🚩🚩🚩🙇🙇🙇 রাধে রাধে 🙇🙇🙇🚩🚩🚩

১৩১ হইতে ১৪০ পর্ব 🌷 বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী 🏵️ শ্রীরবীন্দ্রনাথ রাহা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/09/madhukori131to140.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🔙 পূর্ব লীলা 👉 ১২১ হইতে ১৩০ পর্ব 🌷 বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী 🏵️ শ্রীরবীন্দ্রনাথ রাহা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/09/madhukori121to130.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 👉 ১৩১ হইতে ১৪০ পর্ব 🌷 বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী 🏵️ শ্রীরবীন্দ্রনাথ রাহা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/09/madhukori131to140.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১৩১)বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী*
           *শ্রীখন্ডের---------মহিমা*
            ~~~~~~~~~~~~~~~
*🍀প্রসঙ্গত বলা যায় যে শ্রীহরিদাস ঠাকুরের উপর যে কাজী নির্ম্মম পাশবিক অত‍্যাচার করেছিল,পরে সেই কাজীই ফুলিয়া গ্রামে এসে হরিদাস বন্দনা করে বলেছিলেন=*
*🌷সত‍্য সত‍্য জানিলাম তুমি মহাপীর।*
*🌷এক জ্ঞান তোমার যে হইয়াছে স্থির।।*
*🌷যোগী জ্ঞানী সব যত মুখে মাত্র বোলে।*
*🌷তুমি যে পাইলা সিদ্ধি মহা কুতূহলে।।*
*🌷তোমারে দেখিতে মুঞি আইনু হেথায়।*
*🌷সব দোষ মহাশয় ক্ষমিও আমায়।।*
                          *(শ্রীচৈঃ ভাঃ)*
*🍀সেইরকম নবদ্বীপে মহাপ্রভুর নরিনাম কীর্তনে কাজী যখন বাধার সৃষ্টি করেছিল তখন সেই কাজী দলন অভিযানে কাজীকে তিনি উচিৎ শিক্ষা দিয়েছিলেন। তখন সেই কাজীর কিরকম ভাবান্তর হয়েছিল তা আপনারা শুনুন। কারণ সেই পরম হিন্দু বিদ্বেষী কাজী তখন অনুতাপানলে দগ্ধ হয়ে কৃষ্ণনাম জপ করতে লাগলেন, তখন মহাপ্রভু কি বলেছিলেন তা আপনারা শ্রীচরিতামৃতের ভাষায় শুনুন=*
*🌷তোমার মুখে কৃষ্ণনাম এ বড় বিচিত্র।*
*🌷পাপক্ষয় গেলা হৈলা পরম পবিত্র।।*
*🌷হরি কৃষ্ণ নারায়ণ লইলে তিননাম।*
*🌷বড় ভাগ‍্যবান্ তুমি বড় পুণ‍্যবান।।*
*🌷এত শুনি কাজীর দুই চক্ষে পড়ে পানি।*
*🌷প্রভুর চরণ ছুঁই বলে প্রিয় বাণী।।*
*🌷তোমার প্রসাদে মোর ঘুচিল কুমতি।*
*🌷এই কৃপা করু যেন তোমাতে রহে ভক্তি।।*
*🍀সেইরকম মহাপ্রভু যখন শ্রীরূপ-সনাতনকে সাক্ষাত করতে রামকেলি অভিমুখে যাচ্ছিলেন, তখন হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ লোক তাঁর সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছিল এবং সেই বিশাল জনসমুদ্র আগমনের সংবাদ পেয়ে গৌড়ের নবাব ভীত হয়ে গুপ্তচর মাধ‍্যমে জানতে চাইলেন যে এরা কারা--,এরা কি সব বিদ্রোহী প্রজা না তার রাজ‍্য আক্রমণ করতে এসেছে, তখন শ্রীরূপ-সনাতন নবাবকে বলেছিলেন ইনি হচ্ছেন এক নবীন সন্ন‍্যাসী,নবদ্বীপে যাঁর আবির্ভাব হয়েছে, ইনি সাক্ষাৎ ভগবান। নবাব তখন দ্বিধাগ্রস্ত ভাবে ভাবতে লাগলেন যে আমি দৈনিক রোজ না দিলে একজনও কাজের লোক পাই না আর লক্ষ লক্ষ লোক কোনরকম প্রত‍্যাশা না করে কিসের আকর্ষণে এই মহাপুরুষের সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছে।কি এমন আকর্ষণ শক্তি মানুষের থাকলে এটি সম্ভব! সুতরাং ইনি নিশ্চয়ই সাধারণ মানুষ নহেন, তখন তার সঙ্গে শ্রীরূপ-সনাতনের যে বাক‍্যালাপ হয়েছিল তা শ্রীপাদ কবিরাজ গোস্বামী সুন্দর ভাবে ব‍্যক্ত করেছেন।*
*🌷মোরে কেন পুছ তুমি পুছ আপন মন।*
*🌷তুমি নরাধিপ হও বিষ্ণু অংশসম।।*
*🌷তোমার চিত্তে চৈতন‍্যের কৈছে হয় জ্ঞান।*
*🌷তোমার চিত্তে যেই আয় সেইত প্রমাণ।।*
*🌺নবাব তখন বলেছিলেন=*
*🌷রাজা নহে শুন মোর মনে হেন লয়।*
*🌷সাক্ষাৎ ঈশ্বর তিঁহ নাহিক সংশয়।।*
*🌻যাইহোক,আমরা আবার মুকুন্দের প্রসঙ্গে ফিরে আসি।অর্থ‍্যাৎ উক্ত ঘটনার পর হতে মুকুন্দের বৈষয়িক জীবনের যবনিকা পাত হল এবং তিনি মহাপ্রভু এবং ভাই নরহরির সঙ্গ মানসে নবদ্বীপে এসে উপস্থিত হলেন।ইঁনারা সব চিহ্নিত দাস বা পার্ষদ যার পরিচয় পাওয়া যায় তিনটি ভক্তি গ্রন্থে। ভক্তমাল, বৈষ্ণবাচার দর্পণ, গৌরগণোদ্দেশ দীপিকা।এই প্রামাণ্য গ্রন্থের মিলিত সিদ্ধান্ত হচ্ছে যে মুকুন্দ হচ্ছেন বৃন্দাবনের বৃন্দাদেবীর স্বরূপ এবং এই প্রসঙ্গে কিছু উদ্ধৃতি দেওয়া হল। যথা=*
*🌷ভক্তমাল গ্রন্থ বলছেন=*
*🌷বৃন্দাবনে বনদেবী বৃন্দা যে আখ‍্যান।*
*🌷তিঁহ শ্রীমুকুন্দ দাস খন্ডবাসী জন।।*
*🌻বৈষ্ণবাচার দর্পণ বলেছেন=* 
*🌷ব্রজে বৃন্দাদেবী ছিল শ্রীমুকুন্দ দাস।*
*🌷চৈতন‍্যের প্রিয় শাখা শ্রীখন্ডেতে বাস।।*
*🌹গৌরগণোদ্দেশ দীপিকা বলেছেন=*
*🌷ব্রজধিকারিণী যা আসীদ্ বৃন্দাদেবী তু নামতঃ।*
*🌷সা শ্রীমুকুন্দদাসোহস‍্য খন্ডবাসঃ প্রভু প্রিয়ঃ।।*
*🌻সুতরাং এটি দ্বারা এই সত‍্যই প্রতিষ্ঠিত হয় যে নরনারায়ণ দেবের ঔরসে এবং গৌরী দেবীর গর্ভে যে দুই পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে মুকুন্দ হচ্ছেন ব্রজের বৃন্দাদেবীর স্বরূপ এবং নরহরি হচ্ছেন ব্রজের মধুমতীর স্বরূপ। মহাপ্রভুর পার্ষদ এবং পরিকরগণের মধ্যে দুই সহোদর ভাইয়ের এইরকম গৌরাঙ্গ প্রীতি ও সাধন ভজনের পরাকাষ্ঠা দেখা যায় শ্রীরূপ-সনাতন ও শ্রীরামচন্দ্র কবিরাজ ও গোবিন্দ কবিরাজের মধ্যে।*
🌲🌲🌲🌲🌲🌲🌻🌲🌲🌲🌲🌲🌲
*নিতান্ত ব‍্যথিতা যবে,কম্পিত দেহেতে তবে,*
    *পতির নিকটে ত্বরা উপনীত হন*।
*সে সময় করজোড়ে,নিবেদন করি তারে,*
    *কহে প্রভু শোন এবে আমার বচন।।*
*রমা পতি নারায়ণ,তব প্রিয় সখা হন,*
   *পরম দয়ালু তিনি করেছি শ্রবণ*।
*দ্বিজভক্ত হন অতি,সদা কৃপা ভক্ত প্রতি,*
    *এবে তুমি লও প্রভু তাঁহার শরণ।।*
*ত্বরা তাঁর কাছে গিয়া,কহ দুঃখ বিস্তারিয়া,*
    *সাংসারিক ক্লেশ যত হবে নিবারণ।*
*দয়াময় নারায়ণ,আনি দিবে বহু ধন,*
    *না রাখেন তিনি কারো বাঞ্জা অপূরণ।।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🪔🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 👉 ১৩১ হইতে ১৪০ পর্ব 🌷 বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী 🏵️ শ্রীরবীন্দ্রনাথ রাহা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/09/madhukori131to140.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১৩২)বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী*
            *শ্রীখন্ডের--------মহিমা*
             **********************
*🍀শ্রীনরহরি ও শ্রীমুকুন্দের মধ্যে এত স্নেহ ভালবাসার বন্ধন ছিল যে নরহরি সদাসর্বদা ভাইয়ের বিরহে বিষাদগ্রস্ত ভাবে থাকতেন। একদিন তা মহাপ্রভুর গোচরে আসিলে তিনি তার প্রকৃত কারণ বললে সর্বজ্ঞ মহাপ্রভু তাঁকে বললেন, নরহরি!তুমি আর মনে কষ্ট করিও না কারণ তোমার ভাই মুকুন্দ তাড়াতাড়ি এসে তোমার সঙ্গে মিলিত হবেন।অর্থ‍্যাৎ ভক্তবৎসল মহাপ্রভু তাঁর প্রিয় ভক্ত নরহরির মনোকষ্ট নিবারণের জন্য মুকুন্দকে আকর্ষণ করলেন, যার ফলে মুকুন্দ বাদশাহের কাজ ছেড়ে দিয়ে নবদ্বীপে এসে নরহরির সঙ্গে মিলিত হলেন। নরহরির আনন্দ আর ধরে না শ্রীগৌরাঙ্গের কৃপায় তাঁর সাধন ভজনের উপযুক্ত সাথী হিসাবে ভাইকে পেয়ে নরহরির গৌরাঙ্গ প্রীতি দ্বিগুণ ভাবে বেড়ে গেল।এক হিসাবে ব্রজের মধুমতী কি কখনও ব্রজের বৃন্দাদেবীকে ছাড়া থাকতে পারেন?*
*🍀এইভাবে দুইভাই নবদ্বীপে স্থায়ী হলেন, তখন একদিন মহাপ্রভু মুকুন্দকে আদেশ করলেন শ্রীখন্ডে গিয়ে আদি বাসস্থানে বাস করতে। আরও বললেন যে, মুকুন্দ!সংসারী জীবন যাপন করতে হবে।এই প্রসঙ্গে তিনি নরহরিকে উদ্দেশ্য করে বললেন যে নরহরি,তাঁর কাছে চির কৌমার্য‍্য (চির কুমার হয়ে ) ব্রত অবলম্বনে তাঁর পার্ষদ হিসাবে থাকবেন।এইরকম দুই ভায়ের মধ্যে ব‍্যতিক্রম দেখে মুকুন্দ অশ্রুসজল নয়নে করজোড়ে বললেন, প্রভো! আপনার আজ্ঞা অলঙ্ঘনীয় কিন্তু আমার উপর এমত নির্দেশ দিলেন কেন? সংসার করব না বলে সঙ্কল্প করে আপনার শ্রীচরণে আশ্রয় পেয়েছি।অতএব আমাকে কেন আবার সেই বিষয় গর্তে নিক্ষেপ করছেন।মুকুন্দের নানারকম কাতরোক্তি শুনে কৃপাময় মহাপ্রভু তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন যে মুকুন্দ!তুমি সংসার করবে বটে, কিন্তু তোমাকে সংসারী হতে হবে না।তোমাকে বিয়ের আদেশ দিবার মূল কারণ হচ্ছে, যে তোমার পত্নীর গর্ভে যে পুত্র সন্তান জন্মিবে সে হচ্ছে আমার স্বীকৃত পুত্র মদনাবতার সাক্ষাৎ রঘুনন্দন, অতএব তোমাকে বিয়ে করতেই হবে।*
*সেহেতু তুমি শ্রীখন্ডে গমন করো, আমার বিরহে যখন তুমি খুবই কাতরতা বোধ করবে, তখনই আমি তোমাকে অবশ্যই দেখা দিব।মুকুন্দ তখন অধোবদনে বললেন যে, প্রভু! আপনার আদেশ শিরোধার্য‍্য। তার উপরে বৈষ্ণব জগতে আজ্ঞা বলবান কিন্তু তথাপি বললেন যে, আমার বিয়ের বয়স পার হয়ে গিয়েছে, তদপেক্ষা এই কাজ কি নরহরির মাধ‍্যমে সমাধা করা যায় না।প্রত‍্যুত্তরে মহাপ্রভু কহিলেন যে,আমার এই অভীষ্ট কার্য‍্য তোমা ব‍্যতীত সাধিত হবে না, তদুপরি সামাজিক নিয়ম অনুযায়ী জ‍্যেষ্ঠ ভাইয়ের বিয়ে না হলে কনিষ্ঠ ভাই কিভাবে বিয়ে করবে? তদুপরি তোমার মাধ‍্যমে আমার যে বরপুত্র অবতীর্ণ হবেন তিনি নরহরি দ্বারা লালিত পালিত হবেন। উপরন্তু মহাপ্রভু বললেন যে তোমার যে স্ত্রী বা নারী জাতির উপর কোন আকর্ষণ নাই তা আমি ভালো মতে জানি, তবুও এক অতীব মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তোমায় এই আদেশ করছি।তুমি আর দ্বিধাবোধ করিও না। আর হ‍্যাঁ,এই বিয়ের জন্য তোমাকে কোনরকম চেষ্টায় করতে হবে না এবং তুমি শ্রীখন্ডে প্রত‍্যাবর্তনের পরই কন‍্যাপক্ষ নিজে থেকে আসবে,সর্ব সুলক্ষণা যুক্তা কন‍্যা তোমার হাতে সম্প্রদান করবেন।তুমি তাড়াতাড়ি শ্রীখন্ডে গমন করো।*
*☘মুকুন্দ তখন গৌরহরির আজ্ঞা শিরোধার্য‍্য করে বিরহ-ক্ষীণ্ণ হৃদয়ে ছোট ভাই নরহরির কাছ হতে বিদায় কালে বললেন যে, ভাই নরহরি!এ জগতে তুমিই ধন‍্য আর ধন‍্য তোমার গৌরাঙ্গ প্রীতি এবং অনুরাগ।এই অনুরাগ রজ্জুতে তুমি পরম প্রেমময় গৌরহরিকে এমন ভাবে নিজ হৃদয়াসনে বেঁধে রেখেছ যে তিনি তোমাকে ছাড়তে পারবেন না, আর দুর্ভাগ্য আমার যে আমি নিজকর্ম দোষে এই সঙ্গচ‍্যুত হলাম।এইকথা শুনে মহাপ্রভু তাঁকে পুনরায় আশ্বস্ত করে কহিলেন, মুকুন্দ!অযথা খেদ করিও না,আমি এক মহৎ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তোমাকে এই আদেশ করছি এবং তুমি আমার বিরহে অধৈর্য‍্য হলে নিশ্চিত আমার দেখা পাবে। দেখ!শ্রীখন্ড হতে নবদ্বীপ তো বেশী দূর না, মাঝে মধ্যে এসে আমার সঙ্গে দেখা করে যাবে। তারপর তিনি গৌর ভগবানের আজ্ঞা শিরোধার্য‍্য করে বিষন্ন মনে শ্রীখন্ডে এসে পৌঁছিলেন এবং শ্রীখন্ডের দক্ষিণে বড়ডাঙ্গা নামক এক নির্জন বনে গৌরাঙ্গ ভজনে নিজেকে নিমজ্জিত করবেন এই আশা নিয়ে সেখানে একটি কুটীর নির্মাণ করে সাধন ভজনে লিপ্ত হলেন।কৃপার সাগর মহাপ্রভুর এমনই আত্মসাৎ মহিমা যে বাস্তব চক্ষে দেহ নিয়ে আসিলেও মনপ্রাণ সব মুকুন্দের পড়ে রইল শ্রীগৌরাঙ্গ চরণে। তিনি সেই নির্জন বন পরিবেশে বেশির ভাগ সময়ই বাস করতেন এবং শ্রীখন্ডে নিয়মিত যথাসময়ে আগমন করে কুলদেবতা গোপীনাথের সেবার আত্মনিয়োগ করতেন।এমত অবস্থায় একদিন যখন মুকুন্দ তাঁর বড়ডাঙ্গা স্থিত ভজন কুটীরে বসে আছেন তখন একজন লোক হঠাৎ এসে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন এবং দু'চারটি কথার পর মুকুন্দ সম্মতি দান করলেন, কারণ তিনি তো এ ভবিষ্যৎ জানতেন এবং একে মহাপ্রভুর এক ভঙ্গী হিসাবে গ্রহণ করলেন।এর পর খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়ে গেল এবং এর ফলে ভাগ‍্যবতী সেই রমণীর গর্ভে ঠাকুর রঘুনন্দনের জন্ম হল।*
############################
*অধুনা দ্বারকা পুরী,র'য়েছেন সেই হরি,*
    *ভোজ বৃষ্ণি যদুগণে করিতে পালন।*
*তিনি যে নিকটে অতি,যাও প্রভু দ্রুতগতি,*
    *উদরের জ্বালা যে গো না সহে এখন।।*
*অন্তরে চিন্তিলে যাঁরে,আত্মজ্ঞান দেন তাঁরে,*
    *সর্ব্বৈশ্চর্য‍্য পূর্ণ তিনি দেব নারায়ণ।*
*কল্পতরু যিনি হন,তুচ্ছ এই আকিঞ্চন,*
    *এবে তিনি করিবেন অবশ‍্য পূরণ।।*
🔷🔷🔷🔷🔷🔷🔷🔷🔷🔷🔷🔷🔷
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 👉 ১৩১ হইতে ১৪০ পর্ব 🌷 বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী 🏵️ শ্রীরবীন্দ্রনাথ রাহা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/09/madhukori131to140.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১৩৩)বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী*
           *শ্রীখন্ডের---------মহিমা*
           ************************
*🍀গুরু পরম্পরায় শোনা যায় যে শ্রীমন্মহাপ্রভুর চর্ব্বিত তাম্বুল ভক্ষণের ফলেই মুকুন্দ পত্নী গর্ভ সঞ্চার হয়েছিল, যেমনটি হয়েছিল শ্রীপাদ বৃন্দাবনদাস জননী নারায়ণী দেবীর।কথিত আছে যে, মুকুন্দ ঘরণী অত‍্যন্ত পীড়িতা হলেতাঁর রোগ মুক্তির জন্য মহাপ্রভু নবদ্বীপ হতে কৃষ্ণ-পাগলিনী নামক এক ব্রাহ্মণ কন‍্যার মাধ‍্যমে তার চর্বিত তাম্বুল প্রসাদ পাঠিয়েছিলেন যা ভক্ষণের ফলে তিনি সম্পূর্ণ রোগমুক্ত হন এবং গর্ভবতী হন। মহাপ্রভুর এই অভীষ্ট বরপুত্রই হচ্ছেন রঘুনন্দন, যেমনটি ছিলেন শ্রীনিবাস আচার্য‍্য প্রভু।কবি কর্ণপুর সেজন‍্য এই রঘুনন্দনকে "চৈতন‍্যাদ্বৈত তনু" এই আখ‍্যা দিয়াছেন। ক্রমে মুকুন্দের ভক্তিময় জীবনের উন্মেষ ঘটতে লাগল এবং তাঁর ভক্তি শাস্ত্রের জ্ঞান এবং উৎকর্ষতা দেখে শ্রীখন্ডের মহিমা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে লাগল।নরহরিও মাঝে মধ্যে শ্রীখন্ডে এসে তাঁর সঙ্গ করতেন এবং মহাপ্রভু প্রবর্তিত প্রেমভক্তি জীবজগতে বিতরণ করতেন।সেইরকম আবার মুকুন্দও মধ্যে মধ্যে নবদ্বীপে এসে মহাপ্রভুর চরণ দর্শন করে যেতেন। এইভাবে মহাপ্রভুর কৃপায় শ্রীখন্ডের মহিমা ধীরে ধীরে বেড়ে যেতে লাগল।*
*🍀মুকুন্দ দাসের একটা বড় সদ্ গুণ ছিল যে তিনি বড় অতিথি সেবাপরায়ণ ছিলেন। কোন ক্ষুধার্ত ব‍্যক্তি তাঁর কাছ হতে কখনও অভুক্ত অবস্থায় ফিরে যেতে দিতেন না।তার উপরে গোপীনাথজীর সেবা পূজা অন্তে নিজে প্রসাদ পাবার আগে অভুক্ত কেউ আছেন কিনা সে খবর না নিয়ে তিনি কখনও স্বয়ং ভোজন করতেন না।শ্রীমদ্ ভাগবতগীতার যে সব মর্মবাণী তা মুকুন্দ স্বয়ং আচরণের দ্বারা প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন।সংসারে ছোট ছিলেন বটে কিন্তু সংসারের জঞ্জাল তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। সংসারের মধ্যে তিনি পাঁকাল মাছের মতোই থাকতেন এবং নিজের সুখের সবরকম বাসনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে ভগবানের সঙ্গে সম্বন্ধ স্থাপন করে তিনি জীবন ধারণ করতেন।তাঁর ধ‍্যান জ্ঞান চিন্তা সবই ছিলেন কুলদেবতা গোপীনাথ এবং মহাপ্রভু ছাড়া তিনি আর কিছুই জানতেন না।এইভাবেই একটি অজ্ঞাত অখ‍্যাত গ্রাম শ্রীখন্ড, মুকুন্দ নরহরির মহিমায় বঙ্গদেশের মানচিত্রে বিশেষ করে বৈষ্ণব জগতের পীঠস্থান রূপে গণ‍্য হলেন।যার চরম প্রকাশ দেখা যাবে রঘুনন্দনের জীবনে।*
*🍀অতঃপর মহাপ্রভু সন্ন‍্যাস গ্রহণ করলে নরহরি তাঁর বিরহে পাগলের মতো হয়ে গেলেন এবং তাঁর সঙ্গে শান্তিপুরে অদ্বৈত ভবন পর্যন্ত এসে অনেক নৃত্য কীর্তন করেছিলেন। কারণ তখনও পর্যন্ত মনের দৃঢ় বাসনা ছিল যে করুণাময় মহাপ্রভু কখনই তাকে সঙ্গচ‍্যুত করবেন না। কিন্তু বিধি বাম,শান্তিপুর হতে তিনি যখন পুরী অভিমুখে রওনা হলেন তখন নরহরিকে আদেশ করলেন যে তাঁকে শ্রীখন্ডে গিয়ে গৌড় মন্ডলে থেকে তাঁর অভীষ্ট সিদ্ধি করতে হবে এবং এ কথাও বললেন বিরহ ব‍্যথায় আকুল হলে তাঁর দেখা পাবেন এবং তার পরের বৎসরের শেষে রথযাত্রা কালে নীলাচলে এসে তাঁর সঙ্গে যেন সাক্ষাৎ করেন। এইভাবে গৌরসুন্দর নদীয়া পরিত‍্যাগ করলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে নদীয়া যেন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল।তাঁর প্রধান প্রধান ভক্তগণ গৌরাঙ্গ বিরহে পাগলের মত হয়ে গিয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়লেন।কারণ গৌরহরি শূন‍্য নবদ্বীপে বা নদীয়ায় সবসময়ই অবস্থান করা তাঁদের পক্ষে অসহনীয় হয়ে উঠিল।পরে মহাপ্রভু শ্রীরূপ-সনাতন প্রভৃতি গোস্বামীগণকে ব্রজমন্ডলে পাঠিয়ে শ্রীশ্রীরাধাগোবিন্দের সুমধুর লীলা প্রচারে এবং ভক্তি শাস্ত্র প্রণয়নে নিয়োগ করলেন।নিত‍্যানন্দ প্রভুকে ঘরে ঘরে নাম প্রেম বিতরণের আদেশ করলেন এবং এর ফলে এইসব ভক্তমন্ডলী সবসময়ই হরিনাম সংকীর্তন ও বিভিন্ন ভক্তিগ্রন্থ আলোচনায় বিভোর হয়ে গেলেন। সুমধুর নদীয়া লীলা বা গৌরলীলা রসাস্বাদনের বড়ই ব‍্যতিক্রম ঘটল। এই সময়ে জীবের প্রতি করুণা পরবশ হয়ে নরহরি সেই কাজে ব্রতী হলেন।নরহরি ঠাকুর শ্রীখন্ডকে গৌরাঙ্গ প্রেমভক্তি বিতরণের একটি মুখ‍্য কেন্দ্র করে মুকুন্দ-রঘুনন্দনের সহায়তায় তাঁর ষোলআনা পুষ্টি সাধন করলেন।এই সময়েই নরহরি ঠাকুর তাঁর সর্বাধিক ভক্তিমূলক পদাবলীগুলি রচনা করেছিলেন।*
*🌻ঠাকুর রঘুনন্দনের আবির্ভাব তিথি হচ্ছে মাঘী শুক্লা পঞ্চমী, এই পুণ‍্য তিথিতে তিনি শ্রীখন্ডের পুণ‍্যভূমিতে অবতীর্ণ হন।শাস্ত্র বিচারে এই পুণ‍্য তিথি হচ্ছে বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীর জন্মতিথি।অদ‍্যাপি পুণ‍্যভূমি শ্রীখন্ডে রঘুনন্দনের জন্মতিথি খুব জাঁকজমকের সঙ্গে ভক্তগণ পালন করে সেই মহাপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করেন।মুকুন্দের পুত্র হলেও প্রকৃত পক্ষে নরহরির স্নেহ ভালবাসার মাধ‍্যমে মানুষ হন, সেজন্য ভক্তি জগতের সহায়ক সবরকম গুণাবলীতে তিনি ভূষিত হন।*
           *ক্রমাগত*
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 👉 ১৩১ হইতে ১৪০ পর্ব 🌷 বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী 🏵️ শ্রীরবীন্দ্রনাথ রাহা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/09/madhukori131to140.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১৩৪)বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী*
           *শ্রীখন্ডের----------মহিমা*
           ^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*🍀ঠাকুর শ্রীরঘুনন্দনের বাল‍্যজীবন প্রসঙ্গ খুবই মনোমুগ্ধকর।বাল‍্যকাল হতেই সাধু বৈষ্ণব সেবায় তাঁর খুবই নিষ্ঠা ছিল।শ্রীখন্ডবাসী বালকদের সাথে মিলিত হয়ে তিনি নানারকম পূজার্চনা করতেন।যতক্ষণ কুলদেবতা গোপীনাথের পূজা হত ততক্ষণ তিনি একাগ্রমনে সেখানে বসে থাকতেন।পিতা মুকুন্দদেব কিভাবে গোপীনাথজীর সেবাপূজা করেন তা শ্রদ্ধা সহকারে দেখতেন এবং প্রতিদিন সকালবেলা তুলসীপত্র চয়ন করে গোপীনাথের সেবার জন্য রেখে দিতেন। গ্রামের কোন জায়গায় খুব সুন্দর পুষ্প দেখতে পেলে খুব সকালবেলা তা চয়ন করে এনে গোপীনাথের সেবার জন্য রেখে দিতেন।পুত্রের এইসব ভাগবদ্ লক্ষণ দেখে পিতা মুকুন্দ নিজে খুবই আনন্দ লাভ করতেন। মনে মনে বিচার করলেন যে তাঁর কুলদেবতা গোপীনাথের সেবার একজন সুযোগ‍্য অধিকারী তাঁর বংশে জন্মগ্রহণ করেছে।এইরকম মানসিকতার মধ্যে একদিন মুকুন্দকে কোন অপরিহার্য কাজের জন্য গ্রামান্তরে যেতে হয় এবং তখন তিনি পুত্র রঘুনন্দনের উপর গোপীনাথের সেবার ভার অর্পণ করে সেখানে গমন করলেন।রঘুনন্দনের হৃদয় মন আনন্দে ভরে উঠিল, কারণ এতদিনে তাঁর মনের গুপ্ত বাসনা পূরণের সুযোগ মিলিল।*

*শ্রীরঘুন্দন তখন শুদ্ধভাবে পূজোর সামগ্রী জোগাড় করে পূজার ব‍্যবস্থায় উদ‍্যোগী হলেন।মা তাঁকে অনেক সহায়তা করলেন তারপর রঘুনন্দন পিতা যে প্রথা অনুযায়ী সেবা পূজো করতেন সেই হিসাবে গোপীনাথের শ্রীঅঙ্গে শৃঙ্গার করলেন।তুলসী,চন্দন ও পুষ্পাদি দিয়ে গোপীনাথের অভিষেক করলেন এবং তার সঙ্গে নিত‍্য ভোগের সব দ্রব‍্যাদি অর্পণ করলেন।বালক রঘুনন্দনের মনে এই ধারণাই ছিল যে ভোগ যখন দেওয়া হয় ঠাকুর নিশ্চয়ই তা ভোজন করেন, ভাল ভাল খাবার জিনিস পেলে কি কেউ না খেয়ে থাকে। এই বাৎসল‍্য সেবার কাছে ভগবান সবসময়ই পরাজিত।রঘুনন্দন তখন তাঁদের কুলদেবতাকে অন্তরের ষোলআনা আর্তি দিয়ে বললেন, ঠাকুর!তুমি এবার খেয়ে নাও, এই ক্ষীর সর নাড়ু মা কত সব বানিয়ে দিয়েছেন, এবার তুমি মনের আনন্দে একটু খাও দেখি। নিষ্পাপ সরল রঘুনন্দনের বিশ্বাস যে ঠাকুর রোজ যখন ভোজন করেন আজও করবেন।অতএব তিনি "ঠাকুর খাও" "ঠাকুর খাও" বলে বারবার বলতে লাগলেন।কিন্তু বিগ্রহরূপী গোপীনাথ নিশ্চল। তখন বাৎসল‍্য প্রেমভরে রঘুনন্দন বললেন, তুমি যদি আমার হাতে না খাও তাহলে আমি তোমার জন্য তুলসী তুলে আনব না,তোমার জন্য ভাল ফুলটি তুলে আনব না,তোমাকে আর মালা গেঁথে দিব না,আর তুমি না ভোজন করলে আমি বাবার কাছে বকুনি খাব, ইত্যাদি বলতে লাগলেন। এইরকম মান অভিমান,প্রণয় অনুরাগ এবং অবশেষে রঘুনন্দন যখন প্রেমাশ্রু বর্ষণ করতে করতে মনের দুঃখে গোপীনাথকে বললেন যে আমি তাহলে যাই, আমার হাতে যখন খাবেই না,তখন বুঝব তুমি আমায় ভালবাস না।আর তুমি অভুক্ত থাকলে আমি বাবার কাছে বকুনি খাব তোমার ভাল লাগবে?আর তুমি কত ক্ষুধায় কতনা কষ্ট পাবে, আমরা একটুও প্রসাদ পাব না,কারণ তুমি না ভোজন করলে তো সেটি প্রসাদ হয় না, এইভাবে নানারকম বাৎস‍্য রসময় কথা এবং কান্নাকাটির পর গোপীনাথের হৃদয়ে করুণার সঞ্চার হল এবং তিনি সেই নৈবেদ‍্য ধীরে ধীরে গ্রহণ করতে নাগলেন। রঘুনন্দনের আর আনন্দ ধরে না।জীবনে প্রথম দিনের সেবায় তিনি মনেপ্রাণে অপার আনন্দ লাভ করলেন এবং তিনি জানতেন যে বাবার দেওয়া ভোগ তিনি নিশ্চয়ই রোজ রোজ ভোজন করেন,অতএব তাঁর হাতেই বা ভোজন করবেন না কেন?*
*🍀এদিকে দুপুরের কিছু পরে বাবা মুকুন্দ গৃহে ফিরে এসে সেবার পর খবর নিলেন এবং পুত্রের কাছে প্রসাদ চাইলেন, কারণ বিষ্ণু নিবেদিত প্রসাদ আগে ভোজন না করে তিনি অন‍্য কিছু ভোজন করতেন না।রঘু তখন বললেন, প্রসাদ তো কিছুই নাই, সব নৈবেদ‍্য ঠাকুর ভোজন করে নিয়েছেন।মুকুন্দ অবাক বিস্ময়ে রঘুর সব কথা শুনে, আত্মশ্লাঘায় মৃতপ্রায় হয়ে গেলেন যে তিনিও নিত‍্য ভোগ দেন কৈ তাঁর হাত থেকে তো ঠাকুর কখনও এইরকমভাবে গ্রহণ করেন না। আর এই বালক পুত্রের উপর গোপীনাথের কি অপার করুণা! অতঃপর তিনি পুত্রকে বললেন যে রঘু!তোমার হাতে যখন ঠাকুর সব ভোজন করেছেন তুমি আগামীকালও পুজো করবে।মুকুন্দের মনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে পুত্রের অজান্তে সেই সেবা দেখা।দ্বিতীয় দিনেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি, গোপীনাথ প্রকট ভাবে প্রসাদ ভোজন করতে লাগলেন, আর ভাগ‍্যবান রঘুনন্দন তা দেখতে লাগলেন,এমনই এক সময় মুকুন্দ উৎকণ্ঠায় অধৈর্য‍্য হয়ে যেইমাত্র তা দেখলেন,তখনই ঠাকুর ভোগ খাওয়া স্থগিত হয়ে গেল।গোপীনাথ সেই মুহূর্তে একটি নাড়ু খাবার জন্য হাতে নিয়েছিলেন কিন্তু সে নাড়ু আর খাওয়া হল না।হাতের নাড়ু হাতেই থেকে গেল। সেই হতে শ্রীখন্ডের এই গোপীনাথ বিগ্রহের হাতে সেই নাড়ু অদ‍্যাপি ভক্তগণ দর্শন করেন, যা হচ্ছে ভগবানের ভক্ত বাৎসল‍্যের এক জ্বলন্ত নিদর্শন যার মাধ‍্যমে রঘুনন্দনের এই গোপীনাথ কীর্তিত হয়েছে।শ্রীনিবাস আচার্য‍্য একটি সংস্কৃত শ্লোকের মাধ‍্যমে রঘুনন্দনের এই গোপীনাথ সেবার মহিমা প্রকাশ করে বলেছেন যে পাঁচ বছর বয়সে রঘুনন্দনের এই বাৎসল‍্য সেবা দ্বারা ইহাই প্রতীয়মান হয় যে তিনি সাক্ষাৎ মদনাবতার।*
▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪▪
*পত্নী তারে বারে বারে,অনুনয় যবে করে,*
    *তবে সে আপন মনে করিল চিন্তন।*
*যাই যদি পুরী পানে,দেখা হবে হরি সনে,*
   *এ সুযোগে তিরপিত হবে আঁখি মন।।*
*যাত্রা যবে স্থির করে,কহে তবে পরিবারে,*
   *রিক্ত হস্তে তাঁর কাছে যাইব কেমনে।*
*যদি কিছু রহে সতী,আনি দাও ত্বরা করি,*
   *করিব সম্ভার সহ দেখা সখাসনে।।*
*পতি যবে কন তারে,উপায়ন আনিবারে,*
   *ভিক্ষা মাগে প্রতিবেশি নিকটে তখন।*
*শুনি সে কহিল তারে,দিব যাহা আছে ঘরে,*
   *অপেক্ষা আমার গৃহে কর কিছুক্ষণ।।*
     *সুদামা কাহিনী পয়ার ছন্দে*
🦚🦚🦚🦚🦚🦚🪔🦚🦚🦚🦚🦚🦚🦚
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 👉 ১৩১ হইতে ১৪০ পর্ব 🌷 বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী 🏵️ শ্রীরবীন্দ্রনাথ রাহা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/09/madhukori131to140.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১৩৫)বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী*
                 *শ্রীখন্ডের মহিমা*
         ^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*🍀এই প্রসঙ্গে উদ্ধবদাস নামক এক পরম বৈষ্ণব একটি পদাবলী রচনা করেছেন যা আমরা শ্রীখন্ডে নরহরি ঠাকুরের তিরোভাব তিথিতে প্রসাদ পাবার সময় শুনতে পাই, স্থানীয় এক ভক্তমুখে সুন্দর কন্ঠস্বরের মাধ‍্যমে,যথা=*
*প্রকট শ্রীখন্ডে বাস,নাম শ্রীমুকুন্দ দাস,*
       *ঘরে সেবা গোপীনাথ জানি।*
*গেলা কোন কার্য‍্যান্তরে,সেবা করিবার তরে,*
      *শ্রীরঘুনন্দনে বলে জানি।।*
*ঘরে আছে কৃষ্ণ সেবা,যত্ন করি খাওয়াইবা,*
      *এত বলি মুকুন্দ চলিলা।*
*পিতার আদেশ পাইয়া,সেবার সামগ্রী লইয়া,*
   *গোপীনাথের সম্মুখে আইলা।।*
*শ্রীরঘুনন্দন অতি, বয়ঃক্রম শিশু মতি,*
      *খাও বলে কাঁদিতে কাঁদিতে।*
*কৃষ্ণ সে প্রেমের বশে,না রাখিয়া অবশেষে,*
      *সকলি খাইলা অলক্ষিতে।।*
*আসিয়া মুকুন্দ দাস,কহে বালকের পাশ,*
      *প্রসাদী নৈবেদ‍্য আন দেখি।*
*শিশু কহে বাপ শুন,সকলি খাইল তেন,*
      *অবশেষ কিছুই না রাখি।।*
*শুনি অপরূপ হেন,বিস্মিত হৃদয় পুনঃ,*
      *আর দিন বালকে কহিয়া।*
*সেবা অনুমতি দিয়া,বাটীর বাহির হইয়া,*
     *পরে আসি রহে লুকাইয়া।।*
*শ্রীরঘুনন্দন অতি, হই হরষিত মতি,*
     *গোপীনাথে নাড়ু দিয়া করে।*
*খাও খাও বলে ঘন,অর্দ্ধেক খাইতে হেন,*
     *সময়ে মুকুন্দে দেখে দ্বারে।।*
*যে খাইল রহে তেন,আর না খাইল পুনঃ,*
      *দেখিয়া মুকুন্দ প্রেমে ভোর।*
*নন্দন করিয়া কোলে,গদগদ স্বরে বলে,*
     *নয়নে বরিষে ঘন লোর।।*
*অদ‍্যাপি শ্রীখন্ডপুরে,অর্দ্ধ নাড়ু আছে করে,*
     *দেখে যত ভাগ‍্যবন্ত জনে।*
*অভিন্ন মদন যেই, শ্রীরঘুনন্দন সেই,*
     *এ উদ্ধব দাস রস ভণে।।*
*🌻সেই হতে রঘুনন্দনের মহিমার প্রথম বিকাশ এবং জনশ্রুতি মাধ‍্যমে দিগ্বিদিক ছড়িয়ে পড়ল।কারণ মহাপ্রভুর যিনি বরপুত্র তিনি যে অনন‍্য সাধারণ ঐশী শক্তির অধিকারী হবেন তাতে এক হিসাবে আশ্চর্য হবার কিছুই নাই।এর কিছুদিন পর মহাপ্রভুর সঙ্গে মুকুন্দের সাক্ষাৎ হলে মহাপ্রভু ভাবে প্রকারে বুঝিয়ে দিলেন যে কেন তিনি তাঁকে বিয়ের জন্য, কেন বারংবার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং পরিহাসচ্ছলে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে মুকুন্দ! এবার বলো তো, "তুমি রঘুর পিতা না রঘু তোমার পিতা"।মুকুন্দ তখন বললেন,প্রভু!বালকের এই সেবার উৎকর্ষতা দেখে আমার দৃঢ় ধারণা হচ্ছে যে রঘু আমার পিতা।এই প্রসঙ্গে শ্রীপাদ কবিরাজ গোস্বামী শ্রীচরিতামৃতে বলেছেন যে=*
*🌷মুকুন্দ দাসেরে পুছে শচীর নন্দন।*
*🌷তুমি পিতা পুত্র তোমার শ্রীরঘুন্দন।।*
*🌷কিবা রঘু পিতা তুমি তাহার তনয়।*
*🌷নিশ্নয় করিয়া কহ সঠিক সংশয়।।*
*🌷মুকুন্দ কহে রঘুনন্দন মোর পিতা হয়।*
*🌷আমি তার পুত্র এই আমার নিশ্চয়।।*
*🌷আমা সভার কৃষ্ণ ভক্তি রঘুনন্দন হইতে।*
*🌷অতএব পিতা রঘু আমার নিশ্চিতে।।*
*🌷শুনি হর্ষে কহে প্রভু কহিলে নিশ্চয়।*
*🌷যাহা হইতে কৃষ্ণ ভক্তি সেই গুরু হয়।।*
*🌻শ্রীখন্ডের এই মহাপুরুষকে তিনটি বিশেষ কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। যথা ঃ--, মুকুন্দকে চিকিৎসা বিদ‍্যার দ্বারা ধন উপার্জন করে দীন দরিদ্রের সেবা করতে।*
*নরহরির মাধ‍্যমে গদাধর পন্ডিতের মধ্যে যে রাধা ভাবে ভাবিত সেবা দাস‍্যভাব তা আস্বাদন করতে। আর রঘুনন্দনকে গোপীনাথের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে। অর্থ‍্যাৎ মহাপ্রভুর সব কাজের মধ্যেই সুচিন্তিত ভাবধারা ছিল।যা গৌরাঙ্গ চরিত সঠিক মনোনিবেশ সহকারে পাঠ করলে প্রত‍্যেকেই উপলব্ধি করিতে পারবেন।এই প্রসঙ্গে আবার শ্রীচরিতামৃতে বলেছেন=*
*🌷মুকুন্দেরে কহে প্রভু মধুর বচন*।
*🌷তোমার এ কার্য‍্য ধর্মধন উপার্জন।।*
*🌷রঘুনন্দনের কার্য‍্য কৃষ্ণের সেবন।*
*🌷কৃষ্ণ সেবা বিনা ইহার নাহি অন‍্য মন।।*
*🌷নরহরি রহু মোর ভক্তগণ সনে*।
*🌷এই তিন কার্য‍্য সমাধান কর তিনজনে।।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🌻🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 👉 ১৩১ হইতে ১৪০ পর্ব 🌷 বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী 🏵️ শ্রীরবীন্দ্রনাথ রাহা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/09/madhukori131to140.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১৩৬)বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী*
                  *শ্রীখন্ডের মহিমা*
            ************************
*🍀পুত্রকে পিতার স্বীকৃতি যেরকম মুকুন্দ দিয়েছিলেন, তার অনুরূপ নিদর্শন পাওয়া যায় অদ্বৈত তনয় অচ‍্যুতানন্দের প্রসঙ্গে যখন এক পরিব্রাজক সাধু এসে অদ্বৈতাচার্য‍্যকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে শ্রীকৃষ্ণচৈতন‍্য মহাপ্রভুর গুরুদেব কে? সে প্রসঙ্গে আপনারা সকলই অবগত আছেন সেজন‍্য আর পুনরাবৃত্তি করব না।তবে একটি বিষয় বলতে চাই যথা--, হয়ত সকলের ঠিক স্মরণে নেই যা হচ্ছে মহাপ্রভু কর্তৃক বালক অচ‍্য‍্যুতানন্দকে ভাই হিসাবে অঙ্গীকার করা যখন তিনি অদ্বৈত ভবনে শান্তিপুরে আগমন করেছিলেন এবং পঞ্চম বর্ষীয় বালক অচ‍্যুতানন্দের শ্রীঅঙ্গের জ‍্যোতি এবং ভক্তিভাব দর্শনে বলেছিলেন যে=*
*🌷প্রভু বোলে অচ‍্যুত আচার্য‍্য মোর পিতা।*
*🌷সে সম্বন্ধে তোমায় আমায় হই দুই ভ্রাতা।।*
*🌷অচ‍্যুত বলেন তুমি দৈবে জীব সখা।*
*🌷সবেকে তোমার বাপ এই নাহি লেখা।।চৈঃভাঃ।।*
*মহাপ্রভুর এইরকম আজ্ঞা পেয়ে রঘুনন্দন গোপীনাথ সেবায় মনপ্রাণ সমর্পণ করলেন এবং শ্রীখন্ডে মধু পুষ্করিণীর তীরবর্তী যে কদম্ব বৃক্ষ বিরাজিত তা হতে পুষ্প চয়ন করে নিত‍্য গোপীনাথের কর্ণভূষণ করতেন। গোপীনাথের কৃপায় সেই কদম্ববৃক্ষে বারো মাস প্রত‍্যহ দুইটি করে পুষ্প প্রস্ফুটিত হত।এটি যে কত সত‍্য তা শ্রীচরিতামৃতের ভাষ‍্য হতে জানা যায়, যথা=*
*🌷রঘুনন্দন সেবা করে কৃষ্ণের মন্দিরে।*
*🌷দ্বারে পুষ্করিণী তীরে ঘাটের উপরে।।*
*🌷কদম্বের এক বৃক্ষ ফুটে বারো মাসে।*
*🌷নিত‍্য দুই ফুল হয় কৃষ্ণ অবতংসে।।*
*🌻অবতংস=গৌরবভূষণ,কর্ণভূষণ, শিরোভূষণ ইত্যাদি।*
*🍀রঘুনন্দনের মহিমার অন্ত নাই।মহাপ্রভু তাঁর এই বরপুত্রের মধ্যে যে কতখানি শক্তি সঞ্চার করেছিলেন, তা প্রমাণিত হবে অভিরাম গোস্বামীর শ্রীখন্ড আগমন প্রসঙ্গে।পূর্ব অবতারে তিনি ছিলেন শ্রীদাম সখা এবং এক তেজস্বী মহাপুরুষ।তাঁর কাছে কেউ দর্শন করার জন্য গমন করলে তিনি চাবুক দ্বারা প্রহার করতেন।এমন কি শালগ্রাম শিলা পর্যন্ত তাঁর প্রণামে ফেটে যেত।তাঁর প্রণামের কি প্রভাব ছিল তা নিচের লেখা পয়ার হতে বিশেষ ভাবে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবে।মহাশক্তির নিত‍্যানন্দ ঘরণীও ইঁনার তেজ হতে রেহাই পাননি, যা প্রেমবিলাস গ্রন্থে পাওয়া যায়।*
*🌷আমার অষ্টরাণীর অষ্ট পুত্র হয়।*
*🌷অভিরামের প্রণামে সপ্ত পরাণ ত‍্যজয়।।*
*🌷শেষ পুত্র বীরচন্দ্র বীরভদ্র নাম।*
*🌷বীরচন্দ্র চরিতে লিখিত তাঁহার আখ‍্যান।।*
*🌻আবার "বৈষ্ণবাচার দর্পণে" লেখা আছে যে=*
*🌷নিত‍্যানন্দের অষ্ট পুত্র কন‍্যা গঙ্গা নামে।*
*🌷সপ্ত অন্তর্দ্ধান অভিরামের প্রণামে।।*
*🌹তাঁর এমনই প্রভাব এবং তেজ ছিল যে তিনি কোথাও গমন করলে বেশীর ভাগ সকলেই ভয়ে পালিয়ে যেতেন।এমন যে অভিরাম গোস্বামী তিনি শ্রীখন্ডে আগমন করে রঘুনন্দনকে কি ভাবে কৃপা করেছিলেন তা শুনুন।*
*🌹অভিরাম গোস্বামীর আগমন বার্তা শুনে পিতা মুকুন্দ বালক রঘুনন্দনকে লুকিয়ে রাখলেন, কিন্তু পরিশেষে বড়ডাঙ্গার নির্জন পরিবেশে রঘুনন্দন সকলের অলক্ষিতে তাঁকে দর্শন করতে আসিলেন।অভিরাম গোস্বামী নিজ প্রথা অনুযায়ী ত‍ৎক্ষণাৎ তাঁকে প্রণাম করলেন এবং তাঁকে আলিঙ্গনও করলেন।এই প্রসঙ্গটি সুকবি উদ্ধবদাস একটি সুন্দর পয়ারের মাধ‍্যমে প্রকাশ করেছেন, যথা=*
*পুরবে শ্রীদাম,এবে অভিরাম, মহাতেজ পুঞ্জঃরাশি।*
*বাঁশী বাজাইতে,ভ্রমিতে ভ্রমিতে,শ্রীখন্ড গ্রামেতে আসি।।*
*দেখিয়া মুকুন্দে,কহয়ে আনন্দে, কোথা শ্রীরঘুনন্দন।*
*তাহারে দেখিতে,আইনু হেথাতে, আনি দেহ দরশন।।*
*শুনি ভয় পাঞা,রাখে লুকাইয়া, গৃহেতে কবাট দিয়া।*
*তিঁহ নাহি ঘরে,বলি স্তুতি করে, অভিরাম না দেখিয়া।।*
*বড়ডাঙ্গা গ্রামে,স্থান নিরজনে, নিরাশ হয়ে বসি।*
*বুঝি তার মন,শ্রীরঘুনন্দন,অলক্ষিতে মিলে আসি।।*
*দেখিয়া তাহারে,দন্ডবৎ করে, দুই চারি পাঁচ সাতে।*
*শ্রীরঘুনন্দনে,করি আলিঙ্গনে, আনন্দ আবেশে মাতে।।*
*🌻রঘুনন্দন মহাপ্রভুর স্বীকৃত পুত্র হলেও তিনি আর এক হিসাবে প্রদ‍্যুম্নের অবতার এবং তিনি শ্রীধাম বৃন্দাবনে শ্রীশ্রীরাধাগোবিন্দের লীলার পরম সহকারী প্রিয় নর্ম্মসখা ছিলেন।এই প্রসঙ্গে প্রামাণ্য গ্রন্থ হতে নিম্নে কিছু উদ্ধৃতি দেওয়া হল, যথা=*
*🌻বৈষ্ণবাচার দর্পণে পাই=*
*🌷প্রদ‍্যুম্নের ব‍্যূহ হয় শ্রীরঘুনন্দন।*
*🌷মহান্তের মধ্যে যাঁর প্রাধান‍্য গণন।।*
*🌻ভক্তমাল গ্রন্থে পাই=*
*🌷ব‍্যূহ তৃতীয় প্রদ‍্যুম্ন যেঁহো বৃন্দাবনে।*
*🌷প্রিয় নর্ম্ম সখা নিত‍্য উজ্জ্বল আখ‍্যানে।।*
*🌷শ্রীচৈতন‍্যের অদ্বৈত তনুর সমান।*
*🌷তিঁহ প্রিয় পার্ষদ শ্রীরঘুনন্দন।।*
*🌻আমরা যে লোচন দাসের "চৈতন‍্য মঙ্গল" গ্রন্থ জানি তাঁর প্রণেতা এই লোচন দাসের প্রকৃত নাম শ্রীলোচনানন্দ ঠাকুর। তাঁর আদি জন্মস্থান বর্দ্ধমান জেলার কোগ্রাম নামক গ্রামে।জাতিতে তিনি বৈদ‍্য ছিলেন এবং তাঁর পিতৃদেবের নাম শ্রীকমলাকর দাস এবং মায়ের নাম সদানন্দী দেবী। কিন্তু এই বংশ পরিচয় অপেক্ষা সর্বাপেক্ষা বেশী পরিচয় হচ্ছেন যে তিনি ছিলেন নরহরি ঠাকুরের আশ্রিত।*
=================================
*চিপিটক ছিল যাহা,চারি মুষ্টি দিল তাহা,*
    *বালা তবে ফুল্ল মনে করিল গমন।*
*একখন্ড বস্ত্র দ্বারা,সে সকল বাঁধি ত্বরা,*
    *পতির নিকটে তাহা করে আনয়ন।।*
*ল'য়ে দ্বিজ সে সম্ভার,ভাবে মনে বার বার,*
   *কেমনে পাইব আমি কৃষ্ণ দরশন।*
*হই আমি মূঢ়মতি,তাহাতে দরিদ্র অতি,*
    *উদয় হবে কি মোর সৌভাগ্য এখন।।*
*মনে মনে চিন্তা করি,চলেন দ্বারকা পুরী,*
    *শেষে পুরী দ্বারদেশে উপনীত হন।*
*প্রবেশ নিষেধ তারে,দ্বিজ জানি নাহি করে,*
    *সুদামা চলিল তবে হয়ে হৃষ্ট মন।।*
🪷🪷🪷🪷🪷🪷🌷🪷🪷🪷🪷🪷🪷
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 👉 ১৩১ হইতে ১৪০ পর্ব 🌷 বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী 🏵️ শ্রীরবীন্দ্রনাথ রাহা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/09/madhukori131to140.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১৩৭)বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী*
             *শ্রীখন্ডের--------মহিমা*
            ^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*🍀শ্রীনরহরি ঠাকুরের সর্বশ্রষ্ঠ দুইজন শিষ্য ছিলেন,শ্রীলোচনানন্দ ঠাকুর ও দিগ্বিজয়ী পন্ডিত লোকানন্দ আচার্য‍্য। তাঁরই প্রণীত "বৈষ্ণবাচার দর্পণ " গ্রন্থ।নরহরি আসলে ছিলেন সংস্কৃত শাস্ত্রে বিশেষ পারদর্শী এবং তিনি সংস্কৃতে বহু গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।বাংলা পদাবলীতে মহাপ্রভুর লীলা প্রসঙ্গে লিখতে তাঁর বড় সাধ ছিল, সেজন্য তিনি খেদ করে বলেছেন=*
*গৌরলীলা গুণগানে,বড় বাঞ্জা হয় মনে,*
       *ভাষায় লিখিয়া কিছু রাখি।*
*মুই অতি অধম, লিখিতে না জানি ক্রম,*
      *কেমন করিয়া তাহা লিখি।।*
*কিছু কিছু পদ লিখি,যদি কেহ ইহা দেখি,*
      *প্রকাশ করয়ে প্রভু লীলা।*
*নরহরি পাবে সুখ,ঘুচিবে মনের দুঃখ,*
     *গ্রন্থ গানে দরবিবে শিলা।।*
*🌹নরহরি ঠাকুরের এই বাসনা অচিরেই মহাপ্রভুর কৃপায় পূরণ হয়েছিল,তারই শিষ্য লোচনদাসের চৈতন‍্য মঙ্গল গ্রন্থ দ্বারা।*
*🍀লোচনদাসের বিবাহিত জীবনের এক চমকপ্রদ ঘটনা আছে।নরহরি ঠাকুরের কৃপালাভের আগেই তাঁর বিয়ে হয়েছিল, পরে যখন কন‍্যা সাবালিকা হলেন তখন শ্বশুরালয় হতে তাঁকে ষেখানে যাবার জন্য বারবার অনুরোধ আসতে লাগল, কিন্তু লোচনদাস তাতে কর্ণপাত করলেন না। কারণ তখন তিনি গুরু সেবার মাধ‍্যমে পরমানন্দে দিনযাপন করছিলেন।শ্বশুরালয়ের লোকেরা তখন নিরুপায় হয়ে নরহরি ঠাকুরের শরণাপন্ন হলেন। নরহরি ঠাকুর এক মহাসমস‍্যায় পড়ে গেলেন।লোচনদাস যখন বিয়ে করেছিলেন তখন ভক্তি জগতের এ পথের সন্ধান বা আস্বাদ তিনি তখন পাননি। লোচনদাস তখন নরহরির সহচর্য‍্যে শ্রীহরির প্রেমমাধুর্য‍্য আস্বাদন করবার ফলে জাগতিক দাম্পত‍্য সুখের উপর আর কোন বাসনা থাকল না।শ্রীহরির একান্ত অনুগত ভক্তগণের এতাদৃশ (এরকম) দশায় সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়, কারণ তাঁরা তখন পান এক স্বর্গীয় অনাস্বাদিত প্রেমের আস্বাদ যার কাছে দাম্পত‍্য প্রেম অতি তুচ্ছ। লোচনদাসের এরকম অবস্থা হলেও তাঁর শ্রীগুরুদেব সামাজিক কারণে তাকে শ্বশুরালয়ে যেতে আজ্ঞা দিলেন। যাত্রাকালে লোচনদাস অশ্রুসিক্তনয়নে শ্রীগুরুদেবের শ্রীচরণে এই প্রার্থনায় করলেন যে তিনি যেন চিরকুমার ব্রত অবলম্বন করে মহাপ্রভুর অভীষ্ট পথে চলতে পারেন। কৃপার সাগর নরহরি তখন কহিলেন মহাপ্রভু নিশ্চয়ই তোমার মনোবাঞ্জা পূর্ণ করবেন। এতাবদ্ (এ পর্য‍্যন্ত) তিনি যুবতী পত্নীর মুখদর্শন পর্য‍্যন্ত করেননি। কিন্তু মহৎ কৃপায় এমনই এক অঘটন ঘটিল যে তা শুনে গুরু কৃপার মহিমা উজ্জ্বল ভাবে প্রতীয়মান (বোধগম‍্য) হয়। তিনি শ্বশুরালয়ের নিটকবর্তী হয়ে পুষ্করিণীর ঘাটের কাছে এক যুবতী রমণীকে দেখে তাঁকে মা সম্বোধন করে শ্বশুর বাড়ীর প্রকৃত ঠিকানা জানতে চাইলেন। কিন্তু অদৃষ্টের এমনই নির্মম পরিহাস যে পরে জানতে পারলেন যে তিনি যাঁকে মা সম্বোধনের মাধ‍্যমে এই তথ‍্য জানতে চেয়ে ছিলেন, তিনিই হচ্ছেন তাঁর প্রকৃত বিবাহিতা পত্নী। পরে ধীরে সুস্থে পত্নীকে নিজের মনোভাব সব ব‍্যক্ত করলেন এবং তাঁর মনে যে সংসার বৈরাগ‍্য ভাব হয়েছে তাও সব বললেন। উপরন্তু তিনি তাঁর স্ত্রীকে সান্ত্বনা দিবার ছলে বললেন যে এইই যদি ভগবানের ইচ্ছা না হবে তাহলে তোমাকেই বা মাতৃ সম্বোধন করব কেন?যে কোন বিবাহিতা নারীর পক্ষে এটি চরম পরীক্ষা।এইসব মনোভাব জ্ঞাত হয়ে তিনি প্রথমে খুবই চিন্তিতা হয়ে বিষণ্ণ মনে নিজের অদৃষ্টকে ধিক্কার দিতে লাগলেন। কিন্তু গুরু কৃপায় এবং মহাপ্রভুর সঞ্চারিত শক্তিতে তিনি এতই বলীয়ান হয়ে ছিলেন যে অচিরেই তিনি তাঁর স্ত্রীর মনোভাব পরিবর্তন করতে সমর্থ হয়েছিলেন।পত্নীকে নানারকম তত্ত্বকথা শুনানোর পর তিনি তাঁকে বললেন--,"আমি তোমার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ সুতরাং আমাদের এই সম্বন্ধ চিরন্তন কিন্তু আমরা দুইজন দাম্পত‍্য সুখে মগ্ন না হয়ে গৌর গুণগান এবং গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর লীলারস আস্বাদনের মাধ‍্যমে জীবনকে মহামহিমময় করে তুলব।লোচনদাস এইভাবে আজীবন চিরকুমার ব্রত অবলম্বন করে এক মহান ঐতিহ্য রেখে গেছেন।এই ঘটনা রামচন্দ্র কবিরাজ এবং রত্নমালা দেবীর বিবাহিত জীবনের সঙ্গে অনেকটা তুলনীয়।শ্রীখন্ডের সঙ্গে লোচনদাসের ভক্তিময় জীবন এমন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত সেজন্য তাঁর এই বিবাহ প্রসঙ্গটি এখানে দেওয়া হল।*
*🍀তারপর আমরা নরহরি ঠাকুরের মধুমতী নাম মাহাত্ম্য প্রসঙ্গ করব। মহাপ্রভুর পার্ষদগণের প্রত‍্যেকেই এক এক ব্রজের মঞ্জরী রূপী সখী।যেমন গদাধর হচ্ছেন রাধাস্বরূপ,ষড় গোস্বামীগণ যথাক্রমে= রূপমঞ্জরী, লবঙ্গমঞ্জরী,রসমঞ্জরী,বিলাসমঞ্জরী, গুণমঞ্জরী, রতিমঞ্জরী। প্রকৃতপক্ষে তাঁদের প্রত‍্যেকের সাধন ভজনের পদ্ধতি ও ভাবধারায় উপরেই এইসব ব্রজভাব ভাবিত নামকরণ করা হয়েছিল।সেই হিসাবে ঠাকুর নরহরির পরিচয় ছিল ব্রজের মধুমতী।* *তিনি যে এই নামের মূর্ত্ত প্রতীক ছিলেন তা তিনি যেভাবে নিজ আচরণের দ্বারা প্রকট করে গিয়েছেন তাতে মনে হয় মহাপ্রভুর পার্ষদগণের মধ্যে বোধহয় সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ। নরহরির মহিমা জীবজগতে সবথেকে বেশী ভাবে প্রচার করার জন্য একবার মহাপ্রভু ও নিত‍্যানন্দ প্রভু শ্রীখন্ডে আগমন করে মধুমতীর কাছে মধু পানের ইচ্ছে প্রকাশ করলেন।তখন নরহরি ঠাকুর তার বাড়ীর কাছেই যে পুষ্করিণী ছিল তা হতে ঘটিতে করে জল এনে উভয়কে পান করিয়েছিলেন। তাঁর মহিমায় সেই ঘটির জল মধুতে পরিণত হয়েছিল এবং তা পান করে উভয়েই প্রেমোন্মত্ত হয়ে গিয়েছিলেন।সেই হতে শ্রীখন্ডের এই পুষ্করিণীর নাম হল "মধু পুষ্করিণী"। আমরা গীতায় যা পাঠ করি ভগবদ্ কৃপায় "মূকং করোতি বাচালং-পঙ্গুং লঙ্ঘয়তে গিরিং। যৎ কৃপা ত্বমহং বন্দে পরমানন্দ মাধবং।। অর্থ‍্যাৎ সেই মাধবের কৃপায় সবই সম্ভব হয়,অসম্ভব সম্ভবে পরিণত হয় এবং করুণাময় ভগবান তাঁর প্রিয়ভক্ত মাধ‍্যমে তাঁর ঐশ্বর্য‍্য প্রকাশ করেন।*
*🍀না হলে অন্ধ বিল্বমঙ্গল কিভাবে পুনরায় তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান।সেইরকম সাধারণ পুষ্করিণীর জল কি, কোন প্রকারে মধুতে পরিণত হতে পারে?জ্ঞান-বিজ্ঞান এর কাছে পরাস্ত।সেইজন‍্য শ্রীপাদ কবিরাজ গোস্বামী মহোদয় বলেছেন যে=*
*🌷আদ‍্যপান্ত চৈতন‍্যলীলা অলৌকিক জেনো।*
*🌷শ্রদ্ধা করি শুন ইহা সত‍্য করি মেনো।।*
*🌷যেই তর্ক করে ইহার সেই মূর্খরাজ।*
*🌷অলৌকিক লীলায় যার না হয় বিশ্বাস।।*
*🌻নরহরি ঠাকুর এই মধুপান প্রসঙ্গটি পদকর্তা উদ্ধব দাস পরম বৈষ্ণব এক সুন্দর পয়ারের মাধ‍্যমে ব‍্যক্ত করেছেন, আস্বাদন করুন।*
*গৌড়দেশে রাঢ়ভূমে,শ্রীখন্ড নামেতে গ্রামে,*
     *মধুমতী প্রকাশ যাহার।*
*শ্রীমুকুন্দ দাস সঙ্গে,শ্রীরঘুনন্দন রঙ্গে,*
     *ভক্তি তত্ত্ব জগতে লওয়ায়।।*
*শুনি মধুমতী নাম,নিত‍্যানন্দ বলরাম,*
     *সপার্ষদে দিল দরশন।*
*দেখি অবধূত চন্দ্র,হইয়া পরমানন্দ,*
       *নতি করি বন্দিল চরণ।।*
*কহে নিত‍্যানন্দ রাম,শুনি মধুমতী নাম,*
       *আসিয়াছি তৃষিত হইয়া।*
*এত শুনি নরহরি,নিকটেতে জল হেরি,*
        *সেই জল ভাজনে ভরিয়া।।*
*আইয়া ধরিল আগে,মধু স্নিগ্ধ মিষ্ট লাগে,*
       *গণ সহ খায় নিত‍্যানন্দ।*
*যত জল ভরি আনে,মধু হয় ততক্ষণে,*
      *পুনঃ পুনঃ খাইতে আনন্দ।।*
*মধুমতীর মধু দান,সপার্ষদে করি পান,*
      *উনমত অবধূত রায়।*
*হাসে কাঁদে নাচে গায়,ভূমে গড়াগড়ি যায়,*
     *এ উদ্ধবদাস রস গায়।।*
☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
*কৃষ্ণ-কক্ষ অভ‍্যন্তরে,উপনীত ধীরে ধীরে,*
   *সম্মুখে শ্রীকৃষ্ণে তবে করে দরশন।*
*হেরি সুদামা তখনি,পাশে র'য়েছে রুক্মিণী,*
   *পুলকে হইল তার সজল নয়ন।।*
*তারে যবে হেরে হরি,পুলক জাগিল তাঁরি,*
    *তবে করি গাত্রত্থান দেন আলিঙ্গন।*
*সখা-অঙ্গ পরশনে,শিহরণ জাগে প্রাণে,*
     *আনন্দাশ্রুপূর্ণ আঁখি ঝরিল তখন।।*
*সজ্জিত পর্য‍্যঙ্ক পরে,শ্রীহরি বসায়ে তারে,*
   *সযতনে পাদ‍্য অর্ঘ‍্য করিয়া অর্পণ।*
*পদদ্বয় নারায়ণ, করি তবে প্রক্ষালন,*
    *ধৌতবারি মস্তকেতে ত্ত্বরা তুলি লন।।*
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🌻🙏🙏🙏🙏🙏🙏
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 👉 ১৩১ হইতে ১৪০ পর্ব 🌷 বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী 🏵️ শ্রীরবীন্দ্রনাথ রাহা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/09/madhukori131to140.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১৩৮) বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী*
              *শ্রীখন্ডের--------মহিমা*
            ************************
*🍀সেইরকম আবার এক বিশিষ্ট পদকর্তা পাপিয়াশেখর রায়ও এই ঘটনাকে উপলক্ষ্য করে অনুরূপ একটি পয়ার রচনা করে গিয়েছেন মহাপ্রভুর উত্তর সাধক ভক্তগণের প্রতীতি এবং আস্বাদনের জন্য যা পরিবেশন না করলে মনের ক্ষুধা মিটছে না। যথা=*
*ভূখন্ড মন্ডল মাঝে,তাহাতে শ্রীখন্ড সাজে,*
          *মধুমতী যাহে পরকাশ।*
*ঠাকুর গৌরাঙ্গ সনে,বিলসই রাত্রি দিনে,*
       *নাম ধরে নরহরি দাস।।*
*শ্রীরাধিকার সহচরী,রূপে গুণে আগোরি,*
      *মধুর মাধুরী অনুপাম।*
☆ ☆ ☆ ☆ ☆
*অবনীতে মধুদানে, ভাসাইল ত্রিভুবনে,*
       *মত্ত কৈলা গৌরাঙ্গ নাগরে।*
*মাতিল যে নিত‍্যানন্দ,আর সব ভক্তবৃন্দ,*
        *বেদ বিধি পড়িল ফাঁপরে।।*
*যোগপথ করি নাশ,ভকতির পরকাশ,*
       *করিল মুকুন্দ সহোদর।*
*পাপীয়া শেখর রায়,বিকাইলা রাঙ্গা পায়,*
      *শ্রীরঘুনন্দন প্রাণেশ্বর।।*
*🌻সবই এক হিসাবে মহাপ্রভুর সঙ্গী যার মাধ‍্যমে তিনি তাঁর ভক্ত মহিমা প্রকাশ করে তাঁর অবতার তত্ত্বকে নিঃসংশয় ভাবে প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছেন।আর তাই যদি না হবে, তাহলে মানসে দুগ্ধ জাল দিবার সময় স্মরণ মননের মাধ‍্যমে কিভাবে নরোত্তম ঠাকুরের আঙ্গুলের চামড়া পুড়ে যায়!কিভাবেই বা মানসে হোলী খেলবার সময় আচার্য‍্যপ্রভুর সর্বাঙ্গে ফাগুময় হয়ে যায়!আবার কিভাবেই বা রামচন্দ্র কবিরাজের পিঠে সম্মার্জনীর (ঝাড়ু বা ঝাটার) আঘাত করলে তা শ্রীনিবাস আচার্য‍্য প্রভুর পিঠে উজ্জ্বলভাবে দেখা যায়।সত‍্য কথা বলতে কি মহাপ্রভুর পার্ষদগণের এইসব সাধন ভজনের কাহিনী সমুদ্রের মতো অতলস্পর্শী গভীর, তার কোন কুল কিনারা নেই।এইসব লীলারস আস্বাদনের জন্য সাধক ভক্তগণ সেই লীলা সমুদ্রে সদা সর্বদা ভাসমান কারণ তাঁদের সাধ‍্য নাই সেই সুগভীর অতলে পৌঁছবার। অর্থ‍্যাৎ পিপীলিকাগণ যেরকম মধুপানে প্রলুব্ধ হয়ে সেই মধুর ক্ষীরের মধ্যে পান করতে করতে অবশেষে মৃত‍্যু বরণ করে ভাসতে থাকে,সেইরকম গৌর ভক্তগণও এই লীলারসে প্রলুব্ধ (অতি লোভী)হয়ে তার মধ্যে ভাসতে ভাসতে জীবনটিকে উৎসর্গ করে দেন।*
*🌹মহাপ্রভু ও নিতাইচাঁদ যখন সপার্ষদে এই শ্রীখন্ডে আগমন করেছিলেন,তখন নরহরি এবং রঘুনন্দনের কাতর প্রার্থনায় সেখানে সেদিন যে ভোজন লীলারঙ্গ হয়েছিল, তাও এক অপূর্ব স্বর্গীয় ঘটনা।যা সুপ্রসিদ্ধ পদকর্তা বাসুদেব ঘোষ স্বয়ং উপস্থিত থেকে একটি পয়ারের মাধ‍্যমে ভবিষ্যতের গৌর ভক্তগণের জন্য রচনা করে গিয়েছেন।যথা=*
*কি আনন্দ খন্ডপুরে,ঠাকুর নরহরি ঘরে,*
      *মহোৎসবের কি কব আনন্দ।*
*সকল মহন্ত আসি,প্রেমানন্দ রসে ভাসি,*
     *নিরখয়ে গৌর মুখ চন্দ্র।।*
*দ্বাদশ গোপাল আর,চৌষট্টি মহান্ত সাথ,*
     *আর ক্রমে ছয়টি গোঁসাই।*
*শাখা উপশাখা যত,আইল সকল ভক্ত,*
     *আনন্দেতে গৌর গুণ গায়।।*
*শ্রীনিবাস জনে জনে,বসাইল যথাস্থানে,*
      *বসিল মহান্ত সারি সারি।*
*যার যৈছে অনুমান,বসাইল স্থানে স্থান,*
      *দুই প্রভুর মধ্যে গৌরহরি।।*
*দক্ষিণেতে নিত‍্যানন্দ,বামেতে অদ্বৈত চন্দ্র,*
     *তার বামে গদাধর আচার্য‍্য।*
*ভোজনে বসিল সবে,রঘুনন্দন আসি তবে,*
      *করেন পরিবেশন কার্য‍্য।।*
*মহাপ্রভু সুখোল্লাসে,করে লৈয়া এক গ্রাসে,*
     *দেন প্রভু নিতাইয়ের মুখে।*
*এই রূপে পরস্পর,নরহরি গদাধর,*
      *ভোজন করায়ে প্রেমসুখে।।*
*ভোজনান্তে জয়ধ্বনি,জয় গৌর দ্বিজমণি,*
      *সবে মিলি কৈল আচমন।*
*শ্রীনিবাস সুখোল্লাসে,করে লৈয়া মুখবাসে,*
      *সবে দিলা শ্রীমালা চন্দন।।*
*নরহরি ঠাকুর ধন‍্য,যাঁর গৃহে শ্রীচৈতন‍্য,*
      *নিত‍্যানন্দ সহিত আপনি।*
*তা দেখি বৈষ্ণবগণ,হরি হরি বলে ঘন,*
      *বাসু মাগে চরণ দু'খানি।।*
*🌻শ্রীনিবাস বলতে বোধহয় শ্রীবাসকে বলা হয়েছে।🌻*
*🍀এইভাবে মধুমতীর মহিমা এবং ব্রজরস সকলে কাছে প্রকাশ করে মহাপ্রভু। নিত‍্যানন্দ প্রভু শ্রীখন্ডের মাহাত্ম্য দ্বিগুণ,চতুর্গুণ ভাবে বর্দ্ধিত করলেন।এর কিছুদিন পর মহাপ্রভু নরহরি ঠাকুরের দুই শিষ্যকে বিশেষ ভাবে কৃপা এক স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন যাঁদের নাম ছিল দৈতারী ঘোষ ও কংসারী ঘোষ।এই স্বপ্নের মাধ‍্যমে তিনি তাঁদের বাড়ীর নিমবৃক্ষের দ্বারা নিজ বিগ্রহ তৈরী করে তা তাঁদের শ্রীগুরুদেব নরহরি ঠাকুরকে সমর্পণ করতে বলেন।মহাপ্রভুর আজ্ঞা অনুযায়ী তা অচিরেই সম্পন্ন হল এবং নরহরি ঠাকুর সেই বৃক্ষ হতে তৈরী তিনটি বিগ্রহকে তিন জায়গায় পাঠিয়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন।যথা=*
*🙏ছোট বিগ্রহটি ---শ্রীখন্ডে।*
*🙏মধ‍্যমটি বিগ্রহটি--গঙ্গানগর (ভাগখোলায়) বর্তমানে আবার শ্রীখন্ডে।*
*🙏বড় বিগ্রহটিকে---কাটোয়ায়।*
*🌻আবার এই শ্রীখন্ডের অতি কাছেই হচ্ছে যাজিগ্রাম এবং কাটোয়া নবদ্বীপ এবং যাজিগ্রামেই আবার মহাপ্রভুর দ্বিতীয় স্বরূপ আচার্য‍্য প্রভুর শ্রীপাট। এর ফলে এই অঞ্চলে তৎকালে বিভিন্ন মহা মহা বৈষ্ণব এবং পার্ষদগণের আগমন হত। অর্থ‍্যাৎ নরহরি ঠাকুর তাঁর ভাই মুকুন্দ এবং রঘুনন্দন ছাড়া এই অঞ্চলের মহারথীগণের মধ্যে আচার্য‍্য প্রভু, নরোত্তম ঠাকুর, যদুনন্দন ঠাকুর, লোচনদাস,লোচনাচার্য‍্য,দাস গদাধর, দ্বিজহরি দাস, বাসুদেব ঘোষ প্রমুখ ছিলেন।*
*🌺সুদূর শ্রীহট্ট হতে যেরকম গঙ্গাতীরে বসবাস করবার জন্য শ্রীপাদ শ্রীজগন্নাথ মিশ্র, মাধবেন্দ্রপুরী, শ্রীঅদ্বৈতাচার্য‍্য প্রভৃতি এসেছিলেন, সেইরকম শ্রীনিবাস আচার্য‍্য পিতৃ বিয়োগের পর নিজ নিবাস স্থান চাখুন্দী গ্রাম পরিত‍্যাগ করে ভক্তসঙ্গ লালসায় শ্রীখন্ডের কাছেই যাজিগ্রামে এসে শ্রীপাঠ স্থাপন করেন। এই জায়গায় থাকার সময় কোন একদিন গঙ্গাস্নান যাত্রাকালে তাঁর নরহরি ঠাকুরের সঙ্গে প্রথম মিলন হয়।সেইরকম আবার রাজনন্দন নরোত্তম ঠাকুর যখন শ্রীক্ষেত্র হতে গৌড়দেশ অভিমুখে যাত্রা করেন তখন নরহরি ঠাকুরের দর্শন মানসে তিনিই এই শ্রীখন্ডে আগমন করেন এবং শ্রীজগন্নাথদেবের মহাপ্রসাদ সকলকে বিতরণ করেন।*
☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
*সুদামার হস্ত হরি,সস্নেহে ধারণ করি,*
    *আনন্দে একত্রে তব উপবিষ্ট হন।*
*বাল‍্যকালে গুরু গৃহে,উভে যাহা বাক‍্য কহে,*
   *উত্থাপন করি করে কথোপকথন।।*
*গুরুগৃহে বাস যবে,ঘটনা না ঘটে তবে,*
   *তোমার কি আছে সখা স্মরণে এখন?*
*ইন্ধন সংগ্রহ তরে,যাই বন অভ‍্যন্তরে,*
    *গুরু পত্নী করিলেন আদেশ যখন।।*
*যবে সে গভীর বনে,যাই মোরা দুই জনে,*
   *ঝড়,বৃষ্টি,বজ্রপাত আরম্ভে তখন।*
*ভীত মনে সেই কালে, বসি দোঁহে বৃক্ষ মূলে,*
    *প্রবল বারিতে শীতে জাগিল কম্পন।।*
🌸🌸🌸🌸🌸🌸👬🌸🌸🌸🌸🌸🌸
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 👉 ১৩১ হইতে ১৪০ পর্ব 🌷 বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী 🏵️ শ্রীরবীন্দ্রনাথ রাহা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/09/madhukori131to140.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১৩৯) বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী*
             *শ্রীখন্ডের-------মহিমা*
             ************************
*🍀এই প্রসঙ্গটি নরোত্তম বিলাস গ্রন্থে কি ভাবে লেখা আছে তা কৃপা করে আস্বাদন করুন।যথা=*
*🌷গৌড়দেশে প্রসিদ্ধ শ্রীখন্ড নামেতে গ্রাম।*
*🌷তথা আসিলেন নরোত্তম গুণধাম।।*
*🌷কিবা সে প্রেমের গতি চলে বা না চলে।*
*🌷চাহিয়া শ্রীখন্ড পানে ভাসে নেত্র জলে।।*
*🌷শ্রীরঘুনন্দন শুনি আগুসরি নিল।*
*🌷দূরে হইতে নরোত্তমে দেখি হর্ষ হৈল।।*
*🌷নরোত্তম ভূমে পড়ি তাঁরে প্রণমিতে।*
*🌷ধাইয়া করিল কোলে না পারে ছাড়িতে।।*
*🌷বহুক্ষণে স্থির হইয়া শ্রীরঘুনন্দন।*
*🌷নরোত্তমে লইয়া শীঘ্র করিল গমন।।*
*🌷শ্রীসরকার ঠাকুর সমীপেতে গিয়া।*
*🌷প্রণময়ে নরোত্তম ভূমে লোটাইয়া।।*
*🌷যদ‍্যাপি ঠাকুর বিচ্ছেদ অগ্নিতে।*
*🌷তথাপিহ নরোত্তমে দেখি হর্ষ চিতে।।*
*🌷আইস আইস বলি দুইবাহু পসারিয়া।*
*🌷নেত্রজলে ভাসে নরোত্তমে কোলে লৈয়া।।*
*🌷স্থির হইয়া আজ্ঞা দিলা শ্রীরঘুনন্দনে।*
*🌷নরোত্তমে লইয়া যাও গৌরাঙ্গ প্রাঙ্গণে।।*
*🌻এই প্রসঙ্গে অপরাধ ভঞ্জনের জন্য উল্লেখ করা দরকার যে শ্রীখন্ডে শ্রীমুকুন্দ,নরহরি ও রঘুনন্দন ছাড়া মহাপ্রভুর আরও দুইটি শাখার বাসস্থান ছিল এবং তাঁদের নাম হচ্ছে চিরঞ্জীব ও সুলোচন। যা এই পদবলী হতে সুস্পষ্ট ভাবে প্রতীয়মান হবে।*
*🌷জয় জয় শ্রীকৃষ্ণ চৈতন‍্য অবতার।*
*🌷কল্পবৃক্ষ রূপে প্রেম শাখার বিস্তার।।*
*🌷শাখা উপশাখা তার অনেক বাড়িল।*
*🌷মূল বৃক্ষের পঞ্চশাখা খন্ডেতে জন্মিল।।*
*🌻সেইরকম আবার শ্রীপাদ কবিরাজ গোস্বামী মহাশয় তাঁর শ্রীচরিতামৃতে লিখেছেন যে=*
*🌷মুকুন্দ নরহরি শ্রীরঘুনন্দন।*
*🌷খন্ডবাসী চিরঞ্জীব আর সুলোচন।।*
*🌷এইসব মহাশাখা চৈতন্য কৃপাধাম।*
*🌷প্রেম ফল ফুল করেন যাঁহা তাঁহা দান।।*
*🌻এই চিরঞ্জীব এবং সুলোচনের পূর্ব অবতারে ব্রজধামের স্বরূপ হিসাবে কবিকর্ণপুর তাঁরই রচিত গৌর গণোদ্দেশ দীপিকায় তাঁদের যথাক্রমে চন্দ্রিকা ও চন্দ্রশেখরা রূপে শ্রীবৃষভানু নন্দিনীর সেবিকা হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন।তেমনি আবার লোচনানন্দ আচার্য‍্য রচিত বৈষ্ণবাচার দর্পণে তাঁদের ভিন্ন স্বরূপ বলা হয়েছে।*

*🌷কলকন্ঠী সখি এবে চিরঞ্জীব দাস।*
*🌷চৈতন‍্যের শাখা হয় শ্রীখন্ডেতে বাস।।*
*🌷কলাবতী সখি এবে ঠাকুর সুলোচন।*
*🌷চৈতন‍্যের শাখা যার শ্রীখন্ডে ভবন।।*
*এটি দ্বারা শ্রীখন্ডের পঞ্চ শাখার পূর্ণ তাৎপর্য‍্য। সুতরাং মহাপ্রভু সন্ন‍্যাস গ্রহণ করে নীলাচলে স্থায়ী হলেন এবং ব্রজধাম প্রকট করবার জন্য তাঁর প্রধান প্রধান পরিকরগণকে বৃন্দাবনে প্রেরণ করবার ফলে নবদ্বীপ তমসাচ্ছন্ন হয়ে গেলেও নরহরি ঠাকুরের প্রভাবে শ্রীখন্ড যেন দ্বিতীয় বৃন্দাবনধামে পরিণত হয়ে মহাপ্রমুর মহিমা বঙ্গদেশে প্রচার এবং প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। মুকুন্দ,রঘুনন্দন, লোচনদাস, শ্রীনিবাস আচার্য‍্য, নরোত্তম ঠাকুর, যদুনন্দন ঠাকুর,দাস গদাধর, দ্বিজ হরিদাস,বাসুদেব ঘোষ, চিরঞ্জীব,সুলোচন, লোচনানন্দ আচার্য‍্য ইত্যাদি মহাবৈষ্ণবগণ এতে পূর্ণ সহায়তা করেছিলেন। তুলনামূলকভাবে বলা যায় যে শ্রীরূপ সনাতন ভাইয়ের পুত্র শ্রীজীব গোস্বামী যেভাবে অখন্ড দায়িত্ব নিয়ে শ্রীধাম বৃন্দাবন পরিচালনা করেছিলেন, সেইরকম আবার শ্রীখন্ডে নরহরি ঠাকুরের ভাইয়ের পুত্র রঘুনন্দনও শ্রীখন্ডে সব ব‍্যাপারে হোতা ছিলেন এবং মহাপ্রভুর বরপুত্র হিসাবে তিনি সর্বপ্রকারে সর্বভাবে এই গুরু দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন। সেই হিসাবে পুণ‍্যভূমি এই শ্রীখন্ডের রঘুনন্দন এবং শ্রীধাম বৃন্দাবনের শ্রীজীব গোস্বামীর ভূমিকা খুবই সমতুল ও তাৎপর্য‍্যপূর্ণ।*
*🌻ভক্তিমার্গের সবরকম গুণাবলীর আকর হয়ে এইভাবে শ্রীখন্ড মহিমা বিস্তার করে ধীরে ধীরে মুকুন্দ নরহরির প্রকট লীলা সাঙ্গ করবার সময় আগত হল, তাঁদের মধ্যে জ‍্যেষ্ঠ মুকুন্দ শ্রীশ্রীরাস পূর্ণিমার দিনে নিত‍্যলীলায় প্রবেশ করলেন। তারপরে দাস গদাধর সঙ্গোপনে ঠাকুর নরহরি একেবারে বিরহ ব‍্যথায় মৃতপ্রায় হয়ে গেলেন। গৌর পরিকরগণের বিরহের এই অন্তর্জ্বালা ভাষায় প্রকাশ করে যায় না।কেউ কারো রক্তের সম্পর্কের আপনজন নহেন এবং প্রত‍্যেকেই হচ্ছেন গৌরবক্ষে সুশোভিত ফুলমালার এক একটি পুষ্প।সবই যেন এক সুতায় গাঁথা এ পরমার্থ জীবনের এই সম্পর্কের কাছে বাস্তব সংসারী জীবনের সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে পরাজিত। এই বিরহ,এই হাহাকার, এই অন্তর্জ্বালা, এই দীর্ঘ নিশ্বাস, এই অনাহার, জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা সব মূর্ত্ত হয়ে আছে দাস গোস্বামীর জীবনে, আচার্য‍্য প্রভুর জীবনে, গদাধর পন্ডিতের জীবনে, নরহরি ঠাকুরের জীবনে যা ভক্তশ্রোতাগণ বিস্তৃত গ্রন্থগুলি পাঠ করলে অনুভব করতে পারবেন। যাইহোক,এই প্রসঙ্গে নরহরি ঠাকুরের কি দশা হয়েছিল তার সামান্য পরিচয় নিচে দেওয়া হল, যথা=*
*🌷কার্ত্তিকে শ্রীদাস গদাধর সঙ্গোপনে।*
*🌷প্রভু নরহরি শীর্ণ হইলা ক্ষণে ক্ষণে।।*
*🌷কে বুঝিতে পারে তাঁর অন্তরের ব‍্যথা।*
*🌷সেই দিবস হৈতে কারো সনে নাই কথা।।*
*🌷নিরন্তর সিক্ত দুই নেত্রের ধারাতে।*
*🌷তাহা কি বলিব যাহা দেখিলে সাক্ষাতে।।*
*🌷তাঁহার বিরহ ব‍্যথা সহিতে না পারি।*
*🌷ছাড়িয়া গেলেন শ্রীঠাকুর নরহরি।।*
😭😭😭😭😭😭😭😭😭😭😭😭😭
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
🆕 👉 ১৩১ হইতে ১৪০ পর্ব 🌷 বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী 🏵️ শ্রীরবীন্দ্রনাথ রাহা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/09/madhukori131to140.html
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
*(১৪০) বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী*
              *শ্রীখন্ডের------মহিমা*
             *************************
*🌷তাঁহার বিরহ ব‍্যথা সহিতে না পারি।*
*🌷ছাড়িয়া গেলেন শ্রীঠাকুর নরহরি।।*
*🍀অর্থ‍্যাৎ এই ভাবেই পরিণত বয়সে মহাপ্রভুর আদেশ কর্ম সুসম্পন্ন করে এইসব বিরহ ব‍্যথা সহ‍্য করতে না পেরে ব্রজের মধুমতী তাঁর প্রকট লীলা সাঙ্গ করেন। তার ফলে শ্রীখন্ডের ভাগ‍্যাকাশে যে নবারুণের উদয় হয়েছিল তা যেন চিরতরে অস্তমিত হল, অগ্রহায়ণের কৃষ্ণা একাদশী তিথিতে।*
*🍀উপরন্তু তাঁর ভাগবত্তার পরিচয় আরও বিশেষ ভাবে প্রকটিত হয় তাঁর লীলা সম্বরণ কাহিনী শুনে। কারণ অপ্রকটের পর তাঁর স্থূলদেহের কোন নিদর্শনই পাওয়া যায় না, যা ভক্তিরত্নাকর গ্রন্থে সুস্পষ্ট ভাবে ব‍্যক্ত করেছেন।*
*🌷মার্গশীর্ষ মাসে কৃষ্ণা একাদশী দিনে।*
*🌷অকস্মাৎ অদর্শন হৈলা এই স্থানে।।*
*🙏ইহাকেই বলে মহাপ্রয়াণ।ইহাকেই বলে মনুষ‍্য জীবনের প্রকৃত স্বার্থকতা। সুস্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় যে নররূপে লীলা করে গেলেও তাঁরা সব ছিলেন প্রকৃত ভগবদ্ শক্তির অধিকারী।এই জন্য তাঁর অপ্রকটের পর তাঁর স্থূলদেহের কোন চিহ্ন বা সমাধি কিছুই পাওয়া যায় না এই শ্রীখন্ডে।এইরকম মহাপ্রয়াণের পরিচয় পাওয়া যায় শ্রীমন্মহাপ্রভু,নিত‍্যানন্দপ্রভু ও শ্রীশ‍্যামানন্দপ্রভুর জীবনে, নরহরি দ্বিজ হরিদাস, দাস গদাধর প্রভৃতি সকলের অপ্রকটের পর তাঁর অনুরাগী শিষ‍্যভক্তগণ বিষাদে এবং দুঃখে মৃতপ্রায় হয়ে গেলেন। তার কিছু পরিচয় শ্রীরঘুনন্দনের এই উক্তি থেকে আভাষ পাওয়া যাবে, যথা=*
*🌷শুনি রঘুনন্দন কহে বারবার।*
*🌷দিনে দিনে অবনী হইতেছে অন্ধকার।।*
*🌷প্রভু নরহরি প্রিয়গণের সহিতে*।
*🌷ছাড়িয়া গেলেন মোরে দুঃখ ভুঞ্জাইতে।।*
*🌷কি লাগিয়া দেহে আছয়ে জীবন।*
*🌷ঐছে কত কহি কাঁদে শ্রীরঘুনন্দন।।*
*🌷প্রভু নরহরি করুণা সোঙরিয়া*।
*🌷কাঁদে শ্রীনিবাস ভূমিতলে লোটাইয়া।।*
*🌷কে ধরে ধৈরয এ দোঁহার কাঁদনেতে।*
*🌷উঠিল ক্রন্দন রোল শ্রীখন্ড গ্রামেতে।।*
*🌷শ্রীরঘুনন্দন স্থির হইয়া শ্রীনিবাসে।*
*🌷স্থির করি অনেক কহিল মৃদুভাষে।।*
*🌻গুরুদেব বা জ‍্যেষ্ঠতাত নরহরি ঠাকুরের তিরোভাব তিথি যথাযথ পালন করা হল, কিন্তু তারপরে প্রথম বার্ষিকী তিরোভাব তিথি যে ভাবে শ্রীরঘুনন্দন পালন করেছিলেন, তা বৈষ্ণব জগতের ইতিহাসে সকলের কাছে চিরস্মরণীয় এবং চির বরণীয় হয়ে আছে।এই তিথিকে সম‍্যক্ মর্য‍্যাদার সঙ্গে পালন করবার জন্য "বীর হাম্বীর" যথেষ্ট অর্থ ব‍্যয় করেছিলেন। এই তিরোভাব উৎসবে যে মহাবৈষ্ণব সম্মেলন হয়েছিল তা তৎপূর্বে বা তারপরে খেতুরী ছাড়া আর কোথাও হয়েছে কি না জানা যায় না।একাদশীর তিন-চারদিন আগেই সকল মহান্তগণ শ্রীখন্ডে আগমন করলেন, নাম সংকীর্তন, ভাগবত পাঠ প্রসঙ্গে শ্রীখন্ডের পুণ‍্যভূমিতে যেন নবজীবন লাভ করিল।এর বিস্তৃত বিবরণ ভক্তি রত্নাকর গ্রন্থে আছে। তবুও একটি ছোট পয়ার নিচে দেওয়া হল।*
*🌷কহিতে কি অতুল দুর্লভ সংকীর্তনে।*
*🌷মনুষ‍্যের কথা কি মজিবে দেবগণে।।*
*🌷ঐছে পরস্পর কত কহে ঠাঁই ঠাঁই।*
*🌷শ্রীখন্ড নগরেতে লোকের সংখ্যা নাই।।*
*🌷প্রতিদিন যে উৎসবে শ্রীখন্ড নগরে।*
*🌷তাহা না বর্ণিয়ে গ্রন্থ বাহুল‍্যের ভরে।।*
*🌷একাদশী দিনে যে উৎসব অন্ত নাই।*
*🌷যে শুনিল তাহা কিছু সংক্ষেপে জানাই।।*
*🌻এই উৎসবে রঘুনন্দন নিজহাতে সকল মহান্তগণকে মাল‍্য চন্দন দান করেছিলেন।পরম আনন্দে বীরচন্দ্র প্রভুর শ্রীঅঙ্গে চন্দন লেপন করেছিলেন এবং বীরচন্দ্র প্রভু নিজহাতে এই মালা-চন্দন শ্রীরঘুনন্দনকে পরিয়ে শক্তি সঞ্চার করেছিলেন।যে ভুবনমঙ্গল নাম সংকীর্তন যজ্ঞ হয়েছিল তাতে শ্রীখন্ডের মাটি সিক্ত হয়ে গিয়েছিল। এই সময়ে শ্রীনিবাস আচার্য‍্য যে ভাগবত পাঠ করেছিলেন, তা শুনেও এক অনাস্বাদিত আনন্দ তরঙ্গে সকলে বিলীন হয়ে গিয়েছিলেন।শ্রীনিবাসের প্রেমসমুদ্র যেন উথলিয়ে উঠিল এবং সেই পাঠ শুনে সকলে মিলিত সিদ্ধান্ত দিলেন যে একমাত্র শ্রীশুকদেব গোস্বামীর কৃপা ছাড়া এইরকম পাঠ কেউ করতে পারেন না। নিশ্চয়ই বেদব‍্যাস তাঁকে শক্তি সঞ্চার করেছেন।বৈষ্ণব দেহ চিন্ময় জীবের মঙ্গলের জন্যই তাঁরা নবরূপে ভুবনে এসেছেন এটি চির সত‍্য কথা।*
*🍀এই উৎসব প্রাঙ্গণে যে যতজন সমাবেশ হয়েছিল তার মধ্যে রামাই নামে এক জন্মান্ধ ভক্ত এসেছিলেন। তিনি এই ভুবন ভোলান নৃত‍্য অদর্শনে প্রেমাশ্রু বর্ষণ করতে লাগলেন এবং তাঁর খেদোক্তি শুনে করুণা পরবশ হয়ে বীরচন্দ্র প্রভু তাঁর দুই চক্ষুতে হাত বুলিয়ে দৃষ্টিশক্তি দান করেছিলেন।এটির দ্বারা এই চিরসত‍্য প্রমাণিত হয় যে ভগবদ্ কৃপায় সবই সম্ভব, জ্ঞান বিজ্ঞান এখানে পরাস্ত।*
☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
          *সুদামার কথন*
*ক্রমে ক্রমে অস্তাচলে,সূর্য‍্যদেব পড়ে ঢলে,*
   *চতুর্দিক আঁধারেতে ঘেরে সে সময়।*
*আশ পাশ স্থান যত,হয় বারিতে প্লাবিত,*
    *উচ নীচ কোন কিছু দৃষ্ট নাহি হয়।।*
*বনপথ অন্ধকার, নাহি পাই দেখিবার,*
   *অত‍্যন্ত ব‍্যাকুল তবে হই দুইজন*
*পরস্পর হাত ধরি,বন মাঝে ঘুরে মরি,*
    *গভীর রজনী ক্রমে হইল তখন।।*
*এহেন ঘটনা শুনি,তবে মুনি সান্দীপনি,*
    *গৃহে রহি অতিশয় উৎকণ্ঠিত হন।*
*পাব দোঁহারে কেমনে,চিন্তি তব নিজ মনে,*
    *প্রত‍্যুষে উঠিয়া বনে করেন গমন।।*
🪷🪷🪷🪷🪷🪷🙏🪷🪷🪷🪷🪷🪷
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧

🔜 ক্রমাগত 👉 ১৪১ হইতে ১৫০ পর্ব 🌷 বৈষ্ণব জগতের মাধুকরী 🏵️ শ্রীরবীন্দ্রনাথ রাহা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/09/madhukori141to150.html

✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
  ꧁👇 📖 সূচীপত্র 📖 ✍️ শ্রী জয়দেব দাঁ 📖 👇꧂


✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
   ✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️ 
নিবাস- বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ- বাঁশবাড়ী, থানা- ইংরেজ বাজার, জেলা- মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ, পিন কোড- ৭৩২১০১।
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
  *••••┉❀꧁👇🏠Home Page🏠👇꧂❀┅••••* 
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
    *••••━❀꧁👇 📖 সূচীপত্র 📖 👇꧂❀┅••••* 
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
     *••••━❀꧁👇📚 PDF গ্রন্থ 📚👇꧂❀┅••••* 
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧
    *••••┉━❀꧁ 🙏 রাধে রাধে 🙏 ꧂❀━┅••••* 
                   শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ
              হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।।
  *••••┉━❀꧁ 🙏 জয় জগন্নাথ 🙏 ꧂❀━┅••••*
              হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
              হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥
  *••••┉━❀꧁ 🙏 জয় রাধাকান্ত 🙏 ꧂ ❀━┅••••*
   🌷❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀🌷
   🏵️❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀🏵️
✧══════════•❁❀🙇❀❁•══════════✧






শেষ ৩০ দিনের পোস্টের মধ্যে সর্বাধিক Viewer নিম্নে :-

শ্রীকৃষ্ণ লীলা 🙏 সূচীপত্র ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_74.html

শিবরাত্রি ব্রতকথা 🙏 ১০৮ নাম 🙏 মন্ত্র সমূহ 🙏 শিবরাত্রি ব্রত কি ভাবে পৃথিবীতে প্রচলিত হল❓শিবরাত্রি ব্রত পালনে কি ফল লাভ হয় ❓শিবরাত্রি ব্রত পালন কি সকলেই করতে পারেন ❓🙏 সকল ভক্ত 👣 চরণে 👣 অসংখ্যকোটি 🙏 প্রণাম 🙏শ্রী মৃন্ময় নন্দী 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/02/shib.html

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নৌকা গঠন তত্ব ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 https://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_22.html

🙇 রাধে রাধে 🙇 শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ 👏 হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।। 🙇 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/09/today.html

শ্রীঅম্বরীষ মহারাজের ছোট রানী 🙏 চারিযুগের ভক্তগাঁথা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/12/blog-post_97.html

মনোশিক্ষা 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 🙏 শ্রীযুক্ত প্রেমানন্দ দাস ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/jaydeb_14.html

বকরূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে চারটি প্রশ্ন করেছিলেন সেই প্রশ্নই বা কি? ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/05/blog-post_98.html

শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু 🥀 সংক্ষিপ্ত কথন 🙏 প্রথম ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/01/mohaprobhu-joydeb-dawn.html

*নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলং শুকমুখাদকমৃতদ্রবসংযুতম্।**পিবত ভাগবতং রসমালয়ং মুহুরহো রসিকা ভূবি ভাবুকাঃ।।*✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/09/blog-post_89.html

শ্রীআমলকী একাদশী ব্রতের মাহাত্ম‍্য কি ❓ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/ekadoshi.html