🚩🚩🚩🙇🙇🙇 রাধে রাধে 🙇🙇🙇🚩🚩🚩

১৪০ হইতে ১৫০ পর্ব 🌷 শ্রীরামানন্দ রায় 🦚🦚 কাষ্ঠ পুত্তুলিকা 🏵️ শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/08/ramananda140to150.html


  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
🔙 পূর্ব লীলা 👉 ১৩৯. পুনর্ম্মিলন 👏 শ্রীরামানন্দ রায়  🦚🦚 কাষ্ঠ পুত্তুলিকা 🏵️  শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/08/ramnananda139.html
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
🆕 ১৪০ হইতে ১৫০ পর্ব 🌷 শ্রীরামানন্দ রায়  🦚🦚 কাষ্ঠ পুত্তুলিকা 🏵️  শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/08/ramananda140to150.html
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧

  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
🆕 ১৪০. শ্রীরামানন্দ রায়  🦚🦚 কাষ্ঠ পুত্তুলিকা 🏵️  শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/08/ramananda140to150.html
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১৪০)শ্রীরামানন্দ রায়,কাষ্ঠ পুত্তলিকা*
         *🙏🙏পুনর্ম্মিলন🙏🙏*
       """""""""""""""""""""""""""""""""""""""
*🌺তাই শ্রীপাদ স্বরূপ দামোদর বলেছেন।*
*🌷যদ্বা-তদ্বা কবির বাক‍্যে হয় রসাভাস।*
*🌷সিদ্ধান্ত-বিরুদ্ধ শুনিতে না হয় উল্লাস।।*
*🌷রস-রসাভাস যার নাহিক বিচার।*
*🌷ভক্তি-সিদ্ধান্তসিন্ধুর নাহি পায় পার।।*
*🌷ব‍্যাকরণ নাহি জানে,না জানে অলঙ্কার।*
*🌷নাটকালঙ্কার জ্ঞান নাহিক যাহার।।*
*🌷কৃষ্ণলীলা বর্ণিতে না জানে সেই ছার।*
*🌷বিষম দুর্গম এই চৈতন‍্য বিহার*।।
*🌷কৃষ্ণলীলা গৌরলীলা সে করু বর্ণন।*
*🌷গৌর পাদপদ্ম হয় যার প্রাণধন।।*
*🌷গ্রাম‍্য কবির কবিত্ব শুনিতে হয় দুঃখ।*
*🌷বিদগ্ধ আত্মীয় কাব‍্য শুনিতে হয় সুখ।।*
*🍀সুতরাং রসাভাস, সিদ্ধান্তবিরোধ, নাটকালঙ্কারজ্ঞানাভাব, নাটক রচনার প্রধান অন্তরায়।এর উপরে ভক্তিভাবিত হৃদয় ছাড়া শ্রীকৃষ্ণলীলায় অপরের প্রবেশ অধিকার জন্মে না, অতএব শ্রীকৃষ্ণলীলা সম্বন্ধীয় নাটক লেখা সুবিজ্ঞ ভক্তের কাজ।এইকথা বলেই শ্রীপাদ স্বরূপদামোদর শ্রীপাদ রূপের নাটকের কথা বলে তার প্রশংসা করছেন, যথা=*
*🌷রূপ যৈছে দুই নাটক করিয়াছে আরম্ভ।*
*🌷শুনিতে আনন্দ বাড়ে যার মুখবন্ধ।।*
*☘এতদ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে নাটক-রচনা যে-সে লোকের কর্ম নয়।যে-সে লোকের রচিত নাটক পাঠে রসগ্রাহী পাঠকগণের পরিতৃপ্তি জন্মে না।প্রত‍্যুত(পক্ষান্তরে)রসাভাসাদি শুনে সুবিজ্ঞ পাঠকের অতীব কষ্টের কারণই হয়ে থাকে।শ্রীরূপের নাটকের মুখবন্ধ শুনেই সুবিজ্ঞ ভক্তগণ পরম আনন্দলাভ করেছিলেন।*
*🌻শ্রীরূপ নিজে সুপন্ডিত, এর উপরে তিনি প্রেমভক্তির আদর্শ। কিন্তু এই দুইটি অলোকসামান‍্য (অসাধারণ) গুণও শ্রীরূপের নাটক রচনা উৎকর্ষের প্রধানতম হেতু নয়।তিনি স্বভাবতই সুকবি ছিলেন।কিন্তু এইরকম স্বাভাবিক কবিত্বশক্তি থাকলেই যে শ্রীকৃষ্ণলীলা নাটক ভক্তজনের প্রীতিকরী হয়, আমরা তাও মনে করতে পারি না।শ্রীরূপের লিখিত নাটক শুনে শ্রীপাদ স্বরূপদামোদরের মতো সুতীক্ষ্ণ সমালোচক প্রীতিলাভ করেছিলেন, শ্রীরামরায়ের মত প্রবীণ ভক্ত ও সাহিত‍্যিক বিমুগ্ধ হয়েছিলেন, শ্রীসার্বভৌমের মত সর্বশাস্ত্রাধ‍্যাপক পুলকিত হয়েছিলেন। শ্রীরূপের নাটক যে অসাধারণ ও অলোকসামান‍্য (মনুষ‍্যলোকে সচরাচর ঘটে না এমন) কবিত্বমাধুর্য‍্যে পরিপ্লুত(নিমজ্জিত),তাতে আর কোন সন্দেহ নাই।এইরকম হবার কারণ কি? এই হেতু শ্রীচরিতামৃতেই লিখিত হয়েছে।এর একমাত্র কারণ স্বয়ং ভগবান্ শ্রীশ্রীমহাপ্রভুর শক্তিসঞ্চার। শ্রীশ্রীভগবৎশক্তিতে অনুপ্রাণিত হয়ে, অনুপ্রবিষ্ট(অনুপ্রবেশ) ও আবিষ্ট(বিহ্বল) হয়েই, শ্রীরূপ এইসব গ্রন্থ রচনা করেন।শ্রীভগবান তাঁর হৃদয়ে শক্তিসঞ্চারিত করেই তাঁহা দ্বারা ভক্ত-হৃদয়রঞ্জন জন্য শ্রীকৃষ্ণলীলার নাটক প্রকটিত করেন এবং তাঁর হৃদয়ে বৈষ্ণবতত্ত্বের পূর্ণ আলোক প্রজ্জ্বলিত করে দেন,যথা শ্রীচৈতন‍্যচরিতামৃতে ঃ---*
*🌷লোক ভিড় ভয়ে প্রভুদশাশ্বমেধে যাঞা।*
*🌷রূপ গোসাঞিকে শিক্ষা করান শক্তি সঞ্চারিয়া।।*
*🌷কৃষ্ণতত্ত্ব ভক্তিতত্ত্ব রসতত্ত্ব প্রান্ত।*
*🌷সব শিখাইলা প্রভু ভাগবত সিদ্ধান্ত।।*
*🌷রামানন্দ পাশে যত সিদ্ধান্ত শুনিল।*
*🌷রূপে কৃপা করি তাহা সব সঞ্চারিল।।*
*🌷শ্রীরূপ হৃদয়ে প্রভু শক্তি সঞ্চারিলা।*
*🌷সর্বতত্ত্ব নিরূপণে প্রবীণ করিলা।।*
*🌹শ্রীরামানন্দের শ্রীমুখের কথাও শুনুন।শ্রীরায় মহাশয় বলছেন ঃ--*
*🌷-----------তোমার প্রসাদ বিনে।*
*🌷তোমার হৃদয় এই জানিল কেমনে।।*
*🌷আমাতে সঞ্চারি পূর্ব কহিলে সিদ্ধান্ত।*
*🌷যে সব সিদ্ধান্তের ব্রহ্মা নাহি পায় অন্ত।।*
*🌷তাতে জানি পূর্বে তোমার পাঞাছে প্রসাদ।*
*🌷তাহা বিনু নহে তোমার হৃদয়ের অনুবাদ।।*
*🍀শ্রীমন্মহাপ্রভুর কৃপায় শ্রীরূপের এই অলোকসামান‍্য কবিত্বের হেতু।আগে অনেকবার বলা হয়েছে, শ্রীরামরায় সংস্কৃত কাব‍্য শাস্ত্রের একজন প্রবীণ পন্ডিত।জগৎ বিখ‍্যাত শ্রীসার্বভৌম ভট্টাচার্য্য মহাশয়ও রায় মহাশয়ের প্রশংসা করতেন।শ্রীরূপগোস্বামী নাটক লিখতেন,শ্রীপাদ স্বরূপ দামোদরের কাছে এইকথা বিশেষরূপে শুনে রায় মহাশয় শ্রীপিদ গোস্বামীপাদকে সম্বোধন করে বললেন, শ্রীপাদ!আপনার নাটকের নান্দী শ্লোকটি শুনতে ইচ্ছা করি, দয়া করে পাঠ করুন।*
*🌹আগেই বলেছি শ্রীরূপ লজ্জাশীল,নিজের শ্লোক অন‍্যকে শুনাবেন, এতে কে কি মনে করবেন, বিশেষ করে তিনি এমন কি-ই বা লিখেছেন যা অন‍্যের শ্রুতিযোগ‍্য।এইরকম ভেবে তিনি কিছুক্ষণ নীরব রইলেন। কিন্তু মহাপ্রভুর আজ্ঞার কথা মনে করে শ্রীরূপ তখনি পড়তে লাগলেন ঃ-----*
*🌷সুধানাং চিন্দ্রীণামপি মধুরিমোন্মাদদমনী,*
*🌷_ধানা রাধাদিপ্রণয়বনসারৈঃ সুরভিতাম্।*
*🌷সমন্তাৎ সন্তাপোদ্গমবিষমসংসারসরণী,*
*🌷প্রণীতাং তে তৃষ্ণাং হরতু হরিলীলাশিখরিণী।।*
*☘এই পদ‍্যটিতে বারটি পদ আছে, সুতরাং এইটি দ্বাদশপদা নান্দী।এতে আশীর্বাদ আছে,পরম মঙ্গল বস্তুর নির্দেশ করা হয়েছে।এই পদ‍্য চন্দ্র নামাঙ্কিত মঙ্গলার্থপদে সমুজ্জ্বল হয়েছে।নাটক চন্দ্রিকার নান্দীশ্লোকের যে সব লক্ষণ লিখিত আছে,এই পদ‍্যটি সেইসব লক্ষণের অতি সুন্দর উদাহরণ।এর ভাবার্থ এই যে,শ্রীকৃষ্ণের উদারবিলাস, মন্দহাস‍্য, প্রেমাবলোকন, রমণীয়, নর্মবাক‍্যভঙ্গী প্রভৃতি পরমানন্দময়ী লীলাবিশেষ।এই লীলা "শিখরণী" সদৃশী সুধামধুরা। "শিখরণী" শব্দের অর্থ "রসালা" ও ছন্দোবিশেষ।এ স্থলে শিখরিণী শব্দটির দ্বারা এক দিকে এই পদ‍্যের ছন্দের নাম প্রকাশিত হয়েছে, অন‍্যদিকে হরিলীলাকে শিখরিণী অর্থ‍্যাৎ রসালা (দধি চিনি ও এলাচি প্রভৃতি দ্বারা তৈরী তৃষ্ণাপ্রশমক পানীয় বিশেষ) সদৃশ সুপেয়রূপে বর্ণনা করা হয়েছে।এই হরিলীলা শিখরিণীর মাধুর্য‍্য অলৌকিক ও সর্ব মাধুর্য‍্যাপেক্ষা অধিকতর উৎকর্ষশালী।কবিপ্রসিদ্ধি এই যে চন্দ্রসুধার মাধুর্য‍্যের মতো আর মাধুর্য‍্য নাই। কিন্তু তা ভ্রান্তিমাত্র। এই হরিলীলা শিখরিণীর মধুরতা চন্দ্রসুধার অহঙ্কারকেও নিরস্ত (ক্ষিন্ত) করে দেয়। এই হরিলীলা-রসালার আর একটি মাধুর্য‍্যবর্দ্ধক গুণ এ যে ইহা শ্রীরাধাদির প্রণয়স্বরূপ কর্পূরে সুবাসিত।এতাদৃশ (এইরকম) হরিলীলারূপিণীসুধামধুরা শিখরিণী তোমার সবরকম সন্তপোদ্গম-বিষম-সংসার (মানসিক তাপযুক্ত বিষম সংসারের)পথভ্রমণজনিত প্রশমন করুন।*
❤❤❤❤❤❤🌹❤❤❤❤❤❤


  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧

🆕 ১৪১. নান্দীশ্লোকে ইষ্টদেব বর্ণনেরও রীতি আছে 🌻 শ্রীরামানন্দ রায়  🦚🦚 কাষ্ঠ পুত্তুলিকা 🏵️  শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/08/ramananda140to150.html

  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১৪১)শ্রীরায় রামানন্দ, বিশাখা*
          *🦚🦚পুনর্ম্মিলন🦚🦚*
         *************************
*🌻নান্দী=কাব‍্য,নাটক ইত‍্যাদির আরম্ভের সময় দেবতার স্তব বা স্তুতি।*
*🌹নান্দীশ্লোকে ইষ্টদেব বর্ণনেরও রীতি আছে।কাব‍্যশাস্ত্রবিদ্ শ্রীরায় মহাশয় তাই আগ্রহ সহকারে জিজ্ঞাসা করলেন,শ্রীপাদ!এখন ইষ্টদেবের বর্ণনসূচক শ্লোকটি বলুন।শ্রীরূপ সলজ্জভাবে শ্রীগৌরাঙ্গসুন্দরের শ্রীমুখমন্ডলের প্রতি ঈষৎ(সামান‍্য) দৃষ্টি করলেন।শ্রীরূপ মহাপ্রভুর মনের ভাব জানতেন। মহাপ্রভু প্রচ্ছন্নাবতার,(অর্থ‍্যাৎ মহাপ্রভুর প্রকৃত যে রূপ তা লুকিয়ে রেখে সন্ন‍্যাসী বেশে দৃষ্টিদান, তা শ্রীরূপ,সনাতন,রামরায়, সার্বভৌম, সকলেই জেনে গিয়েছিলেন)তিনি সকলের কাছে সব সময়ে আত্মপ্রকাশ করতেন না,তাঁর তাদৃশ (সেইরকম)প্রকাশ বাসনাও ছিল না।এই ইষ্টদেব বর্ণন শুনে পাছে তিনি কি মনে করেন,পাছে বা অসন্তুষ্ট হন, শ্রীরূপ এইরকম চিন্তা করে মহাপ্রভুর শ্রীমুখমন্ডলের দিকে সলজ্জ দৃষ্টিতে যেন কৃপা অনুমতির জন্য তাকিয়ে রইলেন।ভক্তবৎসল মহাপ্রভু শ্রীরূপের মনের আশা পূরণ করে বললেন, শ্রীরূপ গ্রন্থ লিখেছে, ভক্ত বৈষ্ণবগণের কাছে সেই গ্রন্থের শ্লোক শুনাবে, এতে তোমার লজ্জা কি?রামরায় তোমার গ্রন্থের ইষ্টদেব বর্ণন শুনতে অভিলাষী হয়েছে।একবার রামরায়কে পড়ে শুনিয়ে দাও।শ্রীরূপ মহাপ্রভুর কৃপা অনুমতি পেয়ে পড়তে লাগলেন ঃ---*
*🌷অনর্পিতচরীং চিরাৎ করুণয়াবতীর্ণঃ কলৌ,*
*🌷সমর্পয়তুমুন্নতোজ্জ্বলরসাং স্বভক্তিশ্রিয়ম্।*
*🌷হরিঃ পুরটসুন্দরদ‍্যুতিকদম্বসন্দীপিতঃ,*
*🌷সদা হৃদয়কন্দরে স্ফুরতু বঃ শচীনন্দনঃ।।*
*🌺অর্থ‍্যাৎ ইতঃপূর্বে কেউ কখনও উন্নত-উজ্জ্বলরস প্রধান ভক্তি এ জগতে প্রচার করেন নাই।কপিলদেবাদি ভগবদ্ভক্তজনের উপদেশ প্রদান করেছেন বটে, কিন্তু উজ্জ্বলরস প্রধান ভক্তির প্রচার আর কেউ কখনও করেন নাই।মানুষ সমাজে এই অনর্পিতচরী উজ্জ্বলরস প্রধান ভক্তিশ্রী প্রদান করবার জন্য কনককান্তি সমুজ্জ্বল কিরণ-কদম্ব সন্দীপিত শ্রীগৌরহরি কলিকালে করুণা করে অবতীর্ণ হয়েছেন।এই শচীনন্দন হরি আমাদের হৃদয়কন্দরে সতত স্ফুরিত হন।*
*🌹শ্রীপাদ গ্রন্থকার এই পদ‍্যে হৃদয়কে কন্দররূপে বর্ণন করায় পদ‍্যোক্ত "হরি" শব্দের আরোপিত অর্থ সিংহ।অর্থ‍্যাৎ পর্বতকন্দরে সিংহের বিদ‍্যমানতায় সেখানে যেরকম হাতী প্রভৃতি সমাগম সম্ভাবিত হতে পারে না, তদ্রূপ স্বর্ণকান্তি অপেক্ষাও সমুজ্জ্বলসুন্দর দ‍্যুতিকদম্বসন্দীপিত শ্রীশচীনন্দনরূপ সিংহ হৃদয়কন্দরে স্ফুরিত থাকলে তমোরূপ হাতী প্রভৃতি দ্বারা হৃদয় কলুষিত হবার আর আশঙ্কা থাকে না।হরি শব্দের চন্দ্র অর্থও এস্থলে প্রযুক্ত হতে পারে।*
*🌻হরি শব্দের অনেক অর্থ আছে,*
*🌷হরিরিন্দ্রো হরির্ভানু র্হরিবিষ্ণু র্হরির্ম্মরুৎ।*
*🌷হরিঃ সিংহো হরির্ভেকো হরির্ব্বাজী হরিঃ কপিঃ।।*
*হরিরংশু হরিভিরু র্হরিঃ সোম হরির্ষমঃ।*
*🌷হরিঃ শুক্রো হরিঃ সর্পঃ সুবণোহপি হরিঃ স্মৃতঃ।।*
*🌻এই পদ‍্যটি শোনা মাত্রই মহাপ্রভু বলে উঠলেন "একি"! এ অতিস্তুতি কেন?*
*🍀এখানে যে "অতিস্তুতি" শব্দের প্রয়োগ করা হয়েছে,তা অলঙ্কার শাস্ত্রের "অত‍্যুক্তি অর্থবোধক"।অত‍্যুক্তি অর্থ অতিরঞ্জন। কুবলয়ানন্দকারিকায় অত‍্যুক্তির যে লক্ষণ দেখা যায় তা এই =*
*🌷আত‍্যুক্তিরদ্ভুতাখ‍্যশৌর্য‍্যবীর্য‍্যাদিবর্ণনম্।*
*🌷ত্বয়ি দাতরি রাজেন্দ্র!যাচকা কল্পশাখিনঃ।।*
*☘অর্থ‍্যাৎ শৌর্য‍্যবীর্য‍্যাদি সম্বন্ধে অদ্ভুত ও মিথ‍্যা বর্ণনের নামই অত‍্যুক্তি।দৃষ্টান্তস্থলে বলা হয়, হে রাজেন্দ্র!তুমি যখন দান করো,তখন কল্পবৃক্ষও তোমার কাছে দানপ্রার্থী হয়।*
*🌺মূল পর্বে ফিরি, শ্রীরামরায়াদি ভক্তগণ উচ্চৈঃস্বরে বললেন,প্রভো অতিস্তুতি কোথায়,যাঁর স্বরূপ বর্ণনায় অসম্ভব, তাঁর আবার অতিস্তুতি কি? বিদগ্ধমাধব নাটকের ইষ্টদেবের বর্ণন শোনার পর শ্রীরামানন্দ রায় জিজ্ঞাসা করলেন, শ্রীপাদ!কোন আমুখে পাত্রসন্নিধান করা হয়েছে,বলতে আজ্ঞা হয়। সংস্কৃত ভাষার নাট‍্যশাস্ত্রের নিয়ম অনুসারে কোন প্রস্তাবনায় বা কোন আমুখে পাত্রপ্রবেশ করার কাজ নিষ্পন্ন হয়েছে,এটিই রামরায় মহাশয়ের জিজ্ঞাস‍্য।*
*🙏এর উত্তরে শ্রীরূপ বলেন, প্রবর্তক নামক আমুখে(প্রস্তাবনায়) তিনি বিদগ্ধমাধব নাটকের পাত্রপ্রবেশ কাজ নিষ্পন্ন হয়েছে।শ্রীপাদ গ্রন্থকার তদীয় নাটকচন্দ্রিকায় প্রবর্ত্তক আমুখের যে লক্ষণ লিখেছেন তা এই ঃ---*
*🌷আক্ষিপ্ত কাল-সাম‍্যেন প্রবেশঃ স‍্যাৎ প্রবর্ত্তকম্।*
*🌻প্রবৃত্তকাল(আরম্ভসময়) বর্ণনের সাদৃশ‍্য(তুল‍্যতা)সূচনায় যে স্থলে পাত্রের প্রবেশ হয়,তারই নাম প্রবর্ত্তক আমুখ।*
*🌻বিদগ্ধমাধব নাটকটি নাটক-নির্ণায়ক লক্ষণাবলীর সবরকম উদাহরণে সমলঙ্কৃত।শ্রীরামরায়প্রবীণ সাহিত‍্যিক পন্ডিত, তিনি বিদগ্ধমাধব নাটক পরীক্ষা করতে বসেছেন।শ্রীপাদ রূপ গোস্বামীর নাটকে নাট‍্যশাস্ত্রোক্ত বিধিসমূহ কি পরিমাণে প্রতিপালিত হয়েছে, রামরায় তার পরীক্ষা করছেন, তিনি কেবল লক্ষণ-পরীক্ষা করেই তৃপ্ত হচ্ছেন না,এক একটি উদাহরণ শুনেও তাঁর হৃদয়ে ভক্তিরসের সুধাধারা প্রবাহিত হচ্ছে।শ্রোতাগণ শ্রীপাদ রূপের এক এক শ্লোক শুনেই আনন্দে উল্লসিত হয়ে উঠছেন।শ্রীহরিদাস ঠাকুরের নিভৃত ভজনস্থলীতে প্রেমানন্দের পূর্ণ উৎসব আজ উচ্ছসিত হয়ে উঠেছে।পুরীধামে সকলই যেন পূর্ণতার প্রতিছবি।শ্রীজগন্নাথদেবের শ্রীমন্দির সততই ভক্তসমাগমে পরিপূর্ণ, আনন্দবাজার আনন্দের পূর্ণবাজার।ওদিকে অনন্তবিসারি বা অনন্তবিস্তার উত্তাল তরঙ্গসঙ্কুল বিশাল নীলাম্বু যেন মহাপূর্ণতার সাক্ষাৎ প্রতিমূর্তি। এই কল্লোল কোলাহলময় মহোদধির তটপ্রান্তে শ্রীহরিদাস ঠাকুরের ভজনকুটীর।এই কুটীর উচুপ্রাচীরে অবস্থিত এবং নগরের শেষ প্রান্তে।এখানে সমুদ্রের তরঙ্গগর্জন অথবা নগরের লোক কোলাহল প্রায়শ দেখাই যায় না।শান্তিময় সুখময় পবিত্রতাময় এক প্রগাঢ় নিস্তব্ধতা এই ভজনকুটীরে সততই অনুভূত হয়ে থাকে।শ্রীপাদ রূপগোস্বামী এই নির্জন স্থলে বসে নাটক লিখছিলেন, আনন্দময় মহাপ্রভু প্রিয়তম পার্ষদগণকে সঙ্গে নিয়ে শ্রীরূপের নাটক পরীক্ষার ছলে এই জায়গায় যে আনন্দের তরঙ্গ বিস্তার করেন, সে তরঙ্গ বিশাল সমুদ্র হতেও বড়।সেটি অবশ‍্য ভক্ত পাঠকগণের ধ‍্যানচক্ষুর সন্দর্শনীয় বিষয়। লেখকের উক্তি, আমার মত হীনমতি অধম সে আনন্দসিন্ধুর বিন্দুমাত্রও হৃদয়ে ধারণ করতে সমর্থ নয়।*

  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
🆕  ১৪২. পুনর্ম্মিলন 🌷 শ্রীরামানন্দ রায়  🦚🦚 কাষ্ঠ পুত্তুলিকা 🏵️  শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/08/ramananda140to150.html
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১৪২)শ্রীরামানন্দ রায়,বিশাখা*
        *🙏🙏পুনর্ম্মিলন🙏🙏*
      **************************
*🌺যাইহোক,তারপরে শ্রীরামরায় আনন্দ বিহ্বল চিত্তে আবার জিজ্ঞাসা করলেন,শ্রীপাদ!আপনার নাটকে প্ররোচনাদি 🌹প্ররোচনা নাটকশাস্ত্রের পারিভাষিক শব্দ।সাহিত‍্যদর্পণকার এই শব্দটি দুই জায়গায় দুই অর্থে ব‍্যবহার করেছেন।এক জায়গায় লিখিত হয়েছে ঃ---*
*🌷প্ররোচনাতু বিজ্ঞেরা সংহারার্থ- প্রদর্শনী।*
*অর্থ‍্যাৎ উপসংহ্রিয়মান প্রয়োজন-প্রতিপাদিকা(বিষয়ীভূত) প্রোৎসাহ (প্রবল উৎসাহ) বাক‍্য প্ররোচনা নামে অভিহিত হয়ে থাকে। শ্রীরামরায় এখানে এই প্ররোচনার কথা উল্লেখ করেননি।থিনি যে প্ররোচনার কথা বলেছেন তার লক্ষণ এই "অঙ্গান‍্যত্রোন্মুখীকারঃ প্রশংসাতঃ প্ররোচনা"।অর্থ‍্যাৎ অভিনয় দর্শনাদিতে দর্শকমন্ডলীর প্রবৃত্তি উন্মুখীকরণসূচক প্রশংসা বাক‍্যাদিই প্ররোচনা নামে অভিহিত হয়ে থাকে।🌹। প্ররোচনা সম্বন্ধে যে উদাহরণ উল্লিখিত হয়েছে সেই শ্লোক জানতে ইচ্ছা করছে। এই কথায় শ্রীমন্মহাপ্রভুও আগ্রহ প্রকাশ করে বললেন, "ভাল,শ্রীরূপ!তোমার নাটকের প্ররোচনা বাক‍্য শুনতে আমারও সাধ হচ্ছে, এইবার সেই অংশ পাঠ করো।তখন শ্রীরূপ পাঠ করলেন ঃ--*
*ভক্তানামুগগাদনর্গলধিয়াং বর্গো নিসর্গোজ্জ্বলঃ,*
*শীলৈঃ পল্লবিতঃ স বল্লববধূবন্ধোঃ প্রবন্ধোহপ‍্যসৌ।*
*লেভে চত্বরতাঞ্চ তান্ডববিধে র্বৃন্দাটবীগর্ভভূ-,*
*-র্মন‍্যে মদ্বিধপুণ‍্যমন্ডলপরীপাকোহয়মুন্মীলতি।।*
*🍀অর্থ‍্যাৎ বিশুদ্ধচেতা স্বভাবতঃ সমুজ্জ্বল ভক্তবর্গ এই সভায় সমুদিত (উদিত) হয়েছেন,গোপীবন্ধু শ্রীকৃষ্ণের এই নাটক প্রবন্ধও স্বভাবোক্তি অলঙ্কারে সুসজ্জিত করা।শ্রীবৃন্দাবনের মধ্যে রাসপীঠ রঙ্গস্থলীরূপে নির্দিষ্ট করা হয়েছেন।এতে মনে হচ্ছে মাদৃশ (আমার মত) ব‍্যক্তির স‍ৌভাগ‍্যের পরিণামফল আজ বুঝি প্রকটিত হল।*
*🌹শ্রীরামরায় পূর্বোক্ত প্রকারে নাটকের নানান লক্ষসূচক বাক‍্যাদি সম্বন্ধে বিদগ্ধমাধব নাটকে যে সব উদাহরণ আছে,তা শুনলেন।তিনি দেখলেন, বিদগ্ধমাধব নাটকটি লক্ষণাবলীর পূর্ণ আদর্শ।এর উপরে এই নাটকটি প্রেমভক্তি রসের মহাসাগর সমান।একদিকে শ্রীরামরায় উদাহরণাবলীর প্রশ্ন করছেন, অন‍্যদিকে শ্রীরূপ ভক্তিভরে তাঁর উত্তরসূচক শ্লোকগুলি পাঠ করে শুনাচ্ছেন ; অন‍্য একদিকে সপার্ষদ মহাপ্রভু শ্লোকগুলির রসাস্বাদন করে আনন্দে পুলকিত হচ্ছেন।*
*🙏প্রিয় পাঠক,শ্রীরূপের নাটক-বিচারের এই ভক্তিময় দৃশ্য মানসনেত্রে সন্দর্শন করুন, আর সেই ভাব হৃদয়ে নিয়ে বিদগ্ধমাধব নাটকটি পাঠ করুন, দেখতে পাবেন, আপনার অন্তশ্চক্ষুর সামনে প্রেমভক্তির এক বিশাল মহাসাগর তরঙ্গে তরঙ্গে কল্লোলময় হয়ে উঠছে।*
*🌷যাইহোক,শ্রীরামানন্দ রায় নাটক লক্ষণের উদাহরণ প্রশ্নাবলীর পরিসমাপ্তি করে নূতন প্রশ্ন সূচনা করলেন। তিনি বললেন,শ্রীপাদ! নাটকলক্ষণের উদাহরণগুলি শুনে খুবই আনন্দলাভ করিলাম।সাহিত‍্যক্ষেত্রে নাটক উচ্চতম আসনে অবস্থিত।নাটক-রচনা খুবই কঠিন ব‍্যাপার, কিন্তু আপনি যে নাটকটি লিখছেন, আমি যতদূর শুনতে পেলাম,তাতে আমার মনে হচ্ছে, নাটকীয় লক্ষণ বিচারে আপনার এই নাটকটি আদর্শরূপে গৃহীত হবার উপযুক্ত। এর উপরে,এই নাটকে প্রেমভক্তি রসের বিশাল প্রবাহ সর্বত্র প্রসৃত(ব‍্যাপ্ত) হয়েছে।এখন প্রেম-উৎপত্তির হেতু সম্বন্ধে আপনি যে সব উদাহরণ শ্লোক রচনা করেছেন,তা শুনতে বড় সাধ হচ্ছে, কৃপা করে তার সম্বন্ধে উদাহরণ শ্লোকগুলি শুনালে কৃতার্থ হব। প্রথমে রূপের উদাহরণসূচক পদ‍্যটি শুনতে বাসনা হচ্ছে,দয়া করে পাঠ করুন। শ্রীরূপ পাঠ করলেন ঃ---*
*একস‍্য শ্রুতমেব লুম্পতি মতিং কৃষ্ণেতি নামাক্ষরং,*
*সান্দ্রোন্মাদপরম্পরামুপনয়ত‍্যন‍্যস‍্য বংশীকলঃ।*
*এষ স্নিগ্ধঘনদ‍্যুতির্মনসি মে লগ্নঃ পটে বীক্ষণাৎ,*
*কষ্টং ধিক্ পুরুষত্রয়ে রতিরভূন্মন‍্যে মৃতিঃ শ্রেয়সী।।*
*🙏অমরকবি শ্রীগোবিন্দদাস এই পদ‍্যটির ভাব নিয়ে যে অতি মধুর মনোহর অপূর্ব পদ রচনা করেছেন, এখানে তা দেওয়া হল।*
     *সজনি মরণ মানিয়ে বহুভাগী।*
*কুলবতী তিন পুরুখে, ভেলি আরতি,*
     *জীবন কিয়ে সুখ লাগি।।*
*পহলে শুনুলুঁ হাম,শ‍্যাম দুই আখর,*
     *তৈখনে মন চুরি কেল।*
*না জানি কো ঐছে, মুলী আলাপই,*
       *চমকই শ্রুতি হরি নেল।।*
*না জানিয়ে কো ঐছে, পটে দরশায়লি,*
       *নব জলধর জিনি কাঁতি।*
*চকিত হইয়া হাম,যাঁহা যাঁহা ধাইয়ে,*
       *তাঁহা তাঁহা রোধয়ে মাতি।।*
*গোবিন্দ দাস, কহয়ে শুন সুন্দরী,*
      *অতএব করহে বিশোয়াস।*
*যাকর নাম , মুরলী রব তাকর,*
      *পটে ভেল গো পরকাশ।*
              *ক্রমাগত*
🪷🪷🪷🪷🪷🦚🦚🪷🪷🪷🪷🪷🙏


  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
🆕  ১৪৩. পুনর্ম্মিলন 🌷 শ্রীরামানন্দ রায়  🦚🦚 কাষ্ঠ পুত্তুলিকা 🏵️  শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/08/ramananda140to150.html
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১৪৩)শ্রীরামানন্দ রায়,বিশাখা*
              *👥পুনর্ম্মিলন👥*
          ^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*🌺শ্রীপাদ রূপের উক্ত পদ‍্যের ইহা অপেক্ষা স্পষ্টতর ও রসময় ব‍্যাখ‍্যা আর কি সম্ভবপর হতে পারে? শ্রীমতী বলছেন,সখী!আমার দুর্দশা দেখ, আমি কুলবতী, কিন্তু আমার অবাধ‍্য মন তিনটি পুরুষের প্রতি আসক্ত হয়ে অধীর হয়ে উঠেছে।এ কি বিপদ।একজনের নাম কৃষ্ণ,তাঁর নামমাত্র শুনেই আমার মন অধীর হয়ে উঠেছে। আবার আর একটি পুরুষের মুরলীর ধ্বনিতে প্রাণ মেতে পড়েছে, সখী!আমাতে যেন আর আমি নাই।আবার এই চিত্রপটে যে নবজলধরকান্তি পুরুষের শ্রীমূর্তি দেখেছি,এই মূরতি দেখামাত্রই সেটি যেন আমার হৃদয়ে একেবারে অঙ্কিত হয়ে গেল।আমি কুলবতী রমণী,এই অবস্থায় এখন আমার মরণই ভাল।*
*☘অতঃপর রামরায় অনুরাগ,বিকার,চেষ্টা ও কামলেখন প্রভৃতির উদাহরণ শ্লোক শুনতে ইচ্ছে করলেন।শ্রীরূপ তার সমস্তের উল্লেখ করেন।তারপর রামরায় বললেন, শ্রীপাদ আপনি ভাব-স্বভাবের উদাহরণ সূচক পদ‍্যটি পাঠ করুন।তখন শ্রীরূপ এই পদ‍্যটি পাঠ করলেন ঃ--*
*🌷পীড়াতির্নবকালকূটকটুতা-গর্ব্বস‍্য নির্ব্বাসনো,*
*🌷নিষ‍্যন্দেন মুদাং সুধামধুরিমাহঙ্কার-সঙ্কোচনঃ।*
*🌷প্রেমা,সুন্দরি,নন্দনন্দনপরো জাগর্ত্তি বস‍্যান্তরে,*
*🌷জ্ঞায়তে স্ফুটমস‍্য বক্রমধুরাস্তেনৈব বিক্রান্তরঃ।।*
*🌺অর্থ‍্যাৎ "শ্রীকৃষ্ণপ্রেম যাঁর অন্তরে জাগে,কেবল তিনিই এর বক্রমধুর বিক্রম জানতে পারেন।এর যাতনা বা যন্ত্রণা নবকালকূটের কটুতা গর্বকেও পরাজিত করে,আবার এতে আনন্দও এত বেশী যে তার কাছে সুধামধুরিমার অহঙ্কারও পরাস্ত হয়।*
*🍀তারপরে স্বারসিক বা সহজ প্রেমের উদাহরণ সূচক শ্লোক শুনে রামরায় ভীষণ ভীষণ আনন্দ পেলেন।এই স্বারসিক প্রেম,কোথাও সহজ প্রেম,কোথাও নিরভিসন্ধি(অহঙ্কারশূন‍্য) প্রেম, কোথাও অকৈতব বা অকপট প্রেম, কোথাও নিরপাধি প্রেম,কোথাও বা নিরপেক্ষ প্রেম নামে অভিহিত হয়।কেননা দোষ-গুণ দর্শনে এই প্রেমের ক্ষয় বৃদ্ধি হয় না।এর উদাহরণস্বরূপ এই=, মধুমঙ্গল পৌণমাসীদেবীর কাছে জিজ্ঞাসা করেন, দেবি!নিরভিসন্ধি প্রেম কেমন?তার উত্তরে পৌণমাসী বলেন ঃ--*
*🌷জগতি কিল বিচিত্রে কুত্রচিন্নিশ্চলাত্ম,*
*🌷ভবতি নিরভিসন্ধিঃ কস‍্যচিৎ প্রেমবন্ধঃ।*
*🌷বিলসতি সমুদীর্ণে কুম্ভজে খঞ্জনালী,*
*🌷কলিতবতি তথাস্তং হন্ত নাশং প্রযাতি।।*
*🌻অর্থ‍্যাৎ "এই বিচিত্র জগতে স্থল বিশেষে কারও কারও অভিসন্ধি বিরহিত নিশ্চল প্রেম পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।দেখুন অগস্ত‍্য উদয় হলে খঞ্জন পাখী সকল আনন্দে সর্বত্র বিরাজ করে, কিন্তু হায় অগস্ত‍্য (একটি নক্ষত্র) অস্ত হলে সেই সকল খঞ্জন পাখীকে আর দেখা যায় না।*
*🌹অভিসন্ধি প্রেমের এটাও একটি দৃষ্টান্ত স্থল।*
*🍀ফলে এটিই সহজ প্রেম। দেহের প্রতি আমাদের যে প্রীতি আছে সেই প্রেমের কোন হেতু বা অভিসন্ধি (অভিপ্রায় বা মতলব) নাই,জন্মমাত্রেই আমাদের আত্মদেহের প্রতি প্রেমের ভাব পরিলক্ষিত হয়। অতি শৈশব সময় হতেই এই প্রেম পরিলক্ষিত হতে থাকে।এতে বলা যেতে পারে যে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে যখন এই প্রেম উপজাত বা উদয় হয়,এই অবস্থায় এটিই সহজ প্রেম।এই প্রেম হতেই জীবন-যোনি-যত্ন উদ্ভূত(উৎপন্ন) হয়ে থাকে।শারীর ক্রিয়াতত্ত্ববিৎ পন্ডিতগণ এই জীবন-যোনি-যত্নকে "রিফলেক্স একশন (Reflex action) প্রভৃতি কথার দ্বারা যেভাবেই ব‍্যাখ‍্যা করতে চেষ্টা করুন না কেন অথবা বৈশেষিক দার্শনিক সম্প্রদায়ের পন্ডিতগণ জীবন-যোনি-যত্নের হেতু সম্বন্ধে যাইই বলুন না কেন, আমাদের মনে হয়,এই জীবন-যোনি-যত্নের মূল কারণ দেহের প্রতি জীবাত্মার সহজ প্রেম।শিশু ভূমাষ্ঠ হয়েই রোদন করে কেন? কেননা মাতৃগর্ভে সে যে রকম সুরক্ষিত ভাবে সংরক্ষিত ছিল, যে রকম উষ্ণতা সম্ভোগে তার দেহ পরিবর্দ্ধিত হতে ছিল, বা বাড় ছিল, যে রকম অবস্থানে সে সুখ স্বচ্ছন্দতা অনুভব করছিল,বর্হিজগতে বা বাইরে আসা মাত্রেই এই জগতের অবস্থা তার সুখ স্বচ্ছন্দতার সম্পূর্ণ প্রতিকূল বলে সেটি অনুভব হল। শিশুর দেহ বাইরের বায়ুতে কষ্ট হল,শিশু কেঁদে উঠিল।শিশুর এই কান্না তার দেহের প্রতি জীবাত্মার সহজ প্রেমেরই পরিচায়ক।দেহকে স্বচ্ছন্দে রাখবার জন্য জীবাত্মার যে সহজ যত্ন প্রকাশ পায়, তা দেহের প্রতি জীবাত্মার সহজ প্রেম প্রকাশ।এইরকম প্রেম তর্কবিচারের অপেক্ষা করে না,ভালখারাপের বিচার জানে না, সেটি আত্মার একটি স্বাভাবিক ধর্ম। পৌণমাসী দেবীর রাধাপ্রেম এই জাতীয় হলেও এটি অপেক্ষা বহু উচু স্থানে অবস্থিত। গৌড়ীয় সম্প্রদায়ের বৈষ্ণব গ্রন্থের বহু জায়গায় এই সহজ প্রেম বা নিরুপাধি প্রেমের বিশদ ও সূক্ষ্ম আলোচনা দেখা যায়।*
*🌺এই গ্রন্থ হতে প্রেম-পরাভবের লক্ষণসূচক একটি শ্লোকও উদ্ধৃত করা যাচ্ছে ; বিরহবিধুরা শ্রীমতীকে প্রবোধ দিবার জন্য বিশাখাদেবী এসে উপস্থিত হলেন।দুঃখের সময়ে প্রিয়জনকে দেখতে পেলে দুঃখের বেগ শতধারে মানে অনেক বেশী উছলিয়ে উঠে।এই নিদারুণ বিরহের সময়ে বিশাখাকে দেখে রাধার শোক অনেক বেড়ে গেল,তিনি সজল নয়নে কাতরকন্ঠে গদগদবাক‍্যে বলতে লাগলেন ঃ---*
😭😭😭😭😭😭😭😭😭😭😭😭😭

  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
🆕  ১৪৪. পুনর্ম্মিলন👏 শ্রীরামানন্দ রায়  🦚🦚 কাষ্ঠ পুত্তুলিকা 🏵️  শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/08/ramananda140to150.html
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১৪৪)শ্রীরামানন্দ রায়,বিশাখা*
          *🌻🌻পুনর্ম্মিলন🌻🌻*
         ^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^^
*🌹এই নিদারুণ বিরহের সময়ে বিশাখাকে দেখে শ্রীরাধার শোকবেগ উথলিয়ে উঠিল,তিনি সজলনয়নে কাতরকন্ঠে গদগদবাক‍্যে বলতে লাগলেন=*
*যস‍্যোৎসঙ্গসুখাশয়া শিথিলিতা গুর্ব্বী গুরুভ‍্যস্ত্রপা,*
*প্রাণেভ‍্যোহপি সুহৃত্তমাঃ সখি তথা যুয়ং পরিক্লশিতাঃ।*
*ধর্ম্মঃ সোহপি মহান্ময়া ন গণিতঃ সাধ্বীভিরধ‍্যাসিতো,*
*ধিগ্ধৈর্য‍্যং তদুপেক্ষিতাপি যদহং জীবামি পাপীয়সী।।*
*🌻অর্থ‍্যাৎ সখি!যার সরস সঙ্গসুখ লালসায় গুরুজনের কাছে গুরুতর লজ্জা শিথিল করলাম, অর্থ‍্যাৎ শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গসুখের জন্য আমি লাজ ধর্ম কর্ম ত‍্য‍াগ করলাম। আর তোমরাও বা আমার জন্য কত কষ্টভোগ করলে। আরও দেখ,এ জগতে ধর্ম অপেক্ষা মহৎ বস্তু আর কি আছে? সাধ্বীগণের অনুষ্ঠিত সেই পাতিব্রত‍্য ধর্মও আমি গণ‍্য করলাম না। কিন্তু হায়!এত করেও আমি শ্রীকৃষ্ণের উপেক্ষিতা হয়েছি।সব থেকে বেশী তাপের বিষয় এই যে,তাঁর উপেক্ষিতা হয়েও এই পাপীয়সী আমি জীবনধারণ করছি। সখী!আমার ধৈর্য‍্যকে ধিক্।এই বলে শ্রীমতী রাধারাণী মূর্ছিত হয়ে পড়লেন।*
*🌹রামানন্দ রায় বললেন,শ্রীপাদ! উপেক্ষাসূচক শ্লোকটিও পাঠ করুন।শ্রীরূপ বলতে লাগলেন "আকাশের পানে দৃষ্টিপাত করে শ্রীমতী রাধারাণী আকুল প্রাণে অঞ্জলীবদ্ধা(জোড়হাত) হয়ে বলছেন=*
*গৃহান্তঃ খেলন্ত‍্যো নিজসহজবাল‍্যস‍্যবলনা,*
*দভদ্রং ভদ্রং বা কমপি নহি জানীমহি মনাক্।*
*বয়ং নেতুং যুক্তাঃ কথমশরণাং কামপি দশাং,*
*কথং বা ন‍্যায‍্যা তে প্রথয়িতুমুদাসীনপদবী।।*
*🌻হে কৃষ্ণ!আমরা সরলপ্রাণা গোপবালিকা,ঘরের কোণে পড়ে থাকি, ভালমন্দ কিছুই জানি না। আমাদেরকে নিরাশ্রয় দশায় এনে এখন তুমি আমাদেরকে উপেক্ষা করছ, এই কি তোমার উচিৎ? এর সঙ্গে নিচের আধুনিক সরস গীতটিও পাঠযোগ‍্য যথা=*
*🌷হরি মন মজায়ে লুকালে কোথায়?*
*🌷আমি ভবে একা, দাওহে দেখা,*
        *প্রাণসখা রাখ পায়।*
    *কালশশী বাজালে বাঁশী,*
   *আমি ছিলেম গৃহবাসী,*
   *তুমি করলে উদাসী ;*
 *এখন কুল ত‍্যজে অকুলে ভাসি।*
      *হৃদবিহারী বংশীধারী,*
     *পিপাসী প্রাণ তোমায় চায়।।*
*🌹তারপরে শ্রীরামরায় জিজ্ঞাসা করলেন, শ্রীপাদ!বিদগ্ধমাধব সম্বন্ধে আমার আরও কয়েকটি কথা জিজ্ঞাস‍্য আছে।শ্রীবৃন্দাবনের বর্ণনা, মুরলী নিঃস্বনের (ধ্বনির)প্রভাব ও শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের বর্ণনাসূচক পদ‍্যগুলি শ্রবণ করতে ইচ্ছা করি। আপনার কবিত্ব শুনে আমি প্রকৃতই চমৎকৃত হয়েছি।এমন সরস, সুন্দর ও সুসিদ্ধান্তিত স্তুতি-কবিতা আর কখনও কোথাও শুনেছি বলে মনে হয় না। যথা শ্রীচরিতামৃতে পায়=*
*🌷রায় কহে বৃন্দাবনে মুরলী নিঃস্বন।*
*🌷কৃষ্ণ রাধীকার যৈছে করীয়াছ বর্ণন।।*
*🌷কহ তোমার কবিত্ব শুনি হয় চমৎকার।*
*🌷ক্রমে রূপগোসাঞি কহে করি নমস্কার।।*
*🌹শ্রীপাদ রূপগোস্বামী তখন শ্রীবৃন্দাবন বর্ণনসূচক পদ‍্য-সমূহ পাঠ করলেন,তাতে রামরায় ও ভক্তবর্গ পরম প্রীতি লাভ করলেন।*
*🌻শ্রীবিদগ্ধমাধব নাটক শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলার মধুররসের নিত‍্য উৎস।শ্রীচরিতামৃতে সেটি হতে কিছু পদ‍্য ঊদ্ধৃত করে ঐ গ্রন্থের কবিত্ব প্রদশিত হয়েছে। এখানে বাহুল‍্যভয়ে উক্ত গ্রন্থের দুই একটি মাত্র পদ‍্য উদ্ধৃত করা হল।*
*🌺শ্রীরামরায় বিদগ্ধমাধব নাটকের কবিত্ব শুনে বললেন=*
*🌷------তোমার কবিত্ব অমৃতের ধার।*
*🌷দ্বিতীয় নাটকের কহ নান্দী ব‍্যবহার।।*
*🌹এই দ্বিতীয় নাটক=শ্রীললিতমাধব। রায় মহাশয়, ললিলমাধব নাটকের নান্দী-শ্লোক শোনার বাসনা প্রকাশ করলেন।তার উত্তরে শ্রীপাদ রূপ বললেন,রায় মহাশয়! আপনার প্রেমভক্তি প্রতিভা গৌরব সূর্য‍্যের মতো সমুজ্জ্বল,আমি আপনার তুলনায় জোনাকী পোকার মতো ক্ষুদ্র।আপনার সামনে মুখব‍্যাদান করাও আমার পক্ষে অতীব ধৃষ্টতা।তথাপি আপনি আদেশ করছেন সে আদেশ আমার অবশ্যই প্রতিপাল‍্য।এই বলে শ্রীরূপ পাঠ করতে লাগলেন।*
*🌷সুররিপুসুদৃশামুরোজকোকান্,*
*🌷মুখকমলানি চ খেদয়ন্নখন্ডঃ।*
*🌷চিরমখিলসুহৃচ্চকোরনন্দী,*
*🌷দিশতু মুকুন্দ যশঃশশী মুদং বঃ।।*
*🌺অর্থ‍্যাৎ অসুর রমণীগণের স্তনরূপ চক্রবাক ও মুখকমলসমূহের বিষণ্ণতা উৎপাদন করে এবং সুহৃচ্চকোরের আনন্দ বর্ধন করে শ্রীকৃষ্ণের অখন্ড কীর্তিচন্দ্র তোমাদের আনন্দ সম্পাদন করুন।*
🔵🔴🔵🍊🔵🍊🔵🍊🔵🍊🔵🍊🔵

  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
🆕  ১৪৫. পুনর্ম্মিলন 🌷 শ্রীরামানন্দ রায়  🦚🦚 কাষ্ঠ পুত্তুলিকা 🏵️  শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/08/ramananda140to150.html
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১৪৫)শ্রীরামানন্দ রায়, বিশাখা,*
           *🙏🙏পুনর্ম্মিলন🙏🙏*
          """"""""""""""""""""'''''"''''''''''''''"""""""""
*🌻তারপরে শ্রীরায় মহাশয় বললেন, "নান্দী শ্লোক খুবই সুন্দর হয়েছে।নান্দী-লক্ষণের পূর্ণতা এতে প্রকটিত হয়েছে। এখন অভীষ্ট দেবের স্তুতি পদ‍্যটি পাঠ করুন"। আগেই বলেছি শ্রীরূপ স্বভাবতই লাজুক ছিলেন। বিশেষ করে মহাপ্রভুর সামনে এবং প্রবীণ ভক্তগণ সামনে তাঁর নিজের কাব‍্য পাঠ করা তাঁর পক্ষে এক গুরুতর লজ্জার কারণ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু কি করবেন, কোন ভাবেই তিনি শ্রীরামরায়ের আদেশ লঙ্ঘন করতে পারলেন না। তার উপরে আবার সামনেই শ্রীমন্মহাপ্রভু বসে আছেন।মহাপ্রভুর বর্ণনায় শ্রীরূপের অভীষ্টদেব-স্তুতি-বর্ণনা।শ্রীরূপের মুখে সঙ্কোচের ভাব দেখা দিল,তিনি কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে লজ্জিত ভাবে নীরব রইলেন।শ্রীরামরায় বললেন,"আপনার সঙ্কোচ কি,অভীষ্টদেবের স্তুতি পাঠ করবেন তাতে আপত্তিই বা কি? তখন শ্রীরূপ পাঠ করতে লাগলেন=*
*নিজপ্রণয়িতাং সুধামুদরমাপ্নুবন্ যঃ ক্ষিতৌ,*
*কিরত‍্যলমুরীকৃতদ্বিজকুলাধিরাঘস্থিতিঃ।*
*স লঞ্চিততমস্ততির্ম্মম শচীসুতাখ‍্যঃ শশী,*
*বশীকৃতজগন্মনাঃ কিমপি শর্ম্ম বিন‍্যস‍্যতু।।*
*🌹অর্থ‍্যাৎ যিনি এই ধরাধামে উদিত হয়ে নিজপ্রেমামৃত সুধা বর্ষণ করছেন, যিনি দ্বিজকুলসম্রাট, যিনি জগতের অন্ধকার নাশ করেন, সমগ জগতের মন যাঁর বশীভূত, সেই শ্রীশচীনন্দন-শশী আমার সম্বন্ধে কোন অনির্বচনীয় মঙ্গল বিধান করুন।*
*⭐এখানে চন্দ্রের সঙ্গে শ্রীশচীনন্দনের তুলনা উৎকর্ষ প্রদর্শন করা হয়েছে।চন্দ্র যৎকিঞ্চিৎ সুধাবর্ষণ করেন,তাও কেবল চকোরের ভাগ‍্যে ঘটে। কিন্তু শ্রীশচীনন্দন-শশী যে প্রেমসুধা বর্ষণ করেন,তা সমগ্র জগতের সম্ভোগ‍্য।চন্দ্র দ্বিজরাজ, কিন্তু ইনি দ্বিজকুলধীরাজ।চন্দ্র কেবল বাইরের অন্ধকার নাশ করে,কিন্তু ইনি অন্তস্থল অপহন্তা।*
*🌺এই পদ‍্যটি শোনা মাত্রই শ্রীমন্মহাপ্রভুর মুখে রোষাভাসের চিহ্ন প্রকটিত হল।তিনি বললেন, "শ্রীরূপ!এ কি করেছ?তোমার কবিত্ব কৃষ্ণ-রস সুধাসিন্ধু সমান, সেটিতে মিথ‍্যাস্তুতিরূপ ক্ষারবিন্দু মিশিয়েছ কেন? (অর্থ‍্যাৎ শ্রীমন্মহাপ্রভুর সম্বন্ধে বলা হয়েছে তাই মহাপ্রভুর রোষভাব হয়েছেন ),যথা শ্রীচরিতামৃতে ঃ--*
*🌷কাঁহা তোমার কৃষ্ণরস কবিত্বসুধাসিন্ধু।*
*🌷তার মধ্যে কেন মিথ‍্যাস্তুতিক্ষারবিন্দু।।*
*🍁মহাপ্রভুর মুখ হতে এইকথা বাহির হতে না হতেই শ্রীরামরায় এর প্রতিবাদ করে বললেন,শ্রীরূপের কথা অমৃতের পূর সমান, তিনি এতে এই অভীষ্টদেব-স্তুতিরূপ কর্পূর মিশ্রণ করে সেটি দারুণ দারুণভাবে সুস্বাদু করেছেন।তাতে কাব‍্যের উৎকর্ষই সাধিত হয়েছে। যথা শ্রীচরিতামৃতে=*
*🌷রায় কহে রূপের বাক‍্য অমৃতের পূর।*
*🌷তার মধ্যে এক বিন্দু দিয়াছে কর্পূর।।*
*🌹শ্রীমন্মহাপ্রভু বিস্মিতভাবে বললেন, রামরায়!এতেও তোমার উল্লাস হচ্ছে?এইরকম কথা  শুনতেও লজ্জাজনক, লোকেও এতে উপহাস করবে।*
*🌻তখন শ্রীরায় মহাশয় বললেন, "এতে উপহাস করা তো দূরের কথা,মঙ্গলাচরণে অভীষ্টদেবের এই স্তুতি শুনে সকলেই ভীষণ সন্তুষ্ট হবেন।এতে লজ্জারই বা কারণ কি, উপহাসেরই বা হেতু কি?রামরায়ের কথা শুনে পতিতপাবন গৌরহরি আমার নীরব রইলেন।শ্রীরূপের মুখে তখন খানিকটা আনন্দের রেখা দেখা দিল।*
*🍁শ্রীরামরায় এই নাটক সম্বন্ধে বহুপ্রশ্ন উত্থাপন করে উদাহরণ শ্লোকগুলি প্রগাঢ় মনোযোগের সঙ্গে শুনলেন।রামরায় এই পদ‍্যগুলি শুনে সত‍্য সত‍্যই বিস্মিত হলেন।তিনি নিজে অতি সুপন্ডিত,কেবল সুপন্ডিত নয়,তিনি সেইসময়ে একজন সুবিখ‍্যাত সুকবি বলেই জনসমাজে পরিচিত ছিলেন।এর উপরে শ্রীরাধাকৃষ্ণের প্রেমভক্তিরসে তাঁর মন সদাসর্বদা ডুবে আছে।কয়েকটি পদ‍্যে তিনি শ্রীরূপের কবিত্বশক্তির যে পরিচয় পেলেন,তাতে তাঁর হৃদয় বিস্মিত হয়ে উঠিল।তিনি অবাক নয়নে শ্রীশ্রীমহাপ্রভুর মুখে দৃষ্টিপাত করে বললেন, প্রভো!আপনার শ্রীচরণ কৃপায় এ দাস অনেক কাব‍্য পাঠ করেছে,অনেক রকম কাব‍্য-শাস্ত্র আলোচনা করেছে কিন্তু এমন অপূর্ব কবিত্ব আর কখনও দৃষ্টিগোচর হয়নি, যেমন শব্দালঙ্কার,তেমনই অর্থালঙ্কার, আর তেমনই ছন্দের লালিত‍্য।এছাড়াও নাটক-লক্ষণের এমন পূর্ণতা আর কোথাও দেখতে পাইনি।প্রভো!এতো কবিত্ব নয়,যেন কাব‍্যের আকারে অমৃত-মন্দাকিনীর শতধারা এই কব‍্যদুইখানি হতে উধাও (অদৃশ‍্য)ভাবে ছুটে চলেছে। কি অদ্ভুত, অপূর্ব কবিত্ব। কিন্তু প্রভো!এ সব সৌন্দর্য্যও কাব‍্যের বহিরঙ্গ সৌন্দর্য্যমাত্র।রসই কাব‍্যের আত্মা।শ্রীপাদ রূপগোস্বামী প্রেমরসের যে অদ্ভুত বর্ণন করেছেন তা আমার মর্মে মর্মে প্রবেশ করে আনন্দবেগে আমার মাথা ঘুরিয়ে তুলেছে। প্রাচীনেরা বলেন ===*
*কিং কাব‍্যেন কবে স্তস‍্য কিং কান্ডেন ধনুষ্মতঃ।*
*পরস‍্য হৃদয়ে লগ্নং ন ঘূর্ণয়তি যচ্ছিরঃ।।*
*🌺অর্থ‍্যাৎ যে কাব‍্য পর-হৃদয়ে লগ্ন (উপযুক্ত)হয়ে পাঠকের মাথা ঘুরিয়ে তোলে,আর যে কান্ড পর-হৃদয়ে বিদ্ধ হয়ে আহতকে মূর্ছিত না করে, সেই কাব‍্যের এবং সেই কান্ডের প্রয়োজন কি? প্রভো!শ্রীপাদ রূপের কাব‍্যই প্রকৃত সার্থক। এমন বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত সম্মত এত সুন্দর সরল ও সারগর্ভ কাব‍্য অতি বিরল।এইরকম কাব‍্য-রচনা মানুষের সামর্থ‍্যের বাইরে। আমার মনে হয়, আপনার শক্তিসঞ্চারেই শ্রীরূপ এইরকম কাব‍্য রচনা করতে সমর্থ হয়েছেন। যথা শ্রীচরিতামৃতে=*
*🌷এত শুনি রায় কহে প্রভুর চরণে।*
*🌷রূপের কবিত্ব প্রশংসি সহস্র বদনে।।*
*🌷কবিত্ব না হয় এই অমৃতের ধার।*
*🌷নাটক-লক্ষণ এই সিদ্ধান্তের সার।।*
*🌷প্রেমপরিপাটী এই অদ্ভুত বর্ণন*।
*🌷শুনি চিত্ত কর্ণের হয় আনন্দ ঘূর্ণন।।*
*🌷তোমার শক্তিবিনে জীবের নহে এই বাণী।*
*🌷তুমি শক্তি দিয়া কহাও হেন অনুমানি।।*
*🌻শ্রীরামরায়ের কথা শুনে মহাপ্রভু বললেন,রামরায়!তোমার এই অনুমান  একেবারেই ঠিক।প্রয়াগে শ্রীরূপের সঙ্গে যখন আমার দেখা হয়,তখন এর  গুণগ্রামে আমার চিত্ত অত‍্যন্ত তৃপ্ত হয়েছিল।এর কাব‍্য অলঙ্কারে ও মধুররসে সর্বাঙ্গসুন্দর।এইরকম কবিত্ব ছাড়া প্রেমরস-প্রচারের আর উপায় নাই।প্রেমরসাস্বাদন ছাড়া প্রেমের ভজন অসম্ভব।শ্রীরূপের কাব‍্য দ্বারা প্রেমরস প্রচারিত হবে।তোমরা কৃপা করে শ্রীরূপকে এই বর দান কর,শ্রীরূপ যেন সবসময় নির্বিঘ্নে ব্রজলীলা-প্রেমরস বর্ণন করতে পারে। যথা শ্রীচরিতামৃতে=*
*🌷প্রভু কহে প্রয়াগে ইহার হইল মিলন।*
*🌷ইঁহার গুণে ইঁহায় আমায় তুষ্ট কৈল মন।।*
*🌷মধুর প্রসঙ্গ ইহার কাব‍্য সালঙ্কার।*
*🌷ঐছে কবিত্ব বিনা নহে রসের প্রচার।।*
*🌷সবে কৃপা করি ইঁহারে দেহ এই বর।*
*🌷ব্রজলীলা প্রেমরস বর্ণে নিরন্তর।।*
*🌺তারপরে করুণাময় মহাপ্রভু শ্রীরামরায়ের কাছে শ্রীরূপের দাদা সনাতনের পরিচয় প্রদানার্থে বলছেন=*
*🌷ইঁহার যে জ‍্যেষ্ঠ ভ্রাতা নাম সনাতন।*
*🌷পৃথিবীতে বিজ্ঞবর নাহি তার সম।।*
*🌷তোমার যৈছে বিষয়ত‍্যাগ,তৈছে তার রীতি।*
*🌷দৈন‍্য বৈরাগ‍্য পান্ডিত‍্য তাহাতেই স্থিতি।।*
*🌷এই দুই ভাই আমি পাঠাইল বৃন্দাবনে।*
*🌷শক্তি দিয়া ভক্তিশাস্ত্র করিতে প্রবর্ত্তনে।।*
*🍀মহাপ্রভু বললেন, রামরায়!তুমি যা অনুমান করেছ তা অতি ঠিক।শ্রীরামরায় বললেন, প্রভো!আপনার ইচ্ছা অমোঘ(অব‍্যর্থ)।শ্রীরূপ তো পরম পন্ডিত,সুকবি ও ভক্ত, এর দ্বারা আপনি প্রেমরস প্রচার করবেন এতে আর বিচিত্রতা কি?*
*🌷----- ঈশ্বর তোমি যে চাহ করিতে।*
*🌷কাষ্ঠের পুতুল তুমি পার নাচাইতে।।*
*🌷মোর মুখে যে সব রস করিলে প্রচারণে।*
*🌷সেই সব রস দেখি এই ইঁহার লিখনে।।*
*🌷ভক্ত কৃপায় প্রকাশিতে চাহ ব্রজরস।*
*🌷যারে করাও,সেই করিবে,জগৎ তোমার বশ।।*
*🌻নাটক সমালোচনায় উক্ত কয়েক ছত্রই শ্রীরামরায়ের উপসংহার বাক‍্য।পূজ‍্যপাদ শ্রীরায় মহাশয়ের এইকথা যেমন মধুর, তেমনই সরস ও সারগর্ভ।রামরায় স্পষ্টভাবে বুঝেছিলেন, ইতঃপূর্বে তিনি মহাপ্রভুর কাছে কৃষ্ণতত্ত্ব,রাধাতত্ত্ব,প্রেমতত্ত্ব ও রসতত্ত্ব সম্বন্ধে যা যা বলেছিলেন সে সব কথা তাঁর নিজের নয়,সেটি ব্রজরস প্রকাশ করবার মহাপ্রভুর প্রেরণা।এখন তিনি বুঝলেন শ্রীপাদ রূপের যে কাব‍্য তিনি আলোচনা করতে বসেছেন,তা মানুষের শক্তিতে রচিত হয় নাই, সেটিও মহাপ্রভুর প্রেরণা,তাঁরই শক্তি সঞ্চারের ফল।এখন রামরায় বিস্ময়ের ভাব অপনোদিত (দূরীকৃত) হল।তাই শ্রীরামানন্দ রায় মহাশয় প্রশান্ত চিত্তে বললেন=*
*🌷ভক্ত-কৃপায় প্রকাশিতে চাহ ব্রজরস।*
*🌷যারে করাও,সেই করিবে,জগৎ তোমার বশ।।*
*🍀শ্রীরামরায় কৃপা করে আমাদেরকে জানালেন, শ্রীরূপের নাটক দুইটি ব্রজরস-প্রকাশের উপায় স্বরূপ।ভক্তগণকে ব্রজরসের সুধামাধুরী আস্বাদিত করাবার জন্য পরম দয়াল গৌরহরি শ্রীরূপের দ্বারা ইহজগতে ব্রজরসের সুধা মন্দাকিনীর প্রসন্ন ধারা এই নাটক আকারে প্রবাহিত করে রেখেছেন। সুতরাং এ সম্বন্ধে আর বেশী লেখা বাহুল‍্য।এই দুই গ্রন্থের যা উদ্দেশ্য,রামরায় সর্বপ্রথমে এ জগতে তা অভিব‍্যক্ত করেছেন।প্রেমিক ভক্তগণ শ্রীরামানন্দ রায় মহাশয়ের ভাবপদাঙ্ক অনুসরণ করেই এই গ্রন্থ দুইটির রসাস্বাদন করুন।*
*🙏জয় মহাপ্রভুর জয়, জয় শ্রীরামরায়ের জয় জয় শ্রীপাদ রূপ গোস্বামীর জয়🙏🙏🙏*

  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
🆕  ১৪৬. শ্রীপ্রদ‍্যুম্ন মিশ্র ও কৃষ্ণকথা 🙇 শ্রীরামানন্দ রায়  🦚🦚 কাষ্ঠ পুত্তুলিকা 🏵️  শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/08/ramananda140to150.html
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১৪৬)শ্রীরায় রামানন্দ,বিশাখা*
      *শ্রীপ্রদ‍্যুম্ন মিশ্র ও কৃষ্ণকথা*
      **************************
*পাঠক মহোদয়গণের অবিদিত নহে যে,মহানুভব শ্রীপ্রদ‍্যুম্ন মিশ্র শ্রীমন্মহাপ্রভুর একজন পরম ভক্ত। শ্রীচরিতামৃতে ইনি নীলাচলীয় ভক্তবৃন্দের মধ্যে গণিত হয়েছেন, যথা=*
*🌷নীলাচলে প্রভুর যার প্রথম মিলন।*
*🌷সেই ভক্তগণ এবে করিয়ে গণন।।*
*🌷বড় শাখা এক সার্বভৌম ভট্টাচার্য্য।*
*🌷তার ভগিনীপতি গোপীনাথ আচার্য‍্য।।*
*🌷কাশীমিশ্র প্রদ‍্যুম্ন মিশ্র রায় ভবানন্দ।*
*🌷যাঁহার মিলনে প্রভু পাইল আনন্দ।।*
*🍀বলা বাহুল‍্য,এই প্রদ‍্যুম্ন মিশ্র, প্রদ‍্যুম্ন ব্রহ্মচারী নহেন,প্রদ‍্যুম্ন ব্রহ্মচারী স্বতন্ত্র ভক্ত।এই ভক্তপ্রবর সময়ে সময়ে মহাপ্রভুর আবেশ হত। ইনি নৃসিংহ উপাসক ছিলেন।শ্রীনৃসিংহে ইনার পরম প্রেম ছিল।তাই মহাপ্রভু ইঁনার অন‍্য নাম রেখেছিলেন, শ্রীনৃসিংহানন্দ, যথা শ্রীচরিতামৃতে=*
*🌷প্রদ‍্যুম্ন ব্রহ্মচারী তাঁর আগে নাম ছিল।*
*🌷নৃসিংহানন্দ নাম প্রভু পাছেতে রাখিল।।*
*🌷তাহিতে হইল শ্রীচৈতন‍্যর আবির্ভাব।*
*🌷অলৌকিক ঐছে প্রভুর অনেক স্বভাব।।*
*🌺কিন্তু এখানে যে প্রদ‍্যুম্নের কথা বলা হয়েছে ইনি প্রদ‍্যুম্ন মিশ্র।প্রদ‍্যুম্ন ব্রহ্মচারী নহেন।প্রদ‍্যুম্ন নীলাচলে বসবাস করতেন।ইঁনার হৃদয় খুবই সরল ছিল, ইনি গৃহস্থ অথচ বহুদিন হতেই সংসার সুখে বীতস্পৃহ (বাসনাহীন) হয়েছিলেন।ইদানিং মহাপ্রভুর সুশীতল শ্রীচরণছায়া লাভ করে ইঁনার সরল পবিত্র হৃদয়ে ভক্তির মন্দাকিনী সুধাপ্রবাহ প্রবাহিত হচ্ছিল।ভক্তির প্রথম সঞ্চারেই হৃদয় কৃষ্ণপ্রেম লাভের জন্য ব‍্যাকুল হয়।প্রদ‍্যুম্নেরও তাই হল।কোথায় গিয়ে কার কাছে কৃষ্ণকথা শুনবেন,দিনরাত প্রদ‍্যুম্নের কেবল এই চিন্তা।মহাপ্রভুর শ্রীমুখে কৃষ্ণকথা শোনার জন্য তাঁর মন ব‍্যাকুল হয়ে উঠিল।কিন্তু তাঁর হৃদয়ে সে সাহস হল না। তিনি কি করে মহাপ্রভুর কাছে যাবেন,কি করে তাঁকে বলবেন "প্রভো! আমি আপনার শ্রীমুখে কৃষ্ণকথা শুনব",মহাপ্রভুর কাছে এই বিষয়ে অনুরোধ করাও প্রদ‍্যুম্ন ধৃষ্টতা বলে মনে করতে লাগলেন। কিন্তু তাঁর প্রাণের পিপাসা উত্তরোত্তর বাড়তে লাগল,উৎকন্ঠা বেড়ে উঠিল, উৎকণ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে কর্তব‍্যাকর্তব‍্য বিচার-জ্ঞানও দুরীভূত হতে লাগল, সুতরাং সঙ্কোচ কমে গেল।একদিন উৎকণ্ঠার প্রবল আবেগে প্রদ‍্যুম্ন হঠাৎ মহাপ্রভুর শ্রীচরণতলে উপস্থিত হলেন, দন্ডবৎ প্রণত হয়ে বললেন=*
*🌷মহাপ্রভো,মুঞি দীন গৃহস্থ অধম।*
*🌷কোন ভাগ‍্যে পাইয়াছোঁ তোমার দুর্লভচরণ।।*
*🌷কৃষ্ণকথা শুনিবারে মোর ইচ্ছা হয়।*
*🌷কৃষ্ণকথা কহ মোরে হইয়া সদয়।।*
*🌹মিশ্রের সহজ সরল প্রাণের সাদাসিধে এই নিবেদন শুনে দয়াময় মহিপ্রভু অবশ্যই তাঁর প্রার্থনা গ্রহণ করলেন,শ্রীগৌরাঙ্গলীলার অভিনব পাঠকগণের এইরকম মনে হওয়ায় স্বাভাবিক। কিন্তু গম্ভীর চরিত্র শ্রীগৌরাঙ্গলীলারহস‍্য বৃহস্পতিরও দুর্জ্ঞেয় (চরম কঠিন)।প্রদ‍্যুম্নের প্রার্থনা কথা তাঁর মুখ থেকে বেড়োতে না বেড়োতেই মহাপ্রভু বললেন, মিশ্র! আমি তো কৃষ্ণকথা জানি না।কেবল এক রামানন্দই কৃষ্ণকথা জানেন।তবে আমি মধ্যে মধ্যে তাঁর মুখে কৃষ্ণকথা শুনতে পাই।কৃষ্ণকথা শুনবার যে ইচ্ছা হয়, এও বড় ভাগ‍্যের কথা।কৃষ্ণকথা শুনতে হ'লে রামানন্দের কাছে যাও। তিনি তোমায় কৃষ্ণকথা শুনাবেন। সৌভাগ্য না হলে কৃষ্ণকথায় রুচি হয় না। তোমার যখন কৃষ্ণকথা শুনতে এত রুচি, এটি তোমার সৌভাগ্যেরই পরিচয়। শ্রীভাগবত বলেন ঃ-----
*🌷ধর্ম্মঃ স্বনুষ্ঠিতঃ পুংসাং বিশ্বকসেনকথাসু যঃ।*
*🌷নোৎপাদয়েদ্ যদি রতিং শ্রম এব হি কেবলম্।।*
*🌻অর্থ‍্যাৎ শাস্ত্রপ্রসিদ্ধ ধর্ম সুন্দররূপ অনুষ্ঠিত হয়েও যদি শ্রীকৃষ্ণকথায় রুচি উৎপাদন না করে,তবে তা কেবল বৃথা শ্রমমাত্র।*
*🍀তোমার যখন কৃষ্ণকথায় রুচি হয়েছে,তখন শ্রেষ্ঠ ধর্মের ফল তোমাতে বর্ত্তিয়াছে।তুমি দীন বলে এবং গৃহস্থ অধম বলে নিজকে অতি তুচ্ছ মনে করছ, কিন্তু তোমার মত ভাগ‍্যবান আর কে আছে? মিশ্র! আবার বলি, তুমি রামরায়ের কাছে যাও।তিনি তোমাকে কৃষ্ণকথা শুনাবেন; যথা শ্রীচরিতামৃতে ঃ----*
*🌷প্রভু কহে কৃষ্ণকথা আমি নাহি জানি।*
*🌷সবে রামানন্দ জানেন,তাঁর মুখে শুনি।।*
*🌷ভাগ‍্য তোমার -- কৃষ্ণকথা শুনিতে হইল মন।*
*🌷রামানন্দ পাশে যাই করহ শ্রবণ।।*
*🌷কৃষ্ণকথায় রুচি তোমার,বড় ভাগ‍্যবান।*
*🌷যার কৃষ্ণকথায় রুচি সেই ভাগ‍্যবান।।*
*🦚ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণে "শ্রীকৃষ্ণজন্ম-খন্ডে, "কৃষ্ণকথা-শ্রবণ-মাহাত্ম‍্য" বিস্তৃতরূপে লিখিত আছে।*
*🪷মহাপ্রভু সরলপ্রাণ মিশ্রকে এক কথায় বিদায় করলেন।তিনি যখন বললেন, "আমি কৃষ্ণকথা জানি না, কেবল রামানন্দ জানেন, আমি তাঁরই মুখে কৃষ্ণকথা শুনে থাকি, তুমি তাঁর কাছে যাও।" তখন প্রদ‍্যুম্ন এই কথা কি ভাবে বুঝেছিলেন জানি না। কিন্তু প্রদ‍্যুম্ন আর দ্বিরুক্তি *দ্বিতীয়বার কোন কথা) না বলে তৎক্ষণাৎ রামরায়ের ভবনে প্রস্থান করলেন। প্রদ‍্যুম্ন পরম ভক্ত।মহাপ্রভুর ইচ্ছা-বিচার করা তাঁর কাজ নয়, তাঁর আজ্ঞায় প্রদ‍্যুম্নের শিরোধার্য‍্য।ভক্ত হৃদয়ের এটিই এক বিশেষ বিশিষ্টতা। আমাদের মত লোকের হৃদয়ে এটি নিয়ে একটা অসঙ্গত অবৈধ আন্দোলনের উদয় হতে পারে। আমরা হয়ত মনে করতে পারি, মহাপ্রভু আমাকে অধম মনে করে তুচ্ছ করলেন, মহাপ্রভু আমাকে তাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু বিদগ্ধ-শিরোমণির বাক‍্যচ্ছটায় সেই আশঙ্কার কারণ নাই।প্রদ‍্যুম্ন নিজকে দীন গৃহস্থ অধম বলে জ্ঞাপন করলেন। কিন্তু স্পষ্ট-বক্তা সত‍্যবাদী নিরপেক্ষ মহাপ্রভু তৎক্ষতার উত্তর করলেন, তুমি অধম নও, ভাগ‍্যবান্। কেননা,কৃষ্ণকথায় তোমার রুচি জন্মেছে।কৃষ্ণকথা শোনার যাঁর রুচি জন্মে,তিনি অধম নহেন। তিনি অতি ভাগ‍্যবান লোক। সুতরাং প্রদ‍্যুম্ন মিশ্রক‍ে গৃহস্থ অধম মনে করে মহাপ্রভু  দায়সারা ভাবে রামরায়ের কাছে পাঠাননি। প্রদ‍্যুম্ন দয়াময় গৌরহরির কৃপাদেশে তেমন আশঙ্কা করেননি। করুণাময় মহাপ্রভু রামরায়ের কাছে গিয়ে কৃষ্ণকথা শুনতে আদেশ করলেন,মিশ্র আর ক্ষণকাল বিলম্ব না করে তাঁর কাছে গমন করলেন।*
*🌻মিশ্র মহাশয় মহাপ্রভুর কৃপাদেশে শ্রীরামরায়ের বাসভবনে উপস্থিত হলেন। সেখানে গিয়ে শুনতে পেলেন,রায় মহাশয় বাড়ীতে নেই,নিভৃত উদ‍্যানে আছেন।প্রদ‍্যুম্ন বললেন, নিভৃত উদ‍্যানে কেন?ভৃত‍্য বলিল,তিনি প্রায়শঃই বাগানে থাকেন। আপনি শুনে থাকবেন, রায় মহাশয়ের একটি নাট‍্যগীতি-কাব‍্য আছে। তিনি সেই নাটকের গানগুলি দুইজন কিশোরবয়স্কা পরম সুন্দরী দেবদাসীকে (শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের সামনে নর্তকী ও গায়িকা) শিক্ষা দিয়ে থাকেন।কেবল গান নয়,তিনি তাদেরকে নানারকম অঙ্গীভঙ্গী এবং নৃত‍্যাদিও শিক্ষা দেন।সেখানে আর কারও যাবার অধিকার নাই।আপনি কিছুক্ষণ এখানে বিশ্রাম করুন, তিনি ফিরে আসিলে যা আজ্ঞা করবেন,তাইই হবে।*
🦚🦚🦚🦚🦚🦚🦜🦚🦚🦚🦚🦚🦚🦚🦚



  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
🆕  ১৪৭. শ্রীপ্রদ‍্যুম্ন মিশ্র ও কৃষ্ণকথা 📖 শ্রীরামানন্দ রায়  🦚🦚 কাষ্ঠ পুত্তুলিকা 🏵️  শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/08/ramananda140to150.html
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১৪৭)শ্রীরামানন্দ রায়,কাষ্ঠ পুত্তলিকা*
      *শ্রীপ্রদ‍্যুম্ন মিশ্র ও কৃষ্ণকথা*
     °°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
*🍀রামরায়ের ভৃত‍্যের কথায় প্রদ‍্যুম্ন মিশ্রের হৃদয় চমকে উঠিল।তিনি ভাবতে লাগলেন, এ কি কথা!রায় মহাশয় পরম বৈষ্ণব, সংসার বিরাগী কৃষ্ণভক্ত, রমণীদ্বয়কে নাট‍্যগীতি শিক্ষা দেবার তাঁর কি প্রয়োজন? তিনি কৃষ্ণনাম জপ করবেন,লীলাগ্রন্থ পাঠ করবেন,সাধুসঙ্গে কৃষ্ণকথা কহিবেন।হায়! নারী নিয়ে নিভৃত জায়গায় যাবার কি আবশ‍্যক? ওরা বয়সে কিশোরী, তাতে আবার পরমা সুন্দরী। ওদেরকে ইনি নানান অঙ্গভঙ্গী ও নৃত‍্যগীতি শিক্ষা দান করেন, এ------কেমন কথা!নিভৃত বাগান,তাতে আবার পরমাসুন্দরী রমণী, সেই দুইজন রমণীও বয়সে কিশোরী।এর উপরে সে বাগানে প্রবেশ করার, অন‍্য কারও অধিকার নাই!এ----কেমন নৃত‍্যগীত-শিক্ষা? শ্রীভাগবত বলেন, যোষিৎসঙ্গ (নারীসঙ্গ) নরকের হেতুস্বরূপ।মহাভাগবত শ্রীল রামরায় রূপবতী দুইটি কিশোরী সহ নির্জন বাগানে সময় অতিবাহিত করেন কেন? প্রদ‍্যুম্ন মিশ্রের মনে হঠাৎ সন্দেহের তুফান উঠিল। কিছুক্ষণ পরে তিনি মনে করতে লাগলেন,সর্বজ্ঞ মহাপ্রভু কি রামরায়ের এই রহস্যময় ব‍্যাপারের কথা জানতে পারেননি?যিনি কিশোরী দেবদাসী নিয়ে নির্জন উদ‍্যানে সময় কাটান,তাঁর কাছে আমাকে কৃষ্ণকথা শুনতে পাঠালেন কেন?এই মনে করে খুবই দুঃখের সঙ্গে প্রদ‍্যুম্ন মিশ্র তৎক্ষণাৎ নিজ ঘরে প্রত‍্যাবর্তন করতে মনন করলেন, আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে বেড়িয়ে আসবেন, আবার একটু চিন্তা করে বসলেন।মিশ্রের মনে সাত-পাঁচ চিন্তা হতে লাগল,যেন সমস্ত পৃথিবীটা আন্দোলিত হচ্ছে, তিনি চোখে অন্ধকার দেখতে লাগলেন,আর মনে করতে লাগলেন, এই কি মহাভাগবতের কাজ, যোষিৎ (নারী) নিয়ে নির্জনে প্রমোদকাননে বিহরণ!যাইহোক,যখন এসেছি,তখন একবার দেখা করে যাওয়া উচিত। নচেৎ মহাপ্রভুর আজ্ঞা লঙ্ঘন করা হয়।*
*🌺অনেকক্ষণ বসে বসে ভাবতে লাগলেন, দন্ডের পর দন্ড চলে যেতে লাগল,শ্রীরামরায় ফিরলেন না। যখন বেলা প্রায় দ্বিতীয় প্রহর অতিবাহিত হল, তখন রায় মহাশয় গৃহে আসিলেন,আসিবামাত্রই তাঁর ভৃত‍্য তাঁকে মিশ্রের কথা জানালেন।রায় মহাশয় আর ক্ষণকাল বিলম্ব না করে মিশ্র মহাশয়ের কাছে এসে ভক্তিভরে প্রণাম করলেন, রায় মহাশয় যেন শশব‍্যস্ত,যেন কত অপরাধী। তিনি ব‍্যস্তভাবে বলতে লাগলেন, "ঠাকুর এতক্ষণ হল আপনার আগমন হয়েছে, অথচ আমাকে কেউ এ সংবাদ দেয়নি, একথা কেউই আমাকে বলেনি, আপনার চরণে না জানি কত অপরাধই ঘটল!যাইহোক, আপনার চরণ স্পর্শে আজ আমার গৃহ পবিত্র হ'ল।বলুন, এখন আমাকে কি করতে হবে আজ্ঞা করুন, আমি আপনার দাসানুদাস। রামরায়ের আকার-প্রকার ও ভক্তিভাবিত মুখশ্রী সন্দর্শন করে এবং তাঁর অলৌকিক বিনম্র মধুরকথা শুনে প্রদ‍্যুম্ন মিশ্রের ভাবান্তর উপস্থিত হল।এতক্ষণ তাঁর মনে রামরায়ের সম্বন্ধে যে একরকম সন্দেহের উদয় হয়েছিল, রামানন্দ রায়ের শ্রীমূর্তি দর্শনমাত্রেই যেন সেই ঘনীভূত সন্দেহ দূর হয়ে গেল।মিশ্র বললেন,রায় মহাশয়!আপনাকে দর্শন করার জন্য আমি এখানে এসেছি,দেখে কৃতার্থ হলাম, আপনাকে দেখে পবিত্র হলাম।*
*🍀অনেক বেলা হয়েছে দেখে মিশ্র মহাশয় আর কোন কথা না তুলে শ্রীরামরায়ের নিকট হতে বিদায় লেবার চেষ্টা করলেন।শ্রীরামরায় অনেকরকমে মিশ্র মহোদয়কে অভ‍্যর্থিত করলেন, এবং কিছুক্ষণ তাঁর সঙ্গে কথা বলে উভয়ে আপন আপন গৃহাভিমুখে প্রত‍্যাবর্তন করলেন।*
*🍁শ্রীরামানন্দ রায় পরম বৈষ্ণব, বিশেষ করে পরমদয়াল মহাপ্রভুর একান্ত অন্তরঙ্গ ভক্ত, তিনি নিভৃত বাগানে কিশোরী সুন্দরী দুইজনের সঙ্গে বিচরণ করেন,এই কথায় প্রদ‍্যুম্ন মিশ্রের ভাবান্তর হওয়া বাস্তবে স্বাভাবিক।কেন না,মহাভাগবত ভক্তগণের মধ্যে তিনি কখনও এইরকম আচার দেখেননি।ধর্মার্থী সাধুগণ পরস্ত্রীর স্মরণ ও তাঁদের সঙ্গে গুহ‍্যালাপ প্রভৃতিও পতনের কারণ মনে করে এ সম্বন্ধে সদাসর্বদা সাবধান থাকেন।শ্রীমন্মহাপ্রভু নিজেও বহু জায়গায় এইরকম সাবধানতা সূচক উপদেশ প্রদান করেছেন। তিনি বহুবার বহুজনকে সাবধান করে দিয়েছেন, প্রদ‍্যুম্ন মিশ্রের তা অজানা ছিল না। শ্রীপাদ সনাতনের শিক্ষাতেও করুণাময় মহাপ্রভু বিশিষ্টরূপে এই অনেক রকমের উপদেশ প্রচার করে ধর্মার্থীদের সাবধান করে দিয়েছেন।প্রদ‍্যুম্ন মিশ্রের মনে সেইসব উপদেশ দৃঢ়ভাবে গেঁথে ছিল। সুতরাং কিশোরী রমণীদ্বয়সহ রামরায়ের নির্জন উদ‍্যানে থাকার কথায় মিশ্রের সন্দেহ হওয়া একেবারে অস্বাভাবিক নয়। মিশ্র মহাশয় সবসময়ই সাধুসঙ্গ করতেন, সদাচার সম্পন্ন সাধক ভক্তদের আচার-নিয়ম তাঁর অজানা ছিল না।তিনি শ্রীমদ্ভাগবতের উপদেশ বহুবার শুনেছেন, মহাপ্রভু ভাগবত হতে এ সম্বন্ধে যে সব কথা প্রমাণস্বরূপ নিজ শ্রীমুখে বলতেন, প্রদ‍্যুম্ন মিশ্র অনেক সময়ে তা মনোযোগের সঙ্গে শুনতেন।শ্রীপাদ সনাতনের উপদেশকালে দয়াময় মহাপ্রভু বলেছিলেন=*
*🌷মহৎসেবাং দ্বারমাহুর্বিমুক্তে স্তমোদ্বারং যোষিতাং সঙ্গিসঙ্গম্।*
*🌷মহান্তস্তে সমচিত্তা প্রশান্তাঃ বিমন‍্যবঃ সুহৃদঃ সাধবো যঃ।।*
*🌻অর্থ‍্যাৎ যাঁরা সমচিত্ত,প্রশান্ত, ক্রোধবিবর্জিত,সর্বভূতের সুহৃদ ও সদাচার সম্পন্ন,তাঁরাই মহান্।এই সাধুগণের সেবাই বিমুক্তির দ্বার এবং যোষিৎ (নারী) সঙ্গীর সঙ্গ নরকের দ্বারস্বরূপ।*
*🌷ন তথাস‍্য ভবেন্মোহো বন্ধশ্চান‍্যপ্রসঙ্গতঃ।*
*🌷যোষিৎসঙ্গাদযথা পুংসো যথা তৎসঙ্গিসঙ্গতঃ।।*
*🌻অর্থ‍্যাৎ স্ত্রীসঙ্গ এবং উহার সঙ্গীর সঙ্গ দ্বারা লোকের যাদৃশ (যেমন বা যেরকম) মোহ এবং সংসারবন্ধ  ঘটে থাকে,অন‍্য কিছুতেই তাদৃশ (তেমন) হয় না।এখানে গৃহস্থগণের পক্ষে "যোষিৎ" শব্দে "কামপত্নী" বুঝতে হবে।শাস্ত্র এখানে অতি সতর্ক। স্ত্রীসঙ্গীর সঙ্গ পর্যন্ত মোহবন্ধের হেতুরূপে গণ‍্য হয়েছে।কামপত্নীর সঙ্গ যে নরকের হেতু,এটি তো অতি স্পষ্ট। কিন্তু যোষিৎসঙ্গীর সঙ্গও তেমনী।শ্রীপাদ শ্রীজীব গোস্বামী ক্রমসন্দর্ভ টীকায় এর ব‍্যাখ‍্যা করে লিখেছেন, "সঙ্গোহত্র তদ্বাসনয়া তদ্বার্ত্তাদিময়ঃ"। ফলে যোষিৎসঙ্গীর মন সর্বদা সেই সঙ্গলালসায় বিভোর থাকে, তাঁর কাছে ঐ সব আলাপ খুবই মধুর বলে প্রতিভাত(প্রতিফলিত) হয়।তার সঙ্গীর কাছেও সে ঐ প্রসঙ্গের অবতারণা করতে ভালবাসে।এই পাপ আলাপে যোষিৎ-সঙ্গীর মন পাপময় হয়ে উঠে। সুতরাং নারীসঙ্গীর সঙ্গ নরকের কারণ।মহাপ্রভুর এই উপদেশ প্রদ‍্যুম্ন মিশ্রের স্মৃতিপথে গেঁথে ছিল।*
🦚🦚🦚🦚🦚🦚🦚🦚🦚🦚🦚🦚🦚



  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
🆕  ১৪৮. শ্রীপ্রদ‍্যুম্ন মিশ্র ও কৃষ্ণকথা 📖 শ্রীরামানন্দ রায়  🦚🦚 কাষ্ঠ পুত্তুলিকা 🏵️  শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/08/ramananda140to150.html
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১৪৮)শ্রীরায় রামানন্দ,কাষ্ঠ পুত্তলি*
   *শ্রীপ্রদ‍্যুম্ন মিশ্র ও কৃষ্ণকথা*
*******************************
*🍀রাজা প্রতাপরুদ্র শ্রীমন্মহাপ্রভুর দর্শন লাভের নিমিত্ত যখন অত‍্যন্ত উৎকণ্ঠিত হলেন, তখন শ্রীপাদ সার্বভৌম ভট্টাচার্য্য মহিশয় রাজার প্রতি কিঞ্চিৎ দয়া করবার জন্য মহাপ্রভুর শ্রীচরণ সামনে কাতরকন্ঠে কত অনুনয় বিনয় করলেন, তার উত্তরে বলেছিলেন, সার্বভৌম, তোমার এই কথা আমি রাখতে পারব না। আমি নিষ্কিঞ্চন,ভবসাগর পার হতে ইচ্ছুক, এই জন্য ভগবদ্ভক্তজনে উন্মুখ হয়েছি। আমার পক্ষে রাজদর্শন ও স্ত্রীদর্শন, বিষভক্ষণ হতেও অহিতকর। যথা শ্রীচৈতন‍্যচন্দ্রোদয়ে পায়=*
*🌷নিষ্কিঞ্চনস‍্য ভগবদ্মক্তজনোন্মুখস‍্য,*
*🌷পারং পরং জিগমিষো র্ভবসাগরস‍্য।*
*🌷সন্দর্শনং বিষয়িণামথ যোষিতাঞ্চ,*
*🌷হা হন্ত হন্ত বিষভক্ষণতোহপ‍্যসাধু।।*
*🌷আকারাদপি ভেতব‍্যং স্ত্রীণাং বিষয়িণামপি।*
*যথাহের্মনসঃ ক্ষোভস্তথা তস‍্যাকৃতেরপি।।*
*🌹শ্রীচরিতামৃতকার এর ভাবানুবাদ করে লিখেছেন=*
*🌷প্রভু কহে তথাপি রাজা কাল সর্পাকার।*
*🌷কাষ্ঠনারী স্পর্শে যৈছে উপজে বিকার।।*
*🍀অর্থ‍্যাৎ স্ত্রী ও বিষয়ীদের প্রতিমা দেখেই ভগবদ্ভক্তজনোন্মুখজনের ভয় করা কর্তব‍্য।যেহেতু সাপ দেখে যেমন মনক্ষোভ হয়, সাপের আকার দেখেও সেইরকম মনক্ষোভ জন্মে।*
*মহাপ্রভু যে এইরকম উপদেশজনক আপত্তি দেখিয়ে পরম পন্ডিত সার্বভৌমকে শান্ত করেছিলেন, মিশ্র মহাশয়ের হৃদয়ে সে উপদেশ কথা পাষাণ-রেখার মত অঙ্কিত হয়েছিল। তিনি নিজেও কতবার কত জনের কাছে শ্রীগৌরহরির এই সাবধান বাণী শিক্ষার কথা বলেছিলেন।অথচ পরম ভক্ত,পরম পন্ডিত রামানন্দ যোষিৎ সঙ্গে বিচরণ করেন,এতে প্রদ‍্যুম্নের হৃদয়ে সন্দেহ হবে না কেন? মহাপ্রভুর সুস্পষ্ট উপদেশ যে, নিষ্কিঞ্চন ভগবত ভক্ত জনের পক্ষে স্ত্রী-প্রতিমা দেখাও অমঙ্গল। কিন্তু মিশ্র শুনলেন, শ্রীরামরায় দুইজন তরুণবয়স্কা দেবদাসীসহ নির্জন কাননে বিচরণ করছিলেন। গৌরহরির উপদেশে এবং তাঁর একজন প্রিয়তম ভক্তের আচরণে ঘোরতর অসামঞ্জস্য দেখে প্রদ‍্যুম্ন মিশ্রের মন যে সন্দেহ হবে এটিই স্বাভাবিক। এ সম্বন্ধে কেবল দুই একটি উদাহরণ নয়, আরও অনেক সময়ের অনেক কথা মিশ্রের মনে উদয় হতে লাগল।মিশ্রের মনে হল "ছোট হরিদাসের কথা" যথা শ্রীচরিতামৃতে পায়=*
*🌷প্রভু কহে বৈরাগী করে প্রকৃতি সম্ভাষণ।*
*🌷দেখিতে না পারি আমি তাহার বদন।।*
*🌷দুর্ব্বার ইন্দ্রিয় করে বিষয়-গ্রহণ।*
*🌷দারু প্রকৃতি হরে মুনিজনের মন।।*
*🌹যথা শ্রীভাগবত (৯|২১|১৫) ; মনুসংহিতায় (২|২১৫)*
*🌷মাত্রা স্বস্রা দুহিত্রা বা নারিরিক্তাসনো ভবেৎ।*
*🌷বলবানিন্দ্রিয়গ্রামো বিদ্বাংসমপি কর্ষতি।।*
*🌻অর্থ‍্যাৎ মাতা,ভগিনী,এমন কি কন‍্যার সঙ্গেও সঙ্কীর্ণ আসনে একত্রে বসা যাবে না।কেননা, ইন্দ্রিয়গণ অতীব বলবান্, ওরা বিদ্বানকেও আকর্ষণ করে। 🔴শ্রীধরস্বামী এই শ্লোকের টীকায় লিখেছেন= "স্ত্রীসন্নিধানন্তু সর্ব্বথা ত‍্যাজ‍্যমিত‍্যাহ্।" অর্থ‍্যাৎ স্ত্রী সন্নিধান (নিকটে বা কাছে )সর্ব প্রকারেই ত‍্যাজ‍্য এটিই শ্লোকের অভিপ্রায়। "অবিবিক্তাসনঃ সঙ্কীর্ণাসনস্থঃ"।শ্রীমদ্বীররাঘবও তদীয়  ভাগবতচন্দ্রিকা টীকায় এই অভিপ্রায়ের প্রতিধ্বনি করেছেন। শ্রীমদ্বিজয়ধ্বজ তদীয় (তাঁর) পদারত্নাবলী ব‍্যাখ‍্যায় "অবিবিক্তাসনের" অর্থ করেছেন= একশব‍্যাসন। শ্রীমন্বিশ্বনাথ চক্রবর্তী মহাশয় সারার্থদর্শিনী টীকায় "অবিবিক্তসনের" অর্থ লিখেছেন, "অপৃথগতুত আসন। শ্রী মদ্ শুকদেব্ সিদ্ধান্তবাগীশ "অবিবিক্তাসনের" ব‍্যাখ‍্যায় স্বামীকৃত ব‍্যাখ‍্যায় প্রতিধ্বনি করেছেন।*
*🌻এইসব জায়গায় বিবাহিতা স্ত্রী ছাড়া অন‍্য কোন রমণী দর্শন, স্পর্শন, তার সম্বন্ধে চিন্তা করা, এবং ওদের সঙ্গে এক আসনে বসাও কিম্বা একত্র চলাফেরা যে মহাপ্রভুর একান্ত নিষেধ উপদেশ, তা প্রদ‍্যুম্ন মিশ্র  প্রভৃতি ভক্তমাত্রেরই ভাল ভাবে জানা ছিল। সুতরাং মিশ্রের মনে এই সন্দেহ হওয়ায় স্বাভাবিক। যদিও রামরায়ের সঙ্গে কিছুক্ষণমাত্র আলাপেই মিশ্র মহাশয়ের ঘনীভূত সন্দেহ কিছু পরিমাণে দূর হয়েছিল, কিন্তু তাঁর মন হতে সন্দেহরেখা একেবারে দূর হয়নি।আর একদিন মিশ্র মহাশয় মহাপ্রভুর শ্রীচরণতলে এসে উপস্থিত হয়ে দন্ডবৎ প্রণত হলেন।দেখামাত্রই গৌরহরি বললেন,মিশ্র! রামরায়ের মুখে কৃষ্ণকথা শুনেছ ত?মিশ্রের মুখমন্ডল এতটুকু হয়ে গেল, মহাপ্রভুর কাছে তিনি কি করে রামরায়ের ঐ কথাগুলি বলবেন! এতে মহাপ্রভুই বা কি মনে করবেন, মিশ্র এইরকম মনে করে কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে থেকে মহাপ্রভুর শ্রীচরণের দিকে তাকিয়ে রইলেন আর ভাবতে লাগলেন। তখন মহাপ্রভু বললেন, মিশ্র! যা শুনেছ, সাতপাঁচ চিন্তা না করে সবকথা আমার কাছে বলো।*
*মিশ্র যা শুনেছিলেন,তার মর্ম সংক্ষেপে ও সঙ্কোচিতভাবে গৌরহরির কাছে বলে নীরব হলেন। মহাপ্রভুর কাছে সেইসময় যে কয়েকজন নিষ্কিঞ্চন ভক্ত উপস্থিত ছিলেন, মিশ্র মহাশয়ের কথা শুনে সকলেই স্তম্ভিত ও বিস্মিত হলেন, অনেকের মুখমন্ডলেই দুঃখের ভাব পরিলক্ষিত হল। এমন কি কেউ কেউ বলে উঠলেন, "একি কথা, শ্রীরামরায় পরম ভক্ত,তাঁর এ কি ব‍্যবহার"? সর্বসন্দেহ-ভঞ্জণকারী সর্ব অসামঞ্জস্যের বিশুদ্ধ মীমাংসাক পরম দয়াল গৌরহরি ভক্তগণের কথায় সায় দিয়ে বললেন, "তোমরা যা বলছ, তা একেবারে ঠিক। বিষয়ীদের পক্ষে রমণীদের সঙ্গে একত্র থাকা যে ভজনের একান্ত প্রতিকূল, তাতে আর সন্দেহ কি? আমি সন্ন‍্যাস গ্রহণ করেছি, যথাশক্তিসন্ন‍্যাসীর ভাবে দিন যাপন করছি, আমি সবরকমে বিষয়ত‍্যাগী,এই আমার ধারণা এবং এইসব বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকতেও আমি সর্বদা সচেষ্ট।প্রকৃতি-দর্শন (নারী-দর্শন) দূরে থাকুক, ওদের নাম শুনলেও আমার দেহ ও মনের বিকৃতি ঘটতে পারে।*
*🔥🔥🔥🔥🔥🔥🔥🔥🔥🔥🔥🔥🔥


  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
🆕  ১৪৯. শ্রীপ্রদ‍্যুম্ন মিশ্র ও কৃষ্ণকথা 📖 শ্রীরামানন্দ রায়  🦚🦚 কাষ্ঠ পুত্তুলিকা 🏵️  শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/08/ramananda140to150.html
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১৪৯)শ্রীরামানন্দ রায়,কাষ্ঠ পুত্তলি*
      *শ্রীপ্রদ‍্যুম্ন মিশ্র ও কৃষ্ণকথা*
     """"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
*🍀রমণী দর্শনে কারচিত্ত স্থির থাকতে পারে। যথা শ্রীচরিতামৃতে=*
*🌷আমি ত সন্ন‍্যাসী,আপনাকে বিরক্ত করি মানি।*
*🌷দর্শন দূরে রহুক,প্রকৃতির নাম যদি শুনি।।*
*🌷তবহু বিকার পায় মোর তনু মন।*
*🌷প্রকৃতি-দর্শনে স্থির হয় কোন জন?*
*🍀মহাপ্রভু স্বয়ং ভগবান। কিন্তু তিনি নরলীলায় নরবপু নিয়ে প্রকটিত। মানুষের যা স্বভাব, তিনি এখানে নিজের কথা উল্লেখ করে তা প্রকাশ করলেন।এতে তাঁর ভগবত্তার কোন ক্ষতি হল না।স্ত্রীমায়া যে অতি শক্তিশালী, সেটি যে অতি দলনকারিনী শ্রীভগবদবাক‍্যে এস্থলে তাই ধ্বনিত হয়েছে।পারাণ আদিতে সুললিত স্ত্রীমুখ-পঙ্কজ-দর্শনে বিশ্বামিত্র, পরাশর,ব‍্যাস,বশিষ্ঠ প্রভৃতি মুনিদেরও মোহ প্রাপ্তির উল্লেখ আছে, সুরগুরু বৃহস্পতিও এই বিষয়ে মোহ প্রাপ্ত হয়েছেন।এমন কি সাক্ষাৎ ব্রহ্মা শিবাদিও এই দুরত‍্যয়া অতি শক্তিশালী মায়ার চক্রে বিভ্রান্ত ও বিড়ম্বিত হয়েছেন। স্বয়ং ভগবান নিজের নাম করে এখানে কেবল সেই স্ত্রীমায়ার প্রবলতম পরাক্রমের কথায় প্রকাশ করলেন। নচেৎ যিনি সর্ব মায়ার নিয়ন্তা,সর্ব মায়ার অধীশ্বর, তাঁর কাছে আবার স্ত্রীমায়ার প্রভাব কি হতে পারে? জীব শিক্ষার জন‍্যই তাঁর প্রকট লীলার প্রকাশ,জীব শিক্ষার জন‍্যই তাঁর এইসব সাবধানতা সদ্ উপদেশ। তাই তিনি বললেন=*
*🌷প্রকৃতি-দর্শনে স্থির হয় কোনজন?*
*🌺যোষিৎসঙ্গীর মনে ধৈর্য‍্য নাই, তারা কামেতে সবসময়ই চঞ্চল,সবসময় কামনা সাগরের তরল তরঙ্গ।ওতে প্রাণ চঞ্চল হয়ে যায়,হৃদয় অস্থির হয়ে পড়ে। শ্রীভগবদ্ উচ্চারণ ধ‍্যান তো দূরের কথা, অধ‍্যয়নাদি ও অন‍্যান‍্য কাজ হতেও মন বিচলিত হয়ে যায়। সুতরাং নিষ্কিঞ্চন ভক্তগণের পক্ষে স্ত্রীদর্শন যে বিষভক্ষণ অপেক্ষাও অনেক বেশী আত্মহত‍্যা সম অসাধু কর্ম।*
*🍀কিন্তু অপ্রাকৃত আনন্দ চিন্ময়রসে পূর্ণ অভিষিক্ত অদ্বিতীয় ভক্তবীর শ্রীল রামরায়ের কার্য‍্যাদি প্রকৃত জীবের কাজের সঙ্গে তুলনা হতে পারে না এবং প্রাকৃতিক জগতের কাজের বিচারের মানদন্ডে তার বিচার করা যায় না। তাই দয়াময় গৌরহরি বলেছেন=*
*🌷রামানন্দ রায়ের কথা শুনি সর্বজন।*
*🌷কহিবার কথা নহে আশ্চর্য‍্য কথন।।*
*🌷এক দেবদাসী তায় সুন্দরী তরুণী।*
*🌷তার সব অঙ্গসেবা করেন আপনি।।*
*🌷স্নানাদি করায় পরায় বাস বিভূষণ।*
*🌷গুহ‍্য অঙ্গ হয় তার দর্শন স্পর্শন।।*
*🌷তবু নির্বিকার রায় রামানন্দের মন।*
*🌷নানা ভাবোদ্গমে তারে করায় শিক্ষণ।।*
*🌷নির্বিকার দেহ মন কাষ্ঠ পষাণ সম।*
*🌷আশ্চর্য‍্য!তরুণী স্পর্শে নির্বিকার মন।।*
*🌻শ্রীমন্মহাপ্রভু রামরায়ের এই কাজের কথা উল্লেখ করে বললেন "রামরায়ের কথা জগতে বলবার কথা নয়, এই কথা জগতে প্রকাশেরও কথা নয়,সে এক অতি আশ্চর্য‍্যের ব‍্যাপার। আশ্চর্য‍্য কি? পাণিনি বলেন, "আশ্চর্য‍্যমনিত‍্যে", অর্থ‍্যাৎ যার নিত‍্যতা নাই,তাইই আশ্চর্য‍্য।শ্রীরামরায়ের এই কাজ যে সার্বভৌমিক নহে, ইহা দ্বারা তা সূচিত হল।*
*🔵প্রাকৃত জগতে এ কথা বলার যোগ‍্য নয়,মহাপ্রভু নিজেই তা পরিস্কার করে বলে দিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ‍্যের বিষয় এই যে,যা এ জগতে আশ্চর্য‍্য, যা এ জগতে বলার নয়, এক শ্রেণীর লোক সেই অতি গুহ‍্যতম ব‍্যাপারের দোহাই দিয়ে নিজেরা ধর্মের নামে নরকের পথকে সুন্দর ভাবে তৈরী করে রেখেছে।মায়াবদ্ধ জীবমাত্রেই নারীরমায়ায় বিমুগ্ধ হয়ে পড়ে, এটিই প্রাকৃত জগতের নিয়ম। প্রাকৃত দেহ ও মনের এটিই নিয়ম। কিন্তু 🔴পরম দয়াল করুণাময় গৌর ভগবান বলেছেন, "মনোবিহীন শুকনোকাঠ বা পাষাণ বা পাথর যেমন যোষিৎস্পর্শে বা নারীস্পর্শে অবিকৃত অবস্থায় থাকে, শুকনোকাঠ ও পাথরের কোন কামবিকার দেখা যায় না,শ্রীল রামানন্দ রায়ের মনও যোষিৎস্পর্শে সেইরকম নির্বিকার।🔴*
*🌻সুতরাং তেমন মনের আর বিকৃতির আশঙ্কা কি? আর প্রাকৃত জগতের মায়াবদ্ধ জীবদের মত তাতে দুষ্ট প্রবৃত্তির উদগমেরই বা সম্ভাবনা কি? কিন্তু গভীর পরিতাপের বিষয় এই যে কোন কোন লোক বিশিষ্ট ভক্তের অলৌকিক ব‍্যাপার মায়ার জগতে দোষ দেখিয়ে তাঁর কাজের নজির দেখিয়ে জগতে কেবল খারাপ কিছু ভাবছে। তাই যাতে আর একটিও জীবতেমন আচরণে প্রবৃত্ত বা রত না হয় এই জন্য পরম দয়াল মহাপ্রভু তার পরে স্পষ্টভাবেই বলেছেন=*
*🌷এক রামানন্দের হয় এই অধিকার।*
*🌷তাতে জানি অপ্রাকৃত দেহ তাঁহার।।*
*🌷তাঁহার মনের ভাব তিঁহ জানে মাত্র।*
*🌷তাহা জানিবার আর দ্বিতীয় নাহি পাত্র।।*
*🙏মহাপ্রভুর কথামাত্রই মহাকথা, সে মহাবাক‍্য বেদের মহাবাক‍্য হতেও গভীরতর--, বেদের মহাবাক‍্য হতেও অর্থগৌরবে অনেক বেশী গৌরবান্বিত।মহাপ্রভুর এই কথায় একদিকে যেমন সাবধানতা সূচিত হচ্ছে,অন‍্যদিকে তেমনি আবার শ্রীরামরায়ের মনের নির্বিকারতার অদ্বিতীয় উদাহরণ পরিব‍্যক্ত হয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবেই আদেশ করেছেন, এইরকমভাবে যোষিৎসঙ্গ করতে এ জগতে কেবল একমাত্র শ্রীরামানন্দ রায়ই অধিকারী।অন‍্য কারও এ অধিকার নাই-নাই-নাই।কেননা,তাঁর দেহ ও মন অপ্রাকৃত,তাঁর দেহও মন যোষিৎসঙ্গে বিকৃতিলেশ মাত্রও হয় না।স্বয়ং শ্রীভগবান যে বিষয়ে জীবের অধিকার প্রদান করেননি, জগতে রামরায়ের দ্বিতীয় অধিকারী আছে বলেও নির্দেশ করেননি।শুদ্ধাচারী বৈষ্ণবগণ সেইরকম ব‍্যাপারে প্রবৃত্ত হওয়া দূরে থাকুক,সেইরকম কাজ করার চিন্তাও মনে স্থান দিতে পারেন না।*
🦚🦚🦚🦚🦚🦚🙏🦚🦚🦚🦚🦚🦚

  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
🆕  ১৫০. শ্রীপ্রদ‍্যুম্ন মিশ্র ও কৃষ্ণকথা 🌷 শ্রীরামানন্দ রায়  🦚🦚 কাষ্ঠ পুত্তুলিকা 🏵️  শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/08/ramananda140to150.html
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
*(১৫০)শ্রীরামানন্দ রায়,কাষ্ঠ পুত্তলি*
       *শ্রীপ্রদ‍্যুম্ন মিশ্র ও কৃষ্ণকথা*
     ======================
*ভক্তগণ বুঝলেন, শ্রীরামরায়ের অধিকার কত উচ্চস্থান, ভক্তগণ আরও বুঝলেন,শ্রীরামানন্দ রায় প্রাকৃত জগতে বিচরণ করলেও তাঁর দেহ মন প্রাকৃত জগতের নিয়মাধীন নহে, তিনি আনন্দ চিন্ময়রসে পূর্ণ অভিষিক্ত। সুতরাং তিনি বাইরের জগতের মাত্রাস্পর্শজনিত সুখ-দুঃখের ভাবাভাবের সম্পূর্ণ অতীত। তিনি অবলীলাক্রমে কালসর্প নিয়ে খেলা করতে পারেন, কিন্তু সেই সর্প তাঁর কাছে মাথা তুলতে পারে না, প্রত‍্যুত (পক্ষান্তরে বা বরং) সে স্পর্শই শেষে দেবপাদপদ্ম-পূজনের কুসুমে পরিণত হয়।মানুষের পক্ষে সে আচরণ একেবারেই কোন মতেই অসম্ভব।মহাপ্রভুও তাই বলেছেন, "এক রামানন্দ ছাড়া এইরকম কার্য‍্য অনুষ্ঠানের আর দ্বিতীয় পাত্র জগতে নাই।এমন কি এইরকম অনুষ্ঠান তাঁর নিজের পক্ষেও অযোগ্য।" তাই গৌরহরি বলেছেন," আমি তো সন্ন‍্যাসী, নিজেকে বিরক্ত (অনাসক্ত) বলে মনে করি। প্রকৃতি দর্শন তো দূরের কথা, নাম শুনলেও দেহ ও মনের বিকার হয়, সুতরাং অন‍্যের আর কথা কি? কিন্তু রামরায়ের কথা আলাদা।তাঁর ইন্দ্রিয়-চাঞ্চল‍্য বা ইন্দ্রিয়-ক্রীড়া নাই।মহাপ্রভুর মহাবাক‍্যে ভক্তগণের সন্দেহ দূর হল,তাঁদের হৃদয়ে বিস্ময়ের আবির্ভাব হল।এই সন্দেহের জন্য প্রদ‍্যুম্ন মিশ্র প্রভৃতি সকলেই নিজকে অপরাধীর মত মনে করতে লাগলেন। কিন্তু তক্ষুনি মহাপ্রভুর কৃপায় শ্রীরামরায়ের  প্রতি সকলের হৃদয়েই এক অতুলনীয় ভক্তিরসের সঞ্চার করে দিল।সকলেই "ধন‍্য শ্রীরামানন্দ" বলিয়া আনন্দে হরিধ্বনি করতে লাগলেন।*
*🍀শ্রীরামরায় দুইটি পরম সুন্দরী কিশোরীবয়স্কা দেবদাসী নিয়ে বাগানে শিক্ষাদান করতেন।রায় মহাশয় এই কিশোরী দেবদাসী দুইজনকে নিয়ে কি করতেন দেবদাসীরই বা কাজ কি, এ সম্বন্ধে সামান্য আলোচনা করা এখানে খুবই প্রয়োজনীয়। শ্রীপুরুষোত্তমক্ষেত্রে  শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের এক শ্রেণীর পরিচারিকা,দেবদাসী নামে অভিহিতা।দেবদাসীরা শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের সেবাদাসী, এঁরা তাঁর ব‍্যজনকারিণী এবং তাম্বুলকরঙ্কবাহিনী,এঁরা তাঁর গায়কী ও নর্ত্তকী।শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের পুরোভাগে পুরোভাগে বা সামনের অংশে গান ও নাচের প্রথা এখনও প্রচলিত আছে।কেন্দুবিল্বের অমর কবি শ্রীপাদ জয়দেব গোস্বামীর নিজ সহধর্মিণী পদ্মাবতী সহ শ্রীশ্রীজগন্নাথদেবের সামনের অংশে স্বরচিত "গীতগোবিন্দের" পদগান করতেন। তিনি এই উদ্দেশ্যে নিজ পত্নীকে গান ও নৃত‍্যশিক্ষা দিয়েছিলেন। শ্রীজগন্নাথদেব গীতগোবিন্দ গান শুনে ভীষণ ভীষণ আনন্দ লাভ করতেন।এই জন‍্য উৎকলের রমণীদের মধ্যে অনেকেই গীতগোবিন্দের গান শিক্ষা করতেন। কথিত আছে একদিন এক শাক বিক্রয়িনী মুখে গীতগোবিন্দের গান শুনে শ্রীজগন্নাথ কন্টকময়(কাঁটায় ভরা) পথে তাঁর অনুসরণ করেছিলেন।এই ঘটনার পর হতে পুরীর রাজা শ্রীমন্দিরে প্রত‍্যহ গীতগোবিন্দ গানের নিয়ম করেন।*
*🍀শ্রীজগন্নাথদেবের সামনে শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের লীলা বিষয়ক গান ও নাচ দেবদাসীদের প্রধান কর্তব‍্য কর্ম। সুগায়কদের কাছে এরা সঙ্গীত শিক্ষা করত, হাবভাবময় নাচেও লীলাময় গানে দেবদাসীরা দেবদেব জগন্নাথের সেবা করত।সঙ্গীতশাস্ত্রজ্ঞ সঙ্গীত-ব‍্যবসায়ীরা দেবদাসীদেরকে গান ও হাবভাবময় নৃত্য শিক্ষা দিতেন।*
*🍀এখন কথা এই যে প্রেমিকভক্ত  শ্রীরামানন্দ রায় দুইজন কিশোরী দেবদাসীসহ নির্জন কাননে কি করতেন? শ্রীচরিতামৃত গ্রন্থেই ইহার উত্তর লিখিত হয়েছে, তদ্ যথা=*
*🌷দুই দেবদাসী হয় পরমা সুন্দরী*।
*🌷নৃত‍্য গীতে সুনিপুণা বয়সে কিশোরী।।*
*🌷তাঁহা দোঁহা লঞে রায় নিভৃত উদ‍্যানে।*
*🌷নিজ নাটকের গীতে শিখায় নর্তনে।।*
*🍀এতে জানা যাচ্ছে যে,শ্রীরামরায় এদেরকে স্বরচিত শ্রীজগন্নাথবল্লভ নাটকের গান ও নাচ শিক্ষা দিতেন।তার আভাসও শ্রীচরিতামৃতে দেখতে পাওয়া যায়,যথা=*
*🌷তবে সেই দুইজনে নৃত‍্য শিখাইল।*
*🌷গীতের গূঢ় অর্থ অভিনয় করাইল।।*
*🌷সঞ্চারি সাত্ত্বিক স্থায়ী ভাবের লক্ষণ।*
*🌷মুখনেত্রে অভিনয় করে প্রকটন।।*
*🌷ভাব-প্রকটন-লাস‍্য রায় যে শিখায়।*
*🌷জগন্নাথের আগে দোঁহে প্রকট দেখায়।।*
👣👣👣👣👣👣🦚👣👣👣👣👣👣
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
🔜 ক্রমাগত 👉 ১৫১ হইতে ১৬০ পর্ব 🌷 শ্রীরামানন্দ রায়  🦚🦚 কাষ্ঠ পুত্তুলিকা 🏵️  শ্রীরসিকমোহন বিদ‍্যাভূষণ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/09/ramananda151to160.html
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
  ꧁👇 📖 সূচীপত্র 📖 ✍️ শ্রী জয়দেব দাঁ 📖 👇꧂


  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
   ✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️ 
নিবাস- বাঁশবাড়ী, কীর্তন মন্দিরের পাশে, পোঃ- বাঁশবাড়ী, থানা- ইংরেজ বাজার, জেলা- মালদহ, পশ্চিমবঙ্গ, পিন কোড- ৭৩২১০১।
 ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
  *••••┉❀꧁👇🏠Home Page🏠👇꧂❀┅••••* 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
    *••••━❀꧁👇 📖 সূচীপত্র 📖 👇꧂❀┅••••* 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
     *••••━❀꧁👇📚 PDF গ্রন্থ 📚👇꧂❀┅••••* 
  ✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧
    *••••┉━❀꧁ 🙏 রাধে রাধে 🙏 ꧂❀━┅••••* 
                   শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ
              হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।।
  *••••┉━❀꧁ 🙏 জয় জগন্নাথ 🙏 ꧂❀━┅••••*
              হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
              হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥
  *••••┉━❀꧁ 🙏 জয় রাধাকান্ত 🙏 ꧂ ❀━┅••••*
   💮❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀💮
   💮❀❈❀🙏🏻🙏🏻🙏🏻🙇🙇🙇🙏🏻🙏🏻🙏🏻❀❈❀💮
✧═══════════•❁❀❁•═══════════✧






শেষ ৩০ দিনের পোস্টের মধ্যে সর্বাধিক Viewer নিম্নে :-

শ্রীকৃষ্ণ লীলা 🙏 সূচীপত্র ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_74.html

শিবরাত্রি ব্রতকথা 🙏 ১০৮ নাম 🙏 মন্ত্র সমূহ 🙏 শিবরাত্রি ব্রত কি ভাবে পৃথিবীতে প্রচলিত হল❓শিবরাত্রি ব্রত পালনে কি ফল লাভ হয় ❓শিবরাত্রি ব্রত পালন কি সকলেই করতে পারেন ❓🙏 সকল ভক্ত 👣 চরণে 👣 অসংখ্যকোটি 🙏 প্রণাম 🙏শ্রী মৃন্ময় নন্দী 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/02/shib.html

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নৌকা গঠন তত্ব ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 https://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/06/blog-post_22.html

🙇 রাধে রাধে 🙇 শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ 👏 হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধেগোবিন্দ।। 🙇 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2024/09/today.html

শ্রীঅম্বরীষ মহারাজের ছোট রানী 🙏 চারিযুগের ভক্তগাঁথা ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/12/blog-post_97.html

মনোশিক্ষা 🙏 দ্বিতীয় ভাগ 🙏 শ্রীযুক্ত প্রেমানন্দ দাস ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/jaydeb_14.html

বকরূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে চারটি প্রশ্ন করেছিলেন সেই প্রশ্নই বা কি? ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/05/blog-post_98.html

শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু 🥀 সংক্ষিপ্ত কথন 🙏 প্রথম ভাগ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/01/mohaprobhu-joydeb-dawn.html

*নিগমকল্পতরোর্গলিতং ফলং শুকমুখাদকমৃতদ্রবসংযুতম্।**পিবত ভাগবতং রসমালয়ং মুহুরহো রসিকা ভূবি ভাবুকাঃ।।*✍️ লিখনী সেবা- শ্রী জয়দেব দাঁ 🙏 এই লিংকে ক্লিক করুন ➡️ http://mrinmoynandy.blogspot.com/2022/09/blog-post_89.html

শ্রীআমলকী একাদশী ব্রতের মাহাত্ম‍্য কি ❓ ✍️ লিখনী সেবা- শ্রী গোপীশরণ দাস 📚 এই লিংকে ক্লিক করুন 👉 http://mrinmoynandy.blogspot.com/2023/03/ekadoshi.html