স্বরূপ
ব্রজরাজ নন্দনকে
দেখিয়া একেবারে
প্রেমাবেশে আত্মহারা হয়ে পড়লেন। এবং একে
অপরের প্রতি অনিমেষ নয়নে দেখতে লাগলেন।
তখনও সখীগণের
বসনের প্রতি নজর
যাইনি। এবার যখন
বসনের দিকে নজর
দিলেন তখন দেখলেন সেখানে বসন নেই,এবারে
চতুরের শিরোমণি
কৃষ্ণ,সখীগণ কে বল
দেন,ওগো, তোমরা
কেমন আছ? তোমরা ত বেশ গীত
গাইতে জানো, আমি
গোচারণে ছিলাম,
তোমাদের গীত শুনে
এখানে চলে এলাম।
তোমাদের বদন হতে
গীত শুনিয়া খুব মুগ্ধ হৈলাম, কৃষ্ণের এই
কথাগুলো সখী গণের কর্ণে যেন সুধা
ধারা বর্ষণ করিল। কিন্তু পরক্ষণেই বস্ত্রের কথা মনে
পড়াই সখীগণ চঞ্চল
হয়ে উঠলেন। দেখলেন শ্রীকৃষ্ণ যে
শাখায় বসেছিলেন সেই শাখাগুলোতে
সারি সারি বসন সজ্জিত আছে।তখন
সখীগণ বললেন তুমি আমাদের বসন
নিয়ে বৃক্ষের শাখায়
রেখেছ,কারণ ব্রজের সবাই জানে
তুমি নবনীত চৌর্য।
আবার পরে
[5/3, 2:00 PM] +91 70011 38871: ইঁহাদের এই শুদ্ধ ভালবাসায় মোহিত হইয়া শ্রীকৃষ্ণও ইহা
দের সঙ্গ ছাড়া করেন না। তাই এই চারজনকে কৃষ্ণ সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন যমুনার
কূলে।যে চারজনকে
নিয়ে গিয়েছিলেন,
#গৌতমীয় তন্ত্রে অর্চনা প্রসঙ্গে তাঁহাদের নাম উল্লেখ
আছে# শ্রীকৃষ্ণের
অর্চনার পর এই চার
জনকে গন্ধ পুষ্প দ্বারা অর্চনা করিবে,
এই চারজন কৃষ্ণের
মনঃ, বুদ্ধি, চিত্ত ও অহংকার রূপ চতুরবিধ অন্তঃকরণ
সদৃশ। অতএব অভেদ বুদ্ধিতে অর্চনা করা উচিত।
******************
অতঃপর শ্রীকৃষ্ণ যমুনার তীরে এসে
দেখলেন রাধা,ললিতা,বিশাখা
চিত্রা, চম্পকলতা,
তুঙ্গবিদ্যা, অঙ্গদেবী,
সুদেবী সহ অন্যান্য
গোপকুমারীগণ যমুনা বক্ষঃ আলোকিত করিয়া
জল ক্রীড়া করছেন,
এবং তাঁদের কন্ঠে
কৃষ্ণ গুণগান আকাশ বাতাস মুখরিত করে তুলেছে। শ্রীকৃষ্ণ এসে কদম্ব মূলে
দাঁড়ালেন, কিন্তু সখীগণ কৃষ্ণ গুণগানে এমনই
আত্মহারা যে তাঁরা
তাঁদের কাত্যায়ণী ব্রতের মূর্তিমান ফল
নিকটে পাইয়াও তাহা দেখিতে পাচ্ছেন না।তখন কৃষ্ণ তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিবার চেষ্টা করিলেন, কিন্তু
সখীগণ কোন ভাবেই
কৃষ্ণের প্রতি চাহিলেন না,কারণ
এতই কৃষ্ণ গুণগান
রস মগ্না হয়েছিলেন। অতঃপর কৃষ্ণ উপায়
খুঁজতে লাগলেন ও
দেখলেন যে, যমুনার তীরে শুষ্ক ভূমিতে সখীগণ কর্তৃক সযত্নে রক্ষিত বিচিত্র
বহন রহিয়াছে।
আজ এই পর্যন্তই।
[5/3, 2:00 PM] +91 70011 38871: হে ধার্মিক শিরোমণি,
আমাদের বস্ত্র দাও।
সখীগণ কত কথায় না বললেন, শ্রীকৃষ্ণ
কর্ণপাত করলেন না। তিনি কেবল এক
দৃষ্টে গোপকুমারীগণের
দিকে চেয়ে রইলেন,
এবং তাঁদের বললেন, তোমাদের সর্ব অঙ্গ কাঁপিতেছে
তোমরা আর জলে
থেকো না। তোমরা
একে একে এসে তোমাদের বসন নিয়ে যাও।
(যতক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ
আত্মসমর্পণ না হবে
ততক্ষণ পর্যন্ত কৃষ্ণ কৃপা লাভ হবে না,
জীবজগৎ কে জানানোর জন্যই
বোধহয় এই লীলা
প্রকট করেছিলেন)
শেষ অবধি কোন উপায় না দেখিয়া,
লজ্জা,ঘৃণা,ভয়,কূল,
শীল,মান,জাতি, অভিমান ত্যাগ করিয়া যমুনানীর
হতেকুলে উঠলেন,
তাদের দুই কূল বজায় রাখলেন, কৃষ্ণ ও লজ্জা।
[5/3, 2:00 PM] +91 70011 38871: শ্রী গোবিন্দের পূর্ণ আত্ম সমর্পন না হইলে যুগল চরণ প্রাপ্তি হবেনা,তবে
সখীগণে লজ্জা ত্যাগকরলেন বটে, তবুও কোথাও যেন
সংকোচ থেকে গেল, স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তাহা অন্তরে জানতে পারলেন। শ্রীকৃষ্ণ
তখন সখীগণদের
বললেন,তোমরা
কাত্যায়ণী ব্রত করিয়া যে ফল লাভের জন্য যমুনায়
অবগাহন করেছ তাহা সফলতা হয়নি।
বরণ মহা অপরাধী
হয়েছে,কেন? তোমরা যে বিবস্ত্রা হয়ে যমুনায় স্নান
করিয়াছ তাহাতে
তোমাদের জল
অধিষ্ঠাত্রা দেবতা বরুণের নিকট এবং
জলাশয়ী শ্রী নারায়ণের নিকট
অপরাধ করিয়াছ।
বিবস্ত্রা হয়ে জলে
স্নান করিলে জলধি
দেবতাকে অবজ্ঞা করা হয়। সুতরাং
এর চেয়ে মহাঅপরাধ আর কি
হতে পারে, তোমরা কি জানো জলে দেবতা অবস্থান করেন, সেই জন্য জলে থুতু,মলমূত্র ত্যাগ করতে নেই, এবং বিবস্ত্রা হয়ে
স্নান করিতে নাই।
কৃষ্ণের কথাশুনে
একসখী অন্য সখীদের বললেন,
আমাদের কাত্যায়ণীর ফল শ্রী কৃষ্ণ ছাড়া আর কিছু নয়, অতএব শ্রীকৃষ্ণ
যাহা বলিবে,আমরা
তাহাই করিব,কারণ,
আমরা কৃষ্ণ বৈ অন্য
কিছু জানি না, ধর্মা ধর্ম বুঝিনা,কেবল কৃষ্ণ বুঝি, শ্রীকৃষ্ণ যদি প্রসন্ন হন,তাহা
হইলেই আমাদের সর্ব সিদ্ধি হবে। অতএব আমাদের ভাল হোক আর যাহাই হউক, কৃষ্ণ
যাহা বলিবে আমরা তাহাই করিব।তখন
সখীগণ কৃষ্ণকে
বললেন,আমরা এই
মহাঅপরাধ হতে কেমনে মুক্ত হব? কৃষ্ণ তখন বললেন, তোমরা উর্ধ্ববাহু উত্তোলন করিয়া অর্থ্যাৎ দুই হাত তুলে
শ্রী নারায়ণ ও দেবতাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে
তোমাদের সব মহা
অপরাধ খন্ডন হবে।
অবশেষে সখীগণ তাহাই করিলেন, এবং কৃষ্ণ বললেন,
তোমরা যে আশা নিয়ে কাত্যায়ণী ব্রত
করেছিলে তাহা সফল হইল,জনম জনম,যুগ যুগ আমি
পতিরূপে রইলাম,আর আগামী বৎসর শারদ পূর্ণিমায় পূর্ণ
মনোআশা সফলতা
পাবে।
*অতি সংক্ষেপে আলোচনা করিলাম।
বিরাম।
বানান,ও ভুল ভ্রান্তি মার্জনীয়।
[5/3, 2:00 PM] +91 70011 38871: তখন কৃষ্ণ বললেন,
অযথা আমায় মিথ্যা
অপবাদ দিও না।
কারণ আমি যখন
গোচারণ ভূমি হতে
এখানে এলাম, দেখলাম সারি সারি
বসন বৃক্ষের শাখায়
রয়েছে, তোমাদের
বসন মনে করিয়া
আমি রক্ষণাবেক্ষণ
করিয়াছি,আর তোমরাই আমাকে
তোর বলছ?তখন
সখীগণ বললেন,
প্রায় বেলা যায় শীতল জল আর
সহ্য হয়না, আমাদের
বাসনগুলো দাও।
এই ভাবে বহু অনুরোধ করিলেন,
কিন্তু কিছুতেই কিছু
হইল না।
সখীগণ তখন মনে
করিলেন যে, কোন
কার্য সাধন করতে
হইলে সাম,দান,ভেদ
ও দন্ড এই চার প্রকার উপায় প্রয়োগ
করা যাইতে পারে।(এই চার প্রকারের বহু ব্যাখ্যা আছে,
সম্ভব না)
তার মধ্যে"দন্ড"প্রয়োগ
করা অবলাগণের পক্ষে সম্ভবপর নহে,সাম,দান,ও বেদ এই তিন উপায়ের মধ্যেও সাম শ্রেষ্ঠ, মিষ্ট বাক্যে তুষ্ট করিয়া কার্য সিদ্ধির
নাম সাম, মিষ্ট বাক্য
প্রয়োগে শিষ্টগণকে
যেমন তুষ্ট করা যাইবে,তেমন আর কিছুতেই করা যায় না। সুতরাং পরম শিষ্ট শ্রীকৃষ্ণেকে মিষ্ট
কথায় যেমন তুষ্ট করা যাইবে,অন্য কোন উপায়ে সম্ভব নহে। অতএব আমাদের ঠান্ডা মাথায় বিনীত ভাবে
মিষ্ট কথায় বসন চাহিতে হবে। অতঃপর সখীগণ করজোড়ে মধুর স্বরে বসন চাইলেন।
বললেন আমরা তোমায় বড়ই ভালবাসি, তুমিও গোপবালক, আমরাও গোপবালিকা, আমাদের ধর্ম লজ্জাদি রক্ষা করাই
তোমার কর্তব্য। কারণ তুমি রাজপুত্র
সখিগণ এত মিষ্ট ভাবে কথা বলেও
কোন কর্ম হইল না।
এবারে সখীগণ"দান"
উপায় অবলম্বন করিলেন। বললেন
আমরা তোমার দাসী
হইয়া তোমার সর্ব
বিধ আজ্ঞাপালন
করিব, তুমি আমাদের বসন ফেরৎ দাও।তাহাতেও কোন কার্য
সাধন হইল না।তখন
তাঁরা"ভেদ"উপায় প্রয়োগ করিয়া বললেন,তুমি যদি আমাদের বসন ফেরৎ না দাও,তাহা
হইলে গোপরাজনন্দ
বা ক্ংসের নিকট তোমার সব কথা বলব।ভয় প্রদর্শন বাক্যকেই ভেদ বলাহয়। পরলোকের ভয়,ইহলোকের ভয়
প্রদর্শন করিলেন।
#আপাতত এই পর্যন্ত।
[5/3, 2:01 PM] +91 70011 38871: শ্রী গোবিন্দের পূর্ণ আত্ম সমর্পন না হইলে যুগল চরণ প্রাপ্তি হবেনা,তবে
সখীগণে লজ্জা ত্যাগকরলেন বটে, তবুও কোথাও যেন
সংকোচ থেকে গেল, স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তাহা অন্তরে জানতে পারলেন। শ্রীকৃষ্ণ
তখন সখীগণদের
বললেন,তোমরা
কাত্যায়ণী ব্রত করিয়া যে ফল লাভের জন্য যমুনায়
অবগাহন করেছ তাহা সফলতা হয়নি।
বরণ মহা অপরাধী
হয়েছে,কেন? তোমরা যে বিবস্ত্রা হয়ে যমুনায় স্নান
করিয়াছ তাহাতে
তোমাদের জল
অধিষ্ঠাত্রা দেবতা বরুণের নিকট এবং
জলাশয়ী শ্রী নারায়ণের নিকট
অপরাধ করিয়াছ।
বিবস্ত্রা হয়ে জলে
স্নান করিলে জলধি
দেবতাকে অবজ্ঞা করা হয়। সুতরাং
এর চেয়ে মহাঅপরাধ আর কি
হতে পারে, তোমরা কি জানো জলে দেবতা অবস্থান করেন, সেই জন্য জলে থুতু,মলমূত্র ত্যাগ করতে নেই, এবং বিবস্ত্রা হয়ে
স্নান করিতে নাই।
কৃষ্ণের কথাশুনে
একসখী অন্য সখীদের বললেন,
আমাদের কাত্যায়ণীর ফল শ্রী কৃষ্ণ ছাড়া আর কিছু নয়, অতএব শ্রীকৃষ্ণ
যাহা বলিবে,আমরা
তাহাই করিব,কারণ,
আমরা কৃষ্ণ বৈ অন্য
কিছু জানি না, ধর্মা ধর্ম বুঝিনা,কেবল কৃষ্ণ বুঝি, শ্রীকৃষ্ণ যদি প্রসন্ন হন,তাহা
হইলেই আমাদের সর্ব সিদ্ধি হবে। অতএব আমাদের ভাল হোক আর যাহাই হউক, কৃষ্ণ
যাহা বলিবে আমরা তাহাই করিব।তখন
সখীগণ কৃষ্ণকে
বললেন,আমরা এই
মহাঅপরাধ হতে কেমনে মুক্ত হব? কৃষ্ণ তখন বললেন, তোমরা উর্ধ্ববাহু উত্তোলন করিয়া অর্থ্যাৎ দুই হাত তুলে
শ্রী নারায়ণ ও দেবতাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে
তোমাদের সব মহা
অপরাধ খন্ডন হবে।
অবশেষে সখীগণ তাহাই করিলেন, এবং কৃষ্ণ বললেন,
তোমরা যে আশা নিয়ে কাত্যায়ণী ব্রত
করেছিলে তাহা সফল হইল,জনম জনম,যুগ যুগ আমি
পতিরূপে রইলাম,আর আগামী বৎসর শারদ পূর্ণিমায় পূর্ণ
মনোআশা সফলতা
পাবে।
*অতি সংক্ষেপে আলোচনা করিলাম।
বিরাম।
বানান,ও ভুল ভ্রান্তি মার্জনীয়।
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: নৌকা গঠন তত্ব দ্বারা।----------------
শ্রী গোবিন্দ আমার
সখাদের সঙ্গে গো-
চারণ করিতে করিতে সেই কথা
মনে পড়েছে, কোন কথা,গোলোক বৃন্দা-
বনের কথা,ভাই সুবলকে ডেকে বল-
লেন,ওরে ভাই সুবল
সখা,আজ আমি যমুনার মনোআশা
পূরণ করিব। তুই দাদা বলরামকে সাথে নিয়ে গোচারণ
কর, আমি চলিলাম।
কৃষ্ণ মনে মনে ভাব-
ছেন নৌকা বিহার
করিবার জন্য একটি
নৌকার প্রয়োজন, নৌকা এখন কোথায়
পাবো! শ্রীকৃষ্ণের মা
যোগমায়ার কথা মনে পড়ে গেল,মা
যোগমায়াকে স্মরণ
করলেন।(আপনারা
আপনাদের মত করিয়া যোগমায়া
স্মরণ করিবেন)
শ্রীকৃষ্ণের আহ্বানে
মা যোগমায়া তপন
তনয়া তটে উপনীত
হইলেন। কৃষ্ণ বললেন বড় বিপদে
পড়িয়া তোমায় আহ্বান করেছি। আমার একটি তরীর
প্রয়োজন, যোগমায়া
বললেন কি হবে তরী? আমি তরী লয়ে রাধারাণী কে
সঙ্গে নিয়ে বিহার করিব। যোগমায়া বললেন কান্ডারী কে
হবে? শ্রীকৃষ্ণ বললেন আমি হব,
যোগমায়া বললেন,
তুমি যদি কান্ডারী হও তবে আমি তরী
হব। আমার বক্ষে
তোমরা বিহার করবে।
**তুমি যদি হও কান্ডারী,
আমি হব দেহ তরী,
ভাসিব যমুনার জলে, আমি ভাসিব-
যমুনার জলে।
আঃ-আমি ভেসে ভেসে বেড়াব,
আমি রাধাশ্যামে বক্ষে লয়ে,ভেসে-----
জয়রাধে গোবিন্দ বলে।
#নৌকা তৈরী করিতে হইলে প্রথমে
নৌকার দুই দিকের
দুই মাথাকে সমান
করে সুন্দর করে তৈরি করতে হবে।
যেন দুই দিক ছোট
বড় না হয়, যদি হয়
নৌকা অনিয়ন্ত্রিত
হয়ে যাবে। এই দুই
মাথাকে বলা হয়
গলুই।তাহলে দুই দিকের দুই মাথা কি?
*পদ-- বিবেক বৈরাগ্য দিয়ে দু'গলুই
করিল।
তাহলে এই দুই গলুই
হচ্ছে বিবেক বৈরাগ্য
আঃ- সাধনার আগে
লাগে,বিবেক আর
বৈরাগ্য, সাধনার----
পরে লিখিব
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: অতি সংক্ষেপে বিবেকের ব্যাখ্যা,
বিবেক মানে- মানব
হৃদয়ের মধ্যে থাকিয়া যে অনির্বচনীয় পদার্থ
মানুষকে সৎ কাজে
উৎসাহ এবং কূকাজে নিরুৎসাহ
দান করে,বা অন্তরের মধ্যে সৎ
কার্য হেতু সন্তোষ
এবং কূ কার্য হেতু
গ্লানি উৎপাদন করে
তাহাই বিবেক।
যেমন-- নিত্যানিত্য
বস্তু বিচারা বিবেকাঃ।
তাহলে,উভয়ই স্থূল
জগতের বস্তুকে অসার জানিয়া তৎ-
প্রতি আশা বা অভি-
লাষ ত্যাগ,ইহা প্রধানতঃ সংসারের
অনিত্যতা, আবার
প্রকৃতি হইতে পুরুষ,
জগৎ হইতে ব্রহ্ম,
অসৎ হইতে সৎ,
পৃথক করণ সম্যক
বিচার জনিত জ্ঞান,
এবং মিথ্যার প্রতি
অনাসক্তির ভাব বোধক, হিতাহিত
বিবেচনা,ইহাই বিবেক।
বৈরাগ্য--বিষয়ের প্রতি অনাসক্ত, সংসার ত্যাগ,লোভ-
লালসা বিহীন, এমন
কি আত্ম বান্ধবদের
মুখ দর্শন না করা।
আচার ব্যবহারে
সম্পুন্ন রূপে সততা
আনা,বদনে সদাই
হরিনাম কীর্তন।
*আচারে বিরাগ হলে
বৈরাগ্য গণন।
বৈরাগ্য না হয় শুধু
কৌপিন ধারণ।।
না থাকে প্রকৃতি সঙ্গ
নাহি করে গৃহ।
সেই সে বৈরাগ্য ধর্ম
অবশ্য জানিস।।
সপ্ত গৃহে ভিক্ষা মাত্র
জীবন রক্ষণ।
সংক্ষেপে ইহলিখি
বৈরাগ্য লক্ষণ।।
সদা সর্বদা যুগল চরণের চিন্তনের মধ্যেনিজেকে মগ্ন
রাখা,দেহ স্বরূপ তরী
টি যেন এমন বিবেক
বৈরাগ্য দ্বারা গঠন হয়,তবেই তো মানব জন্ম সফল।
পদ-- ধৈর্য্য তাহার উপর দাঁড়া করিল।।
আঃ- প্রাণে ধৈরজ
থাকা চাই,
ধরবে যদি প্রাণের কানাই, প্রাণে--------
নৌকার এই মাথা থেকে ঐমাথা পর্যন্ত
যে মোটা কাষ্ঠ থাকে
তাকে বলে দাঁড়া।
দাঁড়া মানে শিরদাঁড়া,
যেমন আমাদের দেহ
কে শিরদাঁড়া সোজা করে রেখেছে, তেমনি নৌকার দুই মাথা ধরে রাখে ধৈর্য্য।
ধৈর্য্য তাহার উপর দাঁড়া করিল।
ধৈর্য্যের ব্যাখ্যা নিজের মত করিয়া
দিবেন।
*ধৈর্য্য না থাকিলে কোন কর্ম সম্পুন্ন হয় না।
আবার পরে লিখিব
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: পদ- মন রূপি পাল তাহে উড়াইয়া দিল।
সাধুসঙ্গ কানি দড়ি
চৌদিকে আটিল।।
নৌকার পালখাটাতে
হবে,পাল কি?
মনরূপি পাল।
আঃ-রাধা নামের মন
তাহে উড়াইয়া দিল,
আর, যমুনার কালো
জলেভাসিতে লাগিল।
তাহলে পাল টাঙ্গাতে
হইলে দড়ি লাগবে,
দড়ি কি?
সাধুসঙ্গ কানি দড়ি
চৌদিকে আটিল।
এই কানি দড়ি মানে
নৌকার কানায় কানায় দড়ি বাধা।
সাধুসঙ্গ- ভগবত ভজন পরায়ণ মহৎ
ব্যক্তিকে সাধু বলে,
সাধুসঙ্গের প্রভাবে
সাধুদিগের মুখে ভক্তি মাহাত্ম্য শুনিয়া
তাহাতে দৃঢ় বিশ্বাস
জন্মালে,জীব ভজনে
প্রবৃত্ত(রত)হয়।ভজন
করিতে করিতে অনর্থ নিবৃত্তি হইয়া
গেলে যথা সময়ে তাহার চিত্তে কৃষ্ণ প্রেম উদিত হয়, এবং আনুষঙ্গিক ভাবে তাঁর সংসার
বন্ধন দূর হয়ে যায়,
*সাধু সঙ্গে কৃষ্ণ ভক্তে শ্রদ্ধা যদি হয়*।
*বিবেক, বৈরাগ্য, ধৈর্য্য,লালসা,মন,
বিশাল ব্যাখ্যা আছে*
এই ভাবে নৌকা গঠন করা হইল,
নৌকাটি সাজাতে হবে,
সৃজিল তরণী খানি,
প্রবাল মুকুতা আনি,
মাঝে মাঝে হীরার
গাঁথুনি।
*এই মুক্তা কোথা থেকে এনেছে?
সাতাশ নক্ষত্রের মধ্যে যে স্বাতী নক্ষত্র
আছে, সেই নক্ষত্রের
জল যে ঝিনুকের মধ্যে পড়ে, সেই
ঝিনুকে যে মুক্তো হয়
সেই মুক্তো নৌকায়
সাজানো ছিল, সেই
মুক্তো ইহলোকে বড়ই বিরল।
বানান, ভুল ভ্রান্তি মার্জনীয়।
অতি সংক্ষেপে তুলে
ধরলাম।
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: আমাদের শরীরে যে শিরদাঁড়া রয়েছে তাহা আমাদের সোজা করিয়া রাখে,
শিরদাঁড়া যদি একটু
বাঁকা হয়ে যায়, তাহলেই আমার সোজা হয়ে চলতে পারব না।তেমনি নৌকা গঠনের জন্য
দুই দিকের যে লম্বা
কাঠ ,একটু হয়ে গেলে নৌকা সোজা
চলবে না।সমত্ব চাই।
#সমত্ব সম্পর্কে কয়েকটি কথা।
আজকাল সম ব্যবহার নিয়ে খুব তর্ক করা হচ্ছে। কিন্তু সমত্ব কাকে
বলে এবং তাহা কেমন করে আসে
বাস্তবিক এটি বুঝার
প্রয়োজন আছে।সমত্ব কোন ছেলে খেলা নহে,এটি পরম
আত্মার সাক্ষাৎ স্বরূপ।যার মন সমত্বে স্থির হয়, তিনি
জীবিত অবস্থায় জগতে বিজয় লাভ করেন, এবং পরমাত্মাকে অনুভব
করেন (গীতা-৫/১৯)
এই সমত্বভাব তখনই
আসে,যখন অপরের
দুঃখ নিজ দুঃখ, অপরের সুখ নিজ
সুখ বলিয়া মনে হয়।
গীতায় ভগবান বলেছেন,হে অর্জুন!
যে ব্যক্তি নিজ শরীরের ন্যায় আমাকে সবকিছুতেই সমান
দেখে এবং সুখ ও
দুঃখ কে সর্বত্র সম
ভাবে দেখে, তাঁকেই
পরম শ্রেষ্ঠ যোগী বলিয়া মান্য হয়।(৬/৩২)
পদ-- আসক্তির তক্তা আনি তাহাতে
জুড়িল।
আসক্তি কি? চৈতন্য
চরিতামৃতে পায়----
কোন ভাগ্যে কোন
জীবের শ্রদ্ধা যদি হয়।
তবে সেই জীব সাধু
সঙ্গ যে করয়।।
সাধুসঙ্গ হৈতে হয়
শ্রবণ কীর্তন।
সাধন ভক্তে হয় সর্বানর্থ নিবর্তন।।
অনর্থ নিবৃত্তি হৈতে
ভক্তে নিষ্ঠা হয়।
নিষ্ঠা হৈতে শ্রবণাদ্যে
রুচি উপজয়।।
রুচি হৈতে ভক্তে হয়
আসক্তি প্রচুর।
আসক্তি হৈতে চিত্তে
জন্মে কৃষ্ণে প্রীত্যঙকুর।।
*তাহলে প্রথমে শ্রদ্ধা,
শ্রদ্ধা হইতে সাধুসঙ্গ,
সাধুসঙ্গ হৈতে ভজন,
ভজন থেকে বিঘ্ননাশ, বিঘ্ননাশের
পর নিষ্ঠা, নিষ্ঠার পর
রুচি,রুচি হৈতে আসক্তি।
সেই আসক্তির তক্তা।(বুঝা গেল)
*আমাদের এখনো
মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাই
আসে নাই, আসক্তি তো বহু বহুদূর,তাইনা?
পদ-- আসক্তির তক্তা আনি তাহাতে জুড়িল।
লালসার পাতান লোহা তাহাতে গড়িল।।
নববিধা ভক্তি দিয়া
নয়টি গুড়া দিল।
আজ এখানে থাকতো।
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: শ্রীকৃষ্ণের মান । গৌরচন্দ্রিকা।
অর্ন্তে কৃষ্ণ বর্হির গৌর যেই পরে মনে।
আপনা আপনি গৌর
ধরয়ে চরণে।।
আপনি করিয়া মান
পালটী বৈঠল।
আপনার চরণ ধরি
সাধিতে লাগিল।।
ভাবেতে বিভোর গোরা পূরবের ভাবে।
সহচর গণ কিছু কহিছেন তবে।।
বাসুদেব ঘোষ কহে
মনের হরিষে।
মান ভাব গোরা চাঁদ
করিলা প্রকাশে।।
ব্রজলীলা।
গুরুজনের মর্যাদা রক্ষার উদাহরণ স্বরূপ উজ্বলনীল-
মণিতে বর্ণিত আছে,
বৃন্দা বিরহ ব্যাকুলা
শ্রীরাধিকাকে অভিসারের জন্য
অনুরোধ করিলে
শ্রীমতী রাধারাণী
বলিয়াছিলেন,ব্রজেশ্বরী(যশোদা)আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। গুরুজনের আজ্ঞা অবজ্ঞা করিলে কাহারও মঙ্গল হয় না। শ্রীকৃষ্ণ এই সংবাদ না জানিয়া
মান করিয়াছিলেন।
পদকর্তা এই পদে
তাঁহারই ইঙ্গিত করিয়াছিলেন।
*শ্রীকৃষ্ণ রাধারাণীকে নির্দিষ্ট
স্থানে যাইবার জন্য
সঙ্গেত করিয়াছিলেন
কিন্তু মা যশোমতী নিজগৃহে রাধাকে ডেকে পাঠিয়ে ছিলেন।তাই সঙ্গেত
স্থলে রাধা যাইতে
না পারিবার জন্যই
শ্রীকৃষ্ণের মান।
আপাতত এই টুকু।
পদ পরে পাঠাচ্ছি।
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: পাতান লোহা- মানে
ইউ ধরণের যে পেরেক হয়,তাহাই পাতান লোহা।
আঃ-লালসা তো যায় না, সৎ ভাবনা
চলে যায়,লালসা----
*ত্রিবিধং নরকস্যেদং দ্বারং নাশনমাত্মনঃ।
কামঃ ক্রোধস্তথা লোভস্তাদেতৎ ত্রয়ং
ত্যজেৎ।।
মানে-- কাম, ক্রোধ তথা লোভ(ইদম্,ত্রিবিধম্)
এই তিনটি নরকস্য,
দ্বারম(নরকের দ্বার স্বরূপ) আত্মনঃ,নাশনম্
(জীবাত্মার পতন কারক)তস্মাৎ(সুতরাং)এতৎ, ত্রয়ম্(এই
তিন টিকে ত্যজেৎ
(ত্যাগ করা উচিত)
কাম, ক্রোধ,ও লালসা,নরকের দ্বার
রূপ এই তিনটি।
যাইহোক,লালসা কেমন, গাড়ী হোক,
বাড়ী হোক, পুত্র কন্যার চাকরি হোক,
এই লালসা বহির্জাগতিক, প্রকৃত
যদি লালসা করতে হয় তবে শ্রী গুরু, গোবিন্দের লালসা
কর,একবার যদি শ্রী
চরণ আশ্রয় করতে
পারো , বহির্জাগতিক
লালসা তুচ্ছ হয়ে যাবে। সেই লালসার
পাতান লোহা তক্তায়
জুড়িল। পূর্ণ একটি
খোল তৈরী হয়েগেল।
পদ-- নববিধা ভক্তি দিয়া নয়টি গুড়া দিল।
আঃ- নববিধা ভক্তি,
কৃষ্ণ প্রেমে ধরে শক্তি,(নববিধা ভক্তির নয়টি কি কি
নিশ্চয় জানা আছে)
নয়টি তক্তা দিয়ে নৌকায় বসিবার জায়গা করা হইল।
পদ-- সরল সুবুদ্ধি দিয়ে মাস্তুল গড়িল।
*মাস্তুল কি- পাল তুলে দেবার জন্য নৌকার সংলগ্ন কাষ্ঠ
স্তম্ভ বিশেষ (গুণ বৃক্ষ)
আঃ- সরলতা থাকা
চাই,পেতে যদি চাও
কানাই,সরলতা-----
তোমরা, হিংসা দ্বেষ
ফেল
তাই,সরলতা---
সরল বুদ্ধি কি- অত্যন্ত সহজ সরল
ভাবে যদি ভগবানের
সাধন ভজন করা যায়,তবেই ঈশ্বরের
ভজনের অধিকারী
হওয়া যায়,মনে হিংসা, পরশ্রীকাতরতা নিয়ে
হয় না।
############
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: ১পদ,
সখির উক্তি রাধার প্রতি।
শুন সখী বুঝল বচন তোহারি।
নন্দ মন্দিরে গেলি
সংকেত ছোরি।।
অতএ সে নাগর
করহুঁ মান।
মোরি বচনে সখী
করু অবধান।।
চল তুহুঁ লে চলু
সংকেত ঠাম।
নাগর পূরব মনোরথ
কাম।।
মান তেজব হরি ইথে
নাহি বাধ।
তুহুঁ ধনি ছোড়হ নিজ
মরিয়াদ।।
দাস হরেকৃষ্ণ অব
রস জান।
অহেতু কানু করল
তোহে মান।।
*রাধারাণীর উক্তি।
২,সজনী মৌনী পেখলুঁ কাহে কান।
হেরি মধু বদন,
পালটী মুখ বঙ্কিম,
কাহে করল নাহি জান।।
বহু বিধ ভাবি,
অন্ত নাহি পাওল,
কিয়ে ইথে আছয়ে বিশেষ।
যব হাম মান,
করল হরি সঙ্গতি,
তব নাহি কৈল এতদেশ।।
যো হরি লাগি,
সহই গুরু গঞ্জন,
গৃহপতি মতি ভেল আন।
সো পহুঁ এত মুঝে,
মান করব সখী,
সপনেও না ছিল ভান।।
কহে হরেকৃষ্ণ,
ভাব না বুঝয়ে,
হরিপদে সঁপি নিজ দেহ।
ধিক ধিক জীবন,
নারীক যৌবন,
যাকর পরবশ নহে।।
৩,রাইর মুখেতে,
দুখের কথনা,
শুনি প্রিয় সখী যান।
ঈষত হাসিয়া,
সকলে ত্বরিতে,
ভাঙ্গাইতে কানু মান।।
বিদগধ হইয়া,
কি দোষ দেখিয়া,
বাঁকা কৈলে নিজ মুখ।
রাই পালটিয়া,
গমন করিলা,
মরমে পাইয়া দুখ।।
দূতীর চাতুরী,
বুঝিয়া কংসারি,
মান মন কথা কয়।
কহে হরেকৃষ্ণ,
সখীর বচনে,
রাইরে সদয় হয়।।
৪,করতল কমল নয়ন ঢর নীর।
ন চেতএ সঁভরণ
কুন্তল চীর।।
তুঅ পথ হেরি হেরি
চিত নাহি থির।
সুমরি পূরুব নেহা
দগধ শরীর।।
কতে পরি মাধব
সাধব মান।
বিরহী জুবতী মাঁগ
দরসন দান।।
জল মধে কমল গগন মধে সূর।
আতর চাঁদ হুঁ কুমুদ
কত দূর।।
গগন গরজ মেঘা
শিখর ময়ূর।
কতজন জানসি নেহ
কত দূর।।
ভণই বিদ্যাপতি
বিপরিত মান।
রাধা বচনে লজাএল
কান।।
ভাবার্থ;---করতলে মুখ কমল(বিন্যস্ত)
নয়ন অশ্রুপূর্ণ, অলঙ্কার কেশ ও বসন সম্বন্ধে চেতনা
নাই। তোমার পথ চাহিয়া চাহিয়া চিত্ত
অস্থির, পূর্বপ্রেম স্মরণ করিয়া (শ্রীরাধার দেহ দগ্ধ
হইতেছে)মাধব,কি
প্রকারে মান সাধিবে?বিরহিনী যুবতী(রাধারাণী) দর্শন দান চাহিতেছে
জলের মধ্যে পদ্ম,
আর গগনের মাঝে
সূর্য্য থাকে, চাঁদে কুমুদে কতদূর অন্তর
মেঘ গগনে গর্জন করে,শুনিয়া,পর্বত
শিখরে ময়ূর নাচে।
কতজনে জানে প্রেম
(পরস্পরকে) কতদূর (হইতে আকর্ষণ করে)বিদ্যা-
পতি বলিতেছেন,ইহা
বিপরীত মান।দূতী মুখে রাধার কথা
শুনিয়া কানাই লজ্জা
পাইল,মান ভঙ্গ হইল।
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: শ্রীকৃষ্ণের মোহন মুরলীরব শ্রবণে ভাব
বিকার গ্রস্থা কৃষ্ণানু
রাগিনী ব্রজ রমণী
গণ নিজ নিজ প্রিয়
সখীগণের নিকট শ্রী কৃষ্ণের মোহনমূরলী
রবমাধুরী বর্ণনা করিতে আরম্ভ করি
লেন। কিন্তু তাঁহারা
এতই সাবধানে তাহা
বলিতে লাগিলেন, যেন ঘুণাক্ষরেও
তাহাদের কৃষ্ণানুরাগ
বার্তার গন্ধলেশ মাত্রও তাহাদের অভিন্নহৃদয়া সখী
গণের কাছে ব্যক্ত হইতে না পারে। ব্রজ
রমণীদের এই আত্ম
ভাব গোপনের প্রয়াস কৃষ্ণ প্রেমের
উচ্ছাস বিশেষ।রস
শাস্ত্রগণ এই ভাব কে
"অবহিথা"বলিয়া থাকেন। এই অবহিথা, নির্বেদ,
প্রভৃতি তেত্রিশ প্রকার সঞ্চারী ভাবের অন্যতম। সমুদ্র যেমন সর্বদাই
তরঙ্গসমাকূল থাকে,
সেইরূপ ভক্তের হৃদয়ও নিরন্তর নানা
বিধান ভাবে সমাচ্ছন্ন থাকে। এই সমস্ত ভাব সমুদ্রের
তরঙ্গের মত অস্থায়ী
তরঙ্গ যেমন সমুদ্র
বক্ষ বিক্ষুব্ধ করিয়া
আত্মপ্রকাশ করে, আবার দেখতে দেখতে সমুদ্র বক্ষেই
বিলীন হয়ে যায়, সেইরূপ প্রেমিক হৃদয়েও নির্বেদ,বিষাদ,দৈন্য,ও অবহিথা প্রভৃতি
ভাবের তরঙ্গ প্রকাশ হইয়া সেখানেই বিলীন হয়ে যায়।
কপটতা, লজ্জা,ভয়,
গৌরব প্রভৃতি বিবিধ
কারণে"অবহিথা"নামক সঞ্চারী ভাবের
উদগম হয়ে থাকে।
ব্রজরমণীগণ প্রত্যেকেই কৃষ্ণ প্রেমের এক একটি
অফুরন্ত ভান্ডার।
(অগস্ত্য ঋষি যেমন
পৃথিবীব্যাপী সমুদ্র
কে করতলগত ও
উদরস্হ করিয়া
ছিলেন, ব্রজ রমণী
গণও সেইরূপ অপার কৃষ্ণ প্রেমপারাবারকে কর
তলগত ও হৃয়দস্হ
করিয়া রেখেছিলেন।
তাহাদের হৃদয় স্থিত
প্রেম সিন্ধুতে কখন যে কোন ভাবের তরঙ্গ উঠে,তাহা কারও নির্ণয় করিবারও সাধ্য নাই।ক্ষণে ক্ষণে নব
নব ভাব তরঙ্গের
আন্দোলনে সর্বদাই
তাহাদের হৃদয় আন্দোলিত হইয়া থাকে।###########
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: পূর্বরাগ:------------।
রতির্ষা সঙ্গমাৎ পূর্বং
দর্শন শ্রবণাদিজা।
তয়োরুন্মীলতি
প্রাজ্ঞৈঃ পূর্বরাগঃ স
উচ্যতে।। উঃ নীঃ।
*পরস্পরের প্রতি গাঢ়ভাবে অনুরক্ত নায়ক ও নায়িকা,
যখন মিলন উৎকন্ঠায় ব্যাকুল
হইয়া উঠে, তখন
মিলনের পূর্বাবস্থায়
পরস্পর পরস্পরের
দর্শনে এবং রূপ-
গুণাদি কথা শ্রবণে
নানাবিধ ভাবের
উদ্দীপনায় পরস্পরের হৃদয়ে যে
এক অনির্বচনীয়
ব্য গ্রতা আসিয়া উপস্থিত হয়,রসবিচার প্রাজ্ঞ
মনীষিগণ তাহাকেই
পূর্বরাগ বলেন। এই পূর্বরাগে দর্শন, শ্রবণ
আদির নানা প্রকার
ভেদ আছে, এবং
ব্য গ্রতাবশতঃ নায়ক
ও নায়িকার লালসা
উদ্বেগ প্রভৃতি নানা-
প্রকার ভাবেরও
আবির্ভাব হইয়া থাকে। প্রাকৃত নায়ক
নায়িকার পূর্বরাগে
প্রথমতঃ নায়কের ব্য
গ্র্তা দেখা যায়, কিন্তু
অপ্রাকৃত নায়ক নায়িকা শ্রীকৃষ্ণ ও গোপীগণের পূর্বরাগে
প্রথমতঃ গোপীগণেরই ব্য গ্রতা হইয়া থাকে এবং সেজন্য শ্রীরাধা
গোবিন্দের মিলন রসাস্বাদনাভিজ্ঞ মনীষিগণ যে প্রথমতঃ শ্রীরাধার
পূর্বরাগ আস্বাদন ও
বর্ণনা করিয়া থাকেন, তাহার কারণ এই যে- গোপী
সহ গোপীনাথের মিলন,নায়ক নায়িকা র ভাব ও রীতিতে পরিপূর্ণতা। তাহাদের
নানাবিধ হাব,ভাব, ভঙ্গি,কটাক্ষ, বিলাস
বিহারাদি গোপীসহ
গোপীনাথের প্রেম-
মন্দাকিনীর অনন্ত
নিরাবিল মধুর প্রবাহ।
############
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: আনন্দঘন বিগ্রহ রস
রাজশিরোমণি ব্রজরাজ নন্দন,শরৎ
কালে বন ভ্রমণে প্রবৃত্ত হইয়া, দেখুন
স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ,ভাববতী ব্রজ
বিলাসিনীর ভাবে ভাবিত হইয়া যে বাঁশী ধ্বনি করিলেন,
তাহা ব্রজবিলাসিনী
গণ নিজ নিজ গৃহ
হইতে শ্রবণ করিলেন
বনে বাজান বাঁশীরব
তাঁহাদের মনে প্রবেশ
করা মাত্র, তাঁহারা বিবশ হয়ে পড়লেন।
তাঁহাদের হৃদয় প্রাঙ্গনে, প্রতি অঙ্গ
প্রত্যঙ্গে ভাববিকার
ছড়াইয়া পড়িল।তখন তাঁহারা ভাবা
বেগ সম্বরণ করিতে না পারিয়া নিজ নিজ সখীর নিকট তাহা বর্ণনা করিয়া
একটু হৃদয়ের ভার
লাঘব করিলেন। এখানে পরপুরুষ
শ্রীকৃষ্ণে তাহাদের
আসক্তি হয়েছে, এই
পরম গুপ্ত কথা তাঁহারা কাহারো নিকট প্রকাশ করিতে ইচ্ছুক নহেন।
###########
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: তাঁহারা অবহিথা ভাবে আত্মগোপন
করিয়া কৃষ্ণের বাঁশী ধ্বনি মাধুর্য্য বর্ণনা
করিতে করিতে তাহা
দের হৃদয়পটে সেই
বংশীবাদন তৎপর
মদনমোহনের এমনই
মধুর মূর্তি ফুটিয়া উঠিল যে, তাঁহারা
নয়নধারাসিক্ত বক্ষে
ও রুদ্ধ কন্ঠে অবস্থান করিয়া কৃষ্ণ
প্রেমবিকারের প্রকট
মূর্তি প্রদর্শন করতে
লাগলেন। তাহাদের
হৃদয় মন্দির আলো
কিত করিয়া মদন
মোহনের যে মোহন
ছবি ফুটিয়া উঠিল,
বাগাধিষ্ঠাত্রী দেবীর
বাণীও বোধহয় তাহা
বর্ণনার ভাষা খুঁজিয়া
পান না।তাহা কেবলমাত্র ভাববতী
ব্রজরমণীগণেরই ভাববেদ্য ও সৌন্দর্য
মাধুরীররই ঘনীভূত
মূর্তি।
*এই রকম অনেক
পূর্বরাগের তত্ব আছে
লেখা সম্ভব হচ্ছে না
এখানেই রইল।
বিরাম।
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: দেবর্ষি নারদের উক্তি
গোবর্দ্ধন পর্বত এবং
বৃন্দাবন সর্বতীর্থশ্রেষ্ঠ
গোলোকের মুকুট-
স্বরূপ এই গোবর্দ্ধন
পর্বত ব্রজবাসীগণ
কর্তৃক পূজিত হইয়া
গো-গোপ ও গোপী-
গণের রক্ষা বিধান
করিয়া থাকেন ও
ইনি শ্রীকৃষ্ণের পরম-
প্রিয়।যে গোবর্দ্ধন পর্বত পূর্ণ ব্রহ্ম শ্রী কৃষ্ণের হস্তে ছত্রের
মত সাতদিন অবস্থান করেছিলেন
অখিলভূবনপতি শ্রীকৃষ্ণ ইন্দ্রযাগ বিলুপ্ত করিয়া নিজ
পার্ষদগণসহ যাহার
পূজা প্রবর্তন করেছিলেন,তদপেক্ষা শ্রেষ্ঠ তীর্থ আর
জগতে কোথায় আছে!হে মিথিলাপতে! পরিপূর্ণতম স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ, অখিল ব্রহ্মান্ডপালক গোলোকপতি পরাৎ-
পর শ্রীকৃষ্ণ এই গোবর্দ্ধন পর্বতে অব
স্থিত হইয়া সকলসখাগণসহ সর্বদা ক্রীড়া করেন,
সুতরাং চতুরানন
ব্রহ্মাও ইহার মাহাত্ম
বর্ণনা করিতে সমর্থ
হন না। গোবর্দ্ধন পর্বতে মহাপাপ-বিনা
শিনী মানসী গঙ্গা,স্বচ্ছজলপূর্ণ
গোবিন্দকুন্ড, চন্দ্র-
সরোবর,রাধাকুন্ড,
কৃষ্ণকুন্ড, ললিতাকুন্ড, গোপাল কুন্ড,ওকুসুম সরোবর প্রভৃতি মহা-
তীর্থরাজি বিরাজিত। পর্বতের
এক অংশে শ্রীকৃষ্ণের মস্তক স্পর্শ হওয়ায় সেখান
কার শিলা মস্তক-চিহ্ন সমন্বিত। এই শিলা যে দর্শন করে,
সে দেবতাগণেরও
শিরোধার্য হয়। পর্বতের যে সমস্ত শিলাখন্ডে শ্রীকৃষ্ণ
নানাবিধ চিত্রাঙ্কন
করেছিলেন,সে সমস্ত শিলা অদ্যাপি
চিত্রিত রূপেই বিরাজিত আছে এবং সেই সমস্ত শিলাযুক্ত স্থান চিত্র-
শিলা নামে বিখ্যাত।
সখাগণের সহিত খেলা করিতে করিতে যে স্থানে শ্রীকৃষ্ণ শিলাবাদন
করেছিলেন, সেই
শিলা "বাদনীশিলা"
নামে বিখ্যাত এবং
মহাপাপ নাশিনী।
পর্বতের যে স্থানে
শ্রীকৃষ্ণ গোপবালক
গণসহ কন্দুক ক্রীড়া
করেছিলেন সেই স্থান"কন্দুকক্ষেত্র"
নামে বিখ্যাত।সেস্থান
দর্শনে ইন্দ্রপদলাভ,
প্রণামে ব্রহ্মপদ প্রাপ্তি এবং সে স্থানের ধূলিতে
বিলুন্ঠিত(গড়াগড়ি)
হইলে বিষ্ণুপদ প্রাপ্তি
হইয়া থাকে। গোবর্দ্ধন পর্বতের
যে স্থানে শ্রীকৃষ্ণ
পরিহাসচ্ছলে সখা
গণের উষ্ণীষ চুরি
করিয়া লুকাইয়া
রেখেছিলেন, সেই
স্থানের নাম"ঔষ্ণীষতীর্থ"
এবং সে স্থান
সর্বপাপহর।
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: এমনকি একথা মনে
মনে চিন্তা করিলেও
সেই যুবতী ব্রজ রমণীগণের হৃদয় কাঁপিয়া উঠে, কেবলমাত্র বংশী ধ্বনী শ্রবণে যদি এমন হয়, সাক্ষাৎ
দরশনে না জানি কি হবে।(এই পূর্বরাগের
নমুনা) অতঃপর সখীগণ নিজ নিজ
হৃদয়ের কথা প্রকাশ
করিতে আরম্ভ করি
লেন।তাহাতে ব্রজ
রমণীগণের ধৈর্য্য, লজ্জা,মান,ভয়,কূল,
শীল, প্রভৃতির মহা
বন্ধন শিথিল হইতে
আরম্ভ করিল। শ্রীকৃষ্ণের বংশী ধ্বনী
অনুরাগের নিত্য সহ
চর। যাহাদের হৃদয়ে
শ্রীকৃষ্ণানুরাগ আছে,
বংশী ধ্বনী তাহাদের
কর্ণ দ্বারা হৃদয়াভ্যন্তরে প্রবেশ
করিয়া সুপ্ত ও গুপ্ত
অনুরাগকে জাগ্রত ও প্রকাশিত করিয়া
দেয়।তাই রাধাসহ
সখীগণও আজ বাঁশী ধ্বনি শুনিয়া
ব্যাকুল হয়ে পড়ে
ছেন। ব্রজরমণী
গণের কৃষ্ণানুরাগ
নিত্য সিদ্ধ এবং তাহা
চিরদিনই তাহাদের
হৃদ মন্দিরে গুপ্ত ভাবে অবস্থিত। এই
অনুরাগ এমন গুপ্ত
সংরক্ষিত হইয়াছে যে তাহা আর কাহারো জানিবার সাধ্য নাই।অন্যের
কথা তো দূরে থাক,
তাঁহারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে প্রকাশ করিতেন না
বংশী ধ্বনী শ্রবণে তাহা কিঞ্চিত প্রকাশ পাইত, প্রথম প্রথম।############
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: শ্রীপাদ জীবগোস্বামী
একটি পৌরাণিক ইতিবৃত্তের আলোচনা করিয়া
মানসোপচারে শ্রীকৃষ্ণের মনোময়ী
প্রতিমা সেবার মাহাত্ম্য প্রকাশ করিয়াছেন।
*পুরাকালে প্রতিষ্ঠানপুরে এক
দরিদ্র ব্রাহ্মণ বাস
করিতেন। তাঁর শ্রীভগবৎসেবা পূজাদির তীব্র লালসা থাকিলেও
তিনি দরিদ্রতা নিবন্ধন,ভোগ,পূজাদির দ্রব্য সংগ্ৰহ করিতে পারিতেন না।তাহাকে তিনি পূর্ব
জন্মার্জিত কর্মফল মনে করিয়া মনের দুঃখ মনে রাখিয়াই শান্তভাবে কাল যাপন করিতেন।
একদিন সেই সরলচিত্ত দরিদ্র ব্রাহ্মণ ভাগবত ধর্ম-
কথা শ্রবণের জন্য
ভাগবতবিপ্রমন্ডলীর
নিকট গমন করিয়া
তাঁহাদের মুখে শুনলেন যে,কেহ যদি শ্রীভগবৎ সেবার জন্য তুলসী,
পুষ্প,চন্দন, নৈবেদ্য,
বস্ত্র, অলঙ্কার,ছত্র,চামর
প্রভৃতি উপচার সংগ্ৰহে অশক্ত(অক্ষম)হন,
তাহা হইলে তিনি মনে মনে উপচার
কল্পনা করিয়া শ্রী-
ভগবানের মনোময়ী
প্রতিমা অর্চনা করিলেও শ্রীকৃষ্ণ তাঁহাকে কৃতার্থ করেন। এই কথা শুনিয়া শ্রীকৃষ্ণের সেবালোলুপ সেই দরিদ্র ব্রাহ্মণের মনে
বড়ই আনন্দ হইল এবং তিনি মনে মনে
সঙ্কল্প করিলেন যে,
প্রত্যহ তিনি মানস-
উপচারে শ্রীকৃষ্ণের
মনোময়ী প্রতিমার
অর্চনা করিবেন। পরদিন প্রভাতে তিনি
গোদাবরী নদীতে স্নান ও নিত্য কৃত্যাদি
সমাপন করিয়া নির্জন স্থানে উপবেশন করিয়া
শ্রীভগবানের মূরতি
ধ্যান পূর্বক মনে মনে
তাঁহার শ্রীমন্দির মার্জন ও পূজোপ-
করণ সংগ্ৰহ করিলেন। তদনন্তর
তিনি তাঁহার ধ্যান-
কল্পিত মনোময়ী ভগবৎ প্রতিমাকে মণিমাণিক্য খচিত সুবর্ণ সিংহাসনে স্থাপন করিয়া সুবর্ণ ঘটে তীর্থবারি আহরণ ও তাহা দ্বারা
স্নান করালেন। তারপর স্বর্ণসূত্র খচিত পট্টবস্ত্র পরিধান করাইয়া
নানাবিধ মণিমুক্তাদির অলঙ্কারে সজ্জিত
করিলেন এবং মহা
রাজোপচারে অর্পণ পূর্বক পূজো করিয়া
সুবর্ণ পাত্রে স্থাপিত
নানাবিধ ভক্ষ্য ভোজ্যাদি সমর্পণ করিলেন।পরে নানা-
বিধ বাদ্যাদি সহকারে মহা নীরাজন করিয়া মণিমাণিক্যাদি খচিত সুবর্ণ খট্টায়
শ্রীমূরতী শয়ন করালেন এবং পাশে
দাঁড়াইয়া চামর ব্যজন করিতে লাগিলেন।
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: গোপালকুন্ডলং তত্রৈব কুসুমাকর এব চ ।।
শ্রীকৃষ্ণমৌলিসংস্পর্শাৎ মৌলিচিহ্ণা শিলা
ভবৎ।
যস্যা দর্শনমাত্রেণ দেবমৌলির্ভবেজ্জনঃ। যস্যাং শিলায়াং কৃষ্ণেন চিত্রাণি লিখিতানি চ।
অদ্যাপি চিত্রিতা পুণ্য
নাম্না চিত্রশিলা গিরৌ।।
যাং শিলামর্ভকৈঃ কৃষ্ণো বাদয়ন্ ক্রীড়নে রতঃ।
বাদনী সা শিলা জাতা মহাপাপৌঘ-
নাশিনী।।
যত্র শ্রীকৃষ্ণচন্দ্রেণ
গোপালৈঃ সহ মৈথিল।
কৃতা বৈ কন্দুকক্রীড়া তৎক্ষেত্রং কন্দুকং
স্মৃতম্।
দৃষ্ট্বা শত্রুপদং যাতি
নত্ত্বা ব্রক্ষ্মপদঞ্চ তৎ।
বিলুন্ঠন যস্য রজসা
সাক্ষাদ্বিষ্ণুপদং ব্রজে ৎ।
গোপানামুষ্ণিষাণ্যত্র
চোরয়ামাস মাধবঃ।
ঔষ্ণিষং নাম তত্তীর্থং
মহাপাপহরং গিরৌ।।
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: তারপরও যথাসময়ে
বৈকালিক কৃত্য ও
সান্ধ্য কৃত্যাদি সম্পাদন করিয়া রাত্রিকালীন ভোগ সমর্পণ পূর্বক শ্রীমূরতি শয়ন করাইয়া দিব্য ও
নিশাকৃত্য শেষ করি-
লেন। দরিদ্র ব্রাহ্মণ
এইরূপে প্রত্যহ শ্রী-
ভগবানের মনোময়ী
প্রতিমার মানসোপচারে অর্চনা
করিয়া পরমানন্দে
কালাতিপাত করতে
লাগলেন। এইভাবে
কিয়ৎকাল অতীত
হইলে ব্রাহ্মণ একদিন মনে মনে
সঘৃত পরমান্ন পাক
করিয়া সুবর্ণ পাত্রে
স্থাপন করিলেন এবং তাহা শীতল
করিয়া ভোগ দেবার
জন্য তালবৃন্ত ব্যজন
করিতে লাগিলেন। কিছুক্ষণ পরে পরমান্ন শীতল হয়েছে কি না, পরীক্ষা করিবার জন্য ব্রাহ্মণ যেমন
তাহাতে অঙ্গুলি স্পর্শ
করিয়াছেন,অমনি
সেই সুতপ্ত পরমান্ন
স্পর্শে তাঁর অঙ্গুলি
দগ্ধ হয়ে গেল। ব্রাহ্মণ তখন দগ্ধা-
ঙ্গুলি স্পর্শে পরমান্ন
অপবিত্র হইল মনে করিয়া হায়!হায়! করিতে লাগিলেন।
এবং মস্তকে করাঘাত করিয়া রোদন করতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পরে ব্রাহ্মণের ধ্যান
ভঙ্গ হইলে, তিনি দেখলেন সত্যসত্যই
তাঁহার একটি অঙ্গুলি
দগ্ধ হয়ে গিয়েছে।
যেমন নরোত্তম দাস ঠাকুরের হয়েছিল,যে
তাঁর গুরুদেব লোক-
নাথ গোস্বামী বলে-
ছিলেন রাধাকৃষ্ণ লীলা সম্পন্ন করিয়া
উষ্ণদুগ্ধ পান করিবেন,তুমি দুগ্ধ
গরম কর,মানসে দুগ্ধ গরম করিতে
গিয়ে দেখলেন দুধ
উথল দিয়ে পরে যাচ্ছে ,গরম পাত্র ,
সামনে কোন কিছু না পাইয়া হাত দিয়ে
নামিয়েছিলেন, পরক্ষণেই দেখলেন যে,তাঁর আঙ্গুলি দগ্ধ
হয়েছে। সেই অবস্থা
দরিদ্র ব্রাহ্মণের হইল। ব্রাহ্মণ যখন
দগ্ধাঙ্গুলি স্পর্শে পরমান্ন দূষিত হয়েছে বলিয়া মস্তকে করাঘাত করিয়া রোদন করছেন,সে সময়ে
বৈকুণ্ঠ সিংহাসনে
সমাসীন নারায়ণ,
ব্রাহ্মণের এই সেবা-
তৎপরতা দেখিয়া
আনন্দ সহকারে একটু হাসিলেন।
লক্ষ্মীদেবী তাঁহার
অকস্মাৎ হাস্য করার কারণ জিজ্ঞাসা করিলে তিনি সেই মানস-
সেবানিষ্ঠ ব্রাহ্মণকে
বৈকুণ্ঠে আনয়ন
করিলেন এবং লক্ষ্মী
ও অন্যান্য বৈকুণ্ঠ
পারিষদগণকে মানসসেবানিষ্ঠ ব্রাহ্মণের দগ্ধাঙ্গুলি
দেখাইলে বৈকুণ্ঠ পার্ষদগণ ভক্তবৎসল
হরির মানস সেবার
অনির্বাচনীয় মাহাত্ম্য
দর্শনে পরমানন্দ লাভ করিলেন। শ্রীহরি আর ব্রাহ্মণকে ভূলোকে
যাইতে দিলেন না, তিনি তাঁহাকে দিব্য
দেহ দিয়া নিজসেবায় নিযুক্ত
করিয়া বৈকুণ্ঠেই
স্থান দিলেন,তাই
বলা হয়েছে,মানস-
সেবাই সর্বশ্রেষ্ঠ সেবা।
******************
শ্রীভক্তিরসামৃতসিন্ধু
গ্ৰন্থে সেবাধ্যান প্রসঙ্গে শ্রীপাদ রূপ-
গোস্বামী বলেছেন---
*মানসেনোপচারেণ
পরিচর্য্য হরিং মুদা।
পরে বাঙমনসাগম্যং
রং সাক্ষাৎ প্রতিপেদিরে।।
অর্থাৎ কোন কোন ভাগ্যবান ভক্ত সঠিক
মানসোপচারে শ্রী-
ভগবানের মনোময়ী
প্রতিমার অর্চনা করিয়া,বাক্য ও মনের অগোচর শ্রী-
ভগবানকে সাক্ষাৎ দর্শন করিয়া কৃতার্থ
হয়েছেন।
বিরাম
############
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: গোকর্ণ কাহিনী:-----
তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে এক অনুপম সুন্দর নগরে সর্ববেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ আত্মদেব বাস করতেন। তাঁর একটি পত্নী ছিলেন তাঁর নাম ধুন্ধুলী।পত্নীর অনেক গুণের
মধ্যে একটি দোষ ছিল যে তিনি ক্রূর অর্থাৎ নির্দয় স্বভাব-
সম্পন্না ছিলেন। অর্থ ও ভোগবিলাসের কোন অভাব ছিল না, কিন্তু গৃহস্থ জীবনের অশান্তির
মূল কারণ ছিল সন্তানের অভাব।বহু
কিছু করিয়াও তাঁদের এই অভাব
মোচন হয় নাই। একদিন ব্রাহ্মণ খুব
ভারাক্রান্ত হৃদয়ে গৃহত্যাগ করে বনে
গমন করলেন,বনে
এক জলাশয়ে তৃষ্ণা
নিবারণ করে ব্রাহ্মণ
সেইখানেই বসে রইলেন। বহুক্ষণ পরে জলাশয়ে এক
সন্ন্যাসীর আগমন হল,ও বিষণ্ণ ব্রাহ্মণ
কে দেখলেন।সন্ন্যাসী
ব্রাহ্মণের বিষণ্ণতার
কারণ জানলেন। তিনি যখন জানালেন যে ব্রাহ্মণের প্ররব্ধ অনুসারে আগামী সাতজন্ম সন্তান লাভের সম্ভাবনা নেই, তখন ব্রাহ্মণও
জানালেন যে এই
জন্মেই সন্তানের ব্যবস্থা না করতে
পারলে তিনি প্রাণ
বিসর্জন দেবেন। তখন ব্রাহ্মণকে কোন ভাবেই সন্তুষ্ট
করতে না পেরে সন্ন্যাসী তাঁকে একটি
ফল দিয়ে বললেন-
এই ফলটি তুমি তোমার স্ত্রীকে খাইয়ে দিলে তার এক পুত্রসন্তান জন্ম নিবে। ব্রাহ্মণ গৃহে ফিরে এসে পত্নীকে
ফলটি দিয়ে খেতে বললেন।কুটিল স্বভাব পত্নী অদ্ভুত সকল যুক্তি উদ্ভাবন
করে ফল নিজে খেলেন না,তার নিজ
ভগিনীর সঙ্গে কথা বলে স্থির করে নিলেন যে সন্তান-
সম্ভবা ভগিনী সন্তান
জন্ম দিলে সেই সন্তানেকে নিজ সন্তানরূপে পতিকে
দেখাবেন। ভগিনী এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে জানালেন যে
তিনি নিজ সন্তানকে
মৃত বলে প্রচার করে
ধুন্ধুলীর গৃহে এসে শিশুকে লালন পালন করবেন।ভগিনীর পরামর্শনুসারে ধুন্ধুলী সন্ন্যাসী প্রদত্ত
ফলের শক্তি পরীক্ষা
করবার জন্য তা গরু
কে খাইয়ে দিলেন আর পতিকে জানালেন যে তিনি বলেন ভক্ষণ করেছেন।
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: পিতার বনগমনের পর ধুন্ধুকারী মাতার
উপর অত্যাচার শুরু
করল।অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে মারা গেলেন।ধুন্ধুকারী পাঁচজন বারবণিতাকে বাড়ীতে এনে তাদের সঙ্গে বাস করতে লাগলো। তাদের তুষ্ট
করবার জন্য একদিন সে নানা স্থান থেকে অনেক
ধনরত্ন চুরি করে নিয়ে এলো। সেই ধনসম্পদ আহরণের
জন্য সেই মলিন চিত্ত
বারবণিতাগণ তাকে
এক রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করল।
কারণ তাদের ভয় হয়েছিল যে চুরির
অপরাধে ধুন্ধুকারীর
সঙ্গে তারাও ধরা পড়তে পারে। তারপর মৃতদেহটি
একটি গর্ত করে পুঁতে দিল,আর ধন
সম্পত্তি নিয়ে সরে পড়ল। এদিকে ধুন্ধু
কারী নিজ কুকর্মের
ফলে প্রেতযোনি লাভ করল।গোকর্ণ
লোকমুখে তার মৃত্যু
সংবাদ পেলেন,শ্রাদ্ধাদি কার্য্য তাঁকেই করতে
হল।একসময়ে তিনি
নিজগৃহে এলেন, একদিন তিনি সেখানে একটি ভয়ানক প্রেত দেখতে পেলেন।সে
ছিল ধুন্ধুকারী।সে
ভাইকে নিজ ভয়ংকর রূপ সকল
দেখাতে লাগল,গোকর্ণ তার
পরিচয় জানতে চাইলেন,পরিচয় দিয়ে সকল কুকর্মের
কথা স্বীকার করে
ধুন্ধুকারী গোকর্ণকে
জানাল যে কর্ম ফলে
সে প্রেতযোনিতে বাস করছে।গোকর্ণ
তার মুক্তির আশ্বাস
দিলেন। এবং বহু জ্ঞানী যোগীদের সঙ্গে পরামর্শ করিয়া
উপায় জানতে পারলেন। সকলের
পরামর্শ অনুসারে গোকর্ণ সূর্য্যদেবের
বিধানের জন্য চেষ্টা করতে লাগলেন,
নিজ তপোবলে গোকর্ণ সূর্য্যের গতি
রোধ করে দিলেন।
অতঃপর সূর্য্যদেবকে
স্তুতি করিয়া ধুন্ধুকারীর উদ্ধারের
উপায় জানতে চাইলেন।গোকর্ণের
প্রার্থনা শুনে সূর্য্যদেব
দূর হতেই পরিস্কার ভাবে বললেন-----
"শ্রীমদ্ভাগবতে মুক্তি
হতে পারে, সুতরাং তুমি তার জন্য
শ্রীমদ্ভাগবতের সপ্তাহ পারায়ণ করাও। অতঃপর গোকর্ণ সেই ব্যবস্থা
করিলেন,ধুন্ধুকারী
বারোটি স্কন্ধ শ্রবণ
করে পবিত্র হয়ে প্রেতযোনি থেকে মুক্ত হয়েগেল,আর
দিব্যদেহ ধারণ করে
সকলকে দর্শন দিয়ে
গোলোকধামে চলে
গেল।************
******************
বিরাম।
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: যথাসময়ে ভগ্নী পুত্র-
সন্তান প্রসব করলে
তা ব্রাহ্মণপত্নী ধুন্ধুলীর পুত্ররূপে পরিচিত হল।আত্মদেব জানলেন যে তিনি পুত্রসন্তান
লাভ করেছেন। ব্রাহ্মণ, সন্তানের জন্ম উপলক্ষে দান
ও মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানাদি করলেন।
ধুন্ধুলী মাতৃদুগ্ধ দানে
অক্ষম জেনে তাঁর
ভগ্নী দিদির গৃহে পুত্র
লালনপালনের জন্য
বসবাস করতে লাগলেন। এতক্ষণ
পর্যন্ত সবই পরিকল্পনা অনুযায়ীই চলছিল।
মাতা,তার পুত্রের নাম রাখলেন ধুন্ধু-
কারী। কিছুদিন পরে
যে গোরুকে ফল খাওয়ানো হয়েছিল
তারও প্রসব হল।
গো-মাতার মানব-
সন্তান প্রসব দেখে
সকলে আশ্চর্য হলেন, এই গোসন্তান
সর্বাঙ্গসুন্দর দিব্যকান্তি নির্মল
সুবর্ণকান্তি ছিল।তাকে দেখে ব্রাহ্মণ
খুবই আনন্দিত হলেন। ঘটনা সকলকেই আশ্চর্য
করিল।দৈবযোগে
এই গুপ্ত রহস্যের কথা কেউই জানতে
পারলেন না। ছেলেটির কান দুটো
গোরুর কানের মতন
দেখতে হওয়াতে
আত্মদেব তাঁর নাম
রাখলেন "গোকর্ণ"।
বালক যুগল ধীরে ধীরে যৌবনে পদার্পণ করল। তাদের মধ্যে গোকর্ণ
খুব বড় পন্ডিত ও
জ্ঞানী হল কিন্তু ধুন্ধু-
কারী সৎপথে গেল
না। অনাচার,চৌর্য্য-
বৃত্তি,অত্যাচার আদি
সব বদগুণই তাকে
গ্ৰাস করল। অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সে ঘুরতেই, শিশুদের কোলে তুলে নিয়ে কুয়োয়
ফেলে দিত আর
সে চন্ডালদের
সঙ্গে বন্ধুত্ব করে
তাদের মত হাতে জাল নিয়ে কুকুরের
পাল সঙ্গে নিয়ে পশুপাখি শিকার করে বেড়াত। বারাঙ্গনাদের কুসঙ্গে
সে তার সমস্ত পৈতৃক সম্পত্তি তছ-
নছ করে ফেলল।
তারপর একদিন তার বাবা,মাকে প্রহার করে গৃহের
জিনিসপত্র নিয়ে চলে গেল। পুত্রের
ব্যবহারে পিতা হাহা-
কার করে উঠলেন,
এবং বিলাপ করতে লাগলেন। এই সময়ে
সেই স্থানে জ্ঞানী গোকর্ণের আগমন
হল।গোকর্ণ পিতাকে
প্রকৃত সুখের সন্ধান
দিলেন। পুত্রের উপ-
দেশে প্রভাবিত হয়ে
আত্মদেব গৃহত্যাগ
করলেন এবং বনে
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের
শরণাগত হয়ে তাঁকেই লাভ করলেন।এবারে
গোকর্ণ তীর্থযাত্রায়
বেড়িয়ে পড়লেন।
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: এই সকল জেনে রাখা প্রয়োজন।
১, স্বয়ং ভগবানের অনন্ত শক্তির মধ্যে
তিনটি শক্তি প্রধান--
১,চিচ্ছক্তি,২,জীবশক্তি,৩,মায়া শক্তি।চিচ্ছক্তিকে অন্তরঙ্গা শক্তি বা স্বরূপ শক্তিও বলা হয়।জীবশক্তির অপর নাম তটস্থাশক্তি,অনন্ত-
কোটি জীব এই জীবশক্তিরই অংশ।
আর মায়াশক্তিকে
জড়শক্তি বা বহিরঙ্গা
শক্তিও বলে। প্রকৃত
প্রস্তাবে স্বয়ং ভগবান
শ্রীকৃষ্ণেই বহিরঙ্গা মায়াশক্তিরও অধীশ্বর; কিন্তু এই
বহিরঙ্গাশক্তির সহিত
সাক্ষাৎ ভাবে তিনি
কোনও লীলাই করেন না। তাঁহার আদেশে বা ইঙ্গিতে
শ্রীনিত্যানন্দ বা শ্রীবলরামই কারণার্ণবশায়ীরূপে
মায়াকে নিয়ন্ত্রিত করিয়া সৃষ্টিকার্য্য নির্ব্বাহ করেন; সুতরাং সাক্ষাৎ সম্বন্ধে বা অব্যবহিত
ভাবে কারণার্ণবশায়ী
পুরুষই মায়ার অধীশ্বর;তাই তাঁহাকে"সাক্ষাৎ মায়াভর্ত্তা"বলা হয়েছে।
(২),গর্ভোদকশায়ীর
কথা বলি।কারণার্ণব
শায়ী পুরুষ অনন্তকোটি ব্রহ্মান্ড
সৃষ্টি করিয়া এক অংশে প্রত্যেক ব্রহ্মান্ডের মধ্যে প্রবেশ করেন,প্রত্যেক ব্রহ্মান্ডের মধ্যে যে
রূপে থাকেন, তাঁহাকেই বলে গর্ভোদকশায়ী পুরুষ।ইনি কারণার্ণবশায়ীর অংশ বলিয়া পরব্যোমস্থ সঙ্কর্ষণেরই অংশের
অংশ; সুতরাং শ্রীনিত্যানন্দের অংশের অংশের অংশ হইলেন। সঙ্কর্ষণের সঙ্গে নিত্যানন্দরামের অভেদ মনে করিয়াই
গর্ভোদকশায়ীকে নিত্যানন্দের অংশাংশ বলা হয়েছে। ব্রহ্মান্ডের
অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়া নিজের ঘর্ম
(ঘাম)জলে অর্দ্ধেক
ব্রহ্মান্ড পূর্ণ করিয়া তাহাতে ইনি শয়ন
করেন বলিয়া ইঁহাকে
গর্ভোদকশায়ী বলা হয়। গর্ভ=মধ্যস্থল,ভিতর।
উদ=জল;তাহাতে শয়ন করেন যিনি, তিনি গর্ভোদকশায়ী।
ইনি শয়ন করিয়া থাকিলে , তাঁহার নাভি হইতে একটি পদ্মের উদ্ভব হয়,ঐ
পদ্মে ব্যষ্টিজীবের
সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার জন্ম হয়;তাই ঐ পদ্মাকে ব্রহ্মার সূতিকাধাম বলা হয়েছে।চতুর্দ্দশভূবনাত্মক লোকসমূহ ঐ পদ্মের
নালে(ডাঁটায়) অবস্থিত,তাই পদ্মটিকে "লোকসঙ্ঘাতনাল"
বলা হয়েছে। চৌদ্দ ভূবন-- পাতাল,রসাতল,
মহাতল,তলাতল,
সুত্র,অতল, এই সপ্ত
পাতাল।আর ভূর্লোক(ধরণী),
ভূবর্লোক,স্বর্লোক,
মহর্লোক,জনর্লোক,
তপোর্লোক, এবং
সত্যর্লোক, এই সপ্ত
লোক।
এখানেই রইল।
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: প্রথমতঃ শচীনন্দন
জীবের সমস্ত অমঙ্গল হরণ করেন
এবং দ্বিতীয়ত তিনি
প্রেম দিয়া জীবের মন হরণ করেন।
অমঙ্গল কি?যাহা মঙ্গলের বিপরীত, তাহাই অমঙ্গল। মঙ্গল কি? যাহা আমাদের অভীষ্ট-
সিদ্ধির অনুকূল, তাহাকেই আমরা মঙ্গল বলি।কোনও
উদ্দেশ্যে কোনো স্থানে যাত্রা করার
সময়ে যদি আমরা
পূর্ণ কলস দেখি, আমাদের মন প্রসন্ন
হয়, আনন্দিত হয়,
কারণ আমাদের সংস্কার অনুসারে পূর্ণকলস মঙ্গল সূচক। পূর্ণ কলসকে
তাই আমরা মঙ্গল-
ঘটনা বলি। কিন্তু পূর্ণ
কলস দর্শনের পরিবর্তে,যদি শুনি যে,পেছনে কেহ হাঁচি
দিয়াছে,তাহলে উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবেনা
আশঙ্কা করিয়া আমাদের মন দমিয়া
যায়, মনে ভয়ের সঞ্চার হয়;ইহাই অমঙ্গল বলি। এই
রূপে ,যাহা আমাদের
অভীষ্ট সিদ্ধির ইঙ্গিত
দিয়া আমাদের মন
কে প্রসন্ন করে,তাহাকেই আমরা মঙ্গল বলি।
এবং যাহা অভীষ্ট সিদ্ধির বিঘ্ন সূচনা করিয়া আমাদের মনে আশঙ্কা বা ভয়
জন্মায়, তাহাকেই
আমরা অমঙ্গল বলি। শ্রীমদ্ভাগবত
বলেন- ভয়ং দ্বিতীয়া
ভিনিবেশতঃ স্যাৎ ঈশাৎ অপেতস্য;
অর্থাৎ দ্বিতীয় বস্তুতে
অভিনিবেশ হইতেই
ভগবদবিমুখ ব্যক্তির
ভয় জন্মে। মায়া মুগ্ধ
জীব ভগবদবিমুখ;
সুতরাং দ্বিতীয় বস্তুতে অভিনিবেশই
হইল মায়াবদ্ধ জীবের অমঙ্গল।
দ্বিতীয় বস্তু কি? দ্বিতীয় বস্তু বলিলেই
বুঝা যায়, একটি প্রথম বস্তু আছে, সেই বস্তুটিই বা কি?
আমাদের অভীষ্টের
দিকে লক্ষ্য রাখিয়া
বিচার করিলে দেখা যায় যে, অপ্রাকৃত
ভগবদ্ধামে এবং প্রকৃত ব্রহ্মান্ডে যত কিছু বস্তু আছে,সমস্তকেই দুই
শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়।যাহা যাহা আমাদের অভীষ্ট এবং যাহা যাহা হইতে আমাদের অভীষ্ট বস্তু পাওয়া
যাইতে পারে,তাহারা
এক শ্রেণী,আর যাহা
যাহা আমাদের অভীষ্ট নয়, অভীষ্ট
বস্তু প্রাপ্তির সহায়ক
নয়,তাহারা অন্য এক শ্রেণীভুক্ত।মূল কথা হলো এই,আমরা সুখের
লাগি যাহা কিছু করি
তাহাই দুঃখের বিষয়
হয়।আমরা যাহা কিছু করি পরের লাগি, নিজের জন্য
করাটা কি? মাতৃগর্ভে যখন ছয়-
সাত মাসের শিশু হয়ে উল্টো মুখে ছিলাম, তখন কতই
না ভগবানকে ডেকে
ডেকে মাতৃগর্ভে কত
কথায় না হয়েছিল,
এবং প্রতিশ্রুতি বদ্ধ
ছিলাম,মাতৃ জঠর স্বরূপ কারাগার হতে
মুক্ত কর , তুমি যাহা বলিবে আমি তাহাই করিব, সেই প্রতিশ্রুতি না রাখাই
ত্রিতাপ জ্বালায় জর্জরিত,তাই মহা-
প্রভু বললেন, এখনও সময় আছে
সৎভাবনা,সৎ আচরণ, সৎকর্ম, এবং যুগল সেবাই রত হও। এই সবই
অমিয়া অর্থাৎ অমৃত
বাণী,গ্ৰহণ কর ও
মহাসুখে দিন যাপন কর।
অমিয়ার সার যেন
পড়ে খানি খানি।।
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: পুলকে পূর্ণ তনু পিরীতের রসে।
ঝাঁপয়ে বসনে বিবসে পুনঃ খসে।।
*রস সম্বন্ধে কিছু কথা।আস্বাদ্য বস্তুকে
রস বলে;(রস্যতে আস্যাদ্যতে ইতি রসঃ)। সাধারণতঃ
দধির নিজের একটা
স্বাদ আছে; আবার তাহার সঙ্গে চিনি মিশ্রিত করিলে তাহার স্বাদ চমৎকারিতা ধারণ
করে। তদ্রুপ,দাস্য-
সখ্যাদি প্রেমেরও নিজের একটা স্বাদ
আছে;কারণ,এই সমস্তই আনন্দাত্মিকা হ্লাদিনী-শক্তির বৃত্তি।
দাস্য- সখ্যাদি ভাবকে স্থায়ীভাব বলে। এই সকল স্থায়ীভাবের সঙ্গে যদি বিভাব,অনুভাব,
সাত্ত্বিক ও ব্যাভিচারী
ভাব সমূহ মিলিত হয়,তাহা হইলে অনির্ব্বাচনীয় আস্বাদন-চমৎকারিতার উদ্ভব
হয়,তখনই দাস্যাদি
কৃষ্ণ ভক্তি রসরূপে
পরিণত হয়।
*প্রেমাদিক স্থায়ীভাব
সামগ্ৰী মিলনে।
*কৃষ্ণভক্তি রসরূপে
পায় পরিণামে।।
*বিভাব,অনুভাব, সাত্ত্বিক,ব্যাভিচারী।
*স্থায়ীভাব রস হয়
এই চারি মিলি।।
*দধি যেন খন্ড-মরিচ
কর্পূর-মিলনে।
*রসালাখ্য-রস হয়
অপূর্ব্বাস্বাদনে।।
চৈঃচঃ:-২/২৩/২৭-২৮।।
আবার পরে লিখিব।
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: শ্রীমতীর রসোদ্গার
গৌরচন্দ্রিকা,
আরে মোর আরে মোর গৌরাঙ্গ বিধু।
পূরব প্রেমরস কহই মধু।।
(বিধু= চন্দ্র, চাঁদ)
আমার ভাবনিধি গোরা চাঁদ পূরবের
অর্থাৎ বৃন্দাবনের ভাবে ভাবিত হইয়া বসে আছেন, কোথায়,না পার্ষদের
মাঝে। সকলের বদন
পানে দেখছেন আর
নিজ মনে কি যেন
বলছেন, কিছুই বুঝা
যাচ্ছে না।একেক সময় একেক পার্ষদের মুখ পানে তাকিয়ে আছেন,
আর কখনও হাসছেন, আবার কখনও চুপটি করে বসে আছেন। তাঁর ভাব গতি দেখিয়া মনে হচ্ছে যে কিছু
বলতে চাইছেন, কিন্তু
বলতে পারছেন না।
কি যেন কোন অজানা বস্তু পাইলে
যেমন বর্ণনা করা যায় না,আজ গৌর
সুন্দরের বদন দেখিয়া তাই মনে
হচ্ছে।সব কিছু জেনেও তিনি কিছুই
জানেন না।
আরে মোর আরে মোর গৌরাঙ্গ বিধু।
পূরব প্রেম রস
কহই মধু।।
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: চৈতন্য চরিতামৃত তত্ত্ব কথা।
ঈশ্বর স্বরূপ ভক্ত তাঁর অধিষ্ঠান।
ভক্তের হৃদয়ে কৃষ্ণের সতত বিশ্রাম
ভাবার্থ:--শ্রীকৃষ্ণই মহান্ত-স্বরূপে জীবের শিক্ষাগুরু হন।অর্থ্যাৎ মহান্তরূপ শিক্ষাগুরু
শ্রীকৃষ্ণ স্বরূপ। ভক্তের হৃদয়ে শ্রীকৃষ্ণ সর্বদাই বিশ্রাম-সুখ ভোগ
করেন, তিনি সর্বদাই
ভক্তের হৃদয়ে অবস্থান করেন;
সুতরাং ভক্ত_-হৃদয়
হইল শ্রীকৃষ্ণের অধিষ্ঠান বা বসতি-
স্থল। ভক্তের হৃদয় যেন শ্রীকৃষ্ণের সিংহাসন,আর ভক্তের দেহ তাঁহার
শ্রীমন্দির।শ্রীমন্দিরও
যেমন শ্রীমন্দিরস্থ ইষ্টদেব তুল্যই ভক্তদের কাছে পূজনীয়, তদ্রূপ ভক্তও কৃষ্ণতুল্য
পূজনীয়। কারণ ভক্তের হৃদয়ে কৃষ্ণের অধিষ্ঠান।
এই অর্থেই ভক্তকে
ঈশ্বর-স্বরূপ বা ঈশ্বর
তুল্য বলা হয়েছে।
স্বরূপত ভক্ততত্ত্ব ও
কৃষ্ণতত্ত্ব অভিন্ন নহে।ভক্ত হলেন শ্রীকৃষ্ণের দাস।
ভক্তের হৃদয় শ্রীকৃষ্ণের বিশ্রামাগার তুল্য।
যেমন ধরুন- লোক
বিশ্রামাগারে যায়, বন্ধু-বান্ধবদিগকে লয়ে আমোদ প্রমোদ
করার উদ্দেশ্যে।যাহাতে চিত্তের কোনোরূপ উদ্বেগ
জন্মিতে পারে,এমন
কোনো কাজই বিশ্রামাগারে কেহ করেনা। বিশ্রামাগারে
কেবল আমোদ আর
আমোদ। ভক্তের প্রেমে বশীভূত হয়ে
শ্রীকৃষ্ণেও সর্বদা ভক্তের হৃদয়ে অবস্থান করেন, কেবল আনন্দ উপভোগ এবং আনন্দদান করার জন্য। তিনি ভক্তের
প্রেমরস আস্বাদন
করিয়া নিজে আনন্দ
উপভোগ করেন,
আর স্বীয় সৌন্দর্য
মাধুর্য্যাদি আস্বাদন
করাইয়া ভক্তকেও
আনন্দ দান করেন।
এই আনন্দের আদান প্রদান কার্য্যে
আনন্দ-স্বরূপ ভগবান এতই নিবিষ্ট
(গভীর মনোযোগ)
হয়ে পড়েন যে,ভক্তেরা তাঁহাকে
ছাড়া আর অন্য কিছু জানেন না, শ্রীকৃষ্ণেও ভক্তছাড়া
অন্য কিছুই জানেন না।তাই তিনি কখনও ভক্ত হৃদয়
ত্যাগ করিতে চাহেন না।এ সমস্ত কারণেই
বলা হয়েছে-----
"ভক্তের হৃদয়ে কৃষ্ণের সতত বিশ্রাম। ভক্তের হৃদয়ে তিনি সর্বদাই
আনন্দই উপভোগ করেন,কোনও সময়েই কোনরূপ
উদ্বেগাদির ছায়াও
সেস্থানে তাঁহাকে স্পর্শ করতে পারে না। কারণ ভক্ত কোনোরকম দুঃখ
দৈন্যের কথাই ভগবানকে জানান না। অন্তর্যামী রূপে
জীবমাত্রের হৃদয়েই
শ্রীকৃষ্ণ বিরাজিত। কিন্তু তাহা কেবল
নির্লিপ্ত (অনাসক্তি)
সাক্ষীরূপে। অন্তর্যামী জীবের হৃদয়ে কোনো রূপ
আনন্দ উপভোগ করেন না,জীবও তাঁহাকে উপভোগ
করাইতে চাহে না।
সুতরাং,ভক্ত-হৃদয়ে
শ্রীকৃষ্ণ যে আনন্দ
পান,জীবহৃদয়ে কৃষ্ণ
তাহা পান না।যেমন
বিচারালয়ে বিচার কার্য্যে রত বিচারকের কার্য্য
অনেকটা অন্তর্যামীর
কাজের মত, বিচার
প্রার্থীদের স্বার্থে যেমন নির্লিপ্ত, জীবের কাজেও ভগবান তেমন নির্লিপ্ত।আর প্রীতি
ভাজন আত্মীয়
স্বজনের মধ্যে,নিজ-
গৃহে বিচারক যখন
প্রীতিময় ব্যবহারের
আদান-প্রদান করেন,কোনও বিচার কার্য্য করেন না, এমনকি, তিনি
যে একজন বিচারক
নিজ লোকের কাছে তিনি ভুলে যান।তখন তাঁহার অবস্থা
অনেকটা ভক্ত-হৃদয়স্থ ভগবানের মত। আবার অন্তর্যামী রূপে শ্রীকৃষ্ণ জীবের শিক্ষা গুরু।জীবকে
শিক্ষা দেওয়া, হিতোপদেশ দেওয়া
তাঁহার কাজ। জীব
যখন অন্যায়কাজ বা অসচ্চিন্তা করতে
রত হয়, তিনি তখন
তাহাকে সদুপদেশ দেন, কিন্তু অভক্ত
বহির্ম্মুখ জীব তাহা
গ্ৰাহ্য করেনা।তিনিও
হিতোপদেশ দিতে,
তাহাকে সতর্ক করতে বিরত হন না।
এই রূপে পুনঃ পুনঃ ব্যর্থ হিতোপদেশ দিতে দিতে তিনি যেন শ্রান্ত(ক্লান্ত)
হয়ে পড়েন। কিন্তু
ভক্তের হৃদয়ে ভগবানের এ জাতীয়
ক্লান্তির সম্ভাবনাই
থাকে না। সেখানে তাঁহার সতত বিশ্রাম।
******************
দুই লাইনের ব্যাখ্যা।
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: ভাব ভরে গদ গদ আধ আধ বাণী।
অমিয়ার সার যেন পড়ে খানি খানি।।
* অদ্য মহাপ্রভুর ভাবখানি কেমন, ব্রজের ভাবে বিভাবিত। কেন হবে না? তিনি তো আর অন্য কেহ নহেন,
রাধাকৃষ্ণ এক আত্মা দুই দেহ ধরি।
অনন্যে বিলসয় রস
আস্বাদন করি।।
সেই দুই এক এবে
চৈতন্য গোঁসাই।
লীলারস আস্বাদিতে
দোঁহে হৈলা এক ঠাঁই।।
তাহা হইলে ব্রজের
রাধাকৃষ্ণ মিলিত তনু
(দেহ) আমার গৌর
হরি। রাধারাণী যেমন কৃষ্ণ ভাবনা ছাড়া আর কিছু জানতেন না, সেই তনু আজ কৃষ্ণ ভাবে
বিভোর। মহাপ্রভু সকল পার্ষদের সঙ্গে
আছেন বটে,কথাও
বলছেন, কিন্তু কথা
গুলো কেমন আধ আধ শোনাচ্ছে, যেমন দেখা যায় বা
শোনা যায় যে, মানুষ
কোন এক গভীর চিন্তায় থাকলে কেহ
যদি কিছু জিজ্ঞাসা
করে সেই সময় তার
কাছ হইতে স্পষ্ট কিছু উত্তর পাওয়া যায় না,আজ মহাপ্রভুর সেই অবস্থা।
* একটি ভালো কাহিনী শোনাই।
আগামী কাল লিখিব।
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: লোক-সঙ্ঘাতনালং
অর্থাৎ:-- চতুর্দ্দশ- ভূবনাত্মক- লোক
সমূহ যে পদ্মের
নাল সদৃশ।
*সূতিকাধাম:-- মানে
(জন্মস্থান)।
******************
গর্ভোদকশায়ী পুরুষ
ব্যষ্টি-ব্রক্ষ্মান্ডের অন্তর্য্যামী এবং ব্রহ্মার (হিরণ্যগর্ভের) অন্তর্য্যামী।ইনি সহস্রশীর্ষা।ইঁহা হইতেই ব্রহ্মা, বিষ্ণু,
ও শিব এই তিন
গুণাবতারের উদ্ভব।
* ব্রহ্মা ব্যষ্টিজীব সৃষ্টি করিলে পর,
গর্ভোদকশায়ী পুরুষ
নিজ অংশে এক একরূপে প্রত্যেক জীবের অন্তঃকরণে
প্রবেশ করেন,প্রতি জীবমধ্যস্থ এই স্বরূপই প্রতিজীবের
অন্তর্য্যামী পরমাত্মা।
পদ্মের মৃণালে চতুর্দ্দশভূবনের অন্তর্গত যে ধরণী আছে,তাহাতে একটি
ক্ষীরোদ-সমুদ্র আছে। এই ক্ষীরোদ-
সমুদ্রের মধ্যে ইনি
একস্বরূপে শয়ন
করেন বলিয়া ইঁহাকে
ক্ষীরোদশায়ী বলা হয়।ইনি গর্ভোদকশায়ীর অংশ বলিয়া নিত্যানন্দরামের
অংশের অংশের অংশের অংশ।ক্ষীরোদশায়ী বিষ্ণু
চতুর্ভুজ;ইনি গুণাবতার; অধর্মের
সংসার ও ধর্মের স্থাপনের নিমিত্ত ইনিই যুগাবতার ও
মন্বন্তরাবতার রূপে
অবতীর্ণ হইয়া জগৎ
কে রক্ষা করেন বলিয়া ইঁহাকে"পোষ্টা" বলা
হয়েছে।ক্ষীরোদশায়ী
কে তৃতীয়পুরুষও
বলে। এই তৃতীয়
পুরুষেই আবার অনন্ত(শেষ)রূপে স্বীয়(নিজ) মস্তকে
পৃথিবীকে ধারণ করিয়া আছেন। এই
জন্য অনন্তকে "ক্ষৌণভর্ত্তা" বলা হয়েছে।ক্ষৌণী= পৃথিবী।তাই দ্বিতীয়-
তৃতীয় পুরুষও নিত্যা
নন্দরামের কলা; এবং অনন্তদেব তৃতীয়পুরুষেরই এক
রূপ বলিয়া তাঁহাকেও নিত্যানন্দ
রামের কলা বলা হয়েছে। বস্তুতঃ অনন্তদেব তৃতীয় পুরুষের আবেশাব-
তার।
*সঙ্কর্ষণঃ কারণতোয়শায়ী
গর্ভোদশায়ী চ
পয়োহব্ধিশায়ী।
শেষশ্চ যস্যাংশকলাঃ স
নিত্যানন্দাখ্যরামঃ
শরণং মমাস্তু।।
অর্থাৎ=সঙ্কর্ষণ,
কারণাব্ধিশায়ী নারায়ণ,গর্ভোদশায়ী
নারায়ণ,ক্ষীরোদ-
শায়ী নারায়ণ এবং
অনন্তদেব ইহারা যাঁহার অংশ-কলা ,
সেই নিত্যানন্দনামক
বলরামের শরণ গ্ৰহণ করি।
কলা=অংশের অংশ
(ষোল ভাগের এক ভাগ কে বলা হয় অংশ,আর অংশের
ষোল ভাগের এক ভাগ কে বলা হয়
কলা)
******************
যেগুলো লিখিলাম
পড়ে বুঝা গেল?
√√√√√√√√√√√√√
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: শ্রীমতীর রসোদ্গার।
আনন্দ জলে ডুবে
নয়ন রাতা।
রাধামোহন দাসের
শরণ দাতা।।
*গৌরহরি কলিহত জীবের দুঃখ কষ্ট বেদনা দূর করিবেন বলিয়াই তিনি এবার
একেবারে আলাদা ভাবে আবির্ভাব হইলেন, তিনি বললেন------------
*চিরকাল নাহি করি
প্রেমভক্তিদান।
ভক্তি বিনা জগতের
নাহি অবস্থান।।
গোলোকে থাকিয়াই
তিনি চিন্তা করিলেন
যে আগত কলিযুগে
কলির জীবের মুক্তি
লাভের জন্য একমাত্র প্রেমভক্তি
বিনা কোন উপায় নেই।তাই তিনি প্রেম
ভক্তির জন্য চার বেদ,চতুর্দশ শাস্ত্র,ও
আঠারো পুরাণকে
আহ্বান করিলেন।
আমরা জানি যে
এই গুলো গ্ৰন্থমাত্র,
কিন্তু না, যখন তাঁদের আহ্বান করিলেন তখন তাঁহারা নিজ নিজ
স্বমূর্তিতে শ্রীকৃষ্ণের
নিকটে উপস্থিত হইলেন, এবং সাষ্টাঙ্গে দন্ডবৎ প্রণাম করিলেন।
শ্রীকৃষ্ণ তখন বললেন,তোমরা আমায় প্রেম ভক্তি
দাও, তাঁহারা বলিলেন যে,হে
ভগবন্!আমরা আপনার মুখ নিঃসৃত
বাণী দ্বারা গঠিত, বলিয়া নত মস্তকে
দাঁড়ায়ে রইলেন।
*(এখানে কি বুঝা গেল?যে চার বেদ,
চৌদ্দ শাস্ত্র,ও আঠারো পুরাণ কেবলমাত্র জ্ঞান ভান্ডার, প্রেম ভক্তির
নহে,(শ্রীকৃষ্ণ উদ্ধবকে বলেছিলেন
উদ্ধব- ন সাধয়তি মাং যোগো না সাংখ্যং ধর্ম্ম উদ্ধব।
ন স্বাধ্যায়স্তপস্ত্যাগো
যথা ভক্তির্মমোর্জ্জিতা।।
অর্থ্যাৎ- হে উদ্ধব!
যোগ, বৈরাগ্য,ধর্ম্ম,
জপ,তপস্যা,দান প্রভৃতি কিছুতেই আমাকে কেহ বশীভূত করতে পারে না, আমি একমাত্র
প্রেমভক্তিরই অধীন।
তাই চৈতন্য চরিতামৃতে বলেছেন
*ভক্তি বিনা জগতের
নাহি অবস্থান।
প্রেমভক্তি=মমতাময়ী শুদ্ধ- মাধুর্য্যময়ী
ভক্তি। যতদিন মায়িক বস্তুতে মন
পড়ে থাকবে ততদিন পর্যন্ত জীব নিত্য অবস্থান করতে পারবে না।মায়িক অভিনিবেশ দূরীভূত
হইলেই জীব স্বরূপে
(স্বরূপ বলিতে ভক্তি
মার্গে) অবস্থিত হতে
পারে।স্বরূপে অবস্থিত হইলেই তাহার সংসারে গতাগতি ঘুচিয়া যাবে, তখন জীব নিত্য ভগবদ্ধামে
অবস্থান করিয়া অপরিসীম আনন্দ
উপভোগ করতে পারে। কিন্তু ভক্তি ছাড়া এই অবস্থা লাভ করা যায় না।
******************
[5/3, 2:04 PM] +91 70011 38871: কালা কৃষ্ণদাস নামে
এক পরমভক্ত ছিলেন। বয়োবৃদ্ধ সরল,সহজ, উদার,
মহাভাগবত। কৃষ্ণ নাম ছাড়া আর কিছুই বলে না,কাউকে যদি ডাকতে হয়, কৃষ্ণ কৃষ্ণ শব্দ করে, তাঁর
সমস্ত ব্যবহারেই এক
মাত্র কৃষ্ণ নাম সঙ্গেত।তিনার একটি অভ্যেস, ছোট বড় বিচার না করে
পরিচিত সকল বৈষ্ণবের উচ্ছিষ্ট (এঁটো)গ্ৰহণ করেন। এই তাঁর আবাল্য সাধন।প্রত্যহ কিছু খাদ্যদ্রব্য নিয়ে তিনি
বৈষ্ণব বাড়ীতে যান,
গিয়ে বলেন, উচ্ছিষ্ট করে দিন,আমি তৃপ্তি
ভরে উচ্ছিষ্ট খাবার খাব।যদি কেউ উচ্ছিষ্ট না দেয়,তাহা
হইলে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেন যে
কোথায় ঐ বৈষ্ণব
খাবারের অবশিষ্ট
ফেলেন, তারপর সেই খান হতে উচ্ছিষ্ট কুড়িয়ে এনে
পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে খাইতেন।ঝড়ুঠাকুর নামে এক বৈষ্ণব ছিলেন, কিন্তু জাতিতে ভুঁইমালি। তাঁর বাড়ীতে কতক
গুলো আমার নিয়ে
একদিন হাজির হলেন কালাকৃষ্ণ।ঝড়ুঠাকুর ও তাঁর স্ত্রীকে আমি দিয়ে প্রণাম করলেন, এবং
অনেকক্ষণ কৃষ্ণ কথা বললেন।ঝড়ু
ঠাকুর বললেন, আমি নীচ জাতি আর তুমি সৎকুলোদ্ভব অতিথি
বলো কী দিয়ে তোমার সেবা করব?
আদেশ কর কোনো
ব্রাহ্মণের ঘরে তোমার আহারের ব্যবস্থা করি। তুমি যদি প্রসাদ না পাও,
অভুক্ত চলে যাও,
তাহলে আমার অমঙ্গল হবে।কালা
কৃষ্ণ বললেন, ঠাকুর, আমি পতিত,
আমি পামর(পাপী)
তোমাকে দর্শন করে
পবিত্র হতে এসেছি।
তোমার কাছে আমার শুধু এক প্রার্থনা, তোমার পদরজ(চরণধূলি)
দাও, আমার শিরে
(মাথায়) তোমার শ্রীচরণ রাখো।
এই কথা শুনে ঠাকুর
অস্থির হয়ে উঠলেন,
বললেন,ছি-ছি ও কি
কথা,ওকথা বলতে নেই, আমি নীচ জাতি আর তুমি সুসজ্জন, তুমি অমন
প্রার্থনা কোরো না।
কালাকৃষ্ণ বললেন শাস্ত্রে কী বলেছে?
শ্লোক আবৃত্তি করে
শোনালেন কালাকৃষ্ণ।চতুর্বেদী
ব্রাহ্মণও যদি ভক্তি-
শূণ্য হয় সে আমার
প্রিয় নহে,আর চন্ডালও যদি আমাতে ভক্তিমান
হয় সে আমার অতি প্রিয়।
*মুচি হয়ে সুচি হয়
যদি কৃষ্ণ ভজে।
সুচি হয়ে মুচি হয়
যদি কৃষ্ণ ত্যাজে।।
সুতরাং ভক্ত চন্ডালকেই সৎপাত্র
জ্ঞান করিয়া দান
করিবে তাঁর কাছ থেকেই প্রতিগ্ৰহ(গ্ৰহণ)করবে
সে যে আমারই মত পূজ্য। আবার বলি
শোনো- কৃষ্ণ চরণে
মতি নেই ভক্তি নেই
এমন দ্বাদশ-গুণযুক্ত
ব্রাহ্মণের চেয়ে শ্রীকৃষ্ণ চরণে মন,বাক্য,ও প্রাণ অর্পণ করেছেন এমন চন্ডালকেও শ্রেষ্ঠ মনে করি।কেননা সেই চন্ডাল
নিজের কুলকে পবিত্র করতে পারেন
কিন্তু সেই বহু গর্বিত
ভুরিমান ব্রাহ্মণ তাহা
পারে না।ঝড়ুঠাকুর
বললেন, হ্যাঁ,শাস্ত্রে তাহা বলেছে বটে কিন্তু আমার সেই ভক্তি কোথায়? আমি শুধু হেয়কুলেই
(অবজ্ঞার যোগ্য)জন্মেছি। কৃষ্ণ
ভক্তির কানাকড়িও
আমাতে নেই।কালা
কৃষ্ণ কথা শুনে কি আর করে, ফিরে চললাম।ঠাকুর কিছু দূর এগিয়ে দিয়ে পুন
ঘরে ফিরে এলেন।কালাকৃষ্ণ কি করলেন,যে পথ দিয়ে ঝড়ুঠাকুর হেঁটে
এলেন পথের ধূলোয়
ঠাকুরের পদচিহ্ন পড়ে আছে, সেই ধূলি তুলে কালাকৃষ্ণ
সর্বাঙ্গে মাখতে লাগিলেন,তারপর ঝোপঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকলেন। অতঃপর
ঠাকুর ঘরে ফিরে এসে সেই আম মানসেই শ্রীকৃষ্ণকে
নিবেদন করলেন।
তারপর উভয়েই সেই
প্রসাদ গ্ৰহণ করে আঁটি ও খোসা আস্তাকুঁড়ে ফেলে
দিলেন। কালাকৃষ্ণ তাহা দেখলেন,পরে
চুপিচুপি সেখানে গিয়ে চোষা আঁটি
কুড়িয়ে নিয়ে প্রসাদ
মনে করিয়া অতি ভক্তিভরে গ্ৰহণ করিলেন। সেই প্রসাদ আস্বাদনে চরম আনন্দ পেলেন।
*ভক্ত-পদধূলি আর
ভক্ত-পাদজল।
ভক্ত-ভুক্ত-অবশেষ
তিন মহাবল।।
এই তিনের সেবা থেকেই কৃষ্ণ প্রেমের
উল্লাস।ভক্তপদধূলিতে অভিষিক্ত (স্নান করা) না হওয়া পর্যন্ত
শুধু যাগযজ্ঞ তপস্যা
বা বেদপাঠ দ্বারা
ভগবৎতত্ত্বের জ্ঞানোদয় হয় না।
সাধুদের চরণধূলির
মধ্য দিয়েই পাওয়া যায় ভগবানের পদস্পর্শ।কালা কৃষ্ণ
তার সাক্ষী।
[5/3, 2:08 PM] +91 70011 38871: ডুবা তো যায় না, সংসার সাঁতার না ভুলিলে ডুবা তো যায় না,
দুর্বাসনা--তরঙ্গময় এই, সাঁতার---যায় না।
আমি আমার না ঘুচিলে,ডুবা-------না
এ সংসারে-আমি আমার না ঘুচিলে,
ডুবা তো যায় না।
আমি তোমার না হইলে,ডুবা-------না।
কায়মনোবাক্যে না বিকাইলে, ডুবা----
আমি তোমার হলাম বলে- কায়মনোবাক্যে না বিকাইলে,ডুবা ত যায় না।
[5/3, 2:08 PM] +91 70011 38871: চেতোদর্পণমার্জনং ভবমহাদাবাগ্নি-
নির্বাপণং।
শ্রেয়ঃকৈরবচন্দ্রিকাবিতরণং বিদ্যাবধূ
জীবনম্।।
আনন্দাম্বুধিবর্ধনং প্রতিপদং পূর্ণামৃতা-
স্বাদনং।
সর্বাত্মস্নপনং পরং বিজয়তে শ্রীকৃষ্ণ-
সংকীর্তনম্।।
*** চেতোদর্পণমার্জনং=( যাহা চিত্তরূপ বা মনরূপ দর্পণকে বা আয়নাকে মার্জিত বা শোধন করে)
ভবমহাদাবাগ্নিনির্বাপণং=(সংসাররূপ
দাবানলকে যাহা নির্বাপিত বা নিবিয়ে দেওয়া করে) শ্রেয়ঃকৈরবচন্দ্রিকাবিতরণং=( যাহা
মঙ্গল কুমুদের উপর জ্যোৎস্না বিতরণ করে।)বিদ্যাবধূজীবনং=( বিদ্যারূপ বধূর জীবনস্বরূপ।)আনন্দাম্বুধিবর্ধনং=
( যাহা আনন্দ সমুদ্রকে স্ফীত বা ফাঁপা বা বাড়িয়ে তোলা, করে)
প্রতিপদং পূর্ণামৃতাস্বাদনং=(প্রতি পদে পদে যাহার অমৃতের পূর্ণ আস্বাদ)
সর্বাত্মস্নপনং=( সকল দেহের পক্ষে স্নপনং মানে স্নানযোগ্য)শ্রীকৃষ্ণসংকীর্তনং পরং বিজয়তে= (সেই শ্রীকৃষ্ণসংকীর্তন সর্বোৎকর্ষের সঙ্গে জয়লাভ করছে।)
অর্থ্যাৎ== যাহা মনের আয়নাকে শোধন করে,(দর্পণ মানে আয়না)যাহা
সংসার-তাপরূপ মহাদাবানলকে নির্বাপিত করে বা নিবিয়ে দেয়। যাহা মঙ্গলরূপ কুমুদকে (কু মানে পৃথিবী আর মুদ মানে হৃষ্ট হওয়া অথ্যাৎ যাকে দেখিয়া পৃথিবীর সকলে হৃষ্ট হয়)( কুমুদ মানে শালুক ফুল) চন্দ্রের উদয়কালে এই ফুলের প্রকাশ হয় বলিয়া কুমুদ নাম।)হৃষ্ট মানে আনন্দ,
জ্যোৎস্না বিতরণ করে, যাহা বিদ্যারূপ বধূর প্রাণস্বরূপ,(যে সকল নারীর প্রকৃত বিদ্যা আছে তাহারা কোন সময়েই বিপথগামী হবে না)
যাহা আনন্দ-সমুদ্রকে স্ফীত করে,যার প্রতিপদেই পূর্ণামৃতের আস্বাদন,অর্থ্যাৎ সমস্ত রসেরই স্বাদ পাওয়া যায় এবং সর্বাত্ম(দেহের-মনের) তৃপ্তিজনক,
সেই শ্রীকৃষ্ণ নামসংকীর্তন সর্বোৎকর্ষের সঙ্গে জয়লাভ করে।
[5/3, 2:08 PM] +91 70011 38871: এমন দিন আমার কবে হবে,
তোমার নাম নিতে মোর অশ্রু ঝরবে,
আমার বদন সদা তোমার নাম করবে,
আমার সংসার বাসনা সব দূরে যাবে।
[5/3, 2:08 PM] +91 70011 38871: নয়নং গলদাশ্রুধারয়া বদনং গদগদ-
রুদ্ধয়া গিরা।
পুলকৈর্নিচিতং বপুঃ কদা তব নামগ্রহণে ভবিষ্যতি।।
*** তব নামগ্রহণে কদা=( তোমার নামগ্রহণে কখন) নয়নং গলদশ্রুধারা= ( নয়ন বিগলিত অশ্রুধারায় পূর্ণ হবে) বদনং গদগদ-
রুদ্ধয়া গিরা=( বদন গদগদবাক্যে রুদ্ধ হবে) বপুঃ পুলকৈঃ নিচিতং ভবিষ্যতি=( দেহ পুলকে পরিব্যপ্ত হবে)
অর্থ্যাৎ== হে ভগবন্! এমন দিন আমার কবে আসবে যে তোমার নামগ্রহণে বিগলিত অশ্রুধারায় আমার নয়ন ভরে উঠবে, আমার বদন গদগদবাক্যে রুদ্ধ হবে, সমস্ত দেহ পুলকে রোমাঞ্চিত হবে?
[5/3, 2:08 PM] +91 70011 38871: তোমরা অনুভব কর গো, শ্রীগুরু চরণ
হৃদে ধরি তোমরা অনুভব কর গো,
একবার ভেবে দেখ, শ্রীগুরু চরণ হৃদে ধরি একবার ভেবে দেখ, মোদের গুরু বিনা গতি নেই একবার ভেবে দেখ।
ভাগ্যবান জনে দেখছে, শ্রীগুরুদেবের আনুগত্যে ভাগ্যবান জনে দেখছে,
যাঁর-প্রেম নেত্রের বিকাশ হয়েছে, সেই, ভাগ্যবান জনে দেখছে,
আমরা কি দেখতে পাব না (মাতান)
আমাদের কি দেখাবেন না, পরম-করুণ গুরু সোনা আমাদের কি দেখাবেন না। করুণাময় দয়া করো--।
হৃদি-পটে এঁকে নাও,শ্রীগুরুর পাদপদ্ম হৃদি পটে এঁকে নাও, এই,অধমের প্রতি দয়া করো,(মাতান)
তোমরা, নিশিদিশি নাম কর, তাঁর কৃপাদত্ত সেই নাম নিশিদিশি নাম কর,
আর প্রাণ ভরে গান করো (মাতান)
কন্ঠহার কর রে, শ্রীগুরুদত্ত নামাবলী,
পাগল হয়ে গাও রে, পাগলা প্রভু হৃদে ধরে পাগল হয়ে গাও রে, হরি হরি হরিবোলে (মাতান)
[5/3, 2:08 PM] +91 70011 38871: গুরু কৃষ্ণরূপ হন শাস্ত্রের প্রমাণে।
গুরুরূপে কৃষ্ণ কৃপা করেন ভক্তগণে।
#গুরুরূপে কৃষ্ণ কৃপা= শ্রীগুরূদেবের যোগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণই ভক্তগণকে কৃপা করেন অর্থ্যাৎ দীক্ষা দান করেন।শ্রীকৃষ্ণের শক্তিতে শক্তিমান হয়েই শ্রীগুরুদেব শিষ্যকে দীক্ষাদি দানের দ্বারা কৃপা করেন বলিয়া শ্রী-
গুরুদেবকে কৃষ্ণতুল্য মনে করা হয় এবং গুরুরূপে শ্রীকৃষ্ণই ভক্তগণকে কৃপা করছেন বলা হয়।
* শ্রীমদ্ভাগবতের ১১|১৭|২৭পাই
আচার্য্যং মাং বিজানীয়ান্নাবমন্যেত কর্হিচিৎ।
ন মর্ত্যবুদ্ধ্যাসূয়েত সর্বদেবময়ো গুরুঃ
** আচার্যং =(দীক্ষাগুরুকে) মাং বিজানীয়াৎ=( আমি শ্রীকৃষ্ণ বলিয়াই
অথবা আমার প্রিয়ভক্ত বলিয়াই জানিবে)কর্হিচিত ন অবমান্যেত=( কখনো তাঁহার অবমাননা করবে না) মর্ত্যবুদ্ধা ন অসূয়েত=( মনুষ্যবুদ্ধিতে তাঁহার প্রতি
অসূয়া প্রকাশ অর্থ্যাৎ দোষ-দৃষ্টি করবে না।)যতঃ=(যেহেতু,) গুরুঃ সর্বদেবময়ঃ=( শ্রীগুরুদেব সর্বদেবময়)
অর্থ্যাৎ== শ্রীভগবান বললেন,উদ্ধব!
আচার্য্য অর্থ্যাৎ শ্রীগুদেবকে আমি (শ্রীকৃষ্ণ) বলিয়াই অথবা আমার প্রিয়ভক্ত বলিয়াই জানবে ; কখনো তাঁর অবমাননা করবে না কিংবা মনুষ্যবুদ্ধিতে তাঁর প্রতি দোষ-দৃষ্টি করবে না,কারণ শ্রীগুরুদেব সর্বদেবময়।
(২)শিক্ষাগুরুকে তো জানি কৃষ্ণের স্বরূপ।
অন্তর্য্যামী ভক্তশ্রেষ্ঠ এই দুই রূপ।।
*অন্তর্য্যামী ভক্তশ্রেষ্ঠ= শিক্ষাগুরু অন্তর্য্যামী ও ভক্তশ্রেষ্ঠ।এই দুইরূপে বিরাজিত।প্রতিটি জীবের অন্তর্য্যামী পরমাত্মা ; ক্ষীরোদশায়ী বিষ্ণুই প্রত্যেক জীবের অন্তর্য্যামীরূপে জীবের হৃদয়ে অবস্থিত।ইনি শ্রীকৃষ্ণের স্বাংশ বলিয়া শ্রীকৃষ্ণের স্বরূপ। প্রত্যেক জীবকেই তিনি শুভা
শুভ বিষয়ে ইঙ্গিত করেন। যাঁদের হৃদয় শুদ্ধ,তাঁহারাই এই পরমাত্মার ইঙ্গিত উপলব্ধি করতে পারেন।বাইরে দীক্ষাগুরু বা অন্য ভক্তের নিকট যাহা
শিক্ষা পেয়ে থাকে,অন্তর্য্যামী পরমাত্মাই তাহা হৃদয়ে অনুভব করিয়ে দেন।শুভাশুভ বা হিতাহিত
বিষয়ের ইঙ্গিত করেন বলিয়া এবং পরমাত্মাতত্ত্ব অনুভব করান বলিয়া অন্তর্য্যামীও শিক্ষাগুরু। আর ভক্তশ্রেষ্ঠ হলেন উত্তম অধিকারী ভক্ত। যিনি শাস্ত্র পারঙ্গম,সূক্ষ্ম সাধন-
বিচারে পুরুষার্থ নিরূপণে একমাত্র শ্রীকৃষ্ণকেই উপাস্য ও পরতত্ত্ব বলে দৃঢ় সিদ্ধান্তে উপনীত হন, এরূপ প্রগাঢ় শ্রদ্ধাযুক্ত ভক্তিপূর্ণ ব্যক্তিই
উত্তম অধিকারী।এমন উত্তম অধিকারী ভক্তই শিক্ষাগুরু হওয়ার উপযুক্ত।তবে শিক্ষাগুরু একাধিক হতে পারে কিন্তু দীক্ষাগুরু একজনই।
*শ্রীমদ্ভাগবতে পাই =১১|২৯|৬
নৈবোপযন্ত্যপচিতিং কবয়স্তবেশ ব্রহ্মায়ুষাপি কৃতমৃদ্ধমুদঃ স্মরন্তঃ।
যোহন্তর্বহিস্তনুভৃতামশুভং বিধুন্বন্না-
চার্যচৈত্যবপুষা স্বগতিং ব্যনক্তি।।
*** হে ঈশ=(হে প্রভো!)যঃ আচার্য চৈত্ত্যবপুষা=( যে তুমি বাহিরে গুরুরূপে উপদেশাদি দ্বারা এবং অন্তরে অন্তর্য্যামীরূপে সৎপ্রবৃত্তি দ্বারা ) তনুভৃতাং=( দেহধারী মনুষ্যদিগের)অন্তভং বিধুন্বন=( বিষয় বাসনাদি ভক্তির প্রতিকূল সকল অশুভকে দূরীভূত করিয়া)স্বগতিং ব্যনক্তি=(নিজরূপ প্রকাশ করিয়া থাক)কবয়ঃ =(সর্বজ্ঞ ব্রহ্মবিদগণ)
ব্রহ্মায়ুষাপি=( ব্রহ্মার সমান পরমায়ু পাইয়াও) তব অপচিতিং নৈব উপযান্তি=( সেই তোমার উপকারের প্রত্যুপকার দ্বারা ঋণশূন্যতা প্রাপ্ত হয় না) কৃতং স্মরন্ত ঋদ্ধমুদঃ=( তাঁহারা তোমার কৃত উপকার স্মরণ করিয়া পরমানন্দিত হবেন।
অর্থ্যাৎ== উদ্ধব মহারাজ ভগবানকে বললেন-- হে প্রভো! বাইরে গুরুরূপে উপদেশাদি দ্বারা এবং অন্তরে অন্তর্যামীরূপে সৎপ্রবৃত্তি দ্বারা, দেহধারী মানুষদের ভক্তির প্রতিকূল বিষয়-বাসনাদি সকল অশুভকে দূরীভূত করিয়া তুমি নিজরূপ প্রকাশ করিয়া থাক ; সর্বজ্ঞ ব্রহ্মবিদগণ ব্রহ্মার সমান পরমায়ু পাইলেও তোমার এই উপকারের প্রত্যুপকার
করে তোমার নিকটে অঋণী হতে পারেন না ; তোমার কৃত উপকার স্মরণ করিয়া পরমানন্দিত হন তাঁরা।
[5/3, 2:08 PM] +91 70011 38871: আরেকটু আস্বাদন করিঃ--------------
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দীক্ষাগুরুরূপে এবং ভক্তশ্রেষ্ঠরূপে জীবকে কৃপা করেন। এমনকি অন্তর্য্যামী পরমাত্মারূপেও জীবকে শিক্ষাদান করেন।জীবের বিষয় বাসনারূপ সকল অশুভকে দূরীভূত করে তাঁর চিত্তে ভক্তিভাবের
উন্মেষ ঘটান। জীবের হৃদয়ে ভক্তিভাবের উত্তরোত্তর বৃদ্ধির ও পরিপুষ্টির ব্যবস্থাও করেন।এইভাবেই
জীবের হৃদয় ভক্তির প্রভাবে সর্বদোষ শূন্য হয় এবং জীব পরমানন্দের অধিকারী হয়। ভগবানের এই মহৎ উপকারের কোনরকম প্রতিদানই সম্ভবপর নয়, বরং ভক্ত ভগবদ্ চরণে
আরও ঋণী হয়ে পরমানন্দ অনুভব করেন।ভগবান ভক্তের নিকট ঋণী হন ভক্তের ভক্তির উৎকণ্ঠা আকুলতা
বৃদ্ধিবশত,আর ভক্ত ভগবানের কৃপার দ্বারা ঋণী হন-- উভয়ে ঋণ পরিশোধের উত্তরোত্তর বৃদ্ধি প্রাপ্ত অফুরন্ত আনন্দ রসাস্বাদন করেন।
শ্রীমদ্ভাগবতে পাই ১০|১০
তেষাং সততযুক্তানাং ভজতাং প্রীতি
পূর্বকম্।
দদামি বুদ্ধিযোগং তং যেন মামুপযান্তি তে।।
সততযুক্তানাং=( যাঁহারা সতত আমাতে আসক্তচিত্ত) প্রীতিপূর্বকম্= (
যাঁহারা প্রীতিপূর্বক আমার ভজন করে) তেষাং তং বুদ্ধিযোগং দদামি= (
তাঁহাদের সেইরূপ বুদ্ধিযোগে আমি প্রদান করি) যেন তে মাং উপযান্তি= (
যাহার দ্বারা তাঁহারা আমাকে প্রাপ্ত হয়)
অর্থ্যাৎ== ভগবান অর্জুনকে বলছেন,
যাঁরা সতত আমাতে আসক্তচিত্ত হয়ে
প্রীতিপূর্বক আমার ভজন করেন, আমি তাঁদেরকে সেইরূপ বুদ্ধিযোগ প্রদান করি, যার দ্বারা তাঁরা আমাকে লাভ করেন
[5/3, 2:08 PM] +91 70011 38871: অনুরাগ = রাগের পরিণতির অবস্থার নাম অনুরাগ।
প্রণয়ের উৎকর্ষতাবশত যেখানে অত্যন্ত দুঃখকেও সুখ বলিয়া মনে হয়, সেখানে প্রণয়ের উৎকর্ষকে রাগ বলে।
এই রাগ বৃদ্ধি পেয়ে যখন এমন এক অবস্থায় আসে যাহাতে প্রিয়ব্যক্তিকে
সর্বদা অনুভব করা সত্ত্বেও মনে হয় যে, তাঁকে পূর্বে এইমত আর কখনো অনুভব করা হয়নি, ফলে প্রিয়ব্যক্তিকে প্রতি মুহূর্তেই নূতন নূতন বলিয়া মনে হয়, তখন সেই রাগকে অনুরাগ বলে।
[5/3, 2:08 PM] +91 70011 38871: #প্রেম#
সম্যঙ মসৃণিতস্বান্তো মমতাতিশয়াঙ্কিত।
ভাবঃ স এব সান্দ্রাত্ম বুধৈঃ প্রেমানিগদ্যতে।।
(ভক্তিরসামৃতসিন্ধু )
যাহা দ্বারা হৃদয় সম্যক্ রূপে নির্মল হয়, যাহা অত্যন্ত মমতাযুক্ত, যাহা অত্যন্ত ঘনীভূত, তাহাকেই
পন্ডিতগণ "প্রেম" বলিয়া থাকেন।
""কবিরাজ গোস্বামীপাদের প্রেমের সংজ্ঞা""
আত্মেন্দ্রিয় প্রীতি ইচ্ছা তারে বলি কাম।
কৃষ্ণেন্দ্রিয় প্রীতি বাঞ্জা ধরে প্রেম নাম।।
কামের তাৎপর্য্য নিজ সম্ভোগ কেবল।
কৃষ্ণ সুখ তাৎপর্য্য প্রেম মহাবল।।
#প্রেম লক্ষণ#
অনেক বিপদে মন কিঞ্চিৎ না টলে।
প্রেমের লক্ষণ সেই সাধু শাস্ত্রে বলে।।
(শ্রীশ্রীভক্তমাল গ্রন্থ )
#স্নেহের লক্ষণ#
সেই প্রেম পরিপাকে হৃদয়ে তে রয়।
স্নেহ নাম ধরি সুখ অধিক বাঢ়য়।।
(শ্রীশ্রীভক্তিমাল গ্রন্থ )
#মান লক্ষণ#
স্নেহ পরিণামে তবে মান নাম হয়।
বক্রগতি শোভা হয় রস সুখময়।।
(ঐ)
#প্রণয় লক্ষণ#
মান পরিপাকেতে বিশ্বাস মিত্র বৃত্তি।
সখ্য দুই ভাঁতি হয় সুখের উন্নতি।।
প্রণয় বলিয়া তবে হয়তো আখ্যান।
প্রণয়ের পরিপাকে রাগের লক্ষণ।।
(ঐ)
# রাগ লক্ষণ#
বহু যে দুঃখেতে সুখ করিয়া মানয়।
ঈষৎ না টলে মন রাগ সেই হয়।।
(ঐ)
দর্শনে শ্রবণে রাগ দুইতো প্রকার।
সাক্ষাৎ দর্শন এক চিত্রপটে আর।।
(রসকল্পবল্লী গ্রন্থ )
#অনুরাগ লক্ষণ#
প্রিয় মুখ কমল যে যখন দেখয়ে।
নূতন নূতন বুদ্ধি প্রতিক্ষণে হয়ে।।
দেখিয়াও দেখি নাই মনে উপজয়ে।
তৃপ্তি নাহি হয় অনুরাগের বিষয়ে।।
(শ্রীশ্রীভক্তমাল গ্রন্থ )
শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণের আদি রস দুই ভাগে বিভক্ত করিয়া রসকল্পবল্লীর গ্রন্থকার শ্লোক রচনা করেছেন -----------------------------------------------------
বিপ্রলব্ধ-সম্ভোগ দুই করিয়ে গণন।
উজ্জ্বল মধুর রসে দুই প্রয়োজন।।
এই বিপ্রলব্ধ তবে চতুর্বিধাখ্যান।
পূর্বরাগ প্রবাস, প্রেম-বৈচিত্র্য আর মান।।
# বিপ্রলব্ধ শ্রেণীবিভাগ সম্বন্ধে শ্রীশ্রী ভক্তমাল গ্রন্থে এই শ্লোক পাওয়া যায় --------------------------
পূর্বরাগ, মান, প্রেম-বৈচিত্র্য, প্রবাস।
চারি ভেদ হয় বিপ্রলব্ধের প্রকাশ।।
#পূর্বরাগ লক্ষণ#
সঙ্গমের পূর্বে যেই দেখিয়া শুনিয়া।
জনময়ে রাগ লোভ হৃদয়ে পশিয়া।।
সেই পূর্বরাগ তার বিষয় যে শুন।
দর্শন শ্রবণ বসু ভেদ কহি পুনঃ।।
(শ্রীশ্রী ভক্তমাল গ্রন্থ )
*** সঙ্গ নহে রাগ জন্মে কহি পূর্বরাগ।
( রসকল্পবল্লী গ্রন্থ )
# অষ্ট নায়িকা #
১, অভিসারিকা ২, বাসকসজ্জা ৩, উৎকন্ঠিতা
৪,বিপ্রলব্ধা ৫,খন্ডিতা ৬,কলহান্তরিতা ৭, স্বাধীন-
ভর্তৃকা ৮, প্রোষিত ভর্তৃকা।
(১) অভিসারিকার লক্ষণ----------------
"কান্তার্থিনী তু যা যাতি সঙ্কেতং ষাভিসারিকা"
অভিসারের আগে হয় দুইত ধরণ।
নায়ক গমন কিম্বা নায়িকা গমন।।
(রসকল্পবল্লী গ্রন্থ )
** এই অভিসারিকা নায়িকাও রসমঞ্জরী গ্রন্থে অষ্ট প্রকার নামে অভিহিতা।
(১) জ্যোৎস্না (২) তামলী (৩) বর্ষা (৪)দিবা (৫)
কুঞ্ঝটিকা (৬)তীর্থযাত্রা (৭) উন্মত্তা (৮)সঞ্চারা।
** প্রথম হতে ছয় প্রকার অভিসারিকায় লক্ষণ শব্দ দ্বারাই অনুভব হয়। উন্মত্তা ও সঞ্চারার লক্ষণ এই।( মুরলীক নাদ যব শুনই শ্রবণে।
উন্মত্ত হইয়া চলে নায়ক মিলনে।।)
( রসমঞ্জরী গ্রন্থ )
** সঞ্চারাভিসারিকার লক্ষণ---------------------
অনঙ্গ রসে মহাপীড়া আশঙ্কিত মন।
নিজ গৃহে স্থির নহে মন উচাটন।।
নিজো অঙ্গের বেশ করতে না পারে।
ভুজে নূপুর দেয় কঙ্কন পদে ধরে।।
অঞ্জন কপালে দেয় সিন্দুর অধরে।
উন্মত্ত হয় সেই মুরলীর স্বরে।।
(২) বাসকসজ্জা নায়িকার লক্ষণ
প্রিয়ের সহিত বিলাসের আশা করি।
গৃহ শয্যা মাল্য তাম্বুল স্নিগ্ধ বারি।।
চন্দনাদি নানা গন্ধ বসন ভূষণ।
সাজায় করিয়া সাধ প্রিয়ের কারণ।।
(শ্রীশ্রীভক্তমাল গ্রন্থ )
বাসকসজ্জা নায়িকা আবার অষ্ট প্রকার------
(১) মোহিনী (২)জাগর্তিকা(৩)রোদিতা(৪)মধ্যোক্তিকা
(৫)সুপ্তিকা(৬)প্রগলভা(৭)সুরসা ও (৮)উদ্দেশা)।
***মোহিনী নায়িকার লক্ষণ =
সজ্জা করি মোহিনী রহে সখীর সহিতে।
গোবিন্দকে করিবে মোহ অনুমান চিতে।।
***জাগর্তিকা নায়িকার লক্ষণ=
নিজে অঙ্গের ভূষা করি করে জাগরণ।
উঠি বসি দ্বারে যায় করে নিরীক্ষণ।।
*** রোদিতা নায়িকার লক্ষণ=
বিলাপ করিয়া ধনি করে রোদন।
অন্তরে হরষ হয় নায়ক মিলন।।
*** মধোক্তিকা নায়িকার লক্ষণ=
নিকুঞ্জ কানুন ধনি করে পরিষ্কার।
নিজে গুণ গরিমা কিছু করয়ে বিস্তার।।
নায়ক আইলে যে মতে করিবে মিলন।
মনে কত আশা করে কেলি সোঙরণ।।(স্মরণ)
***সুপ্তিকা নায়িকার লক্ষণ=
কুসুম শয়ানে সদা শয়নে উল্লাস।
সখী সঙ্গে করে সদা হাস পরিহাস।।
*** প্রভলভা নায়িকার লক্ষণ=
প্রগলভা একাকী রহে কুঞ্জেতে বসিয়া।
নায়ক আসিবে বলি উল্লসিত হিয়া।।
কিশলয় শেজ করে বকুল বিছাই।
দ্যুতিকে তর্জন করি সঘনে পাঠায়।।
*** সুরসার লক্ষণ ==========
নিজ মন্দিরেতে রহে নির্ভর হইয়া।
বস্ত্র আভরণ পনে শেজ বিছাইয়া।।
দূত পাঠাইয়া জানে নায়ক সম্বাদ।
বিলম্ব দেখিয়া কিছু করে অনুবাদ।।
উদ্দেশার লক্ষণ=====
নানা বেশ করি রহে সংকেতে যাইয়া।
নায়ক আসিবে মনে উলসিত হিয়া।।
নায়ক উদ্দেশ্যে নিজ সখীরে পাঠাই।
নানা উপচার করি মঙ্গল গায়।।
(৩) উৎকন্ঠিতা ---------
প্রিয় আগমন যবে শীঘ্র না করয়।
পথপানে চাহি রহে উৎকণ্ঠা হৃদয়।।
বিরহ তাপিত অতি করে বিলাপ।
নয়নে গলয় বারি কহয়ে প্রলাপ।।
সখীগণ আশ্বাস করে কত মত।
এখনই আসিবে প্রিয় স্থির কর চিত।।
(শ্রীশ্রীভক্তমাল গ্রন্থ )
উৎকণ্ঠিতা কান্ত পথ করে নিরীক্ষণ।
কতক্ষণ হইবেক মোর নায়ক মিলন।।
(রসমঞ্জরী গ্রন্থ )
* এই উৎকন্ঠিতা নায়িকা অষ্ট প্রকার যথা----
(১) উন্মত্তা(২) বিকলা (৩) স্তব্ধা (৪)চকিতা (৫)
অচেতনা (৬) সুখোৎকন্ঠা(৭)প্রগলভা ও (৮)নির্বন্ধা।
*** উন্মত্তা (পাগলিনী)------
*** বিকলা ------------
নায়ক না দেখি ধনী হয়তো বিকলা।
পথ পানে চাহি ধনী হইয়া চঞ্চলা।
*** স্তব্ধা -------
ক্ষণে ওঠে ক্ষণে বৈসে কাতর বদনী।
নায়ক বিলম্বে নখে লিখয়ে ধরনের।।
শয্যায় শয়ন ক্ষণে কামাতুরা হয়ে।
ক্ষণে ক্ষণে উঠে ধায় তমাল দেখিয়ে।।
*** চকিতা ==
ক্ষণেক বিরহ করে নানা অনুতাপ।
ক্ষণে ক্ষণে কহে ধনী বচন প্রলাপ।।
*** অচেতনা --- অচেতন অবস্থা প্রাপ্তা।
***সুখোৎকন্ঠিতা ====
পূরবে মুগধা যেন করয়ে বিলাস।
সেই কথা মনে গুণি করয়ে উল্লাস।।
***প্রগলভা =
শয্যা ত্যজিয়া রামা ক্ষণে বাহিরায়।
ক্ষণে মূরছিত তনু কান্দে উভরায়।।
ক্ষণে বাহিরায় ক্ষণে চলে আধ পথ।
দূতী সহ কলহ করয়ে অনুরত।।
*** নির্বন্ধা===
কেলি শয্যাতলে রহে রজনী বঞ্চিয়া।
সঙ্কেতে বসিয়া রহে নির্বন্ধ করিয়া।।
দৈব নির্বন্ধে কান্দ আসিতে না পায়।
সকল রজনী ধনী কান্দিয়া পোহায়।।
(৪) বিপ্রলব্ধা--------------------------
সখির আশ্বাসে ধনী স্থির করি মন।
প্রিয় আগমন পথ করে নিরীক্ষণ।।
বৃক্ষের যে পত্রে পত্রে শব্দ যদি হয়।
ঐ আইলো প্রিয় বলি উঠিয়া বৈঠয়।।
দ্যুতি পাঠাইয়া দিল প্রিয়ার কারণে।
ফিরিয়া আইসে দ্যুতী বজ্র হেন মানে।।
এইরূপ বিচ্ছেদ বিষয়ে নিশি যায়।
না আইলো যবে তবে মানবতী হয়।।
# এই বিপ্রলব্ধা আট প্রকার=====
1, নির্বন্ধা 2,প্রেমমত্তা 3, ক্লেশা 4,বিনীতা 5, নিন্দয়া 6, প্রখরা 7, দূত্যাদরী 8, চর্চিতা।
( নির্বন্ধার লক্ষণ দেওয়া হয়েছে )
** প্রেমমত্তা ------
নানা আভরণ পড়ি রহয়ে সঙ্কেতে।
জাগিয়া পোহায় নিশি কান্দিতে কান্দিতে।।
আপন যৌবন দেখি কান্দিয়া বিকল।
নিশি পরভাত হইল নহিল সফল।।
** ক্লেশার লক্ষণ---
নায়ক আইলো ঘরে জানিয়া নিশ্চয়।
সহচরী সঙ্গে সব দুঃখ কথা কয়।।
** বিনীতার লক্ষণ--
বিরহে বিনয় বাক্যে কহয়ে সখিরে।
ঝাঁপ দিবো আজি আমি যমুনার নীরে।।
** নিন্দয়ার লক্ষণ---
সখীমুখে শুনি আজি নায়ক না আইলো।
মিথ্যা সংকেত মানি রজনী পোহালো।।
হার মালা আভরণ ছিড়িয়া ফেলায়।
পুষ্প মালা আদি সব জলেতে ভাসায়।।
** প্রখরার লক্ষণ ----
জাগিয়া নয়নের জল নিরবধি ঝরে।
বিরহে বিলাপ করি কান্দে উচ্চৈঃস্বরে।।
** দূত্যাদরীর লক্ষণ---
নায়ক আসিবে স্বরে সংকেত জানিল।
কোকিলের ধ্বনি হেন শব্দ শুনিল।।
গুরুজন জাগি ঘরে উঠিল সত্বরে।
নায়ক বিমুখ হইয়া গেল নিজের ঘরে।।
*** চর্চিতার লক্ষণ মানে রাগান্বিতা।
(৫) খন্ডিতা -----
অন্য নায়িকা ভোগ করিয়া নায়ক।
আইসে অঙ্গতে নখ-চিহ্নাদি যাবক।।
দেখিয়া কোপিতা মনে র্ভৎসনাদি করি।
উপেক্ষা করয়ে যে খন্ডিতাবতী নারী।।
&খন্ডিতা নায়িকা অষ্টপ্রকার যথা -----
1,ধীরা 2, বিদগ্ধিকা 3, ক্রোধা 4, প্রগলভা 5, মধ্যা
6, মুগ্ধা 7, রোদিতা 8, প্রেমমত্তা।
(৬) কলহান্তরিতা
মান অন্তে প্রিয়ার বিচ্ছেদ সূচন।
অনুতাপ সেই কলহান্তরিতার লক্ষণ।।
&& এই কলহান্তরিতা নায়িকা আট প্রকার।
1, আগ্রহ 2, বিকলা 3, ধীরা 4, অধীরা 5, কোপনবতী 6, মন্থরা 7,সমাদরা 8,মুগ্ধা।
(৭) স্বাধীন ভর্তৃকা-------------------------------
নায়িকার অধীনমতে বেশাদি রচন।
নায়ক করয়ে স্বাধীন ভর্তৃকা লক্ষণ।।
আলুয়াইয়া কেশ করে বেণীর রচন।
কুচযুগে করে পত্রাবলীর লিখন।।
চিবুকে কস্তুরী বিন্দু নাসায় তিলক।
গলে মণিহার দেয় চরণে যাবক।।
চুম্ব আলিঙ্গন করে হিয়া আনন্দিত হিয়া।
আজ্ঞা করিতে থাকে কর পরশিয়া।।
** এই স্বাধীন-ভর্তৃকা নায়িকা অষ্টপ্রকার।
স্বাধীন ভর্তৃকা কথা শুন দিয়া মন।
কোপনা মানিনী মুগ্ধা মধ্যা বিচক্ষণ।।
উক্তকা উল্পাসা অনুকূলা অভিষেকা।
স্বাধীন ভর্তৃকা এই অষ্ট কৈল লেখা।।
1, কোপনা 2,মানিনী 3,মুগ্ধা 4,মধ্যা 5,উক্তকা
6, উল্পাসা 7, অনুকূলা ও 8,অভিষেকা।
(রসমঞ্জরী গ্রন্থ )
""প্রেম-বৈচিত্র্যর লক্ষণ""
দম্পতির পরম্পর প্রমোৎকর্ষ হয়।
অধিকীর্তিরত্যা সেই বিচারি না লয়।।
অঞ্চলে বান্ধিয়া রত্ন চাহি ফিরে ঘরে।
লোকেতে থাকিয়া হয় বিচ্ছেদ অন্তরে।।
""প্রবাস লক্ষণ""
সাধারণত প্রবাসকে দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করা যাইতে পারে। (১) দূর প্রবাস (২) নিকট প্রবাস।
** নায়ক প্রবাসে থাকলে নায়িকার বিরহ উপস্থিত
হয়, সেই বিরহিনী নায়িকাকে "প্রোষিতভর্তৃকা" বলা হয়।
প্রোষিতভর্তৃকা যার প্রিয় দূর দেশ।
বিরহিনী অঙ্গ মলিন নাহি বান্ধে কেশ।।
চিন্তিয়া আকুল দীন মন অঙ্গ হীন।
হায় হায় হুতাশ করয়ে রাতি দিন।।
** প্রোষিতভর্তৃকা নায়িকার বিরহকে তিন শ্রেণীতে
বিভক্ত করা যাইতে পারে। 1, ভাবী বিরহ 2, ভবন
বিরহ ও 3,ভূত বিরহ। (এই তিন প্রকার বিরহে দশপ্রকার অবস্থার উল্লেখ প্রাপ্ত হওয়া যায়।
(লালাসোদ্বেগ জাগার্য্যাস্তানবংজড়িমাএতু।
বৈয়গ্রংব্যাধিরুন্মাদো মোহোমৃত্যু-র্দশাদশ।।)
1, চিন্তা 2,জাগরণ 3,উদ্বেগ 4,ক্ষীণ 5,মলিন
6,প্রলাপ 7,ব্যাধি 8,উন্মাদ 9,মূর্ছা 10, মৃত্যু।
""সম্ভোগ লক্ষণ""
দরশন আলিঙ্গন চুম্বনাদি করি।
তাহে যে উপজে সুখ সম্ভোগ বিচারি।।
তাহাতে যে ভেদ দুই মুখ্য আর গৌণ।
মুখ্য চেতন আর গৌণ স্বপন।।
""মুখ্য সম্ভোগ""
মুখ্য পুনঃ চারিভেদ সংক্ষিপ্ত, সংকীর্ণ।
সম্পন্ন,সমৃদ্ধিমান চারি মুখ্য গণ্য।।
"" সংক্ষিপ্ত সম্ভোগ""
পূর্বরাগ পরে কৃষ্ণ সঙ্গে যে মিলন।
সংক্ষিপ্ত সম্ভোগ বলি তাহার গণন।।
""সংকীর্ণ সম্ভোগ""
মানের পশ্চাতে যে সম্ভোগ উপজয়।
সংকীর্ণ সম্ভোগ বলি গণন তাহায়।।
""সম্পন্ন সম্ভোগ""
প্রবাস হইতে প্রিয় আসিয়া সম্ভোগ।
সম্পন্ন যে সেই যাতে সর্ব উপভোগ।।
"" সমৃদ্ধমান সম্ভোগ""
পরবশ বাধা হইতে ছুটিয়া দর্শন।
দুর্লভ দর্শন সম্ভোগ বিচক্ষণ।।
রসময় সর্ব উপচয় তাহে হয়।
সম্ভোগসমৃদ্ধিমান করিয়া বহয়।।
""গৌণ সম্ভোগ""
স্বপনেতে নানারঙ্গ রসের সংযোগ।
তাহাতে যে সুখ সেই গৌণ সম্ভোগ।।
স্বপন দেখিয়া ধনী অতি প্রমোদিত।
সখীর সহিত কহে করিয়া বিদিত।।
# দূতী#
দূতী দুই প্রকার-- স্বয়ং দূতী ও আপ্ত দূতী।
অতি অনুরাগে লাজ ত্যজি প্রিয় সনে।
মিলিবারে চাহে স্বাভিযোগের কারণে।।
স্বয়ং দূতী সেই স্বয়ং দূতী পানা করি।
প্রিয়সনে মিলে গিয়া আপনি সুন্দরী।।
তাহাতে যে তিন ভেদ বাক্য কায় নয়ন।
বাক্যের অনেক ভেদ না যায় বর্ণন।।
## আঙ্গিক##
অঙ্গুলির ধ্বনি করি মুখে দেয় হাত।
অন্যমনে ভুল বাক্য কহে সখি সাথ।।
চরণের বৃদ্ধাঙ্গুলে ধরণী খোদয়।
কর্ণকন্ডুয়ণ করি স্তন দরশয়।।
সখির কন্ঠেতে ধরি করে আলিঙ্গন।
পুনর্বার ছাড়ি করে তাড়ন ভৎসন।।
চঞ্চল নয়ানে পুনঃ ইথি উথি চাহে।
স্তম্ভ প্রায় রহে অকারণ বাক্য কহে।।
অধর দংশন করে সখীর কর্ণেতে।
মিছামিছি কহে কথা ধরিয়া কন্ঠেতে।।
## চাক্ষুষ##
ঈষত নয়ানে হরি বদন ফিরায়।
হাসি হাসি চাহি পুনঃ নয়ন ঢুলায়।।
মুদিত নয়ান পুনঃ আধ আধ হেরি।
কটাক্ষ করয়ে বাম নয়ান পশারি।।
(জয় নিতাই, ভুল ভ্রান্তি মার্জনীয়)
[5/3, 2:43 PM] +91 70011 38871: *একটি গৌরচন্দ্রিকা*
*বিরলে বসিয়া একেশ্বর*
*হরিনাম জপে নিরন্তর*
*অব-অবতার শিরোমণি*
*অকিঞ্চন-জন-চিন্তামণি*
** আজ অবতার শিরোমণি এবং অকিঞ্চন শিরোমণি জগৎজীবন শ্রী
গৌরাঙ্গসুন্দর একেশ্বর (একলা) নির্জনে বসিয়া নিরন্তর (সবসময়) শ্রী
হরিনাম জপ করছেন।
*সুগন্ধি-চন্দন-মাখা-গায়*
*ধূলি বিনু আন নাহি ভায়*
*মণি-ময়--- রতন----ভূষণ*
*স্বপনে না করে পরশন*
**আমার শ্রীগৌরসুন্দর কুসুম-কোমল
স্বর্ণপ্রতিমাতুল্য যে শ্রীঅঙ্গে সুগন্ধি- চন্দন লিপ্ত(লেপন) থাকত, আজ তাহা (প্রেমে ভূমিতে লুন্ঠন হেতু)ধূলি ধূসরিত।অর্থ্যাৎ তিনি কৃষ্ণ-কৃষ্ণ বলিয়া ভাবে বিভোর হইয়া কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি দিচ্ছেন, সর্বাঙ্গ ধূলায় ভরে গেছে।)
আর পূর্বে কৃষ্ণলীলায় শ্রীযশোদানন্দনরূপে নিরন্তর মণিমুক্তাখচিত আভরণে শোভিত থাকতেন,আজ (নবদ্বীপ লীলায়) সে সকল ভুলে স্বপ্নেও স্পর্শ করছেন না।
(এই লীলাটির ক্ষেত্রে)।
*ছাড়ল লখিমী-বিলাস*
*কিবা লাগি তরুতলে বাস*
*ছাড়ল বনমালা বাঁশী*
*এবে দন্ড ধরিয়া সন্ন্যাসী*
**ঐশ্বর্য্য ভোগ বিলাস ত্যাগ করে কি কারণে বৃক্ষতল বাসী? পত্র-পুষ্প-ময়ী
আপাদলম্বিত মাধুর্য্যবিকাশী বনমালা,
প্রাণপ্রিয় সর্বাকর্ষী বংশী ত্যাগ করে সন্ন্যাসী বেশে দন্ডধারণ করেছেন।
বাকী পরে
[5/3, 2:44 PM] +91 70011 38871: *হাস-বিলাস উপেখি*
*কান্দিয়া ফুলায় দুটি আঁখি*
*বিভূতি করিয়া প্রেম-ধন*
*সঞে লঞা সব অকিঞ্চন*
*প্রেম-জলে করই সিনান*
*কহে বাসু, বিদরে পরাণ*
**পূর্বে প্রেমবিলাসে প্রেয়সীগণসহ প্রেমবিলাস উপেক্ষা করিয়া,এবে নয়নযুগল ক্রন্দন করতে করতে ফুলে গেছে।শ্রীকৃষ্ণপ্রেমকেই অঙ্গের বিভূতি
অর্থ্যাৎ প্রেমবিকার জনিত পুলকাশ্রু কম্পাদি সাত্ত্বিক ভাবমন্ডিত হয়ে তদ-
গতৈকপ্রাণ ( নিজ অনুগত প্রাণের) ভক্তগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রেমবারিতে
(স্বেদ-অশ্রুজলে) স্নান করছেন। গৌর
সর্বস্ব প্রাণ পদকর্তা বাসুদেব ঘোষ বলছেন,প্রাণগৌরের এই সকল কারুণ্যলীলা প্রত্যক্ষ দর্শনে আমার প্রাণ বিদীর্ণ হচ্ছে।
*জয় নিতাই*
*********************************
*দেখ দেখ সোই! মূরতিময় মেহ*
*কাঞ্চন কাঁতি, সুধা জিনি মধুরিম*
*নয়ন চসক, ভরি লেহ।।*
*শ্যামল বরণ, মধুর-রস ঔষধি*
*পূরব যো,গোকুল মাহ*
*উপজল জগত, যুবতী উমতাওল*
*যো সৌরভ পরবাহ।।*
*যো রস বরজ, গোরী,কুচমন্ডল*
*মন্ডন-বর,করি রাখি*
*তে ভেল গৌর, গৌড় অব আওল*
*প্রকট প্রেম সুরশাখী*।।
*সকল ভূবন সুখ, কীর্তন সম্পদ*
*মত্ত রহল দিনরাতি*
*ভবদব কোন্? কোন কলি-কল্মষ*
*যাহা হরিবল্লভ ভাতি*
** ওগো!ওগো নদেবাসী! দেখ দেখ মূর্তিময় মেঘ। মেঘের রূপ কেমন? স্বর্ণের ন্যায় উজ্বল পীতবর্ণ এবং অমৃতনিন্দি মধুরাস্বাদ-- ঐ রূপামৃতে নয়নরূপ পানপাত্র পূর্ণ করে নাও।পূর্বে যিনি গোকুল মধ্যে শ্রীশ্যামসুন্দর
রূপে প্রকটিত হয়ে ব্রজজনের জীবন ধারণের ঔষধিরূপ হয়েছিলেন। যে সৌরভ-প্রবাহ জগতের যুবতীগণকে উন্মত্ত করেছিলেন, ব্রজসুন্দরীগণ যে
রসস্বরূপকে কুচমন্ডলের শ্রেষ্ঠ ভূষণরূপে রেখেছিলেন= সেই হেতু অর্থ্যাৎ ব্রজসুন্দরীর কুচকান্তির সংস্পর্শহেতু শ্যাম-মধুররস-ঔষধি গৌরবর্ণ ধারণ করে প্রেমকল্পতরুরূপে
আজ গৌরমন্ডলে প্রকট হয়েছেন এবং সকল ভূবনের সুখবিধানকারী
কীর্তন-সম্পদে দিবারাতি মত্ত রয়েছেন। গীতকর্তা পরমপূজ্য শ্রীল-
বিশ্বনাথ চক্রবর্তীপাদ শ্রীমন্ গৌরসুন্দরের কীর্তনসম্পদে বিভূষিত
প্রেমোল্লাসময় মূরতির স্ফূর্তিতে বিভোর হয়ে বলছেন= যে হৃদয়ে বা যেথায় এইরকম ভূবনমঙ্গল কীর্তনসম্পদ সদা বিরাজিত,তথায় সংসার দাবানলের ভয় কি? আর কলিকল্মষ কি করতে পারে?
&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&
*(ধনি গো আজু) পেখনু,বালা-খেলি*
*(যব)মন্দির বাহির-ভেলি।*
*নব জলধরে বিজুরী রেখা*
*ধন্দ বাড়াইয়া গেলি।।*
*(সে যে)অল্পবয়সী বালা*
*(যনু)গাথনি পহুঁপ মালা।*
*থোরি দরশসে আশ না পূরল*
*বাঢ়ল মদন জ্বালা।।*
*(সে-যে)গোরী কলেবর লূনা*
*(যনু)কাজরে-উজোর-সোনা*
*কেশরী জিনিয়া মাঝারি খিনী*
*দুলহ লোচন কোণা*
*ঈষৎ হাসনি সনে, (মুঝে)*
*হানল নয়ন বাণে*
*চিরঞ্জীব রহু পঞ্চগৌড়েশ্বর*
*কবি বিদ্যাপতি ভণে*
**কোন এক সখীর প্রতি কৃষ্ণের উক্তি--, সখী গো! আজ এক নব বালিকার খেলা দেখলাম। সে যখন মন্দির (মহল বা ঘর) হতে বাহির হল,
যেন নবমেঘ হতে বিদ্যুৎরেখা বহির্গত হল এবং আমার ধাঁধাঁ বাড়িয়ে চলে গেল।ওগো প্রাণ সখী! সেই অল্পবয়স্কা বালার প্রত্যঙ্গ যেন গ্রথিত
পুষ্পমালার ন্যায় সুন্দর, তাঁর অল্প দর্শনে আমার দর্শন আশা পূর্ণ হল না,
কেবল মদন-যন্ত্রণা বৃদ্ধি হয়েছে।আহা
তার অঙ্গখানি যেন কজ্জলোজ্জ্বল স্বর্ণের ন্যায় গৌরাঙ্গিনী ও কৃশা এবং লাবণ্যময়ী। কেশরী নিন্দিত ক্ষীণকটি। কিন্তু তার লোচনকণা অর্থ্যাৎ কটাক্ষ সর্বউপমা রহিত বা দুর্লভ।মৃদুমন্দ হাস্য মিশ্রিত নয়নবাণে আমাকে যেন বিদ্ধ করেছে। পঞ্চগৌড়েশ্বর রাজা শিবসিংহের সভা
কবি বিদ্যাপতি রাজাদেশে তাঁর প্রীতির নিমিত্ত গীত রচনা করেন= সে
জন্য এ গীতের ভণিতায় রাজাকে
""চিরঞ্জীব রহু"" এই বাক্যে আশীর্বাদ করেছেন।
ভুল ভ্রান্তি মার্জনীয়
লিখনী সেবা- শ্রীজয়দেব দাঁ
বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ= বাঁশবাড়ী, থানা=ইংরেজ বাজার, জেলা=মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ-৭৩২১০১
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*কি হেরিনু ওগো মাই,বিদগধ-রাজ*
*ভকত-কলপতরু, নবদ্বীপ মাঝ*
*পিরিতির-শাখা সব, অনুরাগ পাতে*
*কুসুম আরতি,তাহে,জগত মোহিতে*
*নিরমল-প্রেমফল--ফলে সর্বকাল*
*এক ফলে নব-রস ঝরয়ে অপার*
*ভকত-চাতক,পিক,শুক অলি,হংস*
*নিরবধি বিলসয়ে রস পরশংস*
*স্থির চর সুর নর,যার ছায়া-পোষে*
*বাসুদেব বঞ্চিত আপন কর্ম দোষে*
** ওগো মা!আজ কি দেখলাম?রসিক শেখর(শ্রীকৃষ্ণই) নবদ্বীপে কল্পতরুরূপে অবতীর্ণ হয়েছেন।প্রীতিই(ভালবাসাই) তাঁর শাখা সকল,
অনুরাগ পত্র বা পাতা,আর্তিরূপ কুসুম যা জগত মোহিত করে। এইবৃক্ষে সর্বকাল নির্মল প্রেমফল ফলে,আর একটি ফলে অপার- নবরস (শৃঙ্গার-হাস্য-করুণ-বীভৎস্য-
রৌদ্র-বীর-ভয়-অদ্ভুত-শান্ত) নিসৃত ( প্রবাহিত ) হচ্ছে।চাতক-কোকিল-শুক-ভ্রমর ও হংসাদির ন্যায় (মতো)অধিকার ভেদে
ভক্তগণ আপন আপন অনুরূপ রস আস্বাদন তৎপর হয়ে নিরন্তর রসের প্রশংসা করছেন।যাঁর ছায়ায় (যে কল্পতরুর ছায়ায়) স্থাবর-জঙ্গম-দেবতা-মানব সকলেই
শান্তিলাভ করছেন।পদকর্তা বাসুদেব ঘোষ নিরন্তর গৌর প্রেমরসে নিমজ্জিত ও আস্বাদনে বিভোর থাকলেও দৈন্যক্তি সহ বলছেন, আমি আপন কর্মদোষে বঞ্চিত রইলাম।
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*একটি ব্রজলীলার পদ*
*এ সখি! কি পেখনু এক অপরূপ*
*শুনইতে মানফি,স্বপন স্বরূপ*
*কমল-যুগল পর,চন্দ কি মাল*
*তা-পর উপজল তরুণ-তমাল*
**সখির প্রতি শ্রীরাধারাণীর উক্তি=
এ সখি! কি এক অপূর্ব দর্শন করলাম। সখি তুই যদি শ্রবণ করিস স্বপ্ন বলে মনে করবি। আহা-হা তাঁর চরণ দুইটি যুগল পদ্মতুল্য।আর দশ-
পদাঙ্গুলিতে চন্দ্রতুল্য উজ্জ্বল নখসমূহ।তরুণ-তমাল অর্থ্যাৎ নবজলধরতুল্য শ্যামতনু তদুপরি-----
*তা-পর বেঢ়ল বিজুরীক-লতা*
*কালিন্দী-তীর ধীর চলু যাতা*
*শাখা-শিখর সুধাকর পাঁতি*
*তাহে নবপল্লব অরুণক ভাঁতি*
** নবজলধরতুল্য শ্যামতনু তদুপরি
বিদ্যুৎলতাতুল্য উজ্জ্বল পীতবসন।
আহা-হা-হা যমুনার তীরধরে ধীরপদে
কি সুন্দর ভাবে গমন করছেন।হস্তাঙ্গুলির নখসমূহ উজ্জ্বল চন্দ্রতুল্য।
নবপল্লবের মতো অরুণবর্ণ ( বালার্ক বা সূর্য্য উদয় হবার পূর্ব অবস্থায় যে লোহিতবর্ণ সূর্য্য ) হস্তাঙ্গুলি।
*বিমল-বিম্বফল-যুগল বিকাশ*
*তা-পর কীর,থির কুরু আশ*
*তা-পর চঞ্চল-খঞ্জন জোর*
*তা-পর সাপিনী ঝাপল মোর*
** ওষ্ঠ-অধর বিম্বফল সদৃশ রক্তিম।
তদুপরি শুকপাখীর ঠোঁটের ন্যায় নাসিকা।নেত্রদ্বয় চঞ্চল খঞ্জনযুগের ন্যায়।তার উপর বেনীর (মোর= ময়ূর) পুচ্ছের চূড়া।
*এ সখি রঙ্গিণী!কহলু নিদান*
*পুন হেরইতে হামো হরল গেয়ান*
*ভণই বিদ্যাপতি ইহ রস ভান*
*সু-পুরুখ মরম তুহু ভালে জান*
** ওরে রঙ্গিণী সখী আমার স্বপ্নের মতো ভ্রান্তির কারণ বললাম। কি বলব, পুনরায় দর্শন করতে অজ্ঞান হয়ে গেলাম। পদকর্তা বিদ্যাপতি সখীভাবে বলছেন,রাধে!ইহাতে তোমার রসের ভাণ মাত্র, তুমি সুপুরুষের মর্ম ভালভাবেই জানো।
লিখনী সেবা- শ্রীজয়দেব দাঁ
বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ= বাঁশবাড়ী, থানা=ইংরেজ বাজার, জেলা=মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ-৭৩২১০১
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
++++++++++++++++++++++++
*আবেশে অবশ অঙ্গ ধীরে ধীরে চলে*
*ভাব-ভরে গরগর,আঁখি নাহি মেলে*।।
*পূরব চরিত যত,পিরীতি কাহিনী*
*শুনি পহুঁ মূরছিত লোটায় ধরণী*
*পতিত হেরিয়া কান্দে নাহি বান্ধে থির*
*কত শত ধারা বহে নয়নের নীর*
*নাচে পহুঁ রসিক সুজান*
*যার গুণে দরবয়ে দারু পাষাণ*
*পুলকে মন্ডিত শ্রীভূজ যুগ তুলি*
*লোলিয়া লোলিয়া পড়ে হরি হরি বলি*
*কুলবতী ঝুরে মনে ঝুরে দুটি আঁখি*
*ঝুরিয়া ঝুরিয়া কান্দে বনের পশু পাখী*
*যার ভাবে গৃহবাসী ছাড়ে গৃহসুখ*
*বলরাম দাস সবে এরসে বিমুখ*
** আমার শ্রীগৌরসুন্দরের পূর্বালীলা।
অর্থ্যাৎ শ্রীবৃন্দাবন লীলার আবেশে অবশ শরীরে ভাবনিধি গৌরহরি পথে ধীরে ধীরে গমন করছেন।এমন ভাবা
বেশে তাঁর অন্তর গরগর, যে তিনি নয়ন মুদিয়া থাকেন।আবার কখনও পূর্বলীলার চরিতকথা ও প্রেমের কাহিনী শ্রবণে আমার প্রাণগৌর মূর্ছিত হয়ে ধরণীতে গড়াগড়ি দিতে থাকেন।পতিত অর্থ্যাৎ জড়বিষয় ভোগাসক্ত ভক্তিহীন বহির্মুখ জীবের
নানা দুর্দশা দর্শনে ক্রন্দন করতে থাকেন, এই অবাধ্য সন্তানদের জন্য তিনি নিজেকে স্থির হতে পারেন না।
শত শত ধারে অশ্রু বহিতে থাকে।
রসিকজন শিরোমণি প্রভু যখন নৃত্য করতে থাকেন, আহা- যাঁর গুণে কাষ্ঠ
পাষাণও দ্রবীভূত অর্থ্যাৎ গলে যায়।
যখন শ্রীমন্মহাপ্রভু পুলকভূষিত বাহু-
যুগল উত্তোলন করে হরি হরি বলিয়া লুটিয়া লুটিয়া পড়তেন,তাহা দর্শনে কুলবতীগণের অন্তর ক্রন্দন করত এবং সেই কুলবতীগণের অশ্রুজল নির্গত হত।শুধু তাহাই নহে, ওগো ভক্তগণ, বনের পশু-পাখীও কেঁদে নয়নের জল ফেলত। গীতকর্তা বলরাম দাস করুণায় অবতীর্ণ পরমকরুণ শ্রীগৌরসুন্দরের কারুণ্যলীলা প্রত্যক্ষ উদিত হওয়ায়
নিজ প্রতি দুঃখ প্রকাশ করে বলছেন,
যে করুণাময়ের কারুণ্য প্রভাবে গৃহবাসীজন ও আজন্ম অভ্যস্ত গৃহসুখ ত্যাগ করল, আর সবেমাত্র আমি (বলরামদাস) এ রসে বিমুখ রইলাম। জয় নিতাই গৌর হরিবল।
লিখনী সেবা- শ্রীজয়দেব দাঁ
বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ= বাঁশবাড়ী, থানা=ইংরেজ বাজার, জেলা=মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ-৭৩২১০১
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*কি পেখলু বরজ, রাজ-কুল-নন্দন*
*রূপে হরল পরাণ*
*নিরমিয়া রস-নিধি, আমারে না দিল বিধি*
*প্রতি অঙ্গে লাখ নয়ান*
** অদ্য রাজ কুল নন্দন, অর্থ্যাৎ নন্দ রাজার পুত্র,বনমালী গোষ্ঠবিহারী শ্রীগোবিন্দ গোচারণ করিয়া গৃহে প্রত্যাবর্তন( ফিরবার) সময়ে শ্রীবৃষভানু নন্দিনী প্রেমময়ী প্রেমভাব
স্বরূপিনী শ্রীরাধাঠাকুরাণী তাঁর(কৃষ্ণের) রূপমাধুর্য্য দর্শনে তন্মাধুর্য্য ভাবাবেশে (মন সমাপন করে ভাবের আবেশে)ঘরে এসে,গৃহ মধ্যে বসে আপন মনে ব্যক্ত(প্রকাশ)
করছেন, সেই সময়ে ঘরে ললিতা, বিশাখা প্রভৃতি কোন সখীগণ তাঁর ( রাধা)সঙ্গে ছিলেন না। ঘরে বসে একাকিনী বলছেন, ব্রজ রাজকুল নন্দনের কি অপূর্ব রূপ দর্শন করলাম। আহা-হা সেই রূপমাধুর্য্য
দর্শন করে আমার প্রাণ হরণ করেছে।
অহো! বিধাতার কি কারুকার্য্য, বিধাতা সেই রসনিধি নির্মাণ করেছেন, কিন্তু আমার প্রতি অঙ্গে কেন লাখ নয়ন দিল না, এই দুই নয়নে কি সেই রূপমাধুর্য্য দর্শনের সাধ মিটে?
*একে সে চিকণ তনু* *কাঞ্চন অভরণ*
*কিরণহি ভূবন উজোর*
*দরশনে লোরে* *আগোরল লোচন*
*না চিনিনু কালো কি গোর*
** ও-হ-হ, একে তাঁর চাকচিক্যময় তনু,মসৃণ ও উজ্বল দেহ,তাহাতে স্বর্ণ
অভরণের (সোনার অলঙ্কারে) প্রতিফলিত দীপ্তিতে জগত আলোকিত হয়ে উঠেছিল। তাঁহাকে দর্শন মাত্র,ওহহ, আনন্দাশ্রুতে অর্থ্যাৎ
তাঁকে দেখা মাত্র আমার এতই আনন্দ হল যে,(আমাদের এই মায়ার সংসারে
প্রায়শ দুঃখের কান্নায় জর্জরিত হয়ে নয়ন ভেসে যায়, তাতে কোন সুখ বা আনন্দ নেই, কিন্তু কৃষ্ণ কথায়,কৃষ্ণ দর্শনে যে অশ্রু নির্গত হয় তাহাই আনন্দাশ্রু) নয়ন আচ্ছাদিত( নয়ন বুজে যাওয়া) হওয়ায় তাঁর দেহখানি কালো কি গোর(ফর্সা) চিনতে পারলাম না।
*সহজে দৃগঞ্চল*,*অরুণ কঞ্জ দল*
*তাহে কত ফুল শর সাজে*
*দিঠি মোর পরশিতে*,*ও হাসি অলক্ষিতে*
*শেল রহল হৃদি মাঝে*
** স্বাভাবতঃ তাঁর দৃগঞ্চল (নেত্রাঞ্চল)
অরুণ ( বালার্ক, রৌদ্র উঠবার পূর্ব অবস্থায় দৃশ্যমান লোহিতবর্ণ সূর্য্য)
পদ্মদল(পাপড়ি) সদৃশ,পাপড়ির মত দেখতে। আহা, তাতে কত কন্দর্প শোভা পাচ্ছে,তাহাতে (তাঁর নেত্রে) আমার দিঠি (দৃষ্টি)পড়তেই তাঁর ( শ্রীগোবিন্দের) হাসি ফুটে উঠল,
আর সেই হাসি অলক্ষিতে ( অলক্ষভাবে,গোপনে,অগোচরে বা অজ্ঞাতসারে) আমার হৃদয়ে শেল বিদ্ধ হয়ে রইল।
*সরল-কপোল*, *লোল মণি-কুন্ডল*
*ঝাঁপল দিনকর-ভাব*
*ও রূপ লাবণী*, *দিঠি ভরি না পেখনু*
*দুখিয়া অনন্ত দাস*
**শ্রীরসরাজের চিত্তাকর্ষক ( মন আকর্ষণকারী) রসমাধুর্য্যময় কপোলে
(গন্ডে বা গালে) দোদুল্যমান ( অনবরত দুলছে এমন) মণিময় কুন্ডল প্রতিফলিত জ্যোতিতে দিবাকর কিরণ (সূর্য্যালোক) আবরিত
(অর্থ্যাৎ সূর্য্য অস্ত হওয়ায়) ওরূপ-
লাবণ্য নয়ন ভরে দর্শন করতে পারলাম না। শ্রীমতী রাধারাণীর এই সকল কথা শুনে পদকর্তা অনন্ত দাস
সখীভাবে নিকটে গিয়ে সমবেদনা জানিয়ে বললেন, ওগো প্রেমময়ী!
আমিও তোমার দুঃখে দুঃখী।
*ভুল ভ্রান্তি মার্জনীয়*
লিখনী সেবা- শ্রীজয়দেব দাঁ
বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ= বাঁশবাড়ী, থানা=ইংরেজ বাজার, জেলা=মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ-৭৩২১০১
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*যহি যহি নিকসই তনু-তনু-জ্যোতি*
*তহি তহি বিজুরী-চমক মতি হোতি*
** প্রেমময়ী শ্রীমতীর অভিন্ন প্রাণ,প্রেমময় শ্রীগোবিন্দ, সখী সঙ্গে যমুনাতীরে আগতা শ্রীরাধারাণীর রূপ
মাধুর্য্য দর্শনে মুগ্ধ (মোহ প্রাপ্ত হয়ে) শ্রীগোবিন্দ কোন সখিকে বলছেন, আজ যমুনাতীরে এক অপূর্ব দর্শন,ও
সুন্দরী রমণীমণিকে দেখলাম। কি দেখলাম-- তাঁর শ্রীঅঙ্গের সুচিকণ (সুন্দর,মসৃণ,সমুজ্বল বা চকচকে) জ্যোতি যেখানে যেখানে পতিত হয় বা পড়েছে, সেই সেই স্থানে(জায়গায়) যেন বিদ্যুতের দীপ্তি প্রকাশিত হয়, পদকর্তা বলছেন, না না সেই বিদ্যুৎ নহে, গগনে যে বিদ্যুতের ছটা দেখা যায়, তা নয়নে দেখলে নয়ন ঝলসিয়ে যায়, কিন্তু সেই রমণীমণির প্রভাই তপ্ত শরীর সুশীতল হয়,তাই নয়, দর্শন মাত্রেই দেহ,মন ও প্রাণ ঐ শ্রীচরণে অর্পণ হয়ে যায়।
*যহি যহি অরুণ-চরণ চলি চলই*
*তহি তহি থল-কমল-দল খলই*
** আর কি দেখলাম জানো সখি?
দেখলাম যে যে স্থানে তাঁর অরুণ চরণ, আহা-হা-হা, (অরুণ= বালার্ক, রৌদ্র উঠবার পূর্বাবস্থায় দৃশ্যমান লোহিতবর্ণ সূর্য্য) অর্থ্যাৎ যে যে স্থানে সেই অরুণ চরণ ফেলছেন, সেই সেই
স্থানে স্থলপদ্মের পাপড়ি ( অনেকটাই মন হরণ করা গোলাপ ফুলের পাপড়ির মতো )খসে পড়ে।
*দেখলু কো ধনি,সহচীর মেলি*
*হামারি জীবন সঞে করতহি খেলি*
** আরোও দেখলাম, সেই অত্যাশ্চর্য্য
রমণীমণি সখিসনে মিলিত হয়ে আমার প্রাণের সঙ্গে খেলা করছে। আমি অনুভব করছি, সেই রমণীমণি ও তাঁর সখীগণ আমার প্রতি আড় দৃষ্টি রেখে, আমার সম্বন্ধে কি যেন বলছেন, আর একেক জনের অঙ্গিভঙ্গি দেখে মনে হলো তাঁরা আমাকে তাদের একজন করে আমাকে নিয়ে খেলা করছে। পদকর্তা
বলছেন, চৈতন্য চরিতামৃতে শ্রীপাদ কৃষ্ণ দাস কবিরাজ গোস্বামী কলম দিয়াছেন= রাধা-কৃষ্ণ এক আত্মা দুই দেহ ধরি। অনন্যে বিলসয় রস আস্বাদন করি।। তোমার আর ঐ রমণী রাধারাণীর মধ্যে কোন ভিন্নতা
নেই, তাই তোমার এমনটি মনে হচ্ছে।
তোমাকে নিয়ে ওঁরা খেলা করছে।
*যহি যহি ভঙ্গুর-ভাঙ বিলোল*
*তহি তহি উছলল,কালিন্দী কলোল*
** শ্রীকৃষ্ণ আরো বলছেন, (ভঙ্গুর= সহজেই বা একটুতেই ভেঙ্গে যায়)
বিলোল=চঞ্চল, যে যে জায়গা দিয়ে যাচ্ছেন মনে হচ্ছে,সেই সেই স্থানে যমুনার শ্যামতরঙ্গ উচ্ছলিত হচ্ছে।
*যহি যহি তরল দৃগাঞ্চল পড়ই*
*তহি তহি নীল উতপল বন ভরই*
** সেই রমণীমণির অপাঙ্গদৃষ্টি বা বক্রদৃষ্টি পড়ছে,সেই সেই জায়গায় নীলপদ্মের বনে পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
*যহি যহি হেরিয়ে মধুরিম হাস*
*তহি তহি কুন্দ, কুমুদ পরকাশ*
** আর যে যে জায়গায় তাঁর মুখ হতে মাধুর্য্যমন্ডিত হাসি বেড়চ্ছে, তথা তথা
কুন্দ=শ্বেতবর্ণ, জুঁই ফুলের ন্যায় গন্ধ বিশেষ, কুমুদ= কু অর্থে পৃথিবী আর মুদ অর্থে হৃষ্ট হওয়া, কুন্দ ও কুমুদ
(শালুক,রক্তোৎপল বা রক্তবর্ণ পদ্ম
বিকশিত হয়ে উঠছে।
*গোবিন্দ দাস কহে মুগধল কান?*
*চিন লহু রাই,চিনই নাহি জান?*
** সখী ভাবাবিষ্ট গোবিন্দ দাস বলছেন, শ্রীকৃষ্ণকে বিমুগ্ধ দর্শন করে,
হে বিমুগ্ধ কানু! তাহাকে তুমি জেনেও জানো না, ও তোমার চিরপরিচিতি প্রিয়তমা রাধা।
( ভুল ভ্রান্তি মার্জনীয়, নিজের মত করে সাজিয়ে নিবে)
লিখনী সেবা- শ্রীজয়দেব দাঁ
বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ= বাঁশবাড়ী, থানা=ইংরেজ বাজার, জেলা=মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ-৭৩২১০১
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
********************************
** অন্তরে একমাত্র "শ্রীকৃষ্ণের আনুকূল্য(সহায়তা)করবার যে প্রবৃত্তি
(ইচ্ছা) তারই নাম প্রেম। বিচারপূর্বক
চিন্তা করলে এই আনুকূল্য অনুশীলনময়ী প্রবৃত্তি জন্মাতে পারে না।অর্থ্যাৎ আমি নিজে নিজে অভ্যাস করে যায়, কোন সদ্ সঙ্গ বা শ্রীগুরদেবের বাক্য না শুনি। ভাবনা রাখতে হবে, কিসে তাঁর (শ্রীকৃষ্ণের)সুখ হয় কিসে তাঁর দুঃখ হয়,এইরকম বিচার করলে যথেচ্ছা-
চারিতা (উচ্ছশৃঙ্খলতা)এসে যায়, এতে কিন্তু প্রেমজ্ঞ হওয়া যায় না।
*হে সখি!* অতএব প্রেম আসতে পারে না।যখন চিত্ত(মন)রাগযুক্ত ( ভালবাসার যোগ্য )হয়,তখন চিত্তে একমাত্র প্রিয়সুখ,তাৎপর্য্য ব্যতীত অন্য কোন অভিলাষ থাকে না এবং যখন চিত্ত বিচার ও অবিচার এই উভয় বিবজ্জিত (শূন্য)হয়,ভাল-মন্দ
বিচারের জায়গা থাকে না। আর সে সময়ে প্রিয়জনকে সুখী দেখলে যে সুখ হয়,সেই সুখ স্থভাবে অধিরূঢ় হয়ে
স্বাভাবিক চেষ্টাগুলির দ্বারা প্রেমকে দেখিয়ে দেয়।তাৎপর্য্য এই যে, প্রেমের উদয়ে মনের কতকগুলি বিশেষ অবস্থা হয়, যেমন সেইসময়ে চিত্ত রাগযুক্ত হয়,অতিশয় দুঃখের কারণ বস্তুও প্রিয়জন লাভের সম্ভবনায় প্রণয় উৎকর্ষ হেতু চিত্তের যে অবস্থায় পরম সুখরূপে অনুভূত হয় এবং প্রিয়জন প্রাপ্তির অসম্ভবনায় সুখও দুঃখরূপে অনুভূত হয়,চিত্তের সেই অবস্থাকে রাগ বলে। প্রেমের উদয়ে মনের অপর একটি অবস্থার কথা বলি, যখন চিত্ত শুদ্ধ হবে, অর্থ্যাৎ প্রিয়জন সুখ তাৎপর্য্য ব্যতীত অন্য কোন ইচ্ছেই তখন মনে উদিত হবে না। *তৃতীয় অবস্থা* মন বিচার- অবিচার উভয় রহিত হবে, অর্থ্যাৎ প্রেমের পরিচয় করবার বৃত্তিও মন থেকে উঠে যাবে। প্রেমের স্বাভাবিক অনুভাব বা সাত্ত্বিক ভাব দেখে প্রেমের
পরিচয় হয়, প্রেম বুঝতে হলে এ ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।
লিখনী সেবা- শ্রীজয়দেব দাঁ
বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ= বাঁশবাড়ী, থানা=ইংরেজ বাজার, জেলা=মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ-৭৩২১০১
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
১,যে সাতজন মুনি-
পত্নী ছিলেন তাঁরা পূর্ব জন্মে কে ছিলেন? তাঁদের নাম
কি ছিল, তাঁদের স্বামীর নাম কি ছিল?
উঃ, তাঁরা সপ্ত ঋষির
পত্নী ছিলেন,মরীচি পত্নী কলা, অঙ্গিরা পত্নী শ্রদ্ধা, অত্রি পত্নী
অনুসূয়া,পুলস্ত্য পত্নী
হবিরভূ,পুলহ পত্নী গতি, ক্রতু পত্নী ক্রিয়া,ও বলিষ্ঠ পত্নী
অরুন্ধতী।মুনিগণ ব্রহ্মার মানস পুত্র ছিলেন,এই মুনিগণই
সপ্তর্ষি মন্ডল, সপ্ত ঋষি। ব্রহ্মার মন হইতে মরীচি,চক্ষু হইতে অত্রি,মুখ হইতে অঙ্গিরা,নাভি হইতে পুলহ, কর্ণ দ্বয়
হইতে পুলস্ত্য, হস্ত হইতে ক্রতু,ও প্রাণ
হইতে বশিষ্ঠর জন্ম।
২,কী কারণে মর্তে
আসিতে হয়েছিল?
উঃ মুনি পত্নীগণ সকলেই রূপে গুণে
অনুপমা,সুশীলা, স্ব ধর্মরতা, এবং পতিব্রতা। তাঁহারা সকলেই নবযৌবন-
সম্পন্না, শোভাশালিনী,দিব্য-
বস্ত্রপরিহিতা, রত্না-লঙকার শোভিতা,
তপ্ত কাঞ্চনের ন্যায়
সমুজ্জলা এবং সহাস্যবদনা ছিলেন।
সেই সময় অগ্নি তাঁহাদের সুন্দর মুখ ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গাদির
শোভা দেখিয়া মদন-
মোহিত হয়ে পড়িলেন, এবং হোম
কুন্ডের মধ্য হইতেই
বহুতর শিখাবিস্তার
পূর্বক তাঁহাদের অঙ্গ
স্পর্শ করিয়া কামাবেগে আত্মহারা
ও অচেতন হয়ে গেলেন।(মুনি পত্নীগণ হোম কুন্ডের
কাছেই বসে কথা বলছিলেন)
মুনি পত্নীগণ তাহাদের পতিরচরণ
ছাড়া আর কিছুই জানেন না, তাঁহারা
অগ্নির মনোভাব বা
তাঁহাদের দর্শনে ও
অঙ্গ স্পর্শে অগ্নির
কামবিকার কিছুই
বুঝতে পারলেন না।
কিন্তু সপ্ত ঋষির অন্যতম মহাতেজা
অঙ্গিরা ঋষি অগ্নির
মনোভাব জানতে পারিয়া তৎক্ষণাৎ
অগ্নিকে শাপ প্রদান
করিলেন- "তুমি সর্ব ভক্ষক হও"অঙ্গিরার
শাপবাক্যে অগ্নির চেতনা লাভ হইল এবং নানাভাবে ঋষির স্তুতি করিয়া
অগ্নি লজ্জাবনত বদনে হোম কুন্ডে
অবস্থিত হইয়া ব্রহ্ম
তেজে কম্পিত হইতে
লাগলেন। রাগান্বিত
ঋষি অঙ্গিরা তখন,
অগ্নি স্পৃষ্ট রমণীদের
বললেন- তোমরা সকলে পাপ যুক্তা হয়েছ, অতএব তোমরা মনুষ্য যোনিতে জন্ম গ্রহণ
কর। তোমরা ভারত
বর্ষে ব্রাহ্মণ কুলে জন্ম গ্রহণ করিবে এবং আমাদেরই
কুলোৎপন্ন ব্রাহ্মণগণ তোমাদের
বিবাহ করিবেন।মহাতেজা ঋষির শাপবাক্য শ্রবণ করিয়া পত্নীগণ রোদন করিতে লাগিলেন এবং জোড়হাত করিয়া
ঋষিকে বলতে লাগলেন,হে মুনি শ্রেষ্ঠ!আমরা আপনার চরণে কোনই অপরাধ করি
নাই,আমরা যদি অজ্ঞান বশতঃ পর
পুরুষ স্পৃষ্ট হয়ে থাকি,তাহা হইলে আমাদের পরিত্যাগ
করা কর্তব্য নহে।
(আজ এই পর্যন্ত)
লিখনী সেবা- শ্রীজয়দেব দাঁ
বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ= বাঁশবাড়ী, থানা=ইংরেজ বাজার, জেলা=মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ-৭৩২১০১
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামের
গোষ্ঠ বেশ খুলিয়া
তাহাদের সর্বাঙ্গে হাত বুলিয়ে ও মুখ
নিরীক্ষণ করিতে করিতে বনের কুশল
জিজ্ঞাসা করেন।তারপর শরীর শান্ত
হইলে তাঁহাদের স্নান
করাইয়া নব বস্ত্র
পরিধান করাইয়া
ভোজন স্থানে নিয়ে
যান।রাম- কৃষ্ণ দুই
ভাইকে মাতৃদত্ত চর্ব,
চূষ্য,লেহ্য,পেয়,অন্ন
ভোজনে পরিতৃপ্ত হইয়া শয়ন কক্ষে গমন করিলে, দুগ্ধ
ফেননিভ(দুধের ফেনার মতো অতি
শুভ্র কোমল)শয্যায়
শয়ন করান।মা যশোদা ও রোহিণী
তাহাদের অঙ্গে মৃদু
মৃদু হস্ত মার্জন করিতে লাগিলেন,
তাহাতে রাম- কৃষ্ণ
দুই ভাই পরমানন্দে
ঘুমিয়ে পড়লেন।
*****************
একটু অন্য রকম
উত্তর গোষ্ঠ।
বানান, ভুল ভ্রান্তি মার্জনীয়।
বিরাম।
মতামত জানাইলে ধন্য হইব।
জয়নিতাই জয়গৌর।
লিখনী সেবা- শ্রীজয়দেব দাঁ
বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ= বাঁশবাড়ী, থানা=ইংরেজ বাজার, জেলা=মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ-৭৩২১০১
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
এই ভাবে অঙ্গ প্রত্যঙ্গের অসীম সুষমা (লাবণ্য বা সৌন্দর্য) ছাড়াইতে
ছাড়াইতে শ্রীকৃষ্ণ
গোচারণ ভূমি হইতে
ব্রজের পথে প্রত্যা-
গমন করেন। তখন
তাঁহাকে দেখিয়া
নিকটস্থ (কাছের)
স্থাবর জঙ্গম সর্ব
প্রাণীই মুগ্ধ ও আত্মহারা হয়ে যায়।
শ্রীকৃষ্ণের মধুর বংশী ধ্বনী,ও শ্রীকৃষ্ণের সখাগণের হৈ হৈ হারে রে রে রবে
আকৃষ্ট হইয়া কেহ বা
পথের ধারে,কেহ বা
গৃহ দ্বারে,কেহ বা গবাক্ষের কাছে, উপস্থিত হইয়া অনিমেষ নয়নে শ্রীকৃষ্ণের রূপ মাধুর্য
আস্বাদন করিয়া তৃপ্ত হয়।(কেহ বা গবাক্ষের কাছে) অর্থ্যাৎ মাধুর্যের আরেক নিকেতন,
যিনি অনন্ত ব্রহ্মান্ডপতি, জগতের জীবের আত্ম হরণ করেন, সেই শ্রীকৃষ্ণের আত্মহরণ কারিনী
মহাভাব স্বরূপিনী
অপরূপ রূপের আকর সেই বৃন্দাবনের রাধা ঠাকুরাণী। শ্রীকৃষ্ণ
গোচারণ ভূমি হইতে
ফিরে আসিবার পূর্বে
গোধূলি বেলায় বংশী ধ্বনী শ্রবণ মাত্রেই মাযশোদা ও
ব্রজের বাৎসল্যবতী
রমণীগণ ক্ষীর,সর,
নবনীতাদি হস্তে করিয়া গৃহের বাহিরে
আসেন, এবং পথপানে দৃষ্টিপাত
করিয়া দ্বারে দাঁড়াইয়া থাকেন।
অপরদিকে শ্রীদাম সুদাম দাম বসুদাম ও সুবলের জননী গণও নিজ স্থানে
দাঁড়াইয়া নিজ নিজ
পুত্র ও শ্রীকৃষ্ণের
প্রতিক্ষা করিতে
থাকেন। অতঃপর
কৃষ্ণ ও বলরাম গৃহ
দ্বারে উপস্থিত হইলে
মা যশোদা ও রোহিণী সারাদিনের পর তাঁহাদের কোটি
কোটি প্রাণ নিমজ্ঞিত
বদন কৃষ্ণ ও বলাইকে দেখিয়া
আত্মহারা হয়ে পড়েন। অতঃপর
তাহাদের কোলে
ধারণ করিয়া শত শত মুখ চুম্বন ও
মস্তক ঘ্রাণ করিতে করিতে তাঁদের নিয়ে
অন্তঃপুরে প্রবেশ করেন বাৎসল্য
প্রেমময়ী যশোদা-
রোহিণী
লিখনী সেবা- শ্রীজয়দেব দাঁ
বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ= বাঁশবাড়ী, থানা=ইংরেজ বাজার, জেলা=মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ-৭৩২১০১

অনন্ত রাখিল নাম অন্ত না পাইয়া।।
*********************************
এই গ্রন্থ লিখিবে যে,
এখনো জন্মে নাই সে,
জন্মিতে বিলম্ব আছে বহু।
নরহরি সরকার (পদকর্তা)
শ্রীনরহরি সরকার মহাশয় গৌরকথা
রচনা করিতে গিয়ে এই কথাগুলো
লিখিয়াছেন, কি কারণ হতে পারে?
*********************************
শাস্ত্রে পাওয়া যায় --------------------------
ন চান্তর্ন বহির্যস্য ন পূর্বংনাপি চাপরং
পূর্বাপরং বহিশ্চান্তর্জগতো যো জগচ্চ যঃ।। ( ভাগবত)
(একটি গভীর তত্ত্ব)
এই তত্ত্বটি যাঁরা বোঝেন। অনন্তকোটি
ব্রহ্মান্ড যাঁর রোমকূপে যাতায়াত করে
যাঁর ইচ্ছে মাত্র অনন্তকোটি ব্রহ্মান্ডের
সৃষ্টি -স্থিতি-প্রলয় হচ্ছে,যে মহাপুরুষের যে মহাবিষ্ণুর একটি নিশ্বাসকাল-ব্রহ্মান্ডের স্থিতিকাল।
*আমরা মানবজাতি চব্বিশ ঘন্টায়
বাইশ হাজার ছয়শত বার নিশ্বাস নিয়, আর বাইশ হাজার ছয়শত বার
প্রশ্বাস ত্যাগ করি তাইনা?
আবার শাস্ত্রে পায় -----------------
যাঁর একটি নিশ্বাসকালকে মাত্র অবল
ম্বন করিয়া ব্রহ্মান্ডের নাথগণ জীবিত
থাকেন। যস্যৈকনিঃশ্বসিতকালমথা-
বলম্ব্য জীবন্তি লোমবিলজাঃ জগ-
দন্ডনাথাঃ তাঁর নাম কি? বিষ্ণুর্মহান-
তিনি মহাবিষ্ণু। তাঁর একটি নিঃশ্বাস-
পরিমিত কালই ব্রহ্মান্ডের স্থিতিকাল
ব্রহ্মার যে দ্বিপরার্ধ কাল পরমায়ু, সেই
দ্বি-পরার্ধ কাল পরমায়ু মহাবিষ্ণুর এক নিঃশ্বাস। এক পরার্ধকাল কি?
সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর,কলি চার যুগ জানি
চার যুগকে এক দিব্য যুগ মানি।।
একাত্তর দিব্যযুগে এক মন্বন্তর।
চৌদ্দ মন্বন্তরে ব্রহ্মার দিবস ভিতর।।
(এই সময়কে এক পরার্ধকাল বলা হয়,এইরকম আরেক পরার্ধকাল হলে
মহাবিষ্ণুর এক নিশ্বাসকাল)
সেই মহাবিষ্ণু কে? না, শ্রীগোবিন্দের কলা বিশেষ। কে শ্রীভগবানের তত্ত্ব বুঝবে বলুন? এই মহাবিষ্ণু গোবিন্দের
কলা বিশেষ। কলা মানে -ষোল ভাগের এক ভাগের নাম অংশ। অংশের ষোল ভাগের এক ভাগের নাম কলা, বোঝা গেল? সেই কলা-
বিশেষের যদি এত ক্ষমতা,তাহলে শ্রীগোবিন্দের কি ক্ষমতা আন্দাজ করুন? সেই আদি পুরুষ শ্রীগোবিন্দ
কে আমি শত শত কোটি দন্ডবৎ প্রণাম জানাই।
(ভুল ভ্রান্তি মার্জনীয়) জয় নিতাই।
অমূল্য তথ্য সংগৃহীত
শ্রীজয়দেব দাঁ
বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ= বাঁশবাড়ী, থানা=ইংরেজ বাজার, জেলা=মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ-৭৩২১০১
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
ব্রজ লীলা, উত্তর গোষ্ঠ বা ফেরা গোষ্ঠে শ্রীকৃষ্ণের রূপ বর্ণন:*************
উত্তর গোষ্ঠ নিত্য
লীলা, শ্রীকৃষ্ণের শ্রী
অঙ্গে পৌগন্ড বয়সেই কৈশোর
শোভার অভিব্যক্তি
(প্রকাশ) হয়েছিল এবং শ্রীরাধিকাদি
গোপবধূ ও রাধা সখীগণের কৈশোর-
বয়সোচিত হাবভাব
প্রকাশের ইঙ্গিতো
পাওয়া গিয়েছিল।
(জগতে অনেক বলিষ্ঠ বালকের বাল্য বয়সেই যে
কৈশোরভাব বা শোভা দেখা যায়,)
অখিল ব্রহ্মান্ডপতি
সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ
ব্রজরাজ নন্দনের
তাহা কিছুই অসম্ভব
নহে।রাধিকাদি ব্রজ-
বধূগণও তাঁহারই
হ্লাদিনী শক্তির ঘনীভূত মূর্তি এবং শ্রীকৃষ্ণের সাথে তাঁহাদের সম্বন্ধও
অনাদিকাল হৈতেই
অবস্থিত।
**পদ:---------------
চান্দ মুখে দিয়া বেণু,
নাম লৈয়া সব ধেনু,
ডাকিতে লাগিল উচ্চস্বরে।
শুনিয়া কানুর বেণু,
উর্দ্ধমুখে ধায় ধেনু,
পুচ্ছ ফেলি পিঠের উপরে।।
অনুসার বেণুরব,
বুঝিয়া রাখাল সব,
আসিয়া মিলিল নিজ সুখে।
যে ধেনু যে বনে ছিল,
ফিরাইয়া একত্র কৈল,
চালাইল গোকুলের মুখে।।
শ্বেতকান্তি অনুপাম,
আগে ধায় বলরাম,
আর শিশু চলে ডাহিন বামে।
শ্রীদাম সুদাম পাছে,
ভাল শোভা করিয়াছে,
তার মাঝে নবঘন-
শ্যামে।।
ঘনবাজে শিঙ্গা বেণু,
গগনে গোক্ষুর রেণু,
পথেচলে কত করি রঙ্গে।
যতেক রাখালগণ,
আবা আবা দিয়া ঘন,
বলরামদাস চলু সঙ্গে।।
*সবধেনু একত্রিত
করিয়া আগে আগে
অসংখ্য ধেনুপাল,
ডানদিকে দাদা বল-
রাম এবং চারিদিকে
সখাগণ ও অন্যান্য
গোপবালকগণ লৈয়া
যখন কৃষ্ণ অপরাহ্ন
কালে বা গোধূলি বেলায় গোচারণ ভূমি হইতে নিজ নিজ গৃহের পথে
চলেছেন,তখন তাঁহার শ্রী অঙ্গ শ্রী-
মুখাদি দরশন করিয়া ব্রজের সকলেই মন, প্রাণ ও
ইন্দ্রিয় সকল আনন্দ
সিন্ধুতে নিমগ্ন হয়ে যায় এবং সকলেই নিজ নিজ ভাবের
আবেগে আত্মহারা হয়ে পড়ে।গোক্ষুরের
ধূলিকণায় আপাদমস্তক ধূসরিত করিয়া কৃষ্ণ
যখন গোধূলি বেলায়
বন হইতে গৃহে ফিরে
আসেন, তখন তাঁহার
মস্তক, ললাট এবং মুখ মন্ডলের শোভা
দেখিয়া মুগ্ধ ও আত্মহারা না হয়ে
কাহারও প্রকৃতিস্থ
থাকিবার উপায় নেই। রূপের শোভা
কেমন দেখুন!
তাঁহার ঘন- কৃষ্ণ সু-
কুঞ্চিত কেশকলাপ
(চুলের সৌন্দর্য) উচ্চ
ভারে চূড়াকারে নিবন্ধ (আটকান) এবং তাহার নিম্নভাগে (নিচের দিকে) মালতী ফুলের গাঁথা মালা ও
উপরে অতি সুন্দর
ময়ূর পুচ্ছ। মালতীর
মালা দেখিলে মনে হয় যেন, নীলগিরি-
পর্বতের উপরে শান্ত
স্নিগ্ধ ও তরঙ্গবিহীন
স্বচ্ছ সুরধূনীর ধারা
মন্ডলাকারে (গোলাকারে) প্রবাহিত হইতেছে এবং ময়ূর পুচ্ছ দেখলে মনে হয় যেন
প্রবল ঝটিকা বেগে
(ঝড়ের গতিতে) ধূলি ধূসরিত এবং ঘনাচ্ছন্ন (মেঘে ঢাকা) আকাশ পটে
ইন্দ্র ধনু ফুটিয়া উঠিয়াছে। গোষ্ঠে
গিয়ে খেলার দরুন ও নাচানাচি এবং গোগণের পশ্চাৎ পশ্চাৎ ছুটোছুটি করায় কৃষ্ণের চূড়ায়
বাঁধা কেশের কিছু অংশ কৃষ্ণের ললাটের উপরে পড়ি
য়াছে দেখিয়া তাঁহার
মুখশোভা এতই সুন্দর লাগছে,তাহা
না দেখিলে বর্ণনা করা যায় না, সেই দৃশ্য এক অন্য জগতের। কৃষ্ণের এই গোক্ষুর ধূলি ধূসরিত কুন্তলা বলী
পরিশোভিত ললাট
দেখিলে মনে হয় যেন,কমলপরাগ রঞ্জিত (পদ্মের পুষ্প রেণুর সৌন্দর্য দেখিয়া)অলিকুল ঝাঁ কে ঝাঁকে উড়ে আসিয়া তাঁহার ইন্দিবর বিনিন্দিত
(যাহা নীল পদ্মও
ম্লান হইয়া যায়)
বদনার বিন্দে (মুখ মন্ডলের উপর) নিপতিত হৈবার জন্য
প্রাণপণ চেষ্টা করছে,
কিন্তু কোনো ভাবেই অলিকুল সফলহৈতে
পারিতেছে না। শ্রী
গোবিন্দের মুখ কমলের কথা আর কি বলিব!তাহা দেখিলে মনে হয় যেন,ইহাই সর্ববিধ সৌন্দর্য, মাধূর্য,লাবণ্য,ও কমণীয়তার জন্ম স্থান। জগতের সব রকম সুন্দর বস্তুই সৌন্দর্য,এই সৌন্দর্য, মাধুর্য্য ও এই লাবণ্য
আস্বাদন করিবার জন্যই বুঝিবা বিধাতা জীবগণের
নয়ন সৃষ্টি করিয়াছেন। যাহারা
এই সৌন্দর্য, মাধুর্যের আকর কৃষ্ণ
বদনার বিন্দে দেখে নাই, তাহাদের বুঝি নয়ন দুটি ব্যর্থ হইয়াই গেল। তাঁহার
অসীম সৌন্দর্য, মাধুর্য্যনিকেতন, কৃষ্ণ
বদনের মধুর হাস্য
দেখিলে মনে হয় যেন সদ্য প্রস্ফুটিত
নীলকমল হইতে অমৃতবিনিন্দিত মধু
ধারা ক্ষরিত (চুয়েপড়ছে) হচ্ছে এবং নয়ন ভঙ্গি দেখিলে মনে হয় যেন নৃত্যপরায়ণ খঞ্জন (চঞ্চল স্বভাবের লেজ নাচানো ছোট পাখী)
ক্রমশঃ অগ্রসর হয়ে
সেই মুখ কমলের দিকে ধাবিত হচ্ছে ও
সেইখানেই নিজ বাসস্থানের চেষ্টা করিতেছে।
#############
অমূল্য তথ্য সংগৃহীত
শ্রীজয়দেব দাঁ
বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ= বাঁশবাড়ী, থানা=ইংরেজ বাজার, জেলা=মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ-৭৩২১০১
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*প্রেম কি,তাহা শ্রীমতী একসখীকে বলছেন*
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
## ওগো সখি! যদি তোমার, আমাদের প্রেমের কথা শুনতে ইচ্ছে করে তবে শোনো। প্রেমের পরিমাণ এই ; প্রেম এইরকম, ইহাই প্রেমের স্বরূপ, অথবা এই প্রেমের স্বরূপ নয়,
এই কথাগুলি যারা বলে,তারা বেদাদি-শাস্ত্র অধ্যয়ন করলেও পেমের বিষয় কিছু জানতে পারবে না। তাৎপর্য এই যে প্রেমের স্বরূপ অনির্বচনীয়,(যা ব্যক্ত বা বর্ণনা করা যায় না)যে সময়ে হৃদয়ে বিচার করবার যোগ্যতা থাকবে, সেইসময়ে তথায় প্রেমের স্থিতি (অবস্থান) হতে পারে না।বিষয়ান্তর(অন্য বিষয় ) বিচারের কথা দূরে থাক, এমনকি প্রীতি-স্বরূপ বিচারশীল ব্যক্তিও প্রীতির অধিকারী হতে পারে না।কারণ প্রেম-বস্তুটি অন্য নিরপেক্ষ এবং স্বয়ংবেদ্য(যে প্রেম করে সে ভিন্ন
অন্য জানে না,)নিরপেক্ষ, একমাত্র প্রিয়জন সুখকামিতা (যে ভালবাসার মানুষটিকে তার মতো করে সুখ দান করে) ব্যতীত অন্য কোন জ্ঞান হৃদয়ে থাকলে সে জায়গায় প্রেমের আবির্ভাব হয় না।কি করলে প্রণয়ী ( ভালবাসার মানুষটি)সুখী হয় এই চিন্তায় তন্ময় (বিভোর)অবস্থার নামই প্রেম।যখন ঐ অবস্থায় উপনীত হয়,
তখন বিচার বোধ থাকে না বা থাকতে পারে না।প্রেমের উপলব্ধি থাকলে বোধান্তর(অন্যবোধ, বা অন্যচিন্তা) জন্মায় না।বিচারের দ্বারা সর্বশাস্ত্রজ্ঞ
হওয়া যায় কিন্তু প্রেমজ্ঞ হওয়া যায় না। *হে সখী!* যদি কোন ব্যক্তি অন্য
কোন একজন প্রেমতত্ত্ব জানতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে প্রেম সম্বন্ধে বুঝাবার চেষ্টা করেন, তবে তিনি যা বুঝাবেন এবং তার কথায় যা অনুভব হবে সেই সকল কেবল বিড়ম্বনা(চাতুরিতা)।
*গোণা দিন তো যায় গো মা বয়ে*
*কাঁদছি বসে শমন ভয়ে*
*চাহিলে না মা এই সময়ে*
*কপালে কি বিড়ম্বনা*
প্রেম একটি অনির্বচনীয় শ্রেষ্ঠ বস্তু।
ইহাকে বিচার করলেও অন্তর্হিত হয়,
এবং অবিচার করলেও ইহা অন্তর্হিত হয়। তাৎপর্য্য এই যে,প্রেমবস্তুটি স্বানুভব-সম্বেদ্য এবং নিরুপম।
অর্থাৎ সত্যবস্তু বা সদ্ বলতে অনাদির আদি শ্রীকৃষ্ণকেই বুঝায়,
তাঁকে ভালবেসে কি উপলব্ধি বা বোধ হয়েছে, একমাত্র সেইজনই জানেন আন কেহ জানেন না,যাঁর তুলনা দিবার কিছুই নাই। তা আবার ভাষা দ্বারা প্রকাশ করা যায় না, এবং নিজের হৃদয়ে ইহার আবির্ভাব না হলে অন্যের মুখে শুনে ইহা বোধগম্য হয় না। অতএব অন্যের মুখে প্রেম বুঝাবার বা বুঝবার চেষ্টা নিষ্ফল পরিশ্রম মাত্র।প্রেম আবির্ভাবের পূর্ব অবস্থায় যদি বিচার পূর্বক চিন্তা করা না যায়,কি করলে" শ্রীকৃষ্ণের সুখ হয়"
তবে প্রেম হৃদয়ে জন্ম নেই না, কারণ স্বভাবতঃ অন্তরে একমাত্র ""শ্রীকৃষ্ণের
আনুকূল্য করবার যে প্রবৃত্তি তারই নাম প্রেম।( এই সম্বন্ধে আমার বিন্দুমাত্র কিছুই জানা নেই,ভুল ভ্রান্তি
ক্ষমা করবেন, জয় নিতাই।)
অমূল্য তথ্য সংগৃহীত
শ্রীজয়দেব দাঁ
বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ= বাঁশবাড়ী, থানা=ইংরেজ বাজার, জেলা=মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ-৭৩২১০১
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
কীর্তন=জটিলার গৃহে গাভী দোহন ঃঃ------
প্রথম পদ
*************
কৃষ্ণবর্ণ গাভী ছাদি জটিলা বসিল।
ছাঁদন ছিড়িয়া ভান্ড ভাঙ্গিয়া ফেলিল।।
গাভীর মনের ইচ্ছা গোবিন্দ দোহিবে।
দোহিয়া আমার দুগ্ধ গোবিন্দ ভুঞ্জিবে।।
ইহা যদি নাহি হয় দুগ্ধ নাহি দিব।
ছাঁদন ছিড়িয়া ভান্ড ভাঙ্গিয়া ফেলিব।।
পুন আনি ছাঁদন ডুরি গাভী ছাঁদি নিল।
পূর্ববৎ গাভী এবার ভান্ড ভাঙ্গি দিল।।
ঘর্মাক্ত কলেবরে জটিলা ধাইল।
হেন কালে শ্রীগোবিন্দ সেই পথে এলো।।
দ্বেষ ভুলি জটিলার কৃষ্ণ প্রীতি হয়।
বাপ এসো বাপ এসো বলিয়া ডাকয়।।
ডাক শুনি শ্রীগোবিন্দের হরষিত মন।
মনোহর সাথে সাথে করিলা গমন।।
দ্বিতীয় পদ
******************
জটিলা কহিছে, শ্রীকৃষ্ণের কাছে,শুনহে নন্দের বালা।
সুবুদ্ধি গাভীর,কুবুদ্ধি হইল,বাড়িল বিষম জ্বালা।।
ছাঁদনে না ছাঁদি,বাধনে না বাঁধি, ওমনি দুগ্ধ দেয়।
আজু কি হইল,দুগ্ধ নাহি দিল, ভান্ড ভাঙ্গি কৈল সাই।।
তোমার পিতার,নবলক্ষ ধেনু,তুমিই তো দোহিয়া থাক।
দুষ্ট শিষ্ট গাভী,শাসন করিয়া,তুমিই মাঠে রাখ।।
তাই বলি বাছা,গাভীটি দোহিয়া,বাঁচাও আমার প্রাণ।
আজুকার দুগ্ধ,উদর পুরিয়া,তোমারে করাব পান।।
এতেক শুনিয়া,বীর যদুবর,গাভীর নিকটে যায়।
তা দেখিয়া গাভী,মুখখানি তুলিয়া,গোবিন্দ বদন চায়।।
পুলকিত অঙ্গ,পাই কৃষ্ণ সঙ্গ,প্রেমের পাথারে ভাসে।
কৃষ্ণ কর স্পর্শে,ধন্য হব আজি,কহয়ে লোচন দাসে।।
তৃতীয় পদ
********************
বাছুরির ডুরি জটিলা ধরিল হাতে।
লাভ দিয়া বাছুরি পরে জটিলার মাথে।।
হিতে বিপরীত বুঝি হইল এবার।
ধরণী লুটায় বলে মরি এইবার।।
বাঁধি কাপড় চাপড় মারি গালে।
কৃষ্ণ কুৎসাকারী বৎস ধরয়ে বলে।।
যার নাই ভক্তি তার শক্তি কিসে বা গণি।
বৎস শক্তি কৃষ্ণ ভক্তি রসে বাখানি।।
পুন টানি আনি জটিলারে ফেলে।
একবার পড়ে কৃষ্ণের চরণ তলে।।
ধরি বক্ষ রক্ষ কৃষ্ণ জটিলা বলে।
ধরি তোলয়ে বোলয়ে আহা জটিলে।
জটিলা উঠি চটপটি বঁধুরে ডাকে।
শুনি আওল পাওল প্রাণ বঁধুকে।।
মুচকি হাসি রাইশশী ঘোমটা দিয়া।
মনোহর মুখখানি দেখে চাহিয়া।।
চতুর্থ পদ
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
জটিলা কহিছে মায় , নাকালের আর সীমা নাই
গাভী বৎস যুক্তি করি মনে।
ভান্ড ভাঙ্গি ছাদন ছিড়ি , খাওয়াইলা গড়াগড়ি
ভাগ্যে হেথায় এলো গোপাল ধনে।।
যাও তুমি ভান্ড আনি, মুখে বাঁধ বস্ত্র কানি
সীতা মিশ্রি স্থাপ তদুপরি।
দুগ্ধ ধারা দিবে তাতে , গলি যাবে ভিতরেতে
হবে তাতে দুগ্ধের মাধুরী।।
অশান্ত বাছুরী অতি , ধরিবার নাহি শক্তি
নিকটে আসিয়া বৎস ধর।
ইহা শুনি শ্রীরাধিকা, হইলা আনন্দাধিকা
ভান্ড আনতে চলিলা সত্বর।।
দরিদ্র আর কিবা চায়, যদি ধনপূর্ণ ঘট পায়
তার আশা পূর্ণ সেইকালে।
লোচনদাসের বড়ই আশা, বৃন্দাবনে করে বাসা
দেখি লীলা ভাসি নয়ন জলে।।
পঞ্চম পদ
******************
ভান্ড মুখে বস্ত্র কানি বাধি আনি দিল।
তদুপরি সীতা মিশ্রি স্থাপন করিল।।
জটিলা কয় দুগ্ধ ধারা মিশ্রি খন্ডে দিবে।
দুগ্ধেতে গলিয়া মিশ্রি ভান্ডে প্রবেশিবে।
সে দুগ্ধ বঁধুমাতা তোমারে খাওয়াবে।
দুগ্ধ ভঞ্জি তবে তুমি গৃহে যেতে পাবে।।
জটিলার বাক্য মতে গোবিন্দ দোহিল।
শ্রীমতী বৎসের রজ্জু ধারণ করিল।।
এইভাবে দোহন কার্য্য সমাধা করিয়া।
ভান্ডটি রাধা করে দিলেন আসিয়া।।
জটিলা কয় বঁধুমাতা নিজ ঘরে গিয়া।
গোপালে ভোজন করাও আনন্দ করিয়া।।
আনন্দের সীমা নাই শ্রীরাধার অন্তরে।
মহানন্দে দরশন করে দাস মনোহরে।।
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
মিশ্রি =মিছরি, ভঞ্জি = পান করা।
সীতামিশ্রি= বিশুদ্ধ মিছরি, সীতা মিছরি দুগ্ধের
সহিত পান করিলে, শরীরের সমস্ত পরিশ্রম ক্ষণেকের মধ্যে দূর হয়। এই মিছরি গলিতে বহু সময় লাগে, সীতা মিছরি দেখতে বরফের মত স্থচ্ছ, দুধের সহিত মিলিত হবার পর অমৃতকেলি
হয়। যে অমৃতকেলি মাধবেন্দ্রপুরী পেয়েছিলেন।
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
জয় শ্রীরাধেশ্যাম।
অমূল্য লীলার তথ্য সংগৃহীত
শ্রীজয়দেব দাঁ
বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ= বাঁশবাড়ী, থানা=ইংরেজ বাজার, জেলা=মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ-৭৩২১০১
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
আয়ান বলছেন জননী জটিলাকে
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
পদ৭= শুনহ জননী, যশোমতী রাণী,
করুণা করিয়েছিল।
মণিরত্ন হার, নানা পরকার,
তোমার বধূরে দিল।।
জরতী শুনিয়া, হরষিত হইয়া
মৃদুস্বরে কহে কথা।
বধূ হরষিত, হইবে নিশ্চিত,
রাখ লয়ে বাপ তথা।।
মায়ের বচনে, আঞান তখনে,
সবলে পেটিকা ধরি।
জটিলা সংহতি, যায় দ্রুতগতি,
যেখানে বসিয় প্যারী।।
কথা= আঞান বললেন,মা! বড়ই আনন্দ হচ্ছে, যশোমতী আজ কি না করুণা করেছেন। আজ যশোমতী বহু মূল্যবান বস্তু তোমার পুত্রবধূকে দিয়াছেন।জরতী জটিলা(বৃদ্ধা জটিলা) বললেন, আজ বধূও খুব আনন্দ পাবে, যা বাপ, এই পেটিকা আমার বা কুটিলার পক্ষে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, তুই বধূর ঘরে রেখে আয়।
পদ= আয়ানের শিরে,পেটিকা নেহারে
ললিতারে কহে ধনি।
মণীন্দ্র ভূষণ, করিছে বহন,
মনে হেন অনুমানি।।
বেদিতে স্থাপন, করিয়া তখন,
বাহির মহলে গেল।
শাশুড়ির ঠাঞি, পুছইতে রাই,
লোচন হরিষ পেল।।
কথা= আঞানের মাথায় একটি সম্পুট দেখে রাধা, ললিতাকে বলছেন, হে আলি!(সখি) শ্বশ্রূপুর ( শশুড়ালয়ে)মধ্যে আজ অকারণ কেন আমার বামবাহু,বামপয়োধর,
বামনয়ন নাচছে? কিছু বুঝতে পারছি না। ঐদিকে আয়ান রাধিকার শয়নকক্ষের পাশে একটি বেদি আছে, সেই বেদীর উপরে পেটিকা রেখে রাধার শয়নকক্ষের বাইরে চলে গেল। রাধা চিন্তা করতে লাগলেন, কি আছে ইহাতে? শাশুড়িকে গিয়ে কি জিজ্ঞাসা করব?
পদ৮= জটিলা কহিছে মাই,
সে কথা কহিতে চায়,
শ্রীনন্দ ঘরণী ইহা দিল।
বাল্যকাল হতে তোরে,
কত না আদর করে,
কত আশীর্বাদ তোরে কৈল।।
হেমদঙ্গি সুখদে,
হে কীর্তিদা কীর্তিদে,
বৃষভানু নন্দিনী রাধে।
হও সতী সিংহারবতী,
চির জীবি ভাগ্যবতী,
পূর্ণকামা মম আশীর্বাদে।।
কথা= ললিতা বললেন রাধে! আমার মনে হয় এই পেটিকার মধ্যে নিশ্চয়ই কোন আকর্ষণীয় বস্তু আছে, এইজন্যই তোর বামনয়ন,বামপয়োধর ও বামবাহু নাচছে, আবার বলি নিশ্চয়ই কিছু শুভ সূচনা করছে তোর
প্রাপ্তির।রাধা বললেন, এই মঞ্জুষা দেখা মাত্রই আমার মনে অনির্বচনীয় ভাব সঞ্চার করছে, তা আমি তোকে বোঝাতে পারছি না। তবে শোন সখি!
আমার শাশুড়ির কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি এই বাক্সের মধ্যে কি আছে? ললিতা বললেন যা ভাল বুঝিস কর। রাধা ঘরে বসে সখিদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন, এমন সময় জটিলা রাধার কাছে এসে বললেন, বধূ তুমি কিছু বলবে? বলেই
জটিলা বললেন, বৌমা! এই পেটিকা শ্রীনন্দ ঘরণী ব্রজেশ্বরী যশোমতী তোমার জন্য পাঠিয়েছেন। আমি জানি যশোদা তোমায় বাল্যকাল হতেই খুবই ভালবাসে, আদর করে, এবং কত শত আশীর্বাদ করে।
হে হেমদঙ্গি! ( সুবর্ণবর্ণঅঙ্গ রাধে!)
এই পেটিকার মধ্যে তোমার ভাল লাগার বস্তু আছে, আর তুমি শৃঙ্গারবতী হও এই আশীর্বাদ করেছে।
চিরজীবি হও, সদা সর্বদা তোমার সমস্ত মনোআশা পূর্ণ হয় এই আশীর্বাদও করেছে।
পদ৮=মোর সেই আশীর্বাদ
আঞানের সেই সাধ
লহ বধূ মণীন্দ্রভূষণ।
তবে কর্মান্তরে যাই
শুনি হরষিত রাই
সখি মুখ নেহারে সঘন।।
সখীগণে পুছে প্যারী
প্রেষিত পেটিকা হেরি
বামভূজ আঁখি কেন নাচে।
দুঃখময় শ্বশ্রূপুরে
সম্ভরে কেমন করে
ললিতাগো আনো মোর কাছে।।
ললিতা ঘুচাইল ডালা
বাহির হইল কালা
করতালি দিয়া সখি হাসে।
লঘুগতি কৌশলে
সখি মুখ চুম্বি ছলে
লোচন দাঁড়াল আসি পাশে।।
কথা= এই পেটিকার মধ্যে কি আছে,
তা দেখার জন্য পেটিকার চারিদিকে সখীগণ দাঁড়ালে স্বয়ং রাধিকা পেটিকা খুলতে গেলেন, খুলে দেখলেন! বসন, ভূষণ ও অনুলেপনের পরিবর্তে শ্রীকৃষ্ণ বাহির হয়ে দাঁড়ালেন। শ্রীকৃষ্ণকে দেখে সকল সখীখণ অহহহহ!!! এ কি গো!!! বলিয়া হাতে তালি দিয়ে হাসতে লাগলেন। তাঁদের হাসিতে
কৃষ্ণ পরমানন্দ পেয়ে চতুরের শিরোমণি কৃষ্ণচন্দ্র লঘুগতি ভঙ্গী প্রকাশ করে সকলের বদন চুম্বন করলেন।
** কথা== তখন ললিতা, রাধাকে বললেন, ওরে সখী! যে ভূষণ এসেছে! এ ধন্য, যে এনেছে সে তোর
গৃহপতিও ধন্য, যিনি স্নেহ করে পাঠিয়েছেন সেই গোষ্ঠমহেশ্বরীও ধন্য,
এবং ওরে সখী!ব্রজেশ্বরীর বার্তাবাণী ধন্য, ইহা দ্বারা শৃঙ্গারবতী হও,ইহাও ধন্য। মা যশোমতী তোকে আদেশ করেছেন আমি যাহা পাঠাইলাম তাহা দ্বারা তুমি শৃঙ্গার করিও, অতএব গুরুত্রয়ের আজ্ঞা পালন করে নিজের ধর্ম পালন কর।
পদ৯= সহচরী বাণী,শুনি বিনোদিনী
পরশে পরশ কর।
মণীন্দ্র ভূষণ, করহ ধারণ
গুরুত্রয় বোল ধর।।
লাজে কমলিনী,ঢাকে মুখখানি
মুচকি মুচকি হাসে।
ডাক ননদিনীরে,ধরেছি তস্করে
বল গুরুজন পাশে।।
কথা= সহচরীগণ রাধাকে বলছেন, রাধে! পরশমণি পেয়ে গেছিস, আর কি এবার পরশমণিকে পরশ কর?
মণীন্দ্রভূষণ (শ্রীকৃষ্ণ)কে ধারণ কর?
কারণ তোর পতি এক গুরুজন, যিনি পাঠিয়েছেন তিনিও এক গুরুজন এ তোর শাশুড়িও এক গুরুজন তাঁদের
কথা রক্ষা কর? এইসব কথা শুনে রাইধনি লজ্জায় মুখ খানি ঢেকে মুচকি মুচকি হাসছেন। পরক্ষণেই সখীগণ বলছেন ওরে ননদিনী কুটিলাকে ডাক, একটি চোর ধরেছি,
গুরুজন তাঁর বিচার করবেন।
পদ= শুনি শ্যামরায়, সখী মুখ চায়
ললিতারে কহে বাণী।
চোরের উপর,বাটোয়ারি করে
তোমাদের ঠাকুরাণী।।
পতিসন সতী, করিয়া যুকতি
হরিয়া আনিল মোরে।
করহ বিচার,অপরাধ যার
দন্ড দেহ সবে তারে।।
দোষী হলে ধনি,দন্ড দিব আমি
আমি যদি দোষী হই।
বাহু পাশে সবে, বান্ধহ কেশবে
ত্রিরাত্রি দুঃখেতে রই।।
অপরাধী করি,বান্ধিতে মুরারি
ললিতা আদেশ দিল।
হৃদি কারাগারে, বান্ধে বধূঁয়ারে
লোচন সফল পেল।।
কথা= ললিতা কৃষ্ণকে বললেন, হে রাধাভিসারিন! অর্থ্যাৎ কৃষ্ণ ছলে বলে কৌশলে রাধার কাছে অভিসার করেছেন বলিয়া ললিতা বললেন।
যাইহোক, যে সমস্ত বস্তু পেটিকার মধ্যে ছিল, যা চুরি করেছ,তা শীঘ্রই
আমাদের ফিরিয়ে দাও, নচেৎ জানই
এই গৃহে একজন রয়েছে, তার নাম কুটিলা, এলে তোমার কি অবস্থা করবে! ভাল ভালই দিয়ে দাও।
তখন কৃষ্ণ বললেন, ললিতে! তোমার সখী অত্যন্ত ধূর্তা,এবং নিজ কার্য্য সাধন করতে বড়ই নিপুণা, আমি হাসিঠাট্টার ছলে পেটিকায় প্রবেশ করেছিলাম বটে, কি তোমার সখী,তার পতিকে (আঞানকে) পাঠিয়ে বলপূর্বক পেটিকাসহ বহন করে এনে এখন আমাকে যা ইচ্ছে তাই বলছ? তারপর কৃষ্ণ হাসতে হাসতে রাধাকে বললেন,হে প্রিয়ে প্রাণেশ্বরী! আমি এই পেটিকার ভেতরে যত যত বস্তু ছিল তা ধনিষ্ঠার
দ্বারা তোমার কাছে পাঠিয়ে দিয়াছি।
এবার তোমরা বিচার কর, কে দোষী?
তখন ললিতা বললেন, যাইহোক, এখানে তোমাকে তিনরাত্রি বাস করতে হবে। ( সকল সখীগণের একটিই বাসনা তাঁরা সদাসর্বদা যুগলরূপ দর্শন করে নিজ মনোবাসনা পূর্ণ করেন। আর রাইধনি নিজ বঁধূকে হৃদিকারাগারে সযত্নে বন্দী করলেন,
সকলের মনোআশা পূর্ণ হল, সকলে জয় রাধে রাধে বলে জয়ধ্বনি করতে লাগলেন।
জয় জয় রাধাশ্যামের জয়
ভুল ভ্রান্তি মার্জনীয়।
অমূল্য লীলার তথ্য সংগৃহীত
শ্রীজয়দেব দাঁ
বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ= বাঁশবাড়ী, থানা=ইংরেজ বাজার, জেলা=মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ-৭৩২১০১
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
***আঞান বেশে মিলন ***
প্রথম পদ
গগনে নিরখি বেলা,ছল করি কুটিলা
রাধার মন্দিরে যায় ধেয়ে।
গিয়া রাধার ভবনে,দেখে সব সখীগণে
যায় রাধা স্নানের লাগিয়ে।।
** কুটিলমতি কুটিলার মন যেমন হয়,
কুটিল মন নিয়ে কোনদিনই সুকর্ম হতে পারে না,সর্বদা রাধার বদনাম করবার জন্য কুটিলার মন কুটিলতায় ব্যস্ত। প্রভাতকাল সবে, হঠাৎ গগন পানে চেয়ে দ্যাখে প্রভাত সময়, কুটিলার মন কুটিলতায় পরিপূর্ণ, মনে করল দেখি রাধা কি করছে?রাধার কক্ষে গিয়ে দেখে,সকল সখীগণ সঙ্গে
রাইধনি কথোপকথন করছেন। কোথায় যাবেন? না, অদ্য "মকরস্নানের তিথি" এইদিনে অবগাহন করলে আয়ু,যশ,মান সব
কিছুরই মঙ্গল হয়। কুটিলার মনে আবার কুটিল ভাব দেখা দিল-----
*প্রথম পদ দ্বিতীয় অন্তরা*
দুই এক পদ যায়,নন্দালয় পানে চায়
দেখি মনে সংশয় জন্মিল।
দেখিব কৃষ্ণ কি করে,এত চিন্তি অন্তরে,
নন্দের মন্দিরে প্রবেশিল।।
** এবারে রাধার কক্ষ হতে মনে সংশয় হল রাধা যখন সখীদের সঙ্গে নিয়ে স্নানে যাচ্ছে তাহলে এই কলঙ্কিণী রাধা ঐ কালার সঙ্গে দেখা করবে!কুটিলা কি করল,না, দুই এক পা এগোতে এগোতে নন্দালয়ের দিকে
চলিল,নন্দালয়ের কাছে এসে দেখছে
কালা ঘরে আছে কি না, হঠাৎ এক দাসীর সঙ্গে দেখা হলে বলল, কালা আছে? দাসী বললে যমুনায় গেল।
** প্রথম পদ তৃতীয় অন্তরা**
দেখে কৃষ্ণ গেল স্নানে,কুটিলা কূপিত মনে,
দাঁড়াইয়া ক্ষণেক ভাবিল।।
* যখন শুনল কালা যমুনায় স্নানে গেল,তখন কুটিলার মন বিষময় হল,
রাগে গজ গজ করতে লাগল। আর মনে মনে ভাবতে লাগল, নিশ্চয়ই পোড়ামুখী ঐ কালার সঙ্গে ফষ্টি নষ্টি করবে।
(আজি ইহার তত্ত্ব লয়ে,শাস্তি দিব দাদারে কয়ে,
ভাবি পদ লখিয়া চলিল।।)
* আজ রাধার সব ফষ্টিনষ্টি ঘুচাব,
দাদা আঞানকে বলে চরম শাস্তি দেওয়াইব। এই ভাবতে ভাবতে চরতে লাগল।
প্রথম পদ পরের অন্তরা
তুলসী দেখিল দূরে,ঘন দুটি হাত নেড়ে
কুটিলা আসিছে কুঞ্জপানে।নিরখি সভয় চিত,মন্দিরে পশি তুরিত
নিবেদিল রাধাকৃষ্ণ স্থানে।।
যে কুঞ্জে রাধাকৃষ্ণ কথোপকথন কথন করছিলেন, সেই কুঞ্জের দেখার ভার তুলসীর প্রতি ছিল, কখন কে আসে তার বার্তা দেবার।অদূরে কুটিলাকে দেখিয়া তুলসী লতাদি-
বেষ্টিত কুঞ্জে প্রিতম কৃষ্ণের সঙ্গে হাস্য-বিলাসরসে মগ্ন হয়েছেন,তা দেখে আনন্দিতা হয়ে তুলসী বললেন,
ওগো সখীবৃন্দ! তোমরা যে মহোৎসবের অনুষ্ঠান করছ ভাল কথা, কিন্তু সাবধান! এই অনুষ্ঠান দেখবার জন্য কুটিলমতি কুটিলা অতি ধীর গতিতে গোঠ হতে এইদিকে আসছে। এই কথা শুনে------------
প্রথম পদে পরের অন্তরা
শুনি বিনোদিনী রাই,কৃষ্ণ মূখ পানে চায়,
ভয়ে অঙ্গ কাঁপে থরহরি।
সজল নয়নদ্বয়, বিনয়ে কান্তারে কয়
রক্ষা কর বিপদ কান্ডারী।।
** তুলসীর কথা শুনে সকল সখীগণ বললেন,হায় হায়!এখন কি হবে? কুটিলা আসছে এই কথা শুনে রাইধনির অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি, তুলসীকে ইসারা করে বলছে ননদিনী কত দূরে? অদূরে রয়েছে, রাধা তখন
কৃষ্ণের মুখপানে চেয়ে বলছেন ওগো
বিপদভঞ্জন এখন কি হবে, রক্ষে কর,
নইলে আজ আমার অকালে প্রাণ যাবে।
প্রথম পদ পরের অন্তরা
কৃষ্ণ কন ভয় হেন,কর প্রাণেশ্বরী কেন
আজি মোর মায়া বিস্তারিব।
আঞান মূরতি হয়ে,এখনি নিকটে গিয়ে,
কুটিলারে বঞ্চনা করিব।।
তবে রাইয়ে প্রবোধিয়ে,বৃন্দার নিকটে গিয়ে,
আঞান রূপ করিলা ধারণ।
ভণে দ্বিজ অকিঞ্চন,তার শঙ্কা কি কারণ,
যার সখা বিপদভঞ্জন।।
** এবারে কৃষ্ণ তুলসীকে ডেকে বললেন, ঐ কুটিলমতি কুটিলাকে কোথায় দেখলে? তুলসী বললেন, ঐ
"সটীকরা"নামধেয় বনের নিকটে আমি দেখেছি।অনুমান করি এতক্ষণ হয়ত কুঞ্জের আশেপাশে চলে এসে হবে।একথা শোনার পর রাধার চরম
অবস্থায় পরিণত হল, রাধার অবস্থা দেখে কৃষ্ণ বললেন,ওগো প্রাণপ্রিয়ে!
তুমি চুপচাপ এখানে থাক, তোমার কোন ভয় নেই,আজ আমি অন্য খেলা খেলিব, কি জানো? আমি বৃন্দার কাছে গিয়ে আঞান ঘোষের বেশ ধারণ করব, কৃষ্ণ যখন আঞান রূপ ধারণ করলেন, এবং আয়ানের কন্ঠ
স্বর বলতে লাগলেন তখন যেন মনে হচ্ছিল সত্যই আঞান ঘোষ।কুটিলা যেপথ ধরে কুঞ্জের দিকে আসছিল,
কৃষ্ণ আঞান বেশে সেই পথের চললেন। যেন মনে হল আয়ানই বটে।
*আয়ান বেশে মিলন দ্বিতীয় পদ*
আঞানের বেশে হরি বাহির হইলা।
কুটিলা নিকটে গিয়া তুরিতে ভেটিলা
আঞানের স্বরে তারে বলিছেন বাণী।
কুটিলে বিজন বনে কেন একাকিনী।।
*আঞানের বেশ ধারণ করে কৃষ্ণ কুঞ্জ হতে বাহির হলেন।যেদিক দিয়ে কুটিলা আসছিল কৃষ্ণ সেদিকে চললেন, কুটিলার সঙ্গে দেখা করলেন, দেখা করে বললেন, ভগ্নি
কুটিলে! এই সময় তুমি বিজন বনে কেন? কেন তুমি গোঠ হতে বাহির হয়েছে? তখন কুটিলা বলল, দাদা! তোমার সতী বধু রাধার সন্ধানে এখানে এসেছি। কৃষ্ণ বললেন, রাধা কোথায় গেছে? কুটিলা বললে, যমুনায় স্নান করার ছলে এই বনের ভেতরে কোন কুঞ্জে লুকিয়ে আছে।
কৃষ্ণ বললেন, সেই রমণী-চোর (কৃষ্ণ)
কোথায়?কুটিলা বলল,সেও স্নান করতে এসেছে। মা এইজন্য আমাকে তোমার সতী বৌয়ের চরিত্র জানতে এই বনমধ্যে পাঠিয়েছে। এখন কি করব বল?
*দ্বিতীয় পদে দ্বিতীয় অন্তরা*
আমি ভ্রমিতেছি করি বৃষ অন্বেষণ।
তুমি কোন অভিপ্রায়ে কৈলে আগমন
কুটিলা কহিছে,করি বধু অন্বেষণে।।
করিয়ে স্নানের ছলা এসেছে এ বনে
** কৃষ্ণ বললেন, ওরে ভগিনী! আজ আমার এক নবীন বৃষ, হলে যুক্ত করবার সময় হলচ্যুত হয়ে কোথায় যে
পালিয়ে গেল,আমি খোঁজ করতে করতে এইদিকে এসেছি।আমার নবীন বৃষ হারিয়ে গেল,এতে আমার হৃদয়ে অতি অল্পমাত্র ব্যথা লেগেছে, কিন্তু ঐ রমণী-চোর (কৃষ্ণ)আমার পত্নীর প্রতি লম্পটতায় যে দারুণ ব্যথা হৃদয়ে লাগল,তা সহ্য করতে পারছি না।হে বুদ্ধিমতি ভগিনী! প্রথমত আমার একটি যুক্তি শোন,
*দ্বিতীয় পদের তৃতীয় অন্তরা*
হরি কহেন মুখে রোষ করিয়া প্রকাশ।
আমি হেথা বসি তুমি করহ তল্লাস।।
যদি কৃষ্ণ সহ তারে একত্রে দেখিবে।
নিকটে না যাবে আসি আমারে ডাকিবে।।
*ভগিনী তুমি আমার কথা শোন,এই কুঞ্জে আমি লুকিয়ে থাকি,তুমি এদিক
ওদিক রাধাকে খোঁজ করো,যদি সে কৃষ্ণ বিনা একাকিনী থাকে,তাহলে তাকে ছলনা করে এই কুঞ্জে নিয়ে আসবে।
*দ্বিতীয় পদের শেষ অন্তরা*
যদি একাকিনী থাকে ছল প্রকাশিয়া।
আমার নিকটে তারে আনিবে ডাকিয়া
শুনিয়া কুটিলা বড় হরষিত মন।
কুটিলার অন্বেষণ ভণে অকিঞ্চন।।
** আর যদি কৃষ্ণের কাছে থাকে,তাহাহলে আমাকে ডেকে নেবে।
আমি দূর হতে সব তার কীর্তিকলাপ দেখবো।এই কথা শুনে কুটিলার মনে ভীষণ আনন্দ হল, যে ঠাকুর যে যে ফুলে তষ্ট হয়,সেই সেই ফুল দিয়ে পূজো করতে হয় তাইনা? এবারে কুটিলা কালিয়-হ্রদ-তট হতে প্রতি কুঞ্জ দেখতে দেখতে কেশিতীর্থ কাছে
পুষ্পোদ্যানে এসে অমল পরিমলশালিনী, এবং সখী নিষেবিতা
কীর্তিদার কীর্তিবল্লী শ্রীরাধাকে দেখতে পেল। (নিষেবিতা= সেবা পরায়ণা)
*আয়ান বেশে মিলন চতুর্থ পদ*
*প্রথম অন্তরা*
কুটিলা তখন, হরষিত মন
প্রবেশিল কুঞ্জগৃহ।
কীর্তিদা তনয়া, আছেন বসিয়া
যথা সখীগণ সহ।।
দেখি কুটিলায়, ললিতা শুধায়
এসেছ কি স্নান তরে?
কহিছে কুটিলা,কত জান ছলা
শিখাইব ভাল করে।।
* কুটিলা মনের আনন্দে সে কুঞ্জের ভেতরে প্রবেশ করল, দেখে কীর্তিদার কন্যা রাধারাণী সকল সখীগণকে সঙ্গে নিয়ে বসে আছেন।ললিতা দেখলেন কুঞ্জ ভেতরে কুটিলা, ললিতা তখন কুটিলাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ওগো কুটিলে! তুমি কি স্নান করবার জন্য এখানে এসেছ? কুটিলা বললে, না-----, তোমাদের চরিত্র জানবার জন্য এখানে এসেছি, ( কুটিলা কুটিলমতি ভাল কি আর বলবে।) ললিতা বললেন, তা কি জেনেছ? কুটিলা বললে,ও ললিতা! তুই নিজ মুখে বল। ললিতা বলছেন তবে শোন! সঙ্গে সঙ্গে কুটিলা তখন বলছে,তোমাদের আর বলতে হবে না।
হরিগন্ধ সব বলে দিচ্ছে। এই কথা শুনে ললিতা ছল করে বললেন, হরি শব্দের সিংহ অর্থ, যদি তাই হয়, কুটিলে! তুমি সিংহের গন্ধ পেয়ে থাক, তাহলে অবশ্যই আশেপাশে কোন জায়গায় সিংহ লুকিয়ে আছে।
দেখ কুটিলে! আমরা অবলা,তোমার কথা শুনে বড়ই ভীত হলাম অর্থ্যাৎ ভয় পেলাম, এখন এখান হতে আমাদের চলে যাওয়া উচিৎ, না না আর থাকব না, তাড়াতাড়ি ঘরে যাই,
ওগো কুটিলে! তুমি এসে আমাদের বড়ই স্নেহের কর্ম করলে? কুটিলা এইসব কথা শুনেই রাগে যেন জ্বলে উঠল ও বলতে লাগল।-----------
*তৃতীয় পদের দ্বিতীয় অন্তরা*
স্নানের লাগিয়া, বধুরে আনিয়া
লম্পট কালায় দিলি।
মোর পিতৃকুলে, কালি দিলি ঢেলে
তোর মুখে চূণ কালি।।
এত বলি রুষি, সদলে প্রবেশি
চায় চারিদিক পানে।
দেখে বনমালা,রাইয়ের মতিমালা
পড়ে আছে এক স্থানে।।
** ওরে ধর্মবতী সতীগণ! তোমরা এই বনে নিজ কীর্তি করে পরে ঘরে যাও,
আমি সব জানি। একথা বলেই, বলেছে, সামনে যে কদম্বকুঞ্জ আছে তার দ্বার (দরজা) খোল, আমি ভেতরে যাব।ললিতা হাসতে হাসতে বললেন, ওগো ভাল কুটিলে! কোন বনদেবতা, নিজের বসতি নিকুঞ্জ, গৃহের শর-শলাকা নির্মিত কপাট যুগল দ্বারা দ্বার বন্ধ করে কোথায় গেছে ; আমরা জানিনা, অতএব এই নীপনিকুঞ্জের দ্বার খোলার আমার সাধ্য নাই, যে সাহসবতী রমণী আছে,
সে পর গৃহের দ্বার খুলে দোষ নিক, আমরা পারব না।এইকথা শুনে কুটিলা রেগে আগুন, বলতে লাগল ললিতে! তুমি সত্য সত্যই মুগ্ধা কুলবালা, এইজন্য এই জন্মের মধ্যে পর গৃহে একদিনও প্রবেশ কর নাই।
কিন্তু নিজগৃহে অপরকে প্রবেশ করাতে খুব ভাল জানো। এই বলে কুটিলা দ্রুতবেগে নীপকুঞ্জের কাছে গিয়ে পদাঘাতে শর-শলাকা নির্মিত পুষ্প কপাট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে দেখল যে,শ্রীকৃষ্ণের বনমালা ও শ্রীরাধার ছিন্ন (ছেঁড়া) মুক্তাহার, মালা এবং ছেঁড়া মুক্তাহার হাতে নিয়ে বাইরে এসে ললিতাকে দেখিয়ে বলতে লাগল, ললিতে! তোমাদের যথাবিধি মাঘস্নান করা হয়েছে, যথেষ্ট পূণ্য সঞ্চয়ও হয়েছে, ওপিতৃকুল ও শ্বশুড়কুল পবিত্র হয়েছে, রবিতনয়া তীরে যথাবিধি রবিপূজাও হয়েছে, এখন তোমরা ঘরে যাও। মুখরা কুটিলার এইসব কথা শুনে শ্রীরাধা সামান্যা অধীরা হয়ে বললেন, ননদিনী!অযথা তুমি রাগ করছ, রাধা কথা বলছেন বটে,
*তৃতীয় পদের শেষ অন্তরা*
ক্রোধে কাঁপি অঙ্গ, করিয়ে ভ্রুভঙ্গ
রাধা পানে চায় ঘন।
রাধা পেয়ে ভয়, সবিনয়ে কয়
ক্রোধ কর কি কারণ।।
যেই মালা দেখে, চাহিতেছ রোখে
করিতেছ সংশয়।
তোমার দাদার, মাথা খাই যদি
ঐ মালা মোর হয়।।
শুনি কোপে জ্বলে, মালা লয়ে চলে
কুটিলা কুটিল মতি।
ভণে অকিঞ্চিন, রাধিকা তখন,
ভয়ে চায় ইতি উতি।।
** আমি তোমার দাদার শপথ করে বলছি, তুমি শান্ত হও, কুটিলা রাধার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল যে রাধা ভয়ে কেমন করছে, তখন কুটিলা বলতে লাগল, ওরে কুলকলঙ্কিণীগণ!
যদি তোমাদের ঘরে যেতে ইচ্ছে না করে এই বনেই থাক,আমি চললাম,
আমার মা ও ভগবতী পৌণমাসীকে এই হার ও মালা দেখিয়ে তোদের উচিত শাস্তি দেওয়াইব। এবারে রাধা বললেন, বেশ, ননদিনী, ও ননদিনী!
যেখানে তোমার মন চায় যাও, আমাদের আর কটু কথা বলিও না।
ব্রজের ঘরে ঘরে হার ও মালা দেখাও,
এতে আমরা কোন ভয় পাব না, তোমার মত আমাদের কুটিল মন নয়,
এইকথা শুনে কুটিলা রাগে গজ গজ করতে করতে চলে গেল, যেখানে আঞান বেশে কৃষ্ণ বসেছিল।
*আঞান বেশে মিলন চতুর্থ পদ*
*প্রথম অন্তরা*
অভিমন্যু বেশে হরি যথা।
তুরিতে কুটিলা গিয়া তথা।।
মাল্য দুটি করেতে সঁপিল।
রোখভরে নিকটে দাঁড়াল।।
নিরিখ কপট ক্রোধে জ্বলি।
কহিছে চতুর বনমালী।।
** অভিমন্যু বেশে শ্রীকৃষ্ণ যেখানে বসেছিলেন, অত্যন্ত দ্রুতগতিতে তথায় কুটিলমতি কুটিলা উপস্থিত হয়ে বলল, দাদা! এই দেখ কৃষ্ণ বক্ষঃ
স্থলের ছিন্ন বনমালা ও রাধার কন্ঠের ছিন্ন মুক্তাহার কদম্বকুঞ্জে পেয়েছি।
আঞান বেশে কৃষ্ণ বললেন, কুটিলা
রাগ করিস না,আমি ওর যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করব।
*চতুর্থ পদের শেষ অন্তরা*
আজি আমি মথুরা যাব।
কংসে কহি সাজা দেওয়াইব।।
তুমি চলি যাও ভবনেতে।
আমি আসি মথুরা হতে।।
এত বলি করিল গমন।
অকিঞ্চন আনন্দিত মন।।
** শোন, এখন আমি মথুরায় যাব,
এই ছেঁড়া মালা ও হার রাজা কংসকে দেখিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করব।একটা কথা মনে রাখ, নিজের ঘরের মহাকলঙ্ক বাইরে প্রকাশ করবি না,
অতএব একেবারেই চুপ থাকবি।
মথুরার যদু সভায় আমি চতুরতা প্রকাশ করে যেন রমণী-চোর ও তার পিতার চরম শাস্তি হয় সেই ব্্যবস্থা নিব। আমার প্রিয় সুহৃৎ গোবর্ধন মল্লের কাছে অভিযোগ করব, বলব,
হে বন্ধু! তোমার গৃহিণী চন্দ্রাবলীকে
কুঞ্জে ডেকে এনে নন্দের পুত্র দূষিত করেছে, তাদের ছেঁড়া হার ও মালা পেয়েছি দ্যাখ। তুমি রাজা কংসের কাছে নিবেদন করে একশত পদাতিক
ও দশজন অশ্বারোহী সেনা পাঠিয়ে মধ্যাহ্নকালে নন্দীশ্বরপুর হতে সবার সামনে পুত্রের সঙ্গে পিতাকেও বেঁধে এনে যথা শাস্তি দেয়াইব। আবার বলি এইকথাগুলো কাউকে বলবি না,রাধা জেনে নিলে হেন তেন প্রকারে এই বার্তা নন্দঘোষকে দিলে তারা পলায়ন করবে মনে রাখিস, এখন ঘরে যা।
*আঞান বেশে মিলন পঞ্চম পদ*
অতঃপর কিছু পরে রাধা বিনোদিনী।
চলিলা মন্দিরে নিজ লইয়া সঙ্গিনী।।
আঞানের বেশ ধরে শ্রীহরি তখন।
জটিলা নিকটে ত্বরা করিলা গমন।।
কহিলা শুনহ মাতা সে লম্পট হরি।
আসিবে রাধার গৃহে মম বেশ ধরি।।
কদাচ তোমরা তারে পশিতে না দিবে।
যদি না নিষেধ মানে ইষ্টক মারিবে।।
বহিরদার বন্ধ করি বৈসহ উপরে।
চলিলাম আমি এখন রাধার মন্দিরে।।
এত বলি চলিলেন মনেতে উল্লাস।
আনন্দিত হৈল অতি অকিঞ্চন দাস।।
*কুটিলাকে নানা কথা বলে আঞানবেশে কৃষ্ণ দক্ষিণাভিমুখে মথুরাপথেচলে গেলেন এবং কুটিলা ঘরে এলে কিছুপরে শ্রীরাধা, সখীগণ নিজ নিজ আলয়ে গমন করলেন* *আঞান বেশে কৃষ্ণ কোন এক জায়গায় কয়েকঘন্টা কাটিয়ে জটিলা গৃহের দ্বারে এসে জোড়ে জোড়ে ডাকছেন, ওমা- মা তুমি কোথায় আছ? ও কুটিলা! কোথায় আছিস?দ্বার খোল।দাদার কন্ঠস্বর শুনে কুটিলা দরজা খুলে দিল, দরজা খোলার পর আঞান বেশে কৃষ্ণ বললেন, আমি রাজার কাছে সব অভিযোগ জানিয়েছি। এক
শত পদাতিক ও দশজন অশ্বরোহী সেনা পেছনে আসছে, কিন্তু মা, ঐ লম্পট কৃষ্ণ, আমার বেশ ধারণ করে
আমাদের গৃহে আসছে, আমি অদূর হতে এসব জেনে অলক্ষিতে ঘরে আসিলাম।ওরে কুটিলা!তুই বাইরের দরজা বন্ধ করে মায়ের সঙ্গে উপরে যা আর বাইরের বারান্দায় চুচ করে বস।ঐ লম্পটকে কোন মতেই ঘরে ঢুকতে দিবি না। মনে রাখবি, ঐ লম্পট প্রচীর টপকেও ভেতরে প্রবেশ না করতে পারে।গৃহের কাছে আসতে দেখলেই কটুকথা ও তিরস্কার করবি।
তোর বৌদির স্বভাব ভাল না জানিস?
সে,যেই স্ত্রী চোরের গন্ধ পেলে ঘরে থাকবে না,যদি সে কথা না শোনে তাহলে ইষ্টক (ইটের টুকরো) দিয়ে মারবি।অতএব আমি চললাম,রাধা যেন ঘরের বাহির না হতে পারে। এই বলিয়া চতুরের শিরোমণি আয়ান বেশে রাধার কাছে গেলেন।
*আঞান বেশে মিলন শেষ পদ*
*আসল আঞানের আগমন*
আয়ান আসিয়া,ডাকিছে হাঁকিয়া
দাঁড়ায়ে বাহির দ্বারে।
দ্বার খোল বলি, মাতা ও ভগ্নীরে
ঘন ঘন ডাক ছাড়ে।।
উপরে থাকিয়া,কুটিলা কহিছে
রাঙা করি দুটি আঁখি।
তোর চতুরতা, আজি বুঝিয়াছি
নিতি নিতা দাও ফাঁকি।।
উপরে যেমন , বরণ কালিয়া
ভিতরে তেমনই কালি।
দূর হ রাখাল, কুল মজানিয়া
নতুবা খাইবি গালি।।
শ্রমেতে কাতর, আঞান তখন
রক্তিম নয়নে চায়।
বলে দ্বার খোল, নতুবা কুটিলা
মরিবি পাঁচনি ঘায়।।
শুনিয়া কুটিলা, দ্বিগুণ কুপিল
ইষ্টক লয়ে হাথে।
যত পারে মুখে, দেয় গালাগালি
মারে আয়ানের মাথে।।
ভূতে ধরিয়াছে, ভাবিয়া আয়ান
ওঝা ডাকিবারে গেল।
দ্বিজ অকিঞ্চন, আয়ান প্রহার
হরিষেতে বিরচিল।।
*কিছুক্ষণ পরেই জটিলার পুত্র আয়ান নিজ গৃহের কাছে যেমন এসে উপস্থিত হলেন,অমনি কুটিলা হাতে
লোষ্ট্র (ঢিল) নিয়ে বলতে লাগল, ওরে
তুই ব্রজকুল রমণীগণের ধর্ম ধ্বংস করে বড়ই সাহসী হয়েছিস।আমার দাদার গৃহেও প্রবেশ করবার ক্ষমতা দেখাচ্ছিস? ওরে চপল! আমাদের গৃহের কাছে আসিলেই তোর মাথা ভেঙ্গে প্রতিফল দিব। তোর অন্যায় আচরণের কথা শুনে রাজা কংস,
ক্রোধ করে তোর পিতার সঙ্গে তোকেও সুখী করবার জন্য সেনা পাঠিয়েছেন, যখন তারা তোর পিতার সঙ্গে তোকেও বেঁধে নিয়ে নৃপতিনগরে
(মথুরানগরে) কারাগারে জন্মের মত আটক করে রাখবে, তখনই তোর চপলতা শান্তি পাবে। কুটিলার মুখে এইসব কথা শুনে আঞান, মনে মনে বলতে লাগলেন,আমার বোনকে তীব্র
তর ভূতে পেয়েছে,এখন ওঝা আনা একান্ত প্রয়োজন। এই চিন্তা করে আয়ান ওঝা আনতে গমন করলেন,
শ্রীকৃষ্ণ ভাবগতি দেখে ছলে বলে কৌশলে জটিলা ভবন হতে বিদায় হলেন*।
গিরি গোবর্ধনে শ্রীরাধা গোবিন্দ বহু লীলা করিয়াছেন তাঁর মাহাত্ম্যঃ-------
## এক সময় বিজয় নামক এক ব্রাহ্মণ,ঋণ গ্রহণ করিবার জন্য মথুরায় কোনও ধনীগৃহে আসিয়াছিলেন।সেখানে তিনি তাঁহার কার্য্যসাধন করিয়া নিজগৃহে গমন করিবার সময় গোবর্ধন তটে আসিয়া উপস্থিত হইলেন ও যদৃচ্ছাক্রমে সেখান হইতে একটি বর্তুলাকার শিলা
খন্ড গ্রহণ করিয়া বনপথে নিজগৃহ অভিমুখে অগ্রসর হইলেন।এই প্রকারে সেই ব্রাহ্মণ যখন ব্রজমন্ডলের সীমা অতিক্রম করিয়া বনভূমিতে উপস্থিত হইলেন,তখন দেখলেন যে এক ঘোরাকৃতি রাক্ষস তাঁহাকে আক্রমণ করতে আসছে।রাক্ষসকে নিজ নিকটে আগমন করিতে দেখিয়া ব্রাহ্মণ প্রাণভয়ে ভীত
প্রাণপণে দ্রুত বেগে পলায়ন করতে আরম্ভ করলেন, কিন্তু তাহাতেও তিনি রাক্ষসের হাত হতে নিষ্কৃতি লাভ করতে পারলেন না।দেখতে দেখতে সেই ঘোরাকৃতি রাক্ষস দ্রুতবেগে তাঁর
সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হল ও তাঁহাকে ধরবার জন্য হস্ত প্রসারণ করিল। ব্রাহ্মণ তখন প্রাণভয়ে মূর্ছিত প্রায় হয়ে যেমন হস্তক্ষেপণ করলেন, অমনিই তাঁর হস্তস্থিত গোবর্ধন শিলা-
খন্ড নিক্ষিপ্ত হইয়া সেই রাক্ষসের গায়ে লাগিল।এইভাবে শিলাখন্ড গায়ে লাগিবা মাত্র রাক্ষস আর রাক্ষস রহিল না, দেখতে দেখতে সেই রাক্ষসদেহ পরিত্যাগ করিয়া শ্যামবর্ণ
পীতবসন বনমালা বিভূষিত বংশী-
ধারী বেত্রহস্ত ও কটক কুন্ডলাদি পরি
শোভিত,কৃষ্ণপার্ষদ গোপবালকের মূর্তি ধারণ করিল ও কৃতাঞ্জলি পুটে
বিনয়নম্র গদগদ বচনে ব্রাহ্মণকে বলতে লাগল--------------------------
ধন্যস্তং ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠ পরত্রাণ পরায়ণঃ।
ত্বয়া বিমোচিতোহহং বৈ রাক্ষসত্বান্মাহামতে।।
পাষাণস্পর্শমাত্রেণ কল্যাণং মে বভুব হ।
ন কোহপি মাং মোচয়িতুং সমর্থো হি ত্বয়া বিনা।। (শ্রীগর্গ সংহিতা)
অর্থ্যাৎ-- হে ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠ!তুমি ধন্য ও পরিত্রাণপরায়ণ; আজ তোমার কৃপায় আমার রাক্ষসত্ব মোচন হল।তোমার হস্ত নিক্ষিপ্ত পাষাণখন্ড স্পর্শ
মাত্রই আমার পরম মঙ্গল লাভ হল।
তুমি ব্যতীত কেহই আমাকে এইভাবে মুক্তি প্রদান করতে পারত না।দিব্যমূর্তিপ্রাপ্ত সেই রাক্ষসের কথায় বিস্মিত হইয়া ব্রাহ্মণ বললেন- হে মহাত্মন! আমার কি সাধ্য আছে যে
তোমাকে মুক্তি প্রদান করতে পারি। আমার মনে হয় যে, আমার হস্তনিক্ষিপ্ত পাষাণ স্পর্শেই তুমি মুক্তি
লাভ করিয়াছ বটে, কিন্তু এই পাষাণের মহিমা আমার কিছুই জানা নেই।তোমার যদি কিছু জানা থাকে, তাহলে কৃপা পূর্বক আমাকে বলো। ব্রাহ্মণের এই কথা শুনিয়া সেই দিব্য
মূর্তিধারী এবং দিব্যজ্ঞান-প্রাপ্ত রাক্ষস বলিল-----------------------------------
গিরিরাজ হরেরূপং শ্রীমান্ গোবর্ধনো
গিরিঃ।
তস্য দর্শনমাত্রেণ নরো যাতি কৃতার্থতাম।।
গন্ধমাদনযাত্রায়াং যৎ ফলং লভতে নরঃ।
তস্মাৎ কোটিগুণং পূণ্যং গিরিরাজস্য
দর্শনে।।
পঞ্চবর্ষসহস্রাণি কেদারে যৎ তপঃ ফলম্।
তচ্চ গোবর্ধনে বিপ্র ক্ষণেন লভতে নরঃ।।
মলয়াদ্রৌ স্বর্ণভারদানস্যাপি চ যৎ ফলম্।
তস্মাৎ কোটিগুণং পূণ্যং গিরিরাজে হি মাসিকম্।।
ঋস্যমুখস্য সহ্যস্য তথা দেবগিরেঃ পুনঃ।
যাত্রায়াং লভতে পূণ্যং সমস্তায়া ভূবঃ ফলম্।।
গিরিরাজস্য যাত্রায়াং তস্মাৎ কোটিগুণং ফলম্।
গিরিরাজসমং তীর্থং ন ভূতং ন ভবিষ্যতি।।
অর্থ্যাৎ-- গিরিরাজ গোবর্ধন শ্রীহরিরই
রূপান্তর মাত্র। গোবর্ধন পর্বত দর্শন মাত্রেই জীবগণ কৃতার্থ হইয়া যায়।
গন্ধমাদন পর্বত পরিক্রমা করিলে যে ফল লাভ করে, গোবর্ধনপর্বত দর্শন
মাত্রেই তদপেক্ষা কোটিগুণ ফল লাভ হইয়া থাকে। কেদার ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার বৎসর তপস্যা করিলে যে ফল লাভ হয়, ক্ষণকালমাত্র গোবর্ধন তটে অবস্থান করিলেই সে ফল লাভ হয়।
মলয়পর্বতে স্বর্ণভার দান করিলে যে ফল লাভ হয়, গোবর্ধনতটে এক মাস বাস করিলে তদপেক্ষা কোটিগুণ ফল
হইয়া থাকে।ঋস্যমুখপর্বত,সহ্যগিরি এবং দেবগিরি পরিক্রম করিলে পৃথিবী প্রদক্ষিণের ফল লাভ হইয়া থাকে, কিন্তু গোবর্ধনগিরি পরিক্রম করিলে তদপেক্ষা কোটিগুণ ফল লাভ হয়।গিরিরাজ গোবর্ধন সদৃশ তীর্থ আর কোন স্থানেই হয় নাই আর হবে না।পৃথিবীতে যেখানে যত তীর্থ আছে, সমস্ত তীর্থের কোটিগুণ ফল এই গোবর্ধন হইতে অনায়াসে লাভ হইয়া থাকে।
********************************
এই গোবর্ধন পর্বত সম্বন্ধে আরও বহু
তত্ত্ব আছে। জয় নিতাই।
অমূল্য লীলার তথ্য সংগৃহীত
শ্রীজয়দেব দাঁ
বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ= বাঁশবাড়ী, থানা=ইংরেজ বাজার, জেলা=মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ-৭৩২১০১
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
প্রথম দিবস
(১) শ্রী কৃষ্ণের আবির্ভাব লীলা,
(২), শ্রী রাধার আবির্ভূতা লীলা,
(৩),বাল্যলীলা-শকট
ভঞ্জন লীলা,
(৪), মৃত্তিকা ভক্ষণ,
(৫),নবনীত চৌর্য,
(৬),দাম বন্ধন,
(৭), শ্রী কৃষ্ণের চাঁদ ধরা,
(৮),কালীয় দমন।
দ্বিতীয় দিবস
(১),নবোঢ়া পূর্বরাগ,
(২), শ্রী মতীর পূর্বরাগ লালসাদশা,
(৩), পূর্বরাগ,ভাটমুখে
শ্রবণ,
(৪), পূর্বরাগ,বংশী ধ্বনী শ্রবণ,
(৫), পূর্বরাগ, সখী মুখে নাম শ্রবণ,
(৬), পূর্বরাগ, চিত্রপটে লিখন ও দর্শন,
(৭), সাক্ষাৎ দর্শন,
(৮), স্বপ্নে দর্শন।
তৃতীয় দিবস
(১), শ্রী কৃষ্ণের পূর্বরাগ,(চিন্তা দশা)
(২),ঐ, সুবলের কাছে চিন্তার কারণ বর্ণন,
(৩),ঐ, সুবল- কৃষ্ণ
কথোপকথনের মাঝে বিশাখার আগমন,
(৪),ঐ, বিশাখা কর্তৃক কৃষ্ণের কাছে রাধার বায়ো: সন্ধি বর্ণন,
(৫),ঐ, কৃষ্ণ কর্তৃক
বিশাখার কাছে স্নান-
ঘাটে দর্শন ও বর্ণন,
(৬),বিশাখা কর্তৃক কৃষ্ণের কাছে রাধার
গুণকীর্তন,
(৭),সখী শিক্ষা,
(৮),নব অভিসার ও মিলন।
চতুর্থ দিবস
(১),ভবন গোষ্ঠ,
(২),সাজন গোষ্ঠ,
(৩),গমন গোষ্ঠ,
(৪), ব্রহ্ম মোহন লীলা,
(৫)গৃহাগমন,
(৬), শ্রী কৃষ্ণের রূপ বর্ণন,
(৭), শ্রী মতীর অভিসার,
(৮), সাক্ষাৎ ওগৃহাগমন,
পঞ্চম দিবস
(১), নন্দালয়ে দেব গোষ্ঠ,
(২),গমন গোষ্ঠ,
(৩),সুবল মিলন,
(৪), অন্ন ভিক্ষা,
(৫), গিরিতটে দান,
(৬), উত্তর গোষ্ঠ ও গাভী দোহন,
(৭),রূপানুরাগ,
(৮),রূপাভিসার ও
মিলন।
ষষ্ঠ দিবস
(১) গিরি গোবর্দ্ধন ধারণ ওগৃহাগমন।
(২) গোষ্ঠ গমন,
(৩), বস্ত্র হরণ লীলা,
(৪),ন্যাংটা সুবল,
(৫),গৃহাগমন
(৬),আক্ষেপানুরাগ
(৭), শ্রী মতীর অভিসার,
(৮),মিলন।
সপ্তম দিবস
(১),মুরলী বর্ষণ,
(২),গমন গোষ্ঠ,
(৩),মুরলী শিক্ষা,
(৪),কাকমাল্যমান,
(৫), বংশী ধ্বনী শ্রবণে শ্রী মতীর বিকিকিনির ছলে অভিসার,
(৬), নৌকা গঠন ও
নৌকা বিহার,
(৭),মানস গঙ্গায় নৌকাবিহার,
(৮), প্রেম বৈচিত্র্য।
অষ্টম দিবস
(১), শ্রী মতীর রসোদগার,
(২), গোষ্ঠে গমন,
(৩), সূর্য পূজা
(৪),পুলিন ভোজন
(৫),দানঘাটে দানলীলা,
(৬), উত্তর গোষ্ঠ ও সঙ্কেত,
(৭)বাসকসজজা,
(৮) উৎকন্ঠিতা ও
বিপ্র লব্ধা।
নবম দিবস
(১) খন্ডিতা(ধীরাদশা)
(২),ঐ,(ধীরাধীরাদশা),
(৩),মান,(অধীরাদশা),
(৪)কলহন্তরিতা,দূতীগমনের পূর্ব পর্যন্ত,
(৫)ঐ, দূতীগমন ও মিলন,
(৬) শ্রী কৃষ্ণের রূপ বর্ণন,
(৭) শ্রী শ্রী রাসলীলা,
(৮),অলস লীলা।
(কয়েক বৎসর হইতে নবম দিবস )
(১), খন্ডিতা
(২)মান,
(৩), দূর্জয় মান,
(৪)কলহন্তরিতা মিলন,
(৫) শ্রী কৃষ্ণের রূপ বর্ণন,
(৬) শ্রী রাসলীলা,
(৭) শ্রী শ্রী মহারাসলীলা,
(৮) অলস লীলা।
(তাহা বাদেও
আক্ষেপানুরাগের আটটি ভাগ রয়েছে,
(১) আত্ম প্রতি, সখী প্রতি, বিধাতা প্রতি,
মুরলী প্রতি, কৃষ্ণ প্রতি,গুরুগণ প্রতি,
মদন প্রতি, প্রেম প্রতি।
প্রতি বছর পরিবর্তন
করা হয়।
(এই সব লীলা রস পর্যায় এই অধমের
নিকট রয়েছে)।
আরো কিছু পর্যায়
রয়েছে।
জয়নিতাই জয়গৌর।
শ্রীজয়দেব দাঁ
বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ= বাঁশবাড়ী, থানা=ইংরেজ বাজার, জেলা=মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ-৭৩২১০১
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
[১]রূপ গোস্বামী-- রূপ মঞ্জরী।
[২]সনাতন গোস্বামী-- লবঙ্গ মঞ্জরী।
[৩]রঘুনাথ ভট্ট গোস্বামী- রস মঞ্জরী।
[৪]জীব গোস্বামী- বিলাস মঞ্জরী।
[৫]গোপাল ভট্ট গোস্বামী- গুণ মঞ্জরী।
[৬]রঘুনাথ দাস গোস্বামী- রতি বা তুলসী মঞ্জরী।
[৭]লোকনাথ গোস্বামী- লীলা মঞ্জরী মতান্তরে মঞ্জুলালী মঞ্জরী।
[৮]ভূগর্ভ গোস্বামী- প্রেম মঞ্জরী।
##############################
অমূল্য লীলার তথ্য সংগৃহীত
শ্রীজয়দেব দাঁ
বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ= বাঁশবাড়ী, থানা=ইংরেজ বাজার, জেলা=মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ-৭৩২১০১
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ= বাঁশবাড়ী, থানা=ইংরেজ বাজার, জেলা=মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ-৭৩২১০১
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*মকর কুন্ডল মেলে*,*কনয়া কেতকি দোলে*
*কিয়া নহে- কামের করাতি*
*উপরে বিজুরী ভাতি*,*হেম অভরণ কাঁতি*
*পীত-পিন্ধন কত ভাতি*
**শ্রীরাধা আপনমনে (নিজমনে) এই
রূপের কথাগুলি বলছিলেন, বলবার শেষে কোন এক সখী এসে জিজ্ঞাসা করলেন,রাধে!তুমি একাকিনী কি কথা বলছ?আমায় বলবে? সে সখীর উত্তরে ভাবাবিষ্ট প্রেমময়ী রাধারাণী বলছেন,ওগো সখী! শ্যামনাগরের মকর কুন্ডলে যে স্বর্ণকেতকীর ( সোনার কেয়াফুলের) অবতংস (কর্ণাভরণ বা কানের অলঙ্কার) দোদুল্যমান (দুলছে) উহা বাস্তবিক
কিয়া বা কেয়া ফুল নহে, উহা কন্দর্পের করাত,( অবলা নারীর হৃদয় খন্ডিত করবার করাত বা অস্ত্র) এইকথাগুলি বলবার পরেই পুনরায় রূপের প্রতি অনুরাগ সম্ভরণ করতে না পেরে বলছেন, আমার প্রাণবল্লভের লাবণ্যময় অঙ্গোপরি
বিদ্যুৎতুল্য স্বর্ণ অভরণের জ্যোতি এবং পরিহিত পীত বসনের জ্যোতি মিলিত হয়ে কত যে শোভা বিস্তার করেছিল,তা আর কি বলব।
*সজনি!(কি) পেখনু বরিহা চূড়া মালে*
**সখী!দেখলাম,তাঁর (বরিহা চূড়া মালে) ময়ূরপুচ্ছ চূড়াস্থিত মালার উপরে----,
( চূড়া পূর্বে কে ছিলেন বলতে হবে)
*ঘুরিয়া ঘুরিয়া বুলে*,*মাতল ভ্রমরা ভুলে*
*পড়ে জানি নয়ন কমলে*
** মত্ত ভ্রমরা ঘুরে ঘুরে ভ্রমণ করছে,
এইফুলে ঐফুলে ভ্রমণ করছে বটে, কিন্তু তারা মনে শান্তি লাভ করতে পারছে না, কি জানি!ভ্রমরগণ ভ্রম করে আমার প্রাণবল্লভের নয়নকমলে
পতিত হয় কিনা! এই চিন্তায় রাইধনি চিন্তিত, অতি অন্তরঙ্গের অঙ্গে যেন কোন আঘাত না আসে।যদি প্রাণবল্লভ গোবিন্দকে ভালবাসতেই হয় তবে এইভাবে ভালবাসতে জানতে হবে।
*কুন্দে,কুন্দাওল কালা*, *কনয়া কেয়ুর মালা*
*শ্যাম অঙ্গে করে ঝিকিমিকি*
*অঙ্গের সৌরভ পাইয়া*, *অলীরাজ আইল ধাইয়া*
*লাখে লাখে মদন ধানুকী*
** আবার কি দেখলাম জানিস! কুন্দযন্ত্রে, যে কুন্দ যন্ত্র দিয়ে সোনা চাঁদি প্রভৃতি পালিশ করে মসৃণ করা হয়, সে কুন্দযন্ত্রে কুন্দা (কুঁদা) মসৃণ
(চাকচিক্যময়) শ্রীঅঙ্গে (এই চিকচিক্যময় শ্রীঅঙ্গ কার? আমার কৃষ্ণের) স্বর্ণকেয়ুরের (সোনার হার)
মালা ঝলমল করছিল, শ্রীঅঙ্গের সৌরভে আকৃষ্ট হয়ে মদনের ধনুর্ধারী সেনা লক্ষ লক্ষ অলিরাজ ধেয়ে আসিল।( এই পদটি কোন অজ্ঞাত পদকর্তার, কিন্তু মনে হচ্ছে কোন অজ্ঞাত পদকর্তা নহে, এই পদটির রচয়িতা স্বয়ং মহাভাব স্বরূপিনী ভাবাবিষ্ট রাধারাণী)
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*দুর্জয় মানের একটি অপ্রচলিত পদ*
*********************************
*রাই! কত পরিখসি আর?*
*তুয়া আরাধনা মোর বিদিত সংসার*
*যজ্ঞ,দান,তপ,জপ সব তুমি মোর*
*মোহন মুরলী আর বয়ান-কো বোল*
** শ্রীরাধার প্রতি শ্রীকৃষ্ণের উক্তি**
মানিনীর মান অপনোদনে (খন্ডনে) প্রবৃত্ত (রত) হয়ে শ্রীকৃষ্ণ বলছেন= রাধে! আমাকে আর কত পরীক্ষা করবে?তোমার সন্তোষ সাধনই (তোমার আনন্দ বর্ধনই)আমার একমাত্র কাজ, একথা বিশ্ব-বিখ্যাত
অর্থ্যাৎ জগতের সকলেই জানে। আমার যজ্ঞ,দান,তপ,জপ যাহা কিছু
সকলই তুমি, হে প্রাণপ্রিয়তমা রাধে!
আমার মোহন মুরলীতে "রাধা" ব্যতীত
অন্যকথা বাজে না,আর মুখেও রাধা ভিন্ন আন কথা বাহির হয় না।
*বিনোদিনী হাসিয়া বোলাও*
*ফুলশরে জর জর জনেরে জিয়াও*
*কুটিল-কুন্তল-বেঢ়ি কুসুমকো জাদ*
*নয়ন কটাক্ষ তোমার বড় পরমাদ*
** হে আনন্দদায়িনী রাধে! একটিবার
আমার প্রতি চেয়ে হেসে কথা বলো,
কন্দর্পশরে জর্জরিত তোমার শরণাগত আমার জীবন দান করো।
তোমার কুঞ্চিত (কোঁকড়ান)কেশপাশ
(চুলের গোছা) বেষ্টিত পুষ্পমাধুরীর কুহক (ইন্দ্রজাল) এবং তোমার নেত্রান্তদৃষ্টিতে (অপাঙ্গ বা কটাক্ষ দৃষ্টিতে) আমার অত্যন্ত বিপদ উপস্থিত হয়।
*সীথের সিন্দুর দেখি দিনমণি ঝুরে*
*এত রূপ-গুণ যার সে কেন নিঠুরে*
*বিনোদিনী চাহ মুখ তুলি*
*তোমার নয়ন-নাচনে নাচে পরাণ পুতলি*
** ওগো রাই! তুমি জানো কি-না! তোমার সিঁথির সিন্দুর দর্শন করে সূর্য্যের নয়নে অশ্রু ঝরে। যার এত রূপ-গুণ, সে তুমি এত নিষ্ঠুর কেন জানি না। হে সন্তোষ সাধিনী রাধে!
তোমার আনন্দময়ী মুখারবিন্দ উত্তোলন করে আমার প্রতি কৃপা দৃষ্টি
পাত করো। তোমার প্রেমচঞ্চল নয়ন-
নৃত্যে আমার পরাণ পুতলি নাচে এবং সঞ্জীবিত হয়, নচেৎ জড় পুতুলের ন্যায় অচেতন থাকে।
*পীত-পিন্ধন মোর,তুয়া অভিলাষে*
*পরাণ চমকে যদি ছাড়হ নিশ্বাসে*
*হিয়ার মাঝারে উঠে রসের হিলোলি*
*পরশিতে করি সাধ পায়ের অঙ্গুলী*
*যদুনাথ দাস কহে এ নহে যুকতি*
*কানু কাতর বড় রাখহ পিরীতি*
** ওগো মোর সর্বস্ব রাধে! আমি যে পীতবসন ধারণ করেছি সে কেবল তোমার হেমকান্তি অঙ্গ দর্শনের আশায়। তুমি যদি দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করো, আতঙ্কে আমার প্রাণ চমকিত হয়ে উঠে। হে বিনোদিনী রাধে! তোমার অতুলনীয় রূপ-গুণের কথা স্মরণ করে আমার অন্তরে রসের তরঙ্গ উচ্ছলিত হয়ে উঠে। আর তোমার কমল-কোমল পদাঙ্গুলি স্পর্শ
করতে অভিলাষ করছি,কেন? আমার
প্রেমদাবদগ্ধ হৃদয় শান্তি লাভের আশায়। গীতকর্তা যদুনাথ দাস সখীভাবে বলছেন, রাইধনি আর মান করে থাকা যুক্তিযুক্ত নহে। তোমার প্রাণপ্রিয়তম বড়ই কাতর,তাঁর প্রীতি বিধান করো, তাঁর বিরহ-সন্তপ্ত হৃদয়ে শীতল প্রৈমবারি সিঞ্চন করো।
*ভুল ভ্রান্তি মার্জনীয়*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*রূপানুরাগ রূপানুরাগ*
*কি রূপ হেরিনু কালিন্দী তীরে*
*অতি অপরূপ কদম্ব মূলে*
*অচলি চপলা সহিত তায়*
*মৃগাঙ্ক রহিত শশাঙ্ক উদয়*
** নবানুরাগিনী শ্রীরাধার হৃদয়ে নব নব ভাবোদ্গম হওয়াতে পুনঃ বলছেন, সখি! কালিন্দী কূলে আজ "কি" অপরূপ রূপ দর্শন করলাম।
কদম্ব মূলে মেঘ নেমেছে ও স্থির সৌদামিনী ( বিদ্যুৎ) তাহাতে জড়িয়ে রয়েছে এবং কলঙ্কহীন চন্দ্র মেঘের উপরে উদয় হয়েছে।( মেঘ=কৃষ্ণাঙ্গ)
(চপলা স্থির বিদ্যুৎ= পীতাম্বর) ( শশাঙ্ক= চন্দ, চন্দন বিন্দু) ( মৃগাঙ্ক= কলঙ্ক)
*নাচিছে ময়ূর জলদ পরে*
*অলিগণ সব চাঁদেরে ঘেরে*
*বিকচ সরোজ মিলিত বিধু*
*মেঘের গরজে অমৃত মধু*
** ওরে সখী! দেখলাম, মেঘ দেখলে নিচে ময়ূর নৃত্য করে, আবার কি আশ্চর্য্যের বিষয় মেঘের উপরে ময়ূরের নৃত্য দেখলাম। মধুকর সব কমলের মধুপান করে থাকে কিন্তু কি
চমৎকার,চন্দ্রকে ঘেরে অলিগণ রয়েছে।( চূড়ার ময়ূর পুচ্ছে ময়ূর ভ্রম)
(অলকাবলীতে অলিগণ ও চন্দন বিন্দুতে চন্দ্র ভ্রান্তি )
*কি অদভূত কহিতে নারি*
*যথা মেঘ তথা না রহে বারি*
*হৃদয় মাঝারে প্রবেশ করি*
*নয়নের পথে বরিষে বারি*
** ওগো সখী! কি অসম্ভব, চিরকালে চন্দ্র ও কমলের বৈরীভাব( শত্রুভাব) ছিল, কিন্তু আজ কি দেখলাম জানিস? আজ চন্দ্রের সহিত কমল মিলিত হয়ে বিকশিত হয়েছে।( বিকচ
সরোজ=বিকশিত কমল বা পদ্ম, প্রফুল বদন।)(বিধু= চন্দন বিন্দু)
"মেঘ গর্জন"বংশীধ্বনিতে অমৃত ও মধু বর্ষণ হয়। আরো আশ্চর্য্যের বিষয়,এই যে,যে স্থানে (জায়গায়) মেঘ সেই জায়গায় জল নেই। মেঘ হৃদয়ে প্রবেশ করে নয়নের পথে জল বর্ষণ করে।
*মোর মনে লয় বিজুরী হয়ে*
*জড়ায়ে রহি ঐ জলদে গিয়ে*
*জ্ঞান দাস কহে নহেত আন*
*যে কহিলে ধনি সেই সে প্রমাণ*
** সখী! যাহা দর্শন করলাম, তাহাতে আমার অভিলাষ এই যে, আমি বিদ্যুৎ হয়ে ঐ মেঘকে জড়িয়ে থাকি।
মঞ্জরী ভাবাবিষ্ট গীতকর্তা সখীবেশে বলছেন,রাধে! তুমি যাহা বললে তাহা সত্যই বটে।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*সজনি! কি আজু পেখলু রূপধাম*
*দেখিলে করিব কি,না দেখিলে নাহি জি*
*ভালে সে অনঙ্গ ভেল কাম* ধ্রু।।
*সুকুঞ্চিত কেশ জালে,মালতী রচিয়া ভালে*
*তছুপরি শিখিপুচ্ছ চন্দ*
*মুগধ রাহু বেঢ়ী,মধুকর মধুকরী*
*উড়ি পড়ি পিয়ে মকরন্দ*
** শ্রীকৃষ্ণ দর্শনান্তে গৃহাগতা শ্রীরাধা,
অর্থ্যাৎ শ্রীকৃষ্ণকে দর্শনের শেষে ঘরে এসে শ্রীরাধা! কোনও সঙ্গিনী সখীকে বলছেন,সখী! আজ কি আমি "শরীর ধারী রূপের" দর্শন পেলাম। কিন্তু হায়! দেখলে কি হবে, যতই দেখি ততই নয়নের সাধ বেড়ে যায়। অভাবিত ( যা ভাবা যায় না,) সৌভাগ্যে কৃতার্থতার ( সিদ্ধমনোরথের,) পরিবর্তে দেখছি আরোও বিষম সঙ্কট হয়ে উঠল। কি যে করব আমি কিছুই স্থির করতে পারছি না। আবার তাঁকে না দেখেও প্রাণ ধারণ করতে পারছি না। ওরে সখী! কন্দর্প শিবের অভিশাপে অঙ্গহীন হওয়ায় তার পক্ষে ভালই হয়েছে, নইলে সে আর লজ্জায় মুখ দেখাতে পারত না। কারণ মদনে রূপ নাকি সকলেই বলে খুবই সুন্দর, সে সুন্দরকে জয় করেছে শরীরধারী রূপের মানুষটি। আরোও দেখলাম নাগর শিরোমণির সুকুঞ্চিত কেশ ( অতি সুন্দর কোঁকড়ানো চুল) রাশি
চুলগুলি মালতী মালাদ্বারা সম্বন্ধ, যেন কুঞ্চিত কেশ নহে পুরো মালতীমালা মনে হচ্ছে। আবার তার উপরে শিখি পুচ্ছের চন্দ্র সুবিন্যস্ত অর্থ্যাৎ সুন্দরভাবে বা পরিপাটিভাবে রচনা বা সাজানো, তার উপরে যে ময়ূর পুচ্ছ রয়েছে দেখে মনে হচ্ছে চন্দ্র অবস্থান করছে। দেখলে বোধ হয় যেন রাহুরূপ কেশজাল সেই চন্দ্রকে গ্রাস করতে গিয়া মাধুর্য্যে মুগ্ধ
হয়ে পড়েছে।আর পরিমল উন্মাদিত
(চন্দন ও ফুল ইত্যাদির অতি সুগন্ধ)
মধুকর মধুকরীগণ,তার চারিদিকে বেষ্টন পূর্বক (ঘিরে) নির্ভয়ে মালতীর মকরন্দ (মধু) পান করছে।
*ভালে সে চন্দন বিন্দু,নিন্দিয়া শরত ইন্দু*
*ঘন মেঘে পূর্ণ পরকাশ*
*নবীন নলিনী দল,আঁখি যুগ চঞ্চল,*
*বিম্ব অধরে মৃদু হাস*
*শ্যাম অঙ্গে শোভা হেন,তিমিরে তড়িৎ যেন*
*কটি আটি পীত নিচোল*
*মুখর মঞ্জীর ধ্বনি,উলসিত ধরণী*
*বংশী দাস পদতলে ভোর*
** ললাটে ঘন মেঘের উপরে সমুদিত ( উদিত), পূর্ণ চন্দ্রের সৌন্দর্য্য পরাজয়ী একটি মনমোহন চন্দন তিলক শোভা পাচ্ছে। এবং তার নিচেরদিকে নবীন নলিনীর অর্থ্যাৎ নতুন পদ্মের দলবৎ স্নিগ্ধ সুন্দর কোমল আঁখি যুগল বিরাজিত। ও সখী!হায়! কি অদ্ভুত, চাঁদে কমলে একত্র বিরাজিত( শোভমান হয়ে বিরাজ করছে)। আঁখি দুটি স্বতঃ ( নিজে থেকে) চঞ্চল, এবং বিম্বাধর
(পাকা তেলাকুচার ফলের মত টুকটুকে লাল ঠোঁট) খানি মধুর হাস্য সম্বলিত(যুক্ত)।আর শ্যামবরণ তনু কান্তির উপরে কটিতে একখানি পীতাম্বর (হলুদ বর্ণের বসন ) খুব শক্ত করে পরিহিত, দেখে আমার বোধ হল যেন তড়িৎ তিমিরকে জড়িয়ে রয়েছে।
তাঁর চরণে যে নূপুর রয়েছে সর্বদাই রুণু-রুণু শব্দে বাজছে।(মুখর) আমার বোধ হল যেন সে ধ্বনিতে উল্লসিত ( পরমানন্দ)হয়ে অচলা স্থিরা ধরণীও
আনন্দ স্পন্দিতা (কম্পিতা)। ওরে সখী! অতএব আমার মতো নারীর মন চঞ্চল হবে সে আর বিচিত্র কি।
গীতকর্তা রাধারাণীর কথা শুনে সখীভাবে বলছেন, সত্য সত্যই তাহাতেই তো আমি ভোর (তন্ময়) হয়ে
ঐ চরণতলে নিপতিত।
*ভুল ভ্রান্তি মার্জনীয়*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*অপ্রচলিত পদ*
*কিয়ে গুরু-গরবিত*,
*না মানে পাপ চিত*
*আন না শুনে কান বিন্ধে*।
*ও নব নাগর*
*সব গুণে আগোর*
*তারে সে পরাণ কান্দে*।।
** কোন এক সখি শ্রীরাধাকে পরীক্ষার জন্য কিছু কথা বললেন, সখী রাধা! তুমি আমার কথা শ্রবণ করো-- দেখ,তুমি কানুর প্রেম গোপন করো।তুমি এইভাবে গোঠে,পথে,ঘাটে
অট্টালিকার আড়ালে থেকে তাঁর সঙ্গে
প্রেম করিও না।কুলধর্ম আচরণ করো।তোমার কুলে যে যে রীতি নীতি আছে তাহাই আচরণ করো। অযথা কলঙ্কের বোঝা মাথায় নিয়ে বেড়িও না। ধৈর্য্য লজ্জা ধারণ করবে, আর গুরুজনের সব বাক্য শ্রবণ করবে, এবং নিজের মান নিজে রাখবে, ঘরে কিংবা বাইরের কেউ যেন উপহাস না করতে পারে। তোমার মতো ত্রিভুবনে
কুলে শীলে পরম গুণবতী রমণী কে আছে বল? তোমার বাপ ও শ্বশুর কুলের গৌরব ও ধনজনের অন্ত নাই।
তোমার হৃদয়ে যখন প্রেমের উদয় হবে,চিত্তকে আনত(অবনত) রাখবে।
*সজনি! ও বোল যনি আর*
*কি যশ অপযশ*
*না ভাওয়ে গৃহ বাস*
*হইনু কুলের অঙ্গার*।।
** সখীর এইপ্রকার উক্তি শ্রবণ করে
প্রেমময়ী রাধার উক্তি= সখী! আর যেন ও কথাগুলি না বলো। সখী! কি সে গুরু গৌরব! আমার পাপচিত্ত ও কথা মানেই না।আর কর্ণরন্ধ্র (কানের
ভেতরে আন কথা ( বাজে কথা)প্রবেশ করেই না। জানিস সখী!
ও নবনাগরমণি সকল গুণের আকর,
তাঁর জন্য আমার প্রাণ কেবলই কাঁদছে, আমি কুলের ছাই স্বরূপ। যশ অপযশের কথা কি বলব, আমার এই
গৃহেই থাকতে ভাল লাগে না।
*কি জানি কিবা হইল*
*কি খেনে পরশিল*
*সে রস পরশমণি*।
*জাতি,কুল,শীল*
*আপন ইচ্ছায়*
*করিনু তাহার নিছনি*।।
**ওরে সজনি! আমার কি যে হ'ল বুঝতে পারছি না,কি ক্ষণে যে সেই রসস্পর্শমণি আমাকে স্পর্শ করল,
তখন হতে আমার আত্মীয় স্বজনের জাত্যাভিমান ; কুলবতীর কর্তব্য, সৎ
স্বভাব সকলই আপন ইচ্ছাতেই তাঁর সুখের নিমিত্ত (জন্য) ত্যাগ করেছি।
*হিয়া দগদগি*
*মনের পোড়ানি*
*কহিনু, না রহিমু ঘরে*।
*এবে সে জানিনু*
*প্রেমের এ ফল*
*ভালে জ্ঞানদাস ঝুরে*
** আমার এই দগ্ধ (পোড়া) হৃদয়ের উৎকট (তীব্র) যন্ত্রণা মনের পীড়াদায়ক। ওরে সখি আমি আর এই ঘরে থাকব না। এই আমি তোকে আমার মনের কথা বললাম।প্রেমের যে এইরকম পরিণাম (ফল) তা এতদিনে জানতে পারলাম। গীতকর্তা জ্ঞানদাস সখী ভাবাবেশে বললেন,
তোমার ভালর জন্যই আমরা কাঁদছি।
জয় নিতাই।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*একটি অপ্রচলিত পদ জয় নিতাই*
*সজনি! এতদিনে ভাঙ্গল ধন্দ*
*তুয়া অনুরাগ,তরঙ্গিণী-রঙ্গিণী,*
*কোন করব অব বন্ধ*
**শ্রীরাধার কোন এক সখি শ্রীকৃষ্ণের কাছে বসেছিলেন,তারপর কৃষ্ণের কাছ হতে সেই সখি রাধার কাছে এলেন, এসে বলেছন,রাধে! এতদিন আমি চরম অন্য ভাবনায় পড়ে ছিলাম, কিন্তু আজ আমার মনের ধাঁধাঁ ভঙ্গ হল।(নয়নে লাগিল ধাঁধাঁ অন্ধকারে ছিলাম), এখন সখী তোমার অনুরাগ নদীর তরঙ্গকে কেহ আর রোধ করতে পারবে না।
*ধৈরজ-লাজ-কুল-তরু ভাঙ্গই*
*লঙ্ঘই গুরু-গিরি-রোধে*
*মাধব-কেলি-সুধারস-সাগরে*
*লাগত বিগত-বিরোধে*
*তোমার অনুরাগের(ভালবাসার) তরঙ্গাঘাতে ধৈর্য্য ও লজ্জারূপ তীর এবং তত্রস্থ (সেই জায়গার) বৃক্ষ সমূহ
ভেঙ্গে গুরুজনরূপ উচ্চপর্বতের বাধা লঙ্ঘন করে মাধব কেলিসুধারস সাগরে মিলিত হয়েছ।সকল বিঘ্ন অপসারিত (দূরীভূত) হয়েছে।
*ওগো সখী! আর কোন দ্বিধা নেই, এখন তুমি অভিসার কর, হার মণিময়
অলঙ্কার ও নীলাম্বর অঙ্গে ধারণ কর।
মেঘ সঙ্গে বিদ্যুৎ যেমন শোভা পায়, তদ্রুপ এই সুখময় রজনিটী শ্যাম জলধরের সঙ্গে তুমিও বিলাস কর।
*তুয়া পথ চাই,রাই-রাই-বলি*
*গদ-গদ বিকল পরাণ*
*ক্ষণ এক কোটি,কোটি যুগ মানত*
*হরিবল্লভ পরমাণ*
** ওগো শ্যাম সোহাগের সোহাগিনী রাধে! শ্যানাগর তোমার অপেক্ষায় পথপানে চেয়ে আছেন এবং বিহ্বল
প্রাণে গদগদ কন্ঠে রাইধ্বনি- রাইধ্বনি
বলছেন, তোমার ক্ষণ অদর্শনে শ্যামনাগর কোটিকোটি যুগ মনে করছেন, গীতকর্তা হরিবল্লভ অন্য এক সখী ভাবাবেশে বলছেন, শ্যাম
নাগরের যে অবস্থা হয়েছে, আমিই
তার প্রমাণ বা সাক্ষী।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*এ সখী! অব সব পরীখন ভেলি*
*তুহু নব প্রেম-অমৃত-রস-বেলী*
** শ্রীরাধাকে পরীক্ষার ছলে সখীর প্রশ্নের উত্তরে পূর্ব-উক্ত শ্রীকৃষ্ণের নিষ্ঠার উজ্জ্বল উদাহরণ এবং খেদোক্তি (আক্ষেপের কথা গুলি) শ্রবণ করে প্রশ্নকারিনী সখী বলছেন সখী রাধে! আজ আমার পরীক্ষা সমাপ্ত হল। তোমার নবপ্রেম অমৃতরস
ময়ী লতারূপে শ্যামরূপ তমালবৃক্ষের
স্কন্ধে সংলগ্ন হয়েছে, অর্থ্যাৎ তোমার সমস্ত অংশে যুক্ত হয়েছে ( লাগলি শ্যাম-তমালকো অংস)
*ফুল ভয়ো সব জগ- অবতংশ*।।
*এ দোহ মিলন, কবহু না ছোটে*
*মূঢ় কো যতনে, বেলী বরু টুটে*
**সখী রাধে! তোমার কাছে শ্রীকৃষ্ণ সর্বজগতের শিরোভূষণরূপে শোভা বিস্তার করেছে। তোমাদের দুইজনেরমিলন কখনও বিচ্ছেদ হবে না। যদি কোন মুর্খ ছিন্ন বা ভাঙ্গার চেষ্টা করে, বেলীলতা ছিন্ন হতে পারে,
কিন্তু তোমাদের প্রেম ছিন্ন হবার নহে।
*ঘন বিনু চাতক জল বিনু মীন*
*হরি বিনু তৈছন তুহু তনু খীণ*
*চান্দনি বিনু চকোর নাহি পিয়ে*
*তৈছন তুয়া বিনে হরি নাহি জিয়ে*
** মেঘের জল বিনা চাতক এবং জল বিনা মীনের (মাছের) জীবন যেমন থাকে না, তদ্রুপ শ্রীহরি ব্যতীত তোমার শরীর ক্ষীণতা প্রাপ্ত হয়েছে।
কারণ শ্রীকৃষ্ণ তোমার হৃদয় কন্দরে পাকাপাকি ভাবে বসবাসের জায়গা করে ফেলেছেন। জ্যোস্ননামৃত ভিন্ন চকোর যেমন অন্য কিছু পান করে না, তদ্রুপ তোমার বিচ্ছেদে শ্রীহরিও বাঁচতে পারবে না।
*যহি সরসী,তহি হংসকী বাস*
*যহি নিরদ,তহি বিজুরী বিলাস*
*তৈছে ঘটাওল মাধব-রাধা*
*বিদগধ বিধি,অব কো করু সমাধা*
** যেখানেই সরোবর, সেখানেই হংসের বাস, আর যেখানে মেঘ সেইখানেই বিদ্যুৎ প্রকাশ। সেই প্রকার রাধা-মাধবের মিলনটি সুরসিক বিধাতা ঘটিয়েছেন। অতএব ইহাতে কে বাধা প্রদান করবে?
*কহে হরি বল্লভ, কো সমুঝাওয়ে*
*সৌরভ বিনু কিয়ে মৃগমদ ভাওয়ে*
**পদকর্তা হরিবল্লভ সখী ভাবাবেশে বলছেন,তুমি এত কি উপমার দ্বারা বোঝানোর চেষ্টা করছ? সৌরভ বিনা মৃগমদ থাকে কী? অর্থ্যাৎ মৃগমদ ও তার গন্ধ পৃথক বস্তু নহে।
ভুল ভ্রান্তি মার্জনীয়।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*শ্রীরাধিকার অভিসার*
*বিনোদিনী,কনক মুকুর কাঁতি*
*শ্যাম বিলাসের, সুন্দর তনু*
*সাজই কতেক ভাতি*
**মহা মহা আনন্দদায়িনী শ্রীরাধার স্বর্ণ দর্পণের ন্যায় উজ্জ্বল কান্তিময়ী শ্রীঅঙ্গ। শ্যামবিলাসের নিকেতন স্বরূপ রাধারাণীর সুন্দর তনুখানি আজ কতপ্রকার সাজে সজ্জিত করেছেন, দেখলেই মনে হয়, সমস্ত সুখ দুঃখ ভুলে ঐ শ্রীচরণে নিজেকে লুটিয়ে দিতে ইচ্ছে করে।
*নীল বসন,রতন ভূষণ,*
*জলদে দামিনী সাজে*
*চাঁচর কেশের, বিচিত্র বেণী*
*দুলিছে হিয়ার মাঝে*
*শ্রীরাধার নীলবসন পরিহিতা, রত্নময়
আভরণে পরিপূর্ণ সুন্দর তনুখানি, যেন দেখে মনে হয়,মেঘ - বিদ্যুতের শোভা পাচ্ছে। আর তাঁর কুঞ্চিত ( কোঁকড়ানো )কেশ-কলাপের বিচিত্র বেণী (পিঠের বা পৃষ্ঠের পরিবর্তে) হৃদয়োপরি দোলায়মান।
*মদন মুগধ, সীথের সিন্দুর*
*তাহে চন্দনের রেখা*
*নব জলধর, কোরে অরুণ*
*নবীন চান্দের দেখা*
**মদনদেব দেখতে অতীব সুন্দর, কিন্তু আজ শ্রীমতী রাধারাণীর এই বেশ দেখে মদন একেবারেই অচেতন হয়ে পড়েছে,তার উপর আবার সিঁথির সিন্দুর, তদুপরি চন্দনের বিন্দু দিয়াছেন। তা দেখে মনে হয়, কেশরূপ নবজলধরের কোলে অরুণ
(বালার্ক) সহ নবীন চাঁদের উদয় হয়েছে।
*রসের আবেশে, গমন মন্থর*
*ঢুলি ঢুলি চলি যায়*
*আধ ওড়নী, ঈষত হাসনী*
*বঙ্কিম নয়নে চায়*
** নব নব সাজে সজ্জিতা বিনোদিনী রাধা অদ্য প্রেমের আবেশে মন্থর(ধীর)
গতিতে ঢুলে ঢুলে ( ঘুমের ঘোরে যেমন পথ চলে) গমন করছেন। নিজের উত্তরীয় বসনটি অর্ধমুক্ত করে
ঈষৎ(সামান্য) মিষ্টি মধুর হাসি সহ বঙ্কিম (বাঁকা) দৃষ্টিতে চাহিছেন বা দেখছেন। ( পরবর্তী গীতগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখবার জন্য এই পদটণিতা দেওয়া হল না, কারণ ভণিতা দিতে গেলে অভিসার এখানেই সমাপ্ত হয়ে যায় ) ভণিতা এইরূপ--------------
*শ্যামানন্দ ভণে, নিকুঞ্জ কাননে*
*কলপতরুর মূলে*
*রসের আবেশে, বৈসে বিনোদিনী*
*শ্যাম নাগরের কোলে*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*রাধারাণীর অভিসার*
*ধনি ধনী-রাধা, আওয়ে বনি*
*ব্রজরমণীগণ মুকুট মণি* ধ্রু।।
*অধর সুরঙ্গিনী, রসিক তরঙ্গিনী*
*রমণী মুকুটমণি বর তরুণী*
** শ্যামনাগর শ্রীরাধার আগমন উৎকণ্ঠায় চেয়েছিলেন, দূর হতে প্রাণপ্রিয়তমাকে দর্শন করেই বলিয়া উঠলেন,ধন্যা- ধন্যা প্রিয়তমা রাধা।
আহা হা ব্রজরমণীগণের মুকুটমণি
রূপে সজ্জিতা হয়ে আসছেন। আমার
রঞ্জিতাধরা রাধা (আমার সকল প্রকার আনন্দ প্রদায়িনী)রসিক নাগরের অবগাহনের (স্নানের) যেমন সমস্ত শরীর ডুবিয়ে স্নান করলে শরীর শীতল হয়)নদী স্বরূপা।
*ফুল ধনু ধারাণী,পীন কুচ ভারাণী*
*কাঁচলি-পর নীল মণি হারিণী*
*কনক সুদীপ মণি,বরণ বিজুরী জিনি*
*জলধর বাসিনী রূপ সোহিনী*
** ফুলধনুরূপ ভ্রুধারিণী= অর্থ্যাৎ ব্রহ্নার নিকট হতে যে পাঁচ ফুলশর ও ফুলধনু মদন পেয়েছিলেন,মদনের সেই ফুলধনু ও ফুলশর যারা " আত্মে
ইন্দ্রিয় প্রতি বাঞ্জা করে,তাদের বশীভূত করে, কিন্তু যাঁদের কৃষ্ণে-
ইন্দ্রিয় প্রীতিবাঞ্জা তাঁদের কাছে মদন পরাজিত হয়, তাঁদের শিরোমণি শ্রীমতী রাধারাণী মদনের সমস্ত কিছু হরণ করে, মদনকেও জয় করেছেন।
যিনি অনন্তকোটি ব্রহ্মান্ডের অধিপতি
শ্রীগোবিন্দকেও বশীভূত করেছেন।
*আর একটু বলি= ফুলধনুরূপ ভ্রুধারিণী স্থূল কুচযুগ ভারাবণতা- কুচ -আবরণী বসনোপরি নীলমণিহার শোভিনী।(স্থূল কুচযুগ ভারাবনতা)
একসময় ব্রজে ইন্দ্রের অত্যাচারে শ্রীকৃষ্ণ বাম কেনি আঙ্গুলে গিরি ধারণ করেছিলেন, সে স্থানে শ্রীরাধা ও সখীগণ এসেছিলেন, এবং অদূর হতে শ্রীকৃষ্ণ রাধাকে দর্শন করে সামান্য অহং প্রকাশ হয়েছিল। সেই সময় রাধারাণী বলেছিলেন, ওগো গিরিধর!
সামান্য একটি গিরি ধারণ করে তোমার মধ্যে অহং ভাব এসেছে? দেখ আমি আমার দুই বক্ষে অনন্ত জগতের সমস্ত গিরি ধারণ করে আছি, তাতেও সামান্য ভার অনুভব করিনা। সেই ভার আমার বক্ষে নতমস্তকে রয়েছে। আর নিজ কুচযুগকে আমার নীলবসন দ্বারা নীলমণিহারের মতো করে ধারণ করে আছি। তারই শোভাই তুমি আমার বশীভূত হয়েছ।তাই কৃষ্ণ বলছেন,
সুদীপ্ত= অতি উজ্জ্বল, স্বর্ণমণি ও বিদ্যুৎকে তুমি জয় করেছ। তোমার অঙ্গকান্তি মেঘতুল্য সুনীল বসন, ( স্বচ্ছ মেঘ যেমন নীল থাকে ) ধারণে
রূপের কি শোভা বিস্তার করেছে।
*কেশরী ডমরু জিনি,*
*অতিশয় মাঝাখানি*
*রসনা কিঙ্কিণীমণি মধুরধ্বনি*
*গুরুয়া নিতম্বিনী*
*বিলোলিত বর বেণী*
*উরুযুগ সুবলনী ছবি লাবণী*
*মরাল গমনী ধনি*
*বৃষভানু নৃপতনী*
*গোবিন্দ দাস পহুঁ মনমোহিনী*
** সিংহের যেমন কোমর সরু, ও ডমরুর মধ্যস্থল সরু, সেই সরুস্থলের
সৌন্দর্য্য অনেকটাই মন হরণ করে,
তার থেকেও মন হরণকারী ও তাদের জয় করেছেন আমার রাধাঠাকুরাণী।
( এই ব্যাখ্যা আপনাদের মতো করে দিবেন)
কাঞ্চি ও মণিকিঙ্কিণীর মধুর ধ্বনি,
কাঞ্চি= কোমরের হার বা কটিভূষণ,
অথ্যাৎ ক্ষুদ্র ঘন্টিকি বা ঘুঙ্গুরের মতো ছোট যে কিং কিং এইরকম অনুকরণ শব্দ করে, সেরকম মধুর ধ্বনি করতে করতে, উরুযুগ=হাঁটুর উপরিভাগ মাংসল স্থল, বিলম্বিত (চলনে মধ্যম নৃত্যযুক্ত), চঞ্চল সুবেণী, লাবণ্যের ছবিরূপিনী ও বিপুল নিতম্বিনী, বৃষভানু নন্দিনী মরাল গতিবিলাসে সে আগমন করছেন। ( এই লীলা প্রাকৃত বুদ্ধি দ্বারা দর্শন ও শ্রবণ করলে নরকগামী হতে হবে, এইলীলা চিন্ময়
বুদ্ধি দ্বারা শ্রবণ করলে হৃদয়ে ধারণ হবে ও তাঁর শ্রীযুগলচরণ প্রাপ্তি হবে।
গীতকর্তা গোবিন্দ দাস সেখানে উপবিষ্টা সখীভাবাবেশে বলছেন, আমার প্রভুর ( গোবিন্দের) মনমোহিনী রাধা।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*অভিসারের পর মিলন পদ*
*আজু,কাননে হেরি হেরি রহু ধন্দে*
*মনমথ-রাজ লাজ ভয় তেজাওল*
*রমণী পড়ল অতি ফান্দে*
*যুগল কিশোর, ওর নাহি আরতি*
*চোরি রভস রস রঙ্গে*
*দোহু ভূজ বেলী মেলি*
*তনু তনু ভরি,ডুবল মদন তরঙ্গে*
** নানা প্রকার কেলি-কৌতুকের মধ্যে উভয়ে উভয়ের প্রতি দর্শন করতে করতে ধাঁধাঁয় পড়ে গেলেন। ক্ষণ বিরহের বা অপেক্ষার পর একে অপরের এইরকম অবস্থায় পড়তে হয় যে, কি বলব, কেমন করে কথা বলব,
কিছুই মনে ভাবতে পারছেন না, একজনকে তো এগিয়ে আসতে হবে?
শ্যামনাগরের রাধা সোহাগিনী আর ধৈর্য্য ধারণে সক্ষম হলেন না, কন্দর্পরাজ ভয়,লজ্জা ত্যাগ করিয়ে দিলেন, রমণী শিরোমণি কন্দর্প ফাঁদে বাধা পড়লেন। রহস্য কেলিরস রঙ্গে যুগল কিশোরের আরতির (ক্ষান্ত হওয়ার) অবধি রইল না। পরস্পর বাহুলতা প্রসারণ পূর্বক দৃঢ় আলিঙ্গনে কন্দর্প রঙ্গে বদ্ধ হলেন। ( ব্রজের লীলা রাগানুগা অর্থ্যাৎ নিষ্কাম, চিন্ময় ভাবের দ্বারা শ্রবণ করতে হবে।)
*চম্পকে নীল নলিনী*
*কিয়ে পৈঠল,নীল নলিনী কিয়ে চম্প*
*কিয়ে দামিনী ঘন*
*একহি তনুমন,সুখ সাগরে দেয় ঝম্প*
*এ সুখ রাতি,মাতি রহু মাধব*
*সখিজন মনহি হুলাস*
*লোচন যুগল,সফল কব হোয়ব*
*হরিবল্লভ ধরু আশ*
** একি! চম্পকপুষ্পের মধ্যে নীলকমল! অথফা নীলকমলের মধ্যে
চম্পক প্রবেল করল! কিংবা বিদ্যুৎ ও জলধর মিলনে একতনু হয়ে সুখের সাগরে ঝাঁপ দিয়াছে। মাধবের যুগল মিলন দর্শন করে,সখীগণ বলছেন, মাধব যদি এইরকম রসে মত্ত হয়ে এই সুখের রজনী অতিবাহিত করেন তবে সখীগণের অন্তরে পরম উল্লাস, গীতকর্তা হরিবল্লভ সাধকদেহে ভাব-এ লীলা স্ফূর্তিতে সখীগণের উল্লাস শ্রবণে বলছেন, আমার নয়নযুগল কতদিন ঐ লীলা দর্শনে সফল হবে, আর কতদিন আশা ধারণ করে থাকব।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*রাধা প্রতি কৃষ্ণের অনুরাগ*
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*এ সখি! বিধি কি পুরাওব সাধা?*
*পুন কিয়ে নিরখব রূপ-নিধি-রাধা*
*যদি পুন না মিলব সো বর রামা*
*তব জিউ ভার ধরব কোন কামা*
** দূতী মুখে প্রাণপ্রিয়তমা রাধার মাধুর্য্য বর্ণন শ্রবণে অনুরাগের প্রাবল্যে নাগর শিরোমণি শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, এ সখি! বিধাতা কি আমার অভিলাষ পূর্ণ করবে? সেই অতুলনীয়
রূপনিধি রাধাকে আর দেখতে পাব কী? যদি পুনরায় সেই রমণীশিরোমণিকে দেখতে না পায়,
তাহলে এই জীবনের ভার বহন করে কি লাভ?
*তুহু ভেলি দূতি,পাশ ভেল আশা*
*জিউ বান্ধব কিয়ে করব উদাসা*
*শুনি হরিবচন দূতি অবিলম্বে*
*আওলি চলি যাহা রমণী কদম্বে*
*কহে হরিবল্লভ শুন ব্রজবালা*
*হরি জপয়ে তুয়া গুণ-মণি মালা*
** সখী! তুমি আমার দূতী (সংবাদ বাহিকা বা প্রণয়-প্রণয়িনীর মধ্যে সংবাদ বা পত্র আদান-প্রদান কারিনী) এবং আশারূপ বন্ধন রজ্জু।
বল,বল! দূতী! আমার সেই আশা পাশে প্রাণ বন্ধন করব, কি প্রাণ ত্যাগ করব? দূতী, শ্রীকৃষ্ণের এইরকম কাতর বাক্য শ্রবণ করে,দূতী তৎক্ষণাৎ যেখানে সখীগণ পরিবেষ্টিতা শ্রীমতী রাধারাণী অবস্থান করছেন, তথায় চলে এলেন। গীতকর্তা হরিবল্লভ সখী ভাবাবিষ্ট হয়ে বললেন= হে ব্রজ সুন্দরী রাধে!
তোমার প্রাণবল্লভ কেবল তোমার গুণরূপমণিমালা জপ করছেন, প্রাণে শীতল বারি প্রদান কর।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*রূপানুরাগ রাধা প্রতি কৃষ্ণের*
*অলখিতে হাম হেরি বিহসিনী থোরি*
*যনু রজনী ভেল চাঁদ উজোরী*
*কুটিল কটাখ ছটা পড়ি গেল*
*মধুকর ডম্বর অম্বরে ভেল*
** কোন এক সখির প্রতি কৃষ্ণের উক্তি।আজ যমুনা তীর পথে এক অপূর্ব সুন্দরী রমণীকে দেখেছি।সেই
রমণীর সঙ্গে গুরুজন ছিলেন।তাঁদের অলক্ষ্যে আমাকে দেখে বিহসিনী ( হঠাৎ হাস্যমুখী হলেন)তাতে মনে হল যেন আঁধার রজনীতে চন্দ্রের উদয় হল।কুটিল(বাঁকা বা বক্র) কটাক্ষছটা পতিত হয়ে গগনতলটি যেন মধুকর দলে পূর্ণ হয়ে গেল।
*কাহাক সুন্দরী কে উহ জান*
*আকুল করি গেও হামারি পরাণ*
*লীলা কমলে ভ্রমর কিয়ে বারি*
*চমকি চললি ধনী চকিত নেহারি*
** হৃদয় কর্ষণকারিনী রাধাকে দেখে
ক্ষণেকের জন্য ভুলে গেছেন ঐ সুন্দরী রমণীটি কে, তাই সখিকে বলছেন, সখি! সুন্দরীটি কার? এবং কে জানো? সেই সুন্দরী রমণিটি আমার প্রাণটিকে আকুল করে গেছে।
হস্তধৃত (হাতের ঈশারা) আপন বদন কমললুব্ধ (কমলকোমল) অর্থ্যাৎ কমলকোমল হাতের ঈশারায় ভ্রমরগণকে নিবারণ করতে করতে অর্থাৎ সেই অপরূপা সুন্দরীর গমনকালে দেখে মনে হল সদ্য প্রস্ফুটিত কমলে ভ্রমরগণ মধুপান করবে, কিন্তু দেখলাম কমলকোমল হস্তদ্বারা ভ্রমরগণকে বারণ করছেন আর বলছেন, আমি পুষ্প নহে। তারপর আমার প্রতি চঞ্চল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চমকিত হয়ে দেখতে দেখতে,
*যাইতে ভেল বেকত পয়োধর শোভা*
*কনক কলসি হেরি কাহে না লোভা*
*আধ লুকাইল আধ উদাস*
*কুচ-কুম্ভে কহি গেও আপ কি আশ*
*ভণই বিদ্যাপতি নব অনুরাগ*
*গুপত মদন শর কাহে না লাগ*
** আমার প্রতি চঞ্চল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চমকিত হয়ে চলে যেতে তার বক্ষ পর্বতের সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়েছিল। সেই স্বর্ণকলস দর্শনে কার না লোভ হয়? আমার মনে হয়,ঐ প্রকার অর্ধ লুকাইত এবং অর্ধ উন্মুক্ত
কুচকলস প্রদর্শন দ্বারা নিজ অন্তরের অভিলাষ বলে গেল। গীতকর্তা বিদ্যাপতি সখীরূপে সব কথা শুনে বলছেন,এমন নবানুরাগে মদনের গুপ্তশর কেন লাগবে না।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
******আক্ষেপ*****************
*আগে পাছে মোরা,যত সহচরী*
*যমুনা জলেরে যাই*
*ঘোঙ্গট বাড়াইতে রূপ,নয়নে লাগিয়া গেল, সোসর হৈয়া নাহি চাই*
** প্রেমময়ী প্রেমসোহাগিনী শ্রীরাধা কোন একসখীকে বলছেন, সখী! আমার একি হ'ল? আগে পাছে (সামনে পেছনে) সহচরীগণ সঙ্গে যমুনায় জল আনতে গিয়াছিলাম----
তখন অবগুন্ঠন(ঘোমটা) টেনে বাড়াতে গিয়ে আমার নয়নে এক অপূর্ব রূপ লেগে গেল।লজ্জায় সখীগণের সমান বা মতো সেই অপূর্ব রূপের মানুষটির দিকে চাহিতে পারিনি।
*আজু কি পেখনু রূপ কদম্বের তলে*
*হিয়ার মাঝারে মোর,*
*না জানি কি জানি হৈল*
*নিরবধি ধিকি ধিকি জ্বলে*
** সখী! আমার কি হবে জানি না, আজ কদমতলায় যে অপূর্ব রূপ দেখলাম, আমার হৃদয় মাঝে না জানি কি হ'ল,আমি তোদের ঠিক বুঝাতে পারছি না। আমার মনের সমস্ত কথা তোদের কাছে বলি, কিন্তু
নিরবধি (নিরন্তর, সর্বক্ষণ) যেমন তুষের আগুন চাপা দিলেও সর্বক্ষণ জ্বলতে থাকে,তুষের আগুনের মতো
দীর্ঘস্থায়ী ধিকি ধিকি জ্বালা হচ্ছে।
*কেন বা চঞ্চল চিত*
*নিবারিতে নারি গো*
*মন মোর থির নাহি বান্ধে*
*তিলে তিনবার সখি*
*মূরছা হইয়া থাকি*
*চেতন পাইলে মন কান্দে*
**ওরে সখীগণ! আর কি জানিস? আমি কেনই বা চিত্তের (মনের) চঞ্চলতাকে নিবারণ ( নিষেধ)করতে পারছি না-- আমার মন কিছুইতে স্থির হচ্ছে না সখি।তিলক্ষণে বা অতি সামান্য সময়ের মধ্যে তিনবার মূর্ছিত
(অচেতন) হয়ে থাকি। তারপর যখন চেতনা পাই, আমার মন সদা কাঁদতে থাকে।
*ধীরে ধীরে আমি, পা খানি বাড়াইতে*
*গুরুজনের বাসি ভয়*
*বংশী বদনে কহে,শুন গো সুন্দরী রাধে*
*পরশিলে আর কিবা হয়*
** সখী!আমার এমন অবস্থা হয়, ধীরে ধীরে পা ফেলতেও ভয় পাই। রাধার এই বাক্য শ্রবণ করে, সখীভাবে গীতকর্তা বংশীবদন বলছেন, সুন্দরী রাধে! ( তার স্পর্শ ব্যতীত এ রোগের অন্য কোন ঔষধ নেই) তবে----- স্পর্শ করলে আবার অন্য কিছু না হয়,( না হলেই রক্ষা)!
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*আক্ষেপানুরাগ* *জয়নিতাই*
*শুনিয়া দেখিনু, দেখিয়া ভুলিনু*
*ভুলিয়া পিরীতি কৈনু*
*পিরীতে বিচ্ছেদে,সহন না যাই*
*ঝুরিয়া ঝুরিয়া মৈনু*
*সই পিরীতি দোসর ধাতা*
*বিধির বিধান, সব করে আন*
*না শুনে ধরম কথা*
** আহা-হা-হা, পিরীতের কথায় পিরীতি বাড়িল, তাই পুনরায় প্রেমময়ী
শ্রীরাধিকা সখীকে বলছেন= সখী! প্রথমে তাঁর রূপ-গুণের কথা শুনে তাঁকে দর্শনের আকাঙ্খা প্রবল হল।
(তাঁকে দেখবার জন্য মন ছটফট করতে লাগল) তারপর দর্শন করে তাঁর পিরীতির সম্বন্ধে, কুল-মান- লজ্জা বিচার-বিবেচনা সব কিছুই ভুলে গেলাম।পরে সব কিছুই ভুলে তাঁর সঙ্গে প্রেম করলাম। (পি-রী-তি)
পি= নয়নে নয়নে মিলন হইলে তাহে উপজিল ""পি"" অর্থ্যাৎ পিয়াসা।
রী= বয়ানে বয়ানে মিলন হইলে তাহে উপজিল ""রী"" অর্থ্যাৎ মাধুরী।
তি= হিয়ায় হিয়ায় মিলন হইলে তাহে উপজিল ""তি"" অর্থ্যাৎ তৃপ্তি।
এই ""পি"" হল লাবণ্যামৃত, ""রী""হল তারুণ্যামৃত, আর ""তি""হল কারুণ্যামৃত। (বহু ব্যাখ্যা আছে লেখা সম্ভব নহে) যাইহোক তাঁর সঙ্গে প্রেম করলাম। এখন প্রেমের বিচ্ছেদ অসহনীয়, অর্থ্যাৎ তাঁকে ছাড়া আমি এক মূহুর্ত থাকতে পারি না,যখন নয়নের আড়াল হয় তখন আমার অসহনীয় হয়ে উঠে।তাই তাঁর অদর্শনে চোখের জলে কেঁদে কেঁদে মরছি।ওরে সখি! পিরীতি একজন দ্বিতীয় বিধাতা।এই বিধাতার যে বিধান (নিয়ম) সে সমস্ত কিছুই অন্যথা (অন্যরকম) করে দেয়। ধর্ম কথা শুনে না রে সখি! ( চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী।) বিধাতা সেই।
*সবাই বলে পিরীতি কাহিনী*
*কে বলে পিরীতি ভাল*।
*শ্যামনাগরের, পিরীতি ঘুষিতে*
*পাঁজর ধসিয়া গেল*
** সখী! সকলেই পিরীতির কাহিনী বলে, পিরীতি বড়ই মধুর, ওরে কি আর বলব, কে বলে? পিরীতি ভাল?
অন্যের কথা আর কি বলব, দেখ না,
শ্যামনাগরুষ্টির প্রহারে আমার পাঁজরা ধসে গেল। তারপর----------
*পিরিতি মিরিতি, তুলে তোলাইনু*
*পিরীতি গুরুয়া ভার*
*পিরীতি বেয়াধি, যারে উপজয়*
*সে বুঝে না বুঝে আর*
** পিরীতি অর্থ্যাৎ প্রেম, মিরিতি অর্থ্যাৎ মৃত্যু, এই দুইটিকে যখন দাঁড়ি
পাল্লায় ওজন করে দেখলাম মৃত্যু অপেক্ষা প্রেমই গুরুভার( অধিক বেশী) ওরে সখী! প্রেম ব্যাধি যার হয়, সেই তার যন্ত্রণা বুঝে, অন্যেরা কেউ তার মরম বুঝতে পারে না।
*কেন হেন সই, পিরীতি করিনু*
*দেখিয়া কদম্ব তলে*
*জ্ঞান দাস কহে, এমন পিরীতি*
*ছাড়িবে ঈআহার বোলে*
** ওরে সখী,ঐ শ্যামনাগরকে কদম্বতলে দেখে কেনই যে এহেন প্রেম করলাম! শেষ বাক্যটি শ্রবণ করিয়া অর্থ্যাৎ শেষের কথাটি শুনে, দূতী ভাবাবিষ্ট পদকর্তা জ্ঞানদাস বলছেন,
ওগো রাধিকে! তুমি বলত? কার কথায় এমন প্রেম ত্যাগ করবে?
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧*ভূপালী*
*যমুনা যাইতে পথে রসবতী রাই*
*দেখিয়া বিদরে হিয়া সম্বিত না পাই*
*কিবা খেনে আনু সখি! কি দেখিনু তারে*
*সে রূপ লাবণী বনি নয়ন উপরে*
** , যমুনার পথে
শ্রীরাধার রূপ দর্শনে বিমোহিত ( মুগ্ধ হয়ে) শ্রীকৃষ্ণের বিবশতা (আকুলতা)
দর্শন করে কোন এক সখী কারণ জিজ্ঞাসা করলে--- শ্রীকৃষ্ণ বলছেন=
দেখ সখি! আজ যমুনা যেতে রসময়ী রাধাকে পথে দর্শনাবধি (দেখা অবধি)
আমার হৃদয় বিদীর্ণ ( ক্ষত বিক্ষত)
হয়ে যাচ্ছে।কিছুতেই মনে শান্তি পাচ্ছি না। ওহ্ আজ কি ক্ষণে এসেছিলাম।
তার যে রূপ-লাবণ্য দেখলাম তাহা আর কি বর্ণন করব।সে রূপ-লাবণ্য আমার নয়নে লেগে রয়েছে।
*মেলিয়া দীঘল কেশ,ফেলিয়া নিতম্বে*
*চলে বা না চলে ধনী রস-অবলম্বে*
*তাহ মুখ মনোহর ঝল মল করে*
*কাম চামর করে পূর্ণ শশধরে*
**সে ধনির দীর্ঘ (লম্বা লম্বা) উন্মুক্ত ( খোলা) কেশরাশি (চুলগুলো) নিতম্বে ফেলে রসভরে গমন করছিল।
কিন্তু আশ্চর্য্যের ব্যাপার গমন করছে কি দাঁড়িয়ে আছে তা কিছুই বুঝা যায় না। চঞ্চল কেশকলাপের মধ্যে তার মুখচন্দ্র বেশ ঝলমল করছে, তাতে মনে হল, পূর্ণচন্দ্র কন্দর্প-চামর
ধারণ করে উদিত হয়েছেন।
*তথি বিরাজই শ্রম-ঘর্ম বিন্দু বিন্দু*
*মুকতা ভূষিত যনু পূণমীকো ইন্দু*
*ফুয়ল নীলিম বাস রহে আধ উরে*
*আধ গিরি মাঝে যনু নবজলধরে*
**সেই চন্দ্রাননীর বদন উপরে শোভিত শ্রমজনিত ( তিনি হেঁটে চলেছেন) ঘর্ম (ঘাম) বিন্দু বিন্দু দর্শন করে মনে হল যে,পূর্ণিমার চন্দ্র মুক্তার অলংকার পরেছে। উন্মুক্ত নীল বসনখানি বক্ষের অর্ধভাগের উপরে রয়েছে, তাহাতে যেন অর্ধ পর্বত মধ্যে নব মেঘ শোভা পাচ্ছে।
*উর আধ পর লোলে মুকুতার হার*
*সুমেরু শিখরে যনু সুরনদী ধার*
*মঝু মন রহ তহি, করত সিনান*
*গোবিন্দ দাস কহে ইহ পরমাণ*
** আর অর্ধ বক্ষস্থলে মুক্তাহার দুলছে, তাতে মনে হল যেন, সুমেরু পর্বত শিখরে সুরনদীর ধারা শোভিত।
আমার মন সেখানেই থেকে গেছে এবং সেই সুরনদীতে স্নান করছে। সখীভাবে গোবিন্দ দাস বলছেন= তোমার ভাব দেখে কথাগুলি সত্য বলেই মনে হচ্ছে। অর্থ্যাৎ সত্য বলেই প্রমাণ।
ছাড়িবে কাহার বোলে হবে
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*অপূর্ব একখানি অপ্রচলিত পদ*
********************************
*সজনি! অপরূপ পেখলু রামা*
*কনক-লতা অবলম্বনে উয়ল*
*হরিণী হীন-হিমধামা?*
*গিরিযুগ-কনক,পয়োধর উপর*
*গীমকো গজমতি হারা*
*কাম,কম্বুভরি,কনক-শম্ভু পরি*
*ঢারই সুরধূনী ধারা?*
** কোন এক সখির প্রতি শ্রীকৃষ্ণের উক্তি, সখি! অদ্য এক অপরূপা রমণীকে দেখলাম।দেখে মনে হ'ল, একি কনকলতা অবলম্বনে অর্থ্যাৎ
হলুদ রঙের ফুল বা সোনা রঙের ফুলের লতাকে আশ্রয় করে কলঙ্কশূন্য পূর্ণচন্দ্র,উদিত হ'ল।তাঁর
পয়োধরযুগল যেন দুইটি স্বর্ণপর্বত, তার উপরে গলার গজমতি হার বিলম্বিত(ঝোলানো ) রয়েছে। দেখে মনে হল যেন,একি!স্বর্ণ নির্মিত শিবের
বাণলিঙ্গ-মূর্তিতে কন্দর্প শঙ্খ ভরে গঙ্গার জলধারা ঢালছে।( লিঙ্গ শব্দের অর্থ চিহ্ন বা প্রতীক)।
*নয়ন-নলিনীদৌ,অঞ্জনে রঞ্জিত*
*ভাঙ-বিভঙ্গি-বিলাসা*
*চকিত-চকোর-জোরে,বিহি বান্ধল*
*কেবল কাজর-পাশা*
*প্রথম বয়সী ধনী,মুনি-মন-মোহিন*
*গজবর জিনি গতি মন্দা*
*সিন্দুর-তিলক-ভানু,তড়িত লতা যনু*
*উয়ল পূনমীকো চন্দা!*
** ওগো সখী! আহা-হা-হা তার নয়ন
কমল দুইটি অঞ্জনে রঞ্জিত এবং ভ্রুভঙ্গির বিলাস। যেন মনে হল, বিধাতা দুইটি চকোরকে কেবল কাজলরূপ রজ্জুতে বেঁধে রেখেছে।
প্রথম যৌবনা ধনীর গজেন্দ্রগমন নিন্দিত মন্থর গতিবিলাসে মুনিগণেরও মন বিমোহিত হয়। তাঁর সিন্দুর বিন্দু দেখে যেন প্রভাতে সূর্য্য বলে মনে হয়।আর দেহলতার উপরে
বদনখানি পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় উদিত
হয়েছে। তাতে সিন্দুরের বিন্দু দর্শনে মনে হয় একটি তড়িৎলতা কোন অসাধারণ শক্তি প্রভাবে চন্দ্র ও সূর্য্যের একত্র উদয় মিলন করেছে।
*পয়সি পয়াগে,যাগ শত জাগই*
*সো পাওয়ে বহুভাগি*
*বিদ্যাপতি কহ, গোকুল নায়ক*
*গোপীজন অনুরাগী*
** যদি কেউ প্রয়াগ জলে (তীর্থে) শতযজ্ঞ সম্পাদন করেও সেই রমণীরত্ন লাভ করতে পারে, সে বহু ভাগ্যবান। এই কথা শুনে গোপীভাবাবিষ্ট বিদ্যাপতি বলছেন,
হে গোকুল নায়ক তুমি সত্যই গোপীজন অনুরাগী।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*একটি মানের অপ্রচলিত পদ*
××××××××××××××××××××××××××
*তপন কিরণে যদি,অঙ্কুর দগধল*
*কি করব জল অভিষেকে*
*দুঃখভরে প্রাণ,বাহিরে যদি নিকসব*
*কি করব ঐষধ বিশেখে*
*মানিনী!অতএ সমাপহু মান*
*মৃদু-মৃদু ভাষে, সম্ভাষহ বরতনু*
*এক বের দহে জিউদান*
** সখীর বাক্য ও বিনোদিনীর মান প্রশমিত না হলেও স্তব্ধভাব দর্শনে ( মৌন অবলম্বন সম্মতির লক্ষণ)
বুঝা যায় মান কিছুটা শিথিল (হালকা বা কম) হয়েছে। এবারে রসিকশিরো
মণি কিছু মধুস্রাবী ( মিষ্টি মিষ্টি কথায়) বাক্য প্রয়োগে প্রবৃত্ত হলেন।
মানিনী! তোমার অন্তর রসে পরিপূর্ণ সত্য ; কিন্তু তাহলে কি হবে-- সূর্য্যতাপে যদি অঙ্কুর দগ্ধ (পোড়া) হয়ে যায়,তাতে জল সেচনে কি কাজ হবে? সেরকম দুঃখভারে আমার প্রাণ বাহির হয়ে যায়, পরে তোমার প্রেম
ব্যবহার-রূপ ঔষধ প্রয়োগে কি করবে? অতএব মানিনী তোমার মান সমাপ্ত কর।
*সুন্দর বদনে--বিহসি,বর-ভামিনী*
*রচহ মনোহর বাণী*
*কুচ-কনয়া-গিরি-মথি,গহি রাখহ*
*নিজভূজে আপনা জানি*
*অধর-সুধা রস, পান দেহ সখি*
*হৃদয় জুড়াওহ মোর*
*তুয়া মুখ ইন্দ-উদয় হেরি, বিলসঙ*
*তিরখিত নয়ন চকোর*
** সুন্দরী! একবার তোমার রমণী শিরোমণির মৃদু মধুর সম্ভাষণে আমার প্রাণ বাঁচাও। ভামিনী! তোমার সুন্দর বদনে মধুর হাস্য মিশ্রিত মনোহর বাক্য বিন্যাস কর।তোমার নিজ অনুগত জন জেনে নিজ বাহুবন্ধনে বেঁধে তোমার কুচরূপ স্বর্ণ-পর্বতের মধ্যে বন্ট রাখ। ওগো মানিনী! তোমার অধর সুধা পান করতে দিয়া তোমার মানের আগুনে দগ্ধপ্রাণ জীবন শীতল কর। আমার নয়ন-রূপ
তৃষিত চকোরদ্বয় তোমার নিজগুণ দর্শন করিয়া অর্থ্যাৎ নিজগুণে অর্থ্যাৎ
আমার অপরাধ ক্ষমা কর এবং হৃদয়ের ক্রোধ ত্যাগ কর।
*নিজগুণ হেরি, পরকোদোখ পরিহরি*
*তেজহ হৃদয় কো রোখ*
*ভণই মুরারি, প্রাণপতি সঙ্গিনী*
*পুরুষ বধ বহু দুখ*
** তোমার নিজগুণ দর্শন করিয়া অর্থ্যাৎ নিজগুণে আমার অপরাধ ক্ষমা কর, এবং হৃদয়ের মান ত্যাগ কর। গীতকর্তা মুরারীগুপ্ত সখীভাবাবেশে বলছেন= হে রাধে!
তুমি নিরন্তর প্রাণপতি শ্রীকৃষ্ণের উপযুক্ত সঙ্গিনী। আর নিদারুণ মান পুরুষ -বধের সাধন মাত্র-- আমি আর কি বলব? এইভাবে পুরুষ বধ করা বড়ই দুঃখের বিষয়।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*হৃদয় সুশীতল করা এই পদ*
******************************
*সাজল,মদন-কলা-রস-রঙ্গিনী*
*শ্যাম-মিলন-রস-সাধে।*
*শ্রীবৃন্দাবনে-বিজয়ী বিনোদিনী,*
*রমণী-শিরোমণি-রাধে।।*
** দূতী মূখে কৃষ্ণের প্রেমবিহ্বল অবস্থা শ্রবণে, কন্দর্পকলা রঙ্গময়ী বিনোদিনী শ্রীরাধা আজ শ্যামনাগরের সঙ্গে মিলন সুখরস আস্বাদন-অভিলাষে সজ্জিত হয়ে বৃন্দাবনে অভিসার করলেন।
*কুঞ্চিত-কেশ--বেশ,ভালে রঞ্জিত*
*লীলা-কমল-বয়ানী*
*শ্রবণ রসাল, কনক-নব-মঞ্জরী*
*মনমথ-মথন-নয়ানী।।*
** ওহ্, রমণীশিরোমণির কুঞ্চিত (কোঁকড়ানো) কেশের শোভা, রঞ্জিত
ললাট-লীলাকমল দ্বারা কমলবনে
ধাবিত ভ্রমর তাড়াচ্ছেন।কর্ণের স্বর্ণলতার নবমঞ্জরী শোভিত।নয়নযুগল মন্দথেরও গর্ব-নাশিনী।
বাকী অংশ পরবর্তী
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*চান্দনি চাহি, চাকোর মুদিত ফিরে*
*সুললিত-মুরলী-সুতান*
*উনমত কোকিল,পঞ্চম গাওত*
*শুনি ধনি করল পয়ান*
*হংসিনী গমনী, চলতি অতি মন্থর*
*লীলা-পদ-গতি- শোভা*
*কহে যদুনাথ সাথ ব্রজ সুন্দরী*
*শ্যাম-পিরীতি-রসে লোভা*
** চন্দ্রকিরণ দর্শনে চকোর আনন্দে এদিক ওদিক ফিরিছে। অন্যদিকে সুললিত মধুরতানে মুরলী ধ্বনি হচ্ছে।
উন্মত্ত কোকিল পঞ্চমস্বরে গান করছে। এই সকল শুনতে শুনতে ধনি
রাইবিনোদানী লীলাপদ গতিতে শোভা বিস্তার করে মনোহর অতি মন্থর গমনে অভিসারে চললেন। সখী-
ভাবাবিষ্ট পদকর্তা যদুনাথ বলছেন,
শ্যামপিরীতিরসলুব্ধ হয়ে ব্রজসুন্দরীগণকে সঙ্গে নিয়ে হংসিনীগণের ন্যায় হেলিতে দুলিতে রাইধনি ছলেছেন।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*অপ্রচলিত পূর্বরাগ*
*তুড়ী*
*নাগিয়াছে কদম গাছের দে,*
*অন্তরে বেয়াধি-- মরম জানে কে*।
*সাত-পাঁচ-সখী মেলি*
*যমুনা সিনানে গেলি।।*
*কিনা সে দেখিল তায়*
*সেই হৈতে মনে আন নাহি ভায়*।
*ডাকিলে রাধে!সমতি না দে*
*আঁখি কচালে সদা কাঁদে।।*
*মনে ঘর দুয়ার না ভায়*
*জুড়ায় কদম্ব তলার বায়।*
*বংশী বদনে কহে তথাই নিয়ে*
*চাহিতে চিন্তিতে রাই বা জিয়ে।।*
**শ্রী মুখরার উক্তি= শ্রীমতী রাইধনি প্রথম মিলনের পর গৃহে ফিরেছেন, কিন্তু রাধিকা পূর্ব কুলবতীর ন্যায় (মতো) ভাব নাই-- এখন কৃষ্ণ বিরহে অদ্ভূত ভাবান্তর দেখে রাধিকার মাতা-
মহী মুখরাদেবী বলছেন= আমার মনে হয় রাধাকে কদম্বগাছের দেবতা লেগেছে।রাধার ব্যাধি অন্তরের, রাধার মর্ম কে জানবে বলো? পাঁচ সাতজন সখি মিলে যমুনা সিনানে গিয়াছিল, সেখানে কি দেখল কে জানে! সেই হতে মনে অন্য (গৃহ কার্য্যাদি) কিছুই ভাল লাগে না। রাধে বলে ডাকলে কোন উত্তর দেয় না। সর্বদা চক্ষুমর্দন( চোখ কচলাতে )
করতে করতে ক্রন্দন করতে থাকে। রাধিকার আর ঘর দুয়ার ভাল লাগে না। ভাব দেখে মনে হয়,কেবল কদম তলার বাতাসে শীতল হয়। সেখানে উপস্থিত সখীভাবে বংশীবদন মুখরার বাক্য শ্রবণ করে বলছেন, তবে চল আমরা সখীকে কদমতলায় নিয়ে যায়
কদমগাছ দেখতে বা চিন্তা করতে যদি রাধার জীবন ফিরে আসে।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*একটি নিত্যানন্দচন্দ্রস্য শ্রীরাগ*
*********************************
*পূরবে,গোবর্ধন--ধরল, অনুজ যার, জগ-জনে বলে,বলরাম*।
*এবে সে,চৈতন্য-সঞে,আইল কীর্তন-রঙ্গে, আনন্দে নিত্যানন্দ নাম*।।
*পরম-উদার,করুণাময় বিগ্রহ, ভূবন-মঙ্গল-ধাম*।
*গৌর-পিরীতি-রসে,কটির বসন খসে,অবতার অতি অনুপাম*।।
*নাচত গাওত,হরি হরি বোলত, অবিরত -গৌর-গোপাল*।
*হাস প্রকাশ--মিলিত-মধুরাধরে বোলত,পরম-রসাল*।।
*রাম দাসের পহুঁ,সুন্দর বিগ্রহ, গৌরীদাস আন নাহি জানে*।
*অখিল-লোক যত,ইহ রসে উনমত, জ্ঞানদাস নিতাইর গুণ-গানে*।।
** পূরবে বা পূর্বে অর্থ্যাৎ দ্বাপরযুগে যাঁর কনিষ্ঠভ্রাতা (শ্রীকৃষ্ণ) গোবর্ধন ধারণ করেন এবং জগতের লোক যাঁকে বলরাম নামে ডাকেন,এবে কলি
যুগে সেই বলরাম শ্রীনিত্যানন্দ নামে শ্রীচৈতন্য সঞে শ্রীনাম-সংকীর্তনরূপ
রঙ্গ উৎসবানন্দে আগমন করলেন। অদোষ-দরশি কারুণ্যঘনমূর্তি শ্রীনিতাইচাঁদ তাঁর সকল আচরণে জগতের মঙ্গল বিধান করছেন। নিতাইচাঁদ শ্রীগৌরপ্রেমরসে নিরন্তর ( সদাসর্বদা) সুখে গৌরহরিবোল বলতে বলতে উন্মত্তের ন্যায় ভ্রমণ করছেন। নামপ্রেমে এতই বিভোর যে কটির স্খলিত বসনের প্রতি লক্ষ্য নাই। অহো!চিন্ময় মূরতি নিতাইচাঁদের
এই অবতার অতি অনুপম। নিরন্তর নৃত্যগীতে রত এবং হরি হরি ধ্বনি করছেন।পরমরসময় গৌরগোপালের
নাম বলছেন।অভিরাম রামদাসের জীবন সর্বস্ব নিতাই সুন্দরের শ্রীমূর্তি
ভিন্ন গৌরীদাস পন্ডিত অন্য কিছুই জানেন না।দেখ বিশ্বের লোকসমূহ গৌরপ্রেমে মাতোয়ারা দয়াল নিত্যানন্দের প্রেমরসে উন্মত্ত হয়েছে।
পদকর্তা জ্ঞানদাস বলছেন, আমি নিতাইচাঁদের গুণ-কীর্তনে উন্মত্ত।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*একটি অপূর্ব পদ*
*সাত পাঁচ সখী সঙ্গে*
*নানা অভরণ অঙ্গে*
*সাধে গেনু যমুনার জলে।*
*তেমাথা পথের ঘাটে*
*সেখানে ভূলিনু বাটে*
*তিমিরে ঝাঁপিয়া ছিল মোরে*
** যোগমায়া পৌণমাসীর প্রতি ভ্রান্তার ন্যায় শ্রীরাধার উক্তি।
** পূর্বে পৌণমাসীর বাক্য শ্রবণ করিয়া আচ্ছন্নজ্ঞান শ্রীরাধা পৌণমাসীকে কোন সখী জ্ঞানে বলছেন, সখী!আমি সাত-পাঁচ সখীসঙ্গে নানা আভরণ অঙ্গে ধারণ করিয়া বড়ই সাধ করে যমুনায় গমন করি।তেমাথা বা তিনমাথা পথের ঘাটে গিয়া পথ ভুলে গেলাম। কারণ হঠাৎ কেমন এক অন্ধকারে আমাকে
ঢেকেছিল।
*ও গো! সজনি!কি হৈল প্রেমের জ্বালা*
*শয়নে স্বপনে দেখি কালা*।।
** সখিগো সেই হতে আমার কি প্রেমের যন্ত্রণা হয়েছে,শয়নে স্বপনে সেই কালাই দেখছি।
*কহিবার কথা নয়,*
*কহিলে কি জানি হয়*
*না কৈলে মরমে লাগে ব্যথা*
*যমুনা-পুলিন কাছে*
*দোথরি কদম্ব আছে*
*বন-চারী কেমন দেবতা*
** ওগো সখী!একথা বলবার নহে,
কি জানি,বলিলে কি হতে কি হয়, অথচ না বলিলে অন্তরে ব্যথা পাই গো। সখি! যমুনা পুলিনের কাছে দোথরি( দুই স্তরযুক্ত) কদম্বগাছে কেমন এক বনচারী দেবতা আছে।
*কালিয়া বরণ শ্যাম*
*কালিয়া তাহার নাম*
*কালিন্দী কদমতলে থানা*
*বংশী বদনে কয়*
*যুবতী জীবার নয়*
*দেখিলে-- মরমে দিত হানা*।।
** জানো সখী!তার বর্ণ কালিয়া শ্যাম
এবং তার নামও কালিয়া।যমুনাতীরে কদমতলায় তার বাস(থানা)। পদকর্তা
বংশীবদন সখীভাবাবেশে বলছেন, রক্ষা! তাঁর বদন দর্শন করলে মরমে(বুকে) এমনই আঘাত দিত তখন যুবতীর জীবন আর থাকত না।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
শ্লোক= বৈকুন্ঠাদ্যে নাহি যে যে লীলার প্রচার।
সে সে লীলা করিব যাতে মোর চমৎকার।।
মো বিষয়ে গোপীগণের উপপতি ভাবে।
যোগমায়া করিবেক আপন প্রভাবে।।
আমিহ না জানি তাহা না জানে গোপীগণ।
দোঁহার রূপ-গুণে দোঁহার নিত্য হরে মন।।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*অপূর্ব অসাধারণ অপ্রচলিত পদ আস্বাদন করুন, বেশ ভাল লাগবে*
*********************************
*গৌরদেহ-- সুচারু-সুবদনী,শ্যামসুন্দর নাহরে*
*(যনু)জলদ উপর,তড়িত সঞ্চরু, স্বরূপ ঐছন আহরে?*
*পীঠ পর ঘন,শ্যামরু-বেণী নিরখি, ঐছন ভাণরে*
*(যনু)অজর হাটক-পাটক করগহি, লিখন লিখোঁ পাঁচবাণ রে*
*ক্ষণ না থির রহু-- সঘন সঞ্চরু, মানিক-মেখলন-রাবরে*
(যনু) *ময়ন রায় দোহাই কহি কহি, জঘন যশগুণ গাবরে*
*রজনী বরুণা অবসান মানই রভস নাহি অবসান রে*
*রসিক ব্রজপতি-- রমণী রাধা-- সিংহ ভূপতি ভাণরে*
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*গৌরদেহ-- সুচারু-সুবদনী,শ্যামসুন্দর নাহরে*
*(যনু)জলদ উপর,তড়িত সঞ্চরু, স্বরূপ ঐছন আহরে*
** গৌরদেহ=গৌরাঙ্গিনী,সুচারু= মনোহারিণী, নাহ =নাথ বা স্বামী।
অর্থ্যাৎ=মনোহারিণী সুবদনী গৌরাঙ্গিনী রাধাকান্ত শ্রীশ্যামসুন্দরকে
ভূজবন্ধনে ধারণ করায়, মনে হচ্ছে যনু=যেন, যেন মেঘের উপর তড়িত= বিদ্যুৎ, বিদ্যুৎ সঞ্চার হয়েছে। স্বরূপ দেখে যেন ঐপ্রকার তাইই বলছে।(স্বরূপ ঐছন আহরে)
*পীঠ পর ঘন, শ্যামরু বেণী নিরখি, ঐছন ভাণরে*
*(যনু)অজর হাটক-পাটক করগহি, লিখন লিখোঁ পাঁচবাণ রে*
** রাইধনির পৃষ্ঠাদেশে বা পিঠে বিলম্বিত (ঝুলান) ঘনকৃষ্ণ বেণীটি দর্শন করে ভ্রম (ভুল)হচ্ছে,যেন উহা
অজর অর্থ্যাৎ চিরস্থায়ী স্বর্ণফলক,
কন্দর্প তাহা হস্তে গ্রহণ করিয়া আপনার (নিজের)পরাজয় পত্রিকা
(পাট্টা) লিখে দিচ্ছে, অর্থ্যাৎ মদনদেব ঐ দৃশ্য দেখে নিজ হাতে পরাজয় পত্র লিখে জানান দিলেন যে, আমি পরাজিত হলাম।( এবং মনে মনে ঐ শ্রীচরণে নিবেদন করলেন যে, হে জগত আনন্দদায়িনী তোমার শ্রীচরণে
আমায় ঠাঁই দিও)।
*ক্ষণ না থির রহু,সঘন সঞ্চরু**মানিক মেখলন রাবরে।
*(যনু)ময়ন রায় দোহাই কহি কহি,জঘন যশগুণ গাবরে*
** ক্ষণমাত্র ও রাইবিনোদিনীর মেখলন=মেখলা, কটিভূষণ। মেখলার
মাণিক্য ঘন চঞ্চল ধ্বনির বিরাম নাই।
রাব=ধ্বনি। ময়ন রায়=মদনরাজ, যেন পরাজিত মদনরাজ স্তুতির ভাষায় দোহাই=ঘোষণা,বলতে বলতে
রাধারাণীর কটির যশগুণ করছেন।
*রজনী বরুণা অবসান মানই রভস নাহি অবসান রে*
*রসিক ব্রজপতি-- রমণী রাধা-- সিংহ ভূপতি ভাণরে*
** রজনী (বরুণা=বরং,) বরং অবসান মানছে অর্থ্যাৎ রাত্রি সকাল হয়, কিন্তু যুগল বিলাসের অবসান নাই।গীতকর্তা সিংহ ভূপতি ( বোধহয় রাজা শিব সিংহ)( লতা বাতায়নে অর্থ্যাৎ লতা দ্বারা নির্মিত বাতায়ন বা জানালা ) কুঞ্জরন্ধ্রে দর্শনরতা সখীভাবে বলছেন, যেমন রসিক ব্রজরাজ তেমন রমণীমণি রাধারাণী।
ভুল ভ্রান্তি ক্ষমা করবেন।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*একটি গৌরচন্দ্রিকা ও ব্যাখ্যা*
*গোবিন্দের অঙ্গে পহুঁ নিজ অঙ্গ দিয়া*
*গান বৃন্দাবন গুণ আনন্দিত হৈয়া*
*অনন্ত অনঙ্গ যিনি দেহের বলনি*
*মুখ-চাঁদ কি কহিব?কহিতে না জানি*
*নাচেন গৌরাঙ্গ চাঁদ গদাধর-রসে*
*গদাধর নাচে পুহুঁ গৌরাঙ্গ বিলাসে*
*ত্রিভূবন দরবিত দম্পতি রসে*
*মুরারী বঞ্চিত ভেল নিজ মায়া দোষে*
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
** শ্রীগোবিন্দের অঙ্গে পহুঁ= মহাপ্রভু শ্রীগৌরসুন্দর তাঁর প্রিয় কীর্তনীয়া শ্রী
গোবিন্দ ঘোষের অঙ্গে স্বীয়(নিজ) অঙ্গ হেলাইয়া আনন্দভরে বৃন্দাবন-গুণ( অর্থ্যাৎ স্বীয় পূর্বভাব শ্রীকৃষ্ণলীলার সার রাসোৎসবের যে অনির্বচনীয় প্রেমলীলানন্দ স্মরণ করে) কীর্তন করছেন।আহা-হা-হা অনন্ত কন্দর্পনিন্দিত অর্থ্যাৎ মদনদেবের রূপ অতি চমৎকার ছিল,
মদনদেবের রূপে একবার নয়ন পড়লে নয়ন সরান যেত না, সেই রূপকে গৌরসুন্দর জয় করেছেন।
অঙ্গ সৌষ্ঠব(সৌন্দর্য্য, সুগঠন,দেহ মন
হরণ করা) এবং শ্রীমুখচন্দের মাধুর্য্যের বর্ণন কি বলব, আর কি বা জানি অর্থ্যাৎ আমার গৌরসুন্দরের ভুবনমোহন রূপ বর্ণনের ভাষা নাই।
রাসেশ্বরী শ্রীমতী রাধার প্রেমময়ী মূরতি শ্রীগদাধরের প্রেমরসে আমার আমার গৌরসুন্দর নৃত্য করছেন।আর গদাধর ও সাক্ষাৎ রাসেশ্বর প্রিয়তম মহাপ্রভু শ্রীগৌরাঙ্গের রাসলীলাবেশে
নৃত্য করছেন।এই দম্পতিরসে= অর্থ্যাৎ ব্রজের শ্রীরাধাকৃষ্ণের যুগল রসবিলাসের রস আস্বাদনে ত্রিভূবন দ্রবীভূত হচ্ছে। পদকর্তা মুরারী বলছেন,হায়!হায়!কেবল আমিই মায়া
সঙ্গদোষে ও রসে বঞ্চিত রইলাম।
#######################
*নিতি নিতি আসি যাই*
*এমন কভু দেখি নাই*
*কিখেনে বাড়াইনু পা,জলে*।
*গুরুয়া-গরব কুল*
*নাশাইতে কূলবতীর*
*কলঙ্ক আগে আগে চলে*।।
** শ্রীরাধা আপনার (নিজের) মাতামহী শ্রীমতী মুখরাদেবীকে বলছেন,
*বড়ি মাই!কি দেখিনু যমুনার ধারে*
বড়াই মা! আমি প্রত্যহ যমুনায় যাওয়া
আসা করি ; কিন্তু এমন কোন দিন দেখি নি গো? কি কুক্ষণে আজ জল আনতে পা বাড়িয়েছিলাম। কূলবতী ঘরের বাইর হলেই,তার গুরু-মর্য্যাদা ও কুল নাশ করতে কলঙ্ক আগে আগে চলে গো বড়িমাই।যমুনার ধারে যা দেখে এলাম----------
*বড়ি মাই!কি দেখিনু যমুনার ধারে*
*কালিয়া বরণ এক*
*মানুষ আকার গো*
*বিকাইনু তার আঁখি ঠারে* ধ্রু।।
*শ্যাম চিকনিয়া দে*
*রসে নিরমিল কে?*
*প্রতি অঙ্গে ঝলকে দাপনি*।
*ভূবন বিচিত্র ঠাম*
*দেখিয়া কাঁপয়ে কাম*
*কান্দে কত কূলের রমণী*।।
** আর কি বলব বড়ি মাই! কালো-
বরণ অর্থ্যাৎ কালোবর্ণ এক মানুষের মত আকার গো বড়াই মা! ওহ্ তাঁর নয়নের ইশারায় আমি নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছি।( যে তার নয়ন দেখে নাই তার বিন্দুমাত্র কিছুই অনুভব হবে না, আমার মনে হয় তার জীবনই বৃথা) তাঁর উজ্জ্বল চিকনকৃষ্ণ (মসৃণ ও চকচকে উজ্জ্বল) রসময় দেহখানি
কে গড়িল কে জানে?আহা-হা সর্বাঙ্গে
লাবণ্য (মুক্তার অভ্যন্তর হতে যেরকম
তরল আভা বা জ্যোতি দেখা যায়,অঙ্গে সেইরকম সুন্দর তরল আভা প্রতিভাত হলে ইহাকে লাবণ্য বলে) চাকচিক্য উদ্ভাসিত (উজ্জ্বলিত)
হচ্ছে।তাঁর ভূবনভোলানো অঙ্গভঙ্গি
দেখে জান বড়িমাই,কামদেবও কম্পিত হয়।আর কত শত কুলবতী রমণী ক্রন্দনে আকুল হয়, তাহা আমি নিজ নয়নে দর্শন করে অনুভব করলাম।
*না জানি না শুনি তায়*
*সে-বা কোন্ দেবতায়*
*তেঞি সে তাহার হেন রীত*।
*জ্ঞান দাসেতে কয়*
*না করিলে পরিচয়*
*কি জানিবে তাহার চরিত?*।।
** ওগো বড়াই মা! তাঁর নাম জানিও
না শুনিও নি। সে নিশ্চয়ই কোন দেবতা হবেন।সেইজন্য তাঁর এইরকম
অদ্ভুত স্বভাব।পদকর্তা জ্ঞানদাস বড়াই বুড়ি ভাবেতে বলছেন, ওগো রাধে!তাঁর সঙ্গে পরিচয় করলে না!
তাঁর চরিত্র কেমন করে বুঝবে?
পূর্বরাগের পদ।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*চিত্রপট লিখন ও দর্শন গৌরচন্দ্রিকা*
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*কি মধুর মধুর,বয়স নব কৈশোর*
*মূরতি জগমোহনহারী*
*কি দিয়া কেমনে বিধি,নিরমল গোরা তনু*
*আকুল কূলবতী নারী*
*বিফল উদয় করে,গগনে যে শশধরে*
*গোরারূপে আলা তিনলোকে*
*তাহে এক অপরূপ,যেবা দেখে চাঁদমুখ*
*মনের আঁধার নাহি থাকে*
*চল চর প্রেমমণি,কিয়ে থির দামিনী*
*ঐছন বরণক আভা*
*তাহে নাগরালী বেশ,ভুলাইল সব দেশ*
*মদন মনোহর শোভা*
*যতি সতী মতিহত,শেষ যেন কূলব্রত*
*আইল ভূবন-চিত-চোর*
*হরেকৃষ্ণ দাসে কয়,গোরা না ভজিলে নয়*
*এ ঘর করণে দেহ ভোর*
&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&
*শ্যাম রূপ হেরি,তুলি করে ধরি*
*বিশাখা চতুরা সখী*
*অনুরাগে মন, হেরিয়া মগন*
*পটের উপরে লিখি*
*প্রথমে চরণ,করিয়া স্থাপন*
*রাখিয়া বিনোদ ছান্দে*
*বিনোদ কটিতে, বিনোদ ধটি*
*বিনোদ করিয়া বান্ধে*
*সুপট্ট বসন, করি কোচায়ন*
*পরাওল এবে তায়*
*উড়নি দিলেক, বিনোদ কটিতে*
*সে না শোভার বালাই যায়*
*বাহু দুটি লিখি,ছল ছল আঁখি*
*মুরলী বাজায় করে*
*নিরখি বদন, হরষিত মন*
*তিলক নাসিকা 'পরে*
*বামে হেলাইয়া,চূড়াটি বাঁধিয়া*
*নিরখে বিশাখা সখি*
*অনুরাগে মন,সদাই মগন*
*দ্বিজ চন্ডীদাস সাখী*
#######################
*দেখ এক মূরতী মোহন*
*অনেক যতন করি,লিখিয়া এনেছি গো*
*এক মনে কর দরশন*
*কানাড়া কুসুম জিনি,দলিত আঞ্জন গো*
*নব জলধর যিনি ছটা*
*কটিতে কিঙ্কিণী,পীতাম্বর পরিধান গো*
*ভালে শোভে চন্দনের ফোঁটা*
*চাঁচর চিকুর,চূড়ে শিখিপুচ্ছ উড়ে গো*
*গলে দোলে বিনোদ বনমালা*
*বিম্বাধরে বংশী লয়ে,কত তান ধরে গো*
*চরণে নূপুর করে আলা*
*আর কত ভঙ্গি তার,লখিতে নারিনু গো*
*লিখিব কতেক পরকার*
*গোবিন্দ দাস কহে,ঐছে উচিত গো*
*করিতে গলার মণিহার*
&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&
চিত্রপট লিখন ও দর্শন
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*যে দেখেছি যমুনার ঘাটে*
*সেই দেখি এই চিত্রপটে*
*যার নাম কহিল বিশাখা*
*সেই এই পটে আছে আঁকা*
*যাহার মুরলী ধ্বনি শুনি*
*সেই বটে এ রসিক মণি*
*ভাটমুখে যার গুণগাঁথা*
*দূতী মুখে শুনি যার কথা*
*এই মোর হরিয়াছে মন*
*ইহা বিনে কেহ নাহি আন*
*এত কহি মূরতী পড়য়ে*জি
*সখী গণ ধরিয়া তোলয়ে*
*পুন কহে পাইয়া চেতনে*
*কি দেখিলুঁ দেখাও সে জনে*
*সখীগণ করয়ে আশ্বাস*
*ভণে ঘনশ্যামর দাস*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*যে দেখেছি যমুনার ঘাটে*
*সেই দেখি এই চিত্রপটে*
*যার নাম কহিল বিশাখা*
*সেই এই পটে আছে আঁকা*
*যাহার মুরলী ধ্বনি শুনি*
*সেই বটে এ রসিক মণি*
*ভাটমুখে যার গুণগাঁথা*
*দূতী মুখে শুনি যার কথা*
*এই মোর হরিয়াছে মন*
*ইহা বিনে কেহ নাহি আন*
*এত কহি মূরতী পড়য়ে*
*সখী গণ ধরিয়া তোলয়ে*
*পুন কহে পাইয়া চেতনে*
*কি দেখিলুঁ দেখাও সে জনে*
*সখীগণ করয়ে আশ্বাস*
*ভণে ঘনশ্যামর দাস*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*অথ চিত্রপট দর্শন*
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*কৃষ্ণের মূরতী চিত্রপটেতে লিখিয়া*
*দেখাইল যবে সখী বিশাখা আনিয়া*
*দেখিয়া মূর্ছিত রাই হৃদয়ে ধরিয়া*
*হাহাকার করি কান্দি ক্ষিতি লোটাইয়া*
( *শ্রীশ্রীভক্তমাল)*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*এমন মূরতি কেমন করি*
*লিখিলে বিশাখা ধৈরজ ধরি*
*কিবা অপরূপ আ- মরি মরি*
*আনহ হিয়ার মাঝারে ধরি*
*দরশে লইল পরাণ হরি*
*পরশে কি হয় বলিতে নারি*
*দেখি দেখি পট আনহ কাছে*
*এমন পুরুষ কি জগতে আছে*
*দেখিতে দেখিতে পটের লিখা*
*পরাণ হরিল বিষম ডাকা*
*মনোহর কহে লিখিল যে*
*পরাণ নিছনি তাহারে দে*
(তিন নম্বর পদ পরিবেশন হবে)
ডাকা= ডাকাতগণ যেমন সর্বস্ব লুঠ করে রত্ন, অর্থ হরণ করে নিয়ে নেয়,
তদ্রুপ আমার সর্বস্ব হরণ হয়ে গেছে।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
আমরা আপনার ভক্ত ও কিঙকরী,
অতএব আমাদের প্রতি এরূপ কঠোর
দন্ড বিধান করা উচিত নয়। আমাদের যদি পৃথিবীতে যাইতে হয়
তাহা হইলে আবার কবে আপনাদের কাছে আসিতে পারিব তাহা আদেশ
করুন।আমরা অজ্ঞান বশতঃ পরপুরুষ স্পৃষ্টা হয়েছি, সুতরাং একেবারে পরিত্যাগ
করা কর্তব্য নহে। ইন্দ্র অহল্যাকে বর্ষণ
করিয়াছিলেন,তথাপি অহল্যা কিছুকাল
পাষাণী হইয়া থাকিয়া পুনঃ পতির
চরণ প্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং পুনরায় বিশুদ্ধি লাভ
করিয়াছিলেন।আমরা কি অগ্নির স্পর্শ মাত্রেই চিরকালের জন্য
পরিত্যক্তা হইব?
আপনি বেদ কর্তা
ব্রহ্মার পুত্র এবং ধর্ম
নিষ্ঠ ও বেদ বেদাঙ্গপরাগ,এতএব
আপনি বিচার পূর্বক
আমাদিগকে দন্ড প্রদান করুন।পরম
দয়ালু অঙ্গিরা ঋষি
ব্রাহ্মণীদের এই করুন বচন শুনিয়া
বললেন- তোমাদিগকে সত্য বাক্য বলছি শ্রবণ কর।জীব মাত্রেই কর্মফল ভোগ করতে হয় এবং যেমন কর্ম, তাহার ফলও তদনুরূপ হয়ে
থাকে। অতএব আর
তোমাদের সহিত একত্রে বাস করা উচিত নহে, তোমরা
এখন পৃথিবীতে গমন করিয়া মনুষ্য
যোনিতে জন্ম গ্রহণ
কর।
০৩, মর্তে আসিয়া কিবা কর্ম করিয়া-
ছিলেন যে বৃন্দাবনে
বসবাস হয়েছিল?
উঃ ঋষি বলিলেন
যখন গোকুলে শ্রী কৃষ্ণ অবতীর্ণ হইবেন,তখন তাঁহাকে দরশন করা
মাত্র তোমাদের গোলোকে গতি হবে।
শ্রী কৃষ্ণ যোগমায়া শক্তি প্রভাবে তোমাদের ছায়ামূর্তি
নির্মাণ করিবেন এবং
সেই মূর্তি কিছু দিন
ব্রাহ্মণ গৃহে থাকিয়া
আমাদের নিকটে
আগমন করিবে,তখন সেই
ছায়ামূর্তিতে আবার
আমাদের পত্নী হইতে
পারবে।
তারপর ঋষি পত্নীগণ পৃথিবীতে
আসিয়া--------------
*ক্ষীরোদ সমুদ্র কুলে
যতেক যুবতী।
তপস্যা করিলা যে
ঈশ্বরে বাঞ্ছে পতি।।
মনে অভিলাষ কৈলা
অনেক কামনা।
পুরাইল ভগবান সবার বাসনা।।
বরদিল বিষ্ণু,চাহি
সব কন্যা গণে।
গোকুলেতে অবতার
নন্দের ভবনে।।
বৃন্দাবনে করিব যে
বাছুরি চারণ।
তোমরা করাবে মোরে অন্ন যে ভোজন।।
বিপ্রকুলে জনমিবে
বিপ্রের বণিতা।
যজ্ঞ স্থানে সবে গিয়া
হৈবে যে হোতা।।
বৃন্দাবনে রাসলীলা
যখন করিব।
তোমা সবাকার মনো
বাসনা পুরাইব।।
(এই হইল অন্ন ভিক্ষার তত্ব।)
অতি সংক্ষেপে।
মতামত জানাইবে।
জয়নিতাই জয়গৌর।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
অন্নভিক্ষা লীলায়:---
কি দুর্ভাগ্য বলবন্ত,
গনিয়া না পাই অন্ত,
জ্ঞান কর্মে মুগ্ধ মুনিগণ।
যার নামে নিবেদন,
অন্নমাগে সেই জন,
তারে অন্ন না হৈল
অর্পণ।।
************************************
লোচনদাস বলেভাই,
জ্ঞান মনে প্রেম নাই,
প্রেম বিনে না মিলে
গোবিন্দ।
শ্রীকৃষ্ণ প্রেম দর্পণ,
জ্ঞানীকে নাহি অর্পণ
কি দেখিবে যেবা জ্ঞান অন্ধ।।
ভাবার্থ---------------
অনন্তলীলাময় স্বয়ং
শ্রীকৃষ্ণের লীলাভঙ্গি
এবং বাচনভঙ্গি অতীব দুর্জ্ঞেয়। তিনি
ব্রাহ্মণগণকে বেদজ্ঞ
না বলিয়া "বেদবাদী"
বলিয়া ইঙ্গিত করি-
লেন যে ইঁহারা সকলেই উদাত্ত অনু-
দাত্ত প্রভৃতি স্বরভেদে
বেদমণ্ত্র উচ্চারণ করিতেছেন বটে, কিন্তু ইঁহাদের এখনো
বেদার্থ হৃদয়ঙ্গম হয়
নাই।কেননা, যাঁহারা
বেদার্থ হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিয়াছেন,
তাঁহারা কদাপি বেদ-
বেদ্য শ্রীভগবানের
চরণাশ্রয় কামনা না
করিয়া স্বর্গাদি বিষয়
ভোগ কামনা করেন না। এই ব্রাহ্মণগণ
বেদার্থের উপলব্ধি
করিতে পারেন নাই
বলিয়াই স্বর্গপ্রাপতির কামনায় আঙ্গিরস
যজ্ঞের অনুষ্ঠানে রত
হইয়াছেন। তাঁহারা যদি বেদার্থের অনু-
সন্ধান করিতেন,
তাহা হইলে যজ্ঞানু-
ষ্ঠান পরিত্যাগ করিয়া ভক্তি ভাজনে
রত হইতেন।সখাগণ,
যজ্ঞস্থানে উপস্থিত হইলে যাজ্ঞিক ব্রাহ্মণগণ যে তাঁদের
অন্ন দান করিবেন না,তাহা সর্বান্তর্য্যামী
শ্রীকৃষ্ণ জানতেন,
তথাপি তিনি সখাগণ
কে সেখানে পাঠাইয়া
দিয়া জগৎকে জানা
লেন যে বহু শাস্ত্র
অধ্যায়ন বা উচ্চারণ
করিতে পারিলেই
প্রকৃত ধর্মের অনু-
সন্ধান পাওয়া যায় না।তাহা কেবল নিষ্কাম ভক্তিযাজনেই
লাভ করা যাইতে পারে। ভুক্তি মুক্তি বা
সিদ্ধির কামনায় যতই কিছু বিরাট
ব্যাপারের অনুষ্ঠান
করা হোক না কেন,
তাহাতে ভুক্তি মুক্তি
প্রভৃতি পাইয়া স্বার্থ-
সিদ্ধি হতে পারে সত্য, কিন্তু তাহাতে
কাহারও হৃদয় শোধন হয় না। এই
সমস্ত সাধনের উচ্চ-
স্তরে উঠিতে পারিলে
আত্মপর ভেদজ্ঞান
রহিত হতেপারে বটে,
কিন্তু তাহাতে পরহিত
আচরণের প্রবৃত্তি যায় না।তাহা প্রাপ্তির
একমাত্র উপায় নিষ্কাম ভক্তি। ভক্তি-
যোগের অনুষ্ঠানে
যখন ভক্ত বুঝতে পারেন যে তাঁহারই
ভজনীয় শ্রীভগবান
অন্তর্যামীরূপে স্থাবর
জঙ্গমাদি সর্বভূতেই
অবস্থিত, তখনই তিনি পরহিতাচারণের প্রবৃত্তি লাভ করিতে
পারেন।
*আগামী কাল*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
অবজানন্তি মাং মূঢ়া
মানুষীং তনুমাশ্রিত,
শ্রীকৃষ্ণ যখন তাঁহার
নরাকৃতি প্রকাশ করিয়া নরলোকে
লীলা করেন,তখন
বিবেকহীন মূঢ়গণ
তাঁহাকে সামান্য মানব মনে করিয়া
তাঁহার বিশেষত্ব গ্রহণ
করিতে পারে না।যাজ্ঞিক ব্রাহ্মণগণও
সর্বদা বেদপাঠে নিরত থাকিয়াও সাক্ষাৎ বেদবেদ্য পরমপুরুষকে নিকটে পাইয়াও তাঁহার তত্ত্ব জানিতে
পারিলেন না-- যাহার
উদ্দেশ্যে যজ্ঞে চারু-
পুরোডাশাদি (যবের তৈরি রুটি) সমর্পণ
করিতেছেন, তাঁহার
প্রার্থনা জানিয়াও তাঁহাকে একমুঠো
অন্নদান করিয়া কৃতার্থ হইতে পারিলেন না,ধন্য মায়ার মোহিনীশক্তি।
ধন্য অজ্ঞতার মহা-
প্রভাব।
*জ্ঞান কান্ডে কর্ম কান্ডে,
যে কিছু আছে ব্রহ্মান্ডে,
ইথে কেহ না পাবে
আমারে*।
*উপরের পদটির অতি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা রইল।
জয়নিতাই গৌর হরিবোল।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*আদৌ শ্রদ্ধা ততঃ সাধুসঙ্গোহথ ভজনক্রিয়া*।
*ততোহনর্থনিবৃত্তি স্যাৎ ততো নিষ্ঠা রুচিস্ততঃ*।।
*অথাসক্তিস্ততো ভাবস্ততঃ প্রেমাভ্যুদঞ্চতি*।
*সাধকানাময়ং প্রেম প্রাদুর্ভাবে ভবেৎ ক্রমঃ*।।
#শ্রীভক্তিরসামৃতসিন্ধু#
অর্থ্যাৎ= কোনও অনির্বচনীয় ভাগ্য-
বশতঃ কোনও ভাগ্যবান জীব, শ্রী-
ভগবানের অযাচিত অপার কৃপায় প্রথমতঃ শ্রদ্ধা লাভ করেন।
(শ্রদ্ধা মানে বিশ্বাস কহি সুদৃঢ় নিশ্চয়।
কৃষ্ণে ভক্তি কৈলে সর্ব কর্ম কৃত হয়।।)
*সংসার ভ্রমিতে কোন ভাগ্যে কেহ তরে*।
*নদীর প্রবাহে যৈছে কাষ্ঠ লাগে তীরে*।।
সাধু,শাস্ত্র এবং গুরুবাক্য সুদৃঢ় বিশ্বাসের নামই শ্রদ্ধা। এই শ্রদ্ধাবান্ ব্যক্তি যদি শ্রীগোবিন্দ-চরণ-ভজনপরায়ণ ভক্তের সঙ্গলাভ করেন,তাহা হইলে তিনি শ্রবণ কীর্তনাদি সাধন ভক্তি যাজনে প্রবৃত্ত হন।ভজনশীল ভক্তের
সঙ্গলাভ করিয়াও যদি কেহ বৈষ্ণবাচার ও বৈষ্ণববেশ ধারণপূর্বক
শ্রবণ কীর্তনাদি সাধনভক্তি যাজনে প্রবৃত্ত (রত) হইতে না পারেন, তাহা হইলে বুঝতে হবে যে তিনি যে ভক্তের
সঙ্গলাভ করিয়াছেন, তিনি ভজন-
পরায়ণ নহেন কিম্বা তাঁহারও যথাশাস্ত্র
ভক্তসঙ্গ করা হয় নাই।
*সাধুসঙ্গ সাধুসঙ্গ সর্ব শাস্ত্রে কয়*।
*লবমাত্র সাধু সঙ্গে সর্বসিদ্ধি হয়*।।
শ্রবণকীর্তনাদি সাধন ভক্তি যাজন করিতে করিতে সাধকের অনর্থ নিবৃত্তি হয়।সাধনভক্তি যাজনের প্রতিবন্ধক মাত্রেরই নাম অনর্থ। জগতের জীব কেহ বা অবিশ্বাস বশত
কেহ বা আলস্য বশত কেহ বা রোগাদি বশত কেহ বা নানাবিধ বিষয়
কার্য্য বশত নিরন্তর শ্রবণকীর্তনাদি সাধন করিতে পারেন না।সুতরাং এই
অবিশ্বাস প্রভৃতি সমস্তই অনর্থ।সাধন
ভক্তি যাজন করতে করতে ক্রমশঃ এই অনর্থের নিবৃত্তি হইয়া থাকে। সাধন ভক্তি যাজন করিয়াও যাঁহাদের অনর্থ নিবৃত্তি দেখা যায় না,তাঁহাদের
সম্বন্ধে জানতে হবে যে তাহাদের বহু-
জন্মসঞ্চিত অনর্থ নিবৃত্তি করতে হইলে আরও বহু শ্রবণ কীর্তনাদি করতে হবে।অনর্থ নিবৃত্তি হইয়া গেলে
নিষ্ঠা লাভ হয়, তখন সাধন ভক্তি যাজনের কোনও বাধা ঘটে না, নিরন্তর সাধনভক্তি যাজন করা যায়।
সাধনভক্তি লইয়া নিয়ত স্থিতির নামই
নিষ্ঠা।শ্রীপাদ সনাতনগোস্বামী প্রভৃতির নিষ্ঠার কথা শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে দেখা যায়-- *সাড়ে সাত প্রহর যায় ভক্তির সাধনে*।
*চারিদন্ড বিশ্রাম তাও নহে কোন দিনে*।।
নিষ্ঠাবান ভক্তের কৃষ্ণভজনে রুচি জন্মে, কেবল কৃষ্ণ ভজন করিতে ভাল লাগে,বিষয়কর্ম বিষবৎ বলিয়া মনে হয়। তাহার পর কৃষ্ণ ভজনে আসক্তি লাভ হয়। বিষয়ীর যেমন বিষয়ে আসক্তি, ভক্তের তদপেক্ষা কোটি কোটি গুণ সাধনভক্তি যাজনে
আসক্তি জন্মে। এই ভজনাসক্ত ব্যক্তিরই ভাবের আবির্ভাব ঘটে।তাঁর
হৃদয় কৃষ্ণপ্রেম-সূর্য্যের কিরণে উদ্ভাসিত হয়, অজ্ঞান আঁধার কাটিয়া যায় এবং কামনা, বাসনা প্রভৃতি হিংসুকগণ তার হৃদয় ছাড়িয়া পলায়ন করে।ভাবলাভের পূর্বে কারো
অজ্ঞান আঁধার কাটে না, কিম্বা বিষয়
বাসনাও যায় না। ভাবলাভের পূর্বে কামনা বাসনা প্রভৃতি সুস্পষ্ট দেখতে
পাওয়া না গেলেও তার হৃদয়ের গভীরতম অতঃস্থলে লুকাইয়া থাকে,
সময় পাইলেই তাহারা আত্মপ্রকাশ করে।অনেক সংসারত্যাগী মহাপুরুষ-
কে *কৃষ্ণের সংসার* নাম দিয়া পূর্ব
সংসার অপেক্ষাও বৃহৎ সংসারে লিপ্ত হইতে দেখা যায় ও ভিক্ষালব্ধ অর্থ সঞ্চয় করিয়া ধনী হইতে দেখা যায়।
*জয় নিতাই*।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
অন্ন ভিক্ষার তত্ব:-
১,যে সাতজন মুনি-
পত্নী ছিলেন তাঁরা পূর্ব জন্মে কে ছিলেন? তাঁদের নাম
কি ছিল, তাঁদের স্বামীর নাম কি ছিল?
উঃ, তাঁরা সপ্ত ঋষির
পত্নী ছিলেন,মরীচি পত্নী কলা, অঙ্গিরা পত্নী শ্রদ্ধা, অত্রি পত্নী
অনুসূয়া,পুলস্ত্য পত্নী
হবিরভূ,পুলহ পত্নী গতি, ক্রতু পত্নী ক্রিয়া,ও বলিষ্ঠ পত্নী
অরুন্ধতী।মুনিগণ ব্রহ্মার মানস পুত্র ছিলেন,এই মুনিগণই
সপ্তর্ষি মন্ডল, সপ্ত ঋষি। ব্রহ্মার মন হইতে মরীচি,চক্ষু হইতে অত্রি,মুখ হইতে অঙ্গিরা,নাভি হইতে পুলহ, কর্ণ দ্বয়
হইতে পুলস্ত্য, হস্ত হইতে ক্রতু,ও প্রাণ
হইতে বশিষ্ঠর জন্ম।
২,কী কারণে মর্তে
আসিতে হয়েছিল?
উঃ মুনি পত্নীগণ সকলেই রূপে গুণে
অনুপমা,সুশীলা, স্ব ধর্মরতা, এবং পতিব্রতা। তাঁহারা সকলেই নবযৌবন-
সম্পন্না, শোভাশালিনী,দিব্য-
বস্ত্রপরিহিতা, রত্না-লঙকার শোভিতা,
তপ্ত কাঞ্চনের ন্যায়
সমুজ্জলা এবং সহাস্যবদনা ছিলেন।
সেই সময় অগ্নি তাঁহাদের সুন্দর মুখ ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গাদির
শোভা দেখিয়া মদন-
মোহিত হয়ে পড়িলেন, এবং হোম
কুন্ডের মধ্য হইতেই
বহুতর শিখাবিস্তার
পূর্বক তাঁহাদের অঙ্গ
স্পর্শ করিয়া কামাবেগে আত্মহারা
ও অচেতন হয়ে গেলেন।(মুনি পত্নীগণ হোম কুন্ডের
কাছেই বসে কথা বলছিলেন)
মুনি পত্নীগণ তাহাদের পতিরচরণ
ছাড়া আর কিছুই জানেন না, তাঁহারা
অগ্নির মনোভাব বা
তাঁহাদের দর্শনে ও
অঙ্গ স্পর্শে অগ্নির
কামবিকার কিছুই
বুঝতে পারলেন না।
কিন্তু সপ্ত ঋষির অন্যতম মহাতেজা
অঙ্গিরা ঋষি অগ্নির
মনোভাব জানতে পারিয়া তৎক্ষণাৎ
অগ্নিকে শাপ প্রদান
করিলেন- "তুমি সর্ব ভক্ষক হও"অঙ্গিরার
শাপবাক্যে অগ্নির চেতনা লাভ হইল এবং নানাভাবে ঋষির স্তুতি করিয়া
অগ্নি লজ্জাবনত বদনে হোম কুন্ডে
অবস্থিত হইয়া ব্রহ্ম
তেজে কম্পিত হইতে
লাগলেন। রাগান্বিত
ঋষি অঙ্গিরা তখন,
অগ্নি স্পৃষ্ট রমণীদের
বললেন- তোমরা সকলে পাপ যুক্তা হয়েছ, অতএব তোমরা মনুষ্য যোনিতে জন্ম গ্রহণ
কর। তোমরা ভারত
বর্ষে ব্রাহ্মণ কুলে জন্ম গ্রহণ করিবে এবং আমাদেরই
কুলোৎপন্ন ব্রাহ্মণগণ তোমাদের
বিবাহ করিবেন।মহাতেজা ঋষির শাপবাক্য শ্রবণ করিয়া পত্নীগণ রোদন করিতে লাগিলেন এবং জোড়হাত করিয়া
ঋষিকে বলতে লাগলেন,হে মুনি শ্রেষ্ঠ!আমরা আপনার চরণে কোনই অপরাধ করি
নাই,আমরা যদি অজ্ঞান বশতঃ পর
পুরুষ স্পৃষ্ট হয়ে থাকি,তাহা হইলে আমাদের পরিত্যাগ
করা কর্তব্য নহে।
(আজ এই পর্যন্ত)
প্রথম অন্নভিক্ষার তত্ত্ব হবে,
দ্বিতীয় আমরা আপনার হবে,
তৃতীয় কি দুভার্গ্য বলবন্ত হবে,
চতুর্থ অবজানন্তি হবে
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
* সর্বকালোচিত গৌরচন্দ্রিকা *
আরে মোর আরে মোর গোরা কাঁচাসোনা।
এতিন ভূবনে যাঁর নাহিক তুলনা ।
প্রেমের মূরতি খানি রসে ঢরঢর।
পুরুব ভাবেতে পহুঁ সদাই বিভোর।।
প্রেম জলে ডুবু ডুবু ও কমল আঁখি।
বাসুদেব ঘোষ দেখে এক পাশে থাকি।।
জয় নিতাই গৌর হরি হরি হরিবোল।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
বেদশিরা উবাচ=ত্বং মসাদুরভিপ্রায়ো
লঘুদ্রোহে মহ্যোদ্যমঃ।
কার্য্যার্থী কাকইব কৌ ত্বং কাকো ভব দুর্মতে।।
বেদশিরা মুনি বললেন=তোমার অভিপ্রায় অতি অসৎ, তুমি লঘুপাপে গুরুদন্ড প্রদান করিয়াছ এবং তোমার সর্বদা কাকের ন্যায় স্বকার্য্য সাধন-
তৎপর। অতএব তুমি কাক হইয়া ভূতলে জন্মগ্রহণ কর।
শ্রীনারদ উবাচ=আবিরাসীত্ততো বিষ্ণু-
রিথুঞ্চ শপতোস্তয়োঃ।
স্বস্বশাপাদ্দুঃখিতয়োঃ সান্ত্বয়ামাস তৌ গিরা।।
শ্রীনারদ ঋষি বলিলেন= হে বিদেহরাজ! মহামুনি বেদশিরা ও অশ্ব
শিরা এইরূপে পরস্পরকে শাপ প্রদান
করিয়া অতি দুঃখিত মনে অবস্থান করতে লাগলেন। এমন সময় তাঁহাদিগকে সান্ত্বনা প্রদান করবার জন্য সেই স্থানে শ্রীলক্ষ্মীপতি নারায়ণ
আবির্ভূত হইলেন।
শ্রীভগবানুবাচ=যুবান্তু মে সমৌ ভক্তৌ
ভুজাবিব তনৌ মুনী।
স্ববাক্যন্তু মৃষা কর্তুং সমর্থোহহং মুনীশ্বরৌ।।
ভক্তবাক্যং মৃষাকর্তুং নেচ্ছামি শপথো মম।
তে মুর্ধির্নি হে বেদশিরশ্চরণৌ মে ভবিষ্যতঃ।।
তদা তে গরুড়াদ্ভীতির্নভবিষ্যতি কর্হিচিৎ।
শৃণু মেহশ্বশিরোবাক্যং শোকং মা কুরু
মাকুরু।।
কাকরূপোহপি সুজ্ঞানং তে ভবিষ্যতি নিশ্চিতং।
পরং ত্রৈকালিকং জ্ঞানং সংযুতং যোগসিদ্ধিভিঃ।।
শ্রীভগবান মহামুনি বেদশিরা ও অশ্ব-
শিরাকে বলিলেন=তোমরা দুই জনই আমার দেহের দুই বাহুর ন্যায় প্রিয়তম
এবং পরমভক্ত। হে মুনিশ্রেষ্ঠ! আমি নিজ বাক্যের অন্যথা করতে পারি ;কিন্তু ভক্তবাক্যের অন্যথা করি না এই আমার নিয়ম। যাহা হউক, হে
বেদশির! তুমি সর্প রূপে জন্মগ্রহণ করিবে বটে, কিন্তু তোমার মস্তকে আমার চরণদ্বয় বিন্যস্ত থাকবে এবং
তাহাতে তোমার কদাপি গরুড়ভীতি থাকবে না। হে অশ্বশির! তুমি কাক রূপে জন্মগ্রহণ করিবে বলিয়া কোন প্রকার দুঃখ করিও না, তোমার কাকদেহেও যোগসিদ্ধি সমন্বিত ত্রৈকালিক জ্ঞানলাভ হইবে।
শ্রীনারদমুনি বলিলেন=(সংস্কৃত শ্লোক লিখিলাম না) হে বিদেহরাজ! শ্রী-
নারায়ণ,মহামুনি বেদশিরা ও অশ্বশিরাকে এই বাক্য বলিয়া বিদ্ধ্যাচল হইতে চলিয়া গেলে যথাকালে মহামুনি অশ্বশিরা নীলপর্বতে যোগীশ্রেষ্ঠ ভূশুন্ড নামক কাক হইয়া জন্মগ্রহণ করিলেন।ভূশুন্ড সর্বশাস্ত্রার্থজ্ঞানসম্পন্ন,মহাতেজস্বী এবং রামভক্তচূড়ামণি হইলেন।তিনি পক্ষিরাজ গরুড়ের নিকট রামায়ণ-কথা বর্ণনা করিয়াছিলেন।
তদনন্তর চাক্ষুস মন্বন্তরে প্রচেতার পুত্র,দক্ষপ্রজাপতি মহামুনি কশ্যপের সহিত তাঁর একাদশটি কন্যার বিবাহ দিয়াছিলেন।তাঁর একাদশ কন্যার মধ্যে কদ্রু সর্বশ্রেষ্ঠা এবং তিনিই বৈবস্বত মন্বন্তরে বসুদেবপত্নী রোহিণী
রূপে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন।কশ্যপ
পত্নী কদ্রুর গর্ভে কোটি কোটি মহা
সর্পের জন্ম হয়। কদ্রুনন্দনসর্পগণ মহাযোদ্ধা,দুঃসহ তীব্র বিষবীর্য্যসম্পন্ন
এবং মহামণিধর ছিল।তাহারা কেহ বা
পঞ্চশত ফণাধারী এবং কেহ বা শতফণা ধারী ছিল। মহামুনি বেদশিরা
ঐ সমস্ত কদ্রুনন্দন সর্পগণের মধ্যে সর্পরাজ কালিয়নাগরূপে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন।
(অতি সংক্ষেপে লিখিলাম)
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
গর্গ সংহিতায় বর্ণিত আছে যে,এক সময়ে বিদেহরাজ,দেবর্ষি নারদের নিকট কালিয়দমনলীলা শ্রবণ করেছিলেন এবং তিনি কালিয় মস্তকে
কৃষ্ণের নৃত্য ও কালিয়ের কৃষ্ণচরণে শরণাগতির কথা শুনিয়া কালিয়ের পূর্বজন্ম বৃত্তান্ত জানবার জন্য প্রশ্ন করেছিলেন। বিদেহরাজ দেবর্ষি নারদকে জিজ্ঞাসা করলেন- হে দেবর্ষিসত্তম্! যোগীগণ বহুজন্মের যোগারাধনাতেও যাঁহার চরণধূলি কণিকা লাভ করতে সক্ষম হন না, মহাদুষ্ট কালিয়সর্প সেই যোগীগণবাঞ্জিত শ্রকৃষ্ণচরণকমল মস্তকে ধারণ করবার সৌভাগ্য লাভ
করেছিল।সে জন্য আমার জানতে ইচ্ছে হইতেছে যে,কালিয় তাহার পূর্বজন্মেএমন কি সদনুষ্ঠান করেছিল যে,তার ফলে সে নিজমস্তকে শ্রীকৃষ্ণ-
চরণস্পর্শ পাবার সৌভাগ্য লাভ করিয়াছিল।
নারদঋষি বলিলেন=পূর্বকালে স্বায়ম্ভুব মন্বন্তরে ভৃগুবংশসমুদ্ভব বেদশিরা নামক একজন মুনি বিন্ধ্যা
চলে তীব্র তপস্যা করেন!সেই স্থানে অশ্বশিরা নামক একজন মুনিকে তপস্যা করিতে আসিতে দেখিয়া বেদশিরা মুনি ক্রোধে আরক্তনয়ন হইয়া বলতে লাগলেন-- হে বিপ্র! তুমি
আমার আশ্রমে তপস্যা করতে রত হইও না, ইহাতে তোমার ভাল হবে না,তোমার কি অন্যত্র তপস্যা করবার উপযুক্ত স্থান নাই?
অশ্বশিরা মুনি বেদশিরাকে বললেন-
এই ভূমি তোমারও নহে,আমারও নহে।একমাত্র মহাবিষ্ণুই এই স্থানের অধিকারী।এখানে কত শত মুনিগণই না তীব্র তপশ্চরণ করেছেন, কিন্তু তুমি আমাকে দেখিয়া সর্পের ন্যায় গর্জন করতে করতে বৃথা ক্রোধ প্রকাশ করছো? অতএব তুমি সর্প হইয়া জন্মগ্রহণ কর এবং তোমার যেন গরুড় হইতে সর্বদা ভীত থাকতে হয়। ( আবার পরে লিখিব)
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
গো-জননী সুরভি,গোপরাজনন্দন শ্রী-
কৃষ্ণকে গো-গণের অধিপতিরূপে অভিষেক করিবার জন্য বহুতর কাকুতি মিনতি এবং পুনঃ পুনঃ প্রার্থনা করিয়াতাঁর অনুমতি পাইবার জন্য অনিমিষনয়নে তাঁর মুখের দিকে
চাহিয়া রইলেন। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ তাঁহাকে কিছুই বললেন না,কেবল একবার মাত্র তাঁর দিকে প্রসন্ন দৃষ্টিপাত করলেন। গোজননী সুরভি,ইহাতেই
পরমানন্দে অধীরা হইলেন এবং মনে
করলেন যে গোজাতির উপর স্বভাব-
করুণ শ্রীকৃষ্ণ,মৌনসম্মতিতে আদেশ প্রদান করলেন।তখন তিনি পরমা-
নন্দে উৎফুল্ল হয়ে ব্রজের সমস্ত গোগণের সহিত মিলিত হয়ে জয় জয়
ধ্বনি করতে লাগলেন এবং নিজ নিজ স্তনক্ষরিত বিমল-দুগ্ধ ধারায় ও
নয়নপথে বিগলিত প্রেমাশ্রুধারায় শ্রী-
কৃষ্ণের শ্রীচরণ বিধৌত করিয়া পরমা
নন্দে তাঁর অভিষেক করতে লাগলেন।
এইরূপে গো-জননী সুরভি তাঁর সন্তানবর্গের সহিত মিলিত হয়ে গোপ-
রাজনন্দনের অভিষেক করিলে দেবমাতৃকাগণ এবং দেবর্ষিগণ দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে এসে তাঁহাকেও ব্রজরাজনন্দনের অভিষেক
করিবার জন্য উৎসাহ প্রদান করতে লাগলেন। কিন্তু ইন্দ্র পূর্বকৃত মহাপরাধ ভয়ে ভীত হয়ে প্রথমত ইহাতে সাহসী হলেন না দেখিয়া দেব-
মাতৃকাগণ ও দেবর্ষিগণ তাঁকে বলতে
লাগলেন- হে দেবরাজ!অখিলব্রহ্মান্ড
পতি ব্রজরাজনন্দন,পরমদয়ার্দ্রচিত্ত
এবং শরণাগতবৎসল। আজ তুমি তাঁর পরমপ্রিয় গোজননী সুরভির সঙ্গে তাঁর চরণনিকটে উপস্থিত হয়েছ,
এবং তিনি পরমানন্দে শ্রীকৃষ্ণের অভি
ষেক কার্য্যনির্বাহ করেছেন।সুতরাং তুমিও কোন প্রকার আশঙ্কা না করিয়া পরমানন্দে শ্রীকৃষ্ণের অভিষেক মহোৎসব নির্বাহ কর।দেবমাতৃকা ও দেবর্ষিগণের উৎসাহ
বাক্যে উৎসাহিত হইয়া দেবরাজও
পরমানন্দে জয় জয় ধ্বনি করতে করতে দেবমাতৃকা ও দেবর্ষিগণসহ ব্রজরাজনন্দনের চরণ সমক্ষে সমুপ-
স্থিত হলেন এবং ঐরাবত শুন্ডধৃত রত্ন
ঘটে করিয়া আকাশগঙ্গার জলাহরণ করিয়া পরমানন্দে গোপরাজনন্দনের
চরণে সমর্পণ করিয়া তাঁহার মহা-
ভিষেক করিলেন এবং সকলে মিলিয়া গোপালন লীলাবিলাসি গোপ
রাজনন্দনকে " গোবিন্দ " নামে অভিহিত করিয়া সেই নাম উচ্চারণ পূর্বক তাঁর জয় ঘোষণা করতে লাগলেন। (আবার আগামীকাল।)
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
পুলস্ত্যমুনিঃ-- অন্নভিক্ষা লীলায় পরিবেশন করা যাবে।
* ব্রহ্মার মানসপুত্র সপ্তঋষিদের অন্যতম,ব্রহ্মার কর্ণ হইতে ইনার জন্ম,ইনি একজন ব্রহ্মর্ষি।ব্রহ্মা এঁকে
পুরাণ শাস্ত্র দান করেন এবং ইনি তাহা
পরাশরকে শেখান। পরাশর সাধারণের মধ্যে পুরাণ প্রচার করেন।
তৃণবিন্দু-মুনির আশ্রমের কাছে একটি স্থানে যখন তিনি সাধনা করছিলেন তখন অপ্সরা ও ঋষিতনয়াদের নৃত্য
গীতে বিরক্ত হয়ে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে,এরপর কোন রমণী তাঁর সাধনস্থলে এলে তৎক্ষণাৎ গর্ভ-
বতী হবে।দৈবক্রমে তৃণবিন্দুর কন্যা হবির্ভু সেইখানে এসে পড়লে গর্ভবতী
হন। তৃণবিন্দুর অনুনয়ে পুলস্ত্য হবির্ভু
কে বিবাহ করেন এবং তাঁর গর্ভে রাক্ষস রাবণের পিতা ঋষি বিশ্রবাঃ
জন্মগ্রহণ করেন।
******************************
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
সাগর-মন্থনে চন্দ্র হইল উৎপন্ন।
হইল চন্দ্রের পুত্র বুধ অতি ধন্য।।
পুরুশুচ নামে হৈল তাঁহার নন্দন।
তাঁর পুত্র শতাবর্ত জানে সর্বজন।।
স্বর্গ নামে তাঁহার হইল এক সুত।
হইল তাঁর পুত্র শ্বেত- নামযুত।।
নামেতে হইল নিমি তাঁহার নন্দন।
নিমিকে প্রশংসা করে যত দেবগণ।।
সকলে মিলিয়া তাঁর মথিল শরীর।
তাহাতে জন্মিল পুত্র মিথি নামে বীর।।
সেই বসাইল এই মিথিলা নগর।
বীরধ্বজ কুশধ্বজ তাঁহার কোঙর।।
সৃষ্টি রক্ষা হেতু ধাতা চিন্তিয়া অন্তরে।
করিল লক্ষ্মীর জন্ম জনকের ঘরে।।
কৃত্তিবাস পন্ডিতের কবিত্ব সুন্দর।
চন্দ্রবংশ রচনা করিল কবিবর।।
#####################
ধাতা=বিধাতা,মথিল=মন্থন করিল।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
মহাভারতের কথা স্ত্রী পর্ব।অতিসংক্ষেপে দুই এক কথায়।
*********************************
শত পুত্র ও কুটুম্ব নাশে ধৃতরাষ্ট্র হাহাকার করিয়া কাঁদতে লাগলেন।সঞ্জয় তাঁকে তখন বোঝালেন - সংসার এবং জীবনের অনিত্যতার কথা।বললেন-নরনাথ, আজ আপনি পুত্রশোকে কাঁদছেন। কিন্তু আপনার দুর্বিনীত পুত্রেরা যখন একের পর এক অন্যায় করেছে, পিতামহ ভীষ্ম কত বুঝিয়েছেন, গান্ধারী বুঝিয়েছেন, দ্রোণ, বিদুর, প্রভৃতি অনেকেই বুঝিয়ে
ছেন, কিন্তু দুর্য্যোধন কারো কথাকানে তোলেনি।তাছাড়া আপনি তো জানেন
স্বয়ং কলি দুর্য্যোধনরূপে গান্ধারীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিল।কুরুকুলের নারীগণ স্থির করলেন- তাঁরা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়েআপন আপন ধর্মপতিকে এবং আত্মীয়-স্বজনকে দর্শন করে আসবেন।তদনুসারে সবাই সেখানে গিয়ে বিলাপ করতে লাগলেন।
ধৃতরাষ্ট্র বললেন- আমি ভীমের সাথে একবার সাক্ষাৎ করতে চাই।ভীমসেন রাজী হলেন, কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ বাধা দিলেন।তিনি একটি লোহার ভীম তৈরী করিয়ে অন্ধ রাজার কাছে এগিয়ে দিলেন। ধৃতরাষ্ট্র আলিঙ্গন ছলে সেইলৌহ ভীমকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে
ফেললেন।পুনরায় শ্রীকৃষ্ণ পান্ডবদের এইভাবে রক্ষা করলেন। পান্ডবেরা গিয়ে গান্ধারীকে প্রণাম করলেন।গান্ধারীকে পুত্রশোকে আকুল হয়ে কাঁদতে দেখে ব্যাসদেব বললেন- বৃথা
ক্রন্দন কোরো না মা।মনে করিয়া দ্যাখ দুর্য্যোধন যখন যুদ্ধ যাত্রার আগে তোমাকে প্রণাম করতে এসে আশীর্বাদ চাইল- তখন তুমি বললে- যেখানে ধর্ম সেখানেই জয় হবে বৎস।অতএব পান্ডবদের জয় তো তোমারই
আশীর্বাদ প্রসূত।গান্ধারী কাঁদতে কাঁদতে অভিশাপ দিলেন কৃষ্ণকে। বললেন- আমার বংশ নাশ করেছ তুমি।তেমনি আমার অভিশাপে তোমারও বংশ নাশ হবে।
যুধিষ্ঠির, ভাই এবং আত্মীয়- কুটুম্বদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিটি আত্মীয়-
স্বজনের সৎকার করলেন।কর্ণের শোকে জননী কুন্তীকে কাঁদতে দেখে বিস্মিত যুধিষ্ঠির কারণ জিজ্ঞাসা করলেন।এইবার তিনদিন পরে কুন্তীদেবী যুধিষ্ঠিরের কাছে সব কথা প্রকাশ করলেন যে কর্ণ তাঁরই গর্ভজাত পুত্র।কর্ণের পিতা সূর্য্যদেব।কুন্তীর কন্যাকালে এই পুত্র হয়েছিল।হাহাকার করিয়া উঠলেন ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির।বললেন- এইকথা তুমি আগে কেন বললে না মা, ভ্রাতৃবধের
ভাগী হলাম আমি। যুধিষ্ঠিরকে সিংহাসন গ্রহণ করতে শ্রীকৃষ্ণ অনুরোধ করলেন।এরপর সকলে মিলে রাজধানী হস্তিনায় গমন করলেন। যুধিষ্ঠিরের নয়ন দিয়ে শোকে জল পড়তে লাগলো।শ্রীকৃষ্ণ
তাঁকে সান্ত্বনা দিলেন। হস্তিনায় রাজধানী প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে সকলেই গেলেন। যুধিষ্ঠির যে রথে গেলেন----
সেই রথের চালক হলেন ভীমসেন। কৃষ্ণ- অর্জুন এক রথে, অন্য রথে নকুল ও সহদেব উঠিলেন।সঞ্জয়, যুযুৎসু প্রভৃতিকে সঙ্গে নিয়ে ধৃতরাষ্ট্র বিমানে উঠলেন।ক্রন্দসী গান্ধারীকে নিয়ে কুন্তীদেবী রথে আরোহণ করিলেন। যুধিষ্ঠিরকে রাজা করিবার প্রস্তাব করিলেন গান্ধারী। যুধিষ্ঠির বললেন, তবে তুমি কাঁদছো কেন দেবী? গান্ধারী বললেন- আমি মায়াবশে কাঁদছি যুধিষ্ঠির।আমি জানি, আমার পুত্রেরা যে মহাপাপ করেছিল, তারই প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ তারা প্রাণ দিয়েছে।তুমি ধর্মপুত্র, তুমি ধার্মিক, সিংহাসনে আরোহণ করো, আমি তোমাকে আশীর্বাদ করছি, তুমি চির সুখী হবে।
#######################
জয় নিতাই জয় গৌর।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
মহাভারতের মহাবাণী শেষ হয়ে এল।আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব ও শ্রীকৃষ্ণের শোকে পান্ডবদের আর রাজ্য শাসনের কথা মনে ছিল না।যুধিষ্ঠিরের পরামর্শে সবাই ঠিক করলেন যে তাঁরাও মহাপ্রস্থানে যাবেন।দ্রোপদী জিদ ধরলেন-তিনিও সঙ্গে যাবেন।অগত্যা তাঁকেও সঙ্গে নিতে হল।প্রজাগণ বিলাপ করতে লাগলো।যুধিষ্ঠির তাদের প্রবোধ বাক্যে সান্ত্বনা দিলেন।পূর্বমুখে তাঁরা অগ্রসর হলেন।অগ্নিদেব এসে পথ রোধ করে দাঁড়ালেন-বললেন আমাকে কিছু খাদ্য দাও।অর্জুন তাঁর গাণ্ডীব ধনু,এবং সব দিব্যঅস্ত্র অগ্নিকে প্রত্যপণ করলেন।পান্ডুপুত্রগণ পুরোহিত ধৌম্যকে বিদায় দিয়ে লোভ,মোহ,কাম, ক্রোধ ইত্যাদিকে পরিহার করে শ্রীগোবিন্দ পদে মনঃসংযোগ করলেন। পরে পরীক্ষিতের হাতে রাজ্যভার অর্পণ করে স্বর্গপথে প্রয়াণ করিলেন।এইভাবে কত বন, কত পর্বত, কত নদী অতিক্রম করে মেঘনাদ পর্বতে গেলেন।সেখান থেকে তপস্বী মুনির আশ্রম দেখলেন - ভয়ঙ্কর নদ-নদী তাঁদের সামনে।বহু তপস্বী, কেউ পর্বত কন্দরে,কেউ বৃক্ষের কোটরে, কেউ নদীর তীরে, কেউ গঙ্গাতটে-নীরাহার
ফলাহার কিম্বা বায়ু আহার করিয়া তপস্যা করছেন।
এরপর চলতে চলতে সোমেশ্বর পর্বতে মৃত্যুবরণ করলেন ভীমসেন।হাহাকার করিয়া বিলাপ করতে লাগলেন ধর্মরাজ।এক এক করে স্মরণ করতে লাগলেন ভীমের বীরত্ব
কাহিনী।তারপর তাঁর মনে হল, ভীমের মৃত্যু হল কেন? কী পাপ ছিল তাঁর?অমনি ধর্মরাজের মনে পড়ল, পৃথিবীর যাবতীয় খাদ্যবস্তুর উপর প্রচন্ড লোভ ছিল ভীমসেনের।ভক্ষ্য-
দ্রব্য দেখলে তিনি আর স্থির থাকতে পারতেন না।লোভই হল তাঁর মৃত্যুর কারণ।এবার ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির একা।
ধীরে ধীরে তিনি স্বর্গের পথে অগ্রসর হতে লাগলেন।গন্ধর্ব পর্বত আরোহণের সময় হিমালয়বাসী মুনি
ঋষিগণ এক এক করে এসে দেখা করে যেতে লাগলেন। যুধিষ্ঠির প্রত্যেককে প্রণাম করে আশীর্বাদ প্রার্থনা করলেন।এইভাবে চলতে চলতে যুধিষ্ঠির একদা স্বর্গের দ্বারদেশে গিয়ে উপনীত হলেন।দ্বারপাল গিয়ে দেবরাজ ইন্দ্রকে সংবাদ দিল। ইন্দ্র বললেন- আমি গিয়ে তাঁকে নিয়ে আসছি। কিন্তু দেবরাজ ইচ্ছা হল - ধর্মরাজকে আর একবার পরীক্ষা করতে।ব্রাহ্মণের রূপ ধরে তিনি ধর্মরাজের সম্মুখে উপস্থিত হলেন।
এরপর পান্ডবগণ গেলেন মেঘনাদ পর্বতে। সেখানে দানবদের যুদ্ধে পরাস্ত করিয়া তাঁরা কেদার পর্বতে আরোহণ করিলেন।এবারে পান্ডবেরা উত্তর মুখে চলিলেন।পথে এক ভীষণা রাক্ষসী তাঁদের পথ আটকালো।ভীম অবলীলাক্রমে রাক্ষসীকে নিপাত করলেন। পুনরায় পান্ডবগণ এলেন ভদ্রকালী পর্বতে।এখানকার কালীমূর্তি ভদ্রকালী নামে প্রসিদ্ধা। অতি ভক্তিসহকারে তাঁরা মায়ের পূজো করলেন, মা তুষ্ট হয়ে বললেন বর চাও- ধর্মরাজ জোড়হাতে বললেন
দেবী-এই ফর দাও যে,কলিকালে তুমি জাগ্রত থাকবে।দেবী বললেন- তথাস্তু।এরপর তাঁরা হরিপর্বতে এলেন
এইখানে হিমশীতলতায় দ্রোপদী কিছক্ষণের মধ্যেই দেহত্যাগ করিলেন। তাঁর মৃতদেহ কোলে নিয়ে পাঁচভাই বিলাপ করতে লাগলেন।এবারে ভীম প্রশ্ন করলেন-ধর্মরাজ!কোন পাপে দ্রোপদীর মৃত্যু হইল?তখন ধর্মরাজ বলিলেন-তবে শোন ভাই! পঞ্চ স্বামীর মধ্যে পার্থের প্রতি পাঞ্চালীর আকর্ষণ বেশী ছিল, এই পাপে পাঞ্চালীর মৃত্যু হইল।আবার শুরু হল পথ চলা।বদরিকাশ্রমে গিয়ে তাঁরা দেখা পেলেন অমর অশ্বথামার।
বহুদিন পর মিলন হওয়াতে আনন্দের রোল উঠিল।অশ্বথামা বললেন-তোমরা এখানে থাকো। কিন্তু দ্রোপদীকে দেখছি না কেন? তিনি কোথায়? যুধিষ্ঠির বললেন-তিনি পথি
মধ্যে দেহত্যাগ করেছেন।শুনে রোদন করতে লাগলেন অশ্বথামা।সেখানে কিছুকাল বিশ্রামের পর আবার যাত্রা শুরু হল।এবার বদরিকাশ্রমে সহদেবের মৃত্যু হল।ভীম প্রশ্ন করলেন
কোন পাপে সহদেব ইহলোক ত্যাগ করিল? যুধিষ্ঠির বললেন-জ্যোতিষী রূপে ভাই সহদেবের ভূত, ভবিষ্যৎ, ও
বর্তমান সবই জানা ছিল। পাশা খেলায় আমার হার হবে সে একথা জানতো, জেনেও সে আমাকে সতর্ক
করিয়া দেয়নি।এই তার পাপ।এরপর তাঁরা এলেন চন্দ্রকালী পর্বতে।এখানে নকুলের মৃত্যু হল।পরবর্তী বিশ্রামাস্থল
নন্দীঘোষ পর্বতে অর্জুনের মৃত্যু হল।পুনরায় ভীম প্রশ্ন করলেন যুধিষ্ঠিরকে
তিনি বলিলেন যে, কর্ণের সঙ্গে যখন আমার যুদ্ধ হয়, তখন নকুল আমার কাছে ছিল।যখন আমি যুদ্ধ করে দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম, তাহা দেখেও নকুল আমার সাহায্যার্থে অগ্রসর হয়নি। এই তার পাপ।আর অর্জুনের
পাপ হল, সে আমাকে যেরকম ভালবাসত তার চাইতেও বেশী ভালবাসতো পাঞ্চালীকে।আর সব কিছুকে হেয় জ্ঞান করতো এই ছিল তার পাপ।
ইতিমধ্যে কুকুরের রূপ ধরে স্বয়ং ধর্ম সেখানে এসে উপস্থিত হলেন।তিনি কুকুরকে কামড়াতে গেলেন।ব্রাহ্মণহস্তের লাঠি দিয়ে নির্মমভাবে প্রহার করলেন কুকুরকে।তখন কুকুর রূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে বললেন-ওহে পূণ্যবান পৃথিবীর রাজা!ব্রাহ্মণের দন্ড
প্রহারে আমার যে প্রাণ যায়।তুমি ছাড়া আমাকে উদ্ধার করবার আর কেউ নেই।তখন রাজা যুধিষ্ঠির হাতজোড় করে ব্রাহ্মণকে বলিলেন- কুকুরটিকে এইভাবে প্রহার করবেন না প্রভু!রাজা যুধিষ্ঠিরের কথা শুনে ব্রাহ্মণের ক্রোধ আরো বেড়ে গেল।তিনি বললেন-- না, পূণ্যহীন কুকুরের অদ্য আমার হাতে পরিত্রাণ নাই। তখন যুধিষ্ঠির বলিলেন- বেশ আপনার কথায় হবে, তাহলে আমি আমার সঞ্চিত পূণ্যের অর্ধেক কুকুরকে দান করিলাম, আপনি কুকুরটির প্রাণ ভিক্ষা দিন।এইবার ধর্ম কুকুর রূপ দূরে রেখে নিজের রূপ
পরিগ্রহ করিয়া - স্বীয় পরিচয় দিলেন।রাজা যুধিষ্ঠির তৎক্ষণাৎ লুটিয়ে পড়লেন তাঁর চরণে।ধর্ম বললেন- বৎস, তুমি আমার পুত্র।আমার ঔরসে কুন্তীর গর্ভে তোমার জন্ম। ততক্ষণে পাশে আর একজন এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর দিকে চেয়ে বললেন- ইনি দেবরাজ ইন্দ্র।ইনি রথ নিয়ে এসেছেন -- তোমাকে স্বর্গে নিয়ে যাবার জন্য।পদব্রজে অনেক ক্লেশ সহ্য করেছ বৎস।এবার রথে আরোহণ কর।দেবরাজের ইঙ্গিতে সারথি রথ নিয়ে এলো।সকলে তাহাতে আরোহণ করিয়া স্বর্গাভিমুখে
অগ্রসর হলেন।স্বর্গপুরে বিরাট সম্বর্ধনার মধ্যে রাজা যুধিষ্ঠিরকে স্বাগত জানানো হইল।স্বয়ং নারায়ণ এলেন।কুশল জিজ্ঞাসা করায় ধর্মরাজ বলিলেন- পরীক্ষিতকে রাজ্যভার দিয়ে স্বর্গে আসছিলাম, পথে আমার চারভাই ও দ্রোপদীর মৃত্যু হইল।তাদের বিরহে শোকাচ্ছন্ন হয়ে আছি প্রভু। অতঃপর নারায়ণ যুধিষ্ঠিরকে নিয়ে শ্বেতদ্বীপে অগ্রসর হইলেন।দেখালেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে নিহত তাঁর ভাই, জ্ঞাতিভাই, বন্ধু, গুরু ও সৈন্যগণ - সকলেই সেখানে উপস্থিত। আছেন ভীষ্মদেব,দ্রোণ,কৃপ
শতভাই সহ দুর্য্যোধন, ধৃতরাষ্ট্র, শকুনি
ভীম, কুন্তী, মাদ্রী, দ্রোপদী, সহদেব, নকুল, গান্ধারী, ঘটোৎকচ,জয়দ্রথ,
বিরাটরাজা, উত্তরা, অভিমন্যু, বিকর্ণ,
এবং অষ্টাদশ অক্ষৌহিণী।আর এক জায়গায় গিয়ে যুধিষ্ঠির যেন কান্না শুনতে পেলেন।সকলে যেন বলছেন--
অল্প পাপের জন্য আমরা ক্লেশ ভোগ করছি।তোমাকে দেখিয়া তাদের ক্লেশের অবসান হল। যুধিষ্ঠির সকলের কথা শুনছেন, কিন্তু নয়নে কাউকে দেখতে পাচ্ছেন না। তখন গোবিন্দকে ইহার কারণ জিজ্ঞাসা করাতে তিনি বললেন-
তোমার নরক দরশন হল। যুধিষ্ঠির বললেন আমার কী পাপে এটি ঘটিল? গোবিন্দ বললেন তবে শোন- ভীষ্মকে মেরেছ সামনে শিখন্ডীকে রেখে, অশ্বথামা নামে হাতীর মৃত্যুকে উপলক্ষ্য করিয়া-( অশ্বথামা হত)বলিয়া দ্রোণকে হত্যা করা।(ইতিগজ) কথাটি নিম্ন কন্ঠে বলবার জন্য মহামতি দ্রোণ তাহা শুনতে পাননি।এইযে অন্ধকারের মধ্যে থেকে একটি আর্তস্বর ভেসে আছছে-- এতেই তোমার নরক দর্শন হল।তখন যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণের পদতলে পড়ে তাঁর স্তব করতে লাগলেন।যে চন্দ্রাতপের তলে বসে রাজা জন্মেজয় এই মহাভারতের কাহিনী শুনছিলেন, কাহিনী শেষ হলে দেখা গেল সেই কৃষ্ণবর্ণের চন্দ্রাতপ শ্বেতবর্ণ ধারণ করেছে।
#######################
অতি সংক্ষিপ্ত কয়েকটি কথার মাধ্যমে স্বর্গারোহণ তুলে ধরলাম।
ভুল ভ্রান্তি মার্জনীয়, জয় নিতাই।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
শ্রীচন্ডীদাসের " পিরীতি " শব্দের তত্ত্ববোধক গান
পি ঃ-- নয়নে নয়নে মিলন হইলে তাহে উপজিল
" পি " ----- পিয়াসা।
রী ঃ-- বয়ানে বয়ানে মিলন তাহে উপজিল
" রী " ----- মাধুরী।
তি ঃ-- হিয়ায় হিয়ায় মিলন হইলে উপজিল
" তি "----- তৃপ্তি।
শ্রীরাধা (তাঁহার পূর্ণ শক্তি ) তাঁহার তিন শক্তি
পি--লাবণ্যামৃত, লাবণ্যামৃত হতে চন্দ্রাবলী,
রী--তারুণ্যামৃত, তারুণ্যামৃত হতে শ্রীবৃন্দা,
তি-- কারুণ্যামৃত, কারুণ্যামৃত হতে শ্রীবিরজা,
* তিনটি চেতন সমুদ্র------------------------
পি--লাবণ্যামৃত- শ্রীকৃষ্ণবিগ্রহকে আবৃত করে বা
বেষ্টিত করে আছে।
রী--তারুণ্যামৃত- শ্রীকৃষ্ণ এবং গোলোককে আবৃত
করে আছে। গোলোকের গড়খালি।
তি--কারুণ্যামৃত-শ্রীকৃষ্ণ গোলোকে শ্রীবিগ্রহ ভাসিয়ে বৈকুন্ঠে গড়খালি রূপে জ্যোতির্ময় ধামের
পরে বিরজা চেতনা জল, সব কারণ উৎপত্তি স্থান, নিজ পতি স্থান, প্রথম পুরুষ আশ্রয় স্থান ও
জীব উৎপত্তি স্থান।
শ্রীমদ্ভাগবতে তৃতীয় স্কন্ধে কপিল ভগবান বলেছেন, পুরুষ দুই প্রকার--জীব ও পরমেশ্বর।
প্রকৃতিকে যিনি অধীন করেন তিনি ঈশ্বর
(ক্ষীরোদকশায়ী) প্রকৃতির অধীন যে (বারে বারে
যার জন্ম মৃত্যু হয়) সে জীব।
পিঃ-- বলরাম-- অবতারগণের বীজ রূপক--গোলোক চন্দ্রাবলী।
রীঃ--করুণা--লীলাস্থলীগণের বীজ রূপক--
বৈকুন্ঠে বৃন্দাদেবী।
তিঃ-- জীব অনন্ত প্রকাশ- কারণসমুদ্র অর্থ্যাৎ
বৈকুন্ঠের বাহিরে বিরজা।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
দানলীলার গৌর চন্দ্রিকার ভাবার্থ:---
গৌরাঙ্গ চান্দের মনে
কি ভাব উঠিল।
নদীয়ার মাঝারে গোরা দান সিরজিল।।
কিসের দান চাহে আজু গোরা দ্বিজমণি।
বেত্র দিয়া আগুলিয়া
রাখয়ে তরুণী।।
*অদ্য পতিতপাবন গৌরহরি নদীয়ার মাঝে দান লীলা করিবেন বলিয়া ও
অতীতের ব্রজ ভাবে
ভাবিত হইয়া ব্রজের
লীলা প্রকট করিবেন বলিয়া ব্রজের লীলা নদীয়ায় করিলেন,
কি লীলা?না দান লীলা।দান কি গো?
দান মানে দেওয়া,
তাইনা?তো,কি দিবে? কিন্তু এখানে
কর(শুল্ক)যেমন দান
শব্দের প্রকৃত অর্থ দেওয়া,এই দেওয়া
সম্পর্কে কিছু বলি।
একটি মানব দেহে দুটি নয়ন, দুটি কর্ণ,
দুটি হস্ত, দুটি পদ,একটি মুখ,একটি নাসিকার
দুটি বিবর (গর্ত), প্রভৃতি দ্বারা মানব দেহ গঠিত। ব্রহ্মা সৃষ্টিকর্তা, ভাগবতে বলছে, ব্রহ্মা কেবলমাত্র দেহ সৃষ্টি
করেন,জীব নহে। জীবের জনম জনম
কর্মানুযায়ী ফল প্রাপ্ত হয়,আর সেই
ফল অনুযায়ী নানা
যোনিতে ভ্রমণ করে।
সেই কর্মফল প্রদান করেন অনাদির আদি গোবিন্দ।কারণ তিনি সর্ব কারণম্ কারণ। তিনি
সর্ব ভূতে বিরাজমান
যখন আমরা মাতৃগর্ভে ছিলাম,তখনও শ্রী
ভগবান মাতৃগর্ভ
হইতে আমাদের রক্ষা করেছেন,কারণ মাতৃ
জঠর স্বরূপ কারাগারে চরম অস্থিরতার কারণ মাতৃগর্ভ হইতে কতই না ভগবানকে আহ্বান করিয়া, এবং ভগবানের সাক্ষাৎ প্রাপ্ত হইয়া,
মাতৃজঠর কারাগার
হতে এই পৃথিবীতে
নিয়ে এসেছেন শ্রী কৃষ্ণই। এবং তিনি
বারংবার একটিকথা
বলেছেন,তোরা যদি
ভালো থাকতে চাস,
সুখে থাকতে চাস,
তবে কেবল আমায়
মনে রাখিস,তোকে
আমি পরিপূর্ণ করে
পৃথিবীতে পাঠাইলাম
দুটি নয়ন, কর্ণ, হস্ত,
পদ,একটি মুখ, দিলাম কেন জানিস? এই পূর্ণ
কলেবরে কর্মের সহিত আমার নাম,
গুণগান,সেবা করবি। আমি তোদের কে মায়িক
জগতে পাঠাইলাম
যে তোরা তোদের
অঙ্গীকার ভুলে যাসনি তো।যদি
অঙ্গীকার ভুলে যাস
তাহলে কেবল দুঃখ,
বেদনা, যন্ত্রণা ছাড়া
সুখ কোনদিনও
পাবিনা। আমি কর্ণ
দিয়েছি আন কথা
শ্রবণ করিবার জন্য
নহে, আমি নয়ন দিয়েছি কূ দৃষ্টির জন্য নয়,মুখ দিয়েছি
আমার নাম, গুণগান
করিবার জন্য, হস্ত,দিয়েছি পুষ্প, তুলসী পত্র ইত্যাদি
তুলিয়া আমার সেবা
করিবার জন্য, কর্ণ
দিয়াছি,ভাগবত শ্রবণ করিবার জন্য,
নয়ন দিয়াছি নয়ন
দ্বারা আমার বিগ্রহ
দর্শনের মধ্যে স্বরূপ
দর্শন করা।পদ দিয়েছি, পদব্রজে
তীর্থ দর্শন করিবার
জন্য।যত জীব পৃথিবীতে রয়েছে,
তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ জীব
মানব, এই মানব জনম একমাত্র সফলহবে শ্রী সদ্
গুরুর চরণ আশ্রয়
করিয়া গৌর গোবিন্দের ভজনা করা।অন্যথা সকলই
ব্যর্থ।তাহলে বুঝা গেল আমাদের এই মানব দেহ তাঁরই দেওয়া। অর্থ্যাৎ শ্রী
গোবিন্দের দান। তাই
গৌর চাঁদ আমার
বেত্র দিয়ে ঘিরে রেখে দান চাইছেন।
দেহদান, দেহদান দেহ।
###পরে পাঠাচ্ছি
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
দান দেহ দান দেহ
বলি গোরা ডাকে।
নগরের নাগরি সব
পড়িল বিপাকে।।
কৃষ্ণ অবতারে আমি
সাধিয়াছি দান।
সে ভাব পড়িল মনে
বাসু ঘোষ গান।।
##দান দেহ,দান দেহ,বা দেহদান দেহদান,বলিয়া পতিত পাবন গৌর
সুন্দর দান নেবেন
বলিয়া হস্তে বেত্র
লইয়া নগরের নাগরি
গণকে ঘিরে রেখে আজ দান চাইছেন।
পূর্বেই বলেছি দান
শব্দে দেওয়া,হয়।
কিন্তু আজ গোরা চাঁদ কী দান চাইছেন? এখানে দান শব্দে কর বা
শুল্ক বলা হয়েছে,কেমন কর?
যেমন পৌরসভা বা
পঞ্চায়েত অঞ্চলে
একটি বাড়ী বানাতে
হইলে সরকারকে কর দিতে হয়,সেটি
সরকারের প্রাপ্য,তাইনা? কিন্তু
গোরা চাঁদ কোন কর
চাইছে গো,একটু তত্বে প্রবেশ করি----
আমাদের দেহে আট
টি ঘর ও নয়টি ছিদ্র
রয়েছে,তাইনা? সেই
আটটি ঘর কি গো
বলতে পারবে? মস্তকে এক পদ্ম,২,
দুই ভূরুর মাঝে এক
পদ্ম,৩, কন্ঠে এক পদ্ম,৪,বক্ষে এক পদ্ম,৫,উদরে এক পদ্ম,৬,নাভি তলপেট দেশে এক পদ্ম,আর
৭, ৮,পায়ু ও উপস্থ। এই আটটি পদ্ম কে
বলা হয় আটটি ঘর।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
আর নব দ্বার-দুটি কর্ণ ছিদ্র,নাসিকা ছিদ্র, চক্ষু ছিদ্র, একটি মুখ ছিদ্র,পায়ু
ও উপস্থ একটি করে
ছিদ্র মোট নয়টি ছিদ্র। এই আটটি ঘর
মানে আটটি পদ্ম কে
যোগসাধনার দ্বারা
জাগ্রত করতে হবে।
আর নব দ্বার এই সকল কার্যক্রম দেওয়া?সবই ভগবানের দেওয়া,
তাহলে ভগবান এত
সব দিয়ে আমাদের
পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার জন্য তাঁকে কর দিতে হবে না?
এবারে বলুন,তারপর
পৃথিবীতে যখন এলাম মা,বাবা,পিসি,মাসী,
ইত্যাদি সকলকে পেয়ে,যিনি সমস্ত কিছু দিয়ে পাঠাইলেন,নকল পেয়ে আসল ভুলে গেলাম,তাইনা?
নকলের মেতে রইলাম, তার ফল কি হইল,(চৈতন্য চরিতামৃতে কৃষ্ণদাস
কবিরাজ বলেছেন--
*কৃষ্ণ ভুলি সেই জীব
অনাদি বহির্মুখ।
অতএব মায়াতারে
দেয় সংসার সুখের।।
কভু স্বর্গে উঠায় কভু
নরকে ডুবায়।
দন্ড জনে রাজা যেন
নদীতে চুবায়।।
তাই মহাপ্রভু বললেন, আমি তোমাদের এতকিছু
দিয়ে শ্রেষ্ঠ মানব দেহ
দিয়ে এই ধরাধামে নিয়ে এলাম,তো
আমায় কিছু দিবে না? এই সব কথা শুনে নগরের নাগরি
দের চিত্তে সামান্য
চেতনা হইল,বলিল
মহাপ্রভু- তোমায় দেবার মত আমাদের
আর কিছুই নেই, আমার এই দেহ
চরমভাবে অপবিত্র,
মহাপ্রভু বললেন-
তাহলে মন দাও,
নাগরীগণ বললে
মন তো আরো
অপবিত্র হয়ে গেছে,
কেন জানো-কাম, ক্রোধ,লোভ,মদ,মোহ, মাৎ সহ্য, অহংকার, বুদ্ধি সব
মিলে মিশে যাচ্ছেতাই হয়ে গেছে, মহাপ্রভু বললেন- তাহলে
জীবন দাও,নাগরী
গণ বললে আমাদের
জীবন চরম ভাবে
জঘন্য হয়ে গেছে,
আমাদের এই জীবন টি ঘেন্নায় ভরা,হে পতিত পাবন গৌর হরি তোমার ঐ পবিত্র চরণে, এই
অপবিত্র দেহ,মন, জীবন অর্পণ করা যাবেনা।তখন মহা
প্রভু বললেন,ও নাগরীগণ আমি বুঝতে পারলাম তোমাদের চেতনা
ঘটেছে, যাদের চেতনা ঘটে তাঁরা
কেবল একবার কৃষ্ণ নাম করিলে তাদের
সমস্ত পাপ, অপরাধের অবসান
ঘটে,
একবার কৃষ্ণ নামে
যত পাপ হরে।
জীবের সাধ্য নাই
তত পাপ করে।।
তোমরা মন ও মুখ
এক করিয়া কেবল
একবার কৃষ্ণ নাম করো,তখন নাগরী
গণ বললে,হে পতিত
পাবন গৌর হরি, তুমি আমাদের জীবন নিয়ে কি করবে বল? মহাপ্রভু
বললেন- জানো, আমার এই একমুখে, এবং দুই কানে কৃষ্ণ নাম বলিয়া ও শ্রবণ করিয়া মন শান্তি
হচ্ছে না,তাই তোমা
দের সহস্র সহস্র মুখে
কৃষ্ণ নাম শ্রবণ করিয়া আমি আনন্দ
লাভ করিব। তাই
মহাপ্রভু বললেন,
দেহদান দেহদান,দান
দেহ দান দেহ।
তারপর মহাপ্রভু সকলকে বললেন,
আমি কেবল এই
যুগেই নহে, দ্বাপর যুগেও আমি দানী
হইয়াছিলাম।
*এখানে বিরাম।
কেমন হইল ভাবার্থ
জানাবে, আমার
মহাপ্রভুর দান।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
মা যশোদা নিজ হস্তে পুত্রের জন্য ক্ষীর-নবনীতাদি প্রস্তুত করিবেন বলিয়া প্রস্তুত হইলেন।গোপরাজ নন্দের নবলক্ষ পয়স্বিনী গাভী আছে,
তার মধ্যে কয়েকটি সুগন্ধ-তৃণচারিণী,
বিপুল পয়স্বিনী গাভী আছে,তাদের স্তন হতে পদ্মগন্ধবিশিষ্ট দুগ্ধ ক্ষরিত হয়।যশোমতী মা সন্ধ্যাকালে স্থহস্তে পদ্মগন্ধবিশিষ্ট দুগ্ধবতী গাভীর সমস্ত দুগ্ধ দোহনপূর্বক তাহা ঘনাবর্তিত করিয়া তাহাতে অম্ল সংযোগ করিয়া নূতন মৃৎপাত্রে রেখে দিলেন।এবং মনে করলেন,ইহাতে যে দধি হবে,তাহা
মন্থন করে যে নবনী পাওয়া যাবে,তাহাই তাঁহার পুত্রকে খাওয়াইবেন এবং শ্রীভগবানের ভোগের জন্য রাখবেন।ইহা ছাড়াও মা
যশোমতী, ঘনাবর্তিত দুগ্ধে শর্করা ও কর্পূর সংযুক্ত করে সুগন্ধী ক্ষীরও প্রস্তুত করিলেন এবং নানাবিধ সুখাদ্য ভোজ্য দ্রব্য প্রস্তুত করে রাখলেন।এইরূপে বাৎসল্যপ্রেমময়ী মা যশোদা তাঁর পুত্রকে পরদিন খাওয়াইবেন বলিয়া নানাপ্রকার ব্যবস্থা করে রাখলেন এবং যথাসময়ে কোটিপ্রাণ-
প্রতীম পুত্রকে বক্ষে ধারণ ও মুখে স্তন
অর্পণ করিয়া দুগ্ধফেননিভ কোমল শয্যাযুক্ত মণিময় পর্যাঙ্কে শয়ন করিলেন।সচ্চিদানন্দঘনবিগ্রহ শ্রীগোবিন্দ যশোদার স্তনদুগ্ধ পান করতে করতে যশোদার বক্ষেই নিদ্রিত হয়ে পড়লেন এবং যশোদাও তাঁর চঞ্চল বালককে নিদ্রাগত দেখিয়া তাঁর নিদ্রাবেশে সুস্থির অঙ্গ-
প্রত্যঙ্গাদির মাধুর্য্য দেখতে দেখতে নিদ্রিত হয়ে পড়লেন।যোগসিদ্ধ মহা-
পুরুষগণ নির্বিকল্পক সমাধিযোগে অস্থির চিত্তকে প্রশান্ত করিয়া ও নিত্য-সুস্থির পরমাত্মাকে হৃদয়ে উদ্ভাসিত করিয়া যে পরমানন্দভোগ করেন, মা যশোদা তাঁর অস্থির বালকের অঙ্গে হস্ত মার্জনাদি করে তাঁকে নিদ্রাবেশে সুস্থির করিয়া ও তাহাকে হৃদয়োপরি ধারণ করিয়া তদপেক্ষা কোটি কোটি গুণিত আনন্দ
রসে নিমগ্ন হয়ে নিদ্রিত হলেন।যোগ
সিদ্ধ মহাপুরুষগণ নির্বিকল্পক সমাধি
যোগে পরমাত্মাকে হৃদয়াভ্যন্তরে ধারণ করেন, কিন্তু বাৎসল্য প্রেমবতী
যশোদা এই নরাকৃতি পরমাত্মাকে হৃদয়ের উপরে ধারণ করিয়া তাঁর সুখ
স্পর্শের অনুভূতিকে হৃদয়াভ্যন্তরে বিকশিত করলেন,তাহাতে অন্তর বাহির এক অপ্রাকৃত পরমানন্দরসে পরিপ্লুত হয়ে গেল।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
পরের অংশ যশোদার সেবা ঃ-------
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
তাহাতে তাঁর অন্তর ও বাহির এক অপ্রাকৃত পরমানন্দরসে পরিপ্লুত হয়ে গেল।তিনি তাহাতে বিভোর হইয়া আনন্দনিদ্রায় নিদ্রিত হয়ে পড়লেন।প্রাকৃত জীবগণ, তাহাদের দেহ এবং ইন্দ্রিয়ের অবসাদে তমোগুণের বৃত্তিরূপা নিদ্রার অধিকারগত হয়।
যোগীগণ সমাধিযোগে পরমাত্ম- সাক্ষাৎকার লাভের বিষয় বিস্মৃত হয়ে স্থির হয়ে যান, কিন্তু প্রেমবান ভক্তের সাক্ষাৎ কৃষ্ণের সম্বন্ধ পেয়ে যে নিদ্রাবেশ দেখা যায়,তাহা এইরকম
নহে,তাহা তাঁদের প্রেমেরই বিচিত্র বিলাস।কৃষ্ণ-জননী যশোদা কৃষ্ণকে বক্ষে ধারণ করিয়া কিছুক্ষণ নিদ্রিত
থাকিলেন, কিন্তু রজনীর শেষ- যামার্ধই দধিমন্থনের প্রকৃত সময়। সেইসময়ে দধিমন্থন করিলে অধিক পরিমাণে নবনীত উত্থিত হয় এবং সেই নবনীত অতি সুস্বাদু হয়।সেই সময় যদি যশোদা নিদ্রিত থাকেন,
তাহলে তাঁর পুত্রের ভোজনের জন্য
দধিমন্থন কার্য্যে ব্যাঘাত পড়বে।এই-
জন্য সে সময়ে নিদ্রাই যশোদার সঙ্গত্যাগ করিয়া অন্তর্হিত হল।কৃষ্ণ
সেবার সময় উপস্থিত হলে প্রেমবান
ভক্তগনের সর্ববিধ বিঘ্ন এবং সেবার
প্রতিবন্ধকতার অবসান হয়ে যায় এবং তাঁহারা পরমানন্দে নিজের অধিকারারূপ সেবায় নিযুক্ত হন।
বাৎসল্যপ্রেমবতী যশোমতী শেষ রজনীতে জাগ্রত হইয়া অতি মৃদুভাবে
কৃষ্ণের মুখ হইতে নিজস্তনাগ্র আকর্ষণ করিলেন এবং তাঁকে শয্যায়
শয়ন করাইয়া দুই পার্শে পার্শোপাধান
(পাশ বালিশ) স্থাপন করিয়া তাঁর অঙ্গে মৃদু মৃদু হস্ত চালনা করতে লাগলেন।তারপর কৃষ্ণকে গাঢ় নিদ্রা-
বিষ্ট দেখিয়া নিঃশব্দে পর্য্যঙ্ক হতে নেমে এসে গৃহকোণস্থিত দীপাধারের
উপরিস্থ নির্বাপিত প্রায় মণিদীপের দশা(শলিতা) শলাকা সংযোগে উত্তেজিত করিয়া দীদহস্তেপুত্রের কাছে এসে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে দক্ষিণ হস্তে দীপ ধারণ করিয়া তাহা বাম হস্ততলের তর্জনী এবং অঙ্গুষ্ঠ সংযোগে দীপের অগ্রভাগ হতে
দগ্ধদশার কিয়দাংশ গ্রহণ করিয়া কৃষ্ণের ভ্রুমধ্যে স্পর্শ করাইয়া দিলেন। বৎস! "নির্মঞ্জনং তে যামি" বাপ আমার! তোর বালাই যাক,তোর সর্ববিধ আপদ বিপদ দূরীভূত হোক, তুই পরমসুখে নিদ্রা যা, আমি তোরই ভোজনের জন্য দধিমন্থন করতে চললাম।যশোদা দুই এক পদ অগ্রসর হন আর ফিরে ফিরে পুত্রের মুখপানে দৃষ্টিপাত করেন,এইভাবে গৃহের দ্বার
খুলিয়া বাহিরে আসলেন।(কৃষ্ণের সেবা ও কৃষ্ণপ্রেম কি তাহা মা যশোদা
জীব শিক্ষার লাগি দেখাইলেন)
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
** অদ্য শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে নব লীলা করবেন বলিয়া ব্রজেশ্বরী নন্দরাণী দ্বারা এই ভাব উদঘাটন করলেন। কৃষ্ণের লীলা কখন কি করবেন বোঝা বড়ই কঠিন, বাৎসল্যময়ী মা যশোমতীর অন্তরে প্রবেশ করে পেটিকা বা মঞ্জুষা মিলন লীলাটি করবেন বলিয়া উৎসাহিত করলেন।
পদ(১) প্রাতঃকালে নন্দরাণী,
রতন পেটিকা আনি,
গৃহমাঝে রাখিয়া যতনে।
মণিময় ভূষাগণ, অঙ্গরাগ বিলেপন,
কাঞ্চি দাম কুন্ডল কঙ্কণে।।
কথা= অদ্য হঠাৎ বাৎসল্যময়ী মা যশোদার মনে শ্রীরাধার কথা মনে হওয়ায় প্রাতঃকালে একটি বহুমূল্যবান পেটিকা বা বাক্স এনে গৃহের ভেতরে রাখলেন, এবং সেই পেটিকায় ""মণিময় ভূষাগণ"" মণি নির্মিত ভূষণ, "অঙ্গরাগ বিলেপন" অঙ্গে মাখবার বিভিন্ন প্রসাধন, ও
কাঞ্চি(ধাতু নির্মিত কটিবন্ধ,বা কটিভূষণ, কিংবা মেখলা; কটি-হার
(কটি মানে কোমর) একগুণ হলে তাকে কাঞ্চি বলে, আবার দুইগুণ বা সাতগুণ কিংবা আটগুণ হলে মেখলা বলা হয়, আবার কুড়িগুণ হলে সপ্তকী
বলে, এই সপ্তকী মা দূর্গার কটিতে দেখা যায়।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
কাঞ্চিদাম =কোমরের বিছা বা হার।
কর্ণের কুন্ডল এবং হাতের কঙ্কণ।
বহুমূল্য সমস্ত রত্নালঙ্কার দিয়ে সেই পেটিকা সজ্জিত করছেন, তৎসহ বহুমূল্যবান বসনও সজ্জিত করছেন।
পদ= হরিন্মণি পদ্মরাগ,
রাখি তাহে ভাগ ভাগ,
আর যত বিচিত্র বসন।
আবদ্ধ করতে রাণী,
কাছে আসি নীলমণি,
কহে অতি স্বনম্র বচন।।
কথা= মা যশোমতী যখন সেই পেটিকার মধ্যে অতি সুন্দর করে বসন ও ভূষণ সাজাচ্ছেন, এমন সময়ে মা যশোদার নয়নমণি, নীলমণি
সেই স্থানে উপস্থিত হলেন, অতি ভদ্রতার সহিত মায়ের সঙ্গে কথোপকথন করতে লাগলেন। আর মা নন্দরাণী হরিন্মণি অর্থ্যাৎ সবুজ বর্ণের বহুমূল্য প্রস্তর ( মরকতমণি) পদ্মরাগ অর্থ্যাৎ পদ্মের ন্যায় রাগ বর্ণ যার, পদ্মবর্ণমণি বা পলা থরে থরে সেই মঞ্জুষার মধ্যে সাজাচ্ছেন,সেই সময় কৃষ্ণ এসে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
পদ= কি কাজ কর জননী,
বল তাহা আমি শুনি,
আখুটি করয়ে বারে বারে।
মৃদু হাসি কহে জননী,
খেল গিয়া যাদুমণি,
এ-কথা বলিতে নাই তোরে।।
কথা= কৃষ্ণ, মাকে বার বার জিজ্ঞাসা করছেন কি করছ? তুমি আমায় বল?
অনেক কয়বার বলবার পর মা যশোদা বললেন, বাপ যাদুমণি! এখানে তোমার কাজ নেই, তুমি বাইরে গিয়া খেলা কর। কৃষ্ণ আখুটি
অর্থাৎ বায়না, ধরেছে বল মা আমায় বল তুমি কি করছ? শোন বাপ! এইসব জানবার তোর কোন প্রয়োজন নাই, যা!সখাদের সঙ্গে খেলা কর।
পদ=পুন কহে নীলমণি,
যদি না বল জননী?,
পেটিকা লৈয়া যাব আমি।
ছলে কান্দি শ্যামরায়,
মায়ের বদন চায়,
বাসু কহে আখুটিয়া তুমি।।
কথা= কৃষ্ণ বলছেন, মা আমায় বললে কি হবে বলনা? আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না, অনেকবার বলবার পর যখন মা উত্তর করছেন না, তখন কৃষ্ণ বললেন, মা! তুমি যদি আমায় না বল, তাহলে আমি এই বাক্স নিয়ে চলে যাব। তাতেও কোন উত্তর না পাওয়ায় এবারে ছল করে কাঁদতে লাগলেন, আর মায়ের বদনপানে চেয়ে আছেন, পদকর্তা বাসুদেব ঘোষ বলছেন, মায়ের কাজ মাকে করতে দাও, তুমি খুবই বায়না ধর।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
পদ ২) স্নেহ ভরে রাণী কহে শুন বাছাধন।
রাখিনু পেটিকা মাঝে অঙ্গানুলেপন।।
কথা= বাৎসল্যময়ী মা বলছেন, তুমি যখন এতই বায়না ধরেছ তবে শুন।
এই পেটিকার মধ্যে অঙ্গানুলেপনের জন্য (অঙ্গে মাখবার প্রসাধনী বিশেষ ) চন্দন,কর্পূর,পদ্ম-পরাগ,মৃগ-
নাভি,ও কুমকুম এই সকল দ্রব্য দিয়ে
সাজাবো বলিয়া পেটিকা আনালাম।
পদ= কঙ্কণ কুন্ডল কাঞ্চিবেশ অনুপম।
হরিন্মণি মুক্তা কত বিচিত্র বসন।।
কথা= বাপ শোন! হাতের কঙ্কণ, কর্ণের কুন্ডল,কোমরের বিছা বা হার
সবুজ বর্ণের রত্ন,মুক্তো, হীরা, কাঞ্চন, বৈদুর্য্য মণি, আরো বহু কিছু, এবং পরিধেয়ের জন্য বিচিত্র বসন সব থরে থরে সাজাইলাম।
অঙ্গানুলেপন= অঙ্গে বা দেহে যে সকল প্রসাধনী দিলে অতীব সুন্দর দেখায়।
পদ্মপরাগ= পদ্মের রেণু, পদ্মফুলের ভেতরে যে রেণু থাকে তাহা অতীব পরিমল যুক্ত,মন প্রাণে শান্তি আসে।
এবং আশেপাশের সমস্ত কিছুকে আকর্ষণ করে।
মৃগনাভি= হরিণের নাভি বা কস্তুরী, ইহাও অতীব সুগন্ধ ছড়ায়, মন হরণ করে।
বৈদুর্য্যমণি= কৃষ্ণপীতাভ কৃষ্ণমণি, বা
নীলকান্তমণি, ইহা কেতুগ্রহের প্রীতিজনক বলিয়া সংস্কৃতে এর নাম
"কেতুগ্রহবল্লভ"।
বাপ কৃষ্ণ সব বুঝতে পারলে?
পদ=ইহার ভিতরে যাহা রাখিলা জননী।
হলধরের কি আমার তাহা বল শুনি।।
পৃথক তোদের লাগি কৈলু নিরমাণ।
ইহা হৈতে শ্রেষ্ঠ তাহা শুন বাছাধন।।
কথা= মা! ওমা! এই সম্পুটের মধ্যে যে সকল বস্তু তুমি সাজালে,এই সব কি আমার জন্য? না,আমার অগ্রজ বলরামের জন্য বলো মা?
মা নন্দরাণী বললেন, ওরে আমার জীবনের জীবন! যে পেটিকা তোমার জন্য সাজিয়ে রেখেছি,তা এই পেটিকার তুলনায় অনেক বড়, এবং বহুমূল্য মণি ও তোমার বসন তাতে রেখেছি। আর তোমার মত করেও বলরামের জন্য আর একটি বাক্স সাজিয়ে রেখেছি। কৃষ্ণ বললেন, এই পেটিকা যদি আমার বা দাদার জন্য না সাজিয়ে থাক তবে তুমি কার জন্য
সাজিয়েছ? মা!ওমা! কে আছে গো তোমার এত স্নেহ ভাজন?
পদ= মোর মম স্নেহ পাত্র গোকুল মাঝারে।
হলধর বিনে কেবা কহ মাতা মোরে।।
রূপে গুণে অনুপমা ভুবনে আগলি।
দুখিনী কহয়ে মোর পরাণ পুতলী।।
কথা= চতুরের শিরোমণি কৃষ্ণ বলছেন, মা! বলত আমার চেয়ে আর এই গোকুলে তোমার স্নেহের পাত্র কে আছে? হ্যাঁ মনে পড়েছে, আমার দাদা বলরাম, আর তো আমি কাউকে দেখছি না? ব্রজেশ্বরী যশোমতী বললেন, ওরে আমার হৃদয়ের স্পন্দন! আরেকজন আমার স্নেহ ভাজন আছে বাপ, রূপে,গুণে অতুলনীয়া,এই ভুবনের আগলি অর্থ্যাৎ শ্রেষ্ঠা, পদকর্তা দুখিনী বলছেন ওগো সেই তো মোর পরাণের
পরাণ, সেই আমার সব।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
পদ৩) হিয়ার মানিক ব্রজের নিধি।
তপফলে তোমায় দিয়াছে বিধি।।
আমার পরাণ রাখিতে যেমন।
পেয়েছিরে তোরে ও নীলরতন।।
কথা= মা নন্দরাণী বলছেন, আমি বহু তপস্যার ফলে তোকে পেয়েছি আমার হিয়ার মানিক, তোকে পেয়ে আমি মহানন্দে আছি বাপ।
পদ=তেমতি জীবন রক্ষৌষধি।
তাপিত নয়নে কর্পূরবর্তি।।
সরলা সুশীলা সৌন্দর্যসার।
গুণগণ ধন্য আশ্রয় যার।।
রমণী রতন রাধিকা নাম।
শুনিয়া শিহরি উঠিল শ্যাম।।
পুলকিত তনু বসনে ঢাকে।
(বলে) কাহার তনয়া কোথায় থাকে।।
কীর্তিদার জঠর অতুল খনি।
মনোহর কহে উপজে মণি।।
কথা= হে ব্রজপুর অলঙ্কার!হে পুত্র!
আমি যেমন তোমায় বহু পূর্ণফলে পেয়েছি, এইরকম আমার প্রাণরক্ষার ঔষধি স্বরূপ এক কন্যা এই ব্রজে আছে, সে আমার তাপিত নয়নের শীতল কর্পূরবর্তি। চন্দ্রকিরণ যেমন সদাই শীতল কিরণ দেয়,সেই কন্যা আমার তাপিত নয়নে কর্পূর অর্থ্যাৎ শীতল পাত্রী।তাকেই বসন-ভূষণ দেবার জন্য আমি একটি পেটিকা প্রস্তুত করেছি। হে বাপ! সৌন্দর্য,সুশীতলতা,সরলতা, বিনয়িতা
প্রভৃতি যে সকল রমণীগণের গুণ সৃষ্টি করেছেন, সেই গুণগণ তাকে আশ্রয় করে, তাকেই মহৎ বলা হয়, কিন্তু এই কন্যাকে আশ্রয় করে গুণগণ স্বয়ং মহৎ হয়েছে, ইহাই আশ্চর্য!! সেই কন্যার নাম "শ্রীরাধিকা" তাতে আমার স্বাভাবিক স্নেহ।
পদ৪) বৃষভানু তপবলে,সে রত্ন ব্রজমন্ডলে,তার প্রতি এল মমপুরে।
নিজ কার্য্য সাধিবারে,আছে রাজা দরবারে,দাসীগণ জানাইল মোরে।।
কথা= বৃষভানু তপবলে, বৃষভানু পূর্ব জন্মে কে ছিলেন? তিনি পূর্ব জন্মে দিবাকর ছিলেন। সেই দিবাকরের মনে বাসনা হল, নারায়ণ পত্নী কমলাকে কন্যারূপে পাবার জন্য তিনি কঠোর তপস্যা করেছিলেন।
*দিব্য সহস্রেক বর্ষ সেবে নারায়ণ।
উর্ধপদ হেঁট শির হইল তপন।।
বায়ু আদি গতি যত করিয়া বধির।
দেখিয়া দেবগণ হইল অধীর।।
কথা= পূর্ব জনমের বৃষভানুর অর্থ্যাৎ
দিবাকরের তপস্যা দেখে সকল দেবতাগণ অত্যন্ত ভয় পেয়ে সকল দেবতাগণ ক্ষীরোদ সাগর কুলে নারায়ণের উদ্দেশ্যে তপস্যা করতে বসলেন।
*ক্ষীরোদের কূলে তপ করে সর্বজন।
সদয় হৈয়া তবে কন নারায়ণ।।
কি কারণে তোমরা করহ এত স্তুতি।
কৃতাঞ্জলী করি বলে শুন রমাপতি।।
কথা= দেবতাগণের তপস্যায় নারায়ণ তুষ্ট হয়ে দেখা দিলে,দেবগণ বললেন,
প্রভু!দিবাকর যে ভাবে তপস্যা শুরু করলেন, তা দেখে মনে হল যে আমাদের ইন্দ্রত্ব কেড়ে নিবে,এই ভয়ে মোরা আপনার শরণাপন্ন হয়েছি। সব কথা শুনে রমাপতি বললেন,তোমাদের কোন ভয় নেই,
তোমরা নিজ পুরে গমন কর। এবারে
লক্ষ্মীপতি গরুড়ে আরোহণ করে যেখানে দিবাকর তপস্যায় রত ছিলেন সেখানে গেলেন। বললেন তোমার তপস্যায় তুষ্ট হয়েছি বর মাগো।
* নারায়ণকে সম্মুখে দেখে দিবাকর প্রণিপাত ও বহু স্তব স্তুতি করলেন, আর জোড়হস্তে বললেন----
*যদি জগদীশ মোরে হৈলা কৃপাবান।
মাগিব দুষ্কর বর কর অবধান।।
ত্রিজগত যার বশ সেই বশ যার।
বর দেহ সেই হবে তনয়া আমার।।
অর্থ্যাৎ= দিবাকর বললেন,হে প্রভু! তুমি যদি মোর প্রতি কৃপাবান হলে তবে, ত্রিজগতের যিনি অধিশ্বর,ত্রিজগৎ যাঁর বশে আছে, অর্থ্যাৎ যিনি অনন্তকোটি ব্রহ্মান্ডের অধিপতি, অনাদির আদি গোবিন্দ, কিন্তু সেই গোবিন্দ যাঁর বশ, অর্থ্যাৎ যাঁদের প্রেমে ঋণী হয়ে গোলোকেও তিনি নাকি তাঁর চরণ ধরে কতনা অনুনয় বিনয় করেছিলেন,সেই গোবিন্দ জপের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শ্রীরাধিকাকে তনয়ারূপে আমায় বরদান কর।এইভাবে পর জনমে বৃষভানু হয়ে শ্রীরাধাকে পুত্রীরূপে পেয়েছিলেন।(বৃষভানু তপবলে)।
৩নং পদের এই কলির ব্যাখ্যা ছাড়া পড়েছে লিখিব।
রমণী রতন রাধিকা নাম।
শুনিয়া শিহরি উঠিল শ্যাম।।
পুলকিত তনু বসনে ঢাকে।
(বলে)কাহার তনয়া কোথায় থাকে।।
কীর্তিদার জঠর অতুল খনি।
মনোহর কহে উপজে মণি।।
ব্যাখ্যা দিব
কথা= শ্রীকৃষ্ণ জননী মুখে শ্রীরাধার গুণ ও নাম শুনে অত্যন্ত পুলকিত হয়ে নিজের দেহের বসন দিয়ে নিজেকে আচ্ছাদন করলেন, ঢেকে নিলেন, কেন? রাধা নাম শ্রবণ করে রাধার সঙ্গে মিলনের আশায়, আনন্দের সঙ্গে পুন মাকে জিজ্ঞাসা করলেন, মা!সে কন্যা কে? কার কন্যা? কোথায় আছে? কি জন্যই বা তোমার সেই কন্যার প্রতি এত স্নেহ? মা!ওমা! সব কথা আমায় বলো? মাগো আমার শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে। তখন বাৎসল্যময়ী মা যশোমতী, কৃষ্ণের ইচ্ছে পূরণের জন্য এক এক করে সব কথা বলতে শুরু করলেন। কৃষ্ণকে বললেন,ওরে মোর বাপ! তবে শোন! আমার ভগিনী (বোন) কীর্তিদার গর্ভ হতে অনর্ঘ (অমূল্য) ও অতুল (অতুলনীয়) এই কন্যারত্ন জনম নিয়ে প্রভার (উজ্বল)তরঙ্গ দ্বারা
বৃষভানুকে উজ্জ্বল করেছে।অর্থ্যাৎ ভানুকান্তিদ্বারা ( যেমন সূর্য্যের কিরণ জগত আলো করে অন্ধকার দূর করে) অন্য রত্ন উজ্জ্বল হয়, আর এই কন্যারত্নের কান্তিদ্বারা বৃষভানু নামে গোপরাজ উজ্জ্বল হয়েছেন। এবং এই কন্যা যেন বৃষভানুর মূর্তিমৎ তপঃ, সে পতি গৃহে আছে, সম্প্রতি (বর্তমান) তার পতি,আমাদের ঘরে এসেছে,হয়ত অন্য কোন কর্মের জন্য সে (আয়ান) তোর পিতার কাছে গেছে। যখন অন্তঃপুরে আসবে তখনই তাকে প্রীতিসহকারে বলব,ভাই অভিমন্যু! তুমি এই পেটিকা স্বয়ং বহন করে নিজ গৃহে নিয়ে গিয়ে রাধাকে অর্পণ করবে।
*কীর্তিদার জঠর অতুল খনি।
মনোহর কহে উপজে মণি।।
পদ৪)প্রণতি করিতে মোরে,
আসিবেক অন্তঃপুরে,
পেটিকা অর্পিব তার করে।
মণীন্দ্র ভূষণ সার,
অঙ্গরাগ কত আর,
দিতে রাখিয়াছি ভানুজারে।।
মণীন্দ্রভূষণ= মণি নির্মিত ভূষণ ও শ্রীকৃষ্ণ। ভানুজারে=বৃষভানু নন্দিনী।
************&************&&&***
পদ=হেনকালে শুভ কথা,
লবঙ্গ বল্লিকা তথা,
প্রণতি করিয়া কহে বাণী।
রঙ্গণ আর টঙ্কণ,
স্বর্ণকার দুইজন,
তব ঘরে এলো গো জননী।।
কথা= এমন সময় লবঙ্গবল্লী নামে এক দাসী যশোমতীর কাছে এসে বললেন মা!আপনি যাদের ডেকে ছিলেন,সেই রঙ্গণ ও টঙ্কণ নামক স্বর্ণকার যুগল এসে উপস্থিত হয়েছে।
পদ=গৃহে নিতে ধনিষ্ঠারে,
আদেশ করি বাহিরে,
যশোমতী ত্বরা চলি গেল।
সুবলাদি সখাগণ,
হেন কালে আগমন,
বাসু কহে আনন্দ বাঢ়িল।।
কথা= স্বর্ণকার যুগলের কথা শুনে মা যশোমতী,ধনিষ্ঠাকে বললেন, ওরে ধনিষ্ঠে! আমি কৃষ্ণের কিরীটি,কুন্ডল,
পদাঙ্গদ প্রভৃতি অলঙ্কার প্রভৃতি তৈরী করতে দিবার জন্য স্বর্ণকারের কাছে বাইরে চললাম। তুই এই পেটিকা দেখ। এই বলিয়া নন্দরাণী গমন করলেন। এমন সময়ে সুবলাদি সখাগণ পরমানন্দে কৃষ্ণের কাছে আগমন করলেন। কৃষ্ণ পেটিকা সম্বন্ধে তাঁদের সঙ্গে মন্ত্রণা করে রহঃস্থানে(গুপ্তস্থানে)পেটিকা নিয়ে গিয়ে পেটিকার ভেতর থেকে সমস্ত বসন ও ভূষণ বাহির করে ধনিষ্ঠার হাতে দিয়ে বললেন, মা যেন জানতে না পারেন!
পদ৫) সখাসনে করিয়া যুকতি।
হাসি কহে ধনিষ্ঠার প্রতি।।
ভূষণাদি ধনিরে দিও।
যা পেখিলে গোপনে রাখিও।।
কথা= চতুরের শিরোমণি কৃষ্ণ সখাদের সঙ্গে যুক্তি করে, ধনিষ্ঠাকে বললেন, তুমি এই সকল বসন ও ভূষণ মোর রাইধনিকে দিয়ে এসো।আর এইসব কথা যেন কেউ জানতে না পারে গোপনে রাখিও। এই কথাগুলি বলে কৃষ্ণ সেই পেটিকার ভিতরে প্রবেশ করলেন আর সখাগণ
খিল দিলেন।
পদ৫=মঞ্জুষার ঘুচাইল ডালা।
বটু কহে অঙ্গরাগ কালা।।
তার মধ্যে আপনি লুকাল।
ঢাকি রাখি সখা চলি গেল।।
অভিমুন্যে লইয়া সংহতি।
পুন তথা এলো যশোমতী।।
তারে কহে ইহার ভিতরে।
মণীন্দ্র ভূষণ স্তরে স্তরে।।
ভানুজারে দিতে ইহা রাখি।
মনে হৈল আজু তোমা দেখি।।
গৃহে লৈয়া যাইবে যতনে।
সমর্পিবে রাধিকার স্থানে।।
মম আশীর্বাদ তার প্রতি।
অঙ্গে ধরি হও সিংহারবতী।।
চিরজীবি পূর্ণ অভিলাষ।
শুনি হরষিত কৃষ্ণদাস।।
কথা= ক্ষণকাল পরে মা যশোমতী এলেন, ঠিক সেই সময়েই আয়ান এসে উপস্থিত হলেন। এবং যশোমতীকে প্রণাম করলেন। যশোদা আয়ানকে বললেন,তোমার গৃহিণীর জন্য এই পেটিকা সাজিয়েছি, এই বাক্সের ভিতরে অনর্ঘমণি(অমূল্যরত্ন)
কাঞ্চনমালা (স্বর্ণের বিভিন্ন ধরণের হার) প্রভৃতি অলঙ্কার ও নানাবিধ বসন এবং কস্তুরীকা অনুলেপন স্তরে স্তরে সাজানো আছে, আমি অন্যের প্রতি ভরসা করতে পারছি না, তাই তুমি স্বয়ং নিয়ে গিয়ে নিভৃতে রাধিকাকে অর্পণ করবে। তৎসহ আমার আশীর্বাদ জানাবে।আরো বলবে, এই অত্যুজ্জ্বল অনুলেপন ও বসন দ্বারা শৃঙ্গারবতী হও, সৌভাগ্য লাভ করে চির জীবিতা হও।
পদ৬= প্রণমিয়ে পদরজ লইয়া আয়ান।
শিরে ধরি বলে ওগো আমি ভাগ্যবান।।
মহাভার বিশ্বম্ভরে লই শিরোপরে।
স্বেদ কম্প পুলকাদি নেত্রে জলঝরে।।
মনে ভাবে রত্নমণি ইহার ভিতরে।
মহাধনী হব আমি এ ব্রজ মাঝারে।।
কথা= আয়ান যশোমতীকে প্রণাম করে চরণধূলি মস্তকে নিয়ে বললেন, আমি বড়ই ভাগ্যবান,আপনার আজ্ঞা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।
এই বলিয়াই আয়ান পেটিকা মাথায় ধারণ করলেন, ধারণ করা মাত্র তাঁর অন্তরে চরম প্রেমের ভাব উদিত হল,
হঠাৎ তাঁর অন্তরে অষ্ট সাত্ত্বিক ভাব দেখা গেল, ( সৎ সঙ্গে স্থর্গবাস আর অসৎ সঙ্গে নরকবাস) শ্রীগোবিন্দের পরশ পেয়ে হৃদয় ভাবে ভরে উঠল এবং দুই নয়নের জলে বক্ষ সিক্ত হল। আয়ান পেটিকা বহন করে চলেছেন আর ভিতরে শ্রীকৃষ্ণ মৃদু মৃদু হাসতে লাগলেন। আর সেই নির্বুদ্ধি গোপ আয়ান মনে মনে বলতে লাগলেন, আমি আজ ধন্য হলাম, কৃতার্থ হলাম, কেন? না জানি পেটিকার ভিতরে কত শত সোনার
অলঙ্কার আছে, এক কথায় দুর্লভ রাশি আছে, এই সব দিয়ে কোটি কোটি গো ক্রয় করব আর গোবর্ধন মল্লের মত আমার ঘরে লক্ষ্মী আলো করে থাকবেন। এই রকম ভাবতে ভাবতে
পদ= ভীত চকিত নেত্রে চারিদিকে চায়।
দ্রুতগতি নিক্ষেপিয়ে নিজপুরে যায়।।
কথা= গোষ্ঠাধীশপুর( নন্দালয়) হতে
আয়ান পেটিকা নিয়ে চলে আসছেন,
আর ভাবছেন এত মূল্যবান দ্রব্য এতে আছে, পথে কিছু না হয় বলিয়া অতি ভয়ে ভয়ে চারিদিকে দেখছেন আর নিজ পুরের দিকে এগিয়ে চলেছেন।
কিন্তু আশ্চর্য! নন্দালয় হতে যাবট পর্যন্ত প্রায় এসে গেছেন, কিন্তু সেই পেটিকার ভার তাঁর কিছুই অনুভব হয় নাই। হবার কথাও নয়, যেহেতু পূর্ণানন্দ ঘন বস্তু বহন করে কি কারও কোন শ্রম অনুভব হয়?
পথ চলতে চলতে নিজপুরে এসে উপস্থিত হয়ে-----
পদ= উচ্চ নাদে মায়ে ডাকি কহে বারে বার।
ধরিতে না পারি মাতা শিরে মহাভার।।
কথা= আয়ান গৃহে প্রবেশ নিজ জননী জটিলাকে বললেন, মা, মা অদ্য শুভক্ষণে ঘর হতে বাহির হয়ে
ছিলাম,ভাগ্য বশত বহু অমূল্য বস্তু লাভ হয়েছে।দেখ এই পেটিকার মধ্যে
বহু মূল্যবান বস্তু আছে, ব্রজেশ্বরী যশোমতী তোমার স্নুষার ( পুত্রবধুর)
প্রতি অপ্রতীম (অতুলনীয়) প্রসাদ বিতরণ করেছেন,এই পেটিকা স্বয়ং নন্দরাণীই প্রদান করে তোমার পুত্রবধূকে মৌখিক একটি সমাচার জানিয়েছেন।
পদ= মায়ে ঝিয়ে ধরাধরি করি নামাইল।
নিরখয়ে লোচনের আনন্দ বাঢ়িল।।
কথা= আয়ানের কথা শুনে পরম আনন্দ লাভ করলেন জটিলা,মনে মনে বলতে লাগলেন,আজ ভাগ্যক্রমে বড়ই ভাল হ'ল। যেহেতু এই উপহার লাভ করে বধু, আমার পুত্রের প্রতি সুপ্রসন্না হবে, পরে প্রকাশ্যে হাসতে হাসতে বললেন, ওরে পুত্র! এই অতিভার পেটিকা এখানেই আপাতত রাখ।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
****গৌরচন্দ্রিকা পেটিকা মিলন****
সঙরি পূরব লীলা মোর গোরারায়।
ভাব ভরে পুলকিত প্রেমে ভেসে যায়।।
শ্রীবাস অঙ্গনে এক পেটিকি নেহারে।
কহে মোর প্রাণনাথ ইহার ভিতরে।।
স্বরূপের মুখ চাহি কহে বারে বার।
উদঘাটহ হেরি প্রাণ জুড়াই আমার।।
মণীন্দ্র ভূষণ অঙ্গে ধরি একবার।
বাসু কহে কৃপা বিনে কে বুঝিবে আর।।
পেটিকা হবে
একটি পূর্ণ পর্যায়
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*অথ চিত্রপট দর্শন*
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*কৃষ্ণের মূরতী চিত্রপটেতে লিখিয়া*
*দেখাইল যবে সখী বিশাখা আনিয়া*
*দেখিয়া মূর্ছিত রাই হৃদয়ে ধরিয়া*
*হাহাকার করি কান্দি ক্ষিতি লোটাইয়া*
( *শ্রীশ্রীভক্তমাল)*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*চিত্রপট লিখন ও দর্শন গৌরচন্দ্রিকা*
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*কি মধুর মধুর,বয়স নব কৈশোর*
*মূরতি জগমোহনহারী*
*কি দিয়া কেমনে বিধি,নিরমল গোরা তনু*
*আকুল কূলবতী নারী*
*বিফল উদয় করে,গগনে যে শশধরে*
*গোরারূপে আলা তিনলোকে*
*তাহে এক অপরূপ,যেবা দেখে চাঁদমুখ*
*মনের আঁধার নাহি থাকে*
*চল চর প্রেমমণি,কিয়ে থির দামিনী*
*ঐছন বরণক আভা*
*তাহে নাগরালী বেশ,ভুলাইল সব দেশ*
*মদন মনোহর শোভা*
*যতি সতী মতিহত,শেষ যেন কূলব্রত*
*আইল ভূবন-চিত-চোর*
*হরেকৃষ্ণ দাসে কয়,গোরা না ভজিলে নয়*
*এ ঘর করণে দেহ ভোর*
&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&
*শ্যাম রূপ হেরি,তুলি করে ধরি*
*বিশাখা চতুরা সখী*
*অনুরাগে মন, হেরিয়া মগন*
*পটের উপরে লিখি*
*প্রথমে চরণ,করিয়া স্থাপন*
*রাখিয়া বিনোদ ছান্দে*
*বিনোদ কটিতে, বিনোদ ধটি*
*বিনোদ করিয়া বান্ধে*
*সুপট্ট বসন, করি কোচায়ন*
*পরাওল এবে তায়*
*উড়নি দিলেক, বিনোদ কটিতে*
*সে না শোভার বালাই যায়*
*বাহু দুটি লিখি,ছল ছল আঁখি*
*মুরলী বাজায় করে*
*নিরখি বদন, হরষিত মন*
*তিলক নাসিকা 'পরে*
*বামে হেলাইয়া,চূড়াটি বাঁধিয়া*
*নিরখে বিশাখা সখি*
*অনুরাগে মন,সদাই মগন*
*দ্বিজ চন্ডীদাস সাখী*
#######################
*দেখ এক মূরতী মোহন*
*অনেক যতন করি,লিখিয়া এনেছি গো*
*এক মনে কর দরশন*
*কানাড়া কুসুম জিনি,দলিত আঞ্জন গো*
*নব জলধর যিনি ছটা*
*কটিতে কিঙ্কিণী,পীতাম্বর পরিধান গো*
*ভালে শোভে চন্দনের ফোঁটা*
*চাঁচর চিকুর,চূড়ে শিখিপুচ্ছ উড়ে গো*
*গলে দোলে বিনোদ বনমালা*
*বিম্বাধরে বংশী লয়ে,কত তান ধরে গো*
*চরণে নূপুর করে আলা*
*আর কত ভঙ্গি তার,লখিতে নারিনু গো*
*লিখিব কতেক পরকার*
*গোবিন্দ দাস কহে,ঐছে উচিত গো*
*করিতে গলার মণিহার*
&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&
চিত্রপট লিখন ও দর্শন
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*যে দেখেছি যমুনার ঘাটে*
*সেই দেখি এই চিত্রপটে*
*যার নাম কহিল বিশাখা*
*সেই এই পটে আছে আঁকা*
*যাহার মুরলী ধ্বনি শুনি*
*সেই বটে এ রসিক মণি*
*ভাটমুখে যার গুণগাঁথা*
*দূতী মুখে শুনি যার কথা*
*এই মোর হরিয়াছে মন*
*ইহা বিনে কেহ নাহি আন*
*এত কহি মূরতী পড়য়ে*
*সখী গণ ধরিয়া তোলয়ে*
*পুন কহে পাইয়া চেতনে*
*কি দেখিলুঁ দেখাও সে জনে*
*সখীগণ করয়ে আশ্বাস*
*ভণে ঘনশ্যামর দাস*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*এমন মূরতি কেমন করি*
*লিখিলে বিশাখা ধৈরজ ধরি*
*কিবা অপরূপ আ- মরি মরি*
*আনহ হিয়ার মাঝারে ধরি*
*দরশে লইল পরাণ হরি*
*পরশে কি হয় বলিতে নারি*
*দেখি দেখি পট আনহ কাছে*
*এমন পুরুষ কি জগতে আছে*
*দেখিতে দেখিতে পটের লিখা*
*পরাণ হরিল বিষম ডাকা*
*মনোহর কহে লিখিল যে*
*পরাণ নিছনি তাহারে দে*
(তিন নম্বর পদ পরিবেশন হবে)
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
নবোঢ়া পূর্বরাগ (পুতুল খেলা) গৌর চন্দ্রিকা।
আরে মোর আরে মোর গোরা দ্বিজরাজ।
একলি বিহরয়ে নবদ্বীপ মাঝ।।
পুতুল লৈয়া গোরা নিরজনে বসি।
আনন্দে করয়ে খেলা মোর গোরাশশী।।
সেইকালে ঈশ্বরপুরী আসি উপজিল।
আপনি হইয়া গুরু নাম কর্ণে দিল।।
আসিয়া গৌরাঙ্গ অঙ্গে কৃষ্ণনাম লিখি।
নাম দেখি ভক্তগণের ছলছল আঁখি।।
রাধা ভাবে বিভাবিত ভাবনিধি গোরা।
বাসুকহে ইহ ভাব বিধি অগোচরা।।
বৃন্দাবন লীলা
আজু শুভদিনে বীরাবৃন্দা সঙ্গে পৌণমাসী।
অপরূপ শোভা দেখে বৃন্দাবনে আসি।।
পৌণমাসী কহে বীরাবৃন্দা শুনহ বচন।
মনের গোপন কথা কহিব এখন।।
শ্রীনন্দনন্দন কৃষ্ণ নায়ক শিরোমণি।
নায়িকার শিরোমণি ভানুর নন্দিনী।।
এই দুঁহু জনের আজ করাইব মিলন।
শুনি বীরাবৃন্দার আজি আনন্দিত মন।।
এত বলি পৌণমাসী গমন করিল।
এ যদুনন্দনের মনে আনন্দ বাড়িল।।
2- ভানুর নন্দিনী, বসি একাকিনী,
পুতুল লইয়া খেলে।
আপন মতির, মালাটি লইয়া,
পরায় তাহার গলে।।
করিয়া যতন, অঙ্গ আভরণ,
পরায় তাহার অঙ্গে।
বুকেতে ধরিয়া, কহয়ে কান্দিয়া
কথা কও মোর সঙ্গে।।
সোনার পুতুল, যদি কথা বল
খেতে দেব তোমায় আমি।
ক্ষুধার সময়, নট হয়ে যায় (নট-নষ্ট)
ইহা কি জানো না তুমি।।
এতেক বলিয়া, পুতুল লইয়া
আপনি করয়ে খেলা।
বাশুলী আদেশে, কহে চন্ডীদাসে
আপনি হইল ভোলা।।
3- কি কর কি কর বলি সখীগণ এলো
কেঁদে কেঁদে সখীর কাছে বলিতে লাগিল।।
অঙ্গের যতেক ভূষণ পুতুলেরে দিলাম।
তবু তারে একটি কথা বলাতে নারিলাম।।
এত বলি পুতুল লয়ে সখী সঙ্গে করি।
কাঁদিয়া করয়ে খেলা ভানুর ঝিয়ারী।।
সখী সঙ্গে করি, ভানুর ঝিয়ারী,
যেখানে বসিয়া খেলে।
দেবী পৌণমাসী,আচম্বিতে আসি,
রাধারে করিলা কোলে।।
সোনার নাতিনী, পরাণ নন্দিনী,
কহি গো তোমার কাছে।
নব নীরোদ কান্তি, একটি পুতুল,
গোকুল নগরে আছে।।
তাই কহি গো রূপের বাণী।
অমিয় বচন, করহ শ্রবণ,
করহ পিরীতি খানি।।
তোমার যেমন ও রূপ যৌবন,
তেমনি নাগর রাজ।
বিধি সংযোগে, মিলন হইবে,
বুঝিয়া করহ কাজ।।
কহে নরহরি, শুন গো সুন্দরী,
তোমারে কহি যে হিত।
এবে যৌবন, সুখে গোঙাইবে,
শ্যামে কর যদি প্রীত।।
4- কৃষ্ণনাম দুই আখর, প্রেমের অঙ্কুর,
রচিলা রাইয়ের কানে।
বৈসহ সুন্দরী, আশীর্বাদ করি,
ভাবিয়া দেখহ মনে।।
চরণে ধরিয়া, কহয়ে রাধিকা,
কখন আসিবে তুমি।
তোমার লাগিয়া, পথ নিরখিয়া,
বসিয়া রহিলাম আমি।।
বিনোদিনী বাণী, শুনি কাত্যায়নী,
মুচকি মুচকি হাসে।
রাধার অঙ্গের, সৌরভ লইয়া,
চলিলা কৃষ্ণের পাশে।।
হাসিতে হাসিতে, যান তাঁর কাছে,
পৌণমাসী ঠাকুরাণী।
সখাগণ সনে, যেখানে বিপিনে,
বসিয়া নাগর মণি।।
দেখি সখাগণ, বন্দিল চরণ,
কোথা হতে আগমনে।
কহে ঠাকুরাণী, পাঠাইল রাণী,
বিষাদ ভাবিয়া মনে।
গন্ধর্ব কিন্নর, ফিরি নিরন্তর,
বনে বনে ঠাকুরাণী।
আপনি খাইয়ে, বিরলে বসিয়ে,
শিখাও সুমন্ত্র খানি।।
করেতে ধরিয়া, চলিল লইয়া,
যেখানে বিরল স্থান।
কহে ভগবতী, শুন শুন নিধি,
মন্ত্র শুন মঝু প্রাণ।।
নাগর হইয়া, গোধন লইয়া,
বনে বনে ফের তুমি।
কহে নরহরি, শুনগো মুরারী,
কহিতে আইলাম আমি।।
বাকী দুটো পদ পরে পাঠাইব।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
পরবর্তী দুইখানি পদ-------------------
শোন গো রসিক মণি,
তোমারে কহিয়ে আমি,
নিরন্তর ফের বনে বনে।
কেন থাক মনো দুঃখে,
থাকিবে পরম সুখে,
পিরীতি করহ কারো সনে।।
বৃষভানু নন্দিনী,
রমণী শিরোমণি,
অপরূপ রূপ তাই।
রূপে গুণে কোটিশশী,
বদনে সদাই হাসি,
এ তিন ভূবনে নাই।।
সঙ্গের সঙ্গিনী যারা,
সদাই চাঁদের পারা, (পারা- মত)
সবাকার নতূন যৌবন।
তুমিতো কালিয়া চাঁদ,
পাতিহ পিরীতি ফাঁদ,
উদয় করহ বৃন্দাবন।।
গোপীগণ বশ করি,
শিরোমণি সঙ্গে করি,
রসলীলা কর নানারঙ্গে।
মিটিবে মনের আশ,
সদা থাকিবে উল্লাস,
নিরন্তর থাকিবে সঙ্গে।।
নরহরি দাসের বাণী,
শুন শুন ঠাকুরাণী,
জগতে এমন আর নাই।
রাধাকৃষ্ণ দুই রস,
তাহে হইল পরকাশ,
তাঁহার চরণ যেন পাই।।
6-- শুনিয়া নাগর, হিয়া জ্বর জ্বর,
মরমে লাগয়ে ব্যথা।
সখাগণ ভয়ে, নিঃশব্দ হয়ে,
কহয়ে মনের কথা।।
শুন ঠাকুরাণী, সে যে রাজনন্দিনী,
আমি থাকি বনে বনে।
তাহাতে আমাতে, প্রেম পিরীতি,
মিলন হইবে কেনে।।
কহে ভগবতী, শুন গুণনিধি,
সে তেমন মেয়ে নই।
সখী সঙ্গে করি, ফুল তুলি ফিরি,
এই পথ দিয়ে যায়।।
তোমার যখন পিরীতি হবে।
যেখানে যাইবে, আশা যে মিটিবে,
সেখানে তাহাকে পাবে।।
শিরোমণির দূতি, যেখানে যাইবে,
তুয়া দূতী সেথা পাবে।
নরহরি দাস, হৃদয় উল্লাস ,
বিভোর হইল তবে।।
জয় জয় নিতাই গৌর হরিবল।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
সৎসঙ্গের কথন ঃ--------------------
ততো দুঃসঙ্গমুৎসৃজ্য সৎসু সজ্জেত বুদ্ধিমান।
সন্ত এতস্য ছিন্দন্তি মনোব্যাসঙ্গমুক্তিভিঃ।।
** ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উদ্ধবকে বলছেন--
ততঃ=সেইহেতু, বুদ্ধিমান=বুদ্ধিমান ব্যক্তি, দুঃসঙ্গং= অসৎসঙ্গ, উৎসৃজ্যগ
পরিত্যাগ করিয়া, সৎসু= সৎসঙ্গে,
সজ্জেত= আসক্ত হবেন, সন্তঃ= সৎ
ব্যক্তিগণ, এতস্য= ইহারাই, মনোব্যাসঙ্গং= মনের বিশেষ আসক্তি,
উক্তিভিঃ= ভক্তি বিষয়ক উপদেশ বাক্য দ্বারা, ছিন্দন্তি= ছেদন করেন।
********************************
অর্থ্যাৎ== সেই হেতু বুদ্ধিমান ব্যক্তি অসৎসঙ্গ ত্যাগ করিয়া সৎসঙ্গে আসক্ত হবেন। সৎব্যক্তিগণই উপদেশ বাক্য দ্বারা ওই ব্যক্তির মনের বিশেষ আসক্তি (সংসারাসক্তি)ছেদন করেন।
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
অসৎসঙ্গই জীবকে ভগবদবিমুখ করে। অসৎ-প্রাকৃত বস্তুর সঙ্গে অনাদি কাল হতে জীবের সম্বন্ধ হেতু জীবের পক্ষে কৃষ্ণ-উন্মুখতা বড়ই কঠিন। বাকী অংশ পরে।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
কারণ ভগবানের মায়াশক্তি থেকে জীবের মুক্তি পাওয়া দুঃসাধ্য। একমাত্র ভগবানের কৃপাতেই জীব মায়ামুক্ত হতে পারে। ভগবান গীতায়
(৭|১৪) বলেছেন-- " দৈবী হ্যেষা গুণময়ী মম মায়া দুরত্যয়া। মামেব যে
প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তে।।
ভগবৎ কৃপা ব্যতীত জীব মায়ার হাত থেকে অর্থ্যাৎ দুঃসঙ্গ থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারে না। তবে ভগবৎকৃপা আবার ভক্তকৃপা সাপেক্ষ। তাই ভগবৎকৃপার জন্য কেবল দুঃসঙ্গ অর্থ্যাৎ অসৎসঙ্গ ত্যাগ করলেই হবে না, তার পাশাপাশি সাধুসঙ্গ অর্থ্যাৎ ভক্তসঙ্গও একান্ত প্রয়োজন। কারণ
সাধু সঙ্গ সাধু সঙ্গ সর্বশাস্ত্রে কয়।
লব মাত্র সাধুসঙ্গ সর্বসিদ্ধি হয়।।
তাই একমাত্র সাধুসঙ্গ বা ভক্তসঙ্গের
ফলেই ভগবৎকৃপা লাভ সম্ভব। সাধুগণ ব্যতীত আর কেউই মায়াবদ্ধ
জীবের সংসার আসক্তি দূর করতে পারবেন না। তাই সাধুসঙ্গ যে কোন
পূণ্যকর্ম, তীর্থসেবা,দেবসেবা, এমনকি শাস্ত্র জ্ঞানাদির চেয়েও শ্রেষ্ঠ।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
হরিবাসরে পরিবেশন করা যাবে ঃ---
সকল সময়েই ভক্তসঙ্গ করিবেন।ভক্তের নিকটই ভগবান থাকেন। তিনি বৈকুন্ঠে বা যোগীদের নিকটে থাকেন না। ( নাহং তিষ্ঠামি বৈকুন্ঠে যোগীনাং হৃদয়ে ন চ। মদ্ ভক্তা যত্র গায়ন্তি তত্র তিষ্ঠামি নারদ।।) নারদকে এইকথা ভগবান বলেছিলেন। যেরূপ কাকোচ্ছিষ্ট বটবীজেই বটবৃক্ষ জন্মায় সেইরূপ কৃষ্ণভক্তগণ উচ্ছিষ্ট করিয়া ভক্তিলতা বীজ চালিত করিলে তবে তাহাতে অঙ্কুর উদ্গম হইয়া বৃক্ষে পরিণত হয় এবং আমরা সচ্চিদানন্দ বস্তুর মাধুর্য্য উপলব্ধি করিতে পারি।ভক্তিবীজ অঙ্কুরিত হইবা মাত্র বাসনারূপ অট্টালিকাকে ভাঙ্গিয়া চুরমার করিয়া দেয়।তখন সাধক ""উদাসীন ভক্তবেশে সাজারে আমায়"" বলিয়া বিষয়রূপ বিষ ত্যাগ করে।আরও আপনারা স্মরণ রাখিবেন যে ব্যক্তি শ্রীভগবানের ভুবনমঙ্গল নাম করিবার জন্য উপদেশ প্রদান করেন তিনি ভিন্ন জগতে কেহই বন্ধুবাচ্য নহেন কারণ একমাত্র ভববন্ধন হইতে মুক্ত করিতে সমর্থ, অন্য কিছুতেই পারে না। এইহেতু ভক্তসঙ্গ করিবার খুবই প্রয়োজন।শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করিয়া
তাঁহার উচ্ছিষ্টদ্রব্য সকল গ্রহণ করা কর্তব্য নচেৎ আমরা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করিয়া ত্রিতাপ জ্বালায় প্রজ্বলিত হইব। ( আধ্যাত্মিক,আধিভৌতিক ও আধিদৈবিক।) কারণ এই জগৎ শ্রীকৃষ্ণের, আমরা বিশ্বোদ্যানের মালী মাত্র।আমাদের এই উদ্যানের মালিককে কি তাঁহার বস্তু সাজাইয়া একবার দেখান কর্তব্য নয়? আরও ভক্তিভাবিতহৃদয়ে নিবেদন করিয়া দিলে তিনি কার্য্যতঃ আমাদের প্রদত্ত বস্তুসমূহের কিছু গ্রহণও করিয়া থাকেন, অবশিষ্ট ভক্তের জন্য রেখে দেন। জয় শ্রীরাধেশ্যাম।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
রাগানুগাভক্তি----- সামান্য কিছু তত্ত্ব।
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
রাগমার্গের ভজন এক অতি বিশাল বিপুল রহস্যময় ব্যাপার।ব্রজবাসী নিত্যসিদ্ধ পার্ষদগণেই এই রাগভক্তি
সাক্ষাদ্ ভাবে বিরাজ করেন।তাঁহাদের
আনুগত্যময়ী ভক্তিকে " রাগনুগাভক্তি
বলা হয়।
বিরাজন্তীমভিব্যক্তং ব্রজবাসিজনা-
দিষু। রাগাত্মিকামনুসৃতা যা সা
রাগানুগোচ্যতে।।
অর্থ্যাৎ= ব্রজবাসীজনাদিতে প্রকাশ্য
ভাবে বিরাজমান যে ভক্তি তাহাকে রাগাত্মিকা বলা হয়।এই রাগাত্মিকার
অনুগতা ভক্তিকেই রাগানুগা বলে।
সুতরাং প্রথমতঃ রাগাত্মিকার লক্ষণ না জানলে রাগানুগাভক্তি বুঝা যায় না।রাগাত্মিকার লক্ষণে বলা হয়েছে
#ইষ্টে স্বারসিকী রাগঃ পরমাবিষ্টতা ভবেৎ। তন্ময়ী যা ভবেদ্ভক্তিঃ সাত্র রাগাত্মকিকোদিতা।।
অর্থ্যাৎ= স্বীয় অভীষ্টবস্তুতে যে স্বাভাবিক পরমাবিষ্টতা বা পরমাবেশ
মূলক প্রেমময় তৃষ্ণা তাহাকে রাগ বলা হয়।সেই রাগময়ী বা রাগ-প্রচুরা
ভক্তিই রাগাত্মিকা।
তাৎপর্য্য এই যে,নিজ অভীষ্টের প্রতি
স্বাভাবিকী প্রেমময়ী প্রগাঢ় তৃষ্ণার নাম "রাগ" এবং ইহাই রাগের স্বরূপ-
লক্ষণ। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ের প্রতি যেমন ইন্দ্রিয়বর্গের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি ইহাতে কারো প্রেরণা বা অপেক্ষা নাই,
তদ্রূপ নিজাভিলষিত শ্রীভগবানের প্রতি প্রেমময়ী প্রগাঢ় তৃষ্ণাই রাগ,এই তৃষ্ণাটি ভক্তের স্বাভাবিকী -- কারো প্রেরণা হেতুক নহে।
তরল জল শৈত্যযোগে জমাট বাঁধিয়া
যখন বরফ হয়,জলে যেরূপ তৃণাদি প্রবিষ্ট হয়,কিন্তু বরফে আর উহা প্রবিষ্ট হতে পারে না ; তদ্রূপ প্রেমময়ী
তৃষ্ণা প্রগাঢ় হইলে কৃষ্ণসুখানুসন্ধান
ব্যতীত েপ্রমিকের চিত্তে স্বসুখানুসন্ধানাদির লেশমাত্রও উদিত হতে পারে না। (আবার পরে লিখিব)
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
তখন কৃষ্ণসুখার্থেই নিখিল চেষ্টা নিবদ্ধ হইয়া থাকে।এই প্রগাঢ় তৃষ্ণার কার্য্য স্বীয় অভীষ্টে পরমাবিষ্টতা এবং
ইহাই রাগের তটস্থ লক্ষণ।
""আকৃতি প্রকৃতি দুই স্বরূপলক্ষ""।
কার্য্যদ্বারা জ্ঞান এই তটস্থলক্ষণ।।
"এই রাগময়ী বা রাগাত্মিকা ভক্তি একমাত্র ব্রজবাসী নিত্যসিদ্ধ পার্ষদ
গণেই বিরাজমান।রাগাত্মিকা ব্রজ-
বাসীগণের ভাববিশেষে প্রলুব্ধ হইয়া
নিজভাবোচিত রাগাত্মিকা ভক্তের ভাবের অনুসরণপূর্বক যাঁহারা ভজন করেন,তাঁহাদের অনুষ্ঠিত ভক্তির নাম রাগানুগাভক্তি।এই রাগানুগা ভক্তির
অনুশীলন হইতে নিত্যসিদ্ধ ব্রজবাসী
গণের হৃদয়ে বিরাজিত রাগ-চন্দ্রমার
আলোক রাগানুগীয় সাধকের চিত্তে উদিত হইয়া সমুদ্ভাসিত করিয়া তুলে,"
""যস্য পূর্বোক্তে রাগবিশেষে রুচিরেব
জাতাস্তি, ন তু রাগবিশেষ এব স্বয়ং,
তস্য তাদৃশ-রাগসুধাকর-করাভাস-
সমুল্লসিত-হৃদয় -স্ফটিকমণেঃ শাস্ত্রা-
দিশ্রুতাসু তাদৃশা রাগাত্মিকায়া ভক্তেঃ
পরিপাটীষ্বপি রুচির্জায়তে।(ভক্তি সন্দর্ভ -- ৩১০ অনুচ্ছেদ) অর্থ্যাৎ যাঁর
পূর্ববর্ণিত রাগবিশেষে রুচি জন্মিয়াছে
কিন্তু স্বয়ং রাগবিশেষের উদয় নাই, সেই ভক্তের চিত্তে রাগাত্মিকা ভক্ত-
হৃদয়স্থ রাগ-সুধাকরের কিরণাভাস পতিত হইলে হৃদয়রূপ স্ফটিকমণি
উচ্ছলিত হয় এবং সাধুশাস্ত্র ও গুরু
মুখ হতে সেই রাগাত্মিকা ভক্তির যে সব পরিপাটী অর্থ্যাৎ কায়িক বাচিক
ও মানস প্রেমচেষ্টা তাহা শ্রবণ করিয়া
সেই সকল পরিপাটী বা চেষ্টাতে রুচির উদয় হইয়া থাকে। তাৎপর্য্য এই যে ভক্তের হৃদয় স্ফটিকমণির ন্যায় স্থচ্ছ অর্থ্যাৎ কাম, ক্রোধাদি দুষ্ট
ভাবে কলুষিত নহে, তিনি যখন সাধুশাস্ত্র বা গুরুমুখে নিত্যসিদ্ধ রাগা-
ত্মিকা ভক্তের প্রেমময়ী চেষ্টাবিশেষ শ্রবণ করেন, চন্দ্রের রশ্মি পতিত হইলে যেরূপ তার কিরণ-চ্ছটায় স্ফটিকমণি উচ্ছলিত হয়ে উঠে,তদ্রূপ
তাঁর হৃদয়খানি উচ্ছলিত হইয়া ঐ সকল ভক্তের প্রেমচেষ্টাতে রুচির উদয় হয়ে থাকে।এই রুচিবিশেষের
প্রেরিত হইয়া পূর্বোক্ত রাগের অনুগত
ভাবে যেভক্তিটি অনুষ্ঠিত হয়, তাহারই
নাম রাগানুগাভক্তি।রাগাত্মিকা ভক্তের আনুগত্যব্যতীত এই রাগানুগা
ভক্তি বা রাগের ভজন কখনই সুসিদ্ধ হয় না।
"ব্রজলোকের ভাবে যেই করয়ে ভজন
সেইজন পায় ব্রজে ব্রজেন্দ্রনন্দন।।
শ্রুতি সব গোপীগণের অনুগত হঞা।
ব্রজেশ্বরী-সুত ভজে গোপীভাব লঞা
ব্যূহান্তরে গোপীদেহ ব্রজে যবে পাইল
সেই দেহে কৃষ্ণসঙ্গে রাসক্রীড়া কৈল।।
গোপী অনুগতি বিনা ঐশ্বর্য্যজ্ঞানে।
ভজিলেহ নাহি পাই ব্রজেন্দ্রনন্দনে।।
তাহাতে দৃষ্টান্ত-লক্ষ্মী করিলা ভজন।
তথাপি না পাইল ব্রজে ব্রজেন্দ্রনন্দন
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
উপাসনা দুই প্রকার ------------------------
মন্ত্রময়ী ও স্বারসিকী। বৃন্দাবনে বাস করে যোগপীঠে অষ্টসখী বেষ্টিত বিধি
মার্গে রাধা-কৃষ্ণের সেবার নাম মন্ত্রময়ী।
রাগমার্গে মানসে বৃন্দাবনে বাস করে রাধাকৃষ্ণের লীলাস্মরণ করাই স্বারসিকী উপাসনা।(ঠাকুর নরোত্তম বলেন--
সাধন স্মরণ লীলা,ইহাতে নাকর হেলা
কায়মনে করিয়া সুসার।
*এ জন্য তিনি গেয়েছেন--------------
রাধাকৃষ্ণ ভজ মুঞি জীবনে মরণে।
তাঁর স্থানে তাঁর লীলা শুনি রাত্রিদিনে
যে স্থানে যে লীলা কৈল যুগলকিশোর
সখীর সঙ্গিনী হয়ে তাহে হও ভোর
বৃন্দাবনে নিত্য নিত্য যুগল বিলাস।
প্রার্থনা করয়ে সদা নরোত্তম দাস।।
* ইহাই স্বরসিকী উপাসনা।উত্তম অধিকারী ভক্তগণই ইহা অনুষ্ঠান করবেন।কনিষ্ঠ ভক্তের ইহাতে অধিকার নেই।
সেবা সাধকরূপেণ সিদ্ধরূপেণ চাত্র হি
তদ্ভাবলিপ্স না কাযা ব্রজলোকানুসারতঃ।।
সাধকরূপে অর্থ্যাৎ যথাবস্থিত দেহদ্বারা এবং সিদ্ধরূপে অর্থ্যাৎ অন্ত
নিশ্চিত ও অভিমত তৎ সেবা উপযোগী দেহদ্বারা ব্রজস্থিত নিজাভীষ্ট কৃষ্ণপ্রিয়গণের ভাবলিপ্স হয়ে তাঁদের অনুসরণ পূর্বক সেবায় প্রবৃত্ত হবে।
*জীবের নিত্যসিদ্ধ দেহ চিন্ময় ও শুদ্ধ
কামময়।সে দেহে পুরুষত্ব অথবা স্ত্রীত্ব
ভেদ নেই।ভাব অনুসারেই জীব পুরুষ
দেহ বা স্ত্রীদেহ ধারণ করে।শান্তরসের
ভজনে নপুংসকত্ব; দাস্যে ও সখ্যে পুরুষত্ব ; মাতৃবাৎসল্যে স্ত্রীত্ব ; পিতৃ-
বাৎসল্যে পুংত্ব; মধুর উজ্বলরসে স্ত্রীত্ব
সিদ্ধ হয়।
এইরূপে-- নিজমনে সিদ্ধদেহ করিয়া ভাবন।
নিরন্তর কর ব্রজে কৃষ্ণের সেবন।।
তখন,"যাদৃশী ভাবনা যস্য সিদ্ধি-
র্ভবতি তাদৃশী""
*এই ন্যায় অনুসারে সাধক ভাবনানুরূপ সিদ্ধদেহ প্রাপ্ত হন। তার-
পরে সিদ্ধদেহের লিঙ্গভঙ্গে গোপীগর্ভে
জন্ম এবং লীলায় প্রবেশ।
*ইহাই রাগমার্গে রসের বৃন্দাবনে রস-
বতীর সহিত রসরাজের রসের ভজন।
বিধিমার্গের সহিত এই ভজনের কোন সম্বন্ধ নেই।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
"""দ""" """দ""" """দ""" প্রজাপতির উক্তি।
প্রজাপতির তিন পুত্র। দেবতা,মানব ও অসুর। দীর্ঘদিন ব্রহ্মচর্য পালন করে গৃহ আশ্রমে প্রবেশের বা ঢোকার পূর্বে বা আগে পর পর তিন পুত্রই পিতা প্রজাপতির নিকট আসলেন।
সর্ব প্রথম দেবতা পুত্র বললেন= পিতঃ! আমায় কিছু উপদেশ দিন। প্রজাপতি বললেন ""দ"", তারপর জিজ্ঞাসা করলেন,বাবা বুঝলে তো আমি কী বললাম? দেবপুত্র বললেন,
হ্যাঁ, ""দাম্যত"" (অর্থ্যাৎ দান্ত শান্ত হও) পা
দান্ত মানে যিনি স্বীয় বা নিজ রিপুগণকে দমন করেছেন,যার বাহ্যে-
ন্দ্রিয়গণ বশীভূত হয়েছে ; জিতেন্দ্রিয়।
তারপর মানব পুত্র এসে বললেন, পিতঃ! আমায় কিছু উপদেশ দান করুন। প্রজাপতি বললেন ""দ""।
তারপর জিজ্ঞাসা করলেন,বাবা,বুঝলে তো আমি কী বললাম? মানব পুত্র বললেন,হ্যাঁ, আমি বুঝতে পেরেছি।আপনি আমাকে বললেন, ""দত্ত"", অর্থ্যাৎ দান কর। পিতা প্রজাপতি বললেন তুমি ঠিক বুঝেছ। সর্বশেষ অসুর পুত্র এসে বললেন,পিতা! দয়া করে আমায় কিছু উপদেশ দান করুন। পিতা প্রজাপতি বললেন ""দ"", অতঃপর জিজ্ঞাসা করলেন,বাবা তুমি আমার কথা বুঝতে পারলে? তোমায় আমি কী বললাম? অসুর পুত্র বললেন হ্যাঁ।
আপনি আমাকে "" দয়ধ্বং"", মানে
দয়া কর। পিতা বললেন একেবারেই ঠিক বুঝেছ।
প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই আছে খানিকটা দেবতার ভাব,খানিকটা মানব ভাব,ও খানিকটা আসুরিক ভাব। দেবতার ভাবকে বলা হয়েছে কাম ত্যাগ করে দান্ত হও। মানবীয় ভাবকে বলা হয়েছে লোভ ত্যাগ করে
দান কর। আর আসুরিক ভাবকে বলা হয়েছে ক্রোধ ত্যাগ করে দয়া কর।
"দ" "দ" "দ" ইতি দাম্যত দত্ত দয়ধ্বমিতি।
তদেতৎ ত্রয়ং শিক্ষেৎ দমং দানং দয়ামিতি।।
(শুক্ল যজুর্বেদীয় বৃহদারণ্যক উপনিষদ পঞ্চমাধ্যায় দ্বিতীয় ব্রাহ্মণ অবলম্বনে লিখিত )
*********************************
ওঁ ভূঃ ভূবঃ স্বঃ তৎ সবিতুর্বরেণ্যম।
ভর্গো দেবস্য ধীমহি ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াৎ।।
**গায়ত্রী মন্ত্রে প্রথমে তিনটি ব্যাহৃতি(গায়ত্রী)(ভূঃ-ভূবঃ-স্বঃ)
*আসল মন্ত্রে দশটি শব্দ আছে।
১)তৎ=সেই,২)সবিতুঃ=সবিতা, সম্ভজনীয়।৩)বরেণ্যং=বরণীয় বা প্রার্থনীয় বা পূজনীয়,৪)ভর্গঃ= জ্যোতিঃ, ৫)দেবস্য=দেবতার,
৬) ধীমহি=ধ্যান করি, ৭)ধিয়ঃ= বুদ্ধি
সমূহের,৮)যঃ=যিনি, ৯)নঃ= আমাদের, ১০)প্রচোদয়াৎ= প্রণোদিত করেন বা প্রেরিত বা যাকে পাঠানো হয়।
অর্থ্যাৎ= যিনি আমাদের বুদ্ধি সমূহ প্রণোদিত করেন,সেই সবিতা দেবতার বরণীয় জ্যোতি ধ্যান করি।
&& এই মন্ত্রের ভাষ্য করেছেন আচার্য
শংকর, ও শ্রেষ্ঠ বৈষ্ণব রামানুজ।
যাহা যাহা নেত্র পড়ে
তাহা কৃষ্ণ দর্শন করে।।
তদ্রূপ ব্রহ্মবাদী শংকর এই মন্ত্রে ব্রহ্মই দর্শন করেছেন।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
আয়ান ঘোষের পরিবার পরিচিতি
********************************
কোশলে বসতস্তস্য মাল্যস্য জটিলাপতেঃ।
গোপান্বয় পুরোগস্য কুলেনৌজো ধনেন চ।
যশসা সুকৃতৌঘেন নীত্যা মাল্যস্য গোপতেঃ।।
অর্থ্যাৎ= কৌশলদেশবাসী মাল্যক নামে এক গোপরাজ,তিনি ধনে মানে কুলে শীলে বলে সর্বগোপশ্রেষ্ঠ এবং নীতিতে যশে ও পুণ্যে ধন্যতম,তত্তুল্য,গোপকুলে কেহই নেই,
তিনি সর্বপ্রকারে সকলের অগ্রগণ্য,তাঁর পত্নীর নাম জটিলা।
মদনো দুর্মদদমা আয়ানোহবরজঃ সুতঃ।
তিস্রেপি সুনব স্তস্যায়ানাবরজতা মিতাঃ।।
অর্থ্যাৎ= ঐ মাল্যক গোপরাজের চারি পুত্র যথা,মদন,দুর্মদ,দম, এই তিন ভ্রাতার কনিষ্ঠ আয়ান,এই পুত্র চতুষ্টয়
শোভনীয় রূপবান,তন্মধ্যে আয়ান প্রখ্যাত রূপবানের মধ্যে গণ্য হয়েন।
*যশোদাঃ কুটিলা রাজন প্রভাকর্য্য-
ভিধা স্বসা।
অর্থ্যাৎ=জটিলা জঠরজাতা ঐ মাল্যেরতিন কন্যা অর্থ্যাৎ উপরোক্ত ভ্রাতা চারজনের সহোদরা যশোদা,কুটিলা ও প্রভাকরী।
*মাল্যের জ্যেষ্ঠ পুত্র মদন, তিনি সর্বশ্রেষ্ঠা সর্বঙ্গসুন্দরী মিত্রদক্ষ নামক গোপের কন্যা অলম্ভূষাকে বিবাহ করেন।
*মদনের কনিষ্ঠ ভাই দুর্মদ,তিনি প্রভূত ধনশালী গোপরাজ বসুসেনের কমলপত্র নয়না সুবেদী নামে কনিষ্ঠা কন্যার সাথে বিবাহ করেন।
*তৃতীয় ভ্রাতা মহাবলী দম,তিনি স্বীয় শূরতাবলম্বনপূর্বক যামুন দেশাধিপতি গোপরাজের সরোজদলায়তনয়নী গন্ধবতী নামে অবিবাহিতা কন্যাকে অপহরণ করে বিবাহ করিয়াছিলেন।
*মাল্যক গোপরাজ প্রথমা কন্যা যশোদা,তাহাকে ব্রজরাজ নন্দকে প্রদান করেন।দ্বিতীয় কন্যা কুটিলাকে
প্রদ্যুম্ন নামক গোপকে,তৃতীয়া কন্যা পদ্মপত্রাক্ষী প্রভাকরীকে হেম নামক গোপকে সম্প্রদান করেন।
*আয়ানের সহিত বৃষভানু কন্যার বিবাহ হয়েছিল।
ব্রহ্মান্ড পুরাণ হতে পাওয়া ১৯৫,১৯৬, ১৯৭ পৃষ্ঠা
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
আত্মার স্বরূপ -------------------------------
*********************************
নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ।
ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ।।
অচ্ছেদ্যোহয়মদাহ্যোহয়মক্লেদ্যোহশোষ্য এব চ।
নিত্যঃ সর্বগতঃ স্থাণুরচলোহয়ং সনাতনঃ।
অব্যক্তোহয়মচিন্ত্যোহয়মবিকার্য্যোহয়মুচ্যতে।।
অর্থ্যাৎ== শস্ত্রসকল আত্মাকে ছেদন করতে পারে না, অগ্নি ইঁহাকে দগ্ধ করতে পারে না, জল ইঁহাকে আদ্র করতে পারে না এবং বায়ু ইঁহাকে শুষ্ক করতে পারে না। এই আত্মা অস্ত্রাদি দ্বারা অখন্ডনীয়, অগ্নি দ্বারা দহনশীল নহেন, পঁচিবার অযোগ্য এবং বায়ু দ্বারা অশোষনীয়।ইনি নিত্য ও দেহাদিতে ব্যাপী। স্থির স্বভাব,অবিকারী ও অনাদি। ইনি ইন্দ্রিয়ের অবিষয়ীভূত, অচিন্তনীয় ও বিকাররহিত বলিয়া কথিত হন।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
জয় নিতাই বলরাম তত্ত্ব কথন 🙏🙏🙏
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
সিতাম্বুজ জিনি কান্তি শিঙ্গা-বেত্রধর।
পরিধান নীলাম্বর হাসি মাখাধর।।
জাম্বুনদ সুবর্ণ বলয় পদাঙ্গদ।
ময়ূর-চন্দ্রিকা শিরে গুঞ্জাদি সম্পদ্।।
গোপগোপী মনচোর রোহিণী নন্দন।
সেই বলরাম পদে নমি অণুক্ষণ।।
""রসো বৈ সঃ"" শ্রীমদ্ভাগবতে দর্শিত মাথুররঙ্গভূমিতে প্রসিদ্ধ একমাত্র ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণই শৃঙ্গারাদিসবরস-
কদম্ব মূর্তি-- " মূর্তিমান শৃঙ্গার"।
রস শব্দের অর্থ আনন্দ।সেই আনন্দই
ব্রহ্মের রূপ-- "আনন্দং ব্রহ্মণোরূপম্"
শ্রীমদ্ভাগবত গীতাতে শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং বলেছেন-- "ব্রহ্মণো হি প্রতিষ্ঠাহম্" আমিই ব্রহ্মের প্রতিষ্ঠা।জগদ্ গুরু শ্রীধরস্বামী অর্থ করেন-- "ঘনীভূতং ব্রহ্মৈবাহং যথা ঘনীভূতঃ প্রকাশই সূর্যমন্ডলং তদ্বৎ" =ঘনীভূত আনন্দই কৃষ্ণ, যেমন ঘনীভূত প্রকাশই সূর্যমন্ডল।শ্রীধরস্বামীর উদ্ধত কৃষ্ণনামের নিরুক্তার্থ এইরকম--"ক্নষ"
শব্দের অর্থ ভূ অর্থ্যাৎ সত্তা বা অস্তিত্ব এবং "ণ" এর অর্থ নিবৃত্তি,অর্থ্যাৎ পরমানন্দ।উভয়ের মিলনের অর্থ অস্তিত্ব ও পরমানন্দের মিলন।"ণ" এর
জ্ঞানার্থ বা চৈতন্যার্থও হয়। সুতরাং অস্তিত্ব,চৈতন্য ও পরমানন্দের মিলনের নামই কৃষ্ণ- যে বস্তুতে চৈতন্য ও পরমানন্দের অস্তিত্ব ভিন্ন আর কিছুই নেই,তত্ত্বে পরমানন্দ মাত্র,
লীলায় ঘনীভূত বিগ্রহ।শ্রুতি বলেন---
সৎ,চিৎ ও আনন্দই পরব্রহ্মের স্বরূপ।শ্রীকৃষ্ণও সৎ,চিৎ ও আনন্দ-
স্বরূপ। সুতরাং পরব্রহ্ম ও কৃষ্ণ একই বস্তু।এই জন্যই নারদঋষি রাজা যুধিষ্ঠিরকে কৃষ্ণ সম্বন্ধে বলেছিলেন--
গৃঢ়ং পরং ব্রহ্ম মনুষ্যলিঙ্গম্ ; অথবা "কৃষ্ণ" অর্থে আকর্ষণ,"ণ"অর্থে আত্মা,
আত্মা অর্থে প্রিয়,"চন্দ্র"অর্থে আহ্লাদ
প্রদ।যে প্রিয়বস্তু কৃপাবশত ভক্তের মনাদি আকর্ষণ করিয়া আহ্লাদ প্রদান করেন,তিনিই গোকুলানন্দ নন্দের নন্দন।নন্দ অর্থে আনন্দ।গো-গোপ-
রঞ্জন মূর্তিমান্ আনন্দই ব্রজেন্দ্র। সুতরাং আনন্দময় কৃষ্ণ নন্দনন্দন বা ব্রজেন্দ্রনন্দন। যথা গৌতমীয়ে পাই---
কৃষিভূর্বাচকঃ শব্দো ণশ্চ নির্বৃতিবাচকঃ।
তয়োরৈক্যং পরং ব্রহ্ম কৃষ্ণ ইত্যভিধীয়তে।।
কৃষ্ণশব্দশ্চ সত্তার্থে ণশ্চনন্দস্বরূপকঃ
সুখরূপো ভবেদাত্মা ভাবানন্দময়স্ততঃ।।
আনন্দৈকসুখস্বামী শ্যামঃ কমললোচনঃ।
গোকুলানন্দনঃ নন্দনন্দনো কৃষ্ণঃ ইর্যতে।।
ভক্ত বলেন= রস্যতে আস্বাদ্যতে অসৌ রসঃ-- যাহা আস্বাদন করা যায়
তাহাই রস অর্থ্যাৎ আনন্দ। শ্রুতি বলেছেন-- "আনন্দাদ্ধ্যোব খল্বিমানি ভূতানি জায়ন্তে,আনন্দেন জাতানি জীবন্তি, আনন্দং প্রযন্ত্যভিসংবিশন্তি"
অর্থ্যাৎ= আনন্দ হইতে জীব উৎপন্ন হয়।আনন্দেই যখন জীবের একমাত্র আস্বাদ্য। আস্বাদ্য বস্তু রস এবং আনন্দই যখন জীবের একমাত্র আস্বাদ্য,তখন আনন্দই রস।অতএব কৃষ্ণই রসস্বরূপ অর্থ্যাৎ আস্বাদিত আনন্দরূপ।তাঁহাকে আস্বাদন কে করেন? তিনি এক এবং অদ্বিতীয়----
"একমেবাদ্বিতীয়ম্" তিনি নিজেকে নিজে আস্বাদন করেন। সুতরাং রসয়তি ইতি রসঃ অর্থ্যাৎ রসিক বা রসআস্বাদক। সুতরাং তিনি রসরূপে আস্বাদ্য,রসিকরূপে আস্বাদক,আস্বাদনরূপে আনন্দ, স্বরূপে আনন্দ -- আনন্দ বিগ্রহ।
জয় নিতাই --- ক্রমশঃ
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
শ্রীশ্রীবলরাম তত্ত্ব কথন (০২)
আশ্রয় ব্যতীত লীলা হয় না, অথচ তাঁর কেহই আশ্রয় নেই, তিনি নিজেই নিজের আশ্রয়।এ কারণ তিনি নিজের শক্তিকেই আশ্রয় করেন।আরো তিনি প্রেমময়।প্রেমময়ের প্রেম আস্বাদন আশ্রয় ব্যতীত হয় না।শক্তিই রস উৎপাদনের কারণ-------------------
"শক্তি সংযোগেতে হয় চৈতনেতে রস
শক্তির সংযোগ বিনা চৈতন্য অবশ।।"
রস দ্বাদশ প্রকার=শান্ত,দাস্য,সখ্য, বাৎসল্য, মধুর এই পাঁচটি মুখ্য। হাস্য,
করুণ,রৌদ্র,বীর,ভয়ানক,বীভৎস্য,ও
অদ্ভূত এই সাতটি গৌণ রস।মধুর রসকে শৃঙ্গার বা আদি রস বলে। এই শৃঙ্গার রসে কামের গন্ধমাত্র নাই, ইহা
পরম পবিত্র-- অপ্রাকৃত।ইহা সর্বরসের অবতারী। এই আদি রস হতে অনাদিক্রমে সর্বরসের জন্ম এবং
ইহাতেই সকল রসের নিবৃত্তি।
ব্রহ্মা স্বয়ং বলেছেন-------------------
"ঈশ্বর পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ।
অনাদিরাদির্গোবিন্দ সর্বকারণকারণম্"।।
সচ্চিদানন্দবিগ্রহ কৃষ্ণই পরম ঈশ্বর।
তিনি অনাদি এবং সকলের আদি বা পুরাতন,তথা সকলের কারণ যে মায়া,
তিনি তাহারও কারণ।
ঈশ্বর পরম কৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান।
সর্ব অবতারী সর্বকারণ প্রধান।।
অনন্ত বৈকুন্ঠ আর অনন্ত অবতার।
অনন্ত ব্রহ্মান্ড ইহা সবার আবার।।
সচ্চিদানন্দ তনু শ্রীব্রজেন্দ্র নন্দন।
সর্বৈশ্বর্য্য সর্বশক্তি সর্বরস পূর্ণ।।চৈঃচঃ
শ্রীজীব গোস্বামী বলেন এই শ্লোকের দ্বারা কৃষ্ণের ঐশ্বর্য ও মাধুর্য্য উভয় লীলা নিবিষ্টত্ব-কখন বৃষ্ণিন্দ্রত্ব,কখন গোবিন্দত্ব- প্রকাশ হচ্ছে।গোপীবস্ত্র-
চোর বংশীবদন বনমালীই স্বয়ং ভগবান। বলরাম তাঁর দ্বিতীয় কায়া বা দেহ। যথা------------------------------
"গোলোকে দ্বিভূজঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ।
তৎপ্রকাশস্বরূপোহয়ং দ্বিতীয়ো দেহরূপকঃ।।
দ্বিভূজ মূরলীধারী সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ কৃষ্ণের প্রকাশস্বরূপ দ্বিতীয় দেহরূপই বলরাম।
ক্রমশঃ
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
শ্রীবলরাম তত্ত্ব কথন (০৩)
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
ভক্তকবি জয়দেব গোস্বামী বলেন----
বহসি বপুষি বিশদে বসনং জলদাভং
হলহতিভীতিমিলিতযমুনাভং কেশব ধৃত হলধররূপ জয় জগদীশ হরে।।
হে কেশব!হে জগদীশ!হে বলদেব হরে! তোমার হলের বা লাঙ্গলের আঘাতের ভয়ে যেন যমুনা সঙ্কুচিত হয়ে তোমাকে জড়িয়ে ধরছে! শ্বেতাঙ্গে মেঘের ন্যায় নীল বসন তুমি ধারণ করেছ।তোমার জয় হউক।
** পূর্বেই বলা হয়েছে কৃষ্ণই এক অদ্বিতীয় ভগবান। সুতরাং তাঁরই মধ্যে সেব্য ও সেবক তত্ত্ব বিরাজমান।
সেবার জন্য সেবকতত্ত্ব পৃথক করে বলরাম হয়েছেন।ভক্তিই সেবার মূল।
"ভজ"ধাতুর অর্থ সেবা এবং প্রচুর সেবাময়ী সাধনাই ভক্তি।
(ভজ ইত্যেষ বৈ ধাতুঃ সেবায়াং পরিকীতিতঃ।
তস্মাৎ সেবা বুধৈঃ প্রোক্তা ভক্তিঃ সাধনভূয়সী।।
*বলদেব বিদ্যাভূষণ মহাশয় বলেন--
ভক্তি হ্লাদিনীসার সমবেত সম্বিৎ শক্তিরূপা -- সমবেত হ্লাদিনী ও সম্বিৎ শক্তির সাররূপা পরাবস্থা ভক্তি।
(পরাবস্থা=পরের অবস্থা )
ভগবৎ-শক্তির স্থিতি দুইরূপে হয়ে থাকে। কেবলমাত্র শক্তিরূপে অমূর্ত এবং ভগবৎ বিগ্রহের সহিত একাত্মতা।শক্তির অধিষ্ঠাত্রীরূপে মূর্ত এবং তাঁর পরিকরাদিরূপ।
""সত্তারূপোহপি যয়া সত্তাং দধাতি ধারয়তি চ সা সন্ধিনী"" সত্তা অর্থ স্থিতি।কৃষ্ণ স্বয়ং সত্তারূপ হয়েও যাহাদ্বারা সত্তাকে ধারণ করেন এবং করান,তিনি সন্ধানী।
""জ্ঞানরূপোহপি যয়া জানাতি জ্ঞাপয়তি চ সা সম্বিৎ"" কৃষ্ণ স্বয়ং জ্ঞানরূপ হয়েও যাহাদ্বারা নিজে আহ্লাদিত হন এবং অপরকে আহ্লাদিত করেন,তার নাম হ্লাদিনী।
"যুগপচ্ছক্তিত্রয় প্রধান মূর্তি" সন্ধিনীর অংশ প্রধান আধার শক্তি, সম্বিদংশ প্রধান আত্নবিদ্যা(জ্ঞান) হ্লাদিনী সারাংশ প্রধান গুহ্যবিদ্যা (ভক্তি)।
আধার শক্তির দ্বারা ধাম প্রকাশিত হয়। জ্ঞান এবং তৎপ্রবর্তক লক্ষণ আত্মবিদ্যাদ্বারা তৎবৃত্তি লক্ষণ উপাসকাশ্রয় জ্ঞান প্রকাশিত হয় এবং
ভক্তি ও তৎপ্রবর্তক লক্ষণ আত্মবিদ্যা
ও গুহ্যবিদ্যাদ্বারা তৎবৃত্তিরূপ প্রীত্যাত্মক ভক্তি প্রকাশ পায়।অবশেষে মূর্তিদ্বারা পরতত্ত্বাত্মক শ্রীবিগ্রহ প্রকাশিত হয়। অতএব আধার শক্তি-- সন্ধিনী-- অবশিষ্ট দুই
শক্তির মধ্যে প্রবেশ করে ওদেরকে সত্তা (অস্তিত্ব) দান করেন ইহা স্থির।সেই আধার শক্তিই বলরাম।আবার সেই আধার শক্তিও কৃষ্ণেরই শক্তি।
সুতরাং যেই কৃষ্ণ সেই বলরাম,যেই কানাই সেই বলাই।একই স্বরূপ দোঁহে ভিন্ন মাত্র কায়(দেহ)। লীলার নিমিত্ত কৃষ্ণ যতপ্রকারে আত্মপ্রকট করেন,বলরাম সেই সকলের শ্রেষ্ঠ প্রকাশ। ক্রমশঃ
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
শ্রীবলরাম তত্ত্ব,গভীর মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করবেন (চার)
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
ঈশ্বর পর কৃষ্ণ মাধুর্যৈশ্বান্বিত।
হ্লাদিনী সন্ধিনী সম্বিৎ ত্রিশক্তিযুত।।
সর্ব আদি সর্ব অংশী ব্রজেন্দ্রনন্দন।
অষ্টদশাক্ষরাত্মক মন্ত্রময় ধন।।
বাসুদেব সঙ্কর্ষণ প্রদ্যুম্নানিরুদ্ধ।
চতুর্ভূজ রূপে প্রকট হৈয়া গোবিন্দ।।
প্রাকৃতাপ্রাকৃত সৃষ্টি করি প্রকটন।
আপনি আপনে নিত্য করেন সেবন।।
সচ্চিৎ আনন্দময় কৃষ্ণের স্বরূপ।
মূল তিন শক্তি প্রকটয় অনুরূপ।।
"সৎ"এর অর্থ নিত্য বলদেব নাম।
"চিৎ" জ্ঞান শুদ্ধতত্ত্ব কৃষ্ণ অভিধান।।
আনন্দ শব্দের অর্থ পূর্ণ -সুখ-কাম।
আহ্লাদিনী রাধা নাম পূর্ণ রসধাম।।
সচ্চিৎ সম্বিৎ মিলি আনন্দ উদ্ভব।
তিন তত্ত্বে এক তনু হয় অনুভব।।
এক তত্ত্ব তিন রূপে হয় ভাসমান।
এক বস্তু তিন রূপ রাধা-কৃষ্ণ-রাম।।
সদর্থে সন্ধিনীরূপ প্রভু বলরাম।
চিদর্থে জ্ঞানানন্দ নন্দতনুজ শ্যাম।।
আনন্দার্থে হ্লাদরূপা রাধিকাসুন্দরী।
তিনেতে সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ শ্রীহরি।।
সদর্থে সন্ধিনী শক্তি চিদর্থে সম্বিৎ।
আনন্দার্থে আহ্লাদিনী শক্তি বেদোদিত
এক বস্তু তিন রূপে হয় ভাসমান।
তিনে এক একে তিন,তত্ত্বের সন্ধান।।
কৃষ্ণশক্তি শ্রীরাধিকা শ্রীরতিমঞ্জরী।
রামশক্তি শ্রীঅনঙ্গমঞ্জরী সুন্দরী।।
শক্তি শক্তিমানে নিত্য ভেদ ও অভেদ।
স্বরূপে অভেদ কিন্তু লীলা হেতু ভেদ।।
** শ্রীকৃষ্ণই স্বয়ং ভগবান, তিনি এক এবং অদ্বিতীয়।এরূপ হয়েও তিনি লীলাময়।লীলার জন্য স্বয়ং সেব্য থাকিয়া নিজেরই সেবকতত্ত্বকে পৃথক করেন।বলরাম সেই সেবকতত্ত্বের শ্রেষ্ঠ প্রকাশ।
(অতএব যেই রাম সেই শ্রীরাধিকা।
সেই লক্ষ্মী জাহ্নবাদি সকল গোপিকা
সবাকার আত্মারাম সেই বলরাম।
কৃষ্ণসেবা বিনা তাঁর নাহি অন্য কাম)
(মুরলী বিলাস গ্রন্থ )
ক্রমশঃ
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
শ্রীবলরাম তত্ত্ব কথন (পাঁচ)
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
বলরামই একমাত্র কৃষ্ণ-সেবার অধি-
কারী। সর্বকাল কৃষ্ণ সেবাই রত, যেমন সত্যযুগে অনন্তনাগ হয়ে শ্রীনারায়ণের শয্যা, ত্রেতাযুগে লক্ষণ হয়ে চৌদ্দ বৎসর বনবাসে দাদার সঙ্গে,দ্বাপরযুগে হলধর হয়ে ও কলিযুগে নিত্যানন্দ হয়ে নাম প্রচার।
নিজে সেবা করেন এবং জীবমাত্র কে সেবা শিক্ষা দেন।
"বিধিমার্গে শুক্লবর্ণ পুরুষ প্রধান।
রাগমার্গে অনঙ্গমঞ্জরী আখ্যান।।"
অর্থ্যাৎ বিধিমার্গে স্বয়ংরূপে ও রাগমার্গে অনঙ্গমঞ্জরীরূপে কৃষ্ণসেবা
শিক্ষা দান করেন।
অনঙ্গমঞ্জরী শ্রীরাধার বিলাসমূর্তি এবং তিনিই শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় বিগ্রহ বলরাম(মূল সঙ্কর্ষণ)। ভক্ত বলেন রাধাকৃষ্ণের অপ্রাকৃত অনঙ্গভাব বর্ধনের জন্য তাঁর নাম অনঙ্গমঞ্জরী।
জীববৃন্দকে শব্দের দ্বারা আকর্ষণ করতঃ কৃষ্ণপাদপদ্মে সংযোগ করান বলিয়া তাঁরই নাম যোগমায়া-বংশী।
""যোগে সংযোগে মায়ো শব্দো যস্যা সা যোগমায়া-বংশী""। আবার মধুর স্বরে সকলের মন মোহিত করেন বলিয়া "মোহন মূরলী"। আনন্দই এক
মাত্র আস্বাদনীয় পদার্থ। আনন্দেরই আকর্ষণে জীব ইতস্তত ধাবিত হয়। আনন্দের ঘনীভূত বিগ্রহ কৃষ্ণ এবং ঘনীভূত আকর্ষণী শক্তি বংশী। যথা--
শ্রীকৃষ্ণ পরমব্রহ্ম ব্রাহ্মী শ্রীরাধিকা।
তথা শব্দস্বরূপিনী শ্রীমতী বংশীকা।।
কামবীজাধাররূপা সবপ্রাণ-উন্মাদিকা
(বৈষ্ণব জীবন)
প্রেমদান বৃন্দাবনে শক্তির আশ্রয় মূর্তি
মান, সুতরাং শক্তিও মূর্তিমতী। অতএব ইহিই সিদ্ধান্ত যে,বলরামই বংশী হয়ে কৃষ্ণের লীলার সহায়তা করেছেন।অনঙ্গমঞ্জরী হয়ে কৃষ্ণের গূঢ় সেবা করছেন এবং তাঁর অনঙ্গভাব বর্ধিত করছেন।ব্রহ্মান্ড-
বাসীকে কৃষ্ণপাদপদ্মে আকর্ষণ করছেন।যোগমায়া হয়ে সংযোগ সাধন করছেন এবং অবশেষে প্রাণীমাত্রকে বিধিমার্গে কৃষ্ণসেবা শিক্ষাদান করছেন।এই জন্যই মহারাসের পৃর্বে ব্রজসুন্দরীদিগকে
আকর্ষণ করবার নিমিত্ত বংশীধরের
বংশীধ্বনি, এই জন্যই বৃন্দাবিপিনে বংশীবাদন "জগৌ কলং বামদৃশাং মনোহরম্" সেই আনন্দবর্ধন বংশীধ্বনি শ্রবণে কৃষ্ণবিরহ-বিধুরা ব্রজবালাবৃন্দের বৃন্দাবনের বনে প্রাণবল্লভ রাধাবল্লভের সমীপে আগমন এবং তাঁর সহিত মধুর মিলন।
তাহলে প্রথমে দেখলাম "রসো বৈ সঃ"
কৃষ্ণই রস, তৎপরে দেখলাম রামকৃষ্ণই রস, তারপরে রাধাকৃষ্ণরাম তিন একত্র রস। অতঃপরে রাধাকৃষ্ণ
রাম-অনঙ্গমঞ্জরী-- চার বস্তুই একত্র রস। আবার রাধা -কৃষ্ণ-রাম-অনঙ্গ
মঞ্জরী-বংশী এই পাঁচ একত্র রস। অতএব পঞ্চতত্ত্বত্মক কৃষ্ণই "" রসো বৈ সঃ""এই শ্রুতি বাক্যের বাচ্য।
""রসো বৈ সঃ রসং হ্যেবায়ং লব্ধানন্দী
ভবতি""।
পরমং পরেশং নয়নাভিরামম্।
রোহিণীকুমারম্ং ভজ বলরামম্।।
ক্রমশঃ জয় নিতাই।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
ঈশ্বর-লাভই মনুষ্য জীবনের উদ্দেশ্য।
তিনি সত্য,সংসার অনিত্য।ভগবানের
আনন্দের কাছে বিষয়ানন্দ,রমণানন্দ? একবার যদি কেউ ভগবানের আনন্দের আস্বাদ পায় তাহলে সেই আনন্দের জন্য ছুটো
ছুটি করে বেড়ায়।টাকা,মান,দেহের সুখ কোন দিকে আর নজর থাকে না।
হাজার লেখাপড়া শেখ,ঈশ্বরে ভক্তি না থাকলে সব মিছে।তাঁকে ভালবাসতে শেখ।
** খুব আকুল হয়ে কাঁদলে তাঁকে দেখা যায়। ব্যাকুলতা হ'লেই অরুণোদয় হবে, তারপর সূর্য্য দেখা দেবেন। #তিন টান একত্র হইলে তবে তিনি দেখা দেন= বিষয়ীর বিষয়ের উপরে টান, মায়ের সন্তানের উপর টান, আর সতী পতির উপর টান,এই তিন জনের ভালোবাসা, এই তিন টান
একত্র করিলে যতখানি হয়, ততখানি
ঈশ্বরকে দিতে পারলে তাঁর দর্শন লাভ হয়।
** খুব ব্যাকুলতা হলে সমস্ত মন তাঁতে
গত হয়।যেমন প্রদীপের শিখার দিকে
যদি এক দৃষ্টে চেয়ে থাক, তবে খানিক
ক্ষণ পরে চারিদিকে শিখাময় দেখা যায়।
** প্রাণ আকুল হওয়া চায়। এক শিষ্য
গুরুদেবকে বলেছিল,কেমন করিয়া ভগবানকে পাব?
গুরু বলিলেন-- আমার সঙ্গে এসো--
এই বলিয়া একটি পুকুরে নিয়ে গিয়ে
তাকে চুবিয়ে ধরলেন, খানিক পরে তাকে জল থেকে উঠিয়ে আনলেন, ও
বললেন, তোমার জলের ভিতর কি রকম হয়েছিল? শিষ্য বললে- আমার
প্রাণ আটু-পাটু করছিল, যেন প্রাণ যায় -যায়। গুরু বললেন- দেখ, এইরূপ ভগবানের জন্য যদি তোমার
প্রাণ আটু-পাটু করে তবেই তাঁকে লাভ করবে।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
পরাবরজ্ঞঃ স ঋষিঃ কালেনাব্যক্তরংহসা।
যুগধর্মব্যতিকরং প্রাপ্তং ভুবি যুগে যুগে।।১৬
ভৌতিকানাঞ্চ ভাবানাং শক্তিহ্রাসঞ্চ তৎকৃতম্।
অশ্রদ্দধানান্ নিঃসত্ত্বান দুর্মেধান হ্রসিতায়ুষঃ।।১৭
দুর্ভগাংশ্চ জনান্ বীক্ষ্য মুনির্দিব্যেন চক্ষুষা।
সর্ববর্ণাশ্রমাণাং যদ্ দধ্যৌ হিতমমোঘদৃক্।। ১৮
অর্থ্যাৎ== সেই ত্রিকালজ্ঞ সর্বজ্ঞান- সম্পন্ন ঋষি ব্যাসদেব দিব্যদৃষ্টিতে দেখলেন-- অচিন্ত্যনীয় কালের গতিতে পৃথিবীতে যুগে যুগে যুগধর্মের
বিপর্য্যয় হচ্ছে এবং ধর্মব্যতিক্রম জন্য
জগতের জীবের শরীরের শক্তি হ্রাস হচ্ছে, কেউ আর শাস্ত্রবাক্যে বিশ্বাস রাখতে পারছে না,সকলেই ধৈর্য্যশূন্য,
মন্দগতি,অল্পায়ু এবং সৌভাগ্যহীন, এজন্য তিনি ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়াদি চার বর্ণ
এবং গৃহস্থাদি চার আশ্রমের হিতচিন্তা
করতে লাগলেন।
তাৎপর্য্য== পরাশরনন্দন শ্রীব্যাসদেব
বদরিকা আশ্রমে নির্জনে বাস ও তপস্যা করতেন। একদিন তিনি ব্রাহ্ম-
মুহূর্তে সরস্বতী নদীজলে স্নান আচমনাদি করে মনে মনে চিন্তা করছেন-হায়! কলির জীবের গতি কি হবে? ব্যাসদেব পরাবরজ্ঞ,অর্থ্যাৎ ত্রিকালদর্শী ; ভূত,ভবিষ্যৎ,বর্তমান এই তিন দিকেই তাঁর সমান দৃষ্টি। তাই তিনি ভাবছেন,কালের কি অচিন্ত্য প্রভাব! কি ছিল আর কি হল! ঘোর কলিযুগ সম্মুখে,না জানি আরও কত কি হবে।জীব ও জগত উভয়েরই শক্তি হ্রাস হচ্ছে।ফল,ফুল,ঔষধি প্রভৃতি পূর্ববৎ জীবনীশক্তি বর্ধন করতে পারে না। সত্যকালে জীবের মজ্জাগত প্রাণ ছিল,ত্রেতায় অস্থিগত,
সম্প্রতি দ্বাপরে মাংসগত হয়েছে ; তাহাও আর থাকে না, ক্রমে ক্রমে অন্নগত হয়ে আসছে।য য কলিকাল প্রভাব বিস্তার করবে ততই অধিক পরিমাণে প্রাণ অন্নগত হবে। যোগ,
জপ,ধ্যান,তপস্যা প্রভৃতির শক্তি আর পূর্বের ন্যায় থাকবে না,যাহা আছে আর কিছুদিন পরে তাহাও থাকবে না।জনগণের আর শাস্ত্রবাক্যে পূর্ববৎ সুদৃঢ় বিশ্বাস দেখা যায় না। সাধনকার্য্যে কারও ধৈর্য্যশক্তি নাই, সাধনারম্ভ করতে না করতেই সকলে সিদ্ধির জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে।পূর্বে ব্রাহ্মণগণ চারবেদ শ্রবণমাত্রেই অভ্যাস করতে পারতেন,এখন আর সে শক্তি নেই। বিশেষতঃ এখন শত বৎসর মাত্র জীবের পরমায়ুঃ।এই অল্প সময় বাল্য,জরা,বার্ধক্য প্রভৃতিতে অতিবাহিত হয়ে যায়।হায়!
এই দুর্ভাগ্য জীবের গতি কি হবে! এইরকম নানান চিন্তা করে সর্বজ্ঞানসম্পন্ন মহর্ষি ব্যাসদেব ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চারবর্ণের ও ব্রহ্মচর্য্য, গার্হস্থ্য,বাণপ্রস্থ
এবং সন্ন্যাস এই চার আশ্রমের কিসে পরম কল্যাণ হবে তাহাই চিন্তা করতে লাগলেন।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
চাতুর্হোত্রং কর্ম শুদ্ধং প্রজানাং বীক্ষ্য বৈদিকম্।
ব্যদ্ ধাদ্ যজ্ঞসন্তত্যৈ বেদমেকং চতুর্বিধম্।।
ঋগ্ যজুঃ সামাথর্বাখ্যা বেদাশ্চত্বার উদ্ধৃতাঃ।
ইতিহাসপুরাণঞ্চ পঞ্চমো বেদ উচ্যতে।।
অর্থ্যাৎ== হোতা,উদ্গাতা,অধ্বর্যু ও ব্রহ্মা এই চার ঋত্বিক দ্বারা সম্পাদনীয় বৈদিক কর্মই জগৎজীবের শুদ্ধিকর মনে করিয়া তিনি যজ্ঞবিস্তারবাসনায় এক বেদকে চারভাগে বিভক্ত করলেন।১৯
** ঋক্, যজুঃ, সাম ও অথর্ব এই চারভাগে বিভক্ত হল এবং মহাভারতাদি ইতিহাস ও স্কন্দ,পদ্ম প্রভৃতি পুরাণ পঞ্চম বেদরূপে পরিগণিত হইল।২০
তাৎপর্য্য== মহর্ষি বেদব্যাস দিব্যজ্ঞানে চিন্তা করে দেখলেন, বৈদিক কর্মানুষ্ঠানের অভাবে জগতের জীব ক্রমেই অধঃপতিত হচ্ছে, কিন্তু সমগ্র বেদাধ্যয়ন করে বেদোক্ত কর্মানুষ্ঠানের শক্তিও কারও নেই। এইজন্য তিনি বেদ বিভাগ করলেন।
বায়ুপুরাণে দেখা যায় -- "এক আসীদ্
যজুর্বেদস্তং চতুর্ধা ব্যকল্পয়ৎ। চাতুর্হোত্রমভূত্তষ্মিন্ তেন যজ্ঞমকল্পয়ৎ।। আধ্বর্য্যবং যজুভিস্তু ঋগভির্হোত্রং তথৈব চ। ঔদগাত্রং সামভিশ্চব ব্রহ্মত্বং চাপ্যথর্বভিঃ।। আখ্যানৈশ্চাপ্যুপ্যখ্যানৈর্গাথাভির্দিজসত্তামাঃ। পুরাণসংহিতাং চক্রে পুরাণার্থ
বিশারদঃ।।"
অর্থ্যাৎ= প্রথমতঃ একমাত্র যজুর্বেদই ছিল,(তখনকার ঋত্বিকগণ সমগ্র বেদাধ্যয়ন করিয়া বেদোক্ত কর্ম করতেন) ব্যাসদেব তাহাকে চারভাগে বিভক্ত করিয়া চারজন হোতা যাহাতে যজ্ঞ সম্পাদন করতে পারেন তাহার ব্যবস্থা করলেন।যজুঃ,ঋক্,সাম এবং অথর্ব এই চারভাগে বিভক্ত বেদ অধ্যয়ন করিয়া ঋত্বিকগণ যথাক্রমে অধ্বর্য্যু,হোতা, উদ্গাতাও ব্রহ্মা এই চার নামে অভিহিত হয়ে বেদোক্ত কর্ম করতে লাগলেন। তখন ব্যাসদেব মনে করলেন,ইহাতেই জগতের জীব কৃতার্থ হবে,বেদোক্ত কর্মানুষ্ঠানে সকলেই পবিত্র হবে ও পরম পদ লাভ করবে। পূর্বোক্ত চতুর্বিধ কর্মের উপযুক্ত চারভাগ করিয়া বেদের অবশিষ্ট আখ্যান,উপাখ্যান ও গাথা প্রভৃতি দ্বারা তিনি পুরাণ,সংহিতা প্রকাশ করলেন।এইজন্যই শ্রীমদ্ভাগবতে "ইতিহাসপুরাণঞ্চ পঞ্চমো বেদ উচ্যতে" ( মহাভারতাদি ইতিহাস এবং স্কন্ধ,পদ্ম প্রভৃতি পুরাণ পঞ্চম বেদ) এইকথা বলা হয়েছে।
*ছান্দোগ্যোপনিষদে দেখা যায় --------
"ঋগ্বেদং ভগবতোহধ্যেমি যজুর্বেদং সামফেদমথর্বাণং চতুর্থম্ ইতিহাসং পুরাণং পঞ্চমং বেদানাং বেদমিত্যাদি"
** পুরাণও বেদের ন্যায় নিত্যসিদ্ধ ও অপৌরুষেয় ;
বৈবস্বত-মন্বন্তরীয় অষ্টাবিংশ চতুর্যুগে দ্বাপরের শেষে ব্যাসদেব তাহা প্রকাশ করেন মাত্র।
কালেনাগ্রহনং মত্বা পুরাণস্য দ্বিজোত্তমাঃ। ব্যাসরূপহং কৃত্বা সংহরামি যুগে যুগে " ইত্যাদি মৎস্যপুরাণীয় বচনে ইহা স্পষ্টই প্রমাণীকৃত আছে। ১৯-২০.
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
তত্রঋগ্বেধরঃ পৈলঃ সামগো জৈমিনিঃ কবিঃ।
বৈশম্পায়ন এবৈকো নিষ্ণাতো যজুষামুত।।
অথর্বাঙ্গিরসামাসীৎ সুমন্তুর্দিরুণো মুনিঃ।
ইতিহাস পুরাণাং পিতা মে রোমহর্ষণঃ।।
অর্থ্যাৎ= ঋক্,সাম,যজু ও অথর্ব এই চারবেদের মধ্যে পৈল ঋগ্বেদে, জৈমিনি সামবেদে, বৈশম্পায়ন যজুর্বেদে, ক্রূরকর্মা,সুমন্তু অথর্ববেদে কৃতিত্ব লাভ করেছিলেন। সুতি বললেন,আমার পিতার রোমহর্ষণ ইতিহাস ও পুরাণে পান্ডিত্য লাভ করেছিলেন।
* ত এত ঋষয়ো বেদং স্বং স্বং ব্যস্যন্ননেকধা।
শিষ্যৈঃ প্রশিষ্যৈস্তচ্ছিষ্যৈর্বেদাস্তে শাখিনোহভবন্।।
ত এব বেদা দুর্মেধৈর্ধার্য্যন্তে পুরুষৈর্যথা।
এবং চকার ভগবান ব্যাসঃ কৃপণবৎসলঃ।।
অথ্যাৎ= পূর্বোক্ত পৈলাদি ঋষিগণ শিষ্য-প্রশিষ্যাদি ভেদে স্ব স্ব গৃহীত বেদ চতুষ্টয়কে নানা শাখায় বিভক্ত করেছিলেন।
*পূর্বে কেবল মেধাবী ব্যক্তিগণই যে বেদ গ্রহণ করতে সমর্থ হতেন, ইদানিং
সেই বেদ যাতে ক্ষুদ্রবুদ্ধি ব্যক্তিও গ্রহণ করতে পারে,দীনবৎসল ব্যাসদেব তাহাই করলেন।
স্ত্রীশূদ্রদ্বিজবন্ধূনাং ত্রয়ী ন শ্রুতিগোচরাঃ।
কর্মশ্রেয়সি মূঢ়ানাং শ্রেয় এবং ভবেদিহ।
ইতি ভারতমাখ্যানং কৃপয়া মুনিনা কৃতম্।।
অর্থ্যাৎ= স্ত্রী,শূদ্র,পতিত ও নিন্দিতকর্মা ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য
গণের বেদাধিকার নাই, সুতরাং তাহারা বেদোক্ত কর্মবিমুখ। ব্যাসদেব,
তাহাদেরও কল্যাণ হোক,মনে করিয়া
কৃপাপূর্বক মহাভারত নামক ইতিহাস প্রকাশ করলেন।
তাৎপর্য্য== স্ত্রী,শূদ্র এবং পতিত ও গর্হিতাচরণনিষ্ঠ ব্রাহ্মণ,ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যগণের বেদাধিকার নাই। সুতরাং ব্যাসদেব মনে করলেন, ইহাদের কি গতি হবে? সর্বভূতহিতাকাঙ্খী ব্যাসদেব স্ত্রী-শূদ্রাদিকে বেদ হতে বঞ্চিত করলেন,এ ধারণা অমূলক। স্ত্রী-শূদ্রাদির বেদাধিকার নাই,ইহা দ্বারা বুঝতে হবে,তাহারা শত চেষ্টা করলেও বেদোক্ত কর্ম করে ফল লাভ করতে পারবে না এবং বেদার্থ গ্রহণ করতে পারবে না। যদি কেহ বলেন---
""পঙ্গুর গিরিলঙ্ঘনে অধিকার নাই""
তাহা হলে কি তাঁর পঙ্গুর সঙ্গে শত্রুতা আছে বা তাকে দ্বেষ করেন ইহা বুঝতে হবে? গার্গী,মৈত্রেয়ী প্রভৃতি ব্রহ্মবাদিনী স্ত্রীর কথা শোনা যায় বটে, কিন্তু সকলেই ত গার্গী মৈত্রেয়ী নহেন। তাঁহাদের বিশেষ ক্ষমতা ছিল অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। সাধারণ স্ত্রী-শূদ্রাদির সে শক্তি নেই,সেই জন্যই
বলা হয়েছে,ইহাদের বেদাধিকার নাই।
বিশেষতঃ এ পর্যন্ত কোনও স্ত্রী,শূদ্র কিংবা পতিত ব্রাহ্মণাদি বেদোক্ত যজ্ঞ
প্রভৃতির অনুষ্ঠান করে যে ফললাভ করেছেন,তাহা শোনা যায় না। ব্যাসদেব ভাবলেন,সর্বজীবের কল্যাণার্থ বেদ বিভাগাদি করলাম, কিন্তু সর্বজীবের ভাগ্যে ত ইহা গ্রহণ ঘটিল না। তখন তিনি মহাভারত নামক ইতিহাস প্রণয়ন করলেন।ইহাতে ব্যাসদেব মনে করলেন, স্ত্রী-শূদ্রাদি সকলেই কৃতার্থ হবে। ইহাতে যে সমস্ত কর্মানুষ্ঠানের ব্যবস্থা আছে,তদনুসারে চলিলেও জীব মায়া
মোহের হাত এড়াতে পারবে।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
এবং প্রবৃত্তস্য সদা ভূতানাং শ্রেয়সি দ্বিজাঃ।
সর্বাত্মকেনাপি যদা নাতুষ্যদ্ধৃদয়ং ততঃ।।
নাতিপ্রসীদ্ধৃদয়ঃ সরস্বত্যাস্তটে শুচৌ।
বিতর্কয়ন্ বিবিক্তস্থ ইদং প্রবাচ ধর্মবিৎ।।
অর্থ্যাৎ= এইরূপে সর্বদা কায়মনোবাক্যে জীবের হিতসাধনে রত থাকিয়াও যখন ব্যাসদেব চিত্তের প্রসন্নতা লাভ করতে পারলেন না, তখন তিনি খিন্নমনে পবিত্র সরস্বতী নদীতীরে বসিয়া নানা চিন্তা করিয়া মনে মনে বলতে লাগলেন।
*** এত করেও ব্যাসদেবের মনে শান্তি আসিল না,কারণ ইহাতেও জগতের জীবের প্রকৃত সাধনের পথে অগ্রসর হতে পারল না।ব্যাসদেব মনে করলেন,হায়! আমি সর্বপ্রকারে বিশেষ চেষ্টা করেও জগতের জীবের কৃতার্থ করতে পারলাম না, তখন তিনি মনের দুঃখে সরস্বতী নদীতীরে নির্জনে বসে আপন মনে নানা কথা বলতে লাগলেন।
ধৃতব্রতেন হি ময়া ছন্দাংসি গুরবোহগ্নয়ঃ।
মানিতা নির্ব্যলীকেন গৃহীতঞ্চানুশাসনম্।।
ভারতব্যপদেশেন হ্যাম্নায়ার্থঃ প্রদর্শিতঃ।
দৃশ্যতে যত্র ধর্মাদিঃ স্ত্রীশূদ্রাদিভিরপ্যুত।।
অর্থ্যাৎ= আমি ব্রহ্মচর্য্য অবলম্বন পূর্বক বেদ,অগ্নি ও গুরুজনেরযথোচিৎ সৎকার করেছি।
তাঁহাদের আজ্ঞাও যথাসাধ্য পালন করেছি, ভারত-রচনাচ্ছলে বেদার্থ প্রকাশ করেছি,তাহাতে স্ত্রীশূদ্রাদির ধর্মাচরণের পথপ্রদর্শিত হয়েছে।
অথাপি বত মে দৈহ্যোহ্যাত্মা চৈবাত্মনা বিভুঃ।
অসম্পন্ন ইবাভাতি ব্রহ্মবর্চস্যুশত্তমঃ।।
অর্থ্যাৎ=কিন্তু কি দুঃখের কথা! আমার আত্মা জ্ঞানাদি পরিপূর্ণ এবং ব্রহ্মতেজঃসম্পন্ন হয়েও যেন শ্রীভগবানের সম্বন্ধ পাইনি বলিয়া বোধ হচ্ছে।
কিংবা ভাগবতা ধর্মা ন প্রায়েণ নিরূপিতাঃ।
প্রিয়াঃ পরমহংসানাং ত এব হ্যচ্যুতপ্রিয়াঃ।।
অর্থ্যাৎ= তবে কি শ্রীভগবদ্ভক্তচূড়া-
মণিগণের এবং শ্রীভগবানের পরম আদরের বস্তু ভাগবত ধর্ম নিরূপণ করা হয় নাই?
তাৎপর্য্য== বেদবিভাগ,বেদান্তসূত্ররচনা,পুরাণ ও ইতিহাসাদি প্রণয়ন,এত কীর্তি করেও
ব্যাসদেবের মনে শান্তি নাই।কেননা লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে কারও মনে শান্তি আসে না।ব্যাদেবের বাসনা যে বিষয়াসক্ত কলির জীবকে ফিরিয়ে ভগবানের সহিত সম্বন্ধ করিয়ে দিবেন, কিন্তু কৈ? তাহা ত হল না।অধিকন্তু কাম্যকর্মের অনুষ্ঠানে জগতের জীবের কামনানল আরও বর্ধিত হল।
(করিনু পিপ্পলীখন্ড কফ নিবারিতে।
দ্বিগুণ বাড়িল কফ দেখিতে দেখিতে)
বাকী তাৎপর্য্য আগামীতে
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
(করিনু পিপ্পলীখন্ড কফ নিবারিতে।
দ্বিগুণ বাড়িল কফ দেখিতে দেখিতে।।)
তাই সরস্বতী নদীতীরে নির্জনে বসে বিষণ্ণচিত্তে ব্যাসদেব চিন্তা করছেন।
আমার কোন ভুলে লক্ষ্যভ্রষ হতে হল তাহা ত বুঝতে পারছি না।আমি কোন কর্ম করতে বাকী রাখিনি। নৈষ্ঠিক ব্রহ্মচর্য্য অবলম্বনপূর্বক গুরুচরণ আশ্রয় করে বেদাধ্যয়ন করেছি, অকপটে তাঁদের আজ্ঞাপালন করেছি, জীবহিতে রত হয়েও কিছু ভুল করিনি,বেদবিভাগাদি করে দ্বিজাতিগণের ষাধনপথ দেখিয়েছি, স্ত্রীশূদ্রাদিও যাতে ধর্মাচরণে লিপ্ত হতে পারে,মহাভারত প্রণয়ন করে তারও পথ দেখিয়েছি,তথাপি যেন মনে হয়,কি যেন করি নাই।ব্রহ্মতেজে আত্মা পরিপূর্ণ,তথাপি মনে হচ্ছে,সেই
পরিপূর্ণতায় কোথায় যেন একটু অভাব আছে। এতদিনে যে জ্ঞান সঞ্চয় করেছি,তার যেন জীবনী শক্তি নেই।তবে কি ভাগবতধর্ম নিরূপণ করা হয়নি?( যে বৈ ভাগবতা প্রোক্তা উপায়া আত্মলব্ধয়ে!অহ্নঃ পুঃসাম-
বিদুষাং তে বৈ ভাগবতাঃ স্মৃতাঃ)
অর্থ্যাৎ=অজ্ঞজীবকে আত্মদান করে কৃতার্থ করবার জন্য শ্রীভগবান নিজে যে ধর্মের উপদেশ দিয়াছেন, তাহাই ভাগবতধর্ম।
** ভাগবতধর্মই ভক্তগণের ও ভগবানের আদরের বস্তু ; ভগবান তুষ না হলে কিছুতেই কেহ কৃতার্থ হতে পারে না।( তস্মিন্ তুষ্টে জগৎতুষ্ট প্রীণিতে প্রীণিতং জগৎ)।
আমার বিরাট মনরাজ্যে জ্ঞান, বৈরাগ্য প্রভৃতি শত সম্পদ থাকলেও
শ্রেষ্ঠ সম্পদ সন্তোষই নাই। বোধহয় আমার কৃতকর্ম দ্বারা ভগবানের প্রীতি জন্মায় নাই, তাই আমিও অপ্রসন্নতার তীব্র তাড়না ভোগ করছি। কিন্তু কি করলে প্রকৃত পথ পাব, তাহা খুঁজে পাচ্ছি না, এইরূপ নানা চিন্তার তরঙ্গে ব্যাসদেবের ব্রহ্মতেজ-পূর্ণ হৃদয় ক্ষুব্ধ ও আন্দোলিত হতে লাগল।
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
তস্যৈবং খিলমাত্মানং মন্যমানস্য খিদ্যতঃ।
কৃষ্ণস্য নারদোহভ্যগাদাশ্রমং প্রাগুদাহৃতম্।।
তমভিজ্ঞায় সহসা প্রত্যুত্থায়াগতং মুনিঃ।
পূজয়ামাস বিধিবন্নারদং সুরপূজিতম্।।
অর্থ্যাৎ=বেদব্যাস আপনাকে (নিজেকে)অতি হীন জ্ঞানে এইরকম দুঃখ প্রকাশ করছেন,এমন সময়ে তাঁর সরস্বতী নদীর তীরস্থ আশ্রমে দেবর্ষি নারদ আগমন করলেন।
দেবপূজিত দেবর্ষি নারদকে সহসা আসিতে দেখিয়া বেদব্যাস গাত্রো-
ত্থানপূর্বক তাঁহাকে যথাবিধি অভ্যর্থনাদি করলেন।
তাৎপর্য্য== ভগবানের লীলার গাম্ভীর্য্য বোঝে কার সাধ্য! ব্যাসদেব শ্রীভগবানেরই অংশাবতার ; সুতরাং তিনি স্বতঃসিদ্ধ জ্ঞানময়, অজ্ঞানের আবরণ তাঁহাতে আসতেই পারে না, ভ্রম প্রমাদাদি ত দূরের কথা।তথাপি তিনি আজ প্রাকৃত জীবের মত ভাবছেন,অথচ নিজের ত্রুটি খুঁজে পাচ্ছেন না।( যেমন দেখুন শ্রীমদ্ভ-
ভাগবতস্থ ব্রহ্মমোহন লীলায় দেখা যায়,ব্রহ্মা শ্রীকৃষ্ণের বয়স্য গোপবালকগণ ও পালনীয় গোবৎসগণকে অপহরণ করলে শ্রীকৃষ্ণই গোপবালক ও গোবৎসমূর্তি
ধারণ করে শ্রীবৃন্দাবনে এক বৎসর লীলা করেন, কিন্তু ভগবানেরই দ্বিতীয়
মূর্তি সাক্ষাৎ-সঙ্কর্ষণ শ্রীবলদেব তাহা স্বচক্ষে দেখেও ইহার বিন্দুবিসর্গও জানতে পারেন নি।প্রকৃত পক্ষে বলদেবের অজ্ঞানতা কিছুতেই সম্ভবপর নহে, কিন্তু তথাপি শ্রীকৃষ্ণের পরমাশ্চর্য্য লীলা সম্পাদনের জন্য বলরামও অজ্ঞের মত হয়েছিলেন। এখানেও ঠিক সেইরূপ ; ব্যাসদেবের অজ্ঞানতা কিছুতেই সম্ভবপর নহে, কিন্তু ভগবান শ্রীমদ্ভাগবতরূপে আত্মপ্রকাশ করবেন বলিয়া ব্যাসদেবেরও এই অজ্ঞের মত ভাবটি এসেছে।ইহাতে ভগবান জীবকে শিক্ষা দিচ্ছেন যে, জ্ঞান-গরিমার উচ্চ শিখরে উঠিলেও অজ্ঞানের হাত এড়ানো যায় না।সর্ববিধ গৌরব বিসর্জন দিয়া শ্রীগোবিন্দচরণে শরণাপন্ন হলে, তিনি তাঁর ভক্তের সঙ্গ লাভ করাইয়া হৃদয়কে ভক্তিসিক্ত করে নিজের লীলানন্দে ভাসান ও তাহাতেই জগৎ কৃতার্থ হয়।ফলতঃ তাহাই ঘটিল।) ব্যাসদেব নির্জনে বসিয়া জ্ঞানগরিমার উচ্চ শিখর হতে নেমে দীনতার সমতল ক্ষেত্রে এসে যখন নিজের ত্রুটি অনুসন্ধান করছেন, সেই সময়েই শ্রীগোবিন্দ- ভক্তচূড়ামণি দেবর্ষি নারদ বীণাযন্ত্রে
স্বরসংযোগ করে তার সহিত নিজের ভাবার্দ্র হৃদয়ের প্রতিধ্বনিরূপ হরিগুণ
গান যোগ করে,তার প্রতি মূর্ছনায় হতাশ জীবের নিরাশাদগ্ধ হৃদয়ে শান্তিবারি ঢালতে ঢালতে ব্যাসদেবের আশ্রমে আসিয়া উপস্থিত হলেন।ব্যাস
দেব যেন কুটীরে "কোহিনুর"পেলেন,এমনি সসম্ভ্রমে গাত্রোত্থান করে যথাবিধি সম্মান করে তাঁহাকে আসনে বসিয়ে নিজেও নিকটে উপবেশন করলেন-- ভক্তি-
সিন্ধুর সহিত যেন জ্ঞান নদীর মিলন হল।
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
পারাশর্য্য মহাভাগ ভবতঃ কচ্চিদাত্মনা।
পরিতুষ্যতি শারীর আত্মা মানস এব বা।।
জিজ্ঞাসিতং সুসম্পন্নমপি তে মহদদ্ভুতম্।
কৃতবান্ ভারতং যস্তবং সর্বার্থপরিবৃংহিতম্।।
জিজ্ঞাসিতমধীতঞ্চ ব্রহ্ম যত্তৎ সনাতনম্।
অথাপি শোচস্যাত্মানমকৃতার্থ ইব প্রভো।।
অস্ত্যেব মে সর্বমিদং ত্বয়োক্তং,
তথাপি নাত্মা পরিতুষ্যতে মে।
তন্মূলমব্যক্তমগাধবোধং পৃচ্ছাম্ হেত্বাত্মভবাত্মভূতম্।।
অর্থ্যাৎ= (নারদ বললেন, হে মহাভাগ পরাশরনন্দন!আপনার দেহাভিমানী ও চিত্তাভিমানী আত্মা দেহ ও মনের সহিত কুশলে আছেন তো?)
(আপনি যখন সর্বার্থ-পরিপূর্ণ সুবৃহৎ মহাভারত প্রণয়ন করেছেন, তখন বোঝা যাচ্ছে, আপনার আর ধর্মাদি সম্বন্ধে কিছু জ্ঞাতব্য বা অনুষ্ঠিতব্য নাই।)
(আপনি সেই সনাতন ব্রহ্মস্বরূপ বেদান্তসূত্র দ্বারা বিচার করেছেন ও অনুভব করেছেন,তথাপি আপনি নিজেকে মায়ামুগ্ধ জীবের ন্যায় অপ্রসন্ন দেখছেন কেন?)
(ব্যাস বললেন,হে দেবর্ষে! আপনার কথিত ব্রহ্মজ্ঞানাদি সবই আমার কাছে সত্য, কিন্তু জানি না, তথাপি কেন আমার চিত্ত প্রসন্ন হয় না। হে আত্মভু-নন্দন! আপনি ত সর্বজ্ঞ, আপনি আমার অসন্তোষের কারণ নির্দেশ করুন।)
তাৎপর্য্য== দেবর্ষি নারদের কথা শুনে ব্যাসদেব বললেন-- হে দেবর্ষে! আপনার কথা মিথ্যা নহে,আপনি যাহা বললেন,আমাতে সে সমস্তই আছে। নানাধর্মের অনুষ্ঠানও জগতে প্রচার করেছি,ব্রহ্মবিচার করেও তত্ত্বানুভব করেছি ; কিন্তু এখন দেখছি, ইহাতে ঠিক পরিপূর্ণতা লাভ হয় নাই। শুধু তাহা নহে, এই পরিপূর্ণপ্রায় ব্রহ্মজ্ঞানের কোথায় যে অপূর্ণতা আছে,তা আমার বুঝবারও সাধ্য নাই,কেবলমাত্র চিত্তের অপ্রসন্নতায় অনুমানে বুঝছি, এখনও ঠিক পূর্ণতা পাই নি। হে ব্রহ্মাত্মজ! আপনি সর্বতোভাবে পূর্ণ ; একে ত সাক্ষাৎ নারায়ণের নাভিকমল সম্ভব ও নারায়ণের কৃপাপাত্র ব্রহ্মা হতে আপনার উৎপত্তি,তার উপর আপনিও ভক্তিবলে ভগবানকে হৃদয়ে বেঁধে রেখেছেন; সুতরাং অজ্ঞান বা অপূর্ণতা আপনার ছায়াও স্পর্শ করতে পারে না ; তাই আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি,আপনিই আমার অপূর্ণতা ও চিত্তমালিন্যের কারণ নির্দেশ করুন।যিনি সর্বকারণ-কারণ,
যাঁর ইঙ্গিতমাত্রে অনন্ত কোটি ব্রহ্মান্ডে র সৃষ্টি,স্থিতি ও লয় হয়,তিনি যার উপাসনায় বশীভূত,তাঁর কাছে কি অজ্ঞান আসতে পারে? ভক্তিভাবিত হৃদয় গগনে কৃষ্ণসূর্য্যের উদয় হলে অজ্ঞান আধার আপনিই পলায়ন করে।সর্বজীবের বাহিরের ও অন্তরের বৃত্তি আপনি সমস্তই জানেন, কেননা আপনি জীবহিতার্থ ত্রিভূবন পরিভ্রমণ করছেন,তাহাতে সকলেরই বহির্বৃতি বুঝছেন, আবার যোগবলে প্রাণবায়ুর ন্যায় সকলের অন্তরে অন্তরে সঞ্চরণ করে সেখানকারও সংবাদ রাখছেন। অতএব একমাত্র আপনিই আমার অজ্ঞান দূর করবার উপযুক্ত। আমি বেদাধ্যয়নে ও ব্রহ্মবিচারে পারদর্শিতা লাভ করিয়াও অপূর্ণতার হাত এড়াতে পারছি না কেন, তাহা আমাকে বলিয়া কৃতার্থ করুন।
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
উপরের যে শ্লোকগুলি রয়েছে,তার তাৎপর্য্য এখানে দেওয়া হল, আর তাৎপর্য্যের শ্লোক নিচে দেওয়া হল, অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ক্ষমা করবেন।
স বৈ ভবান্ বেদ সমস্তগুহ্যমুপাসিতো যৎ পুরুষঃ পুরাণঃ।
পরাবরেশো মনসৈব বিশ্বং সৃজত্যবত্যত্তি গুণৈরসঙ্গঃ।।
ত্বং পর্য্যটন্নর্ক ইব ত্রিলোকীমন্তশ্চরো বায়ুরিবাত্মসাক্ষী।
পরাবরে ব্রহ্মণী ধর্মতো ব্রতৈঃ স্নাতস্য মে ন্যূনমলং বিচক্ষ্ব।।
(উপরের তাৎপর্য্যের শ্লোক)
*********************************
উপরের শ্লোকের তাৎপর্য্য------------
*********************************** দেবর্ষি এবং ব্রহ্মর্ষির মধুর মিলন।
শ্রীভগবদ্ভক্তচূড়ামণি দেবর্ষি নারদ সুখাসনে উপবিষ্ট,আর সমস্ত জ্ঞানের
ভান্ডারী হয়েও অজ্ঞানীর মতো বিষন্ন বদনে নারদ সমীপে উপবিষ্ট ব্রহ্মর্ষি ব্যাসদেব। নারদ ব্যাসদেব কে দেখে মনে মনে হাসছেন ও ভাবছেন শ্রী গোবিন্দের কি অদ্ভুত লীলা! জ্ঞানময়
নিজেই ব্যাসরূপে অবতীর্ণ হয়ে অজ্ঞানের অভিনয় করে জগৎকে দেখাচ্ছেন যে ভক্তিহীন পূর্ণ জ্ঞানেও প্রাণে শান্তি আসে না।ভক্তিরসভাবিত
হৃদয়ে সর্বশান্তিনিকেতন ভগবানের আসন না পাতলে কি শান্তির আশা করা যায়?তখন তিনি ব্যাসদেবকে বললেন,হে পরাশরনন্দন! শরীর ও মন সহ আত্মার কুশল তো?তুমি মহা-
ভাগ্যবান, তোমার আর অকুশল কি হতে পারে?ভাল, তোমার জ্ঞাতব্য বিষয় সকল জানা হয়েছে তো? জীব
মাত্রেরই একমাত্র ধর্মই জ্ঞাতব্য বিষয়,
তাহাও আবার বিনা অনুষ্ঠানে পূর্ণভাবে জানা যায় না,কথঞ্চিৎ জানলেও ঠিক অনুভব আসে না।আশাকরি তোমার কোন অনুষ্ঠানের ত্রুটি হয় নাই,মহাভারতই তার প্রকৃষ্ট
পরিচয়,কারণ পূর্ণ তত্ত্বানুভব ব্যতীত
কেহ এমন সরলভাবে বক্তব্য বিষয় প্রকাশ করতে পারে না।কলিকালের
অল্পবুদ্ধি জীব শ্রীমৎমহাভারত অবলম্বন করিয়াই দুবোর্ধ বেদবাক্যের
গূঢ় তাৎপর্য্য বুঝতে পারবে সন্দেহ নাই।তোমার বেদান্তসূত্রাবলী দেখলে বুঝা যায়,নির্বিশেষে ব্রহ্মতত্ত্ব সম্বন্ধেও
তোমার কোন অজ্ঞান নাই; পূর্ণতত্ত্বের
অনুভব না হলে কি কেহ এমন তর্ক-
যুক্তির অবতারণা করে পরতত্ত্ব বুঝাতে পারে? কিন্তু কি আশ্চর্য্য!
এখনও তোমার মুখে বিষাদের ছায়া কেন?জগতের তত্ত্বজ্ঞানহীন অপরিপূর্ণ জীবের বিষাদ থাকতে পারে, কিন্তু সর্বভাবে পরিপূর্ণ তোমার আবার বিষাদ কিসের? দেহগেহাদিতে
মমতাবদ্ধ জীব কোন ভাবেই শান্তি পায় না।তাই তাদের বিষাদও ঘুচে না,
কিন্তু তোমার মত জ্ঞানসিন্ধুতে অশান্তির তরঙ্গ কি থাকা সম্ভব?
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*******শ্রীনারদ উবাচ *************
ভবতানুদিতপ্রায়ং যশো ভগবতোহমলম্।
যেনৈবাসৌ ন তুষ্যেত মন্যে তদ্দর্শনং খিলম্।।
যথা ধর্মাদয়শ্চর্থা মুনিবর্য্যানুকীর্তিতাঃ।
ন তথা বাসুদেবস্য মহিমা হ্যনুবর্ণিতঃ।।
অর্থ্যাৎ= দেবর্ষি নারদ বললেন,হে ব্যাসদেব!তুমি তোমার কোনও গ্রন্থে ভগবানের বিমল যশঃ কীর্তন কর নাই।শ্রীগোবিন্দগুণকীর্তন-শূন্য-শুষ্ক জ্ঞানে তাঁর পরিতৃপ্ত হয় না ; অতএব তোমার জ্ঞান অপূর্ণ।
** হে মুনিশ্রেষ্ঠ!ধর্ম,অর্থ,কাম,মোক্ষ
প্রভৃতিকে যেমন পুরুষার্থরূপে স্থাপন
করেছ,তেমন করে শ্রীগোবিন্দমহিমা পরমপুরুষার্থরূপে বর্ণনা কর নাই।
তাৎপর্য্য== ব্যাসদেবের কাতরোক্তি শ্রবণে নারদঋষি বললেন, হে বেদব্যাস! নিজের কৃতকর্মের অনুসন্ধান করলেই প্রত্যেকে নিজের ভুল বুঝতে পারে।জীবমাত্রেই সৎ ও অসৎ এই দ্বিবিধ কর্ম করে থাকে, অজ্ঞ ব্যক্তি নিজের অসৎ কর্মও সৎ
কর্মের আবরণের মধ্যে রাখতে চায়,
কাজেই ভুল বুঝতে পারে না। তুমি ত
অজ্ঞ নহ, সুতরাং একবার ভাল করে তোমার কৃত কর্মগুলি আলোচনা করে দেখ দেখি। তুমি বেদ ও ব্রহ্ম
বিচার করেছ সত্য; কিন্তু যাঁর নিঃশ্বাস
হতে বেদের সৃষ্টি এবং ব্রহ্মেরও যিনি আশ্রয় (ব্রহ্মণো হি প্রতিষ্ঠাহং) সেই পরব্রহ্ম শ্রীগোবিন্দের গুণ বর্ণন করেছ কি? শ্রীভগবৎপ্রীতির সঙ্গে অনন্ত ব্রহ্মান্ডগত জীবের সুখশান্তির
নিত্যসম্বন্ধ। ভগবানের প্রীতিসম্পাদন করতে পারলেই চিত্তে শান্তি আসে; তুমি বহু কার্য্য করেছ, কিন্তু মূলই ভুলেছ। নানা শাস্ত্র প্রকাশ করেছ,তাহাতে ধর্ম,অর্থ,কাম,মোক্ষ
সবই আছে,কেবলমাত্র শ্রীগোবিন্দ
গুণবর্ণন নাই। যদি বল,মহাভারত, বিষ্ণুপুরাণ,স্কন্দপুরাণ, প্রভৃতি গ্রন্থে গোবিন্দগুণবর্ণন করা হয়েছে, কিন্তু বিবেচনা করে দেখ,তাহাতেও মুখ্যভাবে গোবিন্দগুণবর্ণন কর নাই।
ধর্মাদির অধীনরূপে কিংবা কথা
প্রসঙ্গে বর্ণন করেছ মাত্র।গোবিন্দগুণ
বর্ণনই যে স্বতন্ত্র পরম পুরুষার্থ, এভাবে বর্ণন কর নাই। জগতের জীব
অনাদিকাল হতেই কৃষ্ণ ভুলে মায়ার বশবর্তী হয়েছে,জীব মায়ামুক্ত হয়ে গোবিন্দসেবানন্দ লাভ করলেই ভগবানের সন্তোষ হয়।ভক্তিশূন্য রুক্ষজ্ঞানে কিংবা কর্মাদিতে সে সৌভাগ্য লাভ হয় না। সুতরাং মুখ্যভাবে শ্রীগোবিন্দগুণ-বর্ণনই জীবনের সারসর্বস্বরূপে অবলম্বন করা কর্তব্য। কিন্তু হে বেদজ্ঞ! তুমি সেই বেদবেদ্য পরম পুরুষের কথাও কিছু বল নাই।সুতরাং তুমি জ্ঞানসিন্ধু হলেও তাহা পূর্ণ নহে। এই তোমার মহা ভুল।
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
ন যদ্বচশ্চিত্রপদং হরের্যশো,জগৎ পবিত্রং প্রগৃহীত কর্হিচিৎ।
তদ্বায়সং তীর্থমুশন্তি মানসা, ন যত্র হংসা নিরমন্তু্যশিকক্ষয়াঃ।।
তদ্বাগ্ বিসর্গো জনতাঘবিপ্লবো, যস্মিন প্রতিশ্লোকমবদ্ধবত্যপি।
নামান্যনন্তস্য যশোহঙ্কিতানি যৎ, শৃণ্বন্তি গায়ন্তি গৃণন্তি সাধবঃ।।
অর্থ্যাৎ= বিচিত্র রস-ভাব অলঙ্কারাদিযুক্ত বাক্যও যদি শ্রীগোবিন্দগুণবর্ণনহীন হয়, তাহলে
সাধুগণ তাহা কাকক্রীড়াস্থান উচ্ছিষ্ট তুল্য হেয় জ্ঞান করেন।তাহা ভক্তরূপ
মানস(সরোবরচারী) হংসের প্রীতিপদ হয় না।
** অপশব্দরচিত শব্দও যদি শ্রীগোবিন্দগুণবর্ণনপ্রধান হয়, তাহলে তাহাই ভক্তগণ শ্রবণ,বর্ণন,কীর্তন করে থাকেন। সেই বাক্য প্রয়োগেই জগৎ জীবের পাপ নাশ হয়।
তাৎপর্য্য== জীবন না থাকলে যেমন বহুমূল্য অলঙ্কারে সজ্জিত দেহের কোনই আদর নাই,সেইরূপ নানা ভাব,
রস,ও অলংকারাদিযুক্ত বাক্যও যদি শ্রীগোবিন্দগুণবর্ণনহীনরূপ জীবন শূন্য হয়,তাহলে কে তার আদর করবে?জীবন শূন্য দেহ শব,তার স্পর্শেও যেমন অপবিত্রতা জন্মে,
সেইরূপ মনীষিগণ গোবীন্দগুণবর্ণনহীন বাক্য কখনও কর্ণ দ্বারা স্পর্শ করে না। উচ্ছিষ্ট গর্ত
অপবিত্র স্থান হলেও যেমন তাহা কাকের পক্ষে হেয় নহে,বরং ক্রীড়াভূমি,সেইরূপ গোবিন্দসম্বন্ধশূন্য
বাক্য হেয় হলেও তাহা কাকতুল্য কামী ব্যক্তিগণের উপাদেয় হতে পারে তাহাতে আপত্তি নাই ; কিন্তু ব্যাস, বল দেখি, মানসসরোবরের বিচরণশীল হংস কখনও কি কাকক্রীড়াক্ষেত্রে আসতে চায়? ভগবানের ধামরূপ কমনীয় সরোবরে বিচরণ-জনিত পরমানন্দতৃপ্ত মানসহংসগণকে গোবিন্দগুণবর্ণনহীন অসার বাক্য দ্বারা তৃপ্ত করা যায় না।গোবিন্দগুণ
বর্ণনময় বাক্য যদি অপভাষারচিত হয়,তাহাতে যদি রস,ভাব,অলঙ্কারাদিসম্বন্ধ না থাকে,তাহলেও সেই বাক্য জগৎ পবিত্র করতে পারে, ও ভক্তগণ তাহাতেই আনন্দ আস্বাদন করেন,এবং তাহাই কীর্তনাদি শ্রবণ করে স্বয়ং কৃতার্থ হন ও জগৎ কৃতার্থ হয়।
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
নৈষ্কর্ম্যমপ্যচ্যুতভাববর্জিতং ন শোভতে জ্ঞানমলং নিরঞ্জনম্।
কুতঃ পুনঃ শশ্বদভদ্রমীশ্বরে, ন চার্পিতং কর্ম যদপ্যকারণম্।।
* অথো মহাভাগ ভবানমোঘদৃক্, শুচি
শ্রবাঃ সত্যরতো ধৃতব্রতঃ।
উরুক্রমস্যাখিলবন্ধমুক্তয়ে, সমাধিনানুস্মরতচেষ্টিতম্।।
*ততোহন্যথা কিঞ্চন যদ্বিবক্ষতঃ, পৃথ-
গদৃশস্তৎকৃতরূপনামভিঃ।
স কর্হিচিৎ ক্বাপি চ দুঃস্থিতা মতি,
র্লভেত বাতাহতনৌরিবাস্পদম্।।
অর্থ্যাৎ= অবিদ্যানিবর্তক ব্রহ্মরূপ জ্ঞানও যদি ভগবদভক্তিসম্বন্ধহীন হয়,
তাহা হইলে সে জ্ঞানে মুক্তি লাভ হয় না।সাধনকালে এবং সিদ্ধিদশায় দুঃখ
প্রদ কাম্য কর্ম এবং শ্রীগোবিন্দে অনর্পিত নিষ্কাম কর্মের কথা আর কি বলব।
* হে মহাভাগ! আপনি অব্যর্থদৃষ্টি এবং বিশুদ্ধযশ্বস্বী ; যদি জগতের জীবের ভববন্ধনমোচনে অভিলাষ থাকে, তাহলে ভগবানে রত ও দৃঢ়সংকল্প হয়ে একাগ্রচিত্তে অচিন্ত্য-
শক্তিশালী শ্রীগোবিন্দের মধুর লীলাবলী পুনঃ পুনঃ স্মরণ করুন।
** বহির্দৃষ্টি ব্যক্তিগণ গোবিন্দলীলা ছাড়া অন্য কিছু বলতে ইচ্ছে করলে জাগতিক নামরূপাদির বিক্ষেপে ঝঞ্ঝাবাতপতিত নৌকার চিত্তের ন্যায়
স্থিরতা রক্ষা করতে পারে না।
তাৎপর্য্য== ""তমেব বিদিত্বাতিমৃত্যুমেতি"" ব্রহ্মজ্ঞানেই জীবের সংসারমোচন হয়, ইহা শ্রুতির বাক্য। আবার মহাভারতেও বর্ণিত আছে= "নহি জ্ঞানেন সদৃশং পবিত্রমিহ বিদ্যতে" -- জ্ঞানের মত পবিত্র বস্তু আর নাই,জ্ঞানের উদয়ে অজ্ঞান কার্য্য দেহাদিতে মমতা নাশ হয়ে জীব কৃতার্থতা লাভ করে। কিন্তু
এমন পরম পবিত্র এবং সংসারমোচনকারক জ্ঞানও যদি ভগবতভক্তিশূন্য হয়, তাহলে তাহাও নিষ্ফল।ভগবতভক্তিশূন্য ব্যক্তির জ্ঞানলাভেও মুক্তি প্রাপ্ত হয় না, বরং সুরাভান্ডস্থ জলের যেমন পবিত্রতা নাই,সেইরূপ ভক্তিশূন্য ব্যক্তির আধারে থেকে জ্ঞানেরও পবিত্রতা থাকে না।"নানুব্রজতি যো মোহাদ-
ব্রজন্তং জগদীশ্বরম্। জ্ঞানাগ্নিদগ্ধ-
কর্মাপি স ভবেদব্রহ্মরাক্ষসঃ।।
** যদি অনাদর বা অজ্ঞাতবশতঃ কেহ ভগবন্মূর্তির অনুগমন না করে,তাহলে সে পরম জ্ঞানী হলেও তাহাকে ব্রহ্মরাক্ষস হতে হয়। ভক্তি-
শূন্য জ্ঞানেরই এই অবস্থা,কর্মের কথা আর কি বলব?কাম্য কর্মের ত কথাই নাই, নিষ্কাম কর্মও যদি গোবিন্দে অর্পিত না হয়,তাহলে তাহাও নিষ্ফল।যাইহোক, হে বেদব্যাস! তোমাকে আর কত বুঝাব? তুমি প্রথিতযশা এবং অব্যর্থদৃষ্টি ; যদি জগৎ-জীবকে
করতে চাও,তাহা হলে সত্যস্বরূপ শ্রীগোবিন্দে রত ও দৃঢ়ব্রত হয়ে সমাহিত চিত্তে শ্রীগোবিন্দলীলা স্মরণ কর। স্মরণপ্রভাবে লীলাস্ফূর্তি হলে তা বর্ণনা করবে, তারই শ্রবণ ও কীর্তনে জগৎ কৃতার্থ হবে।বহির্মুখ ব্যক্তিগণ নানা কথাই বলে, নানা কার্য্যই করে, কিন্তু কিছুতেই চিত্তের স্থিরতা লাভ করতে পারে না। মহাঝঞ্ঝাবাতপতিত তরণীর কি স্থিরতা লাভ হয়? সংসারসমুদ্রে পতিত জীব-তরণী সর্বদা বিষয়-
বাত্যায় আন্দোলিত; শ্রীগোবিন্দকথা আশ্রয় করতে না পারলে আর কুল পাবার উপায় কি?
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
জুগুপ্সিতং ধর্মকৃতেহনুশাসতঃ,
স্থভাবরক্তস্য মহান ব্যতিক্রমঃ।
যদ্বাক্যতো ধর্ম ইতীতরঃ স্থিতো,
ন মন্যতে তস্য নিবারণং জনঃ।।
** অনাদি বিষয়বাসনাবশত বিষয়াসক্ত মানবগণের ধর্মসাধন উদ্দেশ্যে আপনি কাম্য কর্মের উপদেশ দিয়া ভাল কাজ করেন নাই;
কারণ, কাম্যকর্মে পশু প্রভৃতি বধ করে অধর্ম সঞ্চয় করতে হয়, কিন্তু আপনার বাক্যবলেই তাহা ধর্মরূপে পরিগণিত হয়েছে ( ও বিষয়াসক্ত ব্যক্তিগণের হৃদয়ে বদ্ধমূল হয়েছে )
এখন শত নিবারণেও তাদের গতি ফেরান যায় না।
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
বিচক্ষণোহস্যার্হতি বেদিতুং বিভোর-
নন্তপারস্য নিবৃত্তিতঃ সুখম্।
প্রবর্তমানস্য গুণৈরনাত্মনস্ততো ভবান
দর্শয় চেষ্টিতং বিভো।।
** আপনি বিবেকবান ; সুতরাং গ্রাম্য
সুখভোগে নিবৃত্ত হলেই যে সেই অনন্ত
মহীমশালী শ্রীগোবিন্দের সেবাসুখ আস্বাদনের যোগ্য হওয়া যায়, তাহা জানেন ; অতএব পরমার্থিক বুদ্ধিহীন মায়ার বশীভূত সংসারে পরিভ্রমণশীল জীবের হিতার্থ শ্রীগোবিন্দের লীলা বর্ণনা করুন।
তাৎপর্য্য== অনাদি কাল হতেই জীব বিবিধ বিষয় বাসনা বুকে লয়ে লয়ে নানা যোনি ভ্রমণ করছে। বিষয় ভোগের সুবিধা পেলে আর কি কেহ ত্যাগের পথে যেতে চাই? রোগীর পক্ষে কুপথ্য বিষবৎ,রোগীর স্বভাব এই যে,তার কুপথ্যেই রুচি বেশী।সেই
রূপ ভবরোগগ্রস্ত জীবেরও বিষয়ভোগ মহাকুপথ্য,গোবিন্দলীলা
কথাই তার মৃতসঞ্জীবনী, কিন্তু দুর্ভাগ্য জীবের ভাগ্যে তা ঘটে না। তুমি বিষয়াসক্ত জীবকে স্বর্গাদি বিষয়ভোগের লোভ দেখিয়ে ধর্মে রত করবার জন্য নানা শাস্ত্রে কাম্যকর্ম প্রচার করেছ, কিন্তু তাহাতে জীবের কামনাই দিন দিন বাড়ছে,তারা কাম্য বস্তু ভুলে কোন দিনই নিবৃত্তির পথে আসতে পারবে না।শাস্ত্রে সকাম ও নিষ্কাম দ্বিবিধ কর্মের ব্যবস্থা থাকলেও
সকাম কর্ম নিয়ে সকলে ব্যস্ত,কেউ আর নিষ্কামের দিকে আসে না।তুমি নিজে যদি ঘরে ঘরে গিয়া নিষেধ কর,
তাহলেও কেউ শুনবে না,কারণ ভোগের সুবিধে পেলে কেউ কি ত্যাগের দিকে আসে?
হে ব্যাস! তুমি বিচক্ষণ ব্যক্তি,তুমি বুঝতে পার যে,যতদিন বিষয়সুখের লালসা থাকবে, ততদিন শ্রীগোবিন্দ-
সেবাসুখকর গন্ধও পাওয়া যাবে না,
কিন্তু অন্ধ জীব কি তা বুঝতে পারে?
তাই বলি,তুমি মধুরাতিমধুর গোবিন্দ
লীলা বর্ণন কর।তাহা শ্রুতিসুখকর ও
হৃদয়ানন্দপ্রদ,তাহাতে একাধারে ভোগ ও মোক্ষ বিরাজিত,তাহা প্রবৃত্তির আবরণে ঢাকা নিবৃত্তি,তাহা
আশ্রয় করিবামাত্র জীবের বিষয়-বাসনা দূরে যাবে ও গোবিন্দসেবায় লালসা জন্মিবে। পুত্রকামী ব্যক্তিকে পুত্রের আশা বিসর্জন দিতে বলা অপেক্ষা ভগবানেকে পুত্ররূপে পাওয়ার পথ দেখালেই শীঘ্র ফল হয়।শ্রবণসুখলিপ্সু ব্যক্তিকে বধিরের মত থাকতে উপদেশ দেওয়া অপেক্ষা গোবিন্দগুণশ্রবণ করালেই তার হিত সাধন করা হয়।
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
ত্যক্তাব স্বধর্মং চরণাম্বুজং হরের্ভজন্নপক্কোহথ পতেৎ ততো যদি।
যত্র ক্ক বাভদ্রমভুদমুষ্য কিং, কো বার্থ আপ্তোহভজতাং স্বধর্মতঃ।।
** স্বধর্ম ত্যাগ করিয়াও যদি কোন ভাগ্যবান্ শ্রীহরিভজন রত হয়, তাহলে তার ভজনারম্ভে কিংবা যে কোনও অবস্থাতেও যদি পতন হয়,
তাহলে কি কোন অকল্যাণ হয়? ভজনহীন ব্যক্তি স্বধর্মযাজনেই বা কি
লাভ করতে পারে? ( ভজনরত ব্যক্তির পতন নাই,ভজনহীনেরও উন্নতি নাই।)
তস্যৈব হেতোঃ প্রযতেত কোবিদো ন লভ্যতে যদভ্রমতামুপর্য্যধঃ।
তল্লভ্যতে দুঃখবদন্যতঃ সুখং কালেন
সর্বত্র গভীররংহসা।।
** অতএব যাহা উর্ধে ব্রহ্মলোক এবং
নিম্নে স্থবরাদি যোনিতে ভ্রমণ করেও মিলে না, সারাসারবিবেকী ব্যক্তিগণ
সেই হরিভজনানন্দের জন্য যত্নবান হন।দুঃখ যেমন কোনও চেষ্টা না করলেও আপনিই কর্মফলে আসে, তেমনই বিষয়সুখও বিনা পরিশ্রমে নরকাদি দেহেও কালক্রমে লাভ হতে পারে।
ন বৈ জনো জাতু কথঞ্চানাব্রজেন্মুকুন্দসেব্যন্যবদঙ্গ সংসৃতিম্।
স্মরন্ মুকুন্দাঙ্ঘ্র্যপগূহনঃ পুনর্বিহা-
তুমিচ্ছেন্ন রসগ্রহো জনঃ।।
** হে ব্যাস! শ্রীগোবিন্দচরণসেবন- পরায়ণ ব্যক্তি দৈবাৎ কোন দুরভি-
নিবেশযুক্ত হলেও আর তার সংসারে পতনাশঙ্কা নাই। শ্রীগোবিন্দভজনানন্দের আস্বাদন পেলে কি আর কেউ তাহা ছাড়তে পারে?
তাৎপর্য্য== শাস্ত্রে যে নানা ধর্মের উপদেশ আছে ও সেই সমস্ত ধর্মানু-
ষ্ঠানে যে চিত্তশুদ্ধি হয়,তাহাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু ধর্মানুষ্ঠানে অবশ্যই সিদ্ধিলাভ হবে ইহা কেউ বলতে পারে না, কারণ উহা সর্বাঙ্গসুন্দররূপে অনুষ্ঠান করতে পারা যায় কিনা সন্দেহ,( কোটি কোটি অনুষ্ঠান হয়, কিন্তু সত্যই কি সেই অনুষ্ঠানের সাফল্য আসে?যদি এসে থাকে তবে এত অনাচার কেন?) যেহেতু অজ্ঞাতসারেও ত্রুটি এসে উপস্থিত হয়।বর্ণাশ্রমাচার প্রভৃতি নিত্যকর্ম অবশ্যই অনুষ্ঠেয়,তার অনুষ্ঠান না করলে নিত্যকর্মত্যাগজনিত দোষের হাত এড়ান দায়-- চিত্তশুদ্ধি ত দূরের কথা। অশুদ্ধ চিত্তে জ্ঞান যোগাদি কিছুই হয় না,সেই জন্য জ্ঞান অধিকার লাভের জন্য শাস্ত্রের অনেক
স্থানে বিশেষ করে কর্মের উপদেশ আছে। কিন্তু ভক্তি অতি প্রবলা, তিনি কিছুরই অপেক্ষা রাখেন না,সেই জন্য গীতাতেও ভগবান বলেছেন,
""সর্বধর্মান পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ""।
এখানেও নারদঋষি বলছেন,যদি কোন ব্যক্তি স্বধর্মের দিকে কিছুমাত্র দৃষ্টি না করে সর্বান্তঃকরণে কেবল শ্রী
গোবিন্দচরণারবিন্দ আশ্রয় করে,তার কি কোনও অবস্থাতে অমঙ্গল হয়?
কিছুতেই নহে।যদি ভজনারম্ভেই প্রাণ বিয়োগ হয় কিংবা চিত্রকেতু প্রভৃতির মত কোনও অপরাধে পতনও হয়, তথাপি ভক্তিবাসনা যায় না,ভজনারম্ভের পরে নীচযোনিতে জন্মগ্রহণ করলেও ভক্তি লোপ হয় না। রাজর্ষি ভরত হরিণ যোনিতেও জন্ম পেয়েও,পশুর স্বভাব ছেড়ে ঋষিগণের নিকটে বসে হরিকথা শ্রবণ করতেন। কিন্তু ব্যাস, তুমি বল দেখি,
অন্য কোনও সাধনপথ হতে ভ্রষ্ট হলে তার কি পূর্বজন্মের সাধনবাসনা থাকে? তাই বলি হরিভজনই জীবের একমাত্র সম্বল। বিশেষতঃযে বস্তু অতি দুর্লভ,যাহা কিছুতেই পাওয়া যায় না, তারই জন্য যত্ন ও চেষ্টা করতে হয়; অতি নীচ স্থবরাদি জন্ম হতে আরম্ভ করে সর্বোর্ধ ব্রহ্মলোক পর্যন্ত ঘুরলে সেখানে সুখ ও দুঃখ পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু হরিভক্তি লাভ অতি দুষ্কর।এইজন্য বুদ্ধিমান ব্যক্তি কিসে হরিভক্তি লাভ হবে, তার উপায় অনুসন্ধান করেন।হরিভজনের গুণ আর কত বলব,একবার শ্রীগোবিন্দসেবা পেলে জীবের আর সংসারে পতন হয় না, কারণ ভজনানন্দরসের একটু আস্বাদন পেলে আর কি কেহ তাহা ছাড়তে পারে।
জয় নিতাই।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
অহং পুরাতীতভবেহভবং মুনে দাস্যাশ্চ কস্যাশ্চন বেদবাদিনাম্।
নিরূপিতো বালক এব যোগিনাং শুশ্রূষণে প্রাবৃষি নির্বিবিক্ষতাম্।।
** হে ব্যাস!অতীতকল্পে,পূর্বজন্মে আমি বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণের দাসীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করে বাল্যকালেই চাতুর্মাস্য
(চারমাসে নিষ্পন্ন করা হয় এমন ব্রত)
যাপন উপলক্ষ্যে একত্র মিলিত মুনি-
গণের সেবায় নিযুক্ত হয়েছিলাম।
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
তে ময্যপেতাখিলচাপলেহর্ভকে দান্তে-
হধৃতক্রীড়নকেহনুবর্তিনি।
চক্রুঃ কৃপাং যদ্যপি তুল্যদর্শনাঃ শুশ্রূষমাণে মুনয়োহল্পভাষিণি।।
** যদিও মুনিগণ সমদর্শী,তথাপি আমি যাঁদের সেবায় রত ছিলাম,তাঁরা
আমাকে অচঞ্চল,ক্রীড়ায় অনাসক্ত, সংযতেন্দ্রিয়,মিহভাষী, আজ্ঞাবহ ও সেবারত দেখে আমার প্রতি কৃপাদৃষ্টি করেছিলেন।
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
উচ্ছিষ্টলেপাননুমোদিতো দ্বিজৈঃ সকৃৎ স্ম ভুঞ্জে তদপাস্তকিল্বিষঃ।
এবং প্রবৃত্তস্য বিশুদ্ধচেতসস্তদ্ধর্ম এবাত্মরুচিঃ প্রজায়তে।।
** একদিন সেই ব্রাহ্মণগণের আজ্ঞাক্রমে যেমন তাঁদের ভিক্ষাপাত্র
লগ্ন প্রসাদ ভোজন করলাম,অমনি আমার সমস্ত পাপরাশি দূর হয়ে গেল এবং প্রত্যহ সেই ব্রাহ্মণগণের উচ্ছিষ্ট ভোজন করতে করতেই আমার তাঁদের আচরিত ভাগবতধর্মে রুচি জন্মাল।
********************************
তাৎপর্য্য== ভক্তির পথ বুঝা বড়ই কঠিন ; ইহাতে কিছুতে বিশ্বাস আসতে চায় না।কোটি কোটি জন্ম-
সঞ্চিত পাপতাপের বোঝা একবারমাত্র কৃষ্ণনামোচ্চারণে, কিংবা ক্ষণকাল মাত্র কৃষ্ণভক্তের সঙ্গমহিমায় কেমন করে নেমে যায় তা
বুঝাও গোবিন্দের কৃপাসাপেক্ষ। জ্ঞান,যোগ,কর্ম প্রভৃতির বিরাট অনুষ্ঠান ছেড়ে কেবলমাত্র জিহ্বা-ওষ্ঠ
স্পন্দনসাধ্য কৃষ্ণনামে কেমন করে যে
কৃতার্থ হওয়া যায়, তা ভজনবিমুখ জীবের ধারণাতে আসে না।সেইজন্য
নারদঋষি এক্ষণে নিজের পূর্বজন্ম-
বৃত্তান্ত বলে প্রেমলাভের ক্রম দেখাচ্ছেন। বিশেষ জ্ঞাতব্য যে--------
কর্ম,যোগ,জ্ঞান ও ভক্তি এই চার পথেই সিদ্ধিলাভ করতে পৃথক পৃথক ক্রম আছে এবং কোন অধিকারী কোন সাধনা করতে সমর্থ,তারও ব্যবস্থা আছে।( স্বর্গাদি ভোগবাসনা
যুক্ত ব্যক্তি কর্মযোগের অধিকারী, বেদাদি শাস্ত্রোক্ত নিয়মে অশ্বমেধাদি যজ্ঞানুষ্ঠানে ইঁহারা সিদ্ধিলাভ করতে পারবেন। ঐহিক(ইহলোক)পারত্রিক
(পরলোক ) ফলকামনাবিহীন, শমদমাদি সাধনসম্পদযুক্ত,মুমুক্ষু ব্যক্তি জ্ঞান ও যোগমার্গের অধিকারী।
যথানিয়মে শ্রবণ,মনন,নিদিধ্যাসনে (একান্ত মনে বা নিবিষ্টমনে দেহজ্ঞানরহিতহয়ে চিন্তা ) জ্ঞানলাভ এবং যম নিয়মাদি অষ্টাঙ্গযোগসাধনে
নির্বিকল্পক (বিকল্পহীন)সমাধি প্রাপ্তি জ্ঞান ও যোগমার্গের সিদ্ধি। কিন্তু ভক্তিপথে অধিকারীনির্ণয় নাই,
শ্রীকৃষ্ণভজনে হয় সবে অধিকারী।
কিবা বিপ্র কিবা শূদ্র কি পুরুষ নারী।।
ভক্তি অতি প্রবলা এবং নিরপেক্ষা,চিত্তশুদ্ধি প্রভৃতি কিছুরই অপেক্ষা না রেখে যে সে ব্যক্তিকে কৃতার্থ করতে পারেন।শ্রীভগবদ্ভক্ত-
সঙ্গলাভেই ভক্তির বীজ রোপণ হয়,
তারপর ক্রমে ক্রমে শ্রবণ-কীর্তনে ভক্তিলতা বর্ধিত হয়ে প্রেমফল দান করে ও প্রেমে ভগবানের সাক্ষাৎ দর্শন ও সাক্ষাৎ সেবা লাভ হয়। নাদরমুনি পূর্বজন্মে দাসীপুত্র ছিলেন, সুতরাং কর্ম,যোগ ও জ্ঞানাদির যে তিনি অধিকারী নহেন,স্পষ্টই বুঝা যায়। মাত্র পাঁচ বৎসর বয়স,দুগ্ধেপোষ্য শিশু ; এ অবস্থায় ভক্তি ছাড়া আর কোনও সাধনই কৃপা করতে সক্ষম নহেন।নারদের জননী যে ব্রাহ্মণের দাসী ছিলেন,সেই ব্রাহ্মণগৃহে চাতুর্মাস্য কালে চারজন ব্রাহ্মণ অতিথি হলেন। ব্রাহ্মণের আদেশে দাসীপুত্র,সাধ্যমত তাঁদের সেবায় রত হল। বালক দেখে ব্রাহ্মণগণের কৃপা হল।অতিথি ব্রাহ্মণগণ সর্বদা কৃষ্ণনাম কীর্তন করেন, দাসীপুত্র তাহা শ্রবণ করেন এবং তাঁদের অবশিষ্ট প্রসাদ অন্ন ভোজন করে।এতেই ভগবতভক্তসঙ্গ লাভ হল,তাঁদের কৃপা
লাভ এবং কৃষ্ণনামশ্রবণাদি ভক্তির সাধন হয়ে গেল।ব্রাহ্মণগণ যদি মুদ্রিতনয়নে বসে যোগাভ্যাস করতেন তাহলে কিন্তু এই বালকের কিছুই লাভ হত না।কিন্তু ভক্তির কি অচিন্ত্য প্রভাব,তিনি ভক্ত মুখোচ্চারিত কৃষ্ণ নামের সঙ্গে সঙ্গে বালক হৃদয়ে প্রবেশ করে তা সরস করে দিলেন, দাসীপুত্রের নামে রুচি হল।
জয় নিতাই।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
তত্রান্বহং কৃষ্ণকথাঃ প্রগায়তামনুগ্রহে-
ণাশৃণবং মনোহরাঃ।
তাঃ শ্রদ্ধয় মেহনুপদং বিশৃণ্বতঃ প্রিয়-
শ্রবস্যঙ্গ মমাভবদ্রতিঃ।
তস্মিংস্তদা লব্ধরুচের্মহামতে প্রিয়-
শ্রবস্যাস্খলিতা মতির্মম।।
ইত্থং শরৎ প্রাবৃষিকাবৃতু হরের্বিশৃ-
ণ্বতো মেহনুসবং যশোহলামলম।
সঙ্কীর্তমানং মুনিভির্মহাত্মভির্ভক্তিঃ
প্রবৃত্তাত্মরজস্তমোপহা।।
প্রথম =নিরন্তর হরিকীর্তনরত সেই
ভাগবতোত্তম ব্রাহ্মণগণের কৃপায় তাঁদের চরণপ্রান্তে বসে হৃদয়ানন্দপ্রদ
পরম মধুর শ্রীগোবিন্দনাম-গুণ-রূপ
লীলাদিকথা শ্রবণ করতে লাগলাম,
অণুক্ষণ শ্রদ্ধাপূর্বক শ্রীগোবিন্দকথা শুনতে শুনতে আমার সেই মনোহর লীলাবিশিষ্ট শ্রীগোবিন্দে প্রীতি জন্মিল।
দ্বিতীয় =হে মহামতে!এইরূপ ক্রমে ক্রমে ভাবের আবির্ভাবে আমার চিত্তবৃত্তি শ্রীগোবিন্দনিষ্ঠ হল। তাতেই আমার বুদ্ধি বিমল হল এবং এই স্থূল ও সূক্ষ্মদেহ যে কেবলমাত্র শ্রীগোবিন্দ
সেবাতেই নিযুক্ত থাকা উচিত তা বুঝতে পারলাম।
তৃতীয় = এইরূপে বর্ষা ও শরৎ ঋতুর চারমাস নিরন্তর মহানুভব মুনিগণ কর্তৃক পরিগীত সর্বদুঃখহর শ্রীগোবিন্দের নির্মল যশঃ শ্রবণ করতে করতে আমাতে সর্বজীব-কলুষননাশিনী প্রেমভক্তির প্রকাশ হইল।
*********************************
তাৎপর্য্য== সিদ্ধি পেলে আর সাধন থাকে না,এই নিয়ম সর্বত্র। কিন্তু ভক্তিপথে তার বিপরীত।এতে সাধক যতই সিদ্ধির দিকে অগ্রসর হয়, ততই তার সাধন বাড়ে।শ্রীভগবদ্মক্তসঙ্গ
মহিমার শ্রবণাদিসাধনে রত সাধক প্রথমতঃ নানা বিষয়াভিনিবেশাদি অনর্থে জড়িত হয়ে সর্বদা শ্রবণাদি করতে পারে না, কিন্তু কিছুদিন পরে দেখা যায়,আর কোনও অনর্থ নাই,তখন অহর্নিশি শ্রবণাদিতে রত; এই অবস্থার নাম নিষ্ঠা,অর্থ্যাৎ কৃষ্ণসম্বন্ধ নিয়ে নিয়ত স্থিতি,কোন সময়েই বিরতি বা বিরক্তি নাই। নিষ্ঠা হলে শ্রবণকীর্তনাদির রসাস্বাদন হয়,
"প্রহ্লাদ" কৃষ্ণনামের আদ্যক্ষর "ক" দেখে কাঁদছেন কেন তা তখন অনুভব হয়।এর পরেই ভাবোদয়।
সূর্য্যোদয়ের পূর্বে যেমন সমস্ত অন্ধকার আপনা আপনি দূর হয়ে গিয়ে সূর্য্যের অস্ফূট রশ্মিজালে পূর্বদিক এক নব ভাব ধারণ করে,
সেইরূপ প্রেমসূর্য্য উদয়ের পূর্বেও সাধকহৃদয়ের সর্ববিধ অন্ধকার দূর হয়ে এক অভিনব অস্ফূট জ্যোতিতে হৃদয় আলোকিত হয়।এই ভাবের আবির্ভাবেই সাধকের কৃষ্ণে মমতা এবং দেহদৈহিকাদি সমস্তই কৃষ্ণার্থে বিনিয়োগ ইত্যাদি ঘটে থাকে।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
ভাগবতোত্তমোত্তম ব্রাহ্মণগণের মুখো
চ্চারিত কৃষ্ণকথা শুনতে শুনতে বালক দাসীপুত্রের সমস্ত অনর্থ দূর করে সর্বদা কৃষ্ণকথা শ্রবণরূপ নিষ্ঠার উদয়, তার পর আসক্তি,রুচি ও ভাবের বিকাশ। নারদমুনি ভক্তির প্রভাব স্মরণে আশ্চর্য্যান্বিত হয়ে ব্যাসকে বললেন, হে মহামতে! তুমি ত
জ্ঞানীশ্রেষ্ঠ,একবার ভেবে দেখ দেখি,এত করুণা কার ভান্ডারে আছে! কৃষ্ণকথা শুনতে শুনতে বালকহৃদয়েও প্রকৃত কর্তব্যতা বুদ্ধি আসিল,বুঝতে পারলাম কৃষ্ণ আমার প্রভু,আমি তাঁর দাস, যা করি বা করব
সমস্তই প্রভুর সেবা, আমার বলতে কিছুই নাই, আমার কেবল কৃষ্ণ।তখন আর কোনমতেই কৃষ্ণ হতে চিত্তবৃত্তি ফিরান যায় না। বর্ষা ও শরৎ ঋতু এই চারমাস মাত্র ভগবদ্ভক্তগণের সেবা ও তাঁদের মুখে নামাদিশ্রবণে আমার হৃদয়ের সমস্ত অন্ধকার দূর হল, তখন আর রজোগুণের চাঞ্চল্য কিংবা তমোগুণের আবরণ নেই, তখন অনাবৃত নিস্তরঙ্গ(তরঙ্গহীন বা ঢেউহীন) চিত্তবৃত্তিতে পূর্ণরূপে গোবিন্দকথামাধুর্য্য আস্বাদনে কৃতার্থ হতে লাগলাম।ইহাই পরাভক্তি বা প্রেমভক্তির অবস্থা। বিষয়সম্বন্ধগন্ধ-
লেশহীন পূর্ণ মমতামাখা হৃদয়খানি এই অবস্থায় হৃদয়েশ্বর গোবিন্দকে অর্পণ করে সাধক আনন্দ সাগরে ভাসমান হন।
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
তস্যৈবং মেহনুরক্তস্য প্রশ্রিতস্য হতৈনসঃ।
শ্রদ্দধানস্য বালস্য দান্তস্যানুচরস্য চ।।
জ্ঞানং গুহ্যতমং যত্তৎ সাক্ষাদ্ভগবতোদিতম্।
অন্ববোচন্ গমিষ্যন্তঃ কৃপয়া দীনবৎসলাঃ।।
অর্থ্যাৎ= আমি বালক,আমাকে অনুরক্ত (অনুরাগযুক্ত),বিনয়ী, পাপ-
শূন্য,শ্রদ্ধাযুক্ত, সংযতেন্দ্রিয়,ও আজ্ঞাবহ দেখে তথাপি সেই দয়ালু মুনিগণ যাবার সময় কৃপাপূর্বক আমাকে সাক্ষাৎ শ্রীনারায়ণকথিত পরমগুহ্যতম সেই ভক্তিযোগ উপদেশ কের গেলেন।
যেনৈবাহং ভগবতো বাসুদেবস্য বেধসঃ।
মায়ানুভাবমবিদং যেন গচ্ছন্তি তৎপদম্।।
অর্থ্যাৎ= এই ভক্তিযোগানুষ্ঠানেই আমি ষড়ৈশ্বর্য্যশালী মায়াধীশ শ্রীগোবিন্দের কৃপাশক্তিবৈভব জানতে পেরেছি ; ভাগ্যবান্ ব্যক্তিগণ এই ভক্তিযোগাশ্রয়েই শ্রীকৃষ্ণপার্ষদত্ব লাভ করেন।
এতৎ সংসূচিতং ব্রহ্মংস্তাপত্রয়চিকি-
ৎসিতম্।
যদীশ্বরে ভগবতি কর্ম ব্রহ্মণি ভাবিতম্।।
অর্থ্যাৎ= হে ব্যাস! সর্বনিয়ন্তা সর্বব্যাপী শ্রীগোবিন্দে কর্ম সমর্পণ করলে জীব ত্রিতাপমুক্ত হতে পারে,
ব্যাস তোমাকে প্রসঙ্গত বললাম।
/\/\/\/\/\/\/\/\/\/\/\/\/\/\/\/
তাৎপর্য্য== নারদঋষি ব্যাসদেবকে বললেন,হে ব্যাস!একে আমি বালক,তাতে দাসীপুত্র, কিন্তু তা বলে ভক্তিদেবী আমাকে উপেক্ষা করলেন না।ব্রাহ্মণের মুখে কৃষ্ণকথা শুনতে শুনতে আমার প্রেমোদয় হল ও ক্রমে শ্রদ্ধা,বিনয়,সংযম,ব্রাহ্মণগণের আনু-
গত্য প্রভৃতি সর্বসদগুণ আমাতে পূর্ণরূপে প্রকাশ পেল। না হবেই বা কেন? ""যস্যান্তি ভক্তিভর্গবত্যকিঞ্চনা,
সর্বৈগুর্ণৈস্তত্র সমাসতে সুরাঃ""।
শ্রীভগবানে ভক্তি থাকলে সর্বসদগুণের আবাসভূমি হয়। এই
ভাভক্তিদেবীর পূর্ণ কৃপার বিকাশ হলে, সেই মুনিগণ যেদিন ব্রাহ্মণ-
গৃহ হতে স্থানান্তরে যাবেন, তার পূর্বদিনে আমাকে সাক্ষাৎ শ্রীনারায়ণ
কথিত গুহ্যতম জ্ঞান উপদেশ করলেন। গীতাতে ভগবানের উক্তি দেখা যায়,""সর্বগুহ্যতমং ভূয়ঃ শৃণু মে পরমং বচঃ"" হে অর্জুন! সবগুহ্যতম কথা বলি শোন।
তারপর "যন্মনা ভব মদ্ভক্ত" প্রভৃতি গুহ্যতম কথা বললেন। এখানকার গুহ্যতম কথা কি,তাহা ত আগাগোড়াই দেখা যাচ্ছে ও যাবে, সুতরাং অগত্যা স্বীকার করতে হবে যে, গুহ্যতম জিনিসটি ভক্তির কথা ছাড়া আর অন্য কিছুই নহে। প্রথমতঃ
সর্বসাধারণ কথা জ্ঞান, তার পর গুহ্য কথা,(ভক্তিমিশ্র জ্ঞান, গুহ্যতর কথা,
জ্ঞানমিশ্রা ভক্তি, সর্বশেষে গুহ্যতম কথা, কেবলা ভক্তি।) এই কেবলা ভক্তি,জ্ঞানাদির কথার অপেক্ষা মাত্র না রেখে শুদ্ধ প্রীতিতে ভক্ত ও ভগবানের এক অচ্ছেদ্য বন্ধন ঘটিয়ে দিয়ে উভয়কেই নিত্য নবনবায়মান আনন্দসিন্ধু আস্বাদন করায়। হে ব্যাস! ভগবানের লীলারূপকথা গুহ্যতম কথা শ্রবণমাত্র আমি ভগবানের মায়ানুভব অর্থ্যাৎ কৃপাশক্তিবৈভব জানতে পারলাম; তখন বুঝলাম, ভগবানের কৃপাশক্তি
সর্বশক্তিগরীয়সী। কেবলমাত্র ভক্তিমার্গে থাকা ভাগ্যবান ব্যক্তিগণই ইহার একমাত্র অধিকারী।মায়ার জগৎ ছেড়ে সেই পরমপদ শ্রীগোবিন্দধামে যাবার ভগবৎ কৃপাই একমাত্র সঙ্গিনী।
*সংসার মরুতে পরিভ্রমণরত ত্রিতাপদগ্ধ জীবের প্রাণে কৃপাই শান্তি বারি বর্ষণ করে, ইহা ছাড়া অন্য কোন গতি নেই। শ্রীগোবিন্দচরণে অনুগত ও সর্বভাবে শরণাগত ভাগ্যবান জীবেরই
এই কৃপাশক্তির বিকাশ হয়। তাই বলছি,অনে কোন দিকে দৃষ্টি না করে যাতে শয়নে,স্বপনে,ভোজনে,বচনে, গমনে সর্বকার্য্যের সঙ্গেই ভগবানের সম্বন্ধ থাকে,তাহাই কর এবং জগৎজীবেকে তাহাই শিখাও। ভব-
রোগবৈদ্য ভক্তচূড়ামণিগণ ভব-রোগের এই মহৌষধই নির্বাচন করে গিয়াছেন।
জয় নিতাই।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
অময়ো যশ্চ ভূতানাং জায়তে যেন সুব্রত।
তদেব হ্যাময়ং দ্রব্যং ন পুনাতি চিকিৎসিতম্।।
অর্থ্যাৎ= হে সুব্রত!যে দ্রব্যে জীবের রোগ উৎপত্তি হয়,তাতেই কখনও সেই রোগ সারে না সত্য, কিন্তু তাতে কোন ঔষধ মিশ্রিত করে সেবন করলে সেই রোগ ঊৎপাদক দ্রব্যই রোগনাশক হয়।
এবং নৃণাং ক্রিয়াযোগাঃ সর্বে সংসৃতিহেতবঃ।
ত এবাত্মবিনাশায় কল্পন্তে কল্পিতাঃ পরে।।
অর্থ্যাৎ= এই প্রকার,জীবের সংসারে পতনহেতু কর্মও যদি ভগবানে অর্পিত হয়, তাহলে সেই কর্মই কর্মক্ষয় করতে সমর্থ হয়।
যদত্র ক্রিয়তে কর্ম ভগবৎপরিতোষণম্।
জ্ঞানং যত্তদধীনং হি ভক্তিযোগসমন্বিতম্।।
অর্থ্যাৎ= যদি শ্রকৃষ্ণপ্রীতিজনক কর্মের অনুষ্ঠান করা হয়,তাহলেই মোক্ষসাধক জ্ঞানলাভ হয়; যেহেতু মোক্ষসাধক জ্ঞান শ্রীকৃষ্ণার্পিত কর্মের অধীন।
কুর্বাণা যত্র কর্মাণি ভগবচ্ছিক্ষয়াহসকৃৎ।
গৃণন্তি গুণনামানি কৃষ্ণস্যানুস্মরন্তি চ।।
অর্থ্যাৎ= (যৎ করোষি যদশ্নাসি) প্রভৃতি গীতাদিপ্রোক্ত ভগবানের উপদেশে নিরন্তর শ্রীকৃষ্ণে কর্ম সমর্পণ করলে জীব কৃতার্থ হয় ও ভগবানের নাম গুণ প্রভৃতি স্মরণকীর্তন করবার সৌভাগ্য লাভ করে।
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
তাৎপর্য্য== ভক্তিপথ এর সমস্ত কথায় নতুন এবং উহা জ্ঞানী, যোগী প্রভৃতির ধারণার বিপরীত। সকলেই মনে করেন কর্মত্যাগ করতে পারলেই বুঝি চতুর্ভুজ হওয়া যাবে কিন্তু ভক্ত বলেন হে গোবিন্দ!আমি কর্মশূন্য জড় পদার্থ হতে চাই না আমার যেন কর্ম থাকে ও প্রতিকর্মেই যেন তোমার সঙ্গে সম্বন্ধ থাকে। কিন্তু ইহাতে মনে হতে পারে যে,যে কর্মফলেই জগতের সমস্ত জীব পুনঃ পুনঃ সংসারে যাতায়াত করছে, আবার সে কর্মই আশ্রয় করলে জীবের তাতে কেমন করে পরমানন্দ লাভ হবে? "অময়ো যশ্চ ভূতানাং" প্রভৃতি শ্লোকটি আলোচনা করলে আর এ সন্দেহ থাকবে না।জগতে দেখা যায়, প্লীহা যকৃৎ প্রভৃতির বৈষম্যজনিত রোগে ঘৃত মহাশত্রু, কিন্তু রোহিতক সংযোগে সেই ঘৃতই রোহিতক-ঘৃত নাম ধরে প্লীহা যকৃৎ প্রভৃতি রোগ নাশ করে।
সেইরূপ লৌকিক,দৈহিক প্রভৃতি কর্মের সহিতও যদি ভগবানের সহিত সম্বন্ধ থাকে,তা হতেই কর্মক্ষয় হবে। কৃষ্ণ-সম্বন্ধ শূন্য যাগ-যজ্ঞাদিতে জীবের বন্ধন হয়, কিন্তু কৃষ্ণের সম্বন্ধ থাকলে গমন,ভোজন প্রভৃতি দৈহিক কর্মেও বন্ধনমোচন হয়। জীব যখন ধর্ম,অর্থ,কাম,মোক্ষ বাসনার বশীভূত হয়ে কর্ম করে,তখন কৃষ্ণের দিকে দৃষ্টি থাকে না,ধর্ম,অর্থ,কাম ও মোক্ষ নিয়েই ব্যস্ত থাকে।কিন্তু যখন ঐ সমস্ত
বাসনায় জলাঞ্জলি দিয়া কেবলমাত্র কৃষ্ণসেবার অভিলাষে জীব কর্ম করতে থাকে,তখনই কৃষ্ণের প্রীতি-
বিধান হয়।জ্ঞানের ব্যবস্থাও এই রকম, কৃষ্ণসেবার অতিরিক্ত আর কিছু জানতে চেষ্টা করারও প্রয়োজন নাই।এইরূপে কিছুদিন কৃষ্ণ-সম্বন্ধ নিয়ে থাকতে থাকতে, গীতায় কৃষ্ণ অর্জুনকে শিক্ষা দিয়েছিলেন, সেই অধিকারে উপস্থিত হওয়া যায়।
"যৎ করোষি যদশ্নাসি যদ্দদাসি জুহোষি যৎ" প্রভৃতি গীতার ভক্তিপ্রকরণ পঠিত কৃষ্ণবাক্যের নিজের ভুক্তি,মুক্তি কিংবা সিদ্ধিবাঞ্জার অনুকূল ব্যাখ্যা না করে সোজা ভাবে দেখলে এই বুঝা যায় যে, ( রাজকর্মচারী বহু কাজই করে, কিন্তু সমস্ত কর্মই রাজার হয়,তার নিজের কিছুই নহে, সেইরূপ "কৃষ্ণ আমার প্রভু" এই ধারণা দৃঢ় রেখে কর্ম করলে "তৎ কুরুষ্ব মদর্পণং" কৃষ্ণের এই আজ্ঞা পালন করা হয়।ফলাকাঙ্খা হৃদয়ে রেখে "শ্রীকৃষ্ণার্পিতমস্তু" খুখে বললে হৃদয়ের দেবতা হৃদয়ে বসে হাসেন, আসেন না। হে ব্যাস! কিছুদিন কৃষ্ণ সম্বন্ধযুক্ত কর্ম করলেই দেখতে পাবে,
আর দিন বৃথা যাবে না,অহর্নিশি গোবিন্দ কথা প্রসঙ্গে স্মরণকীর্তন-রঙ্গে দিন অতিবাহিত হবে,মায়াহত কামমলিন চিত্ত-মরুভূমি প্লাবিত করে প্রেমের প্রবল বন্যা ছুটবে।
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
ওঁ নমো ভগবতে তুভ্যং বাসুদেবায় ধীমহী।
প্রদ্যুম্নায়ানিরুদ্ধায় নমঃ সঙ্কর্ষণায় চ।।
অর্থ্যাৎ= প্রণবাত্মক ষড়ৈশ্বর্য্যশালী বাসুদেব,প্রদ্যুম্ন,সঙ্কর্ষণ ও অনিরুদ্ধ এই চতুর্ব্যূহরূপী শ্রীভগবানকে মনে মনে ধ্যান ও প্রণাম করি।
ইতি মূর্ত্যভিধানেন মন্ডমূর্তিমমূর্তিকম্
যজতে যজ্ঞপুরুষং স সম্যগ্ দর্শনঃ পুমান।।
প্রাকৃতমূর্তিরহিত অথচ মন্ত্রধ্যানোক্ত মূর্তিমান যজ্ঞপুরুষ শ্রীভগবানকে যে ব্যক্তি এই মন্ত্রোক্ত বাসুদেব প্রভৃতি নামচতুষ্টয় দ্বারা আরাধনা করে, সে-ই
প্রকৃত তত্ত্বদর্শী।
ইমং স্বনিগমং ব্রহ্মন্নবেত্য মদনুষ্ঠিতম্।
অদান্মে জ্ঞানমৈশ্বর্য্যং স্বস্মিন্ ভাবঞ্চ কেশবঃ।।
হে ব্যাসদেব! পূর্বোক্ত ঋষিগণের উপদেশানুসারে অনুষ্ঠান করতে করতে ভগবান কৃপাপূর্বক আমাকে
আত্মতত্ত্বানুভব, তাঁর ঐশ্বর্য্যজ্ঞান ও
তাঁর চরণারবিন্দে প্রম প্রদান করলেন।
ত্বমপ্যদভ্রশ্রুত বিশ্রুতং বিভোঃ সমাপ্যতে যেন বিদাং বুভুৎসিতম্।
প্রখ্যাহি দুঃখৈর্মুহুরর্দিতাত্মনং সংক্লেশনির্বাণমুশন্তিনান্যথা।।
অর্থ্যাৎ= হে বহু শাস্ত্র জ্ঞান সম্পন্ন ব্যাসদেব! তুমিও ভগবানের জগদ্বিখ্যাত যশোরাশি কীর্তন কর,
তাতেই সমস্ত জ্ঞাতব্য বিষয় জানা যাবে।ইহা ছাড়া অন্য কিছুতেই পুনঃ পুনঃ জন্ম-মরণাদি সংসার ক্লেশক্লিষ্ট
(কষ্ট পাওয়া) জীবগণের দুঃখ নিবারণ হয় না, ইহাই বিবেকী ভক্তচূড়ামণিগণ বলে থাকেন।
********************************
তাৎপর্য্য== ব্যাস-নারদসংবাদ আলোচনা করলে দেখা যায়,প্রথমত নারদঋষি ভক্তিশূন্য জ্ঞান-কর্মাদির নিষ্ফলতা দেখালেন,তা পর "ত্যত্ত্বা স্বধর্মং" প্রভৃতি শ্লোকে জ্ঞান যোগ ও কর্মাদির কিছুমাত্র অপেক্ষা না রেখে পরমস্বতন্ত্রা ভক্তিই যে জীবকে কৃতার্থ করতে পারেন, তাহাই প্রতিপাদন (যুক্তি বা প্রমাণের দ্বারা নির্ধারণ) করে নিজের জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা করে দেখালেন। সৎসঙ্গে কৃষ্ণকথা প্রসঙ্গে কেমন করে প্রেম লাভ হয়।তার পর পঞ্চমবর্ষীয় দাসীপুত্র হয়েও কেবলমাত্র কৃষ্ণলীলাশ্রবণ প্রভৃতি যাজনের ফলে গুহ্যতম জ্ঞান লাভ করলেন,তাহাও দেখালেন। সম্প্রতি আরও একটি তত্ত্ব আলোচনা করা হয়েছে, এতদিন দাসীপুত্র কেবলমাত্র ব্রাহ্মণগণের সেবা ও তাঁদের মুখোচ্চরিত কৃষ্ণলীলাকথা শুনেই এতদূর কৃতার্থলাভ করেছেন, কিন্তু ইহার পরে আর এ সৎসঙ্গ পাবার সৌভাগ্য তাঁর থাকে না,কারণ চাতুর্মাস্য শেষ হয়েছে,ব্রাহ্মণগণ চলে যাবেন। আগুনের মধ্যে থাকলে লৌহ নরম থাকে সত্য, কিন্তু সে সম্বন্ধ ছাড়লে আবার তার কঠিনতা ফিরে আসে।তাই ব্রাহ্মণগণ এমন একটি অমূল্য বস্তু দিয়ে গেলেন,যার সম্বন্ধ থাকলে আর বহির্মুখতা এসে হৃদয়কে কঠিন করতে পারবে না।পার্ষদদেহ লাভ না করা পর্যন্ত সাধকদেহে অপরাধের আক্রমণের ভয় পদে পদেই আছে, কারণ সাধকদেহ নিয়ে মায়ার জগতেই থাকতে হয়; আগুনের কাছে থাকলে দেহে তাপ লাগবেই, কিন্তু অঙ্গে কোনও মহৌষধি
লেপন করলে আর সে ভয় থাকে না।তাই ব্রাহ্মণগণ দাসীপুত্রকে ""ওঁ নমো ভগবতে তুভ্যং"" ইত্যাদি ত্রয়স্ত্রিংশদক্ষরাত্মক চতুর্ব্যূহ মন্ত্র প্রদান করে গেলেন।যদিও মন্ত্রও শ্রীভগবানেরই নাম ছাড়া অন্য কিছুই নহে,তথাপি ভগবান এই মন্ত্রত্মক নামগুলিতে এক অচিন্ত্য শক্তি অর্পণ করেছেন এ মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিগণ ইহার এমনই সাধনপ্রণালী দেখিয়ে গিয়াছেনযে,ঠিক সেই নিয়মে থাকলে আর অপরাধাদির আক্রমণের ভয় থাকে না।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
অপরাধাদির আক্রমণের ভয় থাকে না। নারদমুনি,"ওঁ নমো ভগবতে তুভ্যং" প্রভৃতি মন্ত্রটি ব্যাসকে বলিয়া শেষে বললেন,হে ব্যাস! এই মন্ত্রে যে ব্যক্তি মন্ত্রমূর্তি অথচ অমূর্তি যজ্ঞ-
পুরুষের অর্চনা করে,সে শুষ্ক তর্কাদির অগোচর যথার্থ জ্ঞান লাভ করে।(এই শ্লোকস্থ মন্ত্রমূর্তি-শব্দটির
"মন্ত্রই তাঁর মূর্তি" তা ছাড়া আর পৃথক
চতুর্ভূজাদি মূর্তি নেই" এ অর্থ সমীচীন নহে; কারণ প্রতিমন্ত্রেরই ধ্যানোক্ত মূর্তি আছে,তাহা কল্পিত বা মায়িক বললে তা অবলম্বন করে জীব মায়ামুক্ত হতে পারে না; সুতরাং মন্ত্রমূর্তি শব্দের অর্থে মন্ত্রধ্যানোক্ত মূর্তিই বুঝতে হবে।অমূর্তি শব্দের অর্থ
"মূর্তিশূন্য" নয়,অমূর্তি শব্দের অর্থ প্রাকৃতমূর্তিহীন। প্রাকৃত বলিয়া বলে ঈশ্বর আকার।এই পাপে বহির্মুখ যায়
ছারখার। তবে এ কথাও সত্য, প্রেম
ভাবিত বুদ্ধি ব্যতীত প্রাকৃত বুদ্ধিতে সে করুণামাখা মূর্তির অস্তিত্ব স্বীকার করা কঠিন। নারদমুনি যথানিয়মে এই
মন্ত্রোক্ত মূর্তিমান ও মন্ত্রজপ করতে করতে ক্রমশ তত্ত্বজ্ঞান, ভগবানের ঐশ্বর্য্যজ্ঞান ও সাধনার চরম পরিণামে কৃষ্ণে পূর্ণ প্রীতি লাভ করলেন।"ইমং স্বনিগমং ব্রহ্মণ" প্রভৃতি শ্লোকটি আলোচনা করলে এই ক্রমটি বুঝা যায়। সাধকের প্রথমত তত্ত্বজ্ঞান হয়,তখন ভগবানের নির্বিশেষ চিৎ স্বরূপে অভিব্যক্তি হয়;
গীতায় "ব্রহ্মভূতঃ প্রসন্নাত্মা"প্রভৃতি শ্লোকে এই তত্ত্বের প্রকাশ।তার পর
ভগবানের চিদৈশ্বর্য্যের বিকাশ,
তারপর প্রেমাস্পদরূপে তাঁর সঙ্গে অচ্ছেদ্য সম্বন্ধ লাভ, সাধনার এই চরম ফল। নারদমুনি ব্যাসকে বললেন,হে ব্যাস!তুমিতো "অদভ্রশ্রুত"
অর্থ্যাৎ তোমার শাস্ত্রজ্ঞানও অল্প নহে,
তুমি গোবিন্দচরণারবিন্দে শরণাপন্ন হয়ে জীবকে তাহাই জানাতে চেষ্টা কর,যাহা জানলে আর অন্য কিছু জানতে ইচ্ছে করে না বা থাকে না।তাতে জীবের অনাদি সংসারবন্ধন
ছুটে যাবে ত্রিতাপদগ্ধ জীব কৃষ্ণ-চরণ
বৃক্ষমূলে বসে তাঁর করুণার ছায়ায় শীতল হবে।তুমি ব্রহ্মজ্ঞানে পরিপূর্ণ হয়েও প্রাণে শান্তি পাচ্ছ না,কি যেন নাই বলে বোধ হচ্ছে ; তাতেই বুঝতে পার যে, এখনও কিছু জানতে বাকী আছে কিনা; সেটি অন্য কিছু নহে, মধুরাতিমধুর গোবিন্দলীলা। তাঁর প্রকাশেই হৃদয়শিলা গলে নয়নে ধারা বহিবে,তার পূত (পবিত্র) প্রবাহে জগৎ কৃতার্থ হবে।
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
""সূত"" পুরাণ পাঠকগণের উপাধি।
নৈমিষারণ্যবাসী ঋষিগণ যাঁর নিকট
শ্রীভাগবত শ্রবণ করেছিলেন তাঁর নাম
"উগ্রশ্রবাঃ" পিতার নাম লোমহর্ষণ।
শ্রীভাগবতকথা শ্রবণ করবার জন্য সর্বদা উৎকর্ণ (শোনার জন্য ব্যাকুল)
হয়ে থাকতেন বলিয়া ইহার নাম উগ্রশ্রবাঃ। ইঁহার পিতাও সর্বদা শ্রীকৃষ্ণ প্রেমানন্দে পুলকিত থাকতেন বলিয়া তাঁর নাম লোমহর্ষণ।ইঁহারা জাতিতে শূদ্র যে তাহা শ্রীমদ্ভাগবতেই দেখা যায়।
মন্যোতাং ত্বাং বিষয়ে বাচাং স্নাতমন্যত্র ছান্দসাৎ। (শ্রীমদ্ভাগবত ১ম স্কন্ধ ৪র্থ অধ্যায়)
এই শ্লোকের টীকায় শ্রীধরস্বামীপাদ বলেছেন- ""ছান্দসাদন্যত্র বৈদিকাদ্ব্য-
তিরেকেণ, সূতস্যাত্রৈবর্ণিকত্বাৎ""
অর্থ্যাৎ= শ্রীব্যাসদেবের কৃপায় ইঁহারা
পুরাণ শাস্ত্র পারদর্শী ছিলেন ও ভজনবলে ভগবানের কৃপাপাত্র ছিলেন।শৌণকাদি পরম আদরে ইঁহাদের নিকট ভগবৎকথা শুনতেন।
কিবা ন্যাসী কিবা বিপ্র শূদ্র কেনে নয়।
যেই কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা সেই গুরু হয়।।
*********************************
এবং নিশম্য ভগবান দেবর্ষের্জন্ম কর্ম চ।
ভূয়ঃ পপ্রচ্ছ তং ব্রহ্মণ্ ব্যাসঃ সত্যবতীসুতঃ।।
অর্থ্যাৎ= সূত বললেন,হে শৌণক! সত্যবতীনন্দন ব্যাসদেব দেবর্ষি নারদের জন্ম ও ভজনবৃত্তান্ত শুনে আবার তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন।
তাৎপর্য্য= ভগবদ্ ভক্তের জীবন চরিতের কি অপূর্ব মহিমা যে নারদের কথা শুনে অত্যুচ্চ জ্ঞান-শিখরে আরোহণকারী ব্যাসদেবেরও হৃদয়ে ভক্তির বাতাসে আন্দোলিত হতে লাগল।যদিও তিনি ভগবান অর্থ্যাৎ সর্বজ্ঞশিরোমণি,তথাপি অজ্ঞের ন্যায় আবার তিনি জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন ও মনে মনে চিন্তা করলেন যে,দাসীপুত্র চারমাস মাত্র শ্রীভগবদ্ভক্তসঙ্গে শ্রীকৃষ্ণনামগুণলীলাদি-বার্তা শুনেই প্রেম পর্যন্ত লাভ করল!তখনও তাঁর বয়স পাঁচ বৎসর মাত্র,না জানি তাঁর সুদীর্ঘ জীবনতরণী কৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গে ভেসে ভেসে প্রেমানন্দের বাতাসে দুলতে দুলতে কেমন করে অপার ভবসিন্ধু পার হয়ে কৃষ্ণচরণতটে লেগেছিল।তাই পরম কৌতূহলাক্রান্ত হয়ে আবার তিনি প্রশ্ন করতে আরম্ভ করলেন।নারদের পূর্বজন্ম বৃত্তান্ত হয়ত বহির্মুখের প্রাণে ভাবের উৎকণ্ঠা জাগাতে পারবে না, কিন্তু তা ব্যাস-
দেবের জ্ঞানপূত নির্মল হৃদয় স্পর্শ করে ভজনাভিলাষে পর্য্যবসিত( সমাপ্তি লাভ করল এমন)
করিল।
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
* শ্রী ব্যাস উবাচ*
ভিক্ষুভির্বিপ্রবসিতে বিজ্ঞানাদেষ্টৃভিস্তব।
বর্তমানো বয়স্যাদ্যে ততঃ কিমকরোদ্ভান্।
অর্থ্যাৎ= ব্যাদেব বললেন,হে দেবর্ষে!
আপনার তত্ত্ব উপদেশক ব্রাহ্মণগণ
চলে গেলে আপনি কি করলেন?
স্বায়ম্ভুব কয়া বৃত্ত্যা বর্তিতং তে পরং বয়ঃ।
কথং চেদমুদস্রাক্ষীঃকালে প্রাপ্তে কলেবরম্।।
অর্থ্যাৎ= হে ব্রহ্মনন্দন!আপনার পর জীবনই বা কি ভাবে অতিবাহিত হল এবং দাসীপুত্র কলেবরই (শরীরই) বা
কি ভাবে ত্যাগ করলেন।
প্রাককল্পবিষয়ামেতাং স্মৃতিং তে মুনি
সত্তম।
ন হ্যেষ ব্যবধাৎ কাল এষ সর্বনিরাকৃতিঃ।।
অর্থ্যাৎ= হে মুনিসত্তম! এই সর্ব স্মৃতি-
লোপকারী কাল (সময়) আপনার পূর্ব
জন্মের স্মৃতি লোপ করতে সমর্থ হয় নাই কেন?
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
তাৎপর্য্য= ব্যাসদেব সকল সাধনারই
সিদ্ধিক্ষেত্রে উপস্থিত হয়েছেন,জ্ঞান,
বৈরাগ্য প্রভৃতি কোনও সম্পদেরই
তাঁর অভাব নেই, কিন্তু অভাব কেবল
পূর্ণ শান্তির। সুতরাং নারদের পূর্বজন্ম
বৃত্তান্ত শুনে ব্যাস মনে মনে ভাবছেন,
ভক্তির সাধনা জাতি,কুল,বয়স,বিদ্যা
প্রভৃতির আর অপেক্ষা না করে পূর্ণ
শান্তি এবং পূর্ণ আনন্দের প্রবাহে ভক্ত
হৃদয় প্লাবিত করে।ভক্তের ক্ষণসঙ্গেও
যে লাভ হয়,শত বৎসর যোগ- জ্ঞান
আদির সাধনায় তাহা হয় কি না সন্দেহ।সেই ভাগবতোত্তমোত্তম ব্রাহ্মণ
গণের সঙ্গে কৃষ্ণকথারঙ্গে দাসীপুত্রও
আনন্দের তরঙ্গে ভেসেছিলেন,আর আমি এই নির্জন বদরিকাশ্রমে মুদ্রিত
নেত্রে দীর্ঘকাল বসে থেকেও শান্তির ভিক্ষারী।যাইহোক, ব্রাহ্মণগণ চলে গেলে তাঁদের সঙ্গহারা পাঁচবছরের
শিশু দাসীপুত্র কি করেছিল, গৃহে থেকেই মানসে গোবিন্দসেবাসুখ আস্বাদন করে কৃতার্থ হয়েছিল? কিংবা গৃহত্যাগ করে কোনও সাধনে দাসীপুত্রদেহ ত্যাগ করে এই নারদের দেহলাভ করেছিল,তা জানবার জন্য বড়ই কৌতূহল হচ্ছে।ব্রাহ্মণগণের
সঙ্গে ও তাঁদের মুখোচ্চারিত গোবিন্দ
গুণশ্রবণপ্রভাবে দাসীপুত্রের যে প্রেম
লাভ হয়েছিল,তা তো নারদের মুখে শুনলাম, কিন্তু প্রেমলাভের পর অবশিষ্ট থাকে সাক্ষাৎদর্শন ও সাক্ষাৎ
সেবালাভ। সাক্ষাৎদর্শন সাধকদেহেই
কথঞ্চিৎ(কোনোরকমে) হতে পারে। কিন্তু সাক্ষাৎসেবালাভ সিদ্ধদেহ ব্যতীত হয় না। সুতরাং দাসীপুত্রের কি ভাবে হয়েছিল তা জানা প্রয়োজন, কারণ ভক্তের ভক্তিসাধনা ও তাতে সিদ্ধিলাভ বৃত্তান্ত শ্রবণে প্রথম সাধকের সাধনার প্রবৃত্তি বাড়ে ও পথ
পরিচয় হয়।
◆
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
তাই ব্যাসদেব নারদঋষিকে জিজ্ঞাসা করছেন, দেবর্ষে! অগ্নির সঙ্গে থাকলে
কঠিন লৌহও দ্রব(তরল) হয়, কিন্তু অগ্নির সঙ্গ ছাড়লে আবার লৌহে পূর্ব কঠিনতা ফিরে আসে।ব্রাহ্মণগণ সঙ্গে আপনার হৃদয় দ্রব হয়েছিল,সত্য, কিন্তু তাঁরা চলে গেলে আপনার কি অবস্থা হল? সাধকহৃদয়ে প্রেমকল্প-
লতার অঙ্কুরোদগম হলেও সাধনভক্তির জলসেক না করলে তা শুকিয়ে যায়, কিন্তু আপনার পাঁচবছর
মাত্র বয়সে ব্রাহ্মণাবাসে দাসীপুত্র অবস্থায় থেকে কেমন করে তা সম্ভবপর হল? আপনি এখন সিদ্ধদেহ
লাভ করেছেন,অনবরত বীণাযন্ত্রে হরিগুণগান করে প্রেমের তরঙ্গে তরঙ্গে ভেসে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু সেই দাসীপুত্রদেহ কেমন করে ত্যাগ করলেন ও এই কৃষ্ণপ্রেমভাবিত দেহ কেমন করেলাভ করলেন,তা জানতে
বড়ই বাসনা হয়। কালে সবই মুছে যায়।আজ আমার হৃদয়ে কোন ভাবের প্রস্ফূরণ(কম্পন) হল, আপনার সেই সুদূর অতীত পূর্বকল্পের
স্মৃতি এখনও জেগে থেকে কালের নিত্য নব নব চিত্র আঁকবার শক্তির অক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে,ইহারই বা কারণ কি?
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
* শ্রীনারদ উবাচ *
ভিক্ষুভির্বিপ্রবসিতে বিজ্ঞানাদেষ্টৃভির্মম
বর্তমানো বয়স্যাদ্যে তত এতদকারষম্
অর্থ্যাৎ=আমার তত্ত্ব উপদেশক ব্রাহ্মণগণ চলে গেলে আমি বাল্যবয়সেই ইহা (পরে বর্ণিত) করলাম।
একাত্মজা মে জননী যোষিন্মূঢ়া চ কিঙ্করী।
ময্যাত্মজেহনন্যগতৌ চক্রে স্নেহানুবন্ধনম্।।
অর্থ্যাৎ= আমার জননী স্ত্রীজাতি সুলভ স্নেহমুগ্ধা,তাতে আবার তাঁর আমি একমাত্র পুত্র, সুতরাং তিনি অনন্যগতি; আমাকে বড়ই স্নেহ করতেন।
সাস্বতন্ত্রা ন কল্পাসীদযোগক্ষেমং মমেচ্ছতী।
ঈশস্য হি বশে লোকো যোষা দারুময়ী যথা।।
অর্থ্যাৎ= ঈশ্বরাধীন জীব বা কাষ্ঠপুত্তলিকা যেমন স্বেচ্ছায় কিছু করতে পারে না, সেইরূপ আমার জননীও আমার কল্যাণবিধানে ইচ্ছে করলেও তা সফল হত না।
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
তাৎপর্য্য= ব্যাসদেবের পূর্ণ আবেগ ও
উৎকণ্ঠাপূর্ণ বাক্য শ্রবণ করে নারদঋষি বলতে লাগলেন,হে ব্যাস!
সেই ভাগবতোত্তমোত্তম ব্রাহ্মণগণ চলে গেলেন বটে, কিন্তু আমাকে যা দিয়ে গেলেন, তাতেই আমার জীবন সার্থক হয়ে গেল।যদিও তখন আমি বালক,তথাপি পূর্ণ বৈরাগ্য এবং হৃদয়ের দেবতাকে নির্জনে বসিয়ে ধ্যান করবার বাসনা অতি প্রৌঢ় ( প্রবীণ) হয়ে উঠল।সেই ব্রাহ্মণের গৃহ, সেই স্নেহময়ী জননীর বুকভরা স্নেহ সবই আছে, কিন্তু আমার যেন কিছুই ভাল লাগে না,মনে হয়, আমার মহাবন্ধন কেমন করে ছুটবে? আমার জননীর আমিই একমাত্র সম্বল,তিনি সর্বদাই আমার হিতচিন্তা এবং হিতসাধনে রতা, কিন্তু পরাধীনা তাঁর কোন বাসনাই পূর্ণ হয় না।তাঁকে দেখে আমার মনে হয়, ভগবান এমনি করে জগতের জীবগণকে মায়া পাশে বেঁধে রেখেছেন,তারা যা করতে ইচ্ছে করে তা করতে পারে না,কেবলমাত্র চিত্তের আশঙ্কা ও চাঞ্চল্য মাত্রই সার হয়। সুতরাং যাঁর মায়ায় অনন্তকোটি বিশ্ব-
ব্রহ্মান্ড বদ্ধ,তাঁরই চরণে মতি থাকাই বুদ্ধিমানের কর্তব্য।আমার জননী বাৎসল্যমুগ্ধা, আমিই তাঁর ধ্যান জ্ঞান,
কিন্তু "কে কার পুত্র,কে কার জননী"
তা স্ত্রীজাতি ভগবানের পূর্ণ কৃপা ছাড়া কি বুঝতে পারবে? হায়! আমার ত জননীর স্নেহে বাঁধা থাকলে সেই পরম পিতার স্নেহে বঞ্চিত হতে হবে।পরম স্নেহময় গোবিন্দের স্নেহের তুলনায় জাগতিক স্নেহ তুচ্ছাতিতুচ্ছ,
কিন্তু কি করব,জননী ত তা বুঝবেন না, ব্রাহ্মণগণ যদি আমার এই স্নেহবন্ধন ঘুচিয়ে দিয়ে যেতেন,তাহলে কৃতার্থ হতাম। হে ব্যাস! এইরূপে আমি সর্বদা অন্যমনস্কভাবে অবস্থান করি,আর পুত্রপ্রাণা আমার জননীও কেমন করে আমার সুখবিধান করবেন,এই চেষ্টায় রত থাকেন ও মধ্যে নিরাশার দীর্ঘ নিশ্বাস এবং হতাশার অশ্রুজলে ব্যাপ্ত হন।
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
অহঞ্চ তদব্রহ্মকুল ঊষিবাংস্তদপেক্ষয়া।
দিগদেশকালাব্যুৎপন্নো বালকঃ পঞ্চহায়নঃ।।
অর্থ্যাৎ= তৎকালে বা সেইসময়ে আমি পাঁচবৎসর বয়স্ক বালক, সুতরাং দিক্ দেশ ও কালাদি সম্বন্ধে আমার কিছুই জ্ঞান নেই, আমি মাতার স্নেহবন্ধনে বন্ধ হয়ে সেই ব্রাহ্মণগৃহেই বাস করতে লাগলাম।
একদা নির্গতাং গেহাদদুহন্তীং নিশি গাং পথি।
সর্পোহদশৎ পদাস্পৃষ্টঃ কৃপণাং কালচোদিতঃ।।
অর্থ্যাৎ= এইভাবে কিছুদিন অতিবাহিত হলে, একদিন আমার দীনা(অত্যন্ত অভাবগ্রস্থ মাতা) গো-
দোহনার্থ রাত্রিতে যেমন পথে বের হয়েছিলেন,অমনি তাঁর ঈষৎ পদ-
স্পর্শমাত্রেই এক কাল-প্রেরিত সর্প তাঁকে দংশন করল।
তদা তদহমীশস্য ভক্তানাং শমভীপ্সতঃ।
অনুগ্রহং মন্যমানঃ প্রতিষ্ঠং দিশমুত্তরাম্।।
অর্থ্যাৎ= শ্রীভগবান শরণাগত প্রতিপালক; আমি মনে করলাম, আমার মাতৃমরণ তাঁরই কৃপা; এইরূপ মনে করে তৎক্ষণাৎ উত্তরদিকে চলে গেলাম।
&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&
তাৎপর্য্য= নারদমুনি বলতে লাগলেন, কি করব! গোবিন্দ বিনা গতি নাই! স্নেহের বন্ধন,মমতার শৃঙ্খল, এ সমস্ত যদি কেউ নিজে ছিঁড়তে পারত,তাহলে আর ভাবনা কি? সকলেই মুক্ত হয়ে যেত।সেই ব্রাহ্মণ
গৃহে জননীর স্নেহবন্ধনের মধ্যে থেকে মনে মনে তাই ভাবতে লাগলাম, শ্রী
গোবিন্দ বিনা আর গতি নাই।তিনি যদি এই অবোধ বালকের ক্ষুদ্র প্রাণের অব্যক্ত অস্ফুট ভাষা বুঝে জগতের স্মেহবন্ধন খুলে দিয়ে নিজ
চরণের সহিত কৃপার বন্ধনে বাঁধেন, তবেই নিস্তার পাব,নচেৎ আর গতি নাই।একবার মনে করি,বনে চলে যাই,
কিন্তু কোন পথে কোথায় যেতে হয় তাও জানি না। মায়ের স্নেহে, নিজের
বুদ্ধির অভাবে,বৈরাগ্যের অপূর্ণতায়,
কৃপাময়ের কৃপার অপ্রকাশে, ব্রাহ্মণ
গৃহেই বাস করতে লাগলাম।
হে ব্যাস! কৃষ্ণের কৃপার কাহিনী আর কত বলব!
(কৃষ্ণ তোমার হঞয়া যদি বলে একবার।
ভববন্ধ হইতে কৃষ্ণ তারে করে পার)
প্রাণে কিছু থাক বা না থাক, মুখের অস্পৃষ্ট শরণাগতিবাক্যেই শরণাগত
প্রতিপালকের প্রাণে টান পড়ল, আমার সমস্ত বাঁধা দূর হয়ে গেল।
আমার জননী রজনীতে গো-দোহন করতে যেতেন; একদিন তাঁকে সর্পে দংশন করল,সর্প বিষে জর্জরিত হয়ে স্নেহের বৃক্ষ ভূপতিত হল, আমার মমতার বাসা ভেঙ্গে গেল। আর তখন ধরে কে? কৃষ্ণ-চরণ-কল্পবৃক্ষের উদ্দেশ্যে পাখী উড়ে গেল। হে ব্যাস!
করুণাময়ের এই অপ্রত্যাশিত অযাচিত করুণায় আত্মহারা হয়ে আমি উত্তরদিক লক্ষ্য করে চলতে আরম্ভ করলাম।পথ চিনি না,দিগ্বি-
দিক জ্ঞান নাই,তাঁরই কৃপামাত্র পাথেয় নিয়ে অজানা পথে চলতে আরম্ভ করলাম।
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
স্ফীতান্ জনপদাং স্তত্র পুরগ্রামব্রজা-
করান্।
খেটখর্বটবাটীশ্চ বনান্যুপবনানি চ।।
চিত্রধাতুবিচিত্রাদ্রীনিভভগ্নভুজদ্রুমান্
জলাশয়াঞ্জিবজলান্ নলিনীঃ সুর-
সেবিতাঃ।।
চিত্রস্বনৈঃ পত্ররথৈর্বিভ্রমদভ্রমরশ্রিয়ঃ।
নলবেণুশরস্তম্ব-কুশকীচকগহ্বরম্।।
এক এবাতিযাতোহহমদ্রাক্ষং বিপিনং মহৎ।
ঘোরং প্রতিভয়াকারং ব্যালোলূকশিবা
জিরম্।।
অর্থ্যাৎ= (ব্রাহ্মণগৃহ হতে নির্গত হয়ে )
সুসমৃদ্ধ জনপদ,নগর,গ্রাম,গোপাবাস
রত্নাদির খনি,কৃষকগ্রাম,পর্বত নিকটস্থ গ্রাম,পুষ্পবাটিকা,বন,উপবন, নানা
বিধ ধাতুশোভিত পর্বতশ্রেণী, মাতঙ্গভগ্ন বৃক্ষশ্রেণী, স্বচ্ছসরোবর, কলকন্ঠ-বিহঙ্গমনাদপ্রবুদ্ধ ইতস্তত
পরিভ্রমণশীল ভ্রমরকুলব্যাপ্ত সুর সেবিত সরসী প্রভৃতি অতিক্রম করে
নল,বেণু,শর,তৃণগুচ্ছ,কূশ, কীচকাকীর্ণ-মধ্যস্থল,সর্প-পেচক-
শিবাদির ক্রীড়াভূমি,নিবিড় ঘোর অরণ্যস্থলে উপস্থিত হলাম।
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
কীচকাকীর্ণ = বাঁশের ঝাড়। শিবা= শৃগাল। গোপাবাস=গোয়ালপাড়া।
তাৎপর্য্য= উদভ্রান্ত(ব্যাকুল)দৃষ্টিতে, স্খলিতচরণে, ব্যাকুলিত চিত্তে চলতে আরম্ভ করলাম, ব্রাহ্মণাবাস (ব্রাহ্মণগৃহ) ছেড়ে ক্রমে ক্রমে কত গ্রাম,নগর প্রভৃতি অতিক্রম করে ঘোর বনে প্রবেশ করলাম।কি দেখলাম,কোথায় গেলাম, তা আমার বলবার সাধ্য নেই; মনে হতে লাগল,কোন বিচিত্র শিল্পী এই বিচিত্র দৃশ্য আঁকিয়া জগতের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।ঘোর নিবিড় বন,সর্পের গর্জন,পেচকের কঠোর চীৎকার, সিংহ ব্যাঘ্রাদির ঘোরতর রবে মুখরিত সেই স্থান ভয়প্রদই বটে, কিন্তু কে যেন
এই মহাভয়ের মধ্যেও আমায় অভয় দিচ্ছেন।প্রতিপদেই যেন কার পদশব্দ কর্ণগোচর হয়,ঘোর সিংহব্যাঘ্রাদির রবের মধ্যেও যেন কি এক মধুর নিস্বনে(শব্দে)প্রাণে উৎসাহ জাগিয়ে দেয়।এইভাবে নানা বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়া চলতে লাগলাম। লক্ষ্য করে দেখলে বনের প্রতিবস্তুর মধ্যেই বনমালীর করুণার চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু আমার সে নয়ন নাই, বনই দেখলাম,বনবিহারীকে দেখলাম না।কাজেই অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে দূর হতে দূরতর ঘোর হতে ঘোরতর বনে প্রবেশ করলাম।
জয় নিতাই।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
পরিশ্রান্তেন্দ্রিয়াত্মাহং তৃটপরীতো বুভুক্ষিতঃ।
স্নাত্বা পীত্বা হ্রদে নদ্যা উপস্পষ্টো গতশ্রমঃ।।
তস্মিন্ নির্মনুজেহরণ্যে পিপ্পলোপস্থ আশ্রিতঃ।
আত্মনাত্মস্থমাত্মানং যথাশ্রুতমচিন্তয়ম্।।
অর্থ্যাৎ= (এইরূপে বহুদূর চলতে চলতে) আমার দেহ ও ইন্দ্রিয় অত্যন্ত
ক্লান্ত হয়ে পড়ল;ক্ষুধা ও পিপাসায় অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়লাম,তখন নিকটবর্তী কোনও নদীর হ্রদে স্নান ও জলপান পূর্বক কিঞ্চিৎ সুস্থ বোধ করলাম,পরে আচমনপূর্বক সেই নির্জন অরণ্য মধ্যে কোনও অশ্বত্থ বৃক্ষমূলে উপবেশন করে সেই ব্রাহ্মণ
গণ কথিত ধ্যানানুসারে হৃদয়স্থ পরমাত্মাকে মনে মনে চিন্তা করতে লাগলাম।
********************************
তাৎপর্য্য= দীর্ঘপথ অতিক্রমণে ক্ষুধা ও পিপাসা এসে আক্রমণ করল। বনে
তো মা নেই, কে আমায় ক্ষুধায় অন্ন ও
পিপাসায় জল দিবে? কিন্তু দেখলাম,
আমি সহায়হীন নহি। এই ঘোর বনেও
কে যেন আমার জন্য স্বচ্ছ সরোবর রেখে দিয়েছেন। শীতল জলে অবগাহন (স্নান) করলাম, অঙ্গ শীতল হল,অঞ্জলী ভরে জলপান করলাম,প্রাণে শান্তি আসিল।শ্রান্তি ও
ক্লান্তি কোথায় চলে গেল।জনশূন্য অরণ্যস্থল,মনে করলাম জন-কোলাহলের বাইরে এসেছি, একবার গুরুপ্রদর্শিত হৃদয়ের দেবতার সঙ্গে দেখা করি।নির্জন অশ্বত্থ বৃক্ষমূলে বসে সর্বমূল-বস্তুর
অন্বেষণে নয়ন মুদ্রিত করলাম ও মনে করলাম, বনে তো দেখছি না,বুঝি মনে আছেন।তরঙ্গায়িত মানসসরোবর ধ্যানযোগে স্থির করতে চেষ্টা করলাম,বড়ই প্রাণে আশা, বোধহয় সেখানে প্রাণের দেবতার প্রতিবিম্ব পড়বে।
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
ধ্যায়তশ্চরণাম্ভোজং ভাবনির্জিতচেতসা।
ঔৎকন্ঠ্যাশ্রুকলাক্ষস্য হৃদ্যাসীন্মে শনৈর্হরিঃ।।
প্রেমাতিভরনির্ভিন্ন-পুলকাঙ্গোহতিনির্বৃতঃ।
আনন্দসংপ্লবে লীনো নাপশ্যমুভয়ং মুনে।।
অর্থ্যাৎ=( প্রথম শ্লোক) ভক্তি ভাবিত চিত্তে শ্রীগোবিন্দ চরণারবিন্দ ধ্যান করতে করতে দর্শন উৎকণ্ঠায় আমার
নয়নদ্বয় অশ্রুজলে ভরে গেল।তখন সর্বদুঃখহর শ্রীহরি ক্রমে আমার হৃদয় কমলে আবির্ভূত হলেন।
দ্বিতীয় শ্লোক= হে মুনে! তখন প্রেমাতিশয়ে আমার সর্বশরীর পুলকিত হল,পরমানন্দলাভে মূর্ছিত প্রায় হলাম, আত্মজ্ঞান ও শ্রীভগবদ্দর্শন লোপ হয়ে গেল।
#######################
তাৎপর্য্য= নারদমুনি নির্জনে বসে গুরুদত্ত মন্ত্রে দেবতার ধ্যানে রত হলেন।ভাব-বারিপূর্ণ হৃদয়-সরসীর
মাঝে যখন শ্রীহরির চরণকমল ফুটে উঠল, তখন মন-ভ্রমর ছুটাছুটি ছেড়ে স্থিরভাবে মধুপানে বসিল।ভাববারি হৃদয় ছাপাইয়া নয়নপথে নির্গত হয়ে বুক ভাসিয়ে ধরণী সিক্ত করতে লাগল।বিমল আনন্দে প্রাণ ভরে গেল।আনন্দের উচ্ছাসে আনন্দময়ের
চরণে পুষ্পাঞ্জলি দিবার জন্য শরীর কন্টকিত(রোমাঞ্চিত) হয়ে কদম্ব-
পুষ্পের আকার ধারণ করল।দেখতে দেখতে আনন্দের বিমল প্রবাহে জ্ঞান কোথায় ভেসে গেল,জ্ঞেয় ও জ্ঞাতা হারিয়ে গেল। চিত্তের চাঞ্চল্য থাকতে
ধ্যান করলেও ধ্যেয় বস্তুর দর্শন ঘটে না। ক্রমে ক্রমে সাধনভক্তির পরিপাকে প্রেমলাভ হলে প্রেমভাবিত
নিশ্চল চিত্তে ধ্যান করলে ধ্যেয় বস্তুর
স্ফুরণ হয়। কিন্তু প্রেমিকহৃদয়ের উৎকণ্ঠা তাতে দূর হয় না।তখন হৃদ-
বৃত্তির বাইরে ইন্দ্রিয়বৃত্তিতে ধ্যেয় বস্তুকে এনে সাক্ষাৎ দর্শনের অভিলাষ হয়।ধ্যেয়বস্তু গোবিন্দও প্রেম ভাবিত হৃদয়ে আবির্ভূত হবার লোভ সম্বরণ করতে পারেন না, তৎক্ষণাৎ হৃদয়ে আবির্ভূত হয়ে ক্রমেক্রমে প্রেমের অনুসন্ধান করতে করতে প্রেমভাবিত ইন্দ্রিয়বৃত্তি পর্যন্ত এসে পড়েন। ভক্ত আত্মহারা হয়ে যায়, ধ্যেয়বস্তুর স্বরূপানন্দসাগরে মন প্রাণ ডুবিয়ে দিয়ে আর কিছুই জানতে বা দেখতে পায় না। নারদের অবস্থাও
ঠিক সেইরূপ হয়েছিল,তাই তিনি ব্যাসকে বললেন, "নাপশ্যমুভয়ং মুনে"
আর আত্মজ্ঞান কিংবা ধ্যেয় জ্ঞান কিছুই রাখতে পারলাম না। যাঁর জন্য ব্রাহ্মণগৃহ ছেড়ে বনে এলাম,তাঁকে নির্জনে বসে মনে পেয়েও হারালাম।
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
রূপং ভগবতো যত্তন্মনঃকান্তং শুচাপহম্।
অপশ্যন্ সহসোত্তস্থে বৈক্লব্যাদদুর্মনা ইব।।
অর্থ্যাৎ=সেই মনোরম,তাপনাশন অনির্বচনীয় শ্রীমূর্তি দেখতে দেখতে অদৃশ্য হলে,আমি অতিশয় দুঃখিত ও বিমনা হয়ে আসন হতে উঠলাম।
*দিদৃক্ষুস্তদহং ভূয়ঃ প্রণিধায় মনো হৃদি।
বীক্ষমাণোহপি নাপশ্যমবিতৃপ্ত ইবাতুরঃ।।
অর্থাৎ== আবার সেই রূপ দর্শন আশায় হৃদকমলে মনঃস্থির করে বারে বারে চেষ্টা করেও আর দেখতে পেলাম না।বাসনা পূর্ণ হল না, অতিশয় ব্যাকুল হলাম।
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
তাৎপর্য্য= দরিদ্র ব্যক্তি ধনের আশায় ইতস্ততঃ(এখানে সেখানে)ভ্রমণ করতে করতে যদি হঠাৎ ধন পায়, তাহলে দারিদ্র দুঃখের অবসান হল বলিয়া সে আনন্দে নেচে উঠে ও আত্মহারা হয়।কিন্তু আবার তৎক্ষণাৎ
যদি সে সেই ধন হারায়, তাহলে তার পূর্ব দুঃখ কোটি গুণ হয়ে আবার ফিরে আসে।তখন তার প্রাণের ব্যথা মুখের কথায় ব্যক্ত হয় না বটে, কিন্তু
তাই বলিয়া তার নিরাশ প্রাণে হা হুতাশ আসে না, আবার ধনলাভের নতুন আশাও আসা ছাড়ে না। নারদের অবস্থাও ঠিক এইরূপ। তিনি যে ধন পাবার আশায় ব্রাহ্মণগৃহ ছেড়ে বনবাস সম্বল করেছিলেন সেই
হৃদয়ের ধন হৃদয়ে পেয়েও আবার হৃদয়েই হারিয়ে ফেলে হৃদয়হারা হলেন। আহা,সে মূরতির কি তুলনা আছে! মন মাতানো প্রাণ গলানো ধন!
সহসা হৃদয়মন্দির আঁধার দেখে বাইরে খুঁজবার জন্য আসন ছেড়ে উঠলেন, দুঃখের ভারে দেহ বহন করা
সামর্থের বাহিরে গিয়াছে, আবার বসে পড়ে মনে করলেন, মনের ধন কি বনে যেতে পারে?যেখানে হারালাম আবার সেখানেই খুঁজে দেখি। আবার ধ্যান যোগে মনকে হৃদয় অন্বেষণ করতে পাঠালেন।মনভ্রমর হৃদয়সরসী তন্ন তন্ন করে খুঁজে বেড়াল,কিন্তু সে চরণকমল আর পেল না।
নারদমুনি ব্যাসকে বললেন, হে ব্যাস!
সে বস্তু কেউ অন্য প্রকারে চেষ্টায় পায় না।তিনি নিজে কৃপা করে দেখা না দিলে কে দেখবে? সুতরাং পুনপুনঃ ধ্যান করেও আর দেখা পেলাম না,
অতৃপ্ত বাসনা বুকে নিয়ে দর্শনসুখে বঞ্চিত হয়ে ব্যাকুলতার সাগরে ঝাঁপ দিলাম।
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
এবং যতন্তং বিজনে মামাহাগোচরো গিরাম্।
গম্ভীরশ্লক্ষ্নয়া বাচা শুচঃ প্রশম্পয়ন্নিব।।
অর্থ্যাৎ= এইভাবে সেই নির্জন বনে আমি শ্রীভগবদ দর্শনের লাভের আশায় পুনপুনঃ চেষ্টা করছি, এমন সময়ে অবাঙ্মনসগোচর( ভাষা ও বোধের অগোচর, বাক্য ও মনের অগোচর,ভাষায় প্রকাশ করা বা চিন্তা করা যায় না এমন) (অবাঙ-মনস-
গোচর) শ্রীভগবান আমাকে মধুর বাক্যে সম্বোধন করে বললেন।
হন্তাস্মিন্ জন্মনি ভবান্ মা মা দ্রষ্টুমি
হার্হতি।
অবিপক্বকষায়াণাং দুর্দর্শোহহং কুযোগিনাম্।।
অর্থ্যাৎ= বৎস নারদ! তুমি এই সাধক দেহে আমাকে আর দেখতে পাবে না,
যাদের মনোমল সম্পূর্ণ বিদূরিত হয় নাই,তারা আমায় দেখতে পায় না।
সকৃদযদ্দর্শিত রূপমেতৎ কামায় তেহনঘ।
মৎকামঃ শনকৈঃ সাধুঃ সর্বান্ মুঞ্চতি
হৃচ্ছয়ান্।।
অর্থ্যাৎ= হে নিষ্পাপ!তোমাকে যে একবার আমার মূর্তি দেখালাম,তা কেবল তোমার দর্শনলালসা বৃদ্ধি করবার জন্য।আমাকে দেখতে ও সেবা করতে লালসা হলে সর্ববিধ বিষয়-বাসনা দূর হয়ে যায়।
সৎসেবয়াদীর্ঘয়াপি তে জাতা ময়ি দৃঢ়া মতিঃ।
হিত্বাবদ্যমিমং লোকং গন্তা মজ্জনতা
মসি।।
অর্থ্যাৎ= অল্পকালমাত্র আমার ভক্তগণের সেবা করেই তোমার আমার প্রতি অচলা ভক্তি জন্মিয়েছে,
অতএব তুমি এই বিষয়াসক্ত ব্যক্তিগণের নিবাসস্থল প্রাকৃত জগৎ ও প্রাকৃত দেহ ত্যাগ করে আমার ধাম
ও পার্ষদদেহ লাভ করবে।
মতির্ময়ি নিবদ্ধেয়ং ন বিপদ্যেত কর্হিচিৎ।
প্রজাসর্গনিরোধেহপি স্মৃতিশ্চ মদনুগ্রহাৎ।।
অর্থ্যাৎ= চিত্তবৃত্তি একবার আমাতে আবিষ্ট হলে আর কখনও উহা স্খলিত হয় না। অতএব তোমারও চিত্তবৃত্তি আমা হতে পতিত বা স্খলিত
হবে না। আমার কৃপায় তোমার এই সাধকদেহের স্মৃতি সর্বদা জাগরুক থাকবে।
/\/\/\/\/\/\/\/\/\/\/\/\/\/\/\/
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
তাৎপর্য্য = ভক্তের অশ্রুজল মুছতে, ভক্তের আশাতরুর মূলে কৃপাবারি ঢালতে,ভক্তের নিরাশ প্রাণে আশার সঞ্চার করতে শ্রীভগবান সদাই ক্ষিপ্রহস্ত বা দ্রুততার সঙ্গে আসেন।
তাই নারদমুনি ব্যাসকে বললেন,হে ব্যাস! হৃদয়ের ধন হারিয়ে আমি পুনপুনঃ হৃদয়ে অন্বেষণ করছি, এমন সময় এক স্নিগ্ধ গম্ভীর মধুর স্বর আমার কর্ণপথে প্রবেশ করে প্রাণে অমৃত বর্ষণ করল।চকিত হয়ে ইতস্ততঃ বা এখানে সেখানে দৃষ্টিপাত করতে লাগলাম। আবার শুনলাম,
""হন্তাস্মিন্ জন্মনি ভবান্ মা মা দ্রষ্টু-
মিহার্হতি"" (অর্থ্যাৎ ওরে এ জন্মে নয়, এ জন্মে নয়! হৃদয়ে কামনা বাসনার গন্ধলেশ থাকলে কেউ কি আমাকে দেখতে পায়?নির্মলচিত্ত সাধককে আমি একবার মাত্র দেখা দিয়ে থাকি
সে জন্য তোমাকেও দেখা দিলাম, আমাকে একবার দেখলে দেখার লালসা বাড়ে,সেবার বাসনা হয়,তার ফলে আর কোনও জাগতিক বস্তু ভোগের লালসা বা বাসনা থাকে না।
আমার ভক্তশ্রেষ্ঠ সেই ব্রাহ্মণগণের সেবায় ও তাঁদের সঙ্গে তোমার প্রেম
লাভ হয়েছে। আমি যথা সময়ে তোমাকে আমারমে স্থান দিব। আমার কথা তুমি কখনও ভুলবে না,এই সাধকদেহের বৃত্তান্তও তোমার মনে থাকবে।নারদমুনি একবার ভগবানের মনোহর মূরতি দেখেছেন।তার পর কেবল মাত্র কর্ণ দ্বারা তাঁর বচন সুধা পান করলেন।ভগবানের সেই আদেশবাণী আলোচনা করলে তাঁর পরম করুণার চরম সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। ভক্তিপথের সাধক ভক্তি
যাজন করতে করতে যখন প্রেম লাভ করেন, তখনও তাঁর মায়িক দেহ থাকে বটে, কিন্তু কামনা বাসনার লেশ
মাত্রও থাকে না।এই অবস্থায় একবার সাক্ষাৎ দর্শন হয়।নারদ যে একবার দর্শন পেলেন,ইহাতেই বুঝা গেল,তাঁর হৃদয়ে কামনা বাসনার লেশ মাত্র ছিল না। মায়াহত জীবের হৃদয় কামনা বাসনার ক্রীড়াভূমি, সাধন আরম্ভ হতেই ক্রমে ক্ষমে কামনা বাসনার লোপ হয় বটে, কিন্তু তখনও তার মূল থাকে। মৃত্তিকানিম্নস্থ (মাটির নিচের)
বৃক্ষমূল কেহ দেখতে পায় না বটে, কিন্তু সময়মত তার অঙ্কুরোৎপত্তি হওয়াও অসম্ভব নহে। প্রেমলাভের পূর্বে কামনা বাসনার প্রকট মূর্তি দেখতে পাওয়া না গেলেও হৃদয়ের অতি নিম্নস্তরে তার মূল থাকে,প্রেমলাভে তাহা উৎপাটিত হয়।
নারদ এই অবস্থাতেই একবার মাত্র
ভগবানের দর্শন পেলেন।এই দর্শন দর্শনোৎকন্ঠা ও স্বস্ব প্রেমানুরাগ সেবার উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দেয়।ভগবান
স্বজন-প্রেম-বিবর্ধন-চতুর ; কেমন করেযে ভক্তের হৃদয়ে প্রেম প্রস্রবনের
(প্রেমের ঝরনার) মুখ খুলে দিতে হয় তিনি তাহা বেশ ভাল ভাবেই জানেন।এইজন্যই সাধকদেহে কেবল একবার মাত্র দেখা দেন। ভগবানের সেবা ও দর্শনবাসনার প্রবাহ একবার হৃদয়ে
প্রবেশ করলে পূর্ব বাসনার গন্ধ পর্যন্ত লোপ হয়ে যায়। বর্ষাকালের জল যখন গর্তে পড়ে, তখন কি আর গর্তে পচাজল থাকতে পারে? ভগবান মায়িক প্রপঞ্চের বস্তু নহেন। প্রাপঞ্চিক দেহ ও ইন্দ্রিয়াদি দ্বারা তাঁর সম্বন্ধ রাখা অসম্ভব।যখন তিনি কৃপা করে একবার ভক্তকে দেখা দেন, তখন মায়িক জগতে ও দেহ ইন্দ্রিয়াদিতে মায়াতীত বৈভব প্রকাশিত হয় ও ভগবান ভক্তকে পার্ষদদেহ দিয়া মায়াতীত ধামে লয়ে গিয়া কৃতার্থ করেন।সেই জন্যই নারদকে তিনি বললেন, এ মর জগৎ বহির্মুখ জীবের ভোগভূমি, যথাসময়ে তোমাকে এ জগৎ হতে আমার জতে লয়ে যাব।মায়িক জীব জগতে থেকেই
আমার ভক্তের সঙ্গলাভ করে, তাতেই তার হৃদয়ে প্রেমতরুর বীজ রোপিত হয়। ক্রমে ক্রমে শ্রণ কীর্তনাদি করতে করতে সে বীজ অঙ্কুরিত হয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় ও মায়িক জীবকে পার্ষদদেহ দিয়া ধামে লয়ে আসে।
পরশমণির পরশে যেমন লোহা সোনা হয়ে যায় লোহা আর থাকে না, সেইরূপ চিত্তবৃত্তিও একবার শ্রীগোবিন্দ-চরণ-পরশমণির পরশ পেলে আর মায়ার অধিকারে আসে না। সুতরাং নারদকেও ভগবান বললেন, তোমার আর আমার কথা ভুল হবে না! সিদ্ধদেহ পেলেও ভগবান সাধকদেহের স্মৃতিটি রেখে দেন,সাধকদেহের বৃত্তান্ত মায়িক জীবের কর্ণগোচর হলে মায়িক জীবেরও ভক্তিযাজনে লালসা জন্মে।
যদি সাধকদেহের স্মৃতি একেবারে মুছে যায় তাহলে আর মায়িক জীবের উদ্ধারের পথ থাকে না। নারদের সাধকদেহের কথা শুনেই ব্যাসদেবের হৃদয়ে লালসা জন্মেছিল।
এখনও যদি কেউ ইহা আলোচনা করেন, তাহলে তাঁরও লালসা জন্মানো অসম্ভব নহে।
জয় নিতাই।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
এতাবদুক্তোবোপররাম তন্মহদভুতং নভোলিঙ্গমলিঙ্গমীশ্বরম্।
অহঞ্চ তস্মৈ মহতাং মহীয়সে শীর্ষণাবনাম বিদধেহনুকম্পিতঃ।।
অর্থ্যাৎ= এই কথা বলিয়া সেই মহা অদ্ভুত আকাশবাণী দ্বারা অনুমিত (অনুমান করা হয়েছে এমন) অলক্ষিত বিগ্রহ সর্বেশ্বর বিরত হলে
আমি তাঁরই কৃপায় সেই মহৎ হতেও
মহত্তম ভগবানের চরণে মস্তক অবনত করে তাঁর উদ্দেশ্যে প্রণাম করলাম।
নামান্যনন্তস্য হতত্রপঃ পঠন্ গুহ্যানি ভদ্রানি কৃতানি চ স্মরন্।
গাং পর্য্যটংস্তুষ্টমনা গতস্পৃহঃ কালং প্রতীক্ষন্ বিমদো বিমৎসরঃ।।
অর্থ্যাৎ= তদনন্তর(তারপর) আমি লজ্জাদি বিসর্জন দিয়ে উন্মত্তের (পাগলের) মত সর্বদাই শ্রীগোবিন্দ-
নাম কীর্তন করি ও বেদগোপ্য পরম মঙ্গলময় সুমধুর লীলাবলী স্মরণ করি এবং সর্ববিধ ভোগলালসাশূন্য
নিরহঙ্কার এবং মাৎসর্য্যশূন্য হয়ে
"কবে আমি সেই অধিকার পাইব"
এই অপেক্ষায় তীর্থে তীর্থে ঘুরে বেড়ায়।
এবং কৃষ্ণমতের্ব্রহ্মন্নাসক্তস্যামলাত্মন।
কালঃ প্রাদুরভূৎ কালে তড়িৎ সৌদামিনী যথা।।
অর্থ্যাৎ=হে ব্যাসদেব! এই প্রকারে কৃষ্ণকৃপায় বিষয়াসক্তি রহিত শুদ্ধ এবং কৃষ্ণগত চিত্তে কিছুকাল যাপন করলে বিদ্যুৎসকাশে যেমন অপর বিদ্যুৎ বিকাশ হয়,সেইরূপ আমারও
স্থূলদেহ ত্যাগকালে পার্ষদদেহ প্রাপ্তি
কাল উপস্থিত হল।
প্রযুজ্যমানে ময়ি তাংশুদ্ধাং ভাগবতীং
তনুম্।
আরব্ধকর্মনির্বাণো ন্যপতং পাঞ্চভৌতিকঃ।।
অর্থ্যাৎ= শ্রীভগবান আমাকে পূর্ব প্রতিশ্রুত পার্ষদদেহ দান করতে ইচ্ছুক হলে আমার প্রারব্ধ কর্মের অবসানে পাঞ্চভৌতিক দেহ পাত হল।
তাৎপর্য্য= একবার দর্শনের পর দীর্ঘ অদর্শনে নারদের যে মহাতাপ উপস্থিত হয়েছিল,তা ভগবানের মধুর বচন-সুধাবৃষ্টিতে নির্বাপিত হল।উহা শ্রবণকালে নারদঋষির সমস্ত ইন্দ্রিয়ের শক্তি পুঞ্জীভূত হয়ে শ্রবণে-
ন্দ্রিয়ে মিলিত হয়েছিল।যখন এই সুমধুর বাণীর বিরাম হল, তখন নারদ
যেন এক নতুন ভাব লয়ে জগতে এসে
পড়লেন ও উঠে সর্বাঙ্গ ভূমিলুন্ঠিত করে যেদিক হতে আকাশবাণী শুনা
গিয়েছিল সেইদিকে প্রণাম করলেন।
তিনি মনে করলেন,গোবিন্দের লীলাকথা আশ্রয় করেই একবার দর্শন পেয়েছি, এই লীলাকথাই আমার জীবনের সার অবলম্বন হোক,
এই লীলাকথার স্রোতে ভাসতে ভাসতে লীলাময়ের শ্রীচরণ নিকটে যেতে পারব। এইরূপে কিছুদিন অতিবাহিত হল,লজ্জাদি বিসর্জন দিয়ে,কখনও হাসি, কখনও কান্না, কখনও নৃত্য এইভাবেই দিনের পর দিন কাটতে লাগল। সাক্ষাত সেবা প্রাপ্তির লালসা দিন দিন বর্ধিত হতে লাগল, সর্বদাই সেই সুমধুর বাণী যেন
কানে প্রতিধ্বনিত হয়, "হিত্বাবদ্যমিমং
লোকং গন্তা মজ্জনতামসি"। অমনি প্রাণে অদম্য লালসার প্রস্রবন ছুটিয়া যায়।কবে মায়ার জগৎ ছেড়ে প্রেমের জগতে গিয়া প্রেমময়ের সেবা পাইয়া
কৃতার্থ হব। ক্রমে ক্রমে লালসার গোণাদিন সেই শুভদিনের নিকটবর্তী
হল! নারদের পার্ষদদেহ প্রাপ্তির দিন
আসিল; ভগবান তাঁর প্রেমকাননের
প্রস্ফূটিত কুসুম আর বিষয় কন্টকবনে রাখতে ইচ্ছে করলেন না।
মেঘাচ্ছন্ন আকাশের কোণে পর পর দুইবার বিদ্যুতের হাসির মত বিষয়া-
চ্ছন্ন জগতে ভক্তের লালসা ও ভগবানের কৃপার হাসি ফুটে উঠল।
নারদের অশ্রুকম্প পুলকাদি সাত্ত্বিক
বিকার সুবলিত (বলিষ্ঠ) সাধকদেহ
ও সাক্ষাৎ সেবার উপযুক্ত সিদ্ধদেহের মিলন হল। সিদ্ধদেহ সাধকদেহের আবরণটি সাধনক্ষেত্রে জগতে রেখে কেবলমাত্র সাধকদেহের ভাবগুলি নিয়ে সর্বসিদ্ধি-নিকেতন শ্রীগোবিন্দ-
চরণ প্রান্তে উপস্থিত হল।
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
কল্পান্ত ইদমাদায় শয়ানেহম্ভস্যুদন্বতঃ।
শিশয়িষোরনুপ্রাণং বিবিশেহন্তরহং বিভোঃ।।
অর্থ্যাৎ= ব্রহ্মার দিবস অবসানে ত্রৈলোক্য (স্বর্গ,মর্ত্য ও পাতাল)
আত্মস্যাৎ করে ভগবান একার্ণবে (এক গোপন সাগরে) শয়ন করলে আমি ব্রহ্মার নিঃশ্বাস সহ তাঁর মধ্যে প্রবেশ করলাম।
সহস্রযুগপর্য্যন্ত উত্থায়েদং সিসৃক্ষতঃ।
মরীচিমিশ্রা ঋষয়ঃ প্রাণেভ্যোহহঞ্চ জজ্ঞিরে।।
অর্থ্যাৎ= তার পর আবার ব্রহ্মার রাত্রির অবসানে যখন পুনঃ সৃষ্টি হয়,
তখন মরীচি প্রভৃতি সপ্তর্ষি এবং আমি ব্রহ্মার ইন্দ্রিয় হতে জন্মগ্রহণ করি।
তাৎপর্য্য= মহাপ্রলয়ে শ্রীভগবান শেষশর্য্যায় শায়িত হন, আবার যখন তাঁর সৃষ্টি করতে ইচ্ছে হয়, তখন তাঁর নাভিকমল হতে ব্রহ্মার প্রকাশ হয় ও
ব্রহ্মার মানসপুত্ররূপে নারদের প্রকাশ হয়,ইহাই পৌরাণিকী প্রসিদ্ধি।
শ্রীমদ্ভাগবতে নারদের পূর্ব জন্ম বৃত্তান্ত ও সিদ্ধিপ্রাপ্তির কথা আলোচনা করলে আপাতত মনে হয়,
যেন একটি নতুন নারদ প্রস্তুত হল, ইহার পূর্বে যেন নারদ ছিলেন না। কিন্তু চিরপ্রচলিত পূজাপদ্ধতি দেখলে বুঝা যায় যে, নারদ আবরণ দেবতা
রূপে চিরকালই পূজিত হয়ে আসছেন। এইজন্য সম্প্রদায়চার্য্যগণ
সিদ্ধান্ত করেছেন যে, ভগবানের নিত্য
সিদ্ধ পার্ষদ দাসীপুত্র নারদ সাযুজ্য প্রাপ্ত হয়ে সৃষ্টির প্রথমে ব্রহ্মার মানসপুত্ররূপে অবতীর্ণ হলেন। ভগবানের ধাম,পার্ষদ,লীলা প্রভৃতি সমস্তই নিত্য বিরাজিত, কেবলমাত্র আবির্ভাব ও তিরোভাব প্রভৃতি কল্পে কল্পে নূতন বল বোধ হয়।
"সূর্য্যচন্দ্রমসৌ ধাতা যথা পূর্বমকল্পয়্ৎ"
পূর্ব সৃষ্টিতে যেমন ছিল আবার সৃষ্টির প্রথমে বিধাতা সেইরূপ চন্দ্র সূর্য্য প্রকাশ করলেন, এই বেদবাক্য আলোচনা করলেও ভগবান ও তাঁর পার্ষদবর্গের আবির্ভাব ও তিরোভাবই বুঝা যায়।
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
অন্তর্বহিশ্চ লোকাংস্ত্রীন্ পর্য্যেম্যস্কন্দি
তব্রতঃ।
অনুগ্রহান্মহাবিষ্ণোরবিঘাতগতিঃ ক্বচিৎ।।
অর্থ্যাৎ= শ্রীগোবিন্দের কৃপায় অবিচলিতভাবে (স্থিরভাবে) ভক্তি
নিয়ম রক্ষা করে বৈকুন্ঠাদিতে এবং ত্রিভূবনের ভেতরে ও বাইরে অপ্রতিহতগতিতে (বাধাহীনগতিতে)
আমি ভ্রমণ করি।
দেবদত্তামিমাং বীণাং স্বরব্রহ্মসম-
ন্বিতাম্।
মূর্ছয়িত্বা হরিকথাং গায়মানশ্চরাম্যহম্
অর্থ্যাৎ= এই স্বরব্রহ্ম সমন্বিত শ্রীকৃষ্ণ-
দত্ত বীণার মূর্ছনালাপ সংযোগে শ্রীগোবিন্দগুণগান করে আমি সর্বত্র ভ্রমণ করি।
প্রগায়তঃ স্ববীর্য্যাণি তীর্থপাদঃ প্রিয়-
শ্রবাঃ।
আহূত ইব যে শীঘ্রং যাতি চেতসি।।
অর্থ্যাৎ= যাঁর চরণে সর্বতীর্থের উদ্গম, সেই বিমলকীর্তি শ্রীগোবিন্দ আমার মুখে নিজের গুণগান শুনিবামাত্র আহূতের(নিমন্ত্রিতের) মত
অতি শীঘ্র আমার হৃদয়ে দেখা দেন।
তাৎপর্য্য= এই কয়টি শ্লোকে শ্রীনারদের সিদ্ধদেহের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে।ভক্তিপথের সাধনা সিদ্ধি
একই রকম।
"সাধনে সাধিবে যাহা
সিদ্ধ দেহে পাবে তাহা
নরোত্তমদাসের এই বঙ্গভাষার সিদ্ধান্ত অমূলক নহে। নারদ যখন দাসীপুত্র ছিলেন, তখনও তিনি ভগবানের নাম,রূপ,গুণ, লীলাকথায়
ভুলে থাকতেন,সিদ্ধদেহে তিনি তাহাই পেলেন। লিঙ্গপুরাণে বর্ণিত আছে,
নারদের মুখে নিজ গুণগান শুনবার জন্য ভগবানই নারদকে বীণা যন্ত্র দিয়াছিলেন।তাই নারদমুনি ব্যাসকে
বলছেন,ভগবানের নামাদি কীর্তনের
প্রভাব আর কত বলব,যেমন বীণা
যন্ত্রে স্বরসংযোগ করে হা কৃষ্ণ হাকৃষ্ণ
বলে ডাকি,অমনি দয়ালঠাকুর আমার হৃদয়মন্দির আলোকিত করে এসে দাঁড়ান। হে ব্যাস! জগৎকে এই রসে
ডুবাবার জন্যই আমি সর্বত্র হরিগুণ
গান গেয়ে বেড়াই। ব্রহ্মান্ডের ভিতরে ও বাইরে কোন জায়গাই আমার অগম্য নাই।
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
এতদ্ব্যাতুরচিত্তানাং মাত্রাস্পর্শেচ্ছয়া মুহুঃ।
ভবসিন্ধুপ্লবো দৃষ্টো হরিচর্য্যানুবর্ণনম্
অর্থ্যাৎ= পুনঃপুনঃ বিষয় ভোগ বাসনায় ব্যাকুল চিত্ত সংসারী জীবগণের একমাত্র হরিগুণানুকীর্তনই ভব পারের তরণী,
তাহা আমি নিজেই প্রত্যক্ষ করেছি।
যমিদিভির্যোগপথৈঃ কামলোভহতো
মুহুঃ।
মুকুন্দসেবয়া যদ্বৎ তথাদ্ধাত্মা ন শাম্যতি।।
অর্থ্যাৎ= শ্রীগোবিন্দ চরণ সেবনে যেমন কামলোভাদি কর্তৃক আক্রান্ত
চিত্তের শান্তি হয়, যম নিয়মাদি যোগাঙ্গ সাধনে তেমন কিছুতেই হয় না।
সর্বং তদিদমাখ্যাতাং যৎ পৃষ্টোহহং ত্বয়ানঘ।
জন্মকর্মরহস্যং মে ভবতশ্চাত্মতোষণম্।।
অর্থ্যাৎ= হে ব্যাসদেব! তুমি আমাকে আমার জন্ম বৃত্তান্ত ও তোমার চিত্ত-
প্রসন্নতা-লাভের উপায় সম্বন্ধে যা জিজ্ঞাসা করেছিলে, এই সমস্তই তা বললাম।
তাৎপর্য্য= নারদ বলতে লাগলেন, হে
ব্যাসদেব! নানাবিধ কামনা-বাসনার
তরঙ্গাঘাতে (ঢেউয়ের ধাক্কায় )জগতের জীবের চিত্তবৃত্তি
(মনের ধর্ম ক্রিয়া বা প্রকৃতি) সর্বদাই চঞ্চল ও ক্লিষ্ট (কষ্টপ্রাপ্ত)। ভগবানের
কথাসুধাবর্ষণ ব্যতীত কিছুতেই তার শান্তি হতে পারে না। যমনিয়মাদি যোগাঙ্গের অনুষ্ঠানে কামনা বাসনা
প্রভৃতি দূর হয় বটে, কিন্তু তা বহু আয়াসে(কষ্টের বা দুঃখের) এবং বহু কালে।গোবিন্দকথায় অল্পায়াসে (কম কষ্টে), কমদিনে কামনা বাসনার মূল পর্যন্ত উৎপাটিত হয়ে যায়। কলির জীবের সাধ্য কি যে তারা যম নিয়মাদির কঠোর অনুষ্ঠান করে কাম
মলিন চিত্ত শোধন করবে। কর্মানুষ্ঠান
করতে গেলে আবার নূতন কামনার বীজ বপন করা হবে।তাই বলছি,হে ব্যাস! গোবিন্দগুণ বর্ণন কর; তাতেই
জগৎ কৃতার্থ হবে। আমার জীবনবৃত্তান্ত আমি তোমার নিকট সমস্তই বললাম,এতেই তুমি তোমার
কর্তব্যপথ নির্ণয় করতে পারবে। যদি চিত্তের প্রসন্নতালাভের বাসনা থাকে,
তাহলে গোবিন্দকথা-সুধা বর্ষণ কর,
তাতেই ত্রিতাপতপ্ত জগৎ শীতল হবে।
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
****শ্রী সূত উবাচ ****
এবং সম্ভাস্য ভগবান্ নারদো বাসবীসুতম্।
আমন্ত্র্য বীণাং রণয়ন্ যযৌ যাদৃচ্ছিকো মুনিঃ।।
অর্থ্যাৎ= সূত বললেন,যথেচ্ছগতি ভগবান নারদমুনি এইরূপে সত্যবতী-
নন্দন ব্যাসদেবের সম্ভাষণানন্তর তদীয় অনুজ্ঞা গ্রহণ পূর্বক বীণাযন্ত্রে
স্বরসংযোগ করে হরিগুণগান করতে করতে অন্যত্র গমন করলেন।
অহো দেবর্ষির্ধন্যোহয়ং যৎ কীর্তিং-
শার্ঙধন্বনঃ।
গায়ন্মাদ্যন্নিদং তন্ত্র্যা রময়ত্যাতুরং জগৎ।।
অর্থ্যাৎ= অহো! যিনি বীণাযন্ত্রে হরি-
গুণগান করিয়া এই ত্রিতাপতপ্ত জগৎকে আনন্দিত করেন, সেই দেবর্ষি নরদই ধন্য।
তাৎপর্য্য = শ্রীসূত মহাশয় নৈমিষারণ্য
বাসী ঋষিগণকে বললেন,হে ঋষিগণ! আপনাদের প্রশ্ন অনুসারে শ্রীব্যাসদেবের বৃত্তান্ত বর্ণনা করলাম।
এই মহাপ্রেরণাতেই শ্রীব্যাসদেব শ্রীমদ্ভাগবত রচনা করেছিলেন।
শ্রীমদ্ভাগবত শ্রীভগবানের প্রতিনিধি।
তিনি নিজে কৃপা ধা করলে কেহই তাঁকে পান না, তাই তিনি নারদকন্ঠে এসে ব্যাসের হৃদয়ে প্রবেশ করলেন ও ব্যাসদেব সেই নিজ হৃদয়ের বস্তু
জগৎকে উপহার দিয়ে গেলেন। এই-
রূপে নারদঋষি ব্যাসদেবের নিকট ভগবানের করুণার কাহিনী বর্ণনা করে যখন দেখলেন, ভগবানের লীলাকথার মাহাত্মে ব্যাসহৃদয় বিগলিত হয়েছে, তখন তিনি আবার বীণাযন্ত্রে স্বরসংযোগ করে গোবিন্দ-
গুণগান গাইতে গাইতে চলে গেলেন।
ধন্য দেবর্ষি নারদ! তোমারই বীণার গীতে জগৎ কৃতার্থ হল, তোমারই প্ররণায় জগতে শ্রীমদ্ভাগবত আনিলেন। ত্রিতাপতপ্ত কামহত মায়া-
পরাভূত অনাদি বহির্মুখ জীবের আর কোন গতিই নাই, একমাত্র তুমি ব্যাস
হৃদয়ে যে বীজ রোপন করেছ, তারই মধুর ফল শ্রীমদ্ভাগবতের সুমধুর রসে জীব আপ্যায়িত হবে।
জয় নিতাই
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*** শৌণক উবাচ***
নির্গতে নারদে সূত ভগবান্ বাদরায়ণঃ
শ্রুতবাংস্তুদভিপ্রেতং ততঃ কিমকরোদ্বিভুঃ।।
অর্থ্যাৎ= শৌণক বললেন,হে সূত! ব্যাসাশ্রম হতে নারদঋষি চলে গেলে তাঁর অভিপ্রায় জেনে সর্বজ্ঞশিরোমণি
ব্যাসদেব কি করলেন।
*******সূত উবাচ **********
ব্রহ্মনদ্যাং সরস্বত্যামাশ্রমঃ পশ্চিমে তটে।
শম্যাপ্রাস ইতি প্রোক্ত ঋষীণাং সত্রবর্ধনঃ।।
অর্থ্যাৎ= সূত বললেন, সাক্ষাৎ শ্রীভগবানের সম্বন্ধযুক্ত সরস্বতী নামক নদীর পশ্চিমতীরে ঋষিগণের যজ্ঞের হিতকর শম্যাপ্রাস নামক আশ্রয় আছে।
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
তস্মিন্ স্ব আশ্রমে ব্যাসো বদরীষন্ডমন্ডিতে।
আসীনোহপ উপস্পৃশ্য প্রণিদধৌ মনঃ স্বয়ম্।।
অর্থ্যাৎ= ব্যাসদেব এই আশ্রমে বসিয়া
আচমন পূর্বক সমাধি অবলম্বন করলেন।
*********************************
তাৎপর্য্য= নৈমিষারণ্যবাসী শৌণকাদি
ঋষিগণ শ্রীসূতের মুখে ব্যাস-নারদ সংবাদ শুনে ও জ্ঞানী এবং ভক্তের মিলনে ভক্তির পূত(পবিত্র) প্রবাহে জ্ঞানের শুষ্ক মরুভূমিতে সরসতা আলোচনা করে আশ্চর্য্যান্বিত হলেন এবং মনে করলেন, সূতের সঙ্গবশত
আমাদেরও কর্মমরুভূমিতে ভক্তির বন্যা আসতে পারে।সর্বজ্ঞশিরোমণি
ব্যাসদেব দাসীপুত্রের জীবনবৃত্তান্ত শুনে নিজ জীবন লীলির কি ভাবে পরিবর্তন অভিনয় করলেন,তা অবশ্য
শুনতে হবে, তাই তাঁরা সূতকে জিজ্ঞাসা করছেন,হে সূত!প্রেমানন্দে
বিভোর নারদমুনি সেই হিমালয় শিখর
বাসী ব্যাসদেবের জ্ঞানের উচ্চ শিখরে ভক্তিবারি বর্ষণ করে চলে গেলেন, তার পর কি হল? বারিপাতে উচ্চ স্থানেও ক্ষণিক সরসতা আসে বটে,
কিন্তু তাহা ত স্থায়ী হয় না।নারদের অভিপ্রায় শুনে ব্যাসহৃদয় কি ভক্তি
যাজনের উৎকণ্ঠায় দ্রবীভূত হয়েছিল? না, আবার নারদমুনি চলে গেলে পূর্ব মূর্তি ধারণ করেছিল?
শৌণকাদি ঋষিগণের কথা শুনে সূত বললেন,হে ঋষিগণ! নারদ চলে গেলেন বটে, কিন্তু ব্যাসহৃদয়ে ভজনোৎকন্ঠা রেখে গেলেন, সেই উৎকণ্ঠাই ব্যাসকে ভজনে প্রবৃত্ত (নিযুক্ত বা রত) করল।পূত সলিলা
সরস্বতী নদীর পশ্চিমতীরে বদরী-
বৃক্ষ পরিশোভিত শম্যাপ্রাস নামক
ব্যাসশ্রম! এই স্থান পরম পবিত্র, সেই
জন্য ঋষীগণ এইস্থানে এসে নানা যজ্ঞ করতেন ও স্ব স্ব বাসনানুরূপ ফল লাভে আপ্যায়িত হতেন; ব্যাস
দেবও সেইস্থানে হরিভজনযজ্ঞে রত হলেন।সরস্বতী নদীজলে স্নান ও আচমন করে তিনি নির্জনে বসলেন
ও নির্জনের ধন অনুসন্ধানের জন্য মনকে নির্জনে পাঠালেন।হিমালয়ের
অত্যুচ্চ গুপ্ত শৃঙ্গবিগলিত সরস্বতী নদীর পূত প্রবাহ শান্ত স্নিগ্ধ ধন তরু বিরাজিত আশ্রম পদতটে এসে ব্যাসদেবের নয়ন যুগল নির্গলিত ভক্তিবারি-ধারার সহিত মিলিত হয়ে কুলু কুলু নাদে যেন কোন অজানা বস্তুর উদ্দেশ্যে ধাবমান হতে লাগল।
জয় নিতাই।
শান্ত স্নিগ্ধ ঘন হবে
শম্যাপ্রাস নামক আশ্রম হবে
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
ভক্তিযোগেন মনসি সম্যক্ প্রণিহিতেহমলে।
অপশ্যৎ পুরুষং পূর্ণং মায়াঞ্চ তদপাশ্রয়াম।।
অর্থ্যাৎ=ভক্তি সাধনার পূর্ব হতেই যোগ জ্ঞানাদি দ্বারা নির্মলচিত্ত প্রেম
সম্বন্ধে পূর্ণরূপে সমাহিত হলে ব্যাসদেব অংশ,কলা,শক্তি প্রভৃতি সমন্বিত স্বয়ং ভগবান এবং তাঁতে লীন মায়াশক্তিকে দর্শন করলেন।
-------------------------------------------------
যয়া সম্মোহিতা জীব আত্মানং ত্রিগুণাত্মকম্।
পরোহপি মনুতেহনর্থং তৎকৃতঞ্চাভি-
পদ্যতে।।
অর্থ্যাৎ= যে মায়ায় মোহিত জীব স্বভাবত মায়াসম্বন্ধহীন হয়েও মায়িক দেহাদিতে আবিষ্ট হয়ে পুনঃ পুনঃ সংসার ভোগ করে থাকে।
--------------------------------------------------
অনর্থোপশমং সাক্ষাদ্ভক্তিযোগমধোক্ষজে।
লোকস্যাজানতো বিদ্বাংশ্চক্রে সাত্বতসংহিতাম্।।
অর্থ্যাৎ= ব্যাসদেবের সমাধিতে সর্বানর্থ-বিনাশন সমর্থ ভক্তিযোগের জ্ঞান হল।তার পর তিনি বিষয়ান্ধ জীবের হিতার্থ শ্রীমদ্ভাগবত সংহিতা প্রণয়ন করলেন।
---------------------------------------------------
ভক্তিরুৎপদ্যতে পুংসঃ শোকমোহভয়াপহা।।২
যস্যাং বৈ শ্রূয়মাণায়াং কৃষ্ণে পরমপুরুষে।১
অর্থ্যাৎ= শ্রীমদ্ভাগবত যে কোনও প্রকারে কর্ণ স্পর্শ করলেই জীবের পরম-পুরুষ শ্রীগোবিন্দে প্রেমলাভ হয়
ও সর্ববিধ ভবভয় দূর হয়।
---------------------------------------------------
স সংহিতাং ভাগবতীং কৃত্বানুক্রম্য চাত্মজম।
শুকমধ্যাপয়ামাস নিবৃত্তিনিরতং মুনিম্।।
অর্থ্যাৎ= ব্যাসদেব শ্রীমদ্ভাগব প্রণয়ানানন্তর তাহা শ্রীকৃষ্ণ-গুণবর্ণন
প্রধানরূপে বিশেষভাবে সংশোধন করে নিজপুত্র ব্রহ্মনিষ্ঠ শ্রীশুকদেবকে
পড়ালেন।
---------------------------------------------------
(শুকদেব সম্বন্ধে বহু কথন আছে আর এগোলাম না, এখানেই রাখলাম।
------------------------------------------------
ব্যাসদেবের প্রতি দেবর্ষি নারদ মুনির ভক্তি উপদেশ হবে
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*প্রেম কি,তাহা শ্রীমতী একসখীকে বলছেন*
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
## ওগো সখি! যদি তোমার, আমাদের প্রেমের কথা শুনতে ইচ্ছে করে তবে শোনো। প্রেমের পরিমাণ এই ; প্রেম এইরকম, ইহাই প্রেমের স্বরূপ, অথবা এই প্রেমের স্বরূপ নয়,
এই কথাগুলি যারা বলে,তারা বেদাদি-শাস্ত্র অধ্যয়ন করলেও পেমের বিষয় কিছু জানতে পারবে না। তাৎপর্য এই যে প্রেমের স্বরূপ অনির্বচনীয়,(যা ব্যক্ত বা বর্ণনা করা যায় না)যে সময়ে হৃদয়ে বিচার করবার যোগ্যতা থাকবে, সেইসময়ে তথায় প্রেমের স্থিতি (অবস্থান) হতে পারে না।বিষয়ান্তর(অন্য বিষয় ) বিচারের কথা দূরে থাক, এমনকি প্রীতি-স্বরূপ বিচারশীল ব্যক্তিও প্রীতির অধিকারী হতে পারে না।কারণ প্রেম-বস্তুটি অন্য নিরপেক্ষ এবং স্বয়ংবেদ্য(যে প্রেম করে সে ভিন্ন
অন্য জানে না,)নিরপেক্ষ, একমাত্র প্রিয়জন সুখকামিতা (যে ভালবাসার মানুষটিকে তার মতো করে সুখ দান করে) ব্যতীত অন্য কোন জ্ঞান হৃদয়ে থাকলে সে জায়গায় প্রেমের আবির্ভাব হয় না।কি করলে প্রণয়ী ( ভালবাসার মানুষটি)সুখী হয় এই চিন্তায় তন্ময় (বিভোর)অবস্থার নামই প্রেম।যখন ঐ অবস্থায় উপনীত হয়,
তখন বিচার বোধ থাকে না বা থাকতে পারে না।প্রেমের উপলব্ধি থাকলে বোধান্তর(অন্যবোধ, বা অন্যচিন্তা) জন্মায় না।বিচারের দ্বারা সর্বশাস্ত্রজ্ঞ
হওয়া যায় কিন্তু প্রেমজ্ঞ হওয়া যায় না। *হে সখী!* যদি কোন ব্যক্তি অন্য
কোন একজন প্রেমতত্ত্ব জানতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে প্রেম সম্বন্ধে বুঝাবার চেষ্টা করেন, তবে তিনি যা বুঝাবেন এবং তার কথায় যা অনুভব হবে সেই সকল কেবল বিড়ম্বনা(চাতুরিতা)।
*গোণা দিন তো যায় গো মা বয়ে*
*কাঁদছি বসে শমন ভয়ে*
*চাহিলে না মা এই সময়ে*
*কপালে কি বিড়ম্বনা*
প্রেম একটি অনির্বচনীয় শ্রেষ্ঠ বস্তু।
ইহাকে বিচার করলেও অন্তর্হিত হয়,
এবং অবিচার করলেও ইহা অন্তর্হিত হয়। তাৎপর্য্য এই যে,প্রেমবস্তুটি স্বানুভব-সম্বেদ্য এবং নিরুপম।
অর্থাৎ সত্যবস্তু বা সদ্ বলতে অনাদির আদি শ্রীকৃষ্ণকেই বুঝায়,
তাঁকে ভালবেসে কি উপলব্ধি বা বোধ হয়েছে, একমাত্র সেইজনই জানেন আন কেহ জানেন না,যাঁর তুলনা দিবার কিছুই নাই। তা আবার ভাষা দ্বারা প্রকাশ করা যায় না, এবং নিজের হৃদয়ে ইহার আবির্ভাব না হলে অন্যের মুখে শুনে ইহা বোধগম্য হয় না। অতএব অন্যের মুখে প্রেম বুঝাবার বা বুঝবার চেষ্টা নিষ্ফল পরিশ্রম মাত্র।প্রেম আবির্ভাবের পূর্ব অবস্থায় যদি বিচার পূর্বক চিন্তা করা না যায়,কি করলে" শ্রীকৃষ্ণের সুখ হয়"
তবে প্রেম হৃদয়ে জন্ম নেই না, কারণ স্বভাবতঃ অন্তরে একমাত্র ""শ্রীকৃষ্ণের
আনুকূল্য করবার যে প্রবৃত্তি তারই নাম প্রেম।( এই সম্বন্ধে আমার বিন্দুমাত্র কিছুই জানা নেই,ভুল ভ্রান্তি
ক্ষমা করবেন, জয় নিতাই।)
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
লীলাময়ের অনন্তলীলার গাম্ভীর্য্য বোঝে কার সাধ্য? তাঁর নরলীলার তত্ত্ব ও মাধুর্য্য আরও গম্ভীর ও দুরবগাহ, ( প্রবেশ করা খুবই কঠিন)
এতে পরম বিজ্ঞও অজ্ঞ হয়ে গিয়ে, কেহ বা মায়ার খেলা, কেহ বা অনিত্য বলে থাকেন।কেহ বা কৃষ্ণের নরলীলা সামান্য মানুষের মত বুঝে মানুষের রীতি,নীতি আচার পদ্ধতির সঙ্গে তুলনা করতে কৃতসঙ্কল্প হয়ে পড়েন।এই জন্যই ভগবান গীতায় বলেছেন,
"অবজানন্তি মাং মূঢ়া মানুষীং তনুমাশ্রিতং"।তাই করুণার মধ্যে মধ্যে
নিজ ভক্তের মুখে নিজের স্বরূপতত্ত্ব প্রকাশ করে মায়হত জীবের মোহ ঘুচাতে চেষ্টা করেন।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
ভগবদ্ভক্তচূড়ামণিগণ কি বিপদে কি সম্পদে হরিপদে মন রেখে পদে পদে পরমানন্দ আস্বাদন করেন।জাগতিক কি সম্পদ্ সুখের ছলনায় কিংবা জাগতিক বিপদ দুঃখের বিভীষিকায় ভক্তহৃদয়টলাতে পারে না,বরং বিপদেই তাঁদের আগ্রহ অধিক, কেননা ভগবান বিপদভঞ্জন, বিপদ না আসিলে তাঁকে বিপদভঞ্জনরূপে দর্শন করা যায় না,বিপদেই তাঁর কৃপার পূর্ণ প্রকাশ হয়।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*প্রেম সম্বন্ধে আরও সামান্যকিছু কথা*
********************************
** অন্তরে একমাত্র "শ্রীকৃষ্ণের আনুকূল্য(সহায়তা)করবার যে প্রবৃত্তি
(ইচ্ছা) তারই নাম প্রেম। বিচারপূর্বক
চিন্তা করলে এই আনুকূল্য অনুশীলনময়ী প্রবৃত্তি জন্মাতে পারে না।অর্থ্যাৎ আমি নিজে নিজে অভ্যাস করে যায়, কোন সদ্ সঙ্গ বা শ্রীগুরদেবের বাক্য না শুনি। ভাবনা রাখতে হবে, কিসে তাঁর (শ্রীকৃষ্ণের)সুখ হয় কিসে তাঁর দুঃখ হয়,এইরকম বিচার করলে যথেচ্ছা-
চারিতা (উচ্ছশৃঙ্খলতা)এসে যায়, এতে কিন্তু প্রেমজ্ঞ হওয়া যায় না।
*হে সখি!* অতএব প্রেম আসতে পারে না।যখন চিত্ত(মন)রাগযুক্ত ( ভালবাসার যোগ্য )হয়,তখন চিত্তে একমাত্র প্রিয়সুখ,তাৎপর্য্য ব্যতীত অন্য কোন অভিলাষ থাকে না এবং যখন চিত্ত বিচার ও অবিচার এই উভয় বিবজ্জিত (শূন্য)হয়,ভাল-মন্দ
বিচারের জায়গা থাকে না। আর সে সময়ে প্রিয়জনকে সুখী দেখলে যে সুখ হয়,সেই সুখ স্থভাবে অধিরূঢ় হয়ে
স্বাভাবিক চেষ্টাগুলির দ্বারা প্রেমকে দেখিয়ে দেয়।তাৎপর্য্য এই যে, প্রেমের উদয়ে মনের কতকগুলি বিশেষ অবস্থা হয়, যেমন সেইসময়ে চিত্ত রাগযুক্ত হয়,অতিশয় দুঃখের কারণ বস্তুও প্রিয়জন লাভের সম্ভবনায় প্রণয় উৎকর্ষ হেতু চিত্তের যে অবস্থায় পরম সুখরূপে অনুভূত হয় এবং প্রিয়জন প্রাপ্তির অসম্ভবনায় সুখও দুঃখরূপে অনুভূত হয়,চিত্তের সেই অবস্থাকে রাগ বলে। প্রেমের উদয়ে মনের অপর একটি অবস্থার কথা বলি, যখন চিত্ত শুদ্ধ হবে, অর্থ্যাৎ প্রিয়জন সুখ তাৎপর্য্য ব্যতীত অন্য কোন ইচ্ছেই তখন মনে উদিত হবে না। *তৃতীয় অবস্থা* মন বিচার- অবিচার উভয় রহিত হবে, অর্থ্যাৎ প্রেমের পরিচয় করবার বৃত্তিও মন থেকে উঠে যাবে। প্রেমের স্বাভাবিক অনুভাব বা সাত্ত্বিক ভাব দেখে প্রেমের
পরিচয় হয়, প্রেম বুঝতে হলে এ ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏
শেষ ৩০ দিনের পোস্টের মধ্যে সর্বাধিক Viewer নিম্নে :-
শ্রীকৃষ্ণ লীলা 🙏 সূচীপত্র ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_74.html
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ শ্রীকৃষ্ণ লীলা 🙏 সূচীপত্র ꧂ এই লিংকে 👇👇👇🙏👇👇👇 ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_74.html ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂ ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ 🏠Home Page🏠 👇👇🙏👇👇 📚PDF গ্রন্থ📚 🌐 https://MrinmoyNandy.blogspot.com ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ শ্রীকৃষ্ণ লীলা 🙏 দ্বিতীয় ভাগ ꧂ পদ - পদাবলী 🙏 গৌরচন্দ্রিকা 🙏 ব্যাখ্যা ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂ এই লিংকে 👇👇👇🙏👇👇👇 ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/krishna.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ সুধী ভক্তবৃন্দ যে লীলা অধ্যায়নের করতে চান নিম্নে লিংকের উপর ক্লিক করুন 👇👇👇 ✧═══════════•❁❀❁•═════...
শিবরাত্রি ব্রতকথা 🙏 ১০৮ নাম 🙏 মন্ত্র সমূহ 🙏 শিবরাত্রি ব্রত কি ভাবে পৃথিবীতে প্রচলিত হল❓শিবরাত্রি ব্রত পালনে কি ফল লাভ হয় ❓শিবরাত্রি ব্রত পালন কি সকলেই করতে পারেন ❓🙏 সকল ভক্ত 👣 চরণে 👣 অসংখ্যকোটি 🙏 প্রণাম 🙏শ্রী মৃন্ময় নন্দী 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/02/shib.html
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ শিবরাত্রি ব্রতকথা ꧂ শিবরাত্রি ব্রত কি ভাবে পৃথিবীতে প্রচলিত হল❓ শিবরাত্রি ব্রত পালনে কি ফল লাভ হয় ❓ শিবরাত্রি ব্রত পালন কি সকলেই করতে পারেন ❓ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/02/shib.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ 🏠Home Page🏠 ⬇️⬇️🙏⬇️⬇️ 📚PDF গ্রন্থ📚 ꧁ MrinmoyNandy.blogspot.com 👉 সূচীপত্র ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/11/blog-post_34.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ টিকা বা অন্যান্য ধর্মীয় লিখনী 🙏 সূচীপত্র ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/10/blog-post_54.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ পুরাক...
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নৌকা গঠন তত্ব ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 https://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_22.html
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নৌকা গঠন তত্ব ꧂ https://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_22.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ টিকা বা অন্যান্য ধর্মীয় লিখনী 🙏 সূচীপত্র ꧂ এই লিংকে 👇👇👇🙏👇👇👇 ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/10/blog-post_23.html ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂ ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ *বিবেক বৈরাগ্য দিয়া দু'গলুই করিল।* *ধৈর্য্য তাহার উপর দাঁড়া করিল।।* *আসক্তির তক্তা আনি তাহাতে জুড়িল।* *লালসার পাতান লোহা তাহাতে গড়িল।।* *নববিধা ভক্তি দিয়া নয়টি গুড়া দিল।* *সরল সুবুদ্ধি দিয়া মাস্তুল গড়িল।।* *মন রূপী পাল তাহে উড়াইয়া দিল। *সাধুসঙ্গ কাণি দড়ি চৌদিকে আঁটিল।।* নৌকা গঠন তত্ব দ্বারা।---------------- শ্রী গোবিন্দ আমার সখাদের সঙ্গে গো-চারণ করিতে করিতে সেই কথা মনে পড়েছে, কোন কথা,গোলোক বৃন্দাবনের কথা, ভাই সুবলকে ডেকে বললেন,ওরে ভাই সুবল সখা, আজ আমি যমুন...
🙇 রাধে রাধে 🙇 শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ 👏 হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।। 🙇 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/09/today.html
👉 মতানুসারে 👉 https://drive.google.com/file/d/1lS0aV1XBKbzRfve110-R6hJEsX3JHoMQ/view?usp=drivesdk ✧ ══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧ 🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏 ✧ ══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧ 🔘👉🏠Home🏠 🔘👉📝সূচীপত্র📝 🔘👉📚PDF গ্রন্থ📚 🔘👉✉️WhatsApp Chanel✉️ 🔘👉Apps 🔘👉🌐Google Drive🌐 🔘👉 শ্রীশ্রীরাধাকান্ত মঠ🚩শ্রীশ্রীগৌর গম্ভীরা🐚শ্রীধাম পুরী🐚 🔘👉 🗓️ ব্রত তালিকা 🗓️ শ্রীগিরিগোবর্ধন 🙇 🔘👉 🗓️ ব্রত তালিকা 🗓️ শ্রীরাধাকুণ্ড 🙇 🔘👉🖼️ধর্মীয় চিত্রপট🖼️ 🔘 👉 📝শ্রী জয়দেব দাঁ📝 🔘👉📝শ্রী গোপীশরণ দাস📝 🔘👉📝শ্রী দীপ বাগুই📝 🔘👉 🎶শ্রীমতী কুঞ্জশ্রী দাশগুপ্ত🎶 🔘👉📝শ্রী মৃন্ময় নন্দী📝 ✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧ 🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏 ✧ ══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧ ✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧ 🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷🌷 *শচীসুতাষ্টকম্ ✍️ শ্রীশ্রী সার্বভৌম ভট্টাচার্য্য বিরচিতং 🙏 সংগৃহীত 🙏 শ্রী মৃন্ময় নন্দী কর্ত্তৃক সকল ভক্ত চরণে অসংখ্যকোটি প্রণাম 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন* 👉 http://mrinmoynandy.bl...
শ্রীঅম্বরীষ মহারাজের ছোট রানী 🙏 চারিযুগের ভক্তগাঁথা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/12/blog-post_97.html
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ শ্রীঅম্বরীষ মহারাজের ছোট রানী ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/12/blog-post_97.html ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস ꧂ ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ 🏠Home Page🏠 ⬇️⬇️🙏⬇️⬇️ 📚PDF গ্রন্থ📚 🌐 https://MrinmoyNandy.blogspot.com ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ টিকা বা অন্যান্য ধর্মীয় লিখনী 🙏 সূচীপত্র ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/10/home-page-pdf-httpsmrinmoynandy_25.html ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস ꧂ ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ MrinmoyNandy.blogspot.com 👉 সূচীপত্র ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/11/blog-post_34.html ...
মনোশিক্ষা 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 🙏 শ্রীযুক্ত প্রেমানন্দ দাস ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/jaydeb_14.html
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ৪২. ব্রহ্মা এবং মহেশ্বর যাঁর আরাধনা করেন 🙇 মনোশিক্ষা🙏 দ্বিতীয় ভাগ🙏শ্রী প্রেমানন্দ দাস ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/jaydeb_14.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ *(৪২)🔥🔥মনো শিক্ষা 🔥🔥* •••••••••••••••••••••••••••••••••••••• *ওরে মন! বিচারিয়া দেখ না হৃদয়* *ধনে জনে যত আর্তি,বাড়ে বই নহে নিবৃত্তি,* *হরি-পদে হৈলে কি না হয়।।* *যা ভাবিলে হবে নাই,তাই ভেবে কাট আই,* *ভাবিলে যে পাও তা না কর।* *লক্ষকোটি যার ধন,সে কি পায় এক মণ,* *বুঝি কেনে ধৈরয না ধর।।* *খাওয়া পরা ভাল চাও,তাই কি ভাবিলে পাও,* *পূর্ব-জন্মার্জিত সেই পাবে।* *কার ধন চিরস্থায়ী,না গণ'আপন আই,* *কত কাল তুমি বা বাঁচিবে।।* *অজ ভব ভবে যাঁরে,কি মদে পাসর তাঁরে,* *"হরি" ভুলি জীয় কোন্ কাজে।* *"হরিনাম"যাতে নাই,সে বদনে পড়ুক ছাই,* *সে মুখ সে দেখায় কোন্ লাজে।।* *...
বকরূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে চারটি প্রশ্ন করেছিলেন সেই প্রশ্নই বা কি? ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/05/blog-post_98.html
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ বকরূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে চারটি প্রশ্ন করেছিলেন সেই প্রশ্নই বা কি? ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/05/blog-post_98.html ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂ ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ 🏠Home Page🏠 ⬇️⬇️🙏⬇️⬇️ 📚PDF গ্রন্থ📚 🌐 https://MrinmoyNandy.blogspot.com ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ MrinmoyNandy.blogspot.com 👉 সূচীপত্র ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/11/blog-post_34.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ টিকা বা অন্যান্য ধর্মীয় লিখনী 🙏 সূচীপত্র ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/10/blog-post_23.html ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂ ✧═══════════•❁❀❁•═════...
শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু 🥀 সংক্ষিপ্ত কথন 🙏 প্রথম ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/01/mohaprobhu-joydeb-dawn.html
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু 🙏 প্রথম ভাগ ꧂ ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/01/mohaprobhu-joydeb-dawn.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ *••••┉❀꧁👇 🏠Home Page🏠👇 ꧂❀┅••••* 👉 MrinmoyNandy.blogspot.com 👉 Boisnob.blogspot.com ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ *••••━❀꧁👇 📖 সূচীপত্র 📖 👇꧂❀┅••••* 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/11/blog-post_34.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ *••••━❀꧁👇📚 PDF গ্রন্থ 📚👇꧂❀┅••••* 👉 https://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/09/pdf_22.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ *•❀꧁ 📖সূচীপত্র 🙏 শ্রী জয়দেব দাঁ 📖 ꧂❀•* 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/10/blog-post_23.html 👉...
শ্রীআমলকী একাদশী ব্রতের মাহাত্ম্য কি ❓ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/ekadoshi.html
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ শ্রীআমলকী একাদশী ব্রতের মাহাত্ম্য ꧂ ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/ekadoshi.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ 🏠Home Page🏠 ⬇️⬇️🙏⬇️⬇️ 📚PDF গ্রন্থ📚 ꧁ MrinmoyNandy.blogspot.com 👉 সূচীপত্র ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/11/blog-post_34.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ https://Gopisharan.blogspot.com 🙏 সূচীপত্র ꧂ ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস ꧂ এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/10/home-page-pdf-httpsmrinmoynandy_25.html ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ *শ্রীআমলকী একাদশী ব্রতের মাহ...
*নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলং শুকমুখাদকমৃতদ্রবসংযুতম্।**পিবত ভাগবতং রসমালয়ং মুহুরহো রসিকা ভূবি ভাবুকাঃ।।*✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/09/blog-post_89.html
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ *নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলং শুকমুখাদকমৃতদ্রবসংযুতম্* ꧂ এই লিংকে 👇👇👇🙏👇👇👇 ক্লিক করুন 🌐 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/09/blog-post_89.html ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂ ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ 🏠Home Page🏠👇👇🙏👇👇📚PDF গ্রন্থ📚 🌐 https://MrinmoyNandy.blogspot.com ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ ꧁ টিকা বা অন্যান্য ধর্মীয় লিখনী 🙏 সূচীপত্র ꧂ এই লিংকে 👇👇👇🙏👇👇👇 ক্লিক করুন http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/10/blog-post_23.html ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂ ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧ *নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলং শুকমুখাদকমৃতদ্রবসংযুতম্।* *পিবত ভাগবতং রসমালয়ং মুহুরহো রসিকা ভূবি ভাবুকাঃ।।* = = = = = = = = = = = = = = = = = *মুলানুবাদ=হে রসবিশেষভাবনা-চতুর রসিক ভক্তগণ!শুকমুনির মুখনির্গলিত দেব-কল্পতরুর শ্রীমদ্ভাগবত নামক পরমানন্দরসময় ফল সাধনকাল হতে মোক্ষক...