🚩🚩🚩🙇🙇🙇 রাধে রাধে 🙇🙇🙇🚩🚩🚩

শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী 🙏 দ্বিতীয় ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/bishnupriya2.html

✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
         ꧁ শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
    🏠Home Page🏠⬇️⬇️🙏⬇️⬇️📚PDF গ্রন্থ📚
꧁ MrinmoyNandy.blogspot.com 👉 সূচীপত্র ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
  ꧁ JoydebDaw.blogspot.com 🙏 সূচীপত্র 🙏 ꧂
         ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
     এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
꧁ শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী 🙏 সূচীপত্র 🙏 প্রথম ভাগ ꧂
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
       এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
               ꧁ ১০৭. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী ꧂
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
**(১০৭)🙏শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙏*
*😢শ্রীগৌর বিরহে শচী ও বিষ্ণুপ্রিয়ার অবস্থা 😢*
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
*🌻গ্রন্থকার রচিত শচীমা ও বিষ্ণুপ্রিয়ার বিলাপ কবিতাটি।*
                    *(১)*
*নিমাই!নিমাই! কোথা গেলে বাপ,*
          *দুখিনী জননী ফেলিয়া।*
*(ওগো)চারিদিকে আমি হেরি যে আঁধার,*
          *কোথা গেল বাছা চলিয়া।।*
   *পলকে না হেরি বদন যাহার,*
   *ত্রিভুবন দেখি ঘোর অন্ধকার,*
   *কোথা গেল মোর নয়নের মণি,*
*(আমার) পরাণ যে গেল দহিয়া।*
*(তোরা)বল না আমায় কোথা গেল বাছা,*
              *আঁধার করিয়া নদীয়া।।*
                   *(২)*
*এই যে ছিল সে নিদ্রিত শয়ানে,*
       *কোথা চলি গেল গোপনে।*
*(ওগো)কেরে আসি তার ঘুম ভাঙ্গাইল,*
            *ল'য়ে গেল কা'র ভবনে।।*
*(আমি)সারা পথ খুঁজি নদীয়া নগরে,*
   *নিমাই!নিমাই! ডাকি উচ্চৈঃস্বরে,*
*কেউত বলে না কোথা গেল বাছা,*
        *কি কাজ রাখিয়া জীবনে।*
*(আমি)মণিহারা ফণী জনম দুখিনী,*
*(আমার) জুড়াবে এ জ্বালা মরণে।।*
                   *(৩)*
*(আমি)চির-অভাগিনী,বহু ভাগ‍্যবলে,*
        *দিয়েছিলা বিধি বাছারে।*
*(ওগো)কি পাপে হারানু হেন গুণনিধি,*
        *কেবা বলে দিবে আমারে।।*
*(আমার)সোনার সংসার হ'ল ছারখার,*
   *অনাথিনী হ'ল বউ মা আমার,*
       *সকল সুখের হ'ল অবসান,*
      *ভেসেছি আমি যে পাথারে।*
*(ওগো)অকুল সমুদ্র সম্মুখে আমার,*
         *কি কাজ এ ছার সংসারে।।*
                 *(৪)*
*কুক্ষণে আসিল কেশব ভারতী,*
                *চমকিল প্রাণ দেখিয়া।*
*কি মন্ত্র দিল সোনার বাছারে,*
           *লয়ে গেল ফাঁদ পাতিয়া।।*
*(ওগো)যখনই তাঁহারে দেখিলাম দ্বারে,*
*তখনই পরাণ ডাকিল কাতরে,*
*চমকিল হৃদি দারুণ তরাসে,*
             *ভাবী অমঙ্গল ভাবিয়া।*
*(ওগো)আমার বাছারে কোথা লয়ে গেল,*
        *কি কাজ জীবন রাখিয়া।।*
                      *(৫)*
*(বাছা)ক্ষীর-সর-ননি-দুগ্ধে পোষিত,*
        *দুখের বারতা জানে না।*
*(তারে)কে দিবে আহার ক্ষুধার সময়,*
           *তৃষ্ণায় পানীয় বল না?*
*কত ব‍্যথা পাবে কোমল পদেতে,*
*দগধ হইবে আতপ তাপেতে,*
*চাঁদ মুখ খানি বাছার আমার,*
  *(একথ) *স্মরিলে পাই যে বেদনা।*
*(ওগো)কি হ'ল কি হ'ল কোথা গেল বাছা,*
           *করিয়ে আমায় ছলনা।।*
                 *(৬)*
*নিমাই!নিমাই! বাপরে আমার,*
*(তোর) এত যদি ছিল মনেতে।*
*সংসার-বন্ধনে কেন বদ্ধ হ'লি,*
             *আমারে পাগল করিতে?*
*(তোর)মাতা পাগলিনী জায়া অনাথিনী,*
     *সোনার পুতলী জনম-দুঃখিনী,*
*(ওরে)দেখে যা' দেখে যা' নিঠুর হৃদয়,*
           *কি শেল বিঁধেছে বুকেতে*।।
*(ওগো)কোথা গেলে মোর এ জ্বালা জুড়ায়,*
          *পার কি তোমরা বলিতে?*
                   *(৭)*
*চির-অনাথিনী সোনার পুতলী,*
            *বিষ্ণুপ্রিয়া এবে বালিকা।*
*কিছু নাহি জানে বাছারে আমার,*
*(সে যে) নবীন কুসুম-কলিকা।।*
*পারি না দেখিতে মুখখানি তার,*
*হতাশের ছায়া বিষাদ-আগার,*
*পাগলিনী প্রায় থাকে নিরন্তর,* *(তার) *আহার মাত্র কণিকা।।*
*মুখে নাই বাক্ ঝরে দুটি আঁখি,*
*(আহা!) কি জ্বালা সহিছে বালিকা।।*
                    *(৮)*
*(আমি)যে দিকে তাকাই বিষাদের ছায়া,*
                *পড়েছে ভুবন ভরিয়া।*
*লতাপাতা-গায় জীবজন্তু-মুখে,*
             *রয়েছে কালিমা ছাইয়া।।*
*সকলি রয়েছে এক নাই শুধু,*
*জীবের জীবন জগতের বিধু,*
*নিমাই আমার জগত-জীবন,*
  *(ওগো)* *কোথা গেল বাছা চলিয়া।*
*দুখের পাথারে ডুবায়ে সকলে,*
             *আঁধার করিয়া নদীয়া।।*
*🙏বানান ভুল মার্জনীয়🙏*
              *ক্রমশ*
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
               ꧁ ১০৮. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী ꧂
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১০৮)🙏শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙏*
*শ্রীগৌরবিরহে শচী ও শ্রীমতীর অবস্থা*
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""'"''''''''''''''''''''''''''''
*🌻শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী এক্ষণে গৃহের ভিতরে ভূমিশয‍্যায় শায়িতা আছেন।কাছে মর্মসখী কাঞ্চনা বসে আছেন,নয়নজলে বিষ্ণুপ্রিয়ার বুক ভেসে যাচ্ছে,বেশভূষা দূরে ফেলেছেন, আহার নিদ্রা ত‍্যাগ করেছেন,তিনি মুক্তকেশী,সর্বাঙ্গ ধূলিধূসরিত, একটি মলিন বসনে সর্ব শরীর আবৃত করে আছেন।নিরাভরণা বিষাদময়ী দেবী প্রতিমাখানি ভূমিতলে লুন্ঠিতা। শ্রীমতীর শরীর নিষ্পন্দ,জড়বৎ।কেবল মধ্যে মধ্যে এক একটি হতাশের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ কানে শোনা যাচ্ছে।আগের রাত্রির কথা মনে করে বিষ্ণুপ্রিয়া এক একবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছেন।সখী কাঞ্চনা কাছে বসে আছেন,শ্রীমতীর পিঠে হাত দিয়ে আছেন,মুখে কোন কথা নেই।গৃহ নীরব,মধ‍্যে মধ্যে শ্রীমতীর দীর্ঘনিশ্বাসের শব্দ ভিন্ন অন‍্য কোন শব্দই নাই।শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়ার তৎকালিক ভাব নিয়ে শ্রীমাধব ঘোষ একটি সুন্দর পদ রচনা করেছেন। এখানে তুলে ধরলাম।শ্রীমাধব ঘোষ বাসুদেব ঘোষের ভাই,স্বচক্ষে বিষ্ণুপ্রিয়ার অবস্থা দর্শন করেছিলেন, পদটি বিষ্ণুপ্রিয়ার মর্মসখী কাঞ্চনার উক্তি বলে বোধ হয় =*
*"গৌরাঙ্গ!ঝাট করি চলহ নদীয়া।*
*প্রাণহীনা হইল অবলা বিষ্ণুপ্রিয়া*।।
*তোমার চরিত যত পূরব পিরিত।*
*সোঙরি সোঙরি এবে ভেল মূরছিত।।*
*সে হেন নদীয়াপুর সে সব সঙ্গিয়া*।
*ধূলায় পড়িয়া কান্দে তোমা না দেখিয়া।।*
*কহয়ে মাধবঘোষ শুন গৌরহরি।*
*তিলেক বিলম্বে আমি আগে যাব মরি।।*
*🌻মাধব ঘোষের আরেকটি পদও এখানে তুলে ধরলাম,এই পদটিও শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়ার কোন সখির উক্তি।*
*অবলা সে বিষ্ণুপ্রিয়া,তুয়া গুণ সোঙরিয়া,*
        *মূরছি পড়িল ক্ষিতিতলে।*
*চৌদিকে সখিগণ, হেরি করে রোদন,*
       *তুলা ধরি নাসার উপরে।।*
*তুয়া বিরহানলে, অন্তর জর জর,*
        *দেহ ছাড়া হইল পরাণি।*
*নদীয়ানিবাসী যত,তারা ভেল মূরছিত,*
       *না দেখিয়া তুয়া মুখখানি।।*
*শচীমা অন্ধ আধমরা,দেহে প্রাণ নাহি তাঁরা,*
       *তাঁর প্রতি নাহি তোর দয়া।*
*নদীয়ার সঙ্গীগণ, কেমনে ধরিবে প্রাণ,*
       *কেমনে ছাড়িলে তার মায়া।।*
*যত সহচর তোর,সবাই বিরহে ভোর,*
       *শ্বাস বহে দরশন আশে।*
*হেদে হে রসিকবর,চলহ নদীয়াপূর,*
      *কহে এ দীন মাধব ঘোষে।।*
*🌻যেদিন শ্রীগৌরাঙ্গ নদীয়া আঁধার করে গৃহত‍্যাগ করেছিলেন,সেই দিন হতে শচীমা ও বিষ্ণুপ্রিয়া উপবাসী।জলবিন্দুও স্পর্শ করেন নাই।সকলে মিলে সাধাসাধি করে কিছুতেই তাঁদেরকে জল গ্রহণ করাতে পারলেন না।বৃদ্ধ শ্রীবাস পন্ডিত সর্বদাই শচীমাতার গৃহে আছেন।বাইরে এসে অন‍্যান‍্য ভক্তদের সঙ্গে শচীমা ও শ্রীমতীর অবস্থা পর্য‍্যবেক্ষণ করছেন।ভক্তগণের মনে ভয় হচ্ছে শচীমা ও শ্রীমতী আত্মহত‍্যা না করেন!মালিনী দেবী বাইরে এসে মধ্যে মধ্যে শচীমায়ের ও বিষ্ণুপ্রিয়ার শারীরিক অবস্থার সমাচার দিয়ে যাচ্ছেন।সকলে শুনলেন,শাশুড়ী বৌমা জলস্পর্শও করেন নাই।বৃদ্ধ শ্রীবাসপন্ডিত আর স্থির থাকতে না পেরে গৃহের ভিতরে শচীমায়ের কাছে গেলেন,তাঁর ইচ্ছে শচীদেবীকে কিছু বুঝিয়ে বলেন।শচীমা তাঁকে দেখিবা মাত্র হাহাকার করে কেঁদে উঠলেন।শ্রীবাস পন্ডিত আর কিছু না বলে তিনিও কাঁদতে কাঁদতে সে জায়গা থেকে চলে গেলেন।সকলেরই একই দশা, সান্ত্বনা কে দেবে?সে দিন এই ভাবেই কাটল।অনেকেই সে দিন উপবাসী রইলেন।সমস্ত রাত্রি শ্রীবাস ঘরণী মালিনী,শচীমায়ের কাছে রইলেন।*
*🙏জয় নিতাই জয় গৌরহরি🙏*
            *বানান ভুল মার্জনীয়*
                        *ক্রমশ*
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
               ꧁ ১০৯. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী ꧂
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১০৯)🙏শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙏*
*শ্রীগৌরবিরহে শচীমা ও শ্রীমতীর অবস্থা*
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""'"""'"''''''''''''''''''''''''''''''''''
*🌻সমস্ত রাত্রি মালিনীদেবী শচীমায়ের কাছে থাকলেন।বহির্বাটীতে শ্রীবাসাদি ভক্তবৃন্দ রইলেন।কারও নয়নে নিদ্রা এলো না।কেঁদে কেঁদে সমস্ত রাত্রি কাটালেন।শ্রীমতীর পাগলিনীর মতো মাটিতেই পড়ে রইলেন,গাত্রাবরণও পরিবর্তন করলেন না, এবং একবিন্দুও জল স্পর্শ করলেন না।কাঞ্চনা বিষ্ণুপ্রিয়ার কাছে বসে আছেন, তিনিও আহার নিদ্রা ত‍্যাগ করে।একদন্ডের জন‍্যও সখীর সঙ্গ ছাড়া হননি।তিনদির পরে শ্রীচন্দ্রশেখর আচার্য‍্য কাটোয়া হতে নবদ্বীপ ফিরে এসে মহাপ্রভুর সন্ন‍্যাসগ্রহণের নিদারুণ সংবাদ ভক্তগণের কাছে দিলেন।তিনি শচীমায়ের কাছে কেমন করে মুখ দেখাবেন,তা ভেবে কেঁদে আকুল হলেন।এই নিদারুণ সংবাদে মহাপ্রভুর ভক্তবৃন্দের মধ্যে মহা আর্তনাদ পড়ে গেল।শ্রীঅদ্বৈতাচার্য‍্য মূর্ছিত হয়ে পড়লেন,শ্রীবাস পন্ডিত মৃতপ্রায়।শচীমায়ের কর্ণেও এই নিদারুণ সংবাদ গেল।শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়াও এই চরম সংবাদ পেলেন,তিনি নির্বাক নিস্পন্দ হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন।তাঁর দেহে যেন প্রাণ নাই।শচীমাও জড়প্রায় হয়ে রইলেন।শ্রীমতী আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারছেন না,নয়নধারায় বক্ষ ভেসে যাচ্ছে। মধ্যে মধ্যে কেবল এক একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলছেন।*
*🍀তবে নবদ্বীপে চন্দ্রশেখল আইলা।*
*🍀সভাস্থলে কহিলেন প্রভু বনে গেলা।।*
*🍀শ্রীচন্দ্রশেখর-মুখে শুনি ভক্তগণ।*
*🍀আর্তনাদে লাগিলেন করিতে ক্রন্দন।।*
*🍀শুনিয়া হইল মাত্র অদ্বৈত মূর্ছিত।*
*🍀প্রাণশূন‍্য দেহ যেন পড়িলা ভূমিত।।*
*🍀শচীদেবী শোকে রহিলেন জড় হৈয়া।*
*🍀কৃত্রিম পুতলী যেন আছে দাঁড়াইয়া।।*
*🍀ভক্তপত্নী সব যত পতিব্রতাগণ*।
*🍀ভূমেতে পড়িয়া সবে করেন ক্রন্দন।।*
                                *(শ্রীচৈঃ ভাঃ)*
*🌻নিরুপায় চন্দ্রশেখর আচার্য‍্য কাঁদতে কাঁদতে ভগ্নহৃদয়ে অবশেষে শচীমায়ের কাছে গেলেন,গৃহদ্বারে গিয়ে তাঁর পদযুগল আর উঠতে চাইল না, অর্থ‍্যাৎ গৃহের ভিতরে যে যাবেন, শেষমেষ শচীদেবীকে সব কথা বললেন, শচীমা শুনে পাগলিনীর মতো আলুলায়িত কেশে কাঁদতে কাঁদতে গৃহদ্বারের দিকে ছুটলেন।চন্দ্রশেখর শচীমাকে পাগলিনী প্রায় দেখে বালকের মতো চিৎকার করে তিনিও কাঁদতে লাগলেন।শচীমা কাঁদতে কাঁদতে চন্দ্রশেখরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ওগো!তুমি আমার নিমাইকে কোথায় রেখে এলে? তোমাদের কি এই কাজ!*
*🍀পুছিতে না পারে কেহ মুখে নাহি রায়ে।*
*🍀শুনিয়া শচী দেবী আউদড় চুলে ধায়ে।।*
         *(আউদড়=এলোমেলো)*
*🍀আচার্য‍্য বলিয়া ডাকে উন্মতি পাগলী।*
*🍀না দেখিয়া গৌরাঙ্গে হইলা উতরোলি।।*
*🍀আমার নিমাই কোথা থুইয়া আইলা তুমি।*
*🍀কেমনে মুন্ডিলা কেশ কোন দেশ ভূমি।।* *(চৈঃমঃ)*
*🌻চন্দ্রশেখর আচার্য‍্য কোন কথা বলতে পারছেন না।মাথা নিচু করে শচীমায়ের পাশে বসে পড়লেন।নয়নে শ্রাবণের ধারারমত বহিছে।শচীমা পুনরায় বললেন=*
*🍀কোন ছার সন্ন‍্যাসী সে হৃদয় দারুণা।*
*🍀বিশ্বম্ভরে মন্ত্র দিতে না কৈল করুণা।।*
*🍀সে হেন সুন্দর কেশ লাবণ‍্য দেখিয়া।*
*🍀কোন ছার নাপিতের নিদারুণ হিয়া।।*
*🍀কেমনে পাপিষ্ঠ তেন কেশে দিল খুর।*
*🍀কেমনে বা জীল সেই দারুণ নিঠুর।।*
*🍀আমার নিমাই কার ঘরে ভিক্ষা কৈল।*
*🍀মস্তক মুড়ায়া পুত্র কেমন বা হৈল।।ঐ।।*
*🌻শচীমা চন্দ্রশেখরকে দেখে এইরকম সকরুণ বিলাপ করতে লাগলেন, শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া ঘরের ভিতরে ভূমিশয‍্যায় পড়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন।তাঁর সেই করুণ নীরব ক্রন্দনের রোল চন্দ্রশেখরের কর্ণে গেল।তিনি উচ্চৈঃস্বরে কাঁদতে কাঁদতে সে জায়গা হতে উঠে বাইরে চলে গেলেন, শচীমা আর বিষ্ণুপ্রিয়ার বুক ফাটা কান্না সইতে পারলেন না।তাঁর বুকে যেন শেল বিঁধতে লাগল। কত সান্ত্বনা দেবেন? তবুও কয়েকজন প্রতিবেশিনী রমণী শ্রীমতীর কাছে গেলেন।*
*🍀এতেক বিলাপ যদি শচী দেবী কৈল।*
*🍀বিষ্ণুপ্রিয়া প্রবোধিতে জনকথো গেল।।*
*🍀বিষ্ণুপ্রিয়ার কান্দনাতে পৃথিবী বিদরে।*
*🍀পশু পক্ষী লতা তরু এ পাষাণ ঝুরে।।ঐ।।*
*🙏জয় নিতাই জয় গৌর🙏*
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
               ꧁ ১১০. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী ꧂
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
 *(১১০)🙏শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙏*
*শ্রীগৌরাঙ্গচাঁদের বিরহে শচীমা ও বিষ্ণুপ্রিয়ার চরম অবস্থা*
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
*🌻শ্রীমতীবিষ্ণুপ্রিয়ার দুঃখে ও তাঁর করুণ আর্তনাদে সকলেই কেঁদে আকুল হলেন।সকলের প্রাণ যেন ফেটে গেল।বিষ্ণুপ্রিয়ার শুকনো ও বিষণ্ণ বদনের প্রতি কেউশতাকাতে পারছেন না,এই তিনদিনেই যেন একেবারেই ক্ষীণ হয়ে গেছেন।এতক্ষণ শ্রীমতী ঘরের কোণে নীরবে নির্জনে ক্রন্দন করছিলেন,শচীমায়ের কাতর ক্রন্দনে ও করুণ বিলাপে শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়ার কোমল হৃদয় মথিত হল।তাঁর গৃহ হতে সকলে চলে আসলেন,সে হৃদয়বিদারক দৃশ্য কেউ আর দেখতে পারলেন না।এত তাঁদের বিলাপ ও নিদারুণ ব‍্যথা নদীয়াবাসী সহ‍্য করতে পারলেন না। কিন্তু শ্রীমতীর মর্মসখী কাঞ্চনা এক তিলার্ধও বিষ্ণুপ্রিয়ার সঙ্গ ছাড়া হলেন না।এবারে শ্রীমতীর লজ্জার বাঁধ ভেঙ্গে গেল,এক্ষণে তিনি বিনিয়ে বিনিয়ে কাঁদতে লাগলেন।(বিনিয়ে অর্থ‍্যাৎ উচ্চৈঃস্বরে লোকসমাজে বিলাপ)।বৃদ্ধা রমণীগণ শোক,তাপ পেলে এইভাবে ক্রন্দন করে থাকেন।অতিরিক্ত শোকে বালিকারা ও কুলের কুলবধূগণও এ সময়ে লজ্জা ত‍্যাগ করে নিজজনের কথা চিন্তা করে বিনিয়ে বিনিয়ে কাঁদতে থাকেন।শ্রীমতী এক্ষণ মনের দুঃখ চেপে রেখে নীরবে নির্জন ঘরে রোদন করেছিলেন।আর থাকতে পারলেন না, তার কারণ তাঁর মনে ভীষণ আশা ছিল মহাপ্রভুকে নদীয়াবাসী ফিরিয়ে আনবেন।চন্দ্রশেখর আচার্য‍্যের মুখে যখন প্রাণবল্লভের সন্ন‍্যাসগ্রহণের নিদারুণ সংবাদ শুনলেন,তখন বিষ্ণুপ্রিয়া আর স্থির থাকতে পারলেন না।শ্রীলোচনদাস ঠাকুর রচিত শ্রীমতীর বিলাপ কাহিনী এখানে দেওয়া হল।ইহা পাঠ করলে মহাপাষন্ডেরও নয়নে নীরধারা আসবে,নয়নের জলে তাঁর সর্বপাপ ধূয়ে অন্তর নির্মল বা পরিস্কার হবে।তার কর্ম-বন্ধন নাশ হবে।শ্রীবৃন্দাবনদাস তাই লিখেছেন=*
*🍀শুন শুন অরে ভাই!প্রভুর সন্ন‍্যাস।*
*🍀সে কথা শুনিলে কর্মবন্ধ যায় নাশ।।*
*🌻পুনশ্চ লিখেছেন=*
*🍀মধ‍্য খন্ডে ঈশ্বরের সন্ন‍্যাস গ্রহণ।*
*🍀ইহার শ্রবণে মিলে কৃষ্ণপ্রেমধন।।*
*🌻শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়ার বিলাপ পাঠ করে কৃপাময় পাঠক ও পাঠিকাগণও প্রাণ ভরে কাঁদুন, এবং স্ব স্থ হৃদয় নির্মল করুন।প্রাণের আবেগে শ্রীমতী সকল কথায় বলেছেন,কিছুই বাকী রাখেন নাই।মধুর রসভজননিষ্ঠ ঠাকুর লোচনদাস শ্রীমতীর মুখ দিয়ে তাঁর প্রাণের সকল কথাগুলিই শুনে লিপিবদ্ধ করেছিলেন।*
*🍀হাহা প্রাণনাথ!ছাড়ি গেলে হে নদীয়া।*
*🍀অনাথিনী বিষ্ণুপ্রিয়ায় নিঠুর হইয়া।।*
*🍀শ্রীবাসাদি ভক্ত সঙ্গে কীর্তনে বিহার।*
*🍀নয়ন ভরিয়া নৃত্য না দেখিব আর।।*
*🍀প্রেমাবেশে গদ গদ বোল শ্রীবদনে।*
*🍀না শুনিয়া অভাগিনী বাঁচিব কেমনে।।*
*🍀দেশে দেশে কিরূপে আছহ প্রাণেশ্বর।*
*🍀স্মরিয়া স্মরিয়া প্রাণ হৈল জর জর।।*
*🍀হায়রে কঠিন প্রাণ না বেরেহ কেনে।*
*🍀জ্বালহ আগুনি আমি মরিব এখনে।।*
*🍀উদ্বেগে দিবস মোর হৈল কোটি যুগ।*
*🍀না দেখিয়া প্রাণনাথ তোর বিধুমুখ।।*
*🍀জীবমাত্রে উদ্বেগ না দেয় সাধুজন।*
*🍀তোর শোকে শচী মাতা ছাড়য়ে জীবন।।*
*🍀মুঞি অভাগিনী তোমার ভকতি না জানি।*
*🍀সেই অপরাধে বুঝি হৈলুঁ অনাথিনী।।*
*🍀চরণ নিকটে প্রভু বসিয়া তোমার।*
*🍀রূপ হেরি হেরি আমি না জুড়াব আর।।*
*🍀বদনে তুলিয়া দিতে কর্পূর তাম্বূলে।*
*🍀দশন মুকুতা পাতি পরশি অঙ্গুলে।।*
*🍀অরুণ নয়ন কোণে করুণায় চাঞা।*
*🍀মধুর মধুর কথা বলিতে হাসিয়া।।*
*🍀অধর অরুণ আর তাম্বূলের রাগে।*
*🍀দশন কিরণ মোর হিয়া মাঝে জাগে।।*
*🍀তাহাতে অমিয়া মাখা শীমুখের হাস।*
*🍀শ্রবণ নয়ান মোর জীত সেই আশ।।*
*🙏জয়জয় বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীর জয়🙏*
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
               ꧁ ১১১. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী ꧂
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১১১)🙏শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙏*
*শ্রীগৌরবিরহে শচীমা ও শ্রীমতীর অবস্থা*
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
*🌻শ্রীলোচনদাস, বিষ্ণুপ্রিয়ার দেবীর নিকট শোনা কথা লিখেছেন।*
*🍀অমিয়া অধিক প্রভু তোর যত গুণ।*
*🍀সোঙরিতে এবে সেই ভৈগেল আগুন।।*
*🍀বিনোদ বিলাস রসসুখময় সেজে।*
*🍀সে সব সোঙরি বিষ্ণুপ্রিয়া প্রাণ তেজে।।*
*🍀হায় হায় কিবা দোষ দৈব হইল আমারে।*
*🍀গৌর বিনু আমার সকল আন্ধিয়ারে।।*
*🍀সেহাস‍্য লাবণ‍্য দেহ না দেখিব আর।*
*🍀না শুনিব বচনচাতুরী সুধাসার।।*
*🍀অনাথিনী করিয়া কোথারে গেলা তুমি।*
*🍀সোঙরি তোমার গুণ নিবেদিয়ে আমি।।*
*🍀কোন ভাগ‍্যবতী সব তোমারে দেখিয়া।*
*🍀নিন্দিল কতেক মোরে কান্দিয়া কান্দিয়া।।*
*🍀কোন অভাগিনী কোল ছাড়িয়া আইলা।*
*🍀খন্ডব্রতী অভাগিনী কেন না মরিলা।।*
*🍀পূজিল তোমার মুখ অনঙ্গ-নয়নে।*
*🍀কেমনে ধরিব ইহা তোমা অদর্শনে।।*
*🍀বিচ্ছেদে মরিল তোর যত বরনারী।*
*🍀আমি অভাগিনী প্রাণএতকাল ধরি।।*
*🍀মরি মরি গৌরাঙ্গসুন্দর কতি গেলা।*
*🍀আমি নারী অভাগিনী সহজে অবলা।।*
*🍀কোন দেশে যাব লাগি পাব কোন্ ঠাঞি।*
*🍀যাইতে না দেব কেহো মরিব এথাই।।*
*🍀মায়ে অনাথিনী করি গেলা কোন দেশে।*
*🍀কেমনে বঞ্চিব তেঁহ তোমার হুতাশে।।*
*🍀পাপিষ্ঠ শরীর মোর প্রাণ নাহি যায়।*
*🍀ভূমিতে পড়িয়া দেবী করে হায় হায়।।চৈঃমঃ।।*
*🌻শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী প্রাণবল্লভের বিরহে অতি কাতরা হয়ে এইভাবে বিলাপ করছেন।তাঁর সর্ব- অঙ্গ থরথরে কাঁপছে,ঘন ঘন শ্বাস বইছে,জগত আকর্ষণ করা বদনখানি শুকিয়ে গিয়েছে ; মস্তকের কেশ,পরিধানের বস্ত্র,ধূলায় গড়াগড়ি যাচ্ছে।ক্ষণে ক্ষণে মূর্ছা যাচ্ছেন।হা নাথ!হা নাথ!হা প্রভু!হা প্রভু!বলে মধ্যে মধ্যে আর্তনাদ করে উঠছেন।শ্রীমতীর ক্রন্দনে সকলেই ব‍্যথিত, যিনি প্রবোধ দিতে আসছেন, তিনিই বুক ফাটা কান্না নিয়ে চলে যাচ্ছেন।বিষ্ণুপ্রিয়ার অবস্থা দেখে তিনি জ্বলে পুড়ে মরছেন।এই বালিকার বিলাপ আর নদীয়াবাসীর সহ‍্য হচ্ছে না।যখন শ্রীমতী মূর্ছা যাচ্ছেন, তাঁর মূর্ছা অপনোদনের (খন্ডনের) একমাত্র উপায়, তাঁর কর্ণে "শ্রীগৌরাঙ্গের নাম শ্রবণ করান"।সকলে তাই-ই করছেন।অমনি শ্রীমতীর চেতনা হচ্ছে।*
*🍀বিরহ অনল শ্বাস বহে অনিবার।*
*🍀অধর শুখায় কম্প হয় কলেবর।।*
*🍀কেশ বাস না সম্বরে ধূলায় পড়িয়া।*
*🍀ক্ষণে ক্ষীণ হয় অঙ্গ রহে ত ফুলিয়া।।*
*🍀ক্ষণে মূর্ছা পায় রাঙ্গা চরণ ধেয়ানে।*
*🍀সম্বেদন পায় ক্ষণে অনেক যতনে।।*
*🍀প্রভু প্রভু বলি ডাকে ক্ষণে আর্তনাদে।*
*🍀বিষ্ণুপ্রিয়া কান্দনাতে সর্বজন কান্দে।।*
*🍀প্রবোধ যেই যেই জন গেল।*
*🍀বিষ্ণুপ্রিয়া দেখি হিয়া পুড়িতে লাগিল।।*
*🍀গৌরাঙ্গ গৌরাঙ্গ বলি ডাকে তার কানে।*
*🍀কথোক্ষণে বিষ্ণুপ্রিয়া পাইলা চেতনে।।ঐ*
*🌻শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়ার একটু চেতনা হলেই সকলে মিলে তাঁকে বলছেন,"মাগো!তোমাকে প্রবোধ দিবার কিছুই নাই। তুমি বুদ্ধিমতী, তুমি আপনা আপনি স্থির না হলে কেউ তোমাকে প্রবোধ দিয়ে স্থির করতে পারবে না।*
*🙏জয় জয় শচী শ্রীমতীর জয়🙏*
              *ক্রমাগত*
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
               ꧁ ১১২. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী ꧂
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১১২)🙏শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙏*
*শ্রীগৌরবিরহে শচীমা ও শ্রীমতীর অবস্থা*
############################
*🌻তুমি বুদ্ধিমতী,তুমি আপনা আপনি স্থির না হলে কেউ তোমাকে সান্ত্বনা দিয়ে স্থির করতে পারবে না। তোমার স্বামী তো পূর্বেই তোমাকে বলিছিলেন, তিনি যেখানেই থাকুন না কেন, তুমি যখন তাঁকে ডাকবে, তিনি তোমার কাছে আসবেন। তোমার প্রাণবল্লভের কার্য‍্য তোমার কিছুই অজানা নাই।এই সকল বুঝে মা!তুমি ধৈর্য‍্য ধর, আপনাকে আপনি প্রবোধ দাও। তোমার প্রাণনাথ ইচ্ছাময়,স্বতন্ত্র প্রভু! তুমিও মা!ইচ্ছাময়ী লক্ষ্মীস্বরূপা শ্রীভগবতী! তোমরা উভয়ে উভয়কে উত্তমরূপে জানো।আমরা আর কি বলব।*
*🍀সর্বজন বোলে হের শুন বিষ্ণুপ্রিয়া।*
*🍀কি দিব প্রবোধ তোরে স্থির কর হিয়া।।*
*🍀তোর প্রভু তোর আগে কহিয়াছে কথা।*
*🍀যথা তথা যাই তোর নিকটে সর্বদা।।*
*🍀তোর অগোচর নহে তোর প্রভুর কাজ।*
*🍀বুঝিয়া প্রবোধ দেহ নিজ হিয়া মাঝ।।চৈঃমঃ।।*
*🌻শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী অতি কষ্টে মুখ তুলে একবার সকলের দিকে করুণ নয়নে তাকালেন।দেখলেন সকলেই সেখানে আছেন। রমণীগণ গৃহের ভিতরে সর্বদা দেবীদ্বয়ের কাছে বসে তাঁদেরকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।পুরুষগণ বহির্বাটিতে বসে মহাপ্রভুর জননী ও ঘরণীর তত্ত্বাবধান করছেন।শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া কাঞ্চনার মুখের দিকে সকরুণ নেত্রের দিকে তাকিয়ে অতি মৃদুস্বরে ধীরে ধীরে বললেন, সখী!আমার প্রাণবল্লভের নাম কর, আর সকলকে শ্রীগৌরাঙ্গ নাম করতে বল।তিনি বলেছেন,তাঁর নাম করলেই তিনি আসবেন।এই কয়টি কথা বলতে বলতে বিষ্ণুপ্রিয়ার নয়নজলে বক্ষ ভেসে গেল, কাঞ্চনাও কেঁদে আকুল হয়ে গেলেন।কাঞ্চনা, বিষ্ণুপ্রিয়ার মনের কথা সকলের কাছে প্রকাশ করলেন। তখন সকলে মিলে মহাপ্রভুর নাম করতে বসলেন।শচীমা ও শ্রীমতী কাঁদতে কাঁদতে শ্রীগৌর গোবিন্দের নাম নিতে বসলেন।সেইসময় শচীমায়ের গৃহে এক অপূর্ব দৃশ্য হল।এত দুঃখের মধ্যেও শ্রীগৌরাঙ্গের নাম নিতে নিতে সকলের মন প্রফুল্ল হল।শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী নাম শুনতে শুনতে উঠে বসলেন।অবগুন্ঠনের (ঘোমটার)মধ‍্যে বসে শ্রীমহাপ্রভুর নাম নিচ্ছেন।বালক বালিকা যুবক যুবতী বৃদ্ধ বৃদ্ধা সকলেই সেখানে আছেন। সকলেই শ্রীগৌর ভগবানের নাম করতে বসলেন।*
*🙏ভজ গৌরাঙ্গ কহ গৌরাঙ্গ লহ গৌরাঙ্গের নাম রে।🙏*
               *ক্রমাগত*
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
               ꧁ ১১৩. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী ꧂
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১১৩)🙏শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙏*
*শ্রীগৌরবিরহে শচীমা ও শ্রীমতীর অবস্থা*
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
*🌻সকলেই শ্রীগৌর ভগবানের নাম করতে বসলেন।*
*🍀তাঁরে ধিক্ দয়াল তাঁহার বড় নাম।*
*🍀নাম হৈতে তারে পাই এই মুখ‍্য কাম।।*
*🍀তার বাক‍্যে আছে পূর্ব মো সভার তরে।*
*🍀নাম যেই লয় সেই পাইব আমারে।।*
*🍀এত চিন্তি নাম লৈতে বসিলা সভাই।*
*🍀শচী বিষ্ণুপ্রিয়া আর যত যত যেই।।*
*🍀কি বালক বৃদ্ধ কিবা যুবক যুবতী।*
*নাম লইতে বসিলা গৌরাঙ্গ করি গতি।।*
                                   *(শ্রীচৈঃমঃ)*
*তিন দিন হ'ল শ্রীগৌরহরি গৃহত‍্যাগ করেছেন।কাটোয়াতে সেই কান্ড করার পর মহাপ্রভু রাঢ় প্রদেশে তিনদিন পর্য‍্যন্ত দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে বাড়াচ্ছেন, তিনি জলস্পর্শও করেন নাই।শ্রীনিত‍্যানন্দ প্রভৃতি ভক্তগণ তাঁর সঙ্গে আছেন। মহাপ্রভুর সঙ্গে দৌড়িয়ে তাঁরা অত‍্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।শ্রীধাম বৃন্দাবন দর্শন মহাপ্রভুর কামনা।কিন্তু সে দিকে অগ্রসর হতে পারছেন না।কেবল রাঢ় দেশেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন।তিনি দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ এক জায়গায় দাঁড়ালেন।তাঁর যেন গতি ভঙ্গ হ'ল।নবদ্বীপবাসী ভক্তবৃন্দের বিশেষতঃ শচী-বিষ্ণুপ্রিয়ার আকুল ক্রন্দনে শ্রীগৌর ভগবানের গতি ভঙ্গ হল।ভক্তের ক্রন্দন ভগবানের কর্ণে প্রবেশ করল।শচীমা গৃহে যে শ্রীগৌরাঙ্গ নামের মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেই নামসংকীর্তন যজ্ঞের যজ্ঞেশ্বর শ্রীগৌরাঙ্গসুন্দরের কর্ণে ভক্তের আকুল ক্রন্দনের রোল পৌঁছল।প্রেমোন্মত্ত শ্রীগৌরসুন্দরকে নবদ্বীপবাসী নাম-পাশে বন্ধন করলেন।*
*🍀ধামপাশে বান্ধিল গৌরাঙ্গ মত্ত সিংহ।*
*🍀দান্ডাইল মহাপ্রভু গতি হৈল ভঙ্গ।।ঐ*
*🌻মহাপ্রভু দাঁড়ালেন।শ্রীনিত‍্যানন্দের অঙ্গে অঙ্গ হেলান দিয়ে মহাপ্রভু ত্রিভঙ্গ হয়ে দাঁড়ালেন, দাঁড়িয়ে নিত‍্যানন্দের মুখ পানে তাকিয়ে অঝোর নয়নে কাঁদতে লাগলেন।নবদ্বীপরস তখন মহাপ্রভুর মনে পড়েছে।হয়ত ভিখারিনী ঘরণী ও জননীর দশা মনে করে পতিতপাবন গৌরহরির নয়নের জলে বক্ষ ভেসে যাচ্ছে।নবীন সন্ন‍্যাসীর প্রাণ বৃদ্ধা জননী ও অনাথিনী তরুণী ভার্য‍্যার জন্য কেঁদে উঠেছেন।ভক্তবৎসল শ্রীগৌর ভগবান ভক্ত-দুঃখে কাতর হয়ে প্রাণের আবেগে নিত‍্যানন্দের প্রতি আদেশ করলেন,তুমি নবদ্বীপে যাও, সেখানে গিয়ে সকলকে বল,আমি শান্তিপুরে সকলের সঙ্গে দেখা করব।*
*🍀নিত‍্যানন্দ অঙ্গে অঙ্গ হেলাঞা রহিলা।*
*🍀অঝোর নয়নে প্রভু কান্দিতে লাগিলা।।*
*🍀যাহ নিত‍্যানন্দ নবদ্বীপে আজি তুমি।*
*🍀শান্তিপুরে সভারে দেখিয়ে যেন আমি।।ঐ*
*🌻মহাপ্রভুর এই আদেশ পেয়ে নিতাইচাঁদের মনে বড় আনন্দ হল। তিনি একটু হেসে মহাপ্রভুর নিকট হতে বিদায় নিলেন।বিদায় কালীন নিতাইচাঁদকে মহাপ্রভু পুনরায় বললেন।*
*🍀নবদ্বীপে যাহ তুমি শুনহ বচন।*
*নদীয়া নগরে মোর যত বন্ধু জন*।।
*🍀সভারে কহিও নমো নারায়ণ বাণী।*
*🍀অদ্বৈত আচার্য‍্য গৃহে উত্তরিব আমি।।*
*🍀সভারে লইয়া তুমি আইস তথাকারে।*
*🍀একত্র হইব সভে আচার্য‍্যের ঘরে।।ঐ*
*🌻শ্রীনিতাইচাঁদ মহাপ্রভুকে শান্তিপুরে অদ্বৈতাচার্য‍্যের গৃহে রেখে নবদ্বীপ যাত্রা করলেন।প্রেমোন্মত্ত নিত‍্যানন্দ শান্তিপুর হতে এই উপলক্ষ্যে নবদ্বীপ আগমন বৃত্তান্ত শ্রীবৃন্দাবনদাস ঠাকুর যা বর্ণনা করেছেন,তা এস্থলে উদ্ধৃত হল।সরল সদানন্দ বাল-স্বভাব নিত‍্যানন্দ চরিত্রের এই উজ্জ্বল চিত্রটি তদীয় ভক্ত পাঠক পাঠিকাগণ আস্বাদন করবেন।*
*🍀প্রভুর আজ্ঞায় মহানন্দ নিত‍্যানন্দ।*
*🍀নবদ্বীপ চলিলেন পরম আনন্দ।।*
*🍀প্রেমরসে মহামত্ত নিত‍্যানন্দ রায়।*
*🍀হুঙ্কার গর্জন প্রভু করয়ে সদায়।।*
*🍀মত্তসিংহ প্রায় প্রভু আনন্দে বিহ্বল।*
*বিধিনিষেধের পার বিহার সকল*।।
*🍀ক্ষণেক কদম্ববৃক্ষে করি আরোহণ।*
*🍀বাজায় মোহন বেণু ত্রিভঙ্গমোহন।।*
*🍀ক্ষণেক দেখিয়া গোষ্ঠে গড়াগড়ি যায়।*
*🍀বৎসপ্রায় হইয়া গাভীর দুগ্ধ খায়।।*
*🍀আপনা আপনি সর্ব পথে নৃত্য করে।*
*🍀বাহ‍্য নাহি জানে ডুবে আনন্দসাগরে।।*
*🍀কখনো বা পথে বসি করেন রোদন।*
*🍀হৃদয় বিদরে তাহা করিতে শ্রবণ।।*
*🍀কখনো হাসেন অতি মহা অট্টহাস।*
*🍀কখনো বা শিরে বস্ত্র বান্ধি দিগ্ বাস।।*
*🍀কখনো বা স্বানুভবে অনন্ত আবেশে।*
*🍀সর্পপ্রায় হইয়া গঙ্গার স্রোতে ভাসে।।*
*🍀অনন্তের ভাবে প্রভু গঙ্গার ভিতরে।*
*🍀ভাসিয়া যায়েন অতি দেখি মনোহরে।।*
*🍀এই মত গঙ্গামধ‍্যে ভাসিয়া ভাসিয়া।*
*🍀নবদ্বীপ প্রভুঘাটে মিলিলা আসিয়া।।*
                    *(শ্রীচৈতন‍্য ভাগবত)*
*🌻শ্রীনিত‍্যানন্দ প্রভু নবদ্বীপে এসে যা দেখলেন,তাতে তাঁর কোমল হৃদয় বড়ই কাতর হ'ল।*
*🙏জয় নিতাই গৌর হরিবোল🙏*
        *বানান,ভুল মার্জনীয়*
                 *ক্রমশ*
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
               ꧁ ১১৪. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী ꧂
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১১৪)🙏শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙏*
*🍀মহাপ্রভুর নিষেধ,সকলকে আনবে, একজন ছাড়া🍀*
▪ ▪ ▪ ▪ ▪ ▪ ▪ ▪
*☘আমা লাগি প্রভু মোর করিল সন্ন‍্যাস।*
*☘ফিরিয়া যদ‍্যপি আইলা অদ্বৈতের বাস।।*
*☘স্ত্রী পুরুষ বাল বৃদ্ধ যুবতী যুবক।*
*☘দেখিতে আনন্দে ধাঞা চলে সব লোক।।*
*☘কোন অপরাধ কৈনু মুঞি অভাগিনী।*
*☘দেখিতেও অধিকার না ধরে পাপিনী।।*
*☘প্রভুর রমণী যদি না করিত বিধি।*
*☘তথাপি পাইতু দেখা প্রভু গুণনিধি।।*
                        *(শ্রীচৈঃ চঃ নাটক)*
*🌻শ্রীগৌরসুন্দর এক্ষণে শান্তিপুরে অদ্বৈত আচার্য‍্য ভবনে বিরাজ করছেন।তাঁর সন্ন‍্যাসবেশ।মহাপ্রভুর আদেশে শ্রীনিত‍্যানন্দ নবদ্বীপের ভক্ত সকলকে শান্তিপুর নিয়ে যেতে এসেছেন। শ্রীগৌরাঙ্গ বিহনে ভক্তগণের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা অতীব শোচনীয় হয়েছে।নিত‍্যানন্দ তাঁদেরকে দেখে ভীষণ মর্মাহত ও ব‍্যথিত হলেন।শ্রীলোচনদাস ঠাকুর নবদ্বীপবাসী ভক্তবৃন্দের তাৎকালিক অবস্থা কি রকম ছিল বর্ণনা করেছেন।*
*☘নদীয়া নগরের লোক জীয়ন্তেই মরা।*
*☘ কাটিলে কুটিলে রক্ত-মাংস নাহি তারা।।*
*☘উদরে নাহিক অন্ন টলমল তনু*।
*☘সর্ব অন্ধকার তার গোরাচাঁদ বিনু।।*
*🌻নিতাইচাঁদ যে দিন নবদ্বীপে এসেছেন,সবাইকে শান্তিপুরে নিয়ে যাবেন,মহাপ্রভু শান্তিপুর অদ্বৈতভবনে আছেন।এ সংবাদ বিদ‍্যুতের মতো সমগ্র নবদ্বীপে প্রচারিত হল।নিত‍্যানন্দ সর্বপ্রথমে মহাপ্রভুর গৃহে গিয়ে উঠলেন। মহাপ্রভু সেই দিন নিয়ে দ্বাদশ দিন হল গৃহত‍্যাগ করেছেন।সকলে শচীমার গৃহে এসে উপস্থিত হলেন।নিত‍্যানন্দ দেখলেন, শচীমায়ের বাহ‍্য জ্ঞান নেই,তিনি কৃষ্ণ-বিরহ-সাগরে ডুবে আছেন।যশোদার ভাবে তিনি পরম বিহ্বলা। নয়নদ্বয় দিয়ে অবিশ্রান্ত নীরধারা পড়ছে।যাকেই দেখছেন, তাকেই জিজ্ঞাসা করেন,তুমি কি মথুরার লোক?আমার রামকৃষ্ণ কেমন আছে? আর ক্ষণে ক্ষণে মূর্ছা যাচ্ছেন। এইরকম অবস্থায় নিত‍্যানন্দ শচীমাকে প্রণাম করলেন। শচীমা তাঁকে দেখে বললেন, "রামকৃষ্ণ" এলি? পুনরায় নিত‍্যানন্দের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, "ওই বাঁশী বাজিল, আবার বুঝি গোষ্ঠের মধ্যে অক্রূর আসিল?শচীমায়ের বাহ‍্য জ্ঞান নাই দেখে নিত‍্যানন্দ কিছু চিন্তিত হলেন।কিছুক্ষণ পরে শচীমায়ের বাহ‍্যজ্জান ফিরল, তখন তিনি নিত‍্যানন্দকে চিনতে পারলেন। নিতাই! আমার নিমাইকে কোথায় রেখে এসেছিস? আমার নিমাই কোথায়? আমার নিমাই কৈ? এই বলে উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করতে করতে মূর্ছিতা হয়ে ভূতলে পড়ে গেলেন। নিতাইচাঁদ অমনি শচীমাকে কোলে তুলে নিয়ে বসলেন।ন‍্যাসি-শিরোমণি অবধূত নিত‍্যানন্দের নয়নজলে বুক ভেসে গেল।অনেক কষ্টে শচীমায়ের মূর্ছা ভঙ্গ করলেন।নিত‍্যানন্দের কোলে শয়ন করে শচীমা তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। বললেন, বাপ নিতাই! তুই বলেছিলি, আমার নিমাইকে নিয়ে আসবি, কোথায় আমার সর্বস্ব-ধন নিমাইচাঁদ কোথায়? বল, বল কোথায় তাঁকে রেখে এসেছিস?*
*🙏বানান ভুল মার্জনীয়🙏*
             *ক্রমাগত*
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
               ꧁ ১১৫. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী ꧂
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
 *(১১৫)👣শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী👣*
*মহাপ্রভুর বারণ, সকলকে আনবে একজন ছাড়া*
°°°°°°°°°°°°°°°°"""°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
*🌻শচীমা নিতাইকে বলছেন, কোথায় রেখে এসেছিস?এই বলতে বলতে শচীমা উন্মাদিনীর মতো সজোরে নিজ বক্ষে করাঘাত করতে লাগলেন।নিতাইচাঁদ শচীমায়ের হাত দুইখানি ধরিলেন।*
*☘আর্তনাদে ডাকে শচীসআরে অবধূত।*
*☘কোথা থুঞা আলি মোর নিমাই সোনার পুত।।*
*☘ইহা বলি কান্দে শচী বুকে কর হানে।*
*☘টলমল করে,নাহি চাহে পথপানে।।(চৈঃমঃ)*
*🌻নিত‍্যানন্দ শচীমায়ের নয়নের জল মুছিয়ে দিয়ে অতি ধীরে ধীরে কহিলেন মা!আর কান্দিও না, তোমার নিমাইকে শান্তিপুরে এনেছি।সেখানে অদ্বৈতাচার্য‍্যর গৃহে নিমাই কুশলে আছেন। তোমাদের সেখানে নিয়ে যাফার জন্য আমাকে পাঠিয়েছেন।চল তোমরা সেখানে চল।*
*☘বলিলেন নিত‍্যানন্দ চল শান্তিপুরে।*
*☘তোমার নিমাই আছে অদ্বৈতের ঘরে।।*
*☘আমারে পাঠাইয়া দিলা তোমা লইবারে।।(চৈঃভাঃ)*
*🌻শ্রীগৌরাঙ্গকে নিত‍্যানন্দ ধরে এনেছেন,এ সংবাদে শচীমায়ের দেহে যেন প্রাণ আসিল।শচীমা আবার পুত্রমুখ দর্শন করবেন, আবার নিমাইয়ের চাঁদবদনখানি দেখবেন, হারানিধি ফিরে পাবেন, এই আশায় ধৈর্য‍্য অবলম্বন করে উঠে বসলেন।শচীমায়ের শরীরে একটুও বল নাই, দ্বাদশদিন (১২) উপবাসী আছেন,শরীর অবসন্ন হয়ে পড়েছে।হারাধন নিমাইকে দেখবেন, এই আশায় বুক বেঁধে উঠে বসলেন।এই পর্য‍্যন্ত শচীদেবীকে কেউ আহার করাতে পারেন নাই, শুনে নিত‍্যানন্দ বললেন=*
*☘শীঘ্র গিয়া কর মাতা কৃষ্ণের রন্ধন।*
*☘আনন্দিত হউক সকল ভক্তগণ।।*
*☘তোমার হস্তের অন্নে সভাকার আশ।*
*☘তোমার উপাসে হয় কৃষ্ণের উপবাস।।*
*☘তুমি নৈবেদ‍্য কর করিয়া রন্ধন*।
*☘মোহোর একান্ত তাহা খাইবার মন।।চৈঃভাঃ।।*
*🌻এত দুঃখ যন্ত্রণার মধ্যেও,এত শোক-তাপ-জ্বালার ভিতরেও বাল‍্যস্বভাব নিত‍্যানন্দ মধুর বচনে শচীমায়ের মন কিছু শান্ত হল।শরীরে কষ্ট,অনশনে উত্থান-শক্তি-রহিত, তবুও কোথা থেকে বৃদ্ধার শরীরে তখন বল আসিল।নিত‍্যানন্দের মৃত- সঞ্জীবনী মধুর বচনে শচীমায়ের সমস্ত শারীরিক কষ্ট দূর হয়ে গেল।তখন তিনি রন্ধন করে ঠাকুরের ভোগ দিলেন।নিত‍্যানন্দ ও অন‍্যান‍্য ভক্তগণকে ভোজন করিয়ে নিজে কিঞ্চিৎ প্রসাদ পেলেন।*
*☘তবে আই শুনি নিত‍্যানন্দের বচন।*
*☘পাসরি বিরহ গেলা করিতে রন্ধন।।*
*☘কৃষ্ণের নৈবেদ‍্য করি আই পুণ‍্যবতী।*
*☘অগ্রে দিয়া নিত‍্যানন্দ স্বরূপের প্রতি।।*
*☘তবে আই সর্ব বৈষ্ণবেরে আগে দিয়া।*
*☘করিলেন ভোজন সভারে সন্তোষিয়া।।*
*☘পরম আনন্দ হইলেন ভক্তগণ*।
*☘দ্বাদশ উপাসে আই করিলা ভোজন।।চৈঃভাঃ।।*
*🙌জয় জয় শচীমায়ের জয়🙌*
      *বানান ভুল মার্জনীয়*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
      ꧁ ১১৬. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১১৬)🙏শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙏*
*মহাপ্রভুর বারণ,সকলকে আনবে একজন ছাড়া*
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
*🌻এক্ষণে সকলে শান্তিপুর যাবার উদ‍্যোগ করতে লাগলেন।মালিনীদেবী প্রভৃতি পুরনারীগণও যাবেন,সকল ভক্তগণই যাবেন।শচীমায়ের আন্তরিক ইচ্ছা,পুত্রবধূকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন,মনে ভয়,পুত্রের সন্ন‍্যাসবেশ কিরূপে দেখবেন, আর তা কিরূপেই বা বিষ্ণুপ্রিয়াকে দেখাবেন।এইরকম ভাবছেন, আর এক একবার মনে করছেন,শ্রীমতীকে না নিয়ে যাওয়ায় ভাল।আবার ভাবছেন, "তাও কি হয়? আমার সোনার পুত্তলিকে কার কাছে রেখে যাব?দুঃখিনীর মনের সাধ তো মিটবে ; এ জনমের মত তার জীবন সর্বস্বকে একবার দেখে জীবন সার্থক করবে। এইরকম সাত-পাঁচ ভাবছেন, এমন সময়ে বাড়ীর সামনে দোলা এসে উপস্থিত হল।সকলেই যাবার জন্য প্রস্তুত,শচীমাকে নিতে এসেছেন।শ্রীবাস পন্ডিত এসে শচীমাকে বললেন,মা!চল, তোমার নিমাইকে দেখতে শান্তিপুরে চল, সবাই প্রস্তুত।শচীমা তখন কি করবেন,ভেবে কিছুই স্থির করতে পারছেন না।পতি-বিরহা-বিধুরা শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া ঘরের ভিতরে ভূমি শয‍্যায় শয়ন করে আছেন।নিত‍্যানন্দ এসেছেন,তাঁর প্রাণবল্লভের সংবাদ নিয়ে এসেছেন,সবকিছুই শ্রীমতীর কর্ণ গোচর হয়েছে।সকলে মহাপ্রভুকে দর্শন করতে শান্তিপুরে যাচ্ছেন, এ কথাও শ্রীমতী শুনেছেন।তাঁর পক্ষে কি আদেশ হয়,তিনি শাশুড়ির সঙ্গে প্রাণবল্লভকে দেখতে যেতে পারবেন কি না, তাই অপেক্ষা করছেন।এই চিন্তাতে বিষ্ণুপ্রিয়া অধীরা হয়েছেন।শচীমা কি করবেন,কিছুই স্থির করতে না পেরে ইতস্ততঃ করছেন।শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া সখী কাঞ্চনা আছেন তাঁর সঙ্গে ধীরে ধীরে কথা বলছেন।হয়ত শান্তিপুর বিষয় নিয়েই দুইজনে পরামর্শ করছেন।শচীমা আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে শ্রীবাসাদি ভক্তগণের সঙ্গে শান্তিপুর যাত্রার উদ‍্যোগ করছেন।যে গৃহে শ্রীমতী আছেন, শচীদেবী সেই গৃহের দিকে বার বার তাকাচ্ছেন।যদিও মনের কথা এ পর্যন্ত কারও কাছে প্রকাশ করে বলেন নাই,ভাবে সকলেই বুঝলেন, শচীমায়ের ইচ্ছে বিষ্ণুপ্রিয়াকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপুরে যান।মহাপ্রভু গৃহ প্রাঙ্গণ লোকে লোকারণ‍্য,মহাপ্রভুর সমস্ত ভক্তগণ এবং নদীয়াবাসী সকলেই একত্রিত হয়েছেন।শচীমায়ের সঙ্গে সকলেই মহাপ্রভুকে দর্শন করতে অদ্বৈত গৃহে যাবেন। সকল উদ‍্যোগই হয়েছে।নিত‍্যানন্দ যখন দেখলেন সকলেই যাবার প্রস্তুত হয়েছেন কিন্তু শ্রীমতী নেই,তাঁকে ফেলে চলে যাচ্ছেন? তখন তিনি আর গৃহে স্থির থাকতে পারলেন না।মলিন-বসন-পরিধানা,রুক্ষ্মকেশী, সর্বাঙ্গধূলিধূসরিতা,দুঃখিনী বিষ্ণুপ্রিয়া সখী কাঞ্চনার অঙ্গে ভর দিয়ে অবগুন্ঠনে বদন ঢেকে শচীমায়ের আঁচল ধরে শত অপরাধিনীর মতো সকলের সমক্ষে আঙ্গিনায় এসে দাঁড়ালেন।তাঁকে দেখে শচীমায়ের হৃদয়ের অন্তস্থল যেন তুষানলে দগ্ধ হয়ে গেল।সকলেই বুঝলেন,শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়াও মহাপ্রভু-দর্শনে শান্তিপুর যেতে ইচ্ছুক।বধূমাতার মুখের দিকে তাকিয়ে শচীমার মস্তক ঘুরতে লাগল, তিনি নয়নে আঁধার দেখতে লাগলেন।*
*🙌জয় নিতাই জয় গৌর🙌*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
      ꧁ ১১৭. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১১৭)🙏শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙏*
*মহাপ্রভুর বারণ,সকলকে আনবে একজন ছাড়া*
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*🌻শচীমায়ের মস্তক ঘুরতে লাগল, তিনি নয়নে আঁধার দেখতে লাগলেন।আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না।দুইজন স্ত্রীলোক,মালিনীদেবী ও তাঁর ভগ্নী চন্দ্রশেখরের পত্নী শচীমায়ের দুই বাহু ধর দুইদিকে দাঁড়ালেন।*
*🍀শচী দেবী সম্মুখে দাঁড়াতে নারে থিয়া।*
*🍀দাঁড়াইলা দু' জনার দু' বাহু ধরিয়া।।(চৈঃমঃ)*
*🌻শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া মায়ের আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।এই হৃদয় বিদারক করুণ-দৃশ‍্য সকল ভক্ত মন্ডলী দেখছেন।দেখে তাঁরা নীরবে রোদন করছেন।সকলেরই নয়নে দরদর করে ধারা বইছে।শচীমা একেবারে নিস্পন্দ,নির্বাক, কাঠের পুতুলের মত দাঁড়িয়ে আছেন।এইসব দৃশ্য দেখে নিতাইচাঁদ বড় বিপদে পড়লেন।মহাপ্রভুর গুপ্ত আদেশ এ পর্যন্ত কারও কাছে বলেন নাই, শ্রীগৌরহরি সন্ন‍্যাস গ্রহণ করেছেন, স্ত্রীর মুখদর্শন নিষিদ্ধ।শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া শান্তিপুরে যাওয়া মহাপ্রভুর অভিমত নহে।বিষ্ণুপ্রিয়াকে নিয়ে যাওয়া যুক্তিসিদ্ধ হবে না।নিত‍্যানন্দ আর কাল-বিলম্ব না করে মহাপ্রভুর কঠোর আদেশ অন্তরঙ্গ ভক্তদের শুনিয়ে বললেন,মহাপ্রভুর নিষেধ আছে, শ্রীমতীর যাওয়া হবে না।মহাপ্রভু এই নিদারুণ ও কঠিন আদেশ নিত‍্যানন্দ শচীমা ও শ্রীমতীকে বলতে সাহস হল না।ভক্তমন্ডলীকে উপলক্ষ‍্য করে গৌরহরির আদেশ জ্ঞাপন করলেন।শচীমা ও বিষ্ণুপ্রিয়া মহাপ্রভুর কঠিন আদেশ শুনলে শচীমা আর্তনাদে সমগ্র ভক্তমন্ডলী ব‍্যথিত হয়ে কাঁদতে লাগলেন।শ্রীমতী কাঞ্চনার অঙ্গে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন,এক্ষণে তিনি আঙ্গিনায় বস পড়লেন।দেবীর অস্ফুট ক্রন্দন-ধ্বনিতে ভক্তগণের হৃদয় বিদীর্ণ হতে লাগল।তাঁর দুঃখে যেন পৃথিবী ফেটে গেল।পশু-পাখী-তরুলতাও দেবীর দুঃখে রোদন করতে লাগল।*
*🍀বিষ্ণুপ্রিয়ার কান্দনাতে পৃথিবী বিদরে।*
*🍀পশু-পক্ষী-তরুলতা এ পাষাণ ঝুরে।।(চৈঃমঃ)*
*🌻শচীমা কোনরকমে নিজেকে সামাল দিয়ে উঠলেন।ঘরের বধূ সর্ব সমক্ষে বাইরে পড়ে কাঁদছেন, এ দৃশ্য শচীমায়ের চক্ষে বিষদৃশ বোধ হল। তিনি শ্রীমতীর হাত ধরে উঠালেন ও ঘরের ভিতরে নিয়ে গেলেন।ধীরে ধীরে কাঁদতে কাঁদতে পুত্রবধূর কানে কি বললেন,কেউ তা শুনতে পেলেন না।শাশুরী বধূতে গলা জড়িয়ে অনেকক্ষণ কাঁদলেন,দেবী গৃহে রইলেন।কাঞ্চনা প্রভৃতি কয়েকজন সখি সর্বদা বিষ্ণুপ্রিয়ার সেবা শুশ্রূষা করতে লাগলেন।শচীমা ভক্তগণের সঙ্গে শান্তিপুরে যাত্রা করলেন।নদীয়া প্রায় জনশূন‍্য হল।সকলেই মহাপ্রভু দর্শনে গেলেন, বালক-বালিকা, যুবক যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা প্রভৃতি প্রায় সকলেই শচীদেবীর সঙ্গে শান্তিপুরে চললেন।রইলেন কেবল একা শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া।তিনি ভাবলেন,তাঁকে না দেখলে যদি তাঁর প্রাবল্লভের ধর্মরক্ষা হয়,মনে সুখ হয়,তাই হোক, তিনি কেন প্রাণবল্লভের ধর্ম পথের কাঁটা হবেন।প্রাণনাথ যাতে সুখ পান, তাঁর তাইই কর্তব‍্য।এই মনে করে শ্রীমতী চুপ রইলেন, কিন্তু তাঁর নয়নের জল পড়া বন্ধ হল না।তিনি নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে ভূমিতে পড়ে আছড়ে আছড়ে কাঁদতে লাগলেন।তখন যিনি দেবীকে প্রবোধ দিতে আসলেন,তিনিইও কেঁদে আকুল হলেন।শ্রীমতীর মুখে কেবল হায় হায় কি হল? এইকথা ভিন্ন অন‍্য কথা নাই।*
*🍀ভূমিতে পড়িয়া দেবী করে হায় হায়।(চৈঃমঃ)*
*🌻পদকর্তা বাসুদেব ঘোষ শ্রীমতীর তাৎকালিক অবস্থা স্বচক্ষে দেখেছিলেন।তাঁর রচিত পদটি "বংশী শিক্ষা" গ্রন্থ হতে এস্থলে উদ্ধৃত হল।*
*🌹শ্রীমতী কাঁদছেন আর বলছেন, "রামচন্দ্র সীতাকে নিয়ে বনবাসী হয়েছিলেন, আমার প্রাণনাথ কেন তাই করলেন না?শ্রীকৃষ্ণও তো গোপবালাদের ছেড়ে মথুরায় গিয়ে রাজা হয়েও তাঁদের সংবাদ নিতে উদ্ধবকে পাঠিয়ে ছিলেন।এতেই গোপীদের প্রাণ বেঁচেছিল।আমার প্রাণবল্লভও তা করতে পারতেন, কেন যে করলেন না?বিষ্ণুপ্রিয়ার উক্তি এই অতি সুন্দর পদটির রসাস্বাদন করে কৃপাময় পাঠক প্রাণ ভরে একটু কাঁদুন।*
*🙌জয় শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়ার জয়🙌*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
      ꧁ ১১৮. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১১৮)🙏শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙏*
*মহাপ্রভুর বারণ,সকলকে আনবে একজন ছাড়া*
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*🌻শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর উক্তি এই অতি সুন্দর পদটীর রসাস্বাদন করে কৃপাময় পাঠক প্রাণ ভরে একটু কাঁদুন।দেবীর দুঃখে কাঁদতে পারলেই হৃদয় নির্মল হয়ে যাবে, সঙ্গে সঙ্গে চিত্তশুদ্ধি হবে,একথা ধ্রুব সত‍্য।*
*কান্দে দেবী বিষ্ণুপ্রিয়া,নিজ অঙ্গ আছাড়িয়া,*
   *লোটাঞা লোটাঞা ক্ষিতিতলে।*
*ওহে নাথ!কি করিলে,পাথারে ভাসায়ে গেলে,*
    *কান্দিতে কান্দিতে ইহা বলে।।*
*এ ঘর জননী ছাড়ি,মোরে অনাথানী করি,*
    *কার বোলে করিলা সন্ন‍্যাস।*
*বেদে শুনি রঘুনাথ,লইয়া জানকী সাথ,*
     *তবে সে করিলা বনবাস।।*
*পূরবে নন্দের বালা,যবে মধুপুরে গেলা,*
     *এড়িয়া সকল গোপীগণে।*
*উদ্ধবেরে পাঠাইয়া,নিজ তত্ত্ব জানাইয়া,*
    *রাখিলেন তা সবার প্রাণে।।*
*চাঁদ মুখ না দেখিব,আর পদ না সেবিব,*
    *না করিব সে সুখ-বিলাস।*
*এদেহ গঙ্গায় দিব,তোমার শরণ নিব,*
    *বাসুর জীবনে নাহি আশ।।*
*🌻শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া প্রাণবল্লভকে শ্রীরামচন্দ্র ও শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে তুলনা করলেন।তাঁরা শ্রীভগবানের অবতার, তাঁরা যা যা করে গিয়েছেন,তাইই সকলের আদর্শ ও ধর্ম এবং কর্ম।শ্রীগৌরাঙ্গ তা করলেন না কেন?শ্রীমতীর মনের ভাব এই, তাঁর প্রাণবল্লভও শ্রীভগবানের অবতার।পূর্ব পূর্ব অবতারের মতো তাঁরও তাঁর প্রেমাকাঙ্খিনী দাসীর প্রতি কৃপা রেখে একবার স্মরণ করা উচিত ছিল।শ্রীগৌরাঙ্গ-অবতার সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ অবতার,তার অনেক প্রমাণ আছে। অন‍্যান‍্য অবতারের ন‍্যায় শ্রীগৌরাঙ্গ অবতারে রস-মাধুর্য‍্য ও ঐশ্বর্য‍্যভাবের সমাবেশ নাই।ঐশ্বর্য‍্যভাব দেখিয়ে শ্রীগৌরহরি ভক্তবৃন্দকে পরিতুষ্ট করেন নাই।তিনি ভক্তগণকে প্রীতিপূর্ণ চক্ষে দেখতেন, কিন্তু তাঁদের সঙ্গ হতে দূরে থাকতে চেষ্টা করতেন।এতে ভক্তবৃন্দের তাঁর অদর্শন-জনিত বিরহ ক্রমশঃ বৃদ্ধি হত, আর সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে পাওয়ার আশা বিশেষ বলবতী হত।বিরহ না থাকলে অনুরাগ বৃদ্ধি হয় না, প্রিয়জন যদি সংবাদ না নেয়, তাহলে তার সংবাদ পাবার জন্য বা তাকে নিজের সংবাদ দিবার জন্য মন বড় ব‍্যগ্র হয়।প্রিয়জন সংবাদ নেয় না, বলে আমিও নেব না, এটি ধর্ম নয়, এ কাজ স্বার্থপর। শ্রীগৌরহরি শ্রীমতীর সংবাদ নিতেন না, একথা বলতে পারি না, তিনি স্বয়ং ভগবান ভক্তের প্রাণ। শ্রীমতীর অন্তরে বসেই তিনি এই লীলা করছেন।শ্রীমতী বুঝেও বুঝতে পারছেন না, এটিও তাঁর বিচিত্র লীলা। ভগবানের উপর জীবের ভালবাসা ও প্রীতি বৃদ্ধি করবার জন‍্যই তাঁর এই কৌশল-জাল বিস্তার।শ্রীরামচন্দ্র সীতাদেবীকে সঙ্গে নিয়ে বনবাসী হয়েছিলেন।শ্রীশ্রীগৌরহরি বিষ্ণুপ্রিয়াকে গৃহে রেখে সন্ন‍্যাসী হলেন।লোকশিক্ষার নিমিত্ত বৈরাগ‍্যের পূর্ণ পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে জীবের অন্তর দ্রব করালেন। অধিক মহত্ব কার?শ্রীগৌরলীলা-রস লোলুপ কৃপাময় ইহার বিচার করুন।শ্রীমতী একাকিনী গৃহে থাকলেন।শচীমাকে নিয়ে সকল ভক্তগণ শান্তিপুর গেলেন।কাঞ্চনা প্রভৃতি কয়েকটি সমবয়স্কা মর্মী সখীগণে পরিবেষ্টিতা হয়ে শ্রীমতী দিবারাত্রি গৌর-বিরহ-কথা বলছেন, আর কাঁদছেন।প্রাণ খুলে হৃদয়-বেদনা সখিকে বলে শ্রীমতীর দুঃখের কথঞ্চিৎ উপশম হচ্ছে।এই সময়োচিত শ্রীমতীর উক্তি কয়েকটি প্রাচীন পদ সংগ্রহ হয়েছে,তা পাঠক-পাঠিকাগণকে প্রেমোপহার প্রদত্ত হল।পদগুলি বড়ই মর্মভেদী, বিষ্ণুপ্রিয়ার প্রাণের কথা পদগুলিতে প্রকাশ পেয়েছে, পাঠ করলে মনেহয় না কেঁদে থাকতে পারবেন না।*
                       *(০১)*
*🍀হেদে রে পরাণ নিলজিয়া।*
*🍀এখনও না গেলি তনু তেজিয়া।।*
*🍀গৌরাঙ্গ ছাড়িয়া গেছে মোর।*
*🍀আর কি গৌরব আছে তোর।।*
*🍀আর কি গৌরাঙ্গ চাঁদে পাবে।*
*🍀মিছা প্রীতি-আশ আশে রবে।।*
*🍀সন্ন‍্যাসী হইয়া পহুঁ গেল।*
*🍀এ জনমের সুখ ফুরাইল।।*
*🍀কান্দি বিষ্ণুপ্রিয়া কহে বাণী।*
*🍀বাসু কহে না রহে পরাণী।।*
*🙌জয় নিতাই গৌর হরিবল🙌*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
      ꧁ ১১৯. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১১৯)🙏শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙏*
*প্রভুর বারণ,সকলকে আনবে একজন ছাড়া*
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*🌻বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর মনের ভাব প্রকাশ করেছেন এই পদগুলির মধ‍্য দিয়ে।*
=== === ===
*কহ সখি! জীবন উপায়।*
*ছাড়ি গেলা গোরা নটরায়।।*
*ঝুরি ঝুরি তনু ভেল ক্ষীণ।*
*এ দুঃখে বঞ্চিব কত দিন।।*
*যদি যায় সুরধূনী ঘাটে।*
*কত কি দেখিয়া হিয়া ফাটে।।*
*আন গিয়ে গোরা গল-মালা।*
*অনলে পশিব জুড়াইব জ্বালা।।*
*কহে বাসু না সরে বয়ান।*
*গোরা বিনে না বাঁচে পরাণ।।*
               *(০৩ পদ)*
*সন্ন‍্যাসী হইয়া গেলা,পুন যদি বাহুড়িলা,*
     *না আইলা নদীয়া নগরে।*
*হৃদয়ে হৃদয়ে ধরি,নিজ পর এক করি,*
     *চাঁদ মুখ দেখিবার তরে।।*
*হরি! হরি! গৌরাঙ্গ এমন কেনে হৈলা।*
*সবারে সদয় হৈয়া,মুঞি নারীরে বঞ্চিয়া,*
      *এ শোক-সাগরে ভাসাইলা।।*
*এ নব-যৌবন কালে,মুড়াইয়া চাঁচর চুলে,*
      *না জানি সাধিল কোন সিদ্ধি।*
*কি ছার পুরাণ সে,পশুবত পন্ডিত যে,*
    *গৌরাঙ্গের সন্ন‍্যাস দিলা বিধি।।*
*অক্রূর আছিল ভাল,রাজা বোলে লৈয়া গেল,*
     *রাখিলা সে মথুরা নগরী।*
*নিতি লোক আইসে যায়,তাহাতে সম্বাদ পায়,*
     *ভারতী করিল দেশান্তরী।।*
*এত বলি বিষ্ণুপ্রিয়া,মরমে বেদনা পাঞা,*
      *ধরণীরে মাগয়ে বিদায়।*
*বাসুদেব ঘোষ কয়,মো সম পামর নাই,*
     *হিয়া নাহি বিদরিয়া যায়।।*
            *(০৪ পদ)*
*গৌর-গরবে হাম, জনম গোঙায়লুঁ,*
    *অব কাহে নিরদয় ভেল।*
*পরিজন বচনহি, গরলে গরাসল,*
      *গেহ দহন সম কেল।।*
*সজনি!অব দিন বিফল হিঁ ভেল।*
*সোঙরিতে সো মুখ, হৃদয় বিদারত,*
     *পাঁজরে বরজক শেল।।*
*উঠ বস করি কত,ক্ষিতি মাহা লুন্ঠত,*
      *পবন অনল দহ অঙ্গ।*
*কি করব কা দেই,সমবাদ পাঠাওব,*
      *মিলব কিয়ে তছু সঙ্গ।।*
*বেথিত বেদন জন,বোঝায়ত অনুক্ষণ,*
      *ধৈরজ ধর হিয়া মাঝ।*
*নিরবধি সো গুণ, করি অবলম্বন,*
      *সাধই আপনক কাজ।।*
              *(পদকর্তা মাধব ঘোষ)*
*🌻পাঁচ নম্বর পদটি আগামী পর্বে।🌻
*🙏জয় নিতাই গৌর হরিবল🙏*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
      ꧁ ১২০. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১২০)🙏শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙏*
*প্রভুর বারণ,সকলকে আনবে একজন ছাড়া*
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*🌻শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর ভীষণ বিরহদশা দেখে তাঁর সখীগণ বিশেষ ব‍্যথিতা হলেন।তন্মধ‍্যে শ্রীমতীর শ্রেষ্ঠা অন্তরঙ্গা মর্ম-সখী কাঞ্চনা,বিষ্ণুপ্রিয়ার দুঃখ আর সহিতে না পেরে পাগলিনীর মতো গঙ্গাতীরে ছুটলেন।গঙ্গাতীরে যেখানে বসে মহাপ্রভু ভক্তগণের সঙ্গে শাস্ত্রালাপ করতেন,কৃষ্ণ-কথা বলতেন,কাঞ্চনা সেখানে গিয়ে একেবারে বসে পড়লেন।শ্রীমতীর দুঃসহ বিরহ-যাতনা ও ভীষণ বিরহদশা স্মরণ করিয়ে সখী কাঞ্চনা শ্রীগৌরাঙ্গের উদ্দেশ্যে নানাবিধ প্রলাপবচন বলতে লাগলেন।কাঞ্চনার দুইনয়ন হতে দরদর নীরধারা প্রবাহিত হচ্ছে। বেশভূষা পাগলিনীর ন‍্যায়,লোকলজ্জা নাই,সেই গঙ্গাতীরে বসে একেবারে আত্মহারা হয়ে গিয়েছেন।সখীর দুঃখে কাঞ্চনা পাগলিনীর মতো বিলাপ করছেন।তাঁর করুণ বিলাপধ্বনি মনে হচ্ছে গগন ভেদ করছে।গঙ্গার তরঙ্গরাজি পর্যন্ত নিস্তব্ধ হয়ে সেই গৌর-বিরহ কাহিনী শ্রবণ করছি।তীরবাসী পশুপক্ষী পর্যন্ত ব‍্যাকুলিত।মনুষ‍্য তো পরের কথা,পাষাণ পর্যন্ত গলে যাচ্ছে।*
*তছু দুঃখ দুঃখী, এক প্রিয় সখি,*
         *গৌর-বিরহে ভোরা।*
*সহিতে নারিয়া, চলিলে ধাইয়া,*
        *যে-মত বাউরি পারা।।*
*নদীয়া নগরে, সুরধূনী তীরে,*
         *যেখানে বসিতা পহুঁ।*
*তথায় যাইয়া, গদগদ হৈয়া,*
         *কি করয়ে লহু লহু।।*
*সে সব প্রলাপ, বচন শুনিতে,*
        *পাষাণ মিলাঞা যায়।*
*নীলাচল পুরে, যৈছন গৌড়ে,*
        *যাইয়া দেখিতে পায়।।*
*আঁখি ঝর ঝর, হিয়া গর গর,*
        *কহয়ে কান্দিয়া কথা।*
*মাধব ঘোষের, হিয়া বেয়াকুল,*
       *শুনিতে মরমে ব‍্যথা।।*
*🌻অন‍্যান‍্য সখীগণ বিষ্ণুপ্রিয়ার অনুমতিক্রমে গঙ্গাতীর হতে কাঞ্চনাকে ধরে গৃহে আনলেন।কাঞ্চনা বিষ্ণুপ্রিয়ার প্রধানা সখী, বিষ্ণুপ্রিয়া সব কথাই তাঁকে বলেন।কাঞ্চনাকে দেখে শ্রীমতী স্থির হলেন,গৌর-বিরহ-দুঃখ সহ‍্য করতে না পেরে সখী পাগলিনীর মতো হল, এতে দেবীর মনে বড় দুঃখ হল,সে দুঃখ আর হৃদয়ে চেপে রাখতে পারলেন না।কাঞ্চনার গলা জড়িয়ে ধরে অঝোর নয়নে কান্দিতে লাগলেন।অন‍্যান‍্য সখীগণ নানা কথা বলে শ্রীমতীকে প্রবোধ দিবার চেষ্টা করলে দেবী বললেন,সখী!এ সময়ে অন‍্য কোন কথা বলিও না, আমার প্রাণনাথের কথায় বলো।সেই কথায় আমার বড় ভাল লাগে, অন‍্য কথা আমি শুনব না।*
*🙌জয় গৌরহরি জয় গৌরহরি🙌*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
      ꧁ ১২১. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১২১)🙌শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙌*
*প্রভুর বারণ,সকলকে আনবে একজন ছাড়া*
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
*বিষ্ণুপ্রিয়া বললেন আমার প্রাণনাথের কথায় বল, আন কথা বলিস না।বিষ্ণুপ্রিয়ার উক্তি অধম গ্রন্থকার-রচিত একটি পদ আস্বাদন করুন।*
       *সজনী!কহ লো গৌরকথা।*
*পরাণ ভরিয়া, সে কথা শুনিয়া,*
         *জুড়াই মনের ব‍্যথা।।*
*কহ লো সজনি, রসময় বাণী,*
         *গৌরকথা রসে ভরা।*
*হিয়া মাঝে মোর, বিরাজে গৌর,*
         *গোরারূপ মনোহরা।।*
*পরাণ সম্বল, গৌর-কথা বল,*
         *আন কথা শুনিব না।*
*প্রেমময় গাথা, হয় গৌরকথা,*
         *সেকথা মোরে বল না।।*
*পিয়াস মিটিবে, আনন্দ ছুটিবে,*
        *দগধ হৃদয় মাঝে।*
*মানস মুগধ, গৌর শবদ,*
        *পরাণে মধুর বাজে।।*
               *(০২)*
     *সখি! চরণে তোমার ধরি।*
*গৌরকথা কও, পরাণ জুড়াও,*
         *গোরার বিরহে মরি।।*
*সকল সময়, কথা রসময়,*
        *শুনাও আমার কানে।*
*বাঁচাও পরাণে, সুধা বরিষণে,*
       *জুড়াও তাপিত প্রাণে।।*
                     *(০৩)*
      *সখি! রূপের মাধুরী কহ।*
*কি বা সে বদন, কি বা সে নয়ন,*
           *কি বা সুবলিত দেহ।।*
*রূপের ছটায়, উছলে হিয়ায়,*
          *নবানুরাগ লহরী।*
*জগত ভুলিয়া, সে রূপ স্মরিয়া,*
          *রয়েছি জীবন ধরি।।*
*সোনার বরণ, গৌর রতন,*
          *কিবা সে মোহন হাসি।*
*রূপের কাহিনী, কহ লো সজনি,*
         *শুনি আমি দিবানিশি।।*
                     *(০৪)*
     *সখি! শুনাও শ্রীগৌর নাম।*
*পরাণ জুড়ান, পরম রতন,*
           *মধুসম রস-ধাম।।*
*আখরে আখরে , কত মধু ঝরে,*
        *গোরা নামে মাখা সুধা।*
*এ নাম শুনিলে, প্রেম যে উথলে,*
        *দূর হয় ভব-ক্ষুধা।।*
                    *(০৫)*
   *সখী! নাহি কহ আন কথা।*
*চরণেতে ধরি, ছাড়হ চাতুরী,*
         *লয়ে চল গৌর যথা।।*
*জীবনে আমার, গোরা ধন সার,*
        *নাহি জানি গোরা ভিন্ন।*
*গৌর জীবন , গৌর পরাণ,*
          *নাহিক ভাবনা অন‍্য।।*
                  *(০৬)*
        *সখি! জুড়াও মনের ব‍্যথা।*
*বিয়াকুল মন, করিতে শ্রবণ,*
         *মধুমাখা গৌর কথা।।*
*কহ লো সজনি, অমিয়ার খনি,*
         *রসময় গৌর-লীলা।*
*যে কথা শ্রবণে, জীবের পরাণে,*
          *উথলে প্রেমের খেলা।।*
*রসের সাগর, গৌর নাগর,*
         *সুধার কলস নাম।*
*গৌরলীলা-রস, সদাই সরস,*
         *সর্ব রসের ধাম।।*
                    *(০৭)*
*সখি! বাঁচাও পরাণ মোর।*
*শুনাও মধুর, নাম গৌর,*
        *দেখাও সে চিত-চোর।।*
*জনম গোঁয়ানু, তবু না পাইনু,*
        *সে মন-চোরার মন।*
*বিরহে তাঁহার, জ্বলে অনিবার,*
          *হিয়া মোর অনুক্ষণ।।*
*ভণে হরিদাস , করি অভিলাষ,*
          *তোমার চরণ-ধূলি।*
*শয়নে স্বপনে, জীবনে মরণে,*
         *গোরা যেন নাহি ভুলি।।*
*🙌জয় জয় বিষ্ণুপ্রিয়ার জয়🙌*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
      ꧁ ১২২. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১২২)🙌শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙌*
*প্রভুর নিষেধ,সকলকে আনবে একজন ছাড়া*
++++++++++++++++++++++++++++++++
*🌻মালিনী দেবী চন্দ্রশেখর আচার্য‍্যের পত্নী প্রভৃতি বর্ষীয়সী রমণীগণ প্রায় সকলেই শচীদেবীর সঙ্গে শ্রীগৌরহরি দর্শনে শান্তিপুরে গেছেন।শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়ার নিকট বর্ষীয়সী আত্মীয়া রমণী বলতে কেউ নাই।মহাপ্রভুর পুরাতন ভৃত‍্য ঈশানের উপর শ্রীমতীর রক্ষণাবেক্ষণের ভার আছে।ঈশান মহাপ্রভু দর্শনে শান্তিপুর যাননি।গৃহ রক্ষার ভার তাঁর উপর।শচীমা গেছেন,ঘরে শ্রীমতীকে একা ফেলে তো যাওয়া যায় না।শ্রীমতী মর্মী সখিদের নিকট প্রাণ খুলে হৃদয়বেদনা বলবার সুযোগ পেয়েছেন।সখীগণ সকলেই শ্রীমতীর দুঃখে দুঃখী,এক তিলার্ধের জন্য তাঁরা বিষ্ণুপ্রিয়ার সঙ্গ ত‍্যাগ করেননি,দিবারাত্রি শ্রীমতীকে নানাবিধ প্রবোধ সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কিছুতেই তাঁর মন বুঝছে না,তিনি নিয়ত কান্নাকাটি করে ধূলায় গড়াগড়ি দিচ্ছেন। মধ্যে মধ্যে মূর্ছিতা হচ্ছেন, মূর্ছা ভঙ্গেই বিষ্ণুপ্রিয়া হাহাকার করে শিরে করাঘাত করে কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, হা নাথ! দাসীকে দর্শনে বঞ্চিত করলে কেন? তোমার নিকট তোমার দাসী শত অপরাধ করলেও সে তোমার দাসী।অবলা স্ত্রীলোককে এত কষ্ট দিয়ে তুমি কি সুখ পাচ্ছ? বিষ্ণুপ্রিয়ার ক্রন্দনে সকলেই অস্থির,সকলেই সন্তপ্ত।শ্রীনিত‍্যানন্দের প্রতি মহাপ্রভুর কঠোর আদেশের কথা স্মরণ করে শ্রীমতী বক্ষে করাঘাত করে উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করতে লাগলেন, তখন কেউই তাঁকে নিবারণ করতে পারলেন না।কেউ কিছু বললেই বিষ্ণুপ্রিয়া কাতর কন্ঠে আক্ষেপ করে বলছেন, "অভাগিনী আমি মহাপ্রভুর পত্নী হয়ে কেন জন্মগ্রহণ করলাম।যদি আমি তাঁর পত্নী না হতাম, তাঁর দর্শনে বঞ্চিত হতাম না।তিনি নদীয়া শুদ্ধ লোককে শান্তিপুরে নিয়ে যেতে অনুমতী করেছেন ; আর নিষেধ কেবল এই হতভাগিনী চিরদুঃখিনী দাসীর পক্ষে।তিনি সকলকে দয়া করলেন, কেবল বঞ্চিত হল অভাগিনী বিষ্ণুপ্রিয়া।এই হতভাগিনী তাঁর নিকট এমন কি গুরুতর অপরাধ করেছে যে, তিনি তাকে শুধু দর্শনের সুখ হতেও বঞ্চিত করলেন।অধম গ্রন্থকার রচিত দেবীর বিলাপপূর্ণ একটি পদ দেওয়া হল।*
*ওহে জগতের নাথ!*
     *জগত তারিতে এসে মোরে ছাড়িলে।*
    *অভাগী পাপিনী বলে দুখে ডারিলে।।*
        *(ডারিলে=ফেলিলে)*
       *মো সম দুঃখিনী নাই,*
       *তাই হে দিলে না ঠাঁই,*
   *দুখহারী সুশীতল চরণতলে।*
*জগত তারিতে এসে মোরে ছাড়িলে।।*
*এ দুখ কাহারে বলি তা'ত জানিনে*
   *দিবা নিশি জ্বলি তাই হৃদি-দহনে।।*
*ত্রিজগত নাথ তুমি, চরণের দাসী আমি,*
      *কি সুখ পাইলে নাথ!ঠেলি চরণে।*
     *এ দুখ কাহারে বলি তা‍'ত জিনিনে।।*
  *দয়ার সাগর কেন বলে তোমারে*
*কি দয়া দেখালে প্রভু বল আমারে।।*
*বঞ্চিত দরশনে, করিলে দাসীরে কেনে,*
 *কি পাপে এমন তাপ দিলে দাসীরে।*
*(কেন)দয়ার সাগর নাথ!বলে তোমারে।।*
*দাসীর কপালে নাথ!এ কি লিখিলে।*
*পদসেবা অধিকারে কেন বঞ্চিলে।।*
*কি সুখে বাঁচিয়া রবে,পতিপদ সেবাভাবে,*
   *তোমার চরণদাসী তা-কি ভাবিলে।।*
*দাসীর কপালে নাথ!এ কি লিখিলে।*
*শান্তিপুরে এসে নাথ!সবে ডাকিলে।*
     *দরশন দিয়ে তুমি কৃপা করিলে।।*
*নিত‍্যানন্দে নিষেধিলে,দুখিনী পাপিনী বলে,*
  *স্থান দিতে অধিনীরে চরণতলে।*
*শান্তিপুরে এসে নাথ!সবে ডাকিলে।।*
   *এ দুখ জীবনে মোর কভু যাবে না।*
*(তুমি)দেশে এসে এ দাসীরে দেখা দিলে না।।*
*না হতা'ম যদি আমি, তোমার রমণী মণি,*
   *দরশন দিতে তুমি, এ কি ছলনা*
*এ দুঃখ জীবনে মোর কভু যাবে না।।*
*উচ্চ পদ দিয়ে তুমি নিচে ফেলিলে*।
*সে কথা ভাবিয়া ভাসি আঁখি-সলিলে।।*
*কি করি জীবন ধরি,বল বল গৌরহরি,*
*কি দোষে দাসীরে তুমি পদে ঠেলিলে।*
*উচ্চ পদ দিয়ে নাথ! নিচে ফেলিলে।।*
*দেখে যাও গুণমণি হেথা আসিয়া*
*রাজরাণী ভিখারিনী সে বিষ্ণুপ্রিয়া।।*
*(শুধু)কাঁদাতে রাখিলে তারে,দুখভরা এ সংসারে,*
*দুঃখ দিলে মনোসাধে হৃদি ভরিয়া*
*দেবী দুঃখে কেঁদে মরে হরিদাসিয়া।।*
*🌻শ্রীমতীর সখিগণ এ কথার উত্তর আর কি দিবেন?সকলে মিলে মহাপ্রভুর বজ্রসম কঠিন হৃদয়ের কথা মনে করে শ্রীমতীর গলা জড়িয়ে ধরে করুণস্বরে কাঁদতে লাগলেন।শ্রীমতীর অশ্রুজলে সখীগণের সখীগণের অশ্রুজল মিশে সকলের বক্ষ ভেসে গেল,গঙ্গাসাগরে মিশিলেন,মহাপ্রভুর গৃহ সাগরসঙ্গম হল।শ্রীমতীর নয়নজলের সঙ্গে নদীয়ানাগরীগণের নয়নজল মিশে মহাতীর্থোদকে পরিণত হল।এই পবিত্র তীর্থ উদকে কলিহত জীবের সর্বপাপ ধৌত করবার জন‍্যই মহাপ্রভু ইহার সৃজন করেছিলেন।শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়ার নয়ননীরে কলি ক্লিষ্ট জীবের সর্বপাপ ধূয়ে গেল।কলির জীব সকল পাপশূন‍্য হল।মহাপ্রভুর মনোরথ পূর্ণ হল,শ্রীমতীর নয়নজল কলির জীবের পঞ্চম পুরুষার্থ। শ্রীগৌরাঙ্গলীলার এ রহস‍্য, এ রস মাধুর্য‍্য যে বুঝেছেন তিনি আজীবন কাঁদবেন,নয়নজলে তাঁর বক্ষ ভেসে যাবে ; ক্রন্দনই কলির ভজন।*
*🙌জয় গৌর জয় বিষ্ণুপ্রিয়া🙌*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
      ꧁ ১২৩. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১২৩)🙏শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙏*
*🍀শান্তিপুর হতে শচীমা গৃহে ফিরে এলেন,বিষ্ণুপ্রিয়ার বিষম বিরহ🍀*
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
            *শচীমায়ের উক্তি*
*আমার দ্বিতীয় কেহো নাহি এ সংসারে।*
*বিষ্ণুপ্রিয়া শেলমাত্র রহিল অন্তরে।।(চৈঃমঃ)*
*🌻শচীমা তিনদিন হল নিমাই-দর্শনে গিয়েছেন।শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া শাশুড়ীর আগমনপথ চেয়ে বসে আছেন, মনে মনে ভাবছেন,হয়ত পুনরায় প্রাণনাথের দর্শন পাবেন।শাশুড়ী পুত্রকে ছেড়ে কখনই আসতে পারবেন না, অবশ‍্য একবার সঙ্গে করে আনবেন।গৃহে রাখতে না পারেন, আমাকে দেখাতে তো একবার আনবেন?শাশুড়ী আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাননি ; তাতে তাঁর বড় দুঃখ।জননীর কথা প্রাণবল্লভ এড়াতে পারবেন না,তাঁকে একবার আসতেই হবে।তবে যদি না আসেন, তাহলে এ হতভাগিনী গঙ্গায় ডুবে মরবে,না হয় গরল ভক্ষণে প্রাণত‍্যাগ করবে।শ্রীমতী এইরকম মহা মানসিক উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন।এক একদিন যেন তাঁর পক্ষে কোটিযুগ বলে বোধ হতে লাগল।*
*🍀উদ্বেগে দিবস মোর হৈল কোটি যুগ।(চৈঃমঃ)*
*🌹শ্রীমতীর মনে বড় আশা এবং দৃঢ়বিশ্বাস যে শাশুড়ী তাঁর গৃহত‍্যাগী পুত্রটিকে ধরে আনবেন।একবার দেখা পেলে আর কি ছেড়ে দিতে পারবেন?শ্রীমতী এই মনের ভাবটি কারও কাছে প্রকাশ করতে পারছেন না।স্বামী সন্ন‍্যাসী হয়ে গৃহত‍্যাগ করেছেন, আবার তিনি জানেন সন্ন‍্যাসীর স্ত্রীর মুখদর্শন করতে নেই। তিনি পুনরায় গৃহে ফিরবেন,স্ত্রীকে দর্শন দেবেন একথা বিশ্বাসযোগ্য নহে, এ আশা দুরাশা মাত্র।একথা কারও কাছে বলবারও নয়,তবে প্রধানা সখী কাঞ্চনার নিকট তিনি কখনও কোন কথা বা মনের ভাব গোপন করেননি।শ্রীমতী কাঞ্চনাকে অতি গোপনে এই মনের ভাবটি, অন্তরের এই অতি গুহ‍্য কথাটি বললেন।কাঞ্চনা শুনে বুঝলেন,শ্রীমতীর বিরহ অতীব ভীষণ ; গৌরবিরহ-ব‍্যাধি অতি উৎকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।কাঞ্চনা সখীকে প্রবোধ বাক‍্যে তুষ্ট করে বললেন, সখী!তুমি ঠিক বলেছ। তোমার শাশুড়ী কখনই পুত্রকে ছেড়ে আসতে পারবেন না, হয় তিনি তোমার প্রাণনাথকে নিয়ে আসবেন, না হয় তিনি তাঁর সঙ্গে যাবেন।সখির কথায় বিষ্ণুপ্রিয়ার মনে কিছু আশার সঞ্চার হল বটে, কিন্তু তাঁর মনের মধ্যে তখন আর এক ভাবের উদয় হল, তিনি ভাবলেন, স্বামী তো গৃহত‍্যাগী হয়েছেন,তাঁর গৃহে ফিরবার আশা অতি অল্প, আবার এর উপর যদি শাশুড়ী পুত্রের সঙ্গে গৃহত‍্যাগিনী হন, তাহলে তাঁর মরণ অবশ্যই।বিষ্ণুপ্রিয়া এইরকম ভাবছেন,এই সময়ে সংবাদ এলো, শচীমা শান্তিপুর হতে একাকী ফিরে আসিলেন।তাঁর সঙ্গে নিমাইচাঁদ আসেন নাই।শ্রীমতী আরও শুনলেন, তার শাশুড়ী পুত্রটিকে জনমের মত বিদায় দিয়ে এসেছেন, পুত্রের ধর্মনাশ ভয়ে তিনি তা করেননি।শ্রীমতীর সকল আশা ভরসা একেবারে ভস্মীভূত হয়ে গেল।মস্তকে আকাশ ভেঙ্গে পড়ল, নয়নে অন্ধকার দেখতে লাগলেন,এইসময় শচীমায়ের দোলা দুয়ারে এসে দাঁড়াল।উচ্চৈঃস্বরে কাঁদতে কাঁদতে শচীমা দোলা হতে নেমে এলেন।শ্রীমতীর কানে শাশুড়ীর করুণ রোদনের রোল প্রবেশ করিবামাত্র তিনি মূর্ছিতা হয়ে পড়লেন।*
*🙏জয় নিতাই গৌর হরিবোল🙏*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
      ꧁ ১২৪. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১২৪)🙌শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙌*
*🍀শান্তিপুর হতে শচীমা গৃহে ফিরে এলেন,শ্রীমতীর বিষম বিরহ🍀*
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
*🌻শচীদেবীর সঙ্গে অনেক কুলনারীগণ এসেছেন।মালিনীদেবী ও শচীমার ভগ্নীও এসেছেন,তাঁরা বৃদ্ধা শচীমাকে হাত ধরে উঠিয়ে গৃহে তুললেন।শ্রীমতীর সখীগণ অতি কষ্টে বিষ্ণুপ্রিয়ার মূর্ছা অপনোদন(খন্ডন) করলেন।শ্রীমতীর চৈতন‍্যসম্পাদন হলে শাশুড়ী ও পুত্রবধূর চারচক্ষের মিলন হল,নয়নের দরদর বারিধারায় উভয়ের বক্ষ ভেসে গেল।উভয়েরই বাকশক্তি রহিত ; শচীমা শ্রীমতীকে কোলে নিয়ে বসলেন,তিনি মরার মত শাশুড়ীর কোলে পড়ে রইলেন।*
*🍀শচীদেবী কান্দে কোলে করি বিষ্ণুপ্রিয়া।*
*🍀বিষ্ণুপ্রিয়া মরা যেন রহিল পড়িয়া।।(চৈঃমঃ)*
*🌻শচীমা পুত্রকে স্বচ্ছন্দে বিদায় দিয়ে এসেছেন। তিনি যদি একটিবার বলতেন,বাপ নিমাই!তোকে গৃহে ফিরতে হবে,মাতৃভক্ত নিমাইচাঁদ জননীর অনুরোধ এড়াতে পারতেন না।লোকে বলছে,নিমাই,অদ্বৈতাচার্য‍্যের ভবনে সকলের সামনে বলেছিলেন, "মা যা বলবেন" আমি তাইই করব,এমন কি যদি তিনি পুনরায় সংসারে প্রবেশ করতে বলেন,তাই করব।শচীদেবী পুত্রের ধর্মনাশ হবে,এই ভয়ে এ কথার উত্তর দিতে পারেন নাই।মৌনী থেকে সম্মতি লক্ষণ দেখিয়ে ছিলেন।তাঁর স্বামী জগন্নাথ মিশ্রও বিশ্বরূপকে সন্ন‍্যাসাশ্রম হতে ফিরিয়ে আনবার কথা হলে সকলকে এই কথায় বলতেন।শচীদেবীর মনে সেই সাধু পুরুষের বাক‍্য জাগরিত ছিল।তাই তিনি তাঁর নিমাইচাঁদকে গৃহে ফিরিয়ে আসতে অনুরোধ করে পুত্রের ধর্মনাশের পাপের ভাগী হলেন না।নবদ্বীপে অবুঝ লোক এই বিষয় নিয়ে নানাকথা বলছেন।মহাপ্রভুর ভক্তগণও কেউ কেউ শচীমায়ের কার্য‍্যে ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ হয়েছেন।মহাপ্রভুকে নীলাচলে গমন করতে শচীমা আদেশ দিয়েছেন।শচীমা যদি তাঁকে গৃহে ফিরতে বলতেন, অবশ্যই মহাপ্রভু নবদ্বীপে আবার আসতেন,নদীয়ার চাঁদ নবদ্বীপে ফিরে এসে নদীয়াবাসীর আঁধার হৃদয় পুনরায় আলোকিত করতেন।কারণ, ভক্তগণ বিশেষরূপে জানতেন যে, মাতৃ-আজ্ঞা মহাপ্রভু লঙ্ঘন করতে পারবেন না।তাই তাঁরা অতীব দুঃখের সঙ্গে সেই সময়ে শচীমাকে বলেছিলেন=*
*🍀হেন বাক‍্য কেন মাতা কহিলে আপনে।*
*🍀শ্রুতিবাক‍্য সম ইহা খন্ড কোন জনে।।*
*🍀নীলাচলে যাইতে আপনে আজ্ঞা দিলে।*
*🍀দুর্লঙ্ঘ‍্য তোমার বাক‍্য কেন বা কহিলে।।*
                  *(শ্রীচন্দ্রোদয় নাটক)*
*🙏জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্যের জয়🙏*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
      ꧁ ১২৫. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১২৫)🙌শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙌*
*🍀শান্তিপুর হতে শচীমা গৃহে ফিরে এলেন,শ্রীমতীর বিষম বিরহ🍀*
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
*🌻ক্রমে একথা শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়ার কর্ণে গেল।শ্রীমতী প্রথমতঃ বিশ্বাস করতে চাইলেন না।বিষ্ণুপ্রিয়া ভাবলেন,একি কখনও হতে পারে?একি সম্ভব?মা হয়ে পুত্রকে কি কখনও কেউ এইরকম ভাবে বিদায় দিতে পারে? এ অসম্ভব কথা। লোকে মিথ‍্যা একটা জনরব তুলেছে মাত্র।বিষ্ণুপ্রিয়া মনে মনে স্থির করলেন, শাশুড়ীকে একবার জিজ্ঞাসা করে দেখি না কেন।আবার ভাবলেন,না,তা ঠিক নয়।একথা তুললে শোকাচ্ছন্না বৃদ্ধা শাশুড়ী প্রাণে নিদারুণ আঘাত লাগবে, তিনি মনে বিশেষ কষ্ট পাবেন, না, একথাষতাঁর নিকট বলা হবে না।এই সাত-পাঁচ ভেবে শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী শাশুড়ীকে এ সম্বন্ধে কিছুই জিজ্ঞাসা করলেন না।শ্রীমতী বড় বুদ্ধিমতীর কাজ করলেন।এই যে জননীর সম্মতি নিয়ে মহাপ্রভু নীলাচলে চললেন,সকলের সমক্ষে জননীর সম্মান রেখে বললেন,তুমি যদি পুনরায় গৃহে বল,তাহাই করব,এটি মহাপ্রভুর বিচিত্র লীলা।লোকশিক্ষার জন্য জননীর কর্তব‍্য কি তা দেখালেন।শ্রীকৃষ্ণ-ভজনের জন্য তিনি গৃহত‍্যাগী হয়েছেন,জীবমাত্রেই কৃষ্ণদাস।মহাপ্রভুর জননীও একটি জীব।শ্রীভগবানের সংসারে দাসত্ব করতে জীবের জন্ম।সংসার মায়ার বন্ধন মাত্র।শ্রীকৃষ্ণ-ভজন জীবের মুখ‍্য লক্ষ্য।জীব এই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ভবসাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে।মহাপ্রভু জননীকে লক্ষ্য-ভ্রষ্ট হতে দেখে সাবধান করে দিলেন,পুত্রের উপযুক্ত কাজ করলেন।পুত্রকে শ্রীকৃষ্ণভজনে বাধা না দিয়ে শচীমা জননীর উপযুক্ত কাজ করলেন।মহাপ্রভুর  জননী কি সামান্য নারীর মতো ধর্মবিরুদ্ধ কাজ করতে পারেন? শ্রীগৌরভগবানের জননী আদর্শ জননীর কাজ করেছেন।শ্রীগৌরাঙ্গলীলা-রস-লোলুপ কৃপাময় পাঠক, পাঠিকাগণ!শচীমায়ের কার্য‍্যে দোষারোপ করে পাপের ভাগী হবেন না। শচীদেবী জগন্মাতা,তাঁর কার্য‍্যে কটাক্ষ করলে নিরয়গামী (নরকগামী) হতে হবে।*
*🌺শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর মনে যে ভাবটি উদয় হয়েছিল, মহাপ্রভুর কোন কোন ভক্তও সেই ভাবটি হৃদয়ে পোষণ করেছিলেন।শ্রীমতীর মনের  ভাব মুখে প্রকাশ পায়নি,মনে হওয়া মাত্রই তাকে মন থেকে দূর করে দিয়েছিলেন।ভক্তগণের মধ্যে কেউ কেউ সেই সময়ে শচীমায়ের প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করেছিলেন।শচীমা স্থির সঙ্কল্প হয়ে সর্বসমক্ষে পুত্রকে বিদায় দিলেন।পুত্রকে গৃহে নিয়ে আসিলে পুত্রের ধর্মনাশ হবে, একাজ শ্রীভগবানের জননী কি করে করবেন।শচীমায়ের কার্য‍্য দেখে সকলেই বিস্মিত হলেন। কিন্তু শচীদেবীর সংকল্প অটল ও স্থির।এমন জননী না হলে তাঁর গর্ভে শ্রীগৌরভগবান জন্ম নিবেন কেন?*
*🙌জয় শ্রীমন্মহাপ্রভুর জয়🙌*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
  ꧁ ১২৬. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১২৬)🙌শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙌*
*😭😭শ্রীমতীর বিষম বিরহ😭😭*
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*🌻শান্তিপুর হতে বিদায় নেবার সময় শ্রীগৌরহরি সকলের সমক্ষে বলেছিলেন=*
*🍀কিবা ভক্ত কিবা বিষ্ণুপ্রিয়া মাতা শচী।*
*🍀যে ভজয়ে কৃষ্ণ তার কোলে আমি আছি।।চৈঃমঃ।।*
*🌺মহাপ্রভুর কেষ্ণন্রেম অতুলনীয়। তিনি কৃষ্ণপ্রেমে উন্মত্ত হয়ে দেশে দেশে ভ্রমণ করেছেন। "হা কৃষ্ণ! হা কৃষ্ণ! কৃষ্ণরে!কৃষ্ণরে!বলে অঝোর নয়নে কেঁদে আকুল হয়ে দ্বারে দ্বারে (দুয়ারে দুয়ারে) ভিখারীর মতো ভ্রমণ করেছেন।যিনি একটি বার তাঁর প্রাণেশ্বর হৃদয় রতন শ্রীকৃষ্ণের নাম নিয়েছেন,মহাপ্রভুতাঁকে প্রাণ ভরে আলিঙ্গন দিয়ে কৃতকৃতার্থ করেছেন।মহাপ্রভুর উক্ত বাণী প্রত‍্যেক গৌরভক্তের কন্ঠের হার করে রাখা কর্তব‍্য।সুবর্ণ অক্ষরে হৃদয়-ফলকে দৃঢ়াঙ্কিত করে রাখা কর্তব‍্য।এমন দয়াল ভক্তবৎসল প্রভুর কৃপাবাণী আর কোথাও শ্রবণ করতে পাবেন না।শ্রীশচীমা পুত্রের বাক‍্যে ভরসা করেই তাঁকে বিদায় দিতে পেরেছিলেন।শচীমা নবদ্বীপে ফিরে এসে পুত্রবধূকে নিয়ে শ্রীকৃষ্ণভজন কঠোর ব্রত গ্রহণ করলেন।শ্রীকৃষ্ণভজন উপলক্ষ্য করে শচীমা পুত্র-ভজন করতে লাগলেন।বাৎসল‍্যরসে অভিষিক্ত হয়ে তিনি শ্রীভগবানকে পুত্ররূপে গ্রহণ করে স্নেহ মমতার নয়নে দর্শন করছেন। তিনি যখনই শ্রীকৃষ্ণকে ডাকেন,তাঁর মুখে পুত্রের নাম এসে পড়ে। হা নিমাই!নিমাইরে!এই ডাকেই তিনি ভগবানকে ডাকেন বা আহ্বান করেন।আর শ্রীভগবান্ সেই মধুর ডাকেই মহানন্দে তাঁর নিকট এসে "মা!মা!বলে মধুর সম্ভাষণে জননীকে পরিতুষ্ট করেন,তাঁকে দেখা দেন।(শ্রীহরিনামামৃত সিন্ধু পর্বগুলি যদি মনোযোগ দিয়ে অধ‍্যয়ন করেন তাহলে বুঝতে পারবেন,"নাম আর নামী অভেদ" আবার নামীর থেকে নাম বড়)।যাইহোক, সুতরাং শচীদেবীর দুঃখ-সমুদ্রের মধ্যেও কখনও কখনও সুখের তরঙ্গ লক্ষিত হয়।নিরানন্দের ভিতরেও আনন্দ অনুভূত হয়।ঘোর নিরাশার ছায়ার ভিতরেও আশার আলোক দেখা যায়। এই সুখ টুকু,এই আশাটুকু না থাকলে শচীমা প্রাণে বাঁচতেন না।এত দুঃখেও বৃদ্ধা মা আমার সুখী,সে সুখ অন‍্য কেউ বুঝতে পারেন না।তিনি যখনই "বাপ নিমাই" বলে পুত্রকে আহ্বান করতেন,শ্রীগৌর ভগবান তখনই জননীর সম্মুখে এসে উপস্থিত হন,মিষ্টি মধুর স্বরে তাঁকে মা বলে সম্বোধন করেন।শচীমায়ের মনে আছে নিমাই তাঁকে বলে গিয়েছেন, "অনুরাগে" তাঁকে ডাকলেই তিনি আসিবেন।"বিরহে অনুরাগ বৃদ্ধি হয়"।নিমাইচাঁদ যখন গৃহে ছিলেন,শচীমা নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমোতে পারতেন। এখন নিমাই গৃহে নেই,দেশে দেশে ভ্রমণ করছেন,কত বিপদ-আপদ তাঁর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।মায়ের মনে এই কথা উদয় হলেই প্রাণ শুকিয়ে যায়।*
*🙏জয় জয় শচীমা শ্রীমতীর জয়🙏*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
  ꧁ ১২৭. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১২৭)🙏শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙏*
*🌻🌻শ্রীমতীর বিষম বিরহ🌻🌻*
•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
*🌼পুত্রের বিরহে শচীমায়ের পুত্রের প্রতি অনুরাগ শতগুণ বর্ধিত হয়েছে।নিমাইচাঁদকে যখন তিনি সর্বদা দেখতে পেতেন, তখন এত অনুরাগ ছিল না।এক্ষণে পুত্রের অদর্শনে পুত্রের গুণানুকীর্তন করতে করতে বৃদ্ধা জননী যেন আত্মহারা হয়ে পড়েন।শ্রীকৃষ্ণ-কীর্তন-তরঙ্গে ডুবলে জীবের সর্বদুঃখ নাশ হয়।শচীমা পুত্র-গুণ-রূপ-কীর্তন-রস-সুধাপানে উন্মত্তা হয়েছেন।দিবানিশি শ্রীগৌর-কথায় প্রাণ শীতল করছেন,পুত্র ভজনই শচীমায়ের শ্রীকৃষ্ণভজন।এই তাঁর শ্রেষ্ঠ সাধনা, এই সাধনার ফল অবশ্যই ফলবে।শচীমা এক্ষণে কথঞ্চিৎ সুস্থিরা হয়েছেন।শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীকে সঙ্গে করে ঈশানের সঙ্গে গঙ্গাস্নানে যান।গৃহদেবতার পূজার জন্য পুষ্পচয়ন করেন।ঠাকুরের ভেগের জন্য পূর্বের মত নানাবিধ অন্নব‍্যঞ্জন পাক করেন।নিমাইয়ের মঙ্গলের জন্য নিত‍্য  ঠাকুরের সামনে বসে করজোড়ে প্রার্থনা করেন।পুত্র যে যে দ্রব‍্য আহার করতে ভাল বাসতেন,সেই সেই দ্রব‍্যাদি আহোরণ করে ঠাকুরের ভোগ দিতেন।মহাপ্রভুর ভক্তবৃন্দকে প্রসাদ বিতরণ করেন।এইভাবে শচী ঠাকুরাণীর দিন অতিবাহিত হচ্ছে।*
*🌹কৃপাময় পাঠক-পাঠিকা! শচীদেবীকে আপাতত এই স্থানে রেখে একবার শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর নিকটে চলুন।শচীমায়ের শান্তিপুর হতে ফিরে আসার দিনে শ্রীমতীকে মরার মত শাশুড়ীর কোলে শয়ান দেখিয়েছিলেন।শ্রীগৌর-বক্ষ বিলাসিনী স্বামীসোহাগিনী বিরহ বিধুরা দুঃখিনী শোকে দুঃখে অতিশয় শীর্ণা হয়েছেন।সর্বদাই শচীমার সঙ্গে সঙ্গে থাকেন।পাছে শচীমা মনঃকষ্ট পান, সেই জন্য আর উচ্চৈঃস্বরে ক্রন্দন করেন না, কিন্তু মনের মধ্যে শ্রীমতীর বিন্দুমাত্র সোয়াস্তি নেই।শ্রীগৌর-বিরহাগুনে তাঁর হৃদয় সর্বদা দহিছে,সে অগ্নি আর নির্বাপিত হবার নয়।বিষ্ণুপ্রিয়া মনে মনে স্থির করলেন, তিনি আয়তির লক্ষণ সবকিছুই আর রাখবেন না।কারণ তিনি এক্ষণে চিরজীবনের মতো স্বামী-সঙ্গ-সুখে বঞ্চিতা এবং কাজে কাজেই সধবা হয়েও বিধবা।তাঁর আর বস্ত্রালঙ্কারে প্রয়োজন কী? কঠোর ব্রহ্মচর্য‍্যব্রত এক্ষণে তাঁর পালনীয়।কারণ তাঁর প্রাণনাথ গৃহত‍্যাগী হয়েছেন,দন্ড-কমন্ডলু ধারণ করে সন্ন‍্যাসী হয়েছেন।ভিক্ষালব্ধে সামান্য দ্রব‍্যে তিনি জীবন করছেন।বৃক্ষতলে তাঁর বাস,কৌপীন ও কন্থা তাঁর সম্বল।দীন দুঃখীর মতো শীত, গ্রীষ্ম রৌদ্রে তিনি দেশে দেশে পদব্রজে ভ্রমণ করে কতই না দুঃখ ভোগ করছেন।তাঁর প্রাণবল্লভের শিরীষকুসুমের মত সুকোমল চরণ দুখানিতে,যাতে তিনি ব‍্যথা লাগবার ভয়ে সাত দিতে সাহস করতেন না, এক্ষণে তাতে কতই না আঘাত লাগছে।*
     *🍀কেমনে হাঁটিয়া যাবে পথে।*
*🍀শিরীষ কুসুম যেন,সুকোমল চরণ,*
       *পরশিতে ডর লাগে হাথে।।*
                                 *(শ্রীচৈঃমঃ)*
*🌻তাঁর দাসী কি না বস্ত্রালঙ্কার পরিধান করে দিব‍্য শয‍্যায় শয়ন, দিব‍্য আহার ভোজন করবে?এ কাজ তো শাস্ত্রানুমোদিত নহে।শ্রীমতী মনে মনে এইরকম ভাবছেন আর প্রাণনাথের সন্ন‍্যাসবেশ স্মরণ করে অঝোর নয়নে কাঁদছেন।নিজেকে শত শত ধিক্কার দিচ্ছেন।আর কপালে করাঘাত করে মনে মনে বলছেন,"প্রভু"!এই হতভাগিনী পাপিনীর জন‍্যই গৃহত‍্যাগী হয়েছেন।ধিক্ এ জীবনে।এ পাপ জীবন রেখে ফল কী? আমি কোন মুখে আমার বস্ত্রালঙ্কার পরিধান করব।শ্রীমতী মনে মনে এইরকম আন্দোলন করছেন,এই সময়ে কে যেন তাঁর কর্ণে বলে দিল=*
*তোমার অঙ্গের শাটী পরা,*
*তার কৌপীন পরিধান,*
*তুমি থাক গৃহ মাঝে।*
*শীত গ্রীষ্ম রৌদ্রে সে যে,*
*নিশিদিন প্রভুর আমার,*
*বৃক্ষ তলে অবস্থান।।(বলরাম দাস)*
*শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া ভূমিশয‍্যায় শয়ন করেছিলেন,উঠে বসলেন।গৃহে আর কেউ নেই।তিনি একাকিনী আছেন।একে একে অঙ্গের আভরণগুলি সমস্ত খুলে ফেললেন।শ্রীঅঙ্গে ভস্ম মাখলেন,হাতের কঙ্কণ দু'গাছি কেবল খুলতে পারলেন না।বিষ্ণুপ্রিয়ার মনে ভয় হল,প্রাণবল্লভের অকল‍্যাণ হবে, বৃদ্ধা শাশুড়ির মনে দারুণ ব‍্যথা লাগবে।পরিধানের পট্টবস্ত্রখানি খুলে একখানি গৈরিক(গেরুয়া) বস্ত্রে সর্বাঙ্গ আচ্ছাদন করে ধূলিশয‍্যায় পুনরায় শয়ন করলেন।অতুলিত কেশদাম রুক্ষ ও আলুলায়িত ভাবে ভূমিতে লুন্ঠিত হচ্ছে।শ্রীমতী সন্ন‍্যাসিনী সেজেছেন। স্বামী সন্ন‍্যাসী হলে স্ত্রীর কি কি নিয়ম করতে হয়,তা দেবী জানেন না।কি আহার করা উচিত, কি পরিধান করা উচিত,কাকেই বা জিজ্ঞাসা করবেন।এ সমস্ত কথা শচীমাকে বলা যাবে না, বলতেও পারবেন না।এ সকল কথা তাঁর নিকট বললেই তিনি দুঃখে ও শোকে হয়ত মরে যাবেন।শ্রীমতী এক একবার মনে করছেন,কাকে দিয়েই বা প্রভুর নিকট হতে এ সকল বিষয়ের মীমাংসা করিয়ে নিব? তিনি ভিন্ন এ বিষম সমস‍্যার মীমাংসা অন‍্য কেউ করতে পারবে না।*
*🙌জয় বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীর জয়🙌*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
  ꧁ ১২৮. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১২৮)🙏শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙏*
*🌻🌻শ্রীমতীর বিষম বিরহ🌻🌻*
^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*🌹কে গিয়ে মহাপ্রভুর নিকট শ্রীমতীর এই আবেদনটি করবেন,কার উপর এই অত‍্যাবশ‍্যকীয় গুরুতর বিষয়ের ভার অর্পণ করবেন,কাকে এই মনের গুহ‍্য কথাটি বিশ্বাস করে বলবেন, এই চিন্তাতে শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়ার মন বড়ই অস্থির হয়ে উঠিল। তিনি ভূমিশয়নে ছিলেন উঠে বসলেন।কোন গ্রন্থে দেখেন নাই, কিন্তু জনশ্রুতি আছে,শ্রীমতীর এই মনের ভাবটি মহাপ্রভুকে পত্রের দ্বারা জানিয়েছিলেন।এই জনশ্রুতি অবলম্বন করে গোলোকগত মহাত্ম‍্যা শ্রীশিশির বাবু বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর উক্তি একটি অতি সুন্দর পদ রচনা করেছিলেন,সেই মধুময় সুললিত পদটির কিয়দংশ এ স্থলে উদ্ধৃত হল=*
*সন্ন‍্যাসী ঘরণীর নিয়ম কিছুই না জানি।*
*কি খাইব কি পরিব লিখিবে আপনি।।*
*হাতের কঙ্কণ ফেলিবারে হলো ভয়।*
*পাছে বা তোমার কিছু অমঙ্গল হয়।।*
*তোমার পাটের জোড় গলার চাদর।*
*তোমার গলার হার চরণ নূপুর।।*
*কি করিব এ সকল সামগ্রী লইয়া।*
*রাখিব কি,গঙ্গা মাঝে দিব ভাসাইয়া।।*
*এ সব বারতা আমি কাহারে সুধাই।*
*মাকে সুধাইলে মরি যাবেন নিশ্চয়।।*
*মার কাছে থাকে যদি বড় ভাল হয়।*
*আমি কাছে না যাইব না করিহ ভয়।।*
*তা হ'লে সে শান্ত হবে দুঃখিনী জননী।*
*তাঁরে বলে দিও নিয়ম কি পালিব আমি।।*
*আপনি যে সব তুমি নিয়ম পালিবে।*
*তা' হতে কঠোর নিয়ম এ দাসীরে দিবে।।*
*বাঁচিব ত‍্যজিয়া আমি ভূষণ ভোজন।*
*সুখেতে করিব আমি মাটিতে শয়ন।।*
*লোকে বলে তুমি নাকি আমার লাগিয়া।*
*গার্হস্থ‍্য ছাড়িয়া গেলে সন্ন‍্যাসী হইয়া।।*
*কেন আমি তোমার কি করিলাম ক্ষতি।*
*কোন দিন সংকীর্তনে করেছি আপত্তি।।*
*আছাড়ে তোমার সর্ব অঙ্গে লাগে ব‍্যথা।*
*বল দেখি কোন দিন কহিয়াছি কথা।।*
*খাট হ'তে ভূমে গড়াগড়ি দিতে তুমি।*
*বল কোন দিন রাগ করিয়াছি আমি।।*
*পাষাণ গলিত তোমার করুণ রোদনে।*
*মোর দুঃখ রাখিতাম আপনার মনে।।*
*আমারে দেখিলে যদি ধর্ম নষ্ট হয়*।
*আমি নহে রহিতাম বাপের আলয়।।*
*🌻পূর্বে বলেছি,শ্রীমতী একাকিনী গৃহে আছেন।শচীমা অন‍্য গৃহে ঠাকুরের সেবায় ব‍্যস্ত আছেন। কাঞ্চনা কিছুক্ষণের জন্য নিজ কার্য‍্যে গিয়েছেন, গৃহ নির্জন দেখে শ্রীমতী মনের সাধে সন্ন‍্যাসিনী সেজেছেন, সন্ন‍্যাসিনী সেজে শ্রীমতী আর কাঁদছেন না। দৃঢ়ব্রত হয়ে ভূমিশয‍্যা হতে উঠে বসে মহাপ্রভুর শ্রীচরণধ‍্যানে মগ্না আছেন। এমত সময়ে কাঞ্চনা এসে শ্রীমতীর গৃহে প্রবেশ করলেন।শ্রীমতীর বেশ পরিবর্তন দেখে ভীত চকিতনয়নে একদৃষ্টে তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন,আশ্চর্য‍্য! বিষ্ণুপ্রিয়ার নয়নে জলবিন্দুও নেই, এ কি নব রূপ?এইটি নূতন দৃশ্য।*
*🙌জয় শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়ার জয়🙌*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
  ꧁ ১২৯. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১২৯)🙏শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙏*
*🌻🌻শ্রীমতীর বিষম বিরহ🌻🌻*
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
*🌺কাঞ্চনা আরও বলেছেন, প্রভুর গৃহত‍্যাগ অবধি বিষ্ণুপ্রিয়ার নয়নের জল শুকায়নি,এ পর্যন্ত কেউ কখন শ্রীমতীর শুকনো নয়ন দেখেননি।শ্রাবণের বারিধারার মত বিষ্ণুপ্রিয়ার নয়নের জল দেখা গিয়েছিল, এমন কি, নিদ্রিত অবস্থায়তেও তাঁর নয়নজলে অঙ্গের বসন ও বালিস ভিজে যেত।এইরকম অবস্থায় কাঞ্চনা শ্রীমতীর নয়নে জলবিন্দু না দেখে ভীতা হলেন।শচীদেবীর এইরকম অবস্থা মাঝে মধ্যে হত।সকলে দেখেছেন,শচীমা মধ্যে মধ্যে আকাট(কাষ্ঠ বা কাঠ) হয়ে পাগলিনীর মতো একদৃষ্টে কার পানে তাকিয়ে আছেন, মুখে কথাবার্তা নেই,এতে কারও মনে তত ভয় হত না। কিন্তু বিষ্ণুপ্রিয়ার নয়নে জল নাই,নিষ্পন্দ ভাবে বসে বসে কি ভাবছেন।চক্ষের পলক কদাচিত কখনও কখনও পড়ছে,মুখের ভাবে উন্মাদ-লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।কাজেই কাঞ্চনা শঙ্কিতা হলেন, তিনি শ্রীমতীকে কিছু না বলে,তাঁর অঙ্গ স্পর্শ করে একেবারে শচীমায়ের নিকট দৌড়িয়ে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, "মাগো! একবার তোমার পুত্রবধূকে দেখে এসো।সে চুপ করে বসে আছে মুখে কথা নেই,নয়নে জল নাই, আকাট হয়ে তাকিয়ে আছে,যেন পাগলিনী।বস্ত্র-অলঙ্কার সব খুলে ফেলেছে, সর্বাঙ্গে ভস্ম মেখেছে।শচীমা বুদ্ধিমতী,তিনি সবকিছু বুঝলেন, অধৈর্য‍্য হলেন না।তাঁর নিজের অবস্থা মনে পড়িল, বৃদ্ধার কোটরাগত দৃষ্টিহীন দুটি চক্ষু জলে ভরে উঠিল।অতি কষ্টে মনের দুঃখ চেপে ধীরে ধীরে কাঞ্চনার হাত ধরে বিষ্ণুপ্রিয়ার ঘরে চললেন।শচীমা শ্রীমতীকে দেখেই তাঁর প্রকৃত অবস্থা বুঝতে পারলেন।উন্মাদের লক্ষণগুলি স্পষ্টই দেখতে পেলেন।পূর্বে শচীমাকে দেখলেই বিষ্ণুপ্রিয়া মাথায় ঘোমটা দিতেন, এখন তা দিলেন না।শ্রীমতী মাথার কাপড় ফেলে বসে আছেন।শচীমাকে দেখে মস্তকের কাপড় উঠালেন না।একদৃষ্টে শচীমায়ের মুখের পানে তাকিয়ে আছেন।শচীমা আর স্থির থাকতে পারলেন না, তিনি পুত্রবধূকে কোলে করে সেইখানেই বসে পড়লেন।অতি কষ্টে হৃদয়াবেগ সংবরণ করে তিনি পুত্রবধূকে আদর করে বললেন,"মা! তুমি অমন করছ কেন?তুমি তো মা!অবুঝ মেয়ে নও। তোমার স্বামী জগতের জীবের মঙ্গলের জন্য আমাদের কাঁদিয়ে গৃহত‍্যাগী হয়েছেন, আমাদের নয়নজলে কলিহত জীবের সর্বপাপ ধৌত হবে,জীবোদ্ধার হবে, ইহাই সেই ইচ্ছাময়ের ইচ্ছে।তাঁর ইচ্ছায় বাঁধা দিও না মা!তুমি প্রাণ ভরে কাঁদ, আমিও তোমার সঙ্গে কাঁদি।তাতেই আমরা সুখ পাব মা!তাতেই আমাদের সকল দুঃখ দূর হবে,আর জগতের মঙ্গল হবে,রোদনই আমাদের ভজন, এ ভজন তুমি কেন ছাড়লে মা?*
*🌻শচীমায়ের মুখ হতে যখন এই কথাগুলি বাহির হচ্ছিল, তখন তাঁর মুখেরভাব দিব‍্য জ‍্যোতিপূর্ণ বোধ হচ্ছিল।জগন্মাতা শচীদেবী জগজ্জীবের মঙ্গল-কামনায় অঞ্চলের নিধিকে বিসর্জন দিয়েছেন। নিঃস্বার্থ পরতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন।এমন উপদেশপূর্ণ হিতকর কথা তার মুখেই শোভা পায়।পুত্রবধূর উন্মাদের লক্ষণ দেখেও শচীমা নিজ কর্তব‍্য ভুললেন না।ভুবনমঙ্গল শ্রীগৌরাঙ্গজননী জগৎ জীবের মঙ্গলের জন্য,জীব উদ্ধারের জন্য বদ্ধপরিকর হয়েছেন।এ দৃশ্য অতি মহান্ অতি পবিত্র।*
*🙌জয় জয় শচীমা শ্রীমতীর জয়🙌*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
  ꧁ ১৩০. শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
 *(১৩০)🙏শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়াদেবী🙏*
*🌻🌻শ্রীমতীর বিষম বিরহ🌻🌻*
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
*🌼 গভীর তত্ত্বোপদেশপূর্ণ প্রবোধ বাক‍্য শ্রীমতীর কর্ণে প্রবেশ করল কি না, জানি না।তবে যতক্ষণ শচীমা এই কথাগুলি বললেন,শ্রীমতী স্থিরভাবে মনোযোগের সহিত শুনলেন।শাশুড়ীর মুখ পানে তাকিয়ে আছেন।যেই শচীমায়ের কথা শেষ হল, অমনি শ্রীমতী মূর্ছিতা হয়ে পড়লেন।তখন কাঞ্চনা প্রভৃতি সখিগণ মিলে শ্রীমতীর কর্ণের কাছে তাঁর প্রাণবল্লভের নাম করতে লাগলেন।শচীদেবীও এই নামকীর্তনে যোগ দিলেন।সকলের মুখেই হা গৌরাঙ্গ! হা গৌরাঙ্গ! ধ্বনি ভিন্ন আর কিছুই নাই।শ্রীমতীর কর্ণে শ্রীগৌরনাম প্রবেশ করিবামাত্র তাঁর মূর্ছা ভঙ্গ হল।*
*🍀গৌরাঙ্গ গৌরাঙ্গ বলি ডাকে তাঁর কানে।*
*কথোক্ষণে বিষ্ণুপ্রিয়া পাইল চেতনে।।চৈঃমঃ।*
*🌻এ রোগের এই ঔষধ, রোগের উপযুক্ত ঔষধ পড়লেই তার উপশম হয়। গৌর-বিরহ-ব‍্যাধির গৌরনামই মহৌষধি।এ ব‍্যাধির চিকিৎসক শ্রীমতীর মরমী সখীবৃন্দ।তাঁরা নদীয়ার নাগরী,শ্রীগৌরাঙ্গ তাঁদের ভজনধন, ব্রজের সখি এবং নদীয়া নাগরীতে কোন প্রভেদ নেই,শ্রীধাম নবদ্বীপ গৌর-ব্রজভূমি-- নব বৃন্দাবন।শচীনন্দন আর নন্দনন্দন একই বস্তু। একটি পদে একদিন মনের সাধে লিখেছিলেন।*
*নব বৃন্দাবন, নবদ্বীপ ধাম,*
            *নন্দনন্দন গোরা।*
*ইথে যার হয়, সংশয় মনেতে,*
        *হৃদি তার দুঃখে ভরা।।*
*🌻একথা ঠিক,সংশয় ও কুতর্কের বশীভূত হয়ে যাঁরা শ্রীগৌরভগবানকে ও তাঁর ভগবত্তাকে বিচার ও তর্কের মধ্যে টেনে আনতে বৃথা প্রয়াস পান,তাঁদের প্রতি এ জীবাধমের করজোড়ে নিবেদন, কুতর্ক ত‍্যাগ করে এবং সমস্ত সংশয় হৃদয় হতে দূরীভূত করে প্রকৃত অনুরাগ সহকারে আমার হৃদিদেবতা কাঙালের ঠাকুর দয়াল প্রাণগৌরকে একটিবার যেন প্রাণ খুলে ডেকে দেখুন।দেখবেন,সেই সর্বদুঃখহারী,মঙ্গলময় কলিকষ্ট জীবপরিত্রাতা, শ্রীগৌরগোবিন্দ আপনিই সমস্ত সংশয় দূর করে দিয়ে স্বরূপ দেখাবেন।মোহান্ধ জীব!ঐ দেখ সেই চিরদয়াল অনাথশরণ পতিতপাবন গৌরহরি তোমাদের জন্য ব‍্যাকুল হয়ে দ্বারে দ্বারে কেঁদে বেড়াচ্ছেন।কলিহত জীবের দুঃখ দেখে শ্রীগৌর ভগবানের কুসুমকোমল হৃদয় বিগলিত হয়েছে। ঐ দেখ শ্রীগৌরাঙ্গসুন্দর বাহু বাড়িয়ে তোমাদের প্রেমআলিঙ্গন দিতে চাইছেন।হরিনামরূপ অমৃতভান্ড মহাপ্রভুর হাতে,তিনি বিলাতে বসেছেন, এই অমৃত পান করতে কারও নিষেধ নাই। এস ভাই!সকলে মিলে ছুটে এসো, সংসারের দুঃখজ্বালা দূরে ফেলে একবার শ্রীশ্রীগৌরগোবিন্দের শ্রীচরণে শরণ নাও।একবার সবকিছু ভুলে কেবল তাঁকে প্রাণ ভরে ডাক,আর দয়াল মহাপ্রভুর হাত থাকে অমৃত আস্বাদন কর ; আত্মীয়স্বজন, ভাই বন্ধু সকলকে সেই অমৃতের ভাগ দিয়ে সুখী কর এবং নিজেও সুখী হও।এ সুযোগ ছেড়ো না জীবের ভাগ‍্যে এমন সুযোগ আর হবে না।*
*🌻শ্রীগৌরনামে বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর মূর্ছা ভঙ্গ হল, তিনি উঠে বসলেন। গৌরপ্রেম-তরঙ্গ হৃদয়ে একবার উঠিলে,তা উছলে উছলে সর্ব অঙ্গ ব‍্যাপ্ত করে,নয়ন,বদন,হস্ত,পদ প্রভৃতি সর্ব অঙ্গ আনন্দে নেচে উঠে। তখন কেউ আর স্থির থাকতে পারেন না।শ্রীমতী বিষ্ণুপ্রিয়া উঠে বসে মস্তকে অবগুন্ঠন (ঘোমটা) টেনে দিলেন। নিজের বেশভূষার প্রতি দৃষ্টি করে লজ্জিতা হলেন।মনে ভাবলেন,হয়ত শাশুড়ির মনে তাঁর এই সন্ন‍্যাসিনীর বেশ দেখে কতই না দুঃখ হচ্ছে।কেন তিনি সন্ন‍্যাসিনী বেশ ধারণ করলেন?বৃদ্ধা শচীমাকে কেন বৃথা কষ্ট দিলেন?এইকথা ভাবতে ভাবতে শ্রীমতীর কমল-নয়নদ্বয় জলে ভরে উঠিল।তখন তিনি অধোবদনে বসে অঝোরনয়নে কাঁদতে লাগলেন।দেবীর নয়নে নীরধারা দেখে শচীমা ও কাঞ্চনা সখীগণ আশ্বস্ত হলেন।শ্রীমতী এক্ষণে প্রকৃতিস্থ হয়েছেন।শচীমা বিষ্ণুপ্রিয়াকে কোলে টেনে নিয়ে বসলেন।শাশুড়ীর কোলে মুখ লুকিয়ে শ্রীমতী গুমরে গুমরে কাঁদছেন, এ রোদনের মর্ম শচীমায়ের বুঝতে বাকী রইল না।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
                                   *ক্রমশ*
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
         ꧁ শ্রীশ্রীবিষ্ণুপ্রিয়া দেবী 🙏 তৃতীয় ভাগ 
        *🙏শ্রীগৌর বিরহে শচী ও বিষ্ণুপ্রিয়ার অবস্থা 🙏*
          ꧁ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ꧂
        এই লিংকে ⬇️⬇️⬇️🙏⬇️⬇️⬇️ ক্লিক করুন 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
   ✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️
নিবাস- বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ- বাঁশবাড়ী, থানা- ইংরেজ বাজার, জেলা- মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ, পিন কোড- ৭৩২১০১।
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
    *••••┉━❀꧁ 🙏 রাধে রাধে 🙏 ꧂❀━┅••••* 
                   শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ
              হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।।
  *••••┉━❀꧁ 🙏 জয় জগন্নাথ 🙏 ꧂❀━┅••••*
              হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
              হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥
  *••••┉━❀꧁ 🙏 জয় রাধাকান্ত 🙏 ꧂ ❀━┅••••*
   💮❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀💮
   💮❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀💮
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧


শেষ ৩০ দিনের পোস্টের মধ্যে সর্বাধিক Viewer নিম্নে :-

শ্রীকৃষ্ণ লীলা 🙏 সূচীপত্র ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_74.html

শিবরাত্রি ব্রতকথা 🙏 ১০৮ নাম 🙏 মন্ত্র সমূহ 🙏 শিবরাত্রি ব্রত কি ভাবে পৃথিবীতে প্রচলিত হল❓শিবরাত্রি ব্রত পালনে কি ফল লাভ হয় ❓শিবরাত্রি ব্রত পালন কি সকলেই করতে পারেন ❓🙏 সকল ভক্ত 👣 চরণে 👣 অসংখ্যকোটি 🙏 প্রণাম 🙏শ্রী মৃন্ময় নন্দী 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/02/shib.html

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নৌকা গঠন তত্ব ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 https://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_22.html

🙇 রাধে রাধে 🙇 শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ 👏 হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।। 🙇 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/09/today.html

শ্রীঅম্বরীষ মহারাজের ছোট রানী 🙏 চারিযুগের ভক্তগাঁথা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/12/blog-post_97.html

মনোশিক্ষা 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 🙏 শ্রীযুক্ত প্রেমানন্দ দাস ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/jaydeb_14.html

বকরূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে চারটি প্রশ্ন করেছিলেন সেই প্রশ্নই বা কি? ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/05/blog-post_98.html

শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু 🥀 সংক্ষিপ্ত কথন 🙏 প্রথম ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/01/mohaprobhu-joydeb-dawn.html

*নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলং শুকমুখাদকমৃতদ্রবসংযুতম্।**পিবত ভাগবতং রসমালয়ং মুহুরহো রসিকা ভূবি ভাবুকাঃ।।*✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/09/blog-post_89.html

শ্রীআমলকী একাদশী ব্রতের মাহাত্ম‍্য কি ❓ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/ekadoshi.html