🚩🚩🚩🙇🙇🙇 রাধে রাধে 🙇🙇🙇🚩🚩🚩

শ্রীস্বরূপদামোদর 🌷 চতুর্থ ভাগ 🌻 ভক্তপ্রবর শ্রীরসিকমোহন চক্রবর্তী ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/swarup4.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🔙 শ্রীস্বরূপদামোদর 🌷 তৃতীয় ভাগ  🌻 ভক্তপ্রবর শ্রীরসিকমোহন চক্রবর্তী ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/swarup3.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীস্বরূপদামোদর 🌷 চতুর্থ ভাগ  🌻 ভক্তপ্রবর শ্রীরসিকমোহন চক্রবর্তী ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/swarup4.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীস্বরূপদামোদর 🌷 চতুর্থ ভাগ  🌻 ভক্তপ্রবর শ্রীরসিকমোহন চক্রবর্তী ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/swarup4.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৩১)🙌শ্রীস্বরূপ-দামোদর🙌*
               *ব্রজের মানরস*
           🙌🙌🙌🙌🙌🙌
*🍀শ্রীশ্রীমহাপ্রভু লক্ষ্মীবিজয়ের মানের কথার শ্রীস্বরূপকে ব্রজের মান-রসের নিগূঢ় তত্ত্ব বলতে আজ্ঞা করলেন।তদ্ যথা শ্রীচরিতামৃতে পায়=*
*🌷প্রভু কহে কহ ব্রজ মানের প্রকার।*
*🌷স্বরূপ কহে গোপীমান নদী শতধার।।*
*🌻নদী অদম‍্য বেগে প্রবাহিত হয়,এই প্রবাহের সামনে যদি পর্বত পরিমিত বাধা উপস্থিত হয়,জলরাশি তখন স্ফীত হয়ে উঠবে,সোজা পথে চলতে না পেরে শত পথে কুটিল গতিতে চলবে।প্রেমের গতি স্বভাবতই কুটিল,মানের বাধা পেলে তার গতি আরও কুটিল হয়ে উঠে,সারস্বতালঙ্কারের এই উক্তি অতি যুক্তিময়ী। শ্রীউজ্জ্বল নীলমণি বলেন=*
*🌷দম্পত্বোর্ভাব একত্র সতোরপ‍্যনুরক্তয়োঃ।*
*🌷স্বাভীষ্টাশ্লেষবীক্ষাদি নিরোধী মান উচ্চতে।।*
*🌻নায়ক-নায়িকার একত্রই অবস্থান হচ্ছে,একের প্রতি অন‍্যের বিশেষ অনুরক্তিও আছে,একে অন‍্যকে দেখতে এবং আলিঙ্গন করতেও একান্ত ইচ্ছুক, অথচ যে ভাববিশেষ এই অভীষ্ট সিদ্ধির বিরোধী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে,তারই নাম মান।এই বিরোধ আপাতত দৃষ্টিতে নায়ক-নায়িকার কষ্টকর বলে অনুমতি হলেও এর ফলে প্রেম বৃদ্ধি পায়,প্রেম নব-নবায়মান হয়ে উঠে।প্রেমের প্রবাহ সরস সবেগ ও অভিনব রাখার জন্যই মানের উদয়।মান পুরাতনকে অভিনব করে প্রকাশ করে,নিয়ত আস্বাদ‍্য পদার্থকে অভিনব (চিরনতূন) মাধুর্য‍্যে সুমধুর ও প্রলোভনীয় করে তুলে।প্রেমরাজ‍্যে মান এক সঞ্জীবনী সুধা, এক অদ্ভুত ইন্দ্রজাল। এর সঞ্চারে জীর্ণ হৃদয়বল্লরী মুকুলায়ন হয়ে উঠে,শীর্ণ মলিমস বদনমন্ডল মুকুরায়ন হয়, পুরাতন প্রেম পলকে পলকে অভিনব (একেবারে চিরনতূন) হয়ে উঠে। মকরন্দ-পরিমল-মুগ্ধ ভ্রমরের মত নায়ক মানিনীর মুখকমলের মধুপানের জন্য ব‍্যাকুল হন, হৃদয়ের ঘোরতর তিমির বা অন্ধকার দূর করার জন্য শতবার নায়িকার "দন্তরুচি-কৌমূদীর" প্রার্থনায় আকুলিত হন,অবশেষে "দেহিপদ পল্লব মুদারং" বলে মানিনীর মান ভঙ্গ করতে তাঁর চরণতলে নিজমস্তক লুন্ঠিত করে কৃতার্থ হন।মানের এই মহিমা অতি অদ্ভুত, এই মাধুর্য‍্য-বৃদ্ধিকারিণী শক্তি প্রকৃতই অতি গরীয়সী।এইজন‍্য শ্রীউজ্জ্বল নীলমণি মানের আর একটি স্বরূপ নির্ণয় করে বলেছেন=*
*🌷স্নেহস্তূৎকৃষ্টতা ব‍্যাপ্ত‍্যা মাধুর্য‍্যমানয়ন্নবং।*
*যো ধারয়ত‍্যদাক্ষিণ‍্যং স মান ইতি কীর্ত্ত‍্যতে।।*
*🌹অর্থ‍্যাৎ যে স্নেহ উৎকর্ষ প্রাপ্ত হয়ে অভিনব মাধুর্য‍্য আনয়ন করে কিন্তু স্বয়ং কুটিলভাবে ধারণ করে তাইই মান।এই মান ব্রজদেবীগণেই সম্ভবে। এইজন‍্য ইতঃপূর্বে শ্রীস্বরূপ বলেছেন=*
*🌷ব্রজগোপীগণের মান রসে নিদান।*
*🌳যে মান ক্রোধ-উন্মত্তা রণরঙ্গিণী চামুন্ডার মত সৈন‍্য সাজিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে এগিয়ে যায়,ব্রজে সে মানের জায়গা নাই ; সে মান দ্বারকায় শোভা পেতে পারে,সত‍্যভামা সেই মানের উদাহরণ স্বরূপিণী হতে পারেন, শ্রীক্ষেত্রে লক্ষ্মীবিজয়ে সেই মানের প্রকৃষ্ট অভিনয় দেখা যেতে পারে। কিন্তু প্রকৃত রসের নিদান যে মান, শ্রীব্রজধামেই সে মানের স্থিতি ও স্ফূর্তি।ব্রজের মানে পূর্ণমাত্রায় আবেগ উচ্ছাস আছে,তরঙ্গ আছে, কিন্তু সে তরঙ্গ প্রলয়াঙ্কর নয়,ব্রজে মান বজ্র অপেক্ষা কঠিন হলেও পলকেই আবার কুসুম অপেক্ষাও সুকোমল হয়ে পড়ে।সেইজন‍্য শ্রীস্বরূপ বলেছেন=*
*🌷নায়িকার স্বভাবে প্রেম-বৃত্তি বহুভেদ।*
*🌷সেই ভেদে নানা প্রকার মানের উদ্ভেদ।।*
*🌷সম‍্যক্ গোপীর মান না যায় কখন।*
*🌷এক দুই ভেদে করি দিগ দরশন।।*
*🔴শ্রীচৈতন‍্যচন্দ্রোদয়েও এই কথারই উল্লেখ আছে=*
*শ্রীচৈতন‍্য বলছেন=স্বরূপ!কীদৃশং প্রণয়কোপ বৈদগ্ধ‍্যম্?*
*শ্রীস্বরূপ বলছেন=যা যাদৃশী,তস‍্যাঃ খলু তথাবিধ বৈদগ্ধ‍্যম্।*
*শ্রীচৈতন‍্য বলছেন=তথাপি শৃণুমঃ*।
*শ্রীচৈতন‍্য=স্বরূপ প্রণয়কোপ চাতুরী কেমন?*
*শ্রীস্বরূপ=ভগবন্,যে রমণী যেমন,তার প্রণয়কোপ তেমন।*
*শ্রীচৈতন‍্য=তথাপি শুনতে ইচ্ছা করি।*
*🍀স্বরূপ তখন নায়িকার স্বভাব-অনুগত মানরস-তত্ত্বের বর্ণনা করতে লাগলেন।তিনি বললেন যথা শ্রীচৈতন‍্যচরিতামৃতে=*
*🌷মানে কেহ হয় "ধীরা" কেহ তো "অধীরা"।*
*🌷এই তিন ভেদ কেহ হয় "ধীরাধীরা"।।*
*🍀শ্রীউজ্জ্বল নীলমণি বলেছেন=*
*ত্রিধাসৌমানবৃত্তেঃস‍্যাদ্ধীরাধীরোভয়াত্মিকা।*
*🌹অর্থাৎ মান-প্রাপ্তা-নায়িকা তিন প্রকার,ধীরা,অধীরা, এবং ধীরাধীরা। ধীরার লক্ষণ শ্রীউজ্জ্বল নীলমণি গ্রন্থে এইরকম লেখা আছে,যথা=*
*🌷ধীরাতু ব‍্যক্তি বক্রোক্ত‍্যা সোৎপ্রাসং সাগসং প্রিয়ং।*
*🍁অর্থ‍্যাৎ যে নায়িকা সাপরাধ প্রিয়কে উপহাস সহ বক্রোক্তি (ব‍্যঙ্গক্তি) প্রয়োগ করে তাকে ধীরা বলা হয়।শ্রীউজ্জ্বলনীলমনিতে দৃষ্টান্তটি প্রদর্শিত হয়েছে।*
*স্বামিন্ যুক্তংমিদং তবাঞ্জনা-লবানক্তদ্রবৈঃ সর্বতঃ।*
*সংক্রান্তৈর্ধৃতনীল লোহিততনো র্যচ্চন্দ্রলেখাধৃতিঃ।।*
*একং কিন্ত্বব লোচয়াম‍্যনুচিতং হংহোপশুনাংপতে।*
*দেহার্দ্ধে দয়িতাং বহন্ বহুমতামত্রাসি যন্নাগতঃ।।*
*🍀ভাবার্থ এই যে,শ্রীকৃষ্ণ এক রাত্রিতে চন্দ্রাবলীর কুঞ্জে বিহার লালসে মগ্ন ছিলেন।সকালবেলা শ্রীমতী রাধারাণীর কাছে উপস্থিত হলেন।শ্রীমতী দেখতে পেলেন শঠের (কৃষ্ণের) অঙ্গে কাজলের চিহ্ন,জায়গায় জায়গায় তাম্বুল রাগ, কোথাও বা সিন্দুর,কোথাও বা নখ-ক্ষত সব দেখা যাচ্ছে।শ্রীরাধা শঠের ব‍্যবহার ভালভাবেই বুঝতে পারলেন, বুঝে উপহাস করে বক্রোক্তি করে বললেন, "ওহে এই যে নীললোহিত রুদ্রমূর্তি দেখছি"।তা বেশ খুবই সুন্দর সাজ হয়েছে। বল দেখি,পশুপতি,রুদ্রাণীকে সঙ্গে আননি কেন?তা হলেই তো ঠিক হত।এ ত্রুটি রাখলে কেন চতুরের শিরোমণি? "ধীরা" শ্রীমতীর এই কথাগুলি অতি সুন্দর। চন্দ্রাবলীর সম্ভোগ-বিলসিত শ‍্যামসুন্দর মূর্তিটিকে নীললোহিত রুদ্রমূর্তি বলে বর্ণনা করায় কাব‍্যেসৌন্দর্য‍্য অতি সুন্দরভাবে প্রকাশিত হয়েছে।চন্দ্রাবলীর নয়নযুগলের গলে পড়া কাজলে শ‍্যামদেহ রঞ্জিত হয়েছে,সেটির পার্শ্বে পার্শ্বে চুম্বন হেতু তাম্বুলরাগ ও নখাঘাতের লোহিত রেখা-রঞ্জনে পরিশোভিত শ্রীকৃষ্ণের বেশ দেখেই শ্রীরাধার মনে মানের সঞ্চার হল। কিন্তু এ জায়গায় ধীরা। সুতরাং লক্ষ্মীর মত বা সত‍্যভামার মত অতি কোপিনী হলেন না।মিষ্টি মিষ্টি কথায় বক্রোক্তি প্রয়োগ আরম্ভ করলেন, "পশুপতে" বলে সম্বোধন করলেন। এটি শ্রীমতীর প্রগলভ (দাম্ভিক) বাক‍্য।পশুপতি শব্দটি এখানে দুই অর্থে ব‍্যবহৃত হয়েছে।পশুপতির এক অর্থে মহাদেব।অন‍্য অর্থে রসনাভিজ্ঞ।রসনাভিজ্ঞ ব‍্যক্তিও পশুতুল‍্য।শ্রীমতীরাইধনি বললেন রুদ্রাণীকে সঙ্গে আননি কেন?তা হলেই তো আমার সাক্ষাৎ অর্দ্ধ নারীশ্বর নীললোহিত মূর্তি সন্দর্শনের লাভ হত?*
🦜🦜🦜🦜🦜🦜🦚🦜🦜🦜🦜🦜🦜
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীস্বরূপদামোদর 🌷 চতুর্থ ভাগ  🌻 ভক্তপ্রবর শ্রীরসিকমোহন চক্রবর্তী ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/swarup4.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৩২)🙌শ্রীস্বরূপ-দামোদর🙌*
           *❤ব্রজের মানরস❤*
         ################
*🌻কিন্তু শ্রীস্বরূপদামোদর মহাপ্রভুকে যে দুইটি উদাহরণ শুনিয়েছিলেন,কবি কর্ণপুরের শ্রীচৈতন‍্যচন্দ্রোদয়ে তা এইরকম ভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন যথা=*
*🍀কদাচিৎ কৃতাপরাধে প্রণয়িনি শ্রীব্রজরস কিশোরে সবিধমাগত‍্য সমুচিতং ব‍্যহরতি সতি ঃ---*
*🌷কিং পাদান্তমুপৈষি নাস্মি কুপিতা নৈরাপরাদ্ধোভবা,*
*🌷ন্নির্হতুর্ন হিজায়তে কৃতধিয়াং কোপোহপরাধোহথবা।*
*🌷যোগ‍্যাএবহি ভোগ‍্যতাং দধতি তে তৎকিংময়াযোগ‍্যয়া,*
*🌷তেনাদ‍্যাবধি গোকুলেন্দ্রতনয় স্বাচ্ছন্দ‍্যমেবাস্তু তে।।*
*🔷অর্থ‍্যাৎ শ্রীব্রজরাজকিশোর (শ্রীকৃষ্ণ) কোন সময়ে শ্রীরাধার কাছে নিজ অপরাধ বিমোচনের প্রার্থনা করায় শ্রীমতী কহিলেন,শ‍্যাম,তুমি আমার পদতলে পড়ছ কেন?আমি তো রাগ করি নাই!তোমারও কোন অপরাধ নাই।অকারণে কারও কোপ বা অপরাধের উদয় হয় না।তুমি আমার এখানে আসিলে কেন?আমি তো তোমার যোগ‍্যা নই!যে তোমার উপযুক্ত তুমি তার কাছে যাও।আজ হতে আমার কাছে আসবার তোমার প্রয়োজন নাই,যেখানে তোমার মনের মত সঙ্গী আছে সেখানে যাও।*
*স্বরূপ বললেন ভগবন্!আর এক প্রকার মানময়ী "ধীরার" লক্ষণ শ্রীকৃষ্ণের কথায় শুনুন=*
*দূরাদুত্থিতমন্তিকং ময়িগতে পীঠং করেণার্পিতং,*
*স্মিত্বাভাষিণী ভাষিতং মৃদুসুধানিঃসন্দিমন্দংবচঃ।*
*আরূঢ়োর্দ্ধ মথাসনং প্রকটিতো হর্ষস্তয়া শ্লিষ‍্যতি,*
*প্রত‍্যাশ্লিষ্ট মবাময়েব মনসো বামাং তয়িবিস্কৃতং।।*
*🌹অর্থ‍্যাৎ শ্রীকৃষ্ণ বলছেন,আমি যখন মানময়ী শ্রীমতী রাধারাণীর কাছে যাই,তিনি দুর হতে আমাকে দেখে গাত্রোত্থান ও সামান্য হাসি হেসে আমার বসার জন্য আসন দিয়ে একটু সরে যান,আমি কথা বললে মৃদু মধুরস্বরে মন্দ মন্দ ভাবে কথা বলেন,আমি অর্দ্ধাসনে বসিলে তিনি একটু হেসে অমনি একটু ফিরে দাঁড়ান, আমি আলিঙ্গন করতে গেলে তিনি তাতে বাম‍্যভাব(প্রতিকূলা ভাব) প্রকাশ করেন।শ্রীচৈতন‍্যচরিতামৃতে এই লক্ষণটির উল্লেখ করেছেন যথা=*
*🌷ধীরাকান্তা দূরে দেখি করে প্রত‍্যুখ‍ান।*
*🌷নিকটে আসিলে করে আসন প্রদান।।*
*🌷হৃদে কোপ,মুখে কহে মধুর বচন।*
*🌷প্রিয় আলিঙ্গেতে তারে করে আলিঙ্গন।।*
*🌷সকল ব‍্যবহারে করে মানের পোষণ।*
*🌷কিবা সোল্লুন্ঠ বাক‍্যে করে প্রিয় নিরসন।।*
*🌻সোল্লুন্ঠ=পরিহাস*
       °°°°°°°°°°°°°°°°°°
*🍁ফলে এই আলিঙ্গন কেবল ভদ্রতাসূচক বা ধীরতারই পরিচয়,এ আলিঙ্গন আসক্তি বা হর্ষপূর্বক (আনন্দের সঙ্গে ) আলিঙ্গন না।প্রকৃত মান আলিঙ্গনের বিরোধী।মহাপ্রভু শুনে বললেন,স্বরূপ!এ লক্ষণটি আগে যে উদাহরণ দিয়ে ছিলে তার অপেক্ষা খুবই সরস।স্বরূপ বললেন, "প্রভো!এখন অধীরার কথা শুনুন।অধীরা নিষ্ঠুর কথায় প্রিয়জনের প্রতি রোষ প্রকাশ করে।অধীরা প্রকৃতই অধীরা।অধীরা ক্রোধভরে প্রিয়জনের ভর্ৎসনা করেন,নিজের ভূষণ দূরে ফেলে দেন,অধীরার মানতরঙ্গে প্রিয়জনের অপরাধের কথা স্পষ্টভাবেই অভিব‍্যক্ত হয়।আমরা শ্রীউজ্জ্বল নীলমণি গ্রন্থ হতে অধীরার উদাহরণ দেওয়ার চেষ্টা করছি।*
*🌷অধীরা পরুষৈ র্বাক‍্যে নিরস‍্যেদ্বল্লভং রুষা।*
*🌻অর্থ‍্যাৎ অধীরা রাগ করে নিষ্ঠুর কথায় নিজ প্রিয়জনকে নিরস্ত করে থাকেন।তদ্ যথা=*
*🌷উত্তঙ্গস্তনমন্ডলী সহচরঃ কন্ঠে স্ফুরন্নেষ তে,*
*🌷হারঃ কংসরিপো ক্ষপাবিলসিতং নিঃসংশয়ং শংসতি।*
*🌷ধূর্ত্তাভীরবধূপ্রতারিতমতে মিথ‍্যাকথাঘর্ঘরী-,*
*🌷ঝঙ্কারোন্মুখরা প্রযাহি তরসা যুক্তাত্র নাবস্থিতিঃ।।*
*❤অর্থ‍্যাৎ কংসারি (শ্রীকৃষ্ণ), যাও যাও,আর মিথ‍্যা কথা বোলো না। উত্তুঙ্গ(অতিউচ্চ)স্তনমন্ডলের সহচর তোমার ঐ গলার হারেই রজনী বিলাসের(চন্দ্রাবলীর সঙ্গে যে নিশিযাপন করেছিলেন,তারই কথা বলেছেন) পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। মিথ‍্যার ক্ষুদ্র ঘন্টা-শব্দে কি আর সত‍্যের বজ্রনাদ নিরস্ত(ক্ষান্ত) হয়? ধূর্ত ব্রজবধূরা তোমার বুদ্ধি পর্যন্ত ভ্রষ্ট করেছে।যাও যাও এখানে তোমার প্রয়োজন কি? শ্রীচরিতামৃতে পাই=*
*🌷অধীরা নিষ্ঠুরা বাক‍্যে করয়ে ভর্ৎসন।*
*🌷কর্ণোৎপল তাড়ে করে মালায় বন্ধন।।*
*🔵তারপর শ্রীস্বরূপ ধীরাধীরার লক্ষণ বলছেন যথা শ্রীচৈতন‍্যচরিতামৃতে=*
*🌷ধীরাধীরা বক্র বাক‍্যে করে উপহাস।*
*🌷কভু স্তুতি কভু নিন্দা কভুবা উদাস।।*
*🔴শ্রীউজ্জ্বল নীলমণি বলেন=*
*🌷ধীরাধীরাতু বক্রোক্ত‍্যা সবাষ্পং বদতি প্রিয়ং।*
*🔵অর্থ‍্যাৎ যে নায়িকা মানের রোষভরে অশ্রুবিমোচন করেন,ও বক্রোক্তি (উল্টোপাল্টা বা উপহাস কথা) বলেন তিনি ধীরাধীরা।অশ্রুবিমোচন করা মুগ্ধার ধর্ম। কিন্তু কর্কশ কথা বলায় অধীরার স্বভাব। প্রগলভা বা দাম্ভিক নায়িকায় পূর্ণ রাগের উদয় চরমভাবে দেখা যায়। শ্রীলক্ষ্মীবিজয়ে লক্ষ্মীর রাগও দ্বারকায় সত‍্যভামার রাগ সেটির দৃষ্টান্ত স্থল। সুতরাং সেটিতে তাড়নাদি(দূরে সরিয়ে দেওয়ার) কাজ চরমভাবে দেখা যায়।যেখানে পূর্ণ রোষের কিঞ্চিৎ অল্পতা ঘটে, সেখানে কঠোর বাক‍্যেই মানিনী নিজ প্রিয়জনের শাসন করেন।মুগ্ধাতে রোষ বা রাগ অতি কম।কাজেই রোদনই মুগ্ধার একমাত্র সম্বল।ধীরার রোষ ধৈর্য‍্য-আচ্ছাদিত (ধৈর্য‍্যকে ঢেকে রাখে)। সুতরাং তাঁর রোষময় কথা একেবারেই আবরণহীন বা খোলাখুলি কথা।ধীরা-ধীরার কাজ উভয়াত্মক।ধীরাতে বক্রোক্তি স্বাভাবিকী অথচ কঠিন কথা বলায় অধীরার স্বভাব। কিন্তু ধৈর্য‍্যের আবরণে অধীরার কঠোর বাক‍্য নিরুদ্ধ বা আবদ্ধ হয়, এবং কঠিন কথার পরিবর্তে অশ্রুজলের সঞ্চার হয় বা একভাবে রোদন করেন।ধীরাধীরা নায়িকায় মুগ্ধার সমস্ত লক্ষণ প্রকাশ পায় না।মুগ্ধার উপহাস বা বক্রোক্তি নাই,মুগ্ধার কেবল আছে, "কোমলগন্ডপরিপ্লাবিনী মণিমুক্তার মোহনমালাবিনিন্দী অশুমালা।"*
               *ক্রমাগত*
📿📿📿📿📿📿📿📿📿📿📿📿📿
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীস্বরূপদামোদর 🌷 চতুর্থ ভাগ  🌻 ভক্তপ্রবর শ্রীরসিকমোহন চক্রবর্তী ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/swarup4.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৩৩)🙌শ্রীস্বরূপ-দামোদর🙌*
           *🌲ব্রজের মানরস🌲*
           ^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*🍀এই ধীরা-ধীরার দুইটি উদাহরণ শ্রীউজ্জ্বল নীলমণি হতে দেওয়া হল।*
*🌷গোপেন্দ্রনন্দন ন রোদয় যাহি যাহি,*
*🌷সা তে বিধাষ‍্যতি রুষং হৃদয়াধিদেবী,*
*🌷ত্বন্মৌলিমাল‍্যহৃত যাবক পঙ্কমস‍্যাঃ,*
*🌷পাদস্বয়ং পুনরনেন বিভূষয়াদ‍্যা।*
*🌹মানময়ী শ্রীরাধা বললেন, মহারাজপুত্র শ্রীকৃষ্ণ, আমার মত তোমার শতকোটি কামিনী বিরজিতা।আমি যদি তোমার জন্য কেঁদে কেঁদে মরেও যাই,তাতে তোমার তো কোন ক্ষতি হবে না।এখানে দাঁড়িয়ে আর আমায় এখন কাঁদাতে হবে না,এখন যাও যা------ও। তোমাকে না দেখলেই তোমাকে তাড়াতাড়ি ভুলতে পারব।কাছে থাকলে ভুলতে পারব না।আর এক কথা তোমার মঙ্গলের জন্যই বলছি,তুমি এখানে আছ তোমার প্রেয়সী যদি জানতে পারে বা শুনতে পাই,তখন তুমি অত‍্যন্ত বিপদে পড়বে। সুতরাং যাও যাও আর দেরী করিও না,পাছে তোমার হৃদয়েশ্বরী তোমার প্রতি রুষ্টা হবেন। তোমার মাথার চূড়ায় যার পায়ের অলক্তরাগ মুছিয়ে দিয়াছ যাও,তার চরণতলেই মাথা লুটাও গিয়ে।এখানে আর কেন?*
*আরও একটি উদাহরণের উল্লেখ করা যাচ্ছে=*
*তামেব প্রতিপাদ‍্য কামবরদাং সেবস্ব দেবীংসদা,*
*যস‍্যাঃ প্রাপ‍্য মহাপ্রসাদ মধুনা দামোদরামোদসে।*
*পাদালক্তচিতং শিরস্তব মুখং তাম্বুলশেষোজ্জ্বলাং,*
*কন্ঠস‍্যায়মুরোজ কুট্নল সুহৃন্নির্ম্মাল‍্য মাল‍্যাঙ্কিতঃ।।*
*🌹শ্রীমতী রাইধনি বলছেন,দামোদর তোমার হৃদয়ের অধিষ্ঠাত্রী পূজনীয়া দেবীকে পরিত‍্যাগ করে এখানে কেন?যার পায়ের অলক্তরাগে (আলতার রঙে,তার চরণে আলতা পরিয়ে,আলতা পরানো চরণদুটি মস্তকে ধারে রেখেছিলে তাই,) তোমার মাথার চূড়া শোভিত হয়,যার মুখের উচ্ছিষ্ট তাম্বুলে তোমার মুখমন্ডল সমুজ্জ্বল বা অতীব সুন্দর হয়,যার গলার প্রসাদী মালায় তোমার কন্ঠের শোভা বেড়ে যায়, যাও যাও সেখানে যাও, সেই কামবরদায়িনী হৃদয়ের অধীশ্বরীর শরণাপন্ন হও।সেখানে গিয়ে তার সেবা কর,তার মহাপ্রসাদলাভে সুখী হও গিয়ে,তার মত করে তো আমি তোমাকে কোনদিনই সুখ দিতে পারিনি,আমার কাছে থেকে তোমার লাভ কি?সেইখানেই তোমার সব বাসনা পূর্ণ হবে,এখানে কি দরকার?*
*⭐শ্রীস্বরূপকে মহাপ্রভু জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "বল দেখি স্বরূপ", মান চাতুরী কেমন?তার উত্তরে স্বরূপ বলেন প্রভো!যে রমণী যেমন,তার মান চাতুরীও তেমন" সুতরাং স্বরূপ নায়িকা ভেদেই মানের প্রকার-ভেদ সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিলেন।এই যে ধীরা,অধীরা ও উভয়াত্মিকা এই তিন প্রকার নায়িকার কথা এখানে উল্লেখ করা হল, নায়িকার ধৈর্য‍্যগুণই ভেদসূচক। সারস্বতালঙ্কার বলেন=*
*🌷গুণতো নায়িকাপিস‍্যাদত্তমা মধ‍্যমাধমা।*
*🌷মুগ্ধা মধ‍্যা প্রগভভাচ্ বয়সাকৌশলেন চ।*
*🌷ধীরাধীরৈব ধৈর্য‍্যেন স্বান‍্যদীয়া পরিগ্রহাৎ।।*
*🌻সুতরাং ধৈর্য‍্যভেদে নায়িকার মানের প্রকারভেদ কি রকম হয়,স্বরূপদামোদর প্রথমেই তাইই প্রকাশ করেন।অতঃপর বয়স ও কৌশলভেদে মুগ্ধা,মধ‍্যা ও প্রগলভার মানের চাতুরী ক্রমশ প্রকাশ করা যাবে।শ্রীস্বরূপের মুখে ধীরা নায়িকার মানের যে ভঙ্গিটি শুনে মহাপ্রভু আহ্লাদ বা আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন,ঠিক সেইরকম মানচাতুরীর একটি পদ "পদকল্পতরু" গ্রন্থ হতে দেওয়া হল, যথা=*
*দুরে সঙ্গে নয়নে,নয়নে না হেরিব,*
       *নিরবে রহবি শির নামই।*
*পরশিতে শিহরি,করহি কর বারবি,*
         *যতনে রোখ নিরমাই।।*
   *সুন্দরি,অতয়ে শিখাঅব তোয়।*
*বিনহি মানে ধনি, সো বহু বল্লভ,*
       *কবহু" আপন বশ হোয়।।*
*পুছইতে গোরি, চমকি মুখ মোড়বি,*
       *হসইতে জিনি তুহু হাস।*
*করইতে মিনতি,শুনই নাহি শুনবি,*
      *কহবি আনহি আন ভাষ।।*
*পড়ইতে চরণে,বারি দিঠি পঙ্কজে,*
          *পূজবি সো মুখচন্দ।*
*গোবিন্দ দাস কহ,যাক হৃদয়ে রহ,*
      *তাহে কি এত পরবন্ধ।।২১৭*
*🌳শ্রীগোবিন্দদাসের মানশিক্ষা এই পদটি অতি মধুর।এই মানধীরা নায়িকার পক্ষেই শোভা পায়।বহুবল্লভকে বশীভূত করতে হলে মানের প্রয়োজন। কিন্তু এইরকম মানে প্রেমমাধুর্য‍্যের বৃদ্ধি ছাড়া বিন্দুমাত্রও রৌদ্ররসের ভাব নাই। এ মান অতি সুন্দর ও অতি সরস।*
*🌹শ্রীস্বরূপ বললেন, প্রভো!বয়সভেদে তিন প্রকার নায়িকার তিনরকম ভাবের কথাও শুনুন।মুগ্ধ, মধ‍্যা ও প্রগলভা বয়সভেদে নায়িকার এই তিনরকম অবস্থা রসশাস্ত্রে বর্ণিত আছে।মুগ্ধার মানচাতুর্য‍্য নাই,মান পান্ডিত‍্যও নাই।মুগ্ধা অতি সরলা।তিনি কেবল মানের সময়ে মনের দুঃখে মুখ ঢেকে কাঁদতে থাকেন, আবার বিনয়-বাক‍্য ও মিষ্টি মধুর কথা শোনা মাত্রই সব দুঃখ-কষ্ট ঘুচে যায়। শ্রীউজ্জ্বল নীলমণি গ্রন্থে মুগ্ধার লক্ষণে বলেন=*
*🌷মুগ্ধা নববয়ঃ কামারতৌ বামা সখীবশা।*
*🌷রতিচেষ্টাস্বতিব্রীড় চারুগূঢ় প্রযত্নভাক্।।*
*🌷কৃতাপরাধে দয়িতে বাষ্পরুদ্ধাবলোকনা।*
*🌷প্রিয়া প্রিয়োক্তৌ চাসক্তা মানেচ বিমুখীসদা।।*
*🔵যে নায়িকা নবযুবতী, সামান্য কামবতী,রতি বিষয়ে বামা সখীজনের অধীনা,(সখীরা যা বলেন তাইই করেন), রতিচেষ্টায় অতি লজ্জাশীলা অথচ তাতে গুপ্ত ভাবে যত্নশীলা, অপরাধী প্রিয়তমের প্রতি সজলনয়নে দৃষ্টিসঞ্চারিণী (অপরাধ করেও প্রাণবল্লভের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকেন )প্রিয় ও অপ্রিয় কথায় অশক্তা (অসমর্থা) এবং মান বিষয়ে সর্বদা পরাঙ্মুখী(বিমুখী),তিনি মুগ্ধা নায়িকা।মুগ্ধার এই নয়টি লক্ষণের প্রত‍্যেকটির দৃষ্টান্ত উজ্জ্বলনীলমণি গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।আমি এখানে কেবল মান বিমুখতার দৃষ্টান্তই উল্লেখ করছি।*
*🍁মানবিমুখ দুই প্রকার=মৃদ্বী ও অক্ষমা।মৃদ্বী অতি কোমলমনা বা খুবই নরম স্বভাবের এবং অক্ষমা একেবারেই মানে অসমর্থা। সুতরাং অক্ষমা অতি মুগ্ধা।মৃদ্বীর একটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছি, যথা=রসসুধাকরে=*
*ব‍্যবৃত্তিক্রমমনোদ‍্যমেন পদয়ো প্রত‍্যদ্গতৌবর্তনং।*
*ভ্রুভেদোহপি তদীক্ষণ ব‍্যসনিনা ব‍্যাস্মারিমেচক্ষুষা।।*
*চাটূক্তানি করোতি দগ্ধরসনা রুক্ষাক্ষরেহপ‍্যূদ‍্যতা।*
*সখ‍্যঃ কিং করবাণি মান-সময়ে সংঘাতভেদো মম।।*
*🔴সখীরা ধন‍্যসখীকে উপদেশ করলেন "সখী তুমি শ্রীকৃষ্ণের কাছে মান প্রকাশ করিও" ধন‍্যাসখীও তাতে সম্মত হলেন।পরেরদিন সখীরা এসে জিজ্ঞাসা করলেন "সখী!তোমার মানের কুশল বল"?ধন‍্যা বললেন,"সে কথা আর জিজ্ঞাসা করিও না।মনে করেছিলাম তাকে দেখে দূরে সরে যাব, কিন্তু আমার পা-দুইটি তার দিকেই চলতে লাগল,মনে করেছিলাম,একটি ভ্রুকুটি(কুটিলভাব) করব কিন্তু আমার চোখের দিকে চাতক পাখীর ন‍্যায় তাকিয়ে রইল কৃষ্ণ, রুক্ষকথা বলব বলে মনে করেছিলাম,কিন্তু জিহ্বা এমনই হতভাগ‍্য যে,সে কিসে সন্তুষ্ট হবে জিহ্বা সেইরকম মিষ্টি কথা খুঁজতে লাগল।দেখ ভাই আমার কোন দোষ নাই,আমার নয়ন চরণাদিই বিপরীত আচরণ করেছে। অক্ষমার একটি উদাহরণ =*
*🌷আভীর পঙ্কজ দৃশাংবতো সাহসিক‍্যং,*
*🌷যাঃ কেশবে ক্ষণমপি প্রণয়ন্তি মানম্।*
*🌷মানেতি বর্ণযুগলেহপি মম প্রযাতে,*
*🌷কর্ণাঙ্গনং বহতি বেপথু অন্তরাত্মা।।*
*🔵সখী!পদ্মলোচনা আভীর বা গোয়ালিনী ললনাগণের কি সাহস!এঁরা ক্ষণকালের জন‍্যও কেশবের প্রতি মান প্রকাশ করতে পারে!কি আশ্চর্য‍্য!কেশবের মুখটি দর্শন করলে আর কি মান থাকে?যাকে দেখা মাত্রই দেহ,মন,প্রাণ ও কথায় আনন্দে অধীর হয়,তার কাছে কি মান করা সাজে?মান এই দুইটি অক্ষর শুনা মাত্রই আমার প্রাণ কেঁপে উঠে"।*
               *ক্রমাগত*
❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীস্বরূপদামোদর 🌷 চতুর্থ ভাগ  🌻 ভক্তপ্রবর শ্রীরসিকমোহন চক্রবর্তী ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/swarup4.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৩৪)🙌শ্রীস্বরূপ-দামোদর🙌*
           *🌿ব্রজের মানরস🌿*
            ☆☆☆☆☆☆☆☆☆
*🍀শ্রীচৈতন‍্যচরিতামৃতে জানা যায়=*
*🌷মুগ্ধা মধ‍্যা প্রগলভা তিন নায়িকার ভেদ।*
*🌷মুগ্ধা নাহি জানে মানের বৈদগ্ধ‍্য বিভেদ।।*
*🌷মুখ আচ্ছাদিয়া করে কেবল রোদন।*
*🌷কান্তের বিনয় বাক‍্যে হয় পরসন্ন।।*
*🌻মুগ্ধা নায়িকার লক্ষণ বর্ণনার পর এক্ষণে মধ‍্যমার লক্ষণ বলা হচ্ছে, যথা শ্রীউজ্জ্বলনীলমণি গ্রন্থে=*
*🌷সমান লজ্জামদনা প্রোদ‍্যত্তারুণ‍্যশালিনী,*
*🌷কিঞ্চিৎ প্রগলভ বচনা মোহান্তসুরতক্ষমা।*
*🌷মধ‍্যাস‍্যাৎ কোমলা ক্বাপিমানে কুত্রাপি কর্কশা।।*
*🌹যে নায়িকার লজ্জা ও মদন দুই সমতুল‍্য,যিনি নবযুবতী,যাঁর কথা সামান্য প্রগলভ বা দাম্ভিক, মূর্ছা পর্যন্ত যিনি সুরত বিষয়ে ক্ষমতাবতী, এবং যিনি মানে কখন বা মৃদ্বী,কখন বা কর্কশা,তিনিই মধ‍্যা নায়িকা।মধ‍্যা নায়িকার যে পাঁচটি লক্ষণ বলা হল শ্রীগ্রন্থে এর প্রত‍্যেকটির উদাহরণ উল্লিখিত হয়েছে।মানের অবস্থাই আমাদের আলোচ‍্য।মধ‍্যমার মানে কোমলতার উদাহরণ এই=*
*🌷প্রণাস্ত্বমেব কিমিব ত্বয়ি গোপনীয়ং,*
*🌷মানায় কেশিমথনে সখি নাস্মি শক্তা।*
*🌷এহি প্রযাব রবিজান্তট নিস্কুটায়,*
*🌷কল‍্যাণি ফুল্ল কুসুমাবচয়চ্ছলেন।।*
*🔷শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকা হতে শ্রীবৃন্দাবনে আসিলেন।শ্রীললিতা বললেন, রাই! তুমি শঠের সঙ্গে আলাপ করিও না, মান প্রকাশ করিও।শ্রীমতী বললেন,ললিতে!তুমি আমার প্রাণতুল‍্য,তোমার কাছে আমার কিছুই গোপন নাই, আমার অবস্থা তোমার জানাই আছে।কেশিমথন শ্রীকৃষ্ণের কাছে মান প্রকাশ করতে পারি না।আর এক বুদ্ধি আছে।চলো আমরা এখন এখান হতে কালিন্দীতটে ফুল বাগানে ফুল তুলতে যাই। মানে কর্কশার একটি উদাহরণ দেওয়া হচ্ছে=*
*🌷মুধা মানোন্নাহাদগ্লপয়সি কিমঙ্গাণি কঠিনে,*
*🌷রুষং ধৎস‍্যে কিম্বা প্রিয়পরিজনাভ‍্যর্থনবিধৌ।*
*🌷প্রকামংতে কুঞ্জালয় গৃহপতি স্তাম‍্যতি পুরঃ,*
*🌷কৃপালক্ষ্মী বন্তং চটুলয় দৃগন্তং ক্ষণমিহ।।*
*🌻অর্থ‍্যাৎ বিশাখা শ্রীমতী রাধাকে বললেন,কঠিনে!তুমি বৃথা মান করে শরীর শুকনো করছ কেন?কেনই বা প্রিয় পরিজনগণের অভ‍্যর্থনায় রোষ প্রকাশ করছ?দেখ না, তোমার সামনে নিকুঞ্জবিহারী হরি কতই কষ্ট পাচ্ছেন,তোমার পায়ে ধরে কতবার তোমায় সাধছেন সেটির প্রতি ক্ষণকালের তরে তোমার কৃপা-সম্পত্তিপূর্ণ কটাক্ষপাত কর।(তোমার মনের মধ্যে মান সংক্রান্ত সব কিছু মুছে ফেলে তাঁকে কৃপা দৃষ্টিতে বক্ষে ধরণ কর)।অতঃপর প্রগলভার লক্ষণ বলা হচ্ছে=*
*🌷প্রগলভা পূর্ণ তারুণ‍্য মদান্ধোরুরুতোৎসকা,*
*🌷ভূরি ভাবোদ্গমাভিজ্ঞা রসেনাক্রান্ত বল্লভা,*
*🌷অতি প্রৌঢ়োক্তি চেষ্টাদৌ মানে চাত‍্যন্ত কর্কশা।*
*🌺অর্থ‍্যাৎ যে নায়িকা পূর্ণ যুবতী,মদান্ধা,(অতি দর্পী) বিপরীত সম্ভোগেচ্ছাশীলা,ভূরি ভূরি ভাবোদ্গমে অভিজ্ঞা,রস দ্বারা বল্লভকে আক্রমণকারিণী,অত‍্যন্ত প্রৌঢ় চেষ্টাশীলা এবং মানে অতি কর্কশা তাক প্রগলভা বলে। প্রগলভার উদাহরণ =*
*🌷মেদিন‍্যাং তে লুঠতি দয়িতা মালতীম্নান পুষ্পা।*
*🌷তিষ্ঠন্ দ্বারে রমণী বিমলাঃ খিদ‍্যতে পদ্মনাভঃ।।*
*🌷ত্ত্বঞ্চেন্নিদ্রা ক্ষপয়সি নিশাং রোদয়ন্তী বয়স‍্যা।*
*🌷র্মানে কস্তে নব মধুরিমা তন্তু নালোচয়ামি।।*
*🍁অর্থ‍্যাৎ বকুলমালা শ‍্যামলাকে বললেন,সুন্দরী তোমার এ দুর্জয় মান কি ভাবে ঘটল,মালতী লতার অপরাধ কি?সেটির মূলে জলসেচন বা সেটির পুষ্পচয়ন না করছ কেন?(মালতীলতার মূলে জলদিতে বা তার ফুল তুলতে না করছ কেন?)? তোমার অনাদরে সেটির ফুলগুলি পরিম্নান (ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে প্রায়) হয়ে পড়ছে,আর লতাটিও মাটিতে গড়াগড়ি যাচ্ছে।আর ঐ দেখ তোমার প্রিয়তম পদ্মনাভও তোমার দরজায় বিমনা ভাবে দাঁড়িয়ে কত খেদ করছেন।উপর থেকে তোমারও তো রাত্রিতে ঘুম নাই,হা-হুতাশেই তোমার রাত্রি কেটে যায়, তোমার সখীগণদেরও দুঃখের সীমা নাই, তারাও তোমার দুঃখে কেঁদে ব‍্যাকুল হয়।তুমি মাএর এমন নতূন মাধুরী কোথায় শিখেছ জানি না।*
*🌹ধীরা,অধীরা ও ধীরাধীরা ভেদে এই প্রগলভার মান তিন প্রকার।ধীরা প্রগলভার মান দুই প্রকার,যথা সম্ভোগ বিষয়ে উদাসীনা, অন‍্যটি আকার-সঙ্গোপনশীলা বা আদরান্বিতা।অধীরা প্রগলভার লক্ষণ এই=*
*🌷সন্তর্য‍্য নিষ্ঠুরং রোধাদধীরা তাড়য়েৎপ্রিয়ং।*
*🔴অর্থ‍্যাৎ অধীরা ক্রোধবশত অতি নিষ্ঠুরভাবে কান্তকে তাড়ন বা বকাকবি করে থাকে।উত্তমা স্ত্রীগণ হস্তদ্বারা প্রাণবল্লভের তাড়না করতে কখনও সমর্থ হন না।ধীরাধীরা প্রগলভার রীতি ধীরাধীরা নায়িকার তুল‍্য সে লক্ষণ আগেই প্রকাশ হয়েছে।প্রগলভার জ‍্যেষ্ঠা কনিষ্ঠা ভেদও রসশাস্ত্রে বর্ণিত আছে।*
*মুগ্ধা,মধ‍্যা ও প্রগলভা নায়িকা সম্বন্ধে শ্রীউজ্জ্বল নীলমণি গ্রন্থে স্বকীয়া ও পরকীয়া নিয়ে কিঞ্চিৎ বিচার আছে।কেউ কেউ বলেন এই তিনপ্রকার ভেদ কেবল স্বকীয়াতেই দেখা যায়,পরকীয়াতে দেখা যায় না।পরকীয়া দুই প্রকার, যথা=*
*🌷পরকীয়া দ্বিধা প্রোক্তা পরোঢ়াকন‍্যকা তথা।*
*🌷যাত্রাদি নিরতাহন‍্যোঢ়া কুলটা গলিত ত্রপা।।*
*🌷কন‍্যা ত্বজাতোপষমা সলজ্জা নবযৌবনা।*
*🌹এই পরকীয়াতে উক্ত তিন প্রকার ভাব সৎ কবিগণ কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে।পূজ‍্যপাদ শ্রীজীব গোস্বামী এই জায়গায় লিখেছেন সৎকবি শ্রীজয়দেব গোস্বামীর বর্ণনাতে কুমারী শ্রীমতী রাধিকাতেও এই ভাবের প্রকাশ পেয়েছে। প্রাচীন উক্তিতে এই সিদ্ধান্ত আরও দৃঢ়ীকৃত হয়েছে,যথা=*
*🌷উদাহৃতিভিদাৎ কেচিৎ সর্বাসামেব তন্বতে।*
*🌷তাস্তু প্রায়েণ দৃশ‍্যন্তে সর্বত্র ব‍্যবহারতঃ।।*
*🌻অর্থ‍্যাৎ কোন কোন কবি স্বকীয়া ও পরকীয়া সব নায়িকারই প্রায় সব জায়গায় এরকম ব‍্যবহার দেখে উল্লিখিত তিন প্রকার ভেদ স্বীকার করেন।*
*☘নায়িকার প্রেম ও রূপ-গুণাদির তারতম‍্যে অধিকা,সমা ও মৃদ্বী এই তিন প্রকার এবং পুনশ্চ প্রখরা,মধ‍্যা ও মৃদ্বী এই তিন প্রকার ভেদও দেখা যায়। তদ্ যথা=*
*🌷সৌভাগ‍্যদেরিহাধিক‍্যাদধিকা সাম‍্যতঃ সমা,*
*🌷লঘুত্বাল্লযুরিত‍্যুক্তা স্ত্রিধা গোকুল সুভ্রুব,*
*🌷প্রত‍্যেকং প্রখরা মধ‍্যা মৃদ্বীচেতি পুনস্ত্রিধা।*
*🌷প্রগলভবাক‍্যা প্রখরা খ‍্যাতা দুর্লঙ্ঘ‍্যভাষিতা।*
*🌷তদন‍্যত্বে ভবেন্মৃদ্বী মধ‍্যাতৎসাম‍্যমাগতা।।*
*🔷যিনি সদম্ভ কথা ব‍্যবহার করেন, বা দাম্ভিকতা নিয়ে কথা বলেন,যাঁর কথা কেউ খন্ডন করতে পারে না তিনি প্রখরা,এইরকম কথাবার্তার চেয়ে কিছু কম কথাবার্তা হলে মৃদ্বী ও সমান হলে "সমা" নামে কথিতা হন। শ্রীচরিতামৃতে শ্রীস্বরূপ দামোদরের উক্তিতে লিখিত আছে =*
*🌷মধ‍্যা প্রগলভা ধরে ধীরাদি বিভেদ।*
*🌷তার মধ্যে সবার স্বভাব তিন ভেদ।।*
*🌷কেহ মুখরা কেহ মৃদু কেহ হয় সমা।*
*🌷স্ব স্বভাবে কৃষ্ণের বাঢ়য়ে রস সীমা।।*
*🌷প্রাখর্য‍্য মার্দ্দব সাম‍্য স্বভাব নির্দোষ।*
*🌷সেই সেই স্বভাবে কৃষ্ণে করায় সন্তোষ।।*
*🌹যে রমণীর যেরকম স্বভাব তাঁর মানচাতুর্য‍্যও তেমনি।ইঁনাদের প্রত‍্যেকের ভিন্ন ভিন্ন ভাবেই শ্রীকৃষ্ণের পরম আনন্দ জন্মে থাকে।শ্রীস্বরূপ দামোদরের মুখে মানরস-তত্ত্ব শুনে মহাপ্রভু অত‍্যন্ত আনন্দিত হলেন,এবং স্বরূপকে এইসব কথা বলবার জন্য পুনঃপুনঃ আদেশ করতে লাগলেন। শ্রীচৈতন‍্যচরিতামৃতে=*
*🌷এই কথা শুনিয়া প্রভুর আনন্দ অপার।*
*🌷কহ কহ দামোদর কহে বার বার।।*
👌👌👌👌👌👌👌👌👌👌👌👌👌
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীস্বরূপদামোদর 🌷 চতুর্থ ভাগ  🌻 ভক্তপ্রবর শ্রীরসিকমোহন চক্রবর্তী ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/swarup4.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৩৫)🙌শ্রীস্বরূপ-দামোদর🙌*
          *🌺ব্রজের--মানরস🌺*
          🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
*🍀শ্রীস্বরূপ দামোদরের মুখে মানিনী ব্রজবালাদের মানরসের কথা শুনে ভক্তবৎসল শিরোমণি শ্রীমন্মহাপ্রভুর হৃদয়ে আনন্দ উথলিয়ে উঠিল।ফলে প্রেমসিন্ধুতে মানের বিভিন্ন তরঙ্গভঙ্গী প্রকৃতই এক অনির্বচনীয় রসের লীলাবিলাস।বিশেষ করে ব্রজবালাদের মানের তরঙ্গ অসীম ও অনন্ত।তাই মহাভাব বিভাবিত গৌরহরি ও স্বরূপের এই সম্বন্ধে কথোপকথনের মর্ম শ্রীপাদ কবিরাজ গোস্বামী লিপিবদ্ধ করার সময়ে লিখেছেন=*
*🌷ন্রভু কহে কহ ব্রজ-মানের প্রকার।*
*🌷স্বরূপ কহে গোপীমান নদী শতধার।।*
*🌻শতমুখী গঙ্গা স্রোতের মত গোপীমানের শত-সহস্র ধারা প্রকৃতই বিমল আনন্দ প্রবাহ।এই সম্বন্ধে যতই আন্দোলন আলোচনা করা যায়,ততই সেটির অনন্ত পরিসরের বিশালভাবে হৃদয় পরিপ্লুত হয়ে উঠে।শ্রীউজ্জ্বল নীলমণি গ্রন্থে মানের অন‍্য নানান ভেদ বিচারেরও উল্লেখ আছে।যথা=*
*🌷উদাত্তো ললিতশ্চেতি মানোহয়ং দ্বিবিধোমতঃ।*
*🌺অর্থ‍্যাৎ উদাত্ত (উচুস্বরে কথা বলেন যিনি)ও ললিতভেদে মান দুই প্রকার।এই মান স্থায়িভাবের অন্তর্গত।এটি প্রেমের উচ্চতম অবস্থায় প্রকটিত হয়ে থাকে। রসশাস্ত্রে নির্ণীত স্নেহই এই মানের প্রাণ। সুতরাং সংক্ষেপে বলা যায়,প্রেমরাজ‍্যে "স্নেহ" কাকে বলে প্রথমে তার কিঞ্চিৎ তার সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা যাচ্ছে। 🌹স্নেহ শব্দের ব‍্যুৎপত্তিগত অর্থ এই যে যাতে কিছু কোমলীভূত হয় তাইই স্নেহ।এস্থলে প্রেম জগতের উচ্চতম ভাব বিশেষের প্রকটন করার জন্যই "স্নেহ" শব্দ ব‍্যবহৃত হয়েছে। শাস্ত্রকার বলেন=*
*🌷আরুহ‍্য পরমাং কাষ্ঠাং প্রেমা চিদ্দীপদীপনম্।*
*🌷হৃদয়ং দ্রাবয়েন্নেষা স্নেহ ইত‍্যভিধীয়তে।।*
*🔴যে প্রেম পরম উৎকর্ষ অবস্থা প্রাপ্ত হয়ে চিদ্দীপের দীপন অর্থ‍্যাৎ প্রেমদীপ প্রজ্বলনের সহায় তাইই স্নেহ।এই স্নেহে প্রেমদীপ উজ্জ্বল ভাবে প্রজ্বলিত হয় এবং এতে হৃদয় সবসময় দ্রবীভূত থাকে।রসশাস্ত্রবিদগণ দুই প্রকার স্নেহের উল্লেখ করেছেন,"ঘৃতস্নেহ ও মধুস্নেহ"। যথা=*
*🌷স ঘৃতং মধু চেদুক্তঃ স্নেহ দ্বেধা স্বরূপভঃ।*
*🌹যে স্নেহ অত‍্যন্ত আদরময় তার নাম ঘৃত স্নেহ।ঘৃত স্নেহের সম্বন্ধে বিশেষ কথা এই যে ভাবান্তরের সঙ্গে মিলিত হলেই এই ঘৃতস্নেহ সব থেকে বেশী স্বাদু হয়।এটি একক স্বাদু হতে পারে না। ঘৃত যেমন চিনি সংযোগে সুস্বাদ হয় কিন্তু স্বয়ং সুস্বাদ হয় না, ঘৃতস্নেহও তেমনি নায়কের গাঢ় আদরেই স্বাদুতা পেয়ে থাকেন।তারজন‍্য শাস্ত্রকার বলেন=*
*🌷ভাবান্তরান্বিতো গচ্ছন্ন স্বাদোদ্রেকং নতুন্বয়ং,*
*🌷ঘনীভবেন্নিসর্গাতিশীতলান্মিথ আদরাৎ,*
*🌷গাঢ়াদরময় স্তেন স্নেহস‍্যাদঘৃতবদঘৃতং।*
*🌻নায়িকার প্রতি নায়কের আদর স্বভাবতই অতি শীতল।এর উপরে পরস্পরের আদরে এই স্নেহ আরও ঘনীভূত হয়ে থাকে। সুতরাং যে স্নেহ গাঢ়াদরময় ও ঘৃত স্বরূপ,তা ঘৃতস্নেহ বলে অভিহিত হয়ে থাকে। এখন মধুস্নেহের কথা আস্বাদন করুন।*
*🌷মদীয়ত্বাতিশয়ভাক্ প্রিয়ে স্নেহো ভবেন্মধু।*
*🌹"সে আমারই"আমার ছাড়া অন‍্য কারও নহে, ইত্যাদি ভাবে যে স্নেহ,তাইই মধুস্নেহ নামে অভিহিত হয়ে থাকে।রতির উদ্ভবে দুইটি ভাবের উদয় হয়।একটি ভাব এই যে "আমি তারই" আর একটি ভাব এই যে "সে আমারই"।এর প্রথম ভাবটি গাঢ় আদরময় বলে ঘৃতস্নেহ,আর দ্বিতীয় ভাবটি মাধুর্য‍্যাধিক বশত মধুস্নেহ নামে অভিহিত হয়ে থাকে। "আমি তার"আর "সে আমার " এই দুইটি ভাবেই ঘৃতস্নেহ ও মধুস্নেহ প্রতিষ্ঠিত।*
       *নাথ,কি আর বলিব আমি।*
*জীবনে মরণে, জনমে জনমে*
         *প্রাণনাথ হইও তুমি।।*
*🌹এই সুবিখ‍্যাত পদ ঘৃতস্নেহ ভাবের উদাহরণ।আর মধুস্নেহের ভাবের একটি শ্লোক আমার প্রেমময় শ্রীমন্মহাপ্রভুর শ্রীমুখনিঃসৃত শ্রীমতীর উক্তিসূচক পদ‍্যে শুনুন।*
*🌷আশ্লিষ‍্য বা পাদরতাং পিনষ্টুমা,*
*🌷মদর্শনান্মর্ম্মহতাং করোতু বা,*
*🌷যথা তথা বা বিদধাতু লম্পটো,*
*🌷মৎপ্রাণনাথস্তু স এব নাপরঃ।*
*এই কথায় শ্রীচরিতামৃতের পয়ার এই=*
*🌷আমি কৃষ্ণ পদদাসী,তেঁহো রস সুখরাশি,*
        *আলিঙ্গিয়া করে আত্মসাত।*
*কিবা দেয় দরশন,না জানে আমার তনুমন,*
       *তবু তেঁহ মোর প্রাণনাথ।।*
     *সখি হে শুন মোর বচন নিচয়।*
*কিবা অনুরাগ করে,কিবা দুঃখ দিয়া মারে,*
    *মোর প্রাণেশ্বর,অন‍্য কভু নয়।।*
*ছাড়ি অন‍্য নারীগণ,মোর বশ তনু মন,*
     *মোর সৌভাগ্য প্রকট করিয়া।*
*তা সবার দেন পীড়া,আমা সনে করে ক্রীড়া,*
      *সেই নারীগণ দেখাইয়া।।*
*কিবা তেঁহ লম্পট,শঠ ধৃষ্ট সকপট,*
       *অন‍্য নারী করি সাথ।*
*মোরে দিতে মনঃপীড়া,মোর আগে করে ক্রীড়া,*
      *তবু তেঁহ মোর প্রাণনাথ।।*
*🌹এটিই মধু-স্নেহের ভাবময় পদ।মধু স্নেহের মাধুর্য‍্য স্বয়ং প্রকটিত হয়ে থাকে এবং এতে নানা রসের সমাবেশ থাকে। মধু স্নেহের মাদকতা শক্তি আছে। এই মত্ততায় জগৎ বিস্মৃত ঘটে থাকে।একটা উদাহরণের উল্লেখ করছি, আস্বাদন করুন।*
*🌷রাধা স্নেহময়েন হন্তরচিতা মাধর্য‍্যসারেন সা।*
*🌷সৌধীব প্রতিমা ঘনাপ‍্যুরুগুণৈ ভাবোষ্মণা বিদ্রুতা।।*
*🌷যন্নামন‍্যপি ধামনি শ্রবণয়ো র্যাতি প্রসঙ্গেন মে।*
*🌷সান্দ্রানানন্দময়ী ভবত‍্যনুপমা সদ‍্যোজগদ্বিস্মৃতি।।*
*🌻অর্থ‍্যাৎ শ্রীকৃষ্ণ সুবলকে বলছেন, সখা! শ্রীরাধা স্নেহরূপ মাধুর্য‍্যসার রচিত সুধাপ্রতিমা।তিনি প্রেম মাধুর্য‍্যের ঘনীভূত প্রতিমা হলেও ভাবরূপ উষ্মা দ্বারা বিগলিত হয়ে পড়েন। প্রসঙ্গক্রমে তাঁর নাম আমার কানে প্রবেশ করলে, আমার চিত্ত আনন্দে অধীর হয়ে উঠে এবং সমস্ত জগৎ সেই ভাবনার সময় আমার মন হতে অন্তর্হিত হয়ে যায়। সুতরাং স্নেহ যে প্রেমের পরাকাষ্ঠা বা চরমভাব তাতে আর সন্দেহ কি?*
*🌺এক্ষণে পূর্বোল্লিখিত মানের আলোচনা করা যাচ্ছে।আগে বলা হয়েছে উদাত্ত ও ললিত, মানের এই দুই প্রকার বিভেদ আছে।ঘৃত স্নেহই উদাত্ত মানে পরিণত হয়।ঘৃতস্নেহ কিভাবে উদাত্ত মানে পরিণত হয় তার সম্বন্ধে রসশাস্ত্রে লেখা আছে =*
*🌷উদাত্তঃ স‍্যাদ্ ঘৃত স্নেহো ধারয়ন্ গহনক্রমং,*
*🌷দাক্ষিণ‍্যভাগদাক্ষিণ‍্যং বাম‍্যগন্ধঞ্চ কুত্রচিৎ।*
*🔵অর্থ‍্যাৎ ঘৃত স্নেহবতী দুর্বোধ‍্য রীতির অনুসরণ কোরে কোথাওবা বাইরে সরলতার ভাব দেখিয়ে ভিতর ভিতর কুটিল আচরণ করেন, আবার কোথাওবা বাইরে সামান্য রাগ বা কোপ প্রকাশ করে অন্তরে বা ভিতরে প্রকৃতই অসরলা হয়ে থাকেন। উদাত্ত মানের উক্ত দুইটি প্রকার ভেদ দেখা যায় যথা="দাক্ষিণ‍্য-উদাত্তমান ও বাম‍্যগন্ধ উদাত্তমান"।*
💧🤣😁💧🤣😁💧🤣😁💧🤣😁💧
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীস্বরূপদামোদর 🌷 চতুর্থ ভাগ  🌻 ভক্তপ্রবর শ্রীরসিকমোহন চক্রবর্তী ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/swarup4.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৩৬)🙌শ্রীস্বরূপ-দামোদর🙌*
          *❤ব্রজের মানরস❤*
         ▪▪▪▪▪▪▪
*🌻ললিত মানের লক্ষণ= এই যে, মধু স্নেহ যদি স্বাতন্ত্র‍্যরূপে হৃদয়ঙ্গম হয়, সেটি যদি কোটিল‍্য(কুটিল) বা নর্ম্মতা ধারণ করে তবে সেটিকে ললিতমান বলা হয়।ললিলমানের দক্ষিণাংশ কুটিল হয়েও মধুর হয়।সেটিতে ঘৃত স্নেহের ভাব প্রকাশ পায় না। ললিতমানের মধ্যে নর্ম্ম ললিতমান অতীব সরস।একটি উদাহরণের উল্লেখ করা যাচ্ছে।*
*🌷মিথ‍্যাজল্পতু তে কথংনুরসনা সাধ্বী সহস্রস‍্য সা,*
*🌷বিম্বোষ্ঠামৃত সেবনাদঘরিপো পুণ‍্যা প্রযত্নাদভুৎ,*
*🌷কস্মাদেষবলাৎ করোতু চ করঃ সোঢংক্ষমঃ সুভ্রুবাং,*
*🌷রক্তসুষ্ঠ ন নীবিবন্ধমপি যঃ কাবান‍্য বন্ধে কথা।*
*🌻এই শ্লোকটি "দানকেলি কৌমুদী" গ্রন্থ হতে উদ্ধৃত হয়েছে। ভাবার্থ এই যে,একদিন শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন এই সব গোপীরা রাজশুল্ক নিয়ে দারুণ গন্ডগোল শুরু করেছেন।আমি এখন কি করব,জন্মাবধি কখনও আমার জিহ্বা মিথ‍্যা কথা বলতে জানে না,হাত হঠকার্য‍্যে অক্ষম। সুতরাং আমার সত‍্যবাদিত্ব ও দয়ালুত্ব উভয়ই অনর্থক হয়ে উঠিল।এই কথা শুনে ললিতা উক্ত শ্লোক বলেন।সেটির অর্থ এই যে "তা বটেই তো! তোমার রসনা বা জিহ্বা মিথ‍্যা কথা বলতে পারে কি?যে কত যত্ন করে হাজার হাজার কুলবধূর অধরামৃত পান করে পবিত্র হয়েছে,সে কি আর মিথ‍্যা বলতে পারে?আর তোমার হাতই বা কি ভাবে বল প্রকাশ করবে?তোমার হাত যে অতি দয়ালু!সুন্দরীগণের নীবিবন্ধ দেখলেই যে হাত অধীর হয়ে সেই নীবিবন্ধ খুলে দেয়,তেমন দয়ালু হাত কি নিষ্ঠুর কাজ করতে পারে? এই উদাহরণে বিপরীত লক্ষণই শ্রীকৃষ্ণের মিথৌঅবাদীত্ব ও নির্দয়তা নর্ম্ম ললিত মানের প্রকটিত হয়েছে।মান বিশ্বাসে পরিণত হলে সেটিতে তখন আর গৌরব থাকে না।তখন সেটি প্রণয় নামে অভিহিত হয়।অর্থ‍্যাৎ সম্ভ্রম রহিত মান প্রণয়েরই অন‍্য পর্যায়।যথা=*
*🌷মানো দধানো বিস্রম্ভং প্রণয়ঃ প্রোচ‍্যতে বুধৈঃ।*
*🌺এই স্থানে বিস্রম্ভ শব্দের অর্থ বিশ্বাস বা সম্ভ্রমরাহিত্ব।বিস্রম্ভ শব্দের অর্থে টীকাকার পূজ‍্যপাদ শ্রীজীব গোস্বামী বলেন "প্রিয়জনেন সহ স্বস‍্যাভেদমননং", অর্থ‍্যাৎ প্রিয়জনের সঙ্গে নিজের যে অভেদ মনন তাকেই বিস্রম্ভ বলে।শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী মহাশয় এর পরিস্ফূট ব‍্যাখ‍্যা করে লিখেছেন "স্বীয় মন প্রাণ বুদ্ধি দেহ ও পরিচ্ছদাদির সঙ্গে কান্তের মন প্রাণ বুদ্ধি ও দেহের সঙ্গে ঐক‍্য বা মিলন ভাবনই বিস্রম্ভ।"রস প্রাধান‍্য জন্য মানের কোপ এই স্থলে একেবারেই উৎপন্ন হয় না। সুতরাং মানে বিস্রম্ভ ভাব উপস্থিত হলেই প্রণয়ের উৎপত্তি হয়। আবার কোন কোন জায়গায় এর বিপরীত ভাবও দেখা যায়।স্নেহজ প্রণয় কখন কখন মানে পরিণত হয়ে থাকে। শ্রীউজ্জ্বল নীলমণি গ্রন্থে পাই=*
*🌷জনিত্বা প্রণয়ঃ স্নেহাৎ কুত্রচিন্মানতাং ব্রজেৎ।*
*🌷স্নেহান্মানঃ কচিদ্ভূত্বা প্রণয়ত্বমথাশ্নুতে।।*
*🌹অর্থ‍্যাৎ স্নেহ হতে প্রণয় উৎপন্ন হয়ে কোন জায়গায় সেটি মানে পরিণত হয়।আবার কোন জায়গায় স্নেহ হতে মান উৎপন্ন হয়ে সেটি প্রণয় রূপে পরিণত হয়ে থাকে।এইজন‍্য এটি হতে এই সিদ্ধান্ত করা হয়েছে যে =*
*🌷কার্য‍্যকারণতান‍্যোন‍্য মতঃ প্রণয়মানয়োঃ।*
*🌲অর্থ‍্যাৎ প্রণয় ও মান এই উভয়ের পরস্পর কার্য‍্যকারণতা আছে।ফলে প্রেমের গতি স্বভাবতই অতি কুটিল। সুতরাং মান হতেই প্রণয়,আবার প্রণয় হতেই মান।এই উভয়ের পরস্পর কার্য‍্যকারণ সম্বন্ধ খুবই ঘনিষ্ঠ। সহেতুক ও নির্হেতুক এই দুই প্রকার মানের ভেদ ব্রজগোপীদের প্রেমে দেখা যায়।ঈর্ষাই সহেতুক মানের প্রতি কারণ, তদ্ যথা=*
*🌷হেতুরীর্ষা বিপক্ষাদের্বৈশিষ্ট‍্য প্রেয়সাকৃতে।*
*🌷ভাবঃ প্রণয় মুখ‍্যোয়মীর্ষা মানত্বমৃচ্ছতি।।*
*🌳প্রিয় জনের মুখে প্রতিপক্ষের গুণানুবাদ পরিকীর্তিত হলে প্রণয় ঈর্ষাজনিত মানে পরিণত হয়ে থাকে। বাগভট অলঙ্কারে লেখা আছে=*
*🌷মানোহন‍্য বনিতা সঙ্গাদীর্ষাবিকৃতিরুচ‍্যতে।*
*🔷এ লক্ষণ অপেক্ষা প্রাগুক্ত (পূর্বোক্ত বা পূর্বকথিত)লক্ষণই সব থেকে বেশী প্রশস্ত।অন‍্য-বনিতা-সঙ্গ তার গুণ-কীর্তন,অথবা অন‍্য বনিতার সঙ্গে থেকে বিলাস চিহ্ন দর্শন প্রভৃতি কারণে মানের উৎপত্তি হয়ে থাকে।এ বিষয়ে প্রাচীন রসশাস্ত্রে আরও একটি প্রমাণ আছে, যথা=*
*🌷স্নেহং বিনা ভয়ং ন স‍্যান্নের্ষাচ প্রণয়ং বিনা।*
*🌷তস্মান্মান প্রকারোহয়ং দ্বয়োঃ প্রেমপ্রকাশকঃ।।*
*স্নেহ ব‍্যতিরেকে বা ব‍্যতীত বা বিনা ভয় হয় না, প্রণয় ব‍্যতিরেকে ঈর্ষা হয় না। সুতরাং মান উভয়েরই প্রেম প্রকাশক।নায়িকার প্রতি নায়কের আর্দ্রীভাবের (প্রেমে ডুবে যাবার ভাবের)নাম স্নেহ।অপরাধী নায়ক, নায়িকাকে স্বভাবতই ভয় করেন।প্রণয়িণী নায়িকা প্রণয়ী নায়কের আন‍্য রমণী সঙ্গ সইতে পারেন না।এটিই ঈর্ষার(পরশ্রীকাতরতার) কারণ।এই ঈর্ষা হতেই মাধের উৎপত্তি। সুতরাং স্নেহ-প্রণয়-নিবন্ধন মান উভয়েরই প্রেম প্রকাশক।*
*🌹সহেতুক মানের প্রসঙ্গে মান-উৎপত্তির তিনটি কারণ রসশাস্ত্রে বর্ণিত হয়েছে।প্রাণবল্লভ অন‍্যের প্রেমে আসক্ত হয়েছেন এই কথা শুনে অথবা এইরকম অনুমানে কিম্বা সাক্ষাৎ দেখে নায়িকার মানের উদয় হয়।এটিই সহেতুক মানের কারণ। যথা=*
*🌷শ্রুতং চানুমিতং দৃষ্টংতদ্বৈশিষ্ট‍্যং ত্রিধামতং।*
*🔴এদের মধ্যে শ্রুত অর্থ‍্যাৎ সখী বা শুকমুখে শ্রবণ।অনুমান তিন প্রকার,ভোগাঙ্ক দর্শন,গোত্র স্খলন (এক ব‍্যক্তিকে অন‍্য নামে ডাকা) এবং স্বপ্ন দর্শন।এ জায়গায় গোত্র স্খলনের লক্ষণ লেখা হয়েছে =*
*🌷বিপক্ষ সংজ্ঞায়াহ্বানমীর্ষাতিশয় কারণং।*
*🌷আসাং তু গোত্রস্খলনং দুঃখদং মরণাদপি।।*
*☘অর্থ‍্যাৎ নায়িকার সমক্ষে বিপক্ষের নাম ধরে যে আহ্বান বা ডাক দেওয়া,তাইই গোত্রস্খলন নামে অভিহিত হয়ে থাকে।এই গোত্রস্খলন নায়িকার পক্ষে অত‍্যন্ত ঈর্ষার কারণ এবং মরণ অপেক্ষাও দুঃখজনক। স্বপ্নের একটি দৃষ্টান্তের উল্লেখ করা যাচ্ছে।শ্রীকৃষ্ণ চন্দ্রাবলীর কুঞ্জে শয়ন করে স্বপ্নে বলছেন=*
*🌷শপেতূভ‍্যং রাধে ত্বমসি হৃদয়ে ত্বং মমবহি,*
*🌷স্ত্বমগ্রে স্ত্বং পৃষ্ঠে ত্বমিহভবনে ত্বং গিরিবনে,*
*🌷ইতি স্বপ্নে জল্পং নিশি নিশময়ন্তী মধুরিপো,*
*🌷রভূত্তল্পে চন্দ্রাবলী রথাপরাবর্তিতমুখী।*
*🍀অর্থ‍্যাৎ="রাধে শপথ করিয়া কই।*
*তুমি গো অন্তরে, তুমি গো বাহিরে,*
         *জানি না তোমারে বই।।*
*তুমি গো ভবনে, তুমি গিরিবনে,*
           *সমুখে পশ্চাতে তুমি।* 
*যে দিকেতে যাই,যে দিকেতে চাই,*
   *শুধু,তোমাকে নেহারি আমি।।*
*স্বপনের ঘোরে, চন্দ্রাবলীর ঘরে,*
         *এতেক বলিয়া হরি।*
*শুনিয়া এ বাণী, হইলা মানিনী,*
         *চন্দ্রাবলী সহচরী।।*
*🌻সাক্ষাৎ দর্শনে কি প্রকারে মান হয়, তদ্বিষয়েও একটা উদাহণের উল্লেখ করা যাচ্ছে।চন্দ্রাবলী শ্রীকৃষ্ণের জন্য একটি মালা গেঁথে মালাটি তাঁর গলায় পরিয়ে দিয়েছিলেন।পরে দেখতে পেলেন মালাটি ললিতার গলায় পরে রয়েছে।এটি দেখেই চন্দ‍্রাবলীর মানের উদয় হল।রোষ ও দুঃখভরে চন্দ্রাবলী বললেন=*
*🌷সহচরি পরিগুম্ফ‍্য প্রাতরেবার্পিতাসীদ,*
*🌷ব্রজপতি সুতকন্ঠে যা ময়োৎকন্ঠয়াদ‍্য,*
*🌷অপি হৃদি ললিতায়া স্তু স্থূষী হন্ত হৃন্মে,*
*🌷দহতি দহনদীপ্তিঃ পশ‍্যগুঞ্জাবলী সা।*
*দেখ সহচরি, শঠের আচার,*
       *আর বা কাহারে বলি।*
*কত সযতনে, গাঁথিনু ও মালা,*
        *কানন-কুসুম তুলি।।*
*আদরে সোহাগে, কতনা যতনে,*
            *দিয়েছিনু গলে তার।*
*ওই দেখ হায়, ললিতার গলে,*
         *শোভিছে সে ফুলহার।।*
*শঠের আচার, শঠের ব‍্যাভার,*
        *সোঙরি জ্বলিয়া মনু।* 
*কেন তার গলে, যতন করিয়া,*
      *ও মালা গাঁথিয়া দিনু।।*
*🌹এরপর নির্হেতু মানের কথা বলা যাচ্ছে।আগেই বলা হয়েছে প্রেমের গতি অতি কুটিল। সুতরাং প্রণয়িণীদের মধ্যে কথায় কথায় মান উৎপত্তি হয়ে থাকে।সকারণেও মান হয়, আবার অকারণেও মান হয়। শ্রীউজ্জ্বল নীলমণি গ্রন্থে নির্হেতু মানের লক্ষণে লেখা আছে=*
*🌷অকারণাদ্বয়োরেব কারণ‍্যভাসতস্তথা।*
*🌷প্রোদ‍্যন্ প্রণয় এবায়ং ব্রজেনির্হেতুমানতাং।।*
🐚🐚🐚🐚🐚🐚🐚🐚🐚🐚🐚🐚🐚
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীস্বরূপদামোদর 🌷 চতুর্থ ভাগ  🌻 ভক্তপ্রবর শ্রীরসিকমোহন চক্রবর্তী ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/swarup4.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৩৭)🙌শ্রীস্বরূপ-দামোদর🙌*
          *🍁ব্রজের মানরস🍁*
           @@@@@@@@@@
*🍀নির্হেতু মানের লক্ষণের অর্থ এই যে কারণের অভাব অথবা কারণের আভাস হতেই নির্হেতু মানের উৎপত্তি হয়ে থাকে।এ সম্বন্ধে আরও বিশেষ কথা এই যে =*
*🌷আদ‍্যং মানং পরিণামং প্রণয়স‍্যগুবুর্ধাঃ।*
*🌷দ্বিতীয়ং পুনরস‍্যৈব বিলাসভর বৈভবং।*
*🌷বুধৈঃ প্রণয়মানাখ‍্য এষ এব প্রকীর্তিতঃ।।*
*🌺অর্থ‍্যাৎ প্রণয়ের পরিণামই আদ‍্যমান বা সহেতুক মান বলে অভিহিত হয়।আর যা প্রণয়ের বিলাসজনিত বৈভব তাইই নির্হেতুমান।প্রণয় হতে কি ভাবে মান উৎপত্তি হয় তা আগেই সবিস্তারে বলা হয়েছে।নির্হেতু মানে ঈর্ষার কোনও কারণ থাকে না অথচ অকারণে মানের উদয় হয়ে থাকে।এই মান প্রেমের বিলাস-বৈভব-ঢেউ-ভঙ্গী ছাড়া আয কিছুই না।*
*🔴এখন একটু মান প্রশমনের (শান্ত হবার) উপায় বলা যাচ্ছে।শ্রীউজ্জ্বল নীলমনি বলেন=*
*🌷নির্হেতুকঃ স্বয়ং শাম‍্যেৎ স্বয়ংগ্রাহস্মিতাদিভিঃ।*
*🔵অর্থ‍্যাৎ নির্হেতুমান স্বয়ং সাম‍্য হয়ে থাকে।এতে কোনরকম প্রযত্নের প্রয়োজন হয় না। নায়ক নায়িকার নিজ নিজ হাস‍্যাদির দ্বারাই নির্হেতুমান প্রশমিত বা শান্ত হয়ে থাকে।সহেতুমান ভঙ্গের প্রক্রিয়া সবিশেষ ভাবে বর্ণনা করা যাচ্ছে=*
*🌷হেতুর্যস্তু সমং যাতি যথাযোগ্যং প্রকল্পিতৈঃ,*
*🌷সামভেদ ক্রিয়াদান নত‍্যুপেক্ষা রসান্তরৈঃ,*
*🌷মানোপশমনস‍্যাঙ্কা বাষ্প মোক্ষস্মিতাদিভিঃ।*
*❤অর্থ‍্যাৎ সাম,ভেদ,ক্রিয়া,দান,নতি এবং উপেক্ষা প্রভৃতি রসান্তর যথাযোগ্য ভাবে প্রযুক্ত হলে হেতুজনিত মান শান্ত হয়।অশ্রুপাত ও হাসাহাসিই মানভঞ্জনের লক্ষণ।◆প্রিয় বাক‍্য বলার নাম সাম। ভেদ দুই প্রকার,বাক‍্যভঙ্গী দ্বারা স্বমাহাত্ম‍্য প্রকাশ এবং সখীগণ কর্তৃক উপলম্ভ (ভর্ৎসনা বা তিরস্কার) কথা বলা।ছলকরে ভূষণাদি দান করার নামই দান।কেবল দৈন‍্য-অবলম্বন করে চরণতলে পড়ে নাম করাই নতি।শ্রীজয়দেব গোস্বামীর "মুঞ্চময়ি মানমণিদানম্" পদটি সাম ও নতির উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।সামাদি ভাব সব বিফল হলে যে অবজ্ঞা জন্মে,তাকে উপেক্ষা বলা যায়। নীরব থাকাকেও কেউ কেউ উপেক্ষা বলে থাকেন।উপেক্ষার আরও একটা সংজ্ঞা আছে,যথা=*
*🌷প্রসাধন-বিধিং মুক্ত্বা বাক‍্যৈরন‍্যার্থসূচকৈঃ,*
*🌷প্রসাদনং মৃগাক্ষীণামুপেক্ষেতি স্মৃতা বুধৈঃ।*
*🌻অর্থ‍্য‍াৎ উপাসনাবিধি পরিত‍্যাগ করে অনর্থ কথাবার্তা দ্বারা রমণীদের প্রসন্ন করাকেও কেউ কেউ উপেক্ষা বলেন।*
*🌹হঠাৎ ভয়াদির প্রস্তাবকেই রসান্তর বলে।এই রসান্তর দুই প্রকার= বুদ্ধিপূর্বক ও যাদৃচ্ছিক।কোন বিশেষ বিবেচনা না করে হঠাৎ অন‍্য রসের কোন প্রস্তাব করাই যাদৃচ্ছিক, আর প্রত‍্যুৎপন্নমতিত্ব(উপস্থিত বুদ্ধির) বলে বুদ্ধি সহকারে যে রসান্তরের অবতারণা করা হয় তা বুদ্ধিপূর্বক। যথা=*
*🌷উপস্থিতমকস্মাদ্ যত্তদযাদৃচ্ছিকমুচ‍্যতে।*
*🌷বুদ্ধিপূর্বন্তু কান্তেন প্রত‍্যুৎপন্ন ধিয়াকৃতম্।।*
*🌹এছাড়াও দেশবল,কালবল,মুরলীশব্দবল, দ্বারাও মান উপশমন বা শান্ত হয়। হেতুর তারতম‍্য-অনুসারে নির্হেতুমান লঘু,মধ‍্য ও জ‍্যেষ্ঠভেদে বা উত্তম,মধ‍্যম ও কনিষ্ঠভেদে তিন প্রকার হয়ে থাকে।যে মান অল্পের মধ্যে সুসাধ‍্য হয়,তার নাম লঘুমান,আর যা যত্নে সাধ‍্য হয়,তার নাম মধ‍্যমান, মঙ্গলজনক উপায় দ্বারাও যা দুঃসাধ‍্য তার নাম মহিষ্ঠ বা দুর্জয়মান।মানের সময়ে ব্রজগোপীরা শ্রীকৃষ্ণকে এই এই বিশেষণে অভিহিত করে থাকেন=*
*🍀বাম দুর্ল্লীলশেখর (কপটশিরোমণি) কিতবেন্দ্র, মহাধূর্ত্ত, কঠোর,নিল্লর্জ্জ,অতি দুর্ললিত,গোপীকামক,স্ত্রীচোর, গোপীকাধর্মধ্বংসী,গোপীসাধ্বী বিড়ম্বক,কামুকেশ্বর,গাঢ়তিমির, বস্ত্রচোর এবং গোবর্দ্ধন পর্বতের তীরবর্তী বনপথের তস্কর বা চোর। শ্রীউজ্জ্বল নীলমণি গ্রন্থে এর প্রমাণ পাওয়া যায় =*
*🌷কৃষ্ণে রোষোস্তয়াস্তাসাং বামোদুর্ল্লীলশেখরঃ।*
*🌷কিতবেন্দ্রো মহাধূর্ত্তঃ কঠরো নিরপত্রপঃ।।*
*🌷অতিদুর্ল্ললিতো গোপীভজঙ্গো রতহিন্ডকঃ।*
*🌷গোপীকা ধর্মবিধ্বংসী গোপসাধ্বীবিড়ম্বকঃ।।*
*🌷কামুকেশ স্তমিশ্রৌষঃ শ‍্যামাত্মাম্বর তস্করঃ।*
*🌷গোবর্দ্ধন তটার‍ণ‍্যবাটপাটচ্চরাদয়ঃ।।*
*🌻গোপীগণের নিকট হতে ঐরকম মানের অভ‍্যর্থনা শ্রীকৃষ্ণের কাছে প্রকৃতই অতি মধুর।(স্বয়ং ভগবানকে যাঁরা এই সম্বোধন করছেন, তাঁরা কোন স্থানে অবস্থান করছেন বুঝে নিতে হবে ) প্রেমময় প্রেমমাধুর্য‍্যের সরস কথায় যেমন সন্তুষ্ট, আর কিছুতেই তিনি তেমন তুষ্ট নন।যথা শ্রীচৈতন‍্যচরিতামৃতে=*
*🌷ঐশ্বর্য‍্য জ্ঞানেতে সব জগত মিশ্রিত।*
*🌷ঐশ্বর্য‍্য-শিথিল প্রেমে নাহি মোর প্রীত।।*
*🌷আমারে ঈশ্বর মানে আপনাকে হীন।*
*🌷তার প্রেমবশে আমি না হই অধীন।।*
*🌷আমাকে তো যে যে ভক্ত ভজে যেই ভাবে।*
*🌷তারে সে সে ভাবে ভজি এ মোর স্বভাবে।।*
*🌷মোর পুত্র মোর সখা,মোর প্রাণপতি।*
*🌷এই ভাবে করে যেই মোর শুদ্ধ ভক্তি।।*
*🌷আপনাকে বড় মানে আমাকে সম হীন।*
*🌷সেই ভাবে হই আমি তাহার অধীন।।*
*🌷মাতা মোরে পুত্রভাবে করেন বন্ধন।*
*🌷অতি হীন জ্ঞানে করেন লালন পালন।।*
*🌷সখা শুদ্ধ সখ‍্যে করে স্কন্ধে আরোহণ।*
*🌷"তুমি কোন বড় লোক তুমি আমি সম।।*
*🌷প্রিয়া যদি মান করি করয়ে ভৎসন।*
*🌷বেদস্তুতি হৈতে হরে সেই মোর মন।।*
*🌻অতঃপর শ্রীস্বরূপ দামোদর মহাপ্রভুর কাছে "বামা ও দক্ষিণা" নায়িকার কথা বলছেন, যথা চরিতামৃতে=*
*🌷বামা এক গোপীগণ,দক্ষিণা একগণ।*
*🌷নানাভাবে করায় কৃষ্ণে রস আস্বাদন।।*
*🍀বামা ও দক্ষিণা কাকে বলে তার সম্বন্ধে শ্রীউজ্জ্বলনীলমণি গ্রন্থে লেখা আছে,যথা=*
*🌷মানগ্রহে সদোদযুক্তা তচ্ছৈথিল‍্যেচ কোপনা।*
*🌷অভেদ‍্যা নায়কে প্রায়ঃ ক্রুরা বামেতি কীর্ত‍্যতে।।*
*🌹যে নায়িকার কথায় কথায় মান, এবং মানের পরেই অমনি ক্রোধ, হঠাৎ যার মান ভাঙ্গা কঠিন, এবং যিনি নায়কের প্রতি প্রায়ই কঠোরার মত প্রতীয়মানা(বোধগম‍্যা) হন।তাঁকেই রসশাস্ত্রে বামা বলে।শ্রীরাধাদিই দৃষ্টান্ত স্থল।দক্ষিণার লক্ষণ এই যে =*
*🌷অসহা মাননির্ব্বন্ধে নায়কে যুক্তবাদিনী।*
*🌷সামভি স্তেন ভেদ‍্যাচ দক্ষিণা পরিকীর্ত্তিত।।*
*🌻যে নায়িকা মান রক্ষায় অসমর্থ, যিনি মানের কারণ প্রকাশ করে বলেন এবং নায়কের যুক্তি কথায় যার মানভঞ্জন হয়,তিনি দক্ষিণা নায়িকা নামে অভিহিত হয়ে থাকেন।শ্রীচন্দ্রাবলী প্রভৃতি এর দৃষ্টান্ত স্থল।*
*🌺শ্রীস্বরূপের সঙ্গে শ্রীমন্মহাপ্রভুর গোপীপ্রেম-সুধালাপ প্রেমিক ভক্তগণের পক্ষে প্রকৃত মধুবর্ষী।রসগ্রাহী ভক্তগণ এই মাধুর্য‍্যে সবসময় নিমগ্ন থাকেন,আমাদের ক্ষীণ ও নীরস ভাষায় সেই রসালাপ ব‍্যক্ত হতে পারে না,তা জেনেও চিত্তের আবেগে যথাসাধ‍্য চেষ্টা পাচ্ছি।আকাশ অনন্ত, ক্ষীণপ্রাণ ক্ষুদ্রপাখী আপন সাধে যথাসাধ‍্য খোলা আকাশে উড়ে বেড়ায়।সেইরকম এই রসালাপও অনন্ত,আমরা তুচ্ছাতিতুচ্ছ কীটের মত এই অনন্ত নীলাকাশে মুহূর্তকাল যে বিচরণ করতে চেষ্টা করছি তা কেবল আত্মতৃপ্তির জন্য।প্রেমসাগরে মানের ভাবতরঙ্গ প্রকৃতই অতি অপূর্ব বস্তু।আমরা এই জন্যই মান সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ বিস্তৃত আলোচনা করলাম।*
*🌹ব্রজের মানরস এখানেই বিরাম দিলাম।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীস্বরূপদামোদর 🌷 চতুর্থ ভাগ  🌻 ভক্তপ্রবর শ্রীরসিকমোহন চক্রবর্তী ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/swarup4.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৩৮)🙌শ্রীস্বরূপ-দামোদর🙌*
           *স্বকীয়া ও পরকীয়া*
            ******************
*🍀শ্রীমন্মহাপ্রভু শ্রীস্বরূপ দামোদরের মুখে বিশুদ্ধ প্রেমরসময়ী ব্রজবধূদের মানতরঙ্গের লহরী-বৈচিত্র‍্যের নানান বর্ণনা শুনে পরমানন্দ লাভ করলেন।তিনি ব্রজগোপীদের প্রেমের কথা শুনবার জন্য উৎকণ্ঠিত হয়ে উঠলেন। যথা শ্রীচৈতন‍্যচরিতামৃতে=*
*🌷এই কথা শুনি প্রভু আনন্দ অপার।*
*🌷"কহ কহ দামোদর"কহে বার বার।।*
*🌷দামোদর কহে "কৃষ্ণ রসিকশেখর"।*
*🌷রস আস্বাদক রসময় কলেবর।।*
*🌷প্রেমময়বপু কৃষ্ণ,ভক্তপ্রেমাধীন।*
*🌷শুদ্ধ প্রেমরসে গুণে গোপীকা প্রবীণ।।*
*🌷গোপীকার গুণে নাহি রসাভাষ দোষ।*
*🌷অতএব কৃষ্ণের করে পরম সন্তোষ।।*
*🌹শ্রুতি বলেন, "রসো বৈ সঃ" অর্থ‍্যাৎ তিনি রসস্বরূপ। "আনন্দং ব্রহ্ম" এটিও শ্রুতির উক্তি। সুতরাং শ্রীকৃষ্ণ রসিকশেখর।তিনি রস আস্বাদক।শ্রীগোপালতাপনী শ্রুতি বলেন "কৃষ্ণ এব পরোদেব স্তং ধ‍্যায়েৎ তং রসয়েৎ"।*
*🌺শ্রীমদ্ভাগবত বলেন=*
*🌷গোপ‍্য স্তপঃ কিমচরন্ যদমুষ‍্যরূপং,*
*🌷লাবণ‍্যসারমসমোর্দ্ধমনন‍্যসিদ্ধম্,*
*🌷দৃগভিঃ পিবন্ত‍্যনুসবাভিনবং দুরাপ,*
*🌷মেকান্তধাম যশসঃ শ্রীয়ঃ ঐশ্বরস‍্য।*
*🌹অর্থ‍্যাৎ মথুরাবাসিনীগণ বললেন, অহো!গোপবধূরা কি অনির্বচনীয় তপস‍্যাই করেছেন।তাঁরা সর্বদা নয়নযুগল দিয়ে শ্রী,যশ,ও ঐশ্বর্য‍্যের একান্ত আস্পদ,দুষ্প্রাপ‍্য,অনন‍্যসিদ্ধ, সমানাধিকবিবর্জিত,লাবণ‍্যসারস্বরূপ শ্রীহরির রস-সুধাপান করে থাকেন।*
*🌺ভক্তিরসামৃত সিন্ধুর প্রথম শ্লোকেই এই শ্রীকৃষ্ণকে "অখিলরসামৃত মূর্তি" বলে তাঁর স্বরূপ লক্ষণ প্রকটিত করা হয়েছে।শ্রীজীব গোস্বামীপাদ টীকাতে লিখেছেন=*
*রসবিশেষবিশিষ্টপরিকরবৈশিষ্ট‍্যেন আবির্ভাব বৈশিষ্ট‍্যাৎ দৃশ‍্যতে।*
*🌹অর্থ‍্যাৎ ইনি রসাস্বাদক এবং রসময় বিগ্রহ।এই রসরাজ শ্রীকৃষ্ণের গুণ বর্ণনে শ্রীউজ্জ্বল নীলমণি বলেন=*
*🌷অয়ং সুরম‍্যো মধুরঃ সর্বসল্লক্ষণান্বিতঃ।*
*🌷বল্লীয়ান্নবতারুণ‍্যো বাবদুকঃ প্রিয়ম্বদঃ।।*
*🌷সুধী সপ্রতিভো ধীরো বিদগ্ধ শ্চতুরঃ সুখী।*
*🌷কৃতজ্ঞো দক্ষিণঃ প্রেমবশ‍্যো গম্ভীরতাম্বুধিঃ,*
*🌷বলীয়ান্ কীর্ত্তিমান্ নারীমোহনো নিত‍্য নূতনঃ,*
*🌷অতুল‍্যকেলী সৌন্দর্য্য প্রেষ্ঠবংশী স্বনাঙ্কিতঃ,*
*🌷ইত‍্যাদয়শ্চ মধুরাঃ গুণাঃকৃষ্ণস‍্য কীর্ত্তিতাঃ।*
*🌻শৃঙ্গার রসরাজ মূর্তি শ্রীকৃষ্ণের এই মধুর রূপ রসিক-ভক্তগণের একমাত্র লক্ষ্য। শ্রীভক্তিরসামৃতসিন্ধু গ্রন্থে শ্রীকৃষ্ণের বহুবহু গুণের উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু "রসময় কলেবর রসিকশেখর" শ্রীকৃষ্ণের প্রাগুক্ত (পূর্বোক্ত)গুণাবলীই ব্রজবধূদের চিত্তাকর্ষক।ইনি সর্বরসের বিষয়েভূত হলেও একমাত্র মাধুর্য‍্যরসই ভক্তগণের চরম লক্ষ্য। সুতরাং এই শৃঙ্গার-রসরাজ-মূর্তির স্বরূপ-লক্ষণ শ্রীদামোদর-স্বরূপ শ্রীমন্মহাপ্রভুর কাছে নিবেদন করলেন।আহ্লাদকত্ব ও মাধুর্য‍্যই শৃঙ্গার রসের উদয়ের কারণ, তদ্ যথা=*
*🌷আহ্লাদকত্বং মাধুর্য‍্যং শৃঙ্গারে দ্রুতিকারণম্।*
*🌹কাব‍্য-প্রকাশের এই লক্ষণ অনুসারে ও প্রাগুক্ত বা পূর্বোক্তি শ্রীউজ্জ্বলের লক্ষণ অনুসারে শ্রীচৈতন‍্যচরিতামৃতে শ্রীস্বরূপের বর্ণিত "রসময় কলেবর" সম্বন্ধে আলোচনা করে পাঠকগণ শ্রীরসরাজ শ্রীকৃষ্ণের রস-স্বরূপের ধ‍্যান করুন,কৃতার্থ হবেন।শ্রীকৃষ্ণকর্ণামৃত গ্রন্থ এই রসরাজ-রূপের বর্ণনায় পরিপূর্ণ,শ্রীজয়দেবের শ্রীগীতগোবিন্দে এই শ্রীরসের আনন্দঘন মূর্তি প্রকটিত, তদ্ যথা শ্রীরাধিকা বলেছেন=*
*🌷বিশ্বেষামনুরঞ্জনেন জনয়ন্নানন্দমিন্দীবর,*
*🌷শ্রেণী শ‍্যামল কোমলৈরূপনয়ন্নদ্ধৈরনঙ্গোৎসবম্,*
*🌷স্বচ্ছন্দং ব্রজসুন্দরীভিরভিতঃ প্রত‍্যঙ্গ মালিঙ্গিতঃ,*
*🌷শৃঙ্গারঃ সখি মূর্তিমানিব মধৌ হরিঃ ক্রীড়তি।*
*এর সংক্ষিপ্ত ভাবার্থ এই যে,শ্রীকৃষ্ণ সাক্ষাৎ শৃঙ্গার-রসময়-স্বরূপ বিহার করছেন। সুতরাং ইনি রসিকশেখর, রস আস্বাদক ও রসময় কলেবর।*
*🌹শ্রীস্বরূপদামোদর আরও বলেন=*
*🌷প্রেমময়বপু কৃষ্ণ,ভক্তপ্রেমাধীন।*
*🌷শুদ্ধ প্রেমরস গুণে গোপীকা প্রবীণ।।*
*🌻গোপীকাদের স্বরূপ অনির্বচনীয়।আমরা এখানে ব্রহ্মসংহিতা গ্রন্থ হতে একট মাত্র শ্লোক উল্লেখ করব।পাঠকগণ এর ধ্বনিতেই শ্রীগোপীকা-স্বরূপের কিঞ্চিৎ অনুভব করবেন। ভক্ত পাঠকগণের কাছে এইসব তত্ত্ব সুবিদিত।ব্রহ্মসংহিতা বলেন=*
*🌷আনন্দচিন্ময়রসপ্রতিভাবিতাভি,*
*🌷স্তাভি র্য এব নিজরূপতয়া কলাভিঃ,*
*🌷গোলোক এব নিবসত‍্যখিলাত্মভূতো,*
*🌷গোবিন্দমাদি পুরুষং তমহং ভজামি।*
*🌻এই জায়গায় গোপীকাদের "আনন্দচিন্ময়রসপ্রতিভাবিতা" বলে উল্লেখ করা হয়েছে।এই আনন্দ-চিন্ময়-রস-প্রতিভাবিতা গোপীকাগণের হৃদয় কামগন্ধবিহীন। সুতরাং গোপীকাদের প্রেম অতি বিশুদ্ধ। শ্রীগোপীকাগণ বিশুদ্ধ হ্লাদিনী শক্তির শ্রীমূর্তি বিশেষ।তাই স্বরূপদামোদর বলেছেন=*
*🌷গোপীকার প্রেমে নাহি রসাভাষ দোষ।*
*🌷অতএব কৃষ্ণের করে পরম সন্তোষ।।*
*🌹এই জায়গায় রসাভাষ কাকে বলে,তার একটু আলোচনা করা কর্তব‍্য।আভাস কাকে বলে প্রথমে তার লক্ষণ বলা যাচ্ছে।*
*🌷অনৌচিত‍্য প্রবৃত্তত্ত্বে আভাসঃ রসভাবয়োঃ।*
*🌻অনৌচিত‍্য (মনের মধ্যে আন বা খারাপ কিছু প্রবেশ করে ভক্তি নষ্ট করায় অনৌচিত‍্য)প্রবৃত্তির নামই আভাস।(ভক্তি ছাড়া অন‍্য ভাবনায় থাকাকেই আভাস বলা হয়েছে)। সুতরাং রস বা ভাবের অনৌচিত‍্যে প্রবৃত্তি বা রত হলেই তাকে রসাভাস বা ভাবাভাস বলে।শ্রীভক্তিরসামৃতসিন্ধু বলেন=*
*🌷পূর্ব্বমেবানুশিষ্টেন বিকলা রসলক্ষণা।*
*🌷রসা এব রসাভাসা রসজ্ঞৈরনুকীর্ত্তিতাঃ।।*
*🌹অর্থ‍্যাৎ আগে রসের যে সব লক্ষণ বিশেষ ভাবে নির্দিষ্ট হয়েছে,সেইসব লক্ষণে রস অঙ্গহীন হলেই সেটিকে রসাভাস বলে।ঔপপত‍্যে শৃঙ্গার রসের রসাভাস দোষ ঘটে।এটিই সাধারণ নিয়ম। কিন্তু গোপীকাগণের প্রেমে রসাভাস দোষ নাই।গোপীকাগণ শুদ্ধ প্রেমরসবতী।উপপতি ভাবে তাঁরা শ্রীকৃষ্ণের প্রেমে আসক্তা হলেও এতে রসাভাস নাই।কেন না=*
*🌷শুদ্ধ প্রেমরস গুণে গোপীকা প্রবীণ।*
*🌺"আনন্দ চিন্ময়রস প্রতিভাবিতা" গোপীগণের প্রেমরস ঔপপত‍্যজনিত রসাভাসের পরিচায়ক নয়,এটি রসপুষ্টির একমাত্র হেতু।এই ঔপপত‍্যভাব শ্রীবৃন্দাবনের নিত‍্য প্রেমসম্পৎ।শ্রীগোপীকাগণ রসিক-চূড়ামণিরই স্বরূপ-শক্তি অথচ উঁনারা উপপতি জ্ঞানেই কৃষ্ণের সঙ্গে সম্বন্ধবিশিষ্ট।শ্রীচৈতন‍্যচরিতমৃতকার লিখেছেন=*
*🌷তটস্থ হইয়া মনে বিচার যদি করি।*
*🌷সব রস হইতে শৃঙ্গারে অধিক মাধুরী।।*
*🌷অতএব মধুর রস কহি তার নাম।*
*🌷স্বকীয়া পরকীয়া ভাবে দ্বিবিধ সংস্থান।।*
*🌷পরকীয়া ভাবে অতি রসের উল্লাস।*
*🌷ব্রজ বিনা ইহার অন‍্যত্র নাহি বাস।।*
*🌹সুতরাং ব্রজের ঔপপত‍্য একটি অসাধারণ ভাব।ব্রজদেবীগণ শ্রীভগবানের সাক্ষাৎ স্বরূপশক্তি চিন্ময়ী মূর্তি হয়েও নিত‍্য পরকীয়াভাবে প্রতিষ্ঠিতা।এটি ভগবানের অচিন্ত‍্য অলৌকিক মাধুর্য‍্য।শ্রীপাদ কবিরাজ গোস্বামী লিখেছেন=*
*🌷পরকীয়া ভাবে অতি রসের উল্লাস।*
*🌷ব্রজ বিনা ইহার অন‍্যত্র নাহি বাস।।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏👣🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীস্বরূপদামোদর 🌷 চতুর্থ ভাগ  🌻 ভক্তপ্রবর শ্রীরসিকমোহন চক্রবর্তী ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/swarup4.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৩৯)🙌শ্রীস্বরূপ-দামোদর🙌*
           *স্বকীয়া ও পরকীয়া*
            °°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
*🍀এই লক্ষণ-বৈশিষ্ট‍্যটি ভক্তগণের অনুক্ষণ স্মরণ রাখা কর্তব‍্য।এই ঔপপত‍্যের মধ্যে তর্কের অস্পর্শ‍্য,যুক্তির অদৃশ‍্য এবং মনের অচিন্ত‍্য অসাধারণ ভাব বিদ‍্যমান। শ্রীভগবানের মধুর লীলার নিয়ামক নাই,সেটি কর্মপরতন্ত্র নহে।মানব সমাজের আচরণের মত নির্দিষ্ট নিয়মে ব্রজগোপীগণ নিয়ন্ত্রিত না।রসোৎকর্ষ-বর্ধনের জন্য সেটি চিন্ময় জগতের এক মহাশক্তিশীল ভাববিশেষ।শ্রীভগবানের এই লীলা স্বতন্ত্র-পরতন্ত্র না। আমাদের এই জগতের ঔপপত‍্য (মর্ত্ত‍্যলোকের স্বামী ) যেমন অসংখ্য পাপের আকর ও রসাভাসদোষদুষ্ট,ব্রজগোপীদের প্রেম কামগন্ধহীন ও সেটি একেবারেই বিশুদ্ধ চিন্ময়রসপূর্ণ হওয়ায়,সেটিতে তেমনি ঐসব দোষের লেশমাত্রও আশঙ্কা করা যেতে পারে না।কেবল প্রেমোল্লাস-বর্ধনের বিশুদ্ধ ভাব ছাড়া আদৌ তাঁদের জাগতিক ভাবের কোন কাম গন্ধ নাই।ব্রজের ঔপপত‍্যে কি ভাবে রসাভাস দোষ ঘটে না,তার সম্বন্ধে কিঞ্চিৎ আলোচনা করা যাচ্ছে।*
*🌹পরকীয়াত্বে রসাভাস দোষ ঘটে। ব্রজরমণীগণ পরকীয়া। সুতরাং সে জায়গায়ও রসাভাস দোষের আশঙ্কা হতে পারে।এই আশঙ্কা নিরসনের জন্য স্বরূপদামোদর বললেন "গোপীকার প্রেমে রসাভাস দোষ নাই"।উপপতি কাকে বলে? এবং ঔপপত‍্যনিবন্ধন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণে রসাভাস দোষের আশঙ্কা আছে কিনা, এই জায়গায় তাইই আলোচ‍্য।শ্রীউজ্জ্বল নীলমণি বলেন=*
*🌷রাগেণোল্লঙ্খয়ন্ ধর্ম পরকীয়াবলার্থিনা।*
*🌷তদীয় প্রেম সর্বম্বং বুধৈরুপপতিঃ স্মৃতঃ।।*
*🌹যে ব‍্যক্তি আসক্তিপূর্বক ধর্ম উল্লঙ্ঘন করে পরকীয়া রমণীর প্রতি অনুরাগী হয় এবং তার প্রেমই যাঁর কাছে সর্বস্ব বলে প্রতিভাত বা প্রকাশিত হয় তাকেই পন্ডিতগণ উপপতি নামে অভিহিত করেন।*
*🌺এই শ্লোকের পরেই শ্রীকৃষ্ণের ঔপপত‍্য সম্বন্ধে উদাহরণস্বরূপ একটি কবিতা উল্লেখ আছে। তারপরে এই সিদ্ধান্ত করা হয়েছে যে=*
*🌷অত্রৈব পরমোৎকর্ষঃ শৃঙ্গারস‍্য প্রতিষ্ঠিতঃ।*
*🌹অতঃপরে ভরতমুনির বচনে পাই=*
*🌷বহুবার্য‍্যতে যতঃ খলু যত্রপ্রচ্ছন্ন কামুকত্বঞ্চ।*
*🌷যাচ মিথো দুর্লভতা সা মন্মথস‍্য পরমা রতিঃ।।*
*🌻অর্থ‍্যাৎ যে রতি জন‍্য লোকতঃ ধর্মতঃ বহুনিবারণ বিহিত আছে,যাতে স্ত্রী ও পুরুষের প্রচ্ছন্ন (গোপন)কামুকতা থাকে এবং যা উভয়ের দুর্লভতাময়ী তাইই মন্মথেরপরমা রতি নামে প্রসিদ্ধা।এর পরের শ্লোক এই=*
*🌷লঘুত্বমত্র যৎপ্রোক্তং তত্তু প্রাকৃত নায়কে।*
*🌷ন কৃষ্ণে রসনির্য‍্যাস-স্বাদার্থাববতারিণি।।*
*🌻অর্থ‍্যাৎ ঔপপত‍্য সম্বন্ধে যে লঘুত্বের বর্ণনা আছে তাঁহা প্রাকৃত নায়ক সম্বন্ধেই প্রযোজ‍্য। কিন্তু মধুররস আস্বাদনের জন্যই যাঁর অবতার,সেইরকম শ্রীকৃষ্ণের সম্বন্ধে আদৌ ঔপপত‍্যের হেয়ত্ব মনেই করা যেতে পারে না।*
*🌹এই কয়েকটি পদ‍্যের টীকায় টীকাকার পূজ‍্যপাদ শ্রীজীব গোস্বামী ও পূজ‍্যপাদ শ্রীবিশ্বনাথ চক্রবর্তী মহাশয় যেরকম বিচার ও অভিমত প্রকাশ করেছেন তা অতীব তত্ত্বপূর্ণ।যাঁরা এই বিষয়ের বিস্তৃত আলোচনা পাঠ করতে ইচ্ছা করেন,তাঁদের পক্ষে শ্রীউজ্জ্বল নীলমণি টীকা অবশ্যই আলোচ‍্য।সংস্কৃতভাষা অনভিজ্ঞ পাঠকদের জন্য আমরা এই জায়গায় দিগদর্শনের মত ঐ টীকা দুইটির দুই একটি কথামাত্র উল্লেখ করছি।গোপীগণের পরকীয়াত্ব এবং শ্রীকৃষ্ণের ঔপপত‍্য সম্বন্ধে শ্রীউজ্জ্বল নীলমণির টীকাকার শ্রীপাদ শ্রীজীব গোস্বামী যে বিচার করেছেন প্রথমে সেসব কথার মর্ম প্রকাশ করা যাচ্ছে।তিনি বলেন=*
*(১)সাধারণ উপপতির যে লক্ষণ নির্দিষ্ট হয়েছে,শ্রীকৃষ্ণে আদৌ সে লক্ষণ প্রযোজ‍্য হতে পারে না।নিত‍্যলীলায় পরকীয়-ভাব নাই।তবে মায়া দ্বারা রস-বিশেষের পরিপোষণের জন্য প্রকট লীলায় ঔপপত‍্যের প্রতীতি (জ্ঞান) হয় মাত্র।ব্রহ্মমোহনেও মায়িক(মায়ার) লীলা দেখা যায়।*
*(২)শৃঙ্গার রসে ঔপপত‍্য রসাভাসজনক। শৃঙ্গার রস অতি পবিত্র।যথা=*
*🌷শৃঙ্গং হি মন্মথোদ্ভেদ স্তদাগমন হেতুকঃ।*
*🌷উত্তমপ্রকৃতিপ্রায়ো রসঃ শৃঙ্গার ইষ‍্যতে।।*
*🌹এই জায়গায় "উত্তমপ্রকৃতিপ্রায়ো" এই শব্দের ব‍্যাখ‍্যায় শ্রীজীব গোস্বামীদাদ বলেন "শৃঙ্গারঃ শুচিরুজ্জ্বলঃ" অমরকোষের এই পর্যায় নিরূপণে "শৃঙ্গার" শুচি পর্য‍্যায়ে সন্নিবিষ্ট হয়েছে। সুতরাং এই শুচি ও উজ্জ্বল রসে অধর্মময় ঔপপত‍্য একটা অঙ্গ বলেই গণ‍্য হবে এরকম মনে করা যুক্তিসঙ্গত না।বিশেষ করে ত্রিকান্ডশেষ নামক অভিধানে "জার" শব্দটি "পাপপতি" বলেই উক্ত হয়েছে।*
*(৩)নাট‍্যালঙ্কার শাস্ত্রেও ঔপপত‍্যের নিন্দাগর্ভ বাক‍্য দেখা যায়, যথা সাহিত‍্য দর্পণে=*
*🌻উপনায়ক সংস্থায়াং মুনিগুরুপত্নীগতায়াঞ্চ বহুনায়ক বিষয়ায়াং রতৌচ তথানুভব নিষ্ঠায়াং, প্রতিনায়কনিষ্ঠতে তদ্বদধমপাত্রতির্য‍্যাগাদিগতে শৃঙ্গারেহনৌচিত‍্য মিতি।*
*(৪)শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ংই ঔপপত‍্যের দোষ উল্লেখ করেছেন,তদ্ যথা শ্রীমদ্ভাগবতে দশমে=*
*🌷অস্বর্গ‍্যমযশস‍্যঞ্চ ফল্গুকৃচ্ছং ভয়াবহং।*
*🌷জুগুপ্সিতঞ্চ সর্বত্র হ‍্যৌপপত‍্যং কুলস্ত্রিয়াঃ।।*
*(৫)পরীক্ষিতও বলেন=*
*🌷আপ্তকামো যদুপতিঃ কৃতবান্ বৈ জুগুপ্সিতং।*
*(৬)এই সব কথা দ্বারা ঔপপত‍্যের যে দোষ কীর্তিত হল,অন‍্য নায়ক সম্বন্ধেই এই দোষ ধর্তব‍্য।শ্রীকৃষ্ণ সম্বন্ধে এই সব দোষস্পর্শের আশঙ্কা নাই।কেননা মধুররস-বিশেষের আস্বাদন করার জন্যই তাঁর অবতার।*
*(৭)বিশেষতঃ শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে গোপীদের নিত‍্য দাম্পত‍্য সম্বন্ধ।ব্রহ্মসংহিতা বলেন=*
*🌷আনন্দ চিন্ময়রস প্রতিভাবিতাভি,*
*🌷স্তাভিশ্চ এব নিজরূপতয়া কলাভিঃ।*
*🌷গোলোক এব নিবসত‍্যখিলাত্মভূতো,*
*🌷গোবিন্দমাদি পুরুষং তমহং ভজামি।।*
*🌻এই শ্লোকের "নিজরূপতয়া" অর্থ "স্বদারত্বেনৈব" "নতু প্রকটলীলা বৎ পরদারত্ব ব‍্যবহারেণেত‍্যর্থ"। 🍀অর্থ‍্যাৎ প্রকট লীলায় যেমন আনন্দ চিন্ময়রস প্রতিভাবিতাগণ পরদারত্বরূপে লীলার পোষণ করেন, নিত‍্য লীলায় সেরকম না।নিত‍্যলীলায় দাম্পত‍্য ছাড়া আর অন‍্য ভাব নাই।কেননা পরম লক্ষ্মীদের পরদারত্ব অসম্ভব।প্রাপঞ্চিক প্রকট লীলায় শ্রীকৃষ্ণবল্লভাদের পরদারাত্ব মায়া বিজৃম্ভৃত(হাইতোলা) মাত্র।*
*(৮)শ্রীকৃষ্ণ গোপীদের "পতি" বলে উক্ত হয়েছেন, যথা=*
*🌷অনেক জন্মসিদ্ধানাং গোপীনাং পতিরেব বা।*
*🌷নন্দনন্দন ইত‍্যুক্ত স্ত্রৈলোক‍্যানন্দ বর্দ্ধনম্।।*
                       *(গোতমীয় তন্ত্র)*
*🌷গোপীনাং তৎপতীনাঞ্চ সর্বেষাষ্ণৈব দেহিনাং।*
*🌷যোহন্তশ্চরতি সোহধ‍্যক্ষ এষ ক্রীড়নদেহভাক্।।*
                          *(শ্রীভাগবত)*
🌻🌻🌻🌻🌻🌻🌹🌻🌻🌻🌻🌻🌻
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🆕 শ্রীস্বরূপদামোদর 🌷 চতুর্থ ভাগ  🌻 ভক্তপ্রবর শ্রীরসিকমোহন চক্রবর্তী ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/01/swarup4.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(৪০)🙌শ্রীস্বরূপ-দামোদর🙌*
            *স্বকীয়া ও পরকীয়া*
            @@@@@@@@@
*🌻এতেও স্বভাবসিদ্ধ দাম্পত‍্যের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।*
*(৯)শ্রীগোপাল তাপনী শ্রুতিতেও শ্রীকৃষ্ণকে ইঁনাদের স্বামী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং শ্রীগোবিন্দ বল্লভাগণে পরকীয়াত্ব সম্ভাবিত হতে পারে না।*
*(১০)লক্ষ্মীগণের পরকীয়াত্ব সম্ভবে না।শ্রীকৃষ্ণবল্লভাগণ লক্ষ্মী। ব্রহ্মসংহিতায় লেখা আছে =*
*🌷লক্ষ্মীসহস্রশতসংভ্রমসেব‍্যমানম্।*
*🌹গোপী বললেই "লক্ষ্মী"বুঝতে হবে।(একেবারেই অন্তর-তত্ত্ব)।পান্ডব শব্দের প্রচুর প্রয়োগহেতু যেমন পান্ডব বললেই কুরু বুঝায়,তদ্রূপ গোপী শব্দের প্রয়োগেই লক্ষ্মী বুঝতে হবে। সুতরাং গোপীদের পরকীয়াত্ব অসম্ভব।শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমতীকে "অখিললোকলক্ষ্মী" বলে সম্বোধন করেছেন।প্রকট লীলায় উপপতিবৎ প্রতীয়মান বা বোধগম্য হওয়াতেই গ্রন্থে শ্রীকৃষ্ণকে উপপতিবৎ বর্ণনা করা হয়েছে।*
*(১১)বহুবারণতা,উভয়ের গোপনে সঙ্গমের দুর্লভতা ও প্রচ্ছন্নকামুকতা যে রতি সম্বন্ধে শ্রেষ্ঠ বলে রসশাস্ত্রে বিহিত হয়েছে,তা লৌকিক রসশাস্ত্র সম্বন্ধেই প্রযুজ‍্য।*
*(১২)সমর্থা রতিতে নিবারণাদি না থাকা সত্ত্বেও শৃঙ্গার রসের যথেষ্ট পুষ্টি হয়।তাতেও মাদনাখ‍্য মহাভাবের পরাকাষ্ঠা দেখা যায়। সুতরাং ঔপপত‍্যের ভাব প্রতীয়মান হয়, সেটি মায়াবিজৃম্ভৃত মাত্র বা কেবল মায়ার হাইতোলা মাত্র।শ্রীকৃষ্ণে বস্তুতঃ ঔপপত‍্য নাই। শ্রীজীব গোস্বামিপাদ এইরকম বহু যুক্তির অবতারণা করে শ্লোকটির সুদীর্ঘ টীকার উপসংহারে লিখেছেন=*
*🌷স্বেচ্ছয়া লিখিতং কিঞ্চিৎ কিঞ্চিদত্র পরচ্ছেয়া।*
*🌷যৎ পূর্বাপর সম্বন্ধং তৎপূর্বপরং পরম্।।*
*🌻অর্থ‍্যাৎ এই স্থলে নিজের ইচ্ছাতে কিছু লেখা হল,পরের ইচ্ছাতেও কিছু লেখা হল।পূর্বাপর(আগাগোড়া) সম্বন্ধে যেমন আছে তেমনি রইল। পূজ‍্যপাদ শ্রীজীব গোস্বামীপাদের এই কথায় বিচার্য‍্য।*
*🌺শ্রীবিশ্বনাথ চক্রবর্তী মহাশয় বলেন "ঐরকম ব‍্যাখ‍্যা করা শ্রীজীব গোস্বামীপাদের নিজ অভিমতে আদৌ হতে পারে না।সেটি পরেচ্ছায় লেখা হয়েছে এবং ব‍্যাখ‍্যা শেষে তিনি নিজেও তা স্বীকার করেছেন।ভিন্ন রুচির লোকদের কাছে যাতে এই দুর্জ্ঞেয় অচিন্ত‍্য লীলা নির্দোষ বলে প্রতিপন্ন হয় এবং তাঁরাও এই লীলার অনুধ‍্যান করতে প্রস্তুত হন এই মনে করেই তিনি এইরকম ব‍্যাখ‍্যা করেছেন।ফলে ক্ষমতাবলম্বিগণের পক্ষে এইরকম ব‍্যাখ‍্যা যুক্তিযুক্ত বলে গ্রাহ‍্য হতে পারে না।কেন গ্রাহ‍্য হতে পারে না,তারজন‍্য শ্রীপাদ চক্রবর্তী মহাশয় বহুল হেতুর অবতারণা করেছেন।এখানে তার সংক্ষিপ্ত মর্ম বলা হচ্ছে।*
*(১)ঔপপত‍্য অধর্মস্পর্শি ও নরকজনক।এটি প্রাকৃত নায়কের পক্ষে! কিন্তু ধর্মাধর্ম-নিয়ন্তৃ-চূড়ামণীন্দ্র শ্রীকৃষ্ণে সে আশঙ্কার জায়গা কোথায়?প্রাকৃত নায়কে অধর্ম স্পর্শ হয়,প্রাকৃতা নায়িকাতেও হয় ; কিন্তু যিনি ভ্রূজৃম্ভনমাত্র এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি-স্থিতি-সংহার করতে সমর্থ,এমন শ্রীলীলাপুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণে অথবা তাঁর মহাশক্তিগণের মুখ‍্যতমা হ্লাদিনী-শক্তি-রূপিণী শ্রীগোপীকাগণে আদৌ এ দোষের আশঙ্কা হতে পারে না।সেইজন‍্য শ্রীপাদ গ্রন্থকার তাঁর নাটক-চন্দ্রিকায় লিখেছেন=*
*🌷যৎপরোঢোপপত‍্যন্তু গৌণত্বং কথ‍্যতে বুধৈঃ,*
*🌷তত্তুকৃষ্ণঞ্চ গোপিশ্চ বিনেতি প্রতাপাদ‍্যত‍্যম্।*
*🌲অলঙ্কারকৌস্তুভকারেরও এই অভিমত।অলৌকিকসিদ্ধ শ্রীকৃষ্ণের পক্ষে এই ঔনপত‍্য ও শ্রীগোপীকাগণের পরকীয়াত্ব,দূষণ না হয়ে ভূষণ স্বরূপই হয়ে থাকে।*
*(২)শ্রীকৃষ্ণের প্রকট লীলা মায়িক না। বস্তুতঃ প্রকটলীলা ও অপ্রকট লীলায় স্বরূপতঃ কিছুমাত্র ভেদ বা বৈলক্ষণ‍্য নাই।তাঁর লীলামাধুর্য‍্য তিনি যখন কৃপা করে প্রপঞ্চ জগতের গোচরীভূত করান,তখনই সেটি প্রকট লীলা নামে অভিহিত হন,অন‍্যের পক্ষে সেই লীলা প্রপঞ্চ জগৎ চক্ষুর অন্তর্হিতা হলেই সেটি অপ্রকট আখ‍্যায় অভিহিতা হয়ে থাকেন। ভাগবতামৃতে বলেন=*
*🌷অনাদিমেব জন্মাদিলীলামেব তথাদ্ভূতাম্।*
*🌷হেতুনা কেনচিৎ কৃষ্ণঃ প্রাদুস্কুর্য‍্যাৎ কদাচন।।*
*(৩)অপ্রকট লীলা নিত‍্য দাম্পত‍্যময়ী এবং প্রকটলীলা মায়িক ও পরোঢ়া-উপপতি ভাবময়ী, এরকম মনে করা অসঙ্গত।কেননা সর্বলীলা মুকুটমণি রাসলীলার আদি-অন্তমধ‍্যে পরোঢ়া-উপপতি ভাব বিরাজমান। রাসলীলার মায়িকত্ব মনে করাও নিষিদ্ধ।রাস পঞ্চাধ‍্যায়ের প্রত‍্যেক অধ‍্যায়েই পরকীয়াত্ব-উপপতিত্ব প্রতিপাদক বচন প্রমাণ আছে। তদযথা=*
*(ক)তাঃ বার্য‍্যমানা পতিভিরিত‍্যাদি*।
*ভ্রাতরশ্চ পতয়শ্চ ব ইত্যাদি।*
*যৎপত‍্যপত‍্য সুহৃদামনুবৃত্তি রঙ্গ।(ইতি প্রথমে)।*
*(খ)তদগুণানেব গায়ন্ত‍্যো নাত্মাগারানি সস্মরু।*
                            *(ইতি দ্বিতীয়)*
*(গ)পতিসুতান্বয় ভ্রাতৃবান্ধবনতি বিলঙ্ঘ‍্যতে।*
                          *(ইতি তৃতীয়ে)*
*(ঘ) এবং মদর্থোজঝিত লোক বেদ স্বানাং।(ইতি চতুর্থে)।*
*(ঙ)কৃত্বা তাবন্তমাত্ম‍্যনং যাবতী গোপযোষিতাং।*
*মন‍্যমানাঃ স্বপার্শ্বস্থান স্বান্ স্বান্ দারান্ ব্রজৌকসঃ।*
                              *(ইতি পঞ্চমে)*

*🌻শ্রীশুকদেব গোস্বামীর,স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের এবং গোপীকাগণের শ্রীমুখনিঃসৃত এই সব বাক‍্যলহরীতেই পরোঢ়াত্ব ও উপপাতিত্ব ভাব স্পষ্টভাবেই প্রতিপাদিত উজ্জ্বলরূপে প্রমাণ হচ্ছে।এই সব কথায় কোন ক্রমেই দাম্পত‍্যের প্রতিপাদন হয় না।*
*(৪)রাসলীলা মায়িকত্ব-বিজৃম্বিত হলে লক্ষ্মীগণের তুলনায় শ্রীগোপীকাগণের উৎকর্ষই বা কিসে সপ্রমাণ হয়?অথচ ভাগবত বলেছেন=*
*🌷নায়ং শ্রিয়োহঙ্গ উ নিতান্ত রতে প্রসাদ।*
**ইত‍্যাদি কথন দ্বারা লক্ষ্মীগণের অপেক্ষা শ্রীব্রজ গোপীদের উৎকর্ষ প্রতিপাদিত হয়েছে।রাসলীলা মায়িক হলে এই উৎকর্ষ সংস্থাপন অমূলক ও অবাস্তব হয়ে পড়ে।*
*(৫)কেউ কুত্রাপি (কোথাও) দাম্পত‍্যময়ী রাসলীলা বর্ণন করেননি।*
*(৬)ঔপপত‍্য-প্রতিপাদক অংশগুলি ভ্রমক্লিপ্ত বলে পরিত‍্যাগ করলে রাসলীলার আদৌ কোন উপাদেয়ত্ব থাকে না। এই রাসলীলাতেই শ্রীকৃষ্ণের শ্রীমুখের কথা এই যে =*
*🌷ন পারয়েহহং নিরবদ‍্য সংযুজাং,*
*🌷স্ব সাধুকৃত‍্যং বিবুধায়ুষা পিচ।*
*🌺রাসলীলা মায়িক হলে এই পদ‍্যাংশের পরম প্রেম-উৎকর্ষ প্রমাপকত্ব অমূলক ও অবাস্তব হয়ে পড়ে।*
*(৭)উদ্ধৃত পদ‍্যাংশের অন‍্য অংশ পরোঢ়াত্বও উপপতিত্ব প্রতিপাদক সেটি এই=*
*🌷যামাভঞ্জন্ দুর্জ্জরগেহশৃঙ্খলাঃ।*
*🌼গোপীকাগণ কঠিন ঘরের বন্ধন ভেঙ্গে একনিষ্ঠভাবে শ্রীকৃষ্ণের যেরকম ভজনা করেছিলেন,তার প্রতি-ভজনে "শ্রীকৃষ্ণ অশক্ত"।"গোপীপ্রেমে শ্রীভগবান বশীভূত" এই যে নিত‍্য সত‍্য, রাসলীলা মায়িক হলে এটিও অবাস্তব হয়ে পড়ে।*
*(৮)ধলে নিলাম শ্রীভগবান পরম মায়াবী, শ্রীগোপীগণের মনোরঞ্জনের জন্যই না হয় তিনি এইরকম কথা বলেছিলেন, কিন্তু পরম সাধুবর্গ মুকুটমণি মহাবিজ্ঞ শ্রীউদ্ধব অবাস্তব ও অনিত‍্য মায়িক বিষয়ে ভজনার পরাকাষ্ঠাত্ব সংস্থাপিত করবেন কেন, তিনি বলেন=*
*🌷আসামহো চরণরেণুযুষামহস‍্যাং,*
*🌷বৃন্দাবনে কিমপি গুল্মলতোষধীনাম্।*
*🌳পট্ট মহিষী প্রভৃতি হতেও যে শ্রীব্রজগোপীদের প্রেমোৎকর্ষ সব জায়গায় স্বীকার করা হয়েছে,তা এই পদ‍্যাংশেই প্রকাশিত হয়েছে। এই অতুলনীয় প্রেমোৎকর্শের কারণ কি? কারণ এই যে,ইঁনারা স্বজন এবং আর্য‍্যপথ পরিত‍্যাগ করেও শ্রীকৃষ্ণে একান্ত অনুরাগিনী।স্বজন আর্য‍্যপথ প্রভৃতি পরিত‍্যাগ যদি মায়িক ব‍্যাপার হয়, তবে প্রেমোৎকর্ষের হেতুটিও অবাস্তব হয়, সুতরাং এটি বলাই বাহুল‍্য যে সেরকম প্রেমোৎকর্ষও অবাস্তব হয়ে পড়ে।তাহলে একান্ত ভক্ত শ্রীউদ্ধবের কথাও ভুল প্রমাণিত হয়।এতে সব প্রমাণের সার, আপ্ত বাক‍্যেও অনাস্থা দোষের কারণ ঘটে।*
*(৯)দশাক্ষর ও অষ্টাদশাক্ষর মহামন্ত্রের অর্থও পরোঢ়াত্ব-উপপতিত্ব ভাবময়।শব্দ-শক্তির অদ্ভুত অর্থ সম্বন্ধে যাঁদের জ্ঞান আছে, তাঁদের কাছে এটি অজানা নয়।*
*(১০)শ্রীকৃষ্ণের নানান ধ‍্যান ও মন্ত্রেও প্রাগুক্ত বা পূর্বোক্ত ভাব প্রকটিত হচ্ছে।*
*(১১)সাধকগণ ধ‍্যান-পাকদশাতেও প্রকট লীলার ভাবগুলিই প্রত‍্যক্ষ করে থাকেন। সুতরাং লীলা অনিত‍্য বা মায়িক না।গীতা উক্তি=*
*🌷জন্ম কর্মচ মে দিব‍্যামেবং যো বেত্তি তত্ত্বতঃ।*
*🌹প্রভৃতি শ্লোকের ব‍্যাখ‍্যায় শ্রীরামানুজাচার্য‍্য জন্মকর্ম পরিকরাদির নিত‍্যত্ব সংস্থাপিত করেছেন।শ্রীমধুসূদন সরস্বতীপাদও ঐ জায়গায় "দিব‍্যং" "অপ্রাকৃতং" এইরকম ব‍্যাখ‍্যা করেছেন। সুতরাং প্রকটলীলা মায়িক না।এ বিষয়ে আরও প্রমাণ আছে।যথা=*
*ক| একোদেবো নিত‍্যলীলানুরোক্তো,*
*ভক্ত ব‍্যাপী ভক্তহৃদ‍্যান্তরাত্মা,*
*পিপ্পলাদ শাখায়াং পুরুষবোধিনীশ্রুতিঃ।*
*খ| শ্রীমদ্বিট্ ঠলনাথ গোস্বামী স্বপ্রণীত "বিদ্বন্মন্ডন " নাম গ্রন্থে জন্মকর্মের নিত‍্যত্ব প্রতিপাদন করেছেন।*
*গ| বৃহ‍ৎ বামন পুরাণেও এই প্রকট লীলার নিত‍্যত্ব প্রদর্শিত হয়েছে।তাতে শ্রুতিগণের প্রার্থনায় ভগবদুক্তিতে আরও লেখা আছে =*
*🌷জার-ধর্মেণ সুস্নেহং সুদৃঢ়ং সর্বতোহধিকং।*
*🌷ময়ি সংপ্রাপ‍্য সর্বেহপি কৃতকৃত্বা ভবিষ‍্যথঃ।।*
*(১২)শ্রীভগবানের "নাম" নিত‍্য।এক এক লীলায় তাঁর এক এক নাম নির্দিষ্ট আছেন।লীলা অনিত‍্য হলে শ্রীনামও অনিত‍্য হয়ে যান। সুতরাং ভজনের যা সার,তাহাও মায়িক হয়ে পড়েন। নাম অনিত‍্য বলে মনে করলেও নামাপরাধ ঘটে।*
*(১৩)শ্রীপাদ ল্রীজীব গোস্বামী নিজেই শ্রীভগবৎসন্দর্ভে নাম জন্ম ও কর্ম প্রভৃতির নিত‍্যত্ব প্রতিপন্ন করেছেন।তাঁর আকার অনন্ত,প্রকাশ অনন্ত, জন্মকর্মলক্ষণলীলা অনন্ত, তাঁর লীলা পরিকর অনন্ত।এই সবই তাঁর স্বরূপ শক্তির অভিব‍্যক্তি মাত্র। সুতরাং এই সবই নিত‍্য।এটি শ্রীপাদ শ্রীজীব গোস্বামীর যুক্তি।তবে পরোঢ়া উপপতিত্ব-ভাবময়ী রাসলীলা মায়ার অধীন হবে কেন?*
*(১৪)শ্রীব্রজসুন্দরীগণ যে বিপ্রাগ্নি সাক্ষী করে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে পরিণয়-সূত্রে আবদ্ধ হলেন, কোন আর্য‍্যশাস্ত্রে কেউ এরকম দেখেছেন বলে শোনা যায় না।যদি এখন কেউ সেরকম বলেন,তা শুকদেব গোস্বামী সম্মত হবে কি?পরীক্ষিত ধর্মসংস্থাপক ও আপ্তকাম শ্রীকৃষ্ণের ঔপপত‍্যে সন্দিহান হয়ে যখন শ্রীশুকদেবকে প্রশ্ন করেন,তখন শ্রীশুকদেব স্পষ্টভাবেই বলতে পারতেন যে,এঁরা শ্রীকৃষ্ণের পরিণীতা ভার্য‍্যা,পরদারা নন।তারজন‍্য তিনি কষ্টপ্রায় সিদ্ধান্তগুলির দ্বারা পরীক্ষিতকে বুঝিয়ে দিতে প্রয়াস পেলেন কেন?*
*(১৫)ক্বচিৎ ক্বচিৎ "পতি" শব্দের যে প্রয়োগ দেখা যায় সেটির অর্থ "গতি" বলেই বুঝতে হবে। কেবল বিবাহিত ব‍্যক্তিই যে নায়িকার পতি বলে উক্ত হন,তাও না।নায়িকা-প্রকরণে পরকীয়াতে "স্বাধীনপতিকা" শব্দের প্রয়োগ দেখা যায়।আবার এমনও হতে পারে যে,তিনি কোন কোন নায়িকার "পতি" রূপে বর্ণিত হয়েছেন। কিন্তু অপরাপর নায়িকাগণের সঙ্গে তাঁর "দাম্পত‍্য" সম্বন্ধ নাই।তিনি যদি সকলেরই পতি,তবে শ্রীভাগবতে "পরদারাভিমর্ষণত্বের" কথা উঠিত না।নায়িকাদের নিজ নিজ গৃহপতির কথারও উল্লেখ আছে।এটিও লেখা আছে যে =*
*🌷ন জাতু ব্রজদেবীনাং পতিভিঃ সহসঙ্গমঃ।*
*(১৬)গোপাল তাপনী শ্রুতিতে "স বোহি স্বামী ভবতি" এই জায়গায় "স্বামী" শব্দের যে উল্লেখ আছে, সেটি পরিণেতৃমাত্রবাচী নয়। অর্থ‍্যাৎ সেটিতে কেবল "বিবাহকর্তা" বুঝায় না। স্বামী ঐশ্বর্য‍্যবোধক।পাণিনি বলেন "স্বামিন্নৈশ্বর্য‍্যে"। কিন্তু এরকম প্রয়োগও দেখা যায় =*
*🌷লোকে হি যস‍্য হি যঃ স্বামী ভবতি, সঃ তস‍্য ভোক্তা ভবতি। সুতরাং স্বামী বললেই "বিবাহকর্তা" পতি বুঝায় না।*
*(১৭)ব্রজের সমস্ত সম্বন্ধই চিন্ময়।যে যে জায়গায় মায়া শব্দের উল্লেখ আছে সেটি "যোগমায়া" বলে বুঝতে হবে। সুতরাং অভিমন‍্যুর সাথে শ্রীরাধার যে পতিভাব বর্ণিত আছে, সেটি চিন্ময় বলেই বুঝতে হবে। ভগবানের লীলাতন্ত্র মধ‍্যবর্তিত্ব হওয়া প্রযুক্ত ঐ সম্বন্ধও মায়িক না, শ্রীযোগমায়াই ঐ সম্বন্ধের কারণ।*
*(১৮)শ্রীরাধা যে শ্রীকৃষ্ণের স্বরূপশক্তিভূতা আহ্লাদিনী শক্তি, তাতে কোনও সন্দেহ নাই। কিন্তু কথা এই যে লীলাবিশিষ্ট শ্রীরাধাকৃষ্ণই আমাদের ভজনীয়।লীলা বিরহিত শ্রীরাধাকৃষ্ণ আমাদের ধারণার ও ভজনের অতীত।*
*(১৯)আপত্তি উঠতে পারে যে গোপীদের দুর্যশ,মনোদুঃখ,শ্বাশুরী-ননদীর নিবারণ যাতনাদি রুক্মিণী প্রভৃতিতে দেখা যায় না। সুতরাং মনে হতে পারে,রুক্মিণী প্রভৃতি অপেক্ষা সম্ভবত গোপীদের অপকর্ষ আছে। কিন্তু রাগানুগা মহাভাববতী ব্রজদেবীগণের যে সব লৌকিক দুঃখ দেখা যায়, আবার সেইরকম তাঁদের সুখের মাত্রাও অন‍্য অপেক্ষা অনেক বেশী।*
*(২০)অনুরাগিনী মহাভাবময়ী শ্রীব্রজসুন্দরীগণের শ্রীকৃষ্ণের সাথে সম্বন্ধ,অচিন্ত‍্য অনুরাগের ফল। এই সম্বন্ধ সংস্থাপনে তাঁদেরকে স্বজন ত‍্যাগ করতে হয়েছে,আর্য‍্যপথ (স্বামী বা সংসারের পথ)হতে বিচ‍্যুত হতে হয়েছে। কিন্তু এত কষ্ট,এত দুঃখও তাঁদের পক্ষে সুখকর বলে বোধ হয়েছে।এটি ছাড়া অনুরাগের চরম উৎকর্ষের আর দৃষ্টান্ত কোথায়? মহাভাববতীগণের এই অনন‍্যসাধারণ অলৌকিক অনুরাগ পূজ‍্যপাদ শ্রীজীব গোস্বামীরও যে একান্ত মনোগত,তাতে আর সন্দেহ নাই। তাই পরম কৃপালু শ্রীজীব গোস্বামীচরণ লিখেছেন=*
*🌷স্বেচ্ছয়া লিখিতং কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎদত্র পরেচ্ছয়া।*
*🌷যৎপূর্ব পরসম্বন্ধং তৎপূর্বমপরং পরম্।।*
*🌹সুতরাং ঔপপত‍্য-সম্বন্ধ পূজ‍্যপাদ শ্রীজীব গোস্বামীপাদেরও মনোগত বা অভিপ্রেত।যদি গুরুঅগ্নিবি প্রসাক্ষিপূর্বক ব্রজবালাদের শ্রীকৃষ্ণের সহিত বিবাহঘটনা স্বীকার করা হয়, তাহলে শ্রীউজ্জ্বল নীলমণি উপক্রম হতে উপসংহার পর্যন্ত সব কথার অর্থই বিপর্য‍্যস্ত হয়ে যায়। সুতরাং পূজ‍্যপাদ শ্রীজীব গোস্বামীপাদ দাম্পত‍্য সম্বন্ধে যে সব যুক্তির অবতারণা করেছেন,তা পরেচ্ছা প্রণোদিত।*
*🍀এখানে শ্রীজীব গোস্বামীপাদ ও শ্রীবিশ্বনাথ চক্রবর্তী মহানুভবের যুক্তিময়ী উক্তির যথাসাধ‍্য সাব সঙ্কলন করলাম। কৃপাময় পাঠকগণ লেখকের ভ্রমপ্রমাদ সংশোধন করে, এই বিষয়ের আলোচনা করলে বৈষ্ণব সিদ্ধান্তের একটি অতি গুহ‍্য রাজ‍্যে প্রবেশ লাভ করতে পারবেন।প্রকৃত প্রস্তাবে, মূলকথা এই যে,যে ভাবেই যিনি এই ব্রজভাব গ্রহণ করুন,গোপীকার প্রেমে রসাভাস নাই এটিই আমাদের শ্রীস্বরূপদামোদরের সিদ্ধান্ত।*
*🍀এই ঔপপত‍্যের সরস অন্তনিগূঢ় ভাব আমাদের মনের অনধিগম‍্য (বুদ্ধির অতীত)।অথচ এই ভাবের অপব‍্যবহারে বৈষ্ণবসমাজে অনেকগুলি দুষ্ট মতের প্রচার হয়েছে এবং তার ফলে ধর্মের নামে জঘন‍্য নরকজনক অধর্মের অনুষ্ঠান হয়েছে।শ্রীবৈষ্ণব গ্রন্থকর্তা পূজ‍্যপাদ শ্রীরূপ গোস্বামীনাদের আজ্ঞা এই যে =*
*🌷বর্ত্তিতব‍্য শমিচ্ছদ্ভি র্ভক্তবৎ নতু কৃষ্ণবৎ।*
*🌹অর্থ‍্যাৎ যাঁরা মঙ্গল ইচ্ছা করেন, তাঁরা যেন ভক্তের শ্রীচরণযুগলের দিকে দৃষ্টি রেখে তদনুসারে সাত্ত্বিক ও বিশুদ্ধ ধর্মপথের পথিক হন।তাঁরা কখনও যেন এই সব বিষয়ে অচিন্ত‍্যৈশ্বর্য‍্য শ্রীকৃষ্ণবৎ আচরণে রত না হন।পরদারাভিমর্ষণ ও তারসম্বন্ধে স্মরণ কীর্তন ও গুহ‍্য ভাষণ প্রভৃতির মত এমন জঘন‍্যতম পাপ মানুষের পক্ষে আর কিছুই নাই।🙏সমস্ত লেখাগুলিই লেখকের,আমি কেবল লেখকের কথাগুলি তুলে ধরলাম।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙌🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🔜 ক্রমাগত 👉 শ্রীস্বরূপদামোদর 🌷 পঞ্চম ভাগ  🌻 ভক্তপ্রবর শ্রীরসিকমোহন চক্রবর্তী ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📝 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 https://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/02/swarup5.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

    📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝📝
    ꧁👇📖 সূচীপত্র ✍️ শ্রী জয়দেব দাঁ 📖👇



✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧


✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

   ✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️ 
নিবাস- বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ- বাঁশবাড়ী, থানা- ইংরেজ বাজার, জেলা- মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ, পিন কোড- ৭৩২১০১।

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

  *••••┉❀꧁👇🏠Home Page🏠👇꧂❀┅••••* 


✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

    *••••━❀꧁👇 📖 সূচীপত্র 📖 👇꧂❀┅••••* 



✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

     *••••━❀꧁👇📚 PDF গ্রন্থ 📚👇꧂❀┅••••* 


✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
    *••••┉━❀꧁ 🙏 রাধে রাধে 🙏 ꧂❀━┅••••* 
                   শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ
              হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।।
  *••••┉━❀꧁ 🙏 জয় জগন্নাথ 🙏 ꧂❀━┅••••*
              হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
              হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥
  *••••┉━❀꧁ 🙏 জয় রাধাকান্ত 🙏 ꧂ ❀━┅••••*
   🌷❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀🌷
   🏵️❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀🏵️
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧








শেষ ৩০ দিনের পোস্টের মধ্যে সর্বাধিক Viewer নিম্নে :-

শ্রীকৃষ্ণ লীলা 🙏 সূচীপত্র ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_74.html

শিবরাত্রি ব্রতকথা 🙏 ১০৮ নাম 🙏 মন্ত্র সমূহ 🙏 শিবরাত্রি ব্রত কি ভাবে পৃথিবীতে প্রচলিত হল❓শিবরাত্রি ব্রত পালনে কি ফল লাভ হয় ❓শিবরাত্রি ব্রত পালন কি সকলেই করতে পারেন ❓🙏 সকল ভক্ত 👣 চরণে 👣 অসংখ্যকোটি 🙏 প্রণাম 🙏শ্রী মৃন্ময় নন্দী 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/02/shib.html

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নৌকা গঠন তত্ব ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 https://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_22.html

🙇 রাধে রাধে 🙇 শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ 👏 হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।। 🙇 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/09/today.html

শ্রীঅম্বরীষ মহারাজের ছোট রানী 🙏 চারিযুগের ভক্তগাঁথা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/12/blog-post_97.html

মনোশিক্ষা 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 🙏 শ্রীযুক্ত প্রেমানন্দ দাস ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/jaydeb_14.html

বকরূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে চারটি প্রশ্ন করেছিলেন সেই প্রশ্নই বা কি? ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/05/blog-post_98.html

শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু 🥀 সংক্ষিপ্ত কথন 🙏 প্রথম ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/01/mohaprobhu-joydeb-dawn.html

*নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলং শুকমুখাদকমৃতদ্রবসংযুতম্।**পিবত ভাগবতং রসমালয়ং মুহুরহো রসিকা ভূবি ভাবুকাঃ।।*✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/09/blog-post_89.html

শ্রীআমলকী একাদশী ব্রতের মাহাত্ম‍্য কি ❓ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/ekadoshi.html